This is a collection of articles written for a newspaper by Acclaimed Film Director Rituparno Ghosh in his memory after his death early this year. The book is published in two volumes and segregated according to the topics (Political, Film making, Personal memoirs etc.)
''The room is still the same, just the picture is tilted.. Unlike the lost monsoon’s last hours... There were rain-drenched flowers in the garden... Morning glory showers!''
ঋতুপর্ণ ঘোষের ফাস্ট পার্সন প্রথম পড়েছিলাম সম্ভবত দু'হাজার পনেরোতে, প্রবাসজীবন যাপনকালে, ই-বুক হিসেবে। ক'মাস আগে ফের পড়া, এবার শক্তপোক্ত বই, এক সদ্য প্রবাসিনী ভগিনীর বিদায়ী উপহার হিসেবে দেয়া। এ বেলা সেই ভদ্রেকে আরেকদফা ধন্যবাদ জানিয়ে রাখছি।
রোববারের পাতায় উত্তম পুরুষে, প্রায় সাতবছর ধরে লেখা ঋতুপর্ণের এই আত্মকথন মৃত্যুর পরে বেরোয় দেজ পাবলিশিং থেকে। আয়তনের স্ফীতিতে প্রকাশক যাকে ভাগ করে নিয়েছেন দু'খণ্ডে, বারোটি অধ্যায়ের আড়ালে। ফাস্ট পার্সন ঋতুর নিরাভরণ অন্তরমহলের অবারিত আলাপন। তাঁর ভাষাই ধার করে বলি-- এই ‘ফার্স্ট পার্সন’-এর পাতাটা আমার সত্যি কথা লেখার পাতা, আমার জীবনধারণের সমস্ত সত্যি বিশ্বাসকে মেলে ধরার পাতা।
সাপ্তাহিক কলমকারির এই একান্ত আলাপে কখনো এসেছে সিঙ্গুর, সিপিএম, ইস্টবেঙ্গলের হারজিত বা জ্যোতিবসুর প্রয়াণ, এসেছেন তসলিমা নাসরিন, দিল্লির নির্ভয়া, বাবরি মসজিদের রায়, ছেলেবেলায় দূরদর্শনে শনি আর রবিবার সন্ধ্যার সিনেমা... এলোমেলো ভাবনায় এসেছে সবই। আছে সুচিত্রা মিত্র কিংবা সত্যজিৎ রায়কে নিয়ে অবিমিশ্র তর্পণ। যাঁর ছবি দেখেই ঋতুপর্ণ ঠিক করেছিলেন বড় হয়ে 'ছবি করিয়ে'ই হবেন। রামায়ণ আর মহাভারত ঋতুপর্ণের ভীষণ প্রিয়, তাই শ্রীরামকৃষ্ণ থেকে গান্ধারী, দশরথের প্রায়োপবেশনের উল্লেখও হয়েছে নানা আলোচনায়।
চলচ্চিত্রকার ঋতুপর্ণ ঘোষের যে ব্যক্তিগত জীবন, সে অংশ নিয়ে বাঙালি আজীবন ভুগেছে বিবমিষাময় কৌতুহলে। সেই জিজ্ঞাসার জানালা জানায় রেগুলার সেক্সলাইফ নেই বলে জিম ট্রেইনারের অভিযোগ, তেমনি সোগোভিয়ায় হে ফেস্টিভ্যালে আয়োজকদের 'ইন্টিমেট ইন্টেলেকচুয়াল কোম্পানি'র অযাচিত অফার।
উন্মোচনের এ খেরো খাতায় বারংবার এসেছেন চিরপ্রণয়ী রবীন্দ্রনাথ, যাকে অনমন্য জীবনে, চেতনে- অবচেতনে, হন্যমানে শরীরে লালন করেছেন ঋতু। বলেছেন-- রবীন্দ্রনাথ যখন পড়ি, তখন মনে হয় গোটা বাংলা ভাষাটাই তার রাজধানী। কেবল তার সিংহাসনটা খুঁজে পাইনা, সে কি কবিতায়, না প্রবন্ধে,না চিঠিতে, না গল্পে, কে জানে!
বিশে ফেব্রয়ারিতে লেখা সেই একই কিস্তিতে আবারো ফিরেছেন প্রিয় শক্তি চাটুজ্জের কাছেও। 'সে কি জানিতো না যত বড় রাজধানী, তত বিখ্যাত নয় হৃদয়পুর।' রেইনকোট ছবিতে ব্যবহারের জন্য অনুবাদ করেছিলেন যে কবিতাখানা, নিজেই। তেমনি ফিরেছেন জয় গোস্বামীতেও, 'মালতীবালা বালিকা বিদ্যালয়' নিয়ে, স্মৃতিকাতর বিমুগ্ধতায়।
আছে আত্মস্বীকারোক্তি সম্পাদক এবং চিত্রপরিচালক হিসেবে উজ্জ্বলতম নক্ষত্রের রূপ বদলে, হঠাৎ করে ক্যামেরার সামনে আসার। আছে ভ্রমণের বিশদ গল্প, জোহানসবার্গ থেকে কোণার্ক, ইসরায়েল থেকে পুরী বা মাদ্রিদ অথবা শান্তিনিকেতন। কখনো নেহায়েত শুটিঙের দরকারে, কখনো বিজয়ীর বেশে, ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল শেষে...
আর আছেন মা। এবং বাবাও। মা আছেন একান্ত আশ্রয় হিসেবে, সদা সবত্র। যাঁকে হারিয়ে বুঝেছিলেন কাছের মানুষকে হারানো কতটা অসহনীয় বেদনাময় হতে পারে। আজীবন তবু মা-ই ছিলেন ঋতুপর্ণের সমস্ত আকাশ জুড়ে, ভারতের আদালতে সমকামিতা বৈধতা পাবার সেই বিজয়মুহূর্ত থেকে শুরু করে পুরোনো জেরুজালেমের দি পাথ অফ পেইনে.. যে রাস্তায় যিশু ক্রশ নিয়ে হেঁটেছিলেন, ঋতু হেঁটেছেন মাকে সঙ্গে নিয়ে। মনে মনে।
চিহ্নবিদ্ধ সত্তাকে নিয়ে জীবনের শেষদিন অব্দি প্রথার বাইরে বাস করার তাঁর যে নিজস্ব সিদ্ধান্ত, স্বভাবপ্রণোদিত অস্বাভাবিকতার যে ট্রাজেডি সমাজের সামনে তাঁকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে আজন্ম, ফার্স্ট পার্সন-ই তো ছিল সেই একা জীবনকে মেলে ধরার পাতা। সে পাতা ফুরোনোর আগেই, অনন্ত উড়ালপুল পাড়ি দিয়ে মা আর বাবার বিরহে কাতর ঋতুপর্ণ সাততাড়াতাড়ি কি তবে ফিরে গেছেন তাঁদের কাছেই, বহুকাল ধরে হাতড়ে বেড়ানো সেই দিকশূন্যপুরে?
এই বইয়ের, সত্যি বলতে কি, রিভিউ হয় না। যেমন রিভিউ হয় না পেঁজা তুলোর মতো মেঘ আর নীল আকাশের, বা ফুচকায় দেওয়া টক জলের, বা চাঁপাফুলের গন্ধের। 'রোববার'-এ এই লেখাগুলো যখন পড়তাম, তখন ভালো-লাগা, আর এক ব্যাখ্যাতীত মন কেমন অনুভব ভরিয়ে তুলত ভেতরটাকে। কোনো জ্ঞানের কথা থাকত না। থাকত কিছু ভাবনা, স্মৃতি, স্বপ্ন, দুঃস্বপ্ন, আশা, আশঙ্কা, ভালোবাসা, খারাপবাসা (এই বড়িশালি লব্জটি ব্যবহার করতে বাধ্য হলাম)... যাদের গদ্যে ফোটাতে গেলে অন্য কেউ করে ফেলতেন "শুষ্কং কাষ্ঠং", কিন্তু ঋতুপর্ণের হাতে যারা হয়েছিল " সরস তরুবর"। একদা এক বিদগ্ধ লেখকের সঙ্গে প্রবল তর্কে ব্যাপৃত হয়েছিলাম এই নিয়ে যে "মুক্তগদ্য সাহিত্য কি না"। এই বইটিতে আরও একবার লেখাগুলো পড়তে গিয়ে মনে হল, এরা যদি সাহিত্য না হয়, তাহলে সাহিত্য কী??? যদি বাংলা সাহিত্যের একটি অনুপম সম্পদ তথা এক অকালপ্রয়াত ও অপবাদলিপ্ত প্রতিভার অন্তরমহলের অকুণ্ঠ রূপের সঙ্গে পরিচিত হতে চান, তাহলে এই বইটি অতি অবশ্যই পড়ুন। দে'জ পাবলিশিং এটিকে যেভাবে আমাদের সামনে তুলে ধরেছে, তাকে প্রকাশনার গোল্ড-স্ট্যান্ডার্ড বলা চলে, এও স্বীকার্য। তাই সেই 'রোববার'-গুলো আপনার সংগ্রহে থাকলেও আমি অনুরোধ করব, এই দুটো খণ্ডই কিনতে। তবে হ্যাঁ, অল্প-অল্প করে পড়বেন। নইলে মনটা এত ভিজে যাবে, যে কাজকম্মো না করে শুধু আকাশের দিকে তাকিয়ে বসে থাকবেন, এবং অলস, আরামপ্রিয়, অকম্মার ঢেঁকি ইত্যাদি বিশেষণ জুটবে। পড়ে ফেলুন তাহলে।
কিছু মানুষ থাকে, যাদের সম্পর্কে লিখতে গেলে, বলতে গেলে অনেক ভাবতে হয়। কিছু বই থাকে, যেসব বই নিয়ে কিছু বলতে গেলে ভাবতে হয় ঠিক কি বলবো।
ঋতুপর্ণ ঘোষকে আমরা সবাই সিনেমা পরিচালক হিসেবেই চিনি। লেখক হিসেবে নয়। তিনি নিজেও চিনতেন কিনা জানি না। তবে নিজের সিনেমার চিত্রনাট্যগুলো তো তাঁরই লেখা। সে হিসেবে লেখার অভ্যাস তাঁর পুরাতন।
অনিন্দ্য-চন্দ্রিলদের 'রোববার' এর সঙ্গে ঋতুপর্ণ জড়িত ছিলেন অনেকদিন। কিছুদিন সম্পাদকের দায়িত্বেও ছিলেন। সেখানে 'ফার্স্ট পার্সন' শিরোনামে সম্পাদকীয় লিখতেন। এরপর সম্পাদকের চেয়ারে না থাকলেও লেখা চালিয়ে গেছেন। সে সবের সঙ্কলনই এই বই।
লেখাগুলোকে বিষয়ভিত্তিক ভাবে সাজানো হয়েছে। শুরুটা সিঙ্গুর নন্দী গ্রামের সেই ভয়াবহ ঘটনা দিয়ে। পশ্চিমবঙ্গের সেকালের খবর যারা রাখতেন, তারা বুঝতে পারবেন। নিপীড়িত মানুষের জন্য লেখায় ঋতুপর্ণর কলমের এই শাণিত লেখাগুলো দারুন বিস্ময়কর। মানুষের মন নিয়ে 'প্যানপ্যানে' সিনেমা করা লোকটা এভাবে তীব্র কষাঘাত করতে পারে জানা ছিল না।
ভেবেছিলাম পুরো লেখাই হয়ত এমন হবে। কিন্তু তা নয়। এখানে আছে তাঁর সিনেমা করার গল্প। পরিবারের কথা। পরিবার বলতে মা-বাবা। দুজনকেই গভীরভাবে ভালবাসতেন ঋতু। ভালবাসতেন আরেকজনকে, তিনি রবি ঠাকুর।
সিনেমা নিয়ে উড়ে গেছেন পৃথিবীর নানা প্রান্তে। সেই ভ্রমণের গল্প লিখেছেন। কান চলচ্চিত্র উৎসব থেকে জেরুজালেম। লন্ডনের রাস্তায় ঘুরেছেন। আবার কখনও নিজের দেশেরই কোন শহরে। তাই বলে নিজের বাড়ির কথা ভোলেন নি ���খনও। টিপু সুলতানের ছেলের নামে করা রাস্তাটায় ফিরে এসেছেন বারবার।
উঠে এসেছে সিনেমা করার কথা। প্রসেনজিৎ থেকে ঐশ্বরিয়া, টোটা থেকে অজয়। অমিতাভের কথা আছে অনেকবার। সহকর্মী অনিন্দ্য, এমনকি নিজের ড্রাইভারের কথাও বাদ পড়েনি।
লেখার পরতে পরতে তাঁর চিন্তার গভিরতা ফুটে উঠেছে। তাঁকে নিয়ে মানুষের যে সবচেয়ে আগ্রহের বিষয়, তাঁর যৌনতা, সে নিয়ে লিখেছেন যতটুকু প্রয়োজন। যা বিশ্বাস করেন, বলেছেন স্পষ্ট করে। সূক্ষ্ম অনুভূতি আর সুরুচির মিশেলে বইয়ের পাতাগুলো ভরে আছে। যেভাবে মা আর বাবার কথা বলেছেন, কি অদ্ভুত মমতা যে সেখানে ছড়ানো, তা কেবল অনুভব করার।
২০০৬ এর ডিসেম্বর থেকে ২০১৩ এর জুন পর্যন্ত পশ্চিম বাংলার একটি পত্রিকায় সাপ্তাহিক প্রকাশিত হতো ঋতুপর্ণ ঘোষের লেখা ফার্স্ট পার্সন।পরে সব লেখা একত্র করে ধারাবাহিক সাজিয়ে “ফার্স্ট পার্সন-ভলিউম এক” ও “ফার্স্ট পার্সন- ভলিউম দুই” প্রকাশিত হয়।ঋতুপর্ণ ছিলেন একাধারে লেখক,চলচিত্র পরিচালক ও গীতিকার। ফার্স্ট পার্সনে মূলত তিনি নিজের দৈনন্দিন জীবন কে নিয়ে বেড়ে ওঠা খুঁটিনাটি জড়ো করেছেন।সারা পৃথিবীকে দেখতে পাওয়া যায় এমন আত্ন-অনুসন্ধানী দৃষ্টির অব্যর্থ ছায়াপথ তার প্রতিটি লেখায়। প্রথা ভেঙে বেরিয়েছেন নিজস্ব নির্জন ভঙ্গিমায়-“এই ‘ফার্স্ট পার্সন’-এর পাতা আমার সত্যি কথা লেখার পাতা, আমার জীবনধারণের সমস্ত বিশ্বাসকে মেলে ধরার পাতা।তাই আজ একা মানুষদের অভিজ্ঞতা দিয়ে একটা সংখ্যা গাঁথতে গিয়ে যদি নীজের একাকী জীবনের প্রায় স্বতঃসিদ্ধ কারনটাকেই সযত্নে এড়িয়ে যাই তা হলে তা তো সত্যগোপন হল।আমার কাছে তা মিথ্যাচারণেই নামান্তর।” এই কথা গুলোর মাঝে লুকিয়ে আছে ‘ফার্স্ট পার্সন’ এর আত্না,যা মুহূর্তের জন্য পথভ্রষ্ট হইনি সত্য থেকে।
বিদেশ বিভূঁইয়ে রাস্তায় হুট করে অচেনা লোকের মুখে বাংলা কথা শুনে ঘাড়টা যেমন ৪৫ ডিগ্রী ঘুরে যায়, কোনদিন না দেখা লোকটাকে মন থেকে ভাই ডেকে ফেলি, এই বইটাও ঠিক ততটাই আপন। গতমাসের শেষ থেকে যে ঝড় ঝাপটার সামনে পড়েছি, তা থেকে মনকে রক্ষা করেছে ঋতুর কলমশিল্প। আমার মতো মামুলি থার্ড পারসনকে ফার্স্ট পারসন দিয়ে রক্ষা করবার জন্য ধন্যবাদ ।
ঋতুপর্ণ ঘোষের ফার্স্ট পার্সন পড়ে শেষ করলাম।বইটি দুই খন্ডে প্রকাশিত। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো দুই খন্ডের সংযুক্তি অটুট রাখতে দ্বিতীয় খন্ড শুরু হয়েছে ২৭৫ পৃষ্ঠা থেকে। সাধারণতঃ আমি জার্নাল পড়তে ভালবাসি। তা যদি হয় ঋতুপর্ণ ঘোষ, সৈয়দ শামসুল হক, নবনীতা দেবসেনের লেখা। ফার্স্ট পার্সন কলকাতার রোববার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ৭৬৭ পৃষ্ঠার বই পড়তে পড়তে মনে হয়েছিলো তাঁর নির্মিত চলচ্চিত্রের মতোই তাঁর গদ্য ও ঘটনার বিন্যাস আবেগীয়। নন্দীগ্রামের ঘটনা উপস্থাপন মনে হয়েছে প্রতিবাদী এক চরিত্র। সরকার আয়োজিত ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে না গিয়ে অসহযোগ। শব্দ নিয়ে খেলা করেছেন। পিটিয়ে ছাল তোলার সাথে চামড়া, স্কিন ও ত্বক ইত্যাদি শব্দের ব্যবহার নিয়ে মধ্যবিত্ত চরিত্রের যৌনরোগ নিয়ে বিজ্ঞাপনী ভাষার চমৎকার উদাহরণ দিয়েছেন। ঋতুপর্ণের বাবা-জেঠারা ছিলেন পূর্ববঙ্গের, সেইসূত্রে তাঁর বাঙ্গাল মেজাজ ও ভাষাটা মায়ের দিকের বলে মনে করতেন। স্কুলে ভর্তি হতে গিয়ে সৌর নীল পাল্টে নিজের পছন্দের নাম ঋতুপর্ণ নিজেই দিয়েছেন।
ঋতুপর্ণের বাবা মায়ের সাথে, তাঁর সম্পর্ক, তাদের প্রতি টান,অসুস্থ মাকে অনেক কিছু দেখাতে না পারায় আক্ষেপ বার বার অণুরনিত হয়েছে। বয়স্ক সন্তানের সাথে মা বাবার এমন সম্পর্ক ঘরে ঘরে অটুট থাকুক। বইটিতে মকবুল ফিদা,সরস্বতীর উলঙ্গ ও নগ্ন মূর্তি, ঋতুপর্ণ ঘোষের দিদার রাধাকৃষ্ণের মূর্তির প্রসংগ মিলিয়ে যে ব্যাখ্যা তা পড়ে হিন্দু মৌলবাদীদের লজ্জা পাওয়ার কথা। "রোমিলা থাপারের ইতিহাস বইয়ের নিষ্ঠুর সম্পাদনা যে কোনও দেবীর বস্ত্রহরণের থেকে কম ভয়ঙ্কর নয়, এ নিয়ে সংশয়ে কোনও দিন কেউ কোনও কথা বলেছেন?"--- এ তো রাজনীতির সর্বজনীন পরিস্থিতি। "ভিড় কথাটার মানে 'জনগোষ্ঠী'। আমরা কেবল অসহিষ্ণুতা দিয়ে শব্দটার মানে পাল্টে করলাম অপাংক্তেয় মানুষ।" মানুষকে ভালবাসার চমৎকার উদাহরণ। বইটি থেকে এমন শতেক উদ্ধৃতি দেয়া যাবে। বিভিন্ন দেশ ভ্রমণে ঋতুপর্ণ ঘোষের পর্যবেক্ষণ ভিন্নধর্মী। উপভোগ করেছি। ইসরাইলের ভিসা ও ভ্রমণ অভিজ্ঞতার কাহিনী তো অসাধারণ! একটা পত্রিকায় নিয়মিত কলামের সব কিছু বইয়ে সংযোজন না করাই শ্রেয় কারণ কিছু থাকে নিত্যদিনের তাৎক্ষণিক ও সাময়িক বিষয় মাত্র। বইটা কলেবরে বড় বলে কোন কোন স্মৃতিচারণ একাধিক বার হয়েছে। লকডাউনে ঋতুপর্ণ ঘোষের ফার্স্ট পার্সন পড়তে পড়তে মনে হয়েছে লেখকের সাথে আড্ডায় আছি। দে'জ পাবলিশিং এর এ বইটি পরিকল্পনা ও সম্পাদনায় নীলা বন্দ্যোপাধ্যায়।
"দ্যা ঋতুপর্ণ ঘোষ" কে আমি প্রথম দেখি বা বলতে গেলে তাঁর সম্পর্কে জানতে পারি "স্টার জলসা" চ্যানেলে প্রচারিত "ঘোষ এন্ড কোম্পানি" অনুষ্ঠানে।তাঁর মায়া মায়া চাহনী আর সুন্দর বাচনভঙ্গি এর ভক্ত হয়ে যাই নিমিষেই। টেকো মাথায়ও এই মানুষটি কে কী যে ভয়ংকর সুন্দর লাগত,প্রখর ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মনে হত। তখনই জানতে পারি "উনিশে এপ্রিল", "উৎসব" যা টেলিভিশনের পর্দায় দেখেছি এগুলো তাঁর ছবি।কলেজে পড়াকালীন সময়ে সিডি কিনে তাঁর বাকি ছবি গুলো দেখেছিলাম। যে মুগ্ধতা কাজ করতো ওঁর 'ঘোষ এণ্ড কোম্পানি' এপিসোডে বাচনভঙ্গি আর আদুরে গলা শুনে ঠিক একই ভাবে মুগ্ধ হয়েছিলাম তাঁর কাজ গুলো দেখে,"চিত্রাঙ্গদা" ছবি তে তাঁর অভিনয় দেখে। কিন্তু কখনো ভাবিনি তাঁর মৃত্যুর এত বছর পর আবার তিনি আমাকে ঠিক একইভাবে মুগ্ধতার রেশে আবদ্ধ করবেন তাঁর লেখনীর মাধ্যমে।তিনি নিজেও বোধহয় জানতেন না কি অসাধারণ লেখনী শক্তি তাঁর।শেষ কবে কোনো বইয়ে ভাষার এত সুন্দর ব্যবহার দেখেছি বলতে পারবো না। মনে হচ্ছিল বই এর পাতা থেকে উঠে এসে তিনি তাঁর আদুরে কণ্ঠে বলে চলেছেন আর আমি বিহবলের মত শুনছি।বলছিলাম ঋতুপর্ণ ঘোষের লেখা আত্নজৈবনিক মূলক গ্রন্থ "ফার্স্ট পার্সন" এর কথা। রোববারের পাতায় প্রায় সাতবছর ধরে লেখা ঋতুপর্ণের এই আত্মকথন তাঁর মৃত্যুর পর বই আকারে দু'টি খন্ডে প্রকাশ করে দেজ পাবলিশিং। বারটি অধ্যায় এর আড়ালে উঠে এসেছে তাঁর চিন্তাভুবনের বহুমাত্রিকতা৷ পাঠক হিসেবে তাঁর লেখার সাথে এটাই প্রথম পরিচয় আমার।কিছু কিছু বই এর রিভিউ হয় না ফার্স্ট পার্সন তেমনি একটি বই।একজন মানুষের মধ্যে এতোটা মুগ্ধ করবার মত উপাদান কিভাবে ঠাসা থাকতে পারে আমি ভেবে পাইনা। তাঁর বাচন,তাঁর কাজের ধারা, নিজের বিশ্বাসটাকে সবার সামনে সততার সাথে প্রকাশ করতে পারার সাহস,সব কিছুতেই আমার বিস্মিত ভালোলাগা, মুগ্ধতা। তাঁর লেখার পরতে পরতে রয়েছে এক চৌম্বকীয় ক্ষমতা।আর প্রতিটা শব্দজুড়ে রয়েছে মায়া,কি ভীষণ মায়া। ঋতুপর্ণ ঘোষ যদি আত্মজীবনী লিখতেন তাও হয়তবা তাঁকে এত ভালো করে বোঝা যেতো না যতটা তাঁকে বোঝা যায় ফার্স্ট পার্সনের মাধ্যমে। ফার্স্ট পার্সনের নানান শিরোনামের হাত ধরে লেখক নানান বিষয়ে লিখে গেছেন। কী নেই এতে? রাজনীতি, ধর্ম, বাংলাভাষা এবং কিছু শব্দের উৎপত্তি নিয়ে ভাবনা, ফেমিনিজম,রবি ঠাকুর,সত্যজিৎ রায় কিংবা জয় গোস্বামীর কবিতা, হালের তসলিমা কিংবা দিল্লীর নির্ভয়া কী নেই তাঁর লেখায়।
রবি ঠাকুরকে ভালোবাসতেন, নিজের মধ্যে ধারণ করতেন তাই তাঁর জীবনে রবীন্দ্রনাথের এক বিশাল প্রভাব দেখা যায়, যেটি ফুটে উঠেছে তাঁর লেখার পাতায়। আর সত্যজিৎ কে মেনে ছিলেন গুরু, তাই হয়তো ঘোষ কে রায় সাহেবের পর শ্রেষ্ঠ পরিচালক হিসেবেই ধরা হয়।
মহাভারত ছিল তাঁর ভীষণ প্রিয়,তাঁর লেখায় প্রায় চলে এসেছে মহাভারতের নানা কাহিনি, আমার এই ব্যাপারে ধারণা কম বলেই হয়ত অনেক কিছু বুঝতে পারি নি তবে পড়তে কিন্তু একটুও মন্দ লাগে নি।
তাঁর এই আড্ডায় বাদ যায়নি শেখ মুজিবও,একজন বাংগালী রাষ্ট্রপ্রধানের সাথে বাংলায় কথা বলতে না পারার কি নিদারুণ আফসোস ছিলো ঋতুপর্ণের।
আছে তাঁর সিনেমা করার কথা।সিনেমা নিয়ে উড়ে গেছেন পৃথিবীর নানান প্রান্তে, কিন্তু বার বার ফিরে এসেছেন টিপু সুলতানের ছেলের নামে করা রাস্তায়। বারবার ভূষিত হয়েছেন জাতীয় সম্মানে।
তাঁর ভাষায় "এই ফার্স্ট পার্সন এর পাতা টা আমার সত্যি কথা লেখার পাতা,আমার জীবনধারণের সমস্ত সত্যি বিশ্বাস কে মেলে ধরার পাতা" তাই ফার্স্ট পার্সনের পাতায় তিনি মেলে ধরেছেন সেই ব্যক্তি ঋতুপর্ণ ঘোষ কে যার ব্যক্তিজীবনের প্রতি ছিল মানুষের আগ্রহ ছিলো তুঙ্গে। নিজের যৌনতা ও লিঙ্গ পরিচয়ের সঠিক রূপ রক্ষণশীল সমাজের সামনে সাহসিকতার সাথে খোলামেলা ভাবেই লিখেছেন।তাঁকে কম আঘাত করেনি মিডিয়া কিংবা সমাজের স্বাভাবিক জীবন পাওয়া অতি কৌতুহলি মানুষগুলো। সেই ব্যাথাও ফার্স্ট পার্সনের অক্ষরে লেপ্টে আছে।কিন্তু একজন ঋতুপর্ণের নিজেকে প্রকাশে সাহসের প্রেরণা ছিলেন তাঁর মা এবং বাবা। বইটি জুড়েই যাঁদের আসা যাওয়া।
ফার্স্ট পার্সন বইটি নিয়ে আমার আদিখ্যেতার শেষ ছিলো না,একবছর আগে কেনা বই এতদিন রেখে দিয়েছি লম্বা সময় নিয়ে আস্তে আস্তে পড়ার জন্য।তাই এই কোয়ারেন্টাইনের এতগুলো দিন ঋতুপর্ণ কে নিয়েই কাটিয়ে দিলাম,কিন্তু বিন্দুমাত্র বোর হয় নি।বই এর মলাট টাও এত ক্লাসি, মলাট দেখেই এই বইকে জাজ করে ফেলতে পারবেন :') বইটি অল্প অল্প করে সময় নিয়ে পড়তে হয়,কারণ বই টি পড়ার সময় অনেক গুলো চিন্তা খেলা করে যে। অদ্ভুত মায়ায় জড়ানো বই,আমার কাছে পরিচালক ঋতুপর্ণের চেয়ে লেখক ঋতুপর্ণকেই বেশী অসাধারণ মনে হচ্ছে।কিন্তু আফসোস তাঁর আর কোন লেখা আমরা পাই নি। বড় অসময়ে, বড় তাড়াতাড়ি চলে গেলেন মানুষের মন নিয়ে ছবি বানানো লোকটি।
ঋতুপর্ণ ঘোষের ফার্স্ট পার্সন কোনও সাধারণ আত্মজীবনী নয়—এটি এক আত্মানুসন্ধানের গহন ভ্রমণ, যেখানে লেখক নিজেকেই deconstruct করে দেখেন — প্রচ্ছন্নতা, পিপাসা, প্রেম আর পরিচয়ের কাঠামোয়। বইটি পড়ে প্রথমেই মনে হয়, এটি নিছক গল্পগাথা নয়, বরং এক নির্মম স্বীকারোক্তিমূলক আর্তনাদ। এমন নয় যে লেখক “আমি কী করেছি” বলার জন্য এই বই তৈরি করেছেন; বরং তিনি যেন জিজ্ঞাসা করেন, “আমি কে?” এবং এই জিজ্ঞাসা থেকেই গড়ে ওঠে এই রচনার ভিত, যা একদিকে শিল্পচর্চার আত্মপক্ষ, আর অন্যদিকে ব্যক্তিগত যাপনের রাজনৈতিক ভাষ্য।
ঋতুপর্ণের ভাষা এখানে দুরূহ নয়, কিন্তু গাঢ়। কোথাও তা কবিতার মতো ধীরে গলে, কোথাও তা ব্লেডের মতো ফালাফালা করে। এক জায়গায় লেখক বলেন, “আমার শরীর পুরুষের, মনে নারী; কিন্তু আমার আত্মা মানুষ। আমি সেই আত্মার গল্প বলি।” এই একটি বাক্যই যেন বইয়ের central core । আত্মার প্রতি এই বিশ্বস্ততা তাঁর লেখাকে শুধু স্মৃতিকথার গন্ডিতে আবদ্ধ রাখে না, বরং করে তোলে আত্মদর্শনের দলিল।
লেখার টোন কখনো বিষাদময়, কখনো রাগত, কখনো বিষম নীরবতায় ঘেরা। তাঁর কথার মধ্যে থাকে একজন queer শিল্পীর প্রাত্যহিক যাপন —যেখানে সমাজের চোখে প্রাসঙ্গিক থাকা, ভালোবাসায় জড়ানো, তারপরে নিজেকেই বুঝে ওঠা — সবকিছু একসঙ্গে অনুরণিত হয়। কখনও আবার লেখক সিনেমার দিকে ফিরে যান। উৎসব, চোখের বালি, আরেকটি প্রেমের গল্প — এইসব ছবি কেবল সিনেমা নয়, তাঁর ব্যক্তিগত অনুভবের ও প্রান্তিক অভিজ্ঞতার প্রতিলিপি। তিনি নিজেই বলেন, “আমি নিজের গল্পই তো বারবার লিখেছি, শুধু চরিত্র বদলেছে।” যেন এই বইটিও একটি চিত্রনাট্য—এক লং টেক—যেখানে দৃশ্য কাট হয় না, আলোও নিভে যায় না।
এই বইয়ে ভালোবাসা, সম্পর্ক ও ভাঙনের কথাও আসে। কিন্তু তা কোনও মুহূর্তে চটকদার নয়। বরং তা শৈল্পিক, কাব্যিক, স্পর্শকাতর। লেখক একাধিক জায়গায় অস্বীকৃত ভালোবাসার কথা বলেছেন — যে সম্পর্ক হয়তো সমাজে স্থান পায়নি, কিন্তু অনুভবে বা আকাঙ্ক্ষায় তার সত্যতা কম নয়। এই স্মৃতিচারণ পাঠকের মনে করিয়ে দেয় Modern Nature–এ ডেরেক জারম্যানের প্রেমিক-বিস্মৃত দিনলিপি, কিংবা জঁ ককতোর Opium—যেখানে শিল্প, শরীর আর যন্ত্রণার বেড়াজাল একত্র হয়ে ওঠে আত্মবীক্ষার আয়না।
ফার্স্ট পার্সন পড়তে পড়তে বোঝা যায়, একজন শিল্পী কীভাবে নিজের প্রতিটি শিরা–উপশিরা খুলে দেন পাঠকের সামনে—শুধু আত্মপ্রকাশ নয়, আত্মসমর্পণও বটে। এই লেখার মধ্যে কোনও ঘোষণা নেই, নেই গলা চড়িয়ে বলা ইশতেহার। আছে নীরব, তীব্র, অদ্ভুত রকমের স্পষ্ট এক শব্দহীন সুর—যার মধ্যে দিয়ে আমরা টের পাই একজন মানুষ কতভাবে প্রতিদিন নিজেকে রচনা করেন, আবার ভেঙে ফেলেন।
এই রচনার একটি আলাদা সৌন্দর্য হল এর গদ্যের স্টাইল। ঋতুপর্ণ নিজেই বলেন, “অন্য কেউ হলে গল্প বানিয়ে ফেলত, কিন্তু আমি পাঠককে নিজের মতো ভাবতে বলেছি।” এই স্বচ্ছতা, এই আত্মনিবেদন, এই অহংকারহীন স্বীকারোক্তিই বইটির সৌন্দর্য। যেখানে আত্মার সত্যই একমাত্র ভাষ্য হয়ে ওঠে।
বাংলা ভাষায় এমন আত্মকথা বিরল, যেখানে শিল্প, লিঙ্গ, ভালোবাসা, সমাজ ও ব্যক্তিগত ক্ষয় একসঙ্গে অনুরণিত হয়। যাঁরা জঁ ককতো, বার্গম্যান, ডেরেক জারম্যান বা চান্তাল অ্যাকেরম্যান পড়েছেন, তাঁরা জানবেন এই বই সেই বিশ্বপরম্পরার যোগসূত্র, কিন্তু একইসঙ্গে একেবারে স্বদেশি—ঋতুপর্ণীয়। এ বই শুধু পড়া যায় না, এ বই আয়নার মতো। যেখানে পাঠক শুধু লেখককে দেখেন না—নিজেকেও দেখতে বাধ্য হন।
এটি কেবল আত্মজীবনী নয়, একটি নির্মোহ আত্ম-আলোচনা। একটি আত্মা, তার শরীর, মন এবং সমাজের সঙ্গে সংঘাত—যার প্রতিটি পৃষ্ঠা আমাদের জিজ্ঞাসা করে, “তুমি কি নিজেকে চিনতে পেরেছ?” আর সেই জিজ্ঞাসা থেকেই উঠে আসে এক আত্মপ্রেম, আত্মগ্লানি, এবং আত্মমুক্তির ভাষা। ফার্স্ট পার্সন এক বসায় পড়ে ফেলা যায় না—কারণ এটি শুধু লেখকের ভাষ্য নয়, এটি পাঠকের আত্মবিশ্লেষণেরও শুরু।
এ বই না পড়লে আপনি যেমন মিস করবেন ঋতুপর্ণ ঘোষ নামক বিস্ময়কে, তেমনই হারাবেন বাংলা ভাষায় আত্মচেতনার এক বিরল কণ্ঠস্বর। এটি একটি নরম অথচ নির্মম আত্মস্বীকারোক্তি, যা বলে—“হয়তো আমি নিজেকে চিনি না, কিন্তু খুঁজে চলেছি। আর এই খোঁজটাই সবচেয়ে সত্য।”
এবং আমরা যারা এই বইয়ের পাঠক, আমরা কেবল পাঠক নই—আমরাও সেই খোঁজের সহযাত্রী।
আজ ১০ ই আগস্ট সুনীলকুমার ঘোষের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান। বার বার নাম উচ্চারণ করে মন্ত্রপাঠ, দানধ্যান হচ্ছে -- এটা শুনে মনে হচ্ছে যে লোকটার নাম এতো দিন তাঁর কাছে ছিলো "বাবা" আজ তাঁকে সুনীলকুমার ঘোষ বলা হচ্ছে কেন! এটা মনে হচ্ছে ছদ্মনাম ধারী কোন পরলোকগত ব্যক্তির নাম।
বাবা সুনীলকুমার দুই ছেলের নাম নিজের নামের সাথে মিল করে রাখলেন- সৌরনীল ও ইন্দ্রনীল। বড় ছেলে মহাভারতের গল্প শুনে শুনে নিজের জেদ আর প্রবল বায়নাক্কায় বাবার দেওয়া নাম পাল্টে নিজের পছন্দ করা নাম রাখলেন মহাভারতের অক্ষবিশারদ ঋতুপর্ণ-র নাম অনুসারে ঋতুপর্ণ ঘোষ। নিজের নাম নিজে পছন্দ করে রাখার এমন সৌভাগ্য কজনের হয়!
কোঁকড়া কোঁকড়া চুল, মেয়েলি মেয়েলি চেহারা, যা অনেক সময় অনেক কটু কথার সম্মুখীন করেছে তবে সে কথাকে তিনি গ্রাহ্য করেননি। যে কোন কাজ করার জন্য যার কোন বাহানার দরকার হতো না, নিজের ইচ্ছা টাই ছিলো যথেষ্ট ।
চলচ্চিত্র পরিচালাক সত্যজিৎ রায় এর দেখানো পথে হেঁটে গিয়েছেন বহু দূর। বাংলা, হিন্দী ও ইংরেজি তিন ভাষাতে নির্মান করেছেন সিনেমা। এই সিনেমার তৈরি করতে গিয়ে কর্মসূত্রে পরিচয় হয়েছে নানান দেশের নানন লোকের সাথে। চলচ্চিত্র জগতের বিখ্যাত ব্যক্তি অমিতাভ বচ্চন এর ছেলে অভিষেক এর বিয়ের সময় উনি ছিলেন দুই পরিবারের অতিথি এবং পশ্চিম বাংলা থেকে একমাত্র নিমন্ত্রিত ব্যক্তি ।
"রোববার " ছিলো কিছু মানুষের মনের একটা খোলা জানালা। যে জানালা দিয়ে অবাধে বাতাস আশা যাওয়া করো। তার ফলেই পাঠক মহল পেয়েছে কিছু উন্মুক্ত মনের আকুলিবিকুলি করা অনুভূতির ছোঁয়া। যার জন্য সপ্তাহের প্রতি রোববার মুখিয়ে থাকতেন পাঠক মহল। প্রথগত বেশ কিছু লেখকের জন্য নির্দিষ্ট একটা কলাম বরাদ্দ ছিলো।
সেইখানের সম্পাদকীয়তে ফার্স্ট পার্সন কলামে লিখতেন ঋতুপর্ণ ঘোষ। সেই লেখাগুলো আমরা বই আকারে পেলাম উনার মা এবং কবি জয় গোস্বামী এর প্রবল ইচ্ছার কারনে। কয়েক বছরের এলোমেলো লেখা গুলোকে গুছিয়ে ধারাবাহিক ভাবে সাজিয়ে দিয়েছেন নীলা বন্দ্যোপাধ্যায়।
Lovely! these are actually blogs in printed format...a beautiful insight into a man's mind who was so complex and so sensitive. On each page you feel "What a loss! this man could have given us so much more! He left too early".
Film director Rituparno Ghosh is known to everyone. Here, the author is seasonal. First person is not just autobiographical. Contemporary politics, literature, cinema, art-artists, the city of Calcutta and moreover the events and memories of the author's life are reminiscent of "First Person". Divided into two volumes,it is an excellent manuscript of Bengali literature. The writing is very beautiful and attractive.
"First Person" by Rituparno Ghosh is for those Bengalis for whom Sundays mean "মাংস ভাত" (rice & chicken), "বড়ো হওয়া" (adolescence) means unsupervised access to "দেশ পত্রিকা". This book of course gives a sneak-peek to the legend's mind, but it also takes us back to those early years and reminds us of that first time when someone read Joy Goswami to us (or we did !). It really tells our story through his experiences, stories of all of us who grew up in West Bengal in the 80's.
As I read this book, I felt like I was reliving the time when I got introduced to Rabindranath at the age of three with "কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা". The journey continues. In the course of my life, Robi Thakur has become an integral part of my existence, my last resort for every accomplishment as well as every failure, every laugh and every sob. I got goosebumps every time I read how intimate Rituparno felt with Robi Thakur too.
This book brought back memories of all those Durga pujas when "pujo" was almost synonymous to "একটু সাজ-গোজ , অনেক খাওয়া-দাওয়া আর হঠাৎ ভালো লাগা" !! Reading "First Person" was like a journey which will stay with me for many years.
এই বই পড়ার অনুভূতি ভাষায় বোঝানো যায়না।অদ্ভুত ভালোলাগা, একরাশ মনখারাপ করা, বিচিত্র ঘটনা আর চিন্তা র সাথে আলাপ ঘটেছে পড়তে যেয়ে। রোববারে পাতায় ছাপা হওয়ার দিন তারিখ চোখে পড়ে আর ঢিপঢিপ করে, মনে প্রশ্ন জাগে যে আর কয় মাস লিখতে পেরেছিলো মানুষ টি? ব্যক্তি ঋতুপর্ণকে ভালোবেসে ফেলেছি লেখা পড়তে যেয়ে। একজন পরিচালকের এত ঝরঝরে সুন্দর লেখনি পড়ার স্পৃহা আরো বাড়িয়ে দেয়। ভালোবাসা বইটির জন্য।
সপ্তাহের প্রথম কি দ্বিতীয় দিন কিছুটা বিরক্তি স্কুল খোলা নিয়ে। জব লাইফের প্রথম রবিবারটাও পুঙ্খানুপুঙ্খ নির্নিমেষ ফোকাস রেখেছে বৃহস্পতিবারের দিকে।
ঋতুপর্ণ ঘোষের "ফাস্ট পার্সন" কি সেই কারনেই বিষাদের একটা ক্যালেইডোস্কোপ হয়ে উঠে আসে "রোববার" প্রত্রিকার পাতায়? ঋতুপর্ণ ঘোষের কলম স্পষ্ট স্বরে কিন্তু তীব্র অভিঘাত নিয়ে ঋদ্ধ করে চলে এক জীবনে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন গল্প ও কথা সমূহের দুই পাড়। মাঝের বহমান স্রোতে পাঠকের অনাবিল সাঁতার কাটা।
আত্ন-অনুসন্ধানী দৃষ্টি, নিজস্ব নির্জন ভঙ্গিমার খুশবু এবং সূক্ষ্ম অনুভূতির মিশেল ঋতুপর্ণ ঘোষের আত্মকথন "ফাস্ট পার্সন"। ২০০৬ এর ২৪শে ডিসেম্বর থেকে ২০১৩ এর ২রা জুন, প্রতি রবিবার সংবাদ প্রতিদিনের রোববার প্রতিকায় ফার্স্ট পার্সন প্রকাশিত হয়। এই আত্নকথন ঠিক ভোবেই বই আকারে ছাপার কথা থাকলেও, ঋতুপর্ণ ঘোষের আগ্রহে সম্পাদক নীলা বন্ধ্যোপাধ্যায় বিষয়ভিত্তিক ভাবে দুই খন্ডে ১২টি অধ্যায়ে ভাগ করে নিয়েছেন। প্রতি খন্ডে ৬ টি করে ভাগ।
প্রথম খন্ডের ১ম অধ্যায় "এলোমেলো দেশ-কাল"-এ সিঙ্গুর নন্দী গ্রামে ঘটে যাওয়া ভয়াবহতা, রাজনীতি, ধর্ম, আরও সামাজিক অনেক কথাই উঠে এসেছে। আত্ন-অনুসন্ধানী দৃষ্টির তীক্ষ্ণতা এবং তার শৈল্পিক প্রকাশ পাঠকের চোখের অতিলৌকিকতায় মিলিয়ে গেঁথে যাবে মনের কোমল অংশে। অন্যান্য অধ্যায়ে শুধু সামাজিক দিকগুলোতে আবদ্ধ না থেকে লেখকের সিনোর কথা, ব্যক্তিগত অনুভুতি ও গল্প, বাবার কথা এবং অনেকটা অংশ জুড়ে মায়ের কথা উঠে এসেছে। বলে গিয়েছেন অকপটভাবে নিজের যৌনতা ও লিঙ্গ পরিচয়ের কথা। ঋতুপর্ণের বয়নে:
"এই 'ফার্স্ট পার্সন'-এর পাতাটা আমার সত্যি কথা লেখার পাতা, আমার জীবনধারণের সমস্ত সত্যি বিশ্বাসকে মেলে ধরার পাতা। তাই আজ 'একা' মানুষদের অভিজ্ঞতা দিয়ে একটা সংখ্যা গাঁথতে গিয়ে যদি নিজের একাকী জীবনের প্রায় স্বতঃসিদ্ধ কারণটাকেই সযত্নে এড়িয়ে যাই তা হলে সে তো সত্যগোপন হল। আমার কাছে তা মিথ্যাচারণেরই নামান্তর।”
যেটুকু বলার তিনি বলেছেন। বইটার গল্পের সঙ্গে ছাপা অক্ষরগুলো যেটুকু দরজা খুলেছে তাই যথেষ্ঠ পাঠকের জন্যে খোলামেলা ভাবেই সেই অভিব্যক্তির স্বাদ আস্বাদনে। নরম আলোয় যে অস্পষ্টতা বাড়ে নয়। অন্ধকার ঘরে সামান্য মোমের আলোই স্পষ্ট দৃষ্টির সহায়ক।
শুধু "ফার্স্ট পার্সন-১" এর শেষ অধ্যায় "এলিজি" বোধহয় ঋতুপর্ণের তীব্র অভিঘাত অথবা উজ্জ্বল বিষাদের ছায়া ছাপিয়ে শুধু মৃ/ত্যুর খবর���ুলো দিয়ে গেছেন ঋতুপর্ণীয় ভঙ্গিমায়। শেষ মানেই হয়তো বিদায়। শেষ মানেই হয়তো মৃ/ত্যু। তবুও "এলিজি" অধ্যায়ে যেন পুরো লেখার ঋতুপর্ণীয় ম্যানারিজম কিছুটা অস্পস্ট থেকে গেছে।
এটা ছাড়া ঋতুপর্ণের লেখা নিয়ে আদিখ্যেতার চূড়ান্ত প্রকাশ বাড়াবাড়ি রকমের বলে মনে হবে না। বরং, বহুবার ফার্স্ট পার্সনের অলিগলি ঘুরে আসা যায়। ঘুরে আসা লাগবে। ব্যক্তিগত অনুভূতিগুলো যখন মনে মাঝে জট পাকিয়ে থাকে, হাজার শব্দেও তার সঠিক প্রকাশের ব্যর্থতায় নিজস্ব কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়- ঋতুপর্ণ ঘোষ ঠিক তখনি দেখিয়ে দেন - সঠিক শব্দ আর ক্রমে অল্প কথায় কিভাবে তার যথোচিত রক্ষণাবেক্ষণ হয়ে ওঠে।
মায়ের মৃ/ত্য প্রসঙ্গে যেমন লিখে গেছেন কি অমোঘ সত্য:
"মা চলে গিয়ে দুটো জিনিস শিখিয়ে দিয়ে গেল। মা'রা আসলে অমর। আর, মা ছাড়া বাবারা বড্ড অসহায়।"
নিজের জীবনের চিন্তা ও পরিকল্পনার সাথে সাথে অন্যের ভাবনায় সঁপে দিয়ে নির্ভাবনায় স্নানের যে বেদি খুজে ফিরে মন, নিঃশর্ত সমর্পণে নিজেকে কেটে একজন গ্রহীতা হয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলার নিঃশর্ত সমর্পণ যদি বলি ঋতুপর্ণ ঘোষের শব্দ - হোক সেটা আদিখেত্যের চূড়ান্ত - নিজেকে ঠকানো হবে না।
ঋতুপর্ণ ঘোষের কাছে কৃতজ্ঞতা স্বীকার এক অর্বাচীন পাঠকের তরফ থেকে ক্ষুদ্র অর্ঘ্য হয়েই থাক।
ফার্স্ট পার্সন সংগ্ৰহে রয়েছে প্রায় সাত বছর। কিন্তু এতগুলো বছর পর বইটির প্রথম খন্ড পড়া হলো। বই এর বিষয়বস্তু হয়তো সম্পুর্ণভাবে অনুধাবন করতে পারবনা এই ভেবে এতোদিন পড়িনি। যাই হোক গত মাস থেকে প্রতিদিন ধীরে সুস্থে বইটি পড়লাম। প্রতিদিন খবরের কাগজের 'রোববার' সাপ্তাহিক ম্যাগাজিনে ঋতুপর্ণ ঘোষের বিভিন্ন বিষয়ের উপর ছোট বড় সম্পাদকীয় লেখার সংকলন 'ফার্স্ট পার্সন'। পরিচালক ঋতুপর্ণ, সঞ্চালক ঋতুপর্ণ, অভিনেতা ঋতুপর্ণর সাথে পরিচয় আগেই ছিল ।এই বই এর মাধ্যমে লেখক ঋতুপর্ণর সাথে পরিচিত হলাম। আলাদা করে কি কি বিষয়ে লেখা রয়েছে সেটা বলা একটু মুশকিল।কারন প্রচুর বিষয় নিয়ে ঋতুপর্ণ লিখেছেন। না কোন গুরু গম্ভীর আলোচনা অথবা গবেষণা সমৃদ্ধ লেখা নয়।সব লেখাগুলো স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজের উপলব্ধি ও ধারনার মিশ্রন বলা যেতে পারে। তৎকালীন সময়ের রাজ্যের ও দেশের বেশ কিছু ঘটনা, পুরাণ বিষয়ক লেখা,স্মৃতিকথা, নিজের জীবনের কথা, সিনেমা সংক্রান্ত লেখা, যৌনতা,ভ্রমনের অভিজ্ঞতা,গান এরকম প্রচুর বিষয় নিয়ে ছোট বড় লেখা।আলাদা করে কোন একটা বিষয় পড়ে ভালো লেগেছে সেটা বলতে পারবো না, প্রায় প্রতিটি লেখা সাবলীল ও মনোগ্ৰাহী, পড়তে ভালো লাগে। ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবন নিয়ে বেশ কিছু লেখা, ছোটোবেলার কথা, মহাভারত,মা বাবার স্মৃতিচারণ সম্পর্কে লেখাগুলি আমাকে ভাবিয়েছে কখনো চুপ করে বসে ঋতুপর্ণ ঠিক কি বোঝাতে চেয়েছেন, চেষ্টা করেছি বোঝার। গভীরভাবে অনুভব করেছি ওঁর একাকিত্ব।সুন্দর গদ্য পড়বার অভিজ্ঞতা হলো। মজার ঘটনাও রয়েছে বইতে।লেখনী চমৎকার ও শক্তিশালী। কিছু রাজনৈতিক ,বিতর্কিত ঘটনাবলী সম্পর্কেও নিজের স্পষ্ট ও নিরপেক্ষ মতামত লিখেছেন।বেশ কিছু বিখ্যাত ব্যক্তিদের সম্পর্কে ছোট ছোট লেখাগুলি পড়তে ভালো লেগেছে।অনেক লেখা পড়েই মনে হয়েছে এভাবেও তো আমিও ভাবতে পারতাম, কেনো এইভাবে চিন্তা করিনি?এতো সহজভাবে লেখার মধ্যেও কত চিন্তার রসদ থাকে সেটা এই লেখাগুলি পড়লে বোঝা যায়।দৈনন্দিন জীবনের ছোট বড় ঘটনার স্মৃতিচারণ ও উপলব্ধি পড়ে খুব ভালো লাগলো ।বেশিরভাগ লেখাই বেশ উপভোগ করলাম করলাম।তবে মৃত্যু নিয়ে লেখাগুলি মনকে ভারাক্রান্ত করে দেয়।
পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষের জনপ্রিয়তা ও পরিচিতি নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। ব্যক্তিগতভাবে যদিও ওঁর পরিচালিত সব সিনেমাই আমার যে খুব ভালো লেগেছে সেটা নয়। তবে সেখানেও নিজস্ব চিন্তাভাবনার প্রতিফলন ছিল স্পষ্টভাবেই। এছাড়া টেলিভিশন চ্যানেলে টক শোর কিছু এপিসোডে কথোপকথন শুনে এইটুকু বুঝতে পেরেছিলাম বিভিন্ন বিষয়ে ওঁর গভীর জ্ঞান রয়েছে।পরে নাফিস দিকের লেখা 'ঋতুপর্ণ ঘোষ' বইটি পড়ে এই বিষয়ে আমার ধারনা আরও পরিস্কার হয়।এই বই এর মাধ্যমে ওঁর নিজস্ব লেখালেখির জগতের সঙ্গে পরিচিত হলাম । সবসময় এটাই মনে হয় যে বড্ড তাড়াতাড়ি চলে গেলেন ঋতুপর্ণ। একজন দক্ষ পরিচালক,নিপুণ সঞ্চালক ছাড়াও লেখক ঋতুপর্ণকেও আমরা হারিয়েছি সেটা বুঝতে পারছিলাম বইটি পড়বার সময়ে। আমি বিশ্বাস করি বাংলা তথা ভারতীয় সিনেমা ও সাহিত্য আরোও সমৃদ্ধ হতে পারতো ওঁর নানারকম কাজের মাধ্যমে। ঋতুপর্ণর জীবন ,লেখালেখি, কাজকর্ম নিয়ে চর্চা হওয়া সত্যিই প্রয়োজন বিশেষ করে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য।অবশ্য ওকে নিয়ে সম্প্রতি বেশ কিছু ভালো বই ,বিশেষ সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে।
দেজ পাবলিশিং, সম্পাদক ও এই বই এর সাথে যুক্ত সকলকে ধন্যবাদ জানাই এতো সুন্দর একটি বই প্রকাশ করার জন্য। প্রোডাকশন নিঃসন্দেহে আকর্ষণীয়। বিভিন্ন বিষয়ের উপর লেখাগুলি থিম অনুসারে আলাদা আলাদা অধ্যায়ে সাজানো ও প্রতিটি লেখা রোববার সাপ্তাহিক কবে লেখা হয়েছে সেই সব মেনশন করা হয়েছে। ঋতুপর্ণর কিছু সাদাকালো ফটো বইটিকে যেনো আরও সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছে পাঠকদের কাছে।To me it's a collection worthy book.
যারা সরল ভাষায় লেখা গদ্য পড়তে ভালোবাসেন তারা অবশ্যই এই বইটি পড়বেন আশা করবো আপনাদের ভালোই লাগবে। খুব শিগগিরই দ্বিতীয় পার্টটা পড়া শুরু করবো ।যদি পারি পাঠ অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো পড়বার পর।
গত পরশু ঋতুপর্ণ ঘোষের ফার্স্ট পার্সন পড়া শেষ করলাম। সাধারণত বই পড়তে ভালোবাসার কারণে আমি বিভিন্ন ধরনের গল্প, উপন্যাস, আত্মজীবনী ইত্যাদি পড়েই থাকি, কিন্তু এই বইটি বাকি সব কিছুর থেকে আলাদা, অনেকটা বইয়ের লেখকের মতই ব্যতিক্রমী, যাকে পাঁচটি তারার মাপকাঠিতে আবদ্ধ করা যায়না, যাকে অসাধারণ বললেও হয়তো কিছু কমই বলা হয়। পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষকে সবাই ভালোবাসেন, আমি নিজেও। কিন্তু আমার মনে তিনি চিরকাল আমার পড়া অন্যতম প্রিয় লেখক হিসেবে থাকবেন, ওনাকে অনেক অনেক শ্রদ্ধা জানাই।
আমি এই বইটি সম্পূর্ণ করতে পারিনি, কোনও কারণে তার লেখাগুলি, যদিও এটি সুন্দরভাবে লেখা, এটি আমার হৃদয় স্পর্শ করতে পারেনি এবং আমাকে কিছু অনুভব করতে দেয়নি, maybe it's not my cup of tea.
কিন্তু আমি অবশ্যই বলব আমি তাকে আরও ভালোভাবে জানতে পেরেছি, আমি সত্যিই তার প্রতিভাকে সম্মান করি এবং তার লেখার ক্ষমতা বিভিন্ন লেখার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে যা আমাকে আনন্দিত করেছে, যা আমাকে কিছু ভাবতে বাধ্য করেছে এবং এমনকি একজন কন্টেন্ট স্রষ্টা হিসেবে আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে...
কিন্তু তবুও আমি আমার হৃদয়কে এই বইটির প্রতি ভালোবাসা জাগাতে পারিনি। এই প্রথমবার যখন আমি কোন বই পড়ছি, তখন আমার মনে হচ্ছে অন্য বইগুলো আমাকে তাদের মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য ডাকছে। Hence it's the first book in my entire life that I have left incomplete...
এটা খুবই দুঃখজনক কারণ আমি সত্যিই তার সিনেমাগুলো খুব পছন্দ করি।
Ghosh never really sat down to write his memoir, but he used to write an impeccably sharp weekly column for a Bengali magazine, that he also used to edit, for a considerable amount of time. In those columns, he talked about the changing nature of things around him – from cinema to politics to travel and religion and the innumerable facets of human relationships.
Unsurprisingly, this is nothing like a traditional autobiography. These are periodic thoughts and recollections, that may have otherwise seemed unmethodical to those who followed the column in the mid-2000s when Ghosh first started writing it. But such was the genius of his luminescent mind, that when the editors of these two volumes – First Person 1 and 2 – gathered these columns in some order, they began to resemble a curious, creative, and daring life.
Rituparno was also one of the few openly queer filmmakers, whose rebellion for an individual’s freedom of choice and expression reflected in his work. Naturally, in these volumes readers also discover that deeply empathetic, wounded but gloriously buoyant side of his personality. Although it’s been over a decade since these pieces came into being, they remain powerfully relevant even today.
Many of his writings also bring back the deep love he had for his mother who had the utmost influence on his life and spirit. The final column that he wrote was on what’s known as “Madur” in Bengal – essentially, they are mats woven from a reed called madurkathi. In it, he wrote about learning humility from the humble mat. This ability of allowing even inanimate objects to teach him something about the human experience is what always set Rituparno apart from the rest. Those who can read Bangla are sure to feel more enriched if they decide to give these volumes a chance. And from what I know, English language readers may get to see a translation of these works very soon.