Munier Chowdhury (Bangla: মুনীর চৌধুরী), born in 1925 at Manikganj, Dhaka, hailed from Noakhali, was a Bangladeshi educationist, playwright, literary critic and political dissident. He's the brother of Kabir Chowdhury.
Munier studied English literature for his Bachelors degree (with honors, 1946) and Masters (1947) at the Dhaka University. In 1954, he completed a second Masters degree, summa cum laude, in Bengali. In 1958, he obtained another Masters in Linguistics from Harvard University. He joined the Dhaka University in 1950 and taught both in English and Bengali language departments between 1950 and 1971. Students flocked to his class, many from other departments, as he lectured in his inimitable fashion on Mir Mosharraf Hossain, Bankim Chandra and Rabindranath, among others. To this day he is fondly remembered as an extraordinary teacher who was able to kindle in his students a genuine love for great literature. He was honored with Bangla Academy Award in 1962.
Munier Chowdhury actively participated in the Language Movement of 1952, and was imprisoned by the Pakistan government. He wrote his famous symbolic drama, Kabar (The Grave) in Bengali during his imprisonment. 'Kabar' is a shadow of Irwin Shaw's 'Bury the Dead'. He also fought against any type of cultural repression during the late 1950s and 1960s. In 1967, he protested the Pakistan government's ban on Tagore songs on radio and television. In the late 1960s there was a movement in Pakistan to replace the Bengali language alphabet with the Arabic alphabet. As a linguist and writer, Munier Chowdhury protested this move to undermine the native language of East Pakistan. He actively participated in the non-cooperation movement during the early part of 1971 and renounced his award Sitara-e-Imtiaz (awarded by Pakistan Govt in 1966).
After the Pakistani army crackdown in 1971 in the Dhaka University area from which Munier Chowdhury luckily escaped like many, he moved to his parents' house but he couldn't mentally adjust to the idea of fleeing from his beloved motherland. He preferred to stay back and surrendered to his 'fate'.
On 14 December, 1971 Munier Chowdhury, along with a large number of Bengali intellectuals, educators, doctors and engineers, was kidnapped, later tortured and executed by the Pakistan Army and its Bengali collaborators Al-Badr, Al-Shams, only 2 days before the end of the Liberation War. His dead body could not be identified. A witness who survived the killing had narrated how he recognized Munier as he screamed while his fingers were chopped off. "Have mercy" that is all Munier had said. As this was being done the butcher said, "write your famous essays on Rabindranath Tagore." That was the last that anyone saw of him.
শুরুটা পানিপথের প্রান্তর। এপাশে বাগপথে মুসলিম শিবির, অন্যপাশে মারাঠাদের কুঞ্জুরপুর দুর্গ। দুপক্ষের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হবে যে-কোনো সময়। দুপক্ষেরই চলেছে যুদ্ধের প্রস্তুতি-পরিকল্পনা। মুসলমানদের পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন কাবুলের অধিপতি আহমেদ শাহ আবদালি, রোহিলার নবাব নজীবদ্দৌলা, অযোধ্যার নবাব সুজাউদ্দৌলা এবং মেহেদী বেগ-কন্যা জোহরা বেগম। অন্যদিকে মারাঠাদের পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বালাজি রাও পেশোয়া, ত্রিশূল বাহিনীর রঘুনাথ রাও, সদাশিব রাও এবং ইব্রাহিম কার্দি।
মুসলিম পক্ষের জোহরা বেগমের স্বামী হিন্দুদের পক্ষের সেনাপতি ইব্রাহিম কার্দি। জোহরা বেগম বারবার ছদ্মবেশ ধারণ করে মারাঠা শিবিরে প্রবেশ করে স্বামী ইব্রাহিম কার্দিকে ফিরিয়ে আনার জন্য। কিন্তু ইব্রাহিম কার্দি নিজ সিদ্ধান্তে অনড়। আদর্শগত কারণেই জোহরা বেগমকে গভীরভাবে ভালোবাসলেও ফিরে আসতে নারাজ। কারণ ইব্রাহিম কার্দির যখন কোনো কর্মসংস্থান ছিল না তখন হিন্দু মারাঠাই তাকে চাকরি দিয়েছে এবং পদোন্নতিতে সেনাপতি বানিয়েছে। অতএব, মারাঠাদের বিপদের দিনে তাদের ফেলে সে চলে আসবে না। অন্যদিকে জোহরা বেগমও তার জায়গায় অনড়। হিন্দু-মুসলিম দুপক্ষই পরস্পরকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার আক্রোশে ক্রমশ ফেটে পড়ে। এমতাবস্থায় হঠাৎ করে অতর্কিত যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়।
প্রতিটা যুদ্ধ মানেই মৃত্যু, ধ্বংস, বিভীষিকা। এই যুদ্ধেও বয়ে যায় রক্ত সমুদ্র। যে সমুদ্রের জলকে কালি করেই লিখা হয় এর পরিসমাপ্তি, এক বেদনাময় উপাখ্যান, দর্শক সয়ং পৌঁছে যায় রক্তাক্ত প্রান্তরে...।
আমি নাটক পড়ি না। এই নাটকটা বাধ্য হয়ে পড়া হয়েছে। পাঠ্যসূচিতে থাকলে আপনি না পড়ে যাবেন কই। নাটকটা পানিপথের যুদ্ধ নিয়ে। মুসলমানরা আহমেদ শাহ আব্দালীর নেতৃত্বে একত্রিত হয় হিন্দু মারাঠাদের বিরুদ্ধে। সমস্যা হচ্ছে মারাঠা সেনাপতি ইব্রাহীম কার্দিকে নিয়ে। বেচারা আদর্শগত কারণে বিপদের বন্ধুকে ফেলে নিজের ধর্মের লোকদের বিরুদ্ধচারণ করছেন। কিন্তু বিপদ হচ্ছে তার ভালবাসার মানুষ তো আব্দালী শিবিরে। এখন কি করবে ইব্রাহীম কার্দি? নাটকটার বিষয় আদর্শ হলেও আপনাকে ভারতবর্ষের তৎকালীন ইতিহাস নিয়ে আগ্রহী করে তুলবে।
বই : রক্তাক্ত প্রান্তর লেখক : মুনীর চৌধুরী প্রকাশক : বিভাস প্রকাশনী ধরণ : নাটক ( ট্র্যাজেডি ) পৃষ্ঠা সংখ্যা : ৯৬ প্রচ্ছদ : কামরুল প্রথম সংস্করণ : ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সংস্করণ : ফেব্রুয়ারি ২০১৮ (প্রথম প্রকাশ) মুদ্রিত মূল্য : ১২৫ টাকা ISBN : 978-984-889-920-2
পাঠ বিশ্লেষণ :
১৭৬১ সালের পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধের পটভূমি নিয়ে মুনীর চৌধুরী সৃষ্টি করেছেন তার অমরকীর্তি 'রক্তাক্ত প্রান্তর'। ভারতবর্ষের আদিপত্যকে উপলক্ষ্য করে মারাঠা আর মুসলিম শিবির যুদ্ধে লিপ্ত হয়। কিন্ত নাটকে নাট্যকার যুদ্ধকে উপেক্ষা করে বরং বিখ্যাত চরিত্রগুলোর অন্তক্ষরণ-বেদনাই প্রাধান্য দিয়েছেন।
মারাঠা শিবির একপাশে অন্য পাশে মুসলিম শিবির। যেকোন সময়ই দুপক্ষের যুদ্ধ শুরু হবে হবে অবস্থা। মুসলিমদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন কাবুলের অধিপতি আহমেদ শাহ আবদালি্। অন্য দিকে মারাঠার পোশেয়ারের বালাজি রাও। যদিও মারাঠা রাজের চেয়ে তার সেনাপতি ইব্রাহিম কার্দির প্রভাবই নাটকে ফুটে উঠে। ঠিক তেমনি মুসলিম বাহিনীর মেহেদী বেগ কন্যা জোহরা বেগমকে নিয়েই নাটকের দৃশ্যায়নের আবর্তন। জোহরা বেগম ছদ্মবেশ ধারণ করে মন্নু বেগ চরিত্রায়নে মুসলিম বাহিনীর হয়ে লড়ে যাচ্ছেন। আবার মারাঠা শিবিরে প্রবেশ করে নিজের স্বামী ইব্রাহিম কার্দিকে মুসলিম শিবিরে যুক্ত হতে বারবার অনুরোধ করেন।
কিন্ত ইব্রাহিম কার্দি আদর্শগত কারণেই বারবার নিজের স্ত্রীকে ফিরিয়ে দেয়। কারণ, ইব্রাহিম কার্দিকে যখন সব জায়গা থেকে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছিল তখন মারাঠা বাহিনীই তাকে আগলে নেয় । আসীন করে সেনাপতির পদে। সেজন্যেই নীতিগত দিক বিবেচনায় সে মারাঠা বাহিনীর হয়ে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। হেরে যায় মারাঠা বাহিনী। হিন্দু - মুসলিম নির্বিশেষে হত্যাকান্ড ও বিশাল ক্ষয়ক্ষতির তোপে পরে।
এছাড়াও নাটকের রোহিলার নবাব নজীবউদ্দৌলা, অযোধ্যার নবাব সুজাউদ্দৌলা, গুপ্তচর আতাখাঁ যে 'অমর' ছদ্মনামে ঘুরে বেড়ায়, নজীবউদ্দৌলার স্ত্রী জরিনা বেগম সহ বশির খাঁ ও রহিম শেখ নামে আবদালীর দুই দেহরক্ষীর চরিত্রায়ন ফুটে উঠেছে। দিলীপ নামের মারাঠা যুবকের সংলাপ বর্তমান ভ্যাগাবন্ড যুবকদের মতন যা নাটকে খানিকটা রম্য সন্ঞ্চার করে। আবার, রহিম ও বশিরের মধ্যেকার সংলাপ ও চরিত্রায়ন সে সময়ের সাধারণ জনগণের দৃষ্টিভঙ্গির রুপায়ন মাত্র।
মূলত মুনীর চৌধুরী নাটকের চরিত্রদের মধ্যেকার কথোপকথন, আবেগ, ভালোবাসা, গম্ভীর ও রসাত্মক সংলাপের সংমিশ্রণ নাটকটি কালজয়ী ক্লাসিকে পরিণত করে। আমার প্রিয় দুটো সংলাপ,
✦ " মরণ যেখানে বাসা বেঁধেছে, তার নাম কারাগার নয়। " ✦ "মানুষ মরে গেলে পঁচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়। "
ব্যক্তিগত মন্তব্য :
প্রথমেই বলে নিই নাটকটির উৎস কায়কোবাদের 'মহাশ্মশান কাব্য'। কিন্ত এর প্লটগুলো রোমান্টিক ট্র্যাজিক ঘরানার। তিন অঙ্ক ও আটটি দৃশ্যের নাটকটির বেশির ভাগই ট্র্যাজিডির ছোঁয়া। ছোট্ট কলেবরের হওয়ায় অনেকগুলো চরিত্রের গভীরতা অনুভব করা কঠিন। ইতিহাস আশ্রিত হওয়া সত্ত্বেও ইতিহাস নির্ভর না হয়ে চরিত্রগুলোর অন্তঃস্থ অনুভূতির বিস্তৃতি দেখিয়েছেন। যদিও এটি নাটকের সীমাবদ্ধতা নয় বরং একে নতুনত্ব দিয়েছে। কারণ, নাট্যকার নিজেই বলেছেন, " আমি নাটকের বশ, ইতিহাসের দাস নই। "
"মানুষ মরে গেলে পচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়" চিরঅমর এই উক্তিটি রক্তাক্ত প্রান্তরের। রোমান্টিক- ট্রাজেডির এ এক অনন্য উপাখ্যান। স্কুল পাঠ্য হওয়ায় সেই বয়সে এর সাহিত্য মূল্য বুঝতে পারিনি। বাংলা সাহিত্যের ঝুলিতে এমন নাটক আর কখনো যোগ হবেনা।
Don't exactly remember the story line as it was a read for school lol. I just vaguely remember its being a religious struggle between the Hindus and the Muslims.
ঐতিহাসিক 'পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধে'র অবলম্বনে রচিত। মুসলিম বনাম মারাঠা বাহিনীর যুদ্ধকালীন সময়ে স্ত্রী মন্নু বেগ বা জোহরা বেগম মুসলিমদের পক্ষ হয়ে, অন্যদিকে স্বামী ইব্রাহিম কার্দি মারাঠা'দের পক্ষ হয়ে মুখোমুখি যুদ্ধে অবস্থান করেন।
এতে তাঁদের পরষ্পরের প্রতি শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসার টানে ছদ্মবেশ ধারণ করে দেখা করে, একে অন্যকে বুঝানোর চেষ্টা, কিন্তু যুদ্ধের সেনাপতি হিসেবে অনড় অবস্থান!
নাটকটি এক রোমাঞ্চকর ���্রাজেডির মধ্যে শেষ হয়।
মানুষ মরে গেলে পঁচে যায়। বেঁচে থাকলে বদলায়। কারণে-অকারণে বদলায়।
"আপনি দার্শনিক। বুদ্ধি দিয়ে সবকিছু বিচার করতে অভ্যস্ত। আমি নারী। আমি হৃদয় দিয়ে বিশ্ব জয় করবো।
বই-রক্তাক্ত প্রান্তর লেখক-মুনীর চৌধুরী গঠন- বাংলা নাটক
স্বাধীনতাপূর্ব বাংলাদেশের একজন তপস্যাশুদ্ধ, বিশ্বমনস্ক নাট্যকার হলেন মুনীর চৌধুরী।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ের নব জাগ্রত ভাবনায় শিল্পবোধে যারা অবদান রাখেন তাদের মাঝে অন্যতম হলেন এই মুনীর চৌধুরী। তিনি ছিলেন একজন সফল শিক্ষক,নাট্যকার,সমালোচক ও দক্ষ অনুবাদক।বাংলাদেশের নাট্যসাহিত্যে মুনীর চৌধুরীর অবদান সর্বাধিক বলে বিবেচিত।
রক্তাক্ত প্রান্তর একটি ঐতিহাসিক নাটক।যা পানি পথের তৃতীয় যুদ্ধের পটভূমিতে নির্মিত।যুদ্ধ সম্মিলিত নাটক হলেও নাট্যকার তার দক্ষতার আলোতে যুদ্ধবিরোধী চেতনাকে তুলে ধরেছেন। নাটকটি মূলত তিন অঙ্কের আটটি দৃশ্যে তুলে ধরা হয়েছে। নাটকটিতে যুদ্ধের পটভূমি এবং ট্রাজেডিকে তুলে ধরা হয়েছে।আমার কাছে বেশ রোমান্টিক ট্রাজেডি নাটক মনে হয়েছে।
যুদ্ধের ময়দান যার একপাশে অবস্থান করছে মুসলমান বাহিনী এর অন্যপাশে মারাঠা বাহিনী।যুদ্ধটা যে মুসলাম আর হিন্দুধর্মের তা বলার অবকাশ রাখে না। একদিকে মুসলমান বাহিনীকে নেতৃত্ব দিচ্ছে আহমদ শাহ আবদালী আর অন্যপাশে বালাজী রাও পেশোয়া মারাঠা বাহিনীর নেতৃত্বদান করছেন।রক্তাক্ত প্রান্তর একটি নায়িকাপ্রধান নাটক।যুদ্ধের পাশাপাশি এই নায়িকার মাধ্যমে নাট্যকার এই নাটকের স্বার্থকতার প্রকাশ ঘটান।নাটকটি পাঠকালে পাঠকগন নবাব নজীবদ্দৌলা,সুজাউদ্দৌলা, আহমদ শাহ আবদালী,আতা খাঁ,মন্নুবেগ,হিরণবালা নামক চরিত্রের সাথে পরিচিত হবেন। আর এই চরিত্রগুলোর মাঝেই আছে নাটকের ছদ্মবেশী নায়িকা জোহরা বেগম।
ইব্রাহিম কার্দি হলেন জোহরা বেগমের স্বামী। গত সময়ে ইব্রাহিম কার্দি একটা কাজের খোঁজে দাঁড়ে দাঁড়ে ঘুরেছেন কিন্তু কোনো কাজ জুটে নি।তিনি সব জায়গায় ব্যর্থ হয়ে মারাঠা বাহিনীতে আশ্রয় খুঁজে পান। আর এই মারাঠাদের হাতে খুন হয় জোহরার পিতা মুসলমান অধিপতি। আর সেই সূত্র ধরে মারাঠা আর মুসলমানদের দ্বন্দ লেগেই ছিলো যা পানি পথের তৃতীয় যুদ্ধের মাধ্যমে মুসলমানরা বিজয়ী হয়। এখানে জয় -বিজয় কে নাট্যকার বড় করে না দেখিয়ে, দেখিয়েছেন যুদ্ধে জেতা-বিজেতা কারোর কোনো লাভ হয় না ক্ষতি ছাড়া। যুদ্ধ মানেই হত্যা-ধর্ষণ-লুটপাট-লুণ্ঠন যা কখনোই ভালো কিছু বয়ে আনে না।
জোহরা বেগম মুসলমান শিবিরে থেকে যুদ্ধ করে মারাঠা শিবিরের বিপক্ষে যেখানে থাকে তার প্রাণপ্রিয় স্বামী ইব্রাহিম কার্দি।ভয়ংকর যুদ্ধে হাজার হাজার, লক্ষ-লক্ষ প্রাণ যায় ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ব্যাপক। যা লক্ষ্য করে মুসলিম অধিপতি আহমদ শাহ আবদালী বিজয় উল্লাসকে কিছুদিনের জন্য স্থগিত করেন। কারণ, বিপক্ষ দলের যেমন ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি হয়েছে তেমনি তাদের নিজেদেরও ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি হয়েছে। যুদ্ধের ময়দানের এমন চিত্র দাঁড়িয়েছিলো যে- শত্রুমিত্রকে আলাদা করার কোনো উপায় ছিলো না।যার পরিপ্রেক্ষিতে আহমদ শাহ আদেশ করেন- ধর্ম চিহ্নিত অনুযায়ী তাদের সৎকারের ব্যবস্থা যেনো করা হয়।
অন্যদিকে, যুদ্ধশেষে আতা খাঁ তার প্রেয়সী হিরণবালার লাশ কাধে করে নিয়ে রাজসভায় উপস্থিত হয়ে জানায় ইব্রাহিম কার্দি এখনো বেঁচে আছেন।যার প্রেক্ষিতে জোহরা পাগল প্রায় হয়ে তার মুক্তি নিয়ে ছুটে যায় তার কাছে।কিন্তু, সেখানে যেয়ে তিনি তাকে জীবিত ফিরে পান নি এবং নাট্যকার জোহরার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে রক্তাক্ত প্রান্তরের উপসংহার টানেন এবং জোহরার হৃদয়ের রক্তক্ষরণের মাধ্যমে ট্রাজেডি নির্মাণ শিল্পসফল রূপ দান করেন।
আপনারা যারা বাংলা নাট্যসাহিত্যের এই চমৎকার নাটকটি এখনো পড়েন নি।তারা সময় সুযোগ মিলিয়ে পড়ে নিতে পারেন। খুব চমৎকার একটি নাটক,আপনার ভালো লাগবে আশা রাখছি।
এটা আমদের কলেজ লাইফে পাঠ্যই ছিল। তিন অংক ৯ পর্বে লেখা এই নাটক বহুবার পড়া। প্রায় ৮ বছর পর অবশ্য যখন আবার পড়েছি তখন একাডেমিক পারপাস নেই। নাটকটি মুনীর চৌধুরীর প্রথম প্রকাশিত লেখা। ১৭৬১ সালে দিল্লির উপর আধিপত্য বিস্তার নিয়ে হিন্দু-মুসলিম বিরোধের চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য আফগান আহমদ শাহ আবদালির নেতৃত্বে মুসলিমরা এবং হিন্দু পতাকাধারী মারাঠারা পানিপথে মিলিত হয়। তৃতীয় পানিপথের যুদ্ধই এই নাটকের পটভূমি। যুদ্ধের পটভূমিতে যুদ্ধবিরোধী মনোভাব তুলে আনা হয়েছে নাটকটিতে। নায়ক-নায়িকা ইব্রাহিম কার্দি, জোহরা বেগম। নায়ক ঐতিহাসিক চরিত্র হলেও নায়িকা কাল্পনিক। আরো একটা জুটি পাঠকের দৃষ্টি কাড়বে হীরণবালা-আতা খাঁ। "জানোয়ার খায় জানোয়ারের রক্ত" শুরুর দিককার এই কটা লাইনে যুদ্ধরতদেরকে জানোয়ারের সাথে তুলনাটা ছিল পুরো নাটকের মূলভাবের ফোরশ্যাডোয়িং। ইব্রাহিম কার্দি ফরাসিদের অধীনে প্রশিক্ষিত যোদ্ধা। মারাঠারা তাঁকে সসম্মানে সেনাধ্যক্ষ এর পদ দেয়। তাই কৃতজ্ঞতা বশত তিনি নিজ ধর্মের মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পেছপা হন না। তার স্ত্রী জোহরা বেগমের পিতাকে মারাঠারা খুন করে, ফলত মুসলিম শিবিরে যোগ দেন তিনি। বিরোধী শিবিরে অবস্থান করা স্বামী স্ত্রী এর প্রেম, অহং, আর ভালোবাসার দ্বন্দ্ব মিলিয়ে রক্তাক্ত প্রান্তর ঐতিহাসিক নাটক নয়, বরং স্বার্থক ট্রাজেডি। সংলাপ নাটকের প্রাণ। "যে অবধ্য সে শত্রু নই", " মরণ যেখানে বাসা বেঁধেছে তার নাম কারগার নই", "মানুষ মরে গেলে পঁচে যায় বেঁচে থাকলে পালটায়", " যে ফিরে যাবে, সে হবে বিশ্বাসঘাতক, ইব্রাহিম কার্দির লাশ" এমন কতো যে সংলাপ আপনার মনে জায়গা কাটবে তার ইয়ত্তা নেই। যুদ্ধের উত্তেজনার এড্রিনালের ক্ষরণ কমানোর দায়িত্ব ছিল সুজাউদ্দৌলা চরিত্রটির কাঁধে, অমর নামক গুপ্তচর চরিত্রটি বাকপটুতায় জন্ম দেয় হাস্যরসের, নজীব উদ দৌলার চরিত্রে মিশে আছে সাফল্যকামী এক অন্ধের প্রতিরুপ। ৩য় অংকের ২য় দৃশ্যের অমরের মুখে, "মরে গেছে। আমি যখন তাকে খুঁজে পেলাম, সে মরে পড়ে আছে।" - সংলাপটি করুণরসে কার্দি-জোহরার পরিণতিকেও যেন হার মানায়। যদিও নাটকটা ঐতিহাসিক না তবে ইতিহাসের পটভূমিতে রচিত। বেশ কিছু জায়গায় ইতিহাস বেশ ভালোই বিকৃত হয়েছে। বিশেষত সুজাউদ্দৌলা চরিত্রটি যত ইতিবাচক ভাবে তুলে ধরা হয়েছে ব্যক্তি সুজাউদ্দৌলা তেমন ছিলেন না। নাটকের কিছু অংশে বেশ অতিনাটকীয়, বাগাড়ম্বরে পূর্ণ। সেসব অংশে কাহিনির গতি কিছুটা নড়বড়ে ঠেকেছে।
মুনীর চৌধুরীর 'রক্তাক্ত প্রান্তর' নাটকটি ১৭৬১ সালের পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধকে কেন্দ্র করে লেখা হলেও, এর মূল উপজীব্য যুদ্ধ নয়, বরং মানবিক সম্পর্ক, আত্মত্যাগ ও বিশ্বাসের দ্বন্দ্ব । মুসলিম নেতা আহমেদ শাহ আবদালি ও মারাঠা সেনাপতি ইব্রাহিম কার্দির মুখোমুখি অবস্থানে, ইব্রাহিমের স্ত্রী জোহরা বেগম (মন্নু বেগ) ছদ্মবেশে মুসলিম বাহিনীর হয়ে স্বামীকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন । কিন্তু আদর্শ ও কৃতজ্ঞতার দ্বন্দ্বে ইব্রাহিম অনড় থাকেন ।
নাটকটি যুদ্ধের রক্তাক্ত প্রান্তরে দাঁড়িয়ে প্��েম, নৈতিকতা, আত্মপরিচয় ও হতাশার সংবেদনশীল চিত্র আঁকে । সংলাপে মেলে দার্শনিক গভীরতা ও আবেগের রসায়ন:
"মানুষ মরে গেলে পঁচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায় ।"
এই এক উক্তিতেই নাটকের সারমর্ম যেন ধরা পড়ে—জীবন পরিবর্তনশীল, আর ভালোবাসা সবকিছুর ঊর্ধ্বে হলেও সবকিছু জয় করতে পারে না ।
স্কুল-কলেজের সিলেবাসে আরও 'আউট বই' অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। একটা মাত্র নাটক দিয়ে সাহিত্যের প্রতি আকর্ষণ তৈরি হবার না। মুখস্ত বিদ্যার কাছে নাস্তানাবুদ হয়ে কবিতা-নাটক-গল্পের প্রতি বিতৃষ্ণা তৈরি হয় কাঁচা বয়সেই।
মানুষ মরে গেলে পঁচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়, কারনে অকারণে বদলায়.... নাট্যকার বলেছিলেন, আমি নাটকের বশ, ইতিহাসের দাস নই এরপর আর কি কিছুটা ইতিহাস আর কিছু নাটকীয় অবতারণায় রচিত হয় এই নাটক। পাঠসূচির অন্তর্ভুক্ত থাকায় পড়া হয়েছিল কিন্তু পড়া শেষে এর মুগ্ধতার রেশ এখনও রয়ে গিয়েছে।
"মরণ যেখানে বাসা বেঁধেছে, তার নাম কারাগার নয় " আমার পড়া শ্রেষ্ঠ বিয়োগাত্মক নাটকগুলির একটি। ইব্রাহীম কার্দী দেশ, কাল ছাপিয়ে আমার সবচেয়ে প্রিয় চরিত্রগুলির একটি।
পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ অবলম্বনে রচিত এই নাটক আমাকে শেষ পর্যন্ত এতটাই আবেগপ্রবণ করে দিয়েছিল যে আমি না কেঁদে পারিনি। লেখকের মৃত্যুও আমায় কাঁদায় —কতটা কষ্ট তাকে সইতে হয়েছিল।
এই বই নিয়ে বলার কিছু নাই। নাটকের সাথে আমাদের দেশের ছাত্রদের পরিচয় শুরু হয় কবর দিয়ে, সেটা পূর্ণতা পায় রক্তাক্ত প্রান্তরের বিউলির মাঠে।
ঐতিহাসিক নাটক বলে আমি ইহাকে চিনি না। আমার কাছে এটি একটি সাইকোলজিকাল রোমান্টিক ট্রাজেডি। নাটকের কাহিনী যতই নাটকীয় হোক না কেন, তা থেকে জীবনের কঠিন সিদ্ধান্তে মানুষের দ্বিধা-দ্বন্দে পড়ে নাকানি-চুবানি খাওয়া খুব জোরেশোরেই টের পাওয়া গেছে।
উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে নাটক জুড়ে খাতায় লিখে রাখার মতো অনেক বাণী আছে। এর মধ্যে সবচে' বিখ্যাত সম্ভবত, 'মানুষ মরে গেলে পঁচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়......'।
এখনো মাঝে মাঝে জোহরার আত্মত্যাগের কথা মনে পড়লে পুরো কলেজ জীবনের থ্রিলের ছবিগুলো চোখে ভেসে উঠে। তবে এই নাটকে হাসি-ঠাট্টার খোরাকও কম নেই। দিলীপের নেশায় চুর-চুর হয়ে যাওয়া ট্রেড-মার্ক ডায়ালগ তো আধুনিক Flirt এর ক্ল্যাসিক রূপ।
Recommend করার কিছু নেই, কারণ কলেজ জীবনে এই নাটক আপনাকে তাড়া করবেই। :)