মৌষলকাল - সমরেশ মজুমদার ১৯৭০-এর নকশাল রাজনীতিতে অনিমেষের জড়িয়ে পড়া এবং পুলিশি অত্যাচারে পঙ্গু হয়ে যাওয়ার কাহিনী তুমুল এক ইতিহাসের কথাই বলে। সমরেশ মজুমদার এই চরিত্রটিকে নিয়ে তিনটি বিখ্যাত উপন্যাস রচনা করেছেন, উত্তরাধিকার, কালবেলা ও কালপুরুষ, যা ধারণ করে আছে পশ্চিমবঙ্গের অনতি-অতীতকালে রাজনৈতিক-সামাজিক সময়প্রবাহ। অনিমেষের বান্ধবী হিসেবে সময়ের সঙ্গে যুঝেছে মাধবীলতা। বাংলা কথাসাহিত্যে মাধবীলতা-অনিমেষ জুটি সমরেশ মজুমদারের অনবদ্য সৃষ্টি। সময়ের ফসল হিসেবে এসেছে তাদের সন্তান অর্ক। বড় হয়ে অর্কও দুঃখী মানুষদের নিয়ে সাধ্যমতো স্বপ্নপ্রয়াসে জড়িয়ে পড়েছে এবং ব্যর্থ হয়েছে যথারীতি। সর্বত্রই ক্ষমতালোভী রাজনৈতিক দল হিংস্র থাবা নিয়ে তৈরি। প্রায় তিন দশক সময় অতিক্রম করে সমরেশ মজুমদার লিখেছেন অনিমেষ-মাধবীলতা-অর্কের নতুন কাহিনী ‘মৌষলকাল’। এই উপন্যাসের আধার পশ্চিমবঙ্গের এক উত্তাল সময়। রাজনৈতিক পালাবদলের সেই ইতিহাসের নানান বাঁকে উপস্থিত মাঝবয়সি অর্ক। স্বভাব-প্রতিবাদে, আবেগে, অস্পষ্ট ভালবাসায় অর্ক যেন এক অবাধ্য স্বর। মৌষল পর্বের পারস্পরিক অবিশ্বাসের দিনকালেও প্রৌঢ় অনিমেষ-মাধবীলতা ঝলসে ওঠে আর একবার। কেউ বিপ্লব-বিশ্বাস, কেউ-বা জীবন-বিশ্বাসে অটুট। কাহিনী নির্মাণের জাদুরক সমরেশ মজুমদারের অনবদ্য সৃষ্টি মৌষলকাল।
Samaresh Majumdar (Bangla: সমরেশ মজুমদার) was a well-known Bengali writer. He spent his childhood years in the tea gardens of Duars, Jalpaiguri, West Bengal, India. He was a student of the Jalpaiguri Zilla School, Jalpaiguri. He completed his bachelors in Bengali from Scottish Church College, Kolkata. His first story appeared in "Desh" in 1967. "Dour" was his first novel, which was published in "Desh" in 1976. Author of novels, short stories and travelogues, Samaresh received the Indian government's coveted Sahitya Akademi award for the second book of the Animesh series, 'Kalbela".
সমরেশ মজুমদার-এর জন্ম ১০ মার্চ ১৯৪৪। শৈশব কেটেছে ডুয়ার্সের চা-বাগানে। জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলের ছাত্র। কলকাতায় আসেন ১৯৬০-এ। শিক্ষা: স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বাংলায় অনার্স, পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম.এ। প্রথমে গ্রুপ থিয়েটার করতেন। তারপর নাটক লিখতে গিয়ে গল্প লেখা। প্রথম গল্প ‘দেশ’ পত্রিকায়, ১৯৬৭ সালে। প্রথম উপন্যাস ‘দৌড়’, ১৯৭৫-এ ‘দেশ’ পত্রিকায়। গ্রন্থ: দৌড়, এই আমি রেণু, উত্তরাধিকার, বন্দীনিবাস, বড় পাপ হে, উজান গঙ্গা, বাসভূমি, লক্ষ্মীর পাঁচালি, উনিশ বিশ, সওয়ার, কালবেলা, কালপুরুষ এবং আরও অনেক। সম্মান: ১৯৮২ সালের আনন্দ পুরস্কার তাঁর যোগ্যতার স্বীকৃতি। এ ছাড়া ‘দৌড়’ চলচ্চিত্রের কাহিনিকার হিসাবে বি এফ জে এ, দিশারী এবং চলচ্চিত্র প্রসার সমিতির পুরস্কার। ১৯৮৪ সালে ‘কালবেলা’ উপন্যাসের জন্য পেয়েছেন সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার।
বলতে গেলে বেশ সাচ্ছন্দেই পড়েছি বইটা। তবে মৌষলকাল লেখা না হলে মনে হয় আমার মত পাঠকের কোন ক্ষতি হত না। একান্তই আমার ব্যক্তিগত মতামত। আপনাদের ভাল লাগতেও পারে।
মৌষলকাল মোটামুটি বাম জমানার শেষের দিক এবং তৃনমূল কংগ্রেস জমানার প্রথম দিকের সময়ের উপন্যাস। অর্ক চাকরী করে,সদ্য চল্লিশ তার বয়স। স্ত্রীর সঙ্গে বনিবনা হয়নি,ও বাপের বাড়িতে। ডিভোর্স হয়নি। অর্কের সঙ্গে বস্তির একটু ভদ্রস্থ বাড়িতেই থাকে সত্তর ছুঁই ছুঁই অনিমেষ এবং রিটায়ার্ড মাধবীলতা। উপন্যাসের শুরুতেই বামফ্রন্ট তথা সি পি আই(এম) এর মুখোস দেখা যাচ্ছে সুরেন মাইতির মতো তোলাবাজদের দাদাগিরিতে। অর্ক বা অনিমেষ রাজনীতির মধ্যে নেই। অবশ্য অনিমেষ সব অনুধাবন করে নিজের মতো করে। মাধবীলতা এখনও একই রকম। সারাক্ষন আগলে রেখেছে দুই অতৃপ্ত মানুষকে। মাধবীলতারা কেন একই থাকে? এটা মনে হয় ভারতীয় সংস্কৃতি।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের উপন্যাস। সমকালিন বলে বিতর্ক আছে। চারিদিকে সিন্ডিকেট থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে চলছে অসম্ভব লুঠতরাজ ও অত্যাচার। সবই একজনের ভাবমূর্তি ভাঙ্গিয়ে। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছেন তাঁর দলের নেতা নেত্রীদের কীর্তিকলাপ। তাঁর কি কিছুই করার নেই? উপন্যাসের শেষাংশে আছে,কোটি কোটি মানুষকে স্বপ্ন দেখানো দিদি যেন মহাভারতের মুষলপর্বের শ্রীকৃষ্ণ।
মৌষলকাল (সমরেশ মজুমদার, প্রকাশঃ ২০১৩) পড়লাম। বলা ভাল গিললাম দুদিনে। উত্তরাধিকার, কালবেলা, কালপুরুষের পরবর্তী খন্ড। অনিমেষ মাধবীলতা যেভাবে বাঙালির জীবন ছুঁয়ে আছে, বইটা হাতে পেতেই তাই আর তর সইনি। আর অবশ্যই লেখকের সেই গুণটা আছে যে একবার ধরলে শেষ না করে থামা যায় না। অতএব… কিন্তু বইটা পড়ে মন ভরল না। বারবার মনে হচ্ছিল, গাঁজা খেয়ে লিখেছেন কিনা! এত জঘন্য রকমের গন্ডগোল যে গোগ্রাসে গেলার সময়ও চোখ এড়িয়ে যায় না! কেন জানি না মনে হচ্ছিল সমরেশবাবু বইটা লেখার পর নিজে একবারও পড়ে দেখেননি। কোথাও অনিমেষ এর নাম হয়ে গেছে অর্জুন! কোথাও বলছেন বাহান্ন বছর পর জলপাইগুড়ি গেছে অনিমেষ, আবার কোথাও তিরিশ বছর! বাহান্ন বছরটা কোন ভাবেই হিসেবে মেলে না! একই লোক বার বার নিজের ফোন নাম্বার দিচ্ছে অনিমেষকে (যদিও কোথাও নাম্বার হারিয়ে ফেলার কথা নেই!)। চল্লিশ বছরের অর্ককে প্রথমে বলা হল সেপারেটেড, এবং বঊ ডিভোর্স দিচ্ছে না বলে অর্কও চাইছে না। অথচ শেষের দিকে অর্ক বার বার বলেছে সে অবিবাহিত, যদিও অর্ক চরিত্রটি মিথ্যা বলার প্রয়োজন না হলে মিথ্যা বলে না। অথবা এই মিথ্যা বলার কোন কারণ লেখক দেখিয়ে রাখলে পারতেন। এই সব ভুলগুলো দুয়েকবার রিভিশন দিলেই ধরা পড়ত… গল্পের সময়কাল মোটামুটি ২০০৬/০৭ থেকে ২০১৩। সময়ের দিকে চোখ বোলালেই বোঝা যেবে তখন সিঙ্গুর কান্ড, নন্দীগ্রাম কান্ড ঘটছে, পালাবদল ঘটছে। বিষয়বস্তুও সেটাই। অথচ গোটা বইতে একবার মাত্র সিঙ্গুর শব্দটা এসেছে, তাও নন্দীগ্রামের সূত্র ধরে। এমন ভাবে উনি লিখেছেন যেন নন্দীগ্রাম প্রথম, এবং মমতা ব্যানার্জী ও তৃণমূলের উত্থান শুধুমাত্র নন্দীগ্রাম এর আন্দোলনের সময়েই হয়েছে! নন্দীগ্রাম পরবর্তী সময়ের থেকে এমন ফাস্ট ফরওয়ার্ড মেরেছেন যে ২০০৯ এর লোকসভা ভোটে বামেদের হার বেমালুম ভুলে গেছেন! যেন নন্দীগ্রামের পরেই ২০১১ –র ভোট হয়েছে ও তৃণমূল ক্ষমতায় এসেছে। এবং পরবর্তী দুবছরের কার্যকলাপে নীচের তলার তিনু নেতাদের উপর ক্ষোভ দেখালেও মমতা ব্যানার্জীর উপর অগাধ আস্থা দেখিয়েছেন! অবশ্য এই ব্যাপারটিতে লেখককে দোষ দেওয়া যায় না – আমাদের মতোন দু’চারজন অর্বাচীন ছাড়া মমতা ব্যানার্জীর উপর আস্থা ২০১৩ অব্দি অনেকেই দেখিয়েছেন – এমনকি এখনও দেখিয়ে চলেছেন! বাম ফ্রণ্টের ক্ষয়, সেই সময়ের সমস্ত নেতাদের দম্ভ, উপর তলা থেকে নীচের তলা অব্দি অনাচার, পুলিশের দলদাসত্ব এই সব উঠে এসেছে ঠিকঠাক। এ বিষয়ে কিছু বলার নেই। তবে যেভাবে মাও সংযোগ ও নন্দীগ্রাম আন্দোলনের কথা লিখেছেন স্পষ্টতই বোঝা যায় যে এই আন্দোলন তিনি খুব দূর থেকে দেখেছেন। কালবেলা উপন্যাসে যে ভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলেন সেই সময়ের নক্সাল রাজনীতি তার ধারে কাছেও আসে না মৌষলকালের মাও বা তৃণমূল রাজনীতির ঘটনা। পালাবদলের সময়ের এই রাজনীতি আরেকটু গভীরে ছুঁতে পারলে ভাল হত! অন্তত অর্ককে যখন তৃণমূলে ভেড়ালেনই তখন আরেকটু ভিতরে ঢুকতেই পারতেন! আমরা যারা এই সময়ের মানুষ তারা সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম-পালাবদল মোটামুটি জানি, কিন্তু কালবেলা যেমন সত্তরের দশক আমাদের কাছে তুলে ধরেছিল মৌষলকাল সে ভাবে আগামী প্রজন্মের কাছে এই পালাবদলের ঘটনা তুলে ধরতে পারবে না! তাই কালবেলার মত কালোত্তীর্ণ বই এটি হয়ে উঠবে না। শেষটা করতে চেয়েছেন সিক্যুয়েলের কথা ভেবে কিনা জানি না, কিন্তু যিনি বারবার বলছেন ২০১৩ তে এসে মানুষের মানসিকতার বদল হয়েছে বা হওয়া উচিত – ‘দুজন পুর্ণ বয়স্ক পুরুষ ও নারী বন্ধু হতেই পারে’ এবং অর্ক-কুন্তী নিজেরাই নিজেদের বন্ধু বলে এসেছে সেখানে শেষ করার সময় ‘কুন্তী মাধবীলতা হতে পারবে কি?’ বলার কি কোন যুক্তি থাকে!! লেখক জানেন তাঁর মাধবীলতা-অনিমেষ গাথা বাঙালিদের হৃদয়ে চিরস্থায়ী যায়গা করে নিয়েছে তাই এই ছোঁয়াটা দিতে চাইলেন, অথচ অর্ক ও কুন্তীর মধ্যে সেরকম কিছু ব্যাপার এই বইয়ে অন্তত গড়েই ওঠেনি! বইয়ের রিভিউ লেখার অভ্যেস কোনদিনই নেই, এটা কোনও ভাবে রিভিউ বলাও সঙ্গত হবে না। তবু, অনিমেষ-মাধবীলতা-অর্ক প্রেমীদের জন্যে লিখলাম... আর কোন কুন্তীর যদি এই লেখা ভাল লেগে যায় সেটা তো উপরি পাওনা...
পুনশ্চঃ বইটা কি তা হলে পড়বেন না? অবশ্যই পড়বেন – তবে পড়ে যদি মনে হয় সময় নষ্ট হল তাহলে আমাকে গালি দেবেন না!
ঠিক জমলো না! কেন? তা কে জানে? আমি উত্তরাধিকার,কালবেলা, কালপুরুষ পড়েছি সম্ভবত ক্লাস নাইন টেনে। কিন্তু সিরিজটা ভালো লাগায় উপন্যাসের খুঁটিনাটি চরিত্রের বৈশিষ্ট্য সবই এতদিন বাদেও মনে জ্বলজ্বল করে। এত বছর পর যখন আরেকটা খণ্ড বের হলো, বলা বাহুল্য অনেক উত্তেজনা নিয়ে পড়তে বসেছিলাম কিন্তু তার প্রায় সবটাই মাঠে মারা গিয়েছে। একমাত্র মাধবীলতা ছাড়া পুরনো আর সবাই কেমন যেন বদলে গিয়েছে।অনিমেষকে সেই আগের অনির সাথে মিলাতে গিয়ে বারে বারে হোঁচট খেয়ে থমকে গিয়েছি সেই সাথে যে ১৫-১৬ বছরের অর্ককে কালপুরুষে ফেলে রেখে এসেছিলাম তাকে এতো বছর পর চল্লিশ ছুঁই ছুঁই অবস্থায় দেখে তার ভাবনা চিন্তার আমূল পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা দৌড়ানো আমার জন্য কঠিন ছিল।উপন্যাসের ফাঁকে ফাঁকে চোখে ধরা পরেছে অসংখ্য লুপহোলস! বলতে গেলে আমি যে সমরেশ মজুমদারের লেখা পড়ে বড় হয়েছি এই বইটাতে তার লেখার সম্পূর্ণ অন্য অপরিচিত ধারা দেখে কেমন জানি লেগেছে।কিন্তু সমাপ্তিটা ভালো ছিল।আমি আশা করবো এই উপসংহারটাই অনিমেষ,মাধবীলতা বা অর্কড় যেন নতুন কোন শুরু না হয়।
প্রিয় বইয়ের তালিকা করতে গেলে অনিমেষ সিরিজ নিঃসন্দেহে প্রথম দিকেই থাকবে। সমরেশ মজুমদারও আমার অত্যন্ত প্রিয় একজন লেখক। কিন্তু মৌষলকাল পড়ার পরে অনেকটা হতাশই হয়েছি। কালপুরুষের ত্রিশ বছর পরে এসে সেই স্বর্গছেড়া, জলপাইগুড়ি আর ঈশ্বরপুরলেনের বস্তি আগের মতই পাবো এটাও আশা করিনি। কিন্তু লেখক সারাজীবন বিপ্লবের স্বপ্ন দেখা অনিমেষকে যেভাবে নির্বিকার করে দিয়েছেন, কমিউন তৈরীর স্বপ্ন দেখা অর্ককে যেভাবে সমাজ বিমুখ করে দিয়েছেন এটা কোনভাবেই মানতে পারছি না। লেখক মূলত ২০০৬ থেকে ২০১৩ এর সময়কালের কথা উল্লেখ্য করেছেন। সে সময়ে সিঙ্গুর কান্ড, নন্দীগ্রামের আন্দোলন সাথে সরকার বদলের চিত্র তুলে এনেছেন। কিন্তু বারবারই মনে হয়েছে সে এসব খানিকটা দূর থেকেই দেখেছেন। নকশাল আন্দোলনের মত করে গুছিয়ে আনতে পারেননি। আমি রাজনীতির ব্যাপারে অনেকটাই অজ্ঞ। কিন্তু কোন রাজনৈতিক মতাদর্শহীন তৃণমূলের পাতি নেতাদের উপর ক্ষোভ থাকলেও মমতা ব্যানার্জীর উপর গল্পের শেষাংশে তিনি অধাগ আস্থা দেখিয়েছেন বলে মনে হয়েছে। সেটা কেন বুঝতে পারিনি। শেষে মাধবীলতার কথায় মনে হয়েছে সমরেশবাবু অনিমেষ সিরিজের আরও সিকুয়্যল লিখবেন। লিখলে আশা করছি নতুন কিছু পাবো। সাতকাহনের দ্বিতীয় খন্ড পড়েও হতাশ হয়েছিলাম। মুষলকালে কৃষ্ণের মত অনিমেষ সিরিজের ভরাডুবি দেখেও আশাহত হয়েছি। বলতে বাধ্য হচ্ছি 'মৌষলকাল'কে কালবেলা-কালপুরুষের যোগ্য 'উত্তরাধিকার' করে তুলতে পারেননি লেখক। :(
“মহাভারতের কৃষ্ণ মুষলপর্বে অসহায় চোখে যদুবংশ ধ্বংস হতে দেখেছিলেন। এটা ইতিহাস নয়,কাব্যকথায় যদিও বলা হয়ে থাকে,যা নেই মহাভারতে তা ভারতে নেই। তাই ইতিহাসে না থাকলেও ইতিহাস হয়ে গেছে মহাভারতের অনেক ঘটনা। সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটবে কি না তা আগামীকাল বলতে পারবে। ”- মৌষলকাল উপন্যাসের শেষ অংশ এটি। অনেকেই এই উপন্যাসটি পড়ার পর মনে করেছেন সিরিজটি হয়ত শেষ হয় নি। কিন্তু বাস্তবিক অবস্থা বিবেচনায় এই সিরিজটির পরবর্তী কিস্তি বের হওয়ার সম্ভাবনা কম, কিভাবে? সেটা আলোচনার একদম শেষে বলছি।
সমরেশ মজুমদারের টেট্রালজি বা চতুষ্কের সর্বশেষ কিস্তি ‘‘মৌষলকাল’’। মৌষলকালের অর্থ বা এমন নামকরণের কারণ লেখক উপন্যাসটিতেই উল্লেখ করেছেন, তারপরও পাঠক সুবিধার্থে সহজ ভাবে বললে- মৌষল হল মহাভারতের একটি অংশবিশেষ। উপন্যাসের নামকরণ হয়েছে রুপক অর্থ।
৭০ এর দশক ও সেই থেকে বর্তমান পর্যন্ত সময়ের সাথে লেখক কুরুক্ষেত্র পরবর্তি অংশের রুপক সাদৃশ্য বিবেচনায় এই উপন্যাসের নাম দিয়েছেন 'মৌষলকাল'।
এই সিরিজটি সম্পূর্ণটাই রাজনৈতিক পালাবদল নিয়ে রচিত হয়েছে। উত্তরাধিকারে লেখক দেখিয়েছেন স্বাধীনতা পরবর্তী কংগ্রেস শাসন। পরবর্তীতে কালবেলায় তুলে ধরেছেন কংগ্রেসের প্রতি অন্যান্য দকের অনাস্থা, বামপন্থী দলের বিরোধিতা ও নকশাল আন্দোলন। তৃতীয় কিস্তি কালপুরুষে চিত্রায়িত হয়েছে সিএমপির ক্ষমতা দখল ও নিজেদের সমাজতান্ত্রিক নীতি ভুলে পুঁজিবাদ রাজনীতির চর্চা। টেট্রালজির শেষ খন্ড অর্থাৎ মৌষলকালে সমরেশ মজুমদার দেখিয়েছেন সিএমপির পতন ও তৃনমূল কংগ্রেসের উত্থান। অনেকেই বলেছেন “মৌষলকাল- কালবেলা, কালপুরুষের যোগ্য উত্তরাধিকার নয়”। ব্যাপারটিকি আসলেই তাই!
শুরু থেকেই নায়কের ভূমিকা পালন করা স্বর্গছেড়ার সেই ছোট্ট বালক অনি প্রৌঢ় হয়েছে। তার ছেলে অর্ক রীতিমতো যুবক বয়সের শেষার্ধে। অর্কর চিরিত্রে আগেকার খণ্ডের প্রধান চরিত্রগুলোর ছায়া প্রতিফলিত হলেও সে তার নিজ ব্যক্তিত্ব, চিন্তা, স্বপ্ন, সমাজ পরিবর্তনের ইচ্ছা এই বৈশিষ্ট্য গুলো উপন্যাসটিকে আলোকিত করেছে।
সাধারণ মানুষকে স্বপ্ন দেখানো মমতা ব্যানার্জীর তৃণমূল কংগ্রেস দলটি বিধানসভায় নির্বাচিত হয়, কিন্তু আগের সেই অসাধু চক্র থেকে বের হতে পারে না পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি। মানুষের কল্যানের জন্য আবারও রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে অর্ক, কিন্তু সেই রাজনীতি তাকে গ্রহণ না করে উগড়ে ফেলে দেয় সেই ভাগাড়ে, যেখান্র একসময় তার বাবা ছিলেন, সে নিজেও ছিলো। কিন্তু এবার বাবা ছেলে দুইজনই সেই আস্তাকুড়ের বাসিন্দা! অসহায় ভাবে অনিমেষের পথের পানে চেয়ে থাকে মাধবীলতা- যে পঁয়তাল্লিশ বছরেও মানুষটিকে চিনতে পারলো না। অপরদিকে কুন্তি থাকে অর্কের প্রতীক্ষায়! যেই মাওবাদীকে অস্বীকার করেছিলো তৃণমূল নেত্রী, সেই মাওবাদীদের প্রশ্রয় দেওয়ার অপরাধেই গ্রেফতার হতে হয় তাদের! এমন প্রহসনই তো চলছে বিশ্ব রাজনীতিতে। তাই উপন্যাসের শেষাংশে সমরেশ বলেছেন-
“কোটি কোটি মানুষকে স্বপ্ন দেখানো দিদি যেন মহাভারতের মুষলপর্বের শ্রীকৃষ্ণ”।
উপন্যাসটিকে সময় অনুযায়ী পড়লে পাঠক হতাশ হওয়ার কথা নয়। অনেক পাঠকই কালবেলা'র মতো একশন চান, বিপ্লব চান। কিন্তু বাস্তবিতা কি বলে! ১৯৪৭ পরবর্তী রাজনীতি বা ১৯৭০ সালের নকশাল আন্দোলন কি ২০০৮ এ সম্ভব? মোবাইল ফোন কানে নিয়ে স্টেনগান হাতে কোনো বিপ্লবী দৌড়াচ্ছে- এগুলো সিনেমায় হয়ত সম্ভব। কিন্তু বাস্তব সময়কে তুলে ধরতে গেলে অবশ্যই বাস্তবতার নিরিখেই গল্পটি সাজাতে হয়- যা সমরেশ মজুমদার পেরেছেন বলেই মনে করি আমি। পাঠক বর্তমান সময়কার প্রেক্ষাপট কল্পনায় রেখে বইটি পড়লে আশাহত হবেন না বলেই আমার বিশ্বাস। এবার বলি, কেনো আমার মনে হয়েছে যে এই টেট্রালজির পরবর্তী খণ্ড বের হবে না।
আমার দৃষ্টিতে লেখক রাজনৈতিক অস্থিরতা ও পালাবদল নিয়েই এই সিরিজটিতে কাজ করেছেন। সেক্ষেত্রে প্রথমে কংগ্রেস শাসন, বামপন্থী আন্দোলন ও নকশাল আন্দোলন, সিএমপি শাসন, সিএমপি বিরোধী আন্দোলন ও তৃনমূল কংগ্রেসের ক্ষমতা দখল পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির প্রতিটা বাঁক তুলে ধরেছেন। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট মাথায় রেখে এটা পরিষ্কার ভাবেই বলা চলে তৃণমূল কংগ্রেস বিরোধী আন্দোলনের সম্ভাবনা বা শূন্যের কোঠায়। তবে যদি লেখক তৃণমূলের শাসন ব্যবস্থা দেখাতে চান, তাহলে হয়ত আরেকটি খণ্ড আসতেও পারে, তবে আমি তেমন কোনো সম্ভাবনা দেখছি না।
সমরেশ টেট্রালজিটি আপনাকে রাজনৈতিক চাল বুঝতে শিখাবে, আবেগী রাজনীতির ফলাফল দেখাবে, সর্বোপরি আপনাকে খুব ভালো সঙ্গ দিয়ে যাবে।
মুগ্ধতা মুগ্ধতায় শেষ করে ফেললাম অনিমেষ সিরিজের ৪ নম্বর ও সর্বশেষ বই মৌষলকাল-ও! (১ ও ২ পড়ি নাই :p ) প্রথম তিনটি উপন্যাস-- উত্তরাধিকার, কালবেলা এবং কালপুরুষ ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৯ সালের মধ্যে প্রকাশিত হলেও মৌষলকাল প্রকাশিত হয় ২০১৩ সালে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস দীর্ঘদিনের সিপিএমকে সরিয়ে ক্ষমতায় আসার প্রেক্ষিতে লেখক এই বইটি লেখেন। যদিও তাঁর নাম নেই বইতে কোথাও, 'নেত্রী' বলেই লিখেছেন সবখানে।
রাজনীতির আশ্চর্য রূপ দেখলাম বইটাতে। যারা রাজনীতি নিয়ে আগ্রহী, অনাগ্রহী, রাজনীতি করতে চান বা করেন, সবারই মনে হয় বইটা একবার পড়ে নেয়া উচিত। রাজনীতি করে কি সৎ থাকা যায় না? অথবা সৎ রাজনীতি করে কি টিকে থাকা যায় না? বার বার মনে হচ্ছিলো, 'সৎ রাজনীতিবিদ'- এই phrase টা কি একটা oxymoron?
পরিশেষে, সমরেশ মজ��মদারের লেখাকে নতুন করে আবিষ্কার করছি। আমার কোন প্রিয় লেখক নেই, প্রিয় বই আছে। এই ব্যাপারটাকে কি একটা second thought দিতে হবে? দেখি, লেখকের আরো কয়েকটা বই পড়ে নেই :p
২.৫ এর বেশী দেয়াই যাচ্ছেনা, এতোই বিরক্তিকর একটা বই! হয়তো অনিমেষ সিরিজ না হলে এতো বিরক্ত লাগতো না! এই বই পড়ার সময় বারবারই আগেরগুলোর সাথে তুলনা চলে আসছিলো। এটা না লিখলেও চলতো!!
যতটা মন্দ লাগবে ভেবেছিলাম ততটা লাগেনি। মনে হলো যেন বইয়ে সমরেশবাবু পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক অবস্থা লিপিবদ্ধ করতেই চেয়েছেন, অনিমেষ অর্কর উপন্যাস লিখতে চাননি।
বইটা পড়ে প্রতিক্রিয়া কী, এই প্রশ্নের জবাবে একটা কথাই আমার মাথায় আসছে; আমি প্রচন্ডভাবে হতাশ।
অনিমেষ সিরিজের তৃতীয় বই ‘কালপুরুষ’ প্রকাশের প্রায় তিরিশ বছর পর লেখক লিখেছেন এই চতুর্থ বইটা, ঘটনাও সেইসময় থেকে পঁচিশ বছর পরের। ফলে সেইদিনের অর্ক, পনের বছরে যে স্বপ্ন দেখত কমিউন প্রতিষ্ঠার সে আজকে প্রায় সামাজিকতাবিমুখ চল্লিশ বছরের এক মানুষ। যে অনিমেষ দেশ বদলানোর স্বপ্নে নকশাল আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল সেও যেন মেনে নিয়েছে দেশের স্থবির অবস্থা।
অনিমেষ, মাধবীলতা আর অর্ক তিনটা চরিত্রই আমার খুব পছন্দের, তাদেরকে এইরকম নিষ্প্রভ হয়ে যেতে দেখে একদম ভালো লাগে নাই। অবশ্য এইটাই হয়ত বাস্তবতা, বছরের পর বছর কোনো পরিবর্তনহীন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে থাকলে মানুষ হয়ত স্বপ্ন দেখাও ছেড়ে দেয়। কিন্তু পছন্দের চরিত্রগুলোর এমন পরিবর্তন কিছুতেই মন থেকে মানতে পারছিলাম না। তাছাড়া বইটায় বেশ কিছু তথ্যগত ত্রুটি চোখে লেগেছে। যেমন ধরা যাক অনিমেষের পিসেমশাইয়ের নাম ‘উত্তরাধিকারে’ বলা হয়েছিল শচীন, এইটায় এসে কোন জাদুবলে সেই নাম হয়ে গেল দেবেশ। আবার আরেক যায়গায় বলা হলো দাদু, বাবা কিংবা পিসিমার শেষযাত্রায় অনিমেষ ছিল না। আগের বইগুলোর কথা যতদূর মনে পড়ে আমার দাদুর মুখাগ্নির জন্য জেলে থাকা অবস্থাতেই অনি শ্মশানে যেতে পেরেছিল, বাবা যখন মারা যায় তখনও সে ছিল জলপাইগুড়িতেই!
এতকিছুর পরেও বইটার যে জিনিসটা ভালো লেগেছে সেইটা হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডারদের দাপট (যেটা সম্ভবত পুরো উপমহাদেশেই এক) সেইটাকে লেখক সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। কালপুরুষের শেষে লেখক যেখানে আশা রেখেছিলেন পরিবর্তন আসবেই, সূর্যকে আটকে রাখার ক্ষমতা কারও নাই সেও যেন পরিবর্তনহীন অবস্থায় বেঁচে থাকতে থাকতে হতাশ, মুষলপর্বে কৃষ্ণ যেমন অসহায়ভাবে তাকিয়ে যদু বংশের ধ্বংস দেখেছিল সেইভাবে তাকিয়ে থেকে দেখে যাওয়া ছাড়া আর যেন কিছুই করার নাই সাধারণ মানুষের।
প্রফুল্ল রায়ের 'কেয়াপাতার নৌকা' পড়ার পর খুব ভাল লাগার কারনে সিরিজের পরের বই 'শতধারায় বয়ে যায়' মোটামুটি নাক কান বুজে পড়ে ফেলি। কিন্তু তুলনামূলকভাবে সেরকম ভাল লাগেনি। সেইম কাহিনী এই অনিমেষ সিরিজে।ক উত্তরাধিকার যথেষ্ট ভাল লেগেছিলো, কালবেলা তো অনবদ্য, কালপূরুষ পড়ার সময় এক্সপেকটেশন বেশি থাকায় হয়তো সঠিক মূল্যায়ন করতে পারিনি। কিন্তু মৌষলকাল পড়ে আরো অনেকের মতো আমারও মনে হয়েছে অনিমেষ সিরিজ কালপুরুষ এ শেষ হলেই হয়তো ভাল হতো। কিশোর অর্কের জেলে যাওয়ার ঘটনার মাধ্যমে শেষ হওয়া কালপুরুষের পরে মৌষলকালে অর্ককে পরিচয় করায় বছর চল্লিশের এক প্রৌঢ় এর চরিত্রে! মানে মাঝখানের এতগুলো বছর হাওয়া? মৌষলকাল হাতেই নিয়েছিলাম অর্কর জীবনের পরবর্তী ইতিহাস জানার জন্য। কিন্তু লেখক ভারতের 'মৌষলকাল' এর বর্ণনা দিয়েই উপন্যাসের ইতি টেনেছেন যা খুবই হতাশাজনক।
একটা উপন্যাস সিরিজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত টানটান উত্তেজনা আর টুইস্টে ধরে রাখা যায় তা "মৌষলকাল " না পড়লে বুঝতাম না।অনিমেষ সিরিজের প্রতিটা পার্ট আলাদা করে যেভাবে লেখক ফিনিশিং টেনেছেন সত্যিই তা বিরল।অন্তত আমি এর আগে পড়িনি।কিংবা কোন লেখক পারছেন কিনা সন্দেহ। পড়তে পড়তে কখন যে চোখের কোনে জল গড়িয়েছে, থ্রিলে পরের টুকু শেষ করার যে তীব্র আকাঙ্খা তার রেশ বহুদিন থেকে যাবে। এক কথা অনাবদ্ধ। ৫/৫
সমরেশ মজুমদারের নব্বই দশক ও একবিংশ শতাব্দীর ছুঁইছুঁই অংশের রাজনৈতিক আবহাওয়ার আদলে বর্ণিত উপন্যাস 'মৌষলকাল'।
মূল গল্পে, নকশাল রাজনীতি করা মধ্যবয়স পেরোনো অনিমেষ, স্ত্রী মাধবীলতা এবং একমাত্র ছেলে অর্ককে নিয়ে সামাজিক ঘরনার উপন্যাস 'মৌষলকাল'। মূলত এটি সমরেশে মজুমদারের অনিমেষ-মাধবীলতা ও অর্ক সিরিজের শেষ বই। রাজনীতির উত্থান পতনের গল্পই বয়ে কয়ে এবং একসময়কার রাজনৈতিক প্রভাব ও ক্ষমতার পালাবদলে সংকুচিত হয়ে পড়ার দৃশ্যই মূলত গল্পের প্রধান বাচ্য ছিলো।
বরাবর চার শ পেজের বইটিকে রাজনৈতিক উপাখ্যান বলার চাইতে সামাজিক জনরার অতি সুখাদ্য বলার পক্ষেই আমি। তবে বেশ কিছু রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বর্ণনার ক্ষেত্রে লেখক ধরেই নিয়েছেন এইগুলো পাঠক জানে। তাই বর্ণনা সংক্ষিপ্ত করতে গিয়ে মূল প্রেক্ষাপট থেকে সরে গেছেন। হয়তো ভারতীয় কিংবা পশ্চিববঙ্গের পাঠকদের কাছে তা বোধগম্য হলেও বাংলাদেশী পাঠকদের যে একটু নাকানি চুবানি খাওয়াবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
সর্বশেষ, এক নাগাড়ে পড়ে ফেলার মতো দারুণ একটি বই 'মৌষলকাল'। রাজনীতি কিংবা সামাজিক বইটিকে আপনি যেভাবেই নেন আশা করি ভালোই লাগবে।
"অনিমেষ" সিরিজের শেষ বই হচ্ছে "মৌষলকাল"। এই অনিমেষ সিরিজটা সত্যি বলতে গেলে আমার কখনো অনেক বেশি বা আহামরি কিছু মনে হয়নি।সাধারণ একটা সিরিজ।কিন্তু কিছু কিছু বইয়ের সাধারণ হওয়াটাই অনেক অসাধারণ।এই ",অনিমেষ" সিরিজের বইগুলাও ঠিক তেমনই।সাধারণের ভেতরে থেকেও অসাধারণ।এই সিরিজ পড়তে পড়তে অনিমেষের জীবনের সাথে একদম জড়িয়ে গেছিলাম।শুধু সে-ই না,তার পুরো পরিবারের সাথেই যেনো জড়িয়ে পড়েছিলাম।অনিমেষ,মাধবীলতা,অর্ক,সরিৎশেখর,মহীতোষ,ছোটমা,পিসিমা!আহা!কি মায়া দিয়েই না লিখা হয়েছে এই বই! আজ এই "মৌষলকাল" দিয়ে শেষ হলো তাদের সাথে সম্পর্কটা।
সত্যি বলতে এই বইটা আমি পড়া শুরু করেছিলাম এই ভেবে যে,এইটা আমার একদমই ভালো লাগবে না।কারণ অনেকের মতেই এই বইটা ভালো না।বা,অনিমেষ সিরিজের সবচাইতে দুর্বল বই এটা।কিন্তু,আমি তাদের সাথে একমত হতে পারলাম না।সমরেশবাবুর এই বইয়েও আমি সন্তুষ্ট।হ্যাঁ,হয়তো চর��ত্রগুলার উপর অন্যরকম মায়া বা টান কাজ করেছে আমার,তাই হয়তো "মৌষলকাল" আমার কাছে দুর্বল মনে হয়নি।তবে তা যেভাবেই হোক,আমার ভালো লেগেছে।বেশ ভালো লেগেছে।
#মৌষলকাল,সমরেশ মজুমদার উত্তরাধিকার-কালপুরুষ-কালবেলা এই ত্রয়ী পাঠের শেষে শত প্রশ্ন মগজে গোলকধাঁধার মতো ঘুরে। এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছে এক ঘটনাবহুল শতাব্দী,তবুও রেশ কাটে নি একটুও।মৌষলকাল যেন একবিংশ অধ্যায়ে রচিত হয়েও পুরোনো চাদরে মোড়া গল্প শোনাতেই দুবাহু বাড়িয়ে ডাকে।নতুনত্ব কিংবা আধুনিকতা সব ছাপিয়ে চিরাচরিত জীবনবোধই চলার পথে মুখ্য হয়ে যায়। চুক্তিপত্র কিংবা মন্ত্রের পাঠ কখনো সম্পর্কের স্থায়ীত্ব নির্ধারণ করে দিতে পারে না বরঞ্চ পরস্পরের প্রতি সম্মানবোধ আর একত্রে ঝড়-ঝাপটা সামলানোর সাহস সময়ের সাথে সম্পর্কের ভীত আরো শক্ত করে দিতে পারে। চোখের সামনে দেখা দৃশ্যের সাথে বইয়ের পাতার লেখার মিল খুঁজে পেতে খুব বেগ পোহাতে হবে না।চিঠির জায়গা দখল করে নিয়েছে পকেটে থাকা ছোট যন্ত্র,তবু জীবন আগের মতোই জঞ্জালে আটকে আছে।যে জীবনকে অল্প নিয়ন্ত্রণ করা যায় তবে শাসন করা যায় না, সে জীবনে ভালোবাসা যেন পুরোনো বাড়িতে বসবাসরত সাপ-বিচ্ছুর মতো;তাড়িয়ে দেয়া যায় না আবার পূর্ণ আদর করে পোষে রাখতেও বিপত্তি।মানুষ কিছুকে কিংবা কাউকে ভালোবাসলে সে মানুষ হয়তো কালের বিবর্তনে হারিয়ে যায়, তবে ভালোবাসা মিথ্যে হয় না। উত্তরাধিকারে মাতৃহারা অনিমেষকে নিয়ে লালন করা হয়েছিলো কত স্বপ্ন,যুবক বয়সে যার সাহসিকতায় কালপুরুষ ধন্য হয়েছে সেই অনিমেষের প্রতি মৌষলকালে এসে প্রচন্ড অভিমান জন্মাবে।মানুষ পুরো জীবন একরকম থাকতে পারে না, তাকে একরকম থাকতে দেয়া হয় না।মানুষ চাইলেও জীবনের সাথে জড়িয়ে থাকা প্রতিটা মানুষের আশা পূরণ করতে পারে না,শেষ বয়সে এসে সে হিসেব কষে দীর্ঘশ্বাস ফেলে।কোনো কালেই রাজনীতি এক আদর্শে টিকে থাকতে পারে নি বরং হানাহানি-মারামারির মাঝখানে সর্বস্বান্ত হয়েছে বহু পরিবার।মাধবীলতার ভাষায় অনেকেই বহুধরণের বোধ শক্তি হারিয়ে ফেলেছে।দেশের সেবা মাত্রই রাজনীতি করতে হবে এ ধারণার বাইরে এসেও কিছু মানুষ নিরবে নিভৃতে দেশের জন্য,দশের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন ;তাদের কোনো চাহিদা নেই, নেই কোনো আক্ষেপ। বেঁচে থাকা চিরগৌরবের তাই মরে যাওয়ার পূর্বে কেউ ভাবে না সে থাকলেও যে নিয়মে পৃথিবী চলতো, সে চলে গেলেও একই নিয়মে চলবে।
কালজয়ী চতুষ্ক শেষ কিস্তি হিসেবে "মৌষলকাল"-কে খুব বেশি নম্বর দেওয়া যাচ্ছে না | গল্পটিতে যেটা খুব ভালো ভাবে ফুঁটে উঠেছে সেটি ৩৪ বছরের শেষের দিকে বামফ্রন্টের ঔদ্ধত্য, দুর্নীতি , তোলাবাজি ইত্যাদি | এবং সেই মাতব্বরি দেখে মানুষের প্রথমে মোহভঙ্গ, তারপর বিতৃষ্ণা এবং অবশেষে পরিবর্তন | গল্পে মুখ্য চরিত্র অর্ক কিংবা অনিমেষ না , মুখ্য চরিত্র হিসেবে উঠে এসেছে সমসাময়িক রাজনীতি |
সমরেশ বাবুর বিশ্লেষণ অত্যন্ত এক পেশে, কৃষকের মুক্তির কথা লিখতে গিয়ে , পশ্চিমবঙ্গের শিল্পোন্নয়নের বার্তা কে একবারও উল্লেখ করেননি | অন্য সকল বুদ্ধিজীবীদের মতোই ব্যাপারটিকে সাদা কালোর সরলীকরণ এবং তরলীকরণ করে একটি আবেগ প্রবন উপন্যাস লিখেছেন | বিষয়ের গভীরে যাওয়ার কোনো চেষ্টাই করেননি |
একই কাজ করেছেন গল্পের দৈর্ঘ নিয়ে | গল্পের মূল কথা বোধ হয় ২০০ পাতায় শেষ হয়ে যেত কিন্তু তবুও গল্প মন্থর গতিতে চলেছে প্রায় ৪০০ পাতা | তাছাড়া এখনকার মুখ্যমন্ত্রীর সততার তৈলমর্দনতো আছেই | শেষের কয়েকটা পাতায় এমন ভাব করেছেন যেন তৃণমূলের দুর্নীতির খবর মুখ্যমন্ত্রীর কান অব্দি পৌঁছাতেই পারে না |
হতাশ! সমরেশ মজুমদার এই বইটি না লিখলেও পারতেন। এত বছর পর এইরকম একটা বইয়ের কোনো দরকার ছিল না। উত্তরাধিকার, কালবেলা, কালপুরুষের সাথে বইটি কোনো ভাবেই যায় না। লেখক এই বইটিতে অর্ক চরিত্রটিকে এইভাবে ধ্বংস না করে ফেললেও পারতেন।
না একেবারেই ভালো লাগল না। বোঝা গেল না কমিউন থেকে অর্ক জেল গিয়ে, কী করে ছাড়া পেল? পড়াশোনায় খুব একটা ভাল ছিল না। অথচ একটা চাকরি পেয়ে গেল। অথচ চাকরি পাবে না বলেই পড়তো না নাকি। মেনে নিলাম বেসরকারি চাকরি! বস্তিতেই কেন থাকছে যতই হোক একটু আলাদা করে। অথচ অনিমেষ- মাধবীলতা ট্রেনের এসি কামরায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। খুব নড়বড়ে ভাবে লেখক বোধহয় জানাতে চাইলেন যেই ক্ষমতায় যাবে সেই... যে যায় লঙ্কায় সেই রাবণ। আর এক্সট্রিম লেফটিস্ট মুভমেন্ট চলতেই থাকবে, আর রাষ্ট্র তার সমস্ত শক্তি দিয়ে তাদের বাড়ে বাড়ে দমন করবে।
Although the reviews were not very encouraging for this book, but I still go ahead being the rich legacy it created. I feel its more of a update rather than a story. Its a record of how the political scenario changed during 1990-2013. The narration is good as usual. A don't see hope in the voice and the writer didn't intended also. May be a tad realistic and gloomy picture of Bengal. A OK read.
মানুষ কে বোকা বানানো অনেক সহজ,তাদের কে মিথ্যা আশা দেখালেই তারা সেটা বিশ্বাস করে বসে,আর সত্য টা আঙুল দিয়ে দেখালেও মানতে নারাজ।অর্ক কি শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় অনিমেষ হবে?নাকি মাধুবিলতার মতো কেউ অর্কের জন্য ছেড়ে দিবে সব?
কাহিনি সারসংক্ষেপ: ২৫ বছরের ও বেশি সময় পর চার নাম্বার বইটা বের হয় অনিমেষ সিরিজের।শেষ বই যেখানে শেষ করা হয়েছিল ঠিক তার পর থেকেই।অর্ক এখন আর সেই ছোট ছেলেটি নেই,এখন তার বয়স প্রায় চল্লিশের উপরে।অনিমেষ,মাধুবিলতা,অর্ক তিন জন যেন সময়ের সাথে সাথে একটু বেশিই পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে,রোজকার দিনের যা কাজ সেগুলোই চলছিল পালাক্রমে,মাধুবিলতা রিটায়ার্ড হয়ে এখন ঘরেই থাকে।অর্ক প্রতিদিন সকালে অফিসে যায় রাতে ঘরে ফিরে।এক সময় হঠাৎ কল আসে জলপাইগুড়ি থেকে,অনিমেষ-মাধুবিলতা চলে যায় সেখানে।অর্ক কলকাতায় একা,তার কিছুদিন পরই অর্ক একজন কে বাবা-মায়ের অবর্তমানে যায়গা দেয় নিজেদের ঘরে,দিন যত কাটতে থাকে তিন জনের মধ্যে তুমুল পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে।বাবা-মায়ের ছোট অর্ক যেন হুট করেই বেশিই বড় হয়ে গিয়েছে।কারো কথাকেই তোয়াক্কা করে না এখন।নিজের খেয়ালেই চলে।মাধুবিলতা আর অনিমেষ যখন জলপাইগুড়ি থেকে কলকাতা ফিরে তখন অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়ে যায়।জীবনের মোর যেন তিনজনকে তিন দিকে নিয়ে যেতে শুরু করে দিকে যেতে শুরু করে একেবারে যে��া অনেক বছর আগে পিছনে ফেলে দিয়ে এসেছিল সেদিকেই কী নিয়ে যাচ্ছে তাহলে?
পাঠপ্রতিক্রিয়া: বাকি তিনটা শেষ করার পর এত অপেক্ষা করেছিলাম এটা পড়ার জন্য,যখন পড়তে শুরু করেছিলাম তখন একবারের জন্যও মনে হয়নি লেখক এই বই ২৫ বছরের বেশি সময় পর লিখেছেন।কোন যায়গায় কাহিনি খাপ ছাড়া মনে হয়নি,কোন যায়গায় মনে হয়নি এত বছর পর লেখা বই।যেন একধারেই চলে গেছে।পুরো কাহিনি ঠিক ভাবেই এগিয়ে গিয়েছে।রাজনৈতিক বিষয় একেবারেই আমার মাথায় ঢুকতো না,কিন্তু এই সিরিজ বিশেষ করে এটা পড়ে অনেক কিছু বুঝতে পেরেছিলাম,সাথে অবাকও হয়েছি ক্ষমতা মানুষ কে কী করে ফেলতে পারে।বাস্তবে এমন অনেক ঘটনা দেখেছি যারা কোন রকমে জীবনে চলে যাচ্ছে আর ক্ষমতা পাওয়া লোক গুলা কীভাবে তাদের উপর জুলুম করে যাচ্ছে দিনের পর দিন।
শেষ টা ভেবেছিলাম অন্য রকম হবে কিন্তু এত অন্য রকম ভাবিনি।তবে এটা ছাড়াও হয়তো ভালো লাগতো না,গল্প তো আর বাস্তবের বাহিরে না যে একেবারে নাড়িয়ে দিবে।
বই: মৌষলকাল লেখক: সমরেশ মজুমদার প্রথম প্রকাশ: ২০১৩ ধরণ: সামাজিক পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৩৯১ পারসোনাল রেটি ৪.৫/৫
হতাশ হইনি বললে মিথ্যে বলা হবে। পড়তে পড়তে কখনো কখনো মনে হয়েছে, "দিদি'র জন্য একটা কিছু লিখে দিন না" এমন অনুরোধ রাখতে গিয়েই মৌষলকালের সৃষ্টি কি না।
নেতিবাচক চিন্তা সরিয়ে রেখে যদি অনিমেষ পরিবারকে ভারতের স্বাধীনতা পরবর্তী পশ্চিমবঙ্গ রাজনীতির পর্যবেক্ষক হিসেবে ভাবি, তাহলে কিছুটা হলেও এই বইটির প্রতি একধরনের সহানুভূতির যায়গা তৈরি হয়। কাহিনীতে অসংলগ্নতার ছড়াছড়া আছে, কিন্তু সেই সাথে আছে বিশ্বাসভঙ্গের রাজনীতির গল্প, যেই লাউ সেই কদু'র মত হতাশা। মাটির কাছাকাছি মানুষগুলোর দুর্ভোগের বর্ণনা আছে, সিস্টেমের দোষের বিশ্লেষণ আছে, সব আঙ্গিক থেকে ঘনীভূত পরিস্থিতি চিন্তা করার সুযোগ আছে। তবে একটা কথা ঠিক, এই যে কষ্ট করে করে ইতিবাচক ব্যাপারগুলো তুলে আনার চেষ্টা করছি আপন মনে, তার কৃতিত্ব যতটা না এই বই এর, তার চেয়ে অনেক বেশি আগের তিনটা বই এর।
মা মাটি মানুষের মতাদর্শহীনতার রাজনীতিকে ঠিক নকশালের সাথে তুলনা করা যায় কি না জানি না। আমার মনে হয় তুলনা করা যায় না বলেই লেখক কন্টেন্টের অভাবে ভুগেছেন। উপসংহার পড়ে মনে হল সিরিজের আরেকটি বই এর দরজা খুলে রাখা হল বোধ হয়, একই সাথে এটাও মনে হল বুড়ো অনিমেষকে কেন আবার দৌড় করানো। By the way, কিছু কিছু ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় চরিত্রগুলোর নিজেদের সততা নিয়ে অহেতুক দৃষ্টিকটু অহংকার বিরক্তির উদ্রেক করেছে, ব্যক্তিগতভাবে তার জন্য চরিত্র গুলো একটু মমতা ও শ্রদ্ধাও হারিয়েছে।
আরকটি বই আসতে গেলে আরও একটি বিপ্লবের প্রয়োজন, যদিও মৌষলকালেরটা কে ঠিক বিপ্লব বলা যায় কি না আমার জানা নেই, মোটা দাগে যায় হয়তো, পরিবর্তন তো বটেই, হোক সেটা যত সীমিত।
খুব কষ্ট হল শেষ করতে, বইটি আগের গুলোর সাথে একই তাকে রাখতে একটু বাঁধবে।
২.৫ দেওয়া গেলে ভালো হতো। লেখার ভেতরের যে latent idea টা আছে, সেটা সুন্দর.. ভাববার মতই। তবে লেখার ধরন ভালো লাগেনি। মাঝের কিছুটা অংশ টেনে রেখেছিল। তবে শেষের দিকে আবার ইচ্ছে করে রাশ ছেড়ে দিয়েছেন গল্পের। কুন্তীর অংশটা একেক সময় নিরর্থক লেগেছে, কিন্তু কেবল ওই idea টা র জন্য পড়তে থাকা গেছে।
ঈশ্বরপুকুরলেনে নকশাল আন্দোলনের প্রাক্তনী থাকেন, এটা শুরুতে বিপুল আমোদ দিয়েছিল। তবে আমার সবথেকে কাছের চরিত্র হয়ে ফুটে থেকেছেন গলির মোড়ের বৃদ্ধা। এমন নামধামহীন চরিত্রগুলো কেন যে এত প্রিয় হয়ে যায় আমার। হয়তো তার ভেতরে idea গুলো abstract হলেও সবথেকে স্পষ্টভাবে বেরিয়ে এসেছে, তাই।
কিছু কিছু বিষয় ভালো। কিছু ভালো না। পড়া যেতে পারে। বিশেষ করে যারা মনে করেন লেখক বিশেষ এক রাজনৈতিক দলের ধ্বজা ধরেন, সেটা মাথায় রেখে কেউ চাইলে অবশ্যই পড়বেন। আর স্পষ্ট কথা স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে এতে, বহুক্ষেত্রে। কোনো রোমান্টিসিজমের ধার ধারেননি লেখক। এটা বেশ ভালো।
ও হ্যাঁ, আগ্রহীদের বলি, নাম সংক্রান্ত idea টি এক্কেবারে শেষে পাবেন!
অনিমেষ সিরিজের চতুর্থ বই এবং আমার মতে এই সিরিজের সব থেকে দূর্বল বই। এই বইটা মূলত অর্ককে ফোকাস করে লেখা হয়েছে। মাঝ বয়সী অর্ক এবং বয়স্ক অনিমেষ-মাধবীলতার কাহিনী।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের উপন্যাস। সমকালিন বলে বিতর্ক আছে। যতটা এক্সপেকটেশন নিয়ে পড়া শুরু করেছিলাম সেই তুলনায় হতাশ করেছে। অনিমেষ, মাধবীলতা, অর্ক, তাদের সবকিছুই কেমন যেন বদলে গেছে। তাদেরকে এইরকম নিষ্প্রভ হয়ে যেতে দেখে একদম ভালো লাগে নাই। অবশ্য এইটাই হয়ত বাস্তবতা, বছরের পর বছর কোনো পরিবর্তনহীন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে থাকলে মানুষ হয়ত স্বপ্ন দেখাও ছেড়ে দেয়। কিন্তু পছন্দের চরিত্রগুলোর এমন পরিবর্তন কিছুতেই মন থেকে মানতে পারছিলাম না। এতকিছুর পরেও বইটার যে জিনিসটা ভালো লেগেছে সেইটা হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডারদের দাপট সেইটাকে লেখক সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছে।
বইয়ের শেষটা অসম্পূর্ণ। অনিমেষ, মাধবীলতা, অর্ক ও কুন্তির শেষ পরিণতি অজানাই থেকে গেল। লেখক বেঁচে থাকলে হয়ত আরেকটি খণ্ডের আশা করা যেত।
মৌষলকাল অনেক আশা নিয়ে পড়তে শুরু করেছিলাম। যেহেতু এটি অনিমেষ ট্রিলজির শেষ অংশ। এমনকি বইটি পেতেও আমাকে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। কিন্তু বইটি পড়ে আমি যারপরনাই হতাশ হয়েছি।
মৌষলকালের চরিত্র সেই অনিমেষ, মাধবীলতা আর তাদের একমাত্র ছেলে অর্ক। আগের তিনটি বইয়ে যে বিপ্লবী ছিল এই চরিত্রগুলো সেই তুলনায় এখানে সবাইকে বেশ নির্লিপ্ত মমে হয়েছে। আমার কাছে ভালো লেগেছে অনেকদিন পর অনিমেষের জলপাইগুড়ি যাওয়া আর পরিচিত অনেকের দেখা পাওয়া। জীবনের স্রোত এভাবেই বয়ে যায়, এভাবেই এক প্রজন্ম বিলুপ্ত হয়ে যায় সময়ের স্রোতে। বইটি পড়তে পড়তে শুরুর দিকে কেমন নস্টালজিয়ার মত হয়েছে।
অর্ককে আগে যেমন প্রতিবাদী চরিত্র দেখা গিয়েছিল, এখানে তেমন দেখা যায়নি, যা বেশ হতাশ করেছে। বরং বৃদ্ধ অনিমেষের প্রতিবাদী শক্তি আরও বেশি মনে হয়েছে।
পুরো বইটিতে শুধুমাত্র একটি কাহিনীকে ব্যপ্ত করেই সব ঘটনাগুলো পরিচালিত হয়েছে। অনিমেষ তার দাদু শরিতশেখরের করা জলপাইগুড়ির বাড়িটি বিক্রি করতে যেয়ে নানারকম রাজনৈতিক সমস্যার মুখোমুখি হয়। পুরো বই জুড়ে এই ঘটনাগুলোই প্রবাহিত হয়েছে। আমার মনে হয়েছে বইটিতে লেখক দেখাতে চেয়েছেন- নতুন দল যতই বিপ্লবের কথা বলুক না কেন, ক্ষমতায় আসলে চুনোপুঁটিরাই মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এদের জন্য দেশে আসলেই সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব কিনা তা নিয়ে সন্দিহান।
সবমিলিয়ে বইটি শেষ করার মত। কিন্তু সমরেশ মজুমদারের উত্তরাধিকার, কালবেলা, কালপুরুষের অংশ হিসেবে এই বইটি ততটা আশা পূরণ করতে পারেনি।
অনেকে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন, অনেকে বলেছেন যে এটা না লিখলেও চলত, কিন্তু পড় আমার মনে হয়েছে এটা অতি গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ, কারন অনিমেষ সিরিজের মাধ্যমে লেখক পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সময়ের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের প্রেক্ষাপট ও সাধারণ মানুষের অবস্থা, আশা আকাঙ��ক্ষা তুলে ধরতে চেয়েছেন, সেই অনুসারে এটি একটি সফল উপন্যসা, যেখানে রাজনোইতিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপট, ও তারপরের পরিস্থিতি তিনি উপযুক্ত রূপে ফুটিয়ে তুলেছেন, সমস্ত সত্যের সার তুলে ধরেছেন। এমনকি পরিবর্তন পূর্ব বোলপুরের আশ্রম বা পরে পুরুলিয়ার আশ্রমের কথাও বিশেষ ইঙ্গিতবাহীযা যারা জানেন তারা বুঝতে পারবেন...
মৌষলকাল, অনিমেষ সিরিজের শেষ বই। মৌষলকাল নামটার তাৎপর্য মহাভারতের 'মুষলপর্ব'।এ-ই পর্বে যাদব বংশের ধ্বংসের বর্ণনা করা হয়েছে। কৃষ্ণ ওই মৌষলপর্বে দ্বারকাকে রক্ষা করতে পারেন নি।এই মৌষলকাল পশ্চিমবঙ্গে আসুক তা কেউ চায় না। অনিমেষ আর মাধবীলতার বয়সে বার্ধক্যের ছোয়া আর তাদের সন্তান অর্কর কমিউন গঠনের স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ার পরবর্তী সময়ের ঘটনাগুলো নিয়েই এ-ই সিরিজ। অনিমেষকে আমরা যে চরিত্রে কালবেলাতে দেখেছি , তার ছেলে হিসেবে অর্ক তার আংশিকই পেয়েছে। পুলিশের অত্যাচারের মুখেও যে অনিমেষ কখনো হার মানেনি, অর্ক খুব সহজেই হার মেনে নিয়েছে।বাবার প্রতি তার অনেক অভিমান ছিল যা কখনো প্রকাশ পেতে দেয় নি। সবচেয়ে উজ্জ্বল আর কঠিন চরিত্র মাধবীলতা। গল্পের শেষে তার বলা শেষ কথাগুলো খুব শক্ত মনের মানুষ ছাড়া কেই বা বলতে পারে। তার আর হারানোর ভয় ছিল না আসলে।তার জীবনে ত্যাগ করতে করতে অবশেষে প্রত্যাশা আর অবশিষ্ট ছিল না।।
যদি আমাকে ৪টি বইয়ের মধ্যে তালিকা করতে বলা হয় তাহলে তা হবে:
১। কাল পুরুষ ২। উত্তরাধিকার ৩।কাল বেলা ৪।মৌষলকাল
বাকি বই গুলোর মতো এটা তেমন হয়নি। সূর্যের ন্যায় সেই অর্ক কেমন যেন মেঘে ঢাকা পড়ে গেল। অনিমেষ ও কেমন পরিবর্তিত হয়ে গেল। এই উপন্যাস গুলোর মধ্যে আমার কাছে মনে হয়েছে সবচেয়ে শক্তিশালী চরিত্র হচ্ছে মাধবীলতা। সে সত্যিকার অর্থেই সূর্যের ন্যায় আলোকিত.