Sunil Gangopadhyay (Bengali: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়) was a famous Indian poet and novelist. Born in Faridpur, Bangladesh, Gangopadhyay obtained his Master's degree in Bengali from the University of Calcutta, In 1953 he started a Bengali poetry magazine Krittibas. Later he wrote for many different publications.
Ganguly created the Bengali fictional character Kakababu and wrote a series of novels on this character which became significant in Indian children's literature. He received Sahitya Academy award in 1985 for his novel Those Days (সেই সময়). Gangopadhyay used the pen names Nil Lohit, Sanatan Pathak, and Nil Upadhyay.
Works: Author of well over 200 books, Sunil was a prolific writer who has excelled in different genres but declares poetry to be his "first love". His Nikhilesh and Neera series of poems (some of which have been translated as For You, Neera and Murmur in the Woods) have been extremely popular.
As in poetry, Sunil was known for his unique style in prose. His first novel was Atmaprakash (আত্মপ্রকাশ) and it was also the first writing from a new comer in literature published in the prestigious magazine- Desh (1965).The novel had inspiration from ' On the road' by Jack Kerouac. His historical fiction Sei Somoy (translated into English by Aruna Chakravorty as Those Days) received the Indian Sahitya Academy award in 1985. Shei Somoy continues to be a best seller more than two decade after its first publication. The same is true for Prothom Alo (প্রথম আলো, also translated recently by Aruna Chakravorty as First Light), another best selling historical fiction and Purbo-Paschim (পূর্ব-পশ্চিম, translated as East-West) a raw depiction of the partition and its aftermath seen through the eyes of three generations of Bengalis in West Bengal, Bangladesh and elsewhere. He is also the winner of the Bankim Puraskar (1982), and the Ananda Puraskar (twice, in 1972 and 1989).
Sunil wrote in many other genres including travelogues, children's fiction, short stories, features, and essays. Though he wrote all types of children's fiction, one character created by him that stands out above the rest, was Kakababu, the crippled adventurer, accompanied by his Teenager nephew Santu, and his friend Jojo. Since 1974, Sunil Gangopadhyay wrote over 35 novels of this wildly popular series.
Death: Sunil Gangopadhyay died at 2:05 AM on 23 October 2012 at his South Kolkata residence, following a heart attack. He was suffering from prostate cancer for some time and went to Mumbai for treatment. Gangopadhyay's body was cremated on 25 October at Keoratola crematorium, Kolkata.
Awards & Honours: He was honored with Ananda Award (1972, 1979) and Sahitya Academy Award (1984).
ছবির দেশে কবিতার দেশে দিয়ে প্রথম মার্গারিট এর সাথে পরিচয় এরপর "মার্গারিট,ফুল হয়ে ফুটে আছে" আর সবশেষে "সুদূর ঝর্ণার জলে"
তিনটা বই এর কাহিনী more or less একই কিন্তু সুদূর ঝর্ণার জলে পড়ার পর মনে বারবার করে একটা প্রশ্ন জাগছিলো যে এই কাহিনী কি আসলেই সত্যি নাকি এটা মার্গারিট কে নিয়ে শুধুই সুনীলের কল্পনা?
যদি সত্যি হয় তাহলে সুনীল কোলকাতাতে ফেরার পর কিভাবে স্বাতী নামের মেয়েটাকে বিয়ে করে? আর দুজন যদি দুজনকে এতোটা পছন্দ করতে পারে তাহলে কেনো ওরা ২-৩ বছর পর আবার দেখা করলো না?(সে যদি পকেটে ১টাকা নিয়ে সারা কোলকাতা শহর বা ৮ ডলার নিয়ে বিদেশ যাওয়ার মত সাহস রাখে তাহলে এটা কি খুব কঠিন কিছু ছিলো সুনীল এর জন্য!) আর মার্গারিট ই বা কেনো হঠাৎ ই চিঠি লেখা বন্ধ করে দিয়েছিলো? মার্গারিট এর শেষ পরিণতি আসলে কি হয়েছিলো? জানি এর কোনটার ই উত্তর পাবো না কখনো!
এই প্রসঙ্গে এটা বোধহয় সুনীলের লেখা প্রথম বই যেটা শুরুতে পড়া উচিত ছিলো, সেটা না পড়ে আমি পড়লাম একবারেই শেষে! এজন্য মনে হয় পুরো কাহিনী মেনে নিতে আরো বেশি বেগ পেতে হচ্ছে আমার!
তবে কাহিনীর সত্যি মিথ্যের বিচার বাদ দিলে পুরোটা সময় মোহাবিষ্টের মত পড়ছিলাম। বইটা খুব প্রিয় একটা বই হয়ে থাকবে আজীবন।
মন খারাপ করা অসহ্য সুন্দর একটা বই। ছবির দেশে, কবিতার দেশে মার্গারিটের সাথে প্রথম পরিচয়, আর এই বইয়ে তাদের প্রথম পরিচয় নিয়েই লেখা। চমৎকার স্নিগ্ধ ভালবাসা তাদের, ফিকশনের মতো।
ছবির দেশে কবিতার দেশে পড়ার পর বাকি বইদুটো পড়ার জন্য মনটা আকুলিবিকুলি করছিলো! মার্গারিট, সুনীল আর এক অপূর্ব মন হুহু করা প্রেমকাহিনী! প্রেমকাহিনী কম স্বর্গীয় আখ্যান বেশি।
নীললোহিত ছদ্মনামে লেখা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের আমেরিকা আসা ও মার্গারিটের সাথে তার প্রেমের কাহিনী নিয়ে এ বই। অদ্ভূত সুন্দর। ভালোবাসায় ভরপুর। কারও যদি "ছবির দেশে, কবিতার দেশে" বইটা আগে পড়া থাকে, তাহলে "সুদূর ঝর্ণার জলে"-কে মনে হবে সেই বইয়ের একটা অংশ। তবে মার্গারিটের সাথে প্রেমের কাহিনীটুকু ভালো না লেগে কি উপায় আছে?
অপার্থিব রকমের ভালোবাসাময় একটা বই। সুনীল ও নেই মার্গারেট ও নেই কিন্তু সুনীলের লেখাগুলো রয়ে গেছে। একদম যেন কাছ থেকে প্রেমিক প্রেমিকাকে দেখলাম। সুনীলের জীবনের খুব কঠিন একটা সময়ে অথৈ জলে থৈ খুঁজে পাওয়ার মতই যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার সুযোগ মেলে। সেখানেই ঘটনাচক্রে পরিচয় হয় মার্গারেট ম্যাথিউ এর সাথে। এখানে সুনীল মার্গারেটের আবেগতাড়িত প্রতিটি মুহূর্ত পাঠকের মনকে প্রেম বিষাদের অম্লমধুর একটা অনুভুতি দিবে। মার্গারেটের ঝর্ণার জলের মতন গভীর প্রণয়ের মাঝে সুনীলের অবগাহন পাঠকের মনকে ভাবাবেগে ছেয়ে ফেলবে। মার্গারেট, সুনীল তোমাকে প্রথমে বলেছিল ছাই চাপা আগুন আর আমি বলব মার্গারেট, তুমি যেন একটু বেশি ই সুন্দর,এতটা সুন্দর যা সহ্য করা যায়না। মার্গারেট ম্যাথিউ যেন সৌন্দর্যের সংজ্ঞা।শেষ করার আগে সুনীলের কাছে প্রশ্ন রেখে যাব শেষটা কেন এরকমটা হলো, অন্যরকম হওয়ার কথা ছিল না?
এই বইয়ের নীললোহিত একটু যেন অন্যরকম। যেন সুনীলের সুষ্পষ্ট প্রতিচ্ছবি। যে সুনীলকে আমরা ছবির দেশে কবিতার দেশে দেখেছি, এই বইয়ের নীললোহিত যেন সেই সুনীল-ই। এবার নীললোহিত পাড়ি দেয় বিদেশে, পরিচিত হয় মার্গারিট নামের এক ফরাসী তরুণীর সাথে। তার সাথে তুমুল প্রেম নিয়েই কাহিনী মূলত। তবে নীললোহিত থাকবে আর টানাপোড়ন থাকবে না তা হয় নাকি! এটাতেও সেই টানাপোড়ন। ৩.৫/৫
"এরা শরীরকে এত প্রশ্রয় দেয় বলেই শেষ পর্যন্ত ভালোবাসতে শেখেই না" – সম্ভব হলে এই একটা লাইন রুচিবর্ধক জ্ঞান দেয়া মানুষ গুলোকে পড়াতাম। যারা শরীর ভাগাভাগির প্রশ্নে নিজের মত চাপিয়ে দেয় এবং তাদের সাথে তালমেলাতে না পারলেই নানান আখ্যা দেয়। আর বলতাম তোমার রুচিতে সবাই খাবে এমন গুমাথায় ঘুমাও কেমন করে? পৃথিবীর কারো রুচির ঠিকা নে'য়ার তুমি কেউ নও যেদিন বুঝবে সেই দিনই রুচিবাগীশ হবে বলে টানা এক চপেটাঘাত এই বই...
সুদুর ঝর্ণার জলে উপন্যাসটির লেখক নীললোহিত। এটা অনেকেই জানি যে আমাদের সবার প্রিয় কবি ও সাহিত্যিক শ্রী সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ছদ্মনাম ‘নীললোহিত’। নিতান্ত কর্মহীন জীবন নিয়ে, ভবঘুরে হয়ে বেড়ানো থেকে আচমকা পৌঁছে যাওয়া একেবারে আমেরিকার আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে গিয়ে এক নতুন অভিজ্ঞতা, নতুন অনুভূতি, এবং একই সাথে মাঝে মাঝে দেশের প্রতি টান থেকে মন কেমন করা- লেখকের জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ের খানিকটা তুলে ধরেছেন তাঁর এই উপন্যাসে।
মন মেজাজ যখন চূড়ান্ত রকমের খারাপ থাকে তখন আমি এই বইটা বের করে পড়ি। আজ অব্দি চার পাঁচবার পড়েছি। আজ আবার পড়লাম। বাড়ি থেকে চলে আসার পর শুধু একটা জিনিস ই খুব মিস করি। আমার বইগুলো। এখন হাত বাড়ালেই যা পাওয়া সম্ভব না। পিডিএফ পড়তে হয়।
ফেসবুকে এটার বিস্তারিত রিভিউ লিখেছিলাম। যখন প্রথমবার পড়েছিলাম। এটা আমার প্রেমিক আমাকে সাজেস্ট করেছিল। তার মাধ্যমেই মার্গারিটের সাথে পরিচয়। মার্গারিট ম্যাতিউ। যাকে আমি কখনো চোখে দেখিনি। শুধু "অর্ধেক জীবন", "সুদূর ঝর্ণার জলে", "ছবির দেশে কবিতার দেশে" আর "মার্গারিট ফুল হয়ে ফুটে আছে" তে যার ব্যাপারে পড়েছি। সেই শিশুসুলভ সরলতার কোঁকড়া চুলের নিজের সৌন্দর্য সম্পর্কে সম্পূর্ণ উদাসীন ফরাসী যুবতীকে আমি কখনো দেখিনি। তাও তাকে আমার বড় আপন লাগে। সাহিত্য জগতের আর কোনো চরিত্রের প্রতি আজ অব্দি কখনো আমার এতো মায়া জন্মে নি। কখনো বোধহয় জন্মাবেও না। সুনীলের মৃত্যু আর আমার জন্ম একই দিনে। তাই তার সাথে আমার কিছুটা জন্ম-মৃত্যুর সম্পর্ক। আমার মনে হয় আমি নিজে আসলে যেমন নিজেকে যদি সম্পূর্ণ সেভাবে প্রকাশ করতে পারতাম তাহলে যে চরিত্র আর আমার মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকতোনা তা হলো মার্গারিট।
মার্গারিটকে আমি ভালোবাসি। সে আমার সত্তার কোমল দিকটার প্রতিফলন যে জানে নিজস্বতা, আত্মমর্যাদা বজায় রেখেও কিভাবে মানুষকে বুক উজাড় করে ভালোবাসতে হয়।
"আমরা অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হয়েও এই একটা জায়গায় আটকে আছি। ভালোবাসার ওপর মার্গারিটের দারুণ বিশ্বাস। আমি আবার ভালোবাসা ঠিক কাকে বলে জানি না। ওর সঙ্গে আলাপ হবার পর আমি আর-কোনো মেয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা করিনি, মার্গারিটও অন্য কোনো ছেলের সঙ্গে একদিনও বাইরে কোথাও যায়নি, তবু এর নাম ভালোবাসা নয়? প্রথম যেদিন ওকে বলেছিলাম-তোমাকে ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি, প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসি-ও আমার মুখে হাত চাপা দিয়ে বলেছিল-বলো না, ও কথা বলো না, যদি মিথ্যে হয়? পৃথিবীতে সবচেয়ে দুঃখের জিনিস যদি ভালোবাসাটাও মিথ্যে হয়ে যায়।
আমি একটু আহত হয়ে বলেছিলাম, 'মিথ্যে কেন হবে? তুমি আমাকে একটুও ভালোবাসো না?'
ও বিষণ্ণভাবে উত্তর দিয়েছিল-কি জানি! সব সময় নিজেকে তো এই প্রশ্নই করছি। আশা করছি একদিন উত্তর পেয়ে যাব! একথা ঠিক, তোমাকে আমার খুব ভালো লাগে। তোমার এখানে আসতে, তোমার সঙ্গে কথা বলতে তোমার আদর পেতে আমার যতখানি ভালো লাগে, তেমন আর কিছুই আমার ভালো লাগে না এখন। কিন্তু ভালো-লাগা আর ভালোবাসা কি এক?
ভালো-লাগা আর ভালোবাসার সূক্ষ্ম তফাত আমি বুঝতে পারি না।"
নিতান্তই মধ্যবিত্ত পরিবারের, ভবঘুরে সুনীল ( নীললোহিত)। ভবঘুরে জীবনে আশীর্বাদ সরূপ হয়ে আসে সুদূর আমেরিকা যাওয়ার ডাক। প্রফেসর পল অ্যাঙ্গেলের আমন্ত্রণ, আমেরিকার আয়ওয়া নামক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়েটিভ রাইটিং প্রোগ্রামে অংশ গ্রহনের সুযোগ। বন্ধু-বান্ধবের উৎসাহে ও সহায়তায় প্রথম বারের মত পারি জমায় আমেরিকায়। সেখানে যাওয়ার পর পরিচয় হয় ফরাসি কন্যা ও কাবিতা প্রেমী মার্গারিট ম্যাথিউ। পরিচয়ের পর্ব দুই দিক থেকেই নাটকিয় ভাবে হলেও, তারপর পরে সম্পর্কের এক সুন্দর বর্ণনা দিয়েছেন লেখক "সুদূর ঝর্ণার জলে" বইটিতে। লেখক আমেরিকায় থাকাকালীন নতুন সব অভিজ্ঞতায় পাশে পেয়েছেন মার্গারিট কে। মার্গারিট ছিলেন ফরাসী সাহিত্য প্রেমি, আগা গোড়ায় একজন ক্যাথলিক, উদার নারি। মার্গারিটের সঙ্গ পেয়েই সুনীল ফরাসি সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ বারায়। তাই তো ফারাসি সাহিত্যের জানা অজানায় লেখক মন দিয়ে বসে ফারাসি কন্যা মার্গারিটকে। দুই জনের সাহিত্য ছিলো অন্তরে অন্তরে তাই তো ভাব জমে গিয়েছিলো।
শেষ দিকে কি জানি কি ভেবে, পরিকল্পিত ভবিষ্যৎ ফেলে রেখে মন স্থির করে নিজ দেশে ফিরে আসার। আর তাই তো ফিরার পথে মার্গারিটের সাথে প্যারিস ঘুরবার সুযোগ হাত ছাড়া করলেন না। কে জানে আর কখন আসা হয় কিনা?দীর্ঘ ১ মাস প্যারিস শহর পায়ে হেটে, ক্যাফে বসে,মিউজিয়াম ঘুরে বেড়ায়। জীবনের প্রথম বিদেশ ভ্রমণের পাঠ চুকিয়ে সুনীল চলল কলকাতায় আর মার্গারিট আমেরিকায়। সুনীলের ফের আমেরিকায় যাওয়ার সম্ভবনা না থাকলেও মার্গারিট আসবে কলকাতায় এমনই কথা ছিলো।
লেখক তার জীবনের এক সুন্দর সময়ের এবং প্রথম জীবনের প্রেমের গল্পই তুলে ধরেছেন "সূদুর ঝর্ণার জলে" বইটিতে।
যারা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের "ছবির দেশে, কবিতার দেশে" পড়েছেন তাদের কাছে মার্গারিট ম্যাতিউ অপরিচিত হবার কথা নয়। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জীবনের প্রথম অনুরাগ ছিলেন মার্গারিট। "ছবির দেশে কবিতার দেশে" বইটি খুবই তথ্যবহুল। ইতিহাস এবং ভ্রমণকাহিনী নিয়ে তৈরি এই বইটিতে যদি মার্গারিট ৮০ খানেক পাতা দখল করে আছে, তবুও, তার প্রতি লেখকের প্রগাঢ় ভালোবাসার ছাপ খুঁজে পেতে আমাকে বেশ বেগ পেতে হয়েছিলো বৈকি! সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ফরাসী দেশ ভ্রমণের বেশ কয়েকটি অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা "ছবির দেশে, কবিতার দেশে" হলেও "সুদুর ঝর্ণার দেশে" শুধু মার্গারিট ম্যাতিউকে নিয়ে লেখা।
বইটি একটি প্রেমের উপন্যাস। সুনীল বাবুর হাস্যরসবোধের বেশ কিছু প্রমাণও মিলে! ভারি মজার মজার কিছু লাইন উনি ব্যবহার করেছেন প্রথমাংশে। বাকিটুকু পুরোটাই মার্গারিটের প্রতি তার অসমাপ্ত, অকৃত্রিম এবং শুদ্ধ ভালোবাসা নিয়ে লেখা। আমি "ছবির দেশে, কবিতার দেশে" আগে পড়েছি, একটা বিষয় খুবই লক্ষণীয়, উনি যে সমস্ত কথা বিস্তারিত উল্লেখ করেছেন সেই বইয়ে তা এই বইয়ে বিস্তারিত আলাপ করেননি। যে সব কথা এক লাইনে শেষ করেছেন সেই বইয়ে তা এই বইয়ে পাতার পর পাতা বর্ণনা করা আছে। পাঠকদের এক মুহূর্তের জন্যও মনোযোগহীনতা হওয়ার সম্ভবনা নেই বললেই চলে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা নিয়ে আলাদা করে কিছু বলার নেই। কোনো বাড়তি শব্দ ব্যবহার করেননি। সব কিছু সুন্দর, সাবলীল, গোছানো। এতোই স্বতঃস্ফূর্ত যে এই বইখানা আমি মোটামুটি এক বসায়ই শেষ করেছি।
ব্যক্তিগত মতামত যদি বলতে হয়, আমি ভেবেছিলাম প্রণয়ের উপন্যাসের সঙ্গে আমার যোগসূত্র বোধ হয় বহু আগেই ছিন্ন হয়েছে, তবে এই বইটি পড়ার পর আমি এখন ভিন্ন মত পোষন করি। আরেকটি বিষয় আমার হৃদয়কে পীড়া দেয় তা মার্গারিটের পরিণতি। এই জগৎ খুব নিষ্ঠুর।
খুব খাপছাড়া লেখা হয়ে যাচ্ছে!!
সুনীল বাবু যদি বেঁচে থাকতেন, ওনার কাছে আমার একটাই প্রশ্ন থাকতো, যাকে ছাড়া এক মুহূর্ত কাটানো অসম্ভব হয়ে পরেছিলো তার হারিয়ে যাওয়া কিংবা তাকে ছেড়ে যাওয়ার দুঃখ হৃদয়কে কেমন করে সইতে বাধ্য করতে হয়?
"পায়ের উপর লুটিয়ে পরছে ঢেউ। মনে পরলো, কাল রাতে একজন জিগ্যেস করেছিলো, কবে ফিরবে। আর তো কোথাও কেউ আমার জন্য প্রতীক্ষা করে নেই।"
"জীবনে সব সময়ই কিছু একটা খুঁজে বেড়ানো দরকার। পেয়ে গেলে খোঁজাটা থেমে যায় - সেটাই বিরক্তিকর!!"
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ভ্রাম্যমাণ, বোহেমিয়ান সত্তার নাম, নীললোহ��ত। নীলু সাতাশ বছর বয়সি এক বেকার যুবক, যার বয়স বাড়ে না। অসংখ্যজন এই চরিত্রটির সাথে হুমায়ূন আহমেদের লেখা হিমুর তুলনা করেছেন। আমি সেই তুলনায় যাবো না, কারণ এটি আমার নীললোহিতের পড়া প্রথম লেখা। যে কোন বিষয়ে মতামত দিতে হলে আগে সেটা অবশ্যই পুরো পড়া উচিত।
এই উপন্যাসে নীলু আমেরিকার আইওয়া শহরের বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্য - বিষয়ক কাজ করতে আসে। আমেরিকা বেড়ানোর অভিজ্ঞতা, সেখানকার ন���না রকম মানুষদের কথা এই লেখায় উঠে আসে। কিন্তু এই উপন্যাসের মূল উপজীব্য, মার্গারিট ম্যাতিউ। সুনীলবাবুর লেখায় তার ফরাসি বান্ধবী মার্গারিটের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে বারবার। কোথাও প্রচ্ছন্ন ভাবে, কোথাও স্পষ্ট ভাবে। নীলু এবং মার্গারিটের প্রেমপর্ব এই উপন্যাসটিকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়।
ফ্রান্সের এক গ্রামের মেয়ে মার্গারিট। তাঁর পরিবার রোমান ক্যাথলিক, গোঁড়া। যদিও সে গোঁড়া নয়, তবুও তৎকালীন আমেরিকায় অন্যান্য মেয়েদের থেকে সে অনেকটাই আলাদা। অপরিসীম তার সংযম ক্ষমতা। অন্যান্য ক্ষেত্রে সে সংযমী না হলেও, সে ভালোবাসা ছাড়া, শারীরিক মিলনে বিশ্বাসী নয়। সে ভালোবাসে কবিতা। নীলুর সাথে তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে আপোলিনেয়ারের কবিতাতে শকুন্তলার প্রসঙ্গে। নীলু তাকে শকুন্তলার গল্প শোনায়। সে বলে তার দেশের এক ঝর্নার কথা, যার জল সবথেকে পবিত্র, পরিষ্কার। মার্গারিট যেন সেই ঝর্নার প্রতীক।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের স্বাদু গদ্যে, ভ্রমণ এবং প্রেমে পরিপূর্ণ, অপূর্ব এক কাহিনী এই গ্রন্থ। অবশ্যপাঠ্য।
শেষ ভালোবাসা দিয়েছি তােমার পূর্বের মহিলাকে এখন হৃদয় শূন্য, যেমন রাত্রির রাজপথ
শেষ পৃষ্ঠা বন্ধ করার পর আচম্বিতে এই লাইন দু'টি পদ্মের মতো ফুটে উঠল বুকের মধ্যে। বইটি আমার অন্তরমহলে কি যেন ভেঙে দিয়েছে — আর কোনোদিনই হয়ত এই রেশ কাটিয়ে উঠতে পারব না।
এর আগে নীললোহিতের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে তার লেখা ছোটো ছোটো কলামের মাধ্যমে। এই প্রথম তার উপন্যাসে অবগাহন।
নীললোহিতের লেখার একটি প্রধান সুবিধা, তার ঝরঝরে ভাষা। একবার পড়তে শুরু করলে বোঝাই যায় না কতটা সময় আর কতগুলো পৃষ্ঠা পেরিয়ে গেছি। হেমন্তের বাতাসের মতো সে যেমন নিঃশব্দে বুকে প্রবেশ করে, তেমনি নিঃশব্দে সে চলে যায় এক গভীর ছাপ রেখে।
পরিচয় হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রাম্যমাণ এক আনকোরা, সাহিত্য-প্রেমী বাঙালি ছেলের সঙ্গে। পরিচয় হলো এক মুক্ত, স্বাধীন, (ক্ষেত্রবিশেষে) স্বেচ্ছাচারী এক প্রজাতির সঙ্গে। এবং পরিচয় হলো মার্গারিটের সঙ্গে, যে হয়ত এই কলঙ্কিত পৃথিবীতেও ভালবাসার মানদণ্ডকে তুলে রেখেছে অনেক উঁচুতে; যার চোখের অন্তরালে রয়েছে সুদূর ঝর্ণার স্রোত।
অবশ্যই এই একটি উপন্যাস — নায়ক, নায়িকা, পটভূমি, প্রেম, বিরহ — ষোলো কলায় পূর্ণ। তবে তারও উর্ধ্বে এই লেখার মধ্যে যেটি ফুটে উঠতে দেখি, তা যৌবনের উচ্ছৃঙ্খল। যে-চালিকাশক্তি এই উপন্যাসটিতে ইন্ধন যুগিয়েছে, তা বুকের আগুন। সে আগুন ধ্বংসাত্মক নয়, (হ্যাঁ, হয়ত যা কিছু প্রাচীন, বিরূপ, যা কিছু অচল তাদের অবশ্যই পদদলিত করে), সে চঞ্চল বেগে এক নতুন দিশা খুঁজছে। সেখানেই যেন একটি বাঙালি ছেলে, একটি ঔপনিবেশিক জনপদ, ও একটি নতুন দেশ এক হয়ে যায়।
'ছবির দেশে কবিতার দেশে' পড়বার পর থেকেই সুনীলের প্রতি ভক্তি বেড়েছে, সেই সূত্র ধরেই মার্গারিটকে নিয়ে লেখা 'সুদুর ঝর্ণার জলে' বইটি অনেকদিন থেকে খুজছিলাম।
আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্য নিয়ে গবেষণার জন্যে বিদেশে থাকাকালীন সময়ে লেখকের পরিচয় ঘটে ফরাসী প্রবাসী মার্গারিটের সঙ্গে। সেই স্মৃতিকথার বিস্তারিত অংশ 'ছবির দেশে কবিতার দেশে' বইটিতে পাওয়া যায়। 'সুদুর ঝর্ণার জলে' বইটি সম্ভবত তার অনেক আগের লেখা কেননা এই বইটির রচনাকালে লেখক তার ছদ্মনাম 'নীললোহিত' হিসেবে লেখালেখি করতেন।
'ছবির দেশে কবিতার দেশে' পড়া থাকলে এই বইখানি না পড়লেও চলে, তেমন চমকপ্রদ নতুন কিছু এতে পাইনি। বরং মার্গারিটের সঙ্গে পরিচয় পর্ব এবং সময়কাল নিয়েই লেখা বইখানি, সেদিক থেকে 'ছবির দেশে কবিতার দেশে' অনেক বেশি বিস্তারিত, সাহিত্য-শিল্প-সংস্কৃতির এক অসাধারণ লেখনী।
একই লেখকের দু'টো বইয়ের তুলনা করতে বসবার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে ছিলো না তবে মার্গারিটের প্রতি আগ্রহবশত ওই বইটি পড়বার পর এইটি পড়লে কিছুটা আশাহতই হতে হবে। মূলত এই বইটি অপেক্ষাকৃত অনেক কম জনপ্রিয় হওয়ায় বেশিরভাগ পাঠকই প্রথমে 'ছবির দেশে কবিতার দেশে' পড়েন এবং পরে এটির খোঁজ করেন। তবে পূর্বতন বইটি পড়া না থাকলে এইটি প্রথমে পড়লে বেশ ভালো লাগবে আশা করি, এবং এরপর 'ছবির দেশে কবিতার দেশে' পড়েও বেশ উপভোগ করতে পারবেন।
তখন শৈশব পেরিয়ে কৈশোর। শরীর মনে সাংঘাতিক ভাঙচুর। হু হু করে পালটে যাচ্ছে সবকিছু। কোটি কোটি প্রশ্ন সারাক্ষণ ঘুরপাক খাচ্ছে মনের মধ্যে। কোনো উত্তর নেই। নিদারুণ পাপবোধ ছিঁড়ে দিচ্ছে পুরো স্নায়ুতন্ত্রকে। কেন এমন হয়?
পড়তে মন বসেনা। গল্পের বই পড়তে গেলেও খোলা পাতা উল্টে যাই। কিছু মাথায় ঢোকেনা। লাইব্রেরী থেকে বাড়িতে নিয়মিত বইয়ের আনাগোনা। উল্টে পাল্টে দেখছি সেগুলোও। কিছু বইয়ে খালি কথা আর কথা। কি বিরক্তিকর। একদিন হাতে এল এই বইটা। নীললোহিত যে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ছদ্মনাম তা ততদিনে জানা।
পড়তে পড়তে অনেকখানি শেষ করে ফেলেছিলাম। সুনীল আর মার্গারিটের আকুল করা প্রেমের গল্প। ইয়ে তারপরেই কহানী মে টুইস্ট। হাফইয়ার্লিতে অঙ্কে একশোয় তেইশ আর সব গল্পের বই পড়া বন্ধ। যেদিন আমার সব ভেসে গেল বয়স তখনও পনেরোতে আটকে।
তারপর একটা একটা সিঁড়ি টপকে টপকে এগোতে এগোতে সাতাশের খপ্পরে। শেষ করে ফেলা একের পর এক নীললোহিত সমগ্র। তবে অবশ্যই পনেরোর আকুলতা আর সাতাশের অভিজ্ঞতা এক নয়।
সুনীলের প্রথম সত্যি প্রেম বোধহয় এই মার্গারেট ম্যাতিউ! যখন আমি ছবির দেশে কবিতার দেশে পড়েছিলাম, তখনই এঁর কথা জেনেছিলাম। এরপর আরো অনেক লেখায় মার্গারেট ছিলেন। ছবির দেশে কবিতার দেশেতে এই বইটির প্রায় সমগ্র কাহিনীই আসলে পড়া হয়ে গেছে। আবেগ-উচ্ছ্বাস-প্রেমে পরিপূর্ণ এই বইটি যদি আমি আগেই পড়তাম, তবে আরো অনেক বেশি ভালো লাগতো মনে হয়। কাহিনীটুকু জানা থাকায় হয়তো একটু কম ভালো লাগলো। তবুও সুনীলের লেখা সবসময়ই ভালো লাগে, লেখার স্টাইলটাই অমন। তাই জানা কাহিনীও এক টানেই পড়ে ফেললাম।
সমরেশ মজুমদারের কালবেলা শেষ করলাম কিছুদিন আগে।সেখানে গল্প জুড়ে রাজনীতি, বিদ্রোহ, বিপ্লব ইত্যাদি নানান বিষয় থাকলেও এসবের উর্ধে গিয়ে বিশেষভাবে হৃদয়ে গভীর ছাপ ফেলেছে যে চরিত্রটি তা হলো মাধবীলতা। এর মধ্যে আবার সুনীলের "ছবির দেশে কবিতার দেশে" আর "সুদূর ঝর্নার জলের" মাধ্যমে পরিচিত হলাম মার্গারিট ম্যাতিউয়ের সাথে। এতটা স্বচ্ছ, স্নিগ্ধ এবং মায়ায় ভরা দুটি চরিত্র। এককথায় অবর্ণনীয় অনুভূতি।
অসহ্য রকমের মন খারাপ হওয়া চমৎকার সুন্দর ও নির্মল এক প্রেমের গল্প। মার্গারেট কে প্রথম পড়েছি 'প্রথম আলো' তে স্বামী বিবেকানন্দের শিষ্য হিসেবে। আজ আবার পড়লাম। কেন জানি মনে হয়েছে এটা সুনীলের জীবনের সত্য ঘটনা। ভালবাসা ভালবাসে শুধুই তাকে,ভালবেসে ভালবাসা বেঁধে যে রাখে।
The endless possibilities & the suffocating impossibilities of early youth. Felt experiences of the autobiographiCAL... which is neither fact nor fiction...