স্বপ্ন ও স্মৃতির সমন্বয়ে মানুষের জীবন গড়া। ঢাকা কমিক্সের 'প্রতিবাস্তব'এর দ্বিতীয় সংখ্যার এবারের থিমও সেটা। বাৎসরিক এই কমিক্স ডাইজেস্টের প্রথম সংখ্যা আমার ভালো লাগার মতো ছিলো। এবারের 'প্রতিবাস্তব : স্বপ্ন ও স্মৃতি' আগেরটার তুলনায় অনেক গোছানো। সংখ্যাটি গড়তে অভিনিবেশের ছাপ স্পষ্ট।
বইয়ে সর্বমোট কন্টেন্ট আছে বিশটি। বাংলাদেশের তরুণ কমিক্স আর্টিস্টরা যে ম্যাচিওর অঙ্কন করতে পারেন এবং ভালো লেখকেরা এই মাধ্যমে কাজ করতে আগ্রহী তা বুঝা গেছে। এদের মধ্যে কয়েকজন লেখকের একাধিক লেখার সাথে আমার পরিচিতি থাকায় ব্যাপক আগ্রহ-উদ্দীপনা আমার মাঝে কাজ করেছে। মান বিবেচনায় আমি বিন্দুমাত্র হতাশ হই নি সেটা বলতে পারি। লেখা এবং আঁকার এই যুগলবন্দি দারুন লেগেছে। কন্টেন্ট ক্রমানুসারে যথাসাধ্য স্পয়লার ফ্রি রিভিউ দিচ্ছি।
১) লোকমানের দিন - লেখা : মাশুদুল হক। আঁকা : অনিক সরকার।
লোকমানের গল্প। ইওস নামের এক প্রতিষ্ঠান মানব স্মৃতির অদল-বদল করে থাকে। গল্প এবং অঙ্কন চমৎকার। লোকমানের আশাপূর্ণ দৃষ্টি ব্রিলিয়ান্ট ছিলো।
২) আমাদের গেছে যে দিন - নাতাশা জাহান।
মা-মেয়ের শখ। মেয়ে স্টিকার। মা স্ট্যাম্প। মায়ের ইচ্ছে ছিলো বোরাক দেখার। দীর্ঘদিনের এই আকাঙ্ক্ষা কি পূরণ হবে।
৩) হেডস্পেস - ফাহিম রেজওয়ান রাবিদ।
দৈনন্দিন জীবনের ঝঞ্ঝাট, আত্মাহীন কর্মস্থল, আশপাশের মানুষ পরিণত হয়েছে বিভিন্ন প্রাণীতে। কাফকার গ্রেগর সামসার কথা মনে পড়ে গেলো।
৪) ভ্রান্তিবর্ষ - মাহতাব রশিদ। আদ্রিতা কবির।
মেমোরি অফ রেইন। মানুষের মেমোরি হারানো। তনু, বরুণ, স্মৃতিময় জীবনের অনেক স্মৃতি ভ্রান্তিবর্ষা মুছে দেয়। কিন্তু কী এই ভ্রান্তিবর্ষা? মনকে ছুয়ে গেছে গল্পটি।
৫) আসিতেসে! আবার আসিতেসে!! আবারও আসিতেছে!!! - লেখা : তানজীম রহমান। আঁকা : মেহেরাব সিদ্দিকী সাবিত।
তানজীম রহমান আমার প্রিয় লেখকদের মধ্যে একজন। সুপারহিরো কমিক্সকে স্যাটায়ার করে দুর্দান্ত এক আখ্যান সৃজন করেছেন তিনি। সমান্তরালে অঙ্কন চিত্তাকর্ষক লেগেছে।
শাহরিয়ার খানের কাছ থেকে জানা যায় বাংলাদেশের কার্টুন ও কমিক্সের ইতিহাস। দৈনিক পত্রিকায় কার্টুন স্ট্রিপ থেকে ১৭ বছরে বেসিক আলীর অগ্রগমনের কাহিনীর সাথে পাঠক অনেক গুরুত্বপূর্ণ সারকথা জানতে পারবেন। ভদ্রলোক নিজে এক জীবন্ত ইতিহাস যেন।
৭) অতিবাস্তব - সব্যসাচী চাকমা।
ক্যারিয়ারের প্রচন্ড চাপে থাকা একজনের দুঃস্বপ্ন উপর নির্মিত কমিক্স এটি। অঙ্কন খুব ভালো লেগেছে। এই শিল্পীর কাজ আমার পছন্দের।
৮) আলেয়া - অধরা পতত্রী।
অন্ধকার সবসময় খারাপ নয়। তীব্র আলো বরঞ্চ বিপদের হতে পারে। হোস্টেলে থাকা এক ছাত্রীর পরাবাস্তব অভিজ্ঞতার কাহিনী আলেয়া।
২০৬১ সালের আজব এক সময়ের অদ্ভুত সাহিত্যপ্রেমী দুজনের স্টোরি। চমকপ্রদ কিছু খুব পরিচিত সাহিত্য এবং সঙ্গীতের রেফারেন্স আছে এখানে। অঙ্কন জীবনানন্দ দাশের কথা মনে করিয়ে দেয়।
অত্যন্ত দুঃখজনক কিছু ঘটনার সাথে মিথের এক চরিত্রের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে এক রহস্যের স্টোরি চাঁদের মা বুড়ি। মন বিষণ্ন হয়ে যেতে পারে অনেকের এটি পড়ে।
১৩) হরিৎ সাগর - ফাহিম আনজুম রুম্মান।
মেরুন নামের এক মেয়ে স্বপ্নের ভিতর কি স্বপ্ন দেখে? প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষা করতে এক কাল্টের কাজকারবার নিয়ে লেখা গল্পটি চমৎকার লেগেছে।
১৪) আকাশ কুসুম - লেখা ও আঁকা : আরহাম হাবীব/মৃত্তিকা।
আমার মতে সম্ভবত সবচেয়ে ভালো আর্ট স্থান পেয়েছে এই গল্পে। ভয়ংকর সুন্দর প্রেমের গল্প।
১৫) বেলুন - ওয়াসি আহমেদ এবং আদিব রেজা রঙ্গন।
সামিরের জন্য বেলুন কিনতে গিয়ে তার বাবার সাথে অদ্ভুত এক বেলুনওয়ালার দেখা। তারপর...
১৬) আহর্তা - আমিরুল ইসলাম সামির
ক্রিকেট খেলায় নেয় না তারা রাব্বুলকে। বাস্তবে তাকে বুলিইং করা হয়। স্বপ্নের জগতে ঘটনা উল্টে যায়। দারুন অঙ্কন। ভালো গল্প।
১৭) গল্পছবির ভাষা - মনোজিৎ চট্টোপাধ্যায়।
মনোজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের প্রাঞ্জল লেখনিতে ভাষা ও অঙ্কনের যৌথভাবে প্রয়োগের ইতিহাস এবং মানুষকে প্রভাবিত করার বিজ্ঞানের পাঠ ভালো লেগেছে।
১৮) প্রাণের কমিকস : ভিন্ন পাঠ - মেহেদী হক।
প্রাণ কুমার শর্মা। কীভাবে ভারতীয় সুপারহিরো সৃষ্টি করলেন কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিল্পী না হয়ে, লিমিটেড রিসোর্স নিয়ে, এসব নিয়ে লিখেছেন মেহেদী হক। ইনসাইটফুল একটি প্রবন্ধ।
১৯) বোবা - মেহেদী হক।
বোবায় ধরার মিথ নিয়ে কমিক্স। সংক্ষিপ্ত এবং অস্বস্তিকর। ঠিক এ কারণেই ভালো।
২০) মোয়েবিয়াস, স্বপ্ন- রেখার জাদুকর।
ফরাসি এক কমিক্স শিল্পীর আজব সব সংলাপহীন পরাবাস্তব ও ফ্যান্টাসির কমিক অঙ্কনের গল্পের সাথে তাঁর একটি সংক্ষিপ্ত কমিক স্টোরি জুড়ে দেয়া হয়েছে। বেশ ভালো।
প্রতিবাস্তব ১ এ যেমন বারবার ফিরে যাওয়া যায়, প্রতিবাস্তব ২ এ স্বপ্ন এবং স্মৃতি নিয়ে লেখক / শিল্পীরা যেভাবে খেলেছেন, মাত্রাবোধ সাথে করে, এই কমিক্স সংকলনে পাঠক ফিরে যেতে পারবেন বারবার।
কমিক বই রিভিউ
প্রতিবাস্তব : স্বপ্ন ও স্মৃতি ( কমিকস সংকলন ২০২৩ ) সম্পাদক ও প্রকাশক : মেহেদী হক নির্বাহী সম্পাদক : মাহাতাব রশীদ প্রচ্ছদ : আরহাম হাবীব, মাহাতাব রশীদ, আনিসুল ইসলাম সামির ক্যালিগ্রাফি : ত্বোয়াকিন আরাফাত তোয়াহা প্রথম প্রকাশ : ডিসেম্বর ২০২৩ প্রকাশক : DHAKA Comics জনরা : কমিক্স সংকলন। রিভিউয়ার : ওয়াসিম হাসান মাহমুদ।
প্রতিবাস্তবের এবারের বিষয় স্মৃতি ও স্বপ্ন। বিষয়ভিত্তিক সংখ্যা বের করার জন্য ঢাকা কমিক্স ধন্যবাদার্হ। স্মৃতি ও স্বপ্নের দ্বান্দ্বিকতা, মাধুর্য, কদর্যতা, অনির্ভরশীলতা ও অনিত্যতা বেশিরভাগ গল্প ও ছবির যুগলবন্দীতে চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে। ব্যক্তিগত পছন্দের গল্প ও ছবি - আকাশকুসুম, ভ্রান্তিবর্ষা, অতিবাস্তব, বেলুন, লোকমানের দিন। শাহরিয়ারের খানের সাক্ষাৎকারটাও দারুণ।
প্রতিবাস্তব ২০২২ পড়বার পর '২৩ এর মাঝামাঝি যখন শুনি যে এবছর আরেকটি সংকলন বের হবে, স্বভাবতই অনেক এক্সাইটেড ছিলাম। পয়লা জানুয়ারি হাতে আসবার পর গতকাল দুইদিনেই শেষ করে ফেললাম। As expected, সুন্দর হয়েছে। কয়েকটাতে "রুম অফ ইমপ্রুভমেন্ট" থাকলেও, ইউনিক আইডিয়াওয়ালা সুন্দর কয়েকটা কমিক আছে। পার্সোনালি ভালো লেগেছে "লোকমানের দিন" (বেস্ট সাই ফাই), "ভ্রান্তিবর্ষা" (বেস্ট আইডিয়া), "বিস্মৃতি", "চাঁদের মা বুড়ি" শীর্ষক কমিকগুলো। বেসিক আলী খ্যাত কার্টুনিস্ট শাহরিয়ার এর সাক্ষাৎকার দেয়াটা একটা ভালো আইডিয়া ছিল। বাংলাদেশে কার্টুন/কমিক ইন্ডাস্ট্রি এবং লয়াল একটা ফ্যানবেস তৈরি করবার জন্যে ঢাকা কমিক্স এর এরকম সুন্দর সুন্দর উদ্যোগ আরো নেয়া উচিত। তবে এক্ষেত্রে কার্টুনিস্ট শাহরিয়ার সাহেবের সাথে আমি একমত - বাৎসরিক বড়ো কলেবরের দামী সংকলন এর থেকে মাসিক ছোট ম্যাগাজিন/ ট্যাবলয়েড কিছু প্রকাশিত হলে পাঠক বাড়বে (তাই বলে প্রতিবাস্তব অফ করবেন না xD). হ্যাপি রিডিং
অনেকগুলো গল্প। চমৎকার কাজ। স্বপ্ন ও স্মৃতি নিয়ে এরকম হার্ডকোর কাজ বাংলাদেশিরাও করতে পারে দেখেই ভালো লাগছে। ঢাকা কমিক্স গল্পের দিকে মনোযোগ দিয়েছে এটাও আশা জোগায়। কয়েকটা গল্প জমেছে। সিগনেফিকেন্টলি মাহাতাব রশীদের গল্প 'ভ্রান্তিবর্ষা'র কথা বলা যায়। খুব সুন্দর গল্প, সুন্দর স্টোরিটেলিং। প্রতি বছর প্রতিবাস্তবতা আসুক, প্রতি বছর কল্পণাগুলো ডালপালা মেলুক স্বাধীনভাবে। আমরা অবাক হয়ে যেন ভাবতে পারি, অসম্ভবে কখন কবে মেঘের সাথে মিল হলো ক্যান?
প্রতিটা গল্পের আঁকিয়ে এত সুন্দর তবে বেশি গল্প এড করতে গিয়ে কোনোটার কাহিনীই পোক্ত হয়ে উঠেনি ভ্রান্তিবর্ষা ছাড়া। মাহতাব রশীদের আঁকা আর আদ্রিতা কবিরের গল্পে ভ্রান্তিবর্ষা গল্পটা সবচেয়ে বেশি সুন্দর।
বছরের প্রথম দিন ৩৫০ পেজের ঢাউস সাইজের এই সংকলন "প্রতিবাস্তব ২"গোগ্রাসে গিলে শেষ করছি।
নাতাশার শখের সুখময় স্মৃতি বা কখনো সব্যসাচী চাকমার অতিবাস্তব দু:স্বপ্ন কিংবা অদ্রিতা আর মাহাতাবের ভ্রান্তিবর্ষার অপেক্ষা । কখনো বা ভেসে বেড়িয়েছি হরিৎ সাগরে।
মৃত্তিকা ও আরহামের আকাশকুসুম, সামিরের আহর্তা থেকে শুরু করে ১২৩৬, বেলুন, আলোয়া একের পর এক আরো অনেক দুর্দান্ত আকা ও লেখা।
সব শেষে মুগ্ধ হওয়া কমিক্স বোবা। সাথে বেসিক আলির সাক্ষাৎকার, মনোজিৎ চট্টপ্যাধ্যায়,মেহেদী হকের কমিক্স বিষয়ক লেখা।
সবগুলো গল্পের মাঝে মাহতাব রশিদ এর ভ্রান্তিবর্ষা সবথেকে বেশি ভালো লেগেছে। তবে ভালো লাগে নি এরকম একটা গল্প ও নেই। আর বাংলাদেশ এ যে এত সুন্দর গ্রাফিক্স নভেল, কমিক্স এর কাজ হচ্ছে, ভাবতেই ভালো লাগে। চমৎকার চমৎকার সব আর্ট!
প্রতিবাস্তবঃ স্বপ্ন ও স্মৃতি প্রকাশ পেল। ঘোষণা অনুযায়ী। বিলম্ব না করে।
আমার পুরনো টোস্টার থেকে আটকে আটকে লাফ দিয়ে বের হওয়া টোস্টের মত। ‘দিচ্ছি’, ‘দিব’, করা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বাল্য-বন্ধু থেকে পাওনা ফেরত পাওয়ার মত। স্বপ্ন-আঁধার কেটে ভেসে ওঠা পষ্ট একটা ছবির মত।
খুব আনন্দ হয়েছিল, হাতে পেয়ে।
যেনতেন ব্যাপার না মোটেও, এবার আছে ২০টি চিত্র-গল্প, দু-দুটি ভেরিয়েন্ট কভার, তায় একটা স্লিপ-কেস উপরে রূপালিতে ক্যালিগ্র্যাফিক নাম এম্বস! সাথে পোস্টার এবং স্টিকার গিফট। এলাহি কারবার!
প্রকাশ এবং ডেলিভারি চালু হলে দেখা গেল একেকজন একেক সময় পাচ্ছে। এবং একটা হুড়োহুড়ি পড়ে গেছে ‘রিভিউ’ দেওয়ার। কেউ বর্ণনা লিখছে, কেউ ছবি পোষ্ট দিচ্ছে আর কেউবা বলছে। আমি তো দেরী করে ফেললাম। তাতে কি? এমন একটা সংকলন নিয়ে কথা না বলে পারা যায়!
প্রোডাকশন নিয়ে আলাদা করে কিছু বলার নেই, যথারীতি টপ-নচ। তবে থিমের সাথে সঙ্গতি রেখে প্রতিটি কাজ স্বপ্ন, বাস্তব, জাদু-বাস্তবতা ঘেঁষা।
লোকমানের দিন, একজনের হতাশা আরেকজনের বাঁচার আঁধার হতে পারে? পারে, ভিন্ন ভবিষ্যৎ, ভিন্ন সমাজে। যেমন মাশুদুল হকের লেখার ভার, তেমনি অনিক সরকারের আঁকার ধার। চকচকে, ক্লিন আঁকা, সাই-ফাই গল্পটাকে প্রান দিয়েছে আর দিয়েছে একটা ভয়াল ভবিষ্যতের শঙ্কা।
আমাদের গেছে যে দিন, মা, মেয়ে নতুনের হাতছানি আর তাদের সিমেন্টের মতো এঁটে রাখা মিঠে স্বপ্ন-স্মৃতি। একটা পুরনো আসবাব খুলে দিল প্রায় বিস্মৃত কিছু স্বপ্ন। নাতাশা জাহানের গল্প একটু দীর্ঘ মনে হলেও দূরের স্মৃতির নতুন মানে খুঁজে পাওাটা মিষ্টি। আঁকা বেশ কিউট।
মেটাফর দিয়ে বোঝাই হেডস্পেস। মূল চরিত্র একটা ঘানি-টানা শহুরে জীবন কাটায়। তার দৈনন্দিন জীবনের একটি দিনের নানা মোড় অভাবনীয় সব রূপকালঙ্কার দিয়ে সাজিয়ে দুর্দান্ত কল্পনাশক্তির পরিচয় দিয়েছেন ফাহিম রেজওয়ান রাবিদ। বাসযাত্রার সঙ্গী, কলিগ, অফিসের বস (LOL)। ফুটপাথে আছড়ে পড়ার প্যানেলটা – আঁকা একেবারে যেন ধাক্কাটা গায়ে লাগিয়েছে। অন্ধকারের অভিজ্ঞতাগুলো দারুনভাবে ফুটানো হয়েছে পাঠকদের জন্য। উপস্থাপন করে তুলেছে এই গল্পকে অসাধারণ!
ভ্রান্তিবর্ষা, সুন্দর, মায়াবী একটা নাম। মাহাতাব রশীদ বরাবর ব্যাতিক্রমধর্মী কাজ দিয়েছেন। গতবারের প্রতিবাস্তব বিশেষ করে মনে আছে। এবার আদ্রিতা কবিরকে সঙ্গে নিয়ে নামিয়েছেন এক জাদু-বৃষ্টি। এখানে থ্রিল, রোমাঞ্চ, ডিস্টোপিয়া নেই, একেবারে বহমান জীবনের গল্প। কিন্তু কি স্বাদু লেখনী! কমিক্স ন্যারেটিভ এমন হতে পারে? নরম, মিষ্টি, রঙিন, হাওয়া-মিঠাই স্বপ্নের মত। মায়া জাগিয়ে একটু পরপর কেমন উপে যায়। লেখাই গল্পকে টেনে নিয়ে যায়। এমন দলছুট চিন্তাগুলো কই থেকে যে আনেন ক্রিয়েটর? তারচেয়ে বড় জিজ্ঞাসা – (অতলান্ত ২ কবে আসবে? 😉)
আসিতেছে! আবার আসিতেছে! আবারো আসিতেছে! নামেও প্রতিধ্বনি দিয়ে গল্পের থিমের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে – কি কায়দা! তানজিম রহমান ও মেহেরাব সিদ্দিকী সাবিত এর দুর্দান্ত যুগলবন্দির ফসল এই কমিক্সটি। সুপারহিরো এক্সট্রাভাগেঞ্জা! আঁকা চমৎকার আবহ তৈরি করেছে। ভিলেনের conceptualisation বেএএএশ cool। Witty লেখা আর টুইস্ট উপভোগ্য করেছে কমিক্সটি।
শাহরিয়ার খানের ইন্টারভিউ বেশ লেগেছে। ওনার সম্পর্কে তথ্য ছাড়াও দেশের কমিক্স শিল্পের অবস্থানের ওপর বেশ সহজ আর বিশ্লেষণধর্মী আলোচনা আছে। ঢাকা কমিক্সকে দেওয়া একটা মতামত ভাল লেগেছে। মেলাভিত্তিক কমিক্স ছাড়াও যেন মাসওয়ারী ম্যাগাজিন প্রকাশ করে। শুনছেন, ঢাকা কমিক্স?
অতিবাস্তব, সব্যসাচী চাকমার সরল একটা গল্প। বাহ্যিক জীবনের কষ্ট ফে���ছে মনের ওপর প্রলম্বিত চাপ। স্বপ্নে সেটার ক্রমাগত প্রকাশ। সহজ, শক্তিশালী আঁকায় মুখ্যচরিত্রের নৈরাশ্য বেশ টের পাওয়া যায়। এন্ডিং টা আকস্মিক, তবে খারাপ লাগেনি। ক্রিয়েটরের নাম খালি সূচীপত্রে দেখলাম, কমিক্সে নেই কেন?
পরের কমিক্স আলেয়া। যে আলো ভ্রান্তি ছড়ায়, পথ ভুলায়, বিপাকে ফেলে – তেমন এক আলো আর আলোর সাপেক্ষে আঁধারের গল্প বুনেছেন অধরা পতত্রী। ওনার কাজের সাথে আগেই পরিচয় ঢাকা কমিক্সের ইব্রাহিম থেকে। ওনার আঁকার সিগনেচার স্টাইলে বড় বড় প্যানেলে গল্প বলা হয়েছে। একটা সাসপেন্স তৈরি হয়েছে ঠিকই। তবে গল্পের মোড়ের চেয়ে ফ্রেম বাই ফ্রেম যেন প্রবাহের দিকেই নজর রাখা হয়েছে বেশী। ক্লাইম্যাক্স মনে হয়েছে হুট করে এসেছে আর আসতে সময় নিয়েছে।
বিস্মৃতি লিখেছেন জুনাইদ কবীর জাহিন আর আঁকা অরিন্দম কুণ্ডুর। আঁকার স্টাইল চার্মিং, গল্পের সাথে একেবারে মিশে যায়। ডার্ক ড্রয়িং ডিস্টপিয়াকে যেমন জাঁকিয়ে তোলে তেমনি একটা কোমল মধুরতাকে নাড়া দেয়। পেসিং মাপসই লেগেছে। তবে – বেলা বোসের ফোন নম্বর কেন ব্যাবহার করা হয়েছে গল্পে? (২৪৪১১৩৯)
পলায়ন শুরু হয় একটা লাভক্রাফটিয়ান দুঃস্বপ্ন দিয়ে। যেটা আদতে মুখ্যচরিত্রের বাস্তবের প্রতিফলন। আর বাস্তবের সাথে জুঝতে না পেরে পলায়ন ইচ্ছা। অনাড়ম্বর এই গল্পটি খুব বড় না কিন্তু মিশকাত ওহীর দুর্দান্ত ভিজুয়াল মনে দাগ কাটার মত। ৩:৩৩ বলে ওনার একটা কাজ দেখেছিলাম; আঁকার ধরন বেশ গায়ে কাঁটা দেওয়ার মত ছিল। জাহিদ হোসেনের লেখা স্বপ্ন আর বাস্তবতাকে সেই কঠোরতা আর অসহায়ত্ব দিয়েছে।
১২৩৬ এ সাইফ মাহ্মুদ একটা অতিবাস্তব জয়-রাইড। অঙ্কনশৈলী আর লেখার কেরামতি মূল চরিত্রের উন্মত্ততা, ভয়, আশাহীনতা প্রচার করতে পেরেছে। পড়ার সময় মনে হচ্ছিল একটা লাগাম-ছেঁড়া পাগলা ঘোড়ার পিঠে বসে আছি, তাও জিন ছাড়া! শেষের টুইস্টগুলো বুঝতে অসুবিধা হয়েছে কিছুটা।
চাঁদের মা বুড়ি প্যারানরমাল হরর/রহস্য। টান্ টান লেখার চেষ্টা করেছেন কাজী মারুফুর রহমান। আর বিশারা ইখতিকে নিয়ে ক্লিন, কনভেনশনাল আর্ট-স্টাইলে বলেছেন গল্পটা। আমার কাছে একটু টেক্সট-হেভি মনে হয়েছে, আঁকার চেয়ে লেখাই যেন জায়গায় জায়গায় প্রাধান্য পেয়েছে। তবে ফোক-লোর মিশানো, পরাবাস্তব একটা জগতকে বাস্তবে টেনে আনা – মন্দ লাগেনি।
হরিৎ সাগর এক দীর্ঘ স্বপ্ন আর তা থেকে এক দূরের ভবিষ্যতে জেগে ওঠার গল্প। ফাহিম আনজুম রুম্মান এর কাজ আগেও মাতিয়েছে (মফিজউদ্দিন, নিদ্রা-নগর)। এটাও ব্যাতিক্রম না। আঁকা দুর্দান্ত। মেরুনের দোলাচল আমাদেরও বিভ্রান্ত করে। স্বপ্ন-দৃশ্য প্যানেলগুলো একটু ভারী মনে হয়েছে। তবে ওস্তাদি মার দিয়েছেন শেষের প্যানেলে। ওয়াও!
আকাশকুসুম এনেছে আরহাম হাবীব আর মৃত্তিকা টিম। ডিস্টপিয়ান পৃথিবীতে বাস্তব যেন একাকী এক স্বপ্নের মত। একাকীত্ব এখানে কেমন? একাকীত্ব থেকে মুক্তির আশা, মুক্তি পাওয়াই বা কেমন? আঁকা বেশ ধারালো। কিন্তু এখানে প্যানেলিংটা বেশ নজরে পড়ার মত। নির্বাক ফ্রেমগুলো কি সুন্দর করে কাহিনী এগিয়ে নিয়ে যায়! এমন ফ্রেমিং বাইরের বড় আর্টিস্টদের কাজেই দেখেছি। সংলাপহীন ফ্রেম গুলোই নিঃসঙ্গ, ভগ্ন এক পৃথিবী তুলে ধরে, গা ছম ছম করায়, মুক্তির আকুতি তৈরি করে। গল্পভাবনা বেশ আলাদা রকমের। আঁধারে মেয়েটির ফিরে আসার বিষণ্ণতা আর মিলন দৃশ্যের উন্মাদনা বিশেষ করে মনে আছে।
বেলুন একটা সাইকলজিক্যাল হরর গল্প। ওয়াসি আহমেদ আর আদিব রেজা রঙ্গন বিশেষ করে আঁকা দিয়ে ভয়ের আবহ তৈরি করেছেন। ভিজুয়ালগুলো বেশ তীব্র। কিছু ক্ষেত্রে প্রকটভাবে সহিংসতা এসেছে। পাঠক একটু সাবধানে! বেলুনওয়ালা শহরে তেমন দেখা যায় না, তবে চোখে পড়লে মনের কোনায় এই চিত্রগুলো আনাগোনা করবে হয়তো।
আহর্তা একটা সাধ পূরণের গল্প বলা যেতে পারে। আনিসুল ইসলাম সামির মনোরম অঙ্কন দিয়ে একটা সিরিয়াস গল্পই বলেছেন। শুরুর দিকের গলির ক্রিকেট, চা-দোকানের টিভির আওয়াজ বেশ আবহ তৈরি করে। বাচ্চাটা একি সাথে মিষ্টি আর রহস্যময়। রহস্য আরেকটু খোলাসা করলে ভাল লাগতো। শেষেরদিকে ক্রিকেট দলের অবয়বটা… ডর লাগসিল।
মনোজীৎ চট্টোপাধ্যায়, গল্পছবির ভাষাতে আলোচনা করেছেন ছবি বিশ্লেষণের বিজ্ঞান নিয়ে। কিছু মজার তথ্য-কনিকা আছে। এখানে বলা হয়েছে যে, বড়দের মন গল্পছবির বিশ্লেষণাত্মক দিকে আকৃষ্ট হবে, ছোটদের ক্ষেত্রে হবে ছবির যাদুর দিকে। আমার কিন্তু ছবির দিকেই নজর গিয়েছিল, হুম্মম (!)
প্রাণের কমিকসঃ ভিন্ন পাঠ এসেছে প্রাণ কুমার শর্মার কথা। উনি কে বলেন তো? চাচা চৌধুরী, সাবু, বিল্লু, পিঙ্কি, চান্নি চাচির স্রষ্টা। মেহেদি হক ভাই প্রাণের সহজ কিন্তু কার্যকর স্ট্র্যাটেজি নিয়ে আলোচনা করেছেন। প্রাণ বিদেশী পটের বিপরীতে বানিয়েছিলেন একেবারে নিজেদের কমিকস চরিত্র, এনেছিলেন এক বিপ্লব। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে প্রাণের এই সৃষ্টি ভালবাসা পেয়ে গেছে, ওনার প্রয়াণের পরও। আমাদেরও এমন করা উচিৎ - নিজেদের গল্প, নিজেদের চরিত্র, নিজেদের সৃষ্টি।
বোবা, এই কমিকসটার বিশেষ বৈশিষ্ট্য, এটি একেবারে সংলাপহীন! স্রষ্টা মেহেদি হক ভাই এর শক্তিমান আঁকায় ৪টে পাতাতেই শেষ! Sleep Paralysis এর ধন্দ নিয়ে গল্পটি বিন্দুতে সিন্ধু! শুরুর দিকে দু পাতা জোড়া ফ্রেম ভয় উদ্রেক করে। মুখ না থাকাটা লাগসই একটা রূপক। শেষে রহস্য যেভাবে কাটে দেখে মজা পেয়েছি বেশ!
মোয়েবিয়াস, স্বপ্ন-রেখার যাদুকর, ফরাসি কমিক বৈপ্লবিকের কাজের সামান্য নমুনা। শক্তিশালী এই আর্টিস্ট একেবারে সংলাপহীন, পরাবাস্তব কমিকস আঁকতে পারদর্শী ছিলেন। আরজাকের প্যানেলগুলো কেমন এক অন্যভুবনের অনুভূতি জাগায়।
প্রতিবাস্তব ২ আবারো অনেক নতুন ও অভিজ্ঞ আঁকিয়েদের এক প্ল্যাটফর্মে জড়ো করেছে যারা সবাই এই দেশের। সামগ্রিকভাবে কাজের মান বেশ ঈর্ষনীয়; ভাবতেই ভাল লাগে যে এত নবীনেরা এত চমৎকার কাজ দিচ্ছে। বইটি বেশ ভারী, বেশ কয়েকবার মুখের ওপর পড়েছে।
প্রতিবাস্তব ২ তে কোন বয়স সংক্রান্ত রেটিং নেই। থাকা উচিৎ ছিল, কারণ স্বপ্ন, বাস্তব, পরাবাস্তব এই জগতের বিষয়-বস্তু প্রাপ্ত-মনস্কদের জন্য। এবং কিছু গল্পতে প্রকট ভিজুয়াল বা ডার্ক বিষয়াদি আছে। জ্যাকেট কাভার আগেরবারের মত ফিঙ্গার-প্রিন্ট ম্যাগনেট, হাত ঘামলে ছাপ পড়ে যায়। যদিও প্রতিশ্রুতি মত একেবারে সময়ে এসেছে বইটি, খুব কি তাড়াহুড়ো করা হয়েছিল?অনেক টাইপো চোখে পড়লো এবং আগের সংখ্যার চেয়ে বেশী। এবার কুরিয়ার ড্যামেজ না, প্রি-কুরিয়ার ড্যামেজ ছিল। মানে প্রেস থেকে আনার সময়ে দড়ির আর হ্যান্ডলিং ড্যামেজ! কুরিয়ারে একটু বাব্ল র্যাপ দেওয়া যেত, এত দামি, সুন্দর বইটিস শুধু প্লাস্টিক কভারে দেওয়া হয়েছে। বেশ কিছু ঢাকা কমিক্স ফ্যান/ফলোয়ারদের থেকে জানলাম তারাও ড্যামেজড্ বই পেয়েছে (রশির দাগ, ইত্যাদি), কিন্তু নাকি পাল্টানোর সহযোগিতা পাচ্ছে না । এত সুন্দর একটা প্রোডাকশন, অনেকে যত্ন করে সংগ্রহ করবে – সেখানে খামতি থাকলে চলে? ঢাকা কমিক্সের কাছে আর্জি থাকবে আমাদের সবার তরফ থেকে সম্ভব হলে একটু পাল্টে দেওয়ার।
এবার?- মন খারাপ। এত সুন্দর কমিক্স সংকলন শেষ! কথা ফুরলো, নটে মুড়লো, নতুন প্রতীক্ষা আবার শুরু হলো।
🔮প্রতিবাস্তব কমিকস সংকলন ২০২৩🔮 🪄🃏(স্বপ্ন ও স্মৃতি) ঢাকা কমিকস🃏🪄 💰 মূল্য ৯০০₹
🪄🌟‘প্রতিবাস্তব'(স্বপ্ন ও স্মৃতি) এটা দ্বিতীয় বই। প্রথম বই হাতে নিয়ে দেখার সৌভাগ্য হয়েছিলো, কিন্তু পড়ার সৌভাগ্য হয়নি। ভবিষ্যতে ও আর হবে না, এই দুঃখ রয়ে গেলো। কারণ প্রতিবাস্তব ১ আর ছাপানোই হবে না!
🪄🌟 আরো একটা কথা বলি, প্রতিবাস্তব ১ এর সাথে প্রতিবাস্তব ২ এর কোনো যোগসূত্র নেই, আলাদা আলাদা সব কমিকস করেছে। বলা ভালো এ গুলো এক একটা কমিকস এর সংকলন। বিভিন্ন ধরনের মজার মজার কমিকস রয়েছে। তার সঙ্গে বেশ কিছু ভয়ের কমিকস ও রয়েছে।
🪄🌟যাই হোক প্রতিবাস্তব ২ টা পড়লাম Experience ভীষণ ভালো। পুরো বই জুড়ে অজস্র ছবি, ভীষণ সুন্দর এ আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কমিকস আমি এর আগেও পড়েছি বিশেষ করে আনন্দমেলা পূজাবার্ষিকীর ফেলুদা কমিকস আমার Favourite!
🪄🌟কমিকস যে এতো গোছানো হতে পারে তা আমার জানা ছিলো না। ছবি দেখেই পুরো গল্প বোঝা হয়ে যায় বিশেষ পড়ার দরকার পরে না। ৪-৫ ঘন্টা সময় দিলেই ৩৫১ পৃষ্ঠার বইটি পড়া হয়ে যাবে। সব কমিকস ই যে আমার ভালো লেগেছে তা নয়। তবে বেশিরভাগ ই ভালো লেগেছে। বেশ কিছু Emotional Story পেলাম সেই গুলো Just মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতো।
🪄🌟সব মিলিয়ে প্রতিবাস্তব ২ ভীষণ সুন্দর কাজ হয়েছে। আমি এই বই কে ৫/৪ দিলাম। আচ্ছা আপনি কি কমিকস পড়তে পছন্দ করেন? এই বই তাহলে পড়তেই হবে। না হলে কিন্তু অনেক কিছু মিস করে যাবেন। সূচিপত্র Comment Box এ দিলাম।
📌🗒️2024 Book Review ~ 6 আবারো দেখা হবে পরের রিভিউতে। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন আর অনেক অনেক বই পড়ুন। ধন্যবাদ 🙂🙏
'প্রতিবাস্তব কমিক সংকলন ২০২৩ স্বপ্ন ও স্মৃতি' বেশ কদিন আগে পড়া শেষ হলেও সময়ের অভাবে রিভিউ লেখা হয়ে ওঠেনি। একটা জিনিস শুরুতে বলে রাখি ভেতরের আর্টওয়ার্কগুলো আসলেই দুর্দান্ত লেভেলের ভালো ছিল। তবে ভালো আর্টওয়ার্ক হলেও বেশ কিছু গল্প বাদে বেশিরভাগ গল্পই সেই দুর্দান্ত লেভেল থেকে ছিটকে গিয়েছে। যাইহোক রেটিং দিয়ে কোন কমিকস কেমন লাগলো সেটা জানাচ্ছি।
১. লোকমানের দিন - ৩/৫ ২. আমাদের গেছে যে দিন - ৩.৫/৫ ৩. হেডস্পেস - ৩/৫ (এন্ডিং টা সেভাবে বুঝিনি) ৪. ভ্রান্তিবর্ষা - ৪.৫/৫ (এটা বেস্ট ছিল) ৫. আসিতেছে! আবার আসিতেছে! - (এটায় কিছুই বুঝিনাই) ৬. শাহরিয়ার খানের ইন্টারভিউ - 'বেসিক আলীর' কার্টুনিস্ট সাক্ষাতের সাথে সাথে নানান ব্যাপার জানা এবং সেইসাথে তার কার্টুন নিয়ে ভাবনা সবকিছুর বিশ্লেষণ বেশ ভালো লেগেছে। ৭. অতিবাস্তব - ২/৫ ৮. আলেয়া - ৪/৫ ৯. বিস্মৃতি - ৩/৫ ১০. পলায়ন - ২.৫/৫ ১১. ১২৩৬ - (এটার আগামাথা আমি কিছুই বুঝিনাই) ১২. চাঁদের মা বুড়ি - ৩/৫ ১৩. হরিৎ সাগর - ৩/৫ ১৪. আকাশকুসুম - ৩.৫/৫ (এটার আঁকা অন্য লেভেলের ছিল) ১৫. বেলুন - ৪/৫ ১৬. আর্হতা - ৩/৫ ১৭. বোবা - ৩.৫/৫
একটা সংকলন সম্ভবত আমরা তখনই ভালো বলতে পারি যখন সেখানে বেশিরভাগ গল্প আমাদের ভালোলাগে। 'প্রতিবাস্তব-স্বপ্ন ও স্মৃতি' সংকলনে কিছু কমিকস পড়ে ভালো লেগেছে খুব আবার বেশ কিছু পড়ে তেমন একটা ভালো লাগেনি। সবগুলো কমিকস ই যে সংকলনে ভালো হবে সেটাও মূখ্য না তবে বেশিরভাগ কমিকস যখন ভালোলাগে তখন সেটা শেষ করার পরেও আলাদা ভালোলাগা কাজ করে এখানে সেটার বেশ অভাববোধ করেছি। যাইহোক সামনের সংকলনগুলোতে আশা করি আরো ভালোকিছু পাব।
এই ধরণের সংকলন সাধারণত বিশ আইটেম ভর্তার মতো। একেক গল্পের একেক স্বাদ। তবে, সবগুলো ভর্তা ভালো লাগেনি। সত্যি বলতে কী, বেশিরভাগই তেমন দাগ কাটেনি মনে। সবচেয়ে ভালো লেগেছে ভ্রান্তিবর্ষা। তারপর বলতে হয় লোকমানের দিন আর বেলুনের কথা। যাই হোক, বইটার সবচেয়ে দারুণ ব্যাপার বোধহয় গল্পগুলো না, বরং একেক গল্পে একের রকম আর্ট-স্টাইল দেখা। বইটা দেখতে খুব সুন্দর। কালেক্টিবলস হিসেবে দারুণ। তবে যদি শুধু গল্পের খাতিরে চিন্তা করি, অত দামি একটা বই অনায়াসে রেকমেন্ড করা যায় না।
সবগুলো কন্টেন্টেরই আঁকার মান খুবই ভালো। তবে সবগুলো আবার কাহিনী ঠিক জমাতে পারেনি। অল্প কিছু কমিক্স কাহিনীর "কন্টিনিউটি" বজায় রাখতে পারেনি। তবে সব মিলিয়ে উপভোগ্য ছিল। বাংলাদেশের কমিক্স জগতে প্রতিবাস্তব প্রজেক্ট বেশ প্রশংসনীয় অবদান রাখছে, নতুন নতুন কমিক্স আঁকিয়ে-লেখকের সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। আর এবারের কাজটা প্রথমটার চেয়েও ভালো হয়েছে।
প্রথম সংকলনটি এর থেকে বেশি পছন্দ হয়েছে আমার। এই সংকলন কেন যেন তাড়াহুড়ো করে বের করা হয়েছে বলে মনে হয়। সামনে আরও যত্নশীল হয়ে বানান এবং সংলাপের ত্রুটির দিকে নজর দেওয়া হবে আশা করি।