Jump to ratings and reviews
Rate this book

পথের কবি

Rate this book

354 pages, Hardcover

Published January 1, 1999

2 people are currently reading
156 people want to read

About the author

Kishalay Thakur

2 books5 followers
Kishalay Thakur (Bengali : কিশলয় ঠাকুর, 9 December 1928 - 30 August 1994)was a novelist. Born in Barisal, Bangladesh, he graduated from Brojomohun College, Bangladesh. In his early days, he began his professional career as a school teacher, but later moved onto being a journalist. He was the chief reporter of 'Loksevak' and senior editor of 'Anandabazar Patrika'.
His first novel was Labani (Bengali : লাবনি) He is best known for his work on Bibhutibhushan Bandopadhyay's biography 'পথের কবি' for which he got the Pranotosh Ghatak Smriti Purashkar from the Tagore Society.

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
23 (45%)
4 stars
21 (41%)
3 stars
5 (9%)
2 stars
1 (1%)
1 star
1 (1%)
Displaying 1 - 15 of 15 reviews
Profile Image for রিফাত সানজিদা.
174 reviews1,356 followers
July 24, 2016
পছন্দের বই কিংবা মানুষকে নিয়ে লেখা সহজ নয়, যদি সংখ্যাটা খুব বেশি বা খুব কম হয়ে থাকে-- উভয়ক্ষেত্রেই। ভাল লাগা বই নিঃসন্দেহে অসংখ্য, অসংখ্য এবং অসংখ্য। তবে সবচেয়ে বেশি ভালবাসা নিয়ে বার বার যে লেখকের কাছে ফিরে যাওয়া তিনি নিছক লেখক নন। কবি।
কেবল মাত্রা কিংবা ছন্দে বদ্ধ নন, তার কাব্যময়তার সুর বর্ণে এবং গন্ধেও। পথের কবি যিনি, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। বিভূতির বর্হিজীবন আর অন্তর্জীবনের এক অসামান্য আলেখ্য কিশলয় ঠাকুরের লেখা এই জীবনীগ্রন্থ 'পথের কবি।

জিতেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন--
যাদের বই পড়ার অভ্যাস আছে, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে চিন্তা করার অভ্যাস বিশেষ নেই, তাঁরা মনে মনে বিভূতিভূষণের সাহিত্যধর্ম সমন্ধে কতকগুলো ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করে থাকেন। তাঁদের মতে, বিভূতি রচনাবলী থেকে তারা প্রচুর পরিমাণে আনন্দ আহরণ করতে পারেন সত্য, কিন্তু এ আনন্দ বাস্তবতা-বিরোধী, জীবন- পলাতক, অতি- রোমান্টিক আনন্দ।

হয়তো তাই। জিততে চাওয়া দুঃসাহসীদের কাছে বারবার হেরে গিয়ে নামিদামি ওয়ার্ল্ড ক্লাসিকের চাইতে মন খারাপের দুপুরগুলোতে চুইংগাম কিংবা টকঝাল আচারের জ্যাকেট জিবে চড়িয়ে বারবার…বারবার ডুবেছি বিভূতিতে। চরৈবেতি মন্ত্রে দুঃখের মেঘে ছাওয়া আরণ্যক এর আকাশে কোথাও কেউ একটানা বাজিয়ে গেছে আম আঁটির ভেঁপুমিসমিদের কবচ খুঁজতে গিয়ে ডঙ্কা বেজে উঠেছে মরণের। শীতের সন্ধ্যায় পরীক্ষা ফুরানোর খুশিতে লেপের ওম মেখে শিউরে উঠেছি সিংহের গর্জনে...
মরীচিকার ছলনা ডিঙিয়ে, অভিযাত্রিক শংকর পারবে তো চাঁদের পাহাড় পেরিয়ে দেশে ফিরে আসতে?

স্মৃতিমেদুর পরাণবাউলের স্বভাব নিয়ে পথ পেরিয়ে যাওয়ার সময় বিভূতি দেখেছেন অনেককিছুই। নিজের জীবনপথের সেই কাব্যই তাঁর যাবতীয় লেখার ক্যানভাসে। অপুর চরিত্র বিভূতির নিজেরই শৈশব-কৈশোরের প্রতিচ্ছবি। সর্বজয়ার মধ্যে আছেন মাতৃদেবী মৃণালিনী, ইন্দিরঠাকরুনের মধ্যে মেনকা পিসি, হরিহরের মধ্যে পিতা মহানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়।

হিসেবের খেরোখাতায় কালিকলমে নয়, মায়ার অঞ্জন দিয়ে তাঁর যাবতীয় লেখা মোড়ানো। তাতে যেন আপনাতেই হীরা মানিক জ্বলে! উঁচু দরের কথায় মন ভোলাবার জন্য সস্তাদরের রাঙতার সাজ পরানোর চেষ্টা নেই তাতে। ইছামতী’র জলে নেই স্পিডবোটের ভটভটে ইঞ্জিনের কলরোল, দৃষ্টি-প্রদীপ এ নেই পেট্রোম্যাক্সের ঝলমলে আলোর ঝিকিমিকি।
ঘরের কাছে, পথের কাছে ছড়িয়ে থাকা অজস্র চরিত্রকে হৃদয় দিয়ে হৃদি অনুভবে বিভূতি তুলে এনেছেন উপন্যাসে। আদর্শ হিন্দু হোটেল নামের উপন্যাসখানাও বারাকপুরের পথে পরিচিত হাজারি ভট্টাচার্য নামের এক বামুনঠাকুরকে নিয়ে লেখা।

কলেজ জীবন থেকেই থিওসফিক্যাল সোসাইটির সভ্য বিভূতির প্রবল বিশ্বাস ছিল আধ্যাত্মিকতায়। সেই সুরে বাঁধা উপন্যাস দেবযান, যদিও আমার পছন্দের তালিকায় এর জায়গা অনেক তলার দিকে। অতিলৌকিক জগৎ সর্ম্পকে বিশ্বাস তার সমস্তজীবনকে কীভাবে প্রভাবিত করেছে প্রথম গল্প 'উপেক্ষিতা' থেকেই তার ছাপ সুপষ্ট।
এই ধারাবাহিকতাতেই রচিত উপন্যাস তারানাথ তান্ত্রিক, ষোড়শীকান্ত চট্টোপাধ্যায় নামের এক ভৈরবী শিষ্যের আদলে যে চরিত্রটি চিত্রিত। উপন্যাসটি সমাপ্ত করেন বিভূতিপুত্র তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়।

প্রকৃতি আর মানুষের মাঝের সম্পর্কের রহস্যময় মাধুর্যের যে স্পর্শ বিভূতির লেখা গল্প কিংবা উপন্যাসে ছড়ানো, তা বারবার মনে করিয়ে দেয় অতি প্রিয় আর এক কবির কথা।
নির্জনতা যাঁর কাব্যের মূলে প্রোথিত, জীবনানন্দ দাশ।

কবি না হয়েও কবিতার মতো যাঁর ভাষা চিত্ররূপময়; সেই বিভূতির সবগুলো গল্পও অবশ্য এখনো পড়া হয়নি। কিশোরপাঠ্য গল্পের মধ্যে প্রিয় 'তালনবমী'। বিশেষভাবে ভাল লাগা গল্প 'পুঁইমাচা' আর মেঘমল্লার
প্রিয় তালিকায় আরো আছে উপন্যাস দুই বাড়ী, বিপিনের সংসার, কেদার রাজা আর অশনি-সংকেত
অনেকদিন ধরে খোঁজাখুঁজির শেষে মিলেছে দম্পতি উপন্যাসটি, তূলনামূলকভাবে ঈষৎ নাপসন্দ 'অথৈ জল' ও অনুবর্তন

'যুগে যুগে অপরাজিত জীবন রহস্য কী অর্পূব মহিমাতেই আবার আত্মপ্রকাশ করে!'

বিভূতিবাবু, অপরাজিতের কাছে, ঐ এক অপুর কাছে এক জীবনের দেনা!
আরো কিছু কী করে চাই? আদৌ সম্ভব? :)



Profile Image for Israt Zaman Disha.
194 reviews622 followers
May 23, 2017
পথের কবির খোঁজ পাই গুডরিডস এ। প্রায় সাথে সাথেই পড়া শুরু। বিভূতিভূষণ যে কত প্রিয় লেখক তার সম্পর্কে জানার আগ্রহ তাই সীমাহীন। কিন্তু বই পড়তে পড়তে আমি অবাক। কোথায় বিভূতিভূষণ? এ যে অপু, জিতু, শঙ্কর। হ্যাঁ বই পড়তে পড়তে বার বার মনে হয়েছে, বিভূতিভূষণ আমার অনেক চেনা। ওনাকে চিনেছি ওনার উপন্যাসের মাধ্যমেই। তারপরও কত নতুন নতুন কথা জানলাম। প্রকৃতি ভীষণ ভালবাসতেন। তাই উপন্যাসে উনি মানুষকে চিনিয়েছেন প্রকৃতির মায়া। শুধু কি প্রকৃতি? না মানুষকেও ভালবাসতেন এই লেখক। কখনো কোন চরিত্র বানাতে হয়নি তাকে। জীবন থেকেই চরিত্র বেছে নিয়েছেন। এমনি আরও কত কি জানা যায় এই বইয়ে। যারা বিভূতি ভালোবাসেন তাদের সবার ভালো লাগবে আশা করি।
Profile Image for ORKO.
196 reviews197 followers
August 7, 2021
ক্ষীরসাদা জ্যোৎস্নায় স্নাত সন্ধ্যা। তরল জ্যোৎস্না চুুইয়ে পড়ছে বন্ শহরের পথের উপর।তারই মাঝে
ঝিরঝির করে বয়ে যাওয়া হাওয়া কেটে হেঁটে চলছে দুটো ছায়ামূর্তি। পথের বাঁকে অন্ধকার গলিতে পা ফেলবার মুহূর্তে মোড়ের উপর সারি করে রাখা হারিকেন আর মশালের আলো পড়লো তাদের মুখের উপর। ক্ষণিকের জন্য উদ্ভাসিত হলো ক্লাসিক্যাল মিউজিশিয়ান বিটোফেন আর তার বন্ধুর মুখ। সান্ধ্যকালীন ভ্রমণে বেরিয়েছেন তারা।
তখন সরু, অন্ধকারময় চিপা গলিটা দিয়ে খুব সাবধানে পকেট বাঁচিয়ে এগোচ্ছেন। এই গলিটা গুণ্ডা-বদমাশ আর ছিনতাইকারীদের মুলুক হিসেবে কুখ্যাত। কিন্তু খানিক যেতেই সে দুরুদুরু ভয়কে কাটিয়ে যে মোহময় সুর কান�� ভেসে আসতে লাগলো, তারা থমকে গিয়ে সেটার উৎস খুঁজতে লাগলেন। টুংটাং পিয়ানোর সুরের মায়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পাশের বাড়িটায় পা রাখলেন সারথিরা। এক গরীব জুতা ব্যবসায়ীর বাসা এটা। তারই মেয়ে বাজিয়ে চলেছিলো এই সুরেলা লহরী।
পদশব্দ শুনে থেমে গেল কীগুলোর উপর চঞ্চল আঙুলের খেলা।
"কী হলো? থেমে গেল কেন? এইটা তো আমার সবথেকে প্রিয় পিসগুলোর একটা," প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন বিটোফেন।
"আমি আর বাজাতে পারি না। কিন্তু এটা এত্তো সুন্দর যে না বাজিয়ে থাকতেও পারি না। আফসোস,কেউ যদি এটা বাজিয়ে শোনাতো আমাকে!"
এখানে বলে রাখা দরকার তখন মিউজিক রেকর্ডার, গ্রামোফোনেরও যুগ না।
"কিছু না মনে করলে আমি একটা প্রস্তাব দিই? আমি একজন মিউজিশিয়ান। আপনি চাইলে আমি এটা শোনাতে পারি আপনাকে,"
অনুমতি চান বিটোফেন।

"নিশ্চয়ই... কিন্তু আমাদের পিয়ানোটা বেশ পুরোনো। কোনো মিউজিক শীটও নাই যে দেখে দেখে বাজাবেন।"
"কোনো মিউজিক শীট নেই! আপনি তবে এতোক্ষণ কীভাবে বাজাচ্ছিলেন?"
"স্মৃতি থেকে," মুচকি হেসে তাদের দিকে ঘুরে তাকায় মেয়েটি।
বিটোফেন খেয়াল করেন তার চোখের শূন্যদৃষ্টি। পরক্ষণেই বুঝতে পারেন, মেয়েটা অন্ধ!
মায়ায় আর্দ্র হয়ে ওঠে বিটোফেনের মন।
"আমিও স্মৃতি থেকে শোনাচ্ছি তাহলে..." বলেই আঙুলগুলো নাচাতে শুরু করেন পিয়ানোর একেকটা কী-এর ওপর। অবশ্য নিজের সৃষ্টিকে নিজের হাতের তালুর চেয়েও বেশি চিনবেন এটাই স্বাভাবিক!
সুর লহরী থেমে গেলে পাশের ঘর থেকে বেরিয়ে আসে বাড়ির মালিক...এতোক্ষণ পর্দার আড়াল থেকে দেখছিলেন সবকিছু।
"আপনিই তাহলে বিটোফেন?"
উত্তরের বদলে হাসি ফুটে ওঠে বিটোফেনের ঠোঁটে।
"আমাদের জন্য আরেকবার বাজান না, প্লিজ?"
পরপর তিনবার সরব হয়ে ওঠে সেই বুড়ো-পুরোনো পিয়ানো।
মুগ্ধ হয় ঘরের ভিতরে থাকা তিন শ্রোতা।

"আমার মেয়েটার জ্যোৎস্না দেখার খুব শখ জানেন? বাবা হিসেবে এখন পর্যন্ত কোনো ত্রুটি রাখি নি আমি তার প্রতি। এমন কোনো ইচ্ছা নেই যে পূরণ করতে পারি নি। শুধু দেখাতে পারলাম না জ্যোৎস্না,চাঁদের আলো, সুন্দর এই পৃথিবী," আবেগে কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসে স্নেহময় জনকের।
এই দুঃখ স্পর্শ করে বিটোফেনকেও। মনে মনে একটা সংকল্প করেন তিনি।

আর সেই অন্ধ মেয়েকে জ্যোৎস্না দেখাবার জন্য বিটোফেন বুনতে শুরু করেন তার সুরের ইন্দ্রজাল, জন্ম নেয় "Moonlight Sonata".
শোনা যায়,সেই থেকে নাকি গলিতে কখনোই চাঁদের আলো মলিন হয়নি।অদ্ভুতভাবে,থেমে গিয়েছিল সব ধরনের সন্ত্রাসও।


"সুরের মায়ায় জ্যোৎস্না দেখানো" ব্যাপারটা খুব অদ্ভুত শোনালেও অনুভূতিটা আদি এবং অকৃত্রিম। শব্দের পর শব্দ সাজিয়ে একজন লেখক যেভাবে আমাদের কল্পনার ডানায় ভর করিয়ে আকাশে উড়াতে পারেন,ব্যাপারটা অনেকটা সেরকম। বইয়ের রিভিউয়ে এসব বলা কেন? কারণ, বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ও এইরকম অনুভূতিতে জারিত করেন পাঠককে।
সবুজ রঙের কত রূপ!
কালকাসুন্দা,ঘেঁটু, পুঁই,মুথা ঘাস, কাশ,শরবন, শালুক,শ্যাওলা,ডুমুর,চালতা,গোলঞ্চ হেলেঞ্চা,কলমির পাতায় সবুজে যে এতো রঙ,এতো মনোরম সুবাস তা কি কোনোদিনও আমরা জানতে পারতাম? ট্রেনের পেছনে ছোটাছুটি,কাশবনে লুকোচুরি,গ্রামীণ পরিবেশের শ্যামল ছায়ার শৈশব, হারিয়ে যাওয়া কতরকম সংস্কৃতি-কুসংস্কার,সরলতা মাখা জীবন,
ইছামতীর জল, বাউন্ডুলে বাউল স্বভাবের মন,দারিদ্র্যে মাখা করুণাধারা -এরকম অশাসিত তুলিতে রাঙানো ক্যানভাস বোধহয় শুধু বিভূতিভূষণের কলমেই জন্ম নেয়।
না হলে আফ্রিকা না গিয়েও বাওবাব,কালাহারি মরুভূমি,বুনো অরণ্য,তারাজ্বলা রাত,শ্বাপদসংকুল পরিবেশ,ডেথ সার্কেল,তেপান্তরে সিংহের গর্জনকে কে একাহাতে বাঙালির শিরায় শিরায় ঢুকিয়ে দিতে পেরেছে?
দেবযানের পরলোকতত্ত্ব বিষয়ক আলাপচারিতা,দর্শন কার দৃষ্টিপ্রদীপে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে?
তাঁর গল্পের এক অশনি সংকেতে ক্যানভাসার কৃষ্ণলালের সহজ জীবনে ঘোর শনি দেখা দেয়..আবার একসময় মেঘমল্লারের আহ্বানে নেমে আসে অঝোর ধারায় বৃষ্টি। মানুষের জলজ সংসারের কথামালা হয়ে গেছে কোনো দূর রূপকথার রাজ্যের উপমিত আখ্যান।

আর তারানাথ? অপু? ভবানী বাঁড়ুজ্যে?
এসব কি শুধু বইয়ের চরিত্র নাকি টুকরো টুকরো বিভূতিভূষণ?

"পথের কবি" সেই বিভূতিভূষণের জীবনের আখ্যান। অনেক বেশি সূক্ষ্মতা আর যত্ন নিয়ে তাঁর জীবনের গল্প বলছেন কিশলয় ঠাকুর।
ইছামতীর মতো উচ্ছ্বল,অরণ্যের মতো অশাসিত শৈশব থেকে শুরু করে জীবনের নানা বাঁক,নানা মোড়....দারিদ্রতা, অপরাগতাকে ছাপিয়ে ওঠা ব্যক্তিত্ব, অল্প বয়সে বাবাকে হারানো, প্রথম বউকে হারানো, তারপর শূন্যতার তিমিরগর্ভে হারিয়ে যাওয়া। আজ চাকরি নেই, মেসের মালিকের কাছে তাগাদার ভয়ে পালিয়ে গেছেন মেস ছেড়ে। তো কাল কোনো দূর পরবাসে জুটেছে চাকরি। গৃহত্যাগী উদাস বাউলের মতো হেঁটে গেছেন বহুদূর। দীর্ঘশ্বাসের সাথে গলা চিরে বেরিয়ে এসেছে গান,

"হরি দুঃখ দাও যে জনারে
যার কপালে নাই সুখ
বিধাতা বৈমুখ
দুঃখের উপর দুঃখ
দাও যে তারে।"

তারপর সুদিনও এসেছে। একসময় একসাথে ভালোবাসা গেছে সবকিছুই। ব্যক্তি বিভূতির বাক-বিভূতি একসময় লেখনীতে রূপ নিয়েছে। একের পর এক উপন্যাস আর গল্প উপহার দিয়েছেন বাংলা সাহিত্যকে।
সেসময় গল্পের পেছনের গল্পগুলোও মূর্ত হয়ে উঠেছে "পথের কবি" বইতে।
দেশে ঘটেছে স্বরাজ আন্দোলন, অহিংসার ডাক দিয়েছেন গান্ধীজি। এসবও প্রভাবিত করেছে বিভূতিভূষণের সরল জীবনকে। একসময় পথে ঘুরতে ঘুরতে পায়ে হেঁটে পাড়ি দিয়েছেন বার্মার জঙ্গল।

এসব আখ্যান পড়তে গিয়ে আমরা কংক্রিট নগরীর রাস্তায়, মেট্রোর তুমুল হিজিবিজি জীবনে,উজ্জ্বল রোদের ঘামে ভেজা দুপুরে কিংবা নির্মেঘ কনে দেখা রোদের গোধূলিতে হঠাৎই ভিজে সোঁদা মাটির গন্ধ পাই। দেখি তালবীথির মাথায় পুঞ্জীভূত হয়ে উঠেছে কেশ কালো মেঘ। তারপর অঝোর ধারায় বৃষ্টি..ঝুমঝুম ঝমঝম।টিনের চালে বাজতে থাকে প্রাকৃতিক অর্কেস্ট্রা।
চোখের সামনে ননী নরম মাটিতে পা ডুবিয়ে হেঁটে যায় কৃষক-রাখালের দল।
বাস্তবে সেসব গল্প পড়তে পড়তে আমরাও কাকভেজা হতে থাকি রাস্তার চৌমাথায় দাঁড়িয়ে। অঞ্জন দত্তের গানের মতো
ভিজে যায় চটি-জামা-মাথা।
সেই রেশেই চারদিকে আপাত উদাসীন বৈষয়িক নারী-পুরুষের জটিল মনের কোনো এক কোণ থেকে, বুকের গভীরে জমানো দীর্ঘশ্বাসের ঘোমটার আড়াল থেকে মাটির গন্ধ,মানুষের ঘামের গন্ধ,সেই বৃষ্টির শব্দ,জলজ সুঘ্রাণ পাই।

এই আখ্যানে বাদ যায় নি প্রেম,রোম্যান্টিকতা আর নারী চরিত্রের উপস্থিতিও। লীলা,দুর্গা, ইন্দিরা ঠাকুরন,সর্বজয়া, অপর্ণা,মালতীরা যে সত্যিই ছিল সেটাও টের পাওয়া যায় পাতার ভাঁজে নানা চেহারায়।

কিশলয় ঠাকুর বিভূতিভূষণের জীবনের এমন কোনো ঘেয়ো রোদের গলি নেই যেখানে পাঠককে ঘুরে দেখান নি। মানুষের জীবনের বড় বড় পর্ব থেকে ছোটখাটো কথোপকথনও যেন টাইম ট্রাভেল করে শুনে এসে লিখেছেন লেখক।
এজন্য যত মানুষের সাথে কথা বলতে হয়েছে,যতবার বিভূতির লেখা,তার দিনলিপি পড়তে হয়েছে- আমি বলবো তা একেবারে সার্থক। এই সময়ের শাহাদুজ্জামানের "একজন কমলালেবু",আসিফ এন্তাজ রবির "আমারে দেবো না ভুলিতে" কিংবা বিনোদ ঘোষালের "কে বাজায় বাঁশি?", মোশতাক আহমেদের "ঝিনুক নীরবে সহো" এর মতো এটাকেও ডকু ফিকশন বলা যেতে পারে, আবার জীবনকে উপজীব্য করে লেখা ফিকশন বললেও ভুল হয় না।

জনরা যাই হোক, এই বইটা পড়তে গিয়ে আমার মনে হয়েছে,ভীষণ সুন্দর কিছু পড়ে ফেললাম আর বয়সও বেড়ে গেল খানিকটা।
যেহেতু জগতে অধিকাংশ মানুষ সর্বদাই চঞ্চল; মানুষ খেয়াল করে না যে,তার চাঞ্চল্য সংক্রমিত হয়ে একটি পুকুরে নিক্ষিপ্ত ইটের সৃষ্ট ঢেউয়ের আড় তরঙ্গের মতো এবং এ সময় একদিন এরকম এক চাঞ্চল্য কোনো এক উৎসে সৃজিত হয়ে প্রবাহিত হয় এবং অন্ধকারে উড়ে এসে ব্যালকনিতে বসা পাঠকের শরীরের উপর পড়ে। এই মনচাঞ্চল্যের মূলে থাকা আপাত স্থির "পথের কবি"র আখ্যানের আহ্বান অগ্রাহ্য করাটা কঠিন ছিল আমার জন্য।
Profile Image for Shotabdi.
819 reviews194 followers
March 21, 2023
অদ্ভুত সুন্দর একটা বই। অক্ষয় মালবেরি যেমন বই পড়ার সময় এক শাশ্বত জগতে নিয়ে গিয়েছিল, তেমনি এই বইটা জীবনীর জগতে শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার।
কিশলয় ঠাকুর নিজেকে বিভূতির জীবনী লেখার জন্য দারুণভাবে প্রস্তুত করেছিলেন৷ শব্দচয়ন, ভাষারীতি, কাহিনীর ক্রমবর্ধমান শৈল্পিক কারুকাজে বিচিত্র আলেখ্য সৃষ্টি করেছেন একটা।
মহানন্দ আর মৃণালিনীর সন্তান বিভূতিভূষণকে পথের কবি যেমন বলা যায় তেমনি বোধহয় বলা যায় প্রকৃতির বরপুত্রও। প্রকৃতি বিভূতিকে তাঁর শৈল্পিক সত্তাটাই দান করেছে। আর বিভূতিও অরণ্য, নিজ স্থানের মাটি, নদী, মানুষ এসবকে ভালোবেসেছেন উজাড় করে। দেখেছেন দুচোখ ভরে, কেবল দেখেন-ই নি, যখন যা দেখেছেন ব্যক্তিগত দিনলিপিতে টুকে রেখেছেন তা। নাম-না জানা গাছ চেনাতে তাঁর ছিল অপার আনন্দ৷
জীবনে ভালোবাসার মানুষদের হারিয়েছেন বারবার, দারিদ্র‍্যের আঘাত, অপমানও কম সইতে হয়নি, কিন্তু সহনশীলতা ছিল অদ্ভুত রকমের, যেন গাছেদের কাছ থেকেই পাওয়া তা। দু:খ পেয়েছেন, কিন্তু পথের কবি থেমে থাকেন নি।
ভ্রমণ আর অচেনা মানুষ থেকে সংগ্রহ করেছেন অসংখ্য গল্পের প্লট। তবে সেরা লেখাগুলো পেয়েছেন নিজ জীবন থেকে, গ্রাম থেকে, বনগাঁ আর বারাকপুর থেকে, আশেপাশের মানুষ থেকে৷ তাই অপু-জিতু-বিভূতি বারবার মিলেমিশে হয়েছে এক।
আধ্যাত্ম্য জগত-পরকাল ইত্যাদি বিষয়ে নিজস্ব দর্শন ছিল তাঁর। যা নানা গল্পের পাশাপাশি ফুটে উঠেছে দেবযান উপন্যাসে৷
বন্ধুমহলে কৃপণ-পেটুক বলে পরিচিত হলেও একেকসময় খেয়ালের বশে সারাদিন না খেয়ে থাকতেন আর টাকার হিসেব রাখা বোধহয় জীবনেও হয়ে ওঠেনি তাঁর৷ প্রথম স্ত্রীবিয়োগের পর কয়েকজন রমণীর সাথে নির্মল বন্ধুত্ব হলেও প্রেম আসতে লেগে যায় অনেক বছর। অবশেষে জীবনে আসেন কল্যাণী ওরফে রমা।
তারাদাস জন্মানোর পর বিভূতির প্রকৃতির পাশাপাশি দ্বিতীয় তীব্র আকর্ষণের জায়গা জন্মায়, তাঁর স্নেহের বাবলু। কিন্তু খেয়ালি মানুষটি প্রায়ই নানা কাজে ভজঘট পাকাতেন৷ লেখায় যে গুছানো মানুষটির পরিচয় আমরা পাই, বাস্তবে ততটা ছিলেন না তিনি।
কিশলয় ঠাকুর অনন্ত মায়া দিয়ে বইটি লিখেছেন৷ বই পড়তে পড়তে যেন অরণ্যের বুনো ঘ্রাণ নাকে আসছিল, কানে আসছিল পাখিদের কিচিরমিচির, ইছামতীর ঢেউয়ের শব্দ। সাহিত্যজগতে এ এক অপরূপ সৃষ্টি।
Profile Image for Zunaed.
54 reviews119 followers
June 3, 2017
গুডরিডসে আপডেট ফিডে দুয়েকবার এসেছিল বইটা, খানিকটা দেখেছি, আচ্ছা, বিভূতিভূষণের জীবনী। আমি এমনিতে বায়োগ্রাফি বেশ পছন্দ করি, কিন্তু এটায় খুব একটা আগ্রহ পাইনি। কিছুদিন পরে দিশা আপু রিকমেন্ড করলেন। আচ্ছা, চেষ্টা করা যায় তবে, কিন্তু আমি তখন ব্লকে আছি। টু-রিড লিস্টে রেখে দিলাম। তারপর ক্লাসের ব্রেকে মনে হল রিডার্স ব্লকটাকেও ব্রেক দেয়া যায় কী না দেখি। আধপড়া তিথীডোর শেষ করলাম, ছোট বই বলে পুরাণঃ সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ধরলাম, ওটাও শেষ করলাম। তাহলে ব্লক কাটছে! বড় বই ধরা যায়, তাই ধরলাম পথের কবি।

তো আগেই বলেছিলাম, এই বইটা বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনী। জীবনী লেখার উপাদান হিসেবে লেখক ব্যবহার করেছেন বিভূতি, বিভূতির বাবা মহানন্দের ডায়েরি, নানাজনের সাথে কথায় কথায় পাওয়া তথ্য। মোটামোটি নির্ভরযোগ্য বলে মনে হয়েছে। লেখার স্টাইল ভালো লেগেছে। সাধারণত আত্মজীবনীগুলোতে দেখা ঘটনার পাশাপাশি মনের মাঝে চলা ঘটনাগুলোকে বেশ ভালোভাবে আসতে দেখেছি, কিন্তু অন্য কারো লেখা জীবনীগুলোতে ঘটনা আর কথাই হয়ে দাঁড়ায় মূল। এখানে লেখক সবকিছু মিলিয়ে ঘটনার পাশাপাশি বিভূতির মনোজগতেরও ছবি আঁকার চেষ্টা করেছেন, যেটা ভালো লেগেছে।

আরো ভালো লেগেছে উপন্যাসের ঢংয়ে তার গল্প বলে যাওয়া। অবশ্য বিভূতির জীবনই ছিল উপন্যাস, পথের পাঁচালী, অপরাজিত আর কাজল যারা পড়েছেন, তাদের কাছে অনেক চেনা লাগবে বিভূতিকে। এখানেই তারা খুঁজে পাবেন দুর্গা, হরিহর, ইন্দিরা ঠাকরুন, সর্বজয়া আর লীলাকে। মনে হবে বিভূতি কোথায়, এ তো অপু! আমার মতো যাদের পথের পাঁচালী, অপরাজিত অসম্ভব প্রিয়, তাদের সেই ভালোলাগা এই বইয়েও ছড়িয়ে যাবে। এই আবিষ্কারের কারণটাও বারবার জানিয়েছেন কিশলয়, বিভূতির সব লেখাই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে লেখা। তাই শংকরকে আবিষ্কার করি বিভূতির মনের বাস করা সত্ত্বারূপে, জিতুকেও আবিষ্কার করি বিভূতিতে।

বিভূতিভূষণের অতিন্দ্রীয় ব্যাপারগুলোয় প্রবল বিশ্বাস ছিল, আত্মা, প্রেত এসব তাই বারবার তাঁর অনেক বইয়ে এসেছে, তাই স্বাভাবিকভাবে এখানেও এসেছে। এতটুকু ঠিক ছিল, কিন্তু যখন কিশলয় ঠাকুর বিভূতির এইসব বিশ্বাসকে ডিফেন্ড করতে শুরু করেন, আর একরকম প্রমাণ করার চেষ্টা শুরু করেন আসলেই প্রেতের অস্তিত্ব আছে, আত্মা আছে, তাদের সাথে প্ল্যানচেটের মাধ্যমে যোগাযোগ করা যায়, তখন ব্যাপারটা আমার কাছে খানিকটা বিরক্তিকর ঠেকেছে। খানিকটা বিরক্তিকর ঠেকেছে শেষ একশ পৃষ্ঠা, মনে হয় কিশলয় ঠাকুর পঞ্চাশ পৃষ্ঠাকে টেনে একশ পৃষ্ঠা করেছেন।

যে ভালোলাগা বইটা শুরুতেই দেয়, শেষের দিকের টানাটানি তার কিছুটা কমালেও অনেকটাই থেকে যায় তখনও। তাই চারতারা। বিভূতিভক্তদের জন্য রিকমেন্ডেড।
Profile Image for Rifat.
501 reviews327 followers
January 30, 2021
"যিনি পথের পাঁচালী-কার, তিনিই পথের কবি। অর্থাৎ বিভূতিভূষণ। প্রকৃতি তাঁর রচনায় শুধু শোভাময়ী নয়, বাঙ্ময়ী। প্রকৃতির শরীরী উপস্থিতি যেন টের পাওয়া যায় তাঁর বর্ণনায়।"

পথের কবিই বটে! ওঁর জন্যেই তো আমার এদিকটায় আসা।

বিভূতিবাবুর আম আঁটির ভেঁপু আর একজন নতুন পাঠকের আবির্ভাব!

ক্লাস এইটে পড়ি তখন। আগে কয়েকটা বই পড়া হলেও সাহিত্য জগতের প্রতি আমার তেমন আকর্ষণ জন্মায় নি। হঠাৎ একটা সুন্দর গল্প পড়লাম "পড়ে পাওয়া"। যদিও পরীক্ষার আগ পর্যন্ত আমি এটাকে পড়ে যাওয়া পড়েছি! পড়ে পাওয়া পড়ার পর এক অন্যরকম অনুভূতি আমার। বাহ! সুন্দর তো, আম কুড়াতে গিয়ে কি কান্ড! আর কি সুন্দর ঝড়ের মধ্যে আম কুড়ানোর গল্প! বেশ লাগলো। পরের বছরটাই ছিল আমার জন্য স্পেশাল। আম আঁটির ভেঁপু: হরিহর রায়ের পুত্রকন্যার গল্প; শুধুই কি তাই!? আমার মনে হল আমার সামনেই সর্বজয়া ছেলেমেয়ে দুটিকে বকাঝকা করলেন। মনে হল কোন আম গাছের তলায় ময়লা শাড়ি গায়ে জড়ানো এক মেয়ে দাঁড়িয়ে! বিভূতিবাবু যদি জানতেন, তার পথের পাঁচালীর কয়েকপাতা পড়ে কোনো কিশোরীর মনের এক কোণে জং ধরে পড়ে থাকা শৈশব হঠাৎ মুক্তি পেয়েছে !


সেই বিভূতি বাবুর জীবনী পড়তে এসে আমি অবাক! এ যে এক্কেবারে চেনা পরিচিত বিভূতি বাবু, আমাদের অপু! শুনেছিলাম চেনা চেনা লাগবে কিন্তু এতটা! অপুর পাঁচালী লিখতে গিয়ে যেন নিজের জীবন পেয়ালার প্রায় পুরোটাই ঢেলে দিয়েছিলেন তিনি। নিজের জীবন থেকে একটু একটু করে নিয়েই সাজিয়েছিলেন উপন্যাসগুলো- পথের পাঁচালী, অপরাজিত, আরণ্যক, দেবযান থেকে শুরু করে মেঘমল্লার এ সংকলিত প্রথম প্রকাশিত গল্প উপেক্ষিতাও।



গুটি কয়েক বিভূতি পড়া হয়েছে। মাঝে মাঝে মনে হয় হয়েছে, আর নয়! আবার মনে হয় কত পড়া বাকি! কতো বিভূতি পড়া বাকি!


~৩০ জানুয়ারি, ২০২১
Profile Image for Omar Faruk.
263 reviews16 followers
September 24, 2021
কিশলয় ঠাকুর-এর "পথের কবি" বইটি নিয়ে লিখতে হলে। প্রথমেই লিখতে অপুকে নিয়ে, পথের পাঁচালীর অপু। বাংলা ভাষাভাষী পাঠকের মনে অপু, দুর্গা যে দৃশ্যপট তৈরী করে গেছে তার ���ূল কারিগর ছিলেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। একজন অন্তরালে থাকতে চাওয়া মানুষ, নিবিড় বন আর ইছামতীর সাথে মিশে যাওয়া এক মানুষ। যিনি ছিলেন ঠিক যেন বাংলার এক পথের বাউল বা পথের কবি। এই পথের কবির পথ অনুসরণ করে এগিয়েছেন লেখক কিশলয় ঠাকুর, না ভুল হলো বিভূতিভূষণ-এর ঠাকুরদা'র থেকে শুরু করেছেন লিখা। পথে নেমেছেন বিভূতিভূষণ-এর সাথে অথবা বলা যায় সেই পথের পাঁচালীর অপুর সাথে। এই পথচলা শেষ হয়েছে অপুর পথের শেষে।

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়-এর জীবনী কয়টা আছে আমার জানা নেই। যদি একাধিক থেকেও থাকে তবে এই বইটা যে সন্দেহাতীতভাবে সেরা হবে সেটা সব পাঠকই এক বাক্যে মেনে নিবেন আমার মনে হয়। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে কোনো আত্মজীবনী লিখে রেখে যাননি, তবে তার দিনলিপি ছিল এক রত্নখনি। আর এই রত্নগুলোকে একটা একটা জুড়ে দিয়ে এমন এক মুকুট রচনা করেছেন কিশলয় ঠাকুর যা এক কথায় উজ্জ্বল ও অনবদ্য। এর দ্বারা বিভূতি প্রেমিরা তাঁর কাছে চিরকাল ঋণী হয়ে থাকলো।
Profile Image for Shuk Pakhi.
512 reviews305 followers
October 28, 2023
এই আখ্যান আমাদের কাছের মানুষ বিভূতির, আমাদের প্রিয় সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বিভূতিবাবুর ডায়েরি লেখার যেমন অভ্যাস ছিল তেমনি এই অভ্যাস ছিল তার বাপ পিতামহেরও। পিতামহ তারিণীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন কবিরাজ, গাছগাছড়ার বিশেষজ্ঞ তিনি। তার একমাত্র পুত্র শাস্ত্রী মহানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় গাছ চিনলেন কিন্তু কবিরাজ না হয়ে তিনি হয়ে উঠলেন কথক ঠাকুর। তারই জ্যেষ্ঠ পুত্র বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, রক্তে যেন দাদাঠাকুরের গাছের প্রতি আকর্ষন আর পিতার কথকথার গুন নিয়েই জন্মেছিলেন তিনি।

পিতার পুঁথি আর পুত্রের ডায়েরি ঘেটেছেন কিশলয় ঠাকুর, বিভূতিবাবুর পদচিহ্ন ধরে হেঁটেছেন অনেক পথ, তার চেনাজানা সবার সাথে কথা বলে
বিভূতি সম্পর্কে জেনেছেন ছোট-বড়, প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় বহু কিছু। এই সকল কিছুকে মিলিয়ে দাড় করিয়েছেন বিভূতিভূষণের জীবনী।
দীর্ঘ ১০ বছর ধরে চলেছে সম্পাদনা ও প্রুফ রিডিং। এরপর বই এসেছে পাঠকের হাতে।

বিভূতিবাবু যেমন একটা গাছকে কেবল গাছ বলেই ক্ষান্ত দেন না, গাছের পাতার ধরন, শিরার গড়ন, শিকড়ের ছড়িয়ে পরা, ফুলের রং রূপ বাহার থেকে শুরু করে পাপড়ির গড়নের বর্ণনা দেন সেই একই টোন কিশলয় ঠাকুরও এই বইতে আনার চেষ্টা করেছেন। প্রকৃতি প্রেমিক বিভূতিভূষণের জীবনীগ্রন্থের লেখার স্টাইল আসলে এমনই হওয়ার কথা।
বিভূতিভূষণের জীবন আর তার লেখা একই সূতায় গাথা। সেজন্য তার জীবনীতে তার সব গল্প-উপন্যাস লেখার প্রেক্ষাপটও তুলে এনেছেন কিশলয় ঠাকুর। কাজের মতন একটা কাজ করেছেন। বিভূতিভক্তদের একবার হলেও নেড়েচেড়ে দেখা উচিত এই বইখানা।
Profile Image for Sajib.
191 reviews23 followers
March 21, 2023
অসাধারণ। মাদকাময় শব্দ চয়নে বিভূতিভূষণের জীবনচরিত কে খুব সুন্দর ভাবে লেখক ফুটিয়ে তুলেছে বইয়ে।
This entire review has been hidden because of spoilers.
Profile Image for রিফাত  আহমেদ.
25 reviews2 followers
May 8, 2020
এ যেন এক অন্য কবি। জীবন কে সে যেন অন্য চোখে দেখেছে। সে দেখা অন্য সব সাহিত্যিকের মতো না। তিনি আলাদা। তিনি জীবন নিয়ে লিখেছেন অন্য এক কবিতা। যে কবিতা যেন প্রকৃতি আর তার শোভায় সাজানো। তিনি সেসব তার মন ভরে দেখেছেন আর লিখেছেন জীবনের খাতায়।

মানুষ বিভূতি লিখা এতদিন পড়লেও তার লিখায় যেন তার জীবন সম্পর্কে এতদিন জেনেছি। পথের পাঁচালির অপু যে তার নিজের জীবনই। দূর্গা কে এনেছেন গল্পের প্রয়োজনে। ব্যারাকপুরের বর্ণানাই যেন যে তার গল্পে পাই। শহুরে জীবন যার কাছে ছিল বিষবৃক্ষ। নিতান্ত প্রয়োজন না হলে তিনি মনে হয় শহরে থাকতেন না। জীবিকার প্রয়োজন তাকে শহরে যেতে হয়েছে বলেই সুযোগ পেলে তিনি বার বার ছুটে গিয়েছে নিজ গ্রামে অরণ্যের মাঝে। কিন্তু যে প্রকৃতিকে তিনি এতটা ভালবেসেছ সেই প্রকৃতি যেন তার উপর যেন বড় নিষ্ঠুরতম। বার বার প্রকৃতি তাকে বাঁধন ছেড়ে করছে।

সুখের আশায় যে মানুষ বারবার পথ চেয়ে থাকে যেন সুখ ধরা দিতে চায় না। এইজন্য একে একে সবাইকে হারাতে হয়েছে তাকে৷ তবুও তিনি নিজেকে গুটিয়ে না নিয়ে বরং মেলে ধরেছেন তার যাদুর কলমে। সেই কলমে লিখে গিয়েছেন বাংলার সাহিত্যের শ্রেষ্ঠতম ক্লাসিক গুলো।
Profile Image for Jamimeeh.
51 reviews16 followers
January 7, 2019
বেশি আশা নিয়ে কোন বই পড়তে গেলে যা হয় আর কি।
Profile Image for Tisha.
205 reviews1,118 followers
April 14, 2025
গুডরিডস নামের এই ভার্চুয়াল জগৎটির কাছে আমি বিভিন্ন কারণে ঋণী। এখানে না এলে এই জীবনে হয়তো অনেক বইয়ের কথা অজানা রয়ে যেত। কিশলয় ঠাকুর নামে কেউ একজন আমার অত্যন্ত প্রিয় লেখকের জীবন কাহিনী এতো সুন্দর করে লিখে রেখে গিয়েছেন, সেটাও হয়তো জানা হত না! বিভূতিভূষণকে আমরা কে না চিনি! তাঁর পথের পাঁচালী পড়ে নি, এমন মানুষ কি খুঁজে পাওয়া যাবে? কিন্তু একজন মানুষকে শুধু চিনলেই কি তাকে জানা হয়? না, একদমই না। বিভূতিভূষণের সম্পর্কে একদম অল্প একটু জেনেছিলাম ‘কাজল’ উপন্যাসের শুরুতে রমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোট্ট লেখাটুকু থেকে। আরও বিস্তৃত ভাবে তাঁর সম্পর্কে জানতে পারবো, সেটা একদমই ভাবি নি! তাই পথের কবি বইটির খোঁজ পাওয়া ছিল আমার নিজের কাছেই নিজের এক দারুণ আবিষ্কার! ছেলেবেলা থেকেই বিভূতিভূষণের জীবন ছিল ভীষণ বৈচিত্র্যময়। আর তাঁর সেই জীবনের প্রত্যেকটি অংশই তিনি তুলে ধরেছেন তাঁর কোন না কোন একটি লেখায়! কি দারুণ, না? সত্যিই মুগ্ধ হতে হয়! কখনও ধার করা কোন কাহিনীর উপর ভিত্তি করে কোন উপন্যাস রচনার প্রয়োজন এই মানুষটির হয়েছে বলে মনে হয় না! বিভূতিভূষণের লেখায় যে অসাধারণ মায়া থাকে, তা হয়তো সম্পূর্ণরূপে ছিল না এখানে। তাই বলে কিন্তু মুগ্ধতার মাত্রা কম ছিল না একটুও। আমি বুঝেই পাচ্ছিলাম না যে আসলেই কি আমি তাঁর জীবন কাহিনী পড়ছি, নাকি নতুন করে আবার পথের পাঁচালী কিংবা অপুর গল্প পড়ছি!হ্যাঁ, ধৈর্যচ্যুতি ঘটেছে আমার কিছু কিছু অংশে। কিন্তু সেটা খুব একটা ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে না। প্রিয় লেখকের জীবনের সাথে তো পরিচিত হলাম! সেজন্য কিশলয় ঠাকুরকে অসংখ্য ধন্যবাদ। যারা বিভূতিভূষণের লেখাগুলো ভালবেসে পড়েন, তারা সময় করে অবশ্যই পড়বেন বইটি। :)
Profile Image for Md. Tahmid Mojumder.
87 reviews7 followers
June 13, 2023
ঘাস-ফুল-লতাপাতা-আরণ্যক পথের কবি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনী এই "পথের কবি।" জীবনীকার কিশলয় ঠাকুর। ভদ্রলোকে এখানে কবিকে যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তার কোন তুলনা নেই! কারণ, বিভূতিভূষণের যে জীবনালেখ্য আমরা তাঁর বইতে (যেমন: আরণ্যক, পথের পাঁচালী) পাই, ঠিক সেভাবেই কবিকে চিত্রায়িত করা হয়েছে।

বন, ফুল, পাখি, অরণ্য, গাছপালা— এসব নিয়েই বিভূতিভূষণ। হাতে একটা কঞ্চি নিয়ে এমনকি পূর্ণবয়স��ক হওয়ার পরেও ঘুরে বেড়াতেন! আগ্রহ ছিল পরলোক ও আত্মা নিয়েও। আত্মভোলা, ঘোর 'অ'বৈষয়িক, সাদামাটা, খামখেয়ালী এক মানুষ ছিলেন। অরণ্যের প্রতি তাঁর দুর্নিবার আকর্ষণের পরিচয় পাই বইয়ের পাতায় পাতায়। শিশুসুলভ বিভূতিভূষণের সাথে পরিচয় ঘটে তাঁর আত্মভোলা স্বভাব দেখে। বারাকপুরের বাড়ি, মাঠঘাট, জঙ্গল, ইছামতী— সব যেন চোখের সামনে ভেসে ভেসে ওঠে একের পর এক।

সবমিলিয়ে একটা আনন্দভ্রমণ ছিল "পথের কবি।"
Profile Image for Saheli Roy.
31 reviews
August 3, 2024
ইচ্ছে করেই খুব ধীরে ধীরে পড়ছিলাম । কিন্তু যার শুরু শেষ ধীরে হলেও হবেই। লেখক র জীবন সত্যি ই বর্ণময়। এবং অনেক সুখ ,দুঃখ, কষ্টে ভরা।কিন্তু অনেক কষ্ট না পেলে হয়তো সত্যি ই শিল্পী হওয়া একটু মুশকিল। বর্ণময় জীবন কে এই বইটি আরো রঙে ভরিয়েছে এবং অতি সুন্দর করে তুলেছে। বিভূতিভূষণ যেন সত্যিই বড্ড কাছে র আমার ,আপনার, প্রকৃতি র সবকিছুর।
Profile Image for Asif Khan Ullash.
145 reviews8 followers
June 30, 2023
বিভূতিভূষণ সম্পর্কে সবচেয়ে প্রচলিত অভিযোগ হচ্ছে উনি অপু ব্যতীত কোন চরিত্র সৃষ্টি করতে পারেননি। তার সব রচনাতেই অপু বড় বেশি প্রকট।

তার জীবনী পড়ার পর মনে হলো তিনি আসলে কোন চরিত্র সৃষ্টি করতেও চাননি, সব লেখার মধ্যেই নিজেকে, নিজের পথকে খুঁজে বেড়িয়েছেন।

অক্ষয় মালবেরি এর অনেকদিন পর এমন স্বাদু জীবনী পড়লাম। খামখেয়ালী, আত্মভোলা, প্রকৃতিপ্রেমী, আধ্যাত্মিক, সাদা মনের বিভূতিভূষণ এর জন্য বড্ড মায়া হলো। ভালো লেগে গেল বিভূতিভূষণের জগৎটাকে।
Displaying 1 - 15 of 15 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.