লেখককে দিয়ে বইয়ের বিচার করা উচিত কি উচিত নয় সেটা অনেক পুরোনো বিতর্ক। আমি ব্যক্তিগতভাবে শিল্প এবং সাহিত্যের ক্ষেত্রে লেখকের ব্যক্তিগত অবস্থানকে অনেক সময় পাশ কাটিয়ে যেতে পারলেও, ইতিহাস আশ্রিত বইয়ের ব্যপারে সেটা পারি না। সেটাকে কেউ যদি আমার ব্যক্তিগত সংকীর্ণতা ধরে আমাকে বিচার করেন আমি সেক্ষেত্রেও আপত্তি করব না। ইতিহাস আশ্রিত বই বিশেষ করে সেটা যদি মুক্তিযুদ্ধ বা তার পরবর্তী সময়ের আখ্যান নিয়ে হয় তাহলে আমি বইইয়ের সাথে সাথে লেককের ময়নাতদন্তেও কিছুটা আগ্রহী হয়ে উঠি। বইয়ের ময়নাতদন্তের আগে তাই লেখকের ময়নাতদন্তের কাজটা সেরে ফেলতে চাই।
মিনা ফারাহ নামটা আগে শুনিনি,তাই বই পড়ার ফাঁকে ফাঁকে গুগলের আশ্রয় নিলাম। গুগলে ওনার সাম্প্রতিক কালের বেশ কিছু সাক্ষাৎকার এবং ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটের সন্ধান পেলাম। বইটি প্রকাশ হয়েছে ২০০৮ সালে। কিন্তু বইটিতে লেখকের যে অবস্থান আর লেখকের বর্তমান অবস্থানের মধ্যে বিচ্যুতির পরিমাণ অস্বাভাবিক রকমের বেশি মনে হওয়ায় পরিচিত কয়েকজনের কাছে লেখকের সুলুক সন্ধানে মনোনিবেশ করলাম। যতটুকু জানতে পারলাম, লেখক কিছুদিন আগেও প্রো-আওয়ামী এবং প্রো-মুক্তিযুদ্ধ ঘরানার পত্রিকা হিসেবে পরিচিত জনকন্ঠ পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করতেন। সাম্প্রতিককালে ওনার সব লেখালেখি আর সাক্ষাৎকার নয়াদিগন্ত আর বাঁশেরকেল্লায় প্রকাশিত হতে দেখে ব্যথিত হলাম এবং বুঝলাম, অনেকের মতই সাম্প্রতিক জামাতি আর্থিক লেনেদেন লেখকের গোলপোস্টও বদলে দিয়েছে।
লেখকের ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটে ঢুকে লেখকের অন্যান্য বইয়ের বিজ্ঞাপন ঝোলানো দেখলেও আলোচ্য বইটির কোন হদিস পাওয়া গেল না। আমার কছেও লেখকের বর্তমান অবস্থানে বইটির অস্তিত্ব অস্বীকার করাকেই যুক্তিযুক্ত অবস্থান বলে মনে হল। উনি তাঁর একটি লেখায় মুক্তিযুদ্ধে নিহত মানুষের সংখ্যা নিয়েও প্রচলিত জামাতি প্রোপাগান্ডার সাথে গলা মিলিয়ে উচ্চস্বর হয়েছেন। এত কিছুর পরে লেখককে নিয়ে আর বাড়তি আগ্রহ অপ্রয়োজনীয় মনে হল। ইতিহাসের অনেক বিক্রীত লেখকের সাথে এই লেখকের নামও অন্তত আমার খাতায় লেখা থাকবে।
বইটি নিয়ে বলতে গেলে বলতে হবে, বইটিতে মৌলিক তেমন কিছু নেই, ইতিহাস আশ্রিত বইয়ে ব্যক্তিগত বিশেষণ প্রয়োগের খুব বেশি সুযোগ নেই, এই বইটি বেশ ভালভাবেই সেই দোষে দুষ্ট। আমি ব্যক্তিগতভাবে বইয়ের অধিকাংশ অংশের সাথে একমত হলেও, বই হিসেবে এটিকে একটি অগুরুত্বপূর্ণ বইই মনে করব।