What do you think?
Rate this book


160 pages, Hardcover
First published January 1, 1923
ভিলে বলিল,—'দিদি! রায়েদের বাড়ী হইতে আর ভাত আন না কেন? কাল কেবল একটা তাল খাইয়া আমরা ছিলাম। আমাকে সমস্ত দিয়াছিলে, তুমি কেবল একটুখানি খাইয়াছিলে। আজ আমরা কিছুই খাই নাই। রায়েদের বাড়ী হইতে কবে ভাত আনিবে?'
মেনী কেনারাম রায়ের শিশু পুত্রকে লইত, তাঁহারা দুই বেলা দুইটা ভাত দিতেন। বাড়ীতে আনিয়া সেই ভাত ভাই ভগিনীতে ভাগ করিয়া খাইত। আজ দুইদিন হইল রায়ের শিশুপুত্র এক সোঁ পোকা ধরিয়াছিল, মেনী তাহা দেখে নাই, সে জন্য মেনীকে তাঁহারা ছাড়াইয়া দিয়াছেন।
মেনী উত্তর করিল,—'রায়েদের খোকা সোঁ-পোকা ধরিয়াছিল; সেজন্য তাঁহারা আর আমাকে ভাত দিবেন না।'
ভিলে বলিল,—'তবে দিদি, আমাদের কি হবে? ভাত কোথা হইতে আসিবে? ক্ষুধায় আমার পেট জ্বলিয়া যাইতেছে।”
মেনী উত্তর করিল,—'দেখ ভিলু! পাড়ার লোকের নিকট হইতে কাল তোমাকে দুইটী ভাত আনিয়া দিতে পারি। কিন্তু চাউলের দাম বাড়িয়াছে, রোজ রোজ লোকে দিবে কেন? আমাদের দশা কি হইবে, তাহাই এখন ভাবিতেছি।'
ভিলে বলিল,—'তবে দিদি কি হবে, ভাত না খাইয়া আর আমি থাকিতে পারি না। আজ সমস্ত দিন কিছু খাই নাই, আমার বড় ক্ষুধা পাইয়াছে। ক্ষুধায় আমার পেট জ্বলিয়া যাইতেছে।'
মেনী বলিল,—'আর বৎসর ভড়েদের বাড়ী তুমি দুর্গা ঠাকুর দেখিয়াছিলে। সেই দশ হাত আর কত রাঙতা? ভড়েরা তোমাকে মুড়কি ও নারিকেল নাড়ু দিয়াছিল? পূজা হইয়া গেলে বোসেদের গঙ্গায় তাহারা ঠাকুর বিসর্জ্জন করিয়াছিল, মা দুর্গা বোসেদের গঙ্গার ভিতর আছেন। কাল যদি তোমাকে দুইটী ভাত দিতে না পারি, তাহা হইলে আমরা দুইজনে বোসেদের গঙ্গায় যাইব। তোমাকে কোলে লইয়া আমি জলে ঝাঁপ দিব; জলের ভিতর মা দুর্গা আছেন; তাঁহার কাছে আমরা যাইব। তিনি আমাদিগকে অনেক ভাত দিবেন, আমদের সকল দুঃখ ঘুচাইবেন।'
ফল কথা, যখনই কুন্তলার ভূত চীৎকার করিত, তখনই বাড়ীর একটা না একটা লোক মরিতে লাগিল। দাসীর মৃত্যুর পর ঢাক মহাশয় গয়াতে পিণ্ড দিবার জন্য লোক পাঠাইলেন। কিন্তু তাহাতে কোন ফল হইল না। কারণ কিছুদিন পরে পুনরায় যখন চীৎকার হইল, তখন ঢাক মহাশয়ের ছট্টু নামক চাকর মরিয়া গেল। বিধবা হইয়া একাদশীর দিন ভিজা মেজে চাটা পাপটি সামান্য নহে। গয়াতে হাজার পিণ্ড দিলেও ইহা ক্ষয় হয় না।