বাল্মীকি আদিকবি এবং তাঁর রামায়ণ আদি মহাকাব্য, এই প্রসিদ্ধি আছে। বিশেষজ্ঞ পণ্ডিতগণ সিদ্ধান্ত করেছেন, প্রচলিত গ্রন্থের সবটা একজনের বা এক সময়ের রচনা নয়। সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দে মূল গ্রন্থ রচিত হয়েছিল, তার সঙ্গে অনেক অংশ পরে জুড়ে দেওয়া হয়েছে, যেমন উত্তরকাণ্ড। প্রক্ষিপ্ত যতই থাকুক তা-ও বহুকাল পূর্বে মূলের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে এবং সমগ্র রচনাই এখন বাল্মীকির নামে চলে।
ভারতীয় কবিগণনায় প্রথমেই বাল্মীকির স্থান, কিন্তু তাঁর রামায়ণ এত বড় যে মূল বা অনুবাদ সমগ্র পড়বার উৎসাহ অতি অল্প লােকেরই হয়। এই পুস্তক বাল্মীকি-রামায়ণের বাংলা সারসংকলন, কিন্তু সংক্ষেপের প্রয়ােজনে এতে কোনও মুখ্য বিষয় বাদ দেওয়া হয়নি। বাল্মীকির রচনায় কাব্যরসের অভাব নেই, প্রাচীন সমাজচিত্র, নিসর্গবর্ণনা এবং কৌতুকাবহ প্রসঙ্গও অনেক আছে যা কৃত্তিবাসাদির গ্রন্থে পাওয়া যায় না। এই সংকলনে বাল্মীকির বৈশিষ্ট্য যথাসম্ভব বজায় রাখবার চেষ্টা করা হয়েছে এবং তাঁর রচনার সঙ্গে পাঠকের কিঞ্চিৎ সাক্ষাৎ পরিচয় হবে। এই আকাঙ্ক্ষায় স্থানে স্থানে নমুনা স্বরূপ মূল শ্লোক স্বচ্ছন্দ বাংলা অনুবাদসহ দেওয়া হয়েছে। পাঠকের যদি রুচি না হয় তবে পড়বার সময় উদ্ধৃত শ্লোকগুলাে অগ্রাহ্য করতে পারেন।
রামায়ণে সত্য ঘটনা কতটুকু আছে, রূপক বা nature myth কতটুকু আছে, রামায়ণ-কার বাল্মীকি বাস্তবিকই রামের সমকালীন কি না— এইসব আলােচনা এই ভূমিকার অধিকারবহির্ভূত। কেবল একটি বিষয় লক্ষণীয়— ভারতীয় সাহিত্যে রামবিষয়ক কথা অনেক পাওয়া যায়, কিন্তু সেগুলাের আখ্যানভাগ সর্বাংশে সমান নয়। মহাভারতের আদিপর্বে একটি শ্লোক আছে— আচ্যুঃ কবয়ঃ কেচিৎ সম্প্রত্যাচক্ষতে পরে। আখ্যাস্যন্তি তথৈবানন্য ইতিহাসমিমং ভুবি । অর্থাৎ, কয়েকজন কবি এই ইতিহাস পূর্বে বলে গেছেন, এখন অপর কবিরা বলছেন, আবার ভবিষ্যতে অন্য কবিরাও বলবেন। এই উক্তিটি রামায়ণ সম্বন্ধেও খাটে। রামবিষয়ক গাথা ও জনশ্রুতি অতি প্রাচীন যুগ থেকে প্রচলিত ছিল, তাই অবলম্বন করে বিভিন্ন কালে বিভিন্ন কবি নিজের রুচি অনুসারে আখ্যান রচনা করেছেন এবং পূর্ববর্তী রচয়িতার সাহায্যও নিয়েছেন। এই কারণে মহাভারত-পুরাণাদিতে বর্ণিত আখ্যান বাল্মীকি রামায়ণের সঙ্গে সর্বত্র মেলে না। কৃত্তিবাস তুলসীদাস প্রভৃতি কবিরা বাল্মীকির যথাযথ অনুসরণ করেননি, আখ্যানের অনেক অংশ পুরাণাদি থেকে নিয়েছেন। বাল্মীকি রামকে বিষ্ণুর অবতার বললেও তাকে সুখদুঃখাধীন মানুষ রূপেই চিত্রিত করেছেন, কিন্তু কৃত্তিবাসাদি রামচরিত্রে প্রচুর ঐশ লক্ষণ জুড়ে দিয়েছেন।
পুরাণকথার একটি মােহিনী শক্তি আছে। যদি নিপুণ রচয়িতার মুখ বা লেখনী থেকে নির্গত হয় তবে বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী সকলকেই মুগ্ধ করতে পারে। প্রাচীন সাহিত্যের প্রতি আমাদের একটা স্বাভাবিক আকর্ষণ আছে, তার ত্রুটি আমরা সহজেই মার্জনা করি। শিশু যেমন রূপকথার অবিশ্বাস্য ব্যাপার মেনে নিয়ে গল্প শােনে, আমরাও সেইরূপ পৌরাণিক অতিশয়ােক্তি ও অসঙ্গতি মেনে নিয়ে প্রাচীন সাহিত্য উপভােগ করতে পারি। এর জন্য ধর্মবিশ্বাস বা পূর্বসংস্কার একান্ত আবশ্যক নয়, উদার পাঠক সর্বদেশের পুরাণই সমদৃষ্টিতে পাঠ করতে পারেন। বাল্মীকির গ্রন্থে রূপকথা ও আরব্য উপন্যাসের তুল্য বিচিত্র অতিপ্রাকৃত বর্ণনা অনেক আছে, কাব্যরসও প্রচুর আছে, কিন্তু এর আখ্যানভাগই সাধারণ পাঠকের সর্বাপেক্ষা চিত্তাকর্ষক। বাল্মীকিকথিত এই অতি প্রাচীন আখ্যান কোনও আধুনিক উপন্যাসের চেয়ে কম মনােহর নয় ।
তথাপি মনে রাখা আবশ্যক, আমরা যে সংস্কার নিয়ে আধুনিক ঘটনা বা উপন্যাস বিচার করি তা নিয়ে রামায়ণবিচার চলবে না। বাল্মীকি তৎকাল-প্রচলিত কথারচনার রীতি ও নৈতিক আদর্শ অনুসারে নায়কনায়িকাদির চরিত্র বিবৃত করেছেন। রামের পত্নীত্যাগ ও রাজ্যরক্ষা, এবং অষ্টম এড়ােআর্ডের রাজ্যত্যাগ ও পত্নীবরণ— এই দুই ব্যাপারের ন্যায়-অন্যায় একই সামাজিক অবস্থা ও ধর্মনীতি অনুসারে বিচার করলে প্রচণ্ড মূঢ়তা হবে। যার পিতার তিনশাে পঞ্চাশ পত্নী সেই রাম চিরকাল এক ভার্যায় অনুরক্ত রইলেন— পুরুষের একনিষ্ঠতার এই আদর্শ সেকালের পক্ষে কত বড় তা আমাদের আধুনিক বুদ্ধিতে ধারণা করা অতি কঠিন। ভ্রাতৃভক্ত লক্ষ্মণ দশরথকে মারতে চেয়েছেন, কৌশল্যারও তাতে বিশেষ আপত্তি নেই; হীন সন্দেহের বশে সীতা লক্ষ্মণকে নির্মম ভৎসনা করেছেন, ultimatum না দিয়েই রাম বালীকে আড়াল থেকে বধ করেছেন; রাবণবধের পর রাম অত্যন্ত কটু ভাষায় সীতাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন, দ্বিজাতির অধিকার রক্ষার জন্য শূদ্রতপস্বী শম্বুককে হত্যা করেছেন— অতীতকালের অতি প্রাচীন সমাজের এইসব ঘটনার বা কবিকল্পনার নিরপেক্ষ বিচার করতে পারি এমন দেশকালজ্ঞ আমরা নই। আমাদের সৌভাগ্য, আধুনিক সংস্কারের পীড়াকর কথা রামায়ণে বেশি নেই, এমন কথাই বেশি আছে যা সর্বকালে উপাদেয় অনবদ্য ও হিতকর। দশরথের তীব্র পুত্রস্নেহ, রামের প্রতি অযােধ্যাবাসীর গভীর অনুরাগ, নিষাদরাজ গুহের সহৃদয়তা, অরণ্যভূমির মনােহর বর্ণনা, বানরবীরগণের নিঃস্বার্থ কর্মচেষ্টা, বাল্মীকির কারুণ্য, সীতার অপরিসীম মাধুর্য সারল্য ও মহত্ত্ব, রামের গাম্ভীর্য সত্যনিষ্ঠা উদারতা ও দারুণ কর্তব্যবুদ্ধি— এই সমস্ত মিলে পাঠকের মনকে শুধু রসাবিষ্ট করে না, প্রসারিত এবং উত্তোলিতও করে।
Valmiki is celebrated as the poet harbinger in Sanskrit literature. He is the author of the epic Ramayana, based on the attribution in the text of the epic itself.He is revered as the Adi Kavi, which means First Poet, for he discovered the first śloka i.e. first verse, which set the base and defined the form to Sanskrit poetry. The Yoga Vasistha is attributed to him. A religious movement called Valmikism is based on Valmiki's teachings as presented in the Ramayana and the Yoga Vasistha. At least by the 1st century AD, Valmiki's reputation as the father of Sanskrit classical poetry seems to have been legendary. Ashvagosha writes in the Buddhacarita, "The voice of Valmiki uttered poetry which the great seer Chyavana could not compose." This particular verse has been speculated to indicate a familial relationship between Valmiki and Chyavana, as implied by the previous and subsequent verses.
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ বাদ দিলে, গল্প হিসেবে রামায়ণের সাথে মহাভারতের তুলনা চলে না। মহাভারত যদি হয় গেইম অভ থ্রোনস, রামায়ণ তাহলে তামিল সিনেমা (অথবা তামিল সিনেমাগুলি রামায়ন পড়েই বানানো হয়)। মহাভারতে যেমন চরিত্রগুলো বহুমুখী, কে ভাল কে মন্দ বিচার করতে গেলে হরেক রঙ দেখা যায়, রামায়ণে সেগুলো অনেকটাই একমুখী। রামজী সুপারম্যান, লক্ষণ যেন ওয়াটসন, আর সীতা যেন সিরিয়ালের অত্যাচারিত বধু। রাবন ব্যাটা একেবারে ডিপজল, নারী দেখলেই খলবল করে। তবে এটাও স্বীকার করতে হবে, গল্প হিসেবে রামায়ণেরও নিজস্ব টান আছে। হনুমান একটা দুর্দান্ত চরিত্র, তার কাজকারবারও বারবার পড়ার মত। আর বেশিরভাগটাই হ্যাপি এন্ডিং; যদিও কোটি কোটি বানর আর রাক্ষসের মৃত্যুকে ট্রাজেডিই বলা উচিত (যেহেতু আমি প্রাণী অধিকারকর্মী নই, আমার কাছে ট্রাজেডি লাগেনি আরকি)। কঠিন কোন অনুবাদে না গিয়ে এখানেও রাজশেখর বসুর সরল বঙ্গানুবাদই ভরসা, ভদ্রলোক যে এক জীবনে কত কাজ করে গেছেন ভাবতেই অবাক লাগে।
মহাভারতের আদিপর্বে রচিত এই শ্লোকের তাৎপর্য হল, কয়েকজন কবি এই ইতিহাস পূর্বে বলে গেছেন, এখন অপর কবিরা বলছেন, আবার ভবিষ্যতে অন্য কবিরাও বলবেন। এই উক্তিটি রামায়ণ সম্বন্ধেও খাটে। -রাজশেখর বসু।
মহাভারত কিংবা রামায়ণ যখন পড়ার ইচ্ছে হতো তখনই ভাবতাম রাজশেখর বসুর সারানুবাদ দিয়ে শুরু করবো। সেই সূত্রে রামায়ণ শুরু করা। আমরা যারা ছোটবেলায় রামানন্দ সাগর কর্তৃক পরিচালিত রামায়ণ দেখে বড় হয়েছি তারা রামায়ণের অধিকাংশ ঘটনা সম্পর্কে জানি। কাহিনি, ঘটনা, প্রেক্ষাপট সহ প্রায় সকল বিষয়ে অবগত থাকলেও প্রচলিত সিরিয়ালে সব কিছু দেখানো সম্ভব হয় না। তবে এই সারানুবাদেও সব আছে বলে মনে হয় না। অনুবাদক বলেছেন তিনি সকল বিষয় রাখার চেষ্টা করেছেন বাল্মিকী কর্তৃক রচিত রামায়ণের। বইটা যেহেতু সারানুবাদ তাই এখানে বিস্তারিত আশা করাটাও বোকামি। তবে অনুবাদক মূলের কিছুই বাদ দেননি। রামায়ণ মহাভারতের গাথা শুধু টিভি সিরিয়াল নয়, ছোট বেলায় বড়দের মুখে মুখে শুনে শুনে বড় হওয়ার ফলে দুটো মহাকাব্যের প্রতি একটা আলাদা টান থাকা স্বাভাবিক। সেই টান এবং ধর্মীয় ভাবাবেগ দুটোই মিশে যখন একাকার তখন শুধুমাত্র সাহিত্য হিসেবে রামায়ণ পড়তে বসাটা আমার জন্য একটা বিরাট স্পর্ধার বিষয়। তবুও সম্পূর্ণরূপে চেষ্টা করেছি শুধুমাত্র সাহিত্যের রসাস্বাদনের। কারণ আদিকবির রামায়ণের যা বিশালতা সেই বিশালতায় হয়তে ডুব দেওয়া সহজ কাজ নয়।
"চতুর্বিংশৎ সহস্রাণি শ্লোকানামুক্তবান্ ঋষিঃ। তথা সর্গশতান্ পঞ্চ ষটকাণ্ডানি তথোত্তরম্।। (৪/২)"
— বাল্মিকী রামায়ণে চব্বিশ হাজার শ্লোক, পাঁচ শ সর্গ(প্রচলিত বাল্মিকী-রাময়ণের প্রথম ছ কাণ্ডে শ্লোক ও সর্গের সংখ্যা আরো বেশি। উত্তরকাণ্ডের পৃথক উল্লেখ লক্ষণীয়) এবং ছ কাণ্ড, তথা উত্তরকাণ্ড রচনা করেছেন।
পুরাণের প্রতি আকৃষ্ট তো আগে থেকেই আছি। সেই কারণে পৌরাণিক কাহিনি পড়ার লোভ সবসময় দংশন করে এসেছে আমাকে। পুরাণকাহিনি পড়ার সময়ে অতি অবাস্তব ঘটনাও সাযুজ্যপূর্ণ বলে মনে হয়। তখন এর ব্যাখ্যা খুঁজতে না গিয়ে বরং তাতে ডুব দেওয়াই শ্রেয় মনে হয়।
সাত কাণ্ডে বিভক্ত মোট রামায়ণ। তার মাঝে সর্বশেষ কাণ্ড উত্তরকাণ্ড। এই কাণ্ডটিকে মনে হয় প্রথম ছয়টি কাণ্ডের সঞ্জিবনী। পাঠক যখন প্রথম ছয়খণ্ড পড়বেন তখন তাতে অনেক সময় তাল হারিয়ে ফেলবেন। কারণ অনেক ঘটনা ঘটার ব্যাখ্যা হয়তো প্রথম ছয়খণ্ডে পাওয়া নাও যেতে পারে। সেইসব ঘটনার পেছনের কারণ পাওয়া যায় সপ্তমখণ্ডে অর্থাৎ উত্তরকাণ্ডে।
—সকল সঞ্চয়ই পরিশেষে ক্ষয় পায়, উন্নতির অন্তে পতন হয়, মিলনের অন্তে বিচ্ছেদ হয়, জীবনের অন্তে মরণ হয়।
ভগবান বিষ্ণুর অবতার হয়ে জন্মগ্রহণ করা শ্রীরাম কিন্তু দেবতাসুলভ আচরণ করেননি। তিনি সাধারণ মানুষের মতোই জীবনধারণ করতেন। রাবণ বধের পর সেই সত্য দেবতাদের দ্বারা তিনি জানেন। রাবণ বধের পর তিনি সমগ্র বানর সেনা, বিভীষণ, লক্ষ্মণের সামনে অগ্নিপরীক্ষা দ্বারা সীতা শুচি(মনে মনেও রাঘব ছাড়া অন্য কাউকে তিনি কখনোই সঙ্গী হিসাবে কামনা করেননি) প্রমাণিত হওয়ার পরই রাঘব তাকে গ্রহণ করেছে। তার পরেও উত্তরকাণ্ডে তিনি সীতাকে পরিত্যাগ করেছেন শুধুমাত্র লোকনিন্দার ভয়ে। তারপরে অশ্বমেধ যজ্ঞের সময় রাম তাকে আবার গ্রহণ করতে চাইলেও এখানে সীতা তার ব্যক্তিত্বের পরিচয় দিয়ে পাতালে যাওয়াকেই শ্রেয় মনে করেছেন। বাল্মিকী এই ঘটনার আগে নারীদের পতিব্রতা রূপেই দেখানোর বেশি চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এখানে তিনি সীতার ব্যক্তিত্বের যে প্রকাশ তিনি তৎকালীন সময়ে ঘটিয়েছেন তার জন্য তিনি শ্রদ্ধাভাজন হয়ে থাকবেন। তবে এখানে উল্লেখ্য যে অনেকে বিশেষজ্ঞ মনে করেন রাময়ণের উত্তরকাণ্ড পরে রচনা করা হয়েছে অন্য কবি দ্বারা। সেই কবি নিজের যশের জন্য এই কাজটি করেননি। কারণ তিনি উত্তরকাণ্ড রচনা করে তা রাময়ণের সাথে জুড়ে দিয়েছেন। তার ফলে কিন্তু কোথাও অসংগতি দেখা যায় না। বরং রাম এবং সীতার আলাদা ব্যাক্তি প্রখরভাবে চোখে পড়ে। তারা আলাদা আলাদাভাবে হয়ে উঠেছেন পূজনীয়।
রামায়ণ বেশ আগে পড়েছিলাম। ক্লাস সিক্সে মনে হয়। বেশ সরল গল্পই বলা যায়। অবশ্য কিশোরদের উপযোগী লেখা দেখেই সোজা মনে হতে পারে। কিন্তু এবার পড়েও মনে হল কাহিনি বেশ সরল, অন্তত মহাভারতের কাছে শিশু মনে হবে।
আগে লেখক সম্পর্কে বলে নি। এর আগে মহাভারত পড়ার সময় রাজশেখর বসুর অনূদিত লেখা পড়ে খুব আনন্দ পেয়েছিলাম। এবারো রামায়ণ পড়ার সময় তাই উনার লেখাই চোখ বন্ধ করে বেছে নিয়েছিলাম। তবে মহাভারত পড়ার সময় উনার যে ইনপুট এবং এনালাইসিস পেয়েছিলাম, রামায়ণে তা পাইনি। হয়ত রামায়ণের সরলতা এর জন্য দায়ী। তবে ইন্টারনেটে অনেক ধরনের ছোট ছোট গল্প পাই যাকিনা রামায়ণ থেকে উদ্ধৃত হিসেবে দাবী করা হয়, সেরকম অনেক কিছুই রাজশেখর বসুর বইয়ে পেলাম না। তবে কি সেগুলো প্রক্ষিপ্ত, নাকি লেখক বাদ দিয়েছেন সেকথা জানার উপায় হল মূলটা পড়া। সেটার আবার অনেক হ্যাপা। ২৪,০০০ ভার্সের রামায়ণ পড়ার সময় এই চাকরের নেই 😒।
এবার আসা যাক গল্পে। রামকে অত্যন্ত মহান এবং ন্যায়পরায়ণ মানুষ হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। বাবার প্রতিজ্ঞা রক্ষার জন্য চোদ্দবছর বনবাসে যান রাম। সাথে স্বেচ্ছায় যান উনার একমাত্র পত্নী সীতা এবং বৈমাত্রেয় ভাই লক্ষণ। বনবাসকালে মহাপ্রতাপশালী রাক্ষসরাজ রাবণ এসে অপহরণ করে নিয়ে যান সীতাকে। এরপর রাম বানররাজ সুগ্রীবের সহায়তায় রাবণকে বধ করে সীতাকে উদ্ধার করে আনেন। উদ্ধারের পরে আবার সীতার সতিত্ব নিয়ে সন্দেহ করে বসেন, তবে দেবতাদের বরাতে আবার মেনেও নেন। পরে বনবাস শেষ করে এসে ভরতের কাছ থেকে রাজ্য নিয়ে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে বহুকাল রাজ্য শাসন করে স্বর্গে ফিরে যান।
রামায়ণকে একটি ভক্তিমূলক ধর্মগ্রন্থ হিসেবে ধরলে ভুল হবে। অবশ্য ধর্মগ্রন্থ না বলে পুরাণ বলা উচিত। রামায়ণকে হিন্দুধর্মের ইতিহাস বলা হয়। যাই হোক, যা বলছিলাম যে রামায়ণকে এত ভক্তি নিয়ে নেয়ার কোন উপায় নেই। রামকে অত্যন্ত মহান হিসেবে দেখানো হলেও মনুষ্য সংকীর্ণর উর্ধ্বে উনি যেতে পারেননি। ভরতকে তিনি সবসময়ই রাজ্যলোভী হিসেবে সন্দেহ করতেন। বালীকে মনে হয় সম্মুখযুদ্ধে পরাজিত করা অসম্ভব মনে করেই আড়াল থেকে হত্যা করেন। এক্ষেত্রে মনে রাখা প্রয়োজন যে বালী রাবণকেও অত্যন্ত সহজে পরাজয় করেছিলেন। রাম লোকজনের নিন্দাকে ভয় পেতেন। এজন্য নিজের প্রাণপ্রিয় বউকে ত্যাগ করতে দ্বিধা করেন নাই। সীতার জন্য ভালবাসার চেয়ে নিজের মান রক্ষার্থে রাবণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন বলেই মনে হল। জীবনের শেষে শত্রুঘ্ন আর ভরতকে অযোধ্যার থেকে দূরে রাজ্যধারণের ব্যবস্থা করেছেন। রাবণকে ব্যাপক নীচ হিসেবে দেখানো হয়েছে। কিন্তু কুম্ভকর্নের একটা বিষয় আমাকে খুব অবাক করল। পরের পত্নী হরণ করার জন্য বড় ভাই রাবণকে তিরস্কার করতে ছাড়েন নাই। সীতার জন্মই মনে হয় হয়েছে দুঃখ ভোগের জন্য। এনিয়া কিছু বলার নাই। সুগ্রীবকে নিয়ে কিছু বলার দরকার মনে করি। ইনার পুরা কার্যকলাপ আমার কাছে অস্বাভাবিক লাগল। আসলে শুধু সুগ্রীব নয়, বানর জাতিটাই অদ্ভুত। বড় ভাই বালীকে বিপদের মুখে ত্যাগ করে এসে তারই পত্নী তারাকে গ্রহন করা অদ্ভুত লাগল। আবার বালী যখন ফিরে এল তখন তারা আবার বালীর অনুগামী হল। কিন্তু রাম বালীকে বধ করলে আবার সেই তারাই খুব কষ্ট পেলেও আবার সুগ্রীবের অনুগামী হল। পুরাই ধাধা। আর সুগ্রীব রামের ভয়েই মনে হল এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। এদের মধ্যে হনুমানকে বেশ ন্যায়নীতিপরায়ণ মনে হইল। তবে পুরা রামায়ণে আমার কাছে ভরত আর লক্ষণকে বেশ লেগেছে। ভরত সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ভাতৃরাজ্য দখল করেন নি। মায়ের অপকর্মের জন্য তিরস্কার করতে ছাড়েন নাই। আর লক্ষণ তোহ নিজের জীবনই রামের জন্য দিয়ে দিয়েছেন।
আরেকটা জিনিস বেশ লক্ষণীয়, রাম হোক রাবণ হোক আর বালীই হোক, এনারা ভিন্ন জাতপাতের হলেও সবাই বেশ ধার্মিক। সন্ধ্যাকর্ম করতে কেউ ভুলেন নাই।
মূল রামায়ণ বলে পাচটা অধ্যায়ে রচিত। বালকান্ড আর উত্তরকান্ডকে প্রক্ষিপ্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই গ্রন্থের রচনাকাল আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দী হিসেবে ধরা হয়। তবে মূল রামায়ণ বাল্মিকীর রচনা এনিয়ে বিশেষজ্ঞদের কোন সন্দেহ নেই।
অযোধ্যায় রামমন্দির বানানোর পরে মনে হইল আবার পড়ি রামায়ণ। তাই পড়লাম।। মন্দির বানানোয় কিন্তু আমি বেজায় খুশী, কিন্তু মসজিদ ভেংগে মন্দির বানানোয় আসলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছাড়া আর কিছু থাকতে পারে না।
এখন কথা হচ্ছে, রাম যদি রাজত্ব করতেন, উনি কি মসজিদ ভেংগে এরকম মন্দির করতে দিতেন?
Like numerous Indians, I was under the impression that I know the story of Ramayana in a nutshell, and that there's nothing further to know. Nothing could have been farther from truth, as I realised after reading & re-reading this book, which in itself is a compact & brief summary of the classic (Valmiky's version, not that of Tulsidas or others). The book is literally unputdownable (a word that I had encountered in one of the Feluda-stories where this adjective had been used by Feluda himself to describe the same author's summarised translation of the Mahabharata. I can't recommend this book highly enough if you are yet to read it. If you have read, well then, welcome to the club.
We all know the story of King Ram in a fairytale form but there is so much more about Ramayan that is history, culture and myth. This version of Rajshekhar Basu's is simple, easy to understand and somehow at the same time has the poetic flavor of an epic.