নুরু মাহবুবা একে অন্যকে পছন্দ করে এবং তাদের বিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়। এই সময়ে নুরু বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে সেনাবাহিনীতে যোগদান করে। নুরুর সেনাবাহিনীতে যোগদানের পিছনে দেশ ও জাতিকে রক্ষার কোন তাগিদ ছিল না। মাহবুবা, রাবেয়া ও সাহসিকা বাল্যসখী ও তাদের মধ্যে পত্র যোগাযোগ হয়। সাহসিকা তার নামের মতই সাহসী ও প্রতিবাদী। চিরকুমারী সাহসিকা নারীদের উপর অন্যায়ের প্রতিবাদ করে।
বাঁধন হারা বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত একটি পত্রোপন্যাস। বাঁধন হারা নজরুল রচিত প্রথম উপন্যাস। করাচিতে থাকাকালীন তিনি 'বাঁধন হারা' উপন্যাস রচনা শুরু করেন। মোসলেম ভারত পত্রিকায় বাঁধন হারা-র প্রথম কিস্তি এবং ১৯২১ সালে (১৩২৭ বঙ্গাব্দ) ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয়। ১৯২৭ সালে জুন মাসে (শ্রাবণ, ১৩৩৪ বঙ্গাব্দ) এটি প্রথম গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।
Kazi Nazrul Islam (Bengali: কাজী নজরুল ইসলাম) was a Bengali poet, musician and revolutionary who pioneered poetic works espousing intense spiritual rebellion against fascism and oppression. His poetry and nationalist activism earned him the popular title of Bidrohi Kobi (Rebel Poet). Accomplishing a large body of acclaimed works through his life, Nazrul is officially recognised as the national poet of Bangladesh and commemorated in India.
বাঁধন-হারা / Badhon-Hara/ Bandhon-Hara/ Unfettered, is an impeccable novel written by বিদ্রোহী কবি/ Biddrohi Kobi/ The Rebel Poet and our national poet, কাজী নজরুল ইসলাম/ Kazi Nazrul Islam. It is the first epistolary novella in Bengali literature and also happens to be the first novel written by the writer.
It’s a truly captivating tale of unfulfilled love in wartime experience. I won’t say anything about the story or plot of this book. I wouldn’t want to rob the future readers of the opportunity to be mesmerized while reading this book.
My thoughts on the book: Badhon-Hara brings Nazrul's thoughts about himself, the Hindu-Muslim strife, religion, women's liberation, and much more to the world in the most spectacular way possible. The use of language and words in this novel is stunning. I was fascinated by the sweetness of the words. Some dialogues and some words in this epistle of Nazrul are so real and so connectable that they will touch the very inner core of the hearts of the readers. Undoubtedly, one of the best books in Bengali literature! I regret not reading this book earlier.
বাংলা সাহিত্যে এত শক্তিশালী এবং বেদনামাখা গদ্যে একখানি পত্রোপন্যাস ছিল। অথচ আগে কেন 'বাঁধন-হারা' পড়িনি তা নিয়ে আফসোস হচ্ছিল। যাক লেট দেন নেভার।
বাঙালি যুবা নুরুল সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছে। প্রথম মহাসমরের সে বাঙালি পল্টনে যোগ দেয়৷ কখনো করাচি, কখনওবা বাগদাদ থেকে পত্র পাঠায় সে। এদিকে দেশে নুরুলের রক্তের সম্পর্কের কেউ নেই। আত্মার সম্পর্কের অনেকেই আছে। জমিদার বন্ধু আছে, যার মা তাকে নিজের সন্তানের মতো স্নেহ করে। বন্ধুর বোন এবং বন্ধুপত্নী তাকে ভাইয়ের মতো দেখে। মাহবুবার সাথে কবিসৈনিক নুরুলের বিয়ে ঠিক হয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সংসার খাঁচায় বন্দি হতে গররাজি হলো নুরুল। মন ভেঙে গেল মাহবুবার। শোকে মারা গেল মাহবুবার পিতা। পরিবারটিকে আশ্রয় নিতে হলো মাতুলালয়ে।
একদিকে কবিসৈনিক নুরুল হুদার অব্যক্ত বেদনা। অপরদিকে মাহবুবাকে বিয়ে না করায় অন্য সকলের নুরুলের প্রতি কিছুটা ক্ষোভ, খানিকটা যাতনার বোধ। পাওয়া-না পাওয়ার যন্ত্রণাও মুখ্য।
পত্রের মাধ্যমে কথোপকথনে এগিয়েছে উপন্যাস। কবিসৈনিক নুরুলের উদ্দাম জীবনযাপন এবং ভাবনার সাথে নজরুলের ব্যক্তিজীবনের মিল লক্ষনীয়।
গদ্যে ভাষার এবং শব্দের ব্যবহার মনমাতানো। নজরুলের এই পত্রোপন্যাসের কিছু কথা, কতক বাক্য মর্ম গিয়ে আঘাত করে।
হৃদয়ের তলদেশে বিদ্রোহের এক তীব্র স্ফুলিঙ্গ জ্বালিয়ে আমার দেহের প্রতিটি রক্তকণিকার মধ্যে অসীমকে ছোঁয়ার প্রবণতা সৃষ্টি করেছে।কবি কাজী নজরুলেরই প্রতিচ্ছবি যেনো নূরুল হুদা চরিত্রটির মধ্যে নিজের আসন গেঁথে সত্য পথে চলার আহ্বান জানিয়েছে।বাঁধনযুক্ত মানুষ যখন সংসারের স্বপ্ল মায়াতেই নেশাগ্রস্ত হয়ে সত্যকে বোঝার অগ্নিদীপ্তশিখা হারিয়ে ফেলে,তখন এক প্রকার বাঁধন-হারা বৈরাগী সোনার খাঁচায় ক্ষণিকের জন্য বদ্ধ থাকলেও উদ্দশ্য থাকে ঐ অসীম আকাশে উড়ে বেড়ানোর,গভীর বেদণাকে গলার মালায় পরিণত করে তার ঝাঁঝালো গন্ধ প্রতিনিয়ত অনুভব করতে থাকে;তুচ্ছ সুখ ও শুধার আড়ালে লুকিয়ে থাকা অনন্ত মুক্তির পথ তাঁরা বেদণার পদতলেই দেখতে পায়। উপন্যাসে ঠিক সেই ধাঁচেরই একটি চরিত্র নুরুল হুদা। সকলের স্নেহ-ভালোবাসার বন্ধনে জড়িয়ে যখন সে নিজের দূর্বলতার অবগত হয়,তখন তাঁর চিত্তে জন্ম নেয় বাঁধন-হারা এক যোদ্ধার,যে সকলপ্রকার নিষ্ঠুরতা,রক্তপাত,হিংস্রতার মাঝে নিজেকে উৎসর্গ করতেও দ্বিধাবোধ করে না;বরং আপন সত্তাকে অভিনব রুপে চয়ন করাতেই তাঁর মানবজীবনের স্বার্থকতা। এই উপন্যাসখানা বরাবরই ভিন্ন প্রকৃতির এক সৃষ্টি।নতুত্বের ছোঁয়ায় প্রতিটি চরিত্র যেনো মনের ফলকে অজানা কিছু প্রতীক এঁকে যায়।বাংলা সাহিত্যে প্রথম পত্রোপন্যাস,যা আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী জীবনের অনবদ্য এক সৃষ্টি।
বাপরে !!!কাজী নজরুলের পত্রোপন্যাসও কম যায় না । বাংলা সাহিত্যের প্রথম পত্রোপন্যাস পড়েও একবারও প্রথম মনে হয়নি । এতো সিদ্ধহস্তে লেখা । একজন লোক এতগুলো ক্যারেকটার থেকে যথার্থরূপে লেখা পত্রগুলো সত্যিই প্রশংসনীয় ।
বাঁধনহারা (Free from Bonds) is the first novel written by the national poet of Bangladesh, Kazi Nazrul Islam. The novel constitutes of several letters written by a group of people who share a deeply connected bond with each other. Among them, Nurul Huda abruptly leaves to join the war when his marriage is fixed with Mahbuba. The story continues with long emotional letters written by the characters to stay connected and in a vain effort to bring back Nurul Huda from the war and to make him tradition bound. But he feels an urge to be free from all bonds, to be limitless, to trace his sorrows, to be lost and thus be found in the journey. Being away from home and his loved ones, he feels an unknown surge of melancholia. But he still stays firm with his decision, as if driven by an uncontrolled flame in his heart, to stay away from all the bonds. The story ends with the possibility of the reunion of Nurul Huda and Mahbuba.
I find Kazi Nazrul Islam's writings very fascinating. He uses words to convey emotions in a spectacularly attention gripping way. What I love most is that I feel like he gives life and beauty to my own emotions through words. I can easily connect to his writings in a profound emotional level.
Is this novel, different perspectives are beautifully conveyed. All through our lives, we follow certain paths and certain rules to reach a certain goal or destination, almost forgetting about ourselves and our happiness. And we look down on people who choose a different path, who choose their own liberty to live life -without bonds, without a fixed goal- than following the tradition. But always being on the same path and following the same rules doesn't necessarily mean it's the absolute way of living life. As some people go out looking for happiness, some are madly driven to go after and trace their sorrow and grief to find meaning in life. Just as Kazi Nazrul Islam wrote in his other novel, মৃত্যুক্ষুধা/ Mrityukshuda (Hunger for Death) — আনসার বিষাদ-জড়িত কণ্ঠে বললে, “....দুনিয়ার সব মানুষ একই ছাঁচে ঢালা নয় রে, বুঁচি। এখানে কেউ ছোটে সুখের সন্ধানে, কেউ ছোটে দুঃখের সন্ধানে। আমি দুঃখের সন্ধানী।”
I believe it was 2017. I was flying to Dhaka to see a friend I hadn't seen since 2012. I'd never been to South Asia, and I wanted to read some books about Bangladesh in particular. I googled famous Bangladeshi writers, and Kazi Nazrul Islam was one of the top ones.
I didn't end up getting any of the books. I flew to Dhaka and sent a week at my friend's place and it was wonderful. And on the way back, at an airport book shop, I was this book. And I recognised the name. So I bought it, and then proceed not to read it.
Fast forward to last month and I started reading two other books: New Kings of the World and Caste, both of which have a focus on South Asia, and I thought perhaps its time. And it was. It's nothing like those other books -- and to be fair, those other books are not like each other either -- but I'm glad I finally read it. And if I'm not mistaken, it's my first book by a Bangladeshi author.
কাজী সাহেবের ‘বাঁধন-হারা’ কোনও সাধারণ উপন্যাস নয়—এ এক চিঠির অক্ষরে লেখা সাহসের সংগীত, প্রেমের মুক্তি-সংবাদ, আর বিদ্রোহের প্রারম্ভিকা। একে বলা যায়—একটি পূর্বাভাষ, যেখানে নজরুল তাঁর কাব্যের ভাষায় গদ্যকে রাঙিয়ে তুলেছেন, আর যেখানে পাঠকের মনে বারবার প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন—বন্ধন কি শুধু বাহ্যিক? না কি মনের মধ্যে সবচেয়ে গভীর শৃঙ্খল পোঁতা থাকে?
‘বাঁধন-হারা’ রচিত হয়েছে পত্রোপন্যাসের ছাঁদে, যা বাংলা সাহিত্যে তখনও অভিনব। পত্রের ভেতর দিয়ে চরিত্ররা একে অপরের হৃদয়ের নিকটবর্তী হয়, আবার কখনো পত্রের দীর্ঘশ্বাসে লুকিয়ে থাকে এক গভীর শূন্যতা।
এই আঙ্গিক নজরুলের কবিসত্তাকে আরও উন্মুক্ত করেছে। তাঁর কাব্যিকতা, অনুভবের ঘনত্ব, ভাষার তীব্রতা—সবই যেন পত্রের ছত্রে ছত্রে জ্বলজ্বলে।
চলুন একটু চরিত্রের জ্যোৎস্না ও আঁধারের সঙ্গে পরিচিত হয়:
নুরু—এক বিভ্রান্ত ও দ্বিধাগ্রস্ত যুবক, যে সেনাবাহিনীতে পালিয়ে যায়; দেশপ্রেম নয়, বরং বাস্তবতা থেকে পালিয়ে যাওয়ার মানসিকতা তার চালিকা শক্তি। সে প্রেম চায়, দায়িত্ব নয়। তার মধ্য দিয়ে নজরুল যেন দেখাতে চান—সচরাচর ‘নায়ক’ ভাবার মতো পুরুষ সব সময় সত্যিকারের নায়ক হয় না।
মাহবুবা—নামেই যার ‘প্রিয়তা’, সে হয়ে ওঠে এক চিঠির পাতায় প্রতীক্ষার প্রতিমা। তার অভিমান, তার নিঃসঙ্গতা—সবই রক্তে লেখা।
সাহসিকা—এই উপন্যাসের হিডেন হিরো। নামেই তার পরিচয়: সাহস। চিরকুমারী এই চরিত্র নারীর অধিকার, প্রতিবাদ ও আত্মসম্মানকে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দেয়। সাহসিকা যেন নজরুলের কল্পনার এক আধুনিক বেগম রোকেয়া, যার মুখে তিনি নিজস্ব বিদ্রোহী কণ্ঠস্বর বসিয়েছেন।
‘বাঁধন-হারা’ শুধু প্রেমের উপন্যাস নয়—এ এক নারীর স্বাধীনচেতা আত্মার আহ্বান। সাহসিকার চরিত্রের মাধ্যমে নজরুল যা বলেন, তা শুধু সাহিত্যে নয়, সমাজেও এক বিপ্লব ঘটায়।
এক চিরকুমারী নারী নিজের ইচ্ছায়, নিজের যুক্তিতে বাঁচবে—এই ভাবনাই ছিল তৎকালীন সমাজে 'অশ্রাব্য'। নজরুল তা সাহিত্যে আনলেন, তাও কবির কলমে, একেবারে ঘ্রাণে-কুসুমে মেখে।
নজরুলের ভাষা এখানে নদীর মতো—একবার গীতধ্বনিতে মৃদু, আবার কখনো দুর্দান্ত স্রোতের মতো ব্যথাবেগে প্লাবিত। তিনি কবির মতো লিখেছেন গদ্য, কিন্তু সেই গদ্যের প্রতিটি বাক্যে যেন ঝরে পড়েছে ছন্দ, চিত্রকল্প, কল্পনার বিস্ময়।
“আমার হৃদয়টা আজ যেন শূন্য। ভালোবাসা যেমন হঠাৎ ভরে যায়, তেমনি হঠাৎ ফাঁকাও হয়ে যায়।” — এমন বাক্য চোখে পড়লে, মনে হয়, নজরুল আসলে গদ্যে কবিতা লিখেছেন।
১৯২১ সাল—উপনিবেশিক শাসনের যুগ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ধাক্কা, নারী-পুরুষের সম্পর্কের নতুন সংজ্ঞায়ন। এই সময়েই নজরুল লিখলেন ‘বাঁধন-হারা’।
এটি কোনও যুদ্ধজয়ের কাহিনি নয়, বরং আত্মযুদ্ধের দলিল। যেখানে মুক্তি শুধু বাহ্যিক নয়—ভেতরের শৃঙ্খল ভাঙার ডাকও বয়ে আনে।
এই উপন্যাসের শেষে পাঠক এক বিষণ্নতা নিয়ে ফেরে। কারণ ‘বাঁধন’টা যেন আমাদেরও—আমাদের মন, সমাজ, চিন্তা, ভালোবাসার ধারায়। আর নজরুল সেই বাঁধনটাকে চিঠি চিঠি ছিঁড়ে দিয়ে বলেন—ভালোবাসো, কিন্তু নিজের মতো করে। প্রতিবাদ করো, কিন্তু স্নেহের সুরে।
শেষে এটুকুই বলার থাকে যে ‘বাঁধন-হারা’ এক নবীন কণ্ঠস্বরের প্রথম আত্মপ্রকাশ—যা তখনও বিদ্রোহী কবি হয়ে ওঠেনি, কিন্তু তার ভিত গড়ছে। এই উপন্যাসে নজরুল একজন প্রেমিক, একজন দার্শনিক, একজন পুরুষতন্ত্র ভাঙা কবি, এবং সর্বোপরি একজন মুক্ত মানব হয়ে ওঠেন। তাঁর এই প্রথম উপন্যাস পড়ে মনে হয়—"বিদ্রোহ শুরু হয় প্রেম থেকে। প্রেম যেখানে বাঁধনহীন, সেখানেই তো মুক্তি।"
গতকাল বিদ্রোহীর জন্মদিন গেল। আজ বইয়ের ধুলো ছাড়িয়ে আবার বলি— "বাঁধন-হারা পড়ুন । হৃদয়টাকে একটু খুলে দিন ।"
"বাঁধনহারা" কূলহারা নদীর ন্যায়। যার কোনো কূল কিনারা নেই ভালো থাকার, না সে কাউকে দেয় ভালো থাকতে। ঠান্ডা আবহাওয়া, গায়ে লাগানো গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি, মন মাতানো আমেজের বাতাসে ভরে দুঃখের গীত ভরা "বাঁধনহারা" পড়াটা মন্দ নয়। সমুদ্রের মতো উত্তাল তার প্রতিটি চরিত্র, দুঃখের ভারে নিমজ্জিত তাদের কাঁধ, সমাজের ক্রোড় চক্ষুতে ধর্ম যেখানে অসহায়। তিনি চিঠি আকারে পুরো উপন্যাসের উত্থান, পতন,বাঁচার আনন্দ ব্যক্ত করেছেন। ভালোবাসায় মানুষ আবদ্ধ, তিনি তা বারবার বলেছেন। যে ভবঘুরে, তার জীবনে নিজেকে না জড়িয়ে তাকে সময়ের স্রোতে ভাসতে দেওয়া উচিত। যে নিজের জানালা দিয়ে আকাশ দেখতে চায় না, তাকে বাহিরের উজ্জ্বলতায় আকাশ দেখার অবকাশ করে দেওয়া উচিত।
নুরুল হুদা, রাবেয়া, সোফিয়া, মাহবুবা, সাহসিকা এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র। মাহবুবার সাথে নুরুল হুদার বিয়ে ঠিক হলে সে মিলিটারিতে জয়েন করেন। বলা বাহুল্য, সে বোহেমিয়ান এক জীবনের ক্ষুদ্র মানুষ, যার কোনো জীবন নামক শব্দ নেই। তাকে কেন্দ্র করে উপন্যাসের অভ্যুত্থান। সবাই তাকে চিঠি লিখে তার ফেলে যাওয়া স্মৃতির জন্য, কিছু ভুল শুধরানোর জন্য। কিন্তু সে নিজের দর্শনে অটুট। সে প্রতিনিয়ত দেবতার আঘাতে জর্জরিত মনকে উদ্বেলিত করেছে, দেবতা আছেন কী? তিনি নিজের সত্যকে আপন করেছে বলে দেবতা কুণ্ঠিত নন তো।
নজরুল তার চিরাচরিত পরিবেশ থেকে বের হননি তার উপন্যাস লেখার ক্ষেত্রে। তিনি নিজের অবলোকন করা সত্য, দুঃখ, ভালোবাসা ও সমাজকে সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন। এখানে নজরুল সদাজাগ্রত। তিনি নিজের দর্শনকে সাবলীল ভাষায় নুরুল হুদার মাধ্যমে বলেছেন। এটাতেই তার সার্থকতা।
নজরুলের লেখা প্রথম উপন্যাস এটি৷ পত্রোপন্যাস। এধরনের লেখা আমার ঠিক পছন্দ না।নিমাই ভট্টাচার্যের "মেমসাহেব" এর মত ; একঘেয়ে লাগে। তবুও একরকম জোর করে পড়েছি। আগের দিনের অন্য সব উপন্যাসের মতই বাহুল্য আর দাশর্নিক উক্তি ভরা উপন্যাস। শরৎচন্দ্রের "শেষ প্রশ্ন" পড়তে গিয়ে বিরক্ত হয়ে গেছিলাম, এটা পড়েও একই অনুভূতি। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র নুরুর মাধ্যমে লেখক তাঁর নিজস্ব চিন্তা ভাবনা আর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যই দেখিয়েছেন। সাহসিকার লেখা চিঠিতে সেটা পুরো স্পষ্ট। আর তার অসাম্প্রদায়িক চিন্তার প্রকাশ তো ছিলোই। মোটকথা শুধুমাত্র নজরুল লিখেছেন বলে এটা কোনো কালজয়ী উপন্যাস হিসেবে গণ্য করার উপায় নেই। শেষের দিকে সাহসিকার লেখা চিঠিটা ভাল লেগেছে তাই তিন তারা দিলাম। নজরুল তিনটে উপন্যাসের দুটো পড়লাম "কুহেলিকা" ও "বাঁধনহারা"। দুটোই আমাকে কিছুটা disappointed করেছে। আমার expectation আরো বেশি ছিল।
আমার মনে হয়, ভাল কবিদের উপন্যাসের হাত তেমন ভাল হয়না। জীবনানন্দের কবিতা পড়ার পর আগ্রহ নিয়ে তার উপন্যাস সমগ্র পড়েছিলাম। কোনো লেখাই আমাকে তাঁর কবিতার মত টানেনি। একই melancholic tone থেকে তিনি বেরোতে পারেননি।
কত সুন্দর একটা উপন্যাস!! প্রতিটি চরিত্র,প্রতিটি শব্দই যেন জীবন্ত।বইটি পড়ে অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করেছে যেটা অন্য কোনো উপন্যাসের বেলায় পাইনি।বাস্তবতা, প্রেম,বিরহ সবকিছুকে লেখক এমন ভাবে স্থান দিয়েছেন তা মন ছুয়ে যাবার মত। বইটি বেশি ভালো লাগার কারণ প্রতিটি পাতায় নিজের সাথে কিছু কথার মিল পেয়েছি।এজন্য আরও প্রানবন্ত লেগেছে।
“বাঁধনহারা” উপন্যাসটি নজরুলের মানুষের মুক্তি ও স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। এই উপন্যাসে দেখানো হয়েছে কীভাবে মানুষ বিভিন্ন সামাজিক, মানসিক ও শারীরিক বাঁধন থেকে মুক্ত হতে চায়। লেখক এখানে মানুষের অন্তর্দ্বন্দ্ব, সংগ্রাম এবং স্বাধীনতার জন্য লড়াইয়ের গল্প উপস্থাপন করেছেন।