Jump to ratings and reviews
Rate this book

মূর্ছিত নূপুর

Rate this book
আজ থেকে আঠেরোশো বছর আগে চোলমণ্ডলের পুষ্পহার নগরীতে বাস করত বণিকপুত্র কোভালন, তার পরিণীতা কন্নকী ও প্রণয়িনী মাধবী। তাদের সম্পর্কের উত্থানপতনকে প্রাথমিকভাবে আশ্রয় করে কল্পনা ও বাস্তববোধ, স্বপ্ন ও জাগরণ, ব্যষ্টি ও সমষ্টিজীবনের চিরায়ত দ্বন্দ্ব এবং সেই দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়েই মানুষের চিরকালীন পথান্বেষণ এ উপন্যাসের মর্মবস্তু হয়ে উঠেছে। তামিল মহাকাব্য 'শিলপ্পদিকরম'-এর আখ্যানরেখাকে অনুসরণ করেও অতীতকালের দর্পণে আমাদের সমকালকেই প্রতিবিম্বিত করতে চেয়েছে এ উপন্যাস। এই দ্বন্দ্ব-সমাকুল জীবনের দুর্গম বনপথের মধ্য দিয়ে কোভালন, কন্নকী, কাভুন্দির মতোই অধুনাতন কালের আমরাও কোনো এক আশাশীল প্রত্যয়ের মাদুরাই নগরীর দিকেই যাত্রা করেছি। সেখানে উপনীত হয়ে আমাদের স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে গেলেও আবার ফিনিক্স পাখির মতো আমরা জেগে উঠেছি প্রণয়কাবেরীর তটভূমিকায়। এই বিশিষ্ট অর্থেই 'মূর্ছিত নূপুর' প্রকৃতপক্ষে আবহমানের শরীরে সাম্প্রতিকের হৃৎস্পন্দন।

335 pages, Hardcover

Published January 1, 2024

3 people are currently reading
14 people want to read

About the author

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
4 (44%)
4 stars
4 (44%)
3 stars
1 (11%)
2 stars
0 (0%)
1 star
0 (0%)
Displaying 1 - 3 of 3 reviews
Profile Image for RHR.
35 reviews11 followers
November 1, 2024
অসাধারণ! অসাধারণ! অসাধারণ!

এই বই তিনবার "অসাধারণ" শব্দের যোগ্য। সন্মাত্রানন্দ আমাকে মুগ্ধ করছেন বারবার। এই মুগ্ধতার সমাপ্তি নেই কোনো।

তামিল মহাকাব্য ইলাঙ্গো আডিগালের "শিলাপ্পাদিকরম।" সেই "শিলাপ্পাদিকরম" মহাকাব্যের উপন্যাস সংস্করণ এটি। বর্তমান কাল ও অতীতের সংমিশ্রণ ঘটেছে এখানে। একটি স্বপ্নভুবন যেখানে দেখা পাওয়া যায়, বাসুবান্নার। বাসুবান্নাই নিজ ভাষায় "শিলাপ্পাদিকরম"-এর গল্প বলতে থাকেন দুজন শ্রোতাকে। লেখক সাহেব ও কাঁকন।

শিলাপ্পাদিকরম শব্দের অর্থ নূপুরের গল্প অথবা কাহিনি। বইটি মূলত এক জোড়া নূপুর নিয়েই লেখা। নূপুরের প্রভাব টের পাওয়া যাবে উপন্যাসের একদম শেষ অংশে। যদিও এর ইঙ্গিত উপন্যাসের প্রথম ভাগেই কিছুটা দেওয়া আছে।

লেখকের প্রাকৃতিক বর্ণনা ছিলো চুমু খাবার মতো। কাবেরীর ঘাট, পুষ্পহার ও মাদুরাই নগরীকে একদম অনুভব করতে পারছিলাম। যেন সত্যিই আমি সেখানে উপস্থিত। হাত বাড়ালেই আমি কোভালন অথবা কন্নকীকে ছুঁতে পারবো। বিশেষ করে, মাদুরাই যাত্রার অংশগুলো, উফফ! লেখক নিজের ১০০% দিয়েছেন এই বইতে।

সন্মাত্রানন্দের একটা নিজস্ব ধরন রয়েছে যা আবার সবার ভালো না লাগার সম্ভাবনা অধিক। তিনি তাঁর লেখায় এক ধরনের কাঠিন্যতা রাখেন যেন অতীতের ছাপটা পাঠক অনুভব করতে পারে। এজন্য তাঁর ব্যবহৃত ভাষা অনেকের নিকট খটমটে মনে হতে পারে। এজন্যই আমি প্রায়শ বলি, সন্মাত্রানন্দের বই সবার জন্য নয়। এতেও ব্যতিক্রম কিছু বলবো না। কিন্তু আমার কাছে এই ধরনটা বেশ লাগে৷ একটা আদিযুগের আবহ সৃষ্টি করে। ফলে দৃশ্যগুলো একে একে ভাসে চোখের উপর। তবে সন্মাত্রানন্দের অন্যান্য বইয়ের তুলনায় এই বইতে তিনি কঠিন শব্দ কম ব্যবহার করেছেন। তাই কিছুটা অবাক হলাম।

"শিলাপ্পাদিকরম"-এর কাহিনিটা আমি আগ থেকে টুকটাক জানায় শেষভাগের চমকটা আমাকে এত বেশি চমকাতে পারেনি। তবে এত বিস্তারিতভাবে কখনোই এই মহাকাব্যের কাহিনিটি জানতে পারিনি। ছোটো ছোটো ঘটনাগুলো অজানা থাকায় তেমন ভালো লাগা ছিলো না পূর্বে। এবার ষোলোকলা পূর্ণ হলো।

এখন আমার প্রশ্ন, লেখক কি আগামী বছর "মণিমেখলাই" মহাকব্যের উপন্যাস সংস্করণ নিয়ে হাজির হচ্ছেন?

©RHR
Profile Image for Bratik Bandyopadhyay.
19 reviews
December 19, 2025
মূর্ছিত নূপুর - একটি স্বপ্নময় যাত্রার প্রতিধ্বনি

সন্মাত্রানন্দ রচিত 'মূর্ছিত নূপুর' (২০২৪, ধানসিড়ি প্রকাশন) বাংলা সাহিত্যে একটি অনন্য অবদান, যা প্রাচীন তামিল মহাকাব্য শিলপ্পদিকরম (ইলাঙ্গো আডিগাল রচিত)-এর আখ্যানরেখাকে আধুনিক প্রেক্ষাপটে পুনর্ব্যাখ্যা করে।
উপন্যাসটি আঠারো শতাব্দী আগের চোলমণ্ডলের পুষ্পহার নগরীকে কেন্দ্র করে কোভালন (বণিকপুত্র), কন্নকী (তার স্ত্রী) ও মাধবী (প্রণয়িনী)-এর ত্রিকোণ সম্পর্কের উত্থান-পতনকে আশ্রয় করে গড়ে উঠেছে। কিন্তু এটি ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর পুনরাবৃত্তি নয়, বরং, স্বপ্নভুবনের মাধ্যমে বাসুবান্নাই (যিনি মহাকাব্যের কাহিনি নিজ ভাষায় বর্ণনা করেন) লেখক এবং কাঁকনকে শ্রোতা করে অতীত ও বর্তমানের সংমিশ্রণ ঘটান। এই দ্বৈততার মধ্য দিয়ে উপন্যাসটি মানুষের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বকে উন্মোচিত করে, যেখানে এক জোড়া প্রতীকী নূপুর—জীবনের ছন্দ, হারানো ও পুনর্প্রাপ্তির প্রতীক হয়ে ওঠে। যা কল্পনা, লিঙ্গ, সময় ও স্ব-অনুসন্ধানের চারপাশে আবর্তিত।
এই উপন্যাসের মূল সৌন্দর্য তার দ্বৈততায়—অতীতের ঐতিহাসিক ছায়া এবং বর্তমানের মানসিক দ্বন্দ্বের অসামান্য সংমিশ্রণ।

১. কল্পনা ও বাস্তববোধের চিরায়ত দ্বন্দ্ব:
উপন্যাসের মূল তাত্ত্বিক অক্ষ হলো কল্পনা (imagination) এবং বাস্তবতা (reality)-এর সংঘর্ষ, যা মহাকাব্যের ঐতিহ্যকে আধুনিক মনোবিশ্লেষণের স্তরে নিয়ে আসে। কোভালনের প্রেমের উন্মাদনা থেকে কন্নকীর বিদ্রোহী যাত্রা পর্যন্ত সবকিছু কল্পনার গণ্ডূষে ডুবে যায়, কিন্তু শেষে মাদুরাই নগরীর ধ্বংস (যেখানে স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়) বাস্তবের কঠোরতা দেখায়। লেখক এখানে সময়ের সরলরৈখিক ধারণাকে অস্বীকার করেন; অতীতের দর্পণে বর্তমান প্রতিফলিত হয়, যেমন বাসুবান্নার স্বপ্নকথা বর্তমানের পাঠকদের জীবনযাত্রার সঙ্গে মিলে যায়। এই দ্বন্দ্ব মানুষের চিরকালীন পথান্বেষণকে চিহ্নিত করে—কল্পনা যেন একটি দুর্গম বনপথ, যেখানে ব্যক্তি নিজেকে খুঁজে পায় কিন্তু হারিয়েও ফেলে। উদাহরণস্বরূপ, কন্নকীর নূপুর (যা মহাকাব্যে তার সতীত্ব ও বিদ্রোহের প্রতীক) এখানে মূর্ছিত (স্থবির) হয়ে ওঠে, যা বাস্তবের চাপে স্বপ্নের ছন্দকে স্তব্ধ করে দেয়। এই থিমটি পাঠকের মনে প্রশ্ন তোলে: আমরা কি কল্পনার ফিনিক্স-পাখির মতো ধ্বংস থেকে পুনর্জন্ম লাভ করতে পারি?

২. লিঙ্গভিত্তিক অসমতা ও নারীর স্ব-অধিকারের দাবি :
শিলপ্পদিকরম-এর মতো এখানেও নারীকে 'অপর' (other) হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে, কিন্তু সন্মাত্রানন্দ এটিকে সমকালীন লেন্সে দেখান—পুরুষের কল্পনা দ্বারা নির্মিত 'বানিয়ে-তোলা আদল' (idealized image) থেকে নারীর মুক্তির গল্প। কন্নকী বা মাধবীর চরিত্রগুলো কেবল প্রেমের শিকার নয়; তারা পুরুষের উপমা-কল্পনার (যেমন 'সুন্দরী' বা 'পবিত্রা') বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে। একটি কেন্দ্রীয় নারী চরিত্র (যিনি অতীত থেকে বর্তমানে কথা বলেন) বলেন: "তোমার মতো পুরুষেরা কেন একথা বোঝে না যে, মেয়েরা সুন্দরও নয়, অসুন্দরও নয়। মেয়েরা তোমাদের মতই মানুষ। রক্তমাংসের বাস্তব মানুষ। তাদের অসুখ-বিসুখ আছে, ব্যথা-বেদনা আছে, ক্লান্তি আছে, হতাশা আছে"। এই দৃষ্টান্ত নারীর স্ব-অধিকারের দাবিকে তুলে ধরে, যা সমাজের নির্ধারিত গণ্ডির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। পুরুষ চরিত্র (কোভালনের মতো) প্রেমের নামে নারীকে পুতুল বানায়, কিন্তু স্ব-চেতনায় পৌঁছলে দ্বিধায় পড়ে—কারণ এটি তার অহংকে আঘাত করে। থিমটি আধুনিক নারীবাদের সঙ্গে যুক্ত, যেখানে নারী 'স্বয়ম' (self)-এর যাত্রায় অগ্রসর হয়, মহাকাব্যের বিদ্রোহী কন্নকীর মতো মাদুরাই শহরকে পুড়িয়ে নতুন জন্ম নেয়।

৩. ব্যক্তি ও সমষ্টির টানাপড়েন :
উপন্যাসে ব্যক্তি (individual) জীবনের স্বাধীনতা এবং সমষ্টি (collective) সামাজিক চাপের দ্বন্দ্ব প্রকট। কোভালনের ব্যক্তিগত প্রেমের উন্মাদনা পুষ্পহারের সামাজিক নিয়মকে লঙ্ঘন করে, যা পরে মাদুরাইয়ের ধ্বংসে পরিণত হয়। এটি আধুনিক সমাজের প্রতিফলন—যেখানে ব্যক্তির স্বপ্ন সমষ্টির 'অজুহাত' (pretext) হয়ে ওঠে।
মূর্ছিত নূপুর' উপন্যাসে দুজন কল্পনার মাধ্যমে একে অপরকে এবং তাদের পরিবেশকে রচনা করে। বাসুবান্না তামিল মহাকাব্য 'শিলাপ্পাদিকরম'-এর কাহিনী নিজ ভাষায় বর্ণনা করেন, যখন কাঁকন তাঁর শ্রোতা এবং সহ-সৃষ্টিকর্তা হিসেবে যোগ দেন। এই দুজনের মধ্যে স্বপ্নভূমি এবং কল্পনার মাধ্যমে অতীত-বর্তমানের সংযোগ ঘটে, যা উপন্যাসের কেন্দ্রীয় থিম বলে মনে হয়েছে।
এই টানাপোড়েন মানুষের চিরায়ত যাত্রাকে চিহ্নিত করে: ব্যক্তি কি সমাজের গণ্ডি অতিক্রম করে নিজস্ব পথ খুঁজতে পারে?

৪. সময়ের অ-রৈখিকতা ও পুনর্জন্মের প্রতীক :
সময় এখানে স্থির নয়; অতীত, বর্তমান ও সম্ভাবনার বহুরূপতা কল্পনার সূত্রে গাঁথা। উপন্যাসটি 'আবহমানের শরীরে সাম্প্রতিকের হৃৎস্পন্দন' হিসেবে বর্ণিত, যেখানে স্বপ্নের ধ্বংস ফিনিক্স-পাখির মতো প্রণয়কাবেরীর তটে পুনর্জন্ম নেয়। নূপুর এখানে প্রতীকী—এর মূর্ছিত অবস্থা জীবনের স্থবিরতা দেখায়, কিন্তু শেষে তার ছন্দ জাগরণ ঘটায়। এই থিমটি ইতিহাসকে 'অজুহাত মাত্র' করে তোল���, যা আজকের ব্যথা-আনন্দ-নিরাশার ছায়া ফেলে।

উপসংহার: এক চিরন্তন ব্রত
'মূর্ছিত নূপুর' মহাকাব্যের পুনরাবৃত্তি নয়; এটি আধুনিক মানুষের অভ্যন্তরীণ যুদ্ধের আখ্যান—কল্পনার মাধ্যমে স্ব-অনুসন্ধানের চিরন্তন ব্রত। সন্মাত্রানন্দের প্রাকৃতিক বর্ণনা (পুষ্পহার, মাদুরাই, কাবেরীর ঘাট) এই থিমগুলোকে জীবন্ত করে, পাঠককে নিজের জীবনের দ্বন্দ্বের সামনে দাঁড় করায়। এটি বাংলা উপন্যাসে নারীস্বর ও সময়-কল্পনার নতুন মাত্রা যোগ করে, যা যুগে যুগে চলমান অভিযাত্রার প্রতীক।
Profile Image for Dhiman.
177 reviews14 followers
December 17, 2024
নাস্তিক পন্ডিতের ভিটা পড়ে ওনার ভক্ত হয়েছি। ওনার লেখা প্রতিটা লাইন, প্রতিটা বাক্য, প্রতিটা শব্দ, আমাকে বিমুগ্ধ করে। লেখার কারু শিল্পী যাহাকে বলে। পুস্পহার, মাদুরাই নগরী যেন চোখের সামনে ভাসছিল। এত সুন্দর লেখা।
Displaying 1 - 3 of 3 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.