নীহার কুমার সরকার বইয়ের নাম "ছোটদের" দিলেও ছোটরা সাম্রাজ্যবাদ,সামন্তবাদ, পুঁজিবাদ,পশ্চিমাবিশ্ব, উদারনৈতিক অর্থনীতি,খোলাবাজার নীতি,বিশ্বায়ন, বিশ্বব্যাংক কিংবা ইউরোপীয় ইউনিয়ন কিংবা সমাজবাদে সোভিয়েট, চীন কতটা বুঝবে তাই বোঝার বিষয়।
না,যতটা কঠিন ভাবছেন ততটাই সহজবোধ্য বাক্যে অর্থনীতির আর রাজনীতির গুরুগম্ভীর বিষয়গুলো উদারণের সাহায্যে সংক্ষিপ্তাকারে বৈঠকি ঢঙে আলোচনায় মেতেছিলেন নীহার সরকার।
বেশ পড়াশোনা করে, তথ্য-উপাত্ত নিয়ে লিখতে বসেছিলেন নীহার সরকার।পাঠক সাম্রাজ্যবাদ কিংবা পুঁজিবাদকে বয়কট করলে নানাবিধ উপকারিতা পাবেন মানছি । কিন্তু সমাজতন্ত্র কেন ১৯৯১ সালে এতো বড়ো ধাক্কা খেয়েছে তার কারণ যথাযথভাবে লিখেন নি নীহার সরকার।নিজে বলছেন অন্যান্য মতবাদ গোষ্ঠীবিশেষের স্বার্থ পূরণে কাজ করে, আবার নিজেই স্বীকার করছেন ১৯৯১ সালে সোভিয়েট ভাঙার অন্যতম কারণ সোভিয়েট নেতাদের ব্যক্তিস্বার্থের প্রাধাণ্য। তাহলে নিজের যুক্তির সাথে তো নিজের কথাই সাংঘর্ষিক হয়ে গেল না?!
নিজে "ছুপা" রুশপন্থী হবার কারণে এড়িয়ে গেছেন চীনের সমাজতন্ত্রের যাত্রাকে।অথচ মাওবাদ বিশ্বে একদা বেশ সুদূরপ্রসারী হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিল -সেই বিষয়গুলো নিশ্চিতে বাদ দিয়ে সমাজতন্ত্র নিয়ে গটগটিয়ে আলোচনায় মাতলেন লেখক!
পৃথিবীর কোনো "ইজম" ই দোষত্রুটির ঊর্ধে নয়। কিন্তু যখন আপনি বিশেষ ইজম বাদে অন্যসব ইজমের ত্রুটিকে বারবার লাইমলাইটে আনবেন,তখন "ছোটপাঠক"(যাদের জন্য বইটি লেখা) তারাও বুঝতে পারবে লেখক পক্ষপাতিত্বের নূন্যতম ভারসাম্য বজায় রাখতে পারেন নি। অর্থাৎ, লেখকের নিজস্ব এজেন্ডা আছে বইটি লেখার পেছনে।
জ্বী,হা নীহার সরকার সুন্দর সুন্দর সবশব্দে, বাক্যে জটিলতর বিষয়আশয় আলোচনা সত্ত্বেয় সমাজতন্ত্র নিয়ে নিজের আদর্শিক বিশ্বাসকে কিছুটা নগ্নভাবে প্রকাশ না করলে এটি হতে পারতো অর্থনীতি আর রাজনীতি বোঝার একটি শ্রেষ্ঠতম গ্রন্থ।
আবারে, বলছি এই বই পড়ে অর্থশাস্ত্র আর রাজনীতির অনেক বড়মাপের কনসেপ্টের সহজতম ব্যাখা পেয়েছি।
বইটা দুই ভাগে বিভক্ত ১. ছোটদের রাজনীতি, ২. ছোটদের অর্থনীতি
১.
ছোটদের রাজনীতি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৪২ সালে। এরপর বিভিন্ন দফায় নতুন এডিশন বেরিয়েছে। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ভেঙে গেলেও নতুন এডিশন বেরিয়েছে।
কমিউনিজমের সবকিছু ভালো, ক্যাপিটালিজমের সবকিছু খারাপ- এই বাইনারি ভাবনা বইয়ের মূলকথা। এটা 'ছোটদের রাজনীতি' নয়, এটা 'ছোটদের প্রিয় সোভিয়েত ইউনিয়ন'। বুর্জোয়া, পেটি-বুর্জোয়া সাম্রাজ্যবাদীরা জীবনীশক্তির শেষ বিন্দু দিয়ে কমিউনিজমকে শেষ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু শেষে জয় হবে কমিউনিজমের, কারণ কমিউনিজম সত্য: সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন ছিল, তখন বইয়ের সারমর্ম এমনই ছিল। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেলে বইতে একটা নতুন অধ্যায় যুক্ত হয়, সেখানে বলা হচ্ছে লেলিন স্টালিনের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে গিয়েছিল কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা, কৃষক-শ্রমিকরা অলস হয়ে গিয়েছিল, উৎপাদন কমে গিয়েছিল; আর ক্যাপিটালিজমের লাল-নীল দুনিয়ার মরীচিকার আকর্ষণ তাদের পথভ্রষ্ট করেছিল।
বইটা পড়তে গেলে কালসংক্রান্ত কিছু অসামঞ্জস্য দেখা যায়। বইয়ের কিছু যায়গা পড়লে মনে হয় সোভিয়েত ইউনিয়ন এখনও আছে, সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকার চক্রান্ত নস্যাৎ করে দিয়ে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে কমিউনিজমের জনপ্রিয়তা। আবার কিছু জায়গা পড়লে মনে হয় সর্বনাশ হয়ে গেছে। বইয়ের শুরুতে জানলাম কমিউনিজম দোষ ত্রুটির উর্ধ্বে, এর জয় অবশ্যম্ভাবী; তারপর শেষাংশে জানলাম কমিউনিজম খুব ভালনারেবল, নিজেই নিজের সর্বনাশ করতে পারে।
লেখক যদি পুরাতন লেখা কাটছাট না করে সোভিয়েতের পতনের পর সম্পূর্ণ নতুন করে লিখতেন, তাহলে এমন বৈপরীত্যে এড়ানো সম্ভব হতো। কিন্তু লেখক ১৯৪০ এর দশক থেকে ১৯৯০ এর দশক পর্যন্ত দফায় দফায় বইটা এডিট করেছেন। ইতোমধ্যে তরুণ বয়স থেকে বৃদ্ধ বয়সে এসে পড়েছেন, কিন্তু কমিউনিজমের প্রতি লেখকের অন্ধবিশ্বাস দূর হয়নি। ক্যাপিটালিজমে বুর্জোয়াদের শোষণের গল্প সত্য, ক্যাপিটালিস্ট সাম্রাজ্যবাদের সন্ত্রাস সত্য; কিন্তু ক্যাপিটালিজমের ভালোটাও কিছু বলতে হয়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পশ্চিম ইউরোপকে অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাড়াতে বড় সাহায্য করেছিল মার্শাল প্ল্যান, এমন সফল একটা উন্নয়ন পরিকল্পনাকে ইউরোপ নিয়ন্ত্রণের ঘৃণ্য চাল, সোভিয়েতের বিরুদ্ধে চক্রান্ত বলাটা খুব অশ্লীল ঠেকে। কমিউনিজমের স্বৈরাচারী শাসন সম্পর্কে তো কিছু বলা হলো না। স্টালিনের গুলাগ সম্পর্কে দুটো কথা বলা উচিত ছিল। সোভিয়েতে খাদ্যসংকট চলছে, কৃষিখাত ভঙ্গুর, তখন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সোভিয়েত মহাকাশ জয়ের রেস খেলছে সেসবও 'ছোটদের' জানানোর প্রয়োজন ছিল।
বইটা পঞ্চাশ-ষাট বছর আগের কিশোরদের মগজ ধোলাইয়ের কাজে ব্যবহার করলেও চলতো। কিন্তু আজকের দিনে এই প্রোপাগাণ্ডা বইয়ের অনেককিছুই অপ্রাসঙ্গিক। এই বইটা পড়ে যে ভুল লার্নিং হবে, সেটাকে 'আনলার্ন' করার জন্য বাড়তি পরিশ্রম করতে হবে। 28/10/2022
২.
বইয়ের নাম "ছোটদের অর্থনীতি", যে কেউ নামটা পড়লেই মনে করবে নিশ্চয়ই অর্থনীতির ABC শেখার জন্য বইটা লেখা হয়েছে। কিন্তু এমন মনে করলে সম্পূর্ণ ভুল হবে। পুরো বইয়ের বিষয়বস্তু হচ্ছে ক্যাপিটালিস্ট অর্থনীতি কীভাবে পৃথিবীর সর্বনাশ করছে, ক্যাপিটালিজমে পৃথিবীর ভবিষ্যত কেন অন্ধকার ইত্যাদি। সমাজতন্ত্রের আশার প্রদীপ হয়ে জ্বলতে থাকা সোভিয়েত ইউনিয়ন যে ইতোমধ্যে ভেঙে খানখান হয়ে গেছে, তাই মনে হয় বইখানা এমন চরম নৈরাশ্য উদ্রেককারী।
পুঁজিবাদী অর্থনীতির নানাবিধ ক্ষতিকারক দিক নিয়ে লেখক আলোচনা করেছেন। বইটাকে যতই নেতিবাচক ও একতরফা ন্যারেটিভের বলি, কিছু বিষয়ের সাথে একমত হতেই হবে। যেমন শিল্পকারখানার মালিক ও শ্রমিকদের সম্পর্কে। শ্রমিকদের এতই কম মজুরি দেওয়া হয় যে তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ হয় না; পুষ্টিকর খাদ্য, পর্যাপ্ত বিশ্রাম, চিকিৎসাসেবা, স্বাস্থ্যকর বাসস্থান, শিক্ষা কোনকিছুই তারা ঠিকমতো পায় না। লাভের প্রায় সবটাই শিল্পের মালিকরা ভোগ করে। আবার দেখা যায়, একটা বড় করপোরেশন ছোট ছোট ব্যবসাকে কিনে নিচ্ছে অথবা নিঃশেষ করে দিচ্ছে। হাতেগোনা কয়েকজন ব্যবসায়ী নিয়ন্ত্রণ করছে কোটি কোটি মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা। তারাই নিয়ন্ত্রণ করছে ব্যাংকব্যবস্থা। এই ব্যবসায়ীরা প্রভাব বিস্তার করছে দেশের নীতিনির্ধারণে, দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক নীতিমালা থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, সব নীতিমালায় মানবাধিকার উপেক্ষা করে ব্যবসায়ীদের স্বার্থই আগে রক্ষা করা হচ্ছে। একটা বড় দেশ ছোট দেশে যুদ্ধ বাধাচ্ছে অর্থনৈতিক প্রভাববিস্তার করার উদ্দেশ্যে। সাম্রাজ্যবাদী বড় দেশগুলো ছোট দেশগুলোতে একটা বুর্জোয়া শ্রেণী তৈরি করছে, সেই বুর্জোয়া শ্রেণী ব্যক্তিগত লাভের বিনিময়ে নিজ দেশের শ্রমসম্পদ, প্রাকৃতিক সম্পদ শোষণে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিকে সাহায্য করছে। এই ব্যাপারগুলি সত্যিই ঘটেছে এবং ঘটছে।
অধ্যাপক নীহারকুমার সরকার ভারতের নাগরিক। তিনি ভারত সরকারের অর্থনৈতিক পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করে অনেক কথা লিখেছেন। ��ধ্যায়টা ১৯৯০ দশকের একটা সময়ে লেখা যখন নরসিমা রাও ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং মনমোহন সিং ছিলেন অর্থমন্ত্রী। খোলাবাজার নীতি গ্রহণ করার জন��য লেখক প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর কড়া সমালোচনা করেন। খোলাবাজার নীতি গ্রহণের ফলে সাময়িকভাবে অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠা যেতে পারে, কিন্তু এর ফলে অদূর ভবিষ্যতে ভারতের সামনে অপেক্ষা করছে অর্থনৈতিক বিপর্যয়- এমনটাই আশঙ্কা করেছিলেন লেখক। তবে মুক্তির উপায় আছে একটা, তা হচ্ছে শ্রমিক শ্রেণীর পার্টিগুলোর ঐক্য। তারা যদি একজোট হয়ে স্বাধীনতার পক্ষে, সমাজবাদের পক্ষে আন্দোলন করে সফল হতে পারে, তবেই আসবে আসবে সুখ-শান্তি-সাফল্য।
প্রায় তিরিশ বছর আগের লেখা, গত তিরিশ বছরে ভারতের অর্থনৈতিক উন্নতি-অবনতির আদ্যোপান্ত আমার জানা নেই। তবে ভালোমন্দ মিশিয়ে ভারত বোধহয় উন্নতিই করেছে। লেখক যে অর্থনৈতিক বিপর্যয় আশঙ্কা করেছিলেন, ভারতবর্ষে সেসব ঘটেছে বলে তো মনে হয় না।
পুরো বই জুড়ে পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সর্বনাশা দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন, পুঁজিবাদী অর্থনীতির যে কিছু ভালো দিকও আছে, তার কোনকিছুই লেখকের চোখে পড়েনি। মুদ্রার একপিঠ দেখানো বই ছোটদের জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর হয়, যে দোষটা লেখক করেছেন। আবার বড়মুখ করে সমাজবাদের প্রশংসার বাণীও লেখক "ছোটদের অর্থনীতি"তে যুক্ত করেননি (লেখকের ছোটদের রাজনীতি অংশে অবশ্য প্রশংসা আছে, হতাশাও আছে)।
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেছে তিরিশ বছরের বেশি হলো। পুঁজিবাদকে হঠিয়ে সমাজতন্ত্র বাস্তবায়নের স্বপ্ন দেখা মানুষ এখন আর নেই বললেই চলে। যারা এখন সমাজতান্ত্রিক রাজনীতি করেন তারা পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মধ্যেই কিছু সংস্কার দেখতে চান। তাই নীহারকুমার সরকারের এই বইটা বর্তমানের সাথে আর প্রাসঙ্গিক নেই বলা যায়। আন্তর্জাতিক ব্যবসার নীতিমালাতেও অনেক সংস্কার এসেছে, ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি আইনের ক্ষেত্রে সংস্কার এসেছে, অনুন্নত দেশগুলোকে কিছু ছাড় "পুঁজিবাদী" দেশগুলো দিয়েছে, যেসব কথা এই বইতে উল্লেখ নেই।
সবকথার এক কথা, বইটা মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। এ বই আর ছোটদের নেই। অতীতে সমাজবাদীদের চিন্তাধারা কেমন ছিল জানতে চাইলে বইটা কেউ পড়তে পারেন।
মাধ্যমিক শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষামন্ত্রালয়ের অধীনে একটা প্রকল্প আছে SEQAEP (Secondary Education Quality and Access Enhancement Project). এই প্রকল্পের একটা কাজ মাধ্যমিক পড়ুয়াদের পাঠাভ্যাস তৈরি করা, তাদেরকে বিনামূল্যে বই পড়ার সুযোগ করে দেওয়া। UNDP, UKaid এর মত NGO/IGO এই প্রজেক্টে অর্থায়ন করে। SEQAEP এর ছাপানো বইগুলোর মধ্যে নীহারকুমার সরকারের "ছোটদের অর্থনীতি" বইটাও অন্তর্ভুক্ত আছে। ভারতকেন্দ্রীক এই বইয়ের সমাদর বর্তমানে ভারতে আছে কিনা জানিনা, বাংলাদেশে এখনও বইখানার মার্কেট আছে। 17-02-2023
বইটা মূলত দুইটা অংশে বিভক্ত। প্রথমটা 'ছোটদের রাজনীতি' যেখানে মূলত সমাজবিজ্ঞান আর রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রাথমিক কিছু ধারণা আর আলোচনা আর দ্বিতীয় অংশ 'ছোটদের অর্থনীতি' যেখানে অর্থনীতির কিছু প্রাথমিক আলোচনা।
বইটা কেমন এইটা যদি জানতে চাওয়া হয় তাহলে জবাবটা প্রথমেই হওয়া উচিৎ 'পড়ছে কে?'। বইটা নামে যতই ছোটদের থাকুক না কেন বইয়ের বিষয়গুলো সম্পর্কে প্রথম পড়াশোনা করতে চাওয়া যে কোনো মানুষের জন্যই উপযুক্ত একটা বই হবে এইটা। তবে কিছু কিছু বিষয় সহজে ব্যাখ্যা করতে যেয়ে লেখক অতি সরলীকরণ করে ফেলেছে বলে আমার কাছে মনে হয়েছে, বিশেষত প্রথম অংশে।
টাইটেলের সাথে বইয়ের লেখার ধরনের পুরোপুরি মিল আছে, রাজনীতি, অর্থনীতির প্রাথমিক ধারনাগুলা ছোট্র ছোট্র প্যারায় বিভক্তকরে ইলাবোরেটেড সঙ্গার মতো করে লেখা। লেখায় অনেক বেশী জেনারালাইজেশন করা হয়েছে, কমিউনিজম/স্যোসালিজম এর পারসপেকটিভ থেকে লেখা, স্বভাবতই পূজিবাদ, সাম্রাজ্যবাদের মুন্ডুপাত করা হয়েছে। রাজনীতি, অর্থনীতির প্রাথমিক ধারনার জন্য ভালো বই।
এইটারে কিভাবে ছোটদের রাজনীতি ও অর্থনীতি বলা হইলো বুঝলাম না । লেখক মনে হচ্ছিলো খুব সরল জিনিস রেও আরো জটিল করার চেষ্টা করতেছে । তাও আপ্রাণ চেষ্টা । এইটার নাম মধ্যবয়স্কদের রাজনীতি অর্থনীতি হওয়া উচিৎ ।
যারা নিয়মিত পত্রপত্রিকা পড়েন তারা রাজনীতি ও অর্থনীতির বিভিন্ন পারিভাষিক শব্দ যেমন সাম্রাজ্যবাদ, পুঁজিবাদ, সমাজতন্ত্র প্রভৃতি শব্দগুচ্ছের সাথে পরিচিত। অনেকে হয়ত বেশ ভালোভাবেই এসব শব্দের অন্তর্নিহিত অর্থ বুঝেন। আবার আমার মত অনেকেই হয়ত এসবের গভীরে তলিয়ে দেখেননি, ভাসা ভাসা যতটুকু জানা সম্ভব ততটুকু জ্ঞানই রাখেন। কিন্তু এই বিষয়গুলো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা সকলেই দরকার। তো অর্থনীতি এবং রাজনীতির একদম বেসিক ধারণা নিয়ে যে বইটা সবচেয়ে সহজ সাবলীলভাবে লেখা হয়েছে সেটি হয়ত নীহাররঞ্জন সরকারের বই- 'ছোটদের রাজনীতি ও অর্থনীতি'। তবে আসলেই বইটা ছোটদের জন্য লেখা বলা থাকলেও ছেলে-বুড়ো সকলের জন্যই সুখপাঠ্য।
শুরুতেই রয়েছে ক্যাপিটালিজমের কথা। কীভাবে ক্যাপিটালিজমের উত্থান হয় এবং এর পরিণতি কীরূপ সেসবের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। বর্ণনা একদম সাবলীল এবং প্রচুর উদাহরণ টেনে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কীভাবে ক্যাপিটালিজম থেকে ফ্যাসিজমের উৎপত্তি হয়, সেখান থেকে ইম্পেরিয়ালিজম, সোস্যালিজমে কীভাবে পরিণত হয় সেসব নিয়ে বেশ ভালো আলোচনা করা হয়েছে। সোস্যালিজম নিয়ে মানুষের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা ছিল। মানুষ আশাবাদী ছিল যে এই মতবাদ মানুষের সব দুঃখ-কষ্ট দূর করে দিবে। কিন্তু আদৌ তা পেরেছে কি-না তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর ইতিহাসের স্বপ্নভঙ্গ বইতে সোস্যালিজমের তৎকালীন অবস্থা নিয়ে হতাশাও ব্যক্ত করেছেন।
যাইহোক, রাজনীতি আর অর্থনীতি ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। কাজেই রাজনীতির পাশাপাশি অর্থনীতি নিয়েও আলোচনা করা অত্যাবশ্যক। যদিও একটা নিয়ে কথা বলতে গেলে অন্যটা অবশ্যম্ভাবীভাবেই চলে আসে। বইয়ের দ্বিতীয় অংশে অর্থনীতির কথাবার্তা রয়েছে। কীভাবে মালিক শ্রমিক শোষণ করে পুঁজি বাড়ায় তার কথা রয়েছে। রয়েছে শোষণের আধুনিক রূপ অর্থাৎ বহুজাতিক কোম্পানির ব্যাপারেও আলোচনা, খোলাবাজার এবং বৈদেশিক মুদ্রা প্রভৃতির ব্যাপারেও। অর্থনীতি এবং রাজনীতির একদম বেসিক বিষয়াবলি নিয়ে সংক্ষেপে জানার জন্য ���ই বইটি চমৎকার মাধ্যম হতে পারে।
ছোটদের অর্থনীতি ও রাজনীতি অধ্যাপক নীহারকুমার সরকার।
বাস্তব উদাহরণ প্রয়োগ, চমৎকার পর্যালোচনা আর সহজ-সরল লেখনীর মাধ্যমে রাজনীতি, অর্থনীতির একেবারে ব্যাসিক কনসেপ্ট নিয়ে বইটি লেখা হয়েছে। বইটি অবশ্য পঠিতব্য ক্যাটাগরির। এতদসত্ত্বেও, দুইতারা কেটে নেওয়ার কারণ বলা উচিত মনে করছি। ১. বইটি নিরপেক্ষ না। রুশীয় ইনফ্লুয়েন্সে দুষ্ট। ২. সোভিয়েতের সমাজতন্ত্রের ধ্বস আর চিনের সমাজতন্ত্র সম্পর্কে কথাবার্তা আসেনি, স্বেচ্ছায় এড়ানোর বিষয়টি ধরা পড়েছে।
এর পরেও বইটি হাইলি রেকমেন্ডেড, বিশ্ব অর্থনীতি ও বিশ্ব রাজনীতি সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা পাওয়ার জন্য।
অধ্যাপক নীহার কুমার সরকারের লিখা, 'ছোটদের রাজনীতি ছোটদের অর্থনীতি' বইটা পড়া শেষ হলো। বইয়ের টাইটেল থেকে ছোটদের বই মনে হলেও আক্ষরিক অর্থে এটা ছোটদের বই না। না এইজন্য এখানে পুঁজিবাদ, সাম্রাজ্যবাদ, ব্যবসা-সংকট, মার্কসবাদ, লেনিন বাদ এই ধরণের ভারী ভারী আলাপ এনেছেন যেগুলো আমার ধারণা বোঝার জন্য একটু বয়স থাকা ভালো। তবে, এটা হলো আমার মতো ছোটদের জন্য, যাদের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক জ্ঞান একদমই শূন্যের কোঠায়/নতুন এই বিষয়ে জানার চেষ্টা করছেন তাদের জন্য। তো বইটায় কি আলোচনা করা হলো? মূলতঃ এটা একসময় দুটি বই ছিলো, এখন একটি অখন্ড বই হিসেবে সংস্করণ বেরিয়েছে। সেই হিসেবে দুটি অংশ। রাজনীতি এবং অর্থনীতি। ক্যাপিটালিজম, সোশ্যালিজম, কম্যিউনিজম, ফ্যাসিজম এই ধরণের গুরুগম্ভীর ব্যাপারগুলো উনি সহজ করে আলাপের মতো বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। আসলেই বেশ সহজ ব্যাসিক বোঝার জন্য। ব্যাপারগুলো সহজে বোধগম্য হওয়ায় ইন্টারেস্টিং ই লেগেছে। অর্থনৈতিক অংশটা রাজনৈতিক অংশটার মতো গোছানো লাগল না কেন যেন। তবে অর্থনীতি বোঝা কতটা কঠিন, সেটুক বোঝা হয়ে গেছে!
খারাপ লাগার অংশ বললে, কেন যেন আমার বইটা একপেশে মনে হয়েছে। উনি প্রায় অর্ধেকের বেশি সময় জুড়েই সোশ্যালিজম এর পক্ষেই প্রচারণা করলেন, আর ক্যাপিটালিজম এবং ইম্পেরিয়ালিজম এর নিন্দাই গেয়ে গেলেন। লেখক নিরপেক্ষ জ্ঞানের বইয়ে নিরপেক্ষ থাকতে পারলেন না, পাঠক কে বিচার করতে না দিয়ে ওনার মতবাদ ব্যাখ্যা করতে চাইলেন, এটা কেমন যেন দৃষ্টিকটু।
একদম ব্যাসিক নলেজ নেয়ার জন্য পড়া যেতে পারে। আমি শুনেছিলাম এটাই সবচেয়ে সহজ করে লেখা, তাই এটা পড়া।
[পুনশ্চঃ এই বইটা আমার সবচেয়ে লংগেস্ট টাইম ধরে টানা পড়া কোন বই। সেই রোজার ঈদের দুইদিন আগে পড়া শুরু করেছিলাম, এই ঈদের দুদিন আগে শেষ করলাম। প্রতিদিন ঘুমাতে যাবার আগে এক দুই পেইজ/একটা টপিক করে পড়েছি। টানা বললেও মাঝে অনেকবারই ৩-৪দিন করে ঠিকই গ্যাপ গেছে। এভাবে লাভ হলো সহজেই কঠিন বই গুলো পড়ে ফেলা যাবে। আর লস হলো অনেক কিছুই ভুলে যাবেন শেষ করতে করতে। তবে একটা কঠিন বই এখন থেকে থাকবে এভাবে লিস্টে! আর আমি পিডিএফ পাইরেসি কালচার প্রোমোট করতে চাইনা কখনই। আমি এখনও টাকা দিয়েই ইবুক কিনি কিনলে। এটা পাচ্ছিলাম না। হঠাৎ পিডিএফ পেয়ে গিয়েছিলাম। লোভ সামলাতে পারিনি। পড়ে ফেলেছি।]
৭০ বছর আগে লেখা বইটির নতুন সংস্করন। বইটা আসলেই ছোটদের কিনা সন্দেহ আছে। এক কথায় বলা যায়, সহজ সরল ভাষায় রাজনীতি ও অর্থনীতি। বেশ পরিশ্রম করে, তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে বইটি লিখেছেন ড. নীহার সরকার। আমার মতে ক্যাপিটালিজম, কমিউনিজম…. পৃথিবীর কোনো পদ্ধতিই দোষত্রুটি মুক্ত নয়। কিন্তু লেখিকা পুজিঁবাদ-ফ্যাসিজমের যতটা নেগেটিভ দিক তুলে ধরেছেন, ততটা সমাজতন্ত্র-মাওবাদ নিয়ে সমালোচনা করেন নাই। তাই, সমাজতন্ত্র নিয়ে লেখিকার নিজের আদর্শিক বিশ্বাস অনেকাংশে প্রকাশ না করে নিরপেক্ষ থাকলে এটি হতে পারতো অর্থনীতি আর রাজনীতি বোঝার জন্য একটি ভালগ্রন্থগুলির মধ্যে অন্যতম। বেশ ভাল বই, প্রত্যেকের পড়া উচিৎ।
৫ তারকা দিলাম। কারণ এটি সমর্থক সমালোচক সবার জন্যই অবশ্য পাঠ্য, বিশেষ করে সহজ ভাষায় অনেক গুরুগম্ভীর বিষয়ের প্রথম পাঠ বলা যেতে পারে। সমাজতন্ত্র সম্পর্কে সুখ্যাতি এবং সেটি কাজ না করার কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে, অনেকগুলো কারণ যেগুলো একইসাথে কাজ করেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
আমি কোন বিশেষ তন্ত্রের সমর্থক নই, তবে এটুকু মনে হয় ঠিক যে সমাজের প্রতিটি মানুষ যদি মৌলিক অধিকার পায় আর রাষ্ট্রযন্ত্র যদি তা নিশ্চিত করতে পারে তবে তার থেকে ভালো মনে হয় কিছু হতে পারে না।
ছোটদের জন্য লেখা যদিও কিন্তু আমার মতো দুনিয়া-দারি সম্পর্কে অজ্ঞাত এবং অজ্ঞানদের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ বই, বিশেষ করে রাজনীতির অংশটুকু, আমার মনে হয়েছে বর্তমান বিশ্বরাজনীতি সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝতে গেলে রাজনীতির গোড়া সম্পর্কে ভাসা ভাসা জানাটা বিপদজনক। সুতরাং, সবার জন্য না হলেও ভাসা ভাসা জ্ঞান যাদের তাদের জন্য উপযোগী বই তবে, লেখক খুব সম্ভবত নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে বইটা পুরোপুরি লেখেননি তাই এই বইটি পড়ার পাশাপাশি তথ্যগুলো একটু যাচাই করে নেয়া ভালো।
রাজনীতি নিয়ে মোটামুটি ধারনা নেওয়ার জন্য বইটা পড়া শুরু। ভেবেছিলাম এই জটিল বিষয় গুলো বুঝতে অনেক সমস্যা হবে! কিন্তু লেখক এতো সুন্দর এবং সহজভাবে বিষয় গুলো ব্যাখা করেছেন যে, আমার মতো বিগিনার লেবেল মানুষের জন্যও বুঝতে কষ্ট হয়নি। বাট যদি আরো অনেকবেশি জানতে চান তাহলে এইটা আপনার সেই পিপাসা মেটাটে পারবে বলে মনে হয়না। রাজনীতির বেসিক ব্যাপার গুলা বুঝার জন্য এই বইটা পড়তে পারে
এই বইয়ের আরেকটা অংশ আছে, অর্থনীতি। ঐ অংশের কয়েকটা অধ্যায় পড়েছি বিধায় ঐ অংশ নিয়ে মন্তব্য করলাম না।
অর্থনীতি ও রাজনীতি দুইটা বিষয় নিয়ে জনমত নির্বিশেষে চায়ের দোকানে,হাটে বাজারর ব্যাপক আলোচনা করা সত্ত্বেও বাস্তবিকপক্ষে তাতে থাকে নিজেদের মনগড়া চিন্তাচেতনা ও ক্ষুদ্রভাবনার বহিঃপ্রকাশ। সেহিসেবে এই ফিল্ডে নিজেদের সামান্য দক্ষ করে তুলতে এই বইটির তুলনা নেই, অর্থনীতি ও রাজনীতি র নানা পারস্পেক্টিভ স্পর্শ করেই বইটির সামগ্রিকতা রক্ষিত হয়েছে। যদি কেউ এনিয়ে নিয়ে বিশদভাবে জানা শুরু করতে চান,তবে নিঃসন্দেহে বইটি হতে পারে তার ফার্স্ট চয়েজ।
নন-ফিকশন পড়া আমার জন্য খুবই চ্যালেঞ্জিং একটা ব্যাপার তবু এ বইটা পড়া হয়ে গিয়েছে। বইটার এক্সপ্রেশন খুবই সহজ, ওয়ার্ল্ড পলিটিক্স আর ব্যাসিক লেভেলের ইকোনোমিক সিস্টেম নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে বইটিতে। এসব বিষয়ে যারা মোটামুটি অজ্ঞ এবং শুরু থেকে শুরু করতে চান বলে যারা অপেক্ষায় আছেন তাদের জন্য বইটি দারুন রোল প্লে করবে।
অসাধারণ একটি বই ছোটদের রাজনীতি ও অর্থনীতি। যারা সমাজতন্ত্র এবং রাজনীতি ও অর্থনীতি সম্পর্কে জানতে চান তাদের জন্য প্রাথমিক স্তরের বই হিসেবে অত্যন্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ ছোটদের রাজনীতি অর্থনীতি। যারা উৎপাদন ব্যবস্থা বিশ্ব রাজনীতির চাল পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চান তাদের জন্য একটি মূল্যবান বই এবং যারা পুঁজিবাদ আর সমাজতন্ত্র নিয়ে জানতে চান তাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বই।
রাজনীতি ও অর্থনীতির বেসিক জানতে পারব বলে পড়া শুরু করেছিলাম। কিন্তু পুরো বইতে কমিউনিজমের জয়গান আর পুজিবাদের বদনাম গেয়ে গেল। কিঞ্চিৎ হতাশ বইটা কমিউনিজম কেন দরকার - এ বিষয়ে বেসিক জ্ঞান অর্জনের জন্য পড়া যেতে পারে
সব কিছুরই positive negative দিক থাকে। ছোটদেরকে শেখানোর সময় আমাদের তাই extra careful থাকা লাগে যাতে তারা কোন বিষয়ের ভালো খারাপ বিবেচনায় এনে তারপর সিদ্ধান্ত নিতে পারে। বইটা আমার কাছে খুবই biasedly লিখা মনে হয়েছে। এতে বাচ্চারা একটি বিষয়কে খুব খারাপ জানবে আরেকটিকে একদমই ত্রুটিমুক্ত ভাববে।