Jasimuddin (Bangla: জসীম উদদীন; full name: Jasimuddin Mollah) was a Bengali poet, songwriter, prose writer, folklore collector and radio personality. He is commonly known in Bangladesh as Polli Kobi (The Rural Poet), for his faithful rendition of Bengali folklore in his works.
He obtained his BA degree in Bengali from the University of Calcutta in 1929 and his MA in 1931. From 1931 to 1937, Jasimuddin worked with Dinesh Chandra Sen as a collector of folk literature. Jasimuddin is one of the compilers of Purbo-Bongo Gitika (Ballads of East Bengal). He collected more than 10,000 folk songs, some of which has been included in his song compilations Jari Gaan and Murshida Gaan. He also wrote voluminously on the interpretation and philosophy of Bengali folklore.
Jasimuddin started writing poems at an early age. As a college student, he wrote the celebrated poem Kabar (The Grave), a very simple tone to obtain family-religion and tragedy. The poem was placed in the entrance Bengali textbook while he was still a student of Calcutta University.
Jasimuddin is noted for his depiction of rural life and nature from the viewpoint of rural people. This had earned him fame as Polli Kobi (the rural poet). The structure and content of his poetry bears a strong flavor of Bengal folklore. His Nokshi Kanthar Maath (Field of the Embroidered Quilt) is considered a masterpiece and has been translated into many different languages.
Jasimuddin also composed numerous songs in the tradition of rural Bengal. His collaboration[4] with Abbas Uddin, the most popular folk singer of Bengal, produced some of the gems of Bengali folk music, especially of Bhatiali genre. Jasimuddin also wrote some modern songs for the radio. He was influenced by his neighbor, poet Golam Mostofa, to write Islamic songs too. Later, during the liberation war of Bangladesh, he wrote some patriotic songs.
Jasimuddin died on 13 March 1976 and was buried near his ancestral home at Gobindapur, Faridpur. A fortnightly festival known as Jasim Mela is observed at Gobindapur each year in January commemorating the birthday of Jasimuddin. A residential hall of the University of Dhaka bears his name.
He was honored with President's Award for Pride of Performance, Pakistan (1958), DLitt. by Rabindra Bharati University, India (1969) Ekushey Padak, Bangladesh (1976), Independence Day Award (1978).
" গড়াই নদীর তীরে, কুটির খানি লতাপাতা ফুল মায়া রয়েছে ঘিরে বাতাসে হেলিয়া, আলোতে খেলিয়া সন্ধ্যা সকালে ফুটি, উঠোনের কোনে বুনো ফুল গুলি হেসে হয় কুটি কুটি "
ছোট বেলায় চতুর্থ শ্রেণী তে থাকতে কবিতাটি পড়েছিলাম। আমার মত সবাই ই হয়তো কবিতাটি পড়েছে। কিন্তু কয়জন জানে, যে কুটিরের বর্ণনা কবি দিয়েছেন,তা সোজন দুলিরই বাড়ির ছবি? এই কাব্য গ্রন্থের শেষে এসে সত্যিই কষ্ট পেয়েছি। আর অভিভূত হয়েছে কবির লেখনী তে। গ্রাম বাংলার সহজ সরল জীবন,আর অপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্যের কি অসম্ভব সুন্দর ছবি কবি এই বইতে একেছেন,তা না পড়লে বোঝা সম্ভব নয়।
আমি বরাবরই কাব্য উপন্যাসের বেশ ভক্ত। পল্লী কবির 'সোজন বাদিয়ার ঘাট' ছিল আমার জন্য একটা বড় রকমের চমক। প্রতিটি অধ্যায় মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় পড়ে গেছি। সোজন বাদিয়ার ঘাট বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ, যা একাধিক বিদেশী ভাষায় অনুবাদ হয়েছে। বইয়ে কবি তার স্বভাবসুলভ প্রতিভা দেখিয়েছেন। গ্রামীণ চিত্রগুলি এতটাই প্রাণবন্ত ছিল যে পড়তে গিয়ে নিজের অজান্তেই হারিয়ে ফেলেছি নিজেকে সেই সময়ের জনপদে। বইয়ের বর্ণনায় দেখা যাক,
শিমুলতলী গ্রামে বাস করে দুটি সম্প্রদায়, হিন্দু এবং মুসলিম। দুটি ভিন্ন সম্প্রদায় হলেও তাদের মধ্যকার সম্পর্ক থাকে ভ্রাতৃত্বের চেয়েও বেশী। দেখা যায় মুসলিম বাড়িতে কেউ মারা গেলে তার জন্য হিন্দু বাড়ির তুলসী তলায় প্রদীপ জ্বলে। আবার হিন্দু বাড়িতে ছেলে অসুস্থ হলে তার জন্য পানি পড়া দেন মুসলিম পীর সাহেব। এক কথায় পুরো গ্রামটি মিলে একটি পরিবারের রূপ নেয়। যেখানে প্রত্যেকেই অপরের শুভাকাঙ্ক্ষী। এই গ্রামেরই নমুদের নেতা গদাই মোড়লের চঞ্চল কন্যা দুলালী, যার ডাকনাম দুলী। সদা উড়ে বেড়ান পাখির ন্যায় দুলীও ঘুরে বেড়ায় পুরো গ্রাম জুড়ে। তার সব সময়ের সাথী একই গ্রামের দমির শেখের ছেলে সোজন। ছোটবেলা থেকেই একে অপরের খেলার সাথী, একে অপরের পরম আপনজন। সোজন কখনো পেছন থেকে দুলীকে ডাক দিলে, দুলীর পাকা আম কুড়িয়ে পাওয়ার মত আনন্দ হয়। দুলীর ইচ্ছে হয়, সিঁদুরের কৌটোয় সোজনকে আপন করে লুকিয়ে রাখতে। আবার সোজনের ইচ্ছে বড় হয়ে তার বাড়ির আঙ্গিনায় কুমড়ো চাষ করবে, তবে তা সবজীর জন্য নয়, দুলী যদি শখের বসে একটি কুমড়ো ফুল খোপায় বাঁধে!
একসময় মুসলিমদের মহরম অনুষ্ঠানে শিমুলতলীর হিন্দুদের মারধোর করে পাশের গ্রামের মুসলিমরা। এতে করে তারা নায়েব মশায়ের কাছে বিচারের জন্য গেলে হিন্দু নায়েব তার স্ব সম্প্রদায়ের লোকদের প্রতিশোধ নিতে ক্ষেপিয়ে তোলেন। এবং তা শিমুলতলীর নিরীহ মুসলমানদের প্রতি। কিন্তু শিমুলতলীর হিন্দুরা তাদের প্রতিবেশী, ভ্রাতৃসম শিমুলতলীর মুসলিমদের প্রতি প্রতিশোধ নিতে অপারগতা জানায়। এতে করে ক্ষেপে যান হিন্দু নায়েব। অত:পর তিনি হিন্দুদের দেব-দেবীর আক্ষ্যা দিয়ে প্রতিশোধে উদ্বুদ্ধ করেন। হিন্দুদের এই আক্রমণের সংবাদ মুসলিমরা আগেই পেয়ে থাকে, তাই রাতের অন্ধকারে তারা প্রিয় গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু শেষ সময়ে এসে যে হিন্দুরা তাদের প্রতিবেশীর প্রতি আক্রমণের মত পাল্টায় তা মুসলিমরা কখনোই জানতে পারে না।
এক পর্যায়ে সমাজের চোখে ছেলে-মেয়ে দুটো বড় হয় এবং দুলীর অন্যত্র বিয়ে ঠিক হয়। তখন দুলী বুঝতে পারে যে তার ছোটবেলার খেলার সাথী সোজনকে ছেড়ে যেতে পারবে না। সে তার একটাও মন সোজনকে দিয়ে ফেলেছি, চাইলেই কুমড়োর ফালির মত কেটে কেটে সবাইকে বিতরণ করতে পারবে না। বিয়ের দিনে দুলী, সোজনকে আড়ালে ডেকে তার মনের কথা খুলে বলে। সোজনের নিজের সাথে মিলে গেলেও সে তার পরিবার, সম্প্রদায়ের কথা ভেবে দুলীকে বোঝাতে চেষ্টা করে। এবং যখন দুলী আকাশ-বাতাস সাক্ষী রেখে সোজনকে স্বামী বলে ঘোষণা করে তখন আর সোজনের কিছুই করার থাকে না।
এভাবেই শুরু হয় পল্লী কবির ধর্ম, সমাজ, প্রেম, মানুষত্ব, আনন্দ, বেদনা আর হাহাকারের উপন্যাস 'সোজন বাদিয়ার ঘাট'। যেখানে কবি দেখিয়েছেন, সমাজে সাম্প্রদায়িক সংঘাতের চেয়েও দুটি নিষ্পাপ কিশোর মনের ভালবাসা কতটা অপরাধ হিসেবে গণ্য। এবং এর পরিণাম কতটা ভয়াবহ।
বইয়ে প্রতিটি অধ্যায় শুরুর আগে রয়েছে একটি প্রাচীন বাউলগান, জারিগান কিংবা সুফিগানের কলি। যেমন, ঘর খানি বান্দ মনা ভাই, দুয়ার খানি বান্দ, হাপনি মরিয়া যাইবা তার লাইগা কি কান্দ।
উপমার ব্যবহারের ক্ষেত্রে কবি সেরা। বইয়ে ব্যবহৃত উপমাগুলি অনেক বেশী উপভোগ্য ছিল। সব মিলিয়ে সুবিখ্যাত বইটি নিজ গুণেই তার খ্যাতি অর্জন করেছে। এমন একটি বই সাহিত্য পাঠকদের জন্য অবশ্যপাঠ্য!
আম্মুর হাতে কিন্ডেল দিয়ে বললাম পড়ে শোনাতে। আমি পাশে শুয়ে শুয়ে শুনলাম। অডিওবুকের অভিজ্ঞতা প্রিয় কন্ঠে শুনতে পারলাম। তবে সেটা না পারলেও বইটি ঠিক এরকমই ভালো লাগতো। কারণ, এ এক অসাধারণ সৃষ্টি।
কোনো এক বড় ভাই পুতুল নাচের ইতিকথা উপন্যাসে মতি আর কুসুমের প্রেম কে 'কাচা প্রেম' বলে নাম দিয়েছিলো। নামটা ভালো লেগেছিলো খুব। এই বইটা কেমন, তা দেখার জন্য এমনি pdf পড়তে গিয়ে শুরু করে এক বসায় শেষ করে ফেললাম। এমন কাচা প্রেমের গল্প কবিতার ছন্দে এমন ভাবে বলা যায়! পুরোটা সময় একটা ঘোরের মাঝে ছিলাম মনে হচ্ছে। আমি pdf পড়া মানুষ না, তবুও pdf পড়েই শেষ করে ফেললাম। এতদিন পরে এই বই পড়ার জন্য নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে। আরো আগে পড়া উচিৎ ছিলো।
very conflicted about this. while the incorporation of nature in this was impeccable and jasim uddin did an admirable job generally, the whole religion-based conflict plot point wasn't properly explored which kind of made it hard for me to enjoy the writing after a while. overall it wasn't bad at all and i would probably recommend it to someone eager to get into bangla poetry as it's very accessible.
পল্লিকবি বরাবরের মত তার এই কাব্যপন্যাসেও তার পদবিটির সার্থকতা ধরে রেখেছেন। পল্লী মানুষের জীবন ধারণের উপাদানগুলির একটি সহজ ও সাবলিল বর্ণনা তিনি তুলে ধরেছেন। তবে কাব্যপন্যাসটির মুখ্য বিষয় হচ্ছে অসাম্প্রদায়িকতা এবং ক্ষমতাসীনদের বস্তুবাদি কিছু স���বার্থসিদ্ধির জন্য দাঙ্গা উসকে দেয়া। নমু-মুসলমানের দাঙ্গায় লাভ লুটে নেয় জমিদার আর নায়েব মশায়। সাধারণ মানুষ বুঝে বা না বুঝে নেতাদের ��্বার্থ উদ্ধার করে দেয়ার জন্য আবেগের বশে নিজের প্রতিবেশিদের বাপ দাদার ভিটা থেকে সরায় দেই কিন্তু যতদিন এ ভুল বুঝে ততদিন অনেক দেরি হয়ে যাই। উপন্যাসটির মুখ্য বিশয় হইত অনেকের কাছেই সোজন ও দুলির অসম প্রেম ও তাদের করুণ পরিনতির কাব্যগাঁথা তবে আমার কাছে মুখ্য হয়ে উঠেছে দাঙ্গার বিষয়টি। সোজন ও দুলির পরিণতির একটি কারন অসম প্রেম হলেও দাঙ্গাও যে একটি কারণ তা অন্য কেও মনে না করলেও আমি মনে করি। কাব্যপন্যাসটির সার্থকতা এখানেই যে কবি শুধু দুইজন মানুষ এর মদ্ধে দিয়ে পুরো জাতির চিত্রায়ন করে গেছেন। কবি সেই সাথে এইটাও তুলে ধরেছেন যে অসাম্প্রদায়িকতা একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্তই উপকারি নইত তা সমাজ এর মধ্যে অশান্তি হানাহানি এবং কিছু তরুন প্রাণ এর সমাপ্তিতে যেয়ে শেষ হবে।
দুটি সম্প্রদায়ের একই সাথে বসবাস শিমুলতলী গাঁয়ে। ভাব ভালোবাসার কোন কমতি নাই। পূজোর গান বা আজানের ধ্বনি কোনটাতে এতে অপরের কাজে ব্যঘাত ঘটায় না। একই সাথে থাকতে গিয়ে ভুলবোঝাবুঝি বা ঝামেলা হয়তো হয় তবে সে ঝামেলা মিমাংসা শেষে দুই সম্প্রদায় আরও বেশী কাছাকাছি চলে আসে। সেই শিমুলতলী গাঁয়ের গদাই মোড়লের মেয়ে দুলালী ডাকা নাম দুলী আর ছমু মুসলমানের ছেলে সোজনের বন্ধুত্ব হয়। দুজনকে ছাড়া দুজনের সময় অতিবাহিত হয় না। কিন্তু সময় ও পরিস্থিতি একই রকম থাকে না তবুও গড়াই নদীর তীরে তাদের জীবন অতিবাহিত হয় নানা ধারায় তাই নিয়ে জসীম উদদীন এর "সোজন বাদিয়ার ঘাট"।
এটা একটা কাব্যউপন্যাস। উপমা, ভাব ও ভালোবাসায় এটা একটা সুন্দর প্রেম কাহিনি। একই সাথে সেই সময়ের সামজিক অবস্থা, মানুষের দৈনন্দিন জীবন ও পরিবেশ পরিস্থিতির সুন্দর বর্ণনা।
সোজন বাদিয়ার ঘাট রচিত হয় ১৯৩৩ সালে।এটি একটি কাব্যোপন্যাস।সোজন বাদিয়ার ঘাট সর্বাদিক বিদেশী ভাষায় অনূদিত একটি বই।
#কাহিনী_সংক্ষেপ: শিমুলতলী গাঁয়ে নমু এবং মুসলমান দুটি সম্প্রদায়ের বসবাস।গলায় গলায় তাদের ভাব।একে অপরের উৎসবে মেতে ওঠে তারা।পূজোর গান বাজনা,কিংবা আজানের ধ্বনি কোনকিছুই তাদের কাজে ব্যাঘাত ঘটায়না।একবার মহরমে সাউদ পাড়ার মুসলমানরা নমুদের সামনে পেয়ে তাদের মেরে আহত করেছিল।তারা রামনগরে নায়েব মশাই এর কাছে নালিশ করতে গেলে তিনি সব মুসলমান এমন কী শিমুলতলীর মুসলমানদের উপর আক্রমন করতে উদ্বুদ্ধ করেন।কিন্তু ভালবাসার বন্ধনের কাছে দুটি সম্প্রদায় হার মেনে নেয়।কেউ কাউকে আক্রমন করেনা। নমুদের সেরা গদাই মোড়লের মেয়ে দুলালী আদর করে দুলী ডাকা হয় তার সাথে ছমু মুসলমানের সন্তান সোজনের বন্ধুত্ব অনেক গভীর।একে অপরের প্রতি মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ তারা।সোজনকে ছাড়া দুলীর সময় অতিবাহিত হতে চায়না।সোজনকে সে এতোটাই ভালবাসে যে তাকে সিঁদুর কৌটে ভরে নিজ আচলের নিচে লুকিয়ে রাখতে চাইতো।সোজনের অসুস্থতায় তার দেবতার নিকট সাতটি মহিষ মানত করে এসেছিল।সোজনকে ছাড়া তার কোন কাজ এগুতে চাইতোনা। সোজনও দুলীকে অনেক ভালবাসতো।দুলীকে করা সব শপথ পালন করেছে সে।তার খুব শখ যখন সে বড় হবে, অনেক টাকা পয়সা জমিয়ে দুলীর জন্য সিঁদুর,ময়ূর পাখা,শঙ্খের চুড়ি, মধুমালা শাড়ি নিয়ে আসবে। বনে কোন গাছের নিচে বসে, গাছপালা, ফুল ফল পাখিদের সাথে খেলা করে কেটে যেত তাদের সুন্দর সময়।অনেক মধুর স্মৃতি জড়িয়ে আছে তাদের এই প্রকৃতিকে ঘিরে। আম্র শাখার মুকুল হলে গাছটিকে বউ সাজিয়ে কদম গাছের সাথে বিয়ে দিত।আবার মেঘলার দিনে যখন কদম ফুল ফুটতো তখন তাকে বউ সাজিয়ে আম গাছের সাথে বিয়ে দিতো ।কখনো বা বউ কথা কও পাখির মত ডাক দিয়ে পাখিটিকে রাগিয়ে তুলতো। এমনি করে একদিন দুলী মায়ের চোখে ধরা পড়ে যায়।এরপরেও সে সোজনকে নিয়ে স্বপ্ন বুনতে ভুলেনা।
একটা সময় দুলীর বিয়ে ঠিক হয়ে যায়।বিয়ের আসর থেকে দুলী পালিয়ে এসে সোজনকে বলে তাকে নিয়ে দূরে কোথাও যেতে।সোজন প্রথমে রাজী না হলেও দুলীর ভালবাসার প্রকাশের কাছে হার মেনে তাকে নিয়ে পালিয়ে যেতে রাজী হয়। গড়াই নদীর তীরে পাখির নীড়ের মত করে ছোট একখানা নীড় বাঁধে সোজন দুলী ☺ সোজন কাঠ কেটে দূর হাঁটে বিক্রি করে আর দুলী তার স্বপ্নজাল দিয়ে নিজের মত করে সাজিয়ে তোলে তার এই ছোট আবাস।সারাদিন শিকা বুননে সে ফুটিয়ে তোলে তার মনের ভাব।শিমুলতলীতে সোজনের সাথে কাটিয়ে দেওয়া মুহূর্তগুলোকে।ভালবাসার প্রত্যেকটি প্রতিচ্ছবিকে তার হাতের নিপুন ছোঁয়ায় সে ফুটিয়ে তোলে একেকটি শিকা রচনায়। এভাবেই কাটতে থাকে সোজন দুলীর সংসার। এখানেই শেষ নয় বাকিটা গোপনীয়। পড়ার আমন্ত্রণ রইলো।
#আমার_উপলব্ধি: নক্সী কাঁথার মাঠ পড়ে জসীম উদ্দীন এর আরো লেখা পড়তে ইচ্ছে করছিল। সোজন বাদিয়ার ঘাট পড়ার ইচ্ছেটা হয়েছিল বেশি।পড়ার পর মুগ্ধ হয়েছি।সুখপাঠ্য ছিল। এতো সুন্দর উপমা,এতো সুন্দর প্রেমের বহিঃপ্রকাশ সত্যিই মুগ্ধ করেছে।প্রত্যেকটি পার্টে রয়েছে মুর্শিদা গান, জারিনাচের গান, ছেলে ভুলানো ছড়া সহ ইত্যাদির ছোঁয়া।দুলীর ভালবাসা, সোজনের প্রতি তার মায়া, সোজনকে ঘিরে তার স্বপ্ন, সোজনের প্রতি তার ভক্তি হৃদয় ছুঁয়েছে।মনে হচ্ছিল দুলীর ছেলে মানুষীগুলো আমার মত। কাব্যের শেষ অংশে গিয়ে দুঃখ পেয়েছি অনেক।চোখে ভেসে উঠছিল চরিত্রগুলো।ইচ্ছে করছিল শেষটা নিজের মত করে রচনা করি..
সোজনবাদিয়ার ঘাট কাব্যের ভূমিকায় কবি বলছেন, "আমাদের ফরিদপুর অঞ্চলে বহু চাষী, মুসলমান ও নমঃশুদ্রের বাস। তাহাদের মাঝে সামান্য সামান্য ঘটনা লইয়াই প্রায়ই বিবাদের সূত্রপাত হয়। এইসব বিবাদে ধনী হিন্দু ও মুসলমানরা উৎসাহ দিয়া তাহাদিগকে সর্বনাশের পথে আগাইয়া দেয়। মহাজন ও জমিদারের মধ্যে কোনো জাতিভেদ নাই। শোষনকারীরা সকলেই এক জগতের। ইহাদের প্ররোচনায় হতভাগ্য নমঃশুদ্র ও মুসলমানদের যে অবস্থা হয় তাহা চক্ষে দেখিলে অশ্রু সম্বরণ করা যায় না।"
তিনি দুঃখ করে আরও বলেছিলেন… "আমার লেখক জীবনের এই দুর্ভাগ্য যে, আমি যাহাদের লইয়া সারাজীবন সাহিত্য রচনা করিলাম তাহারা একজনও আমার লেখা পড়িল না।"
নকশীকাঁথার মাঠের রূপাই ও সাজুর কথা পড়ার বহুকাল পরে সোজনবাদিয়ার ঘাটের সোজন ও দুলীর কাহিনি পড়লাম। আমার ব্যক্তিগত টান গদ্যের প্রতি, কাব্যগ্রন্থ আমি সামান্যই পড়েছি। কিছুটা নাক উঁচু ভাব নিয়েই, যেন খানিকটা আবার সেই প্রেম, আবার কলসী ভর্তি আবেগ! এমন একটা ভাব নিয়ে শুরু করেছিলাম 'সোজনবাদিয়ার ঘাট' পড়া। কিন্তু বইটির ��াতা যত এগোল আমাকে মোহবন্ধ করে রাখল, চরিত্রগুলির সঙ্গে কখনও হাসলাম, কখনও কাঁদলাম, আহা এমনও হয়? এমন করেও মানুষের কথা লেখা যায়? প্রেমে, এমনও হয়? প্লট খুবই চেনা, ভিন ধর্মের দুই মানব মানবির প্রেম, এক সাথে ঘর বাঁধা, তা কেন্দ্র করে দাঙ্গা, বিরহ বিচ্ছেদ, মেয়েটির অন্যত্র বিয়ে, আবার প্রেমের টানে একত্রিত হওয়া, যদিও সেখানেই জীবনের পরিসমাপ্তি। নমঃশূদ্র এবং গবীর মুসলমান, -- উভয়েই অচ্ছুৎ, তাদের ছোঁয়া চলে না। তাদের প্রেম হয়, তারা সমাজের চোঙরাঙানির ভয়ে সমাজের বাইরে ঘর বাঁধে। রিক্ত দুই জনের জঙ্গল আছে, নদী আছে, পরস্পরকে আগলানো আছে...
"শোন শোন সেই অপূর্ব কথা, শিমূলতলীর গাঁয়। সোজন দুলীর খেলাঘর খানি বনের তরুর ছায়। স্বজন ছাড়িয়া, বান্ধব ছাড়িয়া দুইটি তরুণ হিয়া গভীর নিশীথে বাহির হইল এ উহাকে আগুলিয়া।"
উপার্জন ছাড়া সংসার চলে কী করে? সোজনকে বেরতে হয় উপার্জনের জন্য। ব্যবসায় কিছু বেশি পয়সা উপার্জনের উদ্দেশ্যে দূর গ্ৰামে পাড়ি দেয় নতুন বেপারির সঙ্গে। দুলীর অপেক্ষা শুরু হয়। সে ঘরের দেয়ালে ফুল পাতার রঙ দিয়ে তাদের প্রেমের ইতিহাস আঁকে। আজিকাল কালে ফিরে এসে যেন অতীতের দিনগুলি দুলীর পরাণে বুলাইয়া যায় কত না রঙের তুলি সারাদিন দুলী ঘরের দেওয়ালে তারি ছবি আঁকে একা কোথাও ঘষিয়া সিঁদুরের গুঁড়ো কোথা কাজলের রেখা।
দীর্ঘদিন পাশাপাশি বসবাসকারী গাঁয়ের মানুষের ক্ষেপানো হয় সোজন দুলীর একসাথে থাকা কে কেন্দ্র করে, নায়েব যোগায় ইন্ধন।সেই নায়েব, যার কাছে মুসলমান এবং নমঃশূদ্র উভয়েই অচ্ছুৎ। নেমে আসে দাঙ্গার আগুন, নিধন পর্বে গাঁ ছারখার হয়ে যায়। " মরা শিশু তার ঘুমন্ত মার অধরেতে দিয়ে চুমো, কাঁদিয়া কহিছে জনম দুখিনী
পিছু ছাড়ে না দুর্ভাগ্য, নায়েবের নালিশে নারী হরনের মোকদ্দমায় ধরা পড়ে সোজনের আট বছরের জেল হয়। দুলীকে বিয়ে দেওয়া হয় অন্য পুরুষের সাথে, সোজন ফিরে দেখে দুলী অন্যের ঘরণী। দুলালীর কথা সুধায়ো না কেহ সোঁতের সেহলা ভাসিয়া নদীর ধারে কোন পথ দিয়ে কোথায় গিয়েছে আজিকে সে সব ভুলে যেতে দাও তারে।
ওদিকে নমঃশূদ্র আর মুসলমানদের মধ্যে দাঙ্গা বাধানোর রূপকার নায়েব খুন হয়ে যায় দুই দাঙ্গাকারীরই হাতে। অন্তিম পরিনতি হয়,-- কদিন পরে দেখল সবে বিলের ধারে খুঁড়ে নায়েবমশায় অর্ধেক দেহ ঘুমিয়ে কবর জুড়ে
কিন্তু সোজন? দুলী হারিয়ে সে থিতু হতে পারে না, মাঝিদের সাথে সে ঘুরে বেড়ায়, বেদে হয়েছে সে। দুলীর কাছে ভিক্ষা চায় দুলীকেই, কিন্তু দুলী ফিরিয়ে দেয়। দুলী সমাজ সংস্কারে বারবার আটকে যায়, ঘর ছেড়ে সে বেরতে পারে না প্রেমের কাছে। এ যে বিষের জ্বালা.. তারপরেও প্রেমের জয় হয়, হ্যা দুলী আসে সোজনের কাছে, সব কিছু ছেড়ে, এক হয় তারা, ফুরিয়ে যায় পরস্পরের মধ্যে।
সোজনবাদিয়ার ঘাট শুধু এক কাব্যগ্রন্থ নয়, সার্থক এক রূপকথা চিরন্তন এক প্রেমের আখ্যান। প্রতিটি ছত্র, প্রতিটি চরিত্র যেন কানে কানে গেয়ে যা তাদের কথা, যেন চোখের সামনে ঘটে চলে ঘটনাগুলি। সর্বকালে সর্বযুগে এর আবেদন একই। মেলায়, প্রেম মেলায়ই, হয়ত অন্য কোন লোকে..
জসীম উদদীন এর লেখা কাব্যোপন্যাস। পল্লীগাঁয়ে বেড়ে ওঠা দুই কিশোর-কিশোরীর প্রেম কাহিনী। সোজন মুসলমানের ছেলে আর দুলী নমুর মেয়ে। ছোটবেলায় একসাথে খেলাধুলা করে বেড়ে উঠতে উঠতে কখন যে একে অন্যের মনের ঘরে ঠাঁই করে নেয় তা তারাও জানে না। তাই তো যখন দুলীর অন্য জায়গায় বিয়ে হতে নেয় সে কিছুতেই রাজি হয় না। এতটুকুন দুলী সোজনকে বলে মনের কথা, তাঁর হাত ধরে পৃথিবীর অপর প্রান্তে চলে যাবার প্রত্যয় করে। এরপরে দুইজনে পা বাড়ায় অজানার পথে। বড় মানুষদের জাতি-ধর্ম ভেদ কিন্তু পিছু ছাড়ে না ওদের। শেষ পর্যন্ত মিলন হয় ওদের কিন্তু সে বড় নিঠুর মিলন।
কাহিনি হয়তো সাধারণ কিন্তু পল্লীকবির অসাধারণ বর্ণনাভঙ্গি, ছন্দময় সংলাপ, উপমা, প্রকৃতির বর্ণনা সবমিলিয়ে কাব্যগাঁথাটির এমন দারুণ ব্যঞ্জনা মনে অন্যরকম ভাললাগা অথচ বিষাদময় ঘোর তৈরি করে। জসীম উদদীন আমার অন্যতম প্রিয় লেখক। 'নকশী কাঁথার মাঠ' এর মতো 'সোজন বাদিয়ার ঘাট'ও আমার প্রিয় বইয়ের তালিকায় উপরে থাকবে।
বস্তাপচা প্রেম কাহিনি, কবি ধর্মীয় ব্যাপার স্যাপার এতটা গুলিয়ে ফেলেছে যে আর বলার মত না। গ্রাম বাংলার কিছু সুন্দর বর্ণনার জন্য দুই তারা। সাথে হাশেম খানের প্রেমপ্রীতির বিশেষ পোজওয়ালা ইলাস্ট্রেশনগুলোও মার্কামারা হয়েছে।
'বনের মাঝে বনের লতা, পাতায় পাতায় ফুল, সেও জানে না নমু মেয়ের শ্যামল শোভার তুল। যে মেঘের জড়িয়ে ধরে হাসে রামের ধনু, রঙিন শাড়ী হাসে যে তার জড়িয়ে সেই তনু।'
অনেক আগের পড়া। সোজনের স্বগতোক্তি খুব হৃদয় বিদারক। প্রেমে পাওয়া না পাওয়া - নিয়তির লেখাই মনে হয় কেবল। সোজনের আর্তনাদের সুর শুনতে পাওয়া গেলেও দুলীর দুঃখ নৈঃশব্দ্যে ডুবে যায়।