Jump to ratings and reviews
Rate this book

কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ

প্রেতযক্ষ ও অন্যান্য

Rate this book
Collection of Occult Stories and Novels by Avik Sarkar

"ভুল করছেন ঠাকুরমশাই। ঘর মানে তো শুধু একটা কাঁচামাটির আস্তানা নয়, ঘর মানে ভালোবাসা। মানুষ তো শুধু চারটে দেওয়াল আর একটা ছাদ ভালোবাসে না, নিজের একটুকরো সংসার, নিজের শখের বাগান, বারান্দার কোণের রোদ, পোষা কুকুর বিড়াল, নিজের মত করে একটুখানি বাঁচা, এই সবটুকু ভালোবাসে। আর সেই ভালোবাসা যদি কোনও কারণে উৎখাত হয়ে যায়, তাহলে তার ওই কান্নাজড়ানো মায়াটুকু লেগে থেকে যায় তার সঙ্গে। সে জিনিস বড় ভয়ঙ্কর জিনিস। অন্ধকারের প্রতিষেধক আলো, ঘৃণার প্রতিষেধক ভালোবাসা। কিন্তু আলোর প্রতিষেধক কি ঠাকুরমশাই? ভালোবাসার অভিশাপ আটকায় কীসে?"

সূচি –
তেলিয়াভোলা
প্রেতযক্ষ
কাউরীবুড়ির মন্দির
হাড়িকাঠ

256 pages, Hardcover

Published November 1, 2023

11 people are currently reading
107 people want to read

About the author

Avik Sarkar

32 books166 followers
অভীক সরকারের জন্ম পয়লা জুন, উনিশশো উনআশি সালে। বেড়ে ওঠা প্রাচীন শহর হাওড়ার অলিগলিতে। বাবা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ছিলেন, মা স্কুল শিক্ষিকা। রয়েছে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। পেশায় সেলসম্যান, কর্মসূত্রে ঘুরেছেন পূর্ব-ভারতের প্রায় সব শহর ও গ্রাম। জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে বাসা বেঁধেছেন হায়দ্রাবাদ, পাটনা, মুম্বাই ইত্যাদি বিভিন্ন শহরে। শখের বই ব্যবসায়ী ও প্রকাশক। লেখালেখির শুরু আন্তর্জালে ও বিভিন্ন ব্লগে। প্রকাশিত বইগুলো হল মার্কেট ভিজিট, তিতিরপাখি ও প্রিন্সেস (সহলেখক অনুষ্টুপ শেঠ), এবং ইনকুইজিশন, খোঁড়া ভৈরবীর মাঠ, চক্রসম্বরের পুঁথি, ইত্যাদি। বিবাহিত। কন্যা সন্তানের পিতা। ভালোবাসেন ইলিশ, ইস্টবেঙ্গল, ইয়ারবন্ধু এবং ইতিহাস।

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
14 (20%)
4 stars
24 (35%)
3 stars
23 (33%)
2 stars
7 (10%)
1 star
0 (0%)
Displaying 1 - 10 of 10 reviews
Profile Image for Aishu Rehman.
1,093 reviews1,079 followers
November 16, 2024
ভবতারণ চাটুজ্জের চার চারটি উপাখ্যান দিয়ে সাজানো 'প্রেতযক্ষ ও অন্যান্য'। গল্পবলিয়ে চরিত্র বাংলা সাহিত্যে কিন্তু কম নেই। বিভূতিভূষণের তারানাথ আর সত্যজিৎের তারিণী খুড়ো তন্মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয়। 'ভবতারণ' ও ধীরে ধীরে সেই প্রিয়র কাতারেই পড়ে গেছে। কিশোর ভারতী, নবপত্রিকা সহ বেশ কটি শারদীয়াতে এখন ভবতারণকে প্রায়ই দেখা যায়।

বইটির প্রথম গল্প - তেলিয়াভোলা
শারদীয়া কিশোর ভারতী ১৪৩০ এ প্রকাশিত হয়েছিল। ঠিক তার আগের বছর প্রকাশিত 'ডাইনিবুড়ি' পড়েই স্থীর বিশ্বাস ছিল ১৪৩০ এও আসবে ভবতারণ। এবং বলা বাহুল্য কিশোর পাঠক উপযোগী এই 'তেলিয়াভোলা' গল্পটি আমাকে বিষ্মিত করেছিল।

দ্বিতীয় গল্প - প্রেতযক্ষ
সবচেয়ে প্রিয় এবং আমার মতে এই বইয়ের শ্রেষ্ঠ লেখা এইটা। শারদীয়া নবপত্রিকা ১৪৩০ এ প্রকাশিত। পড়তে গিয়ে অদ্ভুত এক দুঃখবোধ আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছিল।

তৃতীয় লেখা - কাউরীবুড়ির মন্দির
পুরোনো লেখা। উপন্যাস হিসেবে পড়েছিলাম। ভবতারণকে সম্ভবত এখান থেকেই পেয়েছি আমি। ভয়াল রসের আরেকটি মাস্টারপিস এইটা।

চতুর্থ ও শেষ লেখা - হাড়িকাঠ
তন্ত্র আর সাথে গোয়েন্দা গোয়েন্দা একটা পরিবেশ গল্পটাতে অন্যরকম এক স্বাদ এনে দিয়েছে। এই গল্পটিও বেশ পুরাতন। এই সময় শারদীয়া ১৪২৮ এই গল্পটি 'ওই মাঠটাই কেউ যেও না' শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছিল। তুলনামূলকভাবে বাকি তিনটির চেয়ে এটা খানিকটা দুর্বল লেখা।

তো পাঠক, বইটির সবগুলো লেখায় আমার পূর্বে পড়া ছিল। দ্বিতীয়বার পড়তে গিয়ে ভবতারণকে আরেকটু ভালোবেসে ফেলেছি এই আরকি। আপনারা পড়ে দেখতে পারেন। ভালো লাগবে অবশ্যই।
Profile Image for Riju Ganguly.
Author 37 books1,864 followers
July 23, 2024
বাংলায় 'তান্ত্রিক হরর' নামক ধারাটির পুনরুত্থানের জন্য সবচেয়ে বেশি করে নন্দিত (এবং এই ধারায় কিম্ভূতকিমাকার লেখালেখি পড়ে ক্ষিপ্ত পাঠকদের দ্বারা নিন্দিত) মানুষটি হলেন অভীক সরকার। কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ-কে নিয়ে একটি কাহিনি লেখার সময়ই তিনি ভবতারণ চাটুজ্জে নামক এক গল্প-বলিয়ে রসিক মানুষকে আমাদের সামনে পেশ করেছিলেন। সেই চরিত্রটির মুখে বলা মোট চারটি কাহিনি আছে এই বইয়ে।
কোনো এক অজ্ঞাত কারণে, লেখাগুলো ভবতারণের নিজের বলা ক্রম অনুযায়ী সাজানো হয়নি। সাজালে তাদের পর্যায় হয় এইরকম~
১) তেলিয়াভোলা: শিশু-কিশোর পাঠকদের জন্য রচিত এই কাহিনিটির চলন প্রত্যাশিত হলেও এতে প্রকৃতির যে ভয়ংকর সুন্দর রূপের বর্ণনা আছে, তার জন্যই এটিকে মনে রেখে দিতে হয়। আর গল্পের শেষটা! লেখার গুণে মনে হয়, যেন আমি নিজেই অনুভব করছি মায়ের সেই বিশাল, ইন্দ্রিয়াতীত রূপকে— যা দুষ্টের দমন করে, আবার শিষ্টের পালনও করে।
২) প্রেতযক্ষ: এটি এই বইয়ের শ্রেষ্ঠ লেখা। শুধু তাই নয়; আমার মতে, অলৌকিক বিষয় নিয়ে সাম্প্রতিককালে বাংলায় যত লেখালেখি হয়েছে, তাদের মধ্যে এটিকে অন্যতম শ্রেষ্ঠ বলা চলে। লেখাটি এই পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে শুধু একটি উপাদানের জন্য— মায়া! এই গল্প পড়তে গিয়ে নিজের অজান্তেই চোখ ভিজে উঠেছে বারবার। সত্যি-সত্যিই মনে হয়েছে, এনট্রপির অমোঘ নিয়মে সবকিছু ছিন্নভিন্ন হয়ে বিশৃঙ্খলার গভীরে হারিয়ে যাওয়ার আগে আমাদের এই ক্ষণকালের জীবন, সময়ের সমুদ্রে বিন্দুবৎ এই সুখ-দুঃখ দিয়ে সাজানো অস্তিত্ব সম্ভব হয়েছে ভালোবাসা নামক ওই অদ্ভুত জাদুটির জন্যই।
৩) কাউরীবুড়ির মন্দির: ভয়ালরসের কাহিনিও যে কতখানি জটিল, মনস্তাত্ত্বিক, সামাজিক এবং রিপুতাড়িত হতে পারে, তা এই উপন্যাসটি পড়লে বোঝা যায়। পটভূমি-নির্মাণ, চরিত্রচিত্রণ, সর্বোপরি মানবমনের অন্ধকারতম বিন্দুদের জুড়ে ভয়ের এক অভাবনীয় মূর্তি গড়া— এ-সবের জন্য এর আগেই এই কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক পাঠকদের জন্য রচিত উপন্যাসটি স্বতন্ত্রভাবে পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম। এখন, 'ভবতারণ' প্যাকেজের অঙ্গ হিসেবে সেটিকে পড়ে আবারও শিহরিত হলাম।
৪) হাড়িকাঠ: অলৌকিক কাহিনির মোড়কে মনস্তাত্ত্বিক রহস্য-কাহিনি হিসেবে নির্মিত এই লেখাটি বইয়ের দুর্বলতম আখ্যান। তবে হ্যাঁ, লেখার গুণে তার মধ্যেও বেশ কিছু অংশ মনে থেকে যায় স্থায়ীভাবে।
বইটির মুদ্রণ শুদ্ধ, লে-আউটও আরামদায়ক। তবে গল্পগুলোর সঙ্গে অলংকরণ থাকলে আরও ভালো হত।
গদ্যশিল্পী অভীক সরকার এভাবেই ভয়ালরসে জারিত লেখার মধ্য দিয়ে মাতৃবন্দনা করে চলুন। আমরাও তাঁর লেখা পড়ে অনুভব করে চলি, ভালোবাসাই হল সবচেয়ে বড়ো জাদু, সবচেয়ে শক্তিশালী তন্ত্র।
অলমিতি।
Profile Image for Owlseer.
220 reviews33 followers
August 4, 2025
তেলিয়াভোলা - ১/৫
প্রেতযক্ষ - ১/৫
কাউরীবুড়ির মন্দির - ৪/৫
হাড়িকাঠ - ৪/৫
Profile Image for Farhan.
725 reviews12 followers
December 22, 2025
শেষ উপন্যাসটা আগেই পড়া, মোটামুটি ভাল। আগেরগুলিও খারাপ না।
Profile Image for Preetam Chatterjee.
6,792 reviews357 followers
July 15, 2025
“Yea though I walk through the valley of the shadow of death, I shall fear no evil. Because I have my shotgun and bullets blessed by God to comfort me.” ― John Pease, Ezekiel's Eyes

বাংলায় ‘তান্ত্রিক হরর’ ধারাটি বিশ্ব সাহিত্যের ও চলচ্চিত্রের বিভিন্ন "occult horror" শাখার সঙ্গে তুলনায় একদিকে যেমন নিজস্ব গঠনমূলক ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য দেখায়, তেমনই বিশ্বব্যাপী ভয়ের, অদৃশ্য শক্তির, এবং আধ্যাত্মিক বিভীষিকার যে বহুস্বরিত রূপ আছে, তার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবেও উঠে আসে।

বাংলার এই ধারাটি যেমন একদিকে শাক্ত তন্ত্র, লোকবিশ্বাস, শ্মশানসাধনা, রক্তবলির আচার, ও দেবীপূজার মতো আদি আচারানুষ্ঠানের অন্তঃস্থ, গূঢ় ও গূঢ়তর চিত্র তুলে ধরে—যেখানে রুদ্রাক্ষে বাঁধা থাকে শ্মশানের নিঃশব্দতা, এবং প্রতিটি মন্ত্রে দোলা দেয় হাজার বছরের লোকচেতনার তরঙ্গ—তেমনই অন্যদিকে, এই ঘরানা আধুনিক পাঠকের মনে এক অমোচনীয় প্রশ্ন তোলে: ভয় কোথা থেকে আসে? বাইরের কোনো অভিশপ্ত শক্তির থাবা থেকে, না আত্মার অন্তর্লীন কোনো কুণ্ডলিনী-জাগরণের ব্যর্থতা থেকে? সেটা কি শ্মশানের কুয়াশায় ঘোরাফেরা করা কোনো অশরীরী ছায়া, না নিজের গভীরতম মানসিক দ্বন্দ্বে জন্ম নেওয়া এক দহনাত্মক প্রতিচ্ছবি? এই তান্ত্রিক হরর আমাদের চোখের সামনে তুলে ধরে সেই সীমারেখা—যেখানে আচার আর আতঙ্ক, সাধনা আর সন্ত্রাস, আস্থা আর বিভ্রম—সব একসাথে মিলেমিশে যায়।

এই ঘরানার অনন্যতা বুঝতে গেলে তা তুলনামূলক দৃষ্টিতে দেখা প্রয়োজন। ভারতবর্ষে অন্য অঞ্চলের হরর সাহিত্যে যেমন অঘোর তত্ত্ব, সিদ্ধ সাধনা, কিংবা কালী-ভক্তির নৃশংস প্রকাশ দেখতে পাই, পশ্চিমি হররে ভয় আসে কোনো demonic possession, ancestral curse, বা জীবিত মৃতের সীমা ছিন্ন করা কোনো অভিশাপ থেকে।

Elise Rainier-এর কথায়, “It's not the house that's haunted... it's your son.” ঠিক এইভাবে, বাংলার হররও বাইরের না, ভিতরের ভূতের খোঁজে নামে। আফ্রিকান ও ল্যাটিন আমেরিকান occult horror-এ ভয় কখনো রাজনৈতিক—ভূডু ধর্মীয় প্রতিরোধের ছায়া, দাসত্ব বা ঔপনিবেশিক শোষণের উত্তর-পরিণতি; কখনো আবার ধর্ম ও সমাজব্যবস্থার সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। ইউরোপীয় হরর সাহিত্যে, লভ��্র্যাফটের ‘The Call of Cthulhu’ থেকে Toni Morrison-এর ‘Beloved’ বা Marquez-এর ‘Of Love and Other Demons’—সর্বত্রই দেখা যায় এক আত্মসন্ধানী ভয়ের ছায়া, যেটি বাইরের দানবীয় রূপ ধারণ করলেও জন্ম নেয় অন্তরের গহীনে। H.P. Lovecraft তো বলেই গিয়েছেন, “It is a mistake to fancy that horror is associated inextricably with darkness, silence, and solitude.” কখনো কখনো আলোয়ও ভয় জেগে থাকে।

এই প্রসঙ্গে বাংলা তান্ত্রিক হরর-এর আসল মেজাজ ধরা পড়ে—যেখানে শ্মশানঘাট কোনো কেবল পটভূমি নয়, বরং এক আধ্যাত্মিক স্পন্দনভূমি; যেখানে মন্ত্র, মুদ্রা, যন্ত্র কেবল অলৌকিক হাতিয়ার নয়, বরং আত্মচেতনার উদ্দীপক; আর যেখানে "ভয়" মানে কেবল ভূত-প্রেত নয়, বরং নিজেকে না-চেনার আতঙ্ক। “Sometimes the things in our heads are far worse than anything they could put in books or on film,” বলেছিলেন C.K. Webb। বাংলার হরর ঠিক এমনই—মনস্তাত্ত্বিক, কুণ্ডলিনীকেন্দ্রিক, আর দার্শনিক।

‘তান্ত্রিক হরর’ আসলে এক সাংস্কৃতিক আত্মবিশ্লেষণের ক্ষেত্র, যেখানে দেবতা আর দৈত্য, সাধক আর পাপী, আলো আর অন্ধকার—সবই বসবাস করে এক শরীরে। এই ধারার সাহিত্যে ভয় কখনো শারীরিক—একটা অভিশপ্ত জায়গায় ঢোকার পরিণতি, কখনো মনস্তাত্ত্বিক—নিজের বিশ্বাসে ফাটল ধরার ভয়, আবার কখনো আধ্যাত্মিক—মুক্তির পথে তিলমাত্র বিচ্যুতি ঘটার সম্ভাবনায় যে কম্পন।

Dante যেমন বলেছিলেন—“Hope not ever to see Heaven. I have come to lead you to the other shore; into eternal darkness; into fire and into ice.” বাংলার তন্ত্রসাধনা সেই অন্ধকার জল পেরোনোর সাহসী নিমন্ত্রণ।

আর ঠিক এখানেই বাংলা তান্ত্রিক হরর বিশ্ব সাহিত্যের occult horror ধারাকে চ্যালেঞ্জ করে তার নিজস্ব অভ্যন্তরীণ দর্শন দিয়ে। পশ্চিমের ভয়ের সঙ্গে যেখানে প্রায়শই জুড়ে থাকে বাহ্যিক আক্রমণের রূপ, বাংলায় ভয়ের উৎস নিজস্ব কর্মফলের ভিতরে, জীবনের একাধিক স্তরে, গূঢ় মায়ার মাঝখানে। তাই বাংলা তান্ত্রিক হরর-এর প্রতিটি গল্প একরকম শবসাধনার আখ্যানও বটে—জীবনের মৃত্যু-অংশকে উপলব্ধির দুঃসাহস।

এই দৃষ্টিকোণ থেকেই যখন আমরা অভীক সরকারের ‘তান্ত্রিক হরর’ পড়ি, তখন মনে হয়—“Everybody is a book of blood; wherever we’re opened, we’re red,” Clive Barker-এর এই কথাটি যেন চিরন্তন সত্য হয়ে ওঠে। এ এক ধারা, যেখানে শব্দের আড়ালে আছে মন্ত্র, গল্পের শরীরে আছে যন্ত্র, আর পাঠকের মনে আছে সেই রক্তাভ কল্পনার ছায়া, যা আলো আর আঁধারের সংমিশ্রণে নির্মিত।

উপরোক্ত আলোচনার আলোকেই “প্রেতযক্ষ ও অন্যান্য” কেবল একটি ভৌতিক গল্পসংকলন নয়, এটি একান্তভাবে বাংলার তান্ত্রিক হররের পুনরুজ্জীবনের অনন্য দলিল। অভীক সরকারের ভবতারণ চাটুজ্জে চরিত্রটি আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যায় সেই শীতল সন্ধ্যায়, যখন আলো নিভে আসে, বাতাস ভারী হয়ে ওঠে, আর গা ছমছমে ভয় আর দার্শনিক ঘোরের মাঝখানে জেগে ওঠে শ্মশানের বাতাস, তেলিয়াভোলার জলের ঢেউ, কিংবা কাউরীবুড়ির নিঃশব্দ সিঁড়ি। কিন্তু এই লেখা শুধু গা ছমছমে ভয়ের নয়—এ এমন এক সাহসী সাহিত্যকীর্তি, যেখানে অলৌকিক, দর্শন ও লোকজ চেতনার এক ত্রিমাত্রিক সমাহার ঘটে।

“তেলিয়াভোলা” গল্পটি যেন উপকূলবর্তী প্রকৃতির অলৌকিক রূপের প্রতি এক নিবেদন। এখানে তন্ত্র নেই, কিন্তু আছেঃ প্রকৃতির সেই আদিম দানবীয় সৌন্দর্য, যা মাকাল ফলের মতই আকর্ষণীয় এবং বিধ্বংসী। মাখন মাঝি ও চাটুজ্জে মশাইয়ের সেই সমুদ্রযাত্রা যেন এক প্রতীকময় দীক্ষা—যেখানে সমুদ্র নিজেই হয়ে ওঠে মাতৃরূপিণী, ভয় ও আশীর্বাদের একান্ত সম্মিলনে। Lovecraft বলেছিলেন—“The oldest and strongest emotion of mankind is fear, and the oldest and strongest kind of fear is fear of the unknown.” এই গল্প তার জলজ প্রতিচ্ছবি।

“প্রেতযক্ষ” গল্পটি, সংকলনের শিরোনামরূপে, নিঃসন্দেহে পাঠকের অন্তঃস্থলে হানা দেয়। এখানে অলৌকিকতা নেই এমন নয়, কিন্তু সেটি কেবল বাহ্যিক আতঙ্ক নয়—এই গল্পে মূর্ত হয় সেই বেদনার্ত মায়া, যা একটি সংসারকে খেয়ে ফেলতে পারে। প্রদীপ নিভে যায়, বাতাস ভারী হয়ে ওঠে, আর পাঠকের মনে প্রশ্ন তোলে, “Death has come to your little town, Sheriff,”—হ্যালোউইনের Loomis-এর মতই যেন কোনো অশরীরী বার্তা পৌঁছে যায়।

“হাড়িকাঠ” যেন সংযম ও দম্ভের দ্বন্দ্বে দগ্ধ এক মনস্তাত্ত্বিক কল্পনা। চাটুজ্জে মশাইয়ের হালকা খেলার মেজাজে একটি ঢিপি উপড়ে ফেলার পর গ্রামে একে একে অপমৃত্যু ঘটা, এবং গল্পের শেষদিকে রণচণ্ডীর রেফারেন্স, কেবল হিন্দু পুরাণের ছায়াপাত নয়—এ যেন আমাদের অজ্ঞতা, কৌতূহল ও অহঙ্কারের এক প্রতীকী শাস্তি। “Just when you think you've hit rock bottom, you realize you're standing on another trapdoor,”—Marisha Pessl-এর এই উক্তি যেন নিখুঁতভাবে বর্ণনা করে এই গল্পের ঘূর্ণিবর্ত।

“কাউরীবুড়ির মন্দির” পাঠকের চেতনায় চিরকালীন আঁচড় কেটে যায়। অলৌকিকতা, মনস্তত্ত্ব, গ্রামীণ লোকবিশ্বাস, নারীবাদী উপচেতন—সবকিছু মিলিয়ে এটি এক পরিণত হরর-উপন্যাস। এখানে দেবী শুধু রক্ষা করেন না, তিনি নিরস্ত্রও করেন না। তার প্রকৃতি দ্বৈতঃ তিনি প্রেম ও প্রতিশোধ, করুণা ও ক্রোধের মাতৃস্বরূপ। “We all go a little mad sometimes,”—Norman Bates-এর এই কথাটি যেন কাউরীবুড়ির দর্শন।

অভীক সরকারের গদ্য নিছক ভয়ের সঞ্চার নয়—এটি গভীরভাবে ধ্যানমগ্ন, আধ্যাত্মিক এবং তাত্ত্বিক। “আলো ও অন্ধকার এক শরীরের দুটি চোখ”—এই ভাবনা যেন লেখার প্রতিটি লাইনে ছড়িয়ে থাকে। তাঁর গল্প বলার ভঙ্গি তত্ত্বকথার চেয়ে অনেক বেশি লোকশ্রুতির, কিন্তু সেই শিকড় থেকে সে উঠে আসে এক বিশিষ্ট সাহিত্যরীতিতে। ভবতারণ চাটুজ্জে চরিত্রটি শুধু গল্পের বাহক নয়—সে তন্ত্র, স্মৃতি, বেদনা, আর জীবনের মৌলিক অনুসন্ধানের এক আশ্চর্য কোলাজ।

তন্ত্র সাহিত্যে “মন্ত্র, যন্ত্র, তন্ত্র”—এই ত্রিধারায় প্রতিটি রচনার নির্মাণ ঘটে। অভীক সরকারের গদ্যে মন্ত্র হল পুনরাবৃত্ত আবহ—এক ধরণের লিরিকাল রিদম, যন্ত্র হল কাহিনির বিন্যাস—জটিল, কিন্তু অভ্রান্ত; আর তন্ত্র হল অর্থাৎ সার, যা পাঠক নিজে আবিষ্কার করে। “তুমি কতটা জানো? আর যা জানো, তা ধারণ করতে পারো তো?”—এই প্রশ্নই প্রতিটি গল্পের অন্তরে বেজে ওঠে।

এই বইয়ের ভাষা ও নির্মাণশৈলী যেন কুণ্ডলিনী চর্চার মতই—ধীরে ধীরে, কেন্দ্রিকভাবে পাঠককে উত্তরণ ঘটায়। শুরুর ছায়াপথ ধরে ক্রমে পাঠক ডুবে যান গভীর অন্ধকারে, এবং তারপর যেন আলো আসে না, আসে আত্মচেতনার এক ঝলক, যা অস্বস্তিকর, আবার মোহময়।

“Demons are like obedient dogs; they come when they are called.” Rémy de Gourmont-এর এই কথা যেমন সতর্ক করে, তেমনই অভীক সরকারের লেখাও পাঠককে শেখায়—এই লেখাগুলো পড়ার পর, কিছু জেগে থাকে।

অভীক সরকারের “প্রেতযক্ষ ও অন্যান্য” একটি যুগসন্ধিকালীন রচনা—যেখানে বাংলা হরর সাহিত্যের অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের সুর ধ্বনিত হয়। এই অন্ধকারে ডুব দিতে সাহস লাগে, কিন্তু একবার ঢুকে গেলে—ফিরে আসা আর হয় না। তন্ত্র তো তাই—জাদুর খেলা নয়, আত্মার এক নিঃশব্দ বিপ্লব।

পুনশ্চ: এই বইয়ের প্রত্যেকটি লেখা পাণ্ডুলিপি আকারে লেখক অথবা প্রকাশক পড়িয়েছেন আমায়, সংকলিত হওয়ার অনেক আগেই। বাংলা বই পড়ার অভ্যাস প্রায় চলে গিয়েছিল একটা সময়। 'শোধ' সেই সময় মৃতসঞ্জীবনীর ভূমিকা নিয়েছিল। তারপর অভীক সরকারের সঙ্গে আলাপ। আমি ভাষার ছাত্র। রিভ্যু কোথাও অকারণ অসহ্য মনে হলে নিজগুনে মার্জনা না করলেও চলবে। আগামীতেও এমন করেই লিখবো।

অলমতি বিস্তরেণ।
Profile Image for Ipshita.
440 reviews194 followers
June 14, 2025
তেলিয়াভোলা ★★★
প্রেতযক্ষ ★★⯪
কাউরীবুড়ির মন্দির ★★★★★
হাড়িকাঠ ★★★★
Profile Image for Suvradeep Mandal.
18 reviews1 follower
December 30, 2024
এটি লেখকের আগমবাগীশ সিরিজের দ্বিতীয় বই। সবকটি গল্পই পূর্ব প্রকাশিত, তার মধ্যে কাউরিবুড়ির মন্দির আলাদা বই হিসেবে আগে প্রকাশিত হলেও বর্তমানে একই সাথে রয়েছে। কাউরিবুড়ির মন্দির গল্পটি বাদ দিলে বাকি গল্পগুলি ঠিকঠাক লেগেছে, খুব ভালো বা খারাপ না। ���াড়িকাঠ গল্পটির সবার মধ্যে একটু অন্যরকম। সময়কাল হিসেবে দেখলে প্রেতযক্ষ প্রথম গল্প যেখানে ভবতারণবাবুর সাথে আগমবাগীশের আলাপ হয়। হাড়িকাঠ গল্পটি ঠিক কাউরিবুড়ির মন্দির গল্পের পরবর্তী ঘটনা। সবমিলিয়ে বইটি মোটামুটি ঠিকঠাক লেগেছে।

নিজস্ব রেটিং - ৭/১০
Profile Image for Sakkhar  Banerjee.
107 reviews6 followers
August 31, 2024
কাউরিবুড়ির মন্দির আগেই পড়া ছিলো, তা বাদে বাকি তিনটি পড়লাম।
তেলিয়াভোলা কিশোরের জন্য, আর প্রেতযক্ষ এবং হাঁড়িকাঠ বড়দের জন্য লেখা। প্রথমটি মন্দ নয়, দ্বিতীয়টি ভালো করে জমতে না জমতেই শেষ হয়ে গেলো, আর হাঁড়িকাঠ গল্পের পরিণতি মনে হলো জোর করে মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে - পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস হতে পারতো এটা।

মোটের ওপর মন্দ নয়, তবে এই ঘরানায় 'এবং ইনকুইজিশন' এখনও অবধি লেখকের সেরা সৃষ্টি।
Profile Image for Rahul Mukherjee.
63 reviews3 followers
May 21, 2025
এই বইটি অবশ্যই ভারী সুন্দর লেখা। কিন্তু আগের পড়া বইগুলি যেন আরো ভালো ছিল।
প্রথম গল্পটি একটু অন্যরকম বাকি গুলির মধ্যে একটু গতানুগতিকতা চলে এসেছে।
Displaying 1 - 10 of 10 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.