Jump to ratings and reviews
Rate this book

নক্সী কাঁথার মাঠ

Rate this book
নক্সী-কাঁথার মাঠ রচয়িতা শ্রীমান্‌ জসীমউদ্‌দীন নতুন লেখক, তাতে আবার গল্পটি একেবারে নেহাৎই যাকে বলে- ছোট্ট এবং সাধারণ পল্লীজীবনের। শহরবাসীদের কাছে এই বইখানি সুন্দর কাঁথার মতো করে বোনা লেখার কতটা আদর হবে জানি না। আমি এটিকে আদরের চোখে দেখেছি, কেননা এই লেখার মধ্য দিয়ে বাংলার পল্লী-জীবন আমার কাছে চমৎকার একটি মাধুর্য্যময় ছবির মতো দেখা দিয়েছে।
এই কারণে আমি এই নক্সী-কাঁথার কবিকে এই বইখানি সাধারণের দরবারে হাজির করে দিতে উৎসাহ দিচ্ছি। জানি না, কিভাবে সাধারণ পাঠক এটিকে গ্রহণ করবে; হয়তো গেঁয়ো যোগীর মতো এই লেখার সঙ্গে এর রচয়িতা এবং এই গল্পের ভূমিকা-লেখক আমিও কতকটা প্রত্যাখ্যান পেয়েই বিদায় হব। কিন্তু তাতেও ক্ষতি নেই বলেই আমি মনে করি, কেননা ওটা সব নতুন লেখক এবং তাঁদের বন্ধুদের অদৃষ্টে চিরদিনই ঘটে আসছে দেখছি।

112 pages, Hardcover

First published January 1, 1929

20 people are currently reading
708 people want to read

About the author

Jasim Uddin

56 books86 followers
Jasimuddin (Bangla: জসীম উদদীন; full name: Jasimuddin Mollah) was a Bengali poet, songwriter, prose writer, folklore collector and radio personality. He is commonly known in Bangladesh as Polli Kobi (The Rural Poet), for his faithful rendition of Bengali folklore in his works.

He obtained his BA degree in Bengali from the University of Calcutta in 1929 and his MA in 1931. From 1931 to 1937, Jasimuddin worked with Dinesh Chandra Sen as a collector of folk literature. Jasimuddin is one of the compilers of Purbo-Bongo Gitika (Ballads of East Bengal). He collected more than 10,000 folk songs, some of which has been included in his song compilations Jari Gaan and Murshida Gaan. He also wrote voluminously on the interpretation and philosophy of Bengali folklore.

Jasimuddin started writing poems at an early age. As a college student, he wrote the celebrated poem Kabar (The Grave), a very simple tone to obtain family-religion and tragedy. The poem was placed in the entrance Bengali textbook while he was still a student of Calcutta University.

Jasimuddin is noted for his depiction of rural life and nature from the viewpoint of rural people. This had earned him fame as Polli Kobi (the rural poet). The structure and content of his poetry bears a strong flavor of Bengal folklore. His Nokshi Kanthar Maath (Field of the Embroidered Quilt) is considered a masterpiece and has been translated into many different languages.

Jasimuddin also composed numerous songs in the tradition of rural Bengal. His collaboration[4] with Abbas Uddin, the most popular folk singer of Bengal, produced some of the gems of Bengali folk music, especially of Bhatiali genre. Jasimuddin also wrote some modern songs for the radio. He was influenced by his neighbor, poet Golam Mostofa, to write Islamic songs too. Later, during the liberation war of Bangladesh, he wrote some patriotic songs.

Jasimuddin died on 13 March 1976 and was buried near his ancestral home at Gobindapur, Faridpur. A fortnightly festival known as Jasim Mela is observed at Gobindapur each year in January commemorating the birthday of Jasimuddin. A residential hall of the University of Dhaka bears his name.

He was honored with President's Award for Pride of Performance, Pakistan (1958), DLitt. by Rabindra Bharati University, India (1969) Ekushey Padak, Bangladesh (1976), Independence Day Award (1978).

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
416 (70%)
4 stars
139 (23%)
3 stars
26 (4%)
2 stars
7 (1%)
1 star
3 (<1%)
Displaying 1 - 30 of 71 reviews
Profile Image for Nabila Tabassum Chowdhury.
373 reviews274 followers
February 8, 2017
১.
আমি জীবনে প্রথম বারের মত যে কবিতা পড়ে আকুলে কেঁদেছিলাম তা হলো জসীম উদ্‌দীনের 'কবর'। 'শিশু কিশোর কবিতার হাজার বছর' নামে বেশ লম্বা এবং মোটাসোটা একটা বই ছিল আমার। সেখানে ছিল কবিতাটি। সেই বইটিই আমাকে কবিতা পড়তে শিখিয়েছিল।

২.
গতবছর বইমেলা (বইমেলা ২০১৫)। একদিন ঠিক করলাম ১ থেকে শুরু শেষ পর্যন্ত সবগুলো স্টল দেখবো। প্রতিবার ইচ্ছা থাকার পরও এবং চেষ্টা করার পরও দেখা হয় না, কারণ এর আগেই পকেটের পয়সা ফুরিয়ে যায়। এছাড়াও আমার দিক জ্ঞান ভাল না হওয়াতে দিগ্বিদিক হয়ে একই জায়গাতেই চক্রাকারে ঘুরতে থাকি। এবারের প্রতিজ্ঞা দৃঢ়, শিশুকাল থেকে বইমেলায় আসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার পাট ২০১৬ বই মেলার আগেই চুকে যাবে, এখনও কিনা বইমেলা পুরোটা দেখতে পারলাম না। প্রতিজ্ঞার জোরে বইমেলার শেষ মাথায় পৌঁছে গেলাম। এরপর দেখি শেষ হইয়াও হইলো না শেষ ঢংয়ে আরও পাঁচ-সাতটা স্টল আছে। তার মাঝে একখানা পলাশ প্রকাশনী। অল্প কিছু জীর্ণ, মলিন বই ছড়িয়ে রাখা। সেকেন্ড হ্যান্ড নয়, তবে অনেক পুরাতন। কাছে গিয়ে বুঝলাম এই প্রকাশনী কবি জসীম উদ্‌দীনের বই বিক্রি করে। জীর্ণ মলিন বইগুলোর পাশে অল্প কিছু বইয়ের নতুন মুদ্রিত বইও দেখা গেল। পুরাতন বইগুলোর দাম খুবই কম, বছর-বছর আগে মুদ্রিত হবার সময়কার গায়ের দামের উপর আবার ২৫% ছাড়। নতুন মুদ্রিত বইগুলোর দামও জনপ্রিয় প্রকাশনীগুলোর বইয়ের মত আকাশচুম্বী নয়। তবুও কেউ আসে না এই স্টলটি পর্যন্ত। বোঝাই যায়, কেউ এলে তো আর এত বছরের পুরোনো বই অবিক্রীত থাকেনা। খুবই খারাপ লাগলো। সেদিনের মতে রিক্সা ভাড়ার টাকাও না রেখে (বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস ধরবো ঠিক করলাম) প্রায়-খালি পকেট পুরো খালি করে হাত ভরে বই নিলাম জসীম উদ্‌দীনের। ইচ্ছে ছিল সে বইগুলোই কিনবো যেগুলো অনেক পুরোনো। কিন্তু 'নক্সী কাঁথার মাঠ' পড়িনি সে লজ্জায় নতুন মুদ্রিত একটা বইও নিলাম।

সেদিন ঠিক করেছিলাম, আগামীবার বইমেলার আগেই জসীম উদ্‌দীনের কিছু বই পড়ে রিভিউ করে রাখবো, যাতে পাঠকগণের মনে পড়ে যায় জসীম উদ্‌দীনের বই এখনও পাওয়া যায়। কিন্তু আবার বই মেলা চলে এসেছে, কয়েকটি তো দূরের কথা একটি বই-ও পড়িনি। তাই নিজের কাছে নিজের কথা রাখতেই হাতে নিলাম এই বইটি। কাব্যগ্রন্থ আমি টানা পড়তে পারি না, তাই ঠিক করলাম কাহিনীকাব্য 'নক্সী কাঁথার মাঠ'-ই পড়বো।

৩.
সকল সার্থক কবিরই সিগনেচার থাকে। জসীম উদ্‌দীনের সিগনেচার নিখাদ মমতা। পল্লীর গাঁয়ের মমতা, গাঁয়ের মানুষের হৃদয়ে ধারণ করা মমতা। সে মমতা ভেজা মাটির মত কোনো পদার্থে তৈরি, রং কচি পাতার সবুজ। এই কাহিনী কাব্যের প্রতিটি শব্দে তিনি সেই মমতা মিশিয়ে দিয়ে লিখেছেন নক্সী কাঁথার মাঠ। কিছু বই পড়বার পর তার উপর হাত বুলিয়ে আদর করে পড়ার কাজটি শেষ করতে হয়। এটি সেই জনরার বই।

এই বইটি এবং 'রাখালি' পড়ে রবি ঠাকুর বলেছিলেন, "জসীম উদ্‌দীনের কবিতার ভাব-ভাষা ও রস সম্পূর্ণ নতুন ধরণের। প্রকৃত কবির হৃদয় এই লেখকের আছে। অতি সহজে যাদের লিখার ক্ষমতা নেই এমনতর খাঁটি জিনিস তারা কখনোই লিখতে পারে না।"

৪.
বইটিকে আদর করেছেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দীনেশচন্দ্র সেন-ও। তবে নাগরিক পাঠক মন এঁকে আদর করতে পারবেন কিনা সে ব্যাপারে উভয়ই আশংকা প্রকাশ করেছেন। আশংকা প্রকাশ করেছেন পল্লীকবি নিজেও। তারা জ্ঞানী মানুষ, তারা আগে থেকেই সব কিছু দেখতে পান। আমার দেখতে হলে অপেক্ষা করতে হয় ২০১৫ সালে পর্যন্ত, মুখোমুখি হতে হয় পলাশ প্রকাশনীর।

৫.
বইটির গঠনগত আঙ্গিক আলোচনার দাবিদার। তবে বইটির শেষে তিনটি বিশ্লেষণ জুড়ে দেয়া আছে, আলাদা একটি সমালোচনা গ্রন্থও আছে, তাই আমি সে কাজটি আর না করি এখানেই শেষ করি।

[পুনশ্চ: বিংশ প্রকাশ এই বইটিতে জুড়ে দেয়া আছে পল্লীকবির জীবনপঞ্জি এবং গ্রন্থপঞ্জি।]


Profile Image for Sumaîya Afrôze Puspîta.
220 reviews288 followers
February 15, 2025
“সকলেই জানে, সেই কোন্ কালে রূপা বলে এক চাষী,
ওই গাঁর এক মেয়ের প্রেমেতে গলায় পড়িল ফাঁসি।
বিয়েও তাদের হয়েছিল ভাই, কিন্তু কপাল-লেখা,
খণ্ডাবে কেবা? দারুণ দুঃখ ভালে এঁকে গেল রেখা।”

▫️▫️▫️

বলতে খুবই লজ্জা হয় যে, জসীম উদ্‌দীনের ছাড়াছাড়া-ভাবে কয়েকটা কবিতা ছাড়া আর কিছু পড়া হয়নি। তার মধ্যে 'কবর' ও 'প্রতিদান' পড়ে খুব কেঁদেছিলাম একসময়। এ দুটো আমার সবসময়ের প্রিয় কবিতা। কাব্যগ্রন্থ খুব একটা পড়া হয় না, আগ্ৰহ‌ও পাই না। কিন্তু এভাবে গল্পের আকারে আরো কোনো কবিতা থাকলে মনে হয় এক নিমিষে শেষ করে ফেলতে পারি।

অতিরিক্ত মুগ্ধতা এবং দুঃখবোধ প্রকাশ করা যায় না। এই ব‌ইটা পড়ে আমার তাই হচ্ছে। আমার চেনা গ্ৰামকেও তো আমি এমনভাবে কখনো দেখিনি। এর ভেতরের প্রেম-বিরহ-বিদ্রোহ সরল অথচ গ্ৰাম্যালঙ্কারে ছন্দে সেলাই করা– এক নতুন সৌন্দর্য আবিষ্কার করার মতো। কেন জানি মনে হয়, এই ব‌ইগুলো অনুভব করার সময় ক্রমশ‌ই কমে যাচ্ছে। গ্ৰামগুলো শহরে ছেয়ে গেলে পরের প্রজন্ম কি এই আদরমাখা পঙ্‌ক্তিগুলো বুঝবে?

অবশ্যই তালিকায় সাজিয়ে না রেখে পড়ে ফেলতে বলব।
Profile Image for Aishu Rehman.
1,093 reviews1,079 followers
January 27, 2019
জসীম উদ্দীনের "নক্সী কাঁথার মাঠ"কে আবহমান গ্রামবাংলার দর্পন বলা যেতে পারে।কারন পল্লীজীবনের সুখ-দুঃখ,হাসি-কান্না,প্রেম-বিরহ,উৎসব-অনুষ্ঠান,ঝগড়া-মারামারি ইত‍্যাদি বাংলা সাহিত্যের আর কোথাও এত সূক্ষ্মভাবে বর্ণিত হয়েছে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ আছে। নিঃসন্দেহে এই কাহিনী কাব‍্যটি বাংলা সাহিত্যকে এক অন‍্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। হৃদয় স্পর্শ করার আকুলতা নিয়ে পল্লীদুলাল জসীম উদ্দীন একাব‍্যের চরিত্রগুলো গড়ে তুলেছেন। প্রত‍্যেকটি অধ‍্যায়ের শুরুতে ব‍্যবহৃত লোকগানগুলো একে ভিন্নমাত্রা দান করেছে।

দু'টি গ্রাম‍্য কিশোর-কিশোরী কিভাবে ধীরে ধীরে একে অপরকে আপন করে নেয় তার এক মনোজ্ঞ চিত্রায়ন পাঠককে মুগ্ধ করে। কিন্তু ফসল সংক্রান্ত কাইজার কারনে নায়ক রূপাইকে ঘর ছাড়তে হয়,সাজু হয়ে পড়ে চিরবিরহিনী।মাসের পর মাস রূপাইয়ের অপেক্ষায় পথপানে চেয়ে থাকে সে।এখানে বৈষ্ণব পদাবলীর নায়িকাদের কিছুটা বৈশিষ্ট্য তার মধ‍্যে দেখতে পাওয়া যায়। অকালমৃত‍্যুর পূর্বে ছোট্ট সংসার জীবনের সুখ-দুঃখের মুহূর্তগুলোকে সুই সুতোর আঁচড়ে সে নক্সী কাঁথায় ফুটিয়ে তোলে।

আর তার কথামতই একদিন তার কবরের উপর বিছিয়ে দেওয়া হয় এই নক্সী কাঁথাটি। নির্বাসিত জীবন শেষে রূপাই ঠিকই ফিরে আসে তার কাছে,কিন্তু কতক্ষণে অনেক দেরী হয়ে গেছে।রোগপান্ডুর রূপাইও তখন সাজুর কবরের পাশেই সেই নক্সী কাঁথাটি গায়ে জড়িয়ে শেষ শয‍্যা রচনা করে। এভাবেই দুটি গ্রাম‍্য ছেলে মেয়ের নিষ্পাপ প্রেম কাহিনীর করুন সমাপ্তি ঘটে।
Profile Image for musarboijatra  .
283 reviews351 followers
April 7, 2022
প্রচ্ছদ উল্টে পেছনের পিঠে লেখা দেখতে পেলাম, "দুইটি গ্রাম্য ছেলেমেয়ের ভালবাসার কাহিনী।" পুরো গল্পটা আদতে এটুকুই, কিন্তু তাঁর যে বয়ান, কেবল গল্প বলার ধরণের জন্যই পড়ার অভিজ্ঞতা অনবদ্য হয়ে যায়।
এই যে 'গল্প বলার ধরণ', যাকে আজকাল 'স্টোরিটেলিং' বলি, তাঁকে নিয়ে যে কত গুরুত���বারোপ! জনরা ফিকশনে ক্রমশ ভারী হয়ে ওঠা আমাদের সাহিত্য অঙ্গনে ঘুরেফিরে এক হাহাকার- এক সময়কার 'সামাজিক গল্প' লেখিয়ে সাহিত্যিকরা আমাদের যেমন করে নিপাট সাধারণ জীবনের গল্প বলে যেতেন আর আমরা অভিভূত হয়ে তা পড়তাম, তেমন গল্প-বলার জোর আজকাল দেখতে পাই না, জনরা আর প্লটের রাশভারীত্বের মাঝেও, অভিনব কাহিনীর বাগাড়ম্বর সত্যেও, পড়ে অভিভূত হবার মতো গল্প-বলিয়ে এখন আর আমাদের সাহিত্যিকরা নন, নতুনদের মাঝে সে ক্ষমতা ধারণ করছেন অল্প লেখকই।

পল্লীকবির 'নক্সী কাঁথার মাঠ' একটা কাব্যিক উপাখ্যান, চৌদ্দ অংশে ভাগ করা একটি কবিতা। কাব্যিকতা আলাদা করে রাখলেও, তার যে গল্প বলার ধরন, তা-ই পাঠককে আগাগোড়া ভুলিয়ে রাখতে পারে। জলী বিলের দুইপাড়ের দুই গ্রামের প্রেক্ষাপট রচিত হয়েছে যেমন করে, তা পড়তে গেলে দেখি-

"ও-গাঁর বধু ঘট ভরিতে যে ঢেউ জলে জাগে,
কখন কখন দোলা তাহার এ-গাঁয় এসেও লাগে ।
এ-গাঁর চাষী নিঝুমরাতে বাঁশের বাঁশির সুরে
ওইনা গাঁয়ের মেয়ের সাথে গহন ব্যাথায় ঝুরে ।
...
এ-গাঁও ও-গাঁও মেশামেশি কেবল সুরে সুরে,
অনেক কাজে এরা ওরা অনেকখানি দূরে ।"


এমন চমৎকার বর্ণনার মাঝে যেমন দুই গ্রামের ছবি ফুটে ওঠে, তেমনই তাঁদের মাঝেরকার সম্পর্কও প্রকাশ পায় একেক পদে। আবার দুই গ্রামের মাঝে যে সাময়িক কোন্দল, তাও প্রকাশ পেয়েছে পরের কোনো পদে।

আবার যখন সাজু-রূপার সংসার শুরু হলো, তারপরে সে দুই গ্রামেই নবান্নের হাওয়া লাগে, তখনকার কথাই ধরি-

"আশ্বিন গেল, কার্তিক মাসে পাকিল খেতের ধান,
সারা মাঠ ভরি গাহিছে কে যেন হলদি-কোটার গান ।
ধানে ধানে লাগি বাজিছে বাজনা, গন্ধ উড়িছে বায়,
কলমীলতায় দোলন লেগেছে, হেসে কূল নাহি পায় ।
আজো এই গাঁও অঝোরে চাহিয়া ওই গাঁওটির পানে,
মাঝে মাঠখানি চাদর বিছায়ে হলুদ বরণ ধানে ।"


আর তারপর, দিনের ব্যস্ততা শেষে একান্তে আমাদের দুই প্রটাগনিস্টের মাঝে যখন সংলাপ রচিত হয়, তারও 'চয়েস অব ওয়ার্ডস' দেখুন-

ক্রমে রাত বাড়ে, বউ বসে দূরে, দুটি চোখ ঘুমে ভার,
"পায়ে পড়ি ওগো চলো শুতে যাই, ভাল লাগেনাক আর ।"
রূপা ত সে কথা শোনেইনি যেন, বাঁশী বাজে সুরে সুরে,
'ঘরে দেখে যারে সেই যান আজি ফেরে ওই দূরে দূরে ।'
বউ রাগ করে, "দেখ, বলে রাখি, ভাল হবেনাক পরে,
কালকের মত কর যদি তবে দেখিও মজাটি করে ।
ওমনি করিয়া সারারাত আজি বাজাইবে যদি বাঁশী,
সিঁদুর আজিকে পরিব না ভালে, কাজল হইবে বাসি ।
দেখ, কথা শোন, নইলে এখনি খুলিব কানের দুল,
আজকে ত আমি খোঁপা বাঁধিব না, আলগা রহিবে চুল ।"


ক্রমে গল্প এগোয়, আসে বলিষ্ঠ রূপাইয়ের শক্তি পরীক্ষার ক্ষণ। ধানের মৌসুমে অন্য গ্রামের লোকজন এই গ্রামের ফসল আত্নসাত করেছে, জ্বলে উঠলো প্রতিশোধের আগুন। সেইখানে ছন্দ একদম আলাদা, ভাষার মেজাজও পুরো ভিন্ন -

আলী আলী আলী আলী রূপার কন্ঠ যেন ফাটি
ইস্রাফিলের শিঙ্গা বাজে, কাঁপছে আকাশ কাঁপছে মাটি ।
তারি সুরে সব লেঠেলে লাঠির 'পরে হানল লাঠি,
আলী আলী শব্দে তাদের আকাশ যেন ভাঙবে ফাটি ।
আগে আগে ছুটল রূপা, বৌঁ বৌঁ বৌঁ সড়কি ঘোরে
কালসাপের ফণার মত বাবরী মাথার চুল যে ওড়ে ।
...
তাল ঠুকিয়া ছুটল রূপাই, ছুটল পাছে হাজার লাঠি,
"আলী-আলী — হজরত আলী" কন্ঠ তাঁদের যায় যে ফাটি ।
তাল ঠুকিয়া পড়লো তারা বন-গেঁয়োদের দলের মাঝে,
লাঠির আগায় লাগল লাঠি, লাঠাইর আগায় সড়কি বাজে ।
'মার মার মার' হাঁকল রূপা, — 'মার মার মার' ঘুরায় লাঠি,
ঘুরায় যেন তারি সাথে পায়ের তলে মাঠের মাটি ।
আজ যেন সে মৃত্যু-জনম ইহার অনেক উপরে উঠে,
জীবনের এক সত্য মহান লাঠির আগায় নিচ্ছে লুটে !
মরণ যেন মুখোমুখি নাচছে তাহার নাচার তালে,
মজাকালের বাজছে বিষাণ আজকে ধরার প্রলয় কালে ।
নাচে রূপা — নাচে রূপা — লোহুর গাঙে সিনান করি,
মরণরে সে ফেলছে ছুঁড়ে রক্তমাখা হস্তে ধরি ।
নাচে রূপা — নাচে রূপা — মুখে তাহার অট্টহাসি,
বক্ষে তাহার রক্ত নাচে, চক্ষে নাচে অগ্নিরাশি ।


এত জীবন্ত বর্ণনা, মনে হয় লড়াইয়ের মাঠেই হাজির হয়ে গেলাম। দুই দলের লড়াইয়ের মাঝে থেকে রূপাইয়ের মতোই ভুলে গেছি ঘরের কথা, বউয়ের কথা, দুনিয়ায় আছে কেবল রক্তের নেশা, আর সংঘাত!

লড়াইয়ের ফল হাতে হাতে এলো, খুনের দায়ে গ্রামসুদ্ধ লোক ফেরার হলো পুলিশের ভয়ে। সমন এসেছে রূপার নামেও, রূপাই এবার প্রাণ বাঁচাতে নবোঢ়া স্ত্রীকে ঘরে রেখে চলে গেলো অজানার পানে। বিরহিনী স্ত্রী বিদেশাগত লোকের কাছে খোঁজে স্বামীর খোঁজ, স্বামীর ফাঁকা ভিটা ছেড়ে মায়ের বাড়ি ওঠে বুকের অশ্রুভার নিয়ে। জনে জনে জিজ্ঞেস করে মা-মেয়ে, কেউ কেউ মিথ্যা আশ্বাস দিতে এ-ও বলে, "সামনের চৈত্র মাসে আসবে রূপাই।"

স্বামীর অপেক্ষায় ভারাক্রান্ত স্ত্রী বিছিয়ে বসে নকশী কাঁথা, সারারাত তাঁর গোপন বিরহ ঢেলে দেয় নকশার বুননে। এই কাঁথার কাজ শুরু করেছিল, সুখের দিনে যেদিন স্বামী ছিল কাছে।

এই কাঁথা যবে আরম্ভ করে তখন সে একদিন,
কৃষাণীর ঘরে আদরিণী মেয়ে সারা গায়ে সুখ-চিন ।
স্বামী বসে তাঁর বাঁশী বাজায়েছে, সিলাই করেছে সে যে;
গুনগুন করে গান কভু রাঙা ঠোঁটেতে উঠেছে বেজে ।

সেই কাঁথা আজো মেলিয়াছে সাজু যদিও সেদিন নাই,
সোনার স্বপন আজিকে তাহার পুড়িয়া হয়েছে ছাই ।
খুব ধরে ধরে আঁকিল যে সাজু রূপার বিদায় ছবি,
খানিক যাইয়া ফিরে ফিরে আসা, আঁকিল সে তাঁর সবি ।
আঁকিল কাঁথায় — আলু থালু বেশে চাহিয়া কৃষাণ নারী,
দেখিছে — তাহার স্বামী তারে যায় জনমের মত ছাড়ি ।
আঁকিতে আঁকিতে চোখে জল আসে, চাহনি যে যায় ধুয়ে,
বুকে কর হানি, কাঁথার উপরে পড়িল যে সাজু শুয়ে ।


শুধু কি ভাষা, অথবা কাব্যিক বর্ণনা? শুরু থেকে যেমন প্রেক্ষাপট রচনা, তারপর মূল চরিত্রদের পরিচিতি দান, নিজেদের গ্রামীণ প্রেক্ষাপটে কেমন করে বিচরণ করেন চরিত্ররা, কেমন করে তাঁদের পরিচয় হয়, সমাজের রীতি কিভাবে তাঁদের ঠেলে দেয় পরবর্তী ঘটোনাপ্রবাহে, অতঃপর নাটকীয় পট পরিবর্তন - সবটুকু নির্মাণের মাঝে লক্ষ্য করে গেছি লেখকের (অথবা কবি'র) সুচারু বর্ণনাশৈলী, আবেগের সূক্ষ্ম উপস্থাপন, এবং উপমার সুমিষ্ট ব্যবহার।
একেকটা চরিত্রের নিজেদের মাঝের সম্পর্ক যেমন কাছ থেকে বর্ণিত হয়েছে, তেমনি তাদের নিয়ে গল্পের এগিয়ে চলা-ও নানা রূপে বর্ণিল : কখনো মেঘতপ্ত দুপুরের মতো কাতর, কখনো রণহুঙ্কারে কম্পমান, কখনো জোছনার আলোয় প্রেমে আপ্লুত। বিদায়ের বিরহে হাহাকারী, শূণ্যতায় বিপন্ন। এমন সুন্দর করে বলে যাওয়া, দেখে গল্প-বলিয়েদের শেখার আছে না কি?
Profile Image for Rifat.
501 reviews329 followers
January 1, 2021
নক্সী কাঁথার কদর মূলত এর কারুকাজের জন্যে। গ্রামবাংলার নারীরা সুইসুতার মাধ্যমে গ্রামের বাড়িঘর, নদী, গাছপালা থেকে শুরু করে জীবনযাত্রার নানান চিত্র ফুটিয়ে তোলেন। সেদিক থেকে নক্সী কাঁথার মাঠ একদম সার্থক নামকরণ। অবশ্য পল্লী কবি যে বর্ণনার মাধ্যমে উপসংহার টেনেছেন সে হিসেবেও এই নামকরণই প্রযোজ্য। হ্যা, উপসংহার আছে আর সূচনাও আছে। কারণ এটি একটি আখ্যানকাব্য/কাহিনী কাব্য- প্রেম,পরিণয় আর বিয়োগের উপাখ্যান।

শুরুতে আছে দুইটি গ্রামের বর্ণনা, এদের আলাদা করে রেখেছে জলীর বিল। দুই গ্রামের বাসিন্দা তরুণ রূপাই আর তরুণী সাজু (আসল নাম সোনা। পরিবারের সেজো মেয়ে হওয়ায় পরিবার তা���ে সাজু নামেই ডাকে)
"মাঙন সেরে মেয়ের দল চলল এখন বাড়ি ,
মাঝের মেয়ের মাথার ঝোলা লাগছে যেন ভারি |
বোঝার ভারে চলতে নারে , পিছন ফিরে চায় ;
রূপার দুচোখ বিঁধিল গিয়ে সোনার চোখে হায় ! "
এভাবেই দেখা হয় এই দুজনের। আর কাহিনীর শুরুও এখান থেকে।
আর শেষ হয়েছে এইভাবে-
"কেহ কেহ নাকি গভীর রাত্রে দেখেছে মাঠের পরে,
মহা-শূন্যেতে উড়াইছে কেবা নক্সী-কাঁথাটি ধরে;
হাতে তার সেই বাঁশের বাঁশিটি বাজায় করুণ সুরে,
তারি ঢেউ লাগি এ-গাঁও ওগাঁও গহন ব্যথায় ঝুরে।
সেই হতে গাঁর নামটি হয়েছে নক্সী-কাঁথার মাঠ
ছেলে বুড়ো গাঁর সকলেই জ��নে ইহার করুণ পাঠ। "


আমি একদম পার্ফেক্ট নক্সী কাঁথা বোধহয় প্রথম দেখেছিলাম এক শিল্পকলা প্রদর্শনীতে। আজকে আবার দেখলাম বইয়ে! জসীম উদ্দীন যেভাবে কলমের কালির সুতোয় গ্রামের গাঁথা ফুটিয়ে তুলেছেন! ঠিক যেন গ্রামের সেই নারীদের ফুটিয়ে তোলা রঙিন কারুকার্যময় কাঁথা- সাদা কাপড়ে কালো সুতার কারু কাজ যেন! অসাধারণ! প্রতি দুই লাইন পরপর এভাবে তাল আর ছন্দ মিলিয়ে কাহিনীকাব্য রচনা করাটা সত্যিই অসাধারণ!

A perfect example of brilliance!
Profile Image for Tiyas.
449 reviews125 followers
July 7, 2022
এ জিনিস যদি ভুলে গিয়ে আবার প্রথম থেকে পড়তে পারতাম...
Profile Image for পটের দুধের কমরেড.
209 reviews25 followers
July 31, 2022
মনপুরা (২০০৯) সিনেমার 'সোনাই হায় হায়রে' গানে বিষাদমাখা বাঁশীর সুরটা মনে পড়ে গেল !
Profile Image for Ratika Khandoker.
300 reviews33 followers
November 17, 2025
ছন্দ আমাকে খুব টানে।
সেই ছন্দের সূঁচে গাঁথা একটা আস্ত গ্রাম্য প্রেম গাথা হলো নক্সী কাঁথার মাঠ।
কাহিনী খুব সাধারণ,সহজ এবং বিয়োগাত্মক।কিন্তু ছন্দের তালে তালে কি সুন্দর করেই না সে কাহিনী ব্যক্ত করা হয়েছে!
পড়ে ভীষণ মুগ্ধ হলাম।
Profile Image for Saumen.
256 reviews
September 18, 2023
এত সুন্দর করে গাওঁ গেরামের কথাও কেউ কইতে পারে না, এমনি করে সাজু রূপাইয়ের জন্য কেউ চোখে জলও আনতে পারবে না।

নক্সী কাঁথার মাঠ এর তুলনা সে নিজেই। এর ভাষা, কাহিনী বর্ণনা তুলনারহিত।
Profile Image for Mehedi  Hasan Mahfuz.
171 reviews27 followers
June 29, 2024
❝মুখখানি তার ঢলঢল ঢলেই যেত পড়ে
রাঙা ঠোঁটের লাল বাঁধনে না রাখলে তায় ধরে।❞


বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ "নক্সী কাঁথার মাঠ"। এই বইয়ের ভূমিকা লিখতে গিয়ে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেন, ❝ আমি এটিকে আদরের চোখে দেখেছি, কেননা এই লেখার মধ্য দিয়ে বাংলার পল্লী-জীবন আমার কাছে চমৎকার একটি মাধুর্য্যময় ছবির মতো দেখা দিয়েছে।❞
এই কাব্যগ্রন্থ সম্পর্কে প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও ইতিহাস গবেষক দীনেশচন্দ্র সেন বলেন,
❝জসীম উদদীনের " নক্সী কাঁথার মাঠ" কাব্যখানি পড়িয়া মুগ্ধ হইয়াছি। এ যেন সেই পুরাতন পল্লীকে ফিরিয়া পাইলাম —সেই পল্লীর পথঘাট—এ যেন কত চেনা—হৃদয়ের দরদ দিয়া আঁকা।❞
তাছাড়াও এই কাব্যগ্রন্থের ইংরেজী অনুবাদ সহ একাধিক ইউরোপীয় ভাষায় অনুবাদ হয়েছে। সুতরাং এত বড় গ্রন্থ নিয়ে আমার মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। পাঠক পড়ার পরেই বুঝে নিতে পারবেন এই কাহিনীকাব্যের আগাগোড়া।পল্লীবাংলার রূপ বৈচিত্রের বর্ণনার সাথে সাথে এই কাব্যের প্রধান দুই চরিত্রের বর্ণনা কবি দিয়েছেন খুবই আকর্ষণীয় ভঙ্গিমায়। যেমন সাজুর বর্ণনা দিতে গিয়ে কবি লিখেন,
❝যে ফুল ফোটে সোনার খেতে, ফোটে কদম গাছে,
সকল ফুলের ঝলমল গা-ভরি তার নাচে।❞

পল্লী বাংলার মেয়ের রূপের বর্ণনা করতে কবিকে দূরে যেতে হয় নি, কবি উপমা দিয়েছেন স্বয়ং পল্লী বাংলার একান্ত উপাদান দিয়ে। উপমার এমন চমৎকার ব্যবহারে অভিভূত হয়েছি।
আবার রুপাইয়ের বর্ণনা দিতে গিয়ে কবি লেখেন,
❝এই গাঁয়ের এক চাষার ছেলে লম্বা মাথার চুল
কালো মুখেই কালো ভ্রমর,কিসের রঙিন ফুল!❞

অর্থাৎ কালো রঙ কোনো ফ্যাক্ট না আসলে।একটু পরই আবার কবি বলেন,
❝কালো চোখের তারা দিয়েই সকল ধরা দেখি,
কালো দাতের কালি দিয়েই কেতাব কোরাণ লেখি।❞

অর্থাৎ রুপাই কালো বলে কিছু যায় আসে না, এই জগতে কালোরও অনেক গুণ। এ যেন তারাশঙ্করের
❝কালো যদি মন্দ তবে কেশ পাকিলে কাঁদ কেনে❞<>b/-র ভাব ধারণ করে। পল্লী বাংলার দুইটি গাঁ তার মাঝে একটা মাঠ বা বিল। দুই গাঁয়ের দুটি ছেলে মেয়ের প্রণয়কাহিনীকাব্য এই "নক্সী কাঁথার মাঠ।"সেই সাথে পল্লী বাংলার রূপ উঠে এসেছে এই কাব্যে।
Profile Image for Pritom Kumar.
22 reviews2 followers
January 3, 2020
গেঁয়ো কিষাণ বলে সাহিত্য যাদের সরায়ে রেখেছে দূরে,
এই কাব্যখানি যেন লেখা হয়েছে তাদেরি তরে।
বাঘা বাঘা সাহিত্যিক বোঝে নি যাদের মূল্য,
তাম্বুলখানার ছোট্ট জসীম করেছে তাদের অমূল্য ।
যাদের জন্য লেখা হয় নি কোন কবিতা,
একখানি কাব্যেই জসীম এঁকেছে সব ছবিটা ।
নক্সী কাঁথার কাব্যে সাজু-রুপাই হয়েছে অমর,
জসীম তুমি বাংলা সাহিত্যের প্রাণ ভ্রমর।


আজও পল্লী গাঁয়ে যখন নামে বরষা,
তোমার রুপাই-সাজুর শোকে কাঁদে তারা সরসা।
কাঁদিতে চাহে প্রতিদিন, কাঁদিতে চাহে চিরদিন,
পারে না-জর্জরিত করে দারিদ্র্য, শোক আর ঋণ ।
কোন এক কালে যদি দুঃখী এ গাঁয়ে আরেক জসীম আসে,
প্রাণ ভরে দু হাত খুলে যেন তাদের দুঃখগাঁথা লেখে।
Profile Image for Galib.
276 reviews69 followers
January 10, 2020
মেয়েটা মারা যায় শেষে 😥
This entire review has been hidden because of spoilers.
Profile Image for Suchona Hasnat.
251 reviews334 followers
November 5, 2023
জসীম উদদীন আমার প্রিয় কবি। এ বইটা কিনেছিলাম ১০ বছরেরও বেশি আগে। আজ পড়ব, কাল পড়ব করে এই এতদিনে পড়া। এত সুন্দর বর্ণণা, এত সুন্দর ছবির মতো লেখা খুব কম মানুষ লেখেন। কবি সেই গুণী লেখকদের একজন। মুগ্ধতা নিয়ে পড়েছি। লেখা নিয়ে এতটুকু অভিযোগ নেই আমার। অভিযোগ করব তার যোগ্যতাও নেই। তবে প্রতিক্রিয়া আছে কাহিনী নিয়ে। এই যেমন শেষটা খুব মন খারাপের। আবার যে ঘটনাটা হলো তা আমি কোনো লেখাতেই মেনে নিতে পারিনা। তাই তারা কাটা হলো ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দের জায়গা থেকে। এখন আসা যাক, পড়তে বলব কিনা, অবশ্যই বলব। এ বই না পড়লে দেশেরব আধুনিক লোকসাহিত্যের একটা বড় অংশ না জানাই থেকে যাবে।
Profile Image for Farhana Lüba.
216 reviews16 followers
March 11, 2018
বইটা শেষ করার পর কান্না পাচ্ছে খুব। চোখে পানি চলে এসেছে, কিছু দেখতে পাচ্ছি না। চশমা মুছতে হবে।
ইশ। আমরাই কি শেষ জেনারেশন, যারা এই বই পড়ে এমন কান্না করবে? নাকি শুধু আমার ক্ষেত্রেই এমনটা হলো?
অনেক বেশি ভালো লেগেছে। অনেক, অনেক বেশি।
Profile Image for Rashed.
127 reviews26 followers
May 13, 2021
যেদিন সারাদিন বৃষ্টি হয় এবং কর্মহীন একটা অলস দুপুরের দেখা মিলে,সেদিন এই বইটি পড়তে ইচ্ছে করে।রুপাইয়ের দুঃখে ভিজতে ভিজতে মনে হয় দুঃখকেই আসলে মানুষ বেশী ভালোবাসে।
Profile Image for Tamim wn.
114 reviews
January 6, 2025
নক্সী কাঁথার মাঠ এমন একটি কাব্যগ্রন্থ , যার সম্পর্কে যতই বলবো ততই কম হয়ে যাবে । বাংলা ভাষায় নতুন শব্দ সংযোজন করা দরকার এই বইয়ের প্রশংসা করার জন্য ।
Profile Image for Zihad Saem.
123 reviews6 followers
August 27, 2025
নক্সীকাঁথার মাঠ প্রথমবার পড়েছিলাম কুড়ি সালে। এরপরও দু'একবার নাড়া গাটা করেছি। কিন্তু এখন একাডেমিক বই হিসেবে যখন পড়ছি। তখন অন্য রকম এক অনুভব তৈরি হচ্ছে।
Profile Image for Rabeya Rini.
15 reviews10 followers
September 11, 2024
**নকশী কাঁথার মাঠ** জসীম উদ্দীন রচিত এক অনবদ্য কবিতা, যা বাংলার লোকজ সংস্কৃতি, প্রেম, বেদনা ও জীবন সংগ্রামকে অসাধারণভাবে তুলে ধরে। গল্পটি মূলত রূপাই ও সোজা নামের দুই প্রেমিক-প্রেমিকার করুণ প্রেমকাহিনি। সোজা রূপাইকে হারিয়ে তার প্রতি ভালোবাসা আর মনের বেদনা নকশী কাঁথার মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলে। কবিতার প্রতিটি ছত্রে গ্রামীণ জীবনের সরলতা, প্রকৃতির সৌন্দর্য এবং বাঙালির আবেগঘন মনোভাব প্রতিফলিত হয়েছে। এটি বাংলা সাহিত্যে একটি কালজয়ী রচনা যা আজও পাঠকদের মুগ্ধ করে।
Profile Image for Imran.
65 reviews18 followers
October 17, 2025
"Our sweetest songs are those that tell of saddest thought."
Profile Image for Madhurima Nayek.
361 reviews135 followers
April 16, 2019
জসীমউদ্দীনের "নক্সী কাঁথার মাঠ" একটি প্রেমমূলক কাহিনি কাব্য। রূপাই ও সাজুর (পূর্ববঙ্গের কোনো কোনো জেলায় বাপের বাড়িতে মুসলমান মেয়েদের নাম ধরে ডাকা হয় না।বড়ো মেয়েকে বড়ো,মেজো মেয়েকে মাজু আর সেজো মেয়ে কে সাজু এইভাবে ডাকা হয়। তবে শ্বশুরবাড়ির লোকে এ নামে ডাকতে পারে না) বিরহ কাহিনি এই কাব্যের মূল কথাবস্তু।এই কাব্যের কাহিনি হলো - সাজুর স্বামী রূপাই একদিন ফেরার হল।সাজু স্বামীর ফিরে আসবার আশায় দিন গুণে আর একটি নক্সী কাঁথা সেলাই করে,কিন্তু স্বামী ফেরে না।সাজুর মৃত্যু হল, মৃত্যুর পূর্বে সে বলে গেলো,নক্সী কাঁথাখানি যেন তার কবরের ওপরে বিছিয়ে দেওয়া হয়।বহুদিন পরে গ্রামের লোক একদিন অবাক হয়ে দেখে,সাজুর কবরের পাশে সেই নক্সী কাঁথাখানি গায়ে জড়িয়ে একটি লোক মরে পড়ে আছে।সেই থেকে ঐ কাঁথার নামে সামনের মাঠটির নাম হল "নক্সী কাঁথার মাঠ"।

এই কাব্যটি একটি শোকগাথা।কেননা রূপাই-সাজুর করুণ বিয়োগান্ত প্রেমকাহিনি এই কাব্যে অপরুপ রূপ লাভ করেছে।
Profile Image for Fahad Ahammed.
386 reviews44 followers
January 5, 2020
পড়া শুরুকরে মন্ত্রমুগ্ধের মতো পড়ে গেলাম এবং শেষ হয়ে গেলো টেরই পেলাম না।

Profile Image for Fatema Ayeeman.
8 reviews12 followers
May 3, 2018
সহজ,সাবলীল,অনবদ্য!
Profile Image for Habiba♡.
352 reviews23 followers
October 31, 2020
'এই খানেতে এসে তারা পথ হারায়ে হায়
জলীর বিলে ঘুমিয়ে আছে জল-কুমুদীর গায়'

দুই গ্রামের মাঝের নদীর।ছেলের নাম রুপাই,মেয়ের নাম সোনা(সাজু)।

'বোঝার ভারে চলতে নারে,পিছন ফিরে চায়
রুপার দুচোখ বিঁধিল গিয়ে সোনার চোখে হায়'

সাজু ও রুপাইয়ের প্রথম দৃষ্টি বিনিময়।
এরপর তাদের বিবাহ হয়।পরের ঘটনায় গ্রামে লড়াইয়ের সূত্রপাত ঘটে।

'তুমি যাহাদের মারো,তার ঘরে আছে কাচাবউ
ছেলেমেয়ে আছে কারো'

সাজু নক্সী কাঁথা বুনতে বুনতে রুপাইয়ের অপেক্ষা করে।কিন্তু রুপাই ফিরে না।এভাবেই দুটি গ্রাম্য ছেলেমেয়ের ভালোবাসার কাহিনী কবিতার ছন্দে তুলে ধরা হয়েছে।
Profile Image for Uzzal Orpheus.
60 reviews6 followers
June 18, 2023
কাব্যগ্রন্থ এক বসায় উপন্যাসের মত করে পড়ে ফেলা এই প্রথম। জসীম উদ্দিনের 'জীবন কথা' পড়ে এলোমেলো কথা লিখেছিলাম গুডরিডসে। শুক্লা সেখানে এসে কমেন্টে 'নক্সী কাঁথার মাঠ' পড়ার আহ্বান জানিয়েছিল। ঠিক তখন আমি প্রেমিকাকে সাময়িক বিদায় দিয়ে বাস এ করে নীড়ে ফিরছিলাম, কী মনে হলো নক্সী কাঁথার মাঠ টা পড়া শুরু করলাম। পড়তে গিয়ে অবাক হলাম। এইতো পড়তে চাই! কাব্যগ্রন্থ হলেও ১৪ টি কবিতা মিলিয়ে একটাই গল্প, তুমুল বিরহের গল্প, সো মাঝখানে পড়া থামিয়ে দেবার কোন সুযোগ ছিলনা।
Profile Image for Tanzima Rahman.
94 reviews2 followers
June 11, 2024
বড় হওয়ার সাথে সাথে আগ্রহের পরিবর্তন টের পাচ্ছি। তিলোত্তমাসম্ভব কাব্যের পরে হালকা কিছু পড়ার ইচ্ছা থেকেই নকশি কাঁথার মাঠ টেনে নেওয়া। রুপা আর সোনা সামাজিক প্রতিকূলতা সরিয়ে সুখের সংসার গড়তে চাইলেও শাসকের শোষণ তা হতে দেয়না। অন্যায়ের প্রতিবাদ করে জেলে যাওয়া স্বামীর অপেক্ষায় সমস্ত সুখ দুঃখ নকশি কাঁথায় ফুটিয়ে তোলে সোনা। শেষ পর্যন্ত রুপা ফেরে, কিন্তু...
Profile Image for Huzaifa Aman.
143 reviews5 followers
December 24, 2025
কেহ কেহ নাকি গভীর রাত্রে দেখেছে মাঠের পরে,
মহা-শূন্যেতে উড়াইছে কেবা নক্সী-কাঁথাটি ধরে;
হাতে তার সেই বাঁশের বাঁশীটি বাজায় করুণ সুরে,
তারি ঢেউ লাগি এ-গাঁও ওগাঁও গহন ব্যথায় ঝুরে।

সেই হতে গাঁর নামটি হয়েছে নক্সী-কাঁথার মাঠ,
ছেলে বুড়ো গাঁর সকলেই জানে ইহার করুণ পাঠ।
Profile Image for Soul  Taz.
2 reviews21 followers
July 9, 2020
মাঠের নামও কি নক্সীকাঁথার মাঠ হতে পারে! হুম এই ৪৪ পৃষ্ঠার কবিতাটি আমায় ভাবিয়েছে।কেমন করে বাংলার আদর স্নেহে ভরা ভালোবাসা পূর্ণতা পায় আবার বিরহ গাঁথা সমাপ্তি দিয়ে কেনো ই বা ইতি টানতে হলো।
Profile Image for Mashaekh Hassan.
162 reviews28 followers
August 6, 2020
বাংলা সাহিত্যের সম্পদ এর উদাহরণ দিতে গেলে এই নামটা নিতে দ্বিধায় ও ভুগিনা, মুখেও আটকায় না।
Profile Image for Tusar Abdullah  Rezbi.
Author 11 books55 followers
April 17, 2022
এটা একটা গল্প, এটা আবার একটা কবিতাগুচ্ছও। চৌদ্দ ভাগের একটা কবিতাগুচ্ছে একটা পরিপূর্ণ গল্প। গল্পটা সাধারণ। কিন্তু কবিতায় গল্প বলা, অসাধারণ। মনে দাগ কেটে গেছে পুরোপুরি।
Displaying 1 - 30 of 71 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.