Jump to ratings and reviews
Rate this book

গল্পসমগ্র

Rate this book
সূচী:
১. সোনার হরিণ ২. সময়ের প্রয়োজনে ৩. একটি জিজ্ঞাসা ৪. হারানো বলয় ৫. বাঁধ ৬. সূর্যগ্রহন ৭. নয়া পত্তন ৮. মহামৃত্যু ৯. ভাঙাচোরা ১০. অপরাধ ১১. স্বীকৃতি ১২. অতি পরিচিত ১৩. ইচ্ছা অনিচ্ছা ১৪. জন্মান্তর ১৫. পোস্টার ১৬. ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি ১৭. কতকগুলো কুকুরের আর্তনাদ ১৮. কয়েকটি সংলাপ ১৯. দেমাক ২০. ম্যাসাকার ২১. একুশের গল্প

124 pages, Hardcover

First published November 1, 2007

26 people are currently reading
334 people want to read

About the author

Zahir Raihan

28 books418 followers
Zahir Raihan (Bangla: জহির রায়হান) was a Bangladeshi novelist, writer and filmmaker. He is perhaps best known for his documentary Stop Genocide made during the Bangladesh Liberation War.

He was an active worker of the Language Movement of 1952. The effect of Language Movement was so high on him that he made his legendary film Jibon Theke Neya based on it. In 1971 he joined in the Liberation War of Bangladesh and created documentary films on this great event.

He disappeared on January 30, 1972 while trying to locate his brother, the famous writer Shahidullah Kaiser, who was captured and killed by the Pakistan army. Evidences have been found that he was killed by some armed Bihari collaborators and disguised soldiers of Pakistan Army.

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
223 (60%)
4 stars
116 (31%)
3 stars
24 (6%)
2 stars
3 (<1%)
1 star
0 (0%)
Displaying 1 - 30 of 55 reviews
Profile Image for Arupratan.
235 reviews385 followers
August 12, 2022
মাত্র একুশটি গল্প লিখে যেতে পেরেছিলেন জহির রায়হান।
একুশটি বিবেকস্পর্শী, সাহসী গল্প।
বিপন্ন এক সময়ের, বিপদগ্রস্ত এক দেশের, হতভাগ্য একজন মানুষ ছিলেন তিনি। সাহসী মানুষ।
আরো কিছু যদি লিখে যেতে পারতেন!
কিছু না হোক, অন্তত আরো একুশটি গল্প।
Profile Image for Nabila Tabassum Chowdhury.
373 reviews274 followers
June 10, 2017
আমি সাধারণত কোনো গল্পগ্রন্থ টানা পড়ে শেষ করে ফেলি না। কয়েকটা কয়েকটা করে সময় নিয়ে পড়ি। কারণ প্রথমত, আমি ফিকশন পড়ি একটা গল্পের অভাববোধ থেকে। উপন্যাস একটা পড়লে নতুন একটা গল্প পাই আবার একটা ছোটগল্পতেও একটা গল্পই থাকে। অভাবপূরণ হয়ে যায়, তাই একটা গল্পগ্রন্থ পড়ে শেষ করতে দেরি হয়। দ্বিতীয়ত, টানা পড়ে ফেললে আর গল্পগুলোকে নিয়ে আলাদা চিন্তা-ভাবনা করার সুযোগ থাকে না, সব একসাথে মাথার মধ্যে ঢুকে পড়ে, কোনো এক ফাঁকে একসাথে মাথা থেকে পুরোপুরি হাওয়া হয়ে যায়। কিন্তু এই বইটা টানা পড়ে ফেললাম। কারণ এটা পড়ে ফেললে আমার জহির রায়হানের সব লেখা পড়া হয়ে যাবে, কোনো একজনের সব লেখা পড়ে ফেললে আমার মাঝে একটা পরিতৃপ্তি কাজ করে, সেই অনুভুতির লোভে লোভে টানা পড়ে ফেলেছি। পরিতৃপ্তি হচ্ছে, কিন্তু সেই আবার সব একসাথে মাথার ভিতর ঢুকে জট পাকিয়ে গেছে। তাই রিভিউ লেখাটা একটা কঠিন কাজ হয়ে গেছে।

এখানে কয়েকটি গল্প পড়ে মনে হয়েছে যে সেই গল্পগুলোতে একটি অপ্রয়োজনীয় শব্দ নেই। লেখক একটি শব্দ তো দূরের কথা, এক একটা দাঁড়ি-কমাও প্রয়োজন ছাড়া দেননি। আবার কিছু গল্প পড়ে দীর্ঘশ্বাস বের করে দিয়েছি। আবার কিছু বই পড়ে সুখী হয়েছি, কিছু গল্প পড়ে জিতেছি আবার কোনো গল্প পড়ে হেরে গেছি। কিন্তু সবগুলো গল্পই সমান স্ট্রং নয়। তবু পাঁচ তারা। কারণ মোটের উপর আমি বোধ করেছি লেখক সংগ্রামী ছাত্রদের একজন। তাদের চিন্তা-ভাবনা, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, বাধা-বিপত্তি, পাওয়া-না-পাওয়া,হার-জিত চিত্রিত করার সময় প্রকাশ পেয়েছে ব্যাপারগুলো তিনি প্রথম পুরুষে উপলব্ধি করে লিখেছেন। আমি যদি কখনো নাও জানতাম উনি একজন ভাষা সৈনিক, তবুও এই লেখাগুলো পরে অনুভব করতে পারতাম উনি রাজপথের মানুষ।

ধন্যবাদ জহির রায়হান...যেখানেই থাকুন, ভাল থাকুন।
Profile Image for Ësrât .
515 reviews85 followers
December 21, 2020
একজন জহির রায়হান ও অন্যান্য

কেউ কেউ থাকে এই অজস্র মানুষের ভীড়ে যাদের হাত যেন জাদুর কাঠি, মুখের কথা যেন মন্ত্র, যাদের কাছে সেই পরশ পাথর থাকে যার স্পর্শে পঙ্কেও পঙ্কজ ফুটে ওঠে.জহির রায়হান হলেন শব্দের সেই জাদুকর যার দুই তিন পাতার লেখনীর প্রতি বাঁকে বাঁকে চমক থাকে,যার লেখা একবার শুরু করলে পড়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত অন‍্য কোনো কিছুই দৃষ্টি গোচর হয় না.শুধুমাত্র চোখের কোণে বাষ্প জমে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে,আর ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি রোদের মতো ঝিলমিল করে
Profile Image for Amit Das.
179 reviews117 followers
November 7, 2025
রিভিউ লিখতে গিয়ে খেয়াল করলাম, গুডরিডস দেখাচ্ছে বইটা পড়া শুরু করেছিলাম ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫-এ। অর্থাৎ প্রায় নয় মাস কেটে গেছে! আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলাম এমন নয়, কিংবা গল্পগুলো ভালো লাগেনি তাও নয়। বরং ঠিক উল্টোটা। জহির রায়হানের এই একুশটি গল্প এত সহজ ভাষায়, মায়া মিশিয়ে লেখা যে মন চাইছিল ধীরে ধীরে, একটু রয়েসয়ে পড়ি।

বই পড়া এখন এমনিতেই তলানির পর্যায়ে এসে ঠেকেছে। নিকট ভবিষ্যতে অবস্থা পরিবর্তনের তেমন কোনো সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি না। তবুও এই মহান সাহিত্যিকের অগ্রন্থিত গল্পগুলো কোনো একদিন পড়া হবে, এই ইচ্ছেটুকু পুষে রাখলাম।
Profile Image for Adham Alif.
334 reviews80 followers
April 24, 2024
অসাধারণ, অবশ্যপাঠ্য কিংবা আরো চমৎকারসব বিশেষণে চাইলে এই সংকলনকে ভূষিত করা যাবে!
জহির রায়হানের গল্পে রূপকের ব্যবহার চোখে পড়েনা, কোনো হেয়ালি নেই, শুধু অকপটে গল্পটা বলে গেছেন। তার গল্পে সমাজের অসংগতি, ধর্মান্ধতা, রাজনৈতিক সচেতনতা প্রাধান্য পেয়েছে৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তার গল্পের চরিত্ররা সংগ্রামী, প্রথা ভেঙে বেরিয়ে আসার প্রচেষ্টা তাদের মধ্যে দেখা যায়।

বায়ান্ন এর ভাষা আন্দোলনের প্রভাব তার উপরে ছিলো প্রবল। বেশকটি গল্প তাই আমরা পেয়ে যাই সেই প্রেক্ষিতে। "কয়েকটি সংলাপ" গল্পে তিনি যখন বলেন "সাতকোটি লোক আছে। তার মধ্যে নাহয় তিনকোটি মারা যাবে। বাকি চারকোটি মানুষ সুখে থাকুক। শান্তিতে থাকুক।" তখন আমরা উপলব্ধি করতে পারি অধিকার আদায়ের ব্যাপারে কতোটা আপসহীন নীতি ও সময়কালের সাক্ষী তিনি ছিলেন।

প্রেমময় গল্পও তিনি লিখেছেন তবে এসব গল্পে ভালোবাসা অসমাপ্ত। একটা যন্ত্রণা বয়ে বেড়ানোর মতো। এছাড়া মধ্যবিত্ত সমাজের অসহায়ত্ব ও দ্বন্দ্বের জায়গাটা হুমায়ুনীয় যুগের আগে সম্ভবত জহির রায়হানই সবচেয়ে চমৎকার আঙ্গিকে তুলে আনতে পেরেছিলেন। তারা না পারছেন দারিদ্রতার মোকাবেলা করতে, না পারছেন আত্মসম্মানবোধ খোয়াতে।

অগ্রন্থিত ৭ টা গল্পসহকারে মোট ২৮ টি গল্প পাওয়া গেল জহির রায়হানের কাছ থেকে। সংখ্যার বিচারে হয়তো সামান্যই কিন্তু মানের বিচারে নয়৷ সুযোগ হলে এই অনন্য গল্পগুলো পড়ে দেখুন।
Profile Image for Khandaker Sanidulla Sanid.
47 reviews22 followers
April 5, 2021
বইঃ গল্পসমগ্র - জহির রায়হান
প্রকাশনীঃ অনুপম প্রকাশনী
পৃষ্ঠাঃ ১২৪
প্রচ্ছদঃ ধ্রুব এষ
মুদ্রিত মূল্যঃ ২০০ টাকা

কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক জহির রায়হানের বিভিন্ন সময়ে লেখা ২১ টি গল্প নিয়ে সাজানো বইটি। প্রত্যেকটা গল্পেই যিনি রেখেছেন দক্ষতার ছাপ। কোনো গল্পে বলেছেন অতীতের স্মৃতি আবার কোনো গল্পে বলেছেন মুক্তিযুদ্ধের কথা। কিছু গল্প ছিলো ঘোরলাগা আবার কিছু ছিলো বিষাদে ভরা।


১. সোনার হরিণঃ দশ বছর আগে কোনো এক ভরদুপুরে এক দম্পতি এসেছিলো ফার্নিচারের দোকানে। বিভিন্ন আসবাবপত্র তারা দুজন ঘুরে ফিরে দেখছিল। কোনোটা পছন্দ হচ্ছিল আবার কোনোটা হচ্ছিলোনা কিন্তু পছন্দ হলেও বা কি একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের সাধ্যও বা কতটুকু নেবার। কিন্তু আজ দশ বছর পরে হঠাৎ একজন কে দেখে গল্প কথকের সেই স্মৃতি টুকু মনে পড়ে গেলো যেখানে ভালোবাসা ছিলো, ছিলো একটা ছোট্ট সংসার সাজাবার প্রবল ইচ্ছা, ছিল আত্মসম্মান।
গল্পটা নতুন জীবন শুরু করা দম্পতির হলেও গল্পটার দম্পতি যেন আমাদের আশেপাশেই আছে। খুব সুন্দর ভাবে সাজানো একটা গল্প।

২. সময়ের প্রয়োজনেঃ একজন মুক্তিযোদ্ধার হাতে একটা খাতা দেয়া হলো। লাল মলাটে বাঁধানো একটা খাতা যার বেশ কিছু জায়গায় ময়লা আর কালচে ভাব। খাতা খুলে পড়া শুরু করল সে। ধীরে ধীরে জানতে পারলো একজন মুক্তিযোদ্ধার অব্যক্ত কথা, জানতে পারলো সেসময় মুক্তিযুদ্ধ ক্যাম্পে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদের দুঃখ, বেদনা আর হতাশাজনক অবস্থা কিন্তু এত কিছুর পরেও সবার শক্তি একটাই "দেশকে ঐ পশুগুলোর হাত থেকে রক্ষা করত�� হবে"।

৩. একটি জিজ্ঞাসাঃ বাবা করমআলী আর ছোট্ট কৌতুহলী মেয়ে মুন্নার মধ্যকার কথোপকথন। হজ নিয়ে মেয়ের বারংবার কৌতুহলী প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে বাবা হয়রান। কখনো বা প্রশ্নের জবাব না পেয়ে বাবার সাথে অভিমান করে চুপ করে বসে থাকা। মাত্র দুই পৃষ্ঠার এ গল্পের শেষ টা পাঠক কে গভীরভাবে ভাবতে বাধ্য করবে।

৪. হারানো বলয়ঃ সামান্য কেরানিগিরি করে জীবন চালানো আলমের অনেকদিন পর হঠাৎ রাস্তায় দেখা হলো আরজুর সাথে। আরজু আলমের বন্ধু আবার ভালোবাসার মানুষও বটে তবে কিছু সীমাবদ্ধতায় হয়ত সম্পর্ক টা সেভাবে হয়ে ওঠেনি। কিন্তু আরজুর প্রতি আলমের শ্রদ্ধা টা যেন ঠিক আগের মতই আছে। টং এর দোকানে একসাথে বসে দুকাপ চা পান করা বা আরজুকে ঝকঝকে বালা পছন্দ করে দেওয়া। কিন্তু আলম আর আরজু দুজনেই একসময় অভাববোধ আর দায়িত্ববোধ টা মেনে নেয়। দুজন হয়ে যায় একই শহরে থাকা দু প্রান্তের দুটি জীবন।

৫. বাঁধঃ গ্রামে কয়েক বছর ধরে বন্যার পানিতে ফসল সব নষ্ট হচ্ছে ওদিকে বাঁধ এ ফাটল ধরেছে যেকোনো সময়ে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে ফসল। গ্রামের খোদাভিরু মানুষগুলো বড্ড অসহায় কেননা তাদের ডাকেও খোদা সাড়া দেননি তাই খোদা কে ডাকার জন্য চাই একজন নেক বান্দা যার ডাকে খোদা ফসল কে রক্ষা করবেন বন্যার হাত থেকে। সবার সিদ্ধান্তে তাই গ্রামে নিয়ে আসা হলো পীর মনোয়ার হাজীকে। কিন্তু ওদিকে গ্রামের লেখাপড়া জানা মাস্টার আর ছাত্ররা পীরের আগমনে যেন খুশি হতে পারলোনা। একদিকে চলছে মসজিদে খোদাকে প্রতিটি মুহূর্তে স্বরণ করা আর অন্য দিকে গায়ে গতরে খেটে কোদাল চালাচ্ছে পঞ্চাশেক যুবক। তবে জয়ী হবে কারা যুবক নাকি পীর মনোয়ার হাজী?

আমাদের দেশের অনেক মানুষ এখনো ধর্ম ব্যাবসা কে কাজে লাগিয়ে মানুষ ঠকায় যার শিকার হয় এদেশের সাদা মনের মানুষগুলো।

৬. সূর্যগ্রহণঃ আনোয়ার সাহেবের রুমমেট তসলীম সাহেব বেশ ভালো কবিতা লিখেন। আনোয়ার সাহেবের অনিচ্ছাসত্ত্বেও তাকে কবিতা পড়ে শোনান। আবার ওদিকে হাসিনা প্রায়ই চিঠি লিখে পাঠায়। আনোয়ার সাহেব চিঠিগুলো পড়েন কিন্তু চিঠির কোনো উত্তর দেন না। কিন্তু কেন?
২১ শে ফেব্রুয়ারী কে কেন্দ্র করে লেখা এ গল্পটি পড়ার পর এক ধরনের ঘোরলাগা কাজ করছিলো। গল্পের শেষটা ছিলো বিষাদময়।

৭. নয়া পত্তনঃ গ্রামের ছেলে-মেয়ে গুলোকে পড়াশোনা করানোর জন্য একটা স্কুল দেয়ার জন্য সাহায্য চেয়ে মানুষের দরজায় দরজায় ঘুরে বেড়াচ্ছে শানু পন্ডিত। অথচ গ্রামের গণ্যমান্য ব্যাক্তিদের যেন এ নিয়ে কোনো মাথাব্যাথা ই নেই। সব আশা যখন ছেড়ে দিয়েছে শানু পন্ডিত এমন সময়ে পাশে এসে দাঁড়ালো গ্রামের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সবাই একসাথে কাজে নেমে পড়লো স্কুল নির্মাণের।

গল্পটা একদিকে যেমন প্রতিবাদ এর দিকে ইঙ্গিত করে তেমনি অন্যদিকে যেন মনে সাহস যোগায়। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যেকোনো কিছুই করা সম্ভব সেটার যেন এক জীবন্ত উদাহরণ 'নয়া পত্তন''

(এই গল্পটা ৮ম শ্রেণির আনন্দপাঠ বইতে এবছর সংযোজন করা হয়েছে)

৮. মহামৃত্যুঃ একটা রক্তাক্ত লাশ নিয়ে এসেছে সবাই ধরাধরি করে। যে লাশের আপনজন বলতে সেখানে কেউ নেই। অথচ প্রতিবেশী সহ সবাই নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করছে লাশ সৎকার করার কারণ এমন সম্মান তার প্রাপ্য। এমন মহামৃত্যু সবার কপালে জোটে না, এমন সম্মানের মৃত্যু সকলে পায় না।

একজন শহীদ কে কেমন সম্মান দেওয়া উচিত? তাদের স্থান আসলে কোথায় সেটাই যেন লেখক বুঝিয়েছেন গল্প দিয়ে।

৯. ভাঙাচোরাঃ সরকারি এক কাজে কলকাতা গিয়েছিলেন সালাম সাহেব। সেখানে গিয়ে কাজ শেষে এক বোনের বাসায় ঘুরতে যান যাকে দেখেছিলেন আট বছর আগে। হঠাৎ উপস্থিত হওয়ায় চমকে যায় সে বোন। একথায় সেকথায় একসময় উঠে আসে সংসারের প্রতি স্বামী আর স্ত্রীর দায়িত্ববোধ তখন সালাম সাহেব বুঝতে পারেন বাইরে থেকে তাদের যতটা স্বাভাবিক দেখা যায় ভেতরে ভেতরে তারা ঠিক মুদ্রার উল্টো পিঠের মত।

আসলে আমরা মানুষকে যেমন দেখি আসলে সবাই তেমন নয়। হাসিখুশি মুখ নিয়ে ঘুরে বেড়ানো মানুষটাও জানে ভেতরে ভেতরে সে কতটা সংগ্রাম করে চলেছে জহির রায়হান যেন তা সহজ ভাষায় বলে গেলেন এ গল্পে।

১০. অপরাধঃ মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে সালেহার বিয়ে হয় আশি বছরের এক পীরের সাথে। চার বছর ধরে সহ্য করছে পীর আর পীরের বাকি স্ত্রী গুলোর অত্যাচার অথচ কখনো প্রতিবাদ করতে পারেনি কেননা প্রতিবাদের ভাষা তার জানা নেই। প্রতিবাদ করতে গেলেও পারেনি। একসময় পেরেছিলো সে সেই সংসার নামক জেলখানা থেকে বের হতে কিন্তু তারপর?

আমাদের সমাজে মেয়েরা সবসময়ই অবহেলিত-উপেক্ষিত। হয়ত একটা সুন্দর স্বপ্ন নিয়ে বেড়ে ওঠে কিন্তু শেষ পর্যন্ত খুব কম মেয়ের ভাগ্যেই সেটা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়। গল্পের সালেহা যেন এদেশের হাজারো নারীর গল্প বলে।

১১. স্বীকৃতিঃ আট দশ টা মেয়ের মতই জীবন ছিলো মনোয়ারার। রান্না, ছেলেমেয়ে মানুষ করা, স্বামীর সেবা করা। কিন্তু এগুলোর বাইরেও যে মেয়েদের একটা জীবন আছে সেটা তার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছিলো জামান। সমাজে মেয়েরা যে খুব অবহেলিত সেই দিক টাই আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলো সে। মেয়েদেরও যে আছে নিজেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখার অধিকার, আছে নিজেদের প্রতিভা কে সকলের সামনে তুলে ধরার অধিকার। গল্পটা যেন "অপরাধ" গল্পের ঠিক বিপরীত চিত্র কে তুলে ধরে।

১২. অতি পরিচিতঃ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আসলামের সহপাঠী ট্রলি বেশ সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়েই বলা চলে। ট্রলির আত্নীয়দের মধ্যে কয়েকজন আবার রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আর তার বাবাও বেশ উচ্চশিক্ষিত মার্জিত লোক। কিন্তু শিক্ষিত হলেও মানুষ মানুষ যে অজ্ঞ হতে পারে তা গল্পের শেষে বুঝিয়ে দিয়েছেন লেখক।

১৩. ইচ্ছা অনিচ্ছাঃ স্বামী হারা বিন্তি তার সন্তানগুলো নিয়ে একা বাড়িতে থাকে আপন বলতে যার কেউ নেই। টাকা পয়সার প্রয়োজন হলে গ্রামের মহাজন এর কাছে সম্পদ বন্ধক রেখে টাকা ধার নেয়। কিন্তু গ্রামের মানুষ গুলো খোদা ভীতি দেখিয়ে নিরবে শোষণ চালায় বিন্তির উপর। একদিকে সন্তানগুলো কে নিয়ে মাথা গোজার ঠাঁই খোঁজে বিন্তি অন্যদিকে গ্রামের মোল্লা-মহাজন রা চালাতে থাকে তাদের নিরব নির্যাতন। গল্পটিতে উঠে এসেছে স্বামী হারা এক নারীর বেঁচে থাকার লড়াই, উঠে এসেছে ধর্মের দোহাই দিয়ে মানুষকে ঠকানো কিছু লোকের কর্মকাণ্ড।

১৪. জন্মান্তরঃ একাত্তরে আপনজন হারানো মন্তু শহরে এসে হয়ে যায় ছিচকে পকেটমার। টুকটাক এসব সাফাই এর কাজ এ তার দিন বেশ ভালো ভাবেই চলে যায়। সেজন্য অবশ্য তাকে জেলেও যেতে হয়েছে বেশ কয়েকবার। সব কিছু ঠিকভাবেই চলছিলো কিন্তু এক বৃষ্টির রাতে হঠাৎ এক ভদ্রলোকের সাথে দেখা। ছাতা নিয়ে মন্তু তাকে পৌছিয়ে দিলো বাড়িতে কিন্তু সেই বৃষ্টির রাতে ঐ পরিবারের আতিথেয়তা আর হঠাৎ এক দূর্ঘটনা শুনে জীবন কে চিনতে পারলো মন্তু। ঐ পরিবার পালটে দিয়েছিলো সেদিনের সেই পকেটমার মন্তু কে।

একজন পকেটমার হয়ত খারাপ হতে পারে। কিন্তু তার ভেতর টা হয়ত একজন ভালো মানুষের যেই ভালো মানুষের চোখ দিয়ে দেখেছি মধ্যবিত্ত মানুষগুলোর জীবন সংগ্রাম।

১৫. পোস্টারঃ সদ্য চুনকাম করা দেয়ালে সাত সকালে "বাঁচার মত মজুরি চাই" পোস্টার দেখেই মেজাজ বিগড়ে গিয়েছে আফজাল সাহেবের। কয়েক দফা গালমন্দ ও করলেন যারা এগুলো লাগিয়েছে তাদের। কেননা তিনি অযথা এসব পোস্টার লাগানোর কোনো যৌক্তিকতা খুঁজে পান না। অফিসে যাবার পর জানতে পারলেন অফিস থেকে নাকি চাকুরিজীবী দের ছাঁটাই করা হচ্ছে আর ছাঁটাই এর লিস্ট এ আছেন তিনিও। সেদিন বাড়িতে এসে আবার দেয়ালে নতুন এক পোস্টার লাগানো দেখলেন অথচ তখন আর রাগান্বিত হতে পারলেন না বরং যৌক্তিকতা খুঁজে পেলেন এই ছেলেগুলোর পোস্টার লাগানোতে।

আন্দোলন আসলে কোথা থেকে আসে সেটা আমরা সকলেই জানি কিন্তু যখন কেউ নিজে এমন কোনো পরিস্থিতি তে পড়ে তখন তাকেও মেনে নিতে হয় সেই প্রতিবাদ, শিখে নিতে হয় আন্দোলন এর ভাষা।

১৬. ইচ্ছার আগুনে জ্বলছিঃ এই গল্পে লেখক জহির রায়হান বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষদের নিয়ে ছবি বানানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন যাদের কেউ কেউ তীব্র কষ্ট সহ্য করতে পারে, কেউ পারে অনিচ্ছায় তার লক্ষ্য থেকে ছিটকে যেতে আবার কেউ কেউ হঠাৎ নিজের রঙ বদলে ফেলে। মূলত লেখক এখানে ছবি বানানোর মাধ্যমে সীমাবদ্ধ জীবনে মা���ুষের মুক্তির কথা বলেছেন।

১৭. কতকগুলো কুকুরের আর্তনাদঃ রাত দুপুরে একসাথে অনেক গুলো কুকুর ডেকে উঠলো। ঘুম ভেঙে যাওয়ায় কুকুরগুলোকে হত্যা করতে নেমে এলো কত লোক। কুকুর গুলোকে হত্যা করায় আমাদের সমাজের এক শ্রেণির কিছু মানুষ এসে করুণ কান্না জুড়ে দিলো।

মাত্র এক পৃষ্ঠার এ গল্পের মাধ্যমে লেখক মানুষ হিসেবে আমাদের অবস্থান টাকে খুব সুন্দরভাবে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন।

১৮. কয়েকটি সংলাপঃ ২১ শে ফেব্রুয়ারীর জন্য আয়োজন চলছে। কেউ সংলাপ বলবে, কেউ আবার পাঠ করবে কবিতা। মিলিটারি রা হরতাল ডাকবে ডাকুক, ১৪৪ ধারা ডাকবে ডাকুক সেটা ভঙ্গ করেই সবাই পালন করবে একুশে ফেব্রুয়ারী। তারা যেন কেউ যুবক নয় একেকজন প্রতিবাদী মূর্তি। তাদের হটাতে পারবেনা কেউ। তারা দিতে জানে ভাষার মর্যাদা, প্রকাশ করতে জানে ভাষার প্রতি তাদের ভালোবাসা।

ভাষার প্রতি আসলে শ্রদ্ধা কেমন হওয়া উচিত অন্তত সেটা জানার জন্য হলেও এ গল্প পড়া উচিত সবার।

১৯. দেমাকঃ বাস-ড্রাইভার রহিম শেখ সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে বাড়ি ফিরে একটু আয়েশ করেন। কিন্তু রহিম শেখ এর এমন জীবন যেন সহ্য করতে পারেনা প্রতিবেশী রহমত আর তার স্ত্রী। রহিম শেখ এর সুখ যেন তাদের দুচোখের বিষ। প্রায়ই রহিমের মেয়ের সাথে তর্কাতর্কি হয় রহমতের স্ত্রীর। একদিন হঠাৎ এক দূর্ঘটনায় পড়লেন রহিম শেখ। তারপর?
গল্পটা লেখা আমাদের সমাজের এক শ্রেণির মানুষদের নিয়ে যারা কখনোই সন্তুষ্ট থাকতে পারেনা তাদের দেমাক এর জোরে তারই এক জলজ্যান্ত উদাহরণ যেন এই 'দেমাক' গল্পটি।

২০. ম্যাসাকারঃ একজন মিলিটারি হাসপাতালের ডাক্তার। হাসপাতালে যেমন দিয়ে চলেছেন যোদ্ধা দের সেবা তেমনি চোখের সামনে দেখেছেন কত তাজা প্রাণ মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছে অথচ পারেননি তাদের রক্ষা করতে। একদিন এক সুন্দরী মেয়ের সাথে দেখা হলো ডাক্তারের। মেয়েটা অভিযোগ আনলো এই যুদ্ধের বিপক্ষে। কি লাভ এ যুদ্ধ করে, যে যুদ্ধ হাজারো নিরপরাধ প্রাণ কেড়ে নিতে পারে? যে যুদ্ধ পারে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিতে?
একজন ডাক্তারের বয়ানে পুরো গল্পটা যেন নিয়ে গিয়েছিলো অন্য এক জগতে। ডাক্তারের চোখে দেখেছি যুদ্ধ চলাকালীন মানুষের উন্মত্ততা। লু-ই-সা এর শেষ পরিণতি টা কোনো পাষাণ হৃদয় কে কাঁদাতে যথেষ্ট।

২১. একুশের গল্পঃ তিন বন্ধু একসাথে থাকতো ঘুরত ফিরত। তার মধ্যে অন্যতম একজন হলো তপু। কিন্তু তপু হারিয়ে গিয়েছিলো ভাষা আন্দোলনের দিন। কিন্তু ফিরে এসেছিলো আবার কিন্তু যেভাবে ফিরে এসেছিলো সেভাবে ওর একমাত্র বন্ধুরা বাদে কেও তপু কে চিনতে পারেনি।

তিন বন্ধু, ভালোবাসার মানুষ আর ভাষা। ভাষার প্রতি কতটা ভালোবাসা থাকলে কেউ নিজের ভালোবাসার মানুষের হাত ছেড়ে দিয়ে মিছিলে যেতে পারে এই গল্প যেন তার জীবন্ত উদাহরণ।
Profile Image for Nayeem Reza.
6 reviews2 followers
June 9, 2017
বন্ধু মিল্টন মারমা'র সাথে ছোট গল্প নিয়ে কথা হচ্ছিলো; তাকে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর কথা জিজ্ঞেস করাতে সে আমাকে জহির রায়হানের গল্প-সমগ্র পড়ে দেখতে বলে! একদিন মনখারাপ করা বিকেলবেলায় হাঁটতে হাঁটতে আজিজের দিকে গেলাম, নিচতলায় বইয়ের দোকানগুলা ঘুরে ঘুরে 'প্যাপিরাস' থেকে গল্পসমগ্র ব্যাগে করে নিয়ে ফিরলাম। শুরু করলাম পড়া। গল্পগুলা এত ছোট ছোট; কিন্তু একটা একটা গল্প পড়া শেষ করেই পরেরটা পড়তে পারিনাই; ওই গল্পটা যে ধাক্কাটুকু দেয়; তা হজম করতে সময় লেগেছে প্রত্যেকটাবার। বসে বসে ওই গল্পের দৃশ্যপট গুলো নিয়ে ভাবতে ভালো লেগেছে। এমনি করে সবগুলো গল্প পড়া শেষ করলাম। কি নাই বইটাতে? মুক্তিযুদ্ধ, বিশ্বযুদ্ধ, ভাষা-আন্দোলন এর কথা যেমন আছে তেমনি আছে ধর্মব্যবসায়ী পীর-মোল্লা-হুজুরদের কথা; তৎকালীন সমাজব্যবস্থা, পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদের জীবনব্যবস্থা, প্রেম-নিয়তি সবকিছুর দেখা মিলেছে বইটার এক একটা ছোটগল্পে।
Profile Image for HR Habibur Rahman.
284 reviews54 followers
September 23, 2023
বেশ কয়েকটা গল্প। ছোট্ট ছোট্ট বাক্য আর বড় বড় অনুভূতি। জহির রায়হানের গল্প আর মনের সাথে কথা বলবেনা তা কি করে হয়। বাংলাদেশের যে ক'জন কথাসাহিত্যিক সাবলীল ভাষায় লিখে গেছেন জহির রায়হান তাদের মধ্যে অন্যতম। হোক উপন্যাস কিংবা গল্প, তুলে এনেছেন সমাজের বিভিন্নরকম চিত্র। একুশের আন্দোলন থেকে শুরু করে একাত্তরের যুদ্ধ, ধর্ম থেকে শুরু করে পলিটিক্স সব কিছুরই প্রতিফলন দেখা যায় জহির রায়হানের লেখনীতে।
এই গল্পসমগ্র টাও ব্যতিক্রম নয়। মোট একুশটা গল্পের বই লেখক শেষ করেছেন একুশের গল্প দিয়ে। আর প্রত্যেকটা গল্পে তুলে এনেছেন তৎকালীন সমাজ ব্যাবস্থা, রাজনৈতিক অবস্থা, মানুষের দুঃখ, কষ্ট, চাওয়া, না পাওয়া, ধর্ম, প্রেম, আর জহির রায়হানের চিরচেনা যুদ্ধ আর একুশের প্রেক্ষাপট।

দুঃখ যেন পিছুই ছাড়েনা জহির রায়হানের লেখাতে। প্রথম গল্পটাতেই দুঃখের ছাপ। লেখেন কত সহজ ভঙ্গিমায় কিন্তু সেই ছোট্ট ছোট্ট কথা গুলো দাগ কেটে যায় গভীরভাবে। "হারানো বলয়” এর কথা বলতে গেলে দেখা যায় অতীত, বর্তমান একসাথে ব্লেন্ড করে কত সুন্দর করে নিম্নবিত্ত জীবনের কষ্টের কথা বলে কত কষ্ট দিয়ে চলে গেলেন। "সূর্যগ্রহন" গল্পের দুঃখ যেন অন্য মাত্রার। এই দুঃখে হারানোর বেদনা যেমন আছে তেমনি আছে একটা প্রশান্তি। সাথে আরও অন্য গল্পগুলোতেও এই ছাপ আছে। জহির রায়হানের দুঃখ গুলো হঠাৎ আক্রমন করে মন ফাঁকা করে চলে যায়। লুকিয়ে রাখা কষ্টগুলো মনের অজান্তেই সব প্রকাশিত হয়ে দিয়ে যায় গভীর বেদনা। জহির রায়হানের লেখা থাকবে আর সাথে মানুষের কষ্ট, অসহায়ত্ব, বেঁচে থাকার লড়াই থাকবেনা এটা হয়না।

"বাঁধ", "ইচ্ছা অনিচ্ছা" গল্প গুলোর মানুষের নির্বুদ্ধিতা যেন আজও ঠিক তেমোনি আছে। ধর্মকে যারা পুর্নাঙ্গ না বুঝে জোশ দেখায় তারাই ধর্মকে সবথেকে ছোট করে ফেলে। জোশে কী আর আল্লাহ খুশী হন!! ধর্মকে না বুঝলে পীর ফকিরের পায়ে পড়া সহজ হয়ে যায়, তাদেরকে ক্ষমতার উৎস ভাবা সহজ হয়ে যায়। সেই খুকির সরল মনে জানতে চাওয়া "বড়লোকেরা পাপ করেও জান্নাতে যাবে কিনা" এক অন্য উচ্চতায় আঘাত করে।

জহির রায়হান লিখবেন আর দেশের দুর্দশার কথা আসবেনা তা কি করে হয়। "অতি পরিচিত" গল্পের সেই হবু শিক্ষাকর্মকর্তার কথাই ধরা যাক। দেশটা আজও এদের মতো প্রেটেনশাস মানুষদেরই হাতে। আগেও এরাই ছিলো ধ্বংসের শুরুতে, আজও এরাই আছে ধ্বংসের শেষে। মাঝখানে শুধু ধ্বংসটা বেড়েছে। তাছাড়া সবই এক।


প্রত্যেকটা গল্পে একেকটা বিষয়ের প্রতি আলোকপাত করেছেন লেখক। কখোনো সোজাসুজি কখোনো মেটাফোরের মাধ্যমে বলে গেছেন অনেক কথা। উপরের বিষয় গুলো ছাড়াও বলেছেন বায়ান্নর ভষা আন্দোলন, একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধ, পাকিস্তানি হানাদারদের বর্বরতার কথা, বলেছেন ধর্ম ব্যবসায়ীদের কথা, বলেছেন সারাবিশ্বের যুদ্ধের কথা, ভয়াবহতার কথা, মানুষের আকুতির কথা, মানুষের না খেতে পাওয়ার কথা, মানুষের একটু শান্তির পরশ খোঁজার কথা। জহির রায়হানকে হারিয়ে হারিয়েছি এক রত্নখনি।
Profile Image for Kripasindhu  Joy.
542 reviews
August 19, 2025
বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারির সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত জহির রায়হানের গল্প সংখ্যাও মাত্র একুশটি। লেখকের জন্মবার্ষিকীতে তাই সবগুলো পড়ে ফেলতে সময় লাগলো না বেশি।

ভাষা, বুনন, কাহিনি; সবদিক দিয়েই আরামদায়ক গল্পগুলো।

*বছরের ২০০তম বই।
Profile Image for Kaniz Lamia.
12 reviews
November 19, 2022
গল্পগুলো শুধুই গল্প নয়! প্রতিটি গল্পে গভীর উপলব্ধির বিষয় আছে।
Profile Image for Daina Chakma.
440 reviews772 followers
August 22, 2017
একুশটা গল্প জড়ো করে লেখা গল্পসমগ্র। প্রত্যেকটা গল্প ভীষণ শক্তিশালী। একেবারে গভীরে গিয়ে আঘাত করে আর বিবেকের গালে কষে চড় বসিয়ে দেয়!!

জহির রায়হান আসলেই একজন ম্যাজিশিয়ান! এই মানুষটা একাত্তরের চৌদ্দই ডিসেম্বরেও বেঁচে ছিল। অথচ বাহাত্তরের তিরিশ জানুয়ারি হারিয়ে গেলো! কিভাবে এই নির্মম সত্য মেনে নেয়া সম্ভব??
Profile Image for Junaed Alam Niloy.
86 reviews10 followers
June 30, 2021
মোট ২১ টা গল্প আছে এই সংকলনে। প্রায় প্রতিটা গল্পই ভাল। অর্ধেকের মত খুউব ভাল। সময়ের প্রয়োজনে হলো মোষ্ট ফেভারিট। গল্পটা পড়পড় দুইবার পড়েছি। সাথে সূর্যগ্রহন, পোষ্টার, জন্মান্তর, ইচ্ছার আগুনে জলছি গল্পগুলোও খুব সুন্দর।
গল্পগুলো ভাষা আন্দলনের সময়ের, মুক্তিযুদ্ধের সময়ের, মানুষের সেই আদিম যুগ থেকে মহাশত্রু 'অভাব'-এর এবং আমাদের সমাজের এবং সমাজের মানুষদের কুসংস্কার-নিচু মানসিকতা নিয়ে। অবাক লাগে যে এখনো আমাদের অবস্থা প্রায় সেই আগের মতনই, উল্টো এই সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে অবস্থা আরো খারাপ হচ্ছে।
সব থেকে অবাক যে ব্যাপারটাতে হয়েছি তা হলো প্রতিটা গল্পের নামকরণে, খুবই বুদ্ধিদিপ্ত নামকরণ প্রায় প্রতিটা গল্পেরই। ছোট গল্পতে সাধারনত নাম নিয়ে লেখকদের অত মাথা ব্যাথা দেখা যায়না। জহির রায়হান এর ব্যালায় ব্যাতিক্রম, মনে হলো সে প্রতিটা গল্পের নাম নিয়েও অনেক সময় নিয়ে ভেবেছে।

এরই সাথে জহির রায়হান এর লেখা সবকিছু পড়া শেষ হলো। তার সবগুলো উপন্যাস, গল্পই আমার কাছে চমৎকার লেগেছে। জহির রায়হান থাকলে আমাদের সাহিত্য হয়ত আরো অনেক অনেক দূর এগিয়ে যেত। আফসোস!
Profile Image for Nur Fayes.
37 reviews3 followers
May 30, 2021
অসাধারণ সব গল্প। জহির রায়হান সাহেবের লেখা না পড়লে জীবনটা অপূর্ণই থেকে যাবে পাঠকের।
Profile Image for Saumen.
256 reviews
March 19, 2024
জহির রায়হান এমন একজন লেখক, যার সম্পর্কে বলতে গেলে বলতে হয়, কি দিয়ে গড়েছিলেন ঈশ্বর? ছোট্ট ছোট্ট বিষয়, ছোট্ট ছোট্ট ঘটনা নিয়ে এভাবে, এত সাবলীলভাবে, কম কথায় এত সুন্দর লেখা যায়, অবিশ্বাস্য!

ঠিক যেখানে যতটা দরকার। একছটাক এদিক ওদিক না। একদম পারফেক্ট।

এই মানুষটাকে হানাদাররা হত্যা করে গুম করেছে, ভাবলেই বুক ভার হয়ে আসে। ক্ষোভে, রাগে, দু:খে। বাংলা চলচ্চিত্রের আর কথাসাহিত্যের এই ক্ষয়পূরণ করা কারো পক্ষে সম্ভব না। জহির রায়হান একজনই। তার গল্পগুলিও অদ্বিতীয়।
Profile Image for Md Shariful Islam.
258 reviews84 followers
December 30, 2019
“ আচমকা সকালে উঠে গ্রেগর সামসা আবিষ্কার করল সে এক অতিকায় পোকা হয়ে বিছানায় পড়ে আছে “ বা “ মা আজ মারা গেছে। হয়তো কাল। আমি ঠিক জানি না “ লাইনগুলো শুনলেই আমাদের মেটামরফোসিসের কাফকা বা আউটসাইডারের ক্যামুর কথা মনে পড়ে ঠিক তেমনি “ রাত নামছে। হাজার বছরের পুরোনো সেই রাত “ শুনলেই মনে পড়ে হাজার বছর ধরের জহির রায়হানের কথা। কিন্তু তিনি তো কেবল ‘হাজার বছর ধরে', ‘শেষ বিকেলের মেয়ে' বা ‘বরফ গলা নদী’র মতো কালজয়ী উপন্যাসেরই স্রষ্টা নন বা ‘জীবন থেকে নেওয়া', ‘স্টপ জেনোসাইড’ এর মতো সিনেমার নির্মাতা নন তিনি যে অসাধারণ এক গল্পকারও তাঁর প্রমাণ এই সংকলনটি। মাত্র সাঁইত্রিশ বছরের স্বল্পায়ু জীবনে তাঁর লেখা গল্পের সংখ্যা সামান্যই, মাত্র ২১ টি।

জহির রায়হান সেইসব শিল্পীর একজন যাঁরা তাঁদের কর্মে, শিল্পে ছাপ রাখেন তাঁদের সমকালের, তাঁদের বিশ্বাসের। তাইতো বাঙালির উত্তাল সেইসময়ের শিল্পী জহির রায়হানের গল্পে বারবারই উঠে এসেছে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন আর একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, উঠে এসেছে তৎকালীন সমাজের ধর্ম ব্যবসায়ীদের স্বরূপ, চিরকালীন মধ্যবিত্তের প্রেম ও স্বপ্ন-বাস্তবতার দোলাচল আর বিপ্লবী চিন্তা।

‘সময়ের প্রয়োজনে', ‘মহামৃত্যু’, ‘কয়েকটি সংলাপ', ‘ম্যাসাকার’ বা ‘একুশের গল্প' গল্পগুলোতে বারবার উঠে এসেছে ভাষা আন্দোলন আর মুক্তিযুদ্ধের বয়ান। ‘সময়ের প্রয়োজনে' গল্পে তিনি দিয়েছেন আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সাধারণের অংশগ্রহণের এক বিচিত্র কারণের সন্ধান ; তারা প্রতিশোধ নিতে বা অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে বা শেখ সাহেবের নির্দেশে যতটা না যুদ্ধ করেছে তার চেয়ে বেশি যুদ্ধ করেছে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য বা সময়ের প্রয়োজনে। আজ পর্যন্ত শোনা যুদ্ধেন কারণের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যুক্তিযুক্ত কারণ বলে এটাকেই আমার মনে হয়েছে। ‘ম্যাসাকার’ গল্পে লেখক যুদ্ধের বিরুদ্ধে দিয়েছেন এক তীব্র বার্তা, পৃথিবীর সবচেয়ে মারাত্মক ব্যাধি এবং বর্তমান সভ্যতার নির্মম পরিহাস হিসেবে যুদ্ধকে উপস্থাপন করে লেখক সেইদিনের প্রত্যাশী যেদিন মানুষ তাতের সব ভুল বুঝতে পারবে, সবাই আপন করে নিতে পারবে। ‘একুশের গল্প' তো ভাষা আন্দোলন নিয়ে রচিত সবচেয়ে মর্মস্পর্শী গল্পগুলোর একটি। ভাষার দাবিতে শহিদ হওয়া এক ছাত্র ও তার পরিবারের করুণ বর্ণনা।

এছাড়া ‘সোনার হরিণ' গল্পের লোকটির মতো মধ্যবিত্তদের স্বপ্ন আর বাস্তবতার পার্থক্য, ‘একটি জিজ্ঞাসা ‘ গল্পের এক বাচ্চা মেয়ের মাধ্যমে সমাজের ধনী-গরিবের বৈষম্যের চিত্রায়ণ, ‘বাঁধ’ গল্পের মাধ্যমে সম্মিলিত শারীরিক পরিশ্রমের উপযোগিতা, ‘জন্মান্তর’ গল্পের পকেটমার মন্তুর মাধ্যমে এক মানবিকতার উত্তরণ, ‘ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি' তে বর্ণনা করেছেন নিজের আজন্ম লালিত স্বপ্নের কথা।

প্রতিটা গল্পই অসাধারণ। ছোট ছোট সরল বাক্যের মাধ্যমেই তিনি অসাধারণ মায়াজাল সৃষ্টি করেছেন। বর্ণনায় কোথাও কোনো মেদ নেই, নিতান্ত যেটুকু বলতে চান তাই একদম স্পষ্ট করে মুখের উপর বলে দিয়েছেন। তাইতো পড়তে কখনোই বিরক্তি আসে বরং বিষয়ের বৈচিত্র এবং ভাষার মুন্সিয়ানা ধাক্কা দেয় মনোজগতে। তো স্বাগতম সবাইকে এক জাদুকরের সান্নিধ্যে !
Profile Image for সানি .
14 reviews17 followers
August 22, 2015
ছোটগল্প গুলো সত্যই "ছোট, ছোট" কিন্তু গল্পগুলোর ভাব এত বেশি যে, প্রতিটা গল্প শেষে থমকে যাওয়া লাগে।
মনে হয়, ঠিক যেন আমাদের বর্তমান অবস্থার , মানে দুরবস্থার উপর বিদ্রূপ করেই লে��ক লিখেছেন।
যুগ যুগ পরেও যে আমাদের মধ্যেকার অন্ধতা,মিথ্যে সম্মান,বাহাদুরি, অগত্যা এসবের তেমন বিশেষ কোনই পরিবর্তন হয়নি, তা জানলে লেখক খুব কষ্ট পেত বলেই মনে করি।

গল্প গুলো ভেতরে দাগ কেটে কেটে গেল!
Profile Image for Towkir Ahmmed Rigan.
109 reviews18 followers
March 28, 2016
অন্য অনেকের মতই আমারো 'জহির রায়হান' এর লেখা প্রথম পড়া বই 'হাজার বছর ধরে' তারপর কিছুদিন আগে পড়েছিলাম 'বরফ গলা নদী'! 'হাজার বছর ধরে' আমাকে যতটা না মুগ্ধ করেছে 'বরফ গলা নদী' পড়ে মুগ্ধ হলাম তার থেকে বেশি! কত সহজ ভাষায়, কত স্পষ্টভাবে একটা পরিবারকে তুলে ধরা যায় তা অবাক হয়ে উপভোগ করলাম। তারপর পড়লাম 'আর কতদিন', সত্যি বলছি লেখকের প্রতি সম্মান আরো বেড়ে গেল! তারপর একদমে পড়ে ফেললাম 'তৃষ্ণা' আর 'কয়েকটি মৃত্যু'! এক একতা পড়ি আর লেখকের সেই সময়ে থেকেও এমন ডায়েনামিক আর সাহসী লেখা দেখে মুগ্ধ হয়। এরপর পড়লাম 'আরেক ফাল্গুন' এইটা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই! আসছে ফাল্গুনে দ্বিগুন হওয়ার বদলে আমরা মনে হয় হারিয়ে যাচ্ছি! এরপর পড়লাম 'শেষ বিকেলের মেয়ে' আর সবশেষে 'একুশে ফেব্রুয়ারি' আর এই 'গল্প সমগ্র'!
এই বইয়ের প্রতিটা গল্পেই ছিল যেন আলাদা কিছু। ইছু সাধারণ অসাধারণ চিত্রপট ফুটে উঠেছে লেখকের সহজ সাবলিল বর্ণনায়! এক একটা গল্প পড়ি আর মনে হয় যেন চোখের সামনেই ঘটে চলেছে সব। ছোট ছোট সুখ-দুঃখ ছড়িয়ে ছিল সবখানে আর সেসাথে মিশে ছিল প্রতিয়াদ আর সংগ্রাম!! ২১শে ফেব্রুয়ারি যে উনার রক্তে কিভাবে মিশে ছিল তা বোঝা যায় উনার অনেকগুলো লেখাতে! দেশ আর মাতৃভাষার প্রতি উনার যে অকৃত্তিম ভালোবাসা ছিল তা খুব সহজেই পকাশ পায়! বইগুলো পড়েছি আর নিজের অজান্তে পাকিস্তানিদের গালি দিয়েছি!! উনার অকাল মৃত্যুতে বাংলা সাহিত্যের যে কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা উনার লেখা পড়লেই বোঝা যায়! উনি বেঁচে থাকলে আজ আমাদের চিত্রজগতের কতটুকু উন্নতি হত জানি না তবে সাহিত্য আরো অনেক উন্নত হতে পারতো!
Profile Image for Md Fazlul Bari Fahim.
20 reviews13 followers
January 9, 2016
এপার বাংলায় আমার সব চে' প্রিয় ঔপন্যাসিক জহির রায়হান।তার সাথে প্রথম দর্শন নবম-দশম শ্রেণীর বাংলা সহপাঠে।
'হাজার বছর ধরে' উপন্যাস দিয়ে।তখন লেখনী বা লেখক নিয়ে কোনো মাথাব্যাথা ছিলো না।তবে এটুকু মনে আছে,এন্ডিংটুকু একেবারে মগজে গেঁথে গিয়েছিলো।
এখন বুঝি সমাপ্তিতে কি অদ্ভূত মুন্সিয়ানার পরিচয়ই না দিয়েছেন শক্তিশালী লেখক।
.
এখন আসি ছোটগল্পের ক্ষেত্রে।লেখকের ছোটগল্প 'সময়ের প্রয়োজনে' ও পড়া পাঠ্যবই থেকে, সংক্ষেপিত ভার্সন।
এবারে বছরের প্রথম দিনে যিরো আওয়ারের পরপরই শুরু করলাম সমগ্র।
মোট ২১টি গল্পের সমষ্টি।
.
প্রথম গল্প 'সোনার হরিণ' এই পাঠক ছোটোখাটো একটা ধাক্কা খাবেন।
তারপর লেখকের সেরা গল্প (আমার মতে) 'সময়ের প্রয়োজনে'।
তারপর বলতে হয় 'একটি জিজ্ঞাসা' ও 'সূর্যগ্রহণ'এর কথা।
'ভাঙাচোরা' গল্পের এন্ডিং মোটামুটি অনুমিতই ছিলো তবুও জাত লেখক সেখানেও রেখে গেছেন প্রশ্ন।
'কয়েকটি সংলাপ' এ অতীতের আয়নায় বর্তমানের বিম্ব প্রতিফলিত হয়।
'পোস্টার' কি 'ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি' থেকে 'একুশের গল্প' প্রতিটি গল্পেই অন্যরকম "শেষ হইয়াও হইলো না শেষ" ধরনের রেষ রয়েছে।
সংকলনের শেষ গল্প 'ম্যাসাকার' এবং 'সময়ের প্রয়োজনে' এ লেখক যুদ্ধের কদর্যতা,হিংস্রতা তুলে ধরার পাশাপাশি রেখেছেন যুদ্ধের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে প্রশ্ন।একই প্রশ্ন তুলেছিলেন এরিক মারিয়া রেমার্কও।তবে তা আরো বড় পরিসরে।
সবশেষে একজন পাঠক বিভ্রান্ত হতেই পারেন যে,কে সেরা?
ঔপন্যাসিক জহির রায়হান,নাকি ছোটগল্পকার?
Profile Image for MD Noman Bhuiyan.
65 reviews
April 8, 2020
বইয়ের গল্পগুলা একেকটা বোমার মতো। ভার্সিটির লাইব্রেরীতে গিয়া পড়তে শুরু করছিলাম জহির রায়হানের রচনাসমগ্র। রচনা সমগ্র ১ তখন ছিলো না। পেলাম ২ নং টা। ওখানে গল্প ছিলো। শুরু করি পড়া। কয়েকটা পড়েই সাথে সাথে বেরিয়ে পড়লাম। কারণ, তখন মনে হয়েছিলো লাইব্রেরীতে পড়ে ফেললে হবে না, এই লেখককের বই নিজের জন্য কিনে তারপর পড়বো।
ছোট গল্পের প্রতি আমার অন্যরকম টান, তাই লেখকের সম্পূর্ণ সমগ্র না কিনে কিনলাম শুধু অনুপম প্রকাশনি কর্তৃক প্রকাশিত গল্পসমগ্রটা। আর এইটাও কিনার পরে একদিনেই সব পড়িনাই। বা বলবো টানা পড়া হয় নাই। একদিন এক বসাতেই অর্ধেকের বেশি পড়ে যে রেখেছিলাম পরে আর মনে ছিলো না। আজকে শেষ করলাম অবশেষে!
Profile Image for Chinmoy Biswas.
175 reviews65 followers
August 2, 2021
হাজার বছর ধরে,শেষ বিকেলের মেয়ে,বরফ গলা নদী এই উপন্যাসগুলো যারা চিনে, তারা জহির রায়হানকে ও চিনে। এই মানুষটা যে শুধু চলচ্চিত্র নির্মাতা ছিলেন,তা নয়। বাঙলা সাহিত্যে তার অনেক অবদান রয়েছে,তার সাক্ষী "আরেক ফ্লাগুনের" মতো উপন্যাসগুলো।
জহির রায়হানের প্রায় সবগুলো উপন্যাস পড়া হলেও,উনার ছোট গল্প তেমন পড়তে পারিনি। এই গল্পসমগ্র শেষ করার আগে উনার "বাঁধ " নামের একটি গল্প পাঠ্য বইয়ে পড়েছিলাম,গল্পটা পড়েই মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। সেই থেকে তক্কে তক্কে ছিলাম,কবে বাকি গল্প গুলো পড়া হবে। অবশেষে গল্প সমগ্র পেলাম,এক বসাতেই শেষ করলাম।
এই বইয়ে মোট ২১ টি গল্প আছে। প্রত্যকটি গল্প ই চমৎকার, প্রত্যকটি। ভাষা আন্দোলন আর মুক্তিযুক্ত নিয়ে লেখা গল্পের সংখ্যা বেশি থাকলে ও, ভিন্ন স্বাধের ও অনেকগুলো গল্প আছে। প্রত্যকটি গল্পের প্লট থেকে শুরু করে বলার ধরন এতই চমৎকার যে পাঠক মাত্রই তন্ময় হয়ে পড়বেন।
জহির রায়হানের লেখার অন্যরকম একটা আমেজ আছে। এত সুন্দর, সাবলীল বর্ননা ভঙ্গি,গল্প বলার ধরন আমি খুব কম লেখকের লেখায় পেয়েছি। আমার লেখকের লেখা পড়তে পড়তে মনে হয়, গল্পের বা উপন্যাসের ঘটনাগুলো আমার চোখের ঘটে চলেছে।
এই যে এত চমৎকার মানুষগুলোকে আমরা অকালে হারিয়েছি,এত থেকে বড় ক্ষতি এই জাতির আর হবে না। এই মানুষগুলো ছিল জাতির কান্ডারি,উনাদের আমরা অকালে হারিয়েছি তাই আজ
Profile Image for Shaira Akter Jupi.
4 reviews
August 11, 2022
প্রত্যেকটা গল্পই এক কথায় অসাধারণ। জীবনের বাস্তবতার পরিণতির এক অনবদ্য রচনা প্রতিটি কাহিনী;আসলে বইয়ের গল্পের বাস্তবতা আর জীবনের বাস্তবতা প্রায় একই। বইয়ে শুধু গল্পের পরিণতিটা দ্রুত পড়ে জেনে যেতে পারি।কিছুটা প্রশান্তি পাই। কিছু শেখা হয়। কিন্তু নিজের এক জীবনের বাস্তবতার পরিণতি জানতে অপেক্ষা করতে হয় আমাদের-বেশ দীর্ঘ অপেক্ষা। অবশ্যি সব বইয়ের লজিক ঠিক হয় না,কিন্তু জহির রায়হান এর গল্পগুলো সত্যিই বেশ প্রশংসানীয়। আমার সবচাইতে ভালো লেগেছে 'ভাঙাচোরা' গল্পটি। আমি তো বলব সকল বইপ্রেমিদের অবশ্যপাঠ্য বই এটি🙃
Profile Image for Sajib.
191 reviews23 followers
January 18, 2022
সাহিত্য হওয়া উচিত এমনই।যেখানে সাধারণ মানুষ আশা আকাঙ্ক্ষা,সুখ দুঃখের গাথা যাপিত জীবনের চিত্র উঠে আসবে।কিন্তু বর্তমানে সাহিত্যের নামে যে নোংরামী চলছে তা বলার নয়।
This entire review has been hidden because of spoilers.
Profile Image for Samiha Kamal.
121 reviews118 followers
May 1, 2021
গল্পগুলো এতো এতো ভালোলেগেছে। শেষ করে একটা তৃপ্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। জহির রায়হানের লিখনশৈলী স্বতন্ত্র, পরিপাটি আর গল্পগুলোর প্লটও নিপুণহাতে সাজিয়েছেন তিনি।
Profile Image for Rocky Rahman.
106 reviews10 followers
January 9, 2024
পাকিস্তানের ছিলো সাদাত হাসান মান্টো, ভারতের ছিলো সত্যজিৎ রায় আর আমাদের ছিলো একজন জহির রায়হান। ছোটগল্প কতোটা শক্তিশালী হতে পারে তা এই তিনজন লেখকের গল্প পড়লে বুঝ���ে পারা যায়।
এই বইটা জহির রায়হানের ২২টি গল্প নিয়ে প্রকাশ করা হয়, প্রথমে ২১টি ছিলো সম্প্রতি ১টি যোগ করা হয়। প্রতিটি গল্প যেনো এক একটি বোমা ছিলো। প্রতিটি গল্প পড়ার পরেই থ মেরে থাকতে হয়, দৃশ্যপটগুলো কল্পনা করতে হয়, ভাবতে হয়, ভাবতে ভাবতে মনটা বিষাদে ভরে যায় নয়তো মনে এক বিদ্রোহী চেতনা জেগে উঠে।
গল্পগুলো কখনো রচিত হয়েছে ভাষা আন্দোলনের পেক্ষাপটে, কখনো মুক্তিযুদ্ধের, কখনো মধ্যবিত্তের সংসার এবং ভালোবাসায়, কুসংস্কারে এবং সমাজের হীন মানসিকতায়।
প্রতিটি গল্প শেষ করার পরে ধ্বাক্কা খেতে হয়, মনে উঁকি দেয় গভীর উপলব্ধি।
.
একদম প্রথম গল্প 'সোনার হরিণ' এ লেখক মধ্যবিত্ত সমাজের যে স্বপ্ন থাকে তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে এবং সে স্বপ্নের সাথে বাস্তবতার কতোটা ফারাক থাকে তা দেখিয়েছেন।
'সময়ের প্রয়োজন' গল্পটাতে লেখক দেখিয়েছেন মানুষ কেনো যুদ্ধ করে। গল্পটিতে যুদ্ধ চলাকালীন একজন মুক্তিযুদ্ধার খাতাতে পাকিস্তানিদের উদ্দেশ্যে লেখা একটা উক্তি পড়ে সত্যিই অনেকক্ষণ বই বন্ধ করে বসে বসে ভাবছিলাম, লাইনটি তুলে ধরছি,
-" একদিন যারা আমাদের অংশ ছিল। একসঙ্গে থেকেছি। শুয়েছি। খেয়েছি। ঘুমিয়েছি। এক টেবিলে বসে গল্প করেছি। প্রয়োজনবোধে ঝগড়া করেছি। ভালোবেসেছি। আজ তাদের দেখলেই শরীরের রক্ত গরম হয়ে যায়। চোখ জ্বালা করে উঠে। হাত নিশপিশ করে। পাগলের মতো গুলি ছুড়ি। মারার জন্য মরিয়া হয়ে উঠি। একজনকে মারতে পারলে উল্লাসে ফেটে পড়ি। ঘৃণার থুতু ছিটোই মৃতদেহের উপর'।
'অপরাধ' এবং 'স্বীকৃতি' গল্পে নারীদের জীবন নিয়ে একদম বিপরীত ধর্মী দুটি গল্প লিখেছেন লেখক।
'ম্যাসাকার' গল্পে লেখক যুদ্ধে একজন ডাক্তারের যুদ্ধ সম্পর্কে উপলব্ধি এবং লুইসা নামক মেয়ের করুণ পরিণতি তুলে ধরেছেন।
.
বইটির প্রতিটি গল্প নিয়ে আমার মতে লেখা দরকার, প্রতিটি গল্পই অসম্ভব রকম ভালো ছিলো। কোনোটা থেকে কোনোটা কম নয়।
আমি সবাইকে বলবো অবশ্যই বইটি পড়ে দেখবেন।
Profile Image for Shadin Pranto.
1,469 reviews560 followers
July 3, 2017
জীবনশিল্পী বলে একটা কথা আছে। জহির রায়হান একই সাথে জীবনশিল্পী এবং দেশ,কাল নিয়ে তার জ্ঞান বেশ টনটনে।

তাঁর মোট ২১ টা গল্প নিয়ে এই গল্পসমগ্র।সব গল্পের প্রেক্ষাপট পাকিস্তান শাসনামল।

জহির রায়হানের গল্পগুলো সব জীবনঘনিষ্ঠ। তার গল্পের চরিত্ররা সবাই নিম্নবিত্ত ও নিম্নমাঝারি বিত্তের মানুষ। তারা নিজেরা খেতে পায় না অথচ অন্যের জন্য খেটে মরে, নিজেরা ভুখা-নাঙার দল বারবার শাসকশ্রেণী কর্তৃক প্রভাবশালীদের প্রভাবে কাতর প্রজাতি-এই প্রজাতিকে নিয়েই জহির রায়হানের "গল্পসমগ্র "।

তাঁর গল্পগুলোতে বিশেষ মাত্রা পেয়েছে বাঙালির অঘোষিত স্বাধীনতা একুশ। ভাষা আন্দোলনের আবেগকে উপজীব্য নিয়ে অসাধারণ কিছু গল্প ফেঁদেছেন অমর কথাশিল্পী মোহাম্মদ জহিরুল্লাহ ওর্ফ জহির রায়হান।
Profile Image for S M Rafiuddin Rifat.
62 reviews
December 14, 2017
প্রতিটা গল্প অসাধারণ এবং চমক জাগানিয়া। নির্দ্বিধায় পাঁচ তারকা দেয়ার মত একটা বই। কিছু কিছু গল্প হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া। কয়েকটা গল্প পূর্ণতা পেয়েছে একদম শেষের কিছু লাইনে। সাবলীল ছন্দে গল্পগুলো লেখা। এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলার মত।
এই সমগ্র-এর একটা গল্প আমাদের পাঠ্য ছিল-- 'একুশের গল্প'। বেশিরভাগ অংশ জুড়ে পাকিস্তানি শাষকগোষ্ঠি এবং ধর্মীয় মৌলবাদীদের একহাত নিয়েছেন এই অসাধারণ প্রতিভাবান লেখক।
Profile Image for Mubtasim  Fuad.
316 reviews41 followers
June 18, 2025
এই বইয়ের রিভিউ আমার দ্বারা এই মুহুর্তে লেখা সম্ভব না! দুঃখিত..
Profile Image for Pathok Bolchi.
97 reviews5 followers
June 24, 2023
জহির রায়হান আমার নায়ক। তার মত শক্তিশালী কথাশিল্পী বাংলাদেশে আর জন্মেননি বোধকরি।

কিছু বই আছে যেগুলো পড়লে আপনার মাথায় চিন্তার জঠ বাঁধে।জানা উত্তর আবার ভাবতে হয়, এটা কী আসলে প্রশ্নের উত্তর নাকি প্রশ্নের পরে আবার প্রশ্ন? সিদ্ধান্তে পৌছানো কোনো মতামতকে আবার বদলাতে হয় যেন সেটি সিদ্ধান্তের পেছনে কিংবা পর'র মতামত । নিজের দর্শনকে প্রশ্ন করতে হয় পুনরায়।

চোখের সামনে মেকি সমাজের বাস্তবতা ভেসে ওঠে এবং আপনি বুঝতে পারেন সমাজ আসলে মরীচিকার মত ভ্রান্ত কিছু বিশ্বাসকে আঁকড়ে ধরে আছে স্রেফ কিছু মানুষকে শুধু সুবিধা করে দেবার একটা নিয়মের মধ্যে আর সেই সুবিধাবাদীরা সমাজকে কী নিদারুণ করে সংখ্যাগুরু মজলুম মানুষদেরকে ট্রিট করছে পোষ মানানো জানোয়ারদের মতন। কিন্তু আপনি বুঝবেন না কারণ আপনি তাদের মত মাকড়শার জালে আঁটকে শিকারে পরিণত হয়ে গেছেন।

এই শিকারীদের বিরুদ্ধে যে মানুষগুলো আওয়াজ তুলেছিলেন তাদের অন্যতম হলেন, জহির রায়হান।
'গল্পসমগ্র' বইটিতে তার জীবদ্দশায় প্রকাশিত সব গল্পই সংকলিত হয়েছে। বইটিতে ২১ টি গল্প আছে যা একে থেকে অপরটি আলাদা। জহির রায়হান আমার প্রিয় কথাশিল্পী। তার লেখার, সিনেমার, জীবনের আমি পাড় ভক্ত। সবচেয়ে বড় কথা, রাজনীতি সূত্রে কিংবা চলচ্চিত্রকার হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভের পরও সবকিছু ছাপিয়ে জেগে থাকে তাঁর লেখক সত্তা, একটাই পরিচয় তার—কথাশিল্পী জহির রায়হান; যাঁর অনবদ্য ভঙ্গিটিকে বলা যেতে পারে একান্তই ‘জহিরীয়'।

জহির রায়হানের লেখার বিষয় হলো ভাষা আন্দোলন,মুক্তিযুদ্ধ আর অপরিণত অসমাপ্ত প্রেম এবং সমাজ বাস্তবতা। কী সাংঘাতিক গল্পগুলোয় না লিখেছিলেন তিনি। মন ছুঁয়ে তো যায় ই সাথে চিন্তাকে স্পর্শ করে। তাকে প্রশ্ন করে আদর্শের সামনে দাঁড় করায়। সমাজের চোখে চোখ রেখে সমাজকে দেখায় কী অসহায় মানুষেরা!
Displaying 1 - 30 of 55 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.