দবির একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, "সাত ব্যক্তি আরশের ছায়ায় আজ আশ্রয় পেয়েছে। এদের মধ্যে ওসব লোকও আছে যাদেরকে কোনো সুন্দরী মেয়ে লাগানোর জন্য আহ্বান করেছিল। কিন্তু তারা আল্লাহর ভয়ে যায় নি। যৌবনকালে আমাকেও এমন করেছিল এক সুন্দরী!" ত্বহা উৎসাহের সাথে জানতে চাইল, "তারপর? আল্লাহর ভয়ে বিরত ছিলেন।" দবির মাথা নাড়তে নাড়তে বলল, "না রে ভাই। আমাকে আর দ্বিতীয়বার বলা লাগে নি। এক লাফে কম্বলের তলে। দেখছেন না গোড়ালি ডুবে গেছে ঘামে।" ত্বহা ব্যাপারটা লক্ষ্য করল। সমতল ভূমি। অথচ কোথাও লোকের গোড়ালি পর্যন্ত ঘাম। কোথাও কোমর পর্যন্ত। কেউ কেউ তো ঘামে সাঁতার কাটছে। গলা পর্যন্ত ঘাম তাদের। অথচ সবটাই সমান। বিজ্ঞান আজ কোথায়? আর থাকতে না পেরে গেয়েই উঠল সে, "আল্লাহর কী কুদরত! লাঠির ভেতর শরবত!" প্রথম যে লোকটা কথা বলেছিল সে এটা শুনেই হাততালি দিয়ে ফেলল, "আখ। ইক্ষু। সুগারক্যান। তাই না? মাথা দোলালো ত্বহা। "আপনার ইংরেজি তো চমৎকার। নামটা জানা হলো না।" লোকটা হাততালি দিতে দিতে বললো, "আমি? আমি তো শাকিব খান। নাম্বার ওয়ান, শাকিব খান। আসলে আমার নাম মাসুদ রানা। দুনিয়াতে থাকতে শাকিব খান নামে চালাতাম। সিনেমার নায়ক।" ভূরু কুঁচকে গেল ত্বহার, "আপনি-ই তো সেই ফাদার ফিগার, রাইট? একটা আঙুল তার দিকে পিস্তলের মতো তাক করল শাকিব খান, "রাইট ইউ আর!" হাশরের ময়দানে দবির নিজেকে আরও কিছু উদ্ভট মুসলমানের পাশে আবিষ্কার করল। অথচ একটু পর যে মহাশ্চার্য বিষয়টি আবিষ্কার করবে - সে বিষয়ে কোনো ধারণাই তার ছিল না। "নাস্তিক শিকারী" গল্পটি সংকলনের অন্যতম সেরা গল্প। পিছিয়ে নেই বাকি গল্পগুলোও। পাঠককে পড়ার আমন্ত্রণ।
Kishor Pasha Imon is a famous Bangladeshi crime writer.
Musa Ibne Mannan, known by the pen name KP Imon, is an accomplished writer who initially gained recognition through his short stories on social media. Over the course of his career, he has written over 220 short stories, captivating his online audience with his vivid imagination and storytelling skills. Building on his success in the digital realm, Imon went on to establish himself as a prominent novelist, with his works being published in both Bangladesh and India.
His regular publishers are Batighar publications, Abosar Prokashona Songstha, and Nalonda in Bangladesh. Abhijan Publishers solely publish his books in India. He is the author of 13 novels and translated 9 books to Bengali till date (5/10/23).
He graduated from the Department of Mechanical Engineering at Rajshahi University of Engineering & Technology. Presently, he resides in Dallas, TX, focusing on his PhD studies in Mechanical Engineering at UT Dallas after completing his MS at Texas State University.
His other addictions are PC gaming, watching cricket, and trekking.
পাঠককে প্রথম বাক্যেই নিজ লেখনিতে নিবদ্ধ করে রাখার গুণ কিশোর পাশা ইমনের বেশিরভাগ লেখাতে পাওয়া যায়। 'নাস্তিক শিকারি' এমন এক গল্পগ্রন্থ যেখানে দুই মলাটের মাঝের পাঁচটির মধ্যে দুটি গল্পের ভিতর দিয়ে অতীতে অনলাইনে আমার ছুটাছুটি হয়েছে।
লেখকের এখন পর্যন্ত সেরা কাজগুলি প্রায় সব আমার পড়া। গল্পে দ্রুতগতিময়তা, রিডারকে হুকড করে রাখা এবং বাস্তবে আমাদের আশপাশে ঘটে যাওয়া সচরাচর কর্মকান্ড তাঁর রাইটিং এ সাবলীলতার সাথে সাধারণত স্থান পেয়ে থাকে।
বিশাল অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশি এক কাপলের আমেরিকান এক নিরীক্ষামূলক আয়োজনে অংশগ্রহণ করতে হয় 'আইসোলেশন'এ। গল্প কোন দিকে যাচ্ছে অনুমান করতে অসুবিধা হচ্ছিলো না তবে স্টোরিটেলিং এর কারণে মানুষের অদ্ভুত মনস্তত্ত্বের উন্মোচন কেপি দারুন ভাবে করেছেন।
'হোয়াই ডু দে ডু ইট' আমার মতে আজ পর্যন্ত লেখা ইমনের অন্যতম সেরা গল্প। এমনকি বইটির নামকরণ এ গল্পের নামানুসারে হতে পারতো। অনেকে ভাবতে পারেন এখানে সম্পর্কে ডাবল টাইমিংকে মহিমান্বিত করা হয়েছে। আমার সেরকম কিছু মনে হয় নি। কারণ 'ইটস কমপ্লিকেটেড' রিলেশনশিপ কি আসলেই আমাদের সমাজে বিদ্যমান নয়? গল্পের শেষ পর্যন্ত পড়লে লেখক কোন দিকে ইঙ্গিত করেছেন তা অনেক সচেতন পাঠকের বোধগম্য হয়ে যাবে।
'ঐক্য' অনলাইনে আমি আগে পড়েছি। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে কী হয় কিংবা হয়ে আসছে তা-ই তো লিখেছেন লেখক। উত্তেজনাপূর্ণ এ গল্পের শেষটা ভালো লেগেছে।
'নাস্তিক শিকারি' ঠিক কোন জনরায় পড়ে তা বলা একটু মুশকিল। স্টোরি স্যাটায়ার হিসেবে পুরোপুরি ধরে নিতে চাই না। সমসাময়িক নির্মম প্রাসঙ্গিকতার সাথে এক ধরণের মেটাফিকশনের মতো লেগেছে আমার কাছে। গল্পে ডার্ক হিউমার আছে ভালোই। তবে আমার মনে হয় গল্পটি আরো ভালো হতে পারতো।
'ধাওয়া' লেখকের ২০১৫ সালে রচিত গল্প। তাই অন্যান্য গল্পের তুলনায় একটু কাঁচা লেগেছে। ডিটেইলিং এ লেখকের যে দক্ষতা তা এখানে একটু কম পড়ে গেছে।
'রিপুচক্র' আমার ভালো লাগে নি। কেপি ভালো লিখতে পারেন। তাঁর নিজস্বতা আছে। তবে গল্পটির সংলাপ নির্ভরতা একটু বেশি ছিলো। আর ছিলো সংলাপের এক চক্রে আঁটকে যাওয়ার প্রবণতা। না হলে 'রিপুচক্র' সম্ভাবনাময় গল্প ছিলো, এখনো আছে যদি লেখক রিরাইট করেন।
সব মিলিয়ে ভালো এন্টারটেইনিং গল্পগ্রন্থ হয়েছে এটি। কিশোর পাশা ইমন সাবলীলতার সাথে অনেক বাস্তবতা তাঁর লেখনিতে তুলে আনেন। যেরকম প্রচন্ড লেখালেখির অনুশীলন তিনি করে থাকেন, এবং কেপির বইয়ের মলাটে অপ্রকাশিত লেখালেখির পরিমাণ যেরূপ বিশাল, হয়তো আরো ভালো গল্পগ্রন্থের দেখা পাবো লেখকের দিক থেকে।
কিশোর পাশা ইমনকে তাঁর ফেসবুক কর্মকান্ডের কারণে অনেকে হয়তো অনেকে একভাবে মাপতে পারেন। লেখকের বই যারা পড়েন কিংবা পড়বেন, পাঠ শেষে তাদের মূল্যায়ন ভিন্ন রকম হতে পারে তরুন এই প্রতিভার ক্ষেত্রে।
বই রিভিউ
নাম : নাস্তিক শিকারি লেখক : কিশোর পাশা ইমন প্রকাশক : নালন্দা প্রথম প্রকাশ : ফেব্রুয়ারি ২০২৪ প্রচ্ছদ : রুদ্র কায়সার জনরা : থ্রিলার, সামাজিক বাস্তবতা, ডার্ক কমেডি রিভিউয়ার : ওয়াসিম হাসান মাহমুদ
সমকালীন লেখকদের লেখা বই আমি তেমন পড়ি না; আগে যে কটা পড়েছি সবগুলো আমার অর্থ ও সময় দুটোই অপচয় হয়েছে। রকমারি এই বই ব্যান করায় পড়ার আগ্রহ জেগেছিলো। যতোটা এক্সেপটেশন ছিলো ততোটা হয়নি। তবে এই বইয়ের কিছু কিছু অংশ আমার খুবই ভালো লেগেছে।
বইটা নিয়ে প্রথম আগ্রহ জাগে বইটার নাম দেখার পর। এরপর তো হুট করে একটা বুকশপ তাঁদের ওয়েবসাইট থেকে বইটা সরিয়েই নিল। কিশোর পাশা ইমনের লেখালেখির সাথে আমি পূর্বপরিচিত ছিলাম। সব মিলিয়ে এই বইটা তাই বইমেলার মাঠ থেকে কিনে নিয়েছি এবং শেষ অব্দি দেখতেই পাচ্ছেন, পড়েও ফেলেছি।
বইটা মূলত একটা গল্পগ্রন্থ। ১১৭ পৃষ্ঠার এই গ্রন্থে স্থান পেয়েছে মোট ৬টি গল্পগ্রন্থ। ছয়টি গল্পগ্রন্থের গল্পগুলি লেখার সময়কাল এখন থেকে বেশ আগের। বোঝাই যাচ্ছে, ‘রাইটারকে লেখা ড্রাফট করতে হয়’ নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন লেখক। সেই ড্রাফট থেকেই হয়তো বেরিয়েছে গল্পগুলো।
বইয়ের প্রথম গল্পের নাম ‘আইসোলেশন’। গল্পগ্রন্থের প্রথম গল্পকে চমৎকার হতে হয়। লেখককে না চেনা পাঠক মূলত স্টলের সামনে কিংবা বুকশপের ‘একটুখানি পড়ুন’ থেকে যেটা পড়ে সেটি মূলত প্রথম গল্পই। এই গল্প পাঠককে না টানলে সেই বইটা আর শেষ অব্দি পাঠকের হাতে পৌছায় না। এই দিক থেকে ‘আইসোলেশন’ গল্পটা লেটার মার্ক পেয়ে পাশ করেছে। অনেক সময়ই ফেসবুকে আমরা দেখি, একটা বিশাল এমাউন্টের টাকার সাথে যদি আপনার পছন্দের কোন মানুষকে নির্বাসনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে আপনি যাবেন কিনা? এহেন প্রশ্নে ফেসবুক বাসীর বেশিরভাগই উল্লাস ও উদ্দীপনার সাথে মাথা নাড়েন এবং তাঁরা ভাবেন জীবনে হয়তো অর্থখ্যাতিই সব এবং এহেন নির্বাসন কোন সমস্যার সৃষ্টি করবে না। কিন্তু এই প্রশ্ন আসলেই কতটুকু ঠিক এমন একটা সাইকোলজিক্যাল ভাবনা পুশ করা হয়েছে এই গল্পে। গল্পটা ভাল এবং আমার অত্যন্ত পছন্দ হয়েছে।
বইয়ের দ্বিতীয় গল্প ‘হোয়াই ডু দে ডু ইট’। প্লটলেস গল্পের ব্যাপারে বাংলাদেশি লেখকেরা খুব একটা কাজ করেন না। বাংলাদেশি পাঠকেরাও গল্প পড়ার ব্যাপারে লেখার চাইতে বেশি পড়তে চায় ‘কাহিনী’। মোদ্দাকথা একটা ঘটনা ঘটবে, সেই ঘটনার শেষ হবে এবং লেখক একটা মোরাল স্টোরি পুশ করবেন- তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে তুলতে বই বন্ধ করবেন বাংলাদেশি পাঠকেরা। অথচ আপনি ড্রয়িং রুমে বসে গল্প করছেন সেটাও যে একটা ছোটগল্প হতে পারে কিংবা কোন মোরাল ছাড়াও যে একটা গল্প লেখা যায় শুধু লাইফের একটা বেসিক পার্টকে তুলে ধরে, সেটা অনেকদিন ধরেই বাংলা গল্পে অনুপস্থিত। সেই অনুপস্থিতি পুষিয়ে দিচ্ছে কেপির এই গল্পটা।
‘ঐক্য’ গল্প লেখা হয়েছে হলি আর্টিজানের ঘটনার একটা শানে নুযূল মাথায় রেখে। সেটা স্বীকার করতেও অবশ্য লেখক পিছপা হননি। মোটিফ বিবেচনা করলে এই গল্পটাকেও ভাল বলতে হয় । তবে এই গল্পের সেরা গল্পটা হল নাম গল্পটা। নাম যেহেতু ছবিতেই দেখতে পাচ্ছেন এবং ফেসবুকে লিখলে স্টার আর স্পেস দিয়ে লিখতে হবে বলে সেটি উল্লেখ করলাম না। এই গল্পটাই এই বইয়ের সেরা গল্প। এই বইটি যদি শুধু একটা গল্পের জন্যে কেনা যায় সেটা এটা।
‘ধাওয়া’ গল্পটা খুব বেশি মুগ্ধ করেনি। গল্পটা লেখা হয়েছে এখন থেকে প্রায় বছর নয়েক আগে। লেখার মধ্যে দুর্বলতা খেয়াল করেছি। কেপি ইমনের এখনকার বইগুলি যেমন একটা লাইনের পর আরেকটা লাইন পড়ে ফেলা যায় সেটা এখানে লাগেনি। সে হিসেবে ‘রিপুচক্র’ গল্পটাতে আবার এখনকার লেখার হাতই দেখা যাচ্ছে। তবে এই গল্পের প্লট একটু গোলমেলে। তবুও অনেকের তা ভাল লাগতে পারে।
সব মিলিয়ে বইটা বেশ ভাল। নামগল্পটা এক কথায় দুর্দান্ত। এমন একটা গল্প প্রতিদিন পড়া হয়ে উঠবে না।