ডাক্তারি পড়াশোনা শেষ করে ডাক্তার আসিফ দীর্ঘদিন নানা প্রত্যন্ত অঞ্চলে রোগী দেখে বেড়িয়েছেন। সেসময়ে তিনি রোগী হিসেবে এমন কিছু বিচিত্র মানুষ পেয়েছেন যাদের রোগব্যধি প্রচলিত চিকিৎসা বিজ্ঞান দিয়ে সবসময় ব্যাখ্যা করা যায় না। রোগ ব্যধির রহস্যময় জগতে থেকে ওর উপলব্ধি হয়েছে সবসময়ে রোগেরা বইপত্রে যেমনটা লেখা থাকে তেমন করে আসে না, সব ব্যধির খবরও আমাদের জানা রয়েছে সেটাও সত্যি না। মেডিকেলে এক প্রিয় শিক্ষকের অনুপ্রেরণায় আসিফ এ-সমস্ত অদ্ভুত ও অচেনা রোগদের নিয়ে লিখতে শুরু করলেন, যার ফলাফল অসচরাচর।
মাশুদুল হকের জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকায়। এক দশকের বেশি সময় ধরে লিখছেন থ্রিলার, সায়েন্সফিকশন ও শিশু-কিশোর সাহিত্য, প্রকাশিত হয়েছে নিয়মিত ভাবে বাংলাদেশ ও ভারত থেকে।
সাহিত্য-পুরস্কার : এইচএসবিসি-কালিওকলম তরুণ কথাসাহিত্যিক পুরস্কার ২০১৩।
Masudul Haque is a contemporary writer from Bangladesh known for his works on thrillers, Sci-Fi, and children's literature. His works have been published in Bangladesh and India regularly for the last 12 years. He was awarded the Kali O Kalam Young Writer Award in 2013.
মেডিকেল সায়েন্সে সাধারণ বৈশিষ্ট্যের বাইরে যত ব্যতিক্রমী,নিয়ম-না-মানা, অস্বাভাবিক, বিশেষ ধরনের কেস আছে সেগুলোকে এককথায় বলে ‘Atypical’, সোজা বাংলায় ‘অসচরাচর’। যেমন: জন্মের আগের মুহূর্ত অবধি ভ্রূণের মাথা ওপরের দিকে, মানে মায়ের বুকের দিকেই থাকে। ঠিক জন্মমুহূর্তে কেমন করে যে ভ্রূণ একটা ডিগবাজি খেয়ে বার্থ ক্যানালের মধ্যে মাথা নামিয়ে আনে কেন, কার প্ররোচনায় যে সে ওই একান্ত এসেনশিয়াল ডিগবাজিটা খায় তা মেডিকেল সায়েন্সের অব্যাখ্যাত রহস্যগুলোর মধ্যে একটা। বিশ বছর বয়সী ব্রুক গ্রেনবার্গের শরীর কেন পাঁচ বছর বয়সেই আটকে আছে,টিফানি ইয়র্কসের পাজোড়া কেনই বা একসাথে জোড়া লেগে গিয়ে মৎস্যকন্যার লেজের আকৃতি ধারণ করেছে —এরকম অজস্র জিজ্ঞাসাচিহ্নের উত্তরকে বিজ্ঞান খুঁজে চলেছে। একজন ভালো ডাক্তার সবসময়ই এসব অসচরাচর, অস্বাভাবিক কেসগুলোকে ঠাঁই দেন জার্নালে। কারণ,রোগব্যাধি,অসুখ এসব রহস্যময়। তারা সবসময় বইয়ের মতো করে হাজির হয় না। এভাবেই চিকিৎসাবিজ্ঞান এগিয়ে চলে। মাশুদুল হক এরকমই পাঁচটি অসচরাচর কেসের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছেন এই বইয়ে। ড. আসিফ আহমেদ নামের এক তুখোড় অথচ ডিফল্টার চিকিৎসকের জবানিতে বর্ণিত হয়েছে এসব ঘটনা।
ড. আসিফ আহমেদের ক্যারেকটারটা মাশুদুল হক পর্যায়ক্রমে সাজিয়েছেন নানা পরতে। প্রতিটা কেসেই আমরা আসিফ আহমেদের আলাদা আলাদা সিগনিফিক্যান্ট চরিত্রগত বৈশিষ্ট্য প্রত্যক্ষ করি। একসময়ের তুখোড় ছাত্র আসিফ আহমেদ খুব দক্ষ ক্লিনিশিয়ান। রোগীর হাঁটাচলার ধরন,শোয়ার ধরনসহ অন্যান্য শারীরিক বৈশিষ্ট্য দেখে তিনি রোগ ধরে ফেলতে পারেন। আর তার সবথেকে বড় নেশা হচ্ছে সবধরনের অ্যাটিপিক্যাল কেস। চরিত্রটির ব্যাকগ্রাউন্ড নির্মাণের দিকে খেয়াল করলে,আমরা প্রথম ২ পৃষ্ঠার মাঝেই আবিষ্কার করি যে সে সিজোফ্রেনিক। এখানে মাশুদুল হক যেন আলগোছে বলে দেন, আসিফ আহমেদ আনরিলায়েবল ন্যারেটর হলেও হতে পারে। যারা ট্রু ডিটেকটিভ দেখেছেন সেখানে খেয়াল করে দেখবেন, অফিসাররা যখন রাস্ট কোলের ইন্টারভিউ নিচ্ছিলেন,তখন রাস্ট কোল নিজেকে ফাংশনালি অ্যালকোহলিক বলে একের পর এক বিয়ারের ক্যান খালি করতে থাকেন। এই কারণে না যে কোল আসলে মদ্যপ,বরং তার বলা প্রতিটা কথা যেন কোর্টে অ্যাডমিসিবল না হয় সেজন্যই এই চালাকিটা করেছিলেন কোল। ড. আসিফ মেহেদীর এইসব অভিজ্ঞতা পুরোপুরি বাস্তব কিনা সে বিষয়ে যেন প্রশ্ন না উঠে,সেজন্য লেখক এই মোক্ষম অস্ত্রটা ব্যবহার করেছেন।
❝Illness is the night side of life, a more onerous citizenship. Everyone who is born holds dual citizenship,in the kingdom of the well and in the kingdom of the sick.❞
সব সুস্থ মানুষ একই রকম, অসুস্থ মানুষেরা নিজেদের মত করে নানা ভাবে অসুস্থ। ক্লিনিক্যাল প্র্যাকটিস যিনি করেন, তার কাছে পুরোপুরি সুস্থ মানুষ বেশ বৈচিত্রহীন প্রাণী, রোগ ব্যাধি থাকলেই তাকে নিয়ে ভাবা চলে। তবে যিনি ডাক্তার নন তার কাছে ব্যাপারটা উল্টো হওয়ার কথা। তার কাছে সব অসুস্থ মানুষ একই রকম, সুস্থরা নানা প্রকারের, নানা ধরনের। সুস্থ মানুষের জীবনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য জিজ্ঞেস করলে তারা নানা কিছু বলবে, কেউ সামনের ছুটিতে পাহাড়ে কি সাগরে বেড়াতে যেতে চায়, কেউ চায় নতুন একটা থাকার জায়গা, কেউ পালাতে চায়, কেউ আরো ধনী হতে চায়, অর্থাৎ শেষ করা যাবে না তাদের উদ্দেশ্য লিস্ট করতে শুরু করলে। আর একজন অসুস্থ মানুষ এদিক দিয়ে একদমই সোজাসাপটা, সে চায় শুধু সুস্থ হতে! রোগীদের জীবনের এই একমাত্র আকাঙ্ক্ষাটা চিকিৎসক মাশুদুল হক যে ভালো বুঝবেন এ আর আশ্চর্য কী! তাই ড. আসিফ আহমেদের মনের ভেতরও আমরা এই নরম,সিম্প্যাথেটিক দিকটার ছোঁয়া পাই বারংবার। বিশেষ করে ফাঙ্গাস আর আন্না গল্পে। নৈতিক দৃঢ়তার দিকটাও আসিফ আহমেদের মাঝে ব্রড ব্রাশস্ট্রোকে উপস্থিত।
বাংলায় বডি হরর নিয়ে কাজ এই প্রথম নয়। তবে বডি হররের সাথে মেডিকেল সায়েন্সের সহাবস্থান খুব একটা চোখে পড়ে না। হোস্ট,প্যারাসাইট, আন্না এই তিনটা কেসকে বডি হররের ক্যাটাগরিতে ফেললেও ফাঙ্গাস, ইয়ানোমামিয়ানকে সেই কাতারে ফেলা যায় না। গল্পগুলো পড়ে প্রবল ভয় ধরানো অনুভূতি হয়তো হয় না। তবে কখনো কখনো প্রবল স্নায়ু চাপে গা গুলিয়ে আসতে পারে। হোস্ট আর প্যারাসাইট এই দুটো গল্প পর্যাপ্ত ব্রিদিং স্পেস পাওয়া না গেলেও পরের গল্পগুলো যথেষ্ট ডিটেইলড। মূল ঘটনার পাশাপাশি সিলেটের গোয়াইনঘাট,ছাতক,নিজকারবাল্লার অপূর্ব প্রাকৃতিক দৃশ্যের ছিটেফোঁটা এসেছে ফাঙ্গাস আর আন্না কেস দুুটোয়। তাছাড়া রোগীদের মনস্তাত্ত্বিক ক্রাইসিস, ডাক্তারি জীবনের নানা অভিজ্ঞতা-প্রতিকূলতা,দেশের চিকিৎসাব্যবস্থার পরিস্থিতি সদর্পে বিরাজ করেছে অসচরাচরের পাতায়। আদিব রেজা রঙ্গনের ভয় ধরানো সব ইলাস্ট্রেশন কেসগুলোতে যোগ করেছে বাড়তি মাত্রা। তার কাজ অনেকটা হরর মায়েস্ত্রো জুনজি ইতোর কথা মনে করিয়ে দেয়। আশা করছি, মাশুদুল হকের এই অসচরাচর প্রয়াস জারি থাকবে। আরো কিছু মনে রাখবার মতো অ্যাটিপিক্যাল কেস পড়ার সুযোগ হবে।
আজকের ঠান্ডা ঠান্ডা সন্ধ্যায় একবসায় বইটা পড়ে শেষ করলাম। অত্যন্ত ভালো লাগলো। লাগার প্রধান কারণ দুইটা: গল্পগুলো লেখা হয়েছে খুবই অনাড়ম্বর ভঙ্গিতে, অনেকটা স্মৃতিচারণের মতো করে। ডায়েরি পড়ার মতো একটা ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয় লেখকের সাথে, এবং চিকিৎসাশাস্ত্রে তার অভিজ্ঞতা এই ডায়েরির আবহকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করে। একদিকে বিভিন্ন মেডিকেল টার্ম আর সম্ভাব্য ডায়াগনোসিসের নিরেট, ইস্পাত-শীতল বৈজ্ঞানিক নিশ্চয়তা, এবং সেখান থেকে কয়েক পৃষ্ঠার মধ্যেই অতিপ্রাকৃতের আগমন আর মানুষের জ্ঞানের সীমাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো- এই কনট্রাস্ট চমৎকার লেগেছে।
ভালো লাগার আরেকটা কারণ হচ্ছে এভাবে বডি হরর নিয়ে সরাসরি বাংলায় কাজ আমি কম পড়েছি। উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হচ্ছে সবগুলো গল্প ঠিক অতিপ্রাকৃত নয়, এবং ভালো বডি হররে যেটা থাকে সেটা এ গল্পগুলোতেও আছে। তা হচ্ছে: এখানের বেশ কিছু গল্পে শারীরিক বিকৃতি বা দেহের ভয়াবহতা আসলে মানসিক বিকৃতি বা আত্মিক যন্ত্রণার প্রতিফলন।
ভয়ের গল্প বলার জন্য প্রত্যন্ত গ্রামের চেয়ে উপযুক্ত সেটিং খুব কম আছে। এখানে তেমন জায়গা বারবার এসেছে। এখানেও মাশুদের পূর্ব-অভিজ্ঞতা বর্ণনাকে সমৃদ্ধ করেছে।
বইয়ে ইলাস্ট্রেশন আমার বেশি জমে না সত্যি কথা বলতে, তবে এখানে রঙ্গনের কাজ ভালো হয়েছে। আমাদের বইগুলো ছাপানোর সময় গাঢ় কালো রঙ খুব মার খায়, এখানেও তাই মনে হলো।
"সব সুস্থ মানুষ একই রকম, অসুস্থ মানুষেরা নিজেদের মত করে নানা ভাবে অসুস্থ। অবশ্য এভাবে একজন ডাক্তার ছাড়া অন্য কেউ হয়তো ভাববে না। ক্লিনিক্যাল প্র্যাকটিস যিনি করেন তার কাছে পুরোপুরি সুস্থ মানুষ বেশ বৈচিত্রহীন প্রাণী, রোগ ব্যাধি থাকলেই তাকে নিয়ে ভাবা চলে।
তবে যিনি ডাক্তার নন তার কাছে ব্যাপারটা উল্টো হওয়ার কথা। তার কাছে সব অসুস্থ মানুষ একই রকম, সুস্থরা নানা প্রকারের, নানা ধরনের। সুস্থ মানুষের জীবনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য জিজ্ঞেস করলে তারা নানা কিছু বলবে, কেউ সামনের ছুটিতে পাহাড়ে কি সাগরে ��েড়াতে যেতে চায়, কেউ চায় নতুন একটা থাকার জায়গা, কেউ পালাতে চায়, কেউ আরো ধনী হতে চায়, অর্থাৎ শেষ করা যাবে না তাদের উদ্দেশ্য লিস্ট করতে শুরু করলে। আর একজন অসুস্থ মানুষ এদিক দিয়ে একদমই সোজাসাপটা, সে চায় শুধু সুস্থ হতে!"
ডা: আসিফের ডায়েরি থেকে নেয়া পাঁচটি 'অসচরাচর' কেস; বডি হরর অথবা মেডিকেল হরর বলা যায়। মেডিকেলে পড়া অবস্থায় সিজোফ্রেনিয়াক হিসেবে ডায়াগনোজড হওয়া আসিফকে অনেকক্ষেত্রে আনরিলায়েবল ন্যারেটর হিসেবে ভ্রম হতে পারে; তবুও ছায়ার মতো বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের দ্বন্দ্ব জন্ম নেয় মনের ভেতর। গল্পে জোর করে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়ে যুক্তি মেলানোর প্রয়াস নেই, নেই অযাচিত ভায়োলেন্স। জোর করে ভয় দেখানোর চেষ্টা নেই, তবুও আছে অস্বস্তিকর অনুভূতি; বইয়ের নামটা উচ্চারণ করতে গিয়ে জিহবায় যেমন বাঁধে অনেকটা তেমনই যেন।
মেডিকেল টার্মগুলোকে যথেষ্ট সহজভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে গল্পগুলোতে, কারও বুঝতে অসুবিধা হবার কথা নয়। সবগুলো গল্প ভালো লাগলেও আমার সবচেয়ে পছন্দ হয়েছে "হোস্ট"।
লেখকের কাছে এই সিরিজ থেকে একটা উপন্যাস, অন্তত একটা উপন্যাসিকার দাবী রইলো।
পড়া শুরুর আগেই নজর কাড়ে বইয়ের অলংকরণ। দারুণ প্রচ্ছদটার সাথে ভেতরের ছবিগুলো ছিলো সমানে সমান।
সংকলনের গল্পগুলো নিয়ে কথা বলি এবার। অনলাইনে টুকটাক প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হচ্ছিলো যে এই বইয়ের গল্পগুলো খানিকটা দেহজ-আতঙ্ক (বডি-হরর) ঘরানার। সুনির্দিষ্ট কোনো বিষয়কে কেন্দ্র করে বাংলায় ভালো গল্পের বই দুর্লভ, চট করে মনে পড়ছে মানিক বন্দোপাধ্যায়ের ‘বৌ’, মাহবুব ময়ূখ রিশাদের ‘তর্কশয্যায় মৃত্যু’-এর কথা। মাশুদুল হকের ‘অসচরাচর’কে বেশ আগ্রহের সাথেই পড়তে বসি তাই।
সত্যি বলতে সংকলনের প্রথম গল্প হোস্ট দিয়েই বইয়ের সুরটা গেঁথে ফেলেন মাশুদুল। চমৎকার গল্প সেটা। ‘প্যারাসাইট’ও বেশ ভালো গল্প দেহজ-আতঙ্ক ঘরানায়। তবে ‘ফাঙ্গাস’ আর ‘আন্না’ গল্পদুটো ঠিক ওই ঘরানার নয়, এদের নিখাদ রহস্য গল্প হিসেবেই পড়ে গেছি। আর 'ইয়ানোমামিয়ান' গল্পটা ঠিক কোনো ঘরানাতেই পড়ে না, কাহিনিও সেখানে বেশ অনুমানযোগ্য। তবে দেহজ-আতঙ্ক ঘরানার হোক না হোক, পড়তে গিয়ে পুরো সংকলনের কোথাও আটকাতে হয় না। মাশুদুল জাত গল্পকার, তিনি ‘গল্প’ বলতে জানেন।
শেষের আগে আরেকটা ব্যাপার উল্লেখ করি। গল্পগুলোর কথক যে ডাক্তার- সিলেট এলাকার আশপাশে তার বিস্তৃত বিচরণ পাঠককে বারবার মনে করিয়ে দিয়েছে আরেকটি কাল্পনিক চরিত্রের কথাঃ কুটি কবিরাজ, যার প্রায় গল্পেই পটভূমি হিসেবে আসে সিলেটের পাহাড়ি অঞ্চল। উদ্দিষ্ট বইয়ের উৎসর্গ পাতায় কুটি কবিরাজের স্রষ্টা ‘আবদুল হাই মিনার’ এর নাম খুঁজে পাওয়াটা তাই একেবারে কাকতালীয় না-ও হতে পারে!
সবগুলো গল্পই কোনো না কোনোভাবে উল্লেখযোগ্য। একই ব্যক্তির বয়ানে বর্ণিত হলেও গল্পগুলোর মধ্যে কোনো সাদৃশ্য নেই। চমক বা পরিসমাপ্তির মধ্যেও বেশ স্বাতন্ত্র্য আছে ( ব্যক্তিগতভাবে "ইয়ানোমামিয়ান" গল্পের একদম শেষ মোচড়টা ভালো লাগেনি।) আশা রাখি, আমরা আরেকটা ভালো সিরিজ পেতে যাচ্ছি, যদি লেখক চালিয়ে যান আর কি! (আদিব রেজা রঙ্গনের আঁকা প্রচ্ছদটা আক্ষরিক অর্থেই ভয়াবহ সুন্দর।)
কোনো একটা আইডিয়ার জন্ম নিতে বেশি সময় লাগেনা। ছোটবেলায় শুনতাম ফড়িং দেখে নাকি প্রথম হেলিকপ্টারের ডিজাইন মাথায় এসেছিল মানুষের । ভিঞ্চি সাহেব পাখির ওড়াওড়ি দেখে খুব সিরিয়াস, স্কেচবুকে স্টাডিও করলেন পাখা নিয়ে। একজন উৎসাহী কৌতূহলী মানুষের চোখে বাতাবিলেবু যেভাবে সায়েন্টিফিক-কাব্যিক আসপেক্টে ধরা দেয়, অন্য কারো চোখে ওটা স্রেফ বাতাবিলেবু আর বাম্পারফলনেই সীমাবদ্ধ। ওদিকে প্রয়োজনও তো কত কি করায় আমাদের দিয়ে এই বিশ্বসংসারে। আমার স্কুলের এক অঙ্ক স্যার, উনি রুমাল দিয়ে জ্যামিতির নিঁখুত ফিগার আঁকতেন। বৃত্ত, রম্বস, কোণ সব। স্যারের অনেকদিনের অভিজ্ঞতায় হাতের কাছের সব কিছু ব্যবহার্য হয়ে গিয়েছিল। নবীন ইঞ্জিনিয়ারদের মতো বিরাট সাইজের টি-স্কেল নিয়ে ঘোরার কোনো ইচ্ছে ওনার নাই।
আরেকজন ডাক্তারের গল্প করি। ড. আসিফ আহমেদ। উনি একজন প্রান্তিক চিকিৎসকের মতো ঘুরে ঘুরে দেশের আনাচে কানাচে চিকিৎসা দিয়ে বেড়ান। নামের শেষে তেমন এফসিপিএস, এমারসিপিএস, বিডিস ইত্যাদি লসাগু গসাগু টাইটেল নেই। কিন্তু চিকিৎসা বিদ্যেটা বোঝেন খুব ভালো। ওনার সহপাঠী স্পেশালিস্ট ডাক্তার বন্ধুরা এখনো ডায়গনোসিসে সাজেশন নিতে ওনাকে ফোন করেন। কারণ সম্ভবতঃ উনি কৌতুহলী এবং উৎসাহী দুটোই। তবে ডাক্তারের মাথায় হালকা ছিট আছে, ডাক্তাররা সাহেবি ভাষায় বলেন সিজোফ্রেনিয়া। তো, এই ডাক্তার যেহেতু প্রান্তজনের চিকিৎসা দেন, তার নিকট নানান কিসিমের রোগ ব্যাধি নিয়ে হাজির হয় মানুষ। গোপন রোগ নিয়ে মানুষ স্বনামধন্য হাসপাতালে ছোটেনা বাধ্য না হলে, আগে কাছের ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে চায়। ড. আসিফ কাছের ডাক্তার। চিকিৎসা দিতে গিয়ে দেখলেন নানা সময় বেশ কিছু অস্বাভাবিক রোগের ক্লিনিক্যাল ট্রিটমেন্ট তাকে দিতে হচ্ছে। কিছু ঘটনায় ব্যক্তিগতভাবে জড়িয়ে পড়ছেন। সেসব Atypical Case গুলোকে উনি ডায়রিতে লেখা শুরু করলেন। নাম দিলেন অসচরাচর। কেসগুলো খুব অদ্ভুত। ডাক্তার নিজের আগ্রহ আর জ্ঞান কাজে লাগিয়ে যা বুঝেছেন লিপিবদ্ধ করে রাখতে চেয়েছেন ভবিষ্যতে কোথাও কোনো গবেষণায় রেফারেন্স হিসেবে কাজে লাগতে পারে বলে। এটাকে জাস্ট ভাষাশৈলী ব্যবহার করে বই আকারে রূপ দিয়েছেন লেখক মাশুদুল হক। এছাড়া ওনার বিশেষ কৃতিত্ব টিতিত্ব নেই। উনি নিজেও চিকিৎসাবিজ্ঞানের লোক তো, ডাক্তারের ডায়াগনোসিস বুঝেছেন সহজে এইই…
তো ওনার প্রথম লিপিবদ্ধ কেসটা আমি পড়েছিলাম ফেসবুকে। লেখক মাশুদুল হক লিক করে দিয়েছিলেন প্রকাশের আগেই। কেসটার শিরোনাম ‘হোস্ট’। ওখানে একজন রোগি আসে যার Limbs Transplant হয়েছে। কেসটা কি নিয়ে বলছিনা। প্রথমে ভেবেছিলাম Alien Hand Syndrome এর সেই জটিল মনস্তাত্বিক রোগ নিয়ে ঝামেলা কিনা। পড়ে দেখলাম একেবারেই না। এত্ত আগ্রহ হলো কেসটা পড়ে, আমি পুরো বইমেলার সময়টা আঁকুপাকু করতে লাগলাম ডার্ক এই বইটির জন্য, আর পেলাম একবারে শেষে। নানাজন এটাকে বডিহরর, মেডিক্যাল হরর ইত্যাদি বিভিন্ন ট্যাগ দিচ্ছে, সেসবে আমার মাথাব্যাথা নেই। বইটি যে আইডিয়া বা ধারণা থেকে জন্ম নেয়া, সেই কনসেপ্টটা আমার অসাধারণ লেগেছে। লেখকের একটা জোনড আউট করার বিশেষ ক্ষমতা আছে। খুব সাধারণ ভাষায় বর্ণণা দিয়ে অ্যাম্বিয়েন্সটা মাথায় সেট করে দিতে পারেন। তখন যেকোনো গল্পই মনে হয় ঠিকই তো, সম্ভব! প্রথম তিনটি গল্প চমৎকার লেগেছে। চমৎকার লাগার মূল কারণ তিনটি গল্প কেস স্টাডিতে সীমাবদ্ধ থেকেছে। অসচরাচর মেডিকেলীয় ঘটনা ক্লিনিক্যালি কিভাবে হ্যান্ডেল হলো, কেনো এমন হতে পারে, কি ঘটেছিল শেষে এমনটাই তো কনসেপ্ট হবার কথা। শেষ দুটোতে গিয়ে সেই কনসেপ্টটা বেশ দূর্বল হয়ে গিয়েছিল। যেকারণে ওই দুটো মনে ধরেনি। তবে ডাক্তার আসিফ আহমেদ এর জন্��� অপেক্ষায় থাকবো। লেখকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। প্লিজ ওনাকে একটু তাড়া দিন। এতো ছোট হলো কেন বইটা সেই দুঃখে তো ঘুম হচ্ছেনা। মনেহয় ট্রিটমেন্ট করানো দরকার!
বডি-হরর জনরার পাঁচটা পারফেক্ট গল্প নিয়ে সাজানো বইটার প্রচ্ছদেই নজর কাড়তে বাধ্য। ভিতরের কন্টেন্ট আর ইলাস্ট্রেশনগুলোও তৃপ্তিদায়ক। বড়ি হররের মূল বিষয়টি শারীরিক বিকৃতিজনতিত অস্বাভাবিক বিভৎসতাকে সামনে রেখে ভয় ও আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করা। প্রথম গল্প হোস্ট এর নিখুঁত উদাহরণ। এটা পড়লে পরের গল্পগুলো তো অবশ্যই, সিরিজের পরের বইটা পড়ার আগ্রহ বেড়ে যাবে। লেখকের বর্ণনা সচরাচর পরিবেশের সঙ্গে সমানতালে চলতে চলতে সূক্ষ্ম সাসপেন্স তৈরি করেছে, এটা পাঠকের ভিতর ‘লজিক্যাল ফিয়ার’ তৈরির জন্য সেরা উপায়। আস্তে আস্তে ভয়টা চাপা আতঙ্ক তৈরি করে, এই আতঙ্কই আমার বইটা উপভোগের প্রধান কারণ। ছিমছাম বর্ণনা কিন্তু ভয়ের আবহ দারুণ বিল্ড আপ করেছে। সচরাচর না ঘটে এমন প্লটই উপজীব্য তাই সেগুলো যে যথেষ্ট ইন্টারেস্টিং হবে তা বলতে হয় না আর।
গল্পগুলোর কন্টেক্সট আউট অফ দ্য বক্স সন্দেহ নেই। কোন জনরায় পড়বে? বডি হরর- এটা নিয়ে তো বটেই হরর নিয়েই আমার খুব বেশি জানাশোনা নেই৷ মেডিকেল ফ্যান্টাসি? হতে হতে হয়নি মনে হলো।
মাশুদুল হকের ডক্টর কিজিল পড়েছিলাম। নিখাদ সায়েন্স ফিকশন। উদ্ভট প্লটের গল্পগুলোর লজিকাল ব্যাখ্যাগুলো বেশ লেগেছিলো। অসচরাচর খানিকটা অমন হবে ভেবেছিলাম।
পারফেক্ট ছোটগল্পের যেই অলিখিত নিয়ম, শেষ হইয়াও হইলো না শেষ- সেইটার পুরোদস্তুর ইমপ্লিমেন্ট করতে পেরেছেন লেখক। প্রতিটা গল্পেই মনে হচ্ছিলো, এখানে শেষ না হলেও পারতো।
তবে এটা আমি প্রশংসা হিসেবে লিখিনি। বইটা অনেকেরই ভালো লেগেছে দেখলাম। আমারও খারাপ লাগেনি। সম্ভবত আমার এক্সপেকটেশন আমাকে হতাশ করেছে।
অতিপ্রাকৃত কিংবা হরের সাথে মেডিকেল সায়েন্স ব্লেন্ড করে, আউট অফ দ্য বক্স প্লটের উপরে এক্সিকিউজশন কি পারফেক্ট হলো?
আমার কাছে মনে হয়নি। শুরুতে যেই প্লট বিল্ডআপ করেছেন লেখক, ডাক্তার আসিফ যেভাবে একে একে মেডিকেল প্রসিডিওরাল কথাবার্তা বলে যাচ্ছিলেন, তাতে একজন মেডিকেল স্টুডেন্ট হিসেবে আমি কানেক্ট করতে পারছিলাম বটে- কিন্তু অতিপ্রাকৃত ঘটনাগুলোর মেডিকেলীয় ব্যাখ্যা থাকবে ভেবেছিলাম।
এই না পাওয়াটাই আমাকে হতাশ করেছে। এ বাদে আর কোনো অভিযোগ নেই আমার।
বইয়ের সেরা গল্প "ইয়ানোমামিয়ান"। এই গল্পটির প্লট, দুই চরিত্র পদ্ম-লিলি, গল্পের বিস্তার, সংলাপ, ঘটনাপ্রবাহ, এন্ডিং, টুইস্ট- সবকিছুই মুগ্ধ করেছে আমাকে।
বডি-হরর নামক ধারায় বাংলা সাহিত্যে বিশেষ লেখালেখি হয় না। যেটুকু হয়, তাকেও শৈল্পিক কায়দায় ডার্ক ফ্যান্টাসি বলে চালানো হয়। এর কারণটি সহজবোধ্য। শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে আলোচনার আমাদের একটা অলিখিত ট্যাবু আছে। পান ব্যবহার না করেই বলি, এ-বিষয়ে আমরা সবাই একটু বেশি স্পর্শকাতর। সেই অপুষ্ট সাহিত্য-দেহে এমন একটি গল্প-সংকলন তাজা রক্তের মতোই কাজ করেছে। গল্পগুলোর প্রোটাগনিস্ট ডক্টর আসিফ আহমেদের 'পূর্বকথা'-র পর এতে আছে~ ১) হোস্ট— বিশুদ্ধ মাকাবর গল্প; ২) প্যারাসাইট— এই বইয়ের সবচেয়ে মারাত্মক লেখা; ৩) ফাঙ্গাল— ভয়ের নয়, বরং অস্বস্তি, আর কিছুটা করুণার গল্প; ৪) ইয়ানোমামিয়ান— কিছুটা প্রত্যাশিত পথে চলেও গল্পটা শেষে গিয়ে মারাত্মক ঝাঁকুনি দেয়; ৫) আন্না— লেখাটা সাংঘাতিক, কিন্তু এমন জায়গায় ছাড়া হয়েছে যে উপায় থাকলে লেখকের বাড়িতে চড়াও হয়ে বাকিটা আদায় করতাম। সব মিলিয়ে বলতে হয়, অলৌকিক আর থ্রিলারের সাদা-কালো বিভেদের বাইরে গিয়ে এই নরদেহ নিয়ে লেখা কিছু সিরিয়াসলি শিহরন-জাগানিয়া গল্প আছে বইটিতে। বানানের অবস্থা শোচনীয় হলেও ছাপা ও পাতার মান দুর্দান্ত। অলংকরণ ও প্রচ্ছদও দারুণ। 'অন্যরকম' লেখা পড়তে চাইলে এই ভারে কম, ধারে বেশি বইটিকে কোনোমতেই উপেক্ষা করবেন না।
অসচরাচর মূলত পাঁচটি অ্যাটিপিক্যাল কেসের বিবরণ। এ কেসগুলো সচরাচর দেখতে পাওয়া যায় না। এগুলোর দেখা মিলে হঠাৎ, আচমকা। কিংবা লেখক মাশুদুল হকের ভাষায় বলতে গেলে বলতে হয় 'অসচরাচর'। যদিও বইয়ের ভেতর অ্যাটিপিক্যাল শব্দটাই লেখক ব্যবহার করেছেন বেশি। সম্ভবত এ শব্দটা অধিক প্রচলিত বিধায়।
মাশুদুল হকের লেখনী নিয়ে আলাদা করে বলার কিছু নাই। সেই ভেন্ট্রিলোকুইস্ট থেকেই যথেষ্ট পরিণত ও পরিমিত লেখনী মাশুদুল হকের। বর্তমানে তা আরো ধারালো ও শাণিত। তার প্রমাণ মেলে এই সংকলনে। সংকলনের অ্যাটিপিক্যাল কেসগুলোর নায়ক একজন ডাক্তার। এমবিবিএস ডাক্তার। তার ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতার বয়ান হলো 'অসচরাচর'। এই কেসগুলো ভীতিকর যতটা না তারচেয়ে বেশি অস্বস্তিকর। গলায় কাঁটা বিঁধে গেলে যেরকম অস্বস্তি লাগে, অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ হয়, গল্পগুলো যেন ওরকমই। দু'একটা গল্প তো মাথা নষ্ট করা ভালো। যেমন প্রথম গল্প হোস্টের কথা ধরা যাক কিংবা দ্বিতীয় গল্প প্যারাসাইট। চার নাম্বার গল্প ইয়ানোমামিয়ান নিয়ে তো পুরোদস্তুর উপন্যাস লেখা সম্ভব। নিদেনপক্ষে একটা নভেলা। আশা করি লেখক পরবর্তীতে এরকম অ্যাটিপিক্যাল কেস থেকে একটা উপন্যাস লিখবেন।
বডি হরর জনরার দিকপাল ডেভিড ক্রোনেনবার্গের হাতে এই সংকলন পড়লে তার চোখ চকচক করে উঠতো নিশ্চিত। কে জানে দু'একটা গল্প থেকে তিনি হয়তোবা একটা ফিচার ফিল্ম নামিয়ে ফেলতেন!
রঙ্গনের করা প্রচ্ছদের কথা আলাদা করে বলতেই হয়। পুরা মাখন!
বইটা বেশ কিছুদিন ধরেই জমিয়ে রেখেছিলাম। অবশেষে পড়ে ফেললাম। আর অভিজ্ঞতা এককথায় অসাধারণ। অনেকদিন পর একটা ভালো বই পড়লে যেমনটা অনুভূত হয় ঠিক সেরকমই। ডক্টর আসিফের পাঁচটা কেস নিয়ে এই বইটা। সব কটা কেসই অসাধারণ। ভয়াবহ কিছু নেই, কিন্তু পড়তে গিয়ে কিছুটা অস্বস্তি হবে, মাঝেমধ্যে একটু শীতল স্রোতও বয়ে যাবে। এরকমই অ্যাবসার্ড ও উইয়ার্ড অসচরাচর কেসগুলো। সবথেকে ভালো লোগেছে ফাঙ্গাল ও ইয়ানোমামিয়ান গল্প দুটো। দুটো গল্পই সুন্দর, কিন্তু এন্ডিংটা চমকে ওঠার মত। পুরো বইয়ের সবথেকে স্পেশাল ব্যাপার হল লেখকের বর্ণনাভঙ্গি। এত সাবলীল যে, চোখের সামনে সবকিছু ভেসে ওঠে। যাইহোক, ডক্টর আসিফের আরও কেস হিস্ট্রি পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।
"সব সুস্থ মানুষ একই রকম, অসুস্থ মানুষেরা নিজেদের মত করে নানা ভাবে অসুস্থ।"
বহুদিন পর কোনো গল্পসংকলন পড়ে সম্পূর্ণ তৃপ্তি পেলাম। বই দুটো শেষ করার পর আফসোস হচ্ছে—কেন শেষ হয়ে গেল! "অসচরাচর" এবং "অসচরাচর ২" এই দুই সংকলনের নয়টি গল্পই মুগ্ধ, বিস্মিত আর শিহরিত করেছে। গল্পের সহজবোধ্য ভাষাশৈলী সাধারণ পাঠকদের কাছে বই দুটোকে খুব দ্রুত পৌঁছে দিবে আর বোদ্ধা পাঠকের জন্যও রয়েছে ভাবনার খোরাক।
প্রতিটি গল্পকেই মেডিকেল বা বডি হরর বলা যায়। গল্পের মধ্যে ব্যবহৃত মেডিকেল টার্মগুলো এত সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে, যেকোনো পাঠক অনায়াসেই গল্পগুলো উপভোগ করতে পারবেন। লেখক মাশুদুল হক দক্ষতার সঙ্গে ডাক্তার আসিফ আহমেদ চরিত্রের ��াধ্যমে সবগুলো গল্পকে সংযুক্ত করেছেন এবং গ্রামীণ আবহ ব্যবহার করে গল্পগুলোর ভীতিকর অনূভূতিকে আরও বাস্তব করে তুলেছেন—এই বিষয়টা আমার খুব ভালো লেগেছে।
"অসচরাচর" সংকলনের পাঁচটি গল্প—হোস্ট, প্যারাসাইট, ফাঙ্গাল, ইয়ানোমামিয়ান এবং আন্না; এবং "অসচরাচর ২"-এর চারটি গল্প—পিচ্ছিল, নির্বাণ আশ্রম, মেরিনা এবং পাথর—প্রতিটি গল্পই অনন্য ও সমানভাবে দুর্দান্ত লেগেছে। তাই নির্দিষ্ট করে কোনো একটি প্রিয় গল্প বেছে নেওয়া সম্ভব হয়নি।
বইয়ের নামের মতোই প্রতিটি গল্প "অসচরাচর", যা সাধারণত আমাদের কল্পনারও বাইরে। পড়তে পড়তে আপনি ভয় পাবেন, শিউরে উঠবেন, অস্বস্তি অনুভব করবেন, আবার বিস্মিত হয়ে চিন্তায় নিমগ্ন হবেন। কিছু বিষয় নিয়ে হয়তো আমার মতো ইন্টারনেটে অনুসন্ধান করতেও বাধ্য হবেন! এমন গল্পসংকলন আপনার অবশ্যই পড়া উচিত। হাইলি রেকমেন্ডেড।
শামীম আহমেদ এবং আদিব রেজা রঙ্গনের করা প্রচ্ছদ ও ইলাস্ট্রেশন প্রতিটি গল্পের আবহের সঙ্গে দারুণভাবে মানানসই এবং মনোমুগ্ধকর। চিরকুটের প্রোডাকশন কোয়ালিটি আর বইয়ের মূল্য নির্ধারণ একদম যথার্থ। লেখকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই এমন অনবদ্য গল্প উপহার দেওয়ার জন্য। পরবর্তী বইয়ের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় রইলাম!
এক বসাতেই চা-সিগ্রেট খেতে খেতে পড়ে ফেলার মতন বই 'অসচরাচর'। টোটাল ৫ টা গল্প নিয়ে লেখা অসচরাচর। গল্পগুলো একজন তরুণ ডাক্তারের জার্নালে লেখা কিছু অ্যাটিপিক্যাল কেসের উপর ভিত্তি করে লেখা। পাঠককে ভালোভাবেই নিবিষ্ট করে রাখার মতন সেসব অতিপ্রাকৃত ঘটনা।সব মিলিয়ে ভালো। হ্যাপি রিডিং💙
রিডার্স ব্লকের মতো কিছুদিনের জন্য রিভিউ ব্লকে চলে গেছিলাম সম্ভবত কারণ বইটা অলমোস্ট চারদিন আগে পড়া শেষ কিন্তু কোনোভাবেই রিভিউ লেখা আর হচ্ছিল না। অবশেষে লিখতে বসেছি! ছোটগল্প বা অণুগল্পের প্রতি আগ্রহ কম আমার। অধিকাংশ সময়ই এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে যে শুরুটা ভালো লাগলেও শেষটা কেমন জানি খাপছাড়া লাগে। কিন্তু এই বইয়ের চারটা গল্প আমার অনেক ভালো লেগেছে। সুতরাং বইয়ের একটা রিভিউ না দিলে অন্যায় হয়ে যায়।
তুখোড় স্টুডেন্টদের প্রতি প্রায় সবার আলাদা একটা টান থাকে। আশা যেমন থাকে তেমনি থাকে স্বপ্নও। ডা. আসিফ আহমেদ এমনই একজন ব্যক্তি। ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষার আগ দিয়ে মারাত্মকভাবে সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হন। জীবনের পরিকল্পিত হিসাবনিকাশে গন্ডগোল হলেও সবকিছু লন্ডভন্ড হয়ে যায়নি। নতুন করে জীবন শুরু করেন সাথে নতুন একটা অভ্যাসও করেন, অ্যাটিপিক্যাল কেসগুলো লিখে রাখেন। তেমনি পাঁচটি ❝অ্যাটিপিক্যাল কেস❞ নিয়ে লেখা ❝অসচরাচর❞।
হোস্ট (𝐇𝐨𝐬𝐭): সিলেট শহরের কমলাকান্দিতে জীবনটা অনেকটাই গুছিয়ে নিয়েছেন ডা. আসিফ। প্রায় রাত পর্যন্তই রোগী দেখা চলে। তবে গভীর রাতে আসা রুগীরা একটু অদ্ভুত আচরণ করেন হয়তোবা নিজের রোগ বলতে সংকোচ করেন বা বলতে ভয় হয়! এমন একদিন রাত সাড়ে এগারোটায় আছেন এক রোগী, জানান আগেও দেখা হয়েছে। কয়েক বছর আগে ঘটে যাওয়া এক্সিডেন্টে তার বিচ্ছিন্ন হাত জোড়া লাগানোর অপারেশনে আসিফ ছিলেন। রোগীর অদ্ভুত অভিযোগ আর আবদার শুনে হকচকিয়ে যান। জোড়া লাগানো হাতটা কিছুটা অন্যরকম কিন্তু দাবি করেন এটা অন্য কারো হাত আর সেটা যেন কেটে ফেলা হয়!
𝗕𝗼𝗱𝘆 𝗜𝗻𝘁𝗲𝗴𝗿𝗶𝘁𝘆 𝗗𝘆𝘀𝗽𝗵𝗼𝗿𝗶𝗮 নিয়ে আগেই মোটামুটি একটা ধারণা ছিল। শুরুর দিকে মনে হচ্ছিল এমনই কোনো কেস হবে কিন্তু...!!! সমাপ্তি এককথায় "অসাধারণ"! আসিফের ওপর রাগও হচ্ছিল কীভাবে রোগীর অবস্থা দেখার পরও বেমালুম ভুলে গেলো! আমিনুলের চরিত্রটা বেশ রহস্যময়। কেন আসিফ ছাড়া আর কোনো ডাক্তারের কাছে যেতে চাচ্ছিল না? মেডিক্যালের ছোটখাটো টার্মগুলো সুন্দর করে আলোচনা করা হয়েছে।
প্যারাসাইট (𝐏𝐚𝐫𝐚𝐬𝐢𝐭𝐞): পুরোনো বন্ধু বা পরিচিতদের এড়িয়ে চলেন আসেফ যেন অতীত ক্ষতে নতুন করে কেউ খোঁচাতে না পারে। কিন্তু হুট করেই দেখা হয়ে যায় এককালের প্রতিদ্বন্দ্বী ডা. বাবলির সাথে। সাথে অবশ্য খোঁজ পায় অদ্ভুত একটা কেসেও! লোকচক্ষুর আড়ালে কেন রাখা হয়েছে এক গর্ভবতী নারীকে?
প্যারাসাইট, ফিটাস, একটোপিক প্রেগনেন্সি, প্লাসেন্টাসহ বেশ কিছু মেডিক্যাল টার্মের দিকগুলো দারুণভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। শেষটা কী হবে মোটামুটি একটা ধারণা করলেও বাবলির সাডেন স্টেপ চমকে দিয়েছে!
ফাঙ্গাস (𝐅𝐮𝐧𝐠𝐮𝐬): ছাতকে নতুনভাবে চেম্বারে বসেছেন আসিফ। প্রথমে রোগী কম হলেও ধীরে ধীরে সংখ্যা বাড়তে থাকে। কিছুদিনের পরিচিত সারওয়ার সাহেব যখন সমস্যা নিয়ে আসেন, বেশ দ্বিধায় পড়ে যান। রোগীর বদলে শুধু ছবি দেখে চিকিৎসা! দাফনের সময় আলমগির সাহেবের মায়ের লাশ দেখে মনে সন্দেহ দানা বেঁধে ওঠে। আগেও দেখেছে এমন কিন্তু কোথায়?
গল্পটা অদ্ভুত সুন্দর। যদি পড়ে থাকেন তো মনে হতে পারে সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে কী এমন বলা সম্ভব? সুস্থ মানসিকতার কথা বাদ দিয়ে যদি শুধু অনুভূতির কথা বলি তো বলবো "পবিত্র সুন্দর"। ব্যক্তির কাজ না বরং ভালোবাসা বড় করে দেখানো হয়েছে। যেখানে কারো মৃত্যুতে কয়েকদিন শোক প্রকাশ করে মানুষ ভুলে নতুন করে জীবন শুরু করে সেখানে প্রিয়জনের জন্য সম্পূর্ণ জীবন কে লিখে দিতে পারে? শেষ অংশে হিমঘরের বর্ণনা যেভাবে করা হয়েছে মনে হচ্ছিল ধবধবে সাদা ঠান্ডা বাতাস ও বরফে ঢাকা রুমটা দেখতে পারছি!
ইয়ানোমামিয়ান (𝐘𝐚𝐧𝐨𝐦𝐚𝐦𝐢𝐚𝐧): দুই জমজ বোন লিলি ও পদ্ম। পদ্ম মায়ের মতো লিলিকে আগলে রাখে। জমজ হওয়ার পরও লিলি পড়ে কলেজে আর পদ্ম ভার্সিটিতে। কারণ অতীতের একটা ঘটনা লিলির জীবন থেকে কয়েকবছর কেড়ে নিয়েছে! কী সেই রহস্য? ধীরে ধীরে পদ্মের সাথে আসিফের সম্পর্ক গড়ে উঠতে থাকে। কিন্তু হঠাৎ একদিন সব যোগাযোগ বন্ধ করে উধাও হয়ে যায় পদ্ম! মাসের পর মাস তারা পদ্মকে খুঁজে চলেছে কিন্তু তার কিছু চিঠি ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না! পদ্মের এই রহস্যময় অন্তর্ধানের কারণ কী?
শুরুতে সাধারণত এক প্রণয়ের গল্প মনে হচ্ছিল। কিন্তু পদ্মের নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে কাহিনি ইন্টারেস্টিং হতে থাকে। তবে সমাপ্তি অংশটাই গল্পের সেরা অংশ। নিখোঁজ রহস্যের সমাধান এইভাবে হবে কল্পনাও করতে পারি নাই।
আন্না (𝐀𝐧𝐧𝐚): পাহাড়ের খাদে অজ্ঞান অবস্থায় এক তরুণীকে পাওয়া গেছে। আসেফদের হাসপাতালে চিকিৎসা চলে কিন্তু তরুণী কোনোভাবেই নিজের অতীত মনে করতে পারে না! আসেফ নিজেই অপরিচিতার নাম দেন, "আন্না"। আন্নার স্মৃতি ও পরিবারের খোঁজ করতে যেয়ে আসেফ পড়ে যায় বিপাকে! কারা যেন পিছু নিয়েছে! কিন্তু কেন?
শুরুটা ভালো হলেও বাকি অংশ তেমন ভালো লাগেনি। আন্নার রহস্য অনুমেয়। আসলে বলতে গেলে কাহিনি প্রথমে ধীরে এগিয়ে শেষে হুট করে শেষ। আর এতো ক্ষমতাশীল দল হয়েও কেন দুজনের লোকেশন ট্যাক করতে পারেনি এটা আজব লেগেছে। সায়েন্স ফিকশন ধাঁচের গল্প বলা যায় আরকি।
❝সব সুস্থ মানুষ একই রকম, অসুস্থ মানুষেরা নিজেদের মতো করে নানাভাবে অসুস্থ। অবশ্য এভাবে একজন ডাক্তার ছাড়া অন্য কেউ হয়তো ভাববে না।❞
ডা. আসিফের জবানিতে পাঁচ অদ্ভুত কেসের বর্ণনা পাঠক পাবেন। মেডিক্যাল টার্মের বর্ণনা লেখক যেমন দক্ষভাবে করেছেন তেমনি প্রকৃতির সৌন্দর্যও দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। দু'বসায় প্রথম দুটো গল্প শেষ করলেও শেষের তিন গল্প একবসায় শেষ করেছি। গল্পগুলো খুব একটা ভয়ের না তবে কেমন জানি অস্বস্তি দেয়। রাত প্রায় দুটায় যখন বইটা শেষ করে উঠি তখন কেমন জানি গা শিরশির করছিল! চিরকুটের প্রোডাকশন নিয়ে নতুন কিছু বলার নাই। বইয়ের জ্যাকেট কভারের সাথে আঠা দিয়ে না লাগানোর জন্য ধন্যবাদ চিরকুটকে। পড়ার সময় জ্যাকেট আলগা করে রেখে পড়তেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। বইয়ের প্রচ্ছদ ও ভেতরের ইলাস্ট্রেশনগুলো অনেক সুন্দর।
১ অক্টোবর, শুক্রবার রাত। পড়াশোনা শেষে রাতে অভ্যাস অনুযায়ী হাতে নিলাম 'অসচরাচর'। সাধারণ অর্থে সচরাচর যা ঘটে না তাই অসচরাচর!
ডা. আসিফ একজন ক্লিনিশিয়ান। রোগী দেখার পাশাপাশি অদ্ভুত এ্যাটিপিক্যাল কেসগুলো তিনি নিজের ডায়েরিতে বিশদভাবে লিপিবদ্ধ করেন। এই বইয়ের গল্পগুলো অনেকটা মেডিকেল হরর –বিশেষ করে বডি হরর ধাঁচের। পড়তে পড়তে বারবার মনে হচ্ছিল এরপর কী হবে? আর এভাবেই পৃষ্ঠা পাল্টাতেই উন্মোচিত হতে লাগলো সব আলৌকিক ঘটনা! এক বসাতেই পড়ে ফেললাম 'অসচরাচর' এর দুটি বই। এটা কোনো বিশেষ কৃতিত্ব নয় বরং লেখকের বইই ছোটখাটো। আরেকটু বড় হলে ভালো হত না? মেডিকেল টার্ম গুলোও ব্যাখ্যা করা হয়েছে চমৎকারভাবে! প্রচ্ছদ আর ইলাস্ট্রেশন দারুণ! পরবর্তী চারটি গল্প আমাকে বেশ অভিভূত করেছে। সবচেয়ে ভালো লেগেছে প্যারাসাইট! উঁহু, ইয়ানোমামিয়ান ও অসাধারণ!
আচ্ছা, যমজদের সব কিছুতেই তো মিল থাকে—নামেও। পদ্ম ও লিলি দুইটি ফুলের নামই । শেষের জন্য কদমই প্রস্তুত ছিলাম না!
লেখকের চিকিৎসাশাস্ত্রে অভিজ্ঞতা, বিভিন্ন মেডিকেল টার্ম আর ডায়াগনোসিসের বিশ্লেষণ—সব মিলিয়ে বইটি পড়ে একেবারে ভিন্নরকম স্বাদ পেলাম।
লেখকের বইয়ের সঙ্গে এটাই আমার প্রথম অভিজ্ঞতা। অন্য বইগুলো সংগ্রহ করার ইচ্ছা জাগছে!
Illness is the night side of life, a more onerous citizenship. Everyone who is born holds dual citizenship, in the kingdom of the well and in the kingdom of the sick." –Susan Songtag, Illnesses as Metaphor
সামনেই পরীক্ষা, এখন বসে বসে একাডেমিক বই পড়ার কথা। ভাবলাম এই বইটা নেই, একটা করে গল্প পড়বো। ওমা, তারপর টানা একঘন্টা কোনদিকে না তাকিয়ে এই বই আমি পড়ে শেষ করে ফেললাম। ৫টা গল্প, এত ইন্টারেস্টিং যে আমি নিজেকেই থামাতে পারিনি। লেখকের স্বার্থকতা এইখানেই। পাঠককে এই বইটা জাপটে ধরে রাখার ক্ষমতা রাখে। অদ্ভুত সব গল্প, অদ্ভুত সব প্লট, চরিত্র বিন্যাস, পরিবেশ বর্ণনা এবং প্রতিটা গল্প বলার যে ধরন... আমার খুব ভাল লাগলো। লেখকের লেখা এই প্রথম পড়লাম। এখন বাকিগুলো খুঁজছি।
আজ থেকে ঠিক এক সপ্তাহ আগে, জুম্মার নামাজের পর বাবা বাসায় এসেই বিছানায় ভূপাতিত হয়ে আম্মুকে হাজার বছরের পুরোনো সব উপায়ে যথাসম্ভব বিরক্ত করার অভিপ্রায়ে শব্দে জব্দ করার ফন্দি ফিকির করছিল । আকস্মিক বুক পেট যন্ত্রনা,গলা জ্বলে যাচ্ছে বলে হঠাৎ বসে উঠলো.
আইবিএস-হাইপারটেশন-ডায়বেটিসের ত্রিশক্তি রোগী, খান্দানি পেটে খানা দানা বুঝেশুনে না খেলেই গোলযোগ ঘটে প্রায়শ, সপ্তাহ দুয়েক ধরেই সিম্পটম দেখে dyspepsia ধরে রাখা আমি খানিকটা জোর করে ই নিলাম এন্ডোস্কপির পূর্ববর্তী পরীক্ষার অংশ হিসেবে ইসিজি ইকো করাতে। বিকাল পাঁচটা দশে বাপ-বেটি রিকশায় যতটা ফুরফুরে মেজাজে ইবনে সিনায় ঢুকেছিলাম, পাঁচটা বিশে আঁকাবাঁকা ইসিজির রেখা নিয়ে এলো ইহজাগতিক সবচেয়ে ভয়ের বার্তা নিয়ে।ইকোতে - mild systolic dysfunction, hypokinesia, decrease Ef। শূন্য মাথা, ভয়ার্ত মন ,উদ্ভ্রান্ত দৃষ্টিতে মনে করার চেষ্টা করলাম মায়োকার্ডিয়াল ইনফ্রাকশনের কোন পয়েন্টটা হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিল,দেখতে তারে পাইনি আমি!এত অসহায়,এত দিশেহারা তো গত তিন মাসে কমকরে কতশতবার এংজাইটি এ্যাটাকেও আমার হয়নি ।করিডোরের কিনারে কবরসম কষ্টভারে typical case of MI পৃথিবীর সবচেয়ে atypical presentation নিয়ে সামনে এলো টুপ করেই।এই পৃথিবীর পান্থপথে; প্রিয়জনের প্রয়োজন প্রার্থনার প্রত্যাশায়, ঠিক অপ্রত্যাশিত ভাবেই সুস্থতা কামনা করি শব্দে ই শেষ হয়ে গেলো এক লহমায়।অথচ আমার দরকার ছিল অপরপ্রান্তের একটুখানি সাহসের,আশ্বাসের,আশ্রয়ের।A very typical দায়সারা নেহাতই অনাগ্ৰহী presentation of a human to another distressed human.সাইলেন্ট হার্ট এ্যাটাক loud and clearly জানান দিলো, কোথাও কেউ নেই,থাকে না,থাকার নয়।পথ তোমার একলা চলার।ঘরেতে বা মনেতে নিত্য আসা যাওয়ার মাঝে যাবতীয় দায়ভার একান্ত ব্যক্তিগত, সমষ্টিগত শুধু দেনা। পাওনা কক্ষনো পাওয়া যায় না।
প্রাকৃতিক, অলৌকিক বা জাগতিক কোন নিয়মে জানি না,এক প্রহর যদি প্রশান্তির পরশ থাকে তো কয়েক মাস কাটে অবর্ণনীয় মর্মযাতনা,বিপদের বেড়াজালে। যেখানে, হোস্ট আমি,প্যারাসাইট পারিপার্শ্বিক মানুষ,ফাঙ্গাল ইনফেকশনের মতো মনুষ্য সৃষ্ট দগদগে ক্ষত, ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও না হতে পারি আন্না,না ইয়ানোমামিয়ান।
অথচ ডাঃ আসিফ হতে আমার এখন বড্ড ইচ্ছে করে। কল্পনাশীল মননে যাপিত জীবনের সমস্ত সমস্যার সমাধান হবে স্বপ্নে,বহুদিন পরে ঘুম ভেংগে উঠবো এক নির্জন লোকালয়ে।থাকবে না পিছুটান, পোস্ট গ্ৰ্যাজুয়েশনের পিচ্ছিল পথ,পরিবারের অগুনতি আশায় আপাদমস্তক ডুবে থাকা এক ক্লান্ত পথচারী।
পরক্ষনেই বাবার সার্জারি,মায়ের উর্ধ্বমুখী সুগার আর ভাইয়ের আবদারের মাঝে মনে পড়ে,এই চরাচরে এহেন অসচরাচর সচরাচর সবার সহে না।
তবু আমার বাবা মা যেন থাকে দুধে ভাতে,শত্তুরের মুখে ছাই দিয়ে, মৃত্যুকে পাশ কাটিয়ে শতায়ু নিয়ে।
পাঁচটা গল্পের সবগুলোই ভালো লাগল। একটা গল্প অন্যটা থেকে পুরোপুরি আলাদাই বলা চলে। যোগসূত্রটা রেখেছেন একটা নির্দিষ্ট চরিত্র ডাক্তার আসিফের বয়ানে বর্ণিত হওয়ার মাধ্যমে। এই বইয়ের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বস্তু হচ্ছে গল্পগুলোর প্লট। এই ব্যাতিক্রমী প্লটে বেশ উপভোগ্য ভঙ্গিতেই গল্প বলে গেছেন মাশুদুল হক। একই বছরের বইমেলায় দুটো চমৎকার বই উপহার দেয়ায় লেখক সাহেব বাহবা পেতেই পারেন।
বডি হরর নিয়ে এই গল্পগ্রন্থ অসাধারণ লেগেছে এক কথায় বলতে গেলে। এই মেলায় দুইটা বই ��িয়েই পাঠকদের ধরে রেখেছেন মাশুদুল হক। প্রত্যেকটা গল্প ইউনিক প্লট, ক্রিপি আর দারুণ অস্বস্তিতে ফেলেছে। তার উপর আমার জন্মভূমি সিলেটের উপর সব গুলো গল্প গেয়েছেন লেখক যার ফলে মনে হচ্ছিলো নিজে সেখানে উপস্থিত ছিলাম।
একটা বিষয় আমার মন খারাপ করেছে সেটা আমার একান্তই ব্যক্তিগত মতামত:- এই বইয়ের দুইটা গল্প; প্যারাসাইট ও ফাঙ্গাল ইতোপূর্বে বইঘর নামের এক ইবুক প্লাটফর্মে একটোপিক ও হিমঘর নামে প্রকাশ পেয়েছে তাই এই দুইটা এখানে স্থান পাওয়ায় আমার কাছে মাত্র ৩ টা গল্পই উপভোগ করতে পেরেছি। প্রকাশিত গল্প গুলো এখানে না এনে অন্য কোনো গল্প হলে ভালো হতো। যাই হোক এটা পাঠক বলার কেউ না।
বডি হরর জনরার গল্প গুলো পড়ে পরোখ করতে পারেন ডাক্তারদের অদ্ভুত এই জগতগুলোকে।
৩.৫ ★ প্রথম দুটো গল্প যেভাবে কাহিনীর সাথে হুক করেছে সেই তুলনায় বাকিগুলো বেশ দুর্বল। বিশেষ করে তৃতীয় ও চতুর্থ গল্প দুটো পড়ে সেভাবে টানলো না। ভেবেছিলাম শেষ গল্পটাতে হয়ত বেশি বেশি কিছু পাব কিন্তু পেলাম না। ডাক্তারের মাঝেমধ্যে একটু রোমান্টিক হয়ে যাওয়াটা কিঞ্চিৎ বেমানান লেগেছে। তবে 'হোস্ট' এবং 'প্যারাসাইট' দুটো গল্পই ব্রিলিয়ান্ট। ইয়ানোমামিয়ান গল্পটা নিয়ে একটু দোটানায় আছি তবে ওটা মোটামুটি ভালোই লেগেছে।
বছরের শুরুতে লেখকের 'ডায়াসপোরা ব্লুস' পড়ে উড়ে গিয়েছিলাম। চমৎকার প্লট, এক্সিকিউশন, সাথে সহজ সরল গদ্য- এক বসায় পড়ে ফেলার মতো সমস্ত উপকরণই ছিল সেই উপন্যাসে। পরিচিত পাঠকদের ইতিবাচক সব প্রতিক্রিয়া এবং পূর্বের দারুণ অভিজ্ঞতার দরুণ আকাশচুম্বী প্রত্যাশা নিয়ে পড়া শুরু করলাম অ্যাটিপিক্যাল সব মেডিকেল কেস নিয়ে বডি-হরর গল্পের সংকলন অসচরাচর।
প্রথম গল্প 'হোস্ট' এর শেষটা ব্যক্তিগতভাবে অনুমেয় ছিল। তবে নড়েচড়ে বসতে হয় গল্পের বিষয়বস্তু নিয়ে। দ্বিতীয় গল্প 'প্যারাসাইট' এর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরোটাই অনেক সুলিখিত হওয়ায় দারুণ একটি গল্প হয়ে উঠেছে এটি। পাঁচটি গল্পের মধ্যে আমার ব্যক্তিগতভাবে সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে 'ফাঙ্গাল'। রাত্তিরবেলা টেবিল ল্যাম্পের আলোতে পড়তে যেয়ে ভালোই ভয় পেয়েছিলাম মনে আছে। সংকলনের শেষ দুই গল্প 'ইয়ানোমামিয়ান' ও 'আন্না' বাকি গল্পগুলোর তুলনায় কিছুটা ম্লান মনে হয়েছে।
সবকিছু মিলিয়ে অসচরাচর পাঠের অভিজ্ঞতা ভালো বলা চলে। তবে প্রত্যাশার পারদ আরেকটু নিচে নামিয়ে পড়লে আরো বেশি উপভোগ্য হয়ে উঠতে পারত গল্পগুলো।
'ডাক্তার সাব আমি হাতটা আর রাখতে চাই না। আমার সারাক্ষণ মনে হয় এইটা ওই মরা মানুষটার হাত, এই হাত আমারে গলা টিপা মারবো।'
অদ্ভুতুড়ে কেস। অস্বাভাবিক। যা সচরাচর ঘটে না বা দেখা যায় না। যেমন ধরুন উপরোক্ত কেস। আপাতদৃষ্টিতে যেটা রোগীর নিজের হাত বলেই মনে হয়, সেই হাত না-কী রোগীর নিজের হাত না। এতটুকুও না হয় মানা গেল। অনেক সময়েই আমরা পত্রপত্রিকায় পড়ি ডাক্তার সাহেব অপারেশনের পর ভুল করে পেটের ভেতর স্পঞ্জ, সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি ইত্যাদি রেখেই পেট সেলাই করে দিয়েছেন। অথবা কাটার কথা অ্যাপেন্ডিক্স, কেটে দিয়েছেন হিসুর লাইন। কী বিতিকিচ্ছিরি ব্যাপার বলুন দেখি। তাই অন্যের হাত ভুল করে লাগিয়ে দেয়া পর্যন্ত মানা গেলেও সেই হাত রোগীকে কতল করে ফেলতে চায় এটা মানা সম্ভব, আপনিই বলুন?
আমি আপনি মানা না মানার কেউ না। আমি তো জাপানে যাইনি তাই বলে জাপান বলে দেশ নেই সেটা তো না। আবার জাপান আছে বলেই যে সকল অস্বাভাবিক ঘটনার ব্যাখ্যা থাকতে পারবে না সেটাও না। থাকতেও পারে, না-ও পারে। উইলিয়াম শেক্সপিয়ার তার বিখ্যাত হ্যামলেট নাটকে প্রধান চরিত্র হ্যামলেটকে দিয়ে বলিয়েছিলেন, ““There are more things in Heaven and Earth, Horatio, than are dreamt of in your philosophy.” সুতরাং আগেই উপসংহারে পৌঁছানো বুদ্ধিমানের কাজ হবে বলে মনে হয় না।
এখন আপনি যদি ডাক্তার হন, এমন অদ্ভুতুড়ে সব কেসের সম্মুখীন হন সেক্ষেত্রে অবশ্যই এসব কেস টুকে রাখতে চাইবেন। আমাদের ডা. আসিফ আহমেদও সেই কাজটি করেছেন। তার স্যার বলেছিলেন ভালো ডাক্তারের বৈশিষ্ট্য এসব অস্বাভাবিক রোগব্যাধির ব্যাপারে লিখে রাখা, সম্ভব হলো জার্নালেও ছাপিয়ে দিতে হবে। তবে আমাদের ডাক্তার ভদ্রলোকও পরিপূর্ণ সুস্থ না। জনসাধারণের ভাষায়, 'তার মাথায় ছিট আছে,' আর একটু শিক্ষিত বা ক্লাসি জনগণের ভাষায় তিনি 'সিজোফ্রেনিয়া'তে ভুগছেন। তার বন্ধু মাশুদুল হক বইয়ের ভাষায় লিখে দিয়েছে অদ্ভুতুড়ে সব মেডিকেল কেস। প্রকাশকও যোগাড় করে দিয়েছেন তিনিই। এখানে মোহাম্মদ নাজিম উদ্দীনের 'কেউ কেউ কথা রাখে' বইয়ের মতো একটা টুইস্ট রেখে গেলাম। বই পড়তে বসলে টুইস্টটা ধরা যাবে।
অসচরাচর বইয়ে গল্প রয়েছে পাঁচটি। গল্পগুলোর নাম যথাক্রমে হোস্ট, প্যারাসাইট, ফাঙ্গাল, ইয়ানোমামিয়ান, আন্না। যেহেতু ডাক্তার সাহেবের গল্প, বুঝতেই পারছেন মানবদেহের অস্বাভাবিকতা নিয়েই হবে গল্পগুলো। ছোট ছোট, গড়ে পনের বিশ পৃষ্ঠার গল্প। এর মাঝেই লেখক সৃষ্টি করেছেন অদ্ভুতুড়ে সব পরিস্থিতি। মেডিকেলিয় বিজ্ঞান বা অস্বাভাবিক যেসব ঘটনা সেগুলোতে ভয়ে হাত পা কাঁপাকাঁপি করার প্রশ্ন আসলে আসে না। তবে অস্বাভাবিক গল্পে শরীর শিরশির করে উঠতে পারে, পাকস্থলী দূর্বল হলে গুলিয়ে ওঠাও বিচিত্র নয়, নরম মনের মানুষ হলে মন খারাপও হতে পারে। যেহেতু বডি হরর নিয়ে খুব একটা কাজ হয় না, অনেকেরই বেশ অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হবে পড়তে গিয়ে।
মাশুদুল হক অত্যন্ত চমৎকার কাজ করেছেন। এক বসায় শেষ করার মতো একটা বই লিখেছেন। ছোট ছোট অথচ অনন্য কিছু গল্প। অহেতুক হাবিজাবি লিখে বইয়ের পাতা বাড়ানোর প্রয়াস দেখা যায়নি তার লেখায়। স্পষ্ট, সহজ সরল ঝরঝরে ভাষায় লেখা। কিছু কিছু স্থানে কঠিন মেডিকেলিয় শব্দ লিখেছেন গল্পের প্রয়োজনে। দুয়েকটার ব্যাখ্যাও দেয়া আছে পরবর্তীতে। অনেকদিন পর ভিন্ন ঘরানার গল্প পড়তে গিয়ে স্বাদবদল হলো।
লেখকের লেখার হাত দুর্দান্ত সেটা তার আগের বইগুলোতেই প্রমাণিত হয়েছে। এখানেও তিনি তার সুনাম অক্ষুণ্ণ রেখেছেন। ভয় বা অস্বস্তি ধরানোর চেষ্টার ফাঁকেই দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়েও আলাপ আলোচনা সেরে ফেলেছেন। তাতে গল্পের প্রতি আকর্ষণ আরো দৃঢ় হয়েছে। যেহেতু ছোট গল্প, তাই গল্প নিয়ে আলোচনায় যাচ্ছি না। তাতে পাঠকের পড়ার আনন্দ কিছুটা হলেও কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। গল্পগুলো ভালো লেগেছে বিধায় ছোট্ট একটা অনুযোগ রইলো, প্রথম গল্পটা একেবারেই ছোট হয়েছে। আরেকটু বিস্তারিত হলে বেশি ভালো লাগতো সম্ভবত। তবে এটা একান্তই ব্যক্তিগত মতামত।
অসচরাচর নিঃসন্দেহে চমৎকার একটা বই। কিন্তু বইয়ে খামতি থেকে গিয়েছে প্রকাশনার খামখেয়ালি আচরণের ফলে। ছোট্ট একটা বই, সম্পাদনা বা প্রুফ রিডিংয়ে খুব বেশি খরচ হওয়ার কথা না। কিন্তু বেশ অনেক বানান ভুল রয়ে গেছে। স্পেশালি 'র' আর 'ড়' ভীষণ ভুগিয়েছে। একটার বদলে অন্যটা বসেছে অনেক জায়গাতেই। কোথাও আবার অতিরিক্ত 'র' যুক্ত হয়েছে। এক জায়গায় লেখা আছে, 'আজকের ভালো খাওয়ার আয়োজ�� হবে বুঝতে পারলাম।' তার আগের পৃষ্ঠাতেই লেখা 'আপনার কি মনে হয় আমি শখ করে এমন খারাপ জায়গায় আমার মায়ের বডি রাখতে?' কথাটা হওয়া উচিৎ ছিল আপনার কি মনে হয় আমার শখ হয়েছে এমন খারাপ জায়গায় আমার মায়ের বডি রাখতে/রাখার বা এমন কিছু। আশা করি পরের এডিশনে এসব ভুলত্রুটি শুধরে নেয়া হবে।
চিরকুট বেশ ভালো কন্টেন্টের বই প্রকাশ করে। সম্পাদনা বা প্রুফ রিডিংয়ে আরেকটু মনোযোগ দিলে পাঠকের অনুযোগ করার সুযোগ থাকবে না। প্রচ্ছদ বা প্রোডাকশন বা ভেতরের ইলাস্ট্রেশন চমৎকার হয়েছে। গল্পের সঙ্গে খাপে খাপ ময়নার বাপ স্টাইলে মিলেছে।
মাশুদুল হকের নিকট থেকে ভবিষ্যতে এমন চমৎকার সব প্লটের গল্প চাই। বড়ো গল্পের পাশাপাশি এমন ছোট গল্প সংকলনের দাবী জানিয়ে গেলাম। যারা এখনো পড়েননি, দ্রুত পড়ে ফেলুন। সেই সঙ্গে হারিয়ে যান ডা. আসিফ আহমেদের 'অসচরাচর' কেসগুলোর অদ্ভুত জগতে।
লেখক চিকিৎসক আর অতিপ্রাকৃত গল্প শুনে আগ্রহ নিয়ে পড়তে বসেছিলাম।এবং বেশ অবাক হয়েছি।
পিওর হরর না কিন্ত গা ছমছমে একটা ভাব ছিল। ছোট ছোট গল্প, এক বসাতেই শেষ করে উঠতে পারবেন। কোন ১৮+ বা গালিগালাজ নেই, যেটা আজকাল তরুণ লেখক রা জুড়ে দিয়ে বেশি " ন্যাচরাল" হওয়ার Swag নিতে চান।
এক বসায় পড়ার মতো ভালো একটা গল্প সংকলন। তবে কিনা মাশুদুল হকের কাছে প্রত্যাশার পারদ খানিকটা উঁচুতেই থাকে। সেইজন্যই হয়তো পরিপূর্ণ তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে পারিনি।
৫টি গল্প নিয়ে ১১২ পেজের ছোট গল্পগ্রন্থ। প্রতিটি গল্প একজন ডাক্তারের 'অসচরাচর' কিছু কেস স্টাডি নিয়ে। শেষ গল্প "আন্না" ব্যতীত প্রতিটি গল্পই বেশ চমকপ্রদ। বিশেষ করে "ফাঙাল" এবং "ইয়ানোমামিয়ান" গল্প দুইটি বেশিই সেরা।
মাশুদুল হকের লেখনী সবসময়ই সেরাদের কাতারে। এর আগে তার লেখা ভেন্ট্রোলোকুইস্ট, মিনিমালিস্ট, ডক্টর কিজিল পড়া হয়েছে। সেগুলো বেশ আগে। প্রায় ৫ বছর পর তার আরেকটি বই পড়া।
যারা গল্পগ্রন্থ পছন্দ করে, তাদের জন্য অবশ্যই Recommended.
সচরাচর ঘটে না এমন ৫টি ঘটনা নিয়ে সাজানো অসচরাচর বইটি। সবগুলো গল্প একই ব্যক্তির বয়ানে বলা হলেও, প্রতিটা গল্পই ভিন্ন ভিন্ন স্বাদ দিবে পাঠককে। প্রতিটা গল্পই ইউনিক আর অদ্ভুতুরে। প্রথমে গল্পগুলো নিয়ে একটু বলি,
হোস্ট
"ডাক্তার সাব আমি হাতটা আর রাখতে চাই না। এই হাত আমার না, এই হাত আমারে গলা টিপে মারবো।"
বইয়ের প্রথম গল্পটাই পাঠককে বইয়ের সাথে সুপার গ্লু এর মতো আটকে ফেলার জন্য যথেষ্ট। আমার দূর্দান্ত লেগেছে গল্পটা। যদিও বেশ কিছুদিন আগেই গল্পটা আমি ফেসবুকে পড়েছিলাম, তবুও আবারো বেশ আগ্রহ নিয়েই পড়েছি। এমন অদ্ভুত এবং সুন্দর ছোটগল্প সহজে পড়া হয়নি আমার।
প্যারাসাইট
আরো একটা চমৎকার গল্প। একটোপিক প্রেগনেন্সি (জরায়ুর বাইরে ভ্রুণ গঠন হওয়া) নিয়ে এমন লেখা কেউ লিখতে পারে তা আমার ধারণা ছিল না। এক মহিলার এমন প্রেগনেন্সি হয়েছে, তাও আবার ১টা নয়, দু দুটো বাচ্চা!! গল্পটা পড়ে ভালো লাগলেও, দু চার লাইনে বাবলির এই ব্যাপারে এতো আগ্রহের কোনো কারণ উল্লেখ করা হলে আরো ভালো হত বলে মনে হয়েছে।
ফাঙ্গাল
আমরা আমাদের খুব কাছের এবং ভালোবাসার মৃত মানুষগুলোকে চোখের আড়ালে হারিয়ে দিতে চাই না। কিন্তু সকল নিয়ম অনুসারে সেটাই করতে হয়। তবে এমন অনেকে নিশ্চয়ই আছে যে বিকল্প একটা ব্যবস্থা করে রাখতে চায়।
অস্বাভাবিক হলেও কেন জানি এই গল্পটা আমাকে বেশ নাড়া দিয়েছে। মায়া লেগেছে মানুষটার জন্য। গল্পের পরিবেশটাও লেখক তৈরী করেছেন চমৎকারভাবে। সাথে কিছু বাড়তি চরিত্রও রেখেছেন এবার। সব মিলিয়ে বইয়ের অন্যতম প্রিয় গল্প।
ইয়ানোমামিয়ান
লিলি এবং পদ্ম নামের দুই যমজ বোনের কাহিনী। গল্পের শেষটা হয়েছে বিশাল একটা শক দিয়ে। গা গুলিয়ে উঠার মত শক। তূলনামূলকভাবে অন্য গল্পগুলোর তুলনায় কিছুটা কম 'অসচরাচর' মনে হয়েছে আমার কাছে। ছোটবেলার দূর্ঘটনার সাথে লিলির ডিপ্রেশনের আরেকটু ব্যাখ্যা দিলে ভালো হত। তবে তার চমৎকার বুদ্ধির তারিফ করতেই হয়।
আন্না
বলতে গেলে বইয়ের সবচেয়ে সেরা গল্প যা একইসাথে ভালো লাগা আর হতাশার জন্ম দিয়েছে। ভালো লাগা - কারন পুরো গল্পটাই সাজানো হয়েছে দূর্দান্তভাবে। একটা সাসপেন্স আর থ্রিলের মিশ্রণ ছিল গল্পের পুরোটা জুড়ে৷ হতাশা - কারন একেবারেই ধুম করে গল্পটা শেষ। এই প্লট নিয়ে একটা নভেলা লিখে ফেলা উচিত ছিল লেখকের। আমি অন্তত বেশ আগ্রহ নিয়ে পড়তাম। ছোট গল্পগুলো সাধারণত যেমন হয়, তেমন 'প্রপার' এন্ডিং ছাড়া বইয়ের সবগুলো গল্পই। সেগুলা নিয়ে তেমন আফসোস না থাকলেও, এই গল্পটা আরেকটু ব্যাখ্যা দাবী করে অবশ্যই।
একরাশ মুগ্ধতায়
মাশুদুল হকের ভক্ত আমি অনেক আগে থেকেই। উনার ভেন্ট্রিলোকুইস্ট মিনিমালিস্ট আমার খুবই প্রিয় বই। উনার লিখনশৈলী আমার অত্যন্ত পছন্দেরও। আর তাই অসচরাচর নিয়ে এক্সপেক্টেশনও ছিল বেশী। বলতেই হচ্ছে তা পূরণ হয়েছে বেশ ভালোভাবেই। পুরো বইটা গিলেছি গোগ্রাসে। আমি হরর টাইপ গল্প খুব একটা পছন্দ না করলেও, এখন থেকে যে অসচরাচর গল্প খুব আগ্রহ নিয়েই পড়বো তা অনেকটাই নিশ্চিত।
ব্যক্তিগত রেটিং: ০৯/১০ (মাত্র ১১২ পাতার ছোট্র এই বইটা হাতে নিলে এক বসায় শেষ না করে উঠার উপায় নেই। অন্তত আমি পারিনি। ভালো লাগবে এই নিশ্চয়তা দিচ্ছি )
প্রোডাকশন: প্রোডাকশনে আসলে আলাদা করে চিরকুটের প্রশংসা করার প্রয়োজন হয় না। তারা যে এই জায়গায় সেরা সেটা ইতোমধ্যেই সবার জানা আছে। এই বইটার ক্ষেত্রে স্পেসিফিকলি বলতে হয় এর প্রচ্ছদের কথা। গল্পের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রচ্ছদটা আমার খুবই চমৎকার লেগেছে। একইসাথে বেশ ক্রিপি আর ইউনিক ভাইব আছে প্রচ্ছদটায়। এছাড়া প্রতিটি গল্পের আগে একটা করে চমৎকার ইলাস্ট্রেশনও রয়েছে। হ্যাটস অফ আদিব রেজা রঙ্গন। আরেকটা ব্যাপার হলো শ খানেক পাতার আশেপাশে হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই বইয়ে ফিতা নেই। তবে চিরকুট তা পুষিয়ে দিয়েছে সাথে চমৎকার একটা বুকমার্ক দিয়ে। পাঠকদের জন্য এতোটুকু ভাবনাই বা ক'টা প্রকাশনী ভাবে। এক্সট্রা যেকোনো কিছুর জন্য উলটো দামটা দেয় বাড়িয়ে। সে তুলনায় চিরকুটের বইয়ের দামটাও বেশ সহনীয়।
পুনশ্চ: বইয়ের পূর্বকথা অংশ পড়ে কারো কারো মনে হতে পারে। এটা বোধহয় সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা। কিন্তু আসলে পুরো বইটাই কাল্পনিক এক ডাক্তারের বয়ানে, কাল্পনিক সব গল্প নিয়ে সাজানো।
সচরাচর যে ঘটনাগুলো ঘটে না বা দেখা যায় না তাই তো অসচরাচর ।এই বইয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পাঁচটি অসচরাচর ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। ড. আসিফ সবগুলো ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী এবং তার জবানিতে আমরা এই ঘটনাগুলো শুনতে পাই।প্রায় প্রতিটি ঘটনার স্থান সিলেট।
হোস্ট - পরজীবী যাকে আশ্রয় করে বেড়ে উঠে তাইতো হোস্ট। কিন্তু এ গল্পে শরীর হোস্টকে আশ্রয় করে বেড়ে উঠে একটি হাত !
প্যারাসাইট - হোস্টকে আশ্রয় করে যে বেড়ে উঠে তাই প্যারাসাইট। তবে এক্ষেত্রে প্যারাসাইট হিসেবে নিজের পেটের বাচ্চা যদি হয় তবে কেমন হবে ?
ফাঙ্গাল - পরিবারের প্রতি ভালোবাসায় অন্ধ জনৈক ব্যক্তির কর্মকাণ্ড ও তাতে ফাঙ্গাল ইনফেকশন কিভাবে বাঁধা হতে পারে জানতে পারবেন এই গল্পে ।
ইয়ানোমামিয়ান - দুই যমজ বোনের গল্প ও তাদের চক্করে ডা. আসিফ কিভাবে পড়ে গেলেন জানা যায় এই গল্পে। এই গল্পটি বেশ ভালো।
আন্না - কিভাবে নামপরিচয়হীন একজন অচেনা , রহস্যময় নারী ধারণ করে টলস্তয়ের উপন্যাসের চরিত্রের নাম এবং কী কী বিপদ অপেক্ষা করছে এই নারীকে কেন্দ্র করে জানা যাবে এই গল্পে।
সবগুলো গল্পই ভালো , শিরশির করা অনুভূতি কাজ করে। প্রচুর হরর উপাদান ছিল।এক বসায় শেষ না করে রাখা যায় না।
মেডিক্যাল বডি হরর জন্রার বই এটি বলা যায়। এটি আমার পড়া তার দ্বিতীয় বই। এর আগে ভেন্ট্রিলোকুইস্ট পড়ে বেশ ভালো লেগেছিল। এই বইয়ে ৫ টি মোট ছোট গল্প। প্রতিটি গল্প এটিপিক্যাল মেডিক্যাল কেইস নিয়ে গড়া ফিকশন। বেশ ভালোই লেগেছে।