পত্রাবলী ব্যক্তিমানসের মুকুর। কিন্তু শুধুমাত্র এই মুকুরকেই কাজে লাগিয়ে যে রচিত হতে পারে কোনও স্বয়ংসম্পূর্ণ উপন্যাস, কেন কে জানে, এ-কথা এতকাল ভাবেননি কোনও কথাকার। আলাদাভাবে লেখা চিঠি যে ‘পত্রসাহিত্য’ হয়ে উঠেছে, এবং সেই সাহিত্যের মধ্য দিয়ে স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন কোনও-কোনও মনীষী-লেখক, এমন উদাহরণ অবশ্য রয়েছে। কি স্বদেশে, কি বিদেশে। আবার, উপন্যাসের অন্তর্গত বিশেষ কোনও চরিত্রের বিশেষ কোনও পত্র রেখে গেছে স্থায়ী ছাপ, এমন দৃষ্টান্তও সাহিত্যের ইতিহাসে অলভ্য নয়। কিন্তু শুধুমাত্র পত্র-বিনিময়ের মাধ্যমেই রচনা করা একটি পূর্ণাঙ্গ ও কৌতুহলকর উপন্যাস, এ-ঘটনা সাহিত্যের ইতিহাসে, বোধ করি, অভিনব এক পদক্ষেপ।শুধু সেইদিক থেকেই ঐতিহাসিক গরিমার যোগ্য বুদ্ধদেব গুহর এই পত্রোপন্যাস—‘সবিনয় নিবেদন’। সুখের কথা, শুধু আঙ্গিকগত নতুনত্বের জন্যই এ-উপন্যাস এক বিশিষ্ট কীৰ্তিচিহ্ন রূপে বন্দিত হবে না, হবে এর সামগ্রিক আবেদনের জন্যও।বুদ্ধদেব গুহর উপন্যাসে দীর্ঘকাল ধরেই চিঠিপত্রের একটি আলাদা স্থান। ‘একটু উষ্ণতার জন্য’র ছুটি ও সুকুমারের অথবা ‘মাধুকরী’র পৃথু ও কুর্চির চিঠির কথা এ-প্রসঙ্গে অনেকেরই মনে পড়তে পারে। ব্যক্তিজীবনেও চমৎকার চিঠি লেখেন বুদ্ধদেব গুহ। কিন্তু এই নতুন উপন্যাসে। পত্রবিলাসী কথাকার যেন নিজেই নিজেকে ছাপিয়ে উঠেছেন।শিক্ষিত, স্বাবলম্বী এবং উদারমনা এক নারী ঋতার সঙ্গে বেতলার জঙ্গলে এক চরম বিপন্ন মুহূর্তে এক-ঝলক দেখা হয়েছিল ঝকঝকে, ব্যক্তিত্ববান, টাইগার প্রোজেক্ট অফিসার রাজর্ষি বসুর। কলকাতায় ফিরে বিপদ্ত্রাতা এই মানুষটিকে আন্দাজী ঠিকানায় একটি ধন্যবাদজ্ঞাপক চিঠি পাঠিয়েছিল ঋতা। ‘সবিনয় নিবেদন’ সম্বোধন-বাহিত সেই চিঠিই শেষ পর্যন্ত এই অভাবনীয় উপন্যাসের ভিত্তিপ্রস্তর। পরবর্তী পত্র-বিনিময়ের সূচনা এই চিঠি থেকেই। শুধু দু-জন মানুষের সম্পর্ককে ধীরে-ধীরে উন্মোচিত ও সমীপবর্তীই করেনি এই পত্রাবলী, দেশ-কাল-সমসময় ও আধুনিকতারও ঘটিয়েছে স্নিগ্ধ, উজ্জ্বল, সরস প্রতিফলন।
Buddhadeb Guha (Bengali: বুদ্ধদেব গুহ) is a popular Bengali fiction writer. He studied at the well-known St Xavier's College of the University of Calcutta.
His novels and short stories are characterized by their dreamy abstractness and romantic appeal. His essays reveal the soul of a true wanderer providing some of the most beautiful renditions of travel in Bengal. His love for forests and nature provide the background for many of his novels.
A highly successful chartered accountant by profession, and an accomplished musician, Guha is very urbane in his lifestyle. He was one of the first to create characters representing easy-going, upper middle-class modern Bengali families, whom readers could identify with, and that gave him instant popularity.
He is the recipient of many awards including Ananda Puraskar, 1976; Shiromani Puraskar; and Sharat Puraskar.
The Library of Congress has over fifty titles by him. His most famous novel, according to many, is Madhukori. It is considered a milestone in Bengali literature. He is also the creator of Rijuda, an imaginary character who moves about in jungles with his sidekick Rudra. The jungles that he wrote about were mainly in Eastern India.
চিঠির পর চিঠি, চিঠির উত্তরে পাল্টা চিঠির মধ্য দিয়ে উপন্যাসের কাহিনী কি সুন্দর বয়ে চলা নদীর মত করে শান্ত কখনো কখনো উত্তাল হয়ে এগিয়ে চলেছে এবং ক্ষণেই ক্ষ্ণেই তার কাউকে চিঠি লিখতে চাইবার এক ইচ্ছার প্রবলতা তৈরি করে দেয়া! এরকমই চিঠি সাহিত্যের উপর লেখা "মেমসাহেব" পড়ে প্রচন্ড হতাশ হওয়ার দরূন প্রথমে সবিনয় নিবেদন পড়তে কিছুটা ভয়ই পাচ্ছিলাম। আবার না হতাশ হতে হয় এই ভেবে! তার উপর এইটা নাকি আবার প্রেমের উপন্যাস! কিন্তু না হতাশতো আমাকে হতে হয়ই নি, বরং শেষ করার পর কেন শেষ হলো এই প্রশ্নবাণে নিজেকে জর্জরিত করছি বার বার! ঘোর লেগে আছে। ঋতি আর রাজর্ষির চিঠি চালাচালি, আর তার মধ্য দিয়ে প্রেম। এরকম পত্রমিতালী এককালে হতো, আর লেখক সেই পত্রমিতালীরই সুযোগ নিয়েছেন দুই প্রান্তের দু;জন মানুষকে কাছে আনার জন্য। লুতুপুতু আর ন্যাকামি ছাড়াও, ভারিক্কি কথার মাধ্যমেও যে প্রেম হয়, তা বুদ্ধদেব গুহ খুব সুন্দর ভাবেই তুলে ধরতে পেরেছেন। আর কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর আধুনিকতাও চোখে পরার মত। বনী আর রাজরষির সম্পর্ক কিংবা ঋতির সাথে তার চিন্তাভাবনা, সমসাময়িক বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে তাদের চিন্তা, সবকিছুর মধ্যেই সেকেলে ভাব ছাড়িয়ে এক আধুনিকতার দেখা পাওয়া যায়। তবে হ্যা কিছু কিছু ক্ষেত্রে যে চিরায়ত বাঙ্গালি পুরুষের ভাব ফুটে ওঠে নি তা নয়, তবে প্রেমের ক্ষেত্রে এই চিরায়ত ব্যাপারটা থাকা খারাপ না বোধ হয়!
কি ভীষণ মিষ্টি একটা বই। বইটা যেই এই পড়বে তারেই চিঠি লিখার বা পাওয়ার ইচ্ছা নিশ্চয়ই জাগবে। এই উপন্যাসটি যে কারো মন ছুঁয়ে দিবে। এক একটি চিঠি এত বেশি আকর্ষণীয় যে মুগ্ধ হয়ে পড়ছিলাম। এমন অকৃত্রিম এত গভীর অনুভূতি প্রতিটি চিঠিতে ফুটে উঠেছে । পড়ার সময় মনেই হয়নি যে আমি একটা উপন্যাস পড়ছি মনে হয় যেন নিজের জন্যে আসা চিঠি পড়ছি। কি এক জাদুময় অনুভূতি দুইজন মানুষ পাশাপাশি বসে গল্প করছেন না, একজনের হাতে আরেকজনের হাতও নেই, দুইজন দুইপ্রান্তে বসে চিঠিতে পড়ছেন দুজনার গল্প,একজন আরেক জনকে জানতে পারছেন এই চিঠির মাধ্যমেই। ইশ এমন অনুভূতি পাওয়ার তীব্র ইচ্ছা জাগবে সবার মনে। আর আমরা এই মুঠোফোনের যুগে সবকিছুই হাতের মুঠোয়, সবকিছুই খুব তাড়াতাড়ি পেয়ে যাই আর তাই অনুভূতি কেবল হাতের মুঠোয়, মনে হৃদয়ে নেই।
বহুদিনের কাঙ্ক্ষিত একটি বই। দূরপাল্লার ট্রেনে বসে পড়েই ফেললাম। একটি ভিন্ন আঙ্গিকের প্রেমের গল্প। চিঠি চালাচালির মাধ্যমে প্রবাহমান বন্ধুত্ব। পালাম্যু এন.পির প্রজেক্ট টাইগারের সাথে যুক্ত রাজর্ষি ও কলকাতা নিবাসী তরুণী ঋতির পত্রমিতালী সম্পর্ক ঘিরে আবহমান উপন্যাস। পুরোটা জুড়েই বিদ্যমান বুদ্ধদেব গুহর ট্রেডমার্ক লেখনী। অবাধ জ্ঞান, পরিবেশ প্রকৃতির অসাধারন বর্ণনা, জীবনধারণের জটিল দর্শন, দেশ ও সমাজ ব্যবস্থার প্রতি নগ্ন কটাক্ষ। সঙ্গে একাধিকবার নিজের নাম ও পূর্বপ্রকাশিত বইয়ের উল্লেখ এবং বাঙালি সাহিত্য জগতের প্রতি স্বল্প বিরূপতা। রাজর্ষির পত্রপ্রেরীত জবানিতে প্রতিফলিত হয় সবটাই।
ছেলেটি আক্ষরিক অর্থেই বাঁচাল। এবং ঠিক এখানেই উপন্যাসটির বারংবার কক্ষচ্যুত হওয়া। পত্রমিতালী সম্পর্কটির এই একপক্ষীয় পরিণতি, দাড়িপাল্লায় কেবল রাজর্ষির ক্রমাগত অতিকথন, কোথাও গিয়ে যেন 'দিবারাত্রির কাব্য'-র হেরম্বের কথা মনে করিয়ে দেয়। ঋতির দৃষ্টিভঙ্গি যেন সেই নিরিখে অনেকটাই ম্রিয়মাণ। বইটি পড়ে তাই খুব যে আনন্দ পাই নি, বলাই বাহুল্য।
তবে দুজন বুদ্ধিদীপ্ত মানব-মানবীর সংকুলিত প্রেম, ঝগড়া এবং বন্ধুত্বের কঠিন স্বত্তাটি বেশ হালকা ছলে লিখেছেন লেখক। প্রায় তিন দশক পূর্বে লেখা একটি উপন্যাস হিসেবে, বইয়ের চরিত্রবলীর সমীকরনে আধুনিকতার ছাপ। কিছু ভালো লাগা সেখানেই। আজকালকার টেক্সট মেসেজের যুগে চিঠির মাধ্যমে এমন অনাবিল ফ্লার্টিং বেশ শিক্ষনীয়ই বটে। সঙ্গে আবার দোসর হিসেবে মানস ভ্রমণ।
তবুও আক্ষেপ এটাই যে গল্পের আপেক্ষিক অগোছালো গড়ন, কেবলমাত্র লেখনীর সৌন্দর্য দিয়ে উদ্বার হলো না। প্রেমের উপন্যাস পড়তে বসে ক্রমাগত বিরক্ত হতে হল, এটাই যা।
চিঠি পত্র এসব আগে থেকেই ভালো লাগতো, কিন্তু এতো গভীর ভাবে অনুভব কখনো করি নি, কী ভীষণ মাধুর্য, মুগ্ধতা,আবেগ, ভালোবাসা! পৃথিবীটা আবার চিঠির যুগ হোক। চিঠিতে যোগাযোগ, আগ্রহ, অপেক্ষা, আর মনের সমস্ত অনুভূতি গুলো লেখার মাধ্যমে অন্যকে জানানো সবসময়ের জন্যই সুন্দর। এই ভীষণ আবেগময় পত্রোপন্যাসটি সুপ্রিয়া, সবিনয় নিবেদন, সুচরিতাসু, অপরিচিতেষু, প্রিয়বরেষু, প্রীতিভাজনেষূ, অরণ্যদেব, কল্যাণীয়াসু, সুহৃদেষূ, সুজনেষু, উজ্জলতমাসু এসব সম্বোধনের চিঠিতে ভর্তি। শুরুটা মুগ্ধতা দিয়ে হলেও মাঝখান টায় কেমন এলোমেলো লাগছিল, সেই এলোমেলোর ঘোর কাটিয়ে উঠে আবার ভালোলাগতে শুরু করেছিলো কিন্তু শেষটা পড়ে, শেষটা এমন কেনো! মনটা খারাপ হয়ে গেলো। শুরুটা যতটা স্নিগ্ধ ছিল শেষ টা ততটাই অরুচিকর লাগলো। বই এর মোট পৃষ্ঠা ১৫৫, বই টা যদি ১৪৫ পৃষ্ঠার হতো তাহলে হয়তো কোনো অভিযোগ থাকতো না, পুরোটা গল্পে ঋতি রায় এবং রাজর্ষি বসু কে সচ্ছ নারী পুরুষ হিসেবে ভেবে এসেছি তাই হয়তো শেষ টা মেনে নিতে পারছি না, আবার এই শেষ কয়েকটা পৃষ্ঠার জন্য বইটাকে খারাপ ও বলা যায় না। বইটাতে এতো বেশি মুগ্ধতা, জ্ঞান আর জটিল কিছু শিক্ষা আছে যে ভালো লাগাটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।
অনেক প্রত্যাশা ছিল। তার কারণ, বুদ্ধদেবের প্রকৃতি-বর্ণনায় আমি মুগ্ধ ছিলাম/আছি, অন্যদিকে, শুনেছিলাম পুরো উপন্যাসটা দুজনের চিঠির ভেতর দিয়ে ব্যাক্ত হয়েছে। আগ্রহোদ্দীপক! অঞ্জন দত্ত আর নিমা রহমানের 'প্রিয় বন্ধু / গানে গানে ভালবাসা' শ্রুতিনাটকটা একগুচ্ছ চিঠিতে সাজানো, ওটা শুনেছিলাম, গেয়েছিলাম, ভার্সিটিতে ওটার মঞ্চায়নে কন্ঠ দিয়েছিলাম। তাই শুরু থেকেই গলে গেছিলাম একে পড়ার জন্য।
আদতে ওই চিঠির বিন্যাস নিরাশ করেনি, বুদ্ধদেবের প্রকৃতি-বর্ণনায় বিহার থেকে আফ্রিকার বন-শম্বর-হরিণ-বাঘ-বর্ষা সেইসমস্তও আমাকে আচ্ছন্ন করতে ভোলেনি... আপত্তি বেঁধেছে মনস্তত্ত্বে।
"রাজর্ষি কোমর ছাপানো খুলে দেওয়া নগ্না ঋতির দিকে চেয়ে ওরকম পুজো করারই ভঙ্গীতে বসে বললো, তুমি সন্ধাতা��ার চেয়েও বেশি স্নিগ্ধ এবং উজ্জ্বল, পূর্ণিমার রাতে যে মসৃণ পালকের ডানা মেলা হলুদ পাখি চাঁদের দিকে উড়ে যায় তুমি সেই পাখির চেয়েও মসৃণ; তুমি পরমা-প্রকৃতি, নারী ঋতি; তোমাকে প্রণাম..."
রাত তখন প্রায় দুটো ছুঁই ছুঁই। আমি অদ্ভুত এক তৃপ্তির ঢেঁকুর গিলতে গিলতে সিলিঙের দিকে তাকিয়ে ছিলাম, আর ভাবছিলাম 'আহ এত্ত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল'। 'সবিনয়ে নিবেদন' আমার হৃদয়কে সম্পূর্ণভাবে আলোড়িত করে তুলেছিল। আমার মগজের রক্তকনিকাগুলো এখনও উত্তেজিত। চিঠির পর চিঠি দিয়ে, শুধু চিঠি দিয়েই যে সাহিত্য রচনা করা সম্ভব, বুদ্ধদেব গুহ দেখিয়েছেন। অসাধারণ, অসাধারণ। যতবার আজকে কোন মানবীর ছাড়া মাড়িয়েছি, আমি ততবার অসহায়ের মত ঋতিকে খুঁজেছি। আর আমি যদি মেয়ে হতাম, রাজর্ষির মত কোন পুরুষের জন্য দিনের পর দিনে অপেক্ষা করতাম। এই পত্রোপন্যাসে শুধু দুজন মানুষের সম্পর্ককে ধীরে ধীরে উন্মোচিত ও সমীপবর্তীই করেনি এই পত্রাবলী, দেশ কাল সমসময় ও আধুনিকতারও ঘটিয়েছে স্নিগ্ধ, উজ্জ্বল, সরস প্রতিফলন।
বেশ অন্যরকমের একটা বই। গল্প সামনে এগিয়েছে দুজনের চিঠি আদান প্রদানের মধ্য দিয়ে। অপরিচিত দুজন। চিঠির মাধ্যমে তাদের চিন্তা-ভাবনা, ভালোলাগা-মন্দলাগা ভাগ করে নিতে নিতে একসময় পরিচিত হয়ে যায়। কাছে চলে আসে। পালামৌর জঙ্গলের গল্পের মধ্য দিয়ে স্নিগ্ধ একটা প্রকৃতির স্বাদ পাওয়া যায়। আর পাওয়া দুজন রুচিশীল মানুষের মনোজগতের খবর। ছোট্ট একটা ব্যাপার কিন্তু আমার চিঠির সম্বোধন গুলো চমৎকার লেগেছে!
আমার পড়া ভিন্নধর্মী উপন্যাসের মধ্যে এটা একটা। যার প্রায় সবটাই চিঠি নির্ভর। আরেকটু সহজ ভাষায় বলতে গেলে প্রায় পুরো বইটাই চিঠি চালাচালি দিয়ে। যাকে আমরা পত্রোউপন্যাস বলেই চিনি। ঋতি ও রাজর্ষির মধ্যে চিঠির মাধ্যমে গড়ে উঠা প্রেম বা ভালোলাগার পথ ধরে কাহিনী এগিয়ে গিয়েছে শেষ পরিনতির দিকে। যেখানে মানব মনের গভীর চেতনা থেকে শুরু করে অরণ্যের নীলগাই পর্যন্ত উঠে এসেছে চিঠির পাতায়। তবে বই শুরুর দিকে যতটা প্রেম প্রেম ভাবের লেখনী ছিল, শেষের দিকে গিয়ে অনেকটাই বদলে গেছে। শেষটা যেন ফিলসফি কচলেই লেখক দায় সারতে চেয়েছেন। অনেকটা লেবু বেশি কচলানোর মতো। তবে এই বইটার ক্ষেত্রে খুব বেশি তিতা হয়ে যায়নি এই যা।
এই বইটা আমার কাছে একটা "আবেগ"। চিঠির বিষয়বস্তু, ভাষা এত সুন্দর! চিঠির মাধ্যমেই যে একটা গল্প বলা যায় বইয়ে, তাই-ই জানা ছিল না। বইটা পড়েছি, আবার সযত্নে তুলে রেখেছি। কয়েকদিন বাদে আবার বের করে পড়েছি। আস্তেধীরে, সময় নিয়ে পড়েছি। দ্রুত পড়লে যদি শ্রীঘ্রই ফুরিয়ে যায়! আমি চেয়েছিলাম ভালো লাগার রেশটা অনেকদিন থাকুক। লেখককে প্রণাম 💚
এমন চিঠিসংবলিত বই প্রথমবার পড়লাম সেই সাথে বুদ্ধদেব গুহর লেখাও। স্নিগ্ধ,মায়াময় সব চিঠি পড়ে আমারো ইচ্ছে করছে কাওকে চিঠি লিখতে। প্রকৃতির বর্ণণা আমাকে আকৃষ্ট করে বরাবরই। কিন্তু শেষটা পড়ে মনটা একটু খারাপ হলো।আরো ভালো হতে পারবো ,অন্যরকম হতে পারতো শেষটা।
সবিনয় নিবেদন’ একটি চিঠি-সাহিত্য বা পত্রোপন্যাস। শুরুর দিক থেকে গল্পটা খুব ভালো লেগেছিলো। অন্য রকম একটা গল্প ছিলো। গল্প এগিয়েছে ঋতি এবং রাজর্ষির চিঠি আদান প্রদানের মাধ্যমে। অপরিচিত দুজন চিঠির মাধ্যমে তাদের চিন্তা ভাবনা, ভালোলাগা-মন্দলাগা ভাগ করে নিতে নিতে দুজন দুজনার কাছে চলে আসে।
গল্পের শেষ টা এবং নিজের বই এর প্রশংসা করেছেন যা আমার একদম অপছন্দের।
এই গল্পের আমার কিছু প্রিয় লাইন-
"প্রকৃতি-সঙ্গর মতো এমন শারীরিক ও মানসিক হেল্থ ক্লিনিক আর নেই।... আধুনিক নগরভিত্তিক মানুষের নানা রকম শারীরিক ও মানসিক কষ্টের বেশিরটুকুরই কারণ প্রকৃতি-বিযুক্তি। প্রকৃতির সঙ্গে যোগাযোগ রাখলেই মানুষ তার মানুষের মতো শরীরে মনে বাঁচার পথ আবারও খুঁজে পাবে।"
"কপাল যথেষ্ট ভালো না হলে ভালোবাসা কপাল গড়িয়ে পড়ে যায়। থাকে না।"
"এক সময় হলুদ-বসন্ত আমার প্রিয়তম পাখি ছিল। যখন আমি ছোট ছিলাম। অবুঝ ছিলাম। যখন ভালোবাসবার ও ঘৃণা করারও ক্ষমতা অসীম ছিলো। যখন যে-কোনো সিন্ধান্তেই পৌঁছে যেতে পারতাম টরনাডোর ঝড়ের মতো দিগ্বিদিকশূণ্য হয়ে ছুটে কিন্তু হলুদ-বসন্ত পাখির প্রতি ভালোবাসারই মতো আমার বুকের মধ্যে আজ অনেক কিছুই মরে গেছে, ঠান্ডা হয়ে গেছে। অনেক কিছুই ঝরে গেছে শীতের ঝরা-পাতারই মতো আমার বুক থেকে।"
"এই জীবনে, পৃথিবীতে কিছুমাত্রই কেড়ে রাখবার, জোর করে ধরে রাখবার ক্ষমতা আমার এই দুটি শীর্ণ হাতে নেই। হয়তো কারো হাতেই নেই। জেনেছি ভালোবাসারই আর এক নাম ঘৃণা। আর ঘৃণারই ভালোবাসা। কোনো আনন্দ বা সুখবরেই আজ আর আমি পুলকিত বা চমৎকৃত হই না। যেমন কোনো দুঃখে বা আঘাতেও ভেঙে পড়ি না।"
"জীবনের কোনো দৌড়েই আমি হ্যান্ডিকাপ প্রত্যাশা করি না। প্রত্যেকটি সম্পর্কও এক একটি দৌড়। হ্যান্ডিকাপের সুযোগ নিয়ে যারা দৌড়োয় তাদের জিত এবং হার দুইই সমান লজ্জার।"
"দুঃখের বিষয়, আমরা এমনই এক সমাজে বাস করি যেখানে আমরা নিজেদের সম্বন্ধে যতটুকুই জানি তার চেয়ে অনেকই বেশি জানে অপরে।"
"আমাদের এই সমাজ, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, চেনা-পরিচিতদের মধ্যে অধিকাংশই ঐ শকুনদেরই মতো। যদি তারা একবার জানতে পেরে যায় যে তুমি পড়েছো বা মরেছো সঙ্গে সঙ্গেই প্রায় অদৃশ্য থেকে, বহু দূর বন-পর্বত নদী-সমুদ্র পথ-ঘাটের ওপর দিয়ে ধ্বস্ ধ্বস্ আওয়াজ করে বড় বড় ডানায় উড়ে এসে তোমার চারদিকে ঘিরে বসবে তারা। গাছের উপরে, পাথরে, বাড়ির দ��ওয়ালে মাল্টিস্টোরিড বাড়ির ছাদের প্যারাপেটে - অসহায় নিরুপায় তোমাকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে টুকরো করে খাবে বলে।"
"কল্পনাতে তো কোনো দোষ নেই। কলঙ্কও নেই। আর কল্পনার অধিকার শুধুমাত্র মানুষেরই।"
"যাকে ভালো লাগে, তার ভালো লাগাই তো আমার ভালো লাগা।"
"ধন, দৌলত, মান, সম্মান, যশ এসবের চেয়ে অনেকই বেশি দামী হচ্ছে সময়।"
"সব সময় আনন্দে থাকবে। আকাশ আছে, বাতাস আছে, ভোরের বাতাস, ডানা-মোড়া সোনালী নরম পাখির মতো শেষ বিকেলের আলো আছে, যে আলোর দিকে তাকিয়ে পৃথিবীর সব ছোট মনের কুচক্রী লোককেই অবলীলায় ক্ষমা করে দেওয়া যায়।... নিজে দুঃখ না দিলে অন্য কেউই তোমাকে দুঃখী করে এমন সাধ্য কার? আনন্দম্! আনন্দম্! আনন্দম্!"
"ভালোবাসার সুখের কপাল হয়তো সকলের থাকে না। কি করা যাবে! এ জন্যই ভাগ্যকে মেনে নিতে হয়। ভাগ্য লিপি যেমন পুরুষ, শত পুরুষাকারেও বদলাতে পারে না তেমন নারীও পারে না তার নিরন্তর বহতা চোখের জলেও। ভাগ্যকে স্বীকার না করে তারা হয় ভ্রষ্ট, নয় ভণ্ড অথবা মূর্খ।"
" সত্যিই আমাদের বয়স বয়সে হয় না; অভিজ্ঞতাতেই হয়। "
আচ্চা বাংলা সাহিত্যে এমন গভীর ভালবাসার বই আর কি কি আছে? এই যে কৃষ্ণচূড়ার গাছে লাল ফুল ফুটে আছে ওটা তো ভালবাসারই প্রতীক। আর এখনই সময় বইগুলো পড়ে ফেলার। যদিও বইগুলো বসন্তে এমনকি বর্ষাতে ভাল লাগবে। তবুও হাতের কাছে পেলে বইটি সবার পড়া উচিত। বলছি বুদ্ধদেব গুহ রচিত প্রেমের উপন্যাস "সবিনয় নিবেদন" বই এর কথা।
বর্তমান এ ভার্চুয়াল যুগে এসে আমরা একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে চিঠির কথা ভাবতেই পারি না। কোনকালে যে চিঠির মাধ্যমে মানুষ একে অপরের সাথে কথা বলতো এমনকি প্রেমালাপ হতো তা আমরা বিশ্বাস করতে পারি না। কিন্তু বুদ্ধদেব গুহ রচিত " সবিনয় নিবেদন" পড়লে বুৃজতে পারবেন চিঠির কি যাদু।
চিঠির পর চিঠি, চিঠির উত্তরে পাল্টা চিঠির মধ্য দিয়ে উপন্যাসের পুরোটা এগিয়েছে। একজন চিঠি লিখলে অন্যজন উত্তর দিয়েছে সে চিঠির, যার মাধ্যমে ফুটে উঠেছে দুজনের সাময়িক পরিচিতি আর এগিয়েছে চিঠি লেখার প্রবনতা।
চিঠিগুলোতে দুজন মানুষের ভিন্ন ভিন্ন জীবনদর্শন, তাদের রুচি, অভ্যাস পছন্দ অপছন্দ সবকিছু মূর্ত হয়ে উঠেছে চিঠির প্রতিটি কথায়। তাছাড়া, দৈনন্দিন জীবনে তাদের টানাপোড়ন, আশা- আকাঙ্খা, ইচ্ছে, স্বপ্ন। যাপিত জীবনের সকল অনুভূতি, বোধ, উপলব্ধি সবই যেন চিঠির আদলে বইয়ের পাতায় উঠে এসে উপন্যাসকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে।
কাহিনী সংক্ষেপঃ শিক্ষিত ও উদারমনা এক নারী ঋতির সাথে বেতালের এক জঙ্গলে বিপদের সময় দেখা হয়েছিল টাইগার প্রজেক্ট অফিসার রাজর্ষী বসুর সাথে। কলকাতায় ফিরে বিপদত্রাতা এই মানুষটিকে একটা ধন্যবাদ জ্ঞাপক চিঠি লিখেছিল ঋতি। এই চিঠির মাধ্যমেই উপন্যাসের ভিত্তিপ্রস্তর নির্মিত হয়। পরবর্তী পত্র বিনিময়ের সুচনা এই চিঠি থেকেই। যা এক সময় সব কিছু ছাপিয়ে শ্রেষ্ঠ প্রেমের উপন্যাসে পরিনত হয়।
ব্যাক্তিগত মতামতঃ বইটা পড়ে হতাশ হইনি, বরং যখন শেষ হলো তখন নিজেকে বার বার প্রশ্ন করেছি কেন শেষ হলো বইটা। ঋতি আর রাজর্ষির চিঠি চালাচালি তার ভিতর দিয়ে প্রেম। আহা! কি যাদু চিঠির। এরকম পত্রমিতালী আগে হতো, আর সেই সুযোগটাই বুদ্ধদেব গুহ নিয়ে সৃষ্টি করেছেন অসাধারন প্রেমের উপন্যাস "সবিনয় নিবেদন"।
তবে....বইতে ঋতিসহ অন্যান্য চরিত্রকে কেবল উপলক্ষ্য মনে হয়েছে। রাজর্ষি হয়ে লেখক নিজের মনের কথাগুলো বলে গেছেন। কিছু জায়গায় সেগুলো রীতিমত ঘ্যানঘ্যানের পর্যায়ে চলে গেছে, সেখানে আবার লেখক (অর্থাৎ রাজর্ষি) নিজেই ঋতির কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন বেশি বকে ফেলার জন্য।
দেখে বিরক্ত হতে হতেও আমি হেসে ফেলেছিলাম।
একই ঘটনা ঘটেছে অশ্লীল কথাগুলো ব্যবহারে বেলাতেও। লেখক নিজেও বুঝেছেন, কথাগুলো হয়তো অনেকের কাছেই গ্রহণযোগ্য হবে না। তাই নিজেই ঋতিকে যুক্তি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, কেন সেই শব্দগুলো ব্যবহার করতে হল।
উপন্যাসের মাঝে নিজের অন্যান্য উপন্যাসের বিজ্ঞাপন করা আমার কাছে খুবই লেইম মনে হয়েছে।
এগুলো ছিল ডার্ক সাইড অফ দা মুন। এবার ভালো কথাগুলো বলি, যেগুলো আমাকে বাধ্য করেছে তিন তারা দিতে। চিঠিগুলো আসলেই ভালো ছিল, সাধারণ প্যানপ্যান করা প্রেমের চিঠি না। রাজর্ষি, ঋতি, শ্রুতি হয়ে লেখক যেসব কথা বলেছেন, তার অনেকগুলোই এত চমৎকার ছিল, বারবার করে পড়তে ইচ্ছে হয়।
আমার ছোটবেলা থেকেই চিঠি লেখার ব্যাপারটা ভীষণ পছন্দের। ইউনিভার্সিটিতে থার্ড ইয়ারে পড়ার সময় ফোন কেনার আগে পর্যন্তও বাড়িতে আব্বু-মা কে চিঠিই লিখতাম। এখন সেসব পুরনো দিনের কথা হয়ে গিয়েছে। আমার বাপ এখন জন্মদিনের প্রথম প্রহরে এস এম এস পাঠান!! ডিজিটাল বাপ আমার। মায়ের দৌড় ফোনে কল দেয়া পর্যন্তই। আমি সেই হলদে খামের চিঠি খুব মিস করি। :(
চিঠি চালাচালি পর্যন্ত বইটা ভালো ছিলো বেশ। শেষ পর্যন্ত পরিণতি দেখাতে না গেলে হয়তো ৪★ তারাই দিতাম যেহেতু ৩.৫★ দেয়ার সুযোগ নাই। শেষের দিকে এসে লেখকের সেই চিরাচরিত "তুমি যে আমার আর আমি যে তোমার" টাইপ কাহিনী শুরু হওয়ায় ২.৫★ আসলে। যেহেতু সেই উপায় নাই তাই বেনিফিট অফ ডাউটে নট আউট মানে ৩★।
প্রকৃতি-সঙ্গর মতো এমন শারীরিক ও মানসিক হেল্থ ক্লিনিক আর নেই।... আধুনিক নগরভিত্তিক মানুষের নানা রকম শারীরিক ও মানসিক কষ্টের বেশিরটুকুরই কারণ প্রকৃতি-বিযুক্তি। প্রকৃতির সঙ্গে যোগাযোগ রাখলেই মানুষ তার মানুষের মতো শরীরে মনে বাঁচার পথ আবারও খুঁজে পাবে।"
"কপাল যথেষ্ট ভালো না হলে ভালোবাসা কপাল গড়িয়ে পড়ে যায়। থাকে না।"
"একটি যুক্তিগ্ৰাহ্য সময় সীমার মধ্যে 'আপনি'কে 'তুমি' না করতে পারলে পরে আর করা হয়ে ওঠে না।"
"সূক্ষতা আর দুঃখ তো সমার্থক।"
"এক সময় হলুদ-বসন্ত আমার প্রিয়তম পাখি ছিল। যখন আমি ছোট ছিলাম। অবুঝ ছিলাম। যখন ভালোবাসবার ও ঘৃণা করারও ক্ষমতা অসীম ছিলো। যখন যে-কোনো সিন্ধান্তেই পৌঁছে যেতে পারতাম টরনাডোর ঝড���ের মতো দিগ্বিদিকশূণ্য হয়ে ছুটে কিন্তু হলুদ-বসন্ত পাখির প্রতি ভালোবাসারই মতো আমার বুকের মধ্যে আজ অনেক কিছুই মরে গেছে, ঠান্ডা হয়ে গেছে। অনেক কিছুই ঝরে গেছে শীতের ঝরা-পাতারই মতো আমার বুক থেকে।"
"এই জীবনে, পৃথিবীতে কিছুমাত্রই কেড়ে রাখবার, জোর করে ধরে রাখবার ক্ষমতা আমার এই দুটি শীর্ণ হাতে নেই। হয়তো কারো হাতেই নেই। জেনেছি ভালোবাসারই আর এক নাম ঘৃণা। আর ঘৃণারই ভালোবাসা। কোনো আনন্দ ���া সুখবরেই আজ আর আমি পুলকিত বা চমৎকৃত হই না। যেমন কোনো দুঃখে বা আঘাতেও ভেঙে পড়ি না।"
"জীবনের কোনো দৌড়েই আমি হ্যান্ডিকাপ প্রত্যাশা করি না। প্রত্যেকটি সম্পর্কও এক একটি দৌড়। হ্যান্ডিকাপের সুযোগ নিয়ে যারা দৌড়োয় তাদের জিত এবং হার দুইই সমান লজ্জার।"
"দুঃখের বিষয়, আমরা এমনই এক সমাজে বাস করি যেখানে আমরা নিজেদের সম্বন্ধে যতটুকুই জানি তার চেয়ে অনেকই বেশি জানে অপরে।"
"আমাদের এই সমাজ, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, চেনা-পরিচিতদের মধ্যে অধিকাংশই ঐ শকুনদেরই মতো। যদি তারা একবার জানতে পেরে যায় যে তুমি পড়েছো বা মরেছো সঙ্গে সঙ্গেই প্রায় অদৃশ্য থেকে, বহু দূর বন-পর্বত নদী-সমুদ্র পথ-ঘাটের ওপর দিয়ে ধ্বস্ ধ্বস্ আওয়াজ করে বড় বড় ডানায় উড়ে এসে তোমার চারদিকে ঘিরে বসবে তারা। গাছের উপরে, পাথরে, বাড়ির দেওয়ালে মাল্টিস্টোরিড বাড়ির ছাদের প্যারাপেটে - অসহায় নিরুপায় তোমাকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে টুকরো করে খাবে বলে।"
"কল্পনাতে তো কোনো দোষ নেই। কলঙ্কও নেই। আর কল্পনার অধিকার শুধুমাত্র মানুষেরই।"
"যাকে ভালো লাগে, তার ভালো লাগাই তো আমার ভালো লাগা।"
"ধন, দৌলত, মান, সম্মান, যশ এসবের চেয়ে অনেকই বেশি দামী হচ্ছে সময়।"
"বুকের সব উষ্ণতা মরে আসুক ক্রমশ। সব দুঃখের শেষ তাহলে। নিজের সব অহঙ্কার, দম্ভ, নিজের সম্বন্ধে সব ভালোবাসাকে চৈত্র হাওয়ায় ঝরা ফুলের মতো ঝরিয়ে দিয়ে। আঃ। কী সুখ। ভারহীনতার মতো সুখ কী আছে?"
"শিক্ষা থাকে মানুষের ব্যবহারে, চেহারায়, কথাবার্তায়। আলমারীর ড্রয়ারে যে সব পাকানো কাগজ থাকে ন্যাপথালিনের গন্ধ-ভরা অবশেষে ইঁদুর বা তেলাপোকার খাদ্য হবে বলে তা আর শিক্ষা সমার্থক নয়। অনেকেই পাকানো কাগজগুলিকেই শিক্ষা মনে করে মহানন্দে পৃথিবীর তাবৎ মানুষের সঙ্গে অশিক্ষিতর মতো ব্যবহার করে। তারাই আবার তাদের কেউ অশিক্ষিত বললে বেদম চটে যায়।"
"ভালোবাসা বা উষ্ণতা বোধহয় গন্তব্য-নির্ভর নয়। যাঁদের ভালোবাসার বা অন্যকে উষ্ণতা দেবার ক্ষমতা আছে তাঁরা বোধহয় হৃদয়ের তাগিদেই অন্যকে উষ্ণ করে তোলেন।"
"তারের বাজনার তার ছিঁড়ে গেলে নতুন তার জোড়া যায় কিন্তু বাজনা পুরোনো হলে তার পুরোনো 'কানে' ঢিলে হয়ে যাওয়া তারকে আর টানটান করা যায় না। সুর লাগে না তাতে। মেরজাপ্ এর সঙ্গে ঘষা খেয়ে তখন শুধুই কাকের কর্কশ আওয়াজের মতো আওয়াজ বের হয়। যার কানে সুর আছে তার পক্ষে সে বড় লজ্জাকর অবস্থা। তখন সে বাজনাকে ঘরের বা মনের কোণে তুলে রাখাই ভালো।"
"সব সময় আনন্দে থাকবে। আকাশ আছে, বাতাস আছে, ভোরের বাতাস, ডানা-মোড়া সোনালী নরম পাখির মতো শেষ বিকেলের আলো আছে, যে আলোর দিকে তাকিয়ে পৃথিবীর সব ছোট মনের কুচক্রী লোককেই অবলীলায় ক্ষমা করে দেওয়া যায়।... নিজে দুঃখ না দিলে অন্য কেউই তোমাকে দুঃখী করে এমন সাধ্য কার? আনন্দম্! আনন্দম্! আনন্দম্!"
"শরীর ছাড়াও ভালোবাসা হয়। আজও হয়। এবং সে ভালোবাসা থাকেও। বিয়ে না করেও বিবাহিত হওয়া যায়। বিয়ে করেও অবিবাহিত থাকা যায়।"
"ভালোবাসার সুখের কপাল হয়তো সকলের থাকে না। কি করা যাবে! এ জন্যই ভাগ্যকে মেনে নিতে হয়। ভাগ্য লিপি যেমন পুরুষ, শত পুরুষাকারেও বদলাতে পারে না তেমন নারীও পারে না তার নিরন্তর বহতা চোখের জলেও। ভাগ্যকে স্বীকার না করে তারা হয় ভ্রষ্ট, নয় ভণ্ড অথবা মূর্খ।"
"জীবনে, কোনো মানুষের জীবনেই কোন সত্যই যেমন কোনো বিশেষ অবস্থানে স্থির নয়, আকাশের তারাদেরই মতো পৃথিবীর চোখ দিয়ে দেখলে, ধ্রুব নয়; তা মুহূর্ত থেকে মুহূর্তে প্রতিনিয়তই সরে সরে যায়; সতত সঞ্চরমান..."
◽ পত্রোপন্যাস! সাহিত্যের এই ধারার সাথে আমার এর আগে পরিচয় হয় মেমসাহেব বই দিয়ে। সবিনয় নিবেদন বইটির মাধ্যমে এই ধারার স্বাদ আবার আস্বাদনের সুযোগ হলো। কেউ যদি এই ধারার আরো কিছু বইয়ের নাম বলেন তাহলে সত্যি খুব খুশি হবো।
◽আচ্ছা, আধুনিকতার এই সহজ(?!) যুগে, যেখানে আমাদের রুচিশীলতা, অনুভূতি, ভালোবাসা, ঘৃনা কিংবা অন্যান্য আবেগ ফেসবুকের সবুজ আলো, মেসেঞ্জারের টুং টাং শব্দ, ইনস্টাগ্রামের লাল হৃদয় এবং টুইটারের টুইটের মধ্যে সীমাবদ্ধ সেখানে এই বইয়ের চিঠিগুলো হঠাৎই যেনো প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলে আমাদের সামাজিকতার নামে অসামাজিকতাকে।চিঠিতে একজন মানুষ যেভাবে নিজের রং ঢেলে এঁকে তুলে ধরে নিজেকে, নিজের পরিপার্শ্বকে, ধ্যান ধারণাকে, মনোভাব কিংবা অন্তরের গহীনে লুকোনো কোনো গোপন দুঃখকে কিংবা ভয়ংকর কোনো পাপকে সেটা কি অন্য কোনো উপায়ে এত নিখুত ভাবে করা যায়? মনে হয় না। দুটি মানুষ পাশাপাশি বসে কথা বলে একে অপরকে যতটুকু চিনতে পারে, চিঠিতে পারে তার চেয়ে শতগুণ বেশি। সবকিছু মিলিয়ে মনে হয়, সামাজিকতা ও যোগাযোগ আরো শ'খানেক মাইল পিছিয়ে গিয়ে যদি চিঠির ভেতর সীমাবদ্ধ থাকতো তাহলে বোধ হয় মন্দ হতো না।
◽দুজন সুরুচিসম্পন্ন মানুষের চিঠি আদানপ্রদানের মাধ্যমেই এগিয়ে যেতে থাকে বইটি। গল্পের নায়িকা ঋতি বেতলার জঙ্গলে নিজের কাকা কাকীর সাথে বেড়াতে যায়। সেখানে এক হাতির দলের সামনে দুর্বিপাকে পড়ে যায় তারা। কিন্তু এই দুর্বিপাকই তাকে পরিচয় করিয়ে দেয়, গল্পের নায়ক রাজর্ষির সাথে। রাজর্ষি বসু, একজন ফরেস্ট অফিসার, দূর্দান্ত, ঝকঝকে, সুশিক্ষিত এক যুবক। যাকে প্রায়ই অরণ্যদেব বলে সম্বোধন করেছেন ঋতি। মূলত প্রথম চিঠিটি শুধু ধন্যবাদ জানিয়ে ঋতি রাজর্ষিকে পাঠালেও, এক পর্যায়ে পরস্পরকে চিঠি লেখা তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়। যদি আপনি ভেবে থাকেন এসব চিঠি শুধু - " আপনি কেমন আছেন? খেয়েছেন? বাড়ির সবাই কেমন?" এই ধরনের তাহলে আপনার ধারণা ভুল। চিঠিতে উঠে আসতে থাকে তাদের পরস্পরের সমস্যা, এসবের সমাধান, পরামর্শ, যুক্তিতর্ক, জীবনবোধ, ভাবাবেগ ইত্যাদি বিষয়। আরেকটি বিষয় হলো, রাজর্ষির চিঠিতে জামশেদপুর, রাচি, বেতলা, পালামৌ, হাজারীবাগ, এমনকি পূর্ব আফ্রিকার তানজানিয়া, নাইরোবি, সেশেলেস দ্বীপপুঞ্জের দুর্দান্ত বিবৃতি উঠে আসে। মূলত উঠে আসে অরণ্য এবং অরণ্যের হরেক ঋতুতে হরেক রুপ-মাধুর্য্য-গন্ধ-শব্দ। ফলে ঋতি এসব জায়গা নিজের চোখে দেখতে না পেলেও দেখতে পায় কল্পনার চোখ দিয়ে। কিন্তু উপন্যাসের ঘটনা এতটুকুতেই থেমে নেই। ঋতির জীবনে আরো একজন আছে তার বাগদত্তা, অশেষ। অন্যদিকে রাজর্ষির জীবনে আছে তার প্রাক্তন স্ত্রী বনী যাকে রাজর্ষি কোনোদিনই ফিরিয়ে দিতে পারে না। হঠাৎ যেনো রং বদলাতে থাকে অশেষ, বিলেত যাওয়ার পর থেকেই চেনা জানা মানুষটি হঠাৎ কেমন অচেনা হয়ে যায় ঋতির কাছে। ঋতি বুঝতে পারে অশেষ তার মোহ ছিল, ভালোবাসা নয়। কিন্তু রাজর্ষির কাছেই বা কি নিশ্চয়তা নিয়ে যাবে ঋতি, যে নিজের প্রাক্তন স্ত্রীকে ভালবাসে আজও। দ্বিধাদ্বন্দ্বের এই মুহূর্তে ঋতি নেয় নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত।
◽ বইটির বিভিন্ন বিষয় বেশ ভালো লেগেছে। ঋতির চিঠির চেয়ে রাজর্ষির চিঠিগুলো বেশি মুগ্ধতা নিয়ে পড়েছি। এত সুন্দর করেও চিঠি লেখা যায়! চিঠিগুলোতে রাজর্ষির জীবনবোধ প্রতিফলিত হয় ব্যাপকভাবে, যার সাথে আমি আপনি সম্পূর্ণ একমত নাও হতে পারি।
শেষ কবে উপন্যাস হাতে নিয়ে মেটাফরিক্যালি এক নিঃশ্বাসে, প্রায় এক বসায়, সত্যি একদিনে শেষ করেছি/করতে পেরেছি মনে পড়ে না। মুগ্ধপাঠ!
অবশ্য উপন্যাস এম��িতেও পড়া হয় না বহুদিন, তাই ওপরের কথাটা খুব রিপ্রেজেন্টেটিভ কিছুর এমনও নয়। কিন্তু, গত কিছুদিনে একাধিক উপন্যাস হাতে নিয়ে রেখে দেয়ার পরে হঠাৎ এরকম ছোটবেলার মতন নাওয়া-খাওয়া ভুলে পড়ার মতন কিছু পাবো কিংবা পেলেও সেই আগ্রহ অবশিষ্ট থাকবে সেটা প্রত্যাশিত ছিল না। হয়তো, বুদ্ধদেব গুহ আগে নাড়াচাড়া করলেও পড়া হয় নি বলে, কিংবা তেমন কোন ধারণা-কল্পনা-রিভিউ ছাড়াই বইটা শুরু করায়, আরো অবা��� হয়েছি। রিভিউ না পড়ে বই শুরু করলে অনেক সময়ে মাথা কুটতে হলেও এইবার ব্যাপারটা উপহারের মতন লাগলো।
অগণিত রূঢ় বাস্তব কথায় পরিপূর্ণ একটা বই যে এত আরাম আর আনন্দ নিয়ে পড়া যাবে ভাবি নি। কোন বই আমার ভালো-লাগার ট্যাঞ্জিব্ল প্রমাণ থাকে সাধারণত তাতে কতগুলো হাইলাইটারের দাগ পড়লো তার মধ্যে - সেই হিসেবেও উতড়ে গেছে বই।
পাঁচ-তারা নিয়ে বিশেষ কৃপণতা থাকায় চার-তারা দিলাম, সেটা সাধারণত যেসব বইয়ের প্রতিটা শব্দ প্রিয় সেসবের জন্য তুলে রাখি। যেমন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শিক্ষিত আর অশিক্ষিতের মাঝে তেমন পার্থক্য তৈরি করতে পারে না এই কথা অসংখ্যবার বলার পরেও একই বইতে যখন লেখক বলেন, অশিক্ষিতের স্বৈরাচারের চাইতে শিক্ষিতের স্বৈরাচার ভালো - এরকম স্ববিরোধিতা কিংবা অকেশনাল স্টেরিওটাইপিং থাকে যখন কোন বইতে, তখন তো না-ই। তারপরেও, বইয়ের বেশিরভাগ শব্দই প্রিয়। বিশেষ করে, একজন লেখক যখন একাধিক মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে লিখেন অথচ তাতে বিন্দুমাত্র জড়তা থাকে না - কোথাও থমকে যেতে হয় না বেমানান কোন লাইন পড়ে, তাদের নিয়ে আমার সবসময়েই মুগ্ধ কৌতূহল কাজ করে। তাদেরকে অন্তর্যামী মনে হয়।
যত প্রশ্ন করা হয়েছে বইতে, ততগুলোর উত্তর দেয়া হয় নি। উত্তর কারো জানা নেই বলেই হয়তো। যেমন ঋতি যখন রাজর্ষিকে প্রশ্ন করে চিঠিতে, "হ্যাপিলি এভার আফটার" ব্যাপারটা বইয়ের পাতাতেই ফুরোয় কেন প্রায় সবার ক্ষেত্রে - রাজর্ষি তার কোন শব্দবহুল চিঠিতে সেই উত্তর দেয় না। আমার পড়তে পড়তে "Gone Girl"এর কথা মনে পড়লো, নিক আর এইমি যেরকম একজন আরেকজনকে প্রশ্ন করে "আমরা কি 'সেইসব' দম্পতির মতই হয়ে যাবো" আর সেটা যখন গড়ায় "আমরা কি 'সেইসব' দম্পতির মতই হয়ে যাচ্ছি" আর শেষমেশ "আমরা কি 'সেইসব' দম্পতির মতই হয়ে গেলাম"তে, সেরকম। সচেতন পাঠক তাই মুগ্ধপাঠ শেষেও সংশয় নিয়েই বই বন্ধ করবেন। কারণ এই উপন্যাস শেষ হইয়াও হয় নাই শেষ, ঋতির অ্যাম্বিভ্যালেন্স তারই আলামত।
কয়েকবার মনে হয়েছিল বইটা কি জেন অস্টিনের উপন্যাসের মতন সান্ত্বনাদায়ক আর বাস্তবজীবন-থেকে-দু'দণ্ড-ফুরসত-দেয়া বলে ভালো লাগলো কিনা। কিন্তু জীবন আর সম্পর্ক নিয়ে এত চরম সব সত্য কথা - কাঠিন্যের কারণে যার বেশিরভাগই আমরা না-জানার ভান করে আর লেখকেরা না লিখে কিংবা সুগারকোটিং করে কাটিয়ে দেন জীবন - যে বইতে লেখা থাকে তাকে ঐ শ্রেণীতে ফেললে নিতান্ত অপমানই করা হয়।
বইঃ সবিনয় নিবেদন লেখকঃ বুদ্ধদেব গ্যুহ #টুকরো_প্রাসঙ্গিকতাঃ এই কনকনে শীতের মাঝে গরম কফির সাথে কুসুম কুসুম এই উষ্ণ ভালবাসার গল্পটি হৃদয় ছুঁয়েছে ভীষণভাবে। ছোটোবেলা থেকে এখনও, এই আধুনিক যুগেও চিঠি জিনিসটার প্রতি ঝোঁক আমার সবসময়ই ছিলো। এমনকি এখনো আমার কিছু মানুষের সাথে চিঠি আদান- প্রদানের চমৎকার সম্পর্ক আর গল্প আছে। তাই যখন শুনলাম এই বইটির মোটামুটি প্রায় পুরোটাই চিঠি আদানপ্রদানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা দারুণ ক্লাসিক্যাল প্রেমের উপন্যাস, আলসেমি নিয়েই পড়া শুরু করেছিলাম তখনই। বুদ্ধদেব বাবুর এই আমার প্রথম বই পড়া এবং বলাই বাহুল্য ভদ্রলোকের প্রেমে পড়ে গেলাম! #বই_সংক্ষেপঃ দুজন আগুন্তুকের (একজন ভদ্রমহিলা ও আরেকজন ভদ্রলোক) দূর্ঘটনা বা সু-ঘটনাক্রমে অযাচিত এক জায়গায় অযৌক্তিকভাবে কিঞ্চিৎ একটু আলাপের সুযোগ হয়ে যায়। আর সেখান থেকেই সৃষ্টি হয় চিঠি আদানপ্রদানের ছোট্ট একটা উপলক্ষ। সূক্ষ্ম সৌজন্যমূলক যোগাযোগটুকু ওখানেই থেমে যাবার কথা ছিলো! কিন্তু সেটা সূক্ষ্ম সৌজন্যতা থেকে সামাজিক ভদ্রতা আর তার গন্ডি পেরিয়ে আলগা বন্ধুত্ব ..... এভাবেই গুটিগুটি করে এগোতে আর বদলাতে থাকে দুজনের সম্পর্কের মাত্রা। সেই সাথে পরিবর্তন হয় আবেগের ঘনঘটা আর, পাল্লা দিয়ে উঠানামা করে মান অভিমান আর ভালবাসার কথকতা। আর এ সব কিছুই সুচারুভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে চিঠির মাঝে, নানান আবেগের সাক্ষী হয়েছে ছোটোছোটো অক্ষরগুলো। হাসি আনন্দ আছে, সম্পর্কের টানাপোড়ন আছে আর আছে দুষ্টুমিষ্টি ভালবাসার ছোঁয়া। ভালো লেগেছে ঋতিকে, প্রেমে পড়তে হবে রাজর্ষিরও। . তবে চিঠিগুলো ঠিক চিঠি মনে হয়নি। মানে চিঠির মাঝে কেমন যেনো স্বাধীনতার অভাব ছিলো। অনেকটা ঋতি বা রাজর্ষি যেনো লিখছিলোনা চিঠিগুলো বরং "কোনো একজনের (লেখকের) দ্বারাই লিখিত" ভাবটা স্পষ্ট ছিলো। তবে চরিত্রদের গড়ে ওঠা আর কাহিনীর বিন্যাস আর পত্রমিতালী থিমের কারণে প্রিয়বইএর তালিকায় স্থান করে নিয়েছে অনায়াসেই। . পড়া শেষে আনমনা হয়ে ভাবছিলাম.... সত্যিই! অমন একটা টকমিষ্টি রাজর্ষিকে পেলে মন্দ হতোনা। . কবি'র পাঠানো চিঠির খামের উপর নীল কালিতে লেখা কথাগুলো যেনো বেশী আপন লাগছে এখন। "__ বুকের পাশে ড্যাগারের মত বিঁধে থাকে সারসের পালক! প্রজাপতি হয়ে সে পালক উড়ে গেলে আমাদের ঘুম টুঁটে যাবে। এমন এক প্রজাপতি দিনের অপেক্ষায়...."
চিঠি ব্যাপারটাতেই একটা স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে থাকে। অপেক্ষা শব্দটার ছড়াছড়ি। আমার বইটা ভালো লেগেছে শুধু চিঠি আর প্রকৃতির বর্ণনার জন্য। মাঝে খুব এলোমেলো লাগছিলো৷ শেষটা বিশেষ পছন্দ হয়নি। বরং বিরক্ত হয়েছিলাম। তবে বইয়ের চিঠিগুলো এতো এতো সুন্দর। বিশেষ করে আমি রাজর্ষির চিঠি পড়ার জন্য মুখিয়ে থাকতাম। ওর কথাগুলো ও কি ভীষণ সুন্দর করে গুছিয়ে বলতো!! আমি মুগ্ধতায় ডুবে ছিলাম পড়ার সময়। তবে আমার জটিল মনস্তাত্ত্বিক চিন্তাধারা আমাকে বেশ অগোছালো করে দেয়। মাঝে পড়তে পড়তেও এই ব্যাপারটা অনুভব করছিলাম বারবার। এরকম চিঠিপত্রের আরেকটা বই "মেমসাহেব" পড়ে অসম্ভব বিরক্ত হয়েছিলাম। তবে আমি চিঠির প্রতি বিশেষ দূর্বল।
এই বইয়ের শেষ পৃষ্ঠা আর কিছু চিঠিপত্র বাদ দিলে বইটা বেশ ভালো বইই বলা চলে। বইটা পড়লে একটা মুগ্ধতার ছাপ নিয়েই বইটা শেষ হবে। মনে হবে আরো কয়েকটা চিঠি থাকলে ভালো হতো। ঋতি আর রাজর্ষির দেখা না হলে ভালো হতো।
পড়ে মনে হয় প্রেম যদি এমন হয় তবে খুব একটা মন্দ নয়।গতানুগতিকের বাইরে হিসেবনিকেষের বালাই থাকেনা তাই এমন অন্যরকম অদেখা অবোধ্য প্রেম আবার প্রেম নয়ও এমন সম্পর্ক মধুর না হলেও এক অবোধ্য সুখের।প্রথম এই বইটি পড়েছিলাম কলেজ জীবনের শুরুতে বা তার কিছু আগে।তখন মনে হয়েছিল এ আবার কেমন প্রেম?এত ভারিক্কী? আজ আবার পড়ে মনে হল ঐ তুমি -আমি ,মান-অভিমান,পরিণতির অপেক্ষা এসব ছাড়াও প্রেম হয় তবে তা সবার জন্য নয়।বেশিরভাগ মানুষই স্বস্তি চায়, সুখ নয়।মুহূর্তের সুখের চেয়ে আজীবনের স্বস্তিই বড় অধিকাংশের কাছে। শুধু শেষের অংশটি আমার কাছে ভালো লাগেনি।কেন যেন মনে হচ্ছিল তাদের মিলন না হয়ে এই চিঠিতে চিঠিতে দু'জন অধরা রয়ে গেলেই বেশ হত। খুবই মুগ্ধতা নিয়ে পড়তে পড়তে হঠাৎ শেষে এসে একটা বিরক্তিমাখানো হতাশার ধাক্কা লাগলো।
ডুবে ছিলাম ..... কি নাই এইখানে?? চিঠি যে আমাদের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ...... বাট এখন ইন্টারনেট, ফেসবুক, ফোন, ইত্যাদি এসে চিঠি কেই ভুলিয়ে দিয়েছে..... আচ্ছা আমরা কি সেই যুগে ফিরে যেতে পারিনা??? চিঠির যুগ..... I just love it <3 <3
লুতুপুতু বই... প্রথম দিকে দারুণ ছিল। কিন্তু বইয়ের মাঝ থেকে শেষের দিকে কিঞ্চিত বিরক্ত নিয়ে এসেছে। জোর করে সবকিছু হয়ে যাচ্ছে মনে হচ্ছিলো, এবং লেখক ঋতি আর রাজর্ষির আলাপ অনেক বেশি 'ইন্টেলেকচ্যুয়াল' পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন।
বনের বর্ণনা অসাধারণ! প্রেমের কিছু লাইন ভাল। ওভারওল তিন তারকা দেয়া যায়।