একদিকে আজকের অত্যাধুনিক জটিল জীবন, আরেক দিকে শিল্পীর ধ্যান ধারণার পরা বাস্তব একান্ত ভুবন— এই দুইয়ে মিলে ‘ঝড়ের খেয়া’ উপন্যাসের কাহিনী ক্ষেত্র। শিল্পীদের পাশাপাশি আছে আধুনিক পরিবারের জটিল গঠন ও জটিলতর মনস্তত্ত্ব ও জীবনযাপনের কোটাল বানে ভেসে যেতে-থাকা মানুষ। এদের যা একত্র করে তাকি শুধুই ঘটনাচক্র? না মানুষের প্রতি মানুষের স্বাভাবিক দায়িত্ববোধ? সহজটান? না কোনও দুর্লভ অন্তর্গূঢ় ভালবাসার শক্তি? ঝড় সকলেরই জীবন ঘিরে। কোথাও কালবৈশাখী, কোথাও সাইক্লোন, কোথাও বা টর্নেডো। ঘর ভেঙে যায়, মানুষ ভেঙে যায়, তবু খেয়া থাকে। খেয়া আসে। মানুষই মানুষের পারাপারের খেয়া। ভিন্ন ভিন্ন বয়সের মানুষ, ভিন্ন তাদের জীবন-ঝড়ের চরিত্র। খেয়া আসে কখনও আশ্রয় রূপে, কখনও পথ নির্দেশে, কখনও আরোগ্য স্পর্শে, কখনও শুধু একটি মরমি কাঁধ হিসেবে যার ওপর মাথা রেখে মানুষ কাঁদতে পারে। উজাড় করে দিতে পারে মন। পুরনো সম্পর্কের ভুল শুধরে যায়। নতুন করে মানুষ মানুষকে পায়। কে কাকে দেয় এ সব? আজকের স্বার্থবাদী সভ্যতায়, সারাবিশ্বে বিছিয়ে থাকা হারানো-ছড়ানো জীবনকে? অদিতি, তনিকা, সর্বাণী, অনোহিতা, শৌনক, শ্রীলা, নবগোপাল, মাধুরী, শীলাবতী, আঁদ্রে... এদের জীবন কথায় সেই জরুরি সংবাদটির খোঁজ হয়তো পাবেন পাঠক।
Bani Basu is a Bengali Indian author, essayist, critic and poet. She was educated at the well-known Scottish Church College and at the University of Calcutta.
She began her career as a novelist with the publication of Janmabhoomi Matribhoomi. A prolific writer, her novels have been regularly published in Desh, the premier literary journal of Bengal. Her major works include Swet Patharer Thaala (The Marble Salver), Ekushe Paa (twenty One Steps), Maitreya Jataka (published as The Birth of the Maitreya by Stree), Gandharvi, Pancham Purush (The Fifth Man, or Fifth Generation?) and Ashtam Garbha (The Eighth Pregnancy). She was awarded the Tarashankar Award for Antarghaat (Treason), and the Ananda Purashkar for Maitreya Jataka. She is also the recipient of the Sushila Devi Birla Award and the Sahitya Setu Puraskar. She translates extensively into Bangla and writes essays, short stories and poetry.
Bani Basu has been conferred upon Sahitya Academy Award 2010, one of India's highest literary awards, for her contribution to Bengali literature.
বৃষ্টিতে একা একা ভিজছে একটি মেয়ে, নদী হয়ে ভেসে যাবার জোগাড় যেন। তবে এটা আদপেই কোনো বাস্তব দৃশ্য নাকি ছবিতে দৃশ্যায়িত কোনো আর্টিস্টের কল্পনা তা বুঝতে হিমশিম খেয়ে যেতে হয় বইখানা শুরু করতে গিয়ে। কেননা ঝড়ের খেয়াটির মাঝি অদিতি সরকার আপাদমস্তক চিত্রশিল্পী। অনেকে অবশ্য আড়ালে পিঞ্চ মেরে অদিতি বোর্দো গুপ্ত সরকারও ডাকে। তাতে ওর কিচ্ছু এসে যায় না। প্যারির আঁদ্রের থেকে পেয়েছিল বোর্দো, হুট করে অদিতি কিছু একটা পরিষ্কার জলের ওপারে দেখলো বোধ করি। না! বিদেশী নরম স্বভাবের আঁদ্রে বোর্দো মানসিকভাবে অদিতি সরকারকে পাশে পেয়েছে সবসময়। কারণ ও এক কথার মানুষ, বলেছিলো "আমি আছি"! তারপর এলো রাজর্ষি গুপ্ত, কিন্তু অদিতিকে এবার বেশি ভাবতে হয়নি কেননা নীতি নৈতিকতা নিয়ে তেমন একটা ভাবেইনি রাজর্ষি। সেই থেকে অদিতি একাই আছে রঙ ইজেল নিয়ে, নর্থের পুরনো আমলের বাড়িটাতে।
গল্পের প্রধান চরিত্রের হাত ধরে একে একে আগমন ঘটে তনিকা, অনোহিতা, শ্রীলা, মাধুরী দেবী, সর্বাণী সাহা, শীলাদির। বইটার প্রধান চরিত্ররা নারী। এদের প্রত্যেকের জীবনেই ঝড় আছে, যা সবার জীবনেই থাকে। তবে জীবন আর পরিবারের জটিল গঠন আর মনস্তত্ত্বের এই ঝড়-ঝঞ্ঝার মাঝে মানুষ হিসেবে মানুষ ঠিক খেয়ার খোঁজটা পাচ্ছে কিনা সেটাই মূখ্য। কেননা মানুষই মানুষের পারাপারের খেয়া। ওরা চলতি পথে অদিতিকে পেয়েছে।
আমার প্রথম বাণী বসু পাঠ। মন্ত্রমুগ্ধের মতো পড়ে গেছি, লেখায় একটা অন্যরকম আবহ আছে। কাহিনী ভাল করে খেয়াল করলে বোঝা যায় তেমন আহামরি কিছু নয়। কাহিনী বিন্যাস ও চরিত্রের গঠন শুরুর দিককার কিছু সিরিয়ালের মতো, উপভোগ্য! বিশেষ করে অদিতি চরিত্র ঝড়-সাইক্লোনে উড়ে যাওয়া মানুষের শক্ত খুঁটি যেন! এরকম পরোপকারী তেমন কাউকে আদপে বাস্তব জীবনে অতো দেখা যায় না। তবে অদিতির মতো চরিত্রেরা শেখায় গড়িমসি না করে সিদ্ধান্ত নিয়েই নেয়া যায়, পরের জন্য কিছু করে নিজেরাও ভাল থাকা যায় সে যেই হোক- কাছের কিংবা দূরের! কারণ- "Happiness springs from doing good and helping others." (Plato)
~৯ সেপ্টেম্বর,২০২২
***বাণী বসু পড়ার ইচ্ছা আগেই ছিল। কিন্তু গান্ধর্বী, মৈত্রেয় জাতক কিংবা খারাপ ছেলে পড়ার ইচ্ছা ছিল শুরুতে। এটা পড়ার কারণ হচ্ছে হার্ডকপি হাতে পাওয়া। মাসখানেক আগে নীলক্ষেতের ফুটপাত থেকে আনন্দের এই অরিজিনাল কপিখানা মাত্র ২০টাকায় ব্যাগে ভরেছিলাম। চাচার চেহারাখানা দেখার মতো হয়েছিল 😂 চাচা : বাণী বসু কোত্থেকে পাইলেন? আমি: কেন! আপনার এই ২০ টাকার স্তুপ থেকেই!🤭 (আহারে চাচা! লামসাম বইয়ের চাপে এটাকে সরাতে ভুলেই গেছে)
বাণী বসু প্রথম পড়লাম। কাহিনী খুব স্ট্রং কিছু না। কিন্তু এক মায়া, এক সুরিয়েল আবহ সৃষ্টি করেছেন লেখিকা, যা একটা মোহ সৃষ্টি করে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রাখে।