মস্ত বড় এক জাদুকর ছিল এই শহরে। পাথরকে চোখের পলকে হীরা বানিয়ে ফেলতে পারত সে। কিন্তু জাদুকরকে হন্যে হয়ে খুঁজেও পায় না কেউ। হঠাৎ ছোট্ট এক ছেলে একদিন বলে, সে জানে জাদুকর কোথায়।
আর যায় কোথায়, হীরার লোভে তাকে বন্দি করে ভয়ংকর আলিবু। জাদুকরের বুদ্ধিতে ছোট্ট ছেলের কথায় হীরার লোভে আলিবু তখন শহরের ময়লা-জঞ্জাল পরিষ্কার করে, বাড়ির ছাদে লাগায় আয়না। ঝকঝকে শহরে দাঁড়িয়ে দুষ্ট লোকটি দেখে শহরের ঝলমলে আলোয় হীরা পাওয়ার চেয়েও বেশি আনন্দ হচ্ছে তার। আর এই পরিষ্কার শহরের স্বপ্নটা কে দেখেছিল, জানো? তোমারই মতো ওই ছোট্ট ছেলেটি, যার নাম 'স্বপ্ন'!
Mahrin Ferdous is the author of eleven books across adult and children’s literature. Her fiction inhabits the border of surrealism and magic realism, where social upheaval collides with psychological dislocation and the hidden architectures of memory. Her stories blur reality and the uncanny, drawing readers into worlds that are unsettling yet deeply human.
In 2019, she was named one of Bangladesh’s five most promising young writers by Banglalink Telecom. She received the BRAC Bank–Samakal Literary Award in 2022 for her contributions to Bangla literature. Beyond her books, she serves as Vice President of the Pencil Foundation, a nonprofit dedicated to youth creativity and social engagement.
She now lives in New York, where she continues to write and work.
একদা শহরে ছিল এক জাদুকরের বাস। সেই জাদুকর ছিল অসম্ভব ক্ষমতাধর। কিন্তু সেই জাদুকরকে কোথায় পাওয়া যাবে তা কেউ জানতো না। তবে সেই শহরে বসবাস করা একটা ছোট্ট ছেলে জানতো কোথায় পাওয়া যাবে জাদুকরকে। আর তাই শহরের সবচেয়ে ক্ষমতাবান ব্যক্তি আলিবু বন্দী করলো ছেলেটাকে। তারপর কোথায় পাওয়া গেলো জাদুকরকে আর জাদুবলে কীভাবে বদলে গেলো শহরের চেহারা এটাই এই ছোট্ট গল্পটার মূল উপজীব্য বিষয়।
ছোটদের জন্য লেখা বইগুলো পড়তে আমার বরাবরই ভালো লাগে। কারণ সেই বইগুলোতে খুব সুন্দর করে একটা ম্যাসেজ দেওয়া হয়। এই গল্পটার মাধ্যমে লেখক যে ম্যাসেজটা দিয়েছেন তা কেবল ছোটদের জন্য না, আমাদের সকলের জন্য প্রযোজ্য। ছোটদের জন্য লেখা এটাই লেখক মাহরীন ফেরদৌসের প্রথম বই। ছোট ছোট বাক্যে বেশ সুন্দর করে গুছিয়ে লিখেছেন তিনি। অভি মজুমদারের করা ইলাস্ট্রেশানগুলোও চমৎকার। সদ্য পড়তে শেখা একটা ছোট্ট মানুষের জন্য একদম পারফেক্ট একটা বই। যারা ছোটদের জন্য বই খুঁজছেন তাদের জন্য হাইলি রিকমেন্ডেড।
গল্পকার হিসেবে মাহরীন আপু অনন্য। আশা করি ভবিষ্যতে বড়দের পাশাপাশি ছোটদের জন্যেও এমন আরও অনেক গল্প লিখবেন তিনি।
বড় মানুষরা যারা ছোটদের জন্য লেখে, ছোটদের বোঝার মতো ভালোবাসা না থাকলে আসলে লেখাটা লেখা হয়ে ওঠে না। এই কথাও অস্বীকার করার উপায় নেই যে, ছোটদের জন্য লেখাই আসলে সবচেয়ে কঠিন।
মাহরীন ফেরদৌসকে দীর্ঘদিন ধরে চিনি। তাই অন্তত যখন ‘কোথায় গেল জাদুকর’ নামে শিশুতোষ গল্পবইটি খুব সুন্দর অলংকরণসহ প্রকাশ পেল, তখন পড়ার আগেই আমি এটা জানতাম যে, মাহরীনের লেখাটা লেখা হয়ে উঠবে। অবশ্য এই কথার বিতর্কের অবকাশ আছে যে, আসলে লেখা কীভাবে লেখা হয়ে ওঠে! আমি কেবল আমার মতামতটাই বলতে চাই।
শৈশব বা কৈশোরের শুরুটা এমন যে ওই সময়ে যে মনন তৈরি হয় বাকি সময়টা ওই শিক্ষা, ওই রুচি এবং মানবিকতা নিয়েই আমাদের জীবনটা চলে যায়। মানবিকতা, মানুষের জন্য মমতা এসব যদি ছোট বয়সে না হয় তবে আর কখন হবে? আর এই জিনিসগুলো শিশুদের ভেতরে ঢুকিয়ে দেওয়ার জন্য শিক্ষাক্রমের বই নয়, বরং গল্প সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
পড়ার জন্য মানুষ যা পড়ে, একটা শিশুমন যেটা পড়ে, সেটা আসলে তাকে হয়তো একজন সামাজিক জীব হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করে। কিন্তু গল্প তাকে মানুষে পরিণত করে। পৃথিবী তো মূলত গল্পেরই।
মানুষ সুন্দর গল্পগুলো যুগ যুগ নিজের ভেতরে বয়ে বেড়ায়। আমরা সুকুমার রায় পড়তাম, ঠাকুরমার ঝুলি পড়তাম। আর তারচেয়েও বড় একটা ব্যাপার ছিল, আমরা রূপকথার গল্পগুলো দাদা-দাদির মুখে শুনতাম। গল্প শুনে শুনে আমরা বড় হয়েছি। তারপর পড়েছি। যারা গল্প বা সাহিত্যকে মনের ভেতরে সত্যি ধারণ করতে পেরেছেন, তারা মানুষ হিসেবে একটু হলেও অন্যরকম।
মাহরীন সম্ভবত চেয়েছেন সেটাই। যারা বড় হবে তারা যেন একটু হলেও সুন্দর একটা মন নিয়ে বড় হতে পারে, সুন্দর কিছু দেখতে পারে এবং সুন্দর কিছু কাজ করতে পারে। পৃথিবীকে দেখার যে একটা আলাদা চোখের দরকার হয়, সেই চোখটাও মাহরীন বানিয়ে দিতে চেয়েছেন গল্পের আড়ালেই, নীতিকথার কঠিন নীতিতে নয়।
আমাদের হারিয়ে যাওয়া গল্পগুলো নতুন করে নতুন ভাবে, নতুন সমাজ বাস্তবতায় শিশুদের বোঝাতে গিয়ে রূপক হিসেবে জাদুকরের ব্যবহার করেছেন বটে, কিন্তু শেষে আসল জাদু যে মানুষের ভেতরেই থাকে সেটাও বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু কেবল আমাকে বোঝালেই কী হবে? যাদের জন্য লেখা তারা কী বুঝবে?
গল্পের শুরুতে আমরা একজন জাদুকরের কথা জানতে পারি। যে জাদুকর সব করতে পারে, পারে অসম্ভবকে সম্ভব করতে, পারে লুকিয়ে থাকতে। ওদিকে শহর শাসন যে করছে, সেই মানুষটা জাদুকরটাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে।
এর ভেতরেই ঘটল এক কাণ্ড। এক ছোট্ট শিশু বলল, আমি জানি জাদুকর কোথায় থাকে। হৈ হৈ পড়ে গেল। এরপর তো আর বলতে পারে না কোথায়। আর কী করা? ওই শাসক এসে শিশুটাকে ধরে নিয়ে গেল এবং তারপর শুরু হলো ম্যাজিক।
সব তো আর বলে দেওয়া যাবে না, আর আমি বুঝলেও হবে না। আমি তাই আমার ভাগ্নি রুফাইয়ার কাছে জানতে চাইলাম বইটি দিয়ে। ওর বয়স সাত বছর। রুফাইয়া বইটি রাখল। কতক্ষণ পর আমার কাছে এলো। বলল, সোলার সিস্টেম দিয়ে তাহলে কারেন্টের সমস্যার সমাধান হবে? আমি বললাম, হতে পারে।
চাইলেই সব ময়লা পরিষ্কার হবে? আমি বললাম, হতেই পারে। মানুষ চাইলে পারে না এমন কিছু তো নেই। গল্পটা তোমার তাহলে ভালো লেগেছে? গল্প না তো। স্বপ্ন। এই কথা বলে রুফাইয়া চলে গেল।
আমি বুঝতে পারলাম বড়দের জন্য লিখতে থাকা মাহরীন ফেরদৌস শিশুদের জন্যও চমৎকার একটা স্টোরি বলে ফেলেছেন। শিশুরাতো আর ভান জানে না। একইসঙ্গে স্বপ্ন ও বাস্তবতার একটা ফারাক যেমন মাহরীন বোঝাতে পেরেছেন, তেমন মানুষের জন্য ভালো করাটার ইচ্ছাটাই যে সবচেয়ে বড় জাদু হতে পারে মানুষের জীবনে, সেটাও বোঝাতে পেরেছেন। মাহরীন ছোটদের জন্য আরও অনেক লিখবেন, এই প্রত্যাশা থাকল।
‘কোথায় গেলো জাদুকর’ বইটি ৪-৮ বছরের পাঠকদের জন্য লেখা। চিত্রায়ণ করেছেন অভি মজুমদার।
ফেব্রুয়ারী মাসের শেষ বই। আজকাল শিশুদের জন্য লেখা খুব পড়ছি কারণ বাড়িতে এখন এক ক্ষুদে পড়ুয়া আছে। বাংলাটা তাকে অবশ্য ধরাতে পারিনি তবে আমি নিজেই পড়ে শুনাই। সে নিজে যেহেতু বই পড়ে ভাবতে শিখছে, বাংলা গল্পের বইগুলোর প্রব্লেমেটিক দিকগুলো নিয়ে কিছু কিছু প্রশ্ন করেই দিনশেষে।
এই বইটি লেখিকার কাছ থেকে পেয়েছি। সৌজন্য সংখ্যা নাম দিলাম তাই। তবে এই রিভিউ দেবার পিছে কোন প্রকার প্রচারণা অন্য কোন হাত নেই - তা আগেই বলে দিচ্ছি।
যা বলছিলাম, বাচ্চাদের বই পড়াবার পেছনে আমরা চাই তারা কিছু একটা পড়া শেষে মনে রাখুক, নিজের ভাল অভ্যাসে যোগ করুক! ছোট্ট এই বইটায় সেই এলিমেন্ট আছে। খুব অল্প কথায় সুন্দর করে একটা দুটো জিনিসই শেখানোর উপর জোর দেওয়া হয়েছে। গল্প অযথা টেনে বড় করা হয়নি যাতে যে বাচ্চাটি নিজে বইটা পড়বে বা যে গল্পটা অন্যের মুখে শুনবে সে যেন হাপিয়ে না যায়। যেহেতু আমি লেখিকার কাছ থেকে পাওয়া পিডিএফ কপি পড়েছি তাই ভেতরে ছবি আছে কিনা জানিনা। তবে প্রচ্ছদটা আমার বেশ ভাল লেগেছে। অনেক রঙের আধিক্য নেই তবে ছিমছাম এর ভেতরেও সুন্দর।
আমার ছয় বছরের কন্যা শুধু গল্পের নায়ককে কেন আটকে রাখা হলো আর তার বাবা মা কোথায় -এ ছাড়া কোন প্রশ্ন করেনি। তাই ধরে নিচ্ছি গল্পখানা তার ভালই লেগেছে। আমি বিশ্বাস করি দুইধরনের বই লেখা সবচেয়ে কঠিন। শিশুদের জন্য গপ্পো ফাঁদা, আর হাসির গল্প লেখা। এই দুইটি বিষয় মিষ্টি বানানোর মতো।একটু এদিক সেদিক হলেই গেল! এই কঠিন কাজে পদার্পণ করে তা উতরে যাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়।
বইমেলার দুটো দিন সময় বাড়ানো হয়েছে। তাও সেটা পরেছে ছুটির দিনে। পারলে বাচ্চাদের নিয়ে জাদুকরকে খুঁজে আসুন!
'কোথায় গেলো যাদুকর' একটি নির্মল আনন্দের বই, রূপকথার বই। এ গল্পে আমাদের চেনা পরিচিত ঢাকা শহর আছে, প্রোটাগনিস্ট হিসেবে আছে ছোট একটি বাচ্চা ছেলে, আছে ব্যাটম্যানের মত ডার্ক নাইট এক যাদুকর, আর আছে হিংসুটে এক এন্টাগনিস্ট আর আছে এদের মধ্যে যুজুমান দ্বন্দ। কেনো এ দ্বন্দ, কোথায় এর অবসান বা সমাধান, তা জানতে পড়তে হবে বইটি।
বইটির ব্যাপারে বলতে গেলে বলতেই হয় যে, আশেপাশের সমস্যা, জঞ্জালগুলোকে এড়িয়ে না গিয়ে, পলিটিক্যাল হয়েও এপলিটিক্যালি সেগুলোকে একদম কচিকাচাদের জন্য প্রাসঙ্গিক করতে পারাটা যে কোনো লেখকের জন্যই খুব 'tricky' একটা কাজ। প্রথাগত শিশুসাহিত্যিক না হয়েও এ ঘরাণার প্রথম বইতে লেখক এ ব্যাপারটায় উৎরে গেছেন বেশ ভালোভাবেই। এ জনরায় তাঁর আরো অবদান আসুক এই শুভকামনা থাকবে।
ছোটদের জন্য লেখা কথাসাহিত্যিক মাহরীন ফেরদৌসের প্রথম ছোটগল্প 'কোথায় গেলো যাদুকর' পাওয়া যাচ্ছে বইমেলায় শিশুচত্বরের ৭৪০-৭৪১ নং স্টলে, শৈশবপ্রকাশের প্যাভিলিয়নে। আমন্ত্রণ রইলো!
'কোথায় গেল যাদুকর' বইটি শিশুদের উপহার দেওয়ার মতো চমৎকার একটি বই। বড়দেরও ভালো লাগবে। আশা করছি ভবিষ্যতে লেখিকার মাধ্যমে আমরা আরো অনেক চমৎকার সব শিশুতোষ বই পড়তে পারবো। শুভাশিস রইলো।