মনুষ্যত্বের পথচলা হল অন্ধকার থেকে আলোর দিকে যাত্রা, মৃত্যু হতে অমৃতের দিকে যাত্রা, ভ্রান্তি থেকে সত্যের দিকে যাত্রা। তন্ত্রও সেই একই কথা বলে। বলে দেহ থেকে দেহাতীতে যাওয়ার কথা। আর এই যাত্রাপথের গলিখুঁজিতে ওঁত পেতে থাকে কত না অগণন ছায়াশরীরের বুভুক্ষু আর্তনাদ। অন্ধ অভিশাপের সাতকাহন। আর সেই অন্ধকারের ছায়ার মধ্যে কেউ কেউ আসেন আলোর মাভৈঃ মন্ত্র নিয়ে। মন্দ্রকণ্ঠে বলেন, 'জেনে রাখো অমৃতের সন্তান, এই পৃথিবীর সমস্ত পূজা, আরাধনা, মন্ত্রপাঠের থেকেও মহত্তর স্নেহ, দয়া, করুণা, মৈত্রী। কারণ ভালবাসাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় তন্ত্র, সবচেয়ে বড় যাদু।' সেই ভয় আর ভালবাসার গল্প শোনাতে আবার ফিরে এসেছেন ভবতারণ চট্টোপাধ্যায় এবং স্বয়ং কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ।
অভীক সরকারের জন্ম পয়লা জুন, উনিশশো উনআশি সালে। বেড়ে ওঠা প্রাচীন শহর হাওড়ার অলিগলিতে। বাবা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ছিলেন, মা স্কুল শিক্ষিকা। রয়েছে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। পেশায় সেলসম্যান, কর্মসূত্রে ঘুরেছেন পূর্ব-ভারতের প্রায় সব শহর ও গ্রাম। জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে বাসা বেঁধেছেন হায়দ্রাবাদ, পাটনা, মুম্বাই ইত্যাদি বিভিন্ন শহরে। শখের বই ব্যবসায়ী ও প্রকাশক। লেখালেখির শুরু আন্তর্জালে ও বিভিন্ন ব্লগে। প্রকাশিত বইগুলো হল মার্কেট ভিজিট, তিতিরপাখি ও প্রিন্সেস (সহলেখক অনুষ্টুপ শেঠ), এবং ইনকুইজিশন, খোঁড়া ভৈরবীর মাঠ, চক্রসম্বরের পুঁথি, ইত্যাদি। বিবাহিত। কন্যা সন্তানের পিতা। ভালোবাসেন ইলিশ, ইস্টবেঙ্গল, ইয়ারবন্ধু এবং ইতিহাস।
অভীক সরকার বাজার কমার্সটা ভালো বোঝেন। পেশায়, সেলসের চাকরি। নেশায়, লেখক (তথা প্রাক্তন বই বিক্রেতা) হবার সুবাদে ওনার লক্ষীলাভের প্রতি ঝোঁকটা চোখ এড়ায় না। খারাপ ভাবে নেবেন না কিন্তু। পর্যবেক্ষণটা আমার একান্তই ইউটিউব ঘেঁষা। আগমবাগীশ সিরিজের প্রায় প্রতিটি গল্পই আপনি অডিওতে কোনো না কোনো চ্যানেলে পেয়ে যাবেন। যার মধ্যে, কিছু কিছু কাহিনীর আবার একাধিক রূপান্তর। সেলিং লাইক হটেস্ট কচুরি। তাও আবার এগেন অ্যান্ড এগেন। (পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় এলেন বলে!)
এই বইটাকেই ধরুন না কেন। এদের চারটের মাঝে তিনটে গল্পই আপনি শ্রুতিরূপে শুনতে পাবেন। বিশেষত বইয়ের সেরা লেখা, 'দ্রোলমার খড়গ', বই প্রকাশের একই দিনে গপ্পো মীরের ঠেকে উপস্থাপিত হয়ে অভিবাদন ও তিরষ্কার কুড়িয়েছিল পুরোদমে। বইমেলা-প্রেমী হেটার্সদের মতামত ছিল যে, 'তাইলে আর বই কিনে কী লাভ?' আরগুমেন্টে মেরিট থাকলেও, বাকিরা (দেখুন : মেজরিটি শ্রোতা) ফ্রীতে জিনিস পেয়েই খুশি হওয়াতে, কেউ আর সেই কোন্দল মনে রাখেনি।
তাই, জয় বাঙালি জয়।
আমি অবশ্য, সিরিজের সমস্ত লেখা নিজের কাছে রাখবো বলে বইটা কিনে আনি। দিনের শেষে, কিতাবি কিড়া যে। দুধের স্বাদ ঠিক ঘোলে মেটানো যায় না। এছাড়াও, লেখকের গদ্য, আমার আজও ভালো লাগে। পশ্চিমবাংলার তান্ত্রিক হররের মান-সম্মান নিয়ে যতই আলফাল বকি না কেন, কলম হাতে অভীক সরকার আজও স্মার্ট ও গতিশীল। এডিটরের চেয়ারে বসে, তাই চাইলেও ওনার পাণ্ডুলিপি থেকে শব্দ ওড়ানো যায় না।
এই বইয়ের দুটো লেখায় কৃষ্ণানন্দ স্বশরীরে বর্তমান। বাকি দুটোয় আছেন ভবতারণ চাটুজ্জে। চেনা গল্পবলিয়ে চালে, 'কাউরিবুড়ির...' সেই বৈঠকী বক্তা। এমন একটি চরিত্রকে পেয়ে লেখক যেন সামান্য হাফ ছেড়ে বেঁচেছেন। যদিও লেখাগুলো মূল সিরিজের স্পিনঅফ হিসেবেই ধার্য, তবুও এই গল্পগুলোতে তন্ত্রমন্ত্রের চেনা পৃথিবীর বাইরে, স্রেফ নিখাদ অলৌকিকের কটা গল্প বলতে পেরেই খুশি উনি। এ যেন হোম গ্রাউন্ডের একপাশে আরেকটি ছোট মাঠ। বা ইনস্টাগ্রামের সেকেন্ড অ্যাকাউন্ট, যেখানে মন খুলে আরেকটু ঝাড়াহাতপা হওয়া যায়।
তাই পড়ে দেখুন, 'ডাইনিবুড়ি' ও 'দেওয়ানগঞ্জের রাস্তাটা'।
প্রথমটা, সলিড। আবহমান গৌরচন্দ্রিকায় জমজমাট সেটাপ। বলে এক সম্মোহনী অভিশাপের মোহময় কাহিনী। যা ফিনিশিংয়ে গোলমেলে হলেও প্রথার বিপরীতে হেঁটে মন জয় করতে চায়। স্বযত্নে নিকিয়ে দেয় মনের উঠোন। তুলনায়, 'দেওয়ানগঞ্জ...' অনেক ছোট। ছকে বাধা, ভৌতিক কাহিনী। মাঝপথে মজাদার ফলস্ ফিনিশ। শেষরাতে পড়ে আরাম। যদিও এই কাঠামোর প্রতিমা যেকোনো পোড়খাওয়া পাঠকের বহুদিনের চেনা, তবুও গল্পদুটো সব মিলিয়ে হতাশ করে না।
অন্যদিকে, উপন্যাসিকা 'গৌরী'। একটি কৃষ্ণানন্দ-কেন্দ্রিক তান্ত্রিক হরর। প্রথমবার পড়েছিলাম বার্ষিক কিশোরবন্ধুর পাতায়। এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের রিভিশন।
পত্রিকায় পাতার যাবতীয় স্থানাভাব ও লেখক কলমের তাড়াহুড়োর রেশ বইতে এসে কাটে না। ভেবেছিলাম বুঝি গ্রন্থাকারে প্রকাশকালে লেখক নিজ উদ্যোগে লেখাটিকে গড়েপিটে বাড়িয়ে তুলবেন। ভরাট করবেন, প্রাথমিক সব ফোকর। জোকস্ অন মি। ও পথ, ভুলেও মারান না উনি। অগত্যা, কমার্শিয়াল আলস্যের দাম চুকোতে গিয়ে গল্পটি মিডিওক্রিটির পাঁকে আটকে পড়ে। ক্লাইম্যাক্সের আচড়ে, মনটা খারাপ হয়ে গেলেও, কালিকিংকর ঠাকুরের মত অমন তুখোড় প্রতিদ্বন্দ্বীটিকে কৃষ্ণানন্দের বিপরীতে একেবারে অপচয় করে ফেলেন লেখক।
তবে, বইয়ের সেরা লেখা নিঃসন্দেহে, 'দ্রোলমার খড়গ'। টানটান, সিনেমাটিক ও দুর্দান্ত। সিরিজের অন্যতম হাই পয়েন্ট। আগমবাগীশ সাইকেলের কোনো রচনা পড়ে যে আজও এতটা অবাক হওয়া যায়, সেটাই ভুলতে বসেছিলাম। এই অসাধারণ হরর অভিযানটির কল্যাণে নতুন করে আশ্চর্য হলাম আবার। অ্যাদ্দিনের সমস্ত গল্পের সাথে এর ফারাক এর ঐতিহাসিক টাইমলাইনে। গল্পটি মধ্যযুগীয় বাংলার পটভূমিতে রচিত হওয়ার হেতু, এখানে আর টাইম ট্রাভেলার নন কে.এন.মৈত্র! বরং নিজের সমকালীন সময়রেখাতে আরেক ঐতিহাসিক শাক্ত-উপাসক জাটিয়া জাদুর সাথে মিলে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন মানুষটি।
এ একেবারে টপ-ফর্মের অভীক সরকার। সিরিজের প্রথম দিকের লেখাগুলোর মতো অমন অসামান্য না হলেও, এর ভয়ংকর ধুরন্ধর ভিলেন, বৃহৎ অ্যাকশনধর্মী ক্লাইম্যাক্স ও নির্মল, সুন্দর, কল্যাণময় মাতৃভাবের ভিত্তিতে রোমাঞ্চিত হতে হয়। গলার কাছটায় দলা পাকিয়ে ওঠে। মনের গহীনে কে যেন বিড়বিড় করে বলে, সেই চিরাচরিত সত্য...
ভালোবাসাই হলো সবচেয়ে বড় তন্ত্র, সবচেয়ে বড় জাদু!
তাই, ওয়ান টাইম রিড হিসেবে একবার পড়ে দেখতেই পারেন। সিরিজটা সেই প্রথম থেকে ফলো করে থাকলে, হয়তো গল্পের বর্তমান মান নিয়ে হতাশ হবেন। ল-অফ-ডিমিনিশিং রিটার্নস, যাকে বলে। কিন্তু এর চেয়েও অনেক খারাপ খারাপ জিনিস বাজারে ভয়ের মোড়কে বিকিয়ে যায়। তাদের তুলনায়, অভীক সরকার আজও অপ্রতিম। এটায় অবশ্য, কটা নম্বর অন্য খাতে কেটে নিলাম। দেখুন : বইজুড়ে আরাত্রিকা ঘোষের অগুনতি সাদা-কালো অলঙ্করণগুলো। যার বেশিরভাগটাই এ.আই দিয়ে তৈরি। বিচ্ছিরি।
এসব ক্ষেত্রে বুক ফার্ম আমলের '...ইনকুইজিশন'-এর কথা মনে পড়ে যায়। মনে পড়ে, গৌতম কর্মকারের আঁকা সেই দারুন ছবিগুলোর কথা।
তন্ত্র সম্বন্ধীয় লেখালেখির জন্য অভীক সরকার আমার বেশ পছন্দের। 'এবং ইনকুইজিশন' বইটার পর আমি তার একরকম গুনমুগ্ধ। ইদানিং তন্ত্র মন্ত্র আর ভালো লাগে না। কিন্তু একমাত্র অভীক সরকার নামটার জন্যই 'গপ্পো মীরের ঠেক' থেকে শুনে ফেললাম 'দ্রোলমার খড়্গ'। দারুন উপভোগ্য ছিল বলায় বাহুল্য। বইটাতে একই গল্প পড়তে গিয়ে খানিক ভিন্নতা চোখে পড়লো। বইতে লেখক খুব দ্রুত পট পরিবর্তন করেছেন। যেটা একটু বিরক্তিকর ছিল বইকি।
'দ্রোলমার খড়্গ' বাদেও আরো তিনটি লেখা আছে বইটিতে। উপন্যাসিকা - গৌরি, বড় গল্প - ডাইনিবুড়ি এবং ছোটগল্প - দেওয়ানগঞ্জের রাস্তাটা। তিনটা লেখায় মোটামুটি ভালো। 'ডাইনিবুড়ি' শারদীয়া কিশোর ভারতী ১৪২৯ এ পড়েছিলাম। প্রচুর পাঠকের প্রসংশা পেয়েছিল তখন। 'দেওয়ানগঞ্জের রাস্তাটা' তে বিদেশী গল্পের ছায়া আছে বললে ভুল হবে না। এই একই প্লটে অনেক লেখা পড়েছি। খুব কমন একটা প্লট। 'গৌরী'ও তন্ত্রের একদম বেসিক প্লটে লেখা তবুও গল্পে একটা আবেদন আছে। তাই আমার মতে বইটা পাঠকের জন্য খারাপ হওয়ার কথা না। পড়ে দেখুন।
**"ডাইনিবুড়ি ও অন্যান্য" - বইয়ের পাঠ পর্যালোচনা**
আজ রাতে শেষ করলাম "ডাইনিবুড়ি ও অন্যান্য", যেখানে মোট চারটি গল্প রয়েছে। এক এক করে প্রতিটি গল্প নিয়ে বলি—
**গৌরী** : গল্পটা কিছুটা খাপছাড়া লেগেছে। অর্জুন ও তার পরিবারের ঘুরতে যাওয়ার জায়গা হঠাৎ বদলে যাওয়া, আর মৈত্রবাবুর শেষ সময়ে অর্জুনের থেকে দূরে থাকার কারণগুলো পরিষ্কার মনে হয়নি। তবে লেখক গল্পটা বেশ ভালোভাবে সাজিয়েছেন। অভীক বাবু এই ধরনের (horror/thriller) গল্প লেখায় বেশ দক্ষ, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
**ডাইনিবুড়ি** : গল্পের ক্লাইম্যাক্সটা যথেষ্ট ভীতিকর, কিন্তু শেষটা কিছুটা অস্পষ্ট লেগেছে। যেন হঠাৎ করেই সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল। মূলত, এই গল্পটি গ্রামবাংলার কিছু কুসংস্কারকে কেন্দ্র করে লেখা হয়েছে।
**দেওয়ানগঙ্গের রাস্তাটা** : এই গল্পটি আমার বেশ ভালো লেগেছে। ছোটগল্প হলেও গা ছমছমে অনুভূতি ছিল, আর লেখক শেষ অবধি থ্রিল বজায় রাখতে পেরেছেন।
**দ্রোলমার খড়্গ** : এই গল্প আমি আগেও শুনেছিলাম গল্প মীরের ঠেকে, তখন যেমন ভালো লেগেছিল, পড়েও ঠিক ততটাই ভালো লাগল।
# বইয়ের বিশেষ আকর্ষণ আমার কাছে বইটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক ছিল কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ। তার আগমন, তার জ্ঞান, তার সরলতা—সবকিছুই দাগ কেটে গেছে। লেখককে ধন্যবাদ জানাই, যিনি বারবার তাকে আমাদের সামনে নতুন ভূমিকায় উপস্থাপন করেছেন।
তবে, এটি লেখকের দেব-দেবতা সংশ্লিষ্ট তৃতীয় বই, এবং গল্পের ধারা প্রায় একই রকম, ফলে কিছুটা একঘেয়ে লাগতেই পারে। তবুও, গল্পগুলো মোটের ওপর খারাপ নয়, একবার পড়ে ফেলা যায়।
এটি আগমবাগীশ সিরিজের তৃতীয় বই, যাতে রয়েছে গৌরী, ডাইনিবুড়ি, দেওয়ানগঞ্জের রাস্তাটা, দ্রোলমার খড়্গ এই চারটি গল্প। ডাইনিবুড়ি বাদে বাকিগুলিতে ভবতারণবাবুর উপস্থিতি নেই, এর মধ্যে দ্রোলমার খড়্গ গল্পটি আগমবাগীশ চরিত্রটির সময়ের। ডাইনিবুড়ি ও গৌরী পূর্বপ্রকাশিত গল্প আর এইদুটি গল্পই নিখাদ ভালোবাসার গল্প বলে। যদিও তেমন একটা ভালো লাগেনি আগের বইগুলোর তুলনায়। সব মিলিয়ে বইটি মধ্যমানের বলে মনে হয়েছে।
গৌরী আর দ্রোলমার খড়গ গল্প দুটি সবচেয়ে মনে থাকবে।
"দ্রোলমার খড়গ" গল্পটি প্রথম শুনেছিলাম রেডিওতে। কিন্তু লেখাটি কেন আলাদা করে মন ছুঁয়ে গেল। সারা গল্পটি জুড়ে আমার গ্রাম বাংলার একটা আদর মিশ্রিত ভালোবাসা রয়ে গেছে। সেই গ্রাম বাংলা তার মাঠ পুন্যি পুকুর, জমিদার বাড়ি, মায়ের মন্দির, মন খারাপ করে দেওয়া কিছু দৃশ্য। এ গল্প বারবার শুনলেও পুরনো হবে না।
শশীশেখরের বুকের উপর পা দিয়ে দাঁড়িয়ে সর্বমঙ্গলা এই ছবি ভোলা মুশকিল।
গৌরী ও দ্রোলমার খড়্গ গল্প দুটি ভালোলাগলো ৩.৫ / ৫ দেওয়াই যায়। ডাইনিবুড়ি ও দেওয়ানগঞ্জের রাস্তাটা গল্প দুটি খুব সাদামাটা খুব একটা ভালো লাগলোনা। Overall বইটিকে ৩ / ৫ দেবো।
ডাইনিবুড়ি ও অন্যান্য লেখক - অভীক সরকার প্রকাশক - দ্বীপ প্রকাশনী মূল্য - ৩৫০ টাকা।।
বছরের ৩৮ নম্বর বই হঠাৎ হাতে পাওয়া অভীক সরকার এর লেখা ডাইনিবুড়ি ও অন্যান্য বইটি।। এটি একটি অকাল্ট হরর জনার এর বই, লেখক অভীক সরকার এই জনার এর স্পেশালাইজড লেখক।। বইটি দীপাবলির সময় বেরোলেও আমি কিছুদিন পর বইটি হাতে পেয়েছি।। এর আগে লেখকের এই জনার এর একটি বিখ্যাত বই পড়েছিলাম বেশ ভয় উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম।। তারপর আর এই ধরনের বই পড়া হয়ে ওঠেনি।। এই বইটির প্রচ্ছদটি বেশ আলাদা একটা আলাদা শিহরন খেলে যায়।। বইটিতে দুটো গল্প ও দুটো উপন্যাস আছে, যদিও এই লেখাগুলো সবই আগে কোনো না কোনো পূজাবার্ষিকী তে বেরিয়েছে, তা সত্ত্বেও আমি প্রথমবারের জন্যই পড়লাম।।
🎭 গৌরী - পাহাড়ি পরিবেশে একটি ভালো ভয়ের গল্প।। কিছু কিছু জায়গা ভয় পাওয়াতে বাধ্য, যদিও উপন্যাসের শেষ বেদনাদায়ক।। গল্পটি ভালো লেগেছে, একবার পড়ার জন্য ঠিক আছে।। গল্পটিতে কিছু কিছু জায়গা একটু খাপছাড়া লেগেছে যেমন - 🔸শুরুতে অর্জুন বসকে বলছেন তাদের গোয়াতে ছুটি কাটানোর ইচ্ছা, পরবর্তীকালে সেটি কুলু মানালি হয়ে গেছে।। 🔸অর্জুনের থেকে মৈত্র মশাইকে দূরে রাখার অন্য কোনো উপায় দেখালেও ভালো হত।।
🎭 ডাইনিবুড়ি - এই গল্পটি ভয়ের থেকেও বেশি সেনসিটিভ একটি গল্প, ভয় কম কিন্তু গল্প বলার ভঙ্গিতে পাঠক গল্পটি শেষ করতে বাধ্য।।
🎭 দেওয়ানগঞ্জের রাস্তাটা - ছোটগল্প, ভয়, গা ছমছমে বেশ একটা ব্যাপার।। এর পর থেকে রাত্রে হাইওয়ে থেকে অন্ধকার রাস্তায় গাড়ি চালাতে গেলে এই গল্পটি মনে পরবে। ভবতারণ বাবু গল্প বলিয়ে হিসেবে বেশ মানিয়েছে, তার চরিত্র গঠনের এক দুই জায়গা লেখককে অনুরোধ করবো ঠিক করে নেওয়ার জন্য।।
🎭 দ্রোলমার খড়্গ - এই লেখাটি আমার মনে হয়েছে বইয়ের সবথেকে ভালো একটি তন্ত্র নিয়ে লেখা ভৌতিক গল্প।। চরিত্র গুলো বেশ ভালো, গল্পের লেখনী নিয়ে আলদা কিছু বলার নেই।। ভয় আছে গল্পের মধ্যে বেশ কিছু দৃশ্য ভাবলেই পাঠক ভয় পেতে বাধ্য।। লেখকের পড়াশুনা এবং গবেষণা প্রশংসার দাবি রাখে।।
✨✨ পাঠ প্রতিক্রিয়া -
সবমিলিয়ে বইটির সাথে সময় বেশ ভালই কেটেছে।। ভয় এমন একটা বিষয় আমরা যতই নাক সিটকায় না কেনো, আমরা ভয় পেতে ভালবাসি।। আর লেখকের এখানেই প্রসংশা করতে হয়, পাঠক বই শেষ করে তবেই উঠতে পারবে এমন লেখনীর জন্য।। লেখকের একটি বিখ্যাত উপন্যাস ' ভোগ ' - সেই লেখার মান অনবদ্য, সেই মান এখনো অচ্ছুত আমার মনে হয়েছে।। আর এই ধরনের গল্পগুলো যেহেতু আদতে রিপিট, মানে খারাপ শক্তির উপর ভালো শক্তির জয় তাই একটা সময় পর এসে একঘেয়ে লাগে।। হয়তো লেখক নানা ধরনের তন্ত্রের দেব দেবী, তাদের পূজার্চনা সব কিছু আলাদা আলাদা ভাবে লিখলেও, আদতে গল্পের ধারা একই।। এই বইটি আপনারা পড়ে দেখতে পারেন যদি আপনাদের এই জনার ভালো লাগে, একবার অন্তত পড়ার দাবি রাখে বইটি।।
একমাত্র দ্রোলমার খড়্গ উপন্যাসটির জন্য এই বইটি কেনা / পড়া যায়। বাকি থাকে তিনটি গল্প (সূচীপত্র, এবং গুনগত মানের ক্রম অনুযায়ী) - গৌরী , ডাইনিবুড়ি, দেওয়ানগঞ্জের রাস্তাটা। প্রত্যাশা বেশী ছিলো, কিঞ্চিৎ হতাশ হলাম...