বড়দিনের ছুটিতে বান্ধবীদের সঙ্গে বাড়ির কাছাকাছি একটি নদীর ধারে পিকনিক করতে গিয়েছিল সংযুক্তা—স্কুলে-পড়া এক কিশোরী। সবাই ফিরল, ফিরল না শুধু সংযুক্তা। রহস্যজনকভাবে উধাও। দিন কয় বাদে নদীর জলে ভেসে উঠল তার মৃতদেহ। একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে সংযুক্তার মা-বাবা শোকে পাথর। এরপর যা ঘটল তা প্রায় অবিশ্বাস্য। নানা ঠিকানা থেকে সংযুক্তার নিজের হাতে লেখা চিঠি আসতে শুরু করল বাড়িতে। কী করে হয়? তবে কি মরেনি সংযুক্তা? কার মৃতদেহ সৎকার করে এলেন তার মা-বাবা? নিজেদের একমাত্র মেয়েকে চিনতে তাঁদের এত ভুল হবে? পাণ্ডব গোয়েন্দারা এতকাল যত রহস্যভেদই করে থাক—সংযুক্তার এই ‘মৃত্যু’ ও ‘বেঁচে-ওঠা’র ব্যাপারটাই সব থেকে জটিল এক রহস্য, এতে সন্দেহ নেই। জগৎবল্লভপুর থেকে বজবজ, রামটেক থেকে গোয়া পর্যন্ত বিস্তৃত এবারের দুঃসাহসিক অভিযান। অবশেষে কীভাবে খুলল সব রহস্যের জট, তারই দুর্দান্ত কাহিনী ‘পাণ্ডব গোয়েন্দা’র এই দশম খণ্ডে।
Sasthipada Chattopadhyay (born 9 March 1941) was an Indian novelist and short story writer predominantly in the Bengali language. He was a well-known figure, famous for his juvenile detective stories, namely, the 'Pandob Goenda' series, as well as his contribution to children's fiction in general.
ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়-এর জন্ম ২৫ ফাল্গুন ১৩৪৭। ইংরাজি ১৯৪১। মধ্য হাওড়া খুরুট ষষ্ঠীতলায়।
কিশোর বয়স থেকেই সাহিত্য সাধনার শুরু। ১৯৬১ সাল থেকে আনন্দবাজার পত্রিকার রবিবাসরীয় আলোচনীর সঙ্গে লেখালেখি সূত্রে যুক্ত থাকলেও ১৯৮১ সালে প্রকাশিত ছোটদের জন্য লেখা ‘পাণ্ডব গোয়েন্দা’ই লেখককে সুপ্রতিষ্ঠিত করে। ‘পাণ্ডব গোয়েন্দা’র জনপ্রিয়তার পর থেকে বিরামহীনভাবে লিখে চলেছেন একটির পর একটি বই। মূলত অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয়, তাই দেশে দেশে ঘুরে যে-সব দুর্লভ অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন, তারই প্রতিফলন ঘটিয়েছেন তাঁর প্রতিটি লেখার ক্ষেত্রে।
আনন্দমেলায় কাকাবাবু, অদ্ভুতুড়ে, কলাবতী, অর্জুনের পাশাপাশি আমি "পাণ্ডব গোয়েন্দা"ও পেয়েছিলাম। কিন্তু একটা গল্পও মনে নেই। । কয়দিন আগে ইচ্ছে হলো পাণ্ডব গোয়েন্দা পড়ার; হঠাৎ, কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়াই। পুরনো আনন্দমেলা খুঁজে পেলাম না। গত শুক্রবার বিসাকের লাইব্রেরিতে যেয়ে দেখি এই সিরিজের অনেকগুলো বই একসাথে রাখা। সানন্দে পড়া শুরু করলাম বাসায় এনে। কিন্তু একি অবস্থা! ষষ্ঠীপদ যে খারাপ গল্প বলিয়ে তা নয়।লেখায় গতি আছে যথেষ্ট কিন্তু যা নেই তা হচ্ছে "যুক্তি।" কাহিনি কই থেকে যে কই চলে গেলো তার হদিস পেলাম না। পুঁচকে নায়ক নায়িকারা গোয়েন্দাগিরি করলো সামান্যই কিন্তু বন্দুক চালালো, দুর্ধর্ষ মারামারি করলো, পুলিশকে না জানিয়ে শত্রুর ডেরায় গেলো, বাবলু সিনেমার মতো আবেগঘন ভাষায় বললো, "তুমি জানো না যে আমাদের জীবনের কোনো দাম নেই?" ভাবলাম ওর তো গোয়েন্দা হওয়ার কথা ছিলো না। ও হচ্ছে ইঁচড়েপাকা। আচরণে যুক্তির বালাই নেই। নিজেদের গোয়েন্দা বলে কিন্তু যে যা বলে তা-ই বিশ্বাস করে। বাবলুকে একজন বলছে যে সে খলনায়ককে পেলে নিজেই খুন করবে। আর ও নিষেধ না করে উল্টো বলছে, "পারবেন (তো)?" এর মানে কী? কিশোরপাঠ্য সিরিজে সহিংসতার অবাধ ছড়াছড়ি ও যুক্তিকে অগ্রাহ্য করার মানসিকতা থাকলে পাণ্ডব গোয়েন্দা পাঠ আনন্দদায়ক হতে পারে। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে, এখানেই ফুলস্টপ।
গোয়েন্দা বলতে আমরা সাধারণত যেমনটা কল্পনা করি, তেমনটার ধারেকাছেও নয় এই পাণ্ডব গোয়েন্দা সিরিজ। গোড়ার দিকের গল্পগুলি বাদে এই সিরিজের পরবর্তী উপন্যাসলি একটিমাত্র template-এর সাহায্যেই গড়ে উঠেছে। তাতে অ্যাডভেঞ্চারের চেয়েও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে ভ্রমণ-বৃত্তান্ত।
সম্ভবত লেখক নিজেই বিভিন্ন জায়গার ভ্রমণের/তীর্থের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে, সেই যাত্রাপথের রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মাধ্যমে তাতে পাণ্ডব গোয়েন্দার কাহিনির ঘটনাক্রম জুড়ে দিতেন। কিন্তু সেই জুড়ে দেওয়া অংশটুকু প্রতিবারই প্রায় একই রূপ নিয়ে শুধু নাম বদলিয়ে ফিরে ফিরে আসত। ফলে এই সিরিজের কাহিনিগুলি পরপর পড়লে একটা অদ্ভুত সিমিল্যারিটি চোখে পড়বেই।
এছাড়াও এই সিরিজের প্রতি অনেক অভিযোগ রয়েছে অন্যান্য অনেক পাঠকের : কিশোর নায়ক-নায়িকাদের দ্বারা ঘটিত এতসব 'রোমাঞ্চকর' ঘটনার অবতারণা করা কষ্টকল্পনা। এত ভায়োলেন্স! কিশোরবয়সী বাবলুর হাতে বন্দুক! ইত্যাদি। — এগুলো সত্যিই একেকটা গুরুতর অভিযোগ বটে। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমার এগুলো গায়ে লাগে না। কারণ, পাণ্ডব গোয়েন্দার কাহিনি কেমন হতে পারে, তার আভাস ছোটবেলা থেকেই রয়েছে। এছাড়া ধুন্ধুমার-বর্জিত কিশোর প্রোটাগনিস্টের কাহিনি লিখতে গেলে তার দশা হবে গোগোলের মতো। আলুনি। তাই "সাসপেনশন অফ ডিসবিলিফ"-এর গোটাচারেক স্ট্রং ডোজের বড়ি খেয়ে গল্পের গরুর গাছে ওঠার ব্যাপারটা মাইণ্ড করি না কোনওক্রমে।
এতসবের মধ্যে অবশ্য মন্দের ভালো এই যে, গদ্যের লেখনী বেশ গতিময়। কিন্তু সবার শেষে ওই! একটাই অভিযোগ। বারবার একই ছাঁচে ফেলে একটু-আধটু রকমফের করে এতগুলো কাহিনি লিখে ফেলাটা কি আদৌ মেনে নেওয়ার মতো?