'গল্প সমগ্র' এর প্রথম খন্ডে ১৯৫৫ থেকে ১৯৬১ সালের মধ্যে লেখা ১৮ টি গল্প সংগৃহীত হলো। বইয়ের শেষ পাতায় এই সময় লেখা গল্পের যে তালিকা আছে তার দিকে এক নজর তাকালেই দেখা যাবে অন্তত ১১ টি গল্প এই সংগ্রহে নেই। হারিয়ে যাওয়া গল্পগুলো যদি পরবর্তীতে পাওয়া যায় তাহলে শেষ খন্ডে গ্রন্থিত হবে।
গল্প তালিকা: ১. হাড়কাটা ২. নাগিণীর উপমেয় ৩. আহ্নিকগতি ও মাঝখানের দরজা ৪. সাত-হাটের হাটুরে ৫. দুপুর ৬. বত্রিশ-আঙুল ৭. জলধর ব্যনার্জির মৃত্যু ৮. স্মৃতিজীবী ৯. ইচ্ছামতী ১০. পা ১১. কলকাতা ও গোপাল ১২. অসুখ ১৩. পশ্চাৎভূমি ১৪. বেড়ালটির জন্য প্রার্থনা ১৫. পায়ে পায়ে ১৬. অপেক্ষায় ১৭. দুঃসাময়িক ১৮. দাহনবেলা
দেবেশ রায়ের জন্ম ১৯৩৬ সালে অধুনা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের পাবনা জেলার বাগমারা গ্রামে। ১৯৪৩ সালে তাঁর পরিবার জলপাইগুড়ি চলে আসেন। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির সর্বক্ষণের কর্মী ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার সময় প্রত্যক্ষ বাম রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। রাজনীতির সূত্রে শিখেছিলেন রাজবংশী ভাষা। কলকাতা শহরেও ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনি সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশ্যাল সায়েন্সে একজন গবেষণা সহকর্মী ছিলেন। তাঁর প্রথম গল্প প্রকাশিত হয় ১৯৫৩ সালে জলার্ক পত্রিকায়। প্রথম উপন্যাস ‘যযাতি’। ১৯৭৯ সাল থেকে তিনি এক দশক পরিচয় পত্রিকা সম্পাদনা করেন। ১৯৯০ সালে ‘তিস্তাপারের বৃত্তান্ত’ উপন্যাসের জন্যে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। ২০২০ সালে কলকাতার একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে দেবেশ রায়ের জীবনাবসান হয়।
গল্পগুলো দেবেশ রায়ের লেখকজীবনের শুরুর দিককার। বাংলা গদ্যে নতুন এই ধরনের এক্সপেরিমেন্ট তখনও অত চালু হয়নি, এবং ভাবনাটা সকলের মাঝে পুরোপুরি প্রোথিতও হয়নি, (লেখকের মাঝেও হয়েছিলো কি?) ফলে গল্পগুলো মাঝেমধ্যেই ছন্দ হারিয়েছে। হারিয়েছে বলতে ঠিক এরকম যে, গদ্য একেকসময় খুব মিউজিক্যাল ভাবে চলছে, চলছে - চলছে; হঠাৎ পতন, পতন - পতন, আবার উঠছে, উঠছে - উঠছে; আবার পতন। পাঠক হিসেবে খুব ধৈর্যশীল না হলে বইটা পড়ে শেষ করা দুরূহ হতে পারে। তবে যে বিষয়টা বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো ভাবনার খোড়াক আছে গল্পগুলোয় বেশ চমৎকার। বিভিন্ন দৃশ্যের বর্ণনা এমনভাবে এসেছে যেন দৃশ্যটাকে কয়েকটা লেয়ারে কেটে কেটে দেখা হচ্ছে। আরও কয়েকটা গল্পসমগ্র আছে তাঁর, সবগুলোই একে একে পাঠের ইচ্ছা রাখি এইখানে।