Shankar's real name is Mani Shankar Mukherjee. Sankar is a very popular writer in the Bengali language. He grew up in Howrah district of West Bengal, India. Shankar's father died while Shankar was still a teenager, as a result of which Shankar became a clerk to the last British barrister of the Calcutta High Court, Noel Frederick Barwell. The experience of working under Mr. Barwell provided the material for his first book Koto Ojanare (কত অজানারে), translated as The Great Unknown. During 1962, Shankar conceived the idea of writing the novel Chowringhee on a rainy day at the waterlogged crossing of Central Avenue and Dalhousie - a busy business district in the heart of Kolkata. Many of Shankar's works have been made into films. Some notable ones are - Chowringhee, Jana Aranya (জন-অরণ্য, translated as The Middleman) and Seemabaddha (সীমাবদ্ধ, out of which the last two were directed by Satyajit Ray.
আজ থেকে প্রায় ১০-১১ বছর আগে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির গাড়ি থেকে সংগ্রহ করে পড়েছিলাম চৌরঙ্গী। তখনও সাহিত্য বোঝার মত অভিজ্ঞতা হয়নি(হয়তো এখনও হয়নি)। তবুও এটুকু বুঝেছিলাম, যে লেখকের লেখা অনায়াসে, ভ্রুক্ষেপহীন চিত্তে পড়ে যাওয়া যায়, তিনি লেখক বটে। বইটা বাসায় আনার পরে অবাক হয়েছিলাম আরো একটা কারণে। প্রচ্ছদটা দেখেই বাবা প্রায় গড়গড় করে বলে গেল বেশ অনেকটা কাহিনী। "ছোটবেলায়" (!) পড়েছিলেন। যাহোক, কত অজানারে সেই চৌরঙ্গীর প্রিকুয়েল। প্রথম পৃষ্ঠাতেই সেকথা লেখা থাকলেও কেন যেন পড়া হয়নি৷ অনেকবার পড়বো পড়বো করে হাতে তুলে নিয়েছি, কিন্তু.....
তবে ভালো একটা বই আগে না পড়ার মধ্যে কোন অসুবিধে নেই। কারণ, ভেতরে ছাপা সারি সারি কালো সৈন্যদল যখন চোখের সিড়ি বেয়ে মস্তিষ্কে পৌছুবে, কর্টেক্সের ডান প্রান্ত আলোড়িত হবেই হবে। এই বইখানার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য৷ কে বলবে "কত অজানারে" লেখার সময় মণিশংকরের বয়স ছিল ১৯। কি অনায়াসেই না প্রথম পৃষ্ঠা থেকে নিজ ক্ষমতাবলে হরণ করে নিলেন মনোযোগ। মনে হচ্ছিল তূর্ণা নিশীথায় চেপে চট্টগ্রাম পাড়ি দেয়ার সময় কোন এক গপ্পী ভদ্রলোক তার গল্পের ডালা খুলে বসেছেন।
"কত অজানারে" কি উপন্যাস? সে প্রশ্ন উঠতেই পারে। আদতে তো কলকাতা কোর্টের শেষ ইংরেজ ব্যারিস্টারের স্টেনোগ্রাফার, তার পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে উত্তমপুরুষে বর্ণনা করে গেছে নানা রকম মানুষের, নানা রকমের জীবনের খণ্ড খণ্ড চিত্র। আইনের ওরকম ঘোরতর মারপ্যাচের জগতেও কতরকম মানবিক(কখনো কখনো অমানবিক) গল্পের অবতারণা। আক্ষরিক অর্থেই তখন বলতে ইচ্ছে করে 'কত অজানারে'!
বাড়ির সবার ইচ্ছা ছিল আমি যেন মেডিকেলে পড়ি। কিন্তু আমি বিজ্ঞান বিভাগ-ই ছেড়ে দিলাম! ঢাকায় সুযোগ পাওয়ার পর পরিবারের নতুন ইচ্ছা হলো আমি যেন আইনে পড়ি। কিন্তু আমি ওটাও মেজর হিসেবে নিতে অস্বীকার করলাম! ধান ভানতে শিবের গীতের মতো শোনালেও কথাগুলো বইটার সাথে প্রাসঙ্গিক। আমার মনে হয় এবং একটা ( প্রায়) প্রবাদের মতো আছে যে মানুষ ডাক্তার আর উকিলের কাছে কিছু গোপন করে না। ঐ সময় এটা মাথায় কাজ না করলেও এখন ( মানে বইটা পড়ার পর আরকি!) মনে হচ্ছে মেডিকেলে বা আইনে পড়লে বেশ ভালো হতো, কত কত জীবনের গল্প শোনা যেত!
কাজের কথায় আসি। বইটা লেখক শংকরের আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস। যৌবনের শুরুতে লেখক ভারতবর্ষের শেষ ইংরেজ ব্যারিস্টারের ‘বাবু’ হিসেবে বেশ কয়েক বছর কাজ করেন। ঐ সময়ে লেখক উকিল, অ্যাটর্নি, ব্যারিস্টার, জজ, বাবু, মুহুরি আর বাদী-বিবাদীদের জীবন সম্পর্কে যে অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন তাদের মধ্যকার সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশের, যা লেখকের মনে দাগ কেটেছিল, গ্রন্থিত রূপ এই রচনাটি। এখানে লেখক আইন জগতের নানা অজানা রূপকে পাঠকের সামনে উপস্থাপন করেছেন।
তো বইটা কেমন লাগল? এককথায় বললে অনবদ্য! বইটার সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো এর মধ্যকার বিভিন্ন ছোট ছোট গল্প। যদিও বইটাকে উপন্যাস বলা হচ্ছে তবু বইটা মূলত বেশ কিছু ‘গল্পের’ সমন্বয়। গল্প বলতে লেখক ঐ সময়ে যেসব আকর্ষণীয় চরিত্রের সংস্পর্শে এসেছেন, হোক তারা উকিল, জজ, বাবু, বাদী, বিবাদী বা তার পরিচিত ব্যক্তি, তাদের জীবনের কাহিনী নিয়েই বইটা কথা বলেছে। লেখকের সায়েব, সায়েবের বন্ধু ব্যারিস্টার বীরেন বোস, রানী মীরা আদিত্যনারায়ণ, বাবু ছোকাদা, বনোয়ারিবাবু, বিবাদী নরেন মন্ডল, রেম্পিনি সাহেব, সুব্রত রায়, হেলেন গ্রুবার্ট, সুনন্দা উইলসন, মিস ট্রাইটন, আরতি, রবীন্দ্র, মি. গোল্ড, শেফালী মিত্র, জগদীশবাবু বা মি. ড্রলাসের জীবনের নানা বাঁকের কথা উঠে এসেছে এসব গল্পে।
এই গল্পগুলো এত বৈচিত্র্যময় আর ভিন্নধরনের যে প্রতিটা গল্পে মুগ্ধ হতে হয়। মানুষ কতভাবে যে আইনের সাহায্য নেয় বা আইন যে কত বিচিত্রভাবে মানুষকে প্রভাবিত করে তা বইটা পড়ার আগে আমি কল্পনাও করতে পারিনি! আইনের এক কথায় কারও ফাঁসি হয়ে যায়, কেউ স্বামীর হাত থেকে মুক্তি পায়, কেউ নাগরিকত্ব পায়, কেউ পায় সম্পদ আবার কেউ হয় সর্বহারা। সেইসব বিচিত্র গল্পগুলোকে যেসব লেখক সচক্ষে দেখেছেন বা তার সায়েবের মুখে শুনেছেন তারও বর্ণনা করেছেন পুরো বইজুড়ে। আর এই বর্ণনাও এত দারুণভাবে করেছেন যেন আমি লেখকের মুখ থেকে প্রতিটা গল্প শুনলাম! অর্থাৎ খুব সহজ ভাষায় বৈঠকি ঢংয়ে লেখা হয়েছে পুরো বইটা।
বইটা শেষে পাঠককে একটু থমকে দাঁড়াতে হবে। লেখক ‘কত অজানারে' বলতে কি বোঝালেন? আইন জগতের অজানা বিষয় নাকি জীবনের? সেই প্রশ্নের উত্তর পেতে তাইতো আরেকবার পুরো বইটা পড়তে হবে স্মৃতির পাতায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন আইন বিষয়ে পড়বার সিদ্ধান্ত নেই এরপরেই মা আমাকে এই বইটি উপহার দেন।সে আজ থেকে ৫বছর আগের কথা।এতদিন বইটি কেন পড়িনি,সে এক রহস্য!সবসময় মনে হতো না এখনো সঠিক সময় আসেনি।নিজে সদ্য গ্রাজুয়েশন কম্পলিট করলাম, আইনের মারপ্যাচ হালকা বুঝতে পারছি,আর অনেক কিছু জেনেওছি তখন মনে হলো এখনই বইটি পড়ার ভালো সময়।এরপর এক নিঃশ্বাসে গোগ্রাসে গিলে ফেললুম মন্ত্রমুগ্ধের মতন।কি সুন্দর সহজসরল ঝর ঝরে লেখনী।শংকর অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় খুবই সুন্দর করে একটি বিশেষ সময়ের চিত্র তুলে ধরেছেন।শুধু সময় বললে ভুল বলা হবে এক বিশেষ সময়ে কলকাতা কোর্টের এক সুন্দর ছবি এঁকেছেন লেখক।উপন্যাসটি কে আত্নজীবনী বলা চলে তবে একটু ভিন্ন আংগিকে লেখা। বইটি কে বলা যায় এক জীবনের আড়ালে অনেক জীবনের গল্প।কোর্টের জীবন অনেক বৈচিত্র্যময়। কত ধরণের মানুষের আনাগোণা এই প্রাংগনে,কত ধরনের লড়াই চলে এখানে। মক্কেলের জীবনের সাথে জড়িয়ে যায় ব্যারিস্টার, এটর্নি, এমনকি ব্যারিস্টারের বাবুদেরও জীবন।এ যেন এক জীবনে অনেক জীবন। উপন্যাস টিতে অনেকগুলো মানুষের গল্প শোনানো হয়েছে, এই জীবন গুলো কিভাবে যেন জড়িয়ে গেছে লেখকের সাথে। পুরো উপন্যাস জুড়েই নানান অভিজ্ঞতার গল্প, সাথে আছে ইতিহাস,অখন্ডিত ভারতবর্ষের ইতিহাস। "বুদ্ধিজীবি লেঠেল সম্প্রদায়ের" কষ্ট, পরিশ্রম, একাগ্রতা, সাধনা সবই তুলে ধরেছেন লেখক অত্যন্ত সাবলীল ভাবে।সবটুকু ডেডিকেশন দিয়ে কাজ না করলে আদালত পাড়ায় টিকে থাকা যে কতখানি মুশকিল হয়ে পরতো সেইসব স্নায়ুচাপ আর মস্তিষ্কের যুদ্ধের দিনগুলোর কথাও বলতে ভুলেননি লেখক।কেউ জয়ী হতেন,কারো হতো পরাজয়, যারা হারিয়ে যেতেন তারাও কি পারতেন আদালত প্রাংগনের মায়া ছাড়তে? নাকি আদালত তাদের ভুলে যেত? এইসব প্রশ্নের উত্তরও পাওয়া যাবে বইটিতেই।
খুবই সুন্দর একটি বই।অনেকদিন পর এত ছিমছাম গোছানো একটি বই পড়লাম যা শুধু পড়ে যেতেই ইচ্ছে করবে শেষ হলে মনে হবে আহা শেষ!আইন নিয়ে যাদের কাজকর্ম তাদের জন্য বইটি খুবই সুখপাঠ্য। তবে বইটি পড়লে আইনের বাইরের মানুষজনও বুঝতে পারবে আইনের পরিধি যেমন বিশাল,তেমনি আইন নিয়ে কাজ করা লোকগুলোর জীবনও অনেক বৈচিত্র্যময়।সুন্দর লেখনী শক্তি আর বৈচিত্র্যময় জীবনের কাহিনী বইটিকে অন্য এক পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে। বইটির রেশ থেকে যাবে...
শংকর, কাজ নিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের শেষ ইংরেজ ব্যারিস্টারের বাবু হিসেবে। শুধু চোখ কান খোলা রেখে কত মানুষের জীবনের গল্প জেনে গিয়েছেন, সেসব নিয়ে এই বই। আহা কেন এতদিন লিস্টে নিয়ে বসেছিলাম। কেন আরো আগে পড়লাম না বইটা। ভীষণ মুগ্ধতা ছড়ানো লেখনী।
মাত্র উনিশ বছর বয়সে এ লেখা এক আশ্চর্য স্মৃতি কিংবা জীবন-বীক্ষার সমন্বয়। রাণী মীরা, ব্যারিস্টার বোস, শ্রীমতী সুনন্দা, মিস ট্রাইটন, হেলেন গ্রুবার্ট নিকোলাস ড্রলাস রা এখন থেকে শুধু শংকরের স্মৃতিময় চরিত্র না,আমার ও স্মৃতিতে তারা অমলিন থাকবে দীর্ঘদিন। সদ্য শেষ করা বইখানা পাঠের আবেশ বহুদিন হ্নদয়ে থাকবে। আইনপাড়া,সায়েব,জগদীশ দা'র হাফ চা,মামলা মোকাদ্দমার মুকুরে জীবননাট্য ইত্যাদিতে শংকরের প্রথম বই বেশ অভিভূত করলো।
কতদিন থেকে শঙ্করের কোন বই পড়তে চাচ্ছিলাম। খানিক ঝোঁকের বশেই এই বইটা হাতে নিলাম। ভারি সুন্দর একটা বই। উপন্যাস বললেও আসলে ঠিক উপন্যাসের কাতারে আমি একে ফেলতে পারি না। ছোট ছোট গল্পে ভরা পুরোটা। উপন্যাসে যেমন কয়েকজন প্রধান চরিত্র থাকে সেরকম ভাবে চিন্তা করতে গেলে আমার মনে হয়েছে প্রধান চরিত্র অনেক। যাদের জীবনের গল্পগুলো বলা হল তারাই আসলে মুখ্য। ব্যারিস্টার বা তার বাবুটি আসলে তাদের মক্কেলের জীবন কাহিনী বলবার জন্য গৌণ চরিত্র মাত্র। কোর্ট কাছারি আমাদের কাছে ভীষণ ভয়ের জায়গা। কিন্তু এই ভয়ের জায়গাটিতে কত শত বিচিত্র জীবনের গল্প যে পাওয়া যায় তা এই বইটা না পড়লে জানতাম না।
মানুষের জীবনের প্রতিটা অংশে ছোট-বড় অনেক গল্পের দেখা মিলে। কোনটা দুঃখ-বেদনার, কোনটা বা পরিতৃপ্তির অথবা জীবন পরিবর্তনের। এই বইটা পড়ার পরে পাঠকের মনে হতেই পারে এটা লেখকের আত্মজীবনী, যেখানে লেখক তাঁর কর্মজীবনের একটা উল্লেখযোগ্য অংশের স্মৃতিচারণ করেছেন তাঁর অনবদ্য গদ্যশৈলী দিয়ে। শুনিয়েছেন বৈচিত্র্যময় কিছু মানুষের কথা। প্রতিটা মানুষের আলাদা আলাদা গল্প, আলাদা আলাদা দৃষ্টিকোণ। এই সবকিছুই লেখক এক সুতোয় গেঁথেছেন, বানিয়েছেন জীবনের গল্পের এক মালা। যা পাঠকমাত্রই পড়ে অভিভূত হবে।
টেম্পল চেম্বার। এক অচেনা জগতের হাতছানিতে শংকরের সাথে গেলাম সেখানে। কতজনের সাথে পরিচয় হলো, জানতে পারলাম তাদের কাহিনী। কিন্তু মনে হলো এ যেন শুধু তাদের কাহিনী নয়। আমার বাহ্যিক জীবনে দেখা প্রতিটি মানুষের কাহিনী যেন এগুলো। হরেক রকম জীবন, হরেক রকম আশা, হরেক রকম সমস্যা। শঙ্করের সাথে সাথে আমিও তাদের কথা শুনেছি, চেয়েছি তারা যেন সমাধান পাক, পেলে খুশি হয়েছি,না পেলে দুঃখ হয়েছে। পরে আবার ভুলে গেছি। নতুন কেউ একজন এবং তার সমস্যা আবির্ভাব হয়েছে। তার সাথে গা ভাসিয়ে দিয়েছে। রানী মীরা, ব্যারিস্টার বস, সুনন্দা, মিস শেফালী, হেলেন, গ্রুবার্ট, জেমস গোল্ড প্রমুখ এরা যেন বাস্তব সমাজের প্রতিটি মানুষেরই প্রতিরূপ। আর জেনেছি একজনের ব্যাপারে। ব্যারিস্টার নোয়েল ফ্রেডরিক বারওয়েল। যিনি রক্তচোষা ইংরেজিদের প্রতিনিধিত্ব করেন না। যিনি ওই স্বল্প সংখ্যক ইংরেজদের একজন প্রতিনিধি যারা কিনা ভারতবর্ষকে নিজের জন্মভূমির থেকেও ভালোবেসেছিল। সময় পরিবর্তিত হলেও মানুষের সমস্যাগুলো একই রয়ে গেছে। আহ্ মনিশঙ্কর -সাধু! সাধু!
নয় নয় করে জীবনে কম বই পড়িনি৷ কিন্তু কিছু বই একেবারে হৃদয় ছুঁয়ে যায়। মনে হয় শেষ না হোক৷ এই বই এত দেরীতে পড়েছি ভাবলেই কুন্ঠা বোধ হচ্ছে। এত সাবলীল লেখা...আমি যেন কোনো মণিমুক্তা আবিষ্কার করলাম। এই রেশ বহুদিন থাকবে...
"আইনের সঙ্গে সাহিত্যের সম্পর্কটা বিশেষ মধুর নয়। অন্তত সাহিত্যের কমলবনে আইনের কলরব ঠিক ভ্রমণ গুঞ্জনের মতো শোনায় না। কিন্তু এই গ্রন্থে আমি আইন কে দেখিনি। ওল্ড পোস্ট অফিস স্ট্রিটের যে মানুষদের একদিন ভালোবেসেছিলাম, তাদেরই আজ অক্ষরে আবদ্ধ করবার চেষ্টা করেছি মাত্র, আর কিছু নয়। " - শংকর
আর কিছু নয়?? হয়ত আর কিছু নয় তবুও বইটা শেষ করার পর একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে বসে ছিলাম। রানী মীরা, ব্যারিস্টার বোস, শ্রীমতি সুনন্দা, আরতি রায়, মিস ট্রাইটন, হেলেন গ্রুবার্ট সবাইকে কেমন যেন জীবন্ত লাগছিল! ছোট্ট একটা বইয়ে লেখক এতগুলো মানুষকে জীবন্ত করে রেখেছেন। যে সহজ স্বাভাবিকভাবে লেখক বর্ণনা করেছেন তাতে পড়ে শুধু ভালো লাগাই কাজ করে। এত সুন্দর এত সুন্দর এত সুন্দর! মনে থাকবে অনেক গুলো দিন।
মণিশংকর মুখোপাধ্যায়, যার ডাকনাম শংকর; ডাকনামেই নামেই বাংলা সাহিত্যে নিজের অবস্থানকে পাকাপোক্ত করেছেন। পেশাগত জীবনে বিভিন্ন ধরনের চাকরির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পেশাগত জীবনের একপর্যায়ে কলকাতা হাইকোর্টে ব্যারিস্টারের সহকারীর চাকরি জুটে যায়। পূর্বে এই চাকরিটি ছিল লেখকের দাদা সম্পর্কীয় বিভূতির। কলকাতা হাইকোর্টের শেষ ইংরেজ ব্যারিস্টার নোয়েল ফ্রেডরিক বারওয়েলের সহকারী হিসেবে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন। একেবারে নিকট থেকে আইন পেশার লোকদের কার্যকলাপ ও আশ্চর্য সব ঘটনার সাক্ষী হয়েছিলেন তিনি। সাহেবের মৃত্যুর পর চাকরিজীবনের সব অভিজ্ঞতা নিয়ে 'কত অজানারে' বইটি রচনা করেন লেখক। বইটিতে উঠে এসেছে তৎকালীন আইন পাড়ার বিভিন্ন রীতিনীতি এবং বিভিন্ন মক্কেলের জীবন কাহিনি।
ব্রিটিশরা ভারতীয় উপমহাদেশে যখন শাসন শুরু করলো তখ�� দেখা যেত কোনো অপরাধের বিচার গ্রাম সালিশি ব্যবস্থার মাধ্যমে সমাধা হতো। ব্রিটিশ কর্তারা এই ব্যবস্থাকে নিজেদের হাতে নেওয়ার জন্য আইনপাড়ার সৃষ্টি করলেন। প্রথমদিকে তেমন গ্রহণযোগ্যতা না পেলেও, ধীরে ধীরে জনগণের মনে বিশ্বাস জন্মালো যে কোর্টে গেলে ন্যায়বিচার পাওয়া যায়। সেই থেকেই মানুষজন যেকোনো অপরাধের বিচারের জন্য হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়। ওল্ড পোস্ট অফিস রোডে লাল ইটের দালানটিকে হাইকোর্ট হিসেবে ব্যবহার শুরু করে ব্রিটিশ সরকার। হাইকোর্টের শেষ ইংরেজ ব্যারিস্টারের সহকারী; আইনপাড়ায় যিনি 'বাবু' নামে পরিচিত, পদে চাকরি নেন লেখক। আইনপাড়ায় বাবুদের নিজস্ব কোনো পরিচয় ছিল না। সকলকেই তাদের উর্ধ্বতন সাহেবের নামের পর বাবু ধরে ডাকা হতো। এই বাবুরা ব্যারিস্টারদের সার্বক্ষণিক দেখাশোনা করতেন। কেস তৈরিতে সাহায্য করা, লাইব্রেরি থেকে বই আনানেওয়া করা ইত্যাদি কাজ করতেন। কেস শে��� হলে এটর্নির থেকে মোহর অনুযায়ী বখশিশ নিতেন। তখন ১৭ টাকায় এক মোহর ধরা হতো, যাকে তহুরী বলা হতো।
আর্মি থেকে অবসর নেওয়ার পর ভাগ্যান্বেষনে ভারতে পাড়ি জমিয়েছিলেন লেখকের সাহেব। তারপর অনেকের পরামর্শে পুরনো বিদ্যাকে কাজে লাগিয়ে আইনপাড়ায় ঢুকে যান। সকলের মনেই বদ্ধমূল ধারণা রয়েছে, ব্যারিস্টাররা মক্কেলের রক্ত চুষে খান। তবে বইটিতে আমরা একজন মানবিক ইংরেজকে দেখতে পাই, যিনি কিনা ভারতীয়দের প্রতি সহৃদয় মনোভাব পোষণ করতেন। অনেক ভারতীয় মক্কেলের পাশে নিজ আগ্রহে কেস লড়েছেন এবং ন্যায় বিচার লাভ করতে সাহায্য করেছেন।
আত্মজীবনীমূলক উপন্যাসটিতে বিপুল চরিত্রের সমাবেশ রয়েছে। একেকটি চরিত্রের মাধ্যমে লেখক তাদের গল্পগুলো বলেছেন। লেবাননের এক খ্রিস্টান পরিবারে জন্ম হয়েছিল মেরিয়ন স্টুয়ার্টের। মায়ের পেশা ছিল সমাজের চোখে ঘৃণিত। তবে সকল মায়ের মতো তিনিও চেয়েছিলেন মেয়েকে এই ঘৃণ্য পেশার স্পর্শে না আনার জন্য। মেরিয়নের চেহারা ভালো হওয়াতে, স্বামী জোগাড় নিয়ে চিন্তা ছিল না। ক্যাপ্টেন হাওয়ার্ড নামে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর এক অফিসারের সাথে বিয়ে হয় মেরিয়নের। বিয়ের কয়েকবছর পর জানা যায় হাওয়ার্ড আসলে বিবাহিত। ভারতে আসার পর নাম পালটে যায় মীরা আদিত্যনারায়ণ। কীভাবে এই নাম পরিবর্তন হলো তারই আশ্চর্য গল্প জানতে পারি লেখকের বয়ানে।
আইনপাড়ায় ব্যারিস্টার হিসেবে ছিলেন সুব্রত রায়। জীবনে অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে নিজেকে একজন স্বনামধন্য ব্যারিস্টার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তবে এই যশ-খ্যাতি খুঁজতে গিয়ে নিজের পরিবার থেকে দূরে সরে গিয়েছিলেন। ছেলে-মেয়ে কোন ক্লাসে পড়ে সেসব সম্পর্কেও যেন বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। সাহেবের চেম্বারে একদিন গরিবি হালতে এক ব্যক্তি ক্যাম্বিসের ব্যাগ হাতে আসে। সাহেবের সহকারী হিসেবে প্রয়োজন জানতে চাইলে লোকটি নিজের অতি পুরনো একটি কার্ড দেখান। সেখান হতে জানা যায় লোকটি একজন এডভোকেট। পরে জানতে পারেন লোকটি ইংল্যান্ডে সাহেবের সহপাঠী ছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের ফেরে আজ এই দুর্দশা।
ট্রয়ের যুদ্ধের কথা আমরা কম বেশি সকলেই জানি। বিশ্বখ্যাত সুন্দরী হেলেনকে নিয়ে যে যুদ্ধের সূত্রপাত হয়ে দীর্ঘ দশবছর চলে। একটি রাজ্য ছারখার হয়ে যায় হেলেনের কারণে। এই বইটিতেও হেলেন নাম্নী এক অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান যুবতী মামলার জন্য সাহেবের কাছে আসেন। অভিযোগ হিসেবে তিনি জানান সুরজিৎ রায় নামের এক ব্যক্তি তাকে বিবাহের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতারণা করেছেন। তাই তিনি মানহানির মামলা করতে চান। এই সাহেবের চেম্বারেই পরিচয় নিকোলাস ড্রলাস নামের এক জাহাজের লোকের সাথে। যিনি কিনা অন্যায়ভাবে চাকরি থেকে বরখাস্ত হয়েছেন। সাহেবের কাছে তিনি বিচার প্রত্যাশা করেন। ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে তিনি সাহেবের বাবু অর্থাৎ লেখকের কাছে মামলার অগ্রগতি জানতে চান। বরিশালের নরেন কিংবা চট্টগ্রামের রবীন্দ্র কলিতার মামলা পাঠককে অভিভূত কিংবা দুঃখ ভারাক্রান্ত করে তোলবে।
আইনপাড়ায় লেখকের সাথে পরিচয় হয়েছে ছোকাদা কিংবা জগদীশবাবুর সাথে। পরিচয় থেকে সেই সম্পর্ক গাঢ় হয়েছে। তাদের থেকে বিচিত্র সব অভিজ্ঞতার গল্প শুনেছেন। এছাড়া নিজের অভিজ্ঞতালব্ধ ঘটনাগুলো লিপিবদ্ধ করে পাঠকের কাছে উপস্থাপন করেছেন। বইটি পড়তে বসলে, শেষ না করা পর্যন্ত উঠতে মন চাইবেনা। কারণ বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা পাঠককে বইয়ের পাতায় আটকে রাখবে নেশার মতো। হ্যাপি রিডিং।
শংকরের লেখা নিয়ে আমি এর আগে শুনেছি খুব, কিন্তু পড়া হয়ে ওঠেনি। এই বইটাও ধরবো ধরবো করে এইযে পড়ে ফেললাম, আমি খুব খুশি। বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় এটি উনার প্রথম বই। এবং স্মৃতি থেকে লেখা। এত সাবলীল, সুন্দর লেখা। নিজের জীবনের ঘটনা থেকে এত এত চরিত্র পাঠকের সামনে তিনি যেভাবে তুলে ধরেছেন, তা বিষ্ময়কর। আইনপাড়ায় আইনের মারপ্যাচের ভিতর যে কত মানুষের জীবনের ঘটনাবলি লুকিয়ে থাকে তা এই বই না পড়লে কক্ষনো জানতে পারতাম না। এ এক নতুন রকম অভিজ্ঞতা আমার। খুব খুব ভালো লাগলো বইটা। লেখার অনেককিছুই আছে বইটি নিয়ে। বিস্তারিত রিভিউ লিখে ফেলতে পারবো আশা করছি।
শংকর এর বিখ্যাত ট্রিলজির প্রথম বইটা এটা। ৪.৫ তারা দিচ্ছি। কলকাতা হাইকোর্টের শেষ ইংরেজ ব্যারিস্টারের সহকারীর দিক থেকে উত্তম পুরুষে লেখা। বাকিরা বড় করে রিভিউ দিয়েছেন, সেখান থেকে বইটি সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া যাবে। টানা পড়ে যাওয়া যায়। কালেকশানে রেখে দিচ্ছি।
একটা উপন্যাস, অনেকগুলো গল্প। প্রথমবার শংকর পড়লাম। প্রথমবারেই ভক্ত হয়ে গেলাম। কি সুন্দর নির্মেদ ঝরঝরে লেখা। পাতার পর পাতা শ্রান্তিহীনভাবে পড়ে যাওয়া যায়। এটাই ভালোলাগার সবচেয়ে বড় কারণ।
শংকরের এই মাস্টারপিসটাও শেষ হয়ে গেলো। এক হিসেবে হয়ত সবচেয়ে লম্বা সময় ধরে শেষ করা বইয়ের একটা এটা। ৯ এপ্রিল ২০১৮, সিলেট ছাড়ার আগের দিন কেনা। টানা ৪ বছর পরে ছিল আমার "না পড়া বইয়ের" বুকশেলফে। এরপর গত মে-জুনে ৮০% পড়ে রেখে দিয়েছিলাম, "পড়লেই তো শেষ হয়ে যাবে!" ভেবে। শেষমেশ কাল রাতে ছোটমামা বইটা চাইলো, ভাবলাম শেষ করেই ফেলি, আর কত?
এই ক্লাসিক বই নিয়ে আমার আলাদা করে লেখার কিছু প্রয়োজন বোধ করছি না। কেননা, এমনিতেই আজকাল লেখা কেউ পড়ে না, আমার মতন আউলাঝাউলা মানুষের লেখা তো আরো পড়ে না! তাছাড়া এই বই এমনই এক বিখ্যাত বই, যে কেউ চাইলেই এ নিয়ে অজস্র রিভিউ বের করে ফেলতে পারবে অন্তর্জালে। আমি বরং ছোট্ট করে বলি আমার কেন ভাল্লাগলো এই বইটা।
যত বেশি শংকর পড়ছি ততই আবিষ্কার করছি, শংকরের উপন্যাস তো ভালোই, তার থেকে ভালো আমার লাগে তার গল্পগুলো। কত অজানারে হয়ত নামে উপন্যাস, কিন্তু দিনশেষে এ তো আসলে এক গল্প সংকলনই! চরিত্রের মধ্যে শংকর নিজে আর তার সায়েব, কলকাতার শেষ ইংরেজ ব্যারিস্টার নোয়েল বাউয়েল, এ দুজনই কন্সট্যান্ট। এর বাইরে অন্য কিছু চরিত্রও ঘুরে ফিরে আসে। কিন্তু প্রতিটা চ্যাপ্টার ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রের, ভিন্ন ভিন্ন গল্পের। সবাই কোন না কোনভাবে এসেছেন ব্যারিস্টার সায়েবের কাছে, ন্যায়বিচার পাবার আশায়। সায়েবের এসিস্ট্যান্ট (বাবু) হিসেবে সে গল্প শুনেছেন শংকর, আর আমাদের সৌভাগ্য, তা অক্ষরের যাদুতে দুমলাটের মাঝে বেঁধেও রেখেছেন তিনি। তাইতো অদ্ভুত অদ্ভুত সব গল্পের স্বাদ আমরা পাই এই "কত অজানারে" নামক উপন্যাসের আবরণে মোড়ানো গল্প সংকলনে!
এমন এক অসাধারণ বই শেষ করতে আমার লাগলো সাড়ে চার বছর। বই পড়তে শিখেছি যার হাত ধরে তার একজন ছোটমামা। মামা প্রায়ই বলেন, বই পড়ার চাইতে বই কেনার প্রতিই নাকি তার বেশী ঝোঁক! আমিও সেদিকেই যাচ্ছি কী না তা ভিন্ন আলাপ। তবে আমার খুব প্রিয় একজন মানুষ কত অজানারে সম্পর্কে বলেছিল, "কঠিন কঠিন লেখা পড়ে (নোয়াহ হারারীর স্যাপিয়েন্স নিয়ে আলা�� হচ্ছিল তখন, মজার ব্যাপার হল স্যাপিয়েন্সও একই দিন, একই সাথে কেনা।) যখন আমার মাথায় গিট্টু লেগে যায়, কত অজানারে পড়ে আমি তখন সেই গিট্টু খুলি!" আফসোস, শেষ করবনা করবনা করেও কত অজানারে শেষ হয়ে গেলো, এরপর থেকে আমার মাথায় লাগা গিট্টুগুলো খুলবে কে?
আইনপাড়া, অর্থাৎ কোর্ট-কাছারি-আদালত সম্বন্ধে আপনার ধারণা কি? সামান্য ধারণা পেয়ে আমার যা মনে হলো, এখানে পুরোদস্তুর ডিবেট চলে! জজ থাকেন স্পিকার, কখনো তার সাথে সহায়তায় জুরিরা, আর বাদী হোক বা আসামী- যার যার পক্ষের উকিল ব্যারিস্টার তার মক্কেলকে ষোলোআনা সাফ জানেন, "All my geese are swan, আমার সব কানা ছেলেই পদ্মলোচন।" কাড়ি কাড়ি বই আর রেফারেন্স নিয়ে তর্ক করে যান দুই ব্যারিস্টার, টাইম কিপার বা ফ্লোর ম্যানেজারের মতো ব্যারিস্টারদের সহকারীরা সেই তর্ক সচল রাখতে যা করার করেন। দিনশেষে কোনো বিরোধ নেই, রায় যেদিকেই হোত হাত মিলিয়ে ব্যারিস্টাররা বেরিয়ে যান পরের দিনের জন্য। বাংলা সিনেমার মতন একদমই না। বইয়ের প্রাণচরিত্র নোয়েল ফ্রেডরিখ বারওয়েল ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের শেষ ইংরেজ ব্যারিস্টার। বই থেকে, "অনেকে ভাবে এ পাড়ায় আইনের নামে যত রাজ্যের বে-আইনী কাজ হয়। উকিলেরা মিথ্যা কথা বলে, এটর্নিরা সুযোগ পেলেই মক্কেলকে শোষে। ভাই-এ ভাই-এ মোকাদ্দমায় দুইজনেই পথে বসে, মাঝখান দিয়ে এটর্নিরা কলকাতায় বাড়ি তোলে। কথাগুলো যে সবসময় মিথ্যা তা নয়, কিন্তু সবাই এখানে কিছু চোর ডাকাত নয়। এখানে অনেক মানুষ আছেন যারা জীবনে কখনো মিথ্যার আশ্রয় নেননি। সততাই তাদের জীবনের একমাত্র মূলধন। উড্রফ, স্যার গ্রিফিথ ইভান্স, উইলিয়াম জ্যাকসনের মত আইনিবিদরা যে কীর্তি রেখে গেছেন, আমাদের বারওয়েল সায়েব তার শেষ বর্তিকাবাহী। কলকাতা হাইকোর্টের শেষ ইংরেজ ব্যারিস্টার। অষ্টাদশ শতাব্দীতে যার শুরু, বিংশ শতাব্দীর মধ্যাহ্নে যার অবসান।" বাংলা সাহিত্যে শিবরাম চক্রবর্তী আর শংকরকে আমি আলাদা শ্রদ্ধার আসনে দেখি। পেশায় তারা সম্মানের স্থানে ছিলেন না, তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর আসনে থেকেও নিজ জায়গায় বসে জীবনকে সমঝদারের চোখে দেখে গেছেন, আর মুখে হাসি ধরে রেখে আমাদেরও দিয়েছেন অমূল্য সাহিত্য সম্ভার। প্রথম চাকরিজীবনে শংকর ছিলেন ব্যারিস্টারের সহকারী, চলতি কথায়, 'বাবু'। ওল্ড পোস্ট অফিস স্ট্রিটের কলকাতা হাইকোর্টে যদ্দিন ছিলেন, নিবিড় পর্যবেক্ষণে জীবনকে দেখে তার সাহিত্যিক বহিঃপ্রকাশ করেছেন। জীবনের এ নানা রং দেখানোয় কখনো ঝুলি খুলে বসেছেন ব্যারিস্টার বারওয়েল নিজে, কখনো আগত মক্কেলদের জবানবন্দিই সহায়। 'কত অজানারে' যে সময়ের রচনা, তখন ভারতবর্ষে ঠিক ইংরেজ বিচরণ লক্ষ্য করা যায় না। যারা তবু আছেন, ছিলেন দীর্ঘকাল থেকে যাওয়ার খেই ধরে নানারকম স্মৃতির সাথেই। বইয়ের শুরুতে এক মক্কেলের সন্ধান পাই আমরা, মেরিয়ন স্টুয়ার্ট, লেবাননে জন্ম। মা তার দুর্ভাগ্যে আদিম পেশাটি বেছে নিলেও মেয়েকে নিরাপদ রাখতে চেয়ে তাকে 'আভা স্টুয়ার্ট' নামে পাত্রস্থ করতে চান। প্রথম জীবনে লেবাননেই হাওয়ার্ড নামের এক ইংরেজ সেনা অফিসারের কাছে প্রেমে প্রত্যাখ্যাত এবং রক্ষিতা হিসেবে ব্যবহৃত হবার পর অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে মহিলা একাকী এসে নামলেন মুম্বাইয়ে, নাম নিলেন মেহেরুন্নিসা। এইখানে এক পূর্ব দেশীয় রাজার সেনাপতির সাথে পরিচয় হলো তার, যার নাম মহিউদ্দিন। তাকেই বিয়ে করে সুখের সন্ধান পেতে চাইলেন, কিন্তু বাধ সাধলেন রাজামশাই নিজে। বিদেশী মহিলা, এ তো সাক্ষাৎ স্পাই। ফরমান জারী হলো, হয় একে ছাড়ো, নয় চাকরী ছাড়ো। সেনাপতি মহোদয় অশেষ সাহসের পরিচয় দিয়ে মেহেরুন্নিসাকে রেল স্টেশনে নামিয়ে দিয়ে এলেন, একটি টিকিটও কিনে দিলেন। লেবানিজ এই কন্যা হাল ছাড়ার পাত্র ছিলেন না। আরেকজন রাজকুমারের মন ভিজে উঠলো তাকে দেখে, এইবার হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করলেন তিনি, নাম হলো রাণী মীরা আদিত্যনারায়ণ। চন্দ্রগড়ের রাজকুমারের হেরেম ঠাই পেলেন শেষ পর্যন্ত। চিঠি লিখে বারওয়েল সাহেবকে তার শেষ কৃতজ্ঞতাটি জানাতে ভোলেননি। এই মহিলার ব্যাপারে কি আপনার জাজমেন্ট? অসৎ, খারাপ, নষ্টা এক মহিলা নাকি সংগ্রামী এবং হার না মানা অসাধারণ শক্ত এক নারীচরিত্র ? ইংরেজ কন্যা হেলেন গ্রুবার্ট আর বাঙ্গালী যুবক সুরজিত রায়ের ভালোবাসার লড়াই, যেখানে হেলেন মামলা করেছিলেন সুরজিতের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ চেয়ে আর সুরজিতের নব্য তরুণী স্ত্রী তার হাত পাকড়ে অবাক দেখে যেত প্রতিদিনের মোকদ্দমা, হেলেন, যার কাছে এভিডেন্স হিসেবে সংরক্ষিত ছিল সুরজিতের প্রতিটা চিঠি, মামলা জিতেও হেলেন ক্ষমা করে দিয়েছিলেন পুরো জরিমানা, কিংবা হতদরিদ্র নির্যাতিতা বালিকা আরতি রায়ের মুখচাপা অসহায় গল্পগুলো শুধুমাত্র ভারতীয় সমাজে নারীদের অবস্থান এবং পৌরুষের বাগাড়াম্বরের চিত্র আইনের চোখ দিয়ে আমাদের দেখায়। প্রতিটি ক্ষেত্রেই বারওয়েল সাহেব মানবিকতার সর্বোত্তম পর্যায়ে পৌঁছে গিয়ে আইনের মধ্যে থেকে ন্যায়টাকে বের করে এনেছিলেন। ঐতিহ্যধারী গোল্ড পরিবারের উল্ভারহ্যাম্পটনের জেমস ফ্রেড্রিখ গোল্ড এবং মিস ফিগিনের হৃদয়বিদারক গল্প, যে কিনা পারিবারিক কবরস্থান ছেড়ে দূরে কোথাও নিজের সমাধি কামনা করেছেন এপিটাফে লেখার মতো শুধু বঞ্চনাই আছে বলে, কিংবা গ্রীক নাবিক নিকোলাস ড্রলাসের সাথে জাহাজ কোম্পানীর প্রতারণার মর্মান্তিক পরিণতি অথবা শিক্ষিতা বাঙ্গালী চিকিৎসক ডাঃ শেফালী মিত্রের সাথে সোফিয়া নামক এক তরুণীর মাতৃত্ব নিয়ে লড়াইয়ের চিত্রকল্পগুলো আমাদের চেনাজানা পরিবেশ এবং মানুষগুলো সম্পর্কে এক বিশাল ঝাঁকি দেয়, নিমেষে লন্ডভন্ড হয়ে যায় আমাদের সাজানো দৃষ্টিভঙ্গি আর বিচারবোধ। একজন আইনজীবি কিভাবে বুকে পাথর চেপে রেখে এই সমস্যাগুলোর নিরপেক্ষ সমাধানের কথা চিন্তা করেন, তা সাধারণ কোন মানুষের পক্ষে চিন্তা করাও অকল্পনীয় হয়ে দাঁড়ায়। শেষ ইংরেজ ব্যারিস্টার বারওয়েল সাহেবের তথাকথিত নেটিভ ইন্ডিয়ানদের প্রতি যে অসীম ভালবাসা ছিল, তার নজীর শংকর তুলে আনেন স্বদেশী বিপ্লবের বন্দী রবীন্দ্র কলিতার গল্পে। মাত্র ষোলো বছরের এ তরুণ থানায় হাজতবন্দী অবস্থায় প্ল্যানমাফিক খুন করেন এক দারোগাকে, স্বদেশী বন্দীদের অত্যাচার করার কারণে যাকে স্বদেশীরা ঘৃণা করেছিল। মিথ্যা সাক্ষ্য, 'ঝোঁকের বশে হত্যা' ইত্যাদি বিবৃতি দিতে অনেক অনুরোধ করা হয়েছিল রবীন্দকে। বাবা-মা একটা আকুতি নিয়েই বারওয়েলের ধর্ণায় পড়ে ছিলেন, জেল হোক তবু ছেলে বাঁচুক। রবীন্দ্র রাজি হয় নি। দৃঢ় কন্ঠে দোষ স্বীকার করে বলেছিলেন, দারোগার এটা পাওনা ছিল। বারওয়েল সাহেব অনেক চেষ্টা করেছিলেন, বড়লাট পর্যন্ত গিয়েছিলেন কিন্তু তাতে কোন লাভ হয়নি। রবীন্দ্র কলিতা ফাঁসিকাঠেই জীবন দেয়। একই ধরণের আরেকটি মামলায় আরেক সত্যবাদী বাঙ্গালী যুবককে বাঁচাতে বরিশাল কোর্টে এসেছিলেন তিনি। জমিজমার মামলাকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হিসেবে দেখিয়ে সিদ্ধি হাসিল করতে যাওয়া হিন্দু গোষ্ঠীর বিপক্ষে রুখে দাঁড়ানো সংখ্যালঘু খ্রিস্টান তরুন নরেন মন্ডলকে তিনি বলা যায় নিজ হাতে ফাঁসির কাষ্ঠ থেকে নামিয়ে এনেছেন। শংকরের কলমের জাদুতে সেই ঘটনা জীবন্ত হয়ে ফুটে ওঠে।
শীর্ষেন্দু'র একটি উপন্যাসের নাম ছিল 'নানা রঙের আলো'। এক সংসারের নানারকম মানুষ যেন একটি হীরের খন্ড, যার একপাশে আলো পড়লে হরেক দ্যুতি ছড়ায়। আমার মতে, 'কত অজানারে'র সার্থক নামকরণ হতে পারতো 'জীবনের নানা রং'। আইনের সাথে সাহিত্যের মিল কোনোকালেই হয়নি, আর এমন সাহিত্য-বিমুখ পরিবেশে বসেই কতভাবে জীবনকে দেখে গেছেন শংকর, আর কি অসাধারণ তার উপস্থাপন ভঙ্গি, আমাদের সামনে তুলে ধরে মানুষের এক অবাক করা স্বরূপ। লেখক বারওয়েল সাহেবের শৈশবের একটি গল্প বলেই বইটির সমাপ্তি টেনেছেন, যা মধ্যে মূলত এক কথায় পুরো বইটাই বিবৃত হয়ে গিয়েছে… লন্ডনে তখন প্রথম এক্স-রে মেশিন আসে। বালক নোয়েল কৌতূহলী হয়ে দেখতে গেলেন, কান্ড দেখে তিনি অবাক। বিস্ময়সুলভ চপলতায় তিনি বলে উঠলেন, এই আলোতে দেহের হাড় পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে! পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক চীনা ভদ্রলোক তাকে বলেছিলেন, Yes my boy; but only bones. Unfortunately it doesn’t show you your heart. আইনে অধিকার আদায়ের লড়াই বেশিরভাগ সময়েই 'পেশা'র খাতিরে রক্তমাংস ভেদ করে হৃদয় ছোঁয় না। তবু যখন ছোঁয়, তখন জন্ম নেওয়া গল্পগুলো মানবতার ইতিহাসে মুক্তো হয়ে জ্বলে। 'কত অজানারে' সে সময়কার অন্যতম সাহিত্যকর্ম হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। প্রথম বই লিখে সাড়া ফেলে দেওয়া লেখকের নজির দুর্লভ, শংকরের নামে বলা হয়েছিল, "কিছু লেখক প্রথম বইয়ে নিজের সর্বোত্তমটা খরচ করে ফেলে, সবটুকু সার্থকতা একবারেই পেয়ে যান, তারপর হারিয়ে যান সাহিত্যের ময়দান থেকে। শংকর হতে যাচ্ছেন তাদেরই একজন।" কিন্তু সে আশঙ্কার গুড়ে বালি দিয়ে পরের বই 'চৌরঙ্গী' আবারও প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম হয়, যেখানে পরবর্তী চাকরিতে দিল্লির এক হোটেল রিসেপশনিস্টের জায়গা থেকে জীবনোপাখ্যান রচনার কাজটি করে গেছেন শংকর। এই নিবেদিত সাহিত্যিক আপন চেষ্টায় উপহার দিয়েছেন একাধিক নন-ফিকশন, বিশের বেশি উপন্যাস, আরও অনেক আত্নজৈবনিক রচনা। তাঁর আসল নাম মনি শংকর মুখার্জি, যে জীবন্ত কিংবদন্তীর প্রথম চাকরি, সাহিত্যের যাত্রা আর 'শংকর' নামধারণ হয়েছিল নোয়েল ফ্রেডরিখ বারওয়েলের হাত ধরেই।
সাহিত্যমূল্যে উঁচুদরের বই এর জগতে চলাফেরা খুব বেশিদিন নয়। তবে বিসিএস পরীক্ষার এর জন্য বাংলা সাহিত্য-ইতিহাস পাঠ করেছি একদশক আগেই। খুবই অবাক হতে হয় শংকর-এর বই নিয়ে কোন আলোচনা মনে পড়ছে না। কিছুই কি ছিলো না, একদম মনে পড়বে না এমনটি হওয়ার নয়।
বইটি সাহিত্য মূল্যে কে কোথায় রাখবেন জানিনা। দিনলিপি ঘরনার স্মৃতিকথা ভিত্তিক বইটি দাগ কাটতে বাধ্য। আইন আদালত নিয়ে কিছু অভিজ্ঞতা থাকায় বুঝতে পারি বিচার-এর দীর্ঘসূত্রিতা আগের মতই আছে।
এখনও নিজের মধ্যে কত অজানা নিয়ে দিন চলে যাচ্ছে, বইটি তাই মনে করিয়ে দিলো।
ওরে আমাদের সায়েবদের আসল বিয়ে ওই কালো গাউনের সঙ্গেই। - এই কথাটি শংকর শুনেছিলেন ছোকাদার কাছে,কলকাতার ওল্ড স্ট্রীটের হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে বাবুদের বেঞ্চিতে বসে। হ্যা, যুবক বয়সে সেই দিকেই তার পদচারণা ছিল। শেষ ইংরেজ ব্যারিস্টার নোয়েল বারওয়েল মহোদয়ের স্ট্যানোগ্রাফির কাজ করতেন। সাহচর্য পেয়েছিলেন এক বন্ধু সুলভ মহৎ মানুষের, ব্যারিস্টার বাবু সায়েব!!
বইটিতে লেখক শংকরের জীবনের ব্যক্তিগত দিকের কিছুটা ছাপ পাওয়া যায়; যদিও পুরোপুরি আত্নজীবনীমূলক উপন্যাস বলা যায় না। এই বইতে সামনে এসেছে আইন পাড়ার মানুষের জীবনের গল্প। কত্ত পরিশ্রম তাদের, রাত জেগে জেগে মস্ত বড় বড় বই পড়ে সব কিছু ঠিক রাখা চাই; নইলে মামলার বিপক্ষের জবাব দেয়া চলবে কিভাবে? এই কাজ করতে করতে সুব্রত বাবুর মতো বড় ব্যারিস্টার হয়ে পড়েন নিঃসঙ্গ!অভ্যাসের কারণে পরিবারকে যে সময় দিতে পারেন নি! কত মানুষ এসেছে মক্কেল হয়ে! কেউ এসেছে সন্তানের দাবি নিয়ে, কেউ স্বামীর হাত থেকে বাঁচতে আবার ১৮ বছর বয়সী রবীন্দ্র কুলিতার মতো কেউ দেখিয়েছে দুঃসাহস।
মানুষের জীবনে কত না গল্প,কতটুকু জানা যায় তার?
আপনি চললেন ডান দিকে আর ওধারে বামদিকটা অজানা রয়ে যায়। এরই মাঝে কেউ কেউ সংসার ধর্ম করে মনে করে আর কি আছে জগতে?সবই তো জানা হয়ে গেল! আবার কেউ কেউ উদাস হয়ে ঘরের দাওয়ায় বসে থাকে; চায়ের কাপে ঠোঁট ঠেকিয়ে কিংবা বিড়ি-সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে-কত অজানারে!
শংকরের বই যেই দুইটা পড়েছি, বলে দিতে হয় না ভালো কিছু গল্প থাকবে। চৌরঙ্গীর সাথে আরেকটা যে মিল, আস্ত আন্তর্জাতিক একটা কলাকুশলী, কী লাইটে, কী ক্যামেরায়, কী চা আনতে। পরের দিকের বইয়ে হয়ত অত থাকে না, অন্তত মানিকবাবুর সিনেমা দুইটা সেই কথাই বলে।
এম্নিতে আমার কাছে চৌরঙ্গীর বুনিয়াদের মত শক্ত মনে হয় নাই। বেশি কাঁচা, বেশি ছাড়াছাড়া। আমার ঘুরেফিরে এখনো কনির কথাই মনে আসে। ঐ যে, নাঁচত যে।
এইসব তুলনা না টানলে, খাপছাড়া ভাবটা বাদ দিলে বেশ ভালোই। সাহেবকে পুরোপুরি চেনার সুযোগ, হয়ত চেনাবার চেষ্টাও, কম। অন্য চরিত্রগুলির ক্ষেত্রেও তাইই। তবুও, খারাপ লাগে না, এবং দ্রুত পড়ে ফেলা যায়। প্রথম উপন্যাস মাত্র লিখে শেষ করা সেই শংকরকে সাধুবাদ।
"এক পরম পুণ্য লগ্নে টেম্পল চেম্বারে এসেছিলাম। দেখতে পেয়েছি জীবনের এক মহা ঐশ্বর্যময় দিক। কোনো পরিশ্রম, কোনো অনুসন্ধান না করে আকস্মিক গুপ্তধনের সন্ধান পেয়েছি। যেন আনমনে হাঁটার পথে আচমকা হোঁচট খেয়ে চেয়ে দেখলাম, পায়ের কাছে কলসী বোঝাই মোহর।" -শংকর
অনিন্দ্য সুন্দর একটা বই। It encouraged me to work hard and help people. শংকর এর লেখার ধরন অসাধারণ। পুরো বইটিই যেন কলসি বোঝাই মোহর। Will read it again and again.
The Great Unknown - Sankar Rating - 3.75/5 Translated from Bengali by Soma Das.
Koto Ajanare - The Great Unknown is the first novel by Sankar. This book took form when literary bug had just then bitten Sankar. Sankar was then working as a clerk to the last British Barrister of Calcutta Noel Fredrick Barwell.
My first Sankar book was Chorwinghee - translated by Arunav Sinha, and that book had impressed me way too much that I found other Sankar writings which I had read or was reading (The Middleman and The Great Unknown) to be rather okayish and ordinary.
As a clerk to the barrister - Sankar met lots of people rather clients of the barrister who came to settle their legal disputes. Along with them they brought their stories. This book is a documentation of their stories most precisely from a legal implication standpoint. Apart from these there are stories of other barristers too, who had their share of legal experiences and some of their personal side of life too. There are stories of other babus and their experiences in the legal ecosystem too.
Overall, one wishes to or not, many of the stories are glued together by the commonality of law, 1950's Calcutta, poverty, post colonial India. What I did find missing was much more details into the personal life of Noel Fredrick Barwell, infact, he was married to Marion Barwell, but not a trace of mentioning in the book exists. Nor details on the personal side of Sankar. It was a bit of let down (ever so slightly) as one expects a little bit of oneself in what is termed as semi-autobiographical work, one cannot have everything as an outward projection.
The reason for me to find the stories monotonous because as a reader, I knew what to expect out of each story (if not precisely). A client approaches the barrister for some legal problem and you get to hear the story of the client, nature of dispute or complications.
The stories seemed okayish because in the contemporary era, one has access to news, newspaper, social media, online platforms and much more, so there is less likely stories like these haven't been heard of or read before. So each story hardly took a turn around the corner of surprise. This is where Chorwinghee was much ahead in terms of depth and surprises.
Also the narrator of the story stays with you for a short while may be like 20-25 pages then you end up with another. So there is no collaboration or planting a particular seed of thought in one story which takes shape in another story. Each story is more or less atomic.
Another reason I also felt that, the storyline and agenda seems outdated because with the advancement these days, there are more sophisticated and complicated legal issues. The issues mentioned here seemed to be from a bygone era, though lend a very rustic charm to the reader. Nevertheless, a good read.
অনন্য এক জীবন ঘনিষ্ঠ সাহিত্যকর্ম.. অনবদ্য এক সৃষ্টি। আর কি ঝরঝরে লেখা! ৫ তারার মধ্যে কোনো কোনো বই ৪.৫ পায়,কোনোটা পায় ৪.৬,তো কোনোটা ৪.৭,তাও ৫ই দিতে হয় দরাজ হয়ে। এই বইটার ক্ষেত্রে দরাজ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই,চোখ বন্ধ করে ৫ তারা।
নন-ফিকশন যে ফিকশনের চাইতেও এমন চমকপ্রদ হতে পারে, এই প্রথম এত গভীরভাবে উপলব্ধি করলাম। মানুষের জীবন আসলে কল্পনার চাইতেও বহুগুণে চিত্তাকর্ষক, একদম চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়ে গেল বইটা।
বইটাতে মণি শংকর মুখার্জী'র কোলকাতা হাইকোর্টের শেষ সাহেব ব্যারিস্টারের বাবু অর্থাৎ অ্যাসিসট্যান্ট হিসেবে কাজ করবার সময়কার কিছু ঘটনা উঠে এসেছে। বিচিত্র সব মানুষ, ততোধিক বিচিত্র তাঁদের জীবনের নানান ঘটনা- তাই তুলে ধরেছেন লেখক বইটার প্রতিটি পাতায়। তবে নিজের নামটা বাদে বাকিসব নাম বদলে দিয়েছেন।
শুরুতে কিছু terminology বুঝতে খানিক কষ্ট হলেও আস্তে আস্তে সহজতর এবং বোধগম্য হয়ে উঠতে থাকে। আর ছোকাদা, জগদীশদা', অর্জুন, হারুবাবু এঁদের সাথেও কখন যেন একটা সখ্যতা গড়ে উঠেছিল বইটা পড়তে পড়তে। লেখক প্রায় প্রায়-ই এক কাহিনীর ভেতরে অন্য কাহিনীতে ঢুকে গেছেন। কিন্ত এতটাই সাবলীলভাবে যে বুঝতে একদম অসুবিধা হয় না। বরং মনে হয়, আরে! এভাবেই তো আমরা এক চিন্তা থেকে অন্যয় চিন্তায় লাফিয়ে বেড়াই আর চিন্তার খেই হারিয়ে ফেলি।
বইটা ১৯৫৫ সালে প্রকাশিত। তাই স্বভাবতই আমাদের এখনকার চিন্তাধারার সাথে সেসময়ের অনেক কিছুই মিলবে না। অনেক জায়গাতেই মনে হবে কিছু গড়বড় হলেই শুধু নারীকুলের দোষ দিয়ে যাচ্ছে। তাই পড়বার সময় একটু সময়কালটা বিবেচনায় রেখে পড়লে পাঠকের-ই সুবিধা।
শেষটা বেশ আগে থেকেই খানিক আন্দাজ করতে পারলেও শেষ শব্দটা পড়বার সময় কেন যেন চোখের কোনাটা জলে ভিজে উঠেছিল অজান্তেই। শংকর এর কোন বই দিয়ে শুরু করবেন এমন চিন্তা থাকলে নিঃসন্দেহে এইটে দিয়ে শুরু করতে পারেন।
An absolutely lovely portrait of the Calcutta High Court of the 1950s, Sankar's the Great Unknown is a prime example of why we Indians should translate (and read translations) more. Sankar brings alive the life and times of a different India, and opens up a slice of history for us; the novel is more or less an autobiographical account, which just makes its stories all the more enthralling.
Sankar's journeys in English continue with the critically acclaimed Chowringhee and Thackeray Mansion (both out in gorgeous Penguin editions, and both of which I'll read this year); to readers everywhere and to Indians especially, these translations are a gift.
" আরতি রায়কে সেই আমার শেষ দেখা। কে জানে কলকাতার দক্ষিণ প্রান্তে একডালিয়া রোডের সেই শ্রীহীন দোতালার বাড়ির মেয়েটি হয়তো আজও প্রতি সন্ধ্যায় অধীর প্রতীক্ষায় আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে, আর দিন গোনে কবে নতুন আইন পাশ হবে। "
যেকোন গণমুখী পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তি যখন কলম ধরেন, তাদের মধ্যে একটা সাদৃশ্য দেখা যায়। লেখক নিজের গল্প নয়, অন্যদের গল্প বলায়ই বেশি মন দেন। কত অজানারে বইটিও তার ব্যতিক্রম নয়।
আদালত পাড়ায় আসা অসংখ্য ব্যারিস্টার, মক্কেল, সাক্ষী, অপরাধী, নির্দোষ, আদালতের সাথে যুক্ত মানুষদের নিয়েই এই বই। আর কি না জানে, মানুষের জীবনের গল্পের চেয়ে সুন্দর, রহস্যময় কোন গল্পই হতে পারে না। তাই লেখকের সাথে কত অজানার দেশে পাড়ি জমাই আমরাও, জানতে পারি হাজার রহস্যের মানুষকে, তাদের গল্পগুলিকে।প্রতিবারের মত এবারও অনুভব করলাম, ন্যায় অন্যায়, সুখ-দু:খ, ভালোবাসা-ঘেন্না জগতে বিপরীত সত্ত্বার মধ্যকার ফারাক কত সামান্য৷ এ বিচার সহজ নয়।
লেখককে কোন গল্প বানাতে হয়নি, ভাষার মারপ্যাঁচও তাই নেই। সহজ, সুন্দর ও স্বাভাবিক গলায় তিনি বলে গেছেন তাদের গল্প, যাদের তিনি বেশিরভাগই চিনতেন ও জানতেন। তাই সাহিত্যের সাথে কলম পেষা, বুদ্ধিজীবী লেঠেলদের পরিচয় অতি সামান্য হলেও কত অজানারে সার্থকভাবেই কালজয়ী রচনা৷ এবং ভীষণভাবে হৃদয়গ্রাহী।
বিভূতিদার সাথে এসেই প্রথমবারের মতো হাইকোর্ট দেখা হল শংকরের। নাহ,কোন মামলা মোকদ্দমা করতে নয়। সাহেব ব্যারিস্টারের স্ট্রেনোগ্রাফার হিসেবে কাজ করতে, বিভূতিদা শংকরকে আনলেন আইন পাড়ায়।
এই আইন পাড়ায় কাজ করতে গিয়ে, শংকর দেখেছে বিভিন্ন ঘটনা,সাক্ষী হয়েছে বিচিত্র অভিজ্ঞতার। প্রতিদিন নিত্যনতুন ঘটনা শংকরের অভিজ্ঞতার ভান্ডারকে করেছে পূর্ণ। সে অভিজ্ঞতার ঝাঁপি থেকে অনেকগুলো ঘটনা তিনি শুনিয়েছেন তার পাঠককে "কত অজানারে" বইয়ের মাধ্যমে।