'সাহাবিরা গরিব’ ছিলেন এমন ধারণা অনেকের মধ্যে আছে। সাহাবিরা কি আসলেই গরিব ছিলেন নাকি তারা স্বেচ্ছায় এমন জীবনযাপন করতেন যা দেখে মনে হয় তারা ‘গরিব’? খায়বার বিজয় পরবর্তী মুসলিম দুনিয়ায় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটে। বেশিরভাগ সাহাবির অর্থনৈতিক জীবন পাল্টে যায়। পাল্টে যাওয়া অর্থনৈতিক জীবন তারা কীভাবে যাপন করেন এই নিয়ে বইটিতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। অনেক সাহাবি ছিলেন কোটিপতি। মৃত্যুর আগে তারা কয়েকশো কোটি টাকার সম্পদ রেখে যান। যাদেরকে আমরা ‘গরিব’ বলে জানি, তারাও পর্যন্ত একদিনে কোটি টাকার সম্পদ দান করতেন। সাহাবিদের অর্থনৈতিক জীবনের অজানা অধ্যায় নিয়ে এই বই।
"সাহাবিরা গরিব ছিলেন, দিন আনে দিন খায় টাইপ"- আমাদের ম্যাক্সিমাম মানুষের ধারণাটাই এমন। বইটা পড়ার পর সবার আগে এই স্টেরীওটাইপটা ভাঙবে।
প্রকৃতপক্ষে, খায়বার বিজয়ের পূর্ব পর্যন্ত বেশিরভাগ সাহাবির জীবনযাত্রা কঠিন ছিল। তবে খায়বারের বিজয়ের পর মুসলিম জগতে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসে এবং বেশিরভাগ সাহাবির আর্থিক অবস্থা উন্নত হয়। পাল্টে যাওয়া অর্থনৈতিক জীবন তারা কীভাবে যাপন করেন এই নিয়ে বইটিতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। অনেক সাহাবি ছিলেন কোটিপতি। মৃত্যুর আগে উনারা ইনসেইন এমাউন্ট এর সম্পদ রেখে যান। যাদেরকে আমরা গরিব বলে জানি, তারা একদিনে কোটি টাকার সম্পদও দান করতেন। সাহাবিদের অর্থনৈতিক জীবনের অজানা অধ্যায় নিয়ে এই বই।
আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রাদিয়াল্লাহু আনহু কে আমরা চিনি। জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত সাহাবীদের একজন। উনি মাত্র ২ দিনার পুঁজি নিয়ে মদীনায় হিজরত করেন। সেখানে একজন সাহাবি তাঁকে ফ্রিতে প্রচুর সম্পদ দিতে চান। কয়েক কোটি টাকার সম্পদ! কিন্তু, তিনি প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে বলেন- “আমাকে শুধু বাজারের পথটা দেখিয়ে দিন।”
মদীনার বাজারে গিয়ে শুরু করলেন ঘি আর পনিরের ব্যবসা। অল্প দিনেই ব্যবসায় লাভ করেন। ব্যবসায় অর্জিত মুনাফা পেয়ে প্রথমেই তিনি বিয়ে করেন। নিজের মোহরানা নিজেই পরিশোধ করেন, ওয়ালিমার আয়োজন করেন।
একটা স্ট্যাট শেয়ার করি। আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন ইন্তেকাল করেন, তখন তাঁর সম্পদের পরিমাণ ছিল: ১০০টি উট ৩০০০টি ভেড়া ১০০টি ঘোড়া জমিতে পানি দেবার জন্য ২০টি উট ১৯ লক্ষ ২০ হাজার দিরহাম রেখে যান; ইনসেইন এমাউন্ট!
সাহাবীদের মোহরানা ছিলো বৈচিত্র্যময়। কোনো কোনো সাহাবীর মোহরানা এক টাকাও ছিলো না, আবার কোনো কোনো সাহাবীর মোহরানা কোটি টাকার বেশি ছিলো!
স্বামীর ইসলাম গ্রহণ ছিলো রুমাইসা বিনতে মিলহান রাদিয়াল্লাহু আনহুর মোহরানা। একজন সাহাবীর মোহরানা ছিলো তাঁর মুখস্থ কুরআন স্ত্রীকে শুনানো।
অন্যদিকে মোহরানা, অনেক সাহাবী স্ত্রীকে উচ্চ মোহরানা দেন। যেমন: উমর ইবনুল খাত্তাব, আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রাদিয়াল্লাহু আনহুমা। উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর মেয়ে উম্মে কুলসুম রাহিমাহাল্লাহকে বিয়ে করেন, তখন তাঁকে ৪০,০০০ দিরহাম দেন।
হিসাব গুলো যদি একটু খোলাসা করে বলি:
চল্লিশ হাজার এবং ত্রিশ হাজার দিরহাম মানে যথাক্রমে ৩৩৩৩ ও ২৫০০ দিনার। আরো সহজে বললে, তখন ১ দিনার দিয়ে একটি ভেড়া কেনা যেতো। বর্তমানে একটি ভেড়ার দাম ন্যূনতম ১০,০০০ টাকা হলে তাদের মোহরানা দাঁড়ায়- আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রাদিয়াল্লাহু আনহুর প্রায় আড়াই কোটি টাকা, উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহুর প্রায় তিন কোটি ত্রিশ লক্ষ টাকা!
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বেশিরভাগ স্ত্রীর মোহরানা ছিলো ৪২ দিনার; অন্তত ৪ লক্ষ টাকা।
এমন আরও অনেক ইনফো জানতে পারসি এই বইটা পড়ে।
এই ইনফরমেশনগুলা জানা থাকা ভালো, যাতে সব সাহাবী রা একেবারে হত দরিদ্র ছিলেন এরকম ধারণা না আসে। এরকম ইনফরমেশন নিয়ে কম্পাইল করা হয়তো এই বইটাই প্রথম।
তালহা ইবন উবাইদুল্লাহ (রাঃ) এর টাকা পয়সা কত ছিল, এটা নিয়ে কেউ কখনো তেমন বেশি গুরুত্ব পোষণ করেননি, তাঁর বড় পরিচয় ছিল তিনি আশারায়ে মুবাশশেরার আরেকজন, নবীজী কর্তৃক "দুনিয়ার বুকে জীবন্ত শহীদ" উপাধি পাওয়া, কারণ উহুদে তিনি নবীজীকে বাঁচাতে নিজের শরীরকে ঢাল বানিয়ে দিয়েছিলেন, পেতে দিয়েছিলেন নিজের পিঠকে, অনেকগুলো তীর এসে বিঁধে। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু উহুদের যুদ্ধের কথা উঠলে বলতেন "সে দিনটির সবটুকুই তালহার।"
তাই টাকা পয়সা উনাদের কেইসে ম্যান্ডেটরি জিনিস ছিলোনা তাই বলে উনারা হতো দরিদ্র ছিলেন বিষয়টা সেমন না। বইটা অনেকগুলো কনফিউসন দূর হতে সাহায্য করবে। এছাড়া লেখকের লেখার হাত সুন্দর, লেখা গুলো ছিল ঝরঝরে। এক বসাতেই পড়ে ফেলার মতো বই। রেকমেন্ডেড।
ছোটোবেলা থেকে শুনে আসছি সাহাবিরা অনেক গরিব ছিলেন, নিয়মিত খেতে পারতেন না, এমনকি পেটে পাথর বেঁধে রাখতেন ক্ষুধার তাড়নায়। কিন্তু মুদ্রার অপর পিঠেও যে অসংখ্য সাহাবি রয়েছেন যারা শত কোটি টাকারও মালিক ছিলেন, দান করেছেন বিনা হিসাবে তাঁদের কথা জানতাম না দু'একজন বাদে। সাহাবিদের না জানা অর্থনৈতিক জীবন ও ইসলামে নারীর অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা উন্মোচিত হয়েছে বইটিতে।
ছোটবেলা থেকে জানতাম, বিভিন্ন বয়ানে শুনেছি শুধু মাত্র ওসমান গনি (রাঃ) অনেক ধনাঢ্য ছিলেন, আর বাকী সাহাবীদের শুধু কষ্টের জীবনী শুনেছি, সাহাবীরা এক বেলা খেলে ৩ বেলা না খেয়ে থাকতেন, তাকওয়ার জন্য সম্পদ গড়তেন না,
কিন্তু আমার সকল ধারণা পাল্টে দিয়েছে এই বইটি, সাহাবীরা খায়বার বিজয়ের পর রাজার বেশে জীবন যাপন করেছেন অর্থাৎ বেশিরভাগই (৯৯%) সম্পদশালী ছিলেন,
এক সাহাবীর মৃত্যুর পর তার ঋণকৃত হাজার কোটি টাকা শোধ করেও তার সন্তানের কাছে থেকে আরও চার হাজার কোটি টাকারও অধিক সম্পদ।
(রাসুলের স. হাদিস; তাকওয়াধারী ব্যাক্তির সম্পদ গড়াতে সমস্যা নেই)
বিশেষ করে এই বইটির যেই মেসেজটি সবচেয়ে ভালো লেগেছে সেটা হলো সাহাবীদের সম্পদ থাকতো হাতে, আর আল্লাহ থাকতো হৃদয়ে, যার কারণে শয়তান তাদেরকে সম্পদের মায়ায় জড়িয়ে ফেলতে পারেনি, তারা যেমন সম্পদ গড়তেন তার থেকে বেশি দান করতেন, এক হাতে কামাতেন অন্য হাতে দান করতেন।