চমকে দেবার মতনই একটির-পর-একটি উপন্যাস লিখে চলেছেন রমাপদ চৌধুরী। শুরু সেই ‘খারিজ’ থেকে। বাংলা সাহিত্যের সম্পূর্ণ আলাদা একটি পথ তিনি নিজেই তৈরি করে নিয়েছেন। তাঁর একেকটি উপন্যাস সে-পথের মাইলস্টোন। প্রত্যেকটি নতুন চমকে ভরা। অথচ সে-চমক অস্বাভাবিক ঘটনা দিয়ে তৈরি। কোনও কাহিনির কারণে নয়। চমক এই জন্যে যে, ঠিক এমনভাবে, এমন সূক্ষ্ম, নিখুঁত ও জীবন্তভাবে, আমাদের মনের ভিতরের চেহারাটা তাঁর মতো করে কেউ যেন তুলে ধরেন না। আমাদের মুখ আর মুখোশ, জোড় আর জোড়াতালি, ফাঁক আর ফাঁকির অবিকল প্রতিফলন তাঁর উপন্যাসের আয়নায়।‘বাড়ি বদলে যায়’-তেও ঠিক একই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়। নিজস্ব একটুকরো মাথাগোঁজার ঠাই মধ্যবিত্ত জীবনের সাধ-স্বপ্নের চেহারাটা যেমন একদিকে, আরেকদিকে সেই স্বপ্নের লক্ষ্যে পৌঁছনো মানুষের চেহারা বদলের ছবিটিকেও আশ্চর্যভাবে তুলে ধরেছেন রমাপদ চৌধুরী। এর চরিত্রগুলো হুবহু আমরাই। আমি, আপনি, চেনাশোনা আরও অনেকে।সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কারে ভূষিত
রমাপদ চৌধুরীর জন্ম ২৮ ডিসেম্বর ১৯২২। কৈশোর কেটেছে রেল-শহর খড়গপুরে। শিক্ষা: প্রেসিডেন্সি কলেজ। ইংরেজি সাহিত্যে এম.এ.। গল্প-উপন্যাস ছাড়াও রয়েছে একাধিক প্রবন্ধের বই, স্মৃতিকথা এবং একটি অত্যাশ্চর্য ছড়ার বই। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পেয়েছেন সাম্মানিক ডি লিট, ১৯৯৮৷ ১৯৮৮-তে পেয়েছেন সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ সাহিত্য সম্মান জগত্তারিণী স্বর্ণপদক ১৯৮৭। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শরৎচন্দ্র পদক ও পুরস্কার ১৯৮৪। শরৎসমিতির শরৎচন্দ্র পুরস্কার ১৯৯৭। রবীন্দ্র পুরস্কার ১৯৭১। আনন্দ পুরস্কার ১৯৬৩৷ তাঁর গল্পসমগ্র বইটিও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃক পুরস্কৃত। হিন্দি, মালয়ালাম, গুজরাতি ও তামিল ভাষায় অনূদিত হয়েছে তাঁর বহু উপন্যাস ও গল্প। প্রকাশিত হয়েছে বহু রচনার ইংরেজি, চেক ও জার্মান অনুবাদ। তিনিই একমাত্র ভারতীয় লেখক, যাঁর গল্প সংকলিত হয়েছে আমেরিকা থেকে প্রকাশিত লিটারারি ওলিম্পিয়ানস গ্রন্থে, অনুবাদ করেছেন শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনটন বি সিলি৷ উপন্যাস খারিজ প্রকাশিত হয়েছে ইংরেজিতে।
আমরা প্রায় মানুষ ভাড়া-বাসাতে থাকি তাইনা? এই বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে গেলে কম সমস্যাতে পরতে হয়না কিন্তু! ভাড়া দিতে একটু দেরি হলেই ভাড়িওয়ালার কত কথা! তাছাড়া আরো কত কি রকমের সমস্যা তো লেগেই থাকে। তাছাড়া আশপাশের প্রতিবেশী এক হয়ে বাড়িওয়ালা নিয়ে গাল মন্দ করার মতন শান্তি যেন আর নাই, এসব ভাড়াটিয়াদের তখন আপন আত্মীয়ের চেয়ে কম মনে হয়না..... আবার এদের মধ্যে কিছু আমার মা-এর মতন ভাড়া বাসাতে থাকতে থাকতে নিজ বাসা করার স্বপ্ন দেখতে থাকেন, এক দীর্ঘশ্বাসের সাথে বলেন "নিজে যে কবে একটা বাড়ি করবো, কবে নিজের বাসাতে গিয়ে থাকবো" এমন একটা টপিকে বই হলে কিন্তু মন্দ হয়না!!
আসলে বইটা পড়ার সময় আপনি নিজের সাথে অনেককিছু রিলেট করতে পারবেন। কারণ গল্পটা আপনার, আমার, সবার। জয়েন্ট ফ্যামিলিতে থাকা, বাসা-ভাড়া থাকতে গিয়ে বাড়িওয়ালার সাথে সমস্যাতে পড়া, প্রতিবেশী/অফিসের কলিগের সাথে বাড়িওয়ালা নিয়ে গাল মন্দ করা এসব তো আমাদের ই গল্প!!!!
একটা লোকের নিজ একটা বাসা করার পরে দেখবেন তার সম্মান কি পরিমাণে বেড়ে যায়। যার কিনা কেউ খবর নিতো না, তখন সেই মানুষটি হয়ে ওঠে সবার আলোচনার মধ্যমণি। মালিকানা সাপেক্ষে একটা বাড়ি কিন্তু সমাজে অনেক পার্থক্য গড়ে দেয়
আসলে গল্পটা আমাকে একদম আচ্ছন্ন করে রেখেছিল। এক এক জায়গাতে বেশ খারাপ লাগছিল!! আসলে বাড়ি বদলে যাওয়া মানে শুধু অন্য বাড়িতে গিয়ে বসা না, এর সাথে আমাদের আচার-আচরণ, চরিত্রও বদলে যায়! যে ছেলেটি ঘর মাতিয়ে রাখত, সকলের সাথে মিশে থাকতো সেই ছেলেটি আজ বিয়ে করার পরে ভাড়া বাসা নিয়ে আলাদা থাকতে চাইছে। আহ....!!
আর লেখকের সাথে পরিচয় আমার এই বই দিয়ে। তিনি বেশ ভাল লেখেন! চলিত ভাষার সাথে আধুনিকতার ছোয়া আছে তার লেখাতে। কিছু কিছু জায়গাতে এত ভাল লাগছিল যে কয়েকবার করে পড়ছিলাম। খুব সুন্দর লেখা, পড়ে বেশ ভাল লেগেছে!
সাধারণ মধ্যবিত্তদের মাঝে ভাড়াটে/ভাড়াটিয়া শব্দটি কত পরিচিত!
পাড়ায় কেউ নতুন কাউকে দেখলেই, - 'তোমরা থাকো কোথায়?' -'অমুকের বাসায় ভাড়া থাকতে এসেছি।' এখানে নতুন; কেউ তো আর চিনবে না। তাই বাড়িওয়ালার নামটাই ভরসা :D
গ্রাম ছেড়ে মফস্বল এলাকা কিংবা শহর এলাকার দিকে গেলে দেখা যায় কত শত মানুষ ভাড়া বাসায় থাকে। কেউ কাজের জন্য থাকতে এসেছে আবার কেউ উন্নত জীবনযাত্রা কিংবা সন্তানদের জন্য মানসম্পন্ন পড়াশোনার ব্যবস্থা করতে এসেছে।
উপন্যাসটিতে ধ্রুব ও প্রীতি দম্পতি এই সাধারণ মধ্যবিত্ত ভাড়াটে সম্প্রদায়েরই প্রতিনিধি। ধ্রুব'র পরিবারে ছিল মা,বাবা,দুই দাদা, তাদের স্ত্রী-সন্তানেরা আর ছোট বোন সুমিতা। তবে ওরা যে বাসাটায় ছিল সেখানে এত মানুষের থাকাটা আরামদায়ক ছিল না, ঝগড়া হতো মাঝেমধ্যে। ফলে আরেকটু উন্নত জীবনযাত্রার আশায় সবাইকে রেখে ধ্রুব আর প্রীতি তাদের ছোট ছেলেটিকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে আলাদা ভাড়া বাড়িতে থাকতে। গল্প তো এই-ই ! বাড়িওয়ালার নোটিশ, পানির লাইন বন্ধ করে দেয়া, বাড়তি ভাড়া, অন্য বাসা খোঁজার আতঙ্ক, অন্য ভাড়াটেদের প্রতি সহানুভূতি, প্রতিবেশী ভাড়াটেরা মিলে প্রটেস্ট করতে যাওয়া আর পাশাপাশি ভাড়া বাড়ি বদল করে একটা স্থায়ী বাড়ির স্বপ্ন দেখা!
বড় হলে মা-বাবার সাথেও সম্পর্কটা যেন কেমন কেমন হয়ে যায়। প্রেমিক-প্রেমিকা ঘর বাঁধার পরে যেমন তাদের সম্পর্কে বিরাট পরিবর্তন আসে, একটা স্থবিরতা আসে; আগের মতো সেই চঞ্চলতা আর থাকে না এমনকি অনেকেই অভিযোগ করেন সম্পর্ক আর আগের মতো নেই, উলটো হয়ে গেছে। এই যে সম্পর্কে পরিবর্তন আসে, তবে কি বাড়ি বদলের সাথে সাথে কি মানুষের ব্যক্তিত্বেরও পরিবর্তন হয়!? ভাড়াটে থেকে কি সত্যিই তারা সেই পানির লাইন অফ করে দেয়া বাড়িওয়ালাই হয়ে যান??
দুই দিন আগে "ছাদ" পড়েছি আর আজকে "বাড়ি বদলে যায়"। ভদ্রলোকের লেখনী সুন্দর। এ দুটি বইয়ে মধ্যবিত্তদের নিয়ে বেশ লিখেছেন তিনি।
ব্যাংক থেকে ফেরার সময় গলির মুখে থমকে দাঁড়ায় ধ্রুব। একটা জীর্ণ বাড়ির ধারে ছোট ছোট ছেলেমেয়েকে সাথে নিয়ে বিহবল অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে এক মহিলা, চোখেমুখে অপমান আর হতাশার স্পষ্ট ছাপ। ফুটপাতে স্তূপ হয়ে পড়ে আছে সংসারের যাবতীয় আসবাব, কেউ যেন ঘৃণা আর তাচ্ছিল্যভরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে। খাট, আলমারি, ড্রেসিং টেবিল; ত্রিভঙ্গ হয়ে পড়ে আছে নারকেল ছোবড়ার পুরু গদি। চারপাশ ঘিরে বালতি, মগ, হাড়িকুড়ি। উল্টে পড়ে থাকা অ্যালুমিনিয়ামের পাতিলে আধসিদ্ধ ভাত-তরকারি দেখে বোঝা যায় খালিপেটেই বেরিয়ে পড়তে হয়েছে ওদের। আশেপাশে জড়ো হয়ে উৎসুক জনতা, তাদেরই একজনের মুখে শুনতে পাওয়া যায়; "ভাড়াটে উচ্ছেদ!"
হয়তো বাড়ি ভাড়া বাকি পড়েছিল, অথবা অন্য কোন অপরাধ! কে জানে! বাড়িওয়ালা এতো বিবেকহীন হয় কীভাবে?
সরকারি অফিসের ছাপোষা কর্মকর্তা ধ্রুব, স্ত্রী প্রীতি আর একমাত্র ছেলে টিপুকে নিয়ে একটা তিন কামরার বাড়িতে ভাড়া থাকে। বাড়িওয়ালা রাখালবাবু পূর্বপরিচিত। বাবা মা, দাদা বৌদিদের সাথে মিলে দীর্ঘদিন যে বাড়িটায় ওরা ভাড়া থেকেছে, সেই পাড়ার একটা বাড়িতেই রাখালবাবু ভাড়াটে ছিলেন। ভাগ্যের ফেরে আজ বাড়ির মালিক, ব্যবসা ফুলে ফেপে উঠলে যা হয় আরকি।
নিজের পরিবারকে যৌথ পরিবার বলেই ভাবতো ধ্রুব। প্রীতিকে বিয়ের পর কিছু বিষয়ে বনিবনা না হওয়ায় আর স্থান সংকুলানের অভাব বোধ করায় একসময় আলাদা হয়ে এই তিন কামরার বাড়িতে এসে ওঠে। হ্যা, এখানে স্বাধীনতা আছে সত্যি। তবে সেই যে একটা রক্তের টান, সম্পর্কের মাধুর্য-সেই জিনিসটার বড়ই অভাব। থেকে থেকে বড় অভাব বোধ হয় সেই সহজ-স্বাভাবিক সম্পর্কগুলোর কথা ভেবে।
মধ্যবিত্ত বাবা নিজের বাড়ি করার কথা ভাবতে পারেননি কখনও, দুই দাদাও তাই। ধ্রুবও পারতো না। আলাদা বাড়িতে আসার পর প্রীতিই ওর মাথায় ঢুকিয়ে দেয়, নিজেদের বাড়ি দরকার; তা দু' কামরারই হোক না কেন!
অফিসে সহকর্মীদের সাথে বাড়িওয়ালা ভাড়াটে সম্পর্ক নিয়ে নানারকমের গল্প হয় ধ্রুব'র। বাড়তি খরচের এই যুগে হাজার টাকা দিয়েও ভালো বাড়ি ভাড়া পাওয়া যায় না, সেখানে সাড়ে চারশ টাকায় ধ্রুব তিন কামরার বাড়ি নিয়ে থাকছে - এ কথা যেন বিশ্বাসযোগ্য নয়।
ভাড়াটেদের সাথে ভাড়াটেদের একটা আত্মিক সম্পর্ক থাকে। ভাড়া বাড়ানোর জন্য বাড়িওয়ালা যখন জলের সাপ্লাই বন্ধ করে দেয়, অথবা নিত্য দুর্ব্যবহার শুরু করে, তখন তারাই তো একে অপরের দু:খের ভাগীদার। অবাক হয়ে ধ্রুব একদিন আবিষ্কার করে, এতদিন অন্যদের কাছে যা শুনেছে নিজের ঘাড়েও বাড়িওয়ালার সেই আচরণগুলো চেপে যাচ্ছে ইদানীং।
ব্যাংক লোন তুলে পিসেমশাইয়ের সহযোগিতায় খানিকটা জমি কেনার ব্যবস্থা করে ফেলে ধ্রুব। একতলায় দুই কামরা করার বেশি পরিকল্পনা ছিল না, তবুও কীভাবে কীভাবে যেন দোতলা উঠে যায় বাড়িটার। নিচতলা বরাদ্দ হয় নতুন কোন ভাড়াটের জন্য। স্বপ্নের মতো ইট সিমেন্টের বাড়িটা দাঁড়িয়ে যায় চোখের সামনে। রাতারাতি 'ভাড়াটে' তকমা ঘুচে যায় ধ্রুবর কাঁধ থেকে।
নতুন বাড়িতে উপস্থিতি ঘটে পাড়ার মেয়ে-বৌদের। ��ন্যের বাড়িতে ভাড়া থাকা এই সম্প্রদায়ের সাথে সখ্যতায় বিরক্ত হয় ধ্রুব। প্রীতিকে ওদের সাথে মিশতে নিষেধ করে দেয়। হাজার হোক, এই কুচক্রি ভাড়াটেদের কাজ তো একটাই: বাড়িওয়ালার বদনাম। এই ষড়যন্ত্রমূলক আচরণে ঘোট পাকানো কি ওদের শোভা পায়?
১৯৮৮ সালে সাহিত্য অকাদেমি পুরষ্কারপ্রাপ্ত এই উপন্যাস। স্বল্প পরিসরের হয়েও পাঠকের মনে দাগ কেটে যায় গভীরভাবে।
বাড়ি বদলে যায়,সুন্দর একটা বই।বাড়িয়ালা - ভাড়াটিয়ার মধ্যে যে বিভেদ তা খুব সুন্দর করে তুলে ধরেছেন রমাপদ চৌধুরী। ধ্রুব একদিন রাস্তায় এক ভাড়াটে পরিবারকে দেখতে পায়,যাদের বাড়িয়ালা খুব নিদারুণ ভাবে বাসা থেকে বের করে দিয়েছেন। বিষয়টি ধ্রুবের মনে দাগ কাটে কারণ সে নিজে একজন ভাড়াটে।সে বাড়িয়ালাদের মানুষই মনে করেনা,তার মতে বাড়িয়ালারা খালি ভাড়াটিয়াদের ছোট করে দেখেন। বাড়িয়ালা-ভাড়াটিয়ার সম্পর্ক ছাড়াও উপন্যাসে আরো তুলে ধরা হয়েছে কীভাবে যৌথ পরিবার ভেঙে একক ফ্যামেলি গড়ে উঠে কীভাবে মানুষ একটি ঘর থেকে একাধিক ঘরের চাহিদা অনুভব করে পরে নিজস্ব বাড়ির। প্রথমে, ধ্রুব বাবা,মা,ভাই, ভাবি তাদের সন্তান নিয়ে এক বাড়িতে থাকতো কিন্তু দিনে দিনে পরিবারের সদস্য বাড়ে তখন তাদের কাছে এই বাড়ি অশান্তির নীড় মনে হয়।তাই ধ্রুব নতুন ফ্ল্যাট ভাড়া নেয়। উপন্যাসটি অনেক মনঃস্তাত্ত্বিক বিষয় তুলে ধরেছে।মানুষ ভাড়াটিয়া থাকলে তার ব্যবহার একরকম আবার সে মানুষটি যখন বাড়িয়ালা হয় তখন সে অন্যরকম। সময়ের ব্যবধানে খুব তাড়াতাড়ি ধ্রুব দোতালা বাড়ির মালিক হয়।এখন ধ্রুব কী করবে!!সে কী বাড়ি ভাড়া দিবে!! সেটা তো সময় বলে দিবে।কিন্তু ধ্রুবের এখন পাড়ার ভাড়াটিয়া লোকদের সাথে মিশতে ভালো লাগে না,সে মিশে বাড়ির মালিকদের সাথে। সত্যি মানুষের মন বড়ই বিচিত্র!! মানুষ যখন নিচ থেকে উপরে উঠে সে তার শিকড় ভুলে যায় ভুলে যায় মানবিকতা। খুব ভালো লেগেছে উপন্যাসটি। রমাপদ উপন্যাসের ধ্রুবকে দিয়ে খুব সুন্দর ভাবে বাড়িয়ালা -ভাড়াটিয়ার সম্পর্ক তুলে ধরেছেন।মোটকথা,অনেকদিন পরে ভিন্ন ধাঁচের একটা বই পড়লাম,আর সেটা বেশ ভালো আর উপভোগ্য ছিল।
আগে রমাপদ চৌধুরীর লেখার সাথে পরিচয় ছিলনা। সম্প্রতি তিনি মারা গেছেন৷ আলোচনা চলছে তাঁকে নিয়ে। তাই সেই আলোচনায় প্রভাবিত হয়েই রমাপদ চৌধুরীর সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত "বাড়ি বদলে যায়" নামের ছোট্ট অথচ শক্তিশালী বার্তাবাহী উপন্যাসটি পড়লাম। রীতিমত মুগ্ধ আমি।
চাকরিজীবী ধ্রুব ব্যাংক থেকে ফিরছিল। হঠাৎ দেখতে পেল জটলা। পলায়নপর মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ ধ্রুব। ভিড়বাট্টা সবসময় এড়িয়ে চলতে পারলেই যেন বাঁচে। সেই ধ্রুবই উকি দিল জটলাতে। ভাড়াটেকে বাড়িওয়ালা উচ্ছেদ করেছে। সেই পরিবারটিই ঘরের সব আসবাবপত্র নিয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছে। গৃহকর্তা নেই, গৃহকর্ত্রী বিব্রতকর অবস্থায় রাস্তায়। লোকজন দেখছে। কানাঘুষা করছে। অনেকে মজা পাচ্ছে। প্রতিবেশীরা এই পরিবারটিকে সহায়তা করার বদলে কেমন যেন উপভোগ করছে।
ধ্রুব বাড়ি ফিরে এল অদ্ভুত এক অনুভূতি নিয়ে। এমনটি সে আগে কখনো অনুভব করেছে কি না বুঝতে পারছে না৷ বারবার ভাড়াটিয়া ধ্রুব নিজেকে সেই বিপদগ্রস্ত পরিবারের জায়গায় ভাবছিল। কিন্তু নিজেকে ঠিক মেলে ধরতে পারছিল না স্ত্রী প্রীতির কাছে।
অব্যক্ত এক শঙ্কা, ভীতির কারণেই যেন ধ্রুব ফিরে গেল তার অতীতমন্থনে।সেই আগের ধ্রুবর সাথে মিল আছে বাংলার হাজারো পরিবারের সাথে। যৌথপরিবারে বেড়ে ওঠা ধ্রুবর। তিনভাই, বাবা-মা'কে নিয়ে সুখি পরিবার। অবশ্য ধ্রুবদেরও নিজেদের বাড়ি নেই৷ ভাড়াটে তারাও।
সেই যৌথপরিবারে বৌ হয়ে এল প্রীতি। শুরুতে সবই ভালো চলছিল৷ কিন্তু তিনভাইয়ের পরিবার বাড়তে থাকল। পিতা অবসর নিয়েছেন৷ পেনশনভোগী পিতার হাতে সংসারের কোনো কর্তৃত্ব নেই। মাও অনেকটা নিশ্চুপ থাকেন। বাধ্য হয়েই দু'জনেই নিজেদের গুটিয়ে এনেছেন সাংসারিক ক্রিয়াকান্ড থেকে৷
সেই সুখের সংসারে খুশি রইল না৷ যৌথসংসারে সমস্যাও বড়। মিলের চে' অমিল বেশি দেখা দিল। হঠাৎ ধ্রুব আর তার স্ত্রী প্রীতি জানিয়ে দিল তারা বাড়ি ছেড়ে দিচ্ছে। বৃদ্ধ বাবা-মা অনেকটা বিস্মিত হয়ে মেনে নিলেন। এই ছবিটি যৌথ পরিবারের ক্ষেত্রে খুব স্বাভাবিক। আর এখানেই রমাপদ চৌধুরীর যাদু৷ তিনি খন্ড খন্ড বাক্য৷ সহজবোধ্য শব্দে এঁকেছেন এই ছবিকে।
বাড়ি খুঁজে পাওয়ার হ্যাপা কতটা হতে পারে তা হাড়ে হাড়ে টের পায় ধ্রুব৷ মধ্যবিত্তের এই আরেক লক্ষণ। সে না পারবে নীচুতে থাকবে, না তার সাধ্য আছে উঁচুতলাতে থাকবার৷
ভাড়া বাড়ি পেল ধ্রুবরা। বাড়িওয়ালা আর ভাড়াটিয়ার সম্পর্কের সেই অমৃত-গরল মনস্তত্বকে ভালোই অনুভব করাতে পেরেছেন রমাপদ চৌধুরী। আজকের যুগে বাড়িওয়ালা -ভাড়াটে সম্পর্ক রাজা-প্রজায় নেমে এসেছে। একপক্ষ আরেকপক্ষের জিম্মি হয়ে পড়েছে৷ বাড়িওয়ালা রাখালবাবুর সাথেও ধ্রুবদের দেনা-পাওনার জায়গাটি বিবাদশূণ্য রইল না৷ অলিখিত রীতি দাঁড়াল দ্বন্দ্বের। দুনিয়ার সব বাড়িওয়ালা একজোট, ধ্রুবরা আরেক জোটে।
মনোভাব কত দ্রুত বদলায় অবস্থান বদলের সাথে সাথে। ভাড়াটে ধ্রুবর অনেকটাই আচমকা ব্যবস্থা হয়ে গেল নিজের বাড়ির।বাড়ি বদলে ধ্রুবরা বারিওয়ালা হয়ে গেল। সেই সাথে আবিষ্কার করল ভাড়াটিয়ার মনোভাব নয়,ধ্রুবও এখন চিরন্তন সেই প্রভুত্ববাদী অনুভূতির অধিকারী। যে অনুভূতি ধ্রুব খুঁজে পেত তাদের বাড়িওয়ালা রাখালবাবুর মাঝে। কারণ বাড়ি বদলে যায়। ভাড়াটে হয়ে যায় বাড়িওয়ালা। সাথে বদলে যায় ভাড়াটিয়া হওয়ার মনোভাবও!
উপন্যাসের প্রেক্ষপট কলকাতা৷ বাংলাদেশের সাথে তা মিলবে না। তবে মূল জায়গাটি এক।মানবমনকে বুঝবার অসম্ভব তীক্ষ্ণ ক্ষমতা রমাপদ চৌধুরীর। অবস্থান বদলে গেলে মানবমনেও ঝড়ো পরিবর্তন চলে আসে। অবস্থানই নির্ধারণ করে দেয় সেই পরিবর্তনের ভালোত্ব কিংবা মন্দত্ব৷
রমাপদ চৌধুরী'র সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত উপন্যাস 'বাড়ি বদলে যায়'। স্বল্প পরিসরের এই উপন্যাসটির বিষয়বস্তু আমাদের সুপরিচিত। নিজস্ব একটুকরো মাথাগোঁজার ঠাঁই মধ্যবিত্ত জীবনের সাধ-স্বপ্নের চেহারাটা যেমন একদিকে, আরেকদিকে সেই স্বপ্নের লক্ষ্যে পৌঁছানো মানুষের চেহারা বদলের ছবিটিকেও আশ্চর্যভাবে তুলে ধরেছেন রমাপদ চৌধুরী। সহজ ও সাবলীল ভঙ্গিমায় লেখা এই উপন্যাস তাই মনে দাগ কেটে যায় খুব স্বাভাবিকভাবেই।
লকডাউনে কতশত লোকের যে বাড়ি বদলে গেল! গল্পের আর বাস্তবের প্রেক্ষাপট সম্পুর্ন ভিন্ন কিন্তু চরিত্র গুলো সব যেন একে অন্যের প্রতিচ্ছবি.আজকে যে ভাড়াটে তার মুখ লুকিয়ে পিঠ বাঁচিয়ে চলার নীতি যেমন চিরায়ত তেমনি কালকে বাড়িওয়ালা হয়ে বুক ফুলিয়ে চোখ রাঙিয়ে ধরাকে সরা জ্ঞান করাটাও ততটাই বাস্তব.দুটো ব্যাপার যেন ঠিক মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ
এতবছর আগে লিখেছেন এই বইটা রমাপদ মশাই কিন্তু বর্তমান আর অতীতের মধ্যে বিনিসুতোর এক অদ্ভুত অদৃশ্য গাঁটছড়া বেঁধে দিয়ে গেছেন
ক্রমে পারিবারিক বাড়ি ছেড়ে ফ্ল্যাট, ফ্ল্যাট থেকে নিজের বাড়ির মালিক হওয়ার যে মধ্যবিত্ত তাগিদ, তা কেবল আর্থিক উত্তরণ ঘটায় না। ভেতরে ভেতরে কী করে যেন মানুষগুলোও ছাপোষা ভাড়াটিয়া থেকে দস্তুরমতো বাড়িওয়ালায় পালটে যায়। অঘোষিত উৎখাতের ভয়, মালিকের জল না দেওয়ার ভোগান্তি সয়ে যাওয়া মধ্যবিত্ত লোকগুলো জীবন নিংড়ে কখনো নিজেরাই বাড়িওয়ালা বনে যায়, হাবেভাবেও বদলে যায় নতুন মানুষে। পাল্টে ফেলা বাড়ির মতোই।
হাতে নিলে পড়েই যেতে হয়, এমন একটা বই। মাঝে খানিক ঝুলে যাওয়া আর শেষটা তাড়াতাড়ি টানা বাদে, দারুণ। প্রধান চরিত্র ধ্রুব'র মতো, দৈনন্দিন পীড়িত হবার অনিরাপত্তাবোধ কার নেই? ঠিক এই কারণে, 'বাড়ি বদলে যায়' সহজেই সব্বার। আসলে, না, বরং তাদের — যাদের ভাত যোগানোর তাগিদ আছে।
বইটাকে যদি সাইকোলজির দিক দিয়ে বিবেচনা করি তাহলে ধ্রুব চরিত্রকে হীন মানসিকতার ধরে নিতেই পারি। আর ধ্রুবর মত মানুষই আমাদের সমাজে অধিক। ধ্রুব চরিত্রটা একটা জিনিস বার বার শিক্ষা দিয়েছে "Don't judge a book by it's cover." আমরা অতি সহজেই একটা মানুষ সম্পর্কে ভাল মন্দ মন্তব্য করে ফেলি যা একদমই উচিৎ নয়। রাখালবাবুর ব্যাপারে ধ্রুবর ধারণা স্বার্থপরের মত পালটে গেছে। যখন রাখাল বাবু নিতান্তই দরিদ্রের বেশে নিছেন তখন ধ্রুব তাকে এড়িয়ে চলত। পাছে কেউ দেখে ফেলে আর তার ইজ্জতের ১২টা বেজে যায়। সেই রাখালবাবুই যখন বাড়িওয়ালা হয়ে দামী পোষাক পড়ে তার সামনে দাঁড়ায় তখন ধ্রুবর একটুও বাধে না তার বাড়ি ভাড়া নিতে। রাখাল বাবুর মত ভাল মানুষই হয় না। আবার সেই রাখাল বাবু যখন বাড়িওয়ালার ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করেন তখন তার থেকে খারাপ আর কেউই নেই।
আরও একটা জিনিস এই বইটা থেকে শিখেছি,""Never forget your past." ছোটবেলায় স্কুলে যখন কোনো ফ্রেন্ড স্যার এর কাছে পিটুনি খেত তখন সে বলে বসতো, "বড় হয়ে আমিও শিক্ষক হবো। আর তখন আমিও আমার ছাত্রদের হুদাই হুদাই অনেক পিটাবো। এগুলার শোধ তুলব।" এগুলো নিতান্তই ওদের রাগের কথা ছিল। কিন্তু এই বই এর মূল চরির ধ্রুবর মাঝে আমি এই কথাগুলোর প্রতিফলন খুঁজে পেয়েছি। ধ্রুব যখন বাড়ি করার কাজ ধরলো তখনই তার মাঝে বাড়িওয়ালার ভাব চলে আসে। নতুন বাসায় বাড়িওয়ালা হয়ে উঠে আসার পর সে যেন সাপের ৫ পা দেখে নিলো। ভাড়াটে সমাজের সাথে তার সব সম্পর্ক শেষ। বাড়ি ভাড়া দেওয়ার আগেই যেন ভাড়াটে প্রতিবেশীগুলো তিক্ত হয়ে উঠলো। যে জিনিসগুলো এতদিন সে ঘৃণা করে এসেছে সে জিনিসগুলাই এখন তার কাছে লিগ্যাল। সে অপেক্ষায় আছে কখন তার ভাড়াটে আসবে ,তারপর সে বাড়ি ভাড়া বাড়াবে, পানি বন্ধ করে দিবে ইত্যাদি ইত্যাদি। তার স্ত্রী যেন চিন্তেই পারে না তাকে।
আজ আপনি ভাড়াটে কাল আপনি বাড়িওয়ালা এই তো জগতের নিয়ম। হা হা হা হা সমাজে কিংবা কর্মস্থলে মানুষের যখন পদোন্নতি হয় তখন সেসাথে মনের অবস্থার ও কিঞ্চিত পদোন্নতি হয় বইকি। নিজেকে প্রশ্ন করুন তো আজ আপনি প্রজা হয়ে প্রজাদের দুঃখ কষ্ট নিয়ে চিন্তা করছেন,রাজার প্রতিটা কাজে বিদ্রোহ প্রকাশ করছেন কাল যদি আপনি নিজেই রাজা হয়ে যান তাহলে? তাহলে আপনার মনের অবস্থা কি গতকালের মতো থাকবে? স্বয়ং বিচার করুন।
একটু গা বাঁচিয়ে চলা খুতখুতে স্বভাবের চাকরিজীবী ধ্রুবর দিনকাল বেশ যাচ্ছিলো কিন্তু হঠাৎ একদিন পাড়ার রাস্তা দিয়ে যাবার সময় দেখলো রাস্তার পাশে বেশ জটলা। সবাই খুব মনযোগ দিয়ে কি যেন দেখছে। একটু কৌতুহল হওয়ায় ভীড় ঠেলে ধ্রুব দেখতে গেলো বিষয় টা। গিয়ে দেখলো রাস্তায় পড়ে রয়েছে খাট, টেবিল, বুক কেস। আশেপাশে ছড়িয়ে আছে বালতি, মগ, হাঁড়ি আর মসলাপাতির কৌটো। জিনিস পত্র এতটাই রাগের সাথে ফেলে দেয়া যে কারো মনেই এটা নাড়া দিতে বাধ্য। কিছুক্ষণ থাকার পর ধ্রুব জানতে পারলো ভাড়াটে উচ্ছেদের দরুন এই পরিবারের সাথে এমন জঘন্য ব্যবহার করছে বাড়িওয়ালা। ধ্রুবর তখন সেই অচেনা অজানা পরিবার টার জন্য বেশ মায়া হতে লাগলো সেই সাথে মনে একটা আতংক শুরু হলো কেননা সেও একজন "ভাড়াটে"।
🔸পাঠ প্রতিক্রিয়া ও পর্যালোচনাঃ প্রথমত এটা আমার পড়া লেখকের প্রথম বই কিন্তু বলতে বাধ্য হচ্ছি এই একটা বই পড়ে লেখকের বাকি বইগুলো সংগ্রহ করার বেশ আগ্রহ জাগলো।
ভাড়াটে আর বাড়িওয়ালাকে নিয়ে যে এমন সুন্দর একটা বই লিখে ফেলা যায় তা আসলেই ধারণার বাইরে তার উপরে যদি বইতে থাকে মনস্তাত্ত্বিক বিষয় তাহলে তো কথাই নেই।
লেখক একজন আত্মসম্মান নিয়ে বেঁচে থাকা এক মধ্যবিত্ত যৌথ পরিবারের কথা বলেছেন। যেমন বলেছেন পরিবারগুলোর সমস্যার কথা তেমনি তার লেখায় উঠে এসেছে এই পরিবারগুলোতে একসাথে থাকার আনন্দ আবার নানান রকম সমস্যা।
মানুষ সাধারণত চায় একটু মাথাগোঁজার মত জায়গা যেখানে সবাই শান্তিতে থাকবে কিন্তু হয়ত বিভিন্ন কারণে নিজেকে সরে আসতে হয়, শুরু করতে হয় নতুন করে কোনো কিছু। বইতে ধ্রুবও যেন তার জলজ্যান্ত উদাহরণ।
অন্যদিকে সন্তানের প্রতি মা-বাবার ভালোবাসা আর সেই সাথে সন্তানকে ছেড়ে দেওয়াও যে একটা পরিবারের জন্য কতটা কষ্টের সেটাও লেখক বেশ দক্ষ হাতে ফুটিয়ে তুলেছেন। আবার একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হতে গেলে নিজের মনের মধ্যে উত্থিত হওয়া অব্যক্ত কথার মত ছোট ছোট বিষয়গুলিও লেখক লিখে গিয়েছেন সাবলীলভাবে।
🔸বইটা পড়তে গিয়ে নিজের মনে দুইটা কথা বেশ দাগ কেটেছে তা হলোঃ
" মানুষের উপকার করলে কখনো-সখনো বড় কাজে লেগে যায়।"
"সমস্ত বন্ধনগুলো একে একে ছিঁড়ে গেছে। যেন অনেকদিন ধরে হাতকড়া পরানো ছিল, হাতকড়া খুলে ফেলে মনে হচ্ছে আমি মুক্ত, আমি আর বন্দী নই, কিন্তু হাতের কব্জিতে এখনও যেন হাতকড়ার স্পর্শটা লেগে রয়েছে। মনেই হচ্ছেনা ওটা খুলে ফেলেছে।"
🔸বইটার সবদিক ভালো লাগলেও দু এক জায়গায় নিজের কাছে একটু বিরক্ত লেগেছে যেমনঃ
বইয়ের বেশ কিছু জায়গায় "সবাই একসাথে হেসে উঠলো" বা "দুজনে একসাথে হেসে উঠলো" এটা বলা হয়েছে যেটা আসলেই একটু বিরক্তিকর ছিলো।
🔸আবার কলকাতায় বাসা ভাড়া নেয়ার বেশ কিছু নিয়ম যেমনঃ
ভাড়াটের বিরুদ্ধে মামলা করা বা বাড়িভাড়ার রসিদ এই ব্যাপার গুলোর সাথে পরিচিত না হওয়ায় একটু অসুবিধা হচ্ছিলো বুঝতে তবে সেটা বই পড়ায় খুব একটা সমস্যার সৃষ্টি করেনি।
সাহিত্য আকাদেমি ১৯৮৮ পুরষ্কারপ্রাপ্ত বইটা পড়ে মনে হবে এটা যেন আমাদের ই গল্প। লেখক আজ থেকে ৩৩ বছর আগের বই তে যেন আমাদের এখনকার গল্প ই বলেছেন। বলতে চেয়েছেন মধ্যবিত্ত পরিবারের কথা, বলতে চেয়েছেন তাদের মনের না বলা কথাগুলো।
বইঃ বাড়ি বদলে যায় লেখকঃ রমাপদ চৌধুরী প্রথম সংস্করণঃ বইমেলা ১৯৮৬ প্রকাশনীঃ আনন্দ পাবলিশার্স মুদ্রিত মূল্যঃ ১৫০ রুপি
আসলে এই বইটি নিয়ে কি লিখব খুঁজে পাচ্ছি না। খুব সাধারণ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে এত্ত সুন্দরভাবে একটি উপন্যাসের সৃষ্টি সম্ভব সেটি দৃষ্টান্ত রূপে দেখিয়ে দিয়েছেন লেখক রমাপদ চৌধুরী। বাড়ি বদলে যায় এই বইটি ১৯৮৮ সালে সেই সৃষ্টির স্বীকৃতিস্বরূপ পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার লাভ করে।
বইটিতে ধ্রুব, একজন ভাড়াটিয়ার মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করেছেন লেখক। একজন ভাড়াটিয়া সাধারণত শুধু আর্থিক দিক থেকে একজন বাড়িওয়ালার থেকে পিছিয়ে থাকে না, সামাজিক মর্যাদা এবং প্রতিপত্তি থেকেও থাকে দূরে।
নগর বাংলার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে মানুষ ভয়ানক শ্রেণীবৈষম্য নিয়ে বসবাস করে। ভাড়াটিয়া কখন বাড়িওয়ালার সমান মর্যাদা লাভ করতে পারে না সে দরিদ্র হোক কিংবা হোক অবস্থাপন্ন। বসবাসরত বাড়িটি হয়ে দাঁড়ায় এই দুই শ্রেণীর মাঝের উঁচু দেয়াল।
বইটির কেন্দ্রীয় চরিত্র ধ্রুব ভাড়াটিয়া অবস্থায় এক গৃহস্থ পরিবারের উচ্ছেদ দেখে। রাস্তার মানুষের সামনের ঘরের মানুষগুলোসহ খুঁটি নাটি এমন কি গরম ভাত পর্যন্ত ছুঁড়ে ফেলা হয়। ব্যাপারটা নাড়া দেয় ধ্রুবকে। ভয় পায় কোন দিন হয়তো ওর বাড়িওয়ালা রাখালবাবু ওকে এইভাবে উচ্ছেদ করবে। ধ্রুব প্রতিজ্ঞা করে যদি সে কোন বাড়িওয়ালা হতে পারে তাহলে কোনদিন ভাঁড়া দিবে না কিংবা দিলেও ভাড়াটিয়ার সাথে খারাপ ব্যবহার করবে না।
তারপর একদিন সত্যিই সত্যিই স্বপ্নের মত একটা বাড়ি করতে ফেলে ধ্রুব। কিন্তু ও কি ওর প্রতিজ্ঞা রাখতে পারে? নাকি ভাড়াটিয়ার রক্ত জল হয়ে সেখানে নব্য বাড়িওয়ালা হবার রক্ত বাসা বাঁধে?
ভাড়াটিয়া ধ্রুব এবং বাড়িওয়ালা ধ্রুবের মানসিক পরিবর্তনের ধারাগুলো উনি এত স্পষ্ট আর বাস্তবতার সাথে বিকাশ ঘটিয়েছেন যার থেকে যেকোন পাঠক বাস্তব জীবন শিক্ষা নিতে পারেন। উপন্যাসে পরোক্ষভাবে নিজের শেকড়, নিজের অতীতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবার বার্তা দেয়া হয়েছে। আজ যারা বাড়িওয়ালা হয়েছে তাঁর অধিকাংশ একটা সময়ে ভাড়াটিয়া ছিল, তাই তাদের নিজেদের অতীতের কথা মনে রেখেই শুধু ভাড়াটিয়া নয় তাদের সকলের সাথেই মানবিক এবং আরও সহনশীল থাকা উচিৎ।
ব্যক্তিগত জীবনে অন্তত এই বইটি লেখার সময় পর্যন্ত লেখক ভাড়াটিয়া ছিলেন। সম্ভবত নিজের সাথে বাড়ির মালিকের বৈষম্যগুলো দেখেছিলেন খুব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। হয়তো অভিজ্ঞতা সবগুলো সুখের ছিল না। তবে নিঃসন্দেহে তাঁর অভিজ্ঞতা অসাধারণ একটি সৃষ্টি ঘটিয়েছে।
এমন সাধারণ একটা বিষয় নিয়েও যে এত অসাধারণ একটা বই লিখে ফেলা যায়, তা মনে হয় এই বইটা না পরলে জানতে পারতাম না। পড়ার পর মনে হলো, এতো নিজেদেরই গল্প, চারপাশের সাধারণ মানুষগুলোর গল্প। সেসব মানুষদের গল্প, যারা ভাড়াটিয়া থেকে বাড়িওয়ালা হতে চায়।
সেরকমই এই সাধারণ মধ্যবিত্ত ভাড়াটে সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি আমাদের ধ্রুব ও প্রীতি। যৌথ পরিবারের বন্ধন ভেঙ্গে আরেকটু ভালো থাকার আশায় তারা নিজেদের সন্তানকে নিয়ে উঠে পড়ে এক ভাড়া বাড়িতে। নাহ, এতে কোনো টুইস্ট নেই, আছে শুধু ভাড়াটে-বাড়িওয়ালার গল্প, ঝক্কি-ঝামেলা-কোন্দল। ভাড়াটে উচ্ছেদ, পানির লাইন বন্ধ করে দেয়া, বাড়তি ভাড়া, নতুন বাসা খোঁজা- এগুলো নিয়েই কাহিনী। এরই মধ্যে ধ্রুব নিজের বাড়ি বানানোর কাজ শুরু করে। বাড়ি পরিবর্তনের সাথে সাথে তার স্বভাবের খোলসও বদলাতে থাকে।
এত সাবলীলভাবে বইটা লেখা, খুব মুগ্ধ হয়েছি। আরেকদিন সময় নিয়ে বিস্তারিত রিভিউ লিখবো।
বাসা বদলের প্রস্তুতি নিতে নিতে 'বাড়ি বদলে যায়' শেষ হলো...
বইয়ের মধ্যে একটা লাইন ছিল এরকম;
"ভাড়াটে হয়ে থাকা মানেই একটা চিরন্তন অশান্তির সাথে সহ-বাস করা।"
সেই মানসিক অশান্তির সঙ্গে 'সহ-বাস বা সহবাস' করতে করতে ঢাকায় আসার ছ'মাসের মধ্যে চতুর্থবারের মতো বাসা-বদল! বইটা নিয়ে কিছু বলতে গেলে ধ্রুবর চেয়ে নিজের কথা বেশি বলা হয়ে যাবে হয়তো। কি অদ্ভুত মানুষ, আর কিসব অদ্ভুত অদ্ভুত অভিজ্ঞতা যে হলো এই ক'দিনে! যাক সে কথা, আপাতত ইস্তফা দিলাম, গুছানোর অনেক কাজ বাকি।
সামনে নতুন বছর, নতুন বাসা, নতুন বাড়িওয়ালা,নতুন এলাকা, নতুন নতুন মানুষজন (সাথে নতুন নতুন সমস্যা)... দেখা যাক কি হয়!
মানুষের ধর্ম বদলে যাওয়া। কেউ বিত্তশালী হয়ে বদলে,কেউ গরীব হয়ে। কেউ পেয়ে বদলে,কেউ হারিয়ে। হাসন রাজা নিজের সকল সম্পত্তি দান করে দিয়েছিলেন, সেসব তাঁর কাছে অর্থহীন লাগছিল বলে।
" বাড়ি বদলে যায় " দারুণ একটা উপন্যাস। এই উপন্যাসে রমাপদ বাবু দেখিয়েছেন বিত্তবান হওয়ার পর মানুষ কিভাবে নিজের অস্তিত্ব ভুলে যায়।
দারুণ একটা প্লট। একবারের জন্য ও বিরক্ত লাগেনি। টানা পড়ে শেষ করেছি। অবশ্য এটা একবসায় শেষ করার মতোই। তবে রমা বাবুর লেখায় এত মজে গেছি যে বই ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করছিল না। এটাই লেখকের সার্থকতা। এই উপন্যাস সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার প্রাপ্ত,পাওয়ার-ই কথা।
বই টা শেষ করার,একটা কথা মাথায় ঘুরছে। এটা দিয়ে কি একটা সিনেমা বানানো যায় না?
সংসার বদল হয়। বড় এক সংসার থেকে বিচ্ছিন্ন হতে হয় ছোট্ট সংসার গড়ে তুলতে। এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়ি। ভাড়া বাড়ি থেকে নিজের বাড়ি। ভাড়াটে থেকে তখন নতুন পরিচয় হয় বাড়িওয়ালা। বাড়ি বদলে যায়,সাথে বাড়ির মানুষের মেজাজ আর দৃষ্টিভঙ্গি ও।
'নিরাশ্রয়। একটা বাড়িই কি মানুষের আশ্রয়? শুধু ক'খানা ঘর? হয়তো তাই। এই সমাজে, সমাজব্যবস্থায়। তা না হলে আজকের মানুষে সমস্ত জবনটাই অতৃপ্ত, অসুখী কেন, শুধু একটা আশ্রয়ের খোঁজে।'
আশ্রয়!এই একটা শব্দে�� মাঝেই লুকিয়ে আছে কত কিছু!কিছু মানুষের জন্য একটা মাথা গোজাঁর জায়গা কিংবা স্বপ্নের বাড়ি কিংবা কারোর সাধের সংসার!একটা বাড়ির সাথে মানুষের অনেক কিছুই জুড়ে থাকে!ভাড়াবাড়ি আর নিজের বাড়ির তফাত কি বা কতটুকু তা বাড়িওয়ালার বাড়াবাড়ি না থাকলে বুঝার উপায় নেই!সবার নিজের বাড়ি থাকে না!জীবন তো আর রাজা বাদশাদের গল্পের মতো নয়;রাজকন্যা সাথে রাজত্ব;মধ্যবিত্ত মানুষেরা সব সময় নিজের বাড়ি পৈত্রিকসূত্রে পায় না!অনেক কষ্ট করে বাড়ি বানায়!সেই বাড়ি বানানোর পিছনে অনেক পাওয়া না পাওয়া কিংবা কিছু কষ্টের গল্প থাকে! এইসব অনুভূতি রামাপদ চৌধুরি খুব সুন্দর ভাবে লিখেছেন এই বইটিতে!
লেখক নিশ্চয়ই কোনও না কোনওদিন ভাড়া বাড়িতে থেকেছেন, নাহলে এভাবে একজন ভাড়াটের মনস্তাত্ত্বিক চিন্তাভাবনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ সম্ভব নয়। লেখককে অনেক ধন্যবাদ এরকম এক বিষয়ের ওপর এমন এক সুন্দর বই উপহার দেওয়ার জন্য। সকলকে পড়ার জন্য অনুরোধ রইল।
সমাজের প্রতিটি মানুষই পাল্টে যায়, নিজে না চাইলেও পরিবেশ তাকে পাল্টে যেতে বাধ্য করে। অবস্থান পরিবর্তনের সাথে সাথে মানসিকতাও পাল্টায়। যেমন-- "বাড়ি বদলে যায়"।
তিন ভাই এক বোন ধ্রুবরা। ভাইদের মধ্যে ধ্রুব ছোট। বাবা মা সহ তারা ছিমছাম এক গলির ভাড়া বাড়ীতে থাকে। বাড়িটাতে জায়গা কম হলেও অনেকদিন থাকার ফলে মায়া জড়িয়ে গেছে, তার উপর স্বাধ্যের মধ্যে পছন্দ মত বাড়ি ভাড়া পাওয়াও কষ্টের। তাই আর বাড়িটা বদল করা হয় না।বাবা চাকরি থেকে অবসর নিলেও তিন ভাই ভাল চাকরিই করে, যার কারনে সংসারটা ঠিকই আছে। ধ্রুব চাকরি পাবার পর বিয়ে করে তারই সহপাঠিনী প্রীতি কে। নিজেদের একটা বাড়ি করার ইচ্ছা থাকলেও তার বাবা অবসরে যাবার পর আর সে দিকে এগোয় না। বাবা একদিন সব ছেলেদের ডেকে তার জমানো টাকা তিন ভাইকে সমান ভাগে ভাগ করে দেয়।
সুন্দরই চলছিলো সংসার ধ্রুবদেন। বাবা মা ছেলে মেয়েদের নিয়ে পরিপূর্ণ। কোথাও কোন ছেদ নাই কিন্তু ভিতরে ভিতরে একটা গুমোট ভাব। তার পরও সবকিছু মেনে নিয়ে ঠিকই ছন্দে চলছিলো সবকিছু। একদিন ঘটলো তার ছন্দপতন।
একের পর এক চমকে দেবার মতই বই লিখেছেন রামাপদ চৌধুরী। তেমনই এক চমক"বাড়ি বদলে যায়"। সুন্দর এক মধ্যবিত্ত ছবি যার সবখানেই স্বপ্নের এক পাহাড় থাকলেও তা ছোঁয়া যায় না সহজে। যদিও বা কেউ সে স্বপ্নকে ছুয়ে থাকে তাহলে পাল্টে ফেলে নিজেকে, নাকি পাল্টাতে হয়।
"বাড়ি বদলে যায়"--তে তেমনই এক সত্যের মুখামুখি হতে হয়। নিজস্ব এক টুকরো মাথাগোঁজার ঠাঁই মধ্যবিত্তের স্বপ্ন, আরেকদিকে সেই স্বপ্নের কাছে পৌছে মানুষের চেহারা বদলে যাবার ছবি সুন্দর ভাবে তুলেধরেছেন লেখক রামাপদ চৌধুরি।
লেখকের লেখা আমার পড়া এটা প্রথম বই। জীবনের খন্ড একটা বাস্তব অবস্থাকে স্বল্পচরিত্রের মধ্যে সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন, যা অনুভূতিকে নাড়া দেয় প্রবল ভাবে। নিজের চেহারটা যেন নিজেই আয়নাতে দেখতে পাওয়া। পড়া শেষে অবিভূত হওয়া ছাড়া কিছু করার নাই।
এই উপন্যাসিকাটি পড়তে গিয়ে আমার মনে পড়ে যায় নীললোহিতের শুরুর দিকের এক লেখার কথা। যেখানে সুনীল দেখাচ্ছেন কিভাবে একই মানুষ রাস্তায় পথচারী হিসেবে থাকলে যেমন হয়, গাড়ির ভেতরে ঢুকে গেলে সে পুরোটাই নিজের খোলস পালটে ফেলে।
কলকাতা শহরে ভাড়াটে থাকা চাকুরে ধ্রুব কিভাবে বাড়িওয়ালায় ধীরে ধীরে রূপান্তরিত হলো, এটাই রমাপদ চৌধুরী তুলে ধরেছেন।
বাড়ি বদলে যাওয়ার সাথে সাথে আসলেই আরো অনেক কিছু বদলে যায়। একজন মানুষ ভাড়া বাসায় থাকলে যেমন আচরন করে ,যেমন চরিত্রে ভূমিকা পালন করে সেই ব্যক্তিই নিজের বাড়ি করার পর ভূমিকা সম্পূর্ণ বদলে যায়।
একজন ব্যক্তি নিজের বাড়ি করার পর দেখা যায় তার সম্মান অনেক বেড়ে গেছে। আগে যারা তার খোঁজ নিয়েও দেখত না তারাই তখন অনেক আপন জনের মত আচরন করে।
এখানে দুইটি শ্রেনীর জীবন যাপনের ধরন দেখানো হয়েছে। বাড়িওয়ালা এবং ভাড়াটিয়া। ভাড়া বাড়িতে থাকতে গেলে কমবেশী অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। ভাড়া দিতে কিছুদিন দেরী হলে তো কথাই নেই। ভাড়াটিয়ারা সবাই একজোট হয়ে থাকে। তেমনি একজোট হয়ে থাকে বাড়িওয়ালারা।
যৌথ পরিবার থেকে আলাদা হয়ে প্রথমে একটা ভাড়া বাসায় তারপর নিজের বাড়ি তৈরি করার মাধ্যমে এক পরিবর্তনের গল্প রচিত হয়েছে এই গল্পে।
প্রথমে একটা অভিজ্ঞতা শেয়ার করে নেই কি বলেন। বেশ কিছুদিন আগে হঠাৎ চিৎকার করে কান্নার আওয়াজ শুনে ছুটে বারান্দায় আসি। আমরা যে বাসায় ভাড়া থাকি তার দুটো বাসা সামনে দেখি কয়েকজন ভীড় করে আছে। এরমধ্যে আমাদের পাশের বাসা থেকে বাড়িওয়ালি মহিলা আর তার সুযোগ্য পুত্র বেরিয়ে এসে দেখলাম ওই বাসার দিকে যাচ্ছে। যেতে যেতে একজনের কাছে জিজ্ঞেস করলো কে মারা গেছে? উনি বললেন ওই বাসার নীচতলার ভাড়াটিয়া। ভদ্রমহিলা "ওহ ভাড়াটিয়া" বলে ঘুরে চলে এলেন।
রমাপদ রায়ের "বাড়ি বদলে যায়" এমন ই একটি উপন্যাস। উপন্যাসের প্রটাগনিস্ট ধ্রুব অফিস থেকে বাসায় ফেরার সময় দেখে একটা বাড়ির সামনে একটা পরিবারের মাল জিনিস রাস্তায় ছড়ানো, এক মহিলা তার ছোট্ট বাচ্চাকে নিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ধ্রুব দেখে একটা স্টোভ পরে আছে, চারপাশে সদ্য রান্না খাবার রাস্তায় ছড়িয়ে। একজনের কাছে শুনলো বাড়িওয়ালা নামিয়ে দিয়েছে। ভাড়াটিয়া ধ্রুবর ভেতরে একটা ভয়ের হীমশতল স্রোত। সেও তো ভাড়াটিয়া, তার সাথেও যদি এমনটাই হয়?
উপন্যাস জুড়ে চলে ধ্রুবর মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্ধ। যদি বাড়িওয়ালা বাড়ি থেকে নামিয়ে দেয় অপমান করে এই ভয়ে সবসময় কুঁকড়ে থাকতে হয় তাকে। কিছুদিন পর থেকে বাড়িওয়ালার সাথে ঝামেলা শুরু হয় ধ্রুবর। অফিস থেকে লোন করে জমি কিনে নিজের একটা দোতলা বাড়ি বানিয়ে ফ���লে ধ্রুব। দোতলায় নিজেরা থাকবে, নীচতলা ভাড়া দিবে। ধ্রুব ও কি তাহলে বাড়িওয়ালা হয়ে উঠবে?? জানতে হলে পড়তে হবে।
ছোট্ট একটা উপন্যাস। কিন্তু আপনি আপনার পরিচিত পৃথিবী খুঁজে পাবেন। অনেকে হয়তো ধ্রুবর সাথে নিজেকে রিলেট করতেও পারবেন। পড়তে পারেন, ভালো লাগবে।