কোভিড মহামারী এড়াতে শহরজুড়ে লকডাউন। মাঝরাতে এক কাপ চায়ের খোঁজে রাস্তায় হাঁটছেন আখতারুজ্জামান। রাস্তার আলো ফুরিয়ে আসতে শুরু করেছে প্রায়, গুমোট হয়ে আছে চারপাশ। কতক্ষণ হেঁটেছেন খেয়াল নেই। হঠাৎ একটা মাইক্রোবাস পেছন থেকে জোরে ব্রেক কষতেই তার সম্বিত ফিরল। ভয়ে জমে গেলেন আখতারুজ্জামান। আরেকটু হলেই মাইক্রোর চাকার নিচে পড়তেন। এই অন্ধকার রাস্তায় হেডলাইট নিভিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে কোন বেআক্কেল? “পাগলের মতো গাড়ি চালান কেন?” একটু ধাতস্থ হয়ে চিৎকার করে উঠলেন তিনি। মাইক্রোবাসের পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন। “গাড়ির হেডলাইট কোথায়? কার না কার গায়ের ওপর গাড়ি উঠে যাবে! কোন কমন সেন্স নাই।” কোন উত্তর এলো না। গাড়ি থামিয়ে দিয়েছে ড্রাইভার। ভেতর থেকে ক্লিক করে একটা শব্দ হলো। সম্ভবত লক খোলার আওয়াজ। পরক্ষণেই খুলে গেলো ড্রাইভিং সিটের দরজা। ভেতরে গান বাজছে, অন্ধকার সুনশান রাস্তায় একমাত্র শব্দের উৎসঃ
গাড়ির দরজা খুলে দিয়েছে ড্রাইভার। অন্ধকারে কেউ কারও মুখ দেখতে পাচ্ছে না। সেই অবস্থাতেই আখতারুজ্জামানের কাঁধে হাত রাখল লোকটা, কানের কাছে মুখ এগিয়ে আনল সন্তর্পণে। তারপর ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলোঃ “আখতারুজ্জামান, আপনি কি একটু চা খেতে চান?”
নাম শুনেই অনেকের ভুরু কুঁচকে গেছে। এটা আবার কী ধরনের নাম! ফাইজলামি নাকি? কিন্তু এ বইয়ের এর চাইতে উপযুক্ত নাম আর হয় না। ওয়াসি আহমেদ রাফি'র "হান্নান বোতলে পরী আটকে রাখে" পড়ার অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয়েছিলো "আখতারুজ্জামান একটু চা খেতে চান" হবে একটা বিশুদ্ধ হালকা বই। শুরুতে গল্পটা তা-ই। হা-হা করে হাসার মতো বেশকিছু মুহূর্ত আছে বইতে। যথারীতি "দুর্দান্ত ক্যামিও" দিয়েছেন নসিব পঞ্চম জিহাদী ও জাহিদ হোসেন।(গল্পের জনরা অনুযায়ী লেখক যে অনায়াসে তার গদ্যভাষা বদলে ফেলেন এটা আমি বেশ কৌতূহলের সাথে খেয়াল করি।) করোনাকালীন লকডাউনের সময় ডায়াবেটিসের রোগী আখতারুজ্জামানের চা খাওয়ার অভিযানে একটা সময়ে উঠে আসে গূঢ় দার্শনিক জিজ্ঞাসা, উন্মোচিত হয় মানুষের শাশ্বত প্রবৃত্তি। একদম শেষের টুইস্ট নিয়ে একটু ধোঁয়াশা থাকলেও এর ব্যাখ্যা তাৎপর্যপূর্ণ। পুরো বইটিই খুব আনন্দ নিয়ে পড়েছি। দিনশেষে আমরা সবাই আখতারুজ্জামানে পরিণত হই। আমি এ ধরনের "হালকা বই" আরো পড়তে চাই।
একদম আদর্শ হালকা-ভারী উপন্যাস। এহেন নামকরণের কারণ? বই পড়লেই বুঝতে পারবেন। গল্পের প্রথমার্ধে লেখকের আগের বইয়ের মতন হাসির উপাদান ভালো পরিমাণে বিদ্যমান থাকলেও শেষার্ধে একশো আশি ডিগ্রী বাঁক নেয় ঘটনাপ্রবাহ। বইটা পড়তে গিয়ে বুঝলাম করোনা মহামারী কতটা অপছন্দের একটা বিষয় আমার। পুরো বইয়েই অস্বস্তিকর একটা টোন বজায় ছিল ভালো পরিমাণেই। সবচেয়ে পছন্দের অংশ জলে, স্থলে আর ব্যোমে আখতারুজ্জামানের ঘুরে বেড়ানো। বেশ কিছু ইস্টার এগ ছিল। উপভোগ্য।
গল্পটাকে কেটেকুটে আরো ছোট হয়তো করা যেতো। কিছু জিনিস আমার কাছে অপ্রয়োজনীয় মনে হয়েছে।
বইয়ের ভিতরে তিনটি অনুগল্পে লেখক জীবনের অনিশ্চয়তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন, কিন্তু সমাধান দেননি। অনেকটা Trolley problem এর মত; তিনটা সমস্যা সৃষ্টি করে লেখক পাঠকের চিন্তায় সূক্ষ ধাক্কা দিয়ে দিলেন যেনো। ফিনিশিংটা চমকপ্রদ ছিলো, অনেকটা ধোঁয়াটেও লাগলো। সবার শেষ কাপ চা হিসাবে আখতারুজ্জামান কোনটিকে বেছে নিয়েছিলেন? আমার কাছে মনে হয়েছে অনিশ্চিত যেটা ছিল সেটাই। মানুষ নিশ্চয়তার পেছনে ছুটলেও, পূর্ণ নিশ্চয়তা মানুষকে জীবনের তৃপ্তি হতে বঞ্চিত করে।
বইয়ের ভালো লাগা দুটো লাইন: মানুষ মাত্রই মৃত্যুকে ভয় পায়। ঠিক একইভাবে তারা ভয় পায় জীবনের নিশ্চয়তায়। নিরবিচ্ছিন্ন স্বাচ্ছন্দ্য মানুষকে অস্বস্তিতে ফেলে দেয়। আর অনিশ্চয়তার ভয় তো সেই আদিমকাল থেকেই চলে এসেছে।
ভালো-মন্দের সিদ্ধান্ত তো অভিজ্ঞতা থেকেই আসে। একজনের বিসর্জনে কখনো লাখো মানুষের কল্যাণ হয়, আবার অনেকের ত্যাগে উপকার হয় শুধুমাত্র একজনের।
(হারুন ভাইয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা, বইটি ধার দেওয়ার জন্য)
এই বইটা আসলে মাথা খারাপ করার মতো একটা বই। একই দিনে দুইবার পড়া লাগছে। সত্যি বলতে প্রথমবার পড়ে অনেককিছু মিস করে গেছি। একটু বিরক্তও হয়েছিলাম। রুপকের ব্যাপারটা আঁচ করতে পারলেও তায়েফের শেষ টুইস্টটা আমাকে হেব্বি ভুগিয়েছে। শেষ পর্যন্ত হারুন ভাই পথ দেখালো। তারপরও নিজের চিন্তাভাবনা অসংখ্য দিকে মোড় নিচ্ছে, অসংখ্য প্রশ্ন মাথার মধ্যে উকি দিচ্ছে। আসলে বইটাই এমন। পাঠককে ভাবতে বাধ্য করবে।
এখন ইচ্ছে করছে কি জানেন? প্রত্যেকটা পাঠককে ধরে ধরে তাদের ভাবনাগুলি খোলাখুলি শুনতে থাকি।
বইয়ের নাম দেখে শুরুতে যে ব্যক্তির কথা মাথায় আসে তাকে নিয়ে লেখাটা না, সাধারণ এক ব্যক্তি আখতারুজ্জামান কে নিয়ে লেখা যিনি শুধু চা খেতে চান। অবশ্য মাথায় আসবে না কেন? এরকম নাম ব্যবহার করার উদাহরণ আগেই দেখা গেছে, বেশ ট্রেন্ডি ব্যাপারটা।
উদ্ভট নাম হলেও বইটা হালকা মেজাজে পড়ার জন্য বেশ। রিডার্স ব্লক কিংবা ভারী বই পড়তে ইচ্ছে করছে না, তখন বইটা বেশ বিনোদন দিবে। লেখকের আগের বই "হান্নান বোতলে পরী আটকে রাখে" এর ও সেম গাঁথুনির লেখা ছিল। বইটা পড়ে খারাপ লাগে নাই, মজাই লাগছে।
কিন্তু, বানান ভুলগুলো বেশ দৃষ্টিকটু। আমি সচরাচর এই বিষয়গুলো এত আমলে নেই না। কিন্তু প্রথম পৃষ্ঠাতেই যেখানে বানান ভুল সেটা আসলেই বাজে ব্যাপার। সম্পাদনা কিংবা প্রুফরিড আরেকটু সিরিয়াস হওয়া দরকার। বইয়ের প্রচ্ছদ এবং প্রোডাকশন বেশ।
অবসরপ্রাপ্ত ডায়াবেটিস এর রোগী আখতারুজ্জামান সাহেব প্রচুর দুধ চিনি দিয়ে চা খেতে পছন্দ করেন। লেখক গল্পের মধ্যে যে পরিমান চিনি উল্লেখ করেছেন সে পরিমান চিনি দিয়ে চা বানানো আমার মনে হয় সম্ভব না। আর একজন ডায়াবেটিসের রোগী ওরকম সর্বোচ্চ দুই কাপ চা এফোর্ড করতে পারবে...আর তারপরে যা হতে পারে সেটা আজরাইলের নিজের হাতে সামলানো লাগবে। যাই হোক বিষয়বস্তু তে আসি। আখতারুজ্জামানের চায়ের নেশাই লকডাউনে তাকে বের হতে বাধ্য করে। এই বের হওয়াই তার কাল হয়ে দাঁড়ায়। লকডাউনের মধ্যে চায়ের দোকান খুলবে কোন বেকুবে! কিন্তু বৃদ্ধ আখতারুজ্জামান কে এক আজগুবি লোক প্রতিদিন গাড়ি তে করে উঠায় নিয়ে গিয়ে চা খাওয়ায়। সেই চা এমন ই অমায়িক চা যে আখতারুজ্জামানের চায়ের নেশা কে আরো রংচঙে করে তুলে। যার দরুন উনি প্রতিদিন ই বাসা থেকে মাঝরাতে বের হয় সেই ভ্রাম্যমাণ চায়ের দোকানে এক পেয়ালা চা খাওয়ার জন্যে। চায়ের সাথে টায়ের বিকল্প হিসেবে ঐ আজগুবি ড্রাইভার অটোপাইলট মোড দিয়ে গাড়ির পেছনে চা বানাইতে বানাইতে দুনিয়ার মনস্তাত্ত্বিক গল্প আখতারুজ্জামান কে শোনায়। ভদ্রলোক এক কাপ চা খেতে এসে এতো বকর বকর শুনে যারপরনাই বিরক্ত হন। এইটাকে আসলে উপন্যাস বলা যাবে না। আমার মনে হয় এই পৃথিবীর প্রতিটা লেখকের ই নিজস্ব কিছু বিক্ষিপ্ত,উত্তপ্ত,বিচ্ছিন্ন,উদ্ভট দার্শনিক চিন্তাভাবনা থাকে; যেগুলো কেউ প্রকাশ করে আত্মজীবনী মূলক বইতে আবার কেউ প্রকাশ করে দেয় কোন উপন্যাসের চরিত্রের মাধ্যমে। এইখানে লেখক তাই করেছেন। গভীর রাতে ঘুম না আসলে মনে অনেক রকম দার্শনিক খেয়াল আসে। আখতারুজ্জামান লেখকের একজন ভিক্টিম মাত্র। পড়তে পড়তে লক্ষ করলুম লেখক খুবই কৌশলে সূক্ষ রসিকতার ঢংয়ে বইয়ের মধ্যে আরো দুইজন কিংবা তিনজন (আমার ঠিক মনে নাই) লেখক এবং তাদের বই প্রমোশন করেছেন। এই ব্যাপারটা আমার ভালো লাগছে। লেখকের এই সকলের তরে সকলে আমরা ,প্রত্যেকে আমরা পরের তরে টাইপ উদ্যোগ টা নিঃসন্দেহে চমৎকার । Keep it up, good work brother.
উইটি কিন্তু চটুল নয় এমন বৈশিস্ট্যহীন ছোট ছোট বাক্যে গল্প বলেন, ওয়াসি আহমেদ। ফলে, গল্পে ঢুকে যেতে পাঠককে তেমন কোন বিড়ম্বনার মুখোমুখি হতে হয় না। ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট সুন্দর হওয়ায় উপন্যাসের শুরুতেই আখতারুজ্জামানের চরিত্র আমাদের কাছে খুব পরিচিত মানুষের মতো স্পস্ট হয়ে আসে। আখতারুজ্জামানের কর্মকান্ড ও মারীর খেলা যখন প্যারালালি আমাদের এক জানা জগতের গল্পের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল তখনই কোন এক পরাবাস্তব জগৎ থেকে আবির্ভূত হয় একটি সাদা গাড়ি। আগন্তুক কিছুতেই নিজের খোলস থেকে বের হন না কিন্তু, মুখোশনাচের মুদ্রা রপ্ত করে আমাদের সামনে নিয়ে আসেন রঙ-হীন এক বায়োস্কোপের স্মৃতি।
সমস্ত এলিমেন্ট খুব কাছের হওয়ার পরেও তাই উপন্যাসটি অধরাই থেকে যায়। এই ফিলোসফিক্যাল ডায়ভার্সিটি আমাদের ভালো লাগে। উপন্যাস শেষে মনে হয়, অতিপ্রকৃত সমস্ত মেটাফোর মূলত বস্তুজগতেরই কাঙ্খিত দোসর।
উদ্ভট নামের বইয়ের কাহিনী একটু উদ্ভটই হয়। কাজেই "আখতারুজ্জামান একটু চা খেতে চান" বইয়ের কাহিনী একটু উদ্ভট গোছের- আছে চা বিষয়ক আলোচনা, আছে পরাবাস্তব কিংবা অতিপ্রাকৃত ব্যাপার স্যাপার। আখতারুজ্জামান একজন মুরুব্বি মানুষ। চায়ের প্রবল নেশা, তার উপর আবার বহুমূত্র রোগ। ওদিকে তার চায়ের রেসিপি দেখলে বলতে ইচ্ছে হয় "মুরুব্বি উহু উহু!"
করোনাকালীন সময়ের কথা। আখতারুজ্জামান সাহেব পড়লেন মহাবিপদে, সরকার লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে। অসুখের জন্য চিনি খাওয়া বারণ তাই চাইলেও বাসায় নিজের মনের মতো চা জোটে না কপালে। দেখা গেল আখতারুজ্জামান সাহেব একদিন মাঝরাতে বের হলেন চায়ের খোঁজে এবং দেখা পেলেন এক সাদা মাইক্রোওয়ালা অদ্ভুত চাওয়ালার। তারপর আখতারুজ্জামান চা পান করলেন!
বইটা বেশ রিফ্রেশিং, আটকে রেখেছিল আমাকে, মনে হচ্ছিলো শেষ করেই উঠি। তবে কিছু জিনিসের উপস্থাপনা ভালো লাগেনি। বইটা বেশ হালকা চালে লেখা, বিষয়বস্তু আবার হালকা নয়। প্রবহমান জীবন নদীর পাশে দাঁড় করিয়ে কিছু প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়া হয়েছে সবার মাঝে।
আমরা আসলে কি করতে চাই?
যাইহোক, আপাতত চায়ের ফ্লাস্ক বগলে করে এই ভীতু আমি একা একা মাঝরাতে ঘুরে বেড়াতে চাই জারুল, বাগানবিলাস, কৃষ্ণচূড়া ফুলেদের মাঝে কিন্তু নিরাপত্তাজনিত কারণে তা সম্ভব হয়ে উঠবে না কখনও! তাই দিনের বেলাই সই! নো সমস্যা!
এইসব বৃষ্টির অলস দিনে বারান্দায় বসে এক কাপ চা খেতে খেতে অনাসায়ে পড়া ফেলে যেতে পারে ' আখতারুজ্জামান একটু চা খেতে চান বইটি'। হিউমারাসলি সহজ ভঙ্গিতে লেখা, পড়তে মজা লাগবে তবে লেখক এতে কিছু দার্শনিক প্রশ্ন ছুড়ে মেরেছেন পাঠকের দিকে যেন কিছুটা মজা করেই। জাহিদ হোসাইন আর নসীব পঞ্চমের ক্যামিও অপ্রত্যাশিত কিন্তু দারুণ ছিলো, হেসেছি মন খুলে। সবশেষে চায়ের কাপ হাতে এক দুবারে পড়ে ফেলার মতো বই।
বইটির নাম দেখলে অনেকের ভ্রু কুঁচকে যেতে পারে। এ কেমন নাম? তবে ওয়াসি আহমেদের তরতর করে পড়ে যাওয়ার মতো গদ্য এবং বইয়ে লেখকের দিক থেকে ছুড়ে দেয়া কিছু দার্শনিক প্রশ্ন পাঠককে অনেক কিছুই ভাবতে বাধ্য করতে পারে।
সিরিয়াস ডায়েবেটিসের রোগী আখতারুজ্জামান অতিরিক্ত দুধ-চিনি সমৃদ্ধ চা খেতে চান। সারাজীবন সংসারে বোঝা টানা একজন বৃদ্ধের নিজ প্রবৃত্তির প্রতি চরম দাসত্ব সুন্দর করে লিখেছেন ওয়াসি।
বইয়ের সময়রেখা কোভিডকালীন। আখতারুজ্জামানের ম্যাজিস্ট্রেট বড় ছেলে ভারিক্কি স্বভাবের তৌহিদ, বেকার টিকটকার ছোটছেলে তৌফিক, ইতালিপ্রবাসী কন্যা শিরীন এবং আখতারুজ্জামানের স্ত্রী আয়েশার জীবনের উপর শুধুমাত্র অতিমারীর ঝড়-ই বয়ে যাচ্ছে না। আরো অনেক ব্যাপার-স্যাপার আছে।
মানুষ তাঁর নফশের দাস। এক একজন এক একভাবে। এই যেমন আখতারুজ্জামান গভীর রাতে করোনাকালে অপেক্ষা করেন এক সাদা হাইএস মাইক্রোর, চা খাওয়ার উদ্দেশ্যে। বইয়ের বাকি চরিত্রগুলির এরকম ভিন্ন ভিন্ন দাসত্ব আছে।
'আখতারুজ্জামান একটু চা খেতে চান'এ লেখকের ভাষার গতিশীলতা বেশি। সেই সাথে কোথায় গিয়ে এক ধরণের অ্যাবসার্ডিটির সাথে ডিল করছে প্রায় সব চরিত্র।
বইটি ঠিক কোন জনরার তা বুঝে ওঠা সহজ নয়। রহস্যময় হাইএস চালকের সাথে আখতারুজ্জামানের রাতের ভ্রমণে উঠে আসে জীবনের কিছু প্যারাডক্সের ছাপ। শেষের দিকে এসে লেখক পাঠকের জন্যে কিছু বিষয় ওপেন এন্ডেড রেখে গেছেন। দুজন তরুণ লেখকের ক্যামিও অবশ্য আমার কাছে খানিকটা আরোপিত-ই মনে হয়েছে।
শেষের টুইস্টটা লেখক যখন পাঠকের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন সেক্ষেত্রে আখতারুজ্জামানের চা খাওয়ার প্রবৃত্তি আমার কাছে 'একটু' মনে হয় নি। সব ধরণের নেশা-ই নেশাখোরের কাছে তার নফশের কারণে একটু মনে হতেই পারে।
তবে তিন সংখ্যাটির রহস্যময়তার সাথে সাথে চা বিষয়ে আগ্রহীরা গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাসের এক ঝলক এ বইয়ে পেতে পারেন। এক বসায় বইটি পড়ে শেষ করার প্রবৃত্তি লেখক তো 'আখতারুজ্জামান একটু চা খেতে চান'এ আরেকবার উস্কে দিলেন। গদ্যভাষার প্রাঞ্জলতার মাঝে ওয়াসি আহমেদ হাজির করেছেন জটিল বিষয়বস্তুর।
বই রিভিউ
নাম : আখতারুজ্জামান একটু চা খেতে চান লেখক : ওয়াসি আহমেদ প্রথম প্রকাশ : একুশে বইমেলা ২০২৪ ষষ্ঠ মুদ্রন : জানুয়ারি ২০২৫ প্রকাশক : আফসার ব্রাদার্স প্রচ্ছদ : রঙ্গন রিভিউয়ার : ওয়াসিম হাসান মাহমুদ।
গুণী সাহিত্যিকরা বলেন, একজন লেখকের কাজ সময়কে ধারণ করা। যাতে ভবিষ্যৎ পৃথিবী তাকিয়ে দেখতে পায় বিস্মৃতি অতীতের কিছু পটভূমি। কাজটা অনেক ভাবেই করা যায়। গুরুগম্ভীর সাহিত্য লিখে যেমন সমাজকে ফ্রেমবন্দী করা সম্ভব, তেমনি জনসুহৃদ লেখা দিয়েও তা সম্ভব। আখতারুজ্জামান একটু চা খেতে চান বইতে ধরতে চাওয়া হয়েছে আমাদের সময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঘটন-করোনা ভাইরাস-এর সময়কালকে। এখানে আলোচ্য বিষয় ঠিক রোগ নয়, তবে রোগের মাঝেই মানুষের বিভ্রান্তি আর স্বেচ্ছাচারিতার কিছু চিত্র এতে দেখা যায়। আর মানুষ যে হঠকারীতা করে সুখ পায়, তাও নানান চরিত্রের ভেতর দিয়ে প্রমাণ হয়।
গল্পে জাদুবাস্তবতার আঙ্গিক ধরা হয়েছে চমৎকার ভাবে। লেখকের ভাষার সাবলীলতা তাতে সহায়ক হয়েছে। আবার উঠে এসেছে ইতিহাস। আছে গাল-গল্প, নৈতিকতা আর অনৈতিকতার কাটাচেরা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমি বেতাল পঞ্চবিংশতি'র সঙ্গে মিল পেয়েছি জাদুবাস্তবতার ভিড়ে। যেখানে একটি নৈতিক নির্বাচনের প্রশ্ন ছুঁড়ে শ্রোতাকে আটকে ফেলা হয় বিভ্রান্তির জালে।
তবে সব চাইতে ভাল যা দেখানো হয়েছে তা হচ্ছে নেশার কাছে মানুষ ক্রীতদাস। মরণের হাতছানিও উপেক্ষা করিয়ে নেয় অনিবার্য অভ্যাস। এছাড়া গল্পের সমাপ্তিট���ও বেশ। একই সঙ্গে তা একটি পূর্ণবৃত্ত রচনা করেছে এবং উন্মুক্ত রেখেছে সম্ভাবনার দুয়ার। এই কাজটি করা একেবারেই সহজ নয়।
তবে যে জিনিসটিতে কিঞ্চিৎ আপত্তি আছে তা হলো, লেখকের প্রতিটি বইতেই কিছু চরিত্র ফিরে আসে। যেমন নসীব, জাহিদ হোসেন, প্রমুখরা। ব্যাপারটা অবশ্য গল্প জগতে অভূতপূর্ব নয়। নীল গেইম্যানের অনেক বইতে হ্যম্পস্টক পরিবার ফিরে ফিরে এসেছে। হবিট উপন্যাসের চরিত্রেরা হানা দিয়েছে লর্ড অফ দ্য রিংসের বইতেও। তবে, এক্ষেত্রে মনে হয় লেখক এসব চরিত্র এই বইতে না রাখলে চলতো। আশা থাকবে আগামী বইতে এ ধরনের বাস্তবিক ক্যামিও চরিত্র ছাড়াও কিছু উপন্যাস দেখতে পাবো। ওহ, আর চায়ের ব্যাপারটা নিয়েও লেখকের প্রথম বই- যে বাক্য অশ্রুত অন্ধকার-এ বেশ কিছু কথা বলা হয়েছিল। তাই এই বিষয়টাও খানিক পুনরাবৃত্তি বলে ধরে নিচ্ছি।
সবশেষে লেখককে অভিনন্দন এমন চমৎকার একটি বই লিখতে পারার জন্য। সাবলীল লেখনীতে পরাবাস্তবতা ও বাস্তবতার ছোঁয়া রেখে একটি পরিবারের নিত্যযাপনের আঙ্গিকে গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক সংঘটনকে মলাটবন্দী করতে পেরেছেন তিনি। একদিন হয়তো মানুষ আমাদের অস্তিত্ব থাকবে না, তবে বইটি থেকে যাবে, থেকে যাবে এই সময়ের কিছু জরুরি প্রতিচ্ছবি। এখানেই গল্পের সার্থকতা।
কোভিডের সময়কার স্মৃতিগুলো আবার মনে পড়ে গেল। কত আতংকেই না কেটেছিল দিনগুলো। আর বাংগালী আহম্মকতার চূড়ান্তরূপও দেখা গিয়েছিল সে সময়টাতে। এই উপন্যাসিকায় একটা পরিবারের কোভিডকালীন অভিজ্ঞতার সাথে পরাবাস্তবতা আর রহস্যের দূর্দান্ত মিশ্রণ ঘটিয়েছেন লেখক।।
তেইশ সালের জানুয়ারির শেষার্ধের কোনো এক নাতিশীতোষ্ণ দুপুরে উষ্ণ পানীয়ের আয়েশে আরামটুকু নিমেষেই শুষে নেওয়ার প্রাক্কালে ফোনে টুং করে আসলো ল্যাব রিপোর্টের নোটিফিকেশন।মাতা জ্বরে কাতর বেশ কিছুদিন ধরেই,অরুচি অনিদ্রা সাথে তীব্র তলপেটে ব্যাথায় ঝাঁঝালো মেজাজে বেশ রুক্ষ হয়ে বলেই ফেললো;"ফোনের জ্বালায় শান্তি নাই, দিনদুপুরে কাজ নাই,খালি ফোন আর সুযোগ পেলেই ঘুম" রিপোর্ট খানা তারই,অথচ গরজ আমার বেশি!!
তথৈবচ অবস্থায় ফলাফল চেক করতেই চক্ষু চড়কগাছ, বেগতিক সাধারণ ফ্লু ভাবা জ্বর কালান্তরে রূপান্তরিত হয়ে ঠাঁই নিলো হাসপাতালের করিডোরের শেষপ্রান্তের এক কেবিনে। চব্বিশ দিন চার ঘণ্টা আটাশ মিনিট জননী আমার জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দোদুল্যমান হয়ে ফিরলো।দুর্বল শরীর, ততোধিক হত্যদম মন আর একগাদা ঔষধের প্যাকেট সমেত তার পাখির মতো ছোট্ট নীড়ে। আকস্মিক অঘটনের সেই দিনগুলোতে কিচ্ছু চাইনি আমি শ্রান্তির ক্লান্তিতে এক কাপ দুধ চা ছাড়া।এতশত মন খারাপ,হতাশ হবার বেসামাল সময় বেহিসেবি দিনে সন্ধ্যান্তে আমি হেঁটে যেতাম টিএসসির মোড়ে। মুঠোফোনে একঘেয়ে ক্লান্তিকর ফোনালাপের অপরপাশে সবার মায়ের শরীর নিয়ে আক্ষেপের বিলাপের ফাঁকে ক'কাপ চায়ের চুমুকে চনমনে হবো ভেবেই আনমনে বিকাল হতেই মাকে ঘুম পারিয়ে পাখির মতো উড়ে যেতাম আধঘন্টার একটুখানি দুধ চায়ের টানে।
আখতারুজ্জামান কে আমি দেখেনি,চিনিনা,মানসিক শারীরিক বয়সের ব্যবধান ও আমাদের অনেক বেশি। শুধু একটি বিন্দুতে বিলীন হয়েছে আমাদের পার্থক্যের মাপকাঠি। কনডেন্সড মিল্কের সাথে বেশ কয়েক চামচ চিনি দিয়ে প্রায় শরবতের মতো এক কাপ চায়ের চাহিদা আখতারুজ্জামানকে বিপদজনক সীমানা পেরিয়ে অনন্ত অনিশ্চিত পথের পথিক হতে যেমন হটাতে পারেনি।তেমনি রং চা নামক রঙ কনসেপ্টের কারাগারে দুধ-চায়ের প্রতি আজন্ম পালিত প্রীতি কোনোভাবেই লালায়িত হয়নি স্বাস্থ্য সচেতনতার শেকলে আজ্ঞাবহ দাসত্বের শৃঙ্খলে হারিয়ে যাওয়া কোনো স্মৃতিতে।
আমি নই কোনো চিত্রকর,গোলাপ গাছের অংশ, অনিশ্চয়তায়ভরা জীবন বা অপমানজনক বিজয়ের ভাগীদার সেই তীরন্দাজ।আমি শুধু আজীবন ভালোবেসে যাওয়া সেই দুধ চায়ের সমঝদার,সময়ে স্মৃতিতে সপনে যে শুধু দেখেছে জেনেছে মেনেছে চা মানেই ঘন সরপড়া দুধে ভাসমান একখানি স্বর্গের আসমান।
অমরত্বের প্রত্যাশা নেই, মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়া প্রতি পদে অনিশ্চয়তার পথে আখতারুজ্জামানের মতো আমি ও শুধু একটু দুধ চায়েই সমাহিত হতে চাই পরম শান্তিতে।
বিশ্বাস করেন আর নাই করেন এই রাতে দেড়টায় এই বইয়ের শেষ পৃষ্ঠায় এসে আমার রিয়াকশন ছিলই এমন।
সত্যিকারে অর্থেই আখতারুজ্জামান সাহেব চা খেতে চান, তাও চার চামচ চিনি, কনডেন্স মিল্কের চা যেইটা চিন্তা করতে আমার কানে তালা লেগে যাচ্ছে। তবে উনাকে দোষ দিতে পারি না কারণ আমি তো জানি কফি না থাকলে আমি নিজে কী কান্ড করে বসি 🫣 থাক গে, সেসব কথা বরং গল্পে ফেরত আসি।
তো করোনাকালের লকডাউনে উনার চায়ের আকাঙ্ক্ষাকে আটকাতে পারেনি, আখতারুজ্জামান পড়ে যান এক অদ্ভুত চাওয়ালার পাল্লায়, যে কিনা ভারি মজার চা খাওয়ায়, সাথে শুনায় গল্প, গল্পের শেষে থাকে প্রশ্ন আর..?
এখানে বলা থামাতে হবে আমার। বাকিটা পড়ে জানা দরকার।
লকডাউনের বিচিত্র কিছু স্মৃতি ফেরত আনে বইটা। আতংকময় অসহায় সময়, একই সাথে বাঙালির হিউমার - আমরা হেব্বি কিউট জাতি অবশ্য। বিক্রম বেতালের কথা মনে পড়েছে হতে পারে সেইটা আমার আপন মনের খেয়াল। জন্রার দিক দিয়ে এইটা ডার্ক হিউমার, তবে সেইটা সহজে চোখে পড়ে না। জায়গামত এসে তখন অবস্থাটা হয়...ওই তো, রিভিউয়ের প্রথম লাইনটা পড়েন 👀
নিসন্দেহে '২০২৪' বইমেলার ওয়াসি আহকমেদ এর "আখতারুজ্জামান একটু চা খেতে চান" আলোচিত একটি বই । এই বই প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই বেশ আলোচনায় আছে।
অতীতে বই সামনে পেলেই গোগ্রাসে পড়তাম। অন্য এক জগৎ -এ চলে যেতাম। এক একটা বই এক এক রকম আনন্দ দিত। কিন্তু ইদানীং খুবই কম পড়ি। তবে আমার পড়ার ধারায় সামান্য পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমানে আমার মনে হয় একটা বই শুধুমাত্র আনন্দ পাওয়ার মাধ্যম নয়। বরং আমার সচেতন মন সবসময় বইগুলোর ইনার মিনিং খোঁজার চেষ্টা করে। এই ব্যাপারটি শুরু হয়েছে ইয়াস্তেন গার্ডারের সলিটিউর মিস্ট্রি অর্থাৎ তাস রহস্য বইটি পড়ার পর থেকে। আমি এখন অনুভব করি প্রত্যেক বই'ই অর্থবহ এবং কোনো না কোনো ম্যাসেজ দিয়ে থাকে। এইজন্য মনে হয় আমার বই পড়ার ক্ষেত্রে অবচেতন ভাবে কিছুটা সচেতনতা এসেছে।
২০২৩ -এ ওয়াসি আহমেদ এর মৃতদের স্মরণে সমাবেত প্রার্থনা পড়ার পরপর মনে হয়েছে এই লেখকের গল্পগুলো শুধুমাত্র গল্পই না। লেখকের গল্পগুলোর মধ্যে গুপ্ত এক অর্থ আছে। বিশেষ ভাবে বলতে হয় 'বুড়ি চাঁদ ���েনোজলে ভাসার পর' গল্পটি এত ভালো লেগেছিল।
মূল প্রসঙ্গ থেকে দূরে চলে এসেছি মনে হয়। কথা বলছি তো "আখতারুজ্জামান একটু চা খেতে চান" বইটি নিয়ে। বইটি পড়ে যেমন আনন্দ পেয়েছি ঠিক তেমনই অর্থবোধকও মনে হয়েছে। বইটি যেন আদিম এক বাসনার ইংগিত দিয়ে যাচ্ছিল।
বইটিকে তিনিটি অংশে ভাগ করা যেতে পারে। তরল, কঠিন এবং বায়বীয়। পুরো বই জুড়ে দেখানো হয়েছে ছিমছাম একটি পরিবারের কোভিডের বন্দী জীবন। বন্দীশালায় থাকতে থাকতে অস্থির হয়ে যাওয়া মানুষের অদ্ভুত কার্যকলাপ। বইয়ের এই বিষয়গুলোকে 'তরল' এর রুপ দেওয়া যেতে পারে। এই অংশগুলো পড়তে নিজের বন্দীদশার সময় যেন চোখের সামনে ভেসে উঠছিল।
বইটিতে দেখানো হয়েছে একটি পরিবারের সদস্যদের পারস্পরিক সম্পর্ক। চরিত্রগুলোও চমৎকার। চারপাশে তাকালে একটা মজার ব্যাপার লক্ষ্য করি। হয়তো কোনো একজনকে দায়িত্ববান বা বিবেচক একজন মানুষ হিসাবে ভাবছি কিন্তু দিন শেষে দেখা যায় সে অতি তুচ্ছ একজন মানুষ। যে নিজের কামনা-বাসনার উর্ধ্বে নয়। আবার একদম দায়িত্ব জ্ঞানহীন মানুষটিও রুপান্তরিত হয় অন্য কোনো মানুষে। অদ্ভুত মানুষ এবং অদ্ভুত তাদের কার্যকলাপ। পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্য যখন এক কাপ চা এর জন্য নিজের কামনার অন্তিম পর্যায়ে যেতে পারে তখন বইটিকে আর সাধারণ বলতে ইচ্ছে করে না। মনে হয় পড়ছি যেন রুপক ধারার এক বই। গূঢ় তত্ত্ব কথা যখন চলে আসে তখন বইটি হঠাৎ করেই যেন কাঠিন্যতায় রুপ নেই।
এবার আসি বায়বীয় অংশে তথা একদম সমাপ্তিতে। অনেক আগে বই নিয়ে আলাপচারিতায় একটি কথা বলেছিলাম-- ''একজন লেখক যখন একটা বই লিখে তখন বইটির ব্যাপারে তার একান্ত নিজস্ব চিন্তা/দৃষ্টিভঙ্গি থাকে। পাঠক মাত্রই ভিন্নতা বা বিচিত্রতা। এমন না যে লেখকের দৃষ্টিভঙ্গির সাথে পাঠকের ভাবনা সম্পূর্নরুপে মিলে যাবে। বই একটা মুক্তমঞ্চ। এখানে লেখক এবং পাঠকের ভাবনার সমন্বয় তৈরি হয়। বের হয়ে আসে নতুন কিছু।' তাই বইয়ের একদম শেষ অংশটুকু কে আমি বায়বীয় বলতে পারি। লেখক আসলে কী বোঝাতে চেয়েছেন তা স্পষ্ট নয়। তবে আমার ব্যক্তিগত মতামত হলো বইটি যেহুতু আমি রুপকি অর্থে নিয়েছি তাই পরাবাস্তব মনে হয়নি।
বইটির ব্যাপারে খুবই সামান্য অভিযোগ আখতারুজ্জামান সাহেবের এই অভাবনীয় কামনার পেছনে কোনো ব্যাক স্টোরি থাকবে এরকম একটা আশা ছিল। যাহোক লেখক ওয়াসি আহমেদ কে অনেক শুভকামনা। আশা করি ভবিষ্যতে চমৎকার সব বই উপহার পাবো।
শেষ কবে আজকে রাতের মতো লুকিয়ে টর্চ জ্বালিয়ে বই পড়েছি তা মনে নেই। বেশ ভালো লাগলো, বিশেষ করে লাস্টের টুইস্টটা একদমই আনএক্সপেক্টেড। আগের মতো বড় বড় রিভিউ লেখার সময় আর পাই না, তবে শীঘ্রই দেওয়ার চেষ্টা করব! . . মাত্র বন্ধুর সাথে বইটা নিয়ে আলোচনা করলাম। ওর পার্সপেক্টিভ শুনে মাথা ঘুরে গেলো!
ইচ্ছা মানুষকে দুর্বল করে তো আবার সবলও। তা নির্ভর করে ব্যক্তির ইচ্ছাশক্তির ওপর। তবে মারাত্মক ইচ্ছাশক্তি কি ব্যাখ্যাতীত ঘটনার কারণ হতে পারে?
❝তিন তিনটি রাত। তিন কাপ চা। বায়ু, স্থল, জল। অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ। জীবন, মৃত্যু, অনিশ্চয়তা। আখতারুজ্জামান সাহেব, আবার দেখা হবে আমাদের। দেখা হতেই হবে।❞
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে তারপরও আখতারুজ্জামান নিজের শখকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। অদ্ভুত একটা ইচ্ছে প্রায় সময়ই মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে; আধা কাপ কন্ডেন্সড মিল্ক, আধা কাপ গরম পানি ও ছয় চামচ চিনির মধ্যে ছয় ফোঁটা লিকারের চা! বাসা থেকে লুকিয়ে চা খাওয়ার দুঃসাহসিক অভিযান চলতে থাকে। কিন্তু বিপত্তি তখন বাধে যখন কোভিডের কারণে লকডাউন শুরু হয়। নিজের ইচ্ছের কাছে পরাজিত হয়ে গভীর রাতে বের হন চায়ের সন্ধানে। হুট করে কোথা থেকে উদয় হয় এক রহস্যময় সাদা মাইক্রোবাস! আলোআঁধারিতে চালক ফিসফিসে প্রশ্ন করে। প্রশ্ন শুনে ভয়ানক চমকে যান কিন্তু নিজের অজান্তেই যেন মাইক্রোবাসে চড়ে বসেন। অচেনা অজানা একজন তাকে কেন চা খাওয়াতে চায়?
বই পড়ার সময় এক জনরা শেষ করার পর আরেক জনরা মনে হয়েছে এমন অভিজ্ঞতা কি কখনও হয়েছে? এই বইটা যখন পড়ছিলাম তখন মনে হয়েছিল অতিপ্রাকৃত কিন্তু শেষ করার পর মনে হলো ফ্যান্টাসি না তো! তবে যেহেতু বিষয়টা লেখক পাঠকের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন তাই আমিও বইকে অতিপ্রাকৃত জনরার মধ্যেই ধরবো। শুধু হরর বা ম্যাজিক্যাল এলিমেন্ট না লেখক হিউমারও যোগ করেছেন। বহুদিন পর কোনো বই পড়ে এতো হেসেছি।
আখতারুজ্জামান সারাজীবন পরিবার, সন্তান, ক্যারিয়ারের কথা ভেবেই পার করে দিয়েছেন। জীবনের শেষভাগে এসে যখন একটু বিশ্রাম নিবেন, শখ পূরণ করবেন তখনই শরীরে অসুখ বাসা বেঁধে বসে। কিন্তু একমাত্র শখ চা খাওয়া যখন একমাত্র চাওয়া হয়ে যায় তখন ঘটতে থাকে একের পর এক অদ্ভুত ঘটনা। হালকা ধাঁচে কমেডি-হরর মনে হলেও ধীরে ধীরে কাহিনির মোড় ঘুরতে থাকে। চায়ের ইতিহাস, জীবনদর্শন, করোনার ভয়াবহতা গল্পচ্ছলে সাবলীলভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। আখতারুজ্জামানের চায়ের রেসিপি শুনে কেন জানি খেতে ইচ্ছে হয়! যদিও জানি সাংঘাতিক পরিমাণে মিষ্টি হবে তারপরও। চায়ের উৎপত্তি, ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়া, গুনাগুন এতো দারুণভাবে লেখক বর্ণনা করেছেন যে মুগ্ধ হয়ে পড়েছি। রহস্যময় চালকের দার্শনিক আলোচনা ও প্রশ্ন প্রথমে হালকাভাবে নিয়েছিলাম। কিন্তু... শেষ টুইস্টে প্রশ্নগুলো নিয়ে নতুন করে ভাবা লেগেছে। প্রশ্নগুলো আপনাদেরও নাহয় বলি,
১. জীবন কেন গুরুত্বপূর্ণ? পৃথিবীতে জন্মানো কতটুকু প্রয়োজন? এই গুরুত্বের বিচারটা কে করবে? ২. তাৎক্ষণিক যন্ত্রণাহীন মৃত্যু নাকি আসন্ন মৃত্যুর অপেক্ষা? ৩. অনিশ্চয়তা নাকি অপমানজনক বিজয়?
শেষ টুইস্ট ও বাসচালকের ব্যাকস্টোরি লেখক সরাসরি খোলাসা করেননি। বরং গোলকধাঁধায় ফেলে দিয়েছেন। প্রশ্নগুলো ও শেষ টুইস্টের মোটামুটি একটা থিওরি দাঁড়া করাতে পারলেও বাসচালকের যে থিওরি ভেবেছি নিজেই সন্দিহান। ওভারঅল ভালো লাগার মতো একটা বই। দুই জায়গায় 'তৌফিক' কে 'তায়েফ' লেখা হয়েছে। এছাড়া আর তেমন কোনো বানান বা নামে ভুল চোখে পড়েনি। বইয়ের প্রোডাকশন ভালো হয়েছে। ইলাস্ট্রেশন ও প্রচ্ছদ সুন্দর।
বহু বছর ধরে মানুষ বিশ্বাস করে এসেছে যে চার মিনিটে দৌঁড়ে মানুষের পক্ষে কখনই চার মাইল পথ অতিক্রম করা সম্ভব না। বিশেষজ্ঞরা বলতেন, মানুষের ফুসফুসের গঠন আর পেশিই নাকি এই রেকর্ড সৃষ্টির পক্ষে প্রধান বাধা। তারপর ১৯৫৪ সালে রবার্ট ব্যানিস্টার ৩ মিনিট ৫৯ সেকেন্ডে দৌঁড়ে চার মাইল পথ পাড়ি দেন। তারপর পৃথিবীজুড়ে এই রেকর্ড ভাঙার হিড়িক পরে যায়। বিশ্বাসের কারণে নতুন কিছু সৃষ্টি করা মানবজাতির ইতিহাসে নতুন কিছু না। মানুষের বিশ্বাস এবং সে বিশ্বাস থেকে কিছু হাসিল হওয়া প্রাচীন এক গল্প।
আখতারুজ্জামানের ডায়াবেটিসের অবস্থা ভয়াবহ। কিন্তু তার অর্ধেক ডিব্বা কনডেন্সড মিল্ক আর ষোলোচামচ চিনি মেশানো চা খেতে খুব ভালো লাগে। মহামারী চলাকালীন লকডাউনের এক গভীর রাতে তিনি চা খুঁজে পাবেন, এ বিশ্বাসে বাড়ি থেকে বের হন। সে বিশ্বাস দুনিয়ার বুকে জন্ম দেয় এক মাইক্রোবাসের ড্রাইভারকে।
বইয়ের পরিধি বড় না। তাই আর বেশিকিছু লেখা গেলো না। বই নিয়ে বসেছি রাত আটটায়। শেষ হয়ে গিয়েছে দশটার দিকে। লাইনের পর লাইন লেখক যে কাহিনির জাল ছড়িয়েছেন, তা রেখে আমি উঠতে পারিনি।
লকডাউনের পিরিয়ড নিয়ে খুব সাধারণ এক পরিবারের সাধারণ প্লটের এক গল্প। কিন্তু এই সাধারণ প্লটটাই অসাধারণ হয়ে উঠেছে ওয়াসি আহমেদের অসাধারণ ���েখনী জাদুতে। কোভিডের সময়কার পরিস্থিতি এবং সেই সময়কার অনেক ইস্যু এসেছে গল্পের তাগিদে। পড়তে পড়তে হারিয়ে যাচ্ছিলাম সেই সময়গুলোতে। লেখকের কড়া হিউমারের জন্যই বোধ হয় গল্পটা অসাধারণ হয়ে উঠেছে। সেই সাথে নিজেও চরম লেভেলের চাখোর হওয়ার দরুণ বইটা পড়ে অন্য ধরনের মজা পেয়েছি।
আখতারুজ্জামান একটু চা খেতে চান। যেমন তেমন চা নয়! আধ কাপ কনডেন্সমিল্ক আর চার চামচ চিনি, সাথে মাত্র ছয় ফোটা চায়ের লিকার। কি অবাক হচ্ছেন? জ্বী,এ কথা শুনে আমিও চমকে গেছি। তো চা হাতে নিয়েই পড়তে শুরু করলাম "আখতারুজ্জামান একটু চা খেতে চান"। কিন্তু দুধ চা খাওয়া যে তার নিষেধ। সম্প্রতি স্ট্রোক করেছেন তিনি। বড় ছেলের কড়া নিষেধ তাকে যেন চা না দেয়া হয়। বাসার আশেপাশের সব দোকানেও এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বউ ছেলেদের যন্ত্রণায় শান্তি মতো চা খেতে পারেন না আখতারুজ্জামান। তাই লুকিয়ে লুকিয়ে মর্নিং ওয়াকের নাম করে চা খেতে যেতে হয় তাকে। তাও আবার বাসা থেকে বেশ দূরে। করোনা লকডাউনের কারণে তিনি কয়েকদিন হলো মন মতো চা খেতে পারছেন না। এই চায়ের নেশায় তিনি বেড়িয়ে পরেন রাতে। এক সাদা মাইক্রোবাসে থাকা আগন্তুক তাকে চা আপ্যায়ন করেন। আর এখান থেকেই মোড় নেয় গল্প।
বেশ ইন্টারেস্টিং লেগেছে বইটা। সাদামাটা প্লট দিয়ে গল্প এগোলেও শেষে রয়েছে বেশ চমক। অতিপ্রাকৃতিক রহস্য এবং কিছুটা পরাবাস্তবতার ছোঁয়া রয়েছে।
বইমেলায় প্রকাশ হওয়া এই বইটা এবারের মেলায় বেশ আলোচিত বই। চা নিয়ে নিজের অবর্ণণীয় ভালোবাসার কারনেই বইটা নিয়ে বেশ আগ্রহ ছিলো। আমার কাছে বইটা বেশ ভালো লেগেছে। একটানা শেষ করার মত একটা বই। যদিও বেশ কিছু জিনিস বেশ আজগুবি লেগেছে আবার বইটা ভালো লাগার পেছনে কারন ছিলো সেই আজগুবি জিনিসগুলোই। এন্ডিংটা কেন যেন মনমতো লাগেনি। ছোট্ট পরিসরে লেখা অতিপ্রাকৃত ঘরানার বইটা সব মিলিয়ে বেশ ভালো লেগেছে।
এবারের বইমেলায় বইটা চোখে পড়ে। তো এমন অদ্ভুত নামে খুব একটা আশ্চর্যও হইনি আবার ইন্টারেস্টিং ও লেগেছিল। ওয়াসি আহমেদের লেখা আমার ইতোপূর্বে পড়া না হলেও পাঠকপ্রিয় লেখক হিসেবে ওনাকে জানি এবং তিনিও সুপরিচিত।প্রথমত ভেবেছিলাম "রবীন্দ্রনাথ এখানে খেতে আসেননি"-র নামের মতন কোনো থ্রিলার হবে হয়তো। হয়তোবা আখতারুজ্জামান ইলিয়াসকে তুলে আনা হবে নাটকীয়ভাবে এই ভেবে কৌতুহল হচ্ছিল বই নিয়ে। অপরদিকে ক্লাসিকের বাইরে এবং সমসাময়িক লেখকদের বই এই বছর কম পড়বো বলে একধরনের পণ নিয়েছিলাম। কিন্তু ফেসবুক, গুডরিডসে ভালো সাড়া দেখার পর ভাবলাম রিডার্স ব্লকটাকে দেখি একটু বুড়ো আঙুল দেখানো যায় কিনা। সে থেকে এই বই হাতে নেয়া। বইয়ের অর্ধেক পর্যন্ত পড়ে মনে হচ্ছিল ক্লাস নাইন টেনের কিশোরদের জন্য বালখিল্যতায় ভরা একটা বই পড়ছি।লেখায় তথ্য, উইট কিংবা হিউমারের অভাব বোধ হচ্ছিলো এবং সবচেয়ে যেটা জরুরি সেই থ্রিলিং আবহটাই খুঁজে পাচ্ছিলাম না। লেখক একটা সময়কে ধরার চেষ্টা করেছেন। সেই সময়কার উল্লেখযোগ্য নানা ঘটনা বইয়ের প্রথমভাগে ঢুকিয়ে দিয়েছেন যেটা আমার কাছে কোনোমতেই সূচারু মনে হচ্ছিলো না। তবুও তাড়াতাড়ি পড়া হয়ে যাচ্ছে এবং সুপ্রসিদ্ধ রিডাররা এর রিভিউ দিয়েছেন এই ভেবে কন্টিনিউ করেছি।হ্যা সেটা ফলপ্রসু হয়েছে। শেষভাগটা আসলেই ১৮০° টার্ন নিয়েছে। লেখকের লেখার আসল স্বরুপটা বোধহয় শেষভাগটাতে প্রকাশ পেয়েছে। সে জায়গা থেকে বইয়ের প্রথম ভাগটাকে আমার এক্সটেনশন মনে হয়েছে। সব মিলিয়ে এই যাত্রা ভালোই ছিল। আমার মনে হয় লেখক উতরে গেছে। হ্যাপি রিডিং। আসল রেটিং: ৬.৫/১০
কাপে পরিবেশন করা চা খেতে ভালোবাসি,বইয়ের পাতায় পরিবেশিত চা নিয়ে দ্বিধায় ভুগি,কারন এই ঢংয়ের "দুধ চা" এর আগে খেয়ে বিশেষ সুবিধা করতে পারিনাই। কিন্তু এই বইয়ের পাতার চা নিয়ে আমি সন্তুষ্ট,সকালে বাসা থেকে বেরোবার আগে যে ছোটো এক কাপ কড়া পাতির দুধ চা খাই,ঠিক তেমন-ই।
গল্পের নাম ভূমিকায় আছেন বইয়ের টাইটেল এর ওই আখতারুজ্জামান-ই,আর কাহিনীটাও তাঁর চা খাওয়ার ব্যাকুলতা নিয়েই।মর্নিং ওয়াক এর নাম করে প্রতিদিন-ই ডায়াবেটিক আখতারুজ্জামান চুপি চুপি বাড়ির বাইরে থেকে চা খেয়ে আসছেন।এর মাঝে শুরু হয়ে গেলো মহামারী কোভিড।লকডাউনের করোনাবন্দী জীবনে আখতারুজ্জামান কঠিন মিষ্টি দেয়া একটু চায়ের জন্য আকুপাকু করছেন।এই প্রবল ব্যাকুলতার জন্যেই বোধহয় তিনি এক রাতে ভারি অদ্ভুত এক চা পিলানেওয়ালাকে শমন করে ফেললেন!!
ভাবা যায়?লকডাউনের সেই দিনগুলো পার করে এসেছি কয়েক বছর হয়ে গেছে?অদ্ভুত সেই সময়টিতে লেখক আবারো নিয়ে গেলেন।ওই যে ডালগোনা কফি বানানোর ট্রেন্ড,হরেক রকমের টিকটক দেখে হাসতে হাসতে গড়ানো,পরিবারের সকলের সাথে ২৪/৭ ঘন্টা কাটানো-ইত্যাদি ভালো স্মৃতি যেমন আছে,প্রতিদিন-ই পরিচিত কারো মৃত্যুর খবর,শ'য়ে শ'য়ে মানুষের কোভিড আক্রান্ত,কখন কি হয়ে যাওয়ার আতংকের মত বুক ভারী করা স্মৃতি ও তেমন অনেক।আর এসব অনুভূতির মিশেল বইয়ে খুব ভালোমতোই উঠে এসেছে।আর লেখকের ট্রেড মার্ক - নানা ইস্টার এগ,ভাই-ব্রাদাররাও বাদ যায়নি গল্প থেকে। শুরুতে কম পাতির চায়ের মতো হালকা থাকলেও,ক্রমেই যেন পাতি বাড়তে থাকে,আর গল্পখানা ডার্ক হয়ে যায়!
১০২ পৃষ্ঠায় শুরুর লাইনে তৌফিক তায়েফ হয়ে গেছে,আশা করি সংশোধন করে দেয়া হবে।
চা খেলুম,এবার মাগুর মাছের ঝোলের অপেক্ষায়।
(SPOILER TALK)
আখতারুজ্জামান একটু চা খেতে চাইতেন শুধু। শেষে যা হলো তাতে কিন্তু তাঁর এই ইচ্ছা পূরণে কোনো বাধা থাকলো না।
এইটারে কী জনরা বলা যায় আমার জানা নাই। কোনো এক জনরার বই হইতেই হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতাও নাই আসলে। তবে জনরা বললে বইটা কী টাইপ সেইটা এক-দুই শব্দে ডিফাইন করা যায়। এইটাকে অ্যাবসার্ড ঘরানার কিছু বলা যাইতে পারে।
যাইহোক, লেখকের লেখা চমৎকার মানে তরতর করে পড়ে যায়। ভারী কোনো বোলচাল নেই, সম্ভবত এ কারণেই লেখকের লেখা আমি আগ্রহ নিয়ে পড়ি। তবে এ বইটা পড়ে হতাশ হইছি। লাস্টেরটুকু ছাড়া পুরো বই অনুমেয় ভাবেই আগাইছে (যদিও তাতে কোনো সমস্যা নাই), কিন্তু লাস্টের টুইস্টটা আরোপিত একটা ব্যাপার লাগছে। মানে কেন সেইটা হইছে তার কোনো ব্যাখ্যা তো নাই-ই, কানেকশনও নাই। এইটা না দিলে বইটা বড় বেশি সাদামাটা হয়ে যাইতো বলে দেয়া, এরকম মনে হইছে। আর জাদুবাস্তবতা, অতিপ্রাকৃত ব্যাপার উঠে আসলেও এ বইতে সেটা যেভাবে দেয়া হয়েছে তার চাইতে ভালো এক্সিকিউশন লেখকের কাছ থেকে আমি আগে পাইছি (রেফারেন্সঃ ‘যে বাক্য অশ্রুত অন্ধকার’ গল্প সংকলনের ‘কাআ তরুবর পাঞ্চ বি ডাল’), সুতরাং নাথিং এক্সেপশনাল। ফাইনালি যে বিষয়টা না বললেই না, এই যে অন্য লেখকের উপস্থিতি, এই জিনিসটা বাদ দেয়া যায় না? বড্ড বেশি আরোপিত লাগে। মানে এদের উপস্থিতি না থাকলেও কিছু যায় আসে না, মনে হয় হুদাই জোর করে দেওয়া হয়েছে।
বেশ ভালো। পড়ে চিন্তা ভাবনা করার, বিভিন্ন ভাবে ব্যাখ্যা করার ব্যাপার আছে। চা কে ঘিরে নেশা, মৃত্যু, লোভ, মহামারী, সিদ্ধান্ত, সময়, গতি আর মানুষের গল্প। অন্য লেখকদের অদরকারি চরিত্র বানিয়ে গল্পের মধ্যে ঢুকিয়ে ফেলার ব্যাপারটা ক্লিশে লেগেছে।