কবিতাই একজন সৎ কবির মাথা তোলবার, বেঁচে ওঠবার, ভালবাসার অনন্য অবলম্বন। কবিতাই কবির ব্যাপ্ত, বিশাল জীবনকাহিনি। এ-যুগের তরুণ কবিদের মধ্যে সব থেকে শক্তিমান জয় গোস্বামীর কবিতার সঙ্গে যাঁরা পরিচিত তাঁরাই জানেন, আধুনিক বাংলা কবিতায় তিনি অগ্রপথিক। সৃষ্টি-বৈচিত্র্যে, স্বতন্ত্রস্বাদ রচনায় এবং ছন্দে-ছন্দোহীনতায় তিনি বিশিষ্টতম। তাঁর পাগলী, তোমার সঙ্গে কাব্যগ্রন্থের শরীরে ধরা আছে এইসব অনুভবী বৈশিষ্ট্য। এই গ্রন্থে আছে ‘মৃত্যুটি রচনা করি’, নামের দীর্ঘ কবিতা। ‘তার চেয়ে, কী দরকার ঘরে বসে লেখো তো মৃত্যুর/একটি রচনা, যার চতুর্দশ পদে পদে ভয়।/সহস্ৰ জাতির থেকে ফোঁটা ফোঁটা জাতি রক্ত হয়/ সে রক্ত একটি পাত্রে ধরো তুমি, ঠেলে দাও দূর/দূর ভবিষ্যৎ কালে...।’ এই কবিতার ছন্দ তুলেছিল বিতর্কের ঝড়। তেমনই আর একটি দীর্ঘ কবিতা ‘পাঁচালি: দম্পতিকথা’ ছান্দসিকদের জড়িয়ে নিয়েছিল বিসংবাদে। যে-কবি এখানে উচ্চারণ করেছেন মর্মমূল থেকে ছিঁড়ে আনা শব্দবন্ধ ‘পাগলী, তোমার সঙ্গে ভয়াবহ জীবন কাটাব/পাগলী, তোমার সঙ্গে ধুলোবালি জীবন কাটাব’— তিনি গেয়ে উঠেছেন এক নিভৃত নিশ্চুপ সামগাথা: ‘ওই মেয়েটির কাছে/সন্ধ্যাতারা আছে।’ এই কাব্যগ্রন্থ এক সৎ কবির নিবিড় আত্ম-আবিষ্কার।সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কারে ভূষিত
ভারতীয় কবি জয় গোস্বামী (ইংরেজি: Joy Goswami নভেম্বর ১০, ১৯৫৪) বাংলা ভাষার আধুনিক কবি এবং উত্তর-জীবনানন্দ পর্বের অন্যতম জনপ্রিয় বাঙালি কবি হিসাবে পরিগণিত।
জয় গোস্বামীর জন্ম কলকাতা শহরে। ছোটবেলায় তাঁর পরিবার রানাঘাটে চলে আসে, তখন থেকেই স্থায়ী নিবাস সেখানে। পিতা রাজনীতি করতেন, তাঁর হাতেই জয় গোস্বামীর কবিতা লেখার হাতে খড়ি। ছয় বছর বয়সে তাঁর পিতার মৃত্যু হয়। মা শিক্ষকতা করে তাঁকে লালন পালন করেন।
জয় গোস্বামীর প্রথাগত লেখা পড়ার পরিসমাপ্তি ঘটে একাদশ শ্রেণীতে থাকার সময়। সাময়িকী ও সাহিত্য পত্রিকায় তিনি কবিতা লিখতেন। এভাবে অনেক দিন কাটার পর দেশ পত্রিকায় তাঁর কবিতা ছাপা হয়। এর পরপরই তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। কিছুদিন পরে তাঁর প্রথম কাব্য সংকলন ক্রিসমাস ও শীতের সনেটগুচ্ছ প্রকাশিত হয়। ১৯৮৯ সালে তিনি ঘুমিয়েছ, ঝাউপাতা কাব্যগ্রন্থের জন্য আনন্দ পুরস্কার লাভ করেন। ২০০০ সালের আগস্ট মাসে তিনি পাগলী তোমার সঙ্গে কাব্য সংকলনের জন্য সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন।
৩.৫/৫ জয় গোস্বামী যেভাবে কবিতাকে গ্রহণ করেন ও বিকশিত করেন; সেই বোধটা আমাকে খুব আকৃষ্ট করলো। সব কবিতা যে ভাল লাগবে, তার কোনো কথা নেই। তবে, যেগুলো আলাদা করে মনে রাখার মতো, সেগুলো কখনো ভুলে যাওয়া পাপ হবে।
কবিতা প্রিয়, জয় প্রিয় কবি। এরপর আর রিভিউ কী? ^_^ মেমরি লেনের পুরোনো কথা মনে পড়লো। ''পাগলী, তোমার সঙ্গে ভয়াবহ জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে ধুলোবালি কাটাব জীবন এর চোখে ধাঁধা করব, ওর জল করে দেব কাদা পাগলী, তোমার সঙ্গে ঢেউ খেলতে যাব দু’কদম। অশান্তি চরমে তুলব, কাকচিল বসবে না বাড়িতে তুমি ছুঁড়বে থালা বাটি, আমি ভাঙব কাঁচের বাসন পাগলী, তোমার সঙ্গে বঙ্গভঙ্গ জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে ৪২ কাটাব জীবন।''
শিরোনামের এ কবিতাটা খুঁজছিলাম একবার। তখনো অংবংছং নানা নামের বাংলা কবিতার পেইজের ফেসবুকে ততোটা ছড়াছড়ি পড়েনি। গুগলও অনুদার। অবশেষে পাওয়া গেলো। দলগত ত্রয়ী কোবতে পাঠকের একজন পাঁড় জীবনানন্দপেমী, বাকি দুজন সরল গোত্রের, যা দেওয়া হয় তাহাই খায় টাইপ। দাশবাবুর চ্যালা মন্তব্য করেছিলেন, অবশ্য ঠাট্টা করে। '---এতোবার পাগলী ডাকলে তো যেকোন সুস্থ মেয়ের-ও মাথা আউলে যাবে!' খিকজ। স্মৃতি বড় উচ্ছঙ্খৃল, দু'হাজার বছরেও সব মনে রাখে!
অবশ্যই সুখপাঠ্য কবিতার পুস্তক। যে জীবন আমার নয় কিন্তু হতেও তো পারতো'র আকর্ষণেই আমার কবিতার কাছে বার বার ফিরে ফিরে আসা। বিশেষত জয় গোস্বামীর মত ভালোলাগার কবি/কবিতার কাছে। তাই কবিতা বুঝি আর নাই বুঝি, এদের প্রেমে আমি বার বারই পড়বো। বললেও শুনবো না : " পোড়ারমুখী, দু'চোখের বিষ ফের তুই প্রেমে পড়েছিস?" বার বার প্রেমে পড়া এবং মরা আমার জন্মগত অধিকার। সেটা কেউ কেড়ে নিতে পারবেক নাই। এমন কি ঈশ্বর, এমন কি কবি কিংবা তাঁহাদের কবিতাও না! মুহাহাহা
এই চরণ দুটির মতো বইটিও সরল কিন্তু তীব্র ভাবাবেগপূর্ণ। এখানে প্রেম আছে, আছে প্রতিবাদ, আর্তনাদ, কলঙ্ক, ভয়, ভীতি, অভিযোগ, অনুযোগ কিন্তু সবই যেন মোলায়েম, যেন কেউ তার খুব ভালোবাসার মানুষের কাছে নিজেকে নিবেদন করছে।
ব্যক্তিগতভাবে আমি ধ্রুপদীপ্রেমী হওয়ায় আমার উত্তরাধুনিক বা সমসাময়িক কবিতা ততো পড়া হয়ে ওঠে না। এই বইটি জন্মদিনে উপহার পাওয়ায় পড়া শুরু করেছিলাম। সত্যি বলতে কি শুরুতে আমি খুব আশাবাদী ছিলাম না। কিন্তু বইটি পড়ে আমি মুগ্ধ। এতো সহজ ভাষায় মিষ্টি সুরে কেউ যে এমন করে আত্মনিবেদন করতে পারে তা আমার ভালো জানা ছিল না৷ বইটি শেষ করেছিলাম ঠোঁটের কোণায় ছোট্ট পরিতৃপ্তির হাসি নিয়ে।
কবিতা বা ছড়া পড়তে আমার কখনওই ভালো লাগেনা,ছোটবেলাতেই যা একটু আধটু ছড়া পড়েছি। তারপর পাঠ্য বইএর বাইরে কখনও শখ করে কবিতা-ছড়া পড়িনি। এটাও যে শখ করে পড়েছি তা নয়, আসলে জয় গোস্বামীর অনেক নাম শুনেছি তো তাই ভাবলাম উনার লেখা কবিতার স্বাদ নেওয়া যাক।
পাঠ্যানুভূতি :
নাহ্ কবিতা-টবিতা আমার দ্বারা উদ্ধার হবে না। একপ্রকার জোর করেই শেষ করলাম। মোট ৪৩ টি কবিতা নিয়ে " পাগলী তোমার সঙ্গে " বইটি। তবে এর মধ্যে "পাঁচালী : দম্পতিকথা" আর "প্রাক্তন" কবিতা দুটি ভালো লেগেছে।
এটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত পাঠ্যানুভূতি, অন্য সবার ভালো লাগতেই পারে। যারা কবিতা ভালোবাসে তারা পড়ে দেখতে পারেন।
"পাগলী, তোমার সঙ্গে" - জয় গোস্বামী আনন্দ পাবলিশার্স
আমার খুব প্রিয় কবি, খুব কাছের কবি জয় গোস্বামী। এই কাব্য সংকলনটির একাধিক কাব্যে কবি ছড়িয়ে দিয়েছেন ভালবাসার আবেশকে। কবিতাই এক প্রকৃত কবির চারণভূমি, যেখানে উঠে আসে কবির জীবনের চাওয়া পাওয়ার নকশী কাঁথা।
✓মা আর মেয়েটি এক পথ ঘুমন্তের পায়ে এক পথ নৌকার পারানি এক পথ পালকের গায়ে মা আমি সমস্ত পথ জানি দিন থামে গাছের তলায় রাত্রি থামে ���রীদের বাড়ি সিঁড়ি দিয়ে আলো উঠে যায় মা আমি সমস্ত আলো পারি এ আকাশ ভাঙে মাঝে মাঝে ও আকাশ মেঘে আত্মহারা সে আকাশে নৌকা খোলা আছে মা আমি আকাশভরা তারা মা আমার এক দীঘি জল সারা গ্রাম করে ছলোচ্ছল… ‘পোড়ামুখী, দু চক্ষের বিষ ফের তুই প্রেমে পড়েছিস?’
✓ও আকাশপার যা কিছু মৃত্যুর নিচে যা কিছু অগ্নির নিচে ডুবে যায় তারা ফিরে ফিরে আসে জলভাবে , বায়ুভাবে , ঘাস থেকে ঘাসে ফেলে দেয় লঘু পাখা -- ভারী পাখাটির
বড় কষ্ট , বলে ওরা , ছোট কষ্ট বলে লেখায় রেখায় আঁকা ও আকাশপার তুমি জানো অস্তসূর্য যে ফেলুক জলে আমি তা ভাসিয়ে নিই এপার ওপার ...
✓পাঁচালি : দম্পতিকথা পাগলী, তোমার সঙ্গে ভয়াবহ জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে ধুলোবালি কাটাব জীবন এর চোখে ধাঁধা করব, ওর জল করে দেব কাদা পাগলী, তোমার সঙ্গে ঢেউ খেলতে যাব দু'কদম।
অশান্তি চরমে তুলব, কাকচিল বসবে না বাড়িতে তুমি ছুঁড়বে থালা বাটি, আমি ভাঙব কাঁচের বাসন পাগলী, তোমার সঙ্গে বঙ্গভঙ্গ জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে ৪২ কাটাব জীবন।
মেঘে মেঘে বেলা বাড়বে,ধনে পুত্রে লক্ষ্মী লোকসান লোকসান পুষিয়ে তুমি রাঁধবে মায়া প্রপন্ঞ্চ ব্যঞ্জন পাগলী, তোমার সঙ্গে দশকর্ম জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে দিবানিদ্রা কাটাব জীবন।
পাগলী, তোমার সঙ্গে ঝোলভাত জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে মাংসরুটি কাটাব জীবন পাগলী, তোমার সঙ্গে নিরক্ষর জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে চার অক্ষর কাটাব জীবন।
পাগলী, তোমার সঙ্গে বই দেখব প্যারামাউন্ট হলে মাঝে মাঝে মুখ বদলে একাডেমি রবীন্দ্রসদন পাগলী, তোমার সঙ্গে নাইট্যশালা জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে কলাকেন্দ্র কাটাব জীবন।
পাগলী, তোমার সঙ্গে বাবুঘাট জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে দেশপ্রিয় কাটাব জীবন পাগলী, তোমার সঙ্গে সদা সত্য জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে 'কী মিথ্যুক' কাটাব জীবন।
এক হাতে উপায় করব, দুহাতে উড়িয়ে দেবে তুমি রেস খেলব জুয়া ধরব ধারে কাটাব সহস্র রকম লটারি,তোমার সঙ্গে ধনলক্ষ্মী জীবন কাটাব লটারি, তোমার সঙ্গে মেঘধন কাটাব জীবন।
দেখতে দেখতে পূজা আসবে, দুনিয়া চিৎকার করবে সেল দোকানে দোকানে খুঁজব রূপসাগরে অরূপরতন পাগলী, তোমার সঙ্গে পূজাসংখ্যা জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে রিডাকশনে কাটাব জীবন।
পাগলী, তোমার সঙ্গে কাঁচা প্রুফ জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে ফুলপেজ কাটাব জীবন পাগলী, তোমার সঙ্গে লে আউট জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে লে হালুয়া কাটাব জীবন।
কবিত্ব ফুড়ুৎ করবে, পিছু পিছু ছুটব না হা করে বাড়ি ফিরে লিখে ফেলব বড়ো গল্প উপন্যাসোপম পাগলী, তোমার সঙ্গে কথাশিল্প জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে বকবকম কাটাব জীবন।
নতুন মেয়ের সঙ্গে দেখা করব লুকিয়ে চুরিয়ে ধরা পড়ব তোমার হাতে, বাড়ি ফিরে হেনস্তা চরম পাগলী, তোমার সঙ্গে ভ্যাবাচ্যাকা জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে হেস্তনেস্ত কাটাব জীবন।
পাগলী, তোমার সঙ্গে পাপবিদ্ধ জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে ধর্মমতে কাটাব জীবন পাগলী, তোমার সঙ্গে পূজা বেদী জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে মধুমালা কাটাব জীবন।
দোঁহে মিলে টিভি দেখব, হাত দেখাতে যাব জ্যোতিষীকে একুশটা উপোস থাকবে, ছাব্বিশটা ব্রত উদযাপন পাগলী, তোমার সঙ্গে ভাড়া বাড়ি জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে নিজ ফ্ল্যাট কাটাব জীবন।
পাগলী, তোমার সঙ্গে শ্যাওড়াফুলি জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে শ্যামনগর কাটাব জীবন পাগলী, তোমার সঙ্গে রেল রোকো জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে লেট স্লিপ কাটাব জীবন।
পাগলী, তোমার সঙ্গে আশাপূর্ণা জীবন কাটাব আমি কিনব ফুল, তুমি ঘর সাজাবে যাবজ্জীবন পাগলী, তোমার সঙ্গে জয় জওয়ান জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে জয় কিষান কাটাব জীবন।
সন্ধ্যেবেলা ঝগড়া হবে, হবে দুই বিছানা আলাদা হপ্তা হপ্তা কথা বন্ধ মধ্যরাতে আচমকা মিলন পাগলী, তোমার সঙ্গে ব্রক্ষ্মচারী জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে আদম ইভ কাটাব জীবন।
পাগলী, তোমার সঙ্গে রামরাজ্য জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে প্রজাতন্ত্রী কাটাব জীবন পাগলী, তোমার সঙ্গে ছাল চামড়া জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে দাঁতে দাঁত কাটাব জীবন।
এর গায়ে কনুই মারব রাস্তা করব ওকে ধাক্কা দিয়ে এটা ভাঙলে ওটা গড়ব, ঢেউ খেলব দু দশ কদম পাগলী, তোমার সঙ্গে ধুলোঝড় জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে 'ভোর ভয়োঁ' কাটাব জীবন।
✓প্রাক্তন ঠিক সময়ে অফিসে যায়? ঠিক মতো খায় সকালবেলা? টিফিনবাক্স সঙ্গে নেয় কি? না ক্যান্টিনেই টিফিন করে? জামা কাপড় কে কেচে দেয়? চা করে কে আগের মতো? দুগগার মা ক’টায় আসে? আমায় ভোরে উঠতে হত সেই শার্টটা পরে এখন? ক্যাটকেটে সেই নীল রঙ টা? নিজের তো সব ওই পছন্দ আমি অলিভ দিয়েছিলাম কোন রাস্তায় বাড়ি ফেরে? দোকানঘরের বাঁ পাশ দিয়ে শিবমন্দির, জানলা থেকে দেখতে পেতাম রিক্সা থামল অফিস থেকে বাড়িই আসে? নাকি সোজা আড্ডাতে যায়? তাসের বন্ধু, ছাইপাঁশেরও বন্ধুরা সব আসে এখন? টেবিলঢাকা মেঝের ওপর সমস্ত ঘর ছাই ছড়ানো গেলাস গড়ায় বোতল গড়ায় টলতে টলতে শুতে যাচ্ছে কিন্তু বোতল ভেঙ্গে আবার পায়ে ঢুকলে রক্তারক্তি তখন তো আর হুঁশ থাকে না রাতবিরেতে কে আর দেখবে। কেন, ওই যে সেই মেয়েটা। যার সঙ্গে ঘুরত তখন। কোন মেয়েটা? সেই মেয়েটা? সে তো কবেই সরে এসেছে! বেশ হয়েছে, উচিত শাস্তি অত কান্ড সামলাবে কে! মেয়েটা যে গণ্ডগোলের প্রথম থেকেই বুঝেছিলাম কে তাহলে সঙ্গে আছে? দাদা বৌদি? মা ভাইবোন! তিন কূলে তো কেউ ছিল না এক্কেবারে একলা এখন। কে তাহলে ভাত বেড়ে দেয়? কে ডেকে দেয় সকাল সকাল? রাত্তিরে কে দরজা খোলে? ঝক্কি পোহায় হাজার রকম? কার বিছানায় ঘুমোয় তবে কার গায়ে হাত তোলে এখন কার গায়ে হাত তোলে এখন?
অনেক অনেক বছর আগে, বিটিভিতে বোধহয় হবে-একটা নাটক দেখেছিলাম। মাহফুজ আর তারিনের। মাহফুজ তারিনকে কবিতা আবৃত্তি করে শোনাত, তার মাঝে একটু লাইন ছিল-"পাগলী, তোমার সঙ্গে...।" আমার আর কিছুই মনে ছিল না কিন্তু এই লাইনটুকু খুব ভাল ভাবেই মনে ছিল। তখন ছোট ছিলাম, কবিতা নিয়ে কোনো ভাললাগা ওইভাবে কাজ করত না কিন্তু নাটকে কবিতাটা শুনতে ভাল লেগেছিল। অনেক অনেক বছর পর, যখন আমি কবিতার প্রেমে পড়ি, তখন আমি এই কবিতাটা মনে মনে খুঁজতাম। জানতামও না কার লেখা কবিতা কিংবা কবিতার আসল নামটাই বা কি? আর যার কারণে আমার কবিতার প্রেমে পড়া, সেই একজন আমাকে এই কবিতার বইটা উপহার দিয়েছিল! জীবনে অনেক সুন্দর সুন্দর কিছু স্মৃতি থাকে আমাদের, তাইনা?!