আনিস, পেশায় যে একজন আমলা, যার জীবনবৃত্তান্ত মানুষ হিসেবে আমার অপরাধসমূহ-এর বিষয়, একজন স্পর্শকাতর, এবং অত্যন্ত স্বাভাবিক ও অত্যন্ত অস্বাভাবিক মানুষ, যার কাছে জীবনের প্রতিটি ঘটনাই অপরাধের মতো। আনিসের কাছে তার জীবনযাপন হচ্ছে নিরন্তর অপরাধযাপন। হুমায়ুন আজাদ আনিসের জীবন বর্ণনা করেছেন তরুণ বয়স থেকে পঞ্চাশোত্তর বয়স পর্যন্ত; আনিস নিজে তার অপরাধবোধের সাথে। আকস্মিক এক দুর্ঘটনার মধ্যে দিয়ে সে জড়িয়ে পড়ে বন্ধুস্ত্রী ডলির সাথে, বিয়ে করে তাকে, তাকে সুখী করার সাধনা করে, যদিও তার সাধনা কারো চোখে পড়ে না; আবার ডলিকে সে কখনো নিজের স্ত্রী ব’লেও ভাবতে পারে না। আনিস বিয়ের মধ্যে দিয়ে নতুন মানব সৃষ্টি করতে চায় না, সন্তান জন্ম দেয়া অপরাধী সৃষ্টি করতে চায় না; সে থাকতে চায় নিঃসন্তান, নিঃসঙ্গ, নির্জন। কিছুই তাকে সুখী করে না; কিছুই তাকে দুঃখ দিতে পারে না। আনিস কখনো ব্যর্থ নয়, ব্যর্থ হ’তে সে জানে না; সাফল্য সে চায় না, কিন্তু সাফল্য ছাড়া সে বাঁচতে পারে না ; ব্যর্থ হওয়া তার কাছে অপরাধ , সফল হওয়াও অপরাধ। নারীসংস্পর্শে সে অনেক এসেছে, বারবার অপরারবোধ করেছে, নারীদের কাছে অপরাধ করেছে, আপরাধ করেছে নিজের কাছেও। মধ্যেপঞ্চাশে একটি বালিকার সংস্পর্শে তার কোনো অপরাধবোধ হয় নি, তবে বালিকাটি চ’লে যাওয়ার পরই তার অপরাধবোধ জেগে ওঠে, এবং আনিস, আরো সাফল্য যার জন্যে অবারিত ছিলো, পদত্যাগ করে তার উচ্চ পদ থেকে । সে বেরিয়ে যায় শহর আর সভ্যতা থেকে; যে-প্রকৃতি সে চেনে না আশ্রয় নিতে চায় তার মধ্যে। ছাপ্পানো হাজার বর্গমাইল ও সব কিছু ভেঙ্গে পড়ের পর হুমায়ুন আজাদের এ উপন্যাসও পাঠকদের আলোড়িত ও পীড়িত করবে স্বপ্নে ও জাগরণে।
Humayun Azad (Bangla: হুমায়ূন আজাদ) was a Bangladeshi author and scholar. He earned BA degree in Bengali language and literature from University of Dhaka. He obtained his PhD in linguistics from the University of Edinburgh in 1976. He later served as a faculty member of the department of Bengali language and literature at the University of Dhaka. His early career produced works on Bengali linguistics, notably syntax. He was regarded as a leading linguist of the Bangla language.
Towards the end of 1980s, he started to write newspaper column focusing on contemporary socio-political issues. Through his writings of 1990s, he established himself as a freethinker and appeared to be an agnostic. In his works, he openly criticized religious extremism, as well as Islam. In 1992 Professor Azad published the first comprehensive feminist book in Bangla titled Naari (Woman), largely akin to The Second Sex by Simone de Beauvoir in contents and ideas.
The literary career of Humayun Azad started with poetry. However, his poems did not show any notable poetic fervour. On the other hand his literary essays, particularly those based on original research, carried significant value.
He earned a formidable reputation as a newspaper columnist towards the end of 1980s. His articles were merciless attacks on social and political injustice, hypocrisy and corruption. He was uncowed in protesting military rule. He started to write novels in 1990s. His novel Chappanno Hazar Borgomile is a powerful novel written against military dictatorship. Azad's writings indicate his distaste for corrupt politicians, abusive military rulers and fundamentalist Islam. Nevertheless, his prose shows a well-knit and compact style of his own. His formation of a sentence, choice of words and syntax are very characteristic of him. Although he often fell victim to the temptation of using fiction as a vehicle of conspicuous political and philosophical message, he distinguished himself with his unique style and diction.
On August 11, 2004, Professor Azad was found dead in his apartment in Munich, Germany, where he had arrived a week earlier to conduct research on the nineteenth century German romantic poet Heinrich Heine. He was buried in Rarhikhal, his village home in Bangladesh.
In 2012, the Government of Bangladesh honored him with Ekushey Padak posthumously. Besides this, he was honored with Bangla Academy Award in 1986.
আজ পড়ে শেষ করলাম হুমায়ুন আজাদের "মানুষ হিশেবে আমার অপরাধসমূহ"। হুমায়ুন আজাদ নিঃসন্দেহে বাংলা সাহিত্যের অনেক বড় লেখক। তার লেখনী যেমন সমৃদ্ধ, তেমনি ভিন্নধর্মী। হুমায়ুন আজাদ আমার খুব প্রিয় লেখক, তেমনি প্রিয় কবি। উনার লেখার যে দিকটা আমার ভালো লাগে তা হল সে একদম ভিন্নধর্মী লেখা লেখে যা বাস্তব সত্য। অন্যরা যা লিখতে ভয় পায়। তার লেখনী, শব্দ চয়ন অনেকটা গদ্য কাব্যের মত। যা আমাকে খুব আকর্ষীত করে।
"মানুষ হিশেবে আমার অপরাধসমূহ" বই টির বিষয় বস্তু হল আনিস নামের একজন উচ্চপদস্থ আমলাকে নিয়ে, যে অকপটে স্বীকার করে যায় তার জীবনের অপরাধ গুলো। কিন্তু সে একই সাথে অপরাধ করেও চলে। দুর্ঘটনা চক্রে বিয়ে করে বন্ধুপত্নি কে কিন্তু মন থেকে তাকে কখনো স্ত্রীর মর্যাদা দিতে পারে না। সে অস্তে আস্তে একা হয়ে যায়, প্রমোশন পেয়ে যায় ক্রমাননত। সে পরিনত হয় খাস অমলায়। কখনো ভালো কাজ করে, কখনো খারাপ কাজ। সবশেষে সে জড়িয়ে যায় তার চেয়ে ছোট বয়সের মেয়ের সাথে এবং একসময় সে নিজেই পদত্যাগ করে তার চাকরী থেকে। এই উপন্যসের মজার ব্যপার হল, আপনি নিজেই আনিসের ভালো কাজ এবং খারপ কাজের সাক্ষী হয়ে যাবেন। কখনো আপনার রাগ হবে, কখনো তার মানসিক অবস্থান বুঝতে পারবেন।অনেকটা জীবন যেখানে যেমন। সবশেষে, আমার ভালো লেগেছে উপন্যাস টি। অন্যরকম কিন্তু বাস্তবমুখী। :)
"মানুষ হিশেবে আমার অপরাধসমূহ" লেখক যখন হুমায়ুন আজাদ, তখন বইয়ের মলাটে বড় অক্ষরে লাল এই নামটি আমাকে আর অবাক করে না। বইটি মূলত একটি আত্মস্বীকারোক্তিমূলক উপন্যাস। যেখানে মূলত চরিত্র সরকারি আমলা কথা বলে নিজের সাথে, তার আশপাশের মানুষদের সাথে, তার অপরাধ সমূহ নিয়ে।
একটা বই মানুষকে কতটা বিষন্ন করে তুলতে পারে, কতটা যন্ত্রনা দিতে পারে, কতটা উত্তপ্ত করে তুলতে পারে হুমায়ুন আজাদের বই না পড়লে আমি টের পেতাম না। লেখকের অন্যসব বইয়ের মত, এই বইয়ও পাঠককে দাঁড় করায় বাস্তবতার মুখোমুখি, ওলটপালট করে দেখায় চারপাশের সোজা সরল দুনিয়াটাকে।
পুরো বইয়ে মূল চরিত্র আনিস তার ভাষায় বর্ণনা করেন নিজেকে। আনিস একজন সরকারি আমলা, উপস্থাপন করেন এইদেশের আমলা সমাজকে। হুমায়ুন আজাদ তার একান্ত নিজস্ব ঢঙ্গে তুলে বর্ণনা শুরু করে আনিসকে।
বন্ধু দেলোয়ারের বিয়ে আনিস যখন যায়, তখন আনিস অদ্ভুত এক অনুভূতির মুখোমুখি। আনিস বলেন, "বিয়ের মঞ্চে দেলোয়ারের বউকে দেখে আমি একটু কেঁপে উঠি,সামান্য একটু কাঁপন;- আমার চোখ তার বউয়ের চিবুকের ওপর গিয়ে পড়েছিল, একটি কাঁধের ওপর গিয়ে পড়েছিল; তা আমাকে কম্পিত করে, কিছুটা ঈর্ষারও জন্ম দেয়; এবং আমি ভয় পাই।''
এরপর একদিন আনিস, বন্ধু দেলওয়ার আর তার বউ ডলি যাত্রা শুরু করে গ্রামের উদ্দেশ্যে। ফেরিঘাটে আনিস নেমে যাই গাড়ী থেকে, আনিসের পিছুপিছু নামে ডলি। ডলি নেমে যাবার পর ফেরিতে গাড়ি ওঠানোর সময় পেছন থেকে ট্রাকের ধাক্কায় পানিতে পড়ে যায় দেলোয়ারের গাড়ি, দেলোয়ার মারা যায়। মূলত এখান থেকেই আনিসের অপরাধবোধের শুরু।
কাহিনী চক্রে আনিস বিয়ে করে ডলিকে। আমার একসময় সময়ের দাবীতে তারা বিচ্ছিন্নও হয়। আনিস আগের মত নিঃসঙ্গ হয়ে উঠে। এরমাঝে আনিস মুখোমুখি নানা আবদারের। কাছের বন্ধু আসে তাঁর কাছে অন্যায় আবদারের। অফিসের বস তাকে চাপ দিতে থাকে দুর্নীতির। কিছুই তাকে সুখ দিতে পারেনা, দুঃখও তাকে ছেড়ে চলে যায়। সে অন্য কারো মত সাফল্য চায় না, আবার সাফল্য ছাড়া নিজেকে পরিপূর্ণ ভাবে না।
আনিস নারীর সংস্পর্শে অনেকবার। বারবার সে অপরাধবোধ করেছে নারীর কাছে। সে নিজের স্ত্রীকে কখোনই নিজের স্ত্রী বলে ভাবতে পারেনি। নিজের স্ত্রীকে সুখি করার চেষ্টাও সে করেনি। আনিস কখনোই চায়নি নতুন মানব সৃষ্টি করতে। সে চায়নি তার থেকে জন্ম নেক নতুন কোন অপরাধী। সে থাকতে চায় নিঃসঙ্গ, নিঃসন্তান, আর নির্জন।
একসময় আনিস বলে, "আমার দিকে তাকিয়ে কেউ বুঝে উঠতে পারে না আমার ভেতরে একটি মেঠোপথ আছে, যে পথ দিয়ে ভোরবেলা একটা চাষী তার গরুর পাল নিয়ে মাঠে যায়।... আমি চাই না কেউ বুঝে উঠুক; আমি চাই হয়তো , সবাই বাইরের আমাকে দেখুক, আমার ভেতরটাকে দেখে ফেললে আমি খুব বিব্রত হয়ে পড়বো, যারা দেখবে তারা খুব বিচলিত হয়ে পড়বে।"
বইটি কখনো আমি একটানা পড়তে পারিনি। এতটা যন্ত্রনাদয়ক হবে বইটা, আমি ভাবিনি। বারবার থেমেছি আর কিছুক্ষন পর আবিষ্কার করেছি নিজেকে। নিজের চোখের সামনে ভেসে উঠতে থাকে এক অন্যরকম আমি। মাঝেমধ্যে ভয় পেয়ে যাই আমাকে দেখে, এতটা ভয়ানক কীভাবে হয় মানুষ?
পুরো উপন্যাস জুড়ে আনিসের আত্নপীড়নে ভরা... তার জিজ্ঞাসা, সে যা করছে তা সবই ভুল নয়তো? সে যা করছে তা আসলেই কি অপাপবিদ্ধ হচ্ছে? বন্ধু দেলোয়ারের মৃত্যুর পিছনে নিজের ছায়া খুঁজে বেড়ায়... অন্যদিকে বন্ধু স্ত্রীকে বিয়ে করেও সন্তান নিতে সে ইচ্ছুক না, কারণ সে আর মানব সন্তান পৃথিবীতে আনার পক্ষপাতী না... দোটানার মধ্যে তার জীবনটা চলছে... কখনো নিজের আবেগের তাড়নায় সে পাপ করে, কখনো বা মোহের ফাঁদে পা দেয়। নারী সঙ্গ তা ভাল লাগে, আবার লাগে না... সে সকলের থেকে দূরে চলে চায়, আবার নিজেই সকলের মাঝে চলে আসে... কোথায় যেনো সূতোতে টান পরে... সে নিজেকে মেলাতে পারে না ! এক মিনিট আগের আনিসের সাথে আমরা পরক্ষণের আনিসের খুব কম মিলই পাই... উপন্যাস জুড়ে নিজেকে বিশ্লেষণ করতে করতে সে যায়... এবং একদিন হঠাৎ হারিয়ে যায়!
খোলা চোখে আমরা যে মানুষদের দেখি, কতটুকুই বা চিনতে পারি, বুঝতে পারি? সামাজিক অবস্থানের ভিত্তিতে সফলতা মাপার এই যে অদ্ভুত নিয়ম, সে নিয়মমাফিক সফল মানুষেরা কতজনই বা সত্যিকার সফল? আর সফলতা মানেই বা কি? আপাত দৃষ্টিতে কারো বিলাসী জীবন-প্রণালী দেখে আমাদের মনে ঈর্ষা আসে, 'ইশ! যদি তার/তাদের মতো হতে পারতাম!'...অথচ সেই বিলাসী জীবনের আড়ালে যে কত ক্ষোভ, কষ্ট,বিতৃষ্ণা, নির্জনতা, হতাশা, নোংরামো, অপারগতা, নিঃসঙ্গতা, আর ঘুটঘুটে অন্ধকার অলিগলি, ফাঁকফোকর থাকে... কখনো কি বুঝতে পারি নাকি সম্ভব বোঝা?
বইটা লেখা একজন আমলার স্বীকারোক্তিতে। যেন তিনি নিজস্ব ডায়েরিতে একে একে লিখছেন তার মনোযন্ত্রের অদ্ভুত ক্রিয়াকলাপ!
পড়তে গিয়ে প্রথমে হোঁচট খেয়েছি, ধাক্কা লেগেছে, চমকেছি, হতাশ হয়েছি, আবার কোথাও কোথাও খুব বিশ্রী লেগেছে, অসুস্থ বোধ করেছি...তারপরেও কিছু একটা ছিল, যার জন্য শেষ পৃষ্ঠা পর্যন্ত যেতে পেরেছি!
হয়তো কিছু রূঢ় সত্যের বাস্তব চিত্র এমনই!
চোখের সামনে এমন কত আনিস সাহেব যে সাধারণের চোখে ঠুলি এঁটে ভালো মানুষের মুখোশ পড়ে সহাস্যমুখে ঘ��রে বেড়ায়, কজনে বা চিনতে পারি তাদের? অথবা আমাদের ভেতরেও যে এমন একজন আনিস সাহেব নেই, সে কথাও কি জোর দিয়ে বলতে পারি?
মানুষ হিসেবে আমরা প্রায়ই ছোটখাটো অপরাধ করে থাকি।কিছু অপরাধ গুলো আমরা প্রকাশ করি,কিন্তু বেশির ভাগই নিজের মধ্যে রেখে দেই।খুব করে লুকিয়ে রাখি যাতে কেউ জানতে না পারে। ''মানুষ হিশেবে আমার অপরাধসমূহ '' বইতে হুমায়ুন আজাদ আনিসের বিভিন্ন সময়ের অপরাধ তুলে ধরেছেন।
বইয়ের একটি লাইন, 'আমি কখনো সুখী হ'তে চাই নি,সুখের মতো সামান্য জিনিস আমি চাই না।'
হুমায়ুন আজাদের লেখার নিজস্বতা আমাকে সব সময়ই মুগ্ধ করেছে, কিন্তু তার কোন উপন্যাস পড়তে গেলেই মাঝপথে একরাশ অসস্তি এসে জড়িয়ে ধরে। জানি, ব্যাপারটা হয়ত আমার নিত্যান্তই ব্যক্তিগত মতামত। তখন মনে শুধু বাজে, আমি কি সত্যিই শেষ পর্যন্ত যেতে চাই কিনা। কিন্তু, কখনো কখনো গল্প শেষে হয়ত সাধারণ কিছুই আমাদের মুগ্ধ করে।
মানুষ হিসেবে আমরা প্রতিনিয়ত হাজারো অপরাধ করি যা আমাদের প্রতিনিয়ত বিবেকের দংশনে ফেলে দেয়। এরকম অপরাধসমূহ নিয়ে বইটি লেখা। যদি আপনার হুমায়ুন আজাদ নিয়ে এ্যালার্জী না থাকে তাহলে পড়তে পারেন। সাধারণ বিষয়গুলোকে সাধারণভাবে তুলে ধরা হয়ে বইটি।
লেখকের নাম যেহেকু হুমায়ুন আজাদ, সেহেতু তার দিক থেকে বিচার করতে গেলে বইটি বেশ ভাল,যৌনতার দিকগুলো পাশে রেখো বলা যায়,বেশ কিছু সুন্দর চিন্তার প্রকাশ আছে তবে শেষের ঘটনাটা ভাল লাগে নি৷ এভাবে শেষ না করলেও পারতেন। বিকৃত যৌনতা হুমায়ুন আজাদের লেখায় এক মুদ্রাদোষ।