কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাসের জন্ম মহর্ষি পরাশরের ঔরসে ও অবিবাহিতা মৎস্যগান্ধার গর্ভে-দ্বাপর যুগে। কৃষ্ণবর্ণ ছিলেন বলে এবং দ্বীপে ভূমিষ্ট হওয়ায় তাঁর নাম বৃষ্ণদ্বৈপায়ন আর সর্বপ্রথম বেদের সংগ্রহ ও সম্পাদনা করেন বলে অপর নাম বেদব্যাস। এজন্য তাঁর ‘মহাভারত’ পঞ্চম বেদ নামে কথিত। এমনকি অষ্টাদশ পুরাণের রচয়িতাও তিনি । উপরন্তু ‘পাতঞ্জল দর্শন’ এর যথপোযুক্ত টীকাও প্রণয়ন করেন তিনি। এর পলে ‘যুদ্ধবিদ্যা, দর্শন-শাত্রজ্ঞান নীতি শাস্ত্র পারদর্শিতা, মানবহৃদয়-বিজ্ঞান, সব ক্ষেত্রে এমনই নৈপুণ্য প্রকাশ করেছেন যে তাঁর ররচিত গ্রন্থের সবটা তাঁর রচনা কি-না এ বিষয়ে অনেকে দ্বিমত পোষণ করেন। বিরুদ্ধবাদীদের মত-কৃষ্ণদ্বৈপানের সময়কালে ব্যাস একটি উপাধি ছিল, ভিন্ন ভিন্ন লেখক ভিন্ন ভিন্ন সময়ে কৃষ্ণদ্বৈপায়নের ন্যায় ঐ সকল গ্রন্থ রচনা করেন এবং তাঁরা সকলোই কৃষ্ণদ্বৈপায়নের মতোই পণ্ডিত ছিলেন। পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচারে পরবর্তীতে এ কথা প্রমাণিতও হয়।
প্রসিদ্ধি আছে সহাভারত রচনার জন্য লেখক অনুসন্ধানকালে ব্রহ্মা তাকে গণেশের সাহায্য গ্রহণ করার পরামর্শ দেন। গণেশ দ্বৈপায়নের প্রস্তাবে বিরতীহীনভঅবে লিখে যাবার শর্ত প্রধান করেন। প্রস্তাবে সম্মত হয়ে দ্বেপায়নও পরি-শর্ত প্রদান করেন যে ‘আপনিও না বুঝে আমার কথিত শ্লোক লিপিবদ্ধ করতে পারবেন না।’ গণেশ তাতে সম্মত হয়ে লেখনী ধারণ করলে কৃষ্ণদ্বৈপায়ন রচনা প্লট তৈরির করার সময় পাবার জন্য মাঝে মাঝে এমন দুর্বোধ্য শ্লোক রচনা করলেন গণেশ তা বুঝে লিখতে যে সময় নিতেন সে অবকাশে দ্বৈপায়ন পরবর্তী শ্লোক রচনার সময় পেয়ে যেতেন । দূর্বোধ্য সেই সব শ্লোক পরবর্তীতে ‘ব্যাতকুট’ নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে। বস্তুত কৃষ্ণদ্বৈপায়নের কবিত্বশক্তি অনেক ক্ষেত্রে আদি কবি বাল্মীকির চেয়েও বেশি।
Krishna Dvaipāyana Vyāsa, also known as Vyāsa or Veda-Vyāsa (वेदव्यास, the one who classified the Vedas into four parts) is a central and revered figure in most Hindu traditions. He is traditonally regarded as the author of the Mahābhārata, although it is also widely held that he only composed the core of the epic, the Bhārata. A significant portion of the epic later was only added in later centuries, which then came to be known as the Mahābhārata. The date of composition of this epic is not known - It was definitvely part of the traditions in Indian subcontinent at the time Gautam Buddha (~500 BCE) which would suggest it having been already around for atleast a few centuries. It was chiefy put down in the written form only somewhere between 300 BCE to 300 CE.
As the name would suggest, Vyāsa is believed to have categorised the primordial single Veda into its four canonical collections. He is also considered to be the scribe of Purānās, ancient Hindu texts eulogizing various deities, primarily the divine Trimurti God in Hinduism through divine stories.
আমাকে কেউ যদি জীবনে পড়া শ্রেষ্ঠ বই সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে আমি চোখ বন্ধ করে বলে দেব মহাভারত। কথায় আছে যা নেই মহাভারতে তা নেই ভূভারতে। কথাটা বহুলাংশেই সত্য। কি নেই এই মহাকাব্যে। সত্য, প্রেম, কাম, যৌনতা, শঠতা, যুদ্ধ............আর কত নাম করবেন। মহাভারতের অনেকগুলা ভার্সন আমার পড়া আছে যার মধ্যে রাজশেখর বসুরটি শ্রেষ্ঠ। মহাভারত মূলত একটি বংশের দ্বন্দ্বের কথা। যাতে কালক্রমে জড়িয়ে পড়ে ভারতের সকল নামকরা রাজবংশই। যদিও উৎপত্তি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে এসব বংশের মূল একই। পুরাণের যযাতিই হল এই দ্বন্দ্ব যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া সবার পূর্বপুরুষ। যযাতির বংশই কালক্রমে ভারতের বিভিন্ন অংশ দখল করে স্থাপন করে বিভিন্ন বংশের। এনাদের আবার বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। যার ফলে কেউ কাউকে দেখতে পারতেন না। মহাভারতের মূল গল্প যযাতির কুলের কুরু বংশের দুই উত্তরাধিকারী কৌরব ও পান্ডবকে নিয়ে। কৌরব নেতা দুর্যোধনের বাবা ধৃতরাষ্ট্র অন্ধ হবার ফলে বড় সন্তান হওয়া সত্ত্বেও সিংহাসনে বসার অধিকার হারান। ফলে ছোট পুত্র পান্ডব হন সম্রাট। কিন্তু পান্ডবের অকালমৃত্যুর ফলে সিংহাসন সামলাতে থাকেন কুরুবীর মহামতি ইচ্ছামৃত্যুধারী ভীষ্ম। যিনি কিনা বাবা শান্তুনুর খায়েশ মিটাতে গিয়ে সিংহাসন এবং বিবাহ দুটোরই অধিকার ছেড়ে দেন। পান্ডবপুত্র যুধিষ্ঠির দুর্যোধনের বড় হওয়া সত্ত্বেও দুর্যোধন পাশা খেলার নামে শঠতা করে বনবাসে পাঠায় পঞ্চপাণ্ডবকে। বনবাস শেষে ফিরে এসে রাজ্য চাইলে দুর্যোধন তা ফিরিয়ে দিতে অস্বীকার করেন। শেষে হয় এক ১৮ দিনের মহাযুদ্ধ। যাতে ভারতের সকল শ্রেষ্ঠ নৃপতি অংশ গ্রহন করে মারা পড়েন। শেষে যুধিষ্ঠির যুদ্ধ জয় করে ফিরে পান সাম্রাজ্য। অবশ্য এই যুদ্ধে কৃষ্ণের ভূমিকা না টানলেই নয়। যদুকুলের নেতা কৃষ্ণের অনুকুল মনোভাব আর কূটকৌশলের কারণেই এই যুদ্ধ জয়লাভ করে পান্ডবেরা। গল্পটা সিম্পল মনে হলেও আসলে জটিল। এর ভিতরে এত প্যাচ আর এত অলিগলি যে গল্পে ঢুকলে খালি হারায়ই যেতে হবে। এরকম বিচিত্র প্লট আমি আর কোথাও পাইনি। এবার আসি রাজশেখর বসু ভার্সনে। বইটি সাধু ভাষায় লেখা। তাই কেউ পড়া শুরু করলে শক খেয়ে যেতে পারেন। কিন্তু পঠনযোগ্য। রাজশেখর বসু মূল মহাকাব্যের শুধুমাত্র উল্লেখযোগ্য গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো অনুবাদ করেছেন। সুতরাং লম্বা লম্বা বংশতালিকা আর যুদ্ধের অতিরিক্ত বর্ণনা পড়ে হড়কে যাবার কোন কারণ নেই। আর কেউ যদি এই বই পড়া শুরু করেন তবে অবশ্যি সূচনা অংশটুকু পড়ে নেবেন। তবে বইটিতে ঢুকে যেতে সুবিধা হবে। আর একটু ধৈর্য্য নিয়ে বসবেন। যাতে লম্বা ৬১৬ পৃষ্টার সাধু ভাষার বই পড়তে গায়ে ঘুন না ধরে যায়।
"গোলকধাম রহস্য" গল্পের শুরুতে মহাভারত প্রসঙ্গে তপেশরঞ্জন মিত্তির বলেছিলো, "এ হলো একধার থেকে ননস্টপ ভূরিভোজ। গল্পের পর গল্পের পর গল্প।" তপেশরঞ্জন ওরফে তোপসের এই কথা শুনে তার কাজিন-ব্রাদার ফেলু মিত্তির উল্লসিত হয়ে এই বইকে "আনপুটডাউনেবল" আখ্যা দিয়েছিলেন। "যে বই একবার পড়ব বলে পিকআপ করলে আর পুট-ডাউন করবার জো নেই!" যদিও তিনি যেটা পড়ছিলেন, সেটা ছিলো থানইঁট সাইজের কালীপ্রসন্ন সিংহের মহাভারত। কালীসিঙ্গির মহাভারত আমি একবার ট্রাই করেছিলাম। সামলাতে তো পারিই নি, উল্টে ল্যাজে-গোবরে হয়ে গেসলুম।
কালীপ্রসন্ন সিংহের দুই-খণ্ডের মহাভারত এমনিতেই সেই ঊনবিংশ-শতক স্টাইলের তৎসমবহুল পুরোনো বাংলায় লেখা। রেলগাড়ির মতো ইয়া লম্বা লম্বা বাক্য। তার উপর মহাভারতের কিসসার তো কোনো অন্ত নেই। একই কাহিনি চোদ্দোবার বলা হয়েছে। বেশিরভাগ কাহিনির সঙ্গে মূল গল্পের কোনো সংস্পর্শ নেই। সংস্পর্শ থাকলেও সেই সংস্পর্শের বিষয়টা আবিষ্কৃত হয়েছে চারশো-বত্তিরিশ পৃষ্ঠা পরে গিয়ে। চরিত্রদের সংখ্যারও কোনো গোনাগুন্তি নেই। গল্প ছাড়াও আরো অনেক কিছু আছে। দর্শন, সামাজিক রীতিনীতি, কূটনীতি, রাজনৈতিক তত্ত্ব, নীতিশাস্ত্র, আরো গুচ্ছের সব কঠিন কঠিন ব্যাপার-স্যাপার। প্রথমখণ্ডের ২৬.৩২% এগিয়েই মুন্ডু খামচে বসে থাকার মতো অবস্থা। সেল্ফ-কনফিডেন্সের সোয়া-বারোটা বেজে গেছিলো।
সেই কবে ছোটোবেলায় উপেন্দ্রকিশোরের মহাভারত পড়েছিলাম। রামায়ণ আর মহাভারত যদিও আলাদা করে পড়তে হয়না ভারতীয়দের। বিশেষ করে রামায়ণ। প্রি-ইনস্টলড সফটওয়ারের মতো, জন্মের সময় থেকেই এই গল্প আমাদের মগজের মাদারবোর্ডে চিপকানো থাকে। পৌনে-দুই বছরের পুঁচকে নাকেশিকনি ছোঁড়াকে যদি কেউ জিজ্ঞেস করে, রামচন্দ্রের শত্তুর কে? সেও আধো উচ্চারণে ঠিক ঠিক জবাব দেবে : রাবণ। রামচন্দ্রের বউ? - হিহি, সীতা।
কিন্তু উপেন্দ্রকিশোর তো অল্পবয়েসিদের কথা চিন্তা করে মহাভারত লিখেছিলেন। খোকাখুকুদের মন যাতে দূষিত না-হয় সেকথা ভেবে সমস্ত "অ্যাডাল" প্রসঙ্গ বাদ দিয়েছেন। অনেক গুরুগম্ভীর বিষয় ছেঁটে দিয়েছেন। শরশয্যায় শুয়ে পিতামহ ভীষ্ম কাকে কাকে কী কী পরামর্শ দিয়েছেন সেই জটিল কথাবার্তা শুনলে শিশুরা তো মনে মনে বলবে, অ্যাম্মা ক্বী বোরিং গল্প মাইরি ধুস্ আমি খেলতে গেলাম ঝন্টু তোর ব্যাট বের কর। তাই ওই বইতে ওইসব কিছুই নেই। কিন্তু আমি তো এখন বড় হয়ে গেছি! কালীপ্রসন্নও মুখ বাঁকাচ্ছেন আমার বুদ্ধিশুদ্ধির অভাব দেখে। তাইলে কি মহাভারতটা ভালো করে পড়াই হবে না আমার?
ঠিক এমনি সময়ে, এন্টার দ্য রাজশেখর দ্য বসু! এর আগে তাঁর হাসির গপ্পো পড়ে আঁকুপাঁকু হেসেছি অনেক। হ্যাহ হ্যাহ হ্যাহ হ্যাহ হাসতে হাসতে হঠাৎ চোখে পড়লো : আরে! ভদ্রলোক তো বিখ্যাত অভিধানও সংকলন করেছেন। "চলন্তিকা"। অলরাউন্ডার নাকি? তারও পরে একদা হাতে এলো তাঁর লেখা মহাভারত। আমার সব ছ্যাবলামি ফুলস্টপ হয়ে গ্যালো। আমি মহাভারত পড়লাম। কালীপ্রসন্নের দুইখণ্ডের দুটো থানইঁটকে উনি ওস্তাদের মতো পালিশ করে একখণ্ডের সুদৃশ্য শিল্পবস্তুতে পরিণত করেছেন। আমি তখনও বুদ্ধদেব বসু পড়িনি। মুজতবা আলি পড়িনি। শঙ্খ ঘোষ পড়িনি। বাংলা গদ্যের বলিষ্ঠ সৌকর্যে আমার প্রাণ যেন ভরে গ্যালো। প্রথমবারের জন্যে।
মহাভারতকে বলা হয় পৃথিবীর দীর্ঘতম মহাকাব্য। পৃথিবীর প্রাচীনতম গ্রন্থগুলোর অন্যতমও বটে। হিন্দুধর্মের একটা প্রধান আকরগ্রন্থ হিসেবে গণ্য করা হলেও আমি মহাভারতকে ধর্মগ্রন্থ হিসেবে বিবেচনা করিনা। একটা কথা সত্যি, মহাভারতের ভেতরেই আছে "শ্রীমদ্ভগবতগীতা", যে-বইটি হিন্দু বেদান্ত-দর্শনের সবচেয়ে জনপ্রিয় উৎস হিসেবে মান্যতা পেয়ে এসেছে বরাবর। কিন্তু মহাভারতের বিশালতাকে শুধুমাত্র একটি ধর্মের চৌহদ্দিতে আটকে রাখার চেষ্টা করা উচিত হবে না, চেষ্টা করে লাভও হবে না। মহাভারতের আবেদন সর্বজনীন। কোনো বিশেষ ধর্ম নয়, একটি বৃহৎ অঞ্চলের সম্মিলিত সংস্কৃতি ও সভ্যতার দীর্ঘকালীন লৌকিক ইতিহাস এটি। অধুনা-প্রচলিত আনুষ্ঠানিক পৌত্তলিক ধর্মের সংগঠন হয়েছে আরো অনেক পরে।
মূল মহাভারতের বিস্তারিত আলোচনা করার পরিসর এটা নয়। (আমার পক্ষে সম্ভবও নয়!) আমি বরং রাজশেখর বসুর ভার্শনটার ব্যাপারে আর মাত্তর চাট্টি কথা বলে আজকের বক্তিমে শেষ করবো আজ্ঞে। রাজশেখর বসুর মহাভারতের সবচেয়ে বড় প্লাসপয়েন্ট হলো, মূল মহাভারতের একটা উপাখ্যানও উনি বাদ দেননি। একটা প্রসঙ্গও হাপিস করেননি। এমনকি প্রচলিত দার্শনিক অংশগুলোও দিব্যি রেখে দিয়েছেন (যেমন "গীতা")। উনি শুধু মূল সংস্কৃ��� মহাভারতের অতিরিক্ত কোলেস্টরল এবং ফ্যাটকে ট্রেডমিল-দ্বারা বর্জন করিয়ে সিক্স-প্যাক সারবস্তুটুকু পরিবেশন করেছেন। যাতে আমার মতো ধৈর্যহীন, বুদ্ধিশুদ্ধিহীন ব্যক্তিরাও মহাভারত-পাঠের অভিজ্ঞতা এবং আনন্দ লাভ করতে পারে।
ভাগ্যিস রাজশেখর বসু ছিলেন। তাই আমিও এখন গুরুগম্ভীর আলোচনায়, বিজ্ঞবাগীশ কলার তুলে, স্লো-মোশনে জামার হাতা গোটাতে গোটাতে উদাস কিন্তু হেব্বিজ্ঞানী নয়ন মেলে বলতে পারি : তো ইয়ে যেটা বলছিলাম আরকি... গরুড় যদিও সেই বিশাল গাছটার মগডালে বসে আরাম করে গজকচ্ছপ ভোজন করছিলো, কিন্তু গাছের ডাল তো গ্যালো ভেঙে... শেষ পর্যন্ত গন্ধমাদন পর্বতের শৃঙ্গে বসেই ভোজন করতে হলো তাকে, আর কোনো উপায়ও তো ছিলো না বেচারার, তাইনা?
আপনারা যারা রাজশেখর পড়েননি তারা তো আমার কথা কিসুই বুঝবেন না। শুধু বলবেন, হেঁ হেঁ তা তো বটেই, তা তো বটেই...
লৌকিক অলৌকিকে একাকার। ছোটবেলা থেকে রামায়ণ, হনুমান, ঘটৎকচ, ভীম,কৃষ্ণ বিভিন্ন কার্টুন বেজ প্রোগ্রাম গুলো দেখতে খুব ভালো লাগতো। এর আগে আমি গ্রিক মিথলজি পড়েছিলাম। কিন্তু হিন্দু পুরাণ আমার কাছে ব্যাক্তিগত ভাবে অনেক বেশি ইন্টারেস্টিং লাগে।
আধুনিক সমালোচক-দের হাতে কিছু কিছু বিশেষণ ব্যবহৃত-ব্যবহৃত-ব্যবহৃত হতে হতে শুয়োরের মাংস হয়ে গেছে, তার মধ্যে একটা হলো: "মহাকাব্যিক" ('এপিক')| কিন্তু বিশেষণটি সত্যি-সত্যি প্রযোজ্য এমন মুষ্টিমেয় বই-এর মধ্যে একটি হলো "মহাভারত"-এর রাজশেখর বসু-কৃত সারানুবাদ| বেদব্যাস-রচিত সুবিশাল মহাভারত নিয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না, কারণ পুরাণ-লোকপ্রবাদ-কিংবদন্তী-দর্শন-সোশ্যাল কোড: এই সবের মিশ্রণ-স্বরূপ ওই অতি বৃহৎ বইটি আমি মূল ভাষায় ও ভাষ্যে পরে উঠতে পারি নি| কিন্তু তার এই সারানুবাদটি ঝরঝরে ভাষায় সব রকম দার্শনিক ও তাত্ত্বিক কচকচানি ছেড়ে মহাভারতের গল্পময় রূপটি আমাদের সামনে উদ্ভাসিত করে| ছোটোবেলা থেকে শুনে আসা গল্প আর প্রবাদ-গুলো এই বই-এর সৌজন্যে উজ্বল হয়ে উঠলো আবার| একই সঙ্গে এটাও বুঝলাম যে আমাদের সমাজ ও ইতিহাসের কতো লম্বা একটা পর্যায় এতে মেটাফর-এর মাধ্যমে ধরা পড়েছে, যে জন্যে একই বই-এ আমরা দেখি নারীর স্বাধীনতার জয়গাথা এবং পিতৃতন্ত্রের ক্রূর প্রকাশ| হাইলি রেকমেন্ড-এড|
মহাভারত পড়েছি ৫ বার। তিনটা কপি আছে আমার কাছে। দুই কপি নিজে কিনেছি। এক কপি পিয়াসের বউ গিফট দিয়েছে। তানিয়া অনেকবার চেয়েছিলো- তোর তো তিনটা বই আছে, একটা আমাকে দিয়ে দে। দেই নি। মহাভারত হাতছাড়া করা যায় না।
যতজন আমার কাছে কী বই পড়বো জিজ্ঞেস করে, আমি বলি 'মহাভারত' দিয়েই শুরু করুন। এরচেয়ে ভালো কিছু মহা ভারতে আরেকবার লেখা হবে এই আশা দুরূহ।
তবে রাজশেখর বসু পড়ার সময় মাথায় রাখবেন, মহাভারতের অনেক ভার্সন আছে। আপনি হয়তো লোকমুখে বহু গল্প শুনবেন- তা সকল ভার্সনে নাও পেতে পারেন।
আর এই বইয়ের সাথে অবশ্যই গীতা পড়ুন। আখেরে অনেক সওয়াব কামাই হবে। ওম শান্তি।
'মহাভারত' পড়ার ইচ্ছা ছিল ছোটবেলা থেকেই।মহাভারত থেকে নেয়া ছোট গল্পগুলো আকর্ষন করত সবসময়। একটু বড় হওয়ার পর হাতে আসল ঊপেন্দ্রকিশোরের 'ছেলেদের মহাভারত'।এরপর কালের পরিক্রমায় সুনীলের 'আমাদের মহাভারত' হয়ে রাজশেখর বসু অনুদিত মহাভারতে পদার্পণ।
মহাভারত আসলেই বিশাল এক উপাখ্যান। এটি শুধু কুরুপাণ্ডবদের ইতিহাস নয়,সমগ্রভারতবর্ষের ইতিহাস।মূলকাহিনি ,শাখাকাহিনি,উপকাহিনি মহাভারতকে এর বিশালত্ব দিয়েছে।মহাভারত যেন প্রবাহমান নদীর মতো সকল পৌরাণিক গল্প, গাঁথা গ্রাস করে নিয়েছে। পড়তে যেয়ে দেখলাম,প্রচলিত অনেক বাগধারা,প্রবাদ প্রবচন এর উৎপত্তি এই মহাভারত থেকেই।মহাভারতে কি নেই আসলে? উত্তেজনা,যুদ্ধ, শান্তি,দর্শন,ট্রাজেডি সবই আছে মহাভারতের পাতায় পাতায়।
মহাভারত শুধু একটি উপাখ্যান নয়, এতে আছে দর্শন,সমাজ,কূটনীতি,যুদ্ধ। মহাভারতে কেউ দেবতা নয়,সবাই মানুষ। তারা কেউই ভুলের উর্দ্ধে নয়।সবাই ভুল করেছে,সেটার ফল ও পেয়েছে।মহাভারতের মূল নায়ক আমরা কাকে বলব? যুধিষ্ঠির? অর্জুন? কর্ণ? কৃষ্ণ? আসলে মহাভারতের মূল নায়ক হল মহাকাল। কালের গর্ভে সকলে হারিয়ে গিয়েছে, সকল অপরাধ, দ্বন্দ এর অবসান করেছে এই কাল।কালের আবর্তনে একসময় এর পরম মিত্র হয়েছে পরম শত্রু, আবার কিছু ক্ষেত্রে বিপরীতও সত্য।
মহাভারতের আরেকটি বিষয় হল, দৈব্য বা ভাগ্য। আমরা যতই চেষ্টা করি না কেন, ভাগ্যের প্রভাব অতিক্রম করা সম্ভব নয়।স্বয়ং কৃষ্ণ তার জানা থাকলেও যাদব বংশের ধংস্ব আটকাতে পারেন নি।যদিও কর্মের দ্বারাই ভাগ্য নির্ধারিত হয় - এটাও মহাভারতের অন্যতম শিক্ষা।
মহাভারত উপলদ্ধির বিষয়,অনেক অনেক গভীর এর দর্শন। যুধিষ্ঠিরের জীবনভাবনা, শান্তিপর্বে ভীষ্মের উপদেশ সত্যিই চিন্তার খোরাক যোগায়। কৃষ্ণের রাজনৈতিক ও কুটনিতিক দক্ষতা অবাক করার মত।
মহাভারত নিছক কোন ধর্মীয় গ্রন্থ নয়,এর সাথে পুরো ভারতবর্ষের ইতিহাস জড়িয়ে আছে।ধর্ম বর্ণ নির্বিষেশে সবার অবশ্যপাঠ্য এই ঐতিহাসিক মহাকাব্য।
রাজশেখর বসুর এই অনুবাদটি অনেক সহজ ভাষ্যে লিখা।কিন্তু অনুবাদক সাহিত্যের চেয়ে কাহিনি বর্ণ্নায় সময় বেশি দিয়েছেন। ভবিষ্যতে কালিপ্রসন্ন সিংহ অনুদিত দুই খন্ডের মহাভারতটি পড়ার ইচ্ছে রইল।
যা নেই ভারতে, তা নেই ভারতে--মহাভারত নিয়ে অত্যন্ত ক্লিশে একটি প্রবাদ। প্রথম ভারতটি মহাভারত, দ্বিতীয় ভারতটি ভারতবর্ষ। আমার মনে হয়েছে, দ্বিতীয় ভারতটি ভূ-ভারতও হতে পারে। পৃথিবীতে যত রকম সামাজিক-রাজনৈতিক-কমেডি-ট্র্যাজেডি-ড্রামা-মিস্ট্রি-ফ্যান্টাসি-হরর-রোমান্টিক-রিভেঞ্জ-ডার্ক-ষড়যন্ত্র মানে যে কোন বিষয় নিয়েই লেখা হোক, মহাভারতে আসলে সবই লেখা হয়ে গেছে; অন্য সব কিছুই এরই নানা অংশ নিয়ে নতুন বোতলে পুরনো মদ পরিবেশন ছাড়া আর কিছুই নয়। মহাভারত না পড়লে এর বিশালত্ব আর ব্যাপকত্ব নিয়ে বোঝানো কঠিন; শুধু এটুকু বলা যায় যে, গেম অভ থ্রোনস দেখে বা পড়ে কেউ যদি লাফালাফি করে, মহাভারতের প্যাঁচঘোঁচের কাছে এই জিনিস শিশুতোষ। একইসাথে, মহাভারত সর্বকালে সর্বযুগেই প্রাসঙ্গিক। মূল মহাভারত পড়া সম্ভব নয়, শুধু সংস্কৃত ভাষা না জানার ব্যাপার নয়, দুই লক্ষাধিক শ্লোকবিশিষ্ট একটা জিনিস অনুবাদ করলেও সেটা হজম করার মত বিদ্যাবুদ্ধি বা সময় কোনটাই আমার নেই। আবার বেশি সংক্ষিপ্ত হলে (উদাহরণস্বরূপ, উপেন্দ্রকিশোরের ছেলেদের মহাভারত বা সুনীলের আমাদের মহাভারত) অনেক কিছুরই কার্যকারণ বা কাহিনী পরম্পরা ঠিক পরিস্কার হয় না। সেজন্য বাঙালিদের কাছে সম্ভবত সেরা অপশন হলো রাজশেখর বসুর মহাভারত, যেটাকে তিনি বলেছেন সারানুবাদ। সেই সারানুবাদও বিশাল, কিন্তু একবার ধরলে আর নামিয়ে রাখা যাবে না, কাজেই পাঠক যেন হাতে সময় নিয়ে বসেন, সে অনুরোধ থাকবে। কাহিনী নিয়ে কিছু না বলাই ভাল; যারা পড়েছেন তাদের নতুন করে বলার কিছু নেই, যারা পড়েননি তাদের মজা নষ্ট করারও কোন অর্থ নেই। মহাভারত আমাদের মানবসমাজের এবং মানবচরিত্রের সম্ভবত সবচেয়ে নিখুঁত চিত্রায়ন; কেন বলছি, সেটা পড়লেই বুঝতে পারবেন।
What an epic masterpiece! It's not simply a story of war between two lineages as commonly presumed, rather full of rich metaphors and philosophy, this is a story of devotion, love, anger, deception, lust, patience and so much more. It’s a story of time and all beings. The characters who are to be flawless, are flawed; the image of righteousness and truth is not constant and in my opinion, this is what makes this gallant saga extraordinary.
মহাভারত পড়ার আগে ভয় হচ্ছিলো। নিশ্চয়ই অনেক কঠিন ভাষায় লেখা। অনেক কথাই হয়তো বুঝতে পারবো না। কিন্তু রাজশেখর বসুর এই অনুবাদ সমস্ত ভুল ধারণা ভেঙ্গে দিলো। অনেক সংস্কৃত শব্দ ব্যবহার হলেও লেখক যথেষ্ট প্রাঞ্জল অনুবাদ করেছেন। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে মহাভারত সম্পর্কে আগে থেকেই কিছুটা জানা শোনা থাকায় পড়তে আর বুঝতে আরো সুবিধা হয়েছে। বই পত্রে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের কথা অনেকবার পড়েছি, তাই ধরে নিচ্ছি মহাভারত শুধু পৌরাণিক কাহিনীই নয় এর কিছু ঐতিহাসিক ভিত্তিও আছে। তবে বইয়ে যেসব অলৌকিক কাহিনীর বর্ননা আছে সেগুলা সত্যি হবার অবকাশ নেই। তবুও সনাতন ধর্মের অনেকেই এই কাহিনিগুলোকে তাদের ধর্মের অংশ বলেই মনে করে। এই দিক থেকে দেখতে গেলে মহাভারত একটি অসাধারণ সাহিত্যকর্ম। একটা সাধারণ সাহিত্যগ্রন্থ মানুষের জীবন, মানুষের বিবেক, মানুষের চিন্তা চেতনাকে কতটুকু প্রভাবিত করলে সেটা ধর্মগ্রন্থ হিসেবে স্বীকৃতি পায় তা বলাই বাহুল্য।শুধু একটা সাহিত্য সিহেবে দেখলে মহাভারত অসাধারণ একটি রচনা। এই গ্রন্থে প্রতিটি চরিত্র সমান সুযোগ পেয়ে বিকশিত হয়েছে।কোন চরিত্রকে খাটো করে দেখার উপায় নেই। শান্তনু, ভীষ্ম, সত্যবতী, ধৃতরাষ্ট্র, গান্ধারী, পান্ডু, কুন্তি, মাদ্রী, পাঁচ পান্ডব, দূর্যোধন, কৃষ্ণ, শকুনী, দ্রৌপদী, কর্ণ, দ্রোনাচার্য, অশ্বথামা, শিখন্ডী, একলব্যা, রুকমনি, সুভদ্রা, অভিমান্যু, বিভিন্ন দেব দেবতা, কংস মামা, বলরাম এই প্রত্যেকটা চরিত্র গুরুত্বপূর্ন। এদের কাউকে বাদ দিয়ে মহাভারত কল্পনা করা যায় না।এই আখ্যান শুধু কৌরব আর পান্ডব দের গৃহবিবাদ, রাজ্য নিয়ে টানাটানি, ক্ষমতার লিপ্সা, প্রতিশোধ , প্রেম, অন্যায়, ঘৃনা, মিথ্যা আর যড়যন্ত্রের কাহিনিই নয়। এসবের বাইরেও মানুষের জীবন দর্শন ও ঈশ্বরের প্রতি ভক্তির চিত্র ও ফুটে উঠেছে। এই গ্রন্থে ধর্ম, অর্থ, কাম , মোক্ষ ইত্যাদি বিষয়ও উঠে এসেছে। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পুরোটা সময় ও তার আগের অনেকটা সময় এইসব বিষয়গুলো উঠে এসেছে অর্জুনের প্রতি কৃষ্ণের বিভিন্ন উপদেশে। এই আখ্যান ভিষ্ম আর গান্ধারীর আত্মত্যাগের আখ্যান, শকুনী আর কংস মামার ষড়যন্ত্রের আখ্যান, ধৃতরাষ্ট্রের অন্ধ পুত্র প্রেমের আখ্যান, কৌরবদের লোভ আর লালসার আখ্যান, পান্ডবদের নিষ্ঠা, সততা আর ভক্তির আখ্যান, কর্ণের না পাওয়ার আখ্যান, দ্রৌপদীর শোষিত হয়ার আখ্যান। কিন্তু অর্জুন ছাড়া এই গ্রন্থের যে মূল চরিত্র কৃষ্ণ, তাঁর কোন বিশেষত্ব খুঁজে পেলাম না এই বইয়ে। রাধার সাথে প্রেম, রুকমনি কে কিডন্যাপ করে এনে বিয়ে করা, দ্রৌপদী কে বিয়ে করেছে জানা সত্বেও নিজের বোন সুভদ্রা কে অর্জুনের সাথে বিয়ে দেয়া, অর্জুন কে দিয়ে পরিবারের সবাইকে হত্যা করানো, কর্ন অর্জুনের ভাই এটা জানা সত্বেও গোপন রাখা, ফলশ্রুতিতে অর্জুনের হাতে কর্ণের মৃত্যু (তাও আবার প্রতারণা করে, যখন কর্ণের কবজ আর কুন্ডল সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসায় কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিলো তখন) এইসব শুধু কৃষ্ণের প্রতারণা, ছলনা আর কুটবুদ্ধির পরিচয়ই দিয়েছে। যাকে সবাই ঈশ্বর মানে তার মধ্যে তেমন ঐশ্বরিক কোন গুনাবলীই চোখে পড়েনি। আর অর্জুন কে সবাই কেন বীর মনে করে তাও বুঝলাম না। কৃষ্ণের কুটবুদ্ধি ছাড়া অর্জুন তো প্রায় অচল, আর দ্রোনাচার্য যদি একলব্যর হাতের আঙ্গুল কেটে না নিতেন তাহলে অর্জুনের তো পাত্তাই থাকতো না। তবে সত্যিকারের বীর যদি কেউ থেকে থাকে তাহলে সেটা অবশ্যই কর্ণ । সে শুধু শক্তিতেই বীর নয়, দানবীর ও বটে। সে কখনো প্রতারণা করেনি, যতটুকু জয় করেছে তা নিজের শক্তি আর সামর্থ্য দিয়ে করেছে। অর্জুনের মত কারো সাহায্য নেয়নি। মারা যেতে পারে জেনেও দেবরাজ ইন্দ্রকে তার শরীরের কবজ ও কুন্ডল দান করে দিয়েছে। বীরের মত হাসতে হাসতে মৃত্যুকে বরণ করে নিয়েছে। এই না হলে বীর! শুধু উপন্যাস হিসেবে দেখলে এই বইয়ের প্রতি পাতায় পাতায় টুইস্ট। চুম্বকের মত আটকে রাখার মত একটি বই। আর ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে বলতে হয়, হ্যাঁ এই বইয়েরও কিছু মোরাল মেসেজ আছে। শেষে এসে বোঝা যায় কি করে অধর্মের নাশ আর ধর্মের বিজয় হয়, কি করে মিথ্যা কে ছাপিয়ে সত্যের জয় হয়, কি করে অহংকারী আর লোভীদের পতন হয়। একটা মাস্ট রীড বই...।
বইটার সুনাম আছে জানি। এমনকি আম পাঠকদের কাছে কাশীদাসের মধ্যযুগীয় কাব্য পড়ার চেয়ে গদ্য মহাভারত অধিক গ্রহণযোগ্য, এটাও বুঝি। কিন্তু কাশীদাসী মহাভারত এর যে সরসতা, সেটা এই বইয়ে অনুপস্থিত।
একটু পুরাতন বাংলা সয়ে নিতে পারলে আমি সবাইকে বলব কাশীদাসী মহাভারতটাই পড়ে ফেলতে। দারুণ জিনিস ওটা মাইরি!
তবে রাজশেখর বসুকে ক্রেডিট দিতেই হবে এই গদ্য মহাভারত এর জন্য, সাধারণ্যে পৌছাঁনোর জন্য এই প্রচেষ্টার দরকার ছিল।
মহাভারত নিয়ে নতুন করে তো কিছু বলার নেই! ডিটেইলে গল্প আকারে পড়তে চাইলে রাজশেখর বসুর বইটা অতুলনীয়। বিশেষ করে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের বর্ণনা ভীষণ জীবন্ত। পড়ে মজা পেয়েছি!
অনেক সংস্করণ ঘেটে ঘেটে শেষমেশ রাজশেখর বসুর অনূদিত মহাভারত পড়লাম। ভারতীয় উপমহাদেশ এর সর্ববৃহৎ সাহিত্য কীর্তি বললে একে ভুল বলা হবে না। এ উপমহাদেশ এর ভাষা , সংস্কৃতি , প্রবাদ-প্রচলন সহ অনেক কিছুর ধারণা পাওয়া যায় এই মহাকাব্য পাঠ করে। এ কীর্তি উপমহাদেশ এর সাহিত্য জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করতে অবশ্য পাঠ্য বলে আমি মনে করি।
যা নেই মহাভারতে তা নেই ভারতে। মহাভারতের কাহিনী পট মিথলজিকাল টাইপের, যেটির রচনা করেছেন মহর্ষি কৃষ্ণদৈপায়ন বেদব্যাস। এবং বাংলা অনুবাদ করেছেন রাজশেখর বসু, হরিদাস সিধান্তবা���ীশ, কালীপ্রসন্ন সিংহ সহ অসংখ্য বেদর্থ পন্ডিত। তবে রাজশেখর বসুর অনুবাদটাই যথেষ্ট ভালো ছিলো।
মহাভারত মহাকাব্যটির মূল আলোচনা দুটি বংশ কৌরব ও পান্ডবদের নিয়ে। এই মহাকাব্যে রয়েছে প্রেম, ভালোবাসা, মোহ, কাম, ক্রোধ, হিঃসা, যৌনতা, যুদ্ধ সহ আরও অনেক কিছু। সমস্ত কিছুর মিশ্রনে এ যেন এক মহাকাব্যগাথা।
নিজেদের মধ্যে চক্রান্ত ও মামা শকুনীর শলাপরামর্শে পান্ডবদের প্রতি এক চরম হিংসা��� জন্ম দিয়েছিলো কৌরবরা। ধীরে ধীরে এই হিংসা জন্ম দিলো এক মহাযুদ্ধের, যেটির নাম কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ। যেটি ১৮ দিন যাবৎ চলতে থাকলো, যেখানে মৃত্যুবরন করেছিলো পৃথিবী বিখ্যাত সব নৃপতিরা। যুদ্ধে পান্ডবদের জয়লাভ হয়েছে, যার নেপথ্যে রয়েছেন যদুকুলপতি শ্রীকৃষ্ণ। তার পরামর্শে জয়লাভ করেছিলো পান্ডবগন।
অসাধারণ একটি বই মহাভারত। যারা এখনো পড়েন নি, তারা চাইলে Mirchi Bangla থেকে মহাভারতের যে অডিয়োবুক বের করা হয়েছে সেটা আগে শুনতে পারেন। অতঃপর চাইলে রাজশেখর বসুর অনুবাদ করা বইটি পড়তে পারেন।
মহাভারত নিয়ে কিছু বলার নেই। আবার না বলেও পারা যায় না।
সর্বপ্রথম যেটা চোখে পড়েছে সেটা হলো মহাভারত নিয়ে ছেলেখেলা টা। না রাজশেখর বসুর ব্যাপারে বলছি না। উপেন্দ্রকিশোর এর ব্যাপারে বলছি। মহাভারত কে সহজ করে লিখেছিলেন। কিন্তু সেটার সাথে মূল মহাভারতের এত পার্থক্য হবে ভাবতে পারি নি!😑
আরেক টা কথা বলি, স্টার জলসা /প্লাস এর মহাভারত টা কম বেশি সবাই দেখেছি।এখন ওটার স্ক্রিপ্ট রাইটার আর পরিচালক কে গিয়ে থাপ্রাইতে মন চাচ্ছে! 😑
যাই হোক এই মহাভারত সম্পর্কে বলি, ‘যা নেই ভারতে, তা নেই ভারতে ’ এটার মানে তো সবাই জানি। এটার মানে হলো ভারতে এমন কিছু নেই যা মহাভারতে নেই। এই বই টা পড়ে এই কথাটার মাহাত্ম্য আন্দাজ করতে পেরেছি।
একটা জিনিস বেশ চোখে পড়েছে, মহাভারতে যাই ঘটুক না কেন তার সবকিছুরই কোন না কোন কারন আছে। যেন সব কিছুরই মূল খুঁজে বের করা যায়।
আসল মহাভারত আরো বড় জানি। যা বলেছি এই মহাভারত পড়ে বলেছি। আসল টা পড়ার ইচ্ছে আছে!
মহাভারত নিয়ে কিছু বলার নেই। আবার না বলেও পারা যায় না।
সর্বপ্রথম যেটা চোখে পড়েছে সেটা হলো মহাভারত নিয়ে ছেলেখেলা টা। না রাজশেখর বসুর ব্যাপারে বলছি না। উপেন্দ্রকিশোর এর ব্যাপারে বলছি। মহাভারত কে সহজ করে লিখলেন। কিন্তু সেটার সাথে মূল মহাভারতের এত পার্থক্য হবে ভাবতে পারি নি!😑
আরেক টা কথা বলি, স্টার জলসা /প্লাস এর মহাভারত টা কম বেশি সবাই দেখেছি।এখন ওটার স্ক্রিপ্ট রাইটার আর পরিচালক কে গিয়ে থাপ্রাইতে মন চাচ্ছে! 😑
যাই হোক এই মহাভারত সম্পর্কে বলি, ‘যা নেই ভারতে, তা নেই ভারতে ’ এটার মানে তো সবাই জানি। এটার মানে হলো ভারতে এমন কিছু নেই যা মহাভারতে নেই। এই বই টা পড়ে এই কথাটার মাহাত্ম্য আন্দাজ করতে পেরেছি।
একটা জিনিস বেশ চোখে পড়েছে, মহাভারতে যাই ঘটুক না কেন তার সবকিছুরই কোন না কোন কারন আছে। যেন সব কিছুরই মূল খুঁজে বের করা যায়।
আসল মহাভারত আরো বড় জানি। যা বলেছি এই মহাভারত পড়ে বলেছি। আসল মহাভারত ডজনখানেক বার পড়া শেষ।
Mahabharat is not only a spectacular volumnous epic with mighty & motley charaters and enticing stories but also an invaluable source of ancient yet eternal wisdom.
বইটা পড়া শেষ করেছি প্রায় ১২ দিন আগে। রিভিউ লিখি নি। মনে হয়েছে সময় নিয়ে ভাবা উচিত কি লিখব। বইটা পড়া শুরু করার আগে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম 'ধর্মগ্রন্থ' হিসেবে পড়ব না। বাস্তবিক অর্থে ধর্মগ্রন্থগুলো শ্রদ্ধার যাতাকলে শেষ করে উঠতে পারিনা। বেশ কিছুটা সময় নিয়ে পড়েছি, বুঝতে চেষ্টা করেছি। বুঝেছি হয়ত ১%, এই অনেক। এই ছোট সাইজের(প্রকৃত মহাভারত আরো বড়, এখানে অনেক উপাখ্যান বাদ দেয়া হয়েছে) মহাভারতে যা কিছু শেখার আছে তা আরও ১০০ টা বই পড়লেও শেখা যাবে না। এক কথায় অনন্য! ধর্ম, অর্থ, মোক্ষ, সমাজ, রাজনীতি, কূটনীতি, যুদ্ধনীতি কি নেই এতে? আমি তো মনে করি ভারতীয় রাজাদের মহাভারত পড়া থাকলে ভারত কখনো পরাধীন হতই না। মহাভারতের চরিত্রগুলো বড় বিচিত্র, এক একটা ছোট চরিত্র যেন মহীরুহ। পুরো মহাভারত জুড়ে একলব্যের নাম ২/৩ বার উচ্চারিত হয়েছে অর্থাৎ খুব ছোট একটা চরিত্র। কিন্তু এই একলব্যকে নিয়েই হরিশংকর জলদাস একটি অসাধারণ সামাজিক উপন্যাস "একলব্য" রচনা করেছেন, সেখানে একলব্য নায়ক। মহাভারতের ব্যাপ্তি এতই বেশি যে এর খুব ছোট চরিত্র বা ঘটনাকে টেনে বড় করে আর একটা উপন্যাস বা গল্প লিখে ফেলা যায়। হিন্দু হন বা না হন, এই বইটি অবশ্য পাঠ্য। ধর্মগ্রন্থ হিসেবে নাই বা পড়ুন, শেখার আছে অনেক কিছু।
বিঃদ্রঃ অনেক পুরনো একটা বহুল প্রচলিত কাহিনী নিয়ে লিখিত একটা বই এই মহাভারত। বিভিন্ন শতাব্দীতে নানান লেখকের হাতে পড়ে অনেক ঘটনা চরিত্র আচরণ বদলে গেছে। বিভিন্ন চরিত্রের স্ববিরোধী আচরণ এখানে প্রায়শই দেখা যায়। সংখ্যার ব্যাপারও এলোমেলো আছে কিছু যায়গায়। আর যেহেতু সেকালে ব্রাক্ষ্মণেরাই শিক্ষায় এগিয়ে ছিল এবং শাস্ত্রে অধিকার তাদেরই ছিল তাই তারা নিজ স্বার্থে অনেক জায়গায় স্বেচ্ছায় ঘটনা বদলেছেন বা নতুন ঘটনা যোগ করেছেন বলে মনে হয়েছে। সবশেষে বলি, ধর্মগ্রন্থ হিসেবে পড়লে মনে রাখবেন এটা বহুজনের হাতে পড়ে আর আদিরুপে নেই। তাই সবকিছুকে পরম সত্য হিসেবে নিতে গেলে বাধা পাবেন। এসব পাশে সরিয়ে রেখে ধর্মের মূল কথা গ্রহণ করুন। ভগবানকে ধন্যবাদ এই বই পড়ার সুযোগ পেলাম।
আরব্য উপন্যাসকে বলি আমি বড়দের রূপকথা। আসলেই এটা প্রাপ্তবয়স্কদের রূপকথা কি না সেটা নিয়ে অন্য কোথাও আলাপ চলতে পারে, এখানে বলি মহাভারতের রিভিউ লিখতে গিয়ে আমার আরব্য উপন্যাসের গল্প ফাঁদার কারণ কী? কারণ হলো, আরব্য উপন্যাসের কাহিনি বুনন কৌশল। মনে করা যাক, একজনের সঙ্গে আরেকজনের গণ্ডগোল লেগেছে। তারা মারামারি করলো, একজন মারা গেল। রাজার কাছে বিচারের জন্য নিয়ে গেল। খু��ী এবার বলবে, তারা এগারো ভাই। এগারো জনের এগারো রকম কাহিনি। সব কাহিনি খুনী বলবে, রাজা শুনএ। এবার আসবে নিহতের ভাই। তারাও সাত ভাই। সে সবার কাহিনি বলবে। এভাবে ত্যাঁনা পেঁচাতে পেঁচাতে এক হাজার এক রাত্রির জায়গায় দশ হাজার বত্রিশ রাত চলে যাবে, টের পাওয়ার আগেই।
মহাভারতের কাহিনি এমন সিলি না হলেও, বুননের এই জটিল পন্থা কোথাও কোথাও নিতে দেখা যায়। বিশেষ করে বনবাসের সময়ে পাণ্ডবদের সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য যে স গাঁথা বর্ণনা করা হয় সেগুলো।
মহাভারত হলো, কটি জিনিস অনেকভাবে দেখার একটি প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল। মহাভারত দেয় দৃষ্টিভঙ্গি। মহাভারত দেয় তর্ক করার জ্বালানি। মহাভারতের কোনো চরিত্র বা পক্ষে নিজেকে স্থাপন করে, নিজের মতামতের পক্ষে দাঁড়িয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করলে বিপরীতে যে দাঁড়িয়ে তাকে অবলীলায় পরাজিত করা অসম্ভব। মহাভারত এমন এক আয়না যেখানে সবাই নিজের মুখ দেখতে পারে।
মহাভারত হলো, এক আশ্চর্য গাঁথা, যা মানুষকে নিজের আদর্শের প্রতি অটল থাকার প্রেরণা দিয়েছে।
মহাভারতের জন্য আমার রেটিং হলো-৬/৫ কালজয়ী সাহিত্যের রেটিং পাঁচের মধ্যে ছয় হতে পারে না? আমার মনে হয় পারে।
আগে একবার পড়া শুরু করেও খুব একটা আগাতে পারছিলাম না। এইবার নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করলাম। মাহবুব লীলেনের অভাজনের মহাভারত পড়া শুরু করলাম। ওটার এক একটা চ্যাপ্টার পড়ি, তারপর এটা থেকে সমপরিমাণ কাহিনী আগাই। এভাবে হয়েই গেল শেষ পর্যন্ত। আমি ধর্ম গ্রন্থ হিসাবে পড়ি নাই, গ্রিক মিথোলোজি গুলো পড়ে যেরকম আনন্দ পেয়েছি, সেরকমই সুখপাঠ্য। বড় বই, অনেকগুলো চরিত্র হিসাব রাখতে কারো কারো সমস্যা হতে পারে। সেখানেও আমাকে সাহায্য করেছে অভাজনের মহাভারত।
A very nice translation of a famous epic. The original poem is in Sanskrit. It is translated into Bengali in prose form, but the poetic appeal is still there in the translation.
Mahabharat deals with the conflict of human life that is still relevant. One may read it for the very interesting story of the War of Kurukshetra, but one can find a deeper sense of life and philosophy in this epic.
BEST BOOK EVER....... aaawwweeeeeessssssooooooooooooooooooooooooooooooooooommmmmmmmmmmmmmmmmmmeeeeeeeeeeeeeeeeeeeeeeeeeeeeeeeeeeeeeeeeeeeeeeeeeeeeeeeeee