১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ মুক্ত হয়। একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ আবারও মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। কয়েকমাস যেতে-না-যেতেই দেশ যেন মুখ থুবড়ে পড়ে। মানুষের আকাক্সক্ষা আকাশছোঁয়া। কিন্তু নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। লাগামহীন মূল্যস্ফীতিতে মানুষ দিশেহারা। চুয়াত্তরে দেশ পড়ে বন্যার কবলে। অনেক গ্রামে কৃষকের ভিটেমাটি, ফসলের খেত পানিতে তলিয়ে যায়। চারদিকে অনাহার। কাজ নেই। কাজ ও খাবারের সন্ধানে মানুষ ভিড় জমায় শহরে। শুরু হয় অনাহারে মৃত্যুর মিছিল। সেই সঙ্গে যোগ হয় মহামারি। সারা দেশ একটা দুর্যোগের মধ্যে পড়ে যায়। এই দুর্ভিক্ষে কত মানুষের মৃত্যু হয়েছিল, তা নিয়ে এখনো আলোচনা ও বিতর্ক হয়। বাংলায় পঞ্চাশের ভয়াবহ মন্বন্তরের পর এটাই ছিল সবচেয়ে বড় দুর্ভিক্ষ। পাশাপাশি সরকারের খাদ্য ব্যাবস্থাপনার ত্রæটি এবং মুষ্টিমেয় কিছু লোকের সীমাহীন লোভ মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়ে দিয়েছিল বহুগুণ। দেশের পত্র-পত্রিকায় এই দুর্ভিক্ষের নানান খবর বিস্তারিতভাবে ছাপা হয়েছে। পত্রিকাগুলো বেশিরভাগই ছিল সরকারের কিংবা সরকার-সমর্থক ব্যক্তিদের মালিকানায়। ব্যতিক্রম ছিল দৈনিক গণকণ্ঠ। গণকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত দুর্ভিক্ষসংক্রান্ত খবর ও মন্তব্যগুলো নিয়ে এই বইটি সাজানো হয়েছে। এটি আমাদের নিয়ে যাবে পাঁচ দশক আগের সময়টিতে।
জন্ম ১৯৫২, ঢাকায়। পড়াশোনা গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল, ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে। ১৯৭০ সালের ডাকসু নির্বাচনে মুহসীন হল ছাত্র সংসদের সহসাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বিএলএফের সদস্য হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। দৈনিক গণকণ্ঠ-এ কাজ করেছেন প্রতিবেদক ও সহকারী সম্পাদক হিসেবে। দক্ষিণ কোরিয়ার সুংকোংহে বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘মাস্টার্স ইন এনজিও স্টাডিজ’ কোর্সের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও অধ্যাপক। তাঁর লেখা ও সম্পাদনায় দেশ ও বিদেশ থেকে বেরিয়েছে বাংলা ও ইংরেজিতে লেখা অনেক বই।
বুদ্ধিবৃত্তিক অসততার একটা চূড়ান্ত নিদর্শন হয়ে থাকবে এই বই। ৫৬৮ পাতা বইয়ের মাত্র ২ পাতা মহিউদ্দিন আহমদের নিজের লেখা। ২ পাতা! শতকরা হিসাবে ০.৩৫% অর্থাৎ একশো ভাগের এক ভাগও না লিখে মহিউদ্দিন আহমদ এ বইয়ের লেখক! নাম" চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ " শুনে কেউ আশা করতে পারেন, লেখক হয়তো এ দুর্ভিক্ষের কারণ, পটভূমি, প্রভাব সবকিছুর সুলুকসন্ধান করবেন। কিন্তু বইজুড়ে আছে শুধু দৈনিক গণকণ্ঠ পত্রিকার দুর্ভিক্ষ সংক্রান্ত প্রতিবেদন! ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একই ধাঁচের প্রতিবেদন ( কোন এলাকায় দুর্ভিক্ষ, কোন এলাকায় কতোজন না খেয়ে মারা গেছে, সরকারি অব্যবস্থাপনা, লঙ্গরখানায় খাদ্য নেই, রাস্তাঘাটে লাশ পড়ে থাকছে), সঙ্গে অল্প সংখ্যক সম্পাদকীয়। এই নিয়ে ৫৬৮ পৃষ্ঠা! "লেখক" এমনকি সম্পাদকের কাজও করেননি। করলে অনেক পুনরাবৃত্তি এড়াতে পারতেন। বড়জোর তাকে সংকলক বলা যায়। বইয়ের গাত্রমূল্য ১২০০! ভাবা যায়?!! অনেকেই লেখকের নাম দেখে বই কিনে প্রতারিত হচ্ছে। এই ধরনের প্রতারণা কি অবাধে চলতেই থাকবে?