আরও একবার স্বাগত আপনাকে প্রাচীন ভারতবর্ষে। যেখানে আপনার জন্যে অপেক্ষা করে আছে রহস্য, হত্যা, রাজনীতি, ষড়যন্ত্র এবং….. আচার্য বিষ্ণুগুপ্ত চাণক্য। চাণক্য কি পারবেন নিজের ক্ষুরধার বুদ্ধি ও যুক্তিনির্ভর তদস্তপদ্ধতিতে, আপাতদৃষ্টিতে প্রায় অসম্ভব রহস্যের সমাধান করতে?
এক কূটনৈতিক উদ্দেশ্যে মগধের সম্রাটের সঙ্গে বিবাহ স্থির হয়েছে তার শত্রুপক্ষের কন্যার। কিন্তু বিবাহের দিনে ভাবী মহারানিকে হত্যার চেষ্টা করল কে? গুপ্তহত্যা নাকি চক্রান্ত? মগধের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জাল বুনছে এক অদৃশ্য শত্রু। তার অবধি পৌঁছোনোর একমাত্র সূত্র হল একটি বিষাক্ত বাণ। কিন্তু কোন উপায়ে জনসমাগমের মাঝেই নিহত হলেন। কুলূতের রাজা, অথচ হত্যাকারীকে কেউ দেখতে পেল না? আ কীভাবে প্রহরীদের দৃষ্টি এড়িয়ে উষাও হয়ে গেল গৃহবন্দিরা
সকল প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে বইয়ের দুটি উপন্যাসের পাতায়। যে রহস্যের, রাজনীতির ও বুদ্ধির চতুরঙ্গ খেলার শুরু হয়েছিল “হত্যা-শাস্ত্রী-তে, সেই খেলার দ্বিতীয় দানের সময় এবার আগত!
Dr. Abhigyan Ganguly holds a PhD degree in Nano-Electronics, while taking time out of his busy schedule to write a little and read a lot more. His first solo book "Hatyashastra" was published in 2022, which is a historical/detective fiction in Bengali and was an instant hit among Bengali readers.
এবছর সবচেয়ে আগ্রহ নিয়ে যে বইগুলোর পথ চেয়ে বসেছিলুম তার মধ্যে এইটা একটা। চানক্য মশাইকে ভীষণ মিস করছিলাম মাঝের দিনগুলো। এবার দু দুটো বেশ বড় সাইজের গল্প পেয়েছি। গল্প না বলে একটাকে উপন্যাসিকা আর একটা আস্ত উপন্যাস বলাই ভালো। তো লেখাগুলোর সবচেয়ে কোন বিষয়টা ভালো লাগে জানেন? পাঠকের জন্য বিভিন্ন ক্লু ছড়িয়ে রাখা। এটা পাঠকদের সাথে এক ধরনের বুদ্ধির খেলাও বলা চলে। আমি কিন্তু ৯০% ক্লু গুলোই ধরতে পেরেছি এবার। আর এটাই আমাকে আরো একটু বেশিই তৃপ্তি দিয়েছে। অন্যান্য পাঠকরাও একটু সতর্ক থাকলেই ধরতে পারবে সহজেই। শুধু এই বৈশিষ্ট্যটাই না, গল্পের গাঁথুনি, শব্দের উৎকৃষ্ট ব্যাবহার এগুলোও আমাকে খুব আকৃষ্ট করে। আর হ্যাঁ, ভেতরের আঁকা ছবিগুলোও কিন্তু এক একটা ক্লু ছিল। সব মিলিয়ে আবার আই লাভড ইট। পরের বইটার জন্য পুনরায় লম্বা একটা সময় ধরে অপেক্ষা করে বসে থাকব। ততদিনে লেখক মশাই লিখতে থাকুন।।
প্রাচীন ভারতের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অথচ রহস্যময় চরিত্র নিঃসন্দেহে চাণক্য। এই মানুষটির নাম না মেগাস্থিনিসের বিবরণে পাওয়া যায়, না কোনো শিলালিপি বা লেখতে। সমসাময়িক বৌদ্ধ ও জৈন সাহিত্যে তাঁর উপস্থিতি লক্ষ করা যায় না। কিন্তু পরবর্তীকালে তাঁকে নিয়ে অজস্র জনশ্রুতি প্রচারিত হতে থাকে। খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীর সিংহলি বৌদ্ধ গাথা 'মহাবংশ', তারও পরের জৈন হেমচন্দ্রের 'পরিশিষ্টপর্ব', কাশ্মীরের 'কথাসরিৎসাগর'— এগুলো বাদ দিয়ে চাণক্য ও চন্দ্রগুপ্ত তথা মগধে মৌর্য সাম্রাজ্যের স্থাপনার সঙ্গে জড়িত ঘাত-প্রতিঘাত সম্বন্ধে বৃহত্তম সূত্র হল বিশাখদত্তের 'মুদ্রারাক্ষস।' কিন্তু এই অনেকাংশে কাল্পনিক আখ্যানের ভিত্তিতে চাণক্য সম্বন্ধে আমাদের মনে যে ছবিটি গড়ে উঠেছে তা অতুলনীয়। সেই মানুষটির চরিত্র ও কীর্তি নিয়ে আমাদের ধারণাকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছে 'পঞ্চতন্ত্র'-তে চাণক্যের সঙ্গে বিষ্ণুগুপ্ত তথা কৌটিল্য নামের মানুষটিকে মিশিয়ে দেওয়া। সর্বোপরি, বিংশ শতাব্দীতে 'অর্থশাস্ত্র' আবিষ্কৃত হওয়ার পর অধিকাংশ গবেষক সেই মহামূল্যবান গ্রন্থটির রচয়িতা হিসেবে চাণক্যকেই চিহ্নিত করলে আমাদের মনোজগতে তিনি কার্যত এক অতিমানবের রূপ নেন। সেই অতিমানবটিকে দিয়ে একাধিক জটিল রহস্যের সমাধান করানো হয়েছে এই বইয়ে। এতে আছে দুটি উপন্যাস~ ১) অপেক্ষাকৃত সংক্ষিপ্ত অথচ রোমান্স ও রোমাঞ্চে উত্তেজনাঘন 'সোম-শাস্ত্র'; ২) সুদীর্ঘ এবং পুরোদস্তুর ষড়যন্ত্রে ভরা পলিটিক্যাল থ্রিলার 'শর-শাস্ত্র'। গল্পগুলো নিয়ে কিছু বলব না। এই সিরিজের অনুরাগীমাত্রেই জানেন, চন্দ্রগুপ্ত তথা মগধের বিরুদ্ধে হওয়া বিভিন্ন ষড়যন্ত্র এবং অপরাধের অনুসন্ধান করে সেই রহস্যভেদ এবং শত্রুর সমূল বিনাশের উদ্দেশ্যে চাণক্যের প্রয়াস নিয়েই রচিত হয় এমন কাহিনিরা। তবে এই দুটি উপন্যাস পূর্বের খণ্ডের আখ্যানক'টির তুলনায় জটিল, গভীর, এবং বহুলাংশে মনস্তাত্ত্বিক। এতেও লেখকের বিপুল গবেষণার চিহ্ন স্পষ্ট হয়েছে নানা ক্ষেত্রে; অথচ ইনফোডাম্পিং করার কোনো চেষ্টা করেননি তিনি। এই সংযম এবং সাবলীল লেখনীর টানে দুটি উপন্যাসই কার্যত এক বসায় শেষ করতে হয়েছে। বইটির মধ্যে অলংকরণ এবং সামগ্রিক বিন্যাস অত্যন্ত নয়নসুখকর। তবে এর মূল আকর্ষণ হল এই দুটি কাহিনি। শেষের উপাখ্যানটি স্পষ্ট করে দিয়েছে যে রাজনৈতিক ও সামরিক বিজয় সত্বেও মগধ, বিশেষত চাণক্য ও তাঁর শিষ্যদের ভবিষ্যৎ মোটেই নিষ্কণ্টক নয়। যে পরম শত্রুটির ইঙ্গিত আমরা আগেও পেয়েছি, এবার তিনি আরও স্পষ্ট ও বিপজ্জনক হয়েছেন। তবে আমাদের চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমরা নিশ্চিন্ত থাকতে পারি যে লেখক আগামীদিনে তাঁর এই অসামান্য রহস্যভেদী তথা দ্রষ্টাকে ফিরিয়ে আনবেন— যাতে সেই শত্রুকে তিনি পরাস্ত করতে পারেন। তার জন্য অপেক্ষায় রইলাম। ইতিমধ্যে, যদি ইতিহাসাশ্রয়ী রহস্যকাহিনি আপনার ভালো লাগে, তাহলে এই সিরিজের দুটি বইকেই আপন করে নিতে পরামর্শ দেব। এরা সত্যিই অনন্য।
'হত্যাশাস্ত্র' র পরে এবার পড়লাম 'শরশাস্ত্র'।দুটি কাহিনী নিয়ে এই বইটি --'সোমশাস্ত্র' ও 'শরশাস্ত্র'। ক্লাস সেভেন থেকেই এই ব্রাহ্মণ আচার্য্য র সম্পর্কে কৌতূহল এর সূচনা ।তারপর অনেক কাল কেটেছে ,ইতিহাস বইতে পড়েছি , সেই আগ্রহ নিয়েই বছরদুয়েক আগে 'হত্যাশাস্ত্র' পড়েছিলাম,নিরাশ হইনি একেবারেই ,ওই বইয়ের 'হত্যাশাস্ত্র'ও 'কনকশাস্ত্র' দুটোই বেশ ভালো লেগেছিল। এবার আসি 'শরশাস্ত্র' বইটির কথায় --
১/ 'সোমশাস্ত্র' প্লট টা সুন্দর, বেশ একটু রহস্য আছে, রাজনৈতিক দিক এসেছে অনেকটা জুড়ে , শেষের দিকে রোমান্স আছে অতি অল্প , মনস্তাত্ত্বিক দিক ও আছে,তৎকালীন কিছু তথ্য আছে ,সবমিলিয়ে সুন্দর । শুধু একটাই জিনিস কয়েকবার পড়তে গিয়ে মনে হয়েছে তা হল বড্ড স্লো , অহেতুক কিছু টা বাড়ানো হয়েছে ।
২/ 'শরশাস্ত্র' অসাধারণ একটা কাহিনি। রাজনীতি ,মনস্তত্ত্ব, কূটনীতি,ইতিহাস, রহস্য,নীতিজ্ঞান সব মিলেমিশে একাকার হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় ইতিহাস এর অনেক তথ্য ,তথ্যসূত্র উল্লেখিত হয়েছে।কিছু কিছু জায়গায় এত সুন্দর ভাবে বিশদে বর্ণনা করেছেন লেখক যে মুগ্ধ হয়ে পড়ে গেছি , যেমন সেই বিশেষ প্রকার বাণ নির্মাণ এর কৌশল , গুপ্তপত্র প্রেরণের সময় পত্রের ভাঁজ , কোণের ছেঁড়া এসব সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বর্ণনা , বিষকণ্যা আগে পড়েছিলাম ইতিহাসে ,তাঁদের বিশদ বর্ণনা ,আরোও অনেক তথ্যে পরিপূর্ণ।আবার এই সব তথ্য পড়তে গিয়ে কখোনই মনে হয়নি উপন্যাস তথ্যের ভারে নুয়ে পড়েছে । শেষাংশে আচার্য্য চাণক্যের শিষ্যস্নেহ , গুরুভাই দের ভালোবাসা মন ছুঁয়ে যায় ।আচার্য্য শকুনি হয়তো পরের অংশে আবার আসবেন,এবার আরো হাড্ডাহাড্ডি টক্কর হবে ,কারণ বিধোরক এর কথা অনুযায়ী চার প্রধান গুপ্তচর দের পরিচয় থেকে পরিবার সব কিছুই শকুনি র নখদর্পণে। পরের খণ্ডের অপেক্ষায় রইলাম।
আর 'বুকফার্ম' এর প্রচ্ছদ, পৃষ্ঠা, প্রিন্টিং এসব নিয়ে নতুন করে বলা নিষ্প্রয়োজন।অনেক ধন্যবাদ প্রকাশক কে।
**মাপ করবেন ,অহেতুক একখানা কথা বলে রাখি প্রকাশকের কাছে,জানি হয়তো নজরে পড়বে --'কমিক্স ও গ্ৰাফিক্স' ৩ ও ৪ কিছু কপি অন্তত আনুন🙏🙏🙏
শুধু একটাই কথা বলার হত্যা শাস্ত্র পড়ে যাদের ভালো লেগেছে, তাদের এই বইটিও নিরাশ করবে না। তবে এখানে "কে" এর থেকে বেশী জোর দেওয়া হয়েছে, "কেন" এবং "কিভাবে" এর ওপর। এছাড়া এখানে কাহিনী আরো বিশাল হচ্ছে। পরবর্তী খন্ডের অপেক্ষায় রয়েছি।
বছরের ১৭ নং বই, রহস্য উপন্যাস সংকলন, বিখ্যাত চাণক্য সিরিজের দ্বিতীয় বই শরশাস্ত্র।। লেখকের এই নিয়ে আমি দ্বিতীয় বই পড়ছি, এর আগে হত্যাশাস্ত্র পড়েছিলাম আর শেয়ার করেছিলাম নিজের ভালো লাগার কথা।। এরপর অনেকদিনের গ্যাপ, শরশাস্ত্র প্রকাশ পেয়েছে গতবছর আমি পড়া শেষ করলাম দুদিন আগে, তার আগে আরেকবার হত্যাশাস্ত্র এর মূল ঘটনা গুলো দেখে নিতে হয়েছে।। বুকফার্ম এর বইয়ের বাঁধাই, প্রচ্ছদ, পৃষ্ঠার মাণ এবং ফন্ট খুবই সুখকর।। আর সত্যি বলতে লেখকের এই সিরিজটার প্রতি একটা আলাদা দুর্বলতা তৈরি হয়েছে শুধুমাত্র চাণক্য চরিত্রটির জন্য।। অবশ্যই তার কৃতিত্ব লেখকই দাবি করেন, আর সাথে কিছু দারুন মস্তিষ্কপ্রসূত ঘটনা যা লেখক সমাধান করিয়ে নিচ্ছেন চাণক্য চরিত্রটি কে দিয়ে।।
এই বইটিতে একটি বড় গল্প ও একটি উপন্যাস আছে।।
🔷🔷 সোমশাস্ত্র - এই কাহিনীর প্রেক্ষাপট সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য এর বিবাহ বাসর।। পরম শত্রু ধনানন্দ এর কন্যাকে কেনই বা তিনি বিবাহ করছেন? আর সেই আসরেই হল ভাবী মহারানীকে খুনের প্রচেষ্টা।। সাথে রাজকুমারীর এক দাসী নিখোঁজ।। এর মধ্যে কি কোনও যোগসূত্র আছে? আচার্য চাণক্য কি তার দিশা পেয়েছেন?
🔷🔷 শরশাস্ত্র - মগধের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জাল বুনছে এক অদৃশ্য শত্রু।। তার অবধি পৌঁছোনোর একমাত্র সূত্র হল একটি বিষাক্ত বাণ।। কিন্তু কোন উপায়ে জনসমাগমের মাঝেই নিহত হলেন কুলূতের রাজা, অথচ হত্যাকারীকে কেউ দেখতে পেল না? আর কীভাবে প্রহরীদের দৃষ্টি এড়িয়ে উধাও হয়ে গেল গৃহবন্দিরা।। এই গল্পে মূল ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন চাণক্যের অন্যতম সেরা ছাত্র ও ছায়া সঙ্গী জীবসিদ্ধি।। সত্যি কি কুলুতের রাজা সুবর্মার মত দেখতে জীবসিদ্ধি কে? কি রহস্য লুকিয়ে আছে সেখানে? অনেক জট ধীরে ধীরে উন্মচিত হবে।।
🔰🔰 পাঠ প্রতিক্রিয়া -
প্রাচীন ভারতের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য এবং রহস্যময় চরিত্র হল চাণক্য।। বিংশ শতাব্দীতে অর্থশাস্ত্র আবিষ্কৃত হওয়ার পর একাধিক গবেষক সেই মূল্যবান গ্রন্থের রচয়িতা হিসেবে চাণক্য কেই মনে করেন।। এটাই আমাদের মত সাধারণ পাঠকের কাছে চাণক্যের একমাত্র পরিচয়।। আর লেখক যে সময়কালের কথা বলেছেন সেই সময়ের কিছুটা ধারণা পাওয়া যায় মুদ্রারাক্ষস নাটকটিতে।। এই রহস্যময় এবং উল্লেখযোগ্য চরিত্রটিকে দিয়েই লেখক সমাধান করিয়েছেন কিছু জটিল সমস্যার।। আর এটাই এই বইয়ের ইউ এস পি।। সোমশাস্ত্র বইটির প্রথম গল্প, খুন হয়েছে দুটো, কে খুন করেছের থেকেও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল কিভাবে করেছে।। সেক্ষেত্রে লেখক বেশ মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছে, সূত্র লেখনীর মধ্যেই দেওয়া ছিল।। গল্পটি আহামরি না হলেও খারাপ লাগেনি।। বইয়ের দ্বিতীয় গল্প শরশাস্ত্র - এমন একটি সুদীর্ঘ চক্রান্ত, ষড়যন্ত্রে ভরা পলিটিক্যাল থ্রিলার লেখার জন্য লেখককে ধন্যবাদ জানাতেই হয়।। ঠিক একটার পর একটা ঘটনা যা আগে থেকেই নির্ধারিত এবং প্রত্যেকটির ফলাফল আগে থেকেই পরিকল্পিত, অসাধারণ প্লট এবং সুন্দর উপস্থাপনা।। বিরোধক এর সঙ্গে চাণক্য এর ওইরকম ইন্টেন্স বার্তালাপ সত্যিই দারুন উপভোগ করেছি।। লেখক যে খলচরিত্রটি সৃষ্টি করেছেন তা অনেক বেশি মনস্তাত্ত্বিক, ঠিক যেমন দাবা খেলায় হয়, অনেকটা জিম মরিয়ার্টি এর কথা মনে করিয়ে দেয়।। যদি ইতিহাস আশ্রয়ী রহস্য কাহিনী আপনার পছন্দ হয়, তাহলে এই সিরিজের দুটি বই অবশ্যই পাঠ্য।। আর আমি অপেক্ষা করব চাণক্য #৩ এর।।
এই বইয়ের প্রথম ভাগ "হত্যা শাস্ত্র" যথেষ্ট উপভোগ্য ছিল। শর শাস্ত্রে লেখকের লেখনী আরও ক্ষুরধার হয়েছে। লেখক আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন - সহজ সরল হোমসীয় ঘরানা ছেড়ে প্রত্যেকটা গল্পকে একটা কমন সূত্রে বেঁধে একটা মেগা ন্যারেটিভের ভিস্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। এই ট্রেন্ড উনি আগের বইয়ের শেষ ও সেরা গল্প "কনক শাস্ত্র"এ শুরু করেছিলেন আর এই বইয়ের "সোম শাস্ত্র" ও "শর শাস্ত্র"তে কন্টিনিউ করেছেন।
এই গল্পগুলোকে "fictionalized history" বলবেন নাকি "historical fiction", সেটা পাঠকের উপরে ছাড়াই ভাল। তবে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য ও তার গুরু চাণক্য, দুজনে এতটাই রহস্যাবৃত চরিত্র, যে এদের জীবন সম্বন্ধে আজও প্রচুর ধোঁয়াশা রয়েছে। সুতরাং যেকোনো লেখকের পক্ষেই এখানে যথেষ্ট আর্টিস্টিক লাইসেন্স নেওয়ার সুযোগ আছে।
মরিয়ার্টি এখনও নিজেকে রহস্যে মুড়ে রেখেছে, কিন্তু এই বইতে তার উপস্থিতি অতি প্রবল। লেখক আইরিন এডলারের ইঙ্গিতও দিয়ে রেখেছেন - আশা করা যায়, তৃতীয় ভাগে তিনিও আসবেন।
লেখকের প্রতি একটাই আবেদন আছে - আপনার প্লট গভীর ও ধারালো। কিন্তু আপনার ন্যারেটিভ এখনও আপনার প্লটের ন্যায় ধারালো নয়। ভুল বুঝবেন না। আপনার কলম পঁচানব্বই ভাগ নবীন লেখকদের তুলনায় বেশি শক্তিশালী, কিন্তু আপনি যদি আরও ইমপ্রুভ করেন সেটা আপনারই চমৎকার প্লটগুলোর প্রতি সুবিচার হবে।
প্রচ্ছদ চমৎকার। তবে অলংকরণ আমার ব্যাক্তিগতভাবে অতটা ভালো লাগেনি।
চতুরঙ্গের দ্বিতীয় দান সমাপ্ত। তৃতীয় দানের অপেক্ষায় রইলাম। চাণক্য ও চন্দ্রগুপ্তের জীবন সম্বন্ধে যেসব কিংবদন্তি রয়েছে তাতে আশা করাই যায় যে তৃতীয় ভাগ আরও হার্ড হিটিং হতে চলেছে।
এই লেখকের আগের বই হত্যা শাস্ত্র।এটা পড়া থাকলে গল্পগুলি বুঝতে সুবিধা হবে।এই বইতে রয়েছে একটি উপন্যাসিকা সোম শাস্ত্র আর একটি উপন্যাস শর শাস্ত্র। প্রথম গল্পটি একটি পুরো গোয়েন্দা গল্প।রাজকুমারী দুর্ধরাকে কেউ পানীয়তে বিষ মিশিয়ে হত্যার চেষ্টা করেছে।রাজকুমারী পান না করায় তার দাসী পান করে মারা যায়।এর তদন্তে নামে চানক্য আর তার শিষ্য জিবসিদ্ধ।প্রশ্ন উত্তরের মাধ্যমে এই রহস্যের মীমাংসা হয়েছে। আগের বইতে সবার অভিযোগ ছিলো গল্পগুলি আরও বড় হলে ভালো হত।এই উপন্যাস তাদের ইচ্ছা পুর্ণ করবে।এই উপন্যাসে রয়েছে অনেক স্তর।প্রথমে একটা সাধারণ খুনের ঘটনা থেকে অতি জটিল রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের পরিচয় পাওয়া যায়।শেষে অনেক চমক আছে।মলয়কেতুর পরিচয় প্রথম গল্প থেকেই হয়।এর পরিণতি শেষে অবাক করে। খুনের সমাধান ও বেশ চমকপ্রদ।আর একটা বিষয় বাবাকের নিরুদ্দেশ হওয়ার সমাধান ও অবাক করে।আর গোটা উপন্যাসে অর্থ শাস্ত্রের প্রয়োগ বেশ চিন্তাকর্ষ।শেষে গিয়ে আবার শকুনি ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যায়।পরের পর্বে মনে হয়, না মেলা উত্তরগুলো মিলে যাবে।সব মিলিয়ে বেশ ভালো ঐতিহাসিক গোয়েন্দা উপন্যাস। আমার রেটিং 5/5
হত্যা শাস্ত্রের সার্থক উত্তরসূরী শর শাস্ত্র। আরো আছে। ক্রমশ প্রকাশ্য। হত্যাশাস্ত্রে সব কটাই ছোট গল্প ছিল। ফলে টুকরো টুকরো পটভূমিকা তৈরি হয়েছিল। হত্যা শাস্ত্র নাতি���ৃহত উপন্যাস। ফলত চরিত্রগুলো পূর্ন রূপ পেয়েছে। আর পটভূমিকাও বিস্তৃত রূপ পেয়েছে। শুধু শকুনির চরিত্রকে অনেকটা আড়াল করা হয়েছে। হয়তো পরে আর একটা উপন্যাসে এ পরিপূর্ন রূপ পাবে। প্রথম গল্প সোম শাস্ত্র বস্তুত শর শাস্ত্রের ভূমিকা তথা মুখরা। গল্পটা খুব সংক্ষেপে সারা হয়েছে। পটভূমিকাও বিস্তৃত নয়। তবে শর শাস্ত্রের শুরু হচ্ছে সোম শাস্ত্র থেকে। হত্যা শাস্ত্র গুটিকয় ছোট ছোট ঘটনার সমস্টি। কিন্তু শর শাস্ত্র একটা অন্তিম রূপ পেয়েছে।
"হত্যা শাস্ত্র" এর পর "শর শাস্ত্র" চাণক্য সিরিজের দ্বিতীয় বই। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে এই রহস্য উ��ন্যাসটি আচার্য বিষ্ণুগুপ্ত চাণক্য ও মগধ সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যকে কেন্দ্র করে লেখা। "শর শাস্ত্রের" কাহিনী দুটি যথেষ্ট রহস্যময় ও লেখকের গতিশীল লেখনীর জন্য আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
✓সোম শাস্ত্র আচার্য বিষ্ণুগুপ্ত চাণ্যককের নির্দেশে রাজা ধনানন্দের কন্যা রাজকুমারী দুর্ধরার সাথে মগধ সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের বিবাহ ঠিক করা হয়। কিন্তু বিয়ের দিনই রাজকুমারী দুর্ধরার তুই সখী মধুবন ও কৃষ্ণকলির আকস্মিক মৃত্যু ঘটে। রাজকুমারী দুর্ধরাকে কেউ পানীয়তে বিষ মিশিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। রাজকুমারী পরিবর্তে সেই পানীয় পান করে রাজকুমারীর সখী মধুবন মারা যায়। কৃষ্ণকলিকে বাগানে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। এরপর তদন্তে নেমে আচার্য চাণক্য প্রশ্ন উত্তরের মাধ্যমে এই রহস্যের সমাধান করেন। কে ছিল প্রকৃত অপরাধী? এই হত্যার চেষ্টা করার পেছনে কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল?
✓শর শাস্ত্র মগধের অঙ্গরাজ্য কুলুর রাজধানী নাগর থেকে রাজা সুবর্মার ভাই চিত্রবর্মা চিঠি পাঠিয়ে আচার্য চাণক্য ও তার শিষ্য জীবসিদ্ধি কে তাদের রাজ্যে একটি বিশেষ সাহায্যের জন্য আসতে অনুরোধ করেন। আচার্য শকুনির নেতৃত্বে পর্বত্যকার রাজা মলয়কেতু, মলয়নগরের রাজা সিংহনাদ, কাশ্যপনগরের রাজা পুষ্করক্ষ সিন্ধের রাজা সিন্ধুসেনা ও পারস্যের রাজা মেঘনন্দ ষড়যন্ত্র করতে শুরু করেন চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের বিরুদ্ধে। এই উপন্যাসটির মূল বিষয় কোন একটি বিশেষ হত্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এই উপন্যাসটিতে উঠে এসেছে মগধ এবং তৎসংলগ্ন প্রতিবেশী রাজ্যগুলির মধ্যে একটি গভীর চক্রান্ত। ক্ষুরধার বুদ্ধিসম্পন্ন আচার্য চাণক্য কিভাবে সুকৌশলে সমস্ত বিরোধী চক্রান্ত থেকে আর্যাবর্তকে রক্ষা করেন তাই গল্পের মূল বিষয়।
উপন্যাস দুটি লেখার সময় লেখককে যে কতোটা পরিশ্রম ও গবেষণা করতে হয়েছিল তার বলার অপেক্ষা রাখে না। চাণক্য সিরিজের তৃতীয় পর্বের অপেক্ষায় রইলাম আশা করি সেখানে শকুনির সাথে আচার্য চাণক্যের সেই অতি কাঙ্খিত সাক্ষাৎটি হবে। অনেক শুভেচ্ছা রইল লেখকের জন্য।
"হত্যাশাস্ত্র" পড়ে যে মুগ্ধতা তৈরি হয়েছিল তা আরও এক ধাপ বেড়ে গেল। চমৎকার লেখনী ও গল্পের ঠাস বুনোটের সাথে ছোট ছোট ঐতিহাসিক তথ্য বা বর্ণনা গল্পগুলোর আকর্ষণ বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। অবশ্য পড়ার মত বই।
আহা! কি পাঠ করিলাম!! সবে শেষ করলাম। শেষ গল্প অর্থাৎ যেই নামে এই বইটির নাম শর শস্ত্র সেটি সবকিছুরই উর্ধ্বে। পড়তে পড়তে যেন সময় পারিপার্শ্বিক অবস্থা সব ভুলে যেন গল্পের মধ্যে প্রবেশ করেছি। এত সূক্ষ্ম খুঁটিনাটি তথ্য দেওয়া রয়েছে বার বার ধাঁধা সৃষ্টি করবে। প্রতিটা অনুচ্ছেদে নতুন চমক। সত্যি অবিভূত হয়ে রয়েছি।।
এবার stakes , scope আরো বেশী | প্রথম বড় গল্পটি একেবারে ভিনটেজ গোয়েন্দা গল্প | বই এর উপন্যাসটি একই সাথে গোয়েন্দা গল্প আর চাণক্যের রাজনীতির খেলা | হ্যা , এই বইতে রাজনীতিবিদ কৌটিল্য কে আরো বেশি মাত্রাতে পেলাম | খুব ভালো লাগলো জীবসিদ্ধির মতো পার্শ্ব চরিত্রদের growth | একসাথে ডিটেকশন , রাজনীতি, ঐতিহাসিক উপন্যাস লেখা মোটেই সোজা কথা না কিন্তু অভিজ্ঞান ফুল মার্কস ই পেয়েছে | বাজার চলতি আরো গোয়েন্দা থ্রিলার এর থেকে এই বই পুরোই ব্যতিক্রমী | এই বই বোঝার জন্য আগের পর্ব হত্যা শাস্ত্র পড়ার দরকার নেই ঠিক ই কিন্তু পড়া থাকলে আরো বেশি উপভোগ করা যাবে এই বই |
শত্রুর নাম অপরিবর্তিত আছে, কিন্তু কেমন জানি মনে হচ্ছে মস্তিষ্ক পরিবর্তিত হয়েছে🤔🤔 অথবা কে জানে হয়তো আসল শত্রুরই পরিবর্তন হয়েছে, শঙ্কুমনি পরিণত হয়েছে নিছকই তার দাবার ঘুঁটিতে । জানতে হলে এখনো ১-২ বছর অপেক্ষা করতে হবে 🥲
“বিদ্যার্থীদের পক্ষে এটি অত্যন্ত আবশ্যক যে তারা আটটি জিনিস পরিত্যাগ করবে- কাম, ক্রোধ, লোভ, সুস্বাদু পদার্থের ভক্ষণের ইচ্ছা, শৃঙ্গার, মনোরঞ্জন, বেশী ঘুমানো অথবা কর্তব্য কর্মে অবহেলা করা।” – চাণক্য
প্রাচীন ভারতের এক দীপ্তমান পুরুষ বিষ্ণুগুপ্ত চাণক্য। অসাধারণ বুদ্ধিদীপ্ত তার চোখে, তিনি যা দেখেন আর উপলব্ধি করেন, সেটা অন্য সবার থেকে আলাদা। লেখক অভিজ্ঞান গাঙ্গুলীকে অসংখ্য ধন্যবাদ, তিনি এই কাহিনী নির্মান করেছেন। পারিপার্শ্বিকতাকে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছেন।
লেখকের লেখনীর গুণে, সেই প্রাচীন ভারতের রাজনীতি দারুণ ফুটে উঠেছে, আর রাজনীতির আড়ালে থাকা রহস্যের উন্মোচন। লেখার আড়ালে অসংখ্য সূত্র দিয়ে লেখক পাঠকদেরও সেই রহস্য উন্মোচনের সুযোগ করে দিয়েছেন।
খারাপ লাগার শুধু একটা দিকই আছে আমার কাছে। সেটা হচ্ছে কোনো ঘটনার অতিরিক্ত "এক্সপ্লানেশন"। তবে আমার মনে হয় সেটা লেখক ইচ্ছা করেই দিয়েছেন, যাতে সব ধরনের পাঠক, পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে রহস্যের জট ধরতে পারে। আমার রেটিং ৪.৫/৫
চাণক্য মহাশয়ের পরবর্তী শাস্ত্রের অপেক্ষায় রইলাম।
বাংলা সিনেমার পাশে দাঁড়ানোর আন্দোলন হয়তো চলছে, চলবে কিন্তু বাংলায় থ্রিলার এখন আর সিঙ্গেল নেই! সাহিত্য, সিনেমা, ওয়েব মিলে তাকে প্রোপোজ করার মানুষরা সংখ্যায় আজ অনেক। তবে তার অধিকাংশই ব্রেকআপে পরিণত হয়, থেকে যায় নিছক infatuation হয়ে। কিছু কিছু তবুও ভালোবাসায় রূপ নেয়, জীবনের পথে শেষ অবধি চলতে থাকে হাতে হাত ধরে কারণ তাদের ভবিষ্যতটা খুব যত্নে গড়ে ওঠে এক কুরূপী ব্রাহ্মণের হাত ধরে, থ্রিলারের ভবিষ্যত সৃষ্টির ফাঁকে হয়তো তিনি বলেও ওঠেন, "ওহে জীবসিদ্ধি...একটু মধু দিয়ে দুধ না হলে চলছে না..."
প্রসঙ্গ পাক্কা দু বছর পরের এক প্রত্যাবর্তন, লেখক শ্রী অভিজ্ঞান গাঙ্গুলীর কলমজাত বুকফার্ম প্রকাশিত "শর শাস্ত্র"।
এখানে সংকলিত হয়েছে যথাক্রমে একটি উপন্যাসিকা এবং একটি উপন্যাস। চেষ্টা করলাম যথাযথ মূল্যায়ন সহ নিজের অনুভূতিটুকু ভাগ করে নিতে।
✍️ সোম শাস্ত্র
মগধ আজ মুড়েছে খুশির মখমলে। গোটা আর্যাবর্তের বাতাসে আজ একটাই খবর ঘোরাফেরা করছে, সম্রাট চন্দ্রগুপ্তের বিবাহ! তবে অন্দরের আবহাওয়া খানিকটা ধূসর। ধূসরতাকে বাড়িয়ে তোলার জন্যে ঘটে যায় পরপর দুটো হত্যা। অপরাধ খুঁজে নেয় তার যোগ্য বাসা, ময়দানে নামতেই হয় মহামতি বিষ্ণুগুপ্ত চাণক্যকে। এই কাহিনী এগিয়েছে ধীর গতিতে, চিত্রপটকে মাথায় বসানোর জন্য যথেষ্ট সময় পাঠককে দিয়েছেন লেখক যা প্রয়োজনীয়। লিনিয়ার স্টোরিটেলিংয়ের দৌলতে পাঠক মস্তিষ্ককে পেছন দিকে বিশেষ হাঁটতে হবেনা। তবুও এই indoor murder mystery বিশেষ হয়ে উঠেছে স্রেফ হার্ড ডিটেকশনের জৌলুসে যার কারিগরকে সাধুবাদ জানানোর ভাষা আমার সত্যিই নেই। এই অপরাধের whodunnit, whydunnit এবং howdunnit তিনটিই বেশ পোক্ত, তবুও কে? জানার পরে বিশেষ ধাক্কা খেতে হয়নি যতটা কে নয়? জানার শেষে হয়েছে। প্রতিটা চরিত্র যত্ন নিয়ে গড়া, শেষ অবধি সুবিচার পেয়েছে। তৎকালীন রন্ধনশিল্পের খুঁটিনাটি শুনিয়ে রিলিফ ফ্যাক্টর সৃষ্টি করলেও এই বিষয়ে লেখকের গবেষণাকে আবারও কুর্নিশ জানাই। তবুও কিছু ত্রুটির কথা না বললেই নয়। দুর্ধরার বক্তব্যে নিজের কক্ষে ঘটনার প্রাক মুহূর্তের দৃশ্য একাধিকবার না আনলেও চলতো, সোনার সাথে বিষের প্রতিক্রিয়াকে নিয়ে আরেকটু খেলানো যেতে পারতো। পৃষ্ঠা নং ৯৮ এ ছাপার ভুলে একটা গুরুত্বপূর্ণ শব্দ বাদ চলে গেছে যা খানিক ভাবলেই আন্দাজ করা যাবে তবুও বলাটা প্রয়োজন মনে করলাম। আগামীতে শুধরে যাবে বলেই আশা রাখি। সহজ এবং ধীর গতিতে এগোনো এই কাহিনী আমার কাছে উপাদেয় এবং তার চেয়েও বেশি ব্রেইন রেসের একটা ওয়ার্ম আপ রাউন্ড হিসেবেই মনে হয়েছে। কারণ এরপরেই আসল দৌড় শুরু হতে চলেছে।
✍️ শর শাস্ত্র
পাটলীপুত্র এখন খানিকটা হালকা মেজাজে, আসন্ন কোনো বিপদ এই মুহুর্তেই নেই। তবুও আর্যাবর্ত কিঞ্চিৎ অশান্ত, চাণক্য এবং জীবসিদ্ধির উদ্দেশে এসেছে কুলুত রাজ্যের চিঠি, মহারাজ সুবর্মার জীবন বিপন্ন। বন্ধুদ্বয়ের মুখ দেখে ধীরে ধীরে বিপদ বেরিয়ে আসে নিজের বাসা থেকে, পাঠক মগজকে ছুটিয়ে নিয়ে যায় নানান জায়গায় এবং বোনা শুরু হয় এক বহুস্তরীয় অপরাধ, যার প্রস্থানে দাঁড়িয়ে আছেন অনেকদিনের চেনা এক দুর্ধর্ষ প্রতিপক্ষ। এই কাহিনী নিয়ে বলতে বসলে ভাষা হয়তো ফুরিয়ে যাবে। এর প্রতিটা পরতে দারুন অনুপাতে মিশে আছে কূটনীতি, রহস্য এবং মনস্তত্ত্ব। অপরাধ যে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া কোনো ঘটনা নয় তা বারবার প্রমাণ করে গেছে কাহিনীর সামাজিক চিত্রপট। তৎকালীন রাজ্য রাজনীতি সামনে আসাটা জরুরী ছিলো, জরুরী ছিলো জীবসিদ্ধির প্রখরতাকে জাগিয়ে তুলে বোকা সাজাকে কমিয়ে দেওয়া, যা এই সিরিজের মূল্যকে অনেকগুণ বাড়িয়ে তুলেছে। উপন্যাস শব্দের অর্থই হলো একাধিক চরিত্রদের সাথে নিয়ে একাধিক প্রেক্ষাপট, যা নির্ভুলভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক। পূর্ব ঘটনার রেফারেন্স টানা হয়েছে যথেষ্ট সচেতন ভাবেই এবং "হত্যা শাস্ত্র" র সাথে কানেকশন না থাকা পাঠকদেরও তা বুঝতে বিশেষ বেগ পেতে হবেনা। তৎকালীন সমাজের গুপ্তচরবৃত্তি মনে বিশেষ ছাপ রেখেছে, দোসর হয়েছে লেখকের ঝরঝরে অথচ মায়াবী ভাষা। ডিটেলিংয়ের দিকে বিশেষ মন দেওয়া হয়েছে, এই মুহূর্তে উদাহরণ দিতে গেলে মনে পড়ছে বাবাকের কুটিরের দ্বার রক্ষীদের জেরা পর্ব; যেখানে লেখার ফ্লোতে কিছু অসঙ্গতি আসতেই পারতো কিন্তু অনেকবার পেছনে ফিরে মিলিয়ে দেখেছি, কোনো খুঁত পাইনি। আর এভাবেই মৌর্য যুগের ইতিহাসের সাথে কল্পনা মিশিয়ে এক নিদারুণ locked room problem নিয়েও খেলে গেছেন লেখক। এখানে ত্রুটি বিশেষ কিছু বলার নেই, দু একটা সাজেশন মাত্র দেওয়া প্রয়োজন মনে করলাম। বিশেষ ধরণের তীরের যা অসামান্য বৈজ্ঞানিক বর্ণনা লেখায় আছে, রেখায় সেটা পাওয়া গেলে আরো ভালো লাগতো অর্থাৎ ওই তীরটার একটা schematic diagram। জীবসিদ্ধির জবানে শেষে মহামাত্যের ঘনঘন জনগণনার খবর জানানোর বিষয়টা আরেকটু পরিষ্কার হতে পারত কারণ সব প্রশ্নই যখন করা হলো এই প্রশ্নটি করা গেলে পারতো। বিষাক্ত বাণের সাথে পদ্মাকে কোনো ভাবে রিলেট করা যেতে পারতো কি? সুবর্মা হত্যার modus operandi আরেকটু ইউনিক কিছু হতে পারতো।
কিন্তু এসবের মাঝেও সত্য এটাই যে অপরাধে স্রেফ রক্ত ঝরেনা, অশ্রুও ঝরে, কঠোর চরিত্র অন্বেষণ ছাড়া যেকোনো থ্রিলারই একপ্রকার অনাথ। তাই শেষে লেখক চাণক্যকে সুপারহিরো বানিয়ে দায়িত্ব সারেননি, তাঁর ক্যারেক্টার অ্যানালিসিসের ভার দিয়ে গেছেন আমাদেরই হাতে। মগধ ফের অরক্ষিত, বিপদ এখনও কাটেনি। কিন্তু আস্থা আছে তাঁর প্রতি, তাঁকে দিয়ে অনেক কিছু করিয়ে ফেলা একটা কলমের প্রতিও। অনেকটাই সময় কাটালাম বইটার সাথে। কখনও বাসে চলার পথে বিভ্রান্ত হয়েছি চিঠির সংকেতে, তো কখনো রাতে শুয়ে স্বস্তি পেয়েছি সমীকরণের সলিউশনে, কখনও বা চোখ দুটি অজান্তেই ভিজেছে কোনো এক পরিণামে। এখন তোমায় ফের শেলফে তুলে রাখার পালা।
শেষ করি সেই চিরাচরিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েই, "এই বই কেন কিনবেন?"
যদি একটা ঐতিহাসিক থ্রিলারের চরিত্র হয়ে উঠতে চান এবং এক কলমচির স্পর্ধার সাক্ষী থাকতে চান, দেরী করবেন না। এই বই আপনার অপেক্ষাতেই আছে। প্রথম সিরিজ না পড়ে থাকা পাঠকদের এই বই শেষে বাধ্য করবে পড়ে ফেলতে, বাকিদেরও রিভাইজ করার নির্দেশ দেবে। এটাই বোধহয় কোনো বইয়ের সার্থকতা। বুকফার্মের বই বাঁধাই, বর্ণস্থাপন খুব ভালো। তবে শ্রী গৌতম কর্মকারের থেকে আরো কিছু ইলাস্ট্রেশন পাওয়ার আশা ছিল এবং আগের সিরিজের ইলাস্ট্রেশন আরেকটু বেশি প্রাণবন্ত লেগেছিলো। আর্যাবর্তের একটা ম্যাপ এবারও পেলে ভালো লাগতো। রক্তের ছোঁয়ায় কভার ডিজাইন অসাধারণ। আর হ্যাঁ, বিশেষ সতর্কীকরণ: এই বই যতটা অপরাধ দমনকারীর গাইডবুক, ঠিক ততটাই অপরাধীরও! পাঠ শুভ হলো।
সদ্য পড়ে শেষ করলাম সাহিত্যিক অভিজ্ঞান গাঙ্গুলীর লেখা “শর শাস্ত্র” {চাণক্য সিরিজ ২}। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে লেখা মার্ডার মিস্ট্রি। বইতে রয়েছে দুটি উপন্যাস 📖👇🏻
🍁📒{সোম-শাস্ত্র}📒🍁 উপন্যাসের শুরুতেই দেখতে পাই মগধের সম্রাট স্বয়ং ‘চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের’ বিবাহ! সেই বিবাহ নিয়েই মেতে রয়েছে নগরবাসী। চাণ্যককের নির্দেশ অনুসারে রাজা ধনানন্দের একমাত্র কন্যা ‘দুর্ধরার’ সাথে চন্দ্রগুপ্তের বিবাহ নির্ধারণ হয়। ওই নির্ধারিত দিনই সম্রাট চন্দ্রগুপ্তের মহলে কন্যাপক্ষ এবং অতিথি সকলেই উপস্থিত হন। আর ওই দিনেই ঘটে যায় অপ্রত্যাশিত এক দূর্ঘটনা। রাজকুমারী দুর্ধরার দু-জন সখীর মৃত্যু হয় এবং রাজকুমারী কেও হত্যার চেষ্টা করা হয়। আড়ালে বসে কে করছে এমন চক্রান্ত? চাণক্য কি পারবে গু���্ত হত্যাকারীকে খুঁজে বের করতে? শেষ পর্যন্ত কি সম্রাট চন্দ্রগুপ্তের সাথে রাজকুমারী দুর্ধরার বিবাহ সম্পন্ন হবে ?? এই সব প্রশ্নের উত্তর রয়েছে বইয়ের পাতায়। জানতে হলে উপন্যাস টি পড়তে হবে!
🍁📒{শর-শাস্ত্র}📒🍁 উপন্যাসের শুরুতেই দেখতে পাই মগধের রাজধানী স্বাভাবিক ভাবে নীজের ছন্দে এগিয়ে চলে..... এমন সময় উত্তরের পার্বত্য প্রদেশের মিত্ররাজ্য কুলূতের রাজধানী থেকে একটি পত্র এসে পৌঁছায়.... সেই পত্রে মহামতি চাণক্য ও আর্য জীবসিদ্ধির আমন্ত্রণ আসে। শর মানে বাণ। আর এই গল্পের একমাত্র সূত্র হল একটি বিষাক্ত বাণ। কুলূতের মহারাজ চিত্রবর্মার ভাই সুবর্মার হত্যা হয়। সেই হত্যা রহস্যের সমাধানের জন্য চাণক্য ও জীবসিদ্ধ এসে পৌঁছায় কুলূতে। শুধুমাত্র একটি বিষাক্ত বাণ আর কোনো তথ্য নেই। জনসমাগমের মাঝেই নিহত হয়েছেন রাজা। অথচ হত্যাকারীকে কেউ দেখতে পায়নি। মহামতি চাণক্য কি পারবে এই জটিল হত্যা রহস্যের সমাধান করতে? জানতে হলে উপন্যাসটি পড়তে হবে!
🍁📒‘হত্যা শাস্ত্রের’ মতো ’শর শাস্ত্র’-ও আমার ভীষণ ভালো লেগেছে। চাণক্যের এই যুক্তিনির্ভর অনুধাবন করাকে আমার শতকোটি প্রনাম। চানক্য সিরিজ এর বেশ কিছু তথ্যের মাধ্যমে আমি নতুন কিছু জানলাম, যেটা আমার বেশ ভালো লেগেছে। লেখক যে অনেক গবেষণা করে লিখেছেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না! বইটি হার্ড কভার, ভালো কাগজ, ঝকঝকে ছাপা ও আকর্ষণীয় প্রচ্ছদ সমৃদ্ধ। পরবর্তী পার্ট এর অপেক্ষায় থাকবো। আপনার লেখার দীর্ঘায়ু কামনা করি। ভালো থাকবেন........
📥🗒️2024 Book Review ~ 28 যদি এই বইটি পূর্বেই কেউ পড়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনাদের ব্যক্তিগত মতামত জানাবেন। এছাড়াও আমার রিভিউ কেমন লাগছে সেটাও জানাবেন নিচের কমেন্ট বক্সে। যদি কিছু ভুল ত্রুটি হয় সেটাও জানতে ভুলবেননা। 🍀 আবারো দেখা হবে পরের রিভিউতে। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন আর অনেক অনেক বই পড়ুন। 🙂 🙏🏻 !! ধন্যবাদ !! 🙏🏻
চাণক্য সিরিজের প্রথম বইটা পড়ার পর প্রত্যাশা বেড়ে গিয়েছিল, এবং এই বইটিতে হতাশ হইনি। টানটান কাহিনী। একের পর এক কালো তীরের আঘাতে খুন হচ্ছে কেউ, শশাঙ্কের রাজত্বে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার হচ্ছে, কিন্তু পেছনে কারা? চাণক্যর বুদ্ধি কি এবার হার মানবে? শেষটা মনঃপুত হয়নি, সম্ভবত পরের পর্বের জন্য ক্লিফহ্যাঙ্গার থাকায়, কিন্তু লেখনীর কারণেই চার তারা।