মোজাফ্ফর হোসেন নিরীক্ষাপ্রবণ ছোটগল্পকার হিসেবে এরইমধ্যে পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। তিনি একদিকে যেমন অসামান্য গল্প বলিয়ে, তেমনি গল্পের ভেতরে গল্প পুরে নতুন ধরনের আখ্যান তৈরিতেও পাকা কারিগর। জাদুবাস্তবতা ও পরাবাস্তবতার সঙ্গে ভায়োলেন্স যুক্ত হয়ে মানুষের মুখোশের আড়ালের চেহারাটা তাঁর গল্পে এমন করে উঠে আসে যে, পাঠক পড়তে পড়তে শিউরে উঠেন, প্রশ্নবিদ্ধ করেন নিজেকেও। সমাজের নির্মমতা, নিষ্ঠুরতা এবং নৃশংসতার নানা চিত্র কখনো তীব্র শ্লেষে, কখনো রূপকের আশ্রয়ে উঠে আসে তাঁর গল্পে। এই বইতে সেটা আরও তীব্রভাবে লক্ষ্য করা যাবে। অধিকাংশ গল্পই ফ্লাশ ফিকশন-মুহূর্তে পাঠ শেষ হয়ে যাবে, যে-মুহূর্তে শেষ হবে সে-মুহূর্তেই যেন গল্পটা শুরু হবে…।
কথাশিল্পী-প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক মোজাফ্ফর হোসেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে সাংবাদিকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। বর্তমানে বাংলা একাডেমির অনুবাদ উপবিভাগে কর্মরত। প্রধানত ছোটগল্পকার। পাশাপাশি সাহিত্য সমালোচক ও অনুবাদক হিসেবেও তাঁর পরিচিতি আছে। অতীত একটা ভিনদেশ গল্পগ্রন্থের জন্য তিনি এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ কথাসাহিত্য পুরস্কার এবং স্বাধীন দেশের পরাধীন মানুষেরা গল্পগ্রন্থের জন্য আবুল হাসান সাহিত্য পুরস্কার অর্জন করেছেন। এছাড়াও ছোটগল্পের জন্য তিনি অরণি সাহিত্য পুরস্কার ও বৈশাখি টেলিভিশন পুরস্কারে ভূষিত হন।
বইয়ের কোনো গল্প ঠিক সেই অর্থে খারাপ না, আবার সেই অর্থে ভালোও না।"অন্ধ নয়, অন্ধত্বের ইতিহাস" ছাড়া আলাদাভাবে কোনো গল্পের নাম মনে নেই। গল্পগুলোর প্রচুর নাটকীয় মোচড় প্রথমে চমকে দেয় কিন্তু সেই চমকের আবেশ দীর্ঘস্থায়ী হয় না। সামাজিক বিভিন্ন অসঙ্গতি লেখক সাহসিকতার সাথে উপস্থাপনে দক্ষ। কিন্তু সেসব উপস্থাপন বেশ উচ্চকিত; গল্প হিসেবে ভালো লাগে না।
এবার বইমেলাতে অপ্রত্যাশিতভাবে উপহার পাওয়ার বরাতে বইখানা পড়া হলো। ছোটগল্প না বলে অণুগল্প সংকলন বলা যেতে পারে কারন ১৩০ পৃৃষ্ঠার বইতে ৪৬টি গল্প। বইয়ের গল্পগুলো খুবেকটা খারাপ না, পড়ে ফেলা যায়। তবে এতগুলো গল্পের মাঝে আলাদা করে মনে রাখার মতো গল্প খুব কম। লেখক নানান সামাজিক অনুষঙ্গ গল্পে নিয়ে এসেছেন কিন্তু সেগুলোর ভাব অতি উচ্চকিত বলে ভালো গল্পে রূপান্তর হতে পারেনি। পড়লে পড়া যায়, না পড়লে কোন ক্ষতি নেই।
জাদুবাস্তবতা ও পরাবাস্তবতার মিশেলে নিরীক্ষাধর্মী ৪৬টা গল্পের মধ্যে ১০টার মতো গল্প আমার মতে সুপাঠ্য গল্প হয়েছে। যেমনঃ মুখোমুখি শূন্যে, দূরে থাকার নৈকট্য, অন্ধ নয় অন্ধত্বের ইতিহাস, যে গল্প বিস্মৃত কিন্তু কেউ কখনো ভুলে না, শিল্পের সাবজেক্ট হয়ে যুদ্ধ করেনি অমর, যে-কারণে গুলিস্তানে কখনো আগুন ধরে না, মানচিত্র ঝুলে থাকা ফ্যান্টাসি, অপেক্ষা মৃত্যুর, অমরত্বের নয়, আমাদের জন্য কোনো ডায়ালগ লেখা হয়নি, বেহেশত মাত্র এক লক্ষ টাকা।
বাকি গল্পগুলোর মধ্যে কিছু গল্প অতি সাধারণ; কিছু গল্পে অত্যধিক চমক দেখানোর জন্য গল্পই অখাদ্য হয়ে গেছে; কিছু গল্প বোদ্ধা পাঠকদের বহুল পঠিত, আর কিছু গল্প ধার করা।
পাঠক পড়তে পড়তে শিউরে উঠা কিংবা নিজেকে প্রশ্নবিদ্ধ করার মতো গল্পগুলো ছিল না; অন্তত আমার কাছে। অনেকে হয়ত পড়তে পড়তে শিউরে উঠবে, প্রশ্নে জর্জরিত করবে নিজেকে; যাদের এমন ঘরানার গল্প পাঠের অভিজ্ঞতা অল্প।
একবার পড়ার জন্য ভাল বই। কিন্তু আমার জন্য সংগ্রহে রাখার মতো বই না। তবুও কারো ইচ্ছে হলে পড়তে পারেন। এধরনের গল্পের বই পড়ার অভিজ্ঞতা অল্প হলে অব্যশই ভাল লাগবে 'আদিপাপের পরের পাপ'।
প্রথমদিকের কয়েকটা গল্প রিপিটেডলি প্রায় একই বিষয়ের দিকেই যাচ্ছিলো। ৪৬ টা গল্পের মাঝে মাত্র কয়েকটা গল্প ভালো লেগেছে। ‘অন্ধ নয়, অন্ধত্বের ইতিহাস’, ‘মানচিত্রে ঝুলে থাকা ফ্যান্টাসি’, ‘যে কারণে গুলিস্তানে কখনো আগুন ধরেনা’ এগুলো ছাড়া মনে রাখার মত গল্প ছিলো না তেমন! ভালো লাগে নাই খুব একটা। তবে লেখকের অন্যান্য বইয়ের প্রশংসা শুনেছি অনেক..