Saadat Hasan Manto (Urdu: سعادت حسن منٹو, Hindi: सआदत हसन मंटो), the most widely read and the most controversial short-story writer in Urdu, was born on 11 May 1912 at Sambrala in Punjab's Ludhiana District. In a writing career spanning over two decades he produced twenty-two collections of short stories, one novel, five collections of radio plays, three collections of essays, two collections of reminiscences and many scripts for films. He was tried for obscenity half a dozen times, thrice before and thrice after independence. Not always was he acquitted. Some of Manto's greatest work was produced in the last seven years of his life, a time of great financial and emotional hardship for him. He died a few months short of his forty-third birthday, in January 1955, in Lahore.
সাদাত হাসান মান্টোর বারোটা গল্প নিয়ে " কালো শালোয়ার ও অন্যান্য গল্প" নামের এই সংকলনটা করেছে বাতিঘর। গল্পগুলো সরাসরি মান্টোর লেখা আরবি হরফের উর্দু থেকে অনুবাদ হয়নি, নাগরী হরফে রূপান্তরিত সংস্করণ থেকে করা হয়েছে। অনুবাদ করেছেন জ্যোতির্ময় নন্দী।
মান্টোর গল্পের কিছু কমন বিষয় আছে। দেশ ভাগ, মানব সম্পর্ক, যৌনতা, মানুষের অন্তর্নিহিত দ্বন্দ্ব, সামাজিক অনাচার, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এসবকে উপজীব্য করেই মান্টো লিখেছেন শ'খানেক গল্প। তবুও প্রত্যেকটা গল্প অন্যটার চেয়ে আলাদা, মনে হয় না একই কথা চলে আসছে দ্বিতীয়বার।
এ বইয়েরও প্রথম ছয়টা গল্পের বিষয়বস্তু প্রায় একই রকম। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম, দেশ ভাগ, কাশ্মীর যুদ্ধ আর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। তবে যৌনতা আর মানসিক অন্তর্দ্বন্দ্ব আছে এখানেও। পরের গল্প ছয়টাতে উঠে আসে মানুষের শারীরিক ও মানসিক সম্পর্ক। এখানে আবার নারী-পুরুষের যৌনতার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে মিশে গেছে রাজনীতি আর সমাজ।
মান্টোর গল্পে আরেকটা দারুণ ব্যাপার আছে। বিশেষ কোনো চাপ সৃষ্টি না করে সোজাসাপটা একটা গল্প বলে যান তিনি। তবে গল্পটার শেষ লাইন অব্দি না পড়লে বুঝা যায় না কী বুঝাতে চেয়েছেন লেখক। এই বইয়ের বারোটা গল্পের প্রত্যেকটাই এই প্যাটার্নে পড়বে৷ পাঠক হিসেবে এই ব্যাপারটা আমার বেশ উপভোগ্য মনে হয়।
জ্যোতির্ময় নন্দীর অনুবাদ আগে কখনো পড়েছি বলে মনে করতে পারি না। বেশ সাবলীল আর সুন্দর অনুবাদ করেছেন ভদ্রলোক। পড়তে কোনো বেগ পেতে হয়নি আবার মান্টোসুলভ ভাবটাও ধরে রাখতে পেরেছেন ঠিকঠাক। অনুবাদের প্রশংসা করতে হয়।
তিনি শুধু গল্পকার নয়, একাধারে উপন্যাস, নাটক ও প্রবন্ধ লিখলেও জাদুটা ছড়িয়ে রেখেছেন গল্পে একটু বেশী। পাঠক গোষ্ঠি তাঁকে গল্পকার হিসেবে জানে এবং মনে রাখবে। সেই গল্পকার সাদাত হাসান মান্টো -র ১২ টি গল্প নিয়ে এই গল্প সংকলন " কালো শালোয়ার ও অন্যান্য গল্প"।
এ গল্প গ্রন্থের প্রথম ৬ টি গল্পের বিষয় বস্তু মূলত একই রকম। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম, দেশ ভাগ, কাশ্মীর যুদ্ধ ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা।
বাকি ৬টি গল্পের বিষয়বস্তুতে উঠে এসেছে মানুষের শারীরিক ও মানসিক সম্পর্ক এবং এর সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ ও গভীরতর উন্মোচন। তবে একেবারেই আলাদা ভাবে শারীরিক ও মানসিক সম্পর্কের সূক্ষ্ম অনুভূতি নয় এর সাথে রাজনীতি ও সমাজনীতি ও মিশে আছে। আর আছে একক ও বলিষ্ঠ কিছু নারী চরিত্র।
লেখক মাত্রেই আলাদা এক বৈশিষ্ট্য থাকে, সে ক্ষেত্রে সাদাত হাসান মান্টো-র বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য থাকলেও আমার মনে হয় উনার পুরো গল্প পড়ে বোঝার উপায় নাই কাহিনি কোন দিকে যাচ্ছে, সকল রহস্য লুকিয়ে থাকে গল্পের শেষ লাইনটাতে। এই বৈশিষ্ট্যের কারনে উনার গল্পগুলো স্বতন্ত্র।
জ্যোতির্ময় নন্দী- র অনুবাদ প্রথম পড়লাম। সাবলীল অনুবাদ গল্পগুলোকে সহজপাঠ্য করেছে।
যারা বাঁচতে চায়, তারা লড়াই করে বাঁচুক। আর যারা লড়তে চায়না, তাদের বাঁচার কোন অধিকার নেই। - জার্মানির একনায়ক
মানুষের জীবন বহতা নদীর মতই। কখনও থেমে থাকার মত অবস্থায় থাকে না। জীবন তার গতিতে চলতেই থাকে। এই জীবনে মানুষ কিভাবে নিজেকে গড়ে তুলবে সেটা শুধু মাত্র মানুষ নিজেই ঠিক করতে পারে। কারণ কারো জীবনের উপর কারো কোন অধিকার বা হাত নেই। নিজের জীবনের নিয়ন্ত্রণের দায়ভার শুধু নিজেকেই নিতে হবে। তবুও মানুষ নিয়ন্ত্রণের বাইরে অনেক কাজ করে থাকে, যার ভেতর হচ্ছে দুটি দেশের মধ্যে সমস্যা, জাতি গত ভেদাভেদ অন্যতম। এখানে কাউকে মারতে হয়, আর কেউ মারা যায়, কেউ মার খায়।
এই ভেদাভেদ ও সমস্যা সময় সবচেয়ে ক্ষতি হয় বেশি সাধারণ মানুষের। ভেদাভেদ হয় দুটি জাতি, গোষ্ঠির মধ্যে যা দু দিকেই ক্ষতি করে থাকে। এতে করে মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্ববোধ একেবারেই থাকে না। সেখানে থাকে শুধু একে অপরের প্রতি অবিশ্বাস ও অসন্তোষ। অথচ কত সহজে সমস্যার সমাধান করে ফেলা যায় যা নিয়ে মানুষ কখন ভাবেনি।
জার্মানির একনায়কে কেউ পছন্দ করে না। তবে তার এই উক্তিটি আমার অনেক পছন্দের। কারণ বেচে থাকার জন্য লড়াই করা দরকার। আর যারা লড়াই করতে চায় না বা ময়দান ছেড়ে পালিয়ে যায় তাদের বেচে থাকার দরকার নেই। কিন্তু এই সমস্যা গুলোর কি আসলেই দরকার। এসব করা ছাড়া শান্তি প্রতিষ্ঠা কি সম্ভব নয়। যুগে যুগে মানুষ শুধু লড়াই করে শান্তির জন্য। এক টুকরো মাটির জন্য। অথচ দিন শেষে কিন্তু সবার জন্য গন্তব্য একটিই।
তবুও এসব কেউ থামাতে চায় না। তবে কিছু মানুষ থাকে স্রোতের বিপরীতে। যারা হয়ত ময়দানে থাকে না। থাকে মানুষের হৃদয়ের পাতায়। যারা এই সব চায় না। যারা কলম ধরে এদের বিরুদ্ধে, যার কলমের শক্তি মানুষকে নতুন করে বাচার স্বপ্ন দেখায়। যারা সমাজের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় তাদের অক্ষমতা। তবে তাদেরও হেরে যেতে হয় দিন শেষে। কারণ বন্দুকের সামনে সব কিছুই অচল হয়ে পরে।
“অসির চেয়ে মসি বড়”
যুগে যুগে মানুষ কলম ধরছে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে বলছে। তাদের এই কলমের কারণে কত ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে। আবার এই কলমের কারণেই ধ্বংস হয়েছে অনেক কিছু। তবুও কলমের শক্তির কাছে সব কিছুই পরাজিত হতে দেখেছি। দেখনি যারা কলম ধরেছেন তাদের মাথা নোয়াতে। তারা স্বমহিমায় উজ্জল হয়েছেন।
প্রতিটি লেখা, প্রতিটি অক্ষর, প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি বাক্য সব সময় বলে গিয়েছে তাদের কথা। সমাজের কথা। সমাজের অক্ষমতা আর দুর্বলতার কথা। শুধু তাই নয়। কলমের ছোয়াতে সৃষ্টি করেছেন অসাধারণ সৃষ্টি, শেক্সপিয়ার থেকে রবীন্দ্রনাথ, কিটস থেকে জীবনানন্দ অথবা গালিব থেকে সাদাত হাসান মান্টো। সৃষ্টির অপরিসীম প্রতিভা নিয়ে আবির্ভাব ঘটেছিল এই পৃথিবীতে। তারা শুধু তাদের কলমের মাধ্যমে শিল্প সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন এমন নয়। তাদের এই সৃষ্টি যুগে যুগে সাহিত্যিকদের পথ প্রদর্শন করে আসছে।
আজ এত কিছু কেন বলছি। কারণ আজকে যাকে নিয়ে বলছি তিনি আর কেউ নন সাদাত হাসান মান্টো ও তার লেখা “কালো শালোয়ার ও অন্যান্য গল্প” বইটির কথা।
ছোট গল্প লেখার ক্ষেত্রে যদি বলা হয় তবে মান্টো ছিলেন ছোট গল্পের জাদুকর। তিনি তার লেখনী দিয়ে সমাজের অবস্থা ও অবস্থান সম্পর্কে তুলে ধরেছেন। তিনি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন যে যেটা হচ্ছে আসলে নীতিবিরুদ্ধ। তাই তিনি কলম নিয়ে লিখেছিলেন সেই সব কথা। যেই কথা গুলো বলার জন্য তাকে কারাবরন করতে হয়েছে। নানা সংঘাত প্রতিঘাত সহ্য করতে হয়েছে। তবুও অন্যায়ের বিরুদ্ধে তার কলম থেমে যায়নি। তিনি লড়াই করে বেচে থেকেছেন।
আমি বলতে চেয়েছিলাম সেই সমস্ত কথা আর তখনই ওরা বলে, “খামোশ!” - স্বপ্নবাজি (সঞ্জীব চৌধুরী)
এই গানটি আমার খুব পছন্দের একটি গান। সঞ্জীব চৌধুরী অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়িয়েছিলেন বুক চিতিয়ে। তার গান মানুষকে জানিয়েছে অন্যায় অবিচারের কথা। তিনি স্বমহিমায় উজ্জল হয়েছেন। ঠিক তেমন ই সাদাত হাসান মান্টো বলেছেন সেই সব কথা, তখন তাকে থামিয়ে দেয়া হয়েছে। শিকল দেয়া হয়েছে তার কলমে। তিনি হয়ে পড়েছেন একা। তবুও তিনি লিখেছেন।
“কালো শালো���়ার ও অন্যান্য গল্প” বইটিতে মান্টোর লেখা ১২টি ছোট গল্প স্থান পেয়েছে। এই গল্প গুলোর বেশির ভাগ গল্পই দেশ ভাগ, দাঙ্গা ও তার পরে দেশের পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে লেখা হয়েছে।
এখানে যেমন জালিয়ান বাগের গল্প উঠে এসেছে। তেমনি উঠে এসেছে দিল্লির গল্প। আবার এসেছে জাতিগত ভেদাভেদ এর গল্প, ঠিক উঠে এসেছে দু দেশের মধ্যের রাজনীতির কথা। বলা যায় মান্টো এই দেশ ভাগ নিয়ে কখনই খুশি ছিলেন না। তিনি চাননি দেশ ভাগ হোক। কিন্তু রাজনীতি ও পরিস্থিতির জন্য এটা হয়েছে।
এই দেশ ভাগ বন্ধু কে শত্রু করে তুলেছে, এই বইয়ের “শেষ স্যালুট” গল্পটি ঠিক এমনই এক বন্ধুত্বের। যারা এক সময় বন্ধু ছিল ঠিক তারপর যখন দেশ ভাগ হয় দুজন দুই দেশের হয়ে লড়াই করছে। ঠিক সেই সময় দুজনের মানসিক অবস্থা কেমন ছিল। তারা একে অপরকে নিয়ে কি চিন্তা করছিল, তারা কি শুত্রু থেকেই জীবন শেষ করেছিল।
আবার “খুলে দাও” গল্পটি হারিয়ে যাওয়া একটি মেয়ের কাহিনী। তবে এই গল্পের শেষ হয়েছে একটা টুইস্ট থেকে। বলে দিলে স্পয়লার হয়ে যাবে। তাই বলছি না, শুধু জাতিগত ভেদাভেদের সময়ে মেয়েদের সাথে যা হয়েছে সেই সময়ে একটা ছোট চিত্র আমরা দেখতে পাই, এই গল্পের মাধ্যমে। আর আমরা এটাও বুঝতে পারি ১৯৭১ সালে কি হয়েছি।
এছাড়া “সেই মেয়েটি” গল্পের ক্ষেত্রে আমরা দেখি একটা মানুষ কথা সুন্দর ভাবে ঠান্ডা মাথায় খুন করে। নারীদেহ নিয়ে খেলা যার স্বভাব। যে নারীদেহ পেলেই হামলে পরে। তবে শেষ পর্যন্ত তার কি হয়। সেকি শাস্তি পায়। নাকি তার খেলা চলতেই থাকে।
এমন গল্প দিয়ে বইটি সুন্দর ভাবে লেখা হয়েছে। বইটি অনুবাদ করেছেন জ্যোতির্ময় নন্দী। আমি আগে কখনও ওনার অনুবাদ পড়িনি। এবার পড়ার পর মনে হয় আগেই পড়া উচিত ছিল। বেশ সাবলীল অনুবাদ করেছেন। গল্প গুলোর মুল ভাব থেকে অনুবাদক সরে যাননি। এটাই সবচেয়ে বেশি ভাল লেগেছে।
এছাড়া বইটি প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য নয়, বা যারা সাহিত্যের যৌনতা নিয়ে বাড়াবাড়ি আছে তাদের জন্য নয়। কারণ কয়েকটি গল্প প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যই প্রযোজ্য হবে। আবার যেহেতু প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রযোজ্য তাই আগেই ভেবে বসার দরকার নেই বইটি পুরোপুরি ভাবে আপনার ভাল লাগবে না।
প্রখ্যাত সাহিত্যিক কৃষণ চন্দর যিনি উর্দু সাহিত্যের অন্যতম একজন জনপ্রিয় লেখক তিনি মান্টো সম্পর্কে বলেছেন, “উর্দু সাহিত্যে অনেক ভালো গল্পকারের জন্ম হয়েছে, কিন্তু মান্টো দ্বিতীয়বার জন্ম নেবে না, আর তার স্থান কেউ পূরণ করতে পারবে না। মান্টোর বিদ্রোহ আধুনিক সভ্যতার পাপের বিরুদ্ধে। তার এই প্রচ্ছন্ন বিদ্রোহের মাঝে আমরা খুঁজে পাই মান্টোর ক্ষোভ, ঘৃণা আর ভালোবাসা।"
এ থেকেই বোঝা যায় মান্টো কে ছিলেন। তার সম্পর্কে যতই বলা হোক, হয়ত কম বলা হবে। সমস্যা হচ্ছে মান্টোর জীবন তার নিয়ন্ত্রণে ছিল না। জীবন যেখানে নিয়ে গিয়েছে, তিনিও সেখানেই গিয়েছেন।
সালমান রুশদির ভাষায় সাদত হাসান মান্টো হলেন "Undisputed master of modern Indian short story."
রুশদির কথা একদম ফেলে দেয়ার মত না। তিনি যেটা বলেছেন একদম সত্য। ছোট গল্প লেখার যে ধারা মান্টো দেখিয়েছেন তা আধুনিক সাহিত্যের ক্ষেত্রে পথ প্রদর্শক। অল্প কথায় কত কিছু তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন তা বলা অপেক্ষা রাখে না। তবে কিনা নিজের জীবনের প্রতি তার মায়া ছিল না। তাই খুব অল্প সময়ে তিনি চলে গেলেন এই পৃথিবী ছেড়ে।
সাদাত হাসান মান্টো এর এপিটাফে লেখা ছিল, "কে বেশি ভালো গল্প লিখতে পারে? খোদা নাকি মান্টো?' যদিও পরবর্তিতে এই লেখা সরিয়ে ফেলা হয়। তবে তিনি যা সৃষ্টি করে গিয়েছেন তা কি করে সরিয়ে ফেলবে। ছোট গল্পের জাদুকর হয়ে থাকবেন যুগ যুগ ধরে।
বইঃ কালো শালোয়ার ও অন্যান্য গল্প মুলঃ সাদাত হাসান মান্টো অনুবাদঃ জ্যোতির্ময় নন্দী মুল্যঃ ৩৫০/- প্রকাশনীঃ বাতিঘর