Humayun Ahmed (Bengali: হুমায়ূন আহমেদ; 13 November 1948 – 19 July 2012) was a Bangladeshi author, dramatist, screenwriter, playwright and filmmaker. He was the most famous and popular author, dramatist and filmmaker ever to grace the cultural world of Bangladesh since its independence in 1971. Dawn referred to him as the cultural legend of Bangladesh. Humayun started his journey to reach fame with the publication of his novel Nondito Noroke (In Blissful Hell) in 1972, which remains one of his most famous works. He wrote over 250 fiction and non-fiction books, all of which were bestsellers in Bangladesh, most of them were number one bestsellers of their respective years by a wide margin. In recognition to the works of Humayun, Times of India wrote, "Humayun was a custodian of the Bangladeshi literary culture whose contribution single-handedly shifted the capital of Bengali literature from Kolkata to Dhaka without any war or revolution." Ahmed's writing style was characterized as "Magic Realism." Sunil Gangopadhyay described him as the most popular writer in the Bengali language for a century and according to him, Ahmed was even more popular than Sarat Chandra Chattopadhyay. Ahmed's books have been the top sellers at the Ekushey Book Fair during every years of the 1990s and 2000s.
Early life: Humayun Ahmed was born in Mohongonj, Netrokona, but his village home is Kutubpur, Mymensingh, Bangladesh (then East Pakistan). His father, Faizur Rahman Ahmed, a police officer and writer, was killed by Pakistani military during the liberation war of Bangladesh in 1971, and his mother is Ayesha Foyez. Humayun's younger brother, Muhammed Zafar Iqbal, a university professor, is also a very popular author of mostly science fiction genre and Children's Literature. Another brother, Ahsan Habib, the editor of Unmad, a cartoon magazine, and one of the most famous Cartoonist in the country.
Education and Early Career: Ahmed went to schools in Sylhet, Comilla, Chittagong, Dinajpur and Bogra as his father lived in different places upon official assignment. Ahmed passed SSC exam from Bogra Zilla School in 1965. He stood second in the merit list in Rajshahi Education Board. He passed HSC exam from Dhaka College in 1967. He studied Chemistry in Dhaka University and earned BSc (Honors) and MSc with First Class distinction.
Upon graduation Ahmed joined Bangladesh Agricultural University as a lecturer. After six months he joined Dhaka University as a faculty of the Department of Chemistry. Later he attended North Dakota State University for his PhD studies. He grew his interest in Polymer Chemistry and earned his PhD in that subject. He returned to Bangladesh and resumed his teaching career in Dhaka University. In mid 1990s he left the faculty job to devote all his time to writing, playwright and film production.
Marriages and Personal Life: In 1973, Humayun Ahmed married Gultekin. They had three daughters — Nova, Sheela, Bipasha and one son — Nuhash. In 2003 Humayun divorced Gultekin and married Meher Afroj Shaon in 2005. From the second marriage he had two sons — Nishad and Ninit.
Death: In 2011 Ahmed had been diagnosed with colorectal cancer. He died on 19 July 2012 at 11.20 PM BST at Bellevue Hospital in New York City. He was buried in Nuhash Palli, his farm house.
হুমায়ুন আহমেদের সাহিত্যকর্ম মূল্যায়নে এখনো লেখা হয় যে তার লেখায় একমাত্র মধ্যবিত্ত সমাজের সুখ দুঃখের লঘু বিবরণ আছে বলে তিনি অসম্ভব জনপ্রিয় হয়েছেন। মধ্যবিত্ত আর মধ্যমননের পরিধির পাঠককে সন্তুষ্টকরণের জন্যই তার সমস্ত লেখা। অথচ তিনি যে প্রকৃত লেখকের মতোই নিজ সহজ গন্ডির পাশাপাশি আরো নানান বিষয় ও আঙ্গিক নিয়ে লিখেছেন তা এখনো সমালোচকেরা ধরতে পারেনা বা স্বীকার করেনা। বাংলা ভাষায় সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার বস্তুটি সম্ভবত তিনি ই প্রথম আননয়ন করেন, কোন জনরার তার ট্যাগ না লাগিয়ে। ' যখন ডুবে গিয়েছে পঞ্চমীর চাঁদ' তারপর এই ' আমি এবং কয়েকটি প্রজাপতি' । আরো এরকম আছে কিনা জানিনা।
একজন সাইকোপ্যাথের জবানিতে সবটা উপন্যাস।গল্পকথক যুক্তিবান, বুদ্ধিদীপ্ত এবং নিজের অবস্থা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল।সে সোগ্রাহে পাঠককে শুনিয়ে যায় নিজ জীবনের ভয়ংকর সুন্দর গল্প অত্যন্ত নির্বিকারভাবে।কয়েকটি প্রজাপতির মন নিয়ে ভয়ংকর খেলা খেলার রুদ্ধশ্বাস বর্ণনা।
হুমায়ুন আহমেদের যে কোন লেখার মাঝেই একটা স্বাভাবিক চুম্বকত্ব আছে। পাঠককে অতি তুচ্ছ বিষয়ের বর্ণনা দিয়ে ও আটকে রাখতে পারেন।কিন্তু এই বইয়ের বর্ণনা পুরোপুরি চরিত্রভিত্তিক। একজন সাইকোপ্যাথের মাথায় যা ই চলুক তা নিশ্চিত ভাবেই সাধারণের বাইরে বিচিত্র কিছু হবে। হুমায়ুন আহমেদের নিজের মতোই তার অনুসন্ধিৎসা, আগ্রহ ছিলো বিচিত্র এবং বৈচিত্র্যময়। পড়াশোনা করেছেন কেমিস্ট্রিতে কিন্তু বোটানি বা গাছপালার উপর বিশাল পড়াশোনা ছিলো উনার তা সে ' বৃক্ষকথা' পড়লেই বোঝা যায়। আপাদমস্তক বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ কিন্তু শিখেছেন ম্যাজিক,আগ্রহ ছিলো সুপারন্যাচারাল শক্তির উপর।জানতে চাইতেন প্রকৃতি বা অতি-প্রাকৃতিক রহস্যের কথা। উনার বিপুল পড়াশোনার কিছু কিছু অংশ নানান রেফারেন্সে তার লেখায় আসে। মুরাকামি কিংবা স্টেইনবেকে'র খোঁজ পাই তার লেখাতেই। মনস্তত্ত্ব বা সাইকোলজি নিয়ে হুমায়ুনের আগ্রহ ও পড়াশোনা অগাধ। সেই সুবাদে একজন সাইকোপ্যাথের মনস্তত্ত্ব চমৎকারভাবে উপন্যাসে উঠে এসেছে। বিশেষ করে উপন্যাসের 'গল্পকথক' এর নিজেই নিজের চরিত্রের সাইকো-এনালাইসিস এবং সেটা থেকে গৃহীত সিদ্ধান্ত দ্বারা পাঠক একজন বদ্ধ অনুভূতিহীন সাইকোপ্যাথের মনের অলিগলির ভেতরে ডুব দিয়ে বিস্মিত হয়ে যান।
If we shall live, we live; If we shall die, we die; If we live we shall meet again; But to night, goodbye....
শুরুতেই আপনি আমাকে পাগল ভাববেন না। শুরুতে পাগল ভাবলে আমার গল্পটা আপনি মন দিয়ে শুনবেন না।
একজন স্কিৎজোফ্রেনিক সাইকোপ্যাথের মনোলগের ভঙ্গিতে এমন একটা উপন্যাস যে লিখেছিলেন হুমায়ূন আহমেদ, অবশেষে এটা জেনে বেশ আশ্চর্য হয়েছি।
এই জটিল মানসিক ব্যাধির প্রায় নিখুঁত বর্ণনা দিয়েছেন তিনি। গল্পে কিছু নাটকীয়তা আছে; তবে এটাও ঠিক যে সাইকোপ্যাথদের মনের ভিতরে নাটকের তো সত্যিই অভাব নেই!
স্বভাবসিদ্ধ গতিময় ভাষায় এমন অভিনব একটি বিষয় নিয়ে লেখা চমৎকার উপন্যাসটি হুমায়ূন আহমেদের অন্যতম স্মরণীয় সৃষ্টি হয়ে থাকবে আমার কাছে। খুবই চমকপ্রদ!
সাহিত্যের দুনিয়ায় সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার এর কথা আসলে প্রথমেই আসে সাইকো বা হ্যানিবল সিরিজের এর কথা ,এছাড়াও অনেক stand alone novel তো আছেই । সে হিসেবে বাংলা সাহিত্যে এই ধরণের জনরা নিয়ে খুব একটা কাজ করা হয় নি। সে দিক থেকে অনেকটাই ইউনিক এক stand alone উপন্যাস "আমি এবং কয়েকটি প্রজাপতি" । নামের ভিতরে এক ধরণের রোমান্টিকতা থাকলেও আসলে এটি একটি পিওর সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার উপন্যাস।আপাত দৃষ্টিতে দুর্বোধ্য এক জনরার লেখা হলেও "আমি এবং কয়েকটি প্রজাপতি" এত সরল ভাবে লেখা যে কোথাও কোন কিছু বুঝতে সমস্যা হয়নি এবং এটাই মনে হয় হুমায়ুন আহমেদের লেখার অন্যতম সেরা বৈশিষ্ট্য। এক কথায় , প্রিয় লেখকের আমার পড়া সবচেয়ে প্রিয় কয়েকটি লেখার ভিতরে একটি "আমি এবং কয়েকটি প্রজাপতি"।
বহুদিন কোনো উপন্যাস পড়ে আমি এতোটা বিরক্ত হই নাই। উপন্যাসের কথক ( এবং নায়ক) মানসিক বিকারগ্রস্ত। সে নিজেই সেটা স্বীকার করে গল্প বলছে।তার বিকারগ্রস্ততার শিকার তিন বোন।সে নিজেকে দাবি করছে জিনিয়াস সাইকোপ্যাথ হিসেবে। এই দাবি মেনে নেওয়া যেতো যদি সে কোনো অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলতো বা তার প্রতিদ্বন্দ্বীও জিনিয়াস হতো।কিন্তু তার শিকার তিন বোনই জড় পদার্থ বিশেষ। এদের ডানে ঘুরতে বললে ডানে ঘোরে, বামে ঘুরতে বলে বামে ঘোরে,ছাদ থেকে লাফ দিতে বললে তাই করে।এমন জড় পদার্থ শিকার করায় কোনো কৃতিত্ব নাই।নায়ক অবশ্য নিজের মহান প্রতিভা নিয়ে খুবই গর্বিত। সে তৃপ্তি সহকারে ঢেকুর তুলে তার প্রতিভার বয়ান দিয়েছে। পড়লাম। এখন তার মতো আবেগে ঘন ঘন চোখ মুছতে হবে কি না ভাবছি!
"আমি এবং কয়েকটি প্রজাপতি" টিপিকাল হুমায়ূন ঘরানার নয়, একটু ডার্ক। গল্পের প্রধান চরিত্র ফখরুদ্দিন চৌধুরী একজন স্কিজোফ্রেনিয়াক। তার জবানিতেই পুরো গল্প রচিত। ফখরুদ্দিনকে সোশিওপ্যাথও মনে হলো, সামান্য হা-হুতাশও করতে দেখা গেছে কৃতকর্মের জন্য।
ফখরুদ্দিন পেশায় সারাদিন বসে থাকা বেকার। তাকে কিছু করতে হয় না কারণ সে বিরাট ধনী। আর এই মানসিক রোগও সে উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছে, ওর থেকেই জানা যায় বাবা আর দাদী পাগলামির কথা। বিশাল বাড়িতে একলা থাকতে থাকতে তার হঠাৎ মনে হয় একজন সঙ্গী দরকার, তাই ইফতেখার মামাকে ব্যাপারটা জানালে তিনি অতি দ্রুত বিয়ের ব্যবস্থা করেন। প্রথমে সাথী নামের এক ডাক্তার মেয়ের সাথে বিয়ে হলেও পরের দিন মেয়েটি কান্নাকাটি করায় এই বিয়ে ভঙ্গ করে তারই বোন রূপাকে বিয়ে করে ফখরুদ্দিন। রূপা মেজো, রূপার ছোটন নামের মেডিকেল পড়ুয়া ছোট বোন রয়েছে। বিয়ে করা বউকে ফখরুদ্দিন দস্তা নামে ডাকা শুরু করে আর ওদিকে কাসা নামের কাল্পনিক মেয়ের অবতারণা ঘটায় (দস্তাকাসা দেখে নস্টালজিক হয়ে গেছিলাম। আমার এক পিচ্চি রুম্মেট ছিল, নাম তামান্না। আমরা সবাই ডাকতাম তামাকাসা। এখন নিশ্চয়ই বেশ বড় হয়েছে, কলেজে উঠেছে কিনা কে জানে! হিসাব করতে ইচ্ছা করতেছে না 🙄) দস্তা অবশ্য নিজেকে স্মার্ট দাবি করা ফখরুদ্দিনের আচরণে হকচকিয়ে যায়! কেননা তার স্বামীটি কোনো কাজ করে না, বানরদের সাথে আড্ডা দেয় আর মাঝেমধ্যে কিছু এক্সপেরিমেন্ট করে যার দরুণ দস্তার মনে হয় কোনো সাইকিয়াট্রিস্ট দেখানো দরকার। স্মার্ট ফখরুদ্দিন অবশ্য স্মার্ট হওয়ার কারণে নিজের সমস্যা আসলে ঠিক কি সেটা ভালো করেই জানে কিন্তু তার কি সুস্থ হওয়ার ইচ্ছা ছিল আদৌ...!
নিজেকে স্মার্ট দাবি করলেও ফখরুদ্দিন আসলে হাবলাছ্যাবলা গোত্রের। বউয়ের ডায়েরি পড়তে পড়তে তার আবার চোখ ছলছল করে!
সমুদ্রের, এমনকি মহাকাশের সব রহস্যও হয়তো একদিন ভেদ হবে, কিন্তু মানুষের মনের রহস্য পুরোপুরি ভেদ করা বোধহয় অসম্ভবই থেকে যাবে| আলোচ্য বইটি হুমায়ূন আহমেদের অপেক্ষাকৃত অনালোচিত বইগুলোর মধ্যে পড়ে, কিন্তু বাংলা সাহিত্যে এই বইটি আক্ষরিক অর্থে নজিরবিহীন বলেই আমি মনে করি| কেন? সেই ব্যাখ্যা করতে গেলে বইটার সমস্ত আকর্ষণ নষ্ট হয়ে যাবে| মেলায় অন্যপ্রকাশ-এর স্টল দেখতে পেলেই দৌড়ে যান এবং বইটি হস্তগত করুন| শুধু একটাই বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: মিসির আলি বা হিমুকে খুঁজবেন না এই লেখায়, বরং হাতের কাছে রাখুন জীবনানন্দকে| রাতের আকাশ, আর মৃত্যু: দুয়েরই রং যে নীল, তা তো আমরা ওই মানুষটির কবিতা পড়েই বুঝি, তাই না?
তৃতীয় বারের মতো পড়লাম। দীর্ঘ একাকীত্ব থেকে যে মানসিক বিকার- সেই বিকারকে এত চমৎকার ভাবে তুলে ধরা অসম্ভব ব্রিলিয়ান্ট একটা ব্যাপার। হুমায়ূন আহমেদ সাইকো চরিত্রটাকে এমনভাবে সার্থকভাবে ডেভেলপ করেছেন যে গল্প শেষ করার পর একটা মায়া মায়া কাজ করে চরিত্রটার প্রতি। এ বইতে কিছু অসাধারণ উক্তি আছে, বিশেষ করে শশক ও বানর প্রবৃত্তি নিয়ে দেওয়া থিওরি দুটো।
হুমায়ূন আহমেদ এমন লিখতে পারেন কখনো ভাবিনি। মানুষের চিন্তাকে নিয়ে ভাবা, মানুষের চিন্তাকে নিয়ে খেলার মাঝে এক অদ্ভুত অনুভূতি আছে। আমরা সবাই নিজের জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে আমাদের চারপাশের মানুষের চিন্তাকে প্রভাবিত করি। কিন্তু এ গল্পের মূল চরিত্র পরিকল্পিতভাবে মানুষকে প্রভাবিত করে, তাদের আবেগকে নিয়ে খেলে। এ এক অদ্ভুত খেলা। বই এর একটি লাইন ভালো লাগলো।
কর্মহীন মানুষের ধৈর্য ভালো হয়, যেকোনো তুচ্ছ কাজে তারা লেগে থাকতে পারে।
আমি অনেকদিন পর পর হুমায়ুন আহমেদের একটা করে বই পড়ি। বেশ বেছে দেখে শুনে পড়ি এটাও বলার বাদ না রাখি। এবং বাছাই বই হওয়ায় প্রায় প্রতিবারই আমি লেখকের পরিচিত সেই লেখনিতে বিমুগ্ধ হই। আর সুনিপুণ হিউমারগুলোতে হো হো করে হেসে গড়িয়ে পড়ি। বাংলা কথা সাহিত্যে হুমায়ুন আহমেদের চাইতে এত রসিক লেখা পাওয়া অত্যন্ত দুষ্কর সেটা আপনি মানেন চাই না মানেন। চরিত্রগুলোর অদ্ভুত কান্ডকারখানা, অদ্ভুত সংলাপ এমন মজার একটা পরিবেশ সৃষ্টি করে, উপভোগ না করে উপায় থাকেনা।
তবে এই বইটির নাম শুনি আমি সাইকোলজিক্যাল ড্রামা-র বই হিসেবে। বইটা যখন পড়তে শুরু করি, তখন দুটি খটকা লাগা শুরু করলো। প্রথম খটকা, বইটা বেশ হিউম্যারাস বা হাস্যরসাত্মক বই। যে কারণে আমি ঠিক সাইকোলজিক্যাল ড্রামা-র কোনো ইংগিত পাচ্ছিলাম না। যেটা হয়তো এক দিক থেকে ভালোই। দ্বিতীয় ব্যাপারটা আমার নিজের কারণে। আমি একটা ভাঙাচোরা দুর্বল গল্প লেখার চেষ্টা করেছিলাম প্রায় বছর দেড়েক আগে। সাইকোলজিক্যাল ঘরাণারই। সেখানেও মূল চরিত্র ফোর্থ ওয়াল ব্রেক করে পাঠকের সাথে আলাপ করে। এই বইটি দুটি ব্যাপারে মিল ঘটিয়েছে সেটিই অস্বস্তির কারণ।
যাহোক, বইটি আমার বেশ ভালোই লেগেছে। টানা পড়ে গিয়েছি। তবে হুমায়ূন আহমেদের বেশিরভাগ বইয়ের মতোই ওনার স্টাইলেই এই বইটিও অসমাপ্তই। কাহিনীর খোলাসা পাঠককেই করে নিতে হয়েছে। আর রেশ রেখে গিয়েছে খানিকটা দুঃখ আর মায়ার। আমি মূল গল্পের চাইতে বোধহয় অনেক দিন পর লেখকের লেখাটা পড়তে বেশি উপভোগ করেছি। লেখকের পড়াশোনা, জানাশোনা, কবিতা, উক্তি ইত্যাদি নানাবিধ রেফারেন্স আমি সবসময়ই অত্যন্ত পছন্দ করি। এবইতেও সেসব পেয়েছি। আর গল্পটা বেশ ভালোই। মাঝামাঝি এসে মনে ভয় ঢুকে যায়। তবে শেষাংশে এসে কি যেনো হলো, অতীব তাড়াহুড়ায় বইয়ের ঘটনা শেষ হয়ে গেলো। তাছাড়া কিছু খুঁতও ছিলো গল্পে, যেমন নায়িকার ব্যবহারের বর্ণণা শুরুতে একরকম, পরে আরেকরকম। চোখে পড়ার মতো পার্থক্য! তারপর চরিত্রগুলোর তেমন ব্যাকগ্রাউন্ড পাওয়া যায়নি কারণ মূল চরিত্রের মুখ দিয়ে গল্পটা বলা। তার কথাই ছিলো প্রায় পুরো বই জুড়ে। যতটা সময় অন্য দিকে দিয়েছেন লেখক, তার অর্ধেকটা সময়ও মূল গল্পে দিলে আরও বেশি জমতো গল্পটা এটা আমার বিশ্বাস।
সবমিলিয়ে মনস্তাত্ত্বিক জনরার বেশ ভালো একটা ফিকশন ছিল আমি বলবো। এই জনরায় কাজ খুব কম হয় দেশে। ভালো কাজ তেমন একটা নেই বললেই চলে। সেই দিক থেকে হিসেব করলে এটি ভালো অবস্থানই পাবে আমার ধারণা।
হুমায়ূন আহমেদের বেশ কিছু বই আছে যাদের প্রথম সারিতে থাকবার কথা ছিল। অথচ বেশীরভাগ পাঠকরাই হিমু হিমু করে সেইসব অসাধারণ বইগুলোকে এখন প্রায় বিস্মৃতির অতলে পাঠিয়ে দিয়েছেন। তবু যারা বেঁছে বেঁছে হুমায়ূন পড়েন এবং সাইকোলজিকাল থ্রিলার যাদের পছন্দ, তাদের এই বইটি ভালো লাগবে বলে মনে করি।
সাইকোলজি আমার অন্যতম প্রিয় বিষয়। আর সাইকোলজির কোন গল্প যখন হুমায়ূন আহমেদের কাছ থেকে শুনি তখন সেই গল্পের অনন্দ আরও বহুগুণ বেড়ে যায় বলাই বাহুল্য। একজন খুনির মানসিক অবস্থা এবং প্রতিটি ফ্রেমের স্পষ্ট বর্ণনা গল্পটাকে পুরোপুরো জীবন্ত করে তুলেছে। আসলে হুমায়ূন আহমেদের লেখা এতো সাবলিল যে, "গল্পের চরিত্রের সঙ্গে রিলেট করতে বেগ পেতে হয় না" এটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না নিশ্চয়ই। তবে বলে রাখা ভালো, এই বইতে পাগলামির চূড়ান্ত করা হয়েছে। ধরুন, গল্পের সূত্রধরের একবার মনে হলো গাছের গোড়ায় পানি না দিয়ে যদি রক্ত ঢালা হয় তাহলে কী হবে? এমনই নানান এক্সপেরিমেন্ট রয়েছে।
গল্পে খুনির মানসিক পরিবর্তন, গল্পের ভয়াল আবেশ আমার চমৎকার লেগেছে। অন্যদের ভালো লাগবে বলে মনে করছি।
হুমায়ূন আহমেদের লেখার আজকাল বহু অনুকরণ হচ্ছে। অনেক লেখকই তার বই থেকে শিখেছেন যাদের লেখায় হুমায়ূনীয় একটা ব্যাপার চলে আসে। তারা উপন্যাস লিখেন তার মতো করে। হুমায়ূনীয় হিউমার আনার তারা খুব চেষ্টা চা��ান। কতটা সফল তারা এই আলোচনায় যাবো না কিন্তু আমার মতে হুমায়ূন আহমেদের যে একটা ব্যাপার তারা কখনো কপি করতে পারবেন না সেটা হচ্ছে অত্যন্ত জটিল এইসব লেখাগুলো সাবলীল এবং হিউমারাসভাবে গিলিয়ে দেয়া।
গল্পটা শুরু হয় যাকে দিয়ে সে নিজেকে 'আমি' সম্বোধন করেছে। সে শুরু করেছে তার একাকী ঘরে কারো কথা শুনে ভয় পাওয়া থেকে। সেদিন থেকে সে বুঝতে শুরু করে সে আসলে পাগল হয়ে যাচ্ছে। মজার ব্যাপার,যে নিজেই নিজেকে পাগল বলে জানে তাকে ডাক্তার রীতিমত সার্টিফিকেট দিয়ে বলে দেয় সে পাগল না, সম্পূর্ণ সুস্থ!
আসলে অনেক পড়াশোনা জানা থাকায় তার পাগলামীটা ঠিক কোন পর্যায়ে এবং কিভাবে সুস্থ হতে হবে এটাও সে জানে। সে সুস্থ হতে চায় না পাগল থাকতে চায় এটাও সে নিজেই ঠিক করবে। চাইলেই কারো সামনে সম্পূর্ণ সুস্থ থাকার অভিনয় সে করতে পারে।
মূল চরিত্র একাকী একজন পুরুষ। এই গল্পে পার্শ্বচরিত্রের সংখ্যা খুব অল্প। নায়কের একজন আত্নীয়,একজন ডাক্তার,তার স্ত্রী রুপা যে তাকে পাগলের মতো ভালোবাসে আর সারাক্ষণ অনুসরণ করে। রাগী টাইপ একটা বড় শালী,আরেকটা ছোট শালী। আছে কয়েকটা বাঁদর,একটা রক্ত খাওয়া গাছ।
অনেকদিন আগে একটা বিদেশী থ্রিলার পড়েছিলাম যেখানে পুরো গল্প পড়বার পর দেখা যায় মুল কথক নিজেই খুনী। স্পয়লার হয়ে যাবার ভয়ে বইয়ের নামটা উল্লেখ করলাম না তবে গল্পটা বিশ্বব্যাপী তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে এইভাবে পাঠককে বোকা বানাতে পারার জন্য।
আর এদিকে হুমায়ূন আহমেদের এই বইটি যেখানে মূল কথক একজন সাইকোপ্যাথ এবং সে নিজেও সেটা জানে কিন্তু সুস্থ হতে চায় না। একের পর এক প্রতিশোধের গল্প শুনিয়ে গেছে সে হাসিমুখে,মজার ছলে এটি আসলে ভয়াবহ একটি গল্প যেটা হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস হিসেবে একেবারেই আন্ডাররেটেট।
খুব ছোটবেলায় পরপর কয়েকবার পড়ে ফেলেছিলাম এই গল্পটা, সাবলীল গল্পের কারণে মজা পেয়েছিলাম কিন্তু আসলে বুঝিনি। বড় হয়ে ম্যাচিউর হয়ে বাইরের দেশের কিছু সাইকোলজিক্যাল গল্প পড়ে সিনেমা দেখে বুঝেছি এই গল্পটা আসলে একটা জিনিস! হুমায়ূন ভক্তদের সবাই এই গল্পটা বোঝেনি, অনেকে পড়ে বিরক্তও হয়েছে কিন্তু আমি নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারি এটা যদি আমেরিকায় লেখা হতো এটা অবলম্বনে একটা সিনেমা হতো এবং সেটা আইএমডিবিতে টপে থাকতো অবশ্যই।
হুমায়ূন আহমেদের এরকম আরো কিছু লেখা- বাদল দিনের দ্বিতীয় কদম ফুল যখন গিয়াছে ডুবিয়া পঞ্চমীর চাঁদ পারুল ও তিনটি কুকুর কুটু মিয়া মেঘের ওপর বাড়ি
হুমায়ূন আহমেদের সাবলীল লেখার ভঙ্গিমা,তার হিউমার,তার প্রেম তার মধ্যবিত্তের অভাব অনটনের গল্প প্রাণপন কপির চেষ্টা করা লেখকেরা এই দিকটা স্কিপ করে যাবে। এত সাবলীলভাবে এরকম জটিল লেখা লেখার সাধ্য একমাত্র তারই ছিলো।
আমি এবং কয়েকটি প্রজাপতি...নামটা শুনে কেমন যেন প্রেমের উপন্যাস মনে হচ্ছে না? প্রেম প্রেম মনে হলেও এখানে প্রেমের সেই আদর্শ ভাব নেই...আমি এবং কয়েকটি প্রজাপতির প্রেম স্বাভাবিক দেখতে অস্বাভাবিক মানুষের খেয়ালি প্রেম বলতে পারেন। বইটাকে অনেকেই সাইকো থ্রিলার বলেছেন, সেই আগ্রহ থেকেই মূলত পড়া। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সাইকো থ্রিলার পড়ার মজাটা চিন্তা করেই এই বই হাতে তুলে নিয়েছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে বলতে হচ্ছে যে, এটা সাইকো থ্রিলার না...বরং বিশুদ্ধ প্রকারের সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার। এখন বলবেন দুটোর পার্থক্য কী? পার্থক্য আছে...অনেক। প্রধান পার্থক্য...প্লটিং এবং চরিত্র। এখানে বিভৎস সব খুনের বর্ণনা নেই বরং এখানে একজন মানুষের মনের জটিল দিকগুলো আছে যার মাধ্যমে পাঠককে বিভ্রান্তিতে ফেলতে সক্ষম হয় আমি এবং কয়েকটি প্রজাপতি...পাঠককে ভাবাবে “আচ্ছা চরিত্রটা ঠিক কী করতে চলেছে বা কী চাইছে সে”। মনস্তাত্ত্বিক বিষয়গুলোর ছান্দিক ভাব আছে এতে, গৎবাঁধা ‘হু ডান ইট’ থ্রিলারের কোন প্লট নেই। পাঠক সব জানবে, দেখবে, বুঝবেও, কিন্তু তারপরেও কেমন যেন একটা চুম্বকীয় ক্ষেত্রের মধ্যে পড়ে যাবে। আমি এবং কয়েকটি প্রজাপতির প্লট কেন্দ্রিভূত হয়েছে ফখরুদ্দিন চৌধুরী নামের এক ধনাঢ্য ব্যাক্তির উপরে এবং তার জবানিতেই পুরো উপন্যাসটি উত্তম পুরুষে লেখা। অদ্ভুত ধরনের মানুষ সে, নিজেকে তার পাগল হিসেবে উপস্থাপনের ভঙ্গিমা দেখে পাঠক কিছুটা হলেও বিভ্রমে পড়বে ‘হচ্ছেটা কী’! জাদুকর হুমায়ুনের কারিশমা কিন্তু এটাই। উত্তম পুরুষে বলা তার প্রতিটি কথা শুনে মনে হবে, এই লোকটা বদ্ধ উন্মাদ...কিন্তু শেষ পর্যন্ত পড়লেই একমাত্র বোঝা সম্ভব আসলে মূল ব্যাপার কী ছিল! হুমায়ুন আহমেদের বইয়ের মূল থিমের মধ্যে অন্যতম একটি মানুষের জটিল মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা। লেখকের এই বইয়ের ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি। জটিল মনস্তত্ত্ব, জটিল প্লট, জটিল চরিত্র...গল্পটা কীভাবে সরল হবে বলুন? বইটাতে মূল চরিত্র এমন কিছু কাজ করে বা এমন কিছু জিনিস বলে, যাতে আপনি সহজেই ম্যানিপুলেটেড হয়ে পড়বেন। আর ঐ যে বললাম, উত্তম পুরুষে লেখার কারণে প্রতিনিয়ত মনে হবে মূল চরিত্র মনে হয় আমার সাথেই কথা বলছে। বইটা অক্টোপাসের মতো এর কর্ষিকাগুলো দিয়ে পাঠক মনকে সহজেই জড়িয়ে ফেলার ক্ষমতা রাখে। লেখক হুমায়ুন সার্থক...শুধু কিছু শব্দের মাধ্যমে তিনি পাঠক মনকে সুন্দরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম ছিলেন, যেটা অনেকেই পারে না। সবশেষে বইয়ের এরকম অদ্ভুত নামকরণের ব্যাপারে বলবো, আমি এবং কয়েকটি প্রজাপতি একটি মেটাফোরিক পাজল। অনেক দারুণ টাইপের কোন সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার পড়তে চাইলে সত্যি এর কোন বিকল্প হতে পারে না...জাদুকর হুমায়ুনের জাদুকরি লেখার আরেকটি বলিষ্ঠ নমুনা আমি এবং কয়েকটি প্রজাপতি। :)
“বাংলা সাহিত্যের চরিত্রায়নে সেরা কে?”–এই প্রশ্নটা কর্ণকুহরে প্রবেশের সেকেণ্ডের অর্ধাংশেই আমি এক হাত উঁচিয়ে বলতে পারব–হুমায়ূন আহমেদ! তো, চরিত্রায়নের বস যদি একজন মানসিক অসুস্থ ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গিতে গল্প লিখেন, তবে কতটা জান্তব হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ❝আমি এবং কয়েকটি প্রজাপতি❞ নামক সাইকোলজিক্যাল থ্রিলারে ঠিক এমই একজন ব্যাক্তির চিন্তার জগৎ এবং কর্মপন্থা নিখুঁতভাবে তুলে ধরা হয়েছে। একজন ব্যক্তির সুস্থ স্বাভাবিক জীবন থেকে অস্বাভাবিকতার দিকে ধাবিত হওয়া এবং পারিপার্শ্বিকে তার প্রভাব–প্রতিটি জিনিসই বেশ সুক্ষ্মভাবে তুলে ধরেছেন লেখক। তবে আমাদের প্রোটাগনিস্ট আক্ষরিক অর্থেই বেশ ইন্টারেস্টিং। গল্পে সে নিজেকে সাইকোপ্যাথ বলেছে, তবে সাইকোপ্যাথের সাথে সাথে তাকে আমার সাইকোথিক মনে হয়েছে(অর্থাৎ সে সাইকোসিসে ডুবে যাচ্ছে)। সাইকোসিস হওয়ায় হ্যালুসিনেশন প্রায়ই ঘটে গল্পের আনাচে-কানাচেতে। যখনই হ্যালুসিনেশন হতো তখনই কাঁসা কন্যা নামের একজনের আবির্ভাব ঘটত, যা মূলত প্রোটাগনিস্ট এর অনুভূতির-ই প্রতিফলন। ভ্রমগুলোর হঠাৎ আবির্ভাব এবং বর্ণনা আমি অনুভব করতে পারছিলাম, মধ্য রাতে বই পড়ায় সেই কল্পনার জগতের সত্তার উপস্থিতিতে নিজেও খানিকটা ভয় পাচ্ছিলাম।
আমাদের প্রোটাগনিস্ট আসলেই একজন ভিন্ন কেইস। সে নিজেই উপলব্ধি করতে পারছে সে অসুস্থ, যুক্তি দিয়ে বিচার করছে সবকিছু, তার কাজকর্ম এবং আগ্রহ অস্বাভাবিক, যা এ���্ষেত্রে ঘটে না সচরাচর। সে নিজের হ্যালুসিনেশন হচ্ছে বুঝেও একপর্যায়ে বাস্তবতা ভুলে তাতেই ডুব দেয়, যা ডিলিউশন ঘটানোকে বোঝায়।
সাইকোপ্যাথিক হওয়ায় সে বিনা দ্বিধায় বেশ ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করেছে, যাতে প্রাণ হারাতে হলো প্রিয়জনদের। অবাক লেগেছে–নিজে মানসিক রোগী হয়ে অপর আরেকজনকে মনস্তাত্ত্বিক চাপে ফেলে কীভাবে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে আনল সে!
বইয়ের সমাপ্তিটা ছিল অদ্ভুত সুন্দর। আমাদের বুদ্ধিমান এবং ওয়াকিবহাল সাইকোপ্যাথ দিন শেষে ডায়রীর পাতায় নিজ স্ত্রীর স্মৃতি দেখে ঠিকই আবেগে অশ্রুসিক্ত হতো। স্ত্রী রূপার জন্যেই আসলে আমারও বুকটা হু হু করে উঠেছে। এতটা বাস্তব পরিণতি! হয়তো সমাজে কেউ সাইকোপ্যাথ, কেউ সিজোফ্রেনিয়াতে ভুগছে, কেউ সাইকোসিসে ভুগছে, কতো মানসিক রোগ আছে তল্লাটে, তবে মানসিক রোগ কি আবেগ আর ভালোবাসাগুলোকে আচ্ছাদনে রাখতে পারে? না, পারে না। কিছু আবেগ মাঝরাতে ঠিকই জীবন্ত হয়ে কড়া নাড়ে। কেননা, জীবন বড্ড অদ্ভুত।
বইঃ আমি এবং কয়েকটি প্রজাপতি লেখকঃ হুমায়ূন আহমেদ ধরণঃ সাইকোলজিকাল থ্রিলার প্রকাশিতঃ ২০০৩ পৃষ্ঠাঃ ৯৪ রেটিংঃ ৫🌟/৫🌟
🦋কাহিনী সংক্ষেপঃ
রূপার মনে হচ্ছে যে, তার স্বামী ফখরুদ্দিন চৌধুরী একজন মানসিক রোগী | এর অবশ্য অনেকগুলো কারণ ও আছে | ফখরুদ্দিন নানারকম অদ্ভুত সব কাজ করে, যেমনঃ গাছে পানির পরিবর্তে রক্ত ও বিষ দেয়, কিছু গাছকে হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে গরম বাতাস দেয়, বানরের সাথে গল্প করে; তারপর একদিন রূপা দেখে যে, ফখরুদ্দিন ছাদে বৃষ্টির পানিতে নাক ডুবিয়ে শুয়ে আছে ইত্যাদি | ফখরুদ্দিন আবার সাইকোলজিক্যালি দুজন ব্যাক্তিকে খুন ও করে |
ফখরুদ্দিন কাদেরকে খুন করে? তার আসলে সমস্যাটা কী? সে কী আসলেই একজন মানসিক রোগী? এইসব প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে পড়ে ফেলুন এই বইটি |
🦋পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ
এই গল্পের গল্পকথক হল ফখরুদ্দিন | সে তার জীবনের গল্পগুলো বলছে | বইটি পড়ে মনে হবে যেন , সে আপনার সাথেই গল্প করছে | বইটি পড়ার আগে জানতাম না যে, এটি কী ধরণের বই | বইটি পড়ে আমি সত্যিই খুব অভিভূত হয়েছি | বইটি অর্ধেক পড়ার পর যখন আমার বোনকে ফখরুদ্দিনের করা অদ্ভুত সব কাজের কথা বলছিলাম তখন ও আমাকে বইটি পড়তে নিষেধ করেছিল | বলেছিল যে এসব বই পড়তে না | যাই হোক, আমি আমার বোনের কথা শুনিনি এবং বইটি পড়ে শেষ করেছি | আমি কাহিনীটা অল্প একটু লিখলাম কারণ বেশী লিখে ফেললে আপনাদের আর পড়ার আগ্রহ থাকবে না | সবার কাছে অনুরোধ, বইটি পড়া শুরু করলে মাঝপথে ছেড়ে দিবেন না | দয়া করে শেষ করবেন কারণ পুরোটা না পড়লে হুমায়ূন আহমেদের এই অসাধারণ উপন্যাসটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন না |
আমার রাত কাটে প্লবঙ্গেরর সাথে গল্প করে।কত বিচিত্র বিষয় নিয়েই না আমরা গল্প করি!মাঝে মাঝে তাকে কবিতা পড়ে শোনাই।সে মুগ্ধ হয়ে শোনে।তার চোখে ছলছল করে অশ্রু। সে চোখ মুছে গাঢ় গলায় বলে। এই কবিতা টা আবার পড় তো! আমি আবার পড়ি----
If we shall live, we live; If we shall die, we die; If we live we shall meet again; But to night, goodbye.
বইটা কিছুদূর পড়ার পর মনে হবে, এটা কি মিসির আলী সিরিজের বই? আমি নিজেও একটু সন্দেহে ছিলাম। আরও এগোচ্ছিলাম যখন, তখন একটু অবাক হলাম। হুমায়ূন আহমেদ সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার লিখেছেন এ ভেবে। মাথায় দু-তিনটে ধাক্কা লাগবে হঠাৎ করে এমন বই।
গল্প বলিয়ে হিসেবে হুমায়ূন আহমেদ একজন দিকপাল। আমি তাঁর সাইকো-থ্রিলারের চরম ভক্ত। মিসির আলির মতো চরিত্রের জন্যে আমি হুমায়ূনকে সবসময় একজন সেরা মানব। মানুষের মনের না-ভাবা, আঁধারে ঢাকা অংশের কাহিনি এই বইটিতে। একবসায় শেষ করাটা শুধু আকারে ছোট বলে নয়, মন্ত্রমুগ্ধতার জন্যেও।বইটি আগে পড়েছি বলে মনে হয়েছে শুরুতে, কিন্তু টেনেছে শেষ পর্যন্তই। গল্পও কখনো কখনো কবিতার মতো রহস্যময়, ঠিক এই বইটির মতো।
মানসিক অসুখ সম্ভবত একমাত্র অসুখ যে অসুখ ডাক্তাররা ধরতে না পারলে খুব আনন্দ হয়।
গল্পটা একজন মানসিক ব্যাধিগ্রস্ত নাকি ঠান্ডা মাথার খুনির পড়ার সময় বারবার দ্বিধায় পড়ে যাচ্ছিলাম। পুরো বইয়ে কাহিনী এমনভাবে লেখা হয়েছে যে পরে কী ঘটবে সহজেই অনুমান করা যায়। কিন্তু ঘটনার ধারাবাহিকতা ও বর্ণনাশৈলীর জন্য কেমন জানি ঘোর লাগা সৃষ্টি হয়। মানুষের মধ্যে থাকা একজন মানুষের সাথে জীবনের বড় একটা সময় একা মানুষের চিন্তাভাবনায় পার্থক্য থাকে। তাই শুরুর দিকে মনে হচ্ছিল অদ্ভুত কাজগুলো স্বাভাবিক মানুষদের কাছে অস্বাভাবিক মনে হলেও আদতে তেমনটাও না। কিন্তু যতই কাহিনী এগিয়েছে ধারণাও পরিবর্তন হয়েছে। কিছু মানুষের জীবনের উদ্দেশ্যই থাকে অন্যের জীবন নিয়ে খেলা। নাকি বলবো অন্যকে প্রভাবিত করতে স্বভাবতই মানুষের ভালো লাগে? তবে যাইহোক, এই প্রভাবিত করার পিছনের উদ্দেশ্যটাই আসল। প্রভাবিত করার এই খেলায় কারো জীবন আমূল পরিবর্তন করার অধিকার কি কারো আছে?
সাইকো রুগীর জবানবন্দী বলা যায় গল্পটাকে। এর আগে এক সিরিয়াল কিলার এর জবানবন্দী নিয়ে "যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ" পড়েছিলাম হুমায়ন আহমেদের। "আমি এবং.." কে আমি একটু কম রেটিং ই দেব। এর কারণ হুমায়ন আহমেদের সেই চিরাচরিত দুমদাম কাউকে generalise করার জন্যই। উনি হুট করে বলে দিলেন ডেন্টিস্ট রা সবথেকে বেশি সুইসাইড করে😄। যাইহোক, গল্পটা খুব ভালো লাগেনি। কারণ সাইকো লোকটি অন্য কোনো চরিত্রের কাছ থেকে নূন্যতম রেজিস্টেন্ট পায়নি। এমন সরল গতিতে ঘটনাটা বয়ে গেছে যে মাঝে মাঝে বোরিং লাগে। তবে হুমায়ন আহমেদ একটি মানসিক ভাবে অসুস্থ ক্রিমিনাল কে যেভাবে লিখেছেন, সেটা প্রশংসনীয়। সেই ক্রিমিনাল কিভাবে তার টার্গেট দের choice koreche সেটাও দেখিয়েছেন। সে তার থেকে মানসিক ভাবে দুর্বল লোকেদের খুঁজে বের করে তাদের অসুস্থ করে ফেলেছে। এক্ষেত্রে সাইকো লোকটির অতীত সম্পর্কে আরও বেশি তথ্য দেওয়া উচিত ছিল। তবে লেখক এর মধ্যে এমন কিছু প্রসঙ্গ এনেছেন, যেগুলো প্রমাণিত সত্য। সাইকোলজিক্যাল জার্নাল ফলো করলে সেগুলো বোঝা যায়।
অসাধারণ!!! অনেক অনেক দিন পর হুমায়ূন আহমেদের কোনো বই পড়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুললাম। সহজ সরল ছিল। সাইকোপ্যাথ নিজেই নিজের সব কর্মকান্ডের বর্ণনা দিচ্ছে।
শুধু একটা জিনিস বুঝতে পারছি না, ঘরের মধ্যে যে বিড়ালকে আটকে রেখে দেওয়া হয়েছে অন্ধকারে এইটা কী কোনোভাবে রুপার কথা বলা হয়েছে উপমা আকারে? কেউ কী বুঝতে পেরেছেন এটা আমাকে একটু বলবেন তাহলে।
শুরুতেই বলে নিয়েছে তাকে যেন পাগল না ভাবে। আমিও তাই পাগল ভাবি নি। পাগলের মুখে তার পাগলামী আর অন্যান্য গল্পগুলো শুনিয়ে গেছেন হুমায়ূন আহমেদ। আর আমরা শুনেছি খুব সুন্দর ভাবে। এখানেই একজন লেখক সফল।
কিছু কিছু বই পড়ার ক্ষেত্রে পাঠক যদি লেখকের লেখার ওপর পুরোপুরি আত্মসমর্পণ করে দেয়, তাহলে সেই বই পড়াটার আনন্দ আরো বেড়ে যায়...
এই বইটা পড়ার সময় আমি সেটা করার চেষ্টা করেছি...লেখকের সকল যুক্তি, ব্যাখ্যা বিনা দ্বিধায় গ্রহণ করেছি! এবং বেশ উপভোগ করেছি...
একজন সিজিওফ্রেনিয়ার রোগীর আত্মকথন প্যাটার্নে লেখা বই 'আমি এবং কয়েকটি প্রজাপতি'... বাস্তব এবং পরাবাস্তবের সাথে তার সহজ সাবলীল সহাবস্থান, আশপাশের মানুষজনের ওপর তার সাইকোলজিক্যাল প্রভাব বিস্তার, এবং সাইকোপ্যাথিক মানসিকতার সহজ স্বীকারোক্তি নিয়েই এই বই খুব সহজভাবে (একদম তরতর করে পড়ে ফেলা যাবে এমন ভাবে) পুরো গল্প শেষ করেছে...
এই বইটা শেষ করে মনে হচ্ছে, এমন এক চরিত্র যদি আমাদের আশপাশে থাকতো, আমাদের অবস্থা হতো 'রাজ খারবান'... পাঠকেরা এর অর্থ বের করুন!
If we shall live, we live; If we shall die, we die; If we live we shall meet again; But to night, goodbye.
'আলসের চোখে কিলবিল করে আইডিয়া উইপোকা বলে চল ভাই তারে খাই গিয়া।’ হুমায়ুন আহমেদ শীতকালের অলস দুপুরে বসে লেখাটি লিখেছিলেন কি না জানা নেই, তবে বাংলায় স্যারের লেখনিতে সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার পড়ার মধ্য কোথায় যেন এক অলস সৌন্দর্য বিদ্যমান।
বইটিতে বেশ কিছু নান্দনিক চরণের দেখা পাওয়া যায়। যেমন- Come not, when I am dead, To drop thy foolish tears upon my grave. আবার সেই চিরাচরিত হুমায়নি ধারার প্রেম বিষয়ক পন্ডিত মশাইসূচক মতামতেরও বালাই নেই। যেমন- "মনে হচ্ছে ও একটা ঘোরের মধ্যে আছে। প্রবল ঘোর। কোনো মেয়ে যদি প্রথম কারো প্রেমে পড়ে তাহলে তার মধ্যে এমন ঘোর তৈরি হয়। তার মধ্যে শশক-প্রবৃত্তি চলে আসে। " যদিও কাহিনীচিত্রের সাথে সামঞ্জন্য রেখেই বর্ণনাগুলো এসেছে।
এমনকি ইংরেজি কবিতার চরণগুলোও চরম সঙ্গতিপূর্ণ বইটির মূলধারার সাথে। " If we shall live, we live; If we shall die, we die; If we live we shall meet again; But to night, goodbye." এককথায় বলতে গেলে, একদম সুখপাঠ্য বই, এক বসায় পড়ে ফেলার মত বই।
নামের সাথে কাহিনীর মিল কোথাও খুঁজে পাইনি। হুমায়ূন আহমেদের বেশিরভাগ বইয়েরই নাম এবং কাহিনীর কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। সে কথা যাক। একজন সুস্থ মানুষ হয়ে একজন সিজোফ্রেনিক মানুষের কাহিনী এতোটা গভীরভাবে লেখক কিভাবে লিখেছেন তিনিই ভালো জানেন। গল্পের কোথাও অযথা বই বড় করার কোনো প্রবণতা ছিলো না। একটা বই পছন্দ করার অন্যতম কারণ আমার কাছে এটাই। তবে, মূল কাহিনী থেকেও আনার রূপার দিকেই মন ঝুঁকে ছিলো বেশি। শেষ পর্যায়ে মনে হচ্ছিলো 'রূপা'র মতো একটা মেয়েকে এমন পরিস্থিতির স্বীকার হতে হলো। শেষটায় শুধু এটাই মনে হয়েছে "দস্তা-কন্যা" র সাথে এমন না হলেও পারতো।
এই বইটা নিয়ে যা ই বলি কম পড়বে। এখানে লেখক নিজেই শ্রোতার ভূমিকা পালন করেন। এক অজ্ঞাতনামা গল্পকথকের ছদ্মবেশে হুমায়ূন আহমেদ এই বইয়ে সরাসরি পাঠকের সাথে খেলেছেন। তবে এই খেলায় যেকোনো পাঠকেরই জেতার সম্ভাবনা শূন্যের কোঠায়। পাশাপাশি একজন মানসিক বিকারগ্রস্তের চিন্তা-চেতনা যে কোন স্তরের সে সম্পর্কে একটা সম্যক ধারণা পাবেন বইয়ে। Horrible experience! সবমিলিয়ে এটাও একটা মাস্ট রিড আমার মতে।