রাজার ছেলে বিলু, সহিসপুত্র কালু আর দুবছর বয়সী দাঁতছাড়া হাতি গিলু একদিন রাজপুরী ফেলে বেরিয়ে পড়ে গল্প-বলিয়ে পলাতক জল্লাদের খোঁজে, ওদের সাথে রওনা দেয় রাজবন্দি বীরপুরুষ গুরুৎও। শুরু হয় ওদের দারুণ রোমাঞ্চকর এক অভিযান। এ রাজ্য থেকে ও রাজ্য, মায়াবন থেকে নীলগিরি, কত না রাজপুরী আর বন-বাদাড় ঘুরে বেড়ায় আর কত কত অবাক-করা, মনে-ধরা জিনিসপত্তর দেখে বেড়ায় তার ইয়ত্তা নেই। সাথে বীরপুরুষ গুরুৎ আছে বলেই ওরা যে চলার পথের বিপদ-আপদগুলো সহজে উৎরে যায় তা কিন্তু নয়, বরঞ্চ সেসব কাটিয়ে ওরা শেষমেশ ঘরে ফিরতে পারবে কিনা সেটাই হয়ে দাঁড়ায় বিরাট এক প্রশ্ন। তবে ওদের দিন কাটে এমন এক উত্তেজনা আর ভালো লাগায় যে বাকি জীবনে চাইলেও আর ভুলতে পারবে না। ওদের সেই ভালো লাগার এতটুকুও যদি তোমাদের স্পর্শ করে, তবেই না লেখাটা সার্থক।
মাশুদুল হকের জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকায়। এক দশকের বেশি সময় ধরে লিখছেন থ্রিলার, সায়েন্সফিকশন ও শিশু-কিশোর সাহিত্য, প্রকাশিত হয়েছে নিয়মিত ভাবে বাংলাদেশ ও ভারত থেকে।
সাহিত্য-পুরস্কার : এইচএসবিসি-কালিওকলম তরুণ কথাসাহিত্যিক পুরস্কার ২০১৩।
Masudul Haque is a contemporary writer from Bangladesh known for his works on thrillers, Sci-Fi, and children's literature. His works have been published in Bangladesh and India regularly for the last 12 years. He was awarded the Kali O Kalam Young Writer Award in 2013.
এককথায় অনবদ্য। একেবারে চিরায়ত রূপকথার উপাখ্যান। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মুগ্ধ হয়ে পড়েছি।মাশুদুল হক খুব যত্ন ও ভালোবাসা দিয়ে লিখেছেন। তার কাছে অনুরোধ থাকবে ছোটদের জন্য নিয়মিত লিখতে। আসিফুর রহমানের প্রচ্ছদ ও অলংকরণ দুর্দান্ত। বইটির বহুল প্রচার কামনা করি।
দারুণ। মাশুদ ভাইয়ের এই বইটা স্পেশাল। যদিও বইটাতে একটা ট্যাগ পড়ে গেছেঃ শিশু সাহিত্যের ট্যাগ। বাচ্চাদের বই। কিন্তু আমার মতে সাহিত্যপ্রেমী যে কেউই বইটা পড়ে উপভোগ করবেন, বাচ্চাদের বই বলে অর্ধেক পড়ে ফেলে দিবেন না। বাংলা রূপকথার পরিচিত কাহিনীগুলোকে যে তরিকায় আধুনিক কেচ্ছায় রুপান্তর করেছেন মাশুদুল হক, তা সত্যি অভাবনীয়। ব্রাভো! দুর্দান্ত সব ইলাস্ট্রেশনের জন্য আসিফুর রহমানকেও স্যালুট।
বাহ, বাহ বাহ। কতদিন পরে দারুণ একটা ছোটদের বই পড়লাম। এমনিতেই আমাদের দেশে বাচ্চাদের বইয়ের অভাব। এই বইটা আরও বেশি ফোকাস পাওয়ার দাবীদার। অন্তত বইমেলায় ডোরেমন নামক রঙিন ছবিওয়ালা বাচ্চাদের বই থেকে তো বেশিই। বাচ্চাদের চেনা পরিচিত রূপকথার এরকম দারুণ প্রেজেন্টেশন খুব কম দেখা যায়। আর সেইসাথে শব্দ চয়ন। দারুণ দারুণ!!! হ্যাটস অফ টু মাশুদুল হক ভাই।
এক কথায় বললে অসাধারণ !!! আমাদের দেশে বাচ্চাদের জন্যে যে বই রচিত হয় না তা না, কিন্তু সেগুলো এতটাই শিশু সুলভ তারা বাচ্চাদের আগ্রহ ধরে রাখতে পারে না । লেখক যে 'বাচ্চাদের জন্যে লিখতে হবে'- এই দায়বদ্ধতা থেকে বইটা লিখেননি তা একদম বই এর শুরু থেকেই স্পষ্ট বোঝা গিয়েছে । খুবই চমৎকার বুদ্ধিদীপ্ত প্লট। এক একটা লাইন পড়েছি আর নিজের অজান্তেই হাসতে শুরু করেছি । বই এর কাহিনী শুরু হয় একটা রাজ্যের রাজপুত্র বিলুর রাজপ্রাসাদে । তাঁর বন্ধু কালু আর কালুর দুই বছরের হাতী কে নিয়ে সে অ্যাডভেঞ্চারে বের হয় রাজ্যের জল্লাদপকে খুজতে যে কিনা নিজেই নিজের গর্দান নেবার হুকুম পেয়েছে রাজার কাছ থেকে । ঘটনা ক্রমে তাদের সঙ্গী হয় বীর গুরুত- যার কিনা প্রতি পদে পদেই অ্যাডভেঞ্চার । এভাবেই তারা আগাতে থাকে এক ঘটনা থেকে আরেক ঘটনায় প্রবেশের মাধ্যমে । বইটা যে একেবারে ছোট বাচ্চাদের জন্যে তা মোটেও নয় কিন্তু!! এটা পড়ে ভালো লাগবে না, আমার ধারণা এমন পাঠক পাওয়া যাবে না । সব বয়সী পাঠকদের আগ্রহই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বজায় থাকবে ! আর চরিত্র গুলো এত জীবন্ত আর সাবলীল যে না ভালো লেগে পার পাওয়া যাবে না, সে রাজার ছেলে বিলু, সহিসপুত্র কালু আর দুবছর বয়সী দাঁতছাড়া(কিউট) হাতি গিলু(যে কথায় কথায় গাল ফুলিয়ে অন্য দিকে হাঁটা দেওয়া শুরু করে) -ই হোক না কেন। কোন অতিরিক্ত চরিত্র নেই, সবার ই যে সমান গুরুত্ব আছে তা বই শেষে বোঝা যাবে। বইটা ভালো লাগার আরো একটা কারণ আমরা ছোট বেলা থেকে যে সকল রূপকথা শুনে বড় হয়েছি সেগুলো নিয়ে মাশুদুল হক খুব সুন্দর ভাবে ভেবেছেন এবং এগুলোর যথার্থ ব্যাবহারও করেছেন । কিছু যায়গায় এত্ত সুন্দর ভাবে মিলে গিয়েছে যে ভাবতে বাধ্য হয়েছি যে- "আচ্ছা এটা তাহলে এখান থেকে এসেছে" । রূপকথার প্রতি আমার ভালো লাগাটা ছোট বেলা থেকেই । কিন্তু এত দিন পরে আমাদের সময়ের একজন লেখকের এত সুন্দর রূপকথার বই পড়ে অন্যরকম ভালো লাগলো। আর বই এর অলঙ্করনের জন্যে ব্যবহৃত ছবি গুলোও এত সুন্দর যে ওগুলোর দিকেই অনেক সময় তাকিয়ে থেকেছি । সব মিলিয়ে একটা কথা বলতেই হবে এত সুন্দর ভাবে লেখা, সব দিক দিয়ে সম্পূর্ণ একটা বাঙলা বই অনেক দিন পড়ে পড়লাম। লেখককে অনেক ধন্যবাদ এরকম একটা বই উপহার দেয়ার জন্যে। আশা করি সামনে তাঁর কাছ থেকে আরো সুন্দর সুন্দর বই পাবো ।
এই বইয়ের কথা জানতে পারি, খুব বেশিদিন হয়নি। দু'দিন আগেই হাতে পেয়েছি। ৯৬ পৃষ্ঠার বই, চাইলে এক বসাতেই শেষ করে ফেলতে পারতাম; ইচ্ছাকৃতভাবেই সময় নিয়ে শেষ করলাম। মাশুদুল হকের লেখার সাথে এর আগে পরিচয় হয়েছিল 'ভেন্ট্রিলোকুইস্ট' দিয়ে। তিনি ভালো লেখক, তখন থেকেই জানতাম। কিন্তু এই বইয়ে তিনি আসলেই অবাক করে দিয়েছেন। রূপকথার পরিচিত কাহিনীকে যেন একেবারেই ভিন্নভাবে উপস্থাপন করেছেন। সাথে আসিফুর রহমানের প্রচ্ছদ ও অংকন বইটিকে দিয়েছে ভিন্নমাত্রা; একদম শুরুতে তুলে ধরা ম্যাপটিও বাড়িয়ে দিয়েছে বইয়ের সৌন্দর্য। সবমিলিয়ে তাই সংগ্রহে রাখার মতো বই বলেই মনে হয়েছে মাশুদুল হকের 'বিলু কালু আর গিলুর রোমাঞ্চকর অভিযান'কে।
বাংলা আধুনিক রূপকথা ভান্ডারে অন্যতম একটি রত্ন হিসেবে সংযোজিত হবে এই বইটি, এ ব্যাপারে আমার কোন সন্দেহ নেই। যদিও রূপকথা মূলত শিশু সাহিত্য হিসেবে পরিগণিত হয়, একটি সার্থক শিশু সাহিত্য বাচ্চা থেকে বুড়ো সবাইকেই মোহিত করতে সক্ষম। আমার মতে লেখক এই গল্পের মাধ্যমে তা করতে সমর্থ হয়েছেন। তবে যেসব শিশু ঠাকুরমার ঝুলি শুনে আর চাঁদ মামার জাদুতে ঘুম্পাড়ানি মাসী পিসির কোলে ঘুমায়নি, তারা মনে হয়না খুব বেশি উৎসাহিত হবে। তবে এসব বঞ্চিত শিশুদের জন্যই দরকার বেশি বেশি রূপকথার উপন্যাস লেখা। অভিযানটা যত না বেশি বিলু, কালু আর গিলুর, তার থেকে বেশি গুরুতের। গুরুতের গুরুত্ব আমরা গল্পের শেষেই বুঝতে পারি। তার দরকার নেই রাজত্ব বা রাজকন্যা, সে ছুটে চলে অভিযানের নেশায়, নতুন কিছু আবিষ্কারের মোহে। ক্ষমতা মানুষকে যে ছোটলোকে পরিণত করে তা আমরা জানতে পারি সূচ্রাজার সরল স্বীকারোক্তিতে। রূপকথার গল্প মানুষ শিক্ষার্জনের থেকে বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে দেখতে বেশি পছন্দ করে। তবুও যদি কিছু নীতি শিক্ষা বাচ্চাদের গল্পের মাধ্যমে দেয়া যায়, সেটা দোষের কিছু নয়। লেখকের কাছ থেকে এমন আরো কিছু শিশু সাহিত্য আশা করছি।
চমৎকার রূপকথা! সত্যি বলতে কি, আমার ধারণা, ছোটদের চাইতে বড়রাই এই রূপকথা বেশি উপভোগ করবেন। কেননা লেখক প্রচলিত রূপকথা থিম ও ভাষা নিয়ে যে নিরীক্ষা চালিয়েছেন তা সাধারণত বড়রাই ধরতে পারবেন, যাদের ইতোমধ্যেই অনেক রূপকথার গল্প পড়া আছে।
ছোটবেলা থেকে এখন পর্যন্ত রূপকথা আমার খুব পছন্দের।💜 তবে কি ছিলো এটা!! ৯৬ পৃষ্ঠার বইটার ৯৬ টা পৃষ্ঠাতেই আমি দারুন মজা পেয়েছি। রাজপুত্র বিলু, সহিস পুত্র কালু, দাঁতছাড়া গিলু আর তাদের সাথে অভিযানে থাকা বীর গুরুৎ । তারা এক কাজ করতে গিয়ে আরেক কাজে আটকা পড়ে, ঐ কাজ শেষ হলে দেখা যায় অন্য ঝামেলা হাজির, তা মেটাতে গিয়ে অন্য রাজ্যে হয় বন্দি... আর এভাবেই চলতে থাকে অভিযান। তবে পুরা অভিযান জুড়ে ছিলো আমার বাচ্চাকাল থেকে পড়ে আসা স-ক-ল রূপকথার রূপ। যত রকম অদ্ভুত শব্দ, চরিত্র, নাম বাচ্চাদের রূপকথার ব্যবহার হয় তার সবই এখানে এত সুন্দর ভাবে যথা স্থানে ব্যবহৃত হয়েছে যে একদমই বেশি কম মনে হবে না। মাশুদুল হক কে অসংখ্য ধন্যবাদ, আমাকে অনেকবার বাচ্চাকালে নিয়ে যাবার জন্য 💜☺️ বইটিতে কাহিনীর সাথে আছে আসিফুর রহমান এর অসাধারণ অলংকরণ 😍। রূপকথার রাজ্য গুলোর এক মানচিত্র পেয়ে আমি সেই খুশি ☺️ । . প্রশ্ন ১: এখনকার বাচ্চারা কি বেঙ্গমা -বেঙ্গমী চিনবে??!! আমি অদ্ভূত সব নাম চরিত্র গুলো বইতে খুশি হয় দাগিয়ে রেখেছি। কিন্তু একটু খারাপ লেগেছে যে এখনকার অনেক বাচ্চারাই এ খুশিটা পাবে না। আমার নিজের ভাগ্নি মজাটা পেলো না, বই না পড়ে রেখে দিছে ☹️।
ছোট ভাইয়ের জন্মদিনে কি বই দেয়া যায় ভাবছিলাম। তখনই বুক স্ট্রিটের পেইজে এই বইটার পোষ্ট পেলাম। ভাইয়ের দশ বছর বয়স (এই গল্পের বিলু আর কালুর মতই), তাই বইটা অর্ডার দিয়ে দিলাম সাথে সাথে। বই আসার পড় ভাইকে দিলাম কিন্তু সে এখন খুব বিজি, পড়ে বইটা পড়বে সে। আমি নিজেই একটু নাড়াচাড়া করছিলাম বইটা, অবশ্য পড়ার ইচ্ছা ছিলনা; একেবারে বাচ্চাদের রুপকথা বলে। কিন্তু ওই নাড়াচাড়ায় ই কাজ হলো, এই বছরে এখন পর্যন্ত পড়া বেস্ট ৩ টা বইয়ের মদ্ধ্যে থাকবে এই বইটা। এমন চমৎকার গল্প, সব কিছুই এত্ত পারফেক্ট ছিল। স্টোরি, স্টোরিটেলিং, হিউমার সবকিছু একদম নিখুঁত। মাশুদুল হক ভাই এর এই তিনটা বই পড়লাম, তিনটাই খুব ভাল লাগল। অনেকদিন হয়ে গেল ভাইয়ের বই বের হয়না, অপেক্ষায় রইলাম!
কিছু কিছু গল্প থাকে যেগুলো ভাবায়, এই গল্পটি সেরকমই একটি গল্প। অনেক কথা আছে যেগুলোর ব্যাখ্যা আমরা কখনো ভাবতে যাই না, রূপকথার গল্পে শুনে শুনে হজম করে নিই, সেইসব বিষয় লেখক মাশুদুল হক খুব সুন্দরভাবে ভেবেছেন এবং উপস্থাপন করেছেন গল্পের মধ্যে। তার সাথে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে বইয়ের ভিতর থাকা সুদৃশ্য চিত্রকর্মগুলো।
দুর্দান্ত মজার এই রূপকথার অ্যাডভেঞ্চার শুরু হয় একটি রাজপ্রাসাদ দিয়ে। সেখান থেকে পলাতক হয় এক গল্প বলিয়ে জল্লাদ যে নিজেই নিজের গর্দান নেবার হুকুম পেয়েছে রাজার থেকে; বলাই বাহুল্য না পালিয়েও তার উপায় ছিল না কোনও! কিন্তু গল্প না শুনে তো থাকতে পারবে না রাজপুত্র আর তার বন্ধু সহিসপুত্র, তাই সামান্যভীতু হলেও তারা দুজনেই রাজপ্রাসাদের একমাত্র পালাতে না পারা বন্দীকে হুমকির মুখে পড়ে মুক্তি দেয় এবং যাত্রা শুরু করে জল্লাদকে খুঁজে বের করার। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা বুঝতে পারে অভিজাত্রার সুতো আর তাদের হাতে নেই! সেই আসামীর নির্দেশনায় ভাগ্যের টানে তারা এগিয়ে যেতে থাকে এক একটি অধ্যায়ের মধ্যে দিয়ে, এবং অবশেষে এসে গল্পের সমাপ্তিতে পতিত হয়।
গল্পটি পুরোমাত্রার রূপকথা তাতে কোনও সন্দেহ নেই, রূপকথা সম্পর্কে লেখকের জ্ঞান প্রশ্নাতীত এবং ভাবনার মাধ্যমে তিনি সবটুকু মেধাই কাজে লাগিয়েছেন একটি সামগ্রিক ছবি দেখানোর জন্য। সেখানে মাঝে মধ্যে আমি সশব্দে হেসে উঠেছি, মাঝে মধ্যে অবাক হয়ে ভেবেছি এটা কিভাবে হল, কখনো কখনো চিন্তায় কপাল কুঁচকেছি এর পড়ে কি হবে ভেবে!
বিলু, কালু এবং গিলুর রোমাঞ্চকর অভিযান একটি পুরো মাত্রার চমকপ্রদ, অনুমানাতিত প্লটের রূপকথার গল্প, যেটা রূপকথার ভেতরে থেকেই মজাদার সব আনন্দের মধ্যে দিয়ে ভাবতে বাধ্য করে। এবং শেষ পর্যন্ত গল্পের প্রতিটি প্রধান চরিত্র প্রমাণ করে দেয় যে তারা কাহিনীর প্রগতিতে নিজের ভূমিকা সঠিক ভাবে রাখছে, সেটা আসামী গুরুত-ই হোক কিংবা কালু, বিলু অথবা দাঁত ভাঙ্গা দু'বছর বয়সী হাঁতি গিলু!
লেখককে এরকম সুন্দর একটু গল্প উপহার দেবার জন্য ধন্যবাদ। রূপকথার প্রতি আমার দীর্ঘদিনের ভালোবাসা এই গল্পের মধ্যে দিয়ে একটি নতুন মাত্রা পেল।
একদিনেই শেষ হয়ে গেল পড়া। শুধু বিলু, কালু আর গিলুর না, পাঠক হিসেবে আমারও একটা রোমাঞ্চকর অভিযান হয়ে গেল কল্পনাতে।
রাজা-রানী, মন্ত্রী, রাজপুত্র, ডাইনী, কিম্ভূত প্রাণী, পক্ষীরাজ, পাহাড়-নদী-সমুদ্র, জাদুটোনা, মায়াবন সহ একটা রূপকথার গল্পে যা যা থাকতে পারে সবই রেখেছেন লেখক। এবং এত অদ্ভুত সুন্দরভাবে বিষয়গুলো বর্ণনা দিয়েছেন যেন এইগুলো হয়ত আসলেও আছে অন্য কোনখানে। এইগুলো আরো বাস্তব করেছে আসিফুর রহমান অসম্ভব সুন্দর চিত্রণগুলো। প্রতিটা অঙ্কনগুলো হাত বুলিয়ে দেখেও শান্তি লাগে।
বইয়ের অন্যতম ভালো লাগার আর একটা দিক এইটার কমেডি। ক্যারেক্টারগুলো ঠিক হাসানোর জন্য সংলাপ বলছে না, কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে সংলাপগুলো বলছে, এমনিতে জোরে হাসি চলে আসছে।
বত্ব, হাতির বাচ্চা যে এত কিউট হয় এই বই পড়ার আগে সত্যি জানতাম না। দাঁতছাড়া গিলুর দাঁত উঠার জন্য অপেক্ষা এখন।
darun lagse porte :D even if I am an adult now , still i enjoyed it very much :) it's like a modern fairy tale , where you meet witches ,Prince , Princess, pegasus and other fairy tale animals but the witch use magnet instead of spell !!! :D
দুই পাখাওয়ালা প্রাণী, নাম পক্ষীরাজ, এটাকে ঘোড়ার পিঠে জুড়ে দিলেই হয়ে যায় পক্ষীরাজ ঘোড়া! প্রয়োজনবোধে হাতির সাথেও জোড়া দেয়া যেতে পারে! নদীর নাম ‘তের’, কারণ তেরনদীর নিচে জন্মে জলজ কাঁকুড়, তার ফলের দৈর্ঘ্য বার হাত হলে, বীজ হয় তের হাত! চীন বাদ দিয়ে আর সব রাজ্যেরই কমন নাউন হল ‘অচিনপুর’, তা সে রাজ্যের নাম হোক কনকপুর, সুবর্ণপুর কিংবা মণিমালা! সদ্য এসব মজার মজার তথ্য(!) জানতে পেরেছি ‘বিলু কালু আর গিলুর রোমাঞ্চকর অভিযান’-বইখানা পড়ে। লিখেছেন মাশুদুল হক।
কনকপুরের রাজকুমারের নাম বিলু, কিন্তু রাজকুমার-সুলভ কোন ভাবভঙ্গি-ই নেই ওর মধ্যে। সে মাটিতে পা ছড়িয়ে মাটিতে বসে থাকে, সহিসপুত্র কালুর সাথে দিনরাত ঘুরে বেড়ায়, দাঁতহীন বাচ্চাহাতি গিলুকে আদর করে আর রাজকারাগারের জল্লাদের কাছে গল্প শোনে। এসব রাজার বড়ই অপছন্দ। কনকপুরের রাজা মানুষের গর্দান নিতে আবার খুব পারদর্শী, তাই তিনি গল্পবলিয়ে জল্লাদের গর্দান নেওয়ার হুকুম জারি করেন, কারণ তার গল্প শুনে শুনে কারাগারের সবার কাজ মাথায় উঠেছে। নিজের গর্দান নিজে নেওয়ার ভয়ে জল্লাদ সোলেমান পালিয়ে যায় কনকপুর থেকে, তাকে খুঁজতে বের হয় বিলু, কালু আর গিলু। তাদের সাথেই বের হয় বন্দি রাজকুমার গুরুৎ, এভাবে করে বিলু, কালু আর গিলুর অ্যাডভেঞ্চার শুরু হয়ে গেল।
বীর গুরুতের সাথে ওরা ঘুরতে থাকে মণিমালা রাজ্যে, মায়াবনের গভীরে; ওরা বন্দি হয় কাঁচরাজ্যে, ভালমানুষদের রাজ্য কুঞ্জপুরের ভালোবাসা পায়, চড়ে ভয়ানক নীলগিরি পাহাড়ের চুড়ায়। গুরুৎ কাউকে ভয় করে না, কুড়াল সাথে থাকলে ও যে কাউকে হারিয়ে দিতে পারে। মণিমালা রাজ্য থেকে জাদুর কৌটা খুঁজে নিয়ে গুরুৎ নিজের রাজ্যে, একরাজ্যে যায় দশ বছর ধরে ঘুমিয়ে থাকা রাজকন্যা লীলাবতীর ঘুম ভাঙাতে। একরাজ্যে গিয়ে বিলু, কালু আর গিলু খোঁজ পায় সোলেমানের, আর শোনে ওদের কনকপুরের সবাই এক জাদুকর বুড়োর মন্ত্রে সম্মোহিত হয়ে এখন গভীর ঘুমে। শেষমেশ নিজেদের রাজ্যে গিয়েই শেষ হয় ওদের রোমাঞ্চকর অভিযান, যেখানে ওদের দেখা হয় স্বয়ং অভিমানী চাঁদমামার সাথে! অ্যাডভেঞ্চার শেষ হয়ে যাওয়ার পরও অনেকদিন ধরে ওদের মনে পড়ে এ অভিযানের কথা, বীরপুরুষ গুরুতের মনে পড়ে বিলু, কালু আর বাচ্চা হাতি গিলুকে; যেমন ওরা তিনজন কখনো উদাস হয়ে পড়ে সেই বীরপুরুষকে মনে করে...
‘বিলু কালু আর গিলুর রোমাঞ্চকর অভিযান’- নিঃসন্দেহে একটি চমৎকার রূপকথার বই। কিন্তু এটা একেবারে বাচ্চাদের বই নাকি এ বিষয়ে কিছু সন্দেহ থাকে। বইয়ের গল্প যথেষ্ট পরিণত, এবং অনেকক্ষেত্রে বেশ ঘোরালো। বাচ্চারা পড়লে এ বইয়ের প্রধান পাঞ্চগুলোই ধরতে না পারার সম্ভাবনা আছে। আমার মনে হয়েছে বইটা পড়ে পূর্ণ মজা পাবে কিশোররা, যাদের বেশ ভালো পাঠাভ্যাস আছে, তারা। মাশুদুল হকের রূপকথার পঠনপাঠন যে খুব উঁচু পর্যায়ের তা এ বইয়ের সহজ নিরীক্ষাগুলো থেকেই ধারণা পাওয়া যায়। রূপকথার উপাদানগুলো নিয়ে যে এক্সপেরিমেন্টগুলো করা হয়েছে, তা একেবারেই আরোপিত মনে হয়নি। তার লেখায় চমৎকার উইটের ঝলকানি আছে।
বইটি প্রকাশ করেছে আলেকজান্দ্রিয়া, ২০১৩ একুশে বইমেলায়। বইয়ের প্রচ্ছদ এবং অলঙ্করণ করেছেন আসিফুর রহমান, অসাধারণ কাজের জন্য তিনি প্রায় লেখকের সমান ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।
বাংলা রূপকথা রচনায় এ ধরণের কাজ একদম নতুন। রাজকুমার বিলু, সহিসপুত্র কালু, দুই বছরের বাচ্চা হাতি গিলু আর বীরপুরুষ গুরুতের গল্প শুনতে শুনতে পৃষ্ঠা উল্টে যায় সহজ আকর্ষণে। অনেকদিন মনে রাখার মত একটা বই- ‘বিলু কালু আর গিলুর রোমাঞ্চকর অভিযান’
This entire review has been hidden because of spoilers.
বইটা পড়তে একটু দেরী হয়ে গেলো। কিন্তু যখন পড়তে শুরু করেছি পাতা গুলো তরতর করে শেষ হয়ে যাচ্ছিলো। শিশুতোষ ট্যাগ পাওয়া বইটি আসলে পড়ুয়া যে কারোরই ভাল লাগবে আমার মনে হয়। লেখক বইটির জন্য পেয়েছেন কালি ও কলম পুরষ্কার। বলাই বাহূল্য যথার্থ! সবাইকে বইটি পড়ার আমন্ত্রণ।