Bibhutibhushan Bandyopadhyay (Bangla: বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়) was an Indian Bangali author and one of the leading writers of modern Bangla literature. His best known work is the autobiographical novel, Pather Panchali: Song of the Road which was later adapted (along with Aparajito, the sequel) into the Apu Trilogy films, directed by Satyajit Ray.
The 1951 Rabindra Puraskar, the most prestigious literary award in the West Bengal state of India, was posthumously awarded to Bibhutibhushan for his novel ইছামতী.
"অভিযাত্রিক" নাম শুনলে আমাদের মনে ভেসে উঠতে পারে দুর্গম পাহাড়, অরণ্য বা দুঃসাহসিক কোনো অভিযানের কথা।অথচ এ বইটি ছাপোষা এক মানুষের "ঘর হইতে দুই পা ফেলিয়া" দেশভ্রমণের গল্প।কখনো শখের বশে পায়ে হেঁটে, কখনো জীবিকার তাগিদে সারা বাংলাদেশ ও ভারতবর্ষের বিভিন্ন সাধারণ জায়গা ঘুরে বেড়িয়েছেন বিভূতিভূষণ। তার অন্বিষ্ট ছিলো প্রকৃতি। তৎকালীন ভারতবর্ষ ঘুরে বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন লেখক। আর দেখেছেন বহুবর্ণিল সব মানুষ। বিরান প্রান্তরের একা সন্ন্যাসিনী, চালচুলোহীন শিক্ষক, অহংকারী ধনী - কতো অদ্ভুত মানুষ যে ছড়ানো ছিলো চারপাশে! প্রায় একশো বছর আগেকার বাংলার প্রকৃতি, মানুষ, পেশা ও সার্বিক অবস্থা বিভূতির কলমে উঠে এসেছে প্রাণোচ্ছলতার সাথে। তখনই তিনি খেয়াল করেছেন, ব্রাহ্মণ শ্রেণির পতন অনিবার্য কারণ তারা অলস ও একেবারে দায়ে না পড়লে কাজ করে না।তখনই তিনি খেয়াল করেছেন, লোকনিন্দা ও সমাজের ভয়ে মানুষ প্রচলিত মতের বাইরে নিজস্ব মত প্রকাশ করতে ভয় পায়।তাই সবাই গড়ে উঠছে একই ছাঁচে।কারো মধ্যে নেই নিজস্বতা। শিক্ষা মানুষকে মুক্তি না দিয়ে কীভাবে আত্মম্ভরিতা ও শোষণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে তা দেখে ব্যথিত হয়েছেন তিনি। আশ্চর্য হতে হয়, জনমানবহীন প্রান্তরে একা এক যুবতী সন্ন্যাসিনী নিশ্চিন্তে থাকতে পারতেন তখন।এখন কি এটা ভাবা যায়?
আমি লেখক বিভূতির ভক্ত সেই বাল্যকাল থেকে।মানুষ বিভূতিও আকর্ষণ করে খুব। "অভিযাত্রিক" পড়ে মানুষ বিভূতি আমার আরো প্রিয় হলেন। এতো সহজভাবে জীবন ও প্রকৃতিকে ভালোবাসার গল্প বিভূতি ছাড়া কয়জনই বা লিখতে পারেন?
মানুষ বাইরে চলে যায় এক উন্নত জীবনের আশায়, দেশ ছেড়ে। আরো বলে যে বিদেশে দেখার কত জায়গা, কত সুন্দর সুন্দর অভিজ্ঞতা। দেশে আর কী এমন আছে! অথচ ঘরের দু'পা বাইরেই যে অনির্বচনীয় সৌন্দর্যের ভাণ্ডার আছে তা আমরা দেখতে পাই না। বিভূতিভূষণ যথার্থই বলেছেন, দশ মাইল ভ্রমণে একজন অভিযাত্রিক যে আনন্দ পায় সেই একই আনন্দ কেউ যদি এক হাজার মাইল পেরিয়ে পায়, তবে দশ আর হাজার সমানই। বিভূতিভূষণ বিদেশ-বিভুঁই ঘোরেননি। কিন্তু দেশের নানা জায়গা ঘুরেছেন। কখনো হেঁটে, কখনো জীবিকার জন্য, কখনো বা স্রেফ শখে। কিন্তু তিনি বাড়ির কাছের ফুলের ঝোপেই যে আনন্দ খুঁজে পেতেন, মানুষ হাজার কিলো পাড়ি দিয়েও তা পায় না। এই যে ভ্রমণের এই সংজ্ঞা, এইটাই আসল। আনন্দ আর অভিজ্ঞতা এই তো ভ্রমণের মূল। তা সে দূরেই যাই, আর কাছেই যাই। বিভূতি দেশ দেখেছেন, প্রকৃতির সাথে একাত্ম হয়েছেন আর দেখেছেন মানুষ। তাঁর কাছে মানুষ এবং প্রকৃতির চেয়ে বড় কিছু নেই। ভ্রমণে গিয়ে তিনি মানুষ চিনেছেন, নানা বর্ণের, নানা রঙের মানুষ। চীরবাসা ভারত-মাতাকে চিনতে গেলে ওসব হতদরিদ্র অথচ অন্ত:করণে উচ্চ মানুষের কাছে না গিয়ে উপায় নেই। অভিযাত্রিক এক অন্যরকম ভ্রমণ কাহিনী। এতে হয়তো কোন বিখ্যাত জায়গার বর্ণনা নেই, নেই কোন ইতিহাস বা অট্টালিকার খাঁজ, দামী আসন বা খাবার। কিন্তু এতে রয়েছে পথের গন্ধ, মাটির গন্ধ। যা ভ্রমণের একেবারে মর্মকথাটি বলে যায়। সবসময়ের প্রিয় ভ্রমণকাহিনীর জায়গায় তাই অভিযাত্রিক অনায়াসেই জায়গা করে নিল।
পড়লাম। বইটার ব্যাপারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। বইটা কিছুটা আন্ডাররেটেড হওয়ার কারণও আন্দাজ করলাম বইটা পড়ার পর। আসলে বইটার মধ্যে আরণ্যক আর চাঁদের পাহাড়— দুই বইয়েরই গন্ধ আছে৷ গন্ধ নয়, গন্ধ নয়। রীতিমতো ভালো প্রভাবই আছে। চাঁদের পাহাড়ে যেরকম এডভেঞ্চার এডভেঞ্চার ভাব, নতুন কিছু জানার আকাঙ্ক্ষা ছিলো, এই বইয়ে সেটা আছে। আর আরণ্যকের সাথে বেমিল কিছু পেলাম না, শুধু প্রেক্ষাপট ছাড়া। আরণ্যকেও বন-বাদাড়-প্রকৃতি-সবুজ, নতুন নতুন কিসেমের মানুষ আবিষ্কার করতেন গল্পকথক, এটায়ও সেরকমই আছে। তবে অভিযাত্রীক যে লেখকের অভিজ্ঞতা প্রসূত, তা গল্পের ফাঁকে ফাঁকে লেখক সরাসরি বলেছেন, বইয়ে গল্পকথকের নামও বিভূতিভূষণ। আরণ্যকে সেটা সরাসরি বলে নাই। আরণ্যকের প্লট ছিলো বর্তমান ভারত ভুখন্ডে, অভিযাত্রীকের প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ কিছুটা বার্মায়।
তবে অভিযাত্রীক নিঃসন্দেহে ভালো বই। মংডু থেকে চন্দ্রনাথ পাহাড় পর্যন্ত বিভিন্ন মানুষের সাথে পরিচয়, তাদের জীবনধারা, এসব দারুণ লেগেছে। আর বিভূতিভূষণের লেখার সেই চিরচেনা প্রকৃতির সুর, সবুজের প্রতি আলাদা ফ্যাসিনেশন— এসব তো ছিলোই। আরণ্যক না পড়া থাকলে এই বইটা আরও ভালো লাগতো, রেটিং আরোও বাড়তো হয়ত। আরণ্যক পড়া থাকলে এটা না পড়লেও চলবে আমার মতে। একই অভিজ্ঞতা প্রায়৷ ওভারল ভালো বই।
মাঝে মাঝে একদম ঠিক সময়ে ঠিক বইটা হাতে এসে পড়লে সেটা বইয়ের চেয়েও বড় হয়ে ওঠে৷ অভিযাত্রিক বইটা আমার কাছে তেমনি হয়ে থাকবে।
" বহুদিন ধরে বহুক্রোশ ঘুরে,
দেখিতে গিয়াছি পর্বতমালা, দেখিতে গিয়াছি সিন্ধু!
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া,
ঘর হইতে শুধু দুই পা ফেলিয়া,
একটি ধানের শীষের উপর, একটি শিশিরবিন্দু! "
অভিযাত্রিক কাকে বলে? অভিযাত্রা কি? যে মানুষ এই ধুলো ময়লা, জ্যাম, ঘামের শহরটায় পা ফেলতে ভয় পায়, সেই যদি একলাফে সব ডিগিয়ে বাইরে খুব নগণ্য কিন্তু প্রকৃতির কোলে এসে পড়ে, সেটাকে কি অভিযান বলা যায় না? বিভূতিভূষণ কলকাতা ডিঙিয়ে এসে পড়েছেন আশেপাশের গাঁয়ে, চট্টগ্রাম কি বার্মায়,কুমিল্লা কি নোয়াখালী-ফরিদপুর, তাও অভিযান বৈকী!
জীবনানন্দ যদি প্রকৃতির কবি হন, বিভূতি-ভূষণ হচ্ছে প্রকৃতির লেখক, প্রকৃতির শিল্পী। গল্প যেমনি হোক, সিন বর্ণনায় অতি অসামান্য। আর যারা কাঠখোট্টা ভীড়ের শহরে থাকে, বাতাসের জন্য হাহাকার করে, তাদের জন্য তো পুরো অমৃত।
চাকরির সুবাদে তিনি মোটামুটি ভবঘুরে জীবনই পেয়েছিলেন। এখানে সেখানে চাকরি করেছেন, চাকরির সুবাদে ভ্রমণ আর যেখানেই গিয়েছেন তার অদ্ভুত কলমে তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আর মানুষের ভেতরের বর্ণনা দিয়ে রেখেছেন। চাকরিতে কত পেতেন সে প্রশ্ন তার কাছে অবান্তর, ঘোরাটাই আসল।
আসলেই, ভবঘুরে কবির সংসার হয় না, তাই বলে তো আর ভগবানের প্রসাদকেও অস্বীকার করতে পারিনে। পথের দেবতা ডাকে আমারে, আমি উদাস হয়ে যাই, চোখে রং লাগে, অথচ তখনি নারীর এক অনির্বচনীয় মূর্তি আমার সম্মুখে দাড়াঁয়, এখনো তোমার কিছুই হল না?
আফসোস হয়, তার মত চোখ দিয়ে বাংলাদেশকে দেখতে পেলুম না, না পারলাম লিখতে। পথের দেবতার কৃপাধন্য ছিলেন বিভূতিবাবু, নইলে কেউ এমন দেখতে এবং একইসাথে এমন লিখতে পারে না। এমন লোকের পক্ষেই শুধু গুটিকয়েক বই ঘেঁটে, আফ্রিকা না গিয়ে চাঁদের পাহাড় লেখা সম্ভব ছিল, আর আরণ্যক তো আরণ্যকই!
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে গেছেন, সেসবের স্মৃতি নিয়েই এই বই। নির্দিষ্ট কোনো ধারা মেনে লিখেননি। অনেকটা মুখে মুখে গল্প বলে যাওয়ার মতো করে। তাই ভাষার কারিকুরি চোখে পড়ে না। কিন্তু একেবারে সাধারণ স্থানের বর্ণনাও এমন সহজভাবে দিয়েছেন, যাতে চোখের সামনে ভেসে ওঠতে দেরি হয় না।
বিভূতি বাডুজ্জের ভ্রমণ কাহিনির তারিফ না করে পারা যায় না। এ এক অদ্ভুত 'অভিযাত্রিক' বিভূতিভূষণ৷ সারা ভারতবর্ষের অরণ্য চড়িয়ে বেরিয়েছেন এই বাঙালি সন্তান। তার বেশিরভাগই পদব্রজে! বুঝুন।
অরণ্যের প্রতি অকৃত্রিম মুগ্ধতা সে তো বিভূতিভূষণের লিখবার কমন বিষয়। কিন্তু এই বন সৌন্দর্য যতটা নিবিড়ভাবে উপলব্ধি করেছেন, ততটা আর তো কেউ পারেনি। নিজে যা দেখেছেন দু'চোখে ঠিক তাই কলম এসেছে তাঁর। এতটুকুও কৃত্রিম আতিশয্য নেই। এইটাই বিভূতির ভ্রমণকথার বড় গুণ। অনেকেই তো ভ্রমণকাহিনি পড়েছি। এমন সাচ্চা দিলের বর্ণনা খোদ বাংলা সাহিত্য নয় ; বিশ্বসাহিত্যেও খুব বেশি নেই।
শুধু বইটির সময়কাল মনে রাখুন। গেল শতকের ত্রিশের দশক। বাঙালি হিন্দু আর বাঙালি মুসলমানের সম্পর্ক তেতে উঠছে সবে। তখন বিভূতিভূষণ বাংলার পল্লীগ্রামে ঘুরছেন। নিজের পর্যবেক্ষণে - " পায়ে হেঁটে বাংলার অনেক গ্রামেই ঘুরেচি, সর্বত্রই দেখেচি, একই অবস্থা - ভদ্রলোকের পতন, মুসলমান ও অনুন্নত জাতির অভ্যুদয়। " ভদ্রলোক বলতে তিনি কাদের বোঝালেন? বেশ খানিকক্ষণ পড়া বাদ রেখে ভাবলাম। বাঙালি উচ্চবর্ণের হিন্দুদের বোঝাতে তিনি 'ভদ্রলোক ' প্রত্যয় ব্যবহার করলেন। একটি নির্দিষ্ট বর্নের বা গোত্রের লোককেদের 'ভদ্রলোক ' আর বাকিদের বাঙালি তো নয়ই। 'মুসলমান, অনুন্নত জাতি' প্রভৃতি শব্দে যিনি পরিচয় করিয়ে দেন। তিনি কী বুঝেছিলেন নিজের মনের অজান্তেই কী বিষ ঢেলে দিচ্ছিলেন পাঠকদের মনে। বিশেষত, বড় লেখক মাত্রই বড় মানুষ - ভাববার সুযোগ সম্ভবত পাঠককে দিতে চাননি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম বড় কথাসাহিত্যিক বিভূতিভূষণ।
বিভূতিভূষণের কাছেই ভ্রমণ শেখা। তাঁর কাছেই শেখা ভ্রমণের জন্য প্রচুর পয়সা কিংবা আকর্ষণীয় ট্যুরিস্টস্পট প্রয়োজন নেই- ট্রেনে উঠে গেলেই দেখার কিছু না কিছু পাওয়া যায়, কাছেপিঠের মাঠ কি জঙলই অপার সৌন্দর্যে ভরপুর। সাবলীল লেখা, স্বপ্নালু ভ্রমণকাহিনী। বই পড়লে পথে নেমে যেতে ইচ্ছে করবে। কিছু জায়গায় ধাক্কা খেয়েছি, এজন্য এক তারা কম। ধরে নিয়েছি তা জেনারেশন গ্যাপ।
ইশ্! এমনভাবে যদি বেড়াতে পারতাম! না দূর বহুদূরে নাম করা কোন স্পটে না, এমনি বিভূতিবাবুর মতোই হেঁটে হলেও ইচ্ছেমতো বেড়িয়ে পড়া .... একা বা সঙ্গীসহ! পাহাড়ে বা অরণ্যে। ঝোপঝাড়ের মাঝেও সৌন্দর্য দেখতে পাওয়া মানুষটি কি চমৎকার লোভনীয়ভাবে জীবন কাটিয়েছেন! অবশ্য তার মতে আমিও একই আনন্দ পাই কারণ আনন্দ পাওয়াটাই মূলকথা। আমার পাশের এলাকায় শরতে কাশফুলের সমারোহের মাঝে যে সৌন্দর্য দেখে আনন্দ পাই - তা দূরদেশে গিয়ে পাওয়া আনন্দের সমানই।
বইটিতে লেখক তার রোমাঞ্চকর ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেছেন। তার লেখায় কী নেই? পাহাড়, বন, নদ-নদী, সমুদ্র, ঝরনা, গাছপালা, নিশুতি রাত ও জোৎস্না, গ্রাম ও বিভিন্ন ধরনের মানুষ, সবকিছুর বর্ণনা অসাধারণভাবে করেছেন। প্রতিটি পাতায় লিখিত তার ভ্রমণের জন্য টান, আবেগ ও ভালোবাসা পাঠকদের মধ্যেও সংক্রামিত হয়েছে বলে আমার বিশ্বাস। আর সেকালের মানুষের আতিথেয়তা কেমন ছিল তা চমৎকার বর্ণনা করেছেন। তাদের এবং এখনকার মানুষের মধ্যে আকাশ পাতাল তফাত। তাছাড়াও লেখকের বন্ধুভাবাপন্ন স্বভাবও আমার বেশ পছন্দ হয়েছে। পড়তে পড়তে মনটা ভরে গিয়েছে।
Just wow. I feel like packing my bags right now and going wherever the road takes me. This book just makes me realize how much I love nature and traveling and how I wanna learn about different cultures and people.
হেঁটে বেড়াতে চান বিভূতিভূষনের সাথে ? তাহলে বেশি কিছু লাগবেনা, পায়ে জুতো আর পকেটে খুব অল্প টাকা নিয়ে বেড়িয়ে পড়ুন, বইয়ের ভেতরে কখন যে ডুবে যাবেন, তা টেরই পাবেন না।
কুয়াশার মধ্যে নৌকা ভ্রমন, পাড়াগেয়ে জীবন, নেপাল মাঝি-- সব একাকার হয়ে যাবে বইটিতে।
প্রতিটি মানুষের মধ্যেই আছে একটা করে গল্প। এইতো ঘরের পাশে যে আরশিনগর, যেখানে পড়শি বসত করে.. চেনা- অচেনা আলো আঁধারে যারে দেখা যায় কিন্তু ঠিক বোঝা যায় না, তাঁর কাছে কিংবা ত��ঁর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বটবৃক্ষের কাছে গেলেও তো পাওয়া যায় কতো গল্পের রসদ! সবাই পায় না এই গল্পের খোঁজ, কেউ কেউ পায়, যেমন আজন্ম পেয়েছেন বিভূতি। ঠিক ভ্রমণ না, এই বইয়ের গল্পগুলো ভ্রমনের চেয়েও বেশি কিছু, জীবন ও জীবিকার মাঝে সরলদোলকের মতো দুলতে থাকা কোন এক অপার্থিব বাস্তবতা এঁকে দেয়ার গল্প। এমন ছবি বিভূতির চেয়ে ভালো আর কে’ইবা আঁকতে পারে!
এখনও ভ্রমণ কাহিনীর ভক্ত হয়ে উঠতে পারিনি। তবে বিভূতিভূষণের লেখার মধ্যে একটা তড়িৎ-চুম্বকীয় আকর্ষণ আছে যা পাঠককে একদম পকড়কে রাখে! নিম্নলিখিত লাইনটা বোধ হয় আমার মতন ঘর্কুনো পাব্লিকের জন্যই লেখা -
"আমার এই দৃঢ় ধারণা, যে দেশভ্রমণ করেনি, প্রকৃতিকে বিভিন্নরূপে দেখেনি, কোথাও বা মোহন, কোথাও বিরাট, বা কোথাও রুক্ষ ও বর্ব্বর - তার শিক্ষা সম্পূর্ণ হতে অনেক বাকি।"
অভিযাত্রিক মূলত বিভূতিভুষনের ভ্রমন কাহনীর সংকলন । তরুন বয়সে চাকরির কারনে বিভূতিভূষণকে ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াতে হয়েছিলো। তার উপর বিভূতিভূষণের প্রকৃতি প্রেমের পরিচয় তো তার লেখাগুলোতেই পাওয়া যায় । সেই কলকাতা থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম - কক্সবাজার- বার্মা - নোয়াখালি - চাঁদপুর- ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়া ও উড়িষ্যা মধ্যেপ্রদেশের ঘন জঙ্গল যে চষে বেড়িয়েছেন তিনি, তা'ই তুলে ধরেছেন এই বইতে । বেশ সুখপাঠ্য বইটি, সহজ - সরল বর্ণনার সাথে প্রকৃতি এবং সেখানকানর জনগোষ্ঠীর যে বিবরন তিনি এ বইতে দিয়েছেন তা যে কারোর ই ভালো লাগবে ।