A rigged game of dice brings the 100 Kaurava princes, led by the scheming Duryodhana, to the battlefield against their cousins, the five Pandavas - the noble but gullible Yudhisthira, the mighty Bheema, master archer Arjuna and the twins, Nakula and Sahadeva. The epic war of Kurukshetra, which lasted 18 tragic days, pit brother against brother, uncle against nephew and disciple against teacher. The intense battles between warriors equally fearless and skilled - Karna and Abhimanyu, Arjuna and Bheeshma, Drona and Dhrishtadyumna, and Karna and Arjuna - were as much conflicts of loyalty and ambition as they were of choices. The side they chose to support, or fight against, led them into a labyrinth of duty and destiny, where both the defeated and the victorious - lost something or someone precious to them. In this classic retelling of the Mahabharata, written especially for young readers by the inimitable Upendrakishore Ray Chowdhury, and checked and proofed originally by none other than Rabindranath Tagore, translated for the first time into English by leading children's writer and translator, Swapna Dutta, this eternal tale is brought to life in all its drama and detail.
Upendrakishore Ray Chowdhury (Bangla: উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী), also known as Upendrokishore Ray (উপেন্দ্রকিশোর রায়) was a famous writer, painter, violin player and composer, technologist and entrepreneur.
He was the father of the famous writer Sukumar Ray and grandfather of the renowned film-maker Satyajit Ray. Upendrakishore Ray Chowdhury was a product and leading member of the Brahmo Movement that spearheaded the cultural rejuvenation of Bengal. As a writer he is best known for his collection of folklore; as a printer he pioneered in India in the art of engraving and was the first to attempt color printing at the time when engraving and color printing were also being pioneered in the West.
Upendrakishore was born on 12 May 1863 in a little village called Moshua in Mymensingh District in Bengal, now in Bangladesh. He spent most of his adult life in Kolkata, where he died on 20 December 1915, aged only fifty-two. He was born Kamadaranjan Ray, to Kalinath Ray, a scholar in Sanskrit, Arabic and Persian. At the age of five, Kamadaranjan was adopted by Harikishore, a relative who was a zamindar in Mymensingh (now in Bangladesh). Harikishore renamed his adopted son Upendrakishore, and added the honorific ‘Raychaudhuri’ as a surname. Upendra passed the Entrance examination in 1880 with scholarship from Mymensingh Zilla School. He studied for a while at Presidency College, then affiliated with the University of Calcutta but passed BA examination in 1884 from the Calcutta Metropolitan Institution (now Vidyasagar College). Upendra took to drawing while in school. He published his first literary work in the magazine Sakha in 1883.
Upendrakishore first introduced modern blockmaking, including half-tone and colour block making, in South Asia. In 1913 he founded what was then probably the finest printing press in South Asia, U. Ray and Sons at 100 Garpar Road. Even the building plans were designed by him. He quickly earned recognition in India and abroad for the new methods he developed for printing both black & white and color photographs with great accuracy of detail.
Upendrakishore's greatest contribution was in the field of children's literature in Bengali. He did most of the illustrations of his books himself. In April 1913, Upendrakishore started the magazine Sandesh, a popular children's magazine in Bengali that is still published today. It was the first magazine for children in India that had coloured pictures, and it became an institution in Bengal.
Upendrakishore embraced the liberal religious movement of Brahmo Samaj in 1883, after the death of his foster-father and he was a deeply religious man. But his scientific bent of mind is reflected in the numerous science articles he wrote for children. He published two remarkable books on popular science. His scientific interests were further nurtured by his close friendship to the scientists Jagadishchandra Bose and Prafullachandra Ray, all of whom lived and worked very close to each other. Also a musician, Upendrakishore wrote two books about music.
(এটি ‘ছেলেদের মহাভারত’ এর রিভিউ নয়। কেন পড়েছি তা নিয়ে বিতং আলাপের শেষে কেন এর রিভিউ করা কঠিন, তা নিয়ে অল্প কথাবার্তার লিখিত রূপ।)
উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী কি বিশাল একটা দায়িত্ব নিয়েছিলেন! মহাভারতকে কিশোরদের উপযোগী করে লেখা কারো জন্যই সহজ হবার কথা না। আর তিনি যে শুধু তা করেছেন তা না, লিখেছেনও সহজতম ভাষায়।
এর আগে মহাভারত পড়ি নি। সাহসে কুলোয় নি। মনে হতো যে শুরু করলেও শেষ করা হবে না। কোন একটা কারনে যখনি পড়তে চেয়েছি, রাজশেখর বসুরটাই পড়ব ভেবেছি। কিন্তু, কবে জানি কি মনে হওয়ায় উপেন্দ্রকিশোরেরটা কিনেছিলাম। আর গতবছর শুরু করেও অন্য বইয়ে ঢুকে গিয়ে আর শেষ করি নি। শুরু করার আগে আরো কারন ছিল না পড়ার। তার মধ্যে একটা ছিল, এটা ভেবে নেওয়া যে এই আজগুবি কাহিনী হয়তো ভালো লাগবে না! কি ভুলটাই না ভাবতাম।
শেষমেশ আজকে মহাভারত পড়ে শেষ করলাম। আর তা জরুরীও হয়ে পড়েছিল। কারন, উপমহাদেশীয় সিনেমার কাহিনীর গতিপ্রকৃতি আজব ঠেকতো একটা সময়ে, বিশেষ করে প্রথম প্রথম ইউরোপীয় ছবির প্রতি আকৃষ্ট হবার পর। যতো দিন যাচ্ছে, ততো নিজের এই আকর্ষনের পিছনের কিছু অপছন্দের কারন বের হচ্ছে। মনে হচ্ছে, তাবৎ পৃথিবীর মানুষের মতো সাদা চামড়ার লোক যাই করে, তা নিয়েই যে একটা অটোমেটিক ভক্তি শ্রদ্ধা আমাদের মধ্যে চলে আসে, তা আমার মধ্যেও এসে পড়েছিল! যা আসলে কাজের কিছু না। অন্ধ করে তোলে এই মনোভাব। এই অন্ধত্বের জের ধরেই মনে হয় আমরা এলিজাবেথের মৃত্যুতেও শোক প্রকাশ করে বসি! পর্দার সবকিছুতে পরিপাটিত্বই যেন মূল দাবি হয়ে পড়েছে এর ফলে। নিজেদের জীবনের সাথে মিলুক না মিলুক, ভাবতে ভালোবাসি যে আমরা মনে হয় পর্দার ঐ সাদা চামড়ার লোকগুলোই! নিজেদের সবই এই কারনে অসহ্য লাগে অনেকের এই ভেবে যে সত্যি সত্যি কেন আমরা ‘এলিট’ জাতের অংশ হয়ে জন্মালাম না!
এসব ইউরোপীয় সভ্য লোকদের একজন কোন এক সময়ে সত্যজিতের ‘পথের পাঁচালী’ দেখতে গিয়ে সিনেমাটির চরিত্ররা হাত দিয়ে খাবার খাচ্ছে, এই দৃশ্য সইতে না পেরে পেশায় সমালোচক হয়েও সিনেমাটি শেষ করতে পারেন নি। ঘিন্নাপিত্তির জয়জয়কার বিষয়ক এই ঘটনার উল্লেখ করেছেন সত্যজিৎ রায় নিজেই, তাঁর Our Films, Their Films এ।
তাই ভাবলাম শুরু থেকে শুরু করা দরকার। এতো সিনেমায় এতো রেফারেন্স থাকে মহাভারতের, সেগুলো পুরোটা ধরতেও এটা পড়া ফরজ হয়ে পড়ছিল। আর বই বাদে যা ভালোবাসি, যা নিত্যসঙ্গী, তা সিনেমাই। তাকে আরো বুঝতে ও গভীরভাবে ভালোবাসতে নানা বিষয় পড়ালেখা বেশ সাহায্য করে।
নিজের চিন্তাভাবনার শুদ্ধিকরনের আরেকটি ধাপ হিসেবেই মহাভারত পড়লাম। জানি না, মনকে কতোটা কলুষমুক্ত করতে পেরেছি। কিন্তু, পড়ার আগেই আসলে অনেক কিছু নিয়ে ‘ছি ছি’ করার একটা যেই হালকার উপর ঝাপসা প্রবনতায় আস্তে আস্তে জড়িয়ে যাচ্ছিলাম, তাতে পুরোপুরি নিজেকে হারিয়ে ফেলার আগেই বের হয়ে এসেছিলাম। সে কারনে, মনে মুগ্ধতার উপলব্ধি সংক্রান্ত কোন পূর্বশর্ত ছিল না। আর মনের এই অবস্থাই ‘মহাভারত’ পড়ার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত, তা বুঝেই পড়ার আগ্রহ বেড়ে গিয়েছিল। এর আগের অবস্থায় থাকলে আঁটো মন যেসব প্রশ্ন করতো, অনুভব না করেই, তা মহাভারতকে অন্তত উপভোগ করতে দিতো না।
মহাভারতের রিভিউ হয়? ঠিক জানি না। কিন্তু, পৌরানিক এই উপাখ্যানের জায়গায় জায়গায় সেক্সিজমের প্রবল প্রতাপ মনকে অবশ্যই ক্ষুন্ন করে। যদিও এটা আশা করা উচিৎ না যে এতে তা থাকবে না! আর ভেবে নেওয়া উত্তম যে মুনিঋষিদের জন্য নারী বিষয়ক কল্পনায় যা এসেছে এখানে, সেটাই স্বাভাবিক। কারন, সময়ে ফিরে গিয়ে ব্যাসদেবকে নারী আর মানুষ যে আসলে একই বিষয়, তা তিনি কেন তখন বুঝে এসময়ের জন্য যুতসই কাহিনী ফাঁদেন নি, তা নিয়ে অভিযোগ করা যায় না। আর এখনো যে সেক্সিজম সাহিত্য ও বাস্তবজীবন থেকে পুরোপুরি মুছে গেছে, এমনও না। সুতরাং, অপহরণ করে বিয়ে করা যে বীরের কাজ বা দ্রৌপদীর নিজের ইচ্ছা অনিচ্ছা চুলোয় ফেলে দিয়ে পান্ডবদের পাঁচজনকেই স্বামী হিসেবে গ্রহণ করতে বাধ্য হওয়া, এসব পড়তে গিয়ে ঠিকই বিরক্ত লাগে। বাস্তবেও এখনো মেয়েদের নিয়ে এসব চিন্তা প্রকাশে বেশিরভাগ মানুষের কোন দ্বিধায় না থাকা একই রকম বিরক্তির উৎপাদন করে। অর্জুনের যুদ্ধং দেহী মনোভাবও বেশ অসহ্য। কুরুক্ষেত্রর পুরো অংশটাই পড়ে মনে হয়েছে এদের আসলেই জীবনে আর কিছু নাই! যুদ্ধটা না করলে এরা যে অকর্মাই, তা কাজের অভাবে বুঝতে বাকি থাকতো না। তাও ভালো যে এরা কাল্পনিক চরিত্রই ছিলেন। বাস্তবেও কুরুক্ষেত্রর যুদ্ধ মহাজরুরী, এটা কিছু কিছু দেশ ভেবে যে যুদ্ধ থামাচ্ছে না, তা ভেবে কষ্ট পেলেও রক্ত গরম কৌরবদের প্রাথমিক পরিণতি একটু শান্তি দেয়। চিরন্তন না হোক, বাস্তবে ঐ ক্ষণস্থায়ী পরিণতির দেখা মিললেও আসলে খুশি হবার কারন পেতাম।
শীঘ্রই উপেন্দ্রকিশোরের ‘ছেলেদের রামায়ন’ পড়ে ফেলতে হবে। হ্যা, মহাভারতের মতো আমি সেটা নিয়েও সবার মতোই স্পয়লার খেয়ে বসে আছি। তাও, এটা পড়ার পর ওটা না পড়ে থাকাটা অন্যায় হয়ে যাবে।
মহাভারত এক বিস্ময়ের নাম। মানুষের চিরায়ত সমস্ত প্রবৃত্তির সমাহার ঘটেছে উক্ত মহাগ্রন্থে। পড়তে পড়তে মনে হয়নি এ হাজার বছর আগের গল্প। অলৌকিকতা বাদ দিলে মানুষের মাঝের মৌলিক বৈশিষ্ট্যাবলী এখনো একই রকম রয়ে গেছে।
উপেন্দ্রকিশোরের ভাষা এতো সুন্দর! এতো প্রাঞ্জল আর সুখপাঠ্য যে তড়তড় করে পড়ে গেছি। তবে অহেতুক পান্ডবদের গৌরাবান্বিত করার প্রবণতা ভালো লাগেনি। যে কাজ অর্জুন করলে হয় ক্ষত্রিয়োচিত মহৎকর্ম, তা কর্ণ করলে হয় অহংকার আর নিচুকর্ম! সবমিলিয়ে মহাভারত পাঠের শুভসূচনা করতে পেরে আনন্দিত।
মহাভারতের এত সব চরিত্র, তাদের অদ্ভুত সব যুক্তি, নৈতিকতা ও ক্ষমতা, তা থেকে সৃষ্ট জটিল সব ঘটনাবলি, সেসব ঘটনাবলীর আরও জটিল ব্যাপ্তি - সেগুলো বাচ্চাদের বলা, তাও সতর্কতার সাথে শিশুদের জন্য অনুপযোগী কন্টেন্ট এড়িয়ে, নিরীহ ভঙ্গিতে, আনন্দময় বৈঠকি আবহতে এবং ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ এড়িয়ে শুধু গল্প হিসেবেই বলার মত জটিল কাজটি উপেন্দ্রকিশোর সম্পন্ন করেছেন সাফল্যের সাথে। সম্পন্ন করেছেন এমনভাবে যেন শুধু উপেন্দ্রকিশোরের পক্ষেই সম্ভব ছিল। চিন্তা করে কুল পাচ্ছি না, ঠিক কতখানি পরিশ্রম করতে হয়েছে গ্রন্থখানি দাঁড় করাতে।
তবে ছোট্ট একটা আপত্তি আছে, যুদ্ধের বিবরণ বড়ই লম্বা মনে হয়েছে। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পুনরাবৃত্তিমূলক অংশগুলো না হলেই বোধহয় ভাল হত।
প্রাঞ্জল বই, ক্লাসিক যাকে বলে। ছোটবেলায় বইমেলায় কিনেছিলাম, তারপর অনেকদিন না পড়ে ফেলে রাখা। সাধু ভাষা বলেই হয়তো বা। এই দিয়েই অনেকের প্রাথমিক মহাভারতে হাতেখড়ি। আমি অবশ্য যদ্দিনে পড়েছিলাম, ততদিনে বেশ কিছুটা বুড়িয়ে গেছি। শৈশব আর কৈশোরের প্রাক্কালে, ক-বছরের মাথায় রাজশেখর বসুর সারানুবাদ নিয়ে বসার কিছু আগে।।
তবুও বলবো, বাঙালির মহাভারত চর্চা এই বইটিকে ছাড়া অসম্পূর্ণ�� আর কজনই বা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর মতন করে গল্প বলতে পারেন?
কোন বইকে পাঁচটা স্টার দিলে সেটার ব্যাখা দেয়া তেমন জরুরী নয়, কিন্তু কোন বইয়ে একটা স্টার দিলে একটা জাস্টিফিকেশন দেয়াটা অবশ্যই আসে আমি মনে করি। এটা যতটা না অন্য পাঠকদের জন্য, তার চেয়ে বেশি নিজের জন্যই।বইটি হাতে নেই মহাভারত পড়ার সূচনা হিসেবে। ধর্মীয় পুরাণ হিসেবে বইটা পড়ার অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল। কিন্তু শুরুতেই বড় বই গুলো পড়ার সাহস পাইনি। “ছেলেদের মহাভারত” এই কারনেই বেছে নেয়া। কিন্তু আশায় গুড়ে-বালি দিয়ে বইটা আমাকে হতাশ করল। মহাভারতের কাহিনীতে এত যুদ্ধ, এত সংঘাত! ক্ষমতার লড়াই, ভাইয়ে ভাইয়ে কাটাকাটি, গুরু-শিষ্যে লড়াই, দাদা-দৌহিত্রে হানাহানি! সত্যি, এ আমার বই না! পৃথিবীতে সাদা কালোতে , ধর্ম-অধর্মে, ভাল-খারাপে যুদ্ধ তো চিরায়ত। কিন্তু এ আবার এমন এক যুদ্ধ যেখানে ধর্মের প্রতিনিধিরাও ছল করতে ছাড়েন না। যুধিষ্ঠিরের “অশ্বত্থামা মরিয়াছে...হাতি” এ জায়গা পড়ে এই সিদ্ধান্তে আসতে আমি বাধ্য হয়। পান্ডবরা সবাই বরাবরই ভাল, কৌরবরা একান্তই খারাপ। আর যুদ্ধ পর্ব এই একজন এর দলে একটু পর সে অন্য দলে! মানুষের মুখে শোনা মহাভারতের কিছু কিছু ঘটনা আমার খুব ভাল লাগে। যেমন পান্ডবদের অস্ত্র শিক্ষা অংশে লক্ষ্য অর্জনে অর্জুনের অসমান্য দক্ষতার দৃষ্টান্ত আমাকে মুগদ্ধ করেছে বরাবরই। তবে এ বইটিতে এসব সুন্দর ঘটনার অবতারনাও খুব একটা আর্কষনীয় হয়ে ধরা দেয়নি। নিতান্তই সাধারন ভাবে উঠে এসেছে। বইটি ছোটদের উপযোগী করে লিখা হয়েছে তাই এ বই পড়ে মহাভারত নিয়ে মন্তব্য করা হবে পুকুরে নেমে সাগর দেখার সাধ মেটানো। সামনে মহাভারতের কাহিনী নিয়ে আরও বই পড়ার ইচ্ছা আছে। আশা করি আমার ধারনা তাতে বদলে যাবে।
আমার মহাভারত-প্রীতির সূচনা উপেন্দ্রকিশোরের এই বইটির মাধ্যমে। আমার চোখে দুনিয়ায় সেরা মহাকাব্য 'মহাভারত'। এত এত চরিত্র, এত বিচিত্র ও গভীর চিন্তাদর্শন পৃথিবীর বাকি জাত মহাকাব্যে আমি পাইনি। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর কত ভালো গল্প বলতে পারেন, তা সকলের বিদিত। সাধুভাষায় লেখা হলেও দিব্যি পড়ে ফেলতে পারা যায় 'ছেলেদের মহাভারত'।
এই বই কখনও পুরোনো হবে না ; জমবে না ধুলোবালি। কিশোরবেলার আনন্দময় অভিজ্ঞতার অমিলন সাক্ষী হয়ে রইবে চিরকাল।
কিছুদিন পরপর মহাভারতের নানা ভার্সন পড়তে ভালো লাগে। কখনো বা ব্যাখ্যা, কখনো বা গল্প। মহাভারতের এত এত গলিঘুঁজি আছে যে কূল পাওয়া দায়। রাজশেখর বসুর সারানুবাদ বাদেও নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী, বাণী বসু, প্রতিভা বসু এঁদের বই পড়া হয়েছে। তবুও এই ছেলেদের মহাভারতটা পড়ে একটা আনন্দ পেয়েছি। ছোটদের মনে যেন আঘাত না লাগে সেভাবেই লেখা।
মহাভারত সম্পর্কে পড়া এটা আমার চতুর্থ বই। এই বইটা ছোটদের জন্য লেখা। যাদের মহাভারত সম্পর্কে ধারণা নেই,তারা এই বই দিয়ে মহাভারত পড়া শুরু করতে পারেন। এই যে অংশটা বেশি ভালো লেগেছে তা হলো যুদ্ধের অংশটা। অসাধারণ। লেখক এত চমৎকার যুদ্ধের বর্ণনা দিয়েছেন,যত পড়েছি তত মুগ্ধ হয়েছি। আমার জানা মতে মহাভারত নিয়ে উপেন্দ্রকিশোরের আর কোন বই নেই। যদি থাকতো সেটা শেষ করে নিতাম।
মহাভারতে কর্ণ আমার সবচেয়ে প্রিয় চরিত্র। এখানে কর্ণকে ঠিকমতো মনে হলো গ্লোরিফাই করেনি। তাই তো অবশ্য হবার কথা! কর্ণরা তো গ্লোরিফাইড হবার জন্য জন্ম নেয় না!
বাচ্চাদের উপযোগী করে মহাভারতের সকল ঘটনা বর্ণনা করা সহজ না, তবে এটা করে দেখিয়েছেন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর। তার লেখা ভালোই উপভোগ্য ছিল। সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনারই বর্ণনা তিনি করেছেন।
তবে যুদ্ধের ঘটনা গুলো বেশি বড় আর পুনরাবৃত্তি হয়েছে অনেক কথার যুদ্ধের ঘটনায়। আর পাণ্ডবদের প্রতি তার পক্ষপাতিত্বও ছিল কিঞ্চিৎ। যারা মহাভারত নিয়ে জানতে চান, তবে আকার দেখে ভয় পেয়ে যান(কথায় আছে-যা নেই ভারতে তা নেই ভারতে), তারা এ বইটা পড়তে পারেন। Personal rating: 4.7/5
বহু মানুষের মহাভারত পড়ার সূচনা এই বই-এর হাত ধরে। আমার মতো অনেকেই অত বড় এপিক শুরু করারই সাহস পেতো না এই বইটি পড়ে একটা ওভারঅল ধারণা না পেলে। সুবিশাল একটা এপিককে মাত্র দুশো পাতার মধ্যে বর্ণনা মোটেই সহজ কাজ ছিলনা, স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ নাকি 'পাণ্ডুলিপির আদ্যোপ্রান্ত সংশোধন' করে দেবার পর উপেন্দ্রকিশোর তা প্রকাশ করেন। তবে বইটির অর্ধেক জুড়ে যুদ্ধের বর্ণনা থাকলেও, তা বড়ই একঘেয়ে লাগলো। জানিনা মূল মহাভারতেও তা একই রকম লাগবে কিনা। আর একটা ব্যাপার বড়ই হাস্যকর, কোনো এক ভাই-এর দ্রৌপদীর 'সহিত কথাবার্তা কহিবার সময়'(🤣) অন্য ভাইরা তাদের বিরক্ত করবে না, এই নাকি ছিল পাণ্ডবদের নিয়ম; হয়তো বাচ্ছাদের জন্য লেখা বলেই সন্তর্পণে লেখক এইসব বিষয় এড়িয়ে গেছেন!
অনেকদিন ধরেই মহাভারত নিয়ে পড়াশোনার ইচ্ছা।কিন্তু প্রথমেই তো আর সেই কঠিন ভাষায় লিখিত মহাভারত পড়া যায় না,সেজন্য মূল কাহিনী জানতে উপেন্দ্রকিশোরের বইটা দিয়েই শুরু করা।বড় স্কেলে মহাভারত পড়া শুরুর জন্যে সহজ ভাষায় লিখা বইটি অত্যন্ত সহায়ক।
বইটা খুব পছন্দের, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের কল্যাণে পড়া। কিন্তু এই বই সামনে আসলেই একজন লোকের কথা মনে পরে। সেই লোকের নাম- পরিমল জয়ধর। ইয়েপ, দ্যা রেপিস্ট টিচার। উনি আমাদের বাংলার শিক্ষক ছিলেন সেকালে।
আমি সেই ছোটবেলা থেকে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সাথে যুক্ত- আমাদের স্কুলে প্রতি বৃহস্পতিবার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র থেকে কো-অর্ডিনেটর আপু/ভাইয়া আসতো আমাদের প্রতি সপ্তাহে নতুন বই দিতে। আমরা প্রতিটি বই পড়ার জন্য ১ সপ্তাহ সময় পেতাম। বছর শেষে সেইসব বইয়ের উপর আমাদের পরীক্ষা দিতে হতো- সেই ভিত্তিতে আমাদের পুরস্কার দেওয়া হতো। এই পুরো ব্যাপ���রটার সাথে আমি সারা স্কুলজীবনে এবং কলেজজীবনে সম্পৃক্ত ছিলাম- ক্যাপ্টেন হিসেবে। সেই সুবাদে প্রতি বুধবারের মধ্যে সবার বই কালেক্ট করা, রিমাইন্ডার দেওয়া যেন কেউ ভুলে গেলে বৃহস্পতিবার অবশ্যই বই নিয়ে আসে, বৃহস্পতিবার আপু/ভাইয়া'রা বই দিয়ে গেলে সর্ট করা সব নিয়েই ব্যস্ত থাকা হতো। আমার বেঞ্চে থাকত বইগুলো- নরমালি বুধবার আর বৃহস্পতিবার তাই অনেক টিচার চোখ রাঙিয়ে যেত। পড়ালেখায় মোটামুটি ভালো ছিলাম বলে হালকা টিপ্পনি কেটে সড়কে পরতো।
কোন এক বৃহস্পতিবার আমার বেঞ্চে "ছেলেদের মহাভারত" একদম স্তুপ করা বইগুলো একদম উপরে ছিল। স্যার বইটা হাতে নিয়ে খুব দেখলেন- পাতা উল্টিয়ে এরপর বললেন, "ছেলের মহাভারত বুঝলাম, কিন্তু মেয়েদের মহাভারত কোথায়? আর তোমাদের এই ছেলেদের ভার্শন পড়াচ্ছে কেন?" - বলে খুব হাসলেন। এই বই সামনে আসলেই আমার চোখে এই পুরো ব্যাপারটা ভেসে উঠে।
'ছেলেদের মহাভারতে' উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী দেখিয়েছেন কঠিন মনে হওয়া সাধু ভাষাকেও কেমন করে মধুর ব্যঞ্জনায় কলকলে চলিতর মতো সহজ করে উপস্থাপন করা যায়। মহাভারতের কাহিনি ছোটদের জন্য অতি সুখপাঠ্য করে তিনি তাঁর ট্রেডমার্ক মেদহীন ভাষায় লিখেছেন। পড়তে পড়তে এমন মনে হবে যেন তিনি নিজেই সম্মুখে তাঁর অনুজদের নিয়ে গল্প করছেন। অবশ্যপাঠ্য।
উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর লেখা বলে কথা! বেশ সহজ সাবলীল ও প্রাঞ্জল সাধুভাষায় তিনি পুরো মহাভারতের আদ্যোপান্ত গুছিয়ে এনেছেন। শব্দের যদি জীবন্ত হয়ে কথা কইবার শক্তি থাকতো, তাহলে তা তাঁর লিখনের জাদুতেই হয়ে উঠতো।
প্রতিটা ঘটনাই আমাকে এত এত আচ্ছন্ন করে রেখেছে যে আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুধু পড়ে গিয়েছি একমনে। মহাভারত আমাদের শিক্ষা দেয় ভাল মন্দের তফাত বুঝবার, অন্যায়কে মেনে না নেয়ার। প্রিয় চরিত্র যুধিষ্ঠির শিক্ষা দেয় সর্বদা সত্য ও ন্যায়কে চরিত্রে ধারণ করবার। এছাড়াও অর্জুন ও কৃষ্ণের মধ্যকার বন্ধুত্ব থেকে আমাদের সকলেরই শিক্ষা নেয়া উচিত।
সবচেয়ে করুণ লেগেছে যুদ্ধের বর্ণনাগুলো! বিশেষ করে অভিমন্যু বধ এবং ভীষ্মের মৃত্যু আমাকে খুব ব্যথিত করেছে।
সবশেষে সকলের স্বর্গে পুনর্মিলনীর ঘটনা দিয়ে এই অমর মহাকাব্যের এক সফল হ্যাপি এন্ডিং-- এর চেয়ে স্বস্তির আর কিছু নেই।
ছোটবেলায় অসংখ্যবার পড়েছে বইটা। এতো সুন্দরভাবে অনুবাদ করা, যতোবারই পড়েছি হারিয়ে যেতাম গল্পের মধ্যে... নাম যেই গ্রন্থের "মহা" ভারত, সে বিশাল হবে সেই তো স্বাভাবিক। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল কালীপ্রসন্ন সিংহ অনুবাদিত মহাভারত পড়বার। সেখানে কালীপ্রসন্ন মহাভারতের কাহিনীগুলো অনেক বিশদভাবে বর্ণনা করেছেন। আঠারো পর্বের এই মহাভারতের প্রতিটি খন্ডের জন্যে আলাদা আলাদা গ্রন্থ রচনা করা সম্ভব, সেই মহা গ্রন্থ উপেন্দ্রকিশোর রায় এতো সহজ-সাবলিলভাবে লিখেছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়
অল্প সময়ে মহাভারতের পুরো টাইমলাইন সম্পর্কে ধারণা নেয়ার জন্য এই বইটা শুরু করা। কিছু বিষয় নোট করে রাখা উচিত। ১। যেহেতু ছোটদের জন্য সংক্ষেপে লেখা সেহেতু কিছু স্পর্শকাতর বিষয় এড়িয়ে গিয়ে বরং ভালোই হয়েছে।
২। যুদ্ধের অংশটা খুবই একঘেঁয়ে এবং ক্লান্তিকর ছিলো তবে সেটা সংক্ষেপে লিখলেও ভয়াবহতা ফুটে উঠতোনা, বীরদের প্রসঙ্গও চাপা পড়তো।
৩। এতো এতো বীর আর যোদ্ধার নাম আছে যে কারটা মনে রাখতে হবে বেশি বেশি সেটা বোঝা মুশকিল তবে পরবর্তীতে অন্য ভার্শন পড়ার সময় আগে থেকেই জানা থাকার কারণে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রগুলোকে বোঝা সহজ হবে।
৪। লেখক পাণ্ডবদের পক্ষপাতি ছিলেন এবং ছোটদেরকে সূক্ষ্মভাবে পাণ্ডবদের প্রতি ঝুঁকিয়েছেন হয়তো মূল গ্রন্থও এমনটাই করেছে। না পড়লে কখনোই জানা হবেনা।
৫। ভীষ্ম, দ্রোণ কৌরবদের হয়ে লড়লেও তাঁরা পাণ্ডবদেরকে ছাড়ই দিচ্ছিলেন। দূর্যোধনের এ ব্যাপারে বারবার অভিযোগ মোটেও ভিত্তিহীন নয়। শুরু থেকেই কর্ণ সেনাপতি হলে অন্যরকম হতে পারতো।
৬। পাণ্ডবপক্ষ কম ছলনার আশ্রয় নেয়নি। কৃষ্ণও হাড়বজ্জাত লোক।
৭। কুন্তি কর্ণের কাছে পাণ্ডবদের পরিচয় দেয় কিন্তু পাণ্ডবদের কাছে কর্ণের পরিচয় দেয়নি।
৮। এক বীর আরেকবীরকে মারছেন না কিন্তু মারামারি কাটাকাটি খেলছেন এরমধ্যে পড়ে হাজার হাজার সাধারণ সৈন্য কোন বীরত্ব না দেখিয়েই মারা যাচ্ছে। মহাভারত তাদের জীবনের কোন মূল্যই দিচ্ছেনা। তারা শুধু সংখ্যায় আছে এবং মাঝে মাঝে তাদের অস্তিত্ব জানা যাচ্ছে। তাদের কোন বীরত্ব নেই, কোন গুরুত্ব নেই, তারা সাধারণের জীবনের মূল্যহীনতাটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছে।
৯। দেবতারা মজার খেলায় মত্ত। মানুষের দুর্দশা তাদেরকে ভাবিত করেনা।
১০। বড় পরিসরে পড়া গেলে এবং চিন্তা করা গেলে উপরের সব পয়েন্ট ভ্যালিডিটি না-ও পেতে পারে। তবে মহাভারতের গল্প বলাই এই বইয়ের লক্ষ্য ছিলো সেটা সফল। মহাভারতের যে দর্শন এবং সাহিত্যগুণ সেটা এই বইতে খুঁজলে আমি অবশ্যই বোকা।
মূল অনুবাদকৃত মহাভারত পড়ার মতো সময় বা ধৈর্য আমার নাই। তাই এটি পড়লাম। নামে ছেলেদের মহাভারত হলেও সকল বয়সীদের জন্যই এটি সহজভাবে লেখা। কথিত আছে, মহাভারতের যত চরিত্র আছে সবগুলো একসাথে করলে একটি বই হয়ে যাবে। এই বইয়ে মূল চরিত্রগুলো এনে, মূল বিষয়বস্তু ঠিক রেখে লেখা হয়েছে। যারা কম সময়ে মহাভারত সম্পর্কে ধারণা নিতে চান, এটি পড়ার সাজেস্ট করছি। অবশ্য মূল মহাভারত পড়লে বিস্তারিত জানতে পারবেন। আমার কাছে ভালো লেগেছে।
বই : ছেলেদের মহাভারত লেখক : উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ১৯৯৫ পৃষ্ঠা ২২৪ মূল্য ৩৪৫৳ ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
The title translates as "Children's Mahabharat". The best Mahabharata related work I have read till date. The illustrations can stir any child's imagination. The language is simple enough for a middle school student to follow and understand. I have read the English version of the work. As translations pose their own problem, the original version should be even better.
ক্লাস সেভেনে থাকতে পড়েছি।বইয়ে রনাঙ্গনে যাত্রার প্রস্তুতি এবং রনাঙ্গনের যুদ্ধের বর্ণনা মনে দারুণ এক ফ্যান্টাসি জাগালেও,লেখনী আর অনেক অনেক চরিত্র মাথায় গুবলেট পাকিয়ে দিয়েছিলো। বইটা বছরের শেষ দিকে আরেকবার ধরার ইচ্ছা আছে। আশা করি এবার ভালো লাগবে।
মহাভারত সুবৃহৎ গ্রন্থ৷ কাব্যে পড়া কঠিন। রাজশেখর বসুর অনবাদটা বেশ ভালো। বৃহৎ কলেবরেই পড়া সমীচীন। চরিত্র রিভিউ করার জন্য এই বইটা ভালো। আমাদের সন্তানদের মহাভারতে হাতেখড়ির জন্য ইহাই একমাত্র গ্রন্থ।
উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী প্রখ্যাত শিশু সাহিত্যিক, চিত্রশিল্পী, বাংলা মুদ্রণশিল্পের অন্যতম পথিকৃৎ। এই বই নিয়ে রিভিউ লেখার যোগ্যতা আমার নাই, তাই এই বই নিয়ে গল্প হবে। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী এই নামটার সাথে প্রথম পরিচয় ১৯৯২ সালে। তখন আমার বয়স ১২। একদিন সন্ধ্যাবেলা আব্বা বাসায় ফেরার সময় কিছু বই নিয়ে ফিরলেন। তারমধ্যে একটা বই ছিলো “সেরা সন্দেশ”। বইটা আব্বা এনেছিলেন বড় বোনের জন্য। কিন্তু মিষ্টি তাও আবার সন্দেশ সেটাতে কি বয়সের প্রেসক্রিপশন দেয়া সম্ভব! ১২ বছরের আমার জন্য বইটা আকারে এবং কলেবরে বেশ বড়ই ছিলো। কত বছর লেগেছে আমার পুরো বই শেষ করতে এখন আর মনে নেই, যেমন মনে নেই ছোটবেলার অনেক কিছুই।
মহাভারত নামটাতেই কেমন একটা বিশাল ব্যপক গন্ধ আছে। মহাভারতের সাথে পরিচয় অনেক ছোটবেলায়। যখন ছাদের টিভি এন্টেনাতে সিলভার বা এলুমিনিয়ামের ঢাকনা পাতিল লাগিয়ে আমরা পাশের দেশের দূরদর্শন কিংবা ডিডি মেট্রো দেখার চেষ্টা করতাম তখন থেকে। ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোরে যখন “মহাভারত” বলে লম্বা একেটা টান দিতো হাতের সবকিছু ফেলে টেলিভিশনের সামনে এবং পরবর্তী আধা ঘণ্টা আঠার মতো টিভিসেটের সামনে লেগে থাকতাম। ঐ বয়সে এতো বড় ধর্মীয় পুরাণের ব্যপ্তি বোঝা আমার পক্ষে সম্ভব ছিলোনা (এখনো নেই)। কিন্তু যুদ্ধের সেই দৃশগুলো মনে গেঁথে থাকতো। আশ্চর্য সব ক্ষমতা দেবতাদের, অদ্ভুত তাদের বাচনভঙ্গি। দিনের পর দিন বছরের পর বছর একই তীর মেরে যাচ্ছে। একজন একবারে তিনটা তীর মারে তো জবাবে আরেকজন মারে পাঁচটা। এসবই ঐসময়ে আমার কাছে ছিলো অলৌকিক কোনও ঘটনা।
বড় হবার পরে আর কখনো মহাভারত পরে দেখা হয়নি। এবার যখন হঠাত এই বইটা পেলাম তাই দুটো কারনে বইটা হাতে তুলে নিলাম। প্রথমত এটা কিশোর বয়সীদের জন্য সংক্ষিপ্ত আকারে লেখা তাই পুরো বিষয়ে একটা মোটামুটি ধারনা অন্তত পাওয়া যাবে। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী এই বই লিখে ছিলেন ১৮৯৫ সালে। আমি যেই ভার্সনটা ২০২১ সালে পড়ি সেটা ১৯৯৫ সালে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র প্রকাশ করে বাংলাদেশে। প্রথমেই খটকা লাগলো নামটা ছেলেদের কেনও? এটা কি মেয়েদের পড়া নিষেধ? একটু ঘাঁটাঘাঁটি করে নিজের মতো করে ব্যখ্যা দাঁড় করালাম হয়ত ছেলেদের বলতে উনি ছেলে মেয়ে উভয়কেই বুঝিয়েছেন। এই বইয়ে সংক্ষিপ্ত আকারে মূল ধর্মীয় পুরাণকে কিশোর বয়েসী উপযুক্ত করে বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু সেটা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে না করে নিছক গল্প বলার ছলে করেছেন লেখক। মাঝে মাঝে মনে হয়েছে লেখক হয়ত আরেকটু সরলীকরণ করতে পারতেন যারা আমার মতো খারাপ ছাত্র তাদের জন্য। মহাভারতের একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে একই চরিত্রকে একাধিক নামে সম্বোধন করা হয়। আমি যে কত বার পেছনের পাতায় ফেরত গিয়েছি গল্পের রেশ ধরার জন্য! ঐযে ছাত্র খারাপ, দোষটা হয়ত আমারই। যারা সম্পূর্ণ মহাভারত না পড়ে সংক্ষিপ্ত আকারে জানতে চান তাদের জন্যে এটা খুবই ভালো রেফেরেনস বই। আমি যেমন ঐ সময় অন্য আরেকটি বই পড়ছিলাম; মাহমুদুর রহমানের লেখা “দ্রৌপদী”। এটি একটি নিরীক্ষাধর্মী বই। ছেলেদের মহাভারত পড়া থাকার কারণে “দ্রৌপদী” পড়তে আমার অনেক সুবিধা হয়েছে।
বলছিলাম বইটা হাতে নেই দুটি কারণে। একটা বললে অন্য কারণটা ঠিক বলা হয়নি। আসলে দ্বিতীয় কারণটা বলেই লেখাটা শুরু করেছিলাম। দ্বিতীয় কারণটা আব্বা। আব্বা এখন আর নেই, সেই ২০২০ সাল থেকেই নেই। কোনও এক অদ্ভুত কারণে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী’র নাম দেখেই সেরা সন্দেশ বইটার নাম মনে পরে যায়। বইটা পড়তে পড়তে ছেলেবেলার অলিতে গলিতে একটু ঢুঁ মেরে আসা গেলো। না হয় মাঝ বয়সে এসে পড়লামই “ছেলেদের মহাভারত” কিন্তু সেটা পৌঁছে দিলো তো ঠিকই আমাকে আমার ছেলেবেলায়।