Jump to ratings and reviews
Rate this book

আওলাদ মিয়া #২

আবার আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেল

Rate this book
ফিরে এলেন আওলাদ মিয়া। কিন্তু ফের শ্রোতা কিংবা কথকের ভূমিকায় নয়, বরং এবার খোদ গল্পের প্রধান চরিত্র হয়েই তাঁর এই প্রত্যাবর্তন। ভাতের হোটেলের আড্ডার সীমানা ছাড়িয়ে কাহিনীর ভূগোল গড়িয়েছে আরো বহু দূরে। বাস্তব ও অবাস্তবের মধ্যে যে অপ্রাকৃত জগৎ, আওলাদ মিয়ার আগ্রহ তা নিয়েই। এবার তিনি তাই পাড়ি দিয়েছেন রহস্যময় মরুয়ারদহ বিলে, খোঁজ নিয়েছেন অধুনালুপ্ত পয়সা টকিজের, ঢুঁ মেরেছেন ক্ষয়ে যাওয়া মহিপুর জমিদারবাড়িতে।

সঙ্গে আছে আজব কিছু মানুষ—জলপথের দুর্ধর্ষ ডাকাত, ঢাকাই সিনেমার বিগতযৌবনা নায়িকা, সাধাসিধা মফস্বলের ধুরন্ধর রাজনীতিবিদ, লালবাতি জ্বলা সিনেমা হলের অসহায় ম্যানেজার কিংবা প্রাচীন অভিজাত জমিদার বংশের নিঃস্ব উত্তরাধিকারী।

প্রেক্ষাপট, উত্তরের ঘোরলাগা জনপদ এবং এর সমান্তরালে বয়ে চলা দুই প্রাণদায়ী নদী—তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র। আওলাদ মিয়ার হোটেলের পুরোনো খরিদ্দারদের নতুন করে আর কিছু বলার নেই। যাঁরা এ তল্লাটে নবাগত , তাঁদের শুধু এটুকুই জানাই —এ স্বাদের ভাগ হবে না। অ্যাডভেঞ্চার, উত্তেজনা ও রহস্যের বারুদে ঠাসা বই আবার আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেল।

176 pages, Hardcover

Published February 1, 2024

6 people are currently reading
90 people want to read

About the author

Niaz Mehedi

15 books20 followers
নিয়াজ মেহেদীর জন্ম রংপুরের বেনীপুর গ্রামে, ২৯ আগস্ট ১৯৮৯ সালে। মা-বাবার জ্যেষ্ঠ সন্তান নিয়াজের হাতেখড়ি পত্রিকার ছোটদের পাতায় লিখে। একসময় লেখালিখি ভুলে গিয়েছিলেন। প্রত্যাবর্তনের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান তাঁর অনুজ নাবিল মুহতাসিম ও অগ্রজ লেখক মশিউল আলমের। ২০১৮ সালে প্রকাশিত তাঁর প্রথম উপন্যাস আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেল বিপুলভাবে সমাদৃত। এরপর লিখেছেন উপন্যাস আড্ডা দেওয়া নিষেধ ও ধাঁধার থেকেও জটিল। ছোটগল্পের দুটি বই বিস্ময়ের রাত ও মর্কট মঞ্জিল। তাঁর ছোটগল্প প্রকাশিত হয়েছে প্রথম আলো, রহস্য পত্রিকা, ইত্তেফাক, কালের কণ্ঠ, বণিক বার্তা ও কিশোর আলোর পাতায়।

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
11 (13%)
4 stars
48 (57%)
3 stars
20 (24%)
2 stars
2 (2%)
1 star
2 (2%)
Displaying 1 - 26 of 26 reviews
Profile Image for ORKO.
196 reviews197 followers
February 22, 2024
হারানো সময়ের উপাখ্যান নিয়াজ মেহেদীর কলমে গল্প হয়ে ধরা দেয়। হারানো জনপদ, মুছে যাওয়া সংস্কৃতি, বিলুপ্তপ্রায় জীবিকার মানুষ,প্রাণহীন আসবাবও স্থান পায় সেসব সময় বদলের উপাখ্যানে। উত্তরবঙ্গের খ্যাত-অখ্যাত গঞ্জ,মফস্বল, বন্দরগুলোর নিজস্ব গল্পের শরীরে প্রাণের স্ফূরণ ঘটে। কারণ, নিরীক্ষাপ্রবণতার যুগে এতোটা যত্ন নিয়ে তাদের গল্প কেউ আর বলে না এখন। গল্পের বিষয়বস্তু ছাড়াও অ্যানথ্রোপলজিক্যাল পয়েন্ট অব ভিউ থেকে, সময়কে ধরে রাখার প্রয়াস থেকে এই লেখাগুলোর গুরুত্ব আছে।

‘আবার আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেল’ নামের সিক্যুয়েলও এর ব্যতিক্রম নয়। জনবিরল পলাশবাড়ি বাজারের ভাতের হোটেল ব্যবসায়ী আওলাদ মিয়া গল্পের কদর করেন। তার হোটেলে হরেক রকম শ্রেণী-পেশার মানুষকে স্বাগত জানান শুধু গল্প শোনার লোভে। এরই ধারাবাহিকতা বজায় আছে এই বইয়েও। তবে ‘মরুয়ারদহ আবিষ্কার’ নভেলায় আওলাদ মিয়া নিজেই হয়ে গেছেন গল্পের প্রধান চরিত্র। তিনটি নভেলার প্রতিটিতেই ঐতিহাসিক সত্যতার সাথে নিয়াজ মেহেদী মিলিয়ে দিয়েছেন অলৌকিক-অতিপ্রাকৃত ঘটনাকে। গল্পের বিশ্বাসযোগ্যতা নির্মাণের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগতভাবে এই স্টাইলটা আমার ভীষণ পছন্দের। তাছাড়া রংপুর-বগুড়া অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহারের জন্যও চরিত্রগুলো হয়ে উঠেছে কৃত্রিমতাবর্জিত।

ব্রহ্মপুত্র-যমুনার অববাহিকায় এক অলৌকিক বিলের নাম মরুয়ারদহ। সেই বিলের জলের রঙ আলতার মতো লাল। হেমন্তের শেষ দিকে ব্রহ্মপুত্রের বুকে যখন আস্তে আস্তে চর ভাসতে শুরু করে তখন মরুয়ারদহ বিল জেগে উঠে। নদীর ঢেউ সেখানে খেলে না। মৃত মানুষের মতো শান্ত হয়ে থাকে মরুয়ারদহ। মানচিত্রে তার অস্তিত্বও নেই।
মবি ডিকে রকোভোকোর অবস্থান সম্পর্কে হারমান মেলভিল লিখেছিলেন,❝It is not down in any map; true places never are.❞ ব্যাপারটা তেমনই। মরুয়ারদহের জলে স্নান করলে মানুষ ফিরে পায় হারানো যৌবন। জল সেবনে সেরে যায় সমস্ত রোগ। আওলাদ মিয়ার একমাত্র সন্তান শারমিন কঠিন সান্নিপাতিক জ্বরে আক্রান্ত,মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। তাকে বাঁচিয়ে তুলতে প্রয়োজন সেই বিলের জল। মরুয়ারদহের সন্ধানে এফডিসির কাটপিস যুগের বিগতযৌবনা নায়িকা চুমকি আর যমুনার ত্রাস নিঃসন্তান মতলুবের গল্প এক বিন্দুতে মিলিত হয়েছে আওলাদ মিয়ার সাথে। দেশীয় কিংবদন্তী নিয়ে এমন জলমগ্ন অ্যাডভেঞ্চারের গল্প খুব বেশি নেই। চরিত্রায়নের দিকটায় লেখক নজর দিয়েছেন নিখুঁতভাবে । যেমন: কাশেমের পর্যবেক্ষণ শক্তির কথাটা সরাসরি না বলে আগে জুয়ার ঘটনার মধ্য দিয়ে সেটা দেখানোর কারণে পরবর্তীতে চরিত্রটিকে আরো বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা সম্ভব হয়েছে। মরুয়ারদহ আবিষ্কারের প্রয়াসে নিয়াজ মেহেদী আমাদের শুনিয়েছেন চিলমারি-চিলাহাটির চিলা রায়ের গল্প,কবিরাজী শাস্ত্রের কথা, গ্রাম্যমেলার বিশদ বিবরণ,আব্বাসউদ্দীনের গানের সাথে সাথে চরাঞ্চলের মানুষের এক নিজস্ব আখ্যান। অ্যাডভেঞ্চারের মধ্য দিয়ে মানুষের মনস্তত্ত্বেরও এক আশ্চর্য সফর ‘মরুয়ারদহ আবিষ্কার’।

‘পয়সা টকিজ’-এ লেখক তুলে এনেছেন বাংলা সিনেমার স্বর্ণযুগের এক সিনেমা হলের কথা। তখন ঢাকা টু পলাশবাড়ি এক যোগে চলতো সময়ের জনপ্রিয় সব ছায়াছবির প্রদর্শনী। বৃহস্পতিবার হলেই শোনা যেতো মাইকিং
‘ঢাকা টু পলাশবাড়ি একযোগে চলিতেছে। পয়সা পয়সা পয়সা টকিজে। শ্রেষ্ঠাংশে সুপারস্টার ইলিয়াস কাঞ্চন, বেদের মেয়ে অঞ্জু, তোজাম্মেল হক বকুল পরিচালিত "শঙ্খমালা", "শঙ্খ শঙ্খ শঙ্খ শঙ্খমালা।" পরিবারের সবাইকে নিয়ে দেখার মতো ছবি। মহিলাদের আলাদা বসিয়া দেখিবার সুব্যবস্থা রহিয়াছে।'
বাংলাদেশের সবথেকে ব্যবসাসফল সিনেমা ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ এর পরিচালক তোজাম্মেল হক বকুলের দ্বিতীয় সিনেমা ছিল এই ‘শঙ্খমালা’। তখনকার সময়ে প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতার কারণে হিট সিনেমা দেখাতে কী পরিমাণ বেগ পেতে হতো সে প্রসঙ্গও খানিকটা উঠে এসেছে পয়সা টকিজে। নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের ঢেউ কীভাবে সিনেমা ব্যবসাতে এসে লেগেছিলো সেই রাজনৈতিক পরিস্থিতির ডটটাও নিয়াজ মেহেদী কানেক্ট করেছেন দক্ষ হাতে। মফস্বলের সেই রমরমা সিনেমা হলের ম্যানেজার বাবলু মিয়ার চুলে-গোঁফে এখন লেগেছে বয়সের সাদাটে রঙ। আওলাদ মিয়াকে তিনি শোনাচ্ছেন এক অতিপ্রাকৃতিক ঘটনার বিবরণী যার রেশ ধরে পয়সা টকিজ একবার ৯০ সালে বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। শেষটায় খানিকটা তাড়াহুড়োর ছাপ থাকলেও জোরালো বক্তব্যের রেশ ধরে পয়সা টকিজ ধরে রেখেছে এক টালমাটাল সময়কে।

‘বাউরা কর্তার বন্ধু’ নামের দীর্ঘ নভেলার আখ্যান বিস্তৃত হয়েছে ব্রিটিশ আমল থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধ পর্যন্ত। এক মুছে যাওয়া জমিদারের শেষ বংশধর ওয়াজেদ আলীর মুখে হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর পিঠে বসে যাওয়া জমিদারি প্রথার অত্যাচারের নীলচে দাগের কথা শোনাটা খানিকটা আইরনিই বটে। তবে এক জমিদার বংশকে যুগের পর যুগ রক্ষা করে চলা সাইদুল ভ্যাবলা নামের অতিপ্রাকৃতশক্তির গল্পের মাঝেও মিশে আছে ঐতিহাসিক সত্যতা।রংপুরের গাঁইয়ারা তাদের অতীব সাধারণ লাঠিসোঁটা, বল্লম নিয়ে কীভাবে ঘেরাও করেছিলো রংপুর ক্যান্টনমেন্ট সেই প্রসঙ্গও আছে। ফকির সন্ন্যাসী আন্দোলনের প্রবাদপ্রতিম ভবানী পাঠক,বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মুখতার ইলাহীর উপস্থিতি বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে মিথ আর ইতিহাসের সমন্বয়ে গড়া এই উপন্যাসিকায়।

আশা করছি নিয়াজ মেহেদী আওলাদ মিয়ার এই কেচ্ছা-পাগলভাবটাকে জিইয়ে রাখবেন। আমরা আরও দারুণ কিছু আখ্যানে আওলাদ মিয়ার সফরসঙ্গী হয়ে উঠতে পারবো।
Profile Image for Aishu Rehman.
1,093 reviews1,079 followers
March 2, 2024
আবার আওলাদ মিয়া, ৬ বছর পর। ফিরে পেলাম পুরোনো সেই স্বাদ। আর তুললাম গোটা কয়েক তৃপ্তির ঢেকুর।
Profile Image for Zabir Rafy.
312 reviews10 followers
November 1, 2024
বই: আবার আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেল
লেখক: নিয়াজ মেহেদী
প্রকাশনী: বাতিঘর

তিনটি নভেলার সংকলন "আবার আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেল"। এর মধ্যে প্রথম নভেলাটি আওলাদ মিয়া সিরিজের মধ্যে ব্যতিক্রম। এখানে আওলাদ মিয়া শুধুই গল্প শুনিয়ে নন, এবারে আওলাদ মিয়া নিজেই নেমেছেন ময়দানে, নামতে হয়েছে।

বাকি নভেলা দুটোয় পাঠক পাবেন চিরাচরিত আওলাদ মিয়াকে। গল্প শুনেই কর্তব্য সমাধা করেছেন তিনি। নভেলা তিনটির মধ্যে দুটোর আলোচনা করছি এই লেখায়।

°
মরুয়ারদহ আবিষ্কার: সমকালীন সাহিত্যে এই নভেলাটি আলাদা জায়গা করে নেবে। দেশীয় মিথ নিয়ে এরকম এডেভঞ্চার নভেলা এর আগে পড়িনি। অতিলৌকিক গল্প পাকাতে রাধুনী নিয়াজ মেহেদী সিদ্ধহস্ত, সেটা তার পাঠকমাত্রই জানেন।

এই নভেলাও ব্যতিক্রম নয়৷ অসুস্থ মেয়েকে বাঁচাতে এবারে নিজেই ময়দানে আওলাদ মিয়া। তাকে আবিষ্কার করতে হবে কিংবদন্তির মরুয়ারদহ বিল। সেটা আদৌ এক্সিস্ট করে কি না সেটাই জানে না কেউ। আবার হয়তো জানে! এটাই খুজে বের করতে হবে আওলাদ মিয়াকে।

এই নভেলায় আরও দুটো ইন্টারেস্টিং ক্যারেক্টার আছে৷ মতলুব মাঝি আমার হৃদয় জিতে নিয়েছেন। এরকম একটা অলৌকিক নভেলায় মতলুব মাঝির মতো একটা ডার্ক ক্যারেক্টার আলাদা মাত্রা দিয়েছে নভেলাটায়।

পাঠক, মরুয়ারদহ আবিষ্কার পড়তে গিয়ে আপনি নিজেকে আবিষ্কার করবেন ��া শিউড়ানো এক এডভেঞ্চারে।

°
পয়সা টকিজ নভেলাটি চলনসই। আলাদা করে আলোচনা করছি না।
°
বাউরা কর্তার বন্ধু: ইতিহাস, মিথ আর অলৌকিকতার মিশেলে দুর্দান্ত একটা নভেলা। এই নভেলা সেপারেট প্লার্টফর্ম ডিজার্ভ করে। লেখককে বলেওছিলাম এই কথা, আলাদা বই হিসেবে আনতে পারেন এই নভেলাটি। তবে আওলাদ মিয়া সিরিজের নভেলা বলে লেখক একই সংকলনে রেখেছেন এটি।

ফকির সন্নাসী আন্দোলনের প্রসিদ্ধ পুরুষ ভবানী পাঠককে আবিষ্কার করবেন আপনারা এখানে। রংপুরের গাইয়ারা লাঠিসোঁটা, বল্লম হাতে ঘেরাও করেছিল রংপুর ক্যান্টনমেন্ট, মুক্তিযুদ্ধ তো বটেই পুরো পৃথিবীর ইতিহাসেই এমন ঘটনা আর নেই। সেই ইতিহাস পাবেন এই নভেলায়। সাথে পাবেন রংপুরের লোকাল হিরো বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মুখতার ইলাহীকে।

ইতিহাসের সাথে অলৌকিকতার মিশেলের এই নভেলাটি পড়ার পুরো সময়ে একদম হুকড হয়ে ছিলাম।

°°
নভেলা দুটিতে খারাপ লাগার কিছু পাইনি। হয়তো আগে থেকেই নিয়াজ মেহেদীর লেখার ভক্ত বলে ভুল ত্রুটি এড়িয়ে গেছি। তবে পাঠকক্র আমন্ত্রণ জানাচ্ছি আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেলে।
Profile Image for Ishraque Aornob.
Author 29 books403 followers
February 14, 2024
মেলার প্রথম বই হিসেবে শেষ করলাম আবার আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেল। আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেল ছিল ২০১৮ এর পড়া অন্যতম মজাদার একটা বই। সেই নস্টালজিয়া নিয়েই পড়লাম এবারের পর্বটা। ক্যালেন্ডারের পাতায় ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও আওলাদ মিয়ার গল্পের নেশা কাটেনি। তবে এবারের গল্প ভাতের হোটেলে বসে হয়নি। প্রথমটা গল্প নয়, আওলাদ মিয়াই এই গল্পের অংশ, বলা চলে নায়ক। একটা অলৌকিক বিলের লোককথা নিয়ে সুন্দরভাবে সেট করা হয়েছে গল্পটা।
আমার কাছে সেরা লেগেছে দ্বিতীয় গল্পটা। সিনেমা হলের এই গল্পটিতে কোনো ভূত বা ভয় না থেকেও একটু ক্রিপি। এটাই গল্পটার সার্থকতা।
তৃতীয় গল্পটা সবথেকে বড়। এতে উঠে এসেছে ব্রিটিশ ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সংগ্রামের ইতিহাস। যমুনা নদী সৃষ্টির গল্প। সেইসাথে এক রহস্যময় ত্রাণকর্তার কাহিনী।
বইয়ের সবথেকে স্ট্রং দিক লেখনশৈলী। একেবারে বাটার স্মুথ। আরামে পড়ে ফেলা যায়। আর দ্বিতীয় উল্লেখযোগ্য দিক হল গল্পের সেটআপ।
আওলাদ মিয়াকে আবারও দেখতে পাবো আশা করি সামনে।
Profile Image for Wasim Mahmud.
357 reviews29 followers
February 18, 2024
ফিরে এসেছেন আওলাদ মিয়া। 'আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেল' যারা পড়েছেন তাঁরা জানেন। গল্প শুনার সুতীব্র আকাঙ্ক্ষা এই ব্যক্তিকে কদ্দুর পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে।

নিয়াজ মেহেদী এবার আওলাদ মিয়াকে গল্পশ্রোতা কিংবা কথকের জায়গা থেকে বেশ খানিকটা সরিয়েছেন ব‌ইয়ের প্রথম উপন্যাসিকায়। এবার তাঁর একশন-অ্যাডভেঞ্চারে নামার পালা।

১) মরুয়ারদহ আবিষ্কার

উল্লিখিত নভেলা পড়ার সময় আমার ডিসি কমিক্সের সেই 'ল্যাজারাস পিট'এর কথা স্মৃতিতে চলে এসেছে। ব্যাটম্যানের দ্বিতীয় রবিন জেসন টডের পুনর্জীবন লাভ, রাজ আল গুলের চির যৌবনের রহস্য ঐ জলাশয়ে ডুব দেয়ার বা দেয়ানোর কারণেই‌। সম্ভবত কোন এক মিথলজিতে এরূপ জলাশয় আছে।

মরুয়ারদহ বিল খুঁজে বের করতে নেমেছেন কয়েকজন। আওলাদ মিয়ার মৃতপ্রায় মেয়ের জীবন রক্ষার্থে, যমুনার কুমির মতলুবের সারাজীবনের অপ্রাপ্তি কে প্রাপ্তিতে রূপ দিতে কিংবা প্রায় বিগতযৌবনা নায়িকা চুমকির আবার ইয়াং বয়সে ফিরে যেতে। কিন্তু কোথায় এই মরুয়ারদহ?

কবিরাজ ঘনশ্যাম এবং ঘটনাচক্রে একজন অতিলৌকিক ক্ষমতাধরকে সাথে নিয়ে আওলাদ মিয়ার পিতা হিসেবে শেষ জান-প্রাণ চেষ্টা হচ্ছে উক্ত বিল হতে কিছু পানি সংগ্রহ করার‌। নভেলায় লেখক বিভিন্ন নদ-নদীর ইতিহাস বলেছেন। হিউম্যান সাইকোলজির অদ্ভুত কিছু দিক‌ও দেখা গেছে। চমকটা একদম অপ্রত্যাশিত ছিলো।

তবে মরুয়ারদহ বিল নিয়ে যে ধারণা পেলাম, হয়তো এই নভেলার সিকুয়্যাল আসতে পারে। লেখক উইন্ডো ওপেন করে রেখেছেন। ইন্ট্যারেস্টিং প্লট। গ্রিপ করার মতো লেখনি‌।

২) পয়সা টকিস

দ্বিতীয় এ নভেলায় গল্পের নেশায় আবার ফিরেছেন আমাদের ভাতের হোটেলের মালিক। আশির দশকের সিনেমা হল ম্যানেজার বাবলুর এক অতিপ্রাকৃতিক কাহিনি শুনছেন আওলাদ কিন্তু এক‌ইসাথে মফস্বলে সেই সময়কার সিনেমা প্রযুক্তি, মানুষজনের চলচ্চিত্র দেখার আগ্রহ ও ঐ দশকের শেষে তৎকালিন রাজনৈতিক পরিস্থিতির সাথে 'পয়সা টকিস' সিনেমা হলের অতিপ্রাকৃতিক এক ঘটনার যোগসূত্র মিলিয়ে ভালোই লেগেছে উপন্যাসিকাটি।

৩) বাউরা কর্তার বন্ধু

শত শত বছর ধরে জমিদারির নিষ্ঠুর, নির্মম গল্পের সমান্তরালে ইংরেজ সরকারের সাথে অভাবী এক জনগোষ্ঠির দ্বন্দ্ব, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ভ্যাবলা সাইদুলের আগমন সব একসাথে সুন্দর করে বলছেন শেষ বংশধর ওয়াজেদ আলি চৌধুরী, যথারীতি আমাদের পাগলা শ্রোতাকে। আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে এই নভেলাটি। ঐতিহাসিক ফিকশনের পাশাপাশি একটি জমিদার বংশের রক্তকে যুগ যুগ ধরে রক্ষা করে আসছে এক অদ্ভুত শক্তি, নাম যার সাইদুল ভ্যাবলা। আকর্ষণীয় প্লট, ইংরেজ আমল থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পর্যন্ত সংক্ষেপে যেভাবে গল্পটি বলা হয়েছে, অল্পতে বেশি, অনেক পাঠককে ধরে রাখতে পারে শেষ পর্যন্ত।

তিনটি নভেলায় নিয়াজ মেহেদী অতিপ্রাকৃতিক বিষয়-আশয়ের সাথে ঐতিহাসিক ঘটনাচক্র যেভাবে মিলিয়েছেন এবং রিডারকে হুকড করে রাখার মতো সব নভেলায় লিখে গেছেন তা প্রশংসার দাবীদার। অবশ্য পয়সা টকিস আমার কাছে বেশ রাশড লেগেছে।

লেখকের প্রতি শুভেচ্ছা র‌ইলো। হয়তো আওলাদ মিয়া আবার ফিরবেন তাঁর গল্পের / ভাতের হোটেল নিয়ে।

ব‌ই রিভিউ

নাম : আবার আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেল
লেখক : নিয়াজ মেহেদী
প্রথম প্রকাশ : ফেব্রুয়ারি ২০২৪
প্রকাশক : বাতিঘর প্রকাশনী
প্রচ্ছদ : পরাগ ওয়াহিদ
জনরা : অতিপ্রাকৃতিক নভেলা
রিভিউয়ার : ওয়াসিম হাসান মাহমুদ
Profile Image for Mahrufa Mery.
201 reviews115 followers
January 2, 2025
অতিপ্রাকৃত গল্প হিসেবে খারাপ না। চলে টাইপের চেয়ে একটু ভাল। তবে, প্রথমটা- অর্থাৎ 'আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেল' এটার চেয়ে বেশি ভাল ছিল।
Profile Image for Sanowar Hossain.
281 reviews25 followers
October 17, 2024
আওলাদ মিয়া ফেরত এসেছেন। তবে এবার আর শ্রোতা হিসেবে নয়; তিনি একেবারে গল্পের পিঠে সওয়ার হয়েছেন। প্রথম কিস্তিতে আওলাদ মিয়া মানুষজনের থেকে অদ্ভুত সব গল্পগুলো শুনেছেন। দ্বিতীয় কিস্তিতে তিনি নিজেই জড়িয়ে যান রহস্য-রোমাঞ্চ অভিযানে। নিজেকে আবিষ্কার করেন গল্পের নায়ক হিসেবে। জীবন-মৃত্যুর দোলাচলে রোমাঞ্চকর অনুভূতি সামনে এগিয়ে যাওয়ার তাড়নাকে বাড়িয়ে তোলে। দ্বিতীয় কিস্তিতে মোট তিনটি গল্প রয়েছে; মরুয়ারদহ আবিষ্কার, পয়সা টকিজ ও বাউরা কর্তার বন্ধু।

রোদের পরে বৃষ্টি আসে, তো বৃষ্টির পরে রোদ। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকলে মানুষ শুধু নতুন দিনের প্রতীক্ষায় থাকে। কবে নতুন এক সকাল আসবে এবং সুস্থ শরীরে হেসে খেলে বেড়াবে। আওলাদ মিয়ার সাত বছরের মেয়ে শারমিন পনের দিন ধরে জ্বরে বিছানায় শুয়ে আছে। কোনোভাবেই জ্বর সারছ��� না। কিছু খেয়ে যে শরীরে শক্তি হবে তারও উপায় নেই, খাওয়ার সাথে সাথেই বমি। বাল্যবন্ধু হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার আলতাব চিকিৎসা করলেও কোনো কূলকিনারা পায় না। এদিকে আওলাদ মিয়ার বউ রত্না মেয়ের জন্য কেঁদেকেটে অবস্থা খারাপ। এত সুন্দর মেয়েটার চেহারার দিকে তাকানো যায় না। বুক ফেটে কান্না আসে। একসময়ের রেলওয়ে স্টেশনের কুলি ঘনশ্যাম দাস। আজ তিনি নামকরা কবিরাজ। আওলাদ মিয়া শরনাপন্ন হয় ঘনশ্যাম দাসের। রোগী দেখে তিনি বলেন, এটা বিরল এক সান্নিপাতিক জ্বর। সাধারণ ওষুধে এই রোগ সারবেনা। আওলাদ মিয়া মেয়েকে বাঁচানোর জন্য অনুনয় বিনয় করে কবিরাজের কাছে। কবিরাজ তখন অদ্ভুত এক উপায় বলেন। ব্রহ্মপুত্রের বুকে মরুয়ারদহ নামের এক বিল আছে। বছরের কোনো কোনো সময় জেগে উঠে বিলটি। সেই বিলের পানি আশ্চর্যরকম স্থির। বাইরের আবহাওয়ার কোনো প্রভাব সেখানে নেই। সেই বিলের পানি এনে মেয়েকে খাওয়াতে পারলেই সুস্থ হবে। মরুয়ারদহ বিলের খোঁজে বেরিয়ে পড়েন আওলাদ মিয়া ও ঘনশ্যাম দাস।

ব্রহ্মপুত্র-যমুনায় কুমির বলতে মতলুবকেই সবাই চিনে। কবে কোথায় তার জন্ম হয়েছিল কেউ জানে না। তবে নদীর বুকে তার একচ্ছত্র আধিপত্য। সবসময় নিজেকে পুলিশ প্রশাসনের নাগালের বাইরে রাখে। মতলুবের জীবনেও নারী আছে। আর সে হলো যাত্রাপালায় নাচওয়ালী চুমকি। হাজারো দর্শকদের মন জয় করে মতলুবকেও নিজের করে নিয়েছে। কিন্তু ইদানীং যাত্রাপালায় আরেকটি মেয়ের চাহিদা বেশি। চুমকির বয়সও হচ্ছে। তাই মতলুব সেই মেয়েকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। তখন চুমকি জানায় এসব না করে মরুয়ারদহ বিলে যদি সে ডুব দিতে পারে তাহলে যৌবন ফিরে পাবে। মতলুব তার প্রিয়তমার আবদার পূরণে যাত্রা শুরু করে। আওলাদ মিয়া ও মতলুবের পথ এক কিন্তু উদ্দেশ্য ভিন্ন। তারা কি পারবে উদ্দেশ্য পূরণে সফল হতে? একজনের পথে দাগ কাটবে কি আরেকজন?

হেমন্তের এক বিকেলে আওলাদ মিয়া পলাশবাড়ি এসে দেখতে পায় বাবলুকে। ঠিক পনেরো বছর আগে শেষবার তাকে পলাশবাড়ি দেখা গিয়েছিল। পলাশবাড়ির একমাত্র সিনেমা হল পয়সা টকিজের ম্যানেজার ছিল বাবলু। ঢাকা টু পলাশবাড়ি একযোগে চলছিল শঙ্খমালা সিনেমা। সেই গল্প বলে তারা স্মৃতি রোমন্থন করে। তখন আওলাদ মিয়া বাবলু ম্যানেজারের কাছে আবদার করে সিনেমা হলে ঘটে যাওয়া কোনো অদ্ভুত ঘটনার গল্প বলতে। ১৯ বছর সিনেমা হল চালু থাকলেও মাঝে ১৯৯০ সালে সিনেমা হল একবার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সেই গল্পই বলা শুরু করে বাবলু মিয়া। ভূত প্রেতকে সামনে না এনেও ভৌতিক আবহ সৃষ্টি হয় গল্পটিতে।

‘সাইদুল ভ্যাবলাকে প্রথম দেখেছিলাম এক ঝড়ের রাতে।’ এই বাক্য দিয়েই শুরু তৃতীয় ও শেষ গল্পটি। আওলাদ মিয়া এবার এসেছেন ওয়াজেদ আলী চৌধুরীর বাড়িতে। আলমগীর দেওয়ানি আওলাদ মিয়ার গল্পের নেশা সম্পর্কে জানে বলেই নিয়ে এসেছেন সাথে করে। সাইদুল ভ্যাবলা এক অতিপ্রাকৃত শক্তি। যে কিনা শুধু চৌধুরী বংশের বিপদের সময় হাজির হয়ে বিপদ থেকে উদ্ধার করে। ওয়াজেদ আলী চৌধুরীর দাদা তখন মৃত্যুশয্যায়। মৃত্যুশয্যায় তিনি জিজ্ঞাসা করেন সাইদুল ভ্যাবলা তাকে দেখতে এসেছে কিনা! দাদাজি সাইদুল ভ্যাবলাকে নির্দেশ দিয়ে যান নাতিকে দেখে রাখতে। সময় গড়ায়। ওয়াজেদ আলী চৌধুরী বড় হন। মুক্তিযুদ্ধ করেন কিন্তু জীবনের যেকোনো ক্রান্তিকালেই তিনি কাছে পেয়েছেন সাইদুল ভ্যাবলাকে। কে এই সাইদুল ভ্যাবলা? বাউরা কর্তার সাথেই বা কী সম্পর্ক?

বাংলাদেশের মানুষের আলোচনা কিংবা সাহিত্যে উত্তরবঙ্গের উপস্থিতি তুলনামূলক কম। এই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অবস্থাই কি এর কারণ? তবে উত্তরবঙ্গের মানুষের গল্প ও প্রকৃতির রূপ আমাকে টানে। আওলাদ মিয়ার গল্পে উত্তরবঙ্গকে পেয়েছি। সেই উত্তরবঙ্গের মানুষের উপস্থিতি এই অঞ্চল সম্পর্কে আরো আগ্রহ বাড়িয়ে তোলে। তিনটি গল্প তিন রকমের সুন্দর। তবে তিনটি গল্পেই অলৌকিকতা প্রাধান্য পেয়েছে। একইসাথে সামনে এসেছে সমসাময়িক রাজনৈতিক অবস্থার আবরণে মানুষের জীবন। বইটি হাতে নিলে রেখে উঠা যায় না। হ্যাপি রিডিং।
Profile Image for Avishek Bhattacharjee.
370 reviews79 followers
April 27, 2025
এই সিরিজের আগের বইটা আমি পড়েছি এবং গড়পড়তাই মনে হয়েছিল। কিন্তু এই বইটা পড়ে আমি আক্কেলগুড়ুম হয়ে গেলাম। প্রতিটা গল্পই আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এমন সুন্দর করে তুলে আনা গল্প আমি দীর্ঘদিন পরে পেলাম।
বইটাতে তিনটা গল্প আছে।
প্রথমটা হল মরুয়ারদহ আবিষ্কার। এখানে আওলাদ হোসেন তার মেয়েকে বাচাতে খুজতে বের হয় কিংবদন্তি মরুয়ারদহ বিল, যার পানিতে যেকোন কিছু নিরাময় সম্ভব। সাথে থাকে কবিরাজ ঘনশ্যাম। পুরাই এডভেঞ্চার গল্প। এই গল্পটাকে আমি দেব পাচে সাড়ে চার।
দ্বিতীয় গল্পের নাম পয়সা টকিজ। এটা একটা সিনেমা হলের গল্প যখন কিনা বাংলার সিনেমার স্বর্নযুগ চলছে। সেই সময়ে সিনেমা দেখতে গিয়ে দুর্দান্ত প্রতাপশালীর পতন নিয়ে এই গল্প। এটকে দেব পাচে তিন। খুব একটা ভাল লাগেনি আমার কাছে।
সব শেষের গল্প হল বাউরা কর্তার গল্প। এক ক্ষয়িষ্ণু জমিদার বাড়ির শেষ বংশধর ওয়াজেদ সাহেব দীর্ঘদিন পরে আমেরিকা থেকে ফিরে আসে দেশে শেষ নিশ্বাস ত্যাগের উদ্দেশ্য নিয়ে। তার জীবনের এক অদ্ভুত গল্প শুনতে আলাউদ্দিন চলে আসে। এইবার শুরু হয় সাইদুল ভ্যাবলার গল্প। রহস্যময় এই লোক বিপদের সময় এসে সবসময়ই রক্ষা করে ওয়াজেদ সাহেবকে। সাইদুল ভ্যাবলা এই দায়িত্ব নিয়েছিল ওয়াজেদ সাহেবের দাদা জিন্নাত সাহেবের কাছ থেকে। বংশানুক্রমিকভাবে এই সাইদুল রক্ষা করে আসছে এই পরিবারকে। কে এই সাইদুল? কেন সে এদের রক্ষা করে আসছে এতসময় ধরে? এটা আপনি বইটা পড়লে জানতে পারবেন। এবং নিশ্চিত থাকেন না পড়লে মিস করবেন। অসাধারণ একটা গল্প লিখেছেন লেখক। এই গল্পটাকে আমি পাচে দেব ছয়। মানে এক বোনাস। এই ক্যারেক্টরটাকে টেনে উনি লম্বা করতে পারবেন।
লেখকের উত্তরবঙ্গের রংপুরের উপরে মায়া আছে। তিস্তা নদীর গতিপথ বদল, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের মৃত্যু সম্পর্কে এখান থেকে আমি জানতে পেরেছি। আর যদ্দুর দেখলাম, সম্ভবত রংপুরের আগের নাম ছিল মরুয়ারদহ।
Profile Image for Samsudduha Rifath.
425 reviews23 followers
March 16, 2024
সবাই এতোদিনে বলে ফেলেছে সিক্যুয়েলটা কেমন হয়েছে তাই আর বিশদ বর্ণনায় গেলাম না। দারুণ উপভোগ করেছি বইটা। 'বাউরা কর্তার বন্ধু' নভেলাটা সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে।
Profile Image for DEHAN.
275 reviews85 followers
November 9, 2025
আমি সাধারনত কোন কিছুর প্রথম অংশ পড়ে আনন্দ না পেলে দ্বিতীয় অংশে ধাবিত হই নে (মিথ্যে কথা!)
আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেল আমার কাছে অতো সুস্বাদু লাগে নাই। মোটা চালের ভাত, লাউ দিয়ে ডাল আর নিম্ন মধ্যবিত্ত সাইজের ডিমের সালুনের মতো গেলার জন্য গেলা টাইপ লাগছে। তাও আবার আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেলে কেন আসলাম ব্যাপারটা পরিষ্কার না। এইবার খাবারের মান আরো নীচের দিকে গেছে।
কারন আজকাল আওলাদ মিয়া হোটেল বন্ধ কইরা একটা বিশেষ জীবন-সেভার তরলের খোঁজে এইখানে সেইখানে ঘুইরা বেড়ায়। কোথায় নাকি বিশাল এক পুসকুনি আছে। সেই পুসকুনির পানি খাইলে মাইকেল জ্যাকসনের মতো অবস্থা হয়ে যাবে কোনরকম প্লাস্টিক সার্জারি ছাড়াই। এই পানির খোঁজে জনৈক পরোপকারী লোকের সাথে নৌকাভ্রমণ ই হইলো ''আবার আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেলের'' বিষয়বস্তু।
কিন্তু লেখক বারবার অনিচ্ছাকৃত ভাবে এটাও বুঝাইয়া দিয়েছেন যে বন্যেরা বনে সুন্দর আর আওলাদ মিয়া হোটেলের ক্যাশবাক্সের পাশে। নৌকার মধ্যে নয়।
পাঠকের গলা চাপ দিয়া ধইরা থ্রিল পাওয়াইতে বাধ্য করার বিষয়টা অত্যন্ত অন্যায় কাজ, অমানবিক ও বটে।
আশা করি পরের পার্টে আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেলে ভোক্তা অধিকারের ম্যাজিস্ট্রেট এসে, খাবারের মান দেখে বিরক্ত হয়ে হোটেল সিলগালা করে দিয়ে যাবে। নো সতর্কতা , নো জরিমানা, ডায়রেক্ট সাটারে তালা।
এটা আওলাদ মিয়ার জন্যেও ভালো, আমাদের জন্যেও।বরং ভাতের হোটেল বাদ দিয়া আওলাদ মিয়া মিষ্টির দোকান অথবা ফার্মেসি দিতে পারে।
আওলাদ মিষ্টান্ন ভান্ডার কিংবা ভাতের দোয়া ফার্মেসি।
Profile Image for Mubtasim  Fuad.
316 reviews41 followers
October 6, 2025
আমার পক্ষে এই বই শেষ করা অসম্ভব! আমি হার মান���াম।

এই বইটা পড়া শুরু করছিলাম যে কবে তা আমার খেয়াল নেই। কারণ প্রতিমধ্যে এত এত বার ব্রেক নিয়েছি, রিডিং ব্লকে পড়েছি... পড়ার আগ্রহ একাধিক বার হারিয়েছি তবুও বইটা টেবিলেই রেখে দিছি। শেষ করার একটা বাসনা ছিল। কিন্তু আমার পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছে না, আমি আমার ধৈর্যের শেষ সীমানায় আছি।

নিজের একাডেমিকের চাম সামলে এরপর ফিকশন পড়ি যেন মাইন্ড একটু ডাইভার্ট হয়, একটু রিলাক্স হতে পারি। কিন্তু সেই ফিকশন পড়তে গিয়ে যদি এমন অনুভূতি হয় যে, আসল কাহিনীর বাইরে গিয়ে জ্বোর করে একাধিক জ্ঞান দেওয়া হচ্ছে যার হয়ত প্রয়োজন ও ছিল না তখন বিষয়টা কেমন হবে? বইটা বিরক্তিকর লাগার এই একটাই প্রধান কারণ। অতিরিক্ত বাড়তি জ্ঞানের ছড়াছড়ি। ইতিহাসের বিভিন্ন ইন্সিডেন্ট জ্বোর করে টেনে এনে তা এমন এমন মানুষের জবানীতে শোনানো হচ্ছে যারা এসব ইতিহাস মনে রাখার মতন মানুষই না। তারা কোন পন্ডিত না, বরং অত্যন্ত নিম্নবিত্ত খেটে খাওয়া মানুষ। ঘটনা যখনই একটু থ্রিল বা অতিপ্রাকৃত দিকে এগোতে থাকে, লেখক অমনি একটু ব্রেক নিয়ে জ্ঞান গেলানো শুরু করে দেন। একটা দুইটা ক্ষেত্রে হলেও মানা যায় কিন্তু একাধিক পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা, ইতিহাস গলাধঃকরণ করানো আমার জন্য সাংঘাতিক অসহ্যকর লাগছিল বিধায় প্রায় ১২৬ পৃষ্ঠা অব্দি পড়ে থামিয়ে দিয়েছি পড়া। সেলফে আরো একাধিক বই আছে, আমি জ্বোর করে মানসিক অস্বস্তি নিয়ে এই বই আর পড়তে চাচ্ছি না।


লেখকের প্রতি আমার ব্যক্তিগত কোন ক্ষোভ নাই। তার লেখার ধরন সাবলীল বিধায় এতদূর পড়ে আসতে পেরেছি। আমার সমস্যা হচ্ছে যেভাবে গল্পটা বলা হয়েছে সেটা নিয়ে। এই সিরিজের প্রথম বইটা এটার চাইতে ভাল ছিল। কিছু ড্রব্যাক সেটায় ও নজরে বেঁধেছিল কিন্তু এটার তুলনায় যথেষ্ট ভাল ছিল।
লেখকের এই সিরিজের তৃতীয় বই কর্কট মঞ্জিল ভেবেছিলাম পড়ব কিন্তু এই বইটা পড়তে গিয়ে যে মানসিক পীড়ার সম্মুখীন হয়েছি এতে আমার আর ইচ্ছা নাই। লেখকের প্রতি শুভকামনা রইল তার ভবিষ্যতের বই গুলা নিয়ে।


দিনশেষে বই নিজের টাকায় কিনে, নিজে পড়ে, নিজের অনুভূতি সেয়ার করলাম। এখানে কাওকে ছোটবড় করি নাই সেরফ নিজের একটা আফসোস সেয়ার করলাম।
তবুও যদি কেউ কষ্ট পেয়ে থাকেন তবে দুঃখিত। গিরগিটি তার ফাস্ট্রেশনের লাস্ট স্টেজে পৌঁছে গেছে 😔
Profile Image for Saima  Taher  Shovon.
521 reviews190 followers
March 7, 2024
আগেরটার চেয়ে আরাম বেশি পেলাম মনে হচ্ছে।
Profile Image for Amjad Hossain.
196 reviews1 follower
March 27, 2024
4.5★
তিনটে গল্প এবার।তন্মধ্যে প্রথম এবং শেষ টা দারুণ।
Profile Image for Rehnuma.
444 reviews21 followers
Read
January 31, 2025
❛মানুষের গল্প শুনতে শুনতে হুট করেই কখন যে নিজের জীবনই অদ্ভুত গল্পের উপাদান হয়ে যায় সেটা আগে থেকে ঠাওর করা যায় না। যে অন্যের জীবনের অদ্ভুত গল্প শুনতেন সেই আজ গল্পের পিঠে চড়ে বসেছেন!❜
আবার আওলাদ মিয়া! কিন্তু আবার সেই ভাতের হোটেল নয়। যদিও এখনো ভাতের হোটেলই আওলাদ মিয়ার পেশা। কিন্তু নেশাটা এখনো একই আছে। ❛গল্প শোনা❜। তবে জীবন এবার অন্য মোড় নিয়েছে আওলাদ মিয়ার। অন্যের গল্পের জায়গায় এবার নিজের জীবনের গল্পের সম্মুখীন হয়েছেন তিনি, যেখানে আছে রহস্য রোমাঞ্চ আর ব্যক্তিগত জীবন। এবার গল্পের নায়ক তিনি নিজেই।
আওলাদ মিয়ার একমাত্র কন্যা শারমিন। সাত বছর বয়সী মেয়েটির কী এক জ্বর হলো কমছেই না। পনেরো দিন ধরে ভুগছে। ওষুধ কাজ করছে না। হোমিওপ্যাথি ডাক্তার তাকে আরো ভালো চিকিৎসার পরামর্শ দিলেন। কিন্তু ইদানিং হোটেলে মন্দা চলছে। বিধায় হাত খালি। তবুও কন্যার জন্য সাধ্যের বাইরেও যেতে রাজি তিনি। এর আগে হোমিওপ্যাথি ডাক্তারের পরামর্শে তিনি একবার দ্বারস্থ হলেন কবরেজ মশাইয়ের। নাম ঘনশ্যাম দাস। রেলজংশনে আয়ুর্বেদের ঔষুধের দোকান দিয়ে ছাব্বিশ বছর ধরে কবিরাজি জগতে নাম কামিয়েছে। শারমিনের অবস্থা দেখে ঘনশ্যাম বললেন এই জ্বর চিকিৎসার বাইরে। তার সাধ্য নেই। এমনকি বড় ডাক্তারও পারবেন না এর নিরাময় করতে। শারমিনের দেহ থেকে প্রাণ ত্যাগ করার অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু পিতার মন সেটা মানে না। চোখের সামনে নীলমণি ধন শেষ হয়ে যাবে উনি তাকিয়ে দেখবেন এ হয়?
তখন ঘনশ্যাম তাকে বাতলে দিলেন এক উপায়। কিন্তু এ সম্ভব?
বলেন মরুয়ারদহ নামের এক বিলের কথা। বহু আগে নাকি এর অস্তিত্ব ছিল। কিন্তু মানুষের পাপে সেই জাদুময়ী স্থান নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। সেখানে পানি নাকি স্থির। বর্ণ একেবারে র ক্তলাল। সেই পানিই একমাত্র পারে শারমিনকে বাঁচিয়ে তুলতে।
তবে তাই সই। আওলাদ মিয়া ঘনশ্যামকে নিয়ে যাত্রা করলেন সেই পানি সংগ্রহের উদ্দেশ্যে।
মতলুব হলো জলের কুমির। তাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় বাড়ি কোথায়? তার এক জবাব, ❛নদীতে❜। পঞ্চাশ বছরের নিঃসন্তান এই ব্যক্তি জল ডা কাত থেকে শুরু করে খারাপ যত তকমা দেয়া যায় সেসব কাজের সাথে জড়িত। রং বাজিতে সে নদীর ঐ এলাকায় একচ্ছত্র আধিপত্য তৈরি করে নিয়েছে। তার উপর কথা বলে এমন কেউ নেই। এত কিছুর মধ্যেও তার এক আক্ষেপ আছে। কোনো সন্তান নেই তার। বাপজান ডাক শোনার ভাগ্য এখনো তার হয়নি।
চুমকি এক কালের ডাকসাইটে নাচনেওয়ালি। অভিনয়ের শখ থাকলেও এফডিসির পরিচালকের কাছ থেকে সে সেই কদর পায়নি। শুধু শরীরটাই দেখেছে তারা। কিন্তু নক্ষত্রেরও একসময় ম রে যেতে হয়। বয়স নামক জুজুবুড়ি তাকে ধরেছে। চল্লিশ বছর বয়সে সেই জৌলুস নেই। মানুষ কচি মেয়ের নাচ দেখতে ভালোবাসে। তার আবেদন কমেছে। কিন্তু যার জীবনে দর্শককে আনন্দ দেয়াই সব সে কী করে এই বয়সের কাছে ধরা দিবে?
চুমকির সাথে বেজায় ভাব মতলুবের। স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও সাইডে এই প্রেমিকার সাথে চুটিয়ে সময় কাটায় সে। চুমকি তাকে সন্ধান দিয়েছে মরুয়ারদহের। সেখানে একটা ডুব দিয়ে উঠলে সে আবার যৌবন ফিরে পাবে। ফিরে পাবে নিজের কাজ। এরপর মতলুবের সাথে মিলে জন্ম দিবে সন্তানের। মতলুব তাই চুমকিকে নিয়ে চললো আজব সেই মরুয়ারদহের খোঁজে।
দুটো নৌকায় করে দুইদিক থেকে আসছে দুই দল এই মরুয়ারদহের খোঁজে। অপেক্ষা করছে রোমাঞ্চ। আওলাদ মিয়া আসছে একমাত্র কন্যার জীবন বাঁচাতে। আরেকদল আসছে যৌবন ফিরে পেতে। মুখোমুখি হবে কি তারা?


আওলাদ মিয়ার মনে হচ্ছে কী যেন একটা ঠিক নেই। কী জানি একটা বিষয় মনে কুটকুট করছে।
প্রায় পনেরো বছর পর আওলাদের সাথে দেখা হলো বাবলুর। সেই বাবলু, যে এককালের সিনেমাহলের ম্যানেজার ছিল। হলের নাম ❛পয়সা টকিজ❜। অনেক অনেক আগে বন্ধ হয়ে গেছে হলটা। নব্বইয়ের দশকের সেই সময়ের সাড়া জাগানো সব সিনেমা চলতো এখানে। কত উত্থান পতনের পর একেবারেই শেষ হয়ে গেল সেই সিনেমা হল। আজ সেই ম্যানেজার তেঁতুল গাছের নিচে বসে চা বিক্রি করছে। সময় কীভাবে মানুষকে বদলে দেয়!
আওলাদ মিয়া বাবলুর কাছে শুনলেন পয়সা টকিজ সিনেমা হলের এক অদ্ভুত ঘটনা। যার সাথে উঠে এসেছে রাজনৈতিক নেতার কিছু ইতিহাস।
গল্প শুনে এখন তার মনের কুটকুটানি ভাবটা কমেছে।


আওলাদ মিয়া তার জীবনে যত গল্প শুনেছেন তার সিংহভাগই মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্নবিত্ত মানুষের। তার এ ভাতের হোটেলও এই শ্রেণীর মানুষের জন্য। তবে এবার তিনি গেলেন মহিপুর জমিদার বাড়ির শেষ বংশধরের বাড়ি। শুনবেন তার জীবনের অদ্ভুত গল্প।
���হিপুর জমিদার বাড়ির জমিদারির গোড়াপত্তন হয় ১৭০০ সালে। এরপর এক বিশাল সময় কেটেছে। এখন সেই জমিদারির কিছু বাকি নেই। আছে এক গল্প। গল্পের শুরু ছিল এভাবে,


❛সাইদুল ভ্যাবলাকে প্রথম দেখেছিলাম এক ঝড়ের রাতে।❜


তাদের এক পূর্বপুরুষ ছিলেন বদর আলী চৌধুরী। তাকে সবাই ❛বাউরা কর্তা❜ নামে চিনত। তার সময় থেকে সাইদুল ভ্যাবলা নামে রহস্যময় রক্ষাকর্তা আছে। যে বিপদে সাহায্য করে। কিন্তু কে এই সাইদুল ভ্যাবলা? কী করে আলী চৌধুরী পরিবারের কাছে এলেন সে? এর ইতিহাস জড়িয়ে আছে সেই পলাশীর প্রান্তর থেকে। যা পেরিয়ে গেছে ইংরেজ শাসন থেকে একাত্তরের মুক্তিযু দ্ধের সময়েও।




পাঠ প্রতিক্রিয়া:


❝আবার আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেল❞ নিয়াজ মেহেদীর আওলাদ মিয়াকে নিয়ে লেখা দ্বিতীয় বই। প্রথম বইতে ছয়জন অজানা অচেনা মানুষের সাথে নিজের ভাতের হোটেলে এক ঝড়ের রাতে জড়ো হয়েছিলেন তিনি। শুনেছিলেন তাদের জীবনের রহস্যময় গল্প।
এবারের কিস্তিতে তিনি নিজেই গল্পের নায়কের দৃশ্যে অবতীর্ণ হয়েছেন। জীবন তাকে মুখোমুখি করেছে রোমাঞ্চকর পর্যায়ে।
এই বইতে তিনটি গল্প রয়েছে। ❛মরুয়ারদহ আবিষ্কার❜, ❛পয়সা টকিজ❜, ❛বাউরা কর্তার বন্ধু❜।
মরুয়ারদহতে আওলাদ মিয়া নিজেই সম্মুখীন হয়েছেন জীবনের অদ্ভুত অভিজ্ঞতার। আমার কাছে এই গল্পটা দারুণ লেগেছে। পড়ার সময় ছোটকালে দেখা ❛ঠাকুরমার ঝুলি❜ র ❛টেকো বউ❜ গল্পের কথা মনে হয়েছে। পুকুরে এক ডুব দিয়ে চোখধাঁধানো সুন্দরী হয়ে গেছিল টেকো বউ। এই গল্পটাও এমন ধরনের। তবে এখানে ভিন্নতা ছিল বর্ণনায়, চাওয়ায়। মরুয়ারদহের বর্ণনায় লেখক যে প্রাকৃতিক দৃশ্যের অবতারণা করেছেন সেটা মুগ্ধ করেছে। এমনকি গল্পের টুইস্ট ছিল ভালো । এমনটা পড়তে গিয়ে স্বাভাবিকভাবেই আশা করিনি। ভালো লেগেছে।
পরের গল্প ছিল বন্ধ হয়ে যাওয়া এক সিনেমাহল নিয়ে। নামটা বেশ আকর্ষণীয় ছিল। এখানে লেখক নব্বই দশকের গ্রাম্য জীবনের চিত্র এত সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। প্রাধান্য পেয়েছে সে সময়ের সাড়া জাগানো সিনেমাগুলো। সিনেমা হলের পরিবেশ, রাজনৈতিক অস্থিরতা, ক্ষমতার দাপটের সাথে কিছু ভৌতিক আবহ মিশে গল্পটাকে বেশ উপভোগ্য করে তুলেছে। তিস্তা, ব্রহ্মপুত্রের ইতিহাস, যমুনা নদীর সৃষ্টি আর এর সাথে অলৌকিকতা মিশেছে। লেখকের এই বর্ণনাগুলো গোগ্রাসে গিলার মতো ছিল।
পরের গল্পটা বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া জমিদারির শেষ উত্তরাধিকারের। এই গল্পটাও বেশ ভালো ছিল। পলাশী থেকে কোম্পানি শাসন, পাকিস্তান আমল, যু দ্ধ, অসমাপ্ত প্রেমের গল্প মিলিয়ে বেশ ছিল। উত্তরবঙ্গের বন্যা, দুর্দশা, ফকির সন্ন্যাসীদের বিদ্রোহ আর মুখোমুখি সংঘর্ষের সাথে এসেছে রহস্যময় চার ফুটি এক ব্যক্তির কথা।
এই গল্পটা তিনটা থেকে একটু কম ভালো লেগেছে। কেন জানি মনে হচ্ছিল বাড়তি বর্ণনা এসেছে। আবার কিছু প্রশ্নের উত্তর পাইনি। যেমন, সাত খু ন মাফের কথা বলেছিলেন সেটার ইতিহাস এটা থেকে নাকি বুঝিনি আসলে। তবে শেষটা খুব দুঃখের ছিল।
আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেলের গল্প এবার সীমানা বাড়িয়েছে। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার সাথে ঝুলিতে এসেছে বাইরের গল্প। লেখকের বর্ণনায় উত্তরবঙ্গের মানুষের জীবনের সাথে পরিচয় হওয়া গেছে। ভিন্নরকম ভাষার প্রয়োগ, বিনোদনের মাধ্যম আর এলাকার বর্ণনায় একবার মেতে গেলে কখন যে বিমোহিত হয়ে যেতে হবে হদিশ থাকবে না!
আবার অপেক্ষায় রইলাম আওলাদ মিয়ার নতুন কোনো গল্পের।


❛জীবন এক অসীম পাতার গল্প। এখানে নানা মানুষের আছে নানা অভিজ্ঞতা। সেগুলো কখন যে গল্পের রসদ জোগায় সেটা ব্যক্তি নিজেও হয়তো জানে না!❜

Profile Image for সাদমান হুসাইন.
155 reviews36 followers
March 25, 2024
আগেরবারের থেকে বইয়ের ধরনটা বদলেছে, আগের বইতে সব ছোট ছোট গল্প থাকলেও এবারের গল্পগুলো অনেকটাই নভেলা ধাচের। গল্পের দৈর্ঘ্যের সাথে বেড়েছে পড়ে আনন্দের মাত্রাও।

আরো একবার আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেলে ফিরে আসলে খারাপ হবে না বিষয়টা।
Profile Image for Sazid Shahriar.
51 reviews1 follower
April 7, 2025
মরুয়ারদহ আবিষ্কার ৪/৫
পয়সা টকিজ ৫/৫
বাউরা কর্তার বন্ধু ৩.৫/৫
Profile Image for Sakib A. Jami.
332 reviews36 followers
August 9, 2025
আওলাদ মিয়ার একটা শখ আছে। শখ না বলে নেশা বললে যৌক্তিক হবে। তিনি গল্প শুনতে ভালোবাসেন। নেশার মতো হয়ে উঠেছে তার গল্প শোনার এই চাওয়া। তাই কখনও তার ভাতের হোটেলে আড্ডার আসর জমে। অপরিচিত আগন্তুকদের কাছ মাঝরাত থেকে শেষরাত অবধি গল্প শুনেন। “আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেল” বইতে আমরা এমন কিছু মানুষের কাছ থেকে অদ্ভুত কিছু গল্প শুনেছি। সে আওলাদ মিয়া ফিরে এসেছে। আবারও গল্প হবে। তবে গল্প যেমন আওলাদ মিয়া শুনবে, তেমনি করে নিজেও জড়িয়ে যাবে গল্পের বৃত্তে। তবে এবার আর ভাতের আসরে গল্প হবে না।

“আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেল” বইতে আওলাদ মিয়ার গল্প শোনার নেশা ছাড়া তাকে তেমনভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়নি। এখানে আওলাদ মিয়া কিছুটা হলেও জায়গা পেয়েছে। জায়গা পেয়েছে তার পরিবার। চলুন “আবার আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেল”-এর গল্পে ডুবে যাই।

▪️মরুয়ারদহ আবিষ্কার :

আওলাদ মিয়ার সাত বছরের মেয়ে শারমিন তীব্র জ্বরে আক্রান্ত। পনেরো দিন পার হয়ে যায় কিন্তু কিছুতেই সে জ্বর কমে না। কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। তখন একজন কবিরাজকে নিয়ে আসা হয়। রংপুরে যার কর্ম বিখ্যাত। হাতের ছোঁয়ায় যেকোনো রোগকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিতে পারেন। সেই ঘনশ্যাম যখন এসে বলেন কিছুতেই কিছু হবে না, তখন মাথায় বাজ পড়া ছাড়া কিছুই হয় না। তবে একটা উপায় আছে। মরুয়ারদহ নামের একটা বিল আছে। ব্রহ্মপুত্রের বুকে কখনও জেগে ওঠে। আবার লুকিয়ে পড়ে অচিরেই। অনেক গভীর অতীত ইতিহাস আছে তার। আছে অলৌকিক ক্ষমতা। সেই বিলের পানি এনে শারমিনকে যদি পান করানো যায়, তবেই সুস্থ হবে।

অগত্যা আওলাদ মিয়া ছুটলেন সেই মরুয়ারদহের খোঁজে। মেয়ের জন্য সবকিছু করতে পারে সে। সাথে ঘনশ্যাম। কিন্তু এই অলৌকিক ক্ষমতা সম্পন্ন বিল সবার কাছে ধরা দেয় না। হতে হবে শুদ্ধ পুরুষ। কিন্তু এমন কাউকে পাওয়া যাবে কোথায়?

চিলমারির নাম আপনারা শুনে থাকবেন। জানা যায় ব্রহ্মপুত্রের কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা এ বন্দর ব্রিটিশ আমলে মাল খালাসের কাজে ব্যবহৃত হতো। চিলমারির অদূরে বরুণার চর নামে একটা জায়গা আছে। যেখানে একক আধিপত্য মতলুব নামের এক গুণ্ডার। এমন কোনো অপরাধ নেই যেটা সে করে না। একদিন কাশেম মহিষালের গলা কেঁ টে নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছিল। তাকে আবার দেখা যায়, কীভাবে?

মতলুবের প্রেমিকা চুমকি একসময় উঠতি অভিনেত্রী ছিলেন। নায়িকা হওয়ার শখ ছিল তার। কিন্তু নাচে গানে কোমর দুলিয়ে যৌবনের ইতি ঘটেছে। এখন আর রূপে আগের সেই জৌলুশ নেই। নেই শারীরিক আবেদন। মরুয়ারদহ হতে পারে নিজেকে নতুন করে ফিরে পাওয়ার ক্ষেত্র। যৌবন যেমন ফিরে পাবে, ওদিকে নিঃসন্তান মতলুবের সন্তানের পিতা হওয়ার তীব্র আকাঙ্খা মনের কোণে ঘাপটি মেরে আছে। তাই চুমকিকে সাথে নিয়ে কাশেমের গাইডে ওরাও খুঁজছে মরুয়ারদহ।

এক অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী তিনি। তাকে অনেক কষ্ট খুঁজে পেয়েছে আওলাদ মিয়া ঘনশ্যাম। বিস্ময়ে ওরা নদীর বুকের রূপ যেমন প্রত্যক্ষ করছে তেমন অলৌকিক ক্ষ���তা দেখছে। কিন্তু কোথায় মরুয়ারদহ? খুঁজে পাওয়া যাবে তো? না পাওয়া গেলে শারমিনকে বাঁচানো যাবে না। কিন্তু যখন সবাই মিলে এক জায়গায় উপস্থিত হয়, তখন বদলে যায় সমীকরণ।

▪️পয়সা টকিজ :

আওলাদ মিয়ার হুট করে মনে হচ্ছে কিছু একটা ঠিক নেই। আজ বৃহস্পতিবার, যা হওয়ার কথা ছিল তা হচ্ছে না। দুপুরের ভাত ঘুম তাই মাটি। যে সময় সব দোকান বন্ধ, তখন সে উঠে পড়ে। মনের শান্তি খুঁজতে গিয়ে দেখা মেলে অতীতের তার এক পরিচিত মানুষের। একসময় তার দাপট ছিল। এলাকার সবচেয়ে বড় সিনেমা হল চলত তার ইশারায়। কত বড় বড় সিনেমা এসেছে। তার কাছে পুরোনো এক গল্পের আভাস পেয়েছে। যে গল্প জানে না আওলাদ মিয়া। আর কোথায় যায়?

যে গল্প পয়সা টকিজের। এক অন্যায়ের প্রতিবাদে ফেটে পড়া সাধারণ জনতার। কিন্তু কিছু রহস্য রহস্যই থেকে যায়। যা খুব সহজে উদঘাটন করা যায় না। থাকুক না কিছু রহস্য, তাতে কোনো ক্ষতি তো নেই।

▪️বাউরা কর্তার বন্ধু :

আওলাদ মিয়া গল্পের সন্ধান পেলে তার আর কিছু লাগে না। বুভুক্ষের মতো অদ্ভুত, বিস্ময়কর গল্পের পেছনে ছোটে। আওলাদ মিয়ার ছোট্ট ভাতের হোটেলে গল্পের আসর জমে। কখনও কখনও তিনি অন্য কোথাও গল্প শুনেন। তবে এমন বনেদি পরিবারের ড্রয়িংরুমে বসে গল্প শোনা হয়নি এর আগে। আওলাদ মিয়ার বন্ধু মানুষ আলমগীর দেওয়ান তাকে নিয়ে এসেছে ওয়াজেদ চৌধুরীর বাড়ি, যার পূর্বপুরুষ প্রাচীন বাংলার জমিদারিতে লুকিয়ে আছে।

এ গল্প ওয়াজেদ চৌধুরীর, তার পরিবারের কিংবা সাইদুল ভ্যাবলার। তখন ব্রিটিশ শাসন চলছিল। একসময় প্রবল বর্ষণ শুরু হলো। যে বর্ষণ আর থেমে না। দিন পেরিয়ে মাস আসে, বৃষ্টির ধারায় তলিয়ে যায় সবকিছু। যেন এক মহাপ্লাবনের ডাক এসেছে পৃথিবী জুড়ে। ঠিক তখনই সাইদুল ভ্যাবলার সাথে পরিচয় হয় জমিদার বদর আলী চৌধুরীর। যাকে বাউরা কর্তা হিসেবে ডাকা হতো।

সেই সময় ব্রিটিশ শাসনকে উৎখাত করার জন্য সশস্ত্র লড়াইও চলছে। যাদের নেতৃত্বে এ লড়াই চলেছিল, তাদের একজন ভবানী পাঠক। ভবানী পাঠকের মৃ ত্যু নিয়ে নানান কিংবদন্তি প্রচলিত আছে। তবে মৃ ত্যুর আগে সাইদুল ভ্যাবলাকে বাউরা কর্তার কাছে দিয়ে জন এ বিখ্যাত বিপ্লবী।

এরপর কত দিন গেল, সাইদুল ভ্যাবলা বাউরা কর্তার পরিবারের সাথে জুড়ে গেল। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বিপদের সময় উদ্ধার করেই চলেছে। ইংরেজদের সময় থেকে মুক্তিযু দ্ধ, বাউরা কর্তা থেকে ওয়াজেদ চৌধুরীর — সবখানে বিপদের মুশকিল আহসান হিসেবে সাইদুল ভ্যাবলা সবার আগে।

কে এই লোক? ইতিহাসের ঝাঁপি খুলে দেওয়া ওয়াজেদ চৌধুরীর গল্পে যেমন বিমোহিত হয়েছে আওলাদ মিয়া, তেমন করে পাঠকও বিস্ময়ে অভিভূত হবে।

▪️পাঠ প্রতিক্রিয়া :

এই বইয়ের তিনটি গল্পের প্রথমটা “মরুয়ারদহ আবিষ্কার” গল্পটা খুবই দুর্দান্ত লেগেছে আমার কাছে। বিশেষ করে ছোট্ট পরিসরে যেভাবে গল্পের গতিপথ রচনা করেছেন, লাগাম ধরেছেন, চরিত্রগুলোকে পরিচিত করিয়েছেন — তারিফ করতেই হয়। বিশেষ করে সবগুলো চরিত্র এখানে ঠিকঠাক জায়গা পেয়েছে। প্রতিটি চরিত্রের স্বভাব, তাদের ব্যবহার, আচার আচরণ — সবকিছুই যথাযথভাবে ফুটে উঠেছে। লেখকের এই গুণ ভালো লেগেছে।

এছাড়া মরুয়ারদহের যে ইতিহাস, রহস্য লেখক বর্ণনা করেছেন তাও বেশ ভালো লেগেছে। একই সাথে লেখকের প্রকৃতির বর্ণনা, লেখনশৈলী আকর্ষণীয়। পাঠককে ধরে রাখার মতো। আর শেষটা যেভাবে ক্ষণে ক্ষণে পট বদলেছে, সেখানেও লেখক বাজিমাত করেছেন। মানুষের মনস্তত্ত্বের এক অন্যরকম দিক এখানে উন্মুক্ত হয়েছে। যেখানে লোভই শেষ কথা। লোভের কারণে একজন সাধারণ মানুষ কত কী করতে পারে!

আবার আওলাদ মিয়ার মতো মানুষের কাছে লোভ বলতে কিছু থাকে না। তাদের কাছে কেবল তার সন্তানই রত্ন। যেখানে জাগতিক রত্ন মূল্যহীন। গল্পের শেষটা একদম পারফেক্ট ছোটগল্পের মতো। শেষ হওয়ার পরও এর রেশ থেকে যায়। পরবর্তীতে কী হলো, তা জানার তীব্র আগ্রহ ঘিরে ধরে।

মরুয়ারদহ আবিষ্কার গল্পের মূল প্লট যে কারণে রচিত, লেখক এর ফলাফল পাঠকের ভাবনার উপর ছেড়ে দিয়েছেন। তবে দ্বিতীয় গল্পের শুরুটা পড়লে ঠিকই বুঝে নিতে পারবে। পয়সা টকিজ গল্পের মূল আকর্ষণ বাংলা সিনেমা। আশি-নব্বই দশকের বাংলা ছায়াছবির এক ফ্ল্যাশব্যাক লেখক এখানে উপস্থাপন করেছেন। বাংলা সিনেমার ঐতিহ্য এখানেই।

তাছাড়া এই গল্পের মধ্যে মানুষের মধ্যে যে সচেতনতা, বিপ্লবী মানসিকতা — তাই ফুটে উঠেছে। অন্যায়ের সাথে আপোষ নয়। অন্যায়, অত্যাচার সহ্য করে যখন সাধারণ জনতা প্রতিবাদী হয়ে ওঠে, তখন তাদের দমিয়ে রাখা সম্ভব না। শেষটা হুট করেই হলো, অনেক প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি। এভাবে ধরে নেওয়া যায়, কিছু প্রশ্নের উত্তর না পাওয়াই ঠিক। প্রকৃতি তার রহস্য রাখতে পছন্দ করে।

শেষ গল্প বাউরা কর্তার বন্ধু গল্পটা দারুণ। এক ইতিহাসের উপস্থাপনায় যেন দুর্দান্ত উপাখ্যান তৈরি করেছে। ইংরেজদের শাসন থেকে মুক্তিযু দ্ধ — পুরো সময়টা গল্পের ঘোরে আটকে রেখেছিল। কিংবদন্তি, মুখে মুখে প্রচলিত গল্পের সাথে ইতিহাসের মিশ্রণ এই গল্পকে অসাধারণ করে তুলেছে। সাথে ছিল রহস্যময় সাইদুল ভ্যাবলা।

এই গল্পের শেষটা অদ্ভুত সুন্দর। বিষন্ন, আবার তৃপ্তিদায়ক। ইতিহাসের পাঠের মধ্যে এক জীবনের গল্প লেখক যেভাবে উপস্থাপন করেছেন, প্রশংসা করার মতো। সাথে প্রেম, বিষাদ, জীবনের প্রতিটি বাঁকের উত্থান পতন যেন গল্পের মূল আকর্ষণ হিসেবে ধরা দিয়েছে।

এখানে একটা বিষয়ে কথা বলা প্রয়োজন। ওয়াজেদ চৌধুরী যেহেতু গল্প বলেছেন, এই গল্পের ফাঁকে ফাঁকে একটু থামা উচিত ছিল। এত বড় গল্প টানা বলে যাওয়া কষ্টকর। যারা গল্প শুনছে, তাদের অনুভূতি এখানে মাঝে মাঝে তুলে ধরলে আরও উপভোগ্য হতো। এক জায়গায় অবশ্য চা পানের জন্য থামা হয়েছিল। কিন্তু এই বিষয়টা আরও এক দুই জায়গায় করা যেত, যেহেতু গল্পটা বড়।

লেখক তার এই আওলাদ মিয়ার গল্পগুলোতে রংপুর বা উত্তরাঞ্চলকে গুরুত্ব বেশি দিয়েছেন। যুদ্ধের সময় সেখানকার পরিস্থিতি। মুক্তিযু দ্ধের ভয়াবহতা, ব্রিটিশ শাসনের সময়ের খণ্ড অংশ যেন দোর্দণ্ড প্রতাপে দৃশ্যমান হয়েছে। সাথে অদ্ভুতভাবে বেঁচে যাওয়ার কিছু গল্প। লেখকের অসাধারণ লেখনশৈলীর কারণে পড়তে বেশ আরাম লেগেছে। লেখকের বর্ণনা, প্রকৃতির উন্মাতাল হয়ে ওঠা, যু দ্ধ বা আক্রমণের বর্ণনা, মাঝে মাঝে প্রকৃতিকে নতুন রূপে ফুটিয়ে তোলার গুণের কারণে বেশ উপভোগ করেছি।

গল্প তিনটাই দারুণ। কোনোটা কোনোটার চেয়ে কম না। ভিন্ন ধারার তিন গল্প বেশ উপভোগ্য হয়ে উঠেছিল। আর শেষটা যখন তৃপ্তি দেয়, তখন বইয়ের সার্থকতাও প্রতীয়মান হয়ে ওঠে।

▪️বই : আবার আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেল
▪️লেখক : নিয়াজ মেহেদী
▪️প্রকাশনী : বাতিঘর প্রকাশনী
▪️ব্যক্তিগত রেটিং : ৪/৫
Profile Image for শুভাগত দীপ.
274 reviews47 followers
October 20, 2025
○ মরুয়ারদহ আবিষ্কার: আওলাদ মিয়ার বিরাট বিপদ। রীতিমতো দিশেহারা বোধ করছে সে। তার একমাত্র মেয়ে শারমিন অনেকদিন ধরেই বেশ অসুস্থ। সাত বছরের এই ছোট্ট মেয়েটার জ্বর সারছে না। জ্বরে ভুগে ভুগে শারমিন একদম পাটকাঠির মতো শুকিয়ে গেছে। একমাত্র মেয়ের এমন ভয়াবহ অসুস্থতায় স্বাভাবিকভাবেই আওলাদ মিয়া ও তার স্ত্রী রত্না বিচলিত। এমন কোন চিকিৎসা পদ্ধতি নেই যেটা তারা তাদের মেয়েকে সুস্থ করতে প্রয়োগ করেনি। হঠাৎ একদিন আওলাদ মিয়া খোঁজ পেলো বর্ষীয়ান আয়ুর্বেদ চিকিৎসক কবিরাজ ঘনশ্যাম দাসের। আর তার কাছ থেকেই সে শুনলো রহস্যময় মরুয়ারদহ বিলের গল্প।


মরুয়ারদহ বি��ের পানি নাকি ধন্বন্তরি। এই পানি যেকোন রোগ সারিয়ে দেয়ার অলৌকিক ক্ষমতা রাখে। কিন্তু এই বিল নিজেকে সবার চোখের সামনে থেকে লুকিয়ে রাখে। একে খুঁজে বের করা সহজ না। তারপরও নিজের একমাত্র মেয়ের জীবন বাঁচাতে আওলাদ মিয়া সিদ্ধান্ত নেয় অলৌকিক মরুয়ারদহ বিল খুঁজে বের করার। এই অভিযানে তার সঙ্গী হয় ঘনশ্যাম কবিরাজ। 


এদিকে মরুয়ারদহ বিলের খোঁজে আছে যমুনা-ব্রহ্মপুত্রের ত্রাস হিসেবে পরিচিত কুখ্যাত মতলুব আর তার প্রেমিকা চুমকি। তাদের নিজেদেরও কিছু চাওয়া আছে বিলটার কাছে। প্রমত্তা নদীর বুকে শুরু হলো এক অলৌকিক বিলের খোঁজ। কয়েকজন ভিন্ন স্বভাবের মানুষ নিজেদের মতো করে খুঁজে চললো কিংবদন্তির মরুয়ারদহকে। শেষমেষ কি তারা সেই বিলের দেখা পেয়েছিলো? নাকি এসবই নিছক কোন লোককথা? 


○ পয়সা টকিজ: হেমন্তের এক বৃহস্পতিবার দুপুরে আওলাদ মিয়া অজানা কোন কারণে অস্থির বোধ করতে শুরু করে। সেদিন দীর্ঘ পনেরো বছর পর তার দেখা হয় বাবলুর সাথে। বাবলু ছিলো পলাশবাড়ির একমাত্র সিনেমা হল পয়সা টকিজের ম্যানেজার। এতোদিন পর তাকে আবারও এলাকায় দেখে বেশ খুশি হয় আওলাদ মিয়া। তার মধ্যে জেগে ওঠে গল্প শোনার নেশা। আর বাবলুও আওলাদ মিয়াকে অদ্ভুত এক গল্প শোনায়।


১৯৯০-এ পয়সা টকিজে চলছিলো তখনকার বিখ্যাত সিনেমা 'শঙ্খমালা'। ভালোই চলছিলো সবকিছু। হঠাৎ-ই লোকাল এক নেতা তার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে সিনেমাটা দেখতে পয়সা টকিজে আসে। আর ঠিক এরপরই ঘটে এমন রহস্যময় কিছু ঘটনা, যেটার রেশ বাকি জীবনও থেকে গেছে পয়সা টকিজ ও এর ম্যানেজার বাবলুর জীবনে। বাবলুর শোনাতে থাকা গল্পটা প্রতি মুহূর্তে আওলাদ মিয়ার আগ্রহ আরো বাড়িয়ে তুলতে থাকে। ১৯৯০-এর সেই অস্থির সময়ের অসংখ্য গল্পের মাঝ থেকে হারিয়ে যাওয়া এক অবিশ্বাস্য গল্পের খোঁজ পেয়ে যায় আওলাদ মিয়া, যা তাকে বেশ ভালো রকম আন্দোলিত করে।


○ বাউরা কর্তার বন্ধু: ১৭৮৭ সাল। ব্রিটিশ অধ্যুষিত ভারতবর্ষের রংপুর অঞ্চলের মহিপুরের জমিদার ছিলেন বদর উদ্দিন চৌধুরী। প্রজাদের নিকট তিনি পরিচিত ছিলেন বাউরা কর্তা নামে। দোর্দণ্ডপ্রতাপশালী এই জমিদারের তখন বেশ খারাপ একটা সময় চলছে। কয়েক মাস ধরে চলা লাগাতার বৃষ্টিতে মহিপুর সহ আশেপাশের সমস্ত এলাকা প্লাবিত হয়েছে। দলে দলে মানুষ মা'রা যাচ্ছে বন্যায় বা পানিবাহিত নানা রোগে। এদিকে খাজনার জন্য বাউরা কর্তার ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছে ব্রিটিশ ই'স্ট ই'ন্ডি'য়া কোম্পানির কর্তাব্যক্তিরা। ঠিক এমনই একটা সময় তাঁর সাথে দেখা হলো রহস্যময় এক সন্ন্যাসীর। বিচিত্র কিছু অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে শুরু করলেন বাউরা কর্তা। 


বর্তমান সময়। ভাতের হোটেলের মালিক আওলাদ মিয়া বসে আছে ওয়াজেদ আলী চৌধুরীর সামনে। ভদ্রলোক মহিপুর জমিদার বংশের সর্বশেষ বংশধর। ওয়াজেদ সাহেব আওলাদ মিয়াকে অদ্ভুত ও অবিশ্বাস্য কিছু গল্প শোনালে। যেখানে উঠে এসেছে তাঁদের বংশানুক্রমিক গৌরব, ঐতিহাসিক ফকির-সন্ন্যাসী বি'দ্রো'হের সময়কাল, ১৯৭১-এর স্বাধীনতাযুদ্ধ আর পবিত্র এক প্রেমের উপাখ্যান। আর সর্বোপরি ওয়াজেদ সাহেবের গল্পে বারবার জীবন্ত হয়ে উঠেছে একটা চরিত্র - সাইদুল ভ্যাবলা। কে এই সাইদুল ভ্যাবলা? কি তার পরিচয়?


গল্প শোনার নেশায় বুঁদ হয়ে থাকা আওলাদ মিয়া এবার এমন এক গল্পের জালে জড়িয়ে গেলো, যা সময় পরিভ্রমণের থেকে কোন অংশে কম না। যে গল্পে প্রতি পলে পলে হতে হয় কৌতুহলী ও বিস্মিত। 


সুলেখক নিয়াজ মেহেদী'র 'আবার আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেল' বইয়ে স্থান পেয়েছে তিনটা কাহিনি। এগুলোর মধ্যে দুটো উপন্যাসিকা আর একটা বড় গল্প। এর আগে নিয়াজ মেহেদী লিখেছিলেন 'আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেল'। যে বইয়ের মূল চরিত্র আওলাদ মিয়া পেশায় একটা ভাতের হোটেলের মালিক হলেও তার একমাত্র নেশা হলো গল্প শোনা। নানা শ্রেণী-পেশার মানুষের জীবনের বিচিত্র গল্পগুলো আওলাদ মিয়া রীতিমতো আগ্রহ নিয়ে শোনে। যারা বইটা পড়েছেন, তাদের কাছে ব্যাপারটা খুবই চেনাজানা।


তবে 'আবার আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেল'-এ কিছুটা পরিবর্তন আছে। এবার আওলাদ মিয়ার সঙ্গে পাঠক হিসেবে একটা অভিযানে সঙ্গী হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন নিয়াজ মেহেদী। বইটার প্রথম কাহিনি 'মরুয়ারদহ আবিষ্কার'-এ স্বয়ং আওলাদ মিয়াকেই এক আশ্চর্য অ্যাডভেঞ্চারে অংশ নিতে দেখা যায়, যেটা একইসাথে মানবিক ও অলৌকিক দৃশ্যকল্পের সৃষ্টি করে। পরবর্তী কাহিনি 'পয়সা টকিজ' আদতে একটা বড় গল্প। আর তৃতীয় ও শেষ কাহিনি 'বাউরা কর্তার বন্ধু' একটা উপন্যাসিকা। এই দুটোতেই আওলাদ মিয়া থেকেছে শ্রোতার ভূমিকায়।


নিয়াজ মেহেদী'র বই পড়লাম অনেকদিন পর। খুব সহজ-সরল ভাবে গল্প বলে গেছেন তিনি। চায়ের আড্ডায় বা ঘরোয়া কোন পরিবেশে যেমন গল্পের আসর বসে, সেসব জায়গায় যেভাবে গল্প বলা হয়, তাঁর গল্প বলার ধরণ অনেকটা ওরকম। বৈঠকি। পড়তে ভালো লাগে। আর তাঁর এই চমৎকার গল্প বলার গুণের কারণেই 'আবার আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেল'-এর তিনটা কাহিনিই আমার কাছে ভালো লেগেছে। নিয়াজ মেহেদী'র লেখায় প্রচুর ইনফরমেশন থাকে। বিশেষ করে বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের ভাষা, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের ব্যাপারে তিনি চমৎকার কিছু তথ্য দিয়েছেন তাঁর এই বইয়ের কাহিনিগুলোতে। এই এলিমেন্টগুলোর কারণে বইটা আরো খানিকটা বেশি উপভোগ্য লেগেছে আমার কাছে। দুটো উপন্যাসিকা ও একটা বড় গল্প - তিনটাতেই সুপারন্যাচারাল থ্রিল ছিলো। পাশাপাশি ছিলো নানা বিষয় নিয়ে প্রচুর ইনফো। তাই 'আবার আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেল'-কে একটা চমৎকার ইনফো-ফিকশন ঘরানার বইয়ের তকমা দিতেও আমার কোন আপত্তি নেই।


বইয়ের তিনটা কাহিনির মধ্যে আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে 'বাউরা কর্তার বন্ধু'। রীতিমতো গিলেছি আমি এই উপন্যাসিকাটা। কলেবরে বাকি দুটো কাহিনির চেয়ে এটাই সবচেয়ে বড়। বাকি দুটো উপাখ্যানও বেশ ভালো। ২০২৫-এ আমার পড়া অন্যতম সেরা বইয়ের জায়গা করে নিলো 'আবার আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেল'। এই বইয়ের সাথে সময়টা আমার চমৎকার কেটেছে। 


পরাগ ওয়াহিদের করা প্রচ্ছদটা বেশ ভালো লেগেছে। বইটা পড়ে ফেলতে পারেন, যারা পড়েননি। হাইলি রিকমেন্ডেড। 


ব্যক্তিগত রেটিং: ৪/৫


বই: আবার আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেল 

লেখক: নিয়াজ মেহেদী 

প্রকাশক: বাতিঘর প্রকাশনী 

প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

ঘরানা: ইনফো-ফিকশন/মিস্ট্রি/সুপারন্যাচারাল 

প্রচ্ছদ: পরাগ ওয়াহিদ

পৃষ্ঠা: ১৭৬

মুদ্রিত মূল্য: ২৮০ টাকা

ফরম্যাট: হার্ডকভার 


(২০ অক্টোবর, ২০২৫, সন্ধ্যা ৬ টা ১০ মিনিট; নাটোর)
Profile Image for Md. A. M. Tarif.
107 reviews2 followers
August 29, 2025
[বড় পরিসরে ছোট রিভিউ😑]

বইয়ের ৩টা গল্প ৩টা প্রেক্ষাপট এর ওপর গঠিত আর ৩টাই প্রেক্ষাপট দারুণ।বিশেষ করে বর্ণণাশৈলীর কারণে।
(i)মরুয়ারদহ বিল:
গল্পে ব্রম্মপুত্রের ইতিহাসের বিষয়টা ইউনিক লাগছে
বারবার চুমকির ইতিহাস,মনোভাব পড়াটা বিরক্তিকর ছিলো।
প্রাকৃতিক দৃশ্যের বর্ণনাগুলো দারুণ।
টুইস্টটা ভালো লাগছে।


(ii)পয়সা টকিজ
গল্প ভালো ছিলো,তবে ১-২ ক্ষেত্রে লেখক গল্পকে একটু স্লো করে ফেলেছেন বলে মনে হয়েছে।
গল্পতে প্রত্যাশিত উপকরণের পাশাপাশি আছে নব্বই দশকের চিত্র,সে সময়ের সিনেমা হলগুলোর চিত্র,রাজনৈতিক অস্থিরতা & as always ক্ষমতার দাপট।।


(iii)বাউরা কর্তার বন্ধু
ইতিহাসসমৃদ্ধ গল্প।গল্পকথকের পূর্বপুরুষের ;বিশেষ করে তিস্তার নতুন প্রবাহের ইতিহাস যেভাবে তুলে ধরেছেন তা দ��রুণ।যদিও মাঝের অংশে ধীরগতির কারণে বিরক্তিও কাজ করেছে।তবে লেখকের বাড়ি রংপুর হওয়ার কারণেই হয়তো ইতিহাসগুলো ভালোমতো তুলে ধরতে পেরেছেন।

ভ্যাবলা চরিত্রটা ইন্টারেস্টিং।ওকে ব্যবহার করে লেখক গল্পে ওপেন এন্ডিং রেখেছেন বললেও হয়তো ভুল হবে না।

এই গল্প পড়তে গিয়ে আবার ৭১এর বীভৎসতার সম্মুখীন হবো ভাবিনি।এছাড়া,Boat chasing-টাও ভালো লাগছে।লেখক বোনাস হিসেবে প্রেম কাহিনীর ক্যামিও-ও রেখেছেন গল্পে।

সব মিলিয়ে এই গল্পে আছে,নবাব সিরাজের পতন থেকে শুরু করে কোম্পানি শাসন,ফকির সন্যাসীদের বিদ্রোহ এবং সংঘর্ষ,তৎকালীন সময়ে উত্তরবঙ্গের ভয়াবহ বন্যা।
Profile Image for Mohammad Nayeem.
27 reviews
February 25, 2024
ভিন্নধর্মী বই। আমার মনে হয় আওলাদ মিয়ার আত্মজীবনীর ওপর আরও একটি বই আসলে খারাপ হবে না।
প্রথম খন্ডের মতই উপভোগ্য ছিলো। তবে পয়সা টকিজ এর গল্পটি সব থেকে অবিশ্বাস্য ছিলো 🫣
ধন্যবাদ নিয়াজ মেহেদী ভাই কে।
Profile Image for Sheila Mony.
7 reviews
March 3, 2024
আবার ফিরেছেন পুরনো আওলাদ মিয়া তবে নতুন রূপে।আওলাদ মিয়ার হাত ধরে যেন রহস্যে মোড়ানো গল্পগুলো প্রাণ পায়।নিয়াজ মেহেদী গল্পের ছলে ইতিহাসের সুরঙ্গ খুঁড়তে থাকেন।নিরীহ পাঠক বই শেষ না করি অবধি সে সুরঙ্গের পথ খুঁজে পাননা।আরও একটি রোমাঞ্চকর যাত্রার সঙ্গী 'আবার আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেল'।
Profile Image for Ghumraj Tanvir.
253 reviews10 followers
March 15, 2024
আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেলের মত ভালো লাগেনি।
সাইদুল ভ্যাবলা বেস্ট গল্প এই বইয়ে।
Profile Image for Muttakimur Rahman  Rafi.
4 reviews
April 19, 2024
Deserves 4 star rating just because of the setting of first story, 'মরুয়ারদহ বিল'। Rest of those 2 stories are below average. Couldn’t meet the expectations that raised so high.
Profile Image for Habiba♡.
352 reviews23 followers
August 8, 2024
আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেল চলতে থাকুক।
Displaying 1 - 26 of 26 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.