Jump to ratings and reviews
Rate this book

জলজ লকার

Rate this book
বিশাল বড়ো মাছের পিঠে গড়ে ওঠা অদ্ভুত এক নগরী, যেন জীবন্ত দুঃস্বপ্ন। কেউ জানে না কোথা থেকে এলো, কেনই-বা রয়ে গেছে? রাত গভীর হলে এখানে হঠাৎ কেউ হারিয়ে যায়, বাতাসে মিশে যায় তার অস্তিত্ব। কারো চোখে ভেসে ওঠে মৃত্যুদূতের ছায়া। কেউ পালায় বাড়ি ছেড়ে, আবার কেউ ফিরে আসে পুরানো তাড়নায়, যেন কিছু একটা তাকে বেঁধে রেখেছে। এরই মাঝে আত্মঘাতী হয়ে ওঠা এক চরিত্র ছড়িয়ে দেয় সন্দেহের জাল। প্রতিটি অলিগলি, প্রতিটি ছায়ার তলে লুকিয়ে থাকে রহস্য আর ছলনার দ্যোতনা।

এই জনপদ কি তবে অতিপ্রাকৃতের ফাঁদ? নাকি নিছক মিথ, যা যুগ যুগ ধরে বেঁচে আছে মানুষের কল্পনায়?

জলজ লকার এমন এক উপন্যাস, যেখানে প্রতিটি মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে আছে গভীর রহস্য। মিথ, ম্যাজিক রিয়েলিজম, নাকি নিছকই এক বিভ্রম এই উপন্যাসে সেই গন্তব্যের খোঁজে আপনাকে পা রাখতে হবে এমন এক জগতে, যেখানে সময় চেনা, তবুও অচেনা। আপনাকে হাঁটতে হবে সেই সময়ের পথে অজানা রহস্যের গন্তব্য খুঁজে নিতে।

287 pages, Hardcover

First published February 1, 2025

16 people are currently reading
211 people want to read

About the author

Mahrin Ferdous

8 books208 followers
Mahrin Ferdous is the author of eleven books across adult and children’s literature. Her fiction inhabits the border of surrealism and magic realism, where social upheaval collides with psychological dislocation and the hidden architectures of memory. Her stories blur reality and the uncanny, drawing readers into worlds that are unsettling yet deeply human.

In 2019, she was named one of Bangladesh’s five most promising young writers by Banglalink Telecom. She received the BRAC Bank–Samakal Literary Award in 2022 for her contributions to Bangla literature. Beyond her books, she serves as Vice President of the Pencil Foundation, a nonprofit dedicated to youth creativity and social engagement.

She now lives in New York, where she continues to write and work.

Email: mahrinauthor@gmail.com

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
22 (21%)
4 stars
60 (58%)
3 stars
14 (13%)
2 stars
7 (6%)
1 star
0 (0%)
Displaying 1 - 30 of 47 reviews
Profile Image for Harun Ahmed.
1,646 reviews418 followers
February 17, 2025
"ঠিক কবে থেকে আমি এই গল্পটা বলার জন্য অপেক্ষা করছি, তা নিজেও জানি না। একবার মনে হয়, আমার জন্মেরও আগে হয়তো এই অপেক্ষা শুরু হয়েছিল।"


মাহরীন ফেরদৌসের লেখা বরাবরই পড়তে ভালো লাগে। এতো সাবলীল, মাধুর্যময় গদ্য তার! "জলজ লকার" বইটা নিয়ে বাড়তি প্রত্যাশা ছিলো না। ফ্ল্যাপে যে অপার্থিব ও ছায়াচ্ছন্ন জগতের ছবি পাওয়া যায়, তার চেয়ে মূল গল্প অনেক বেশি লৌকিক ও আকর্ষণীয়। অতীতে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা, বোনের সাথে দ্বন্দ্ব,প্রেমিকের সাথে অসমাপ্ত অধ্যায়, বহমান জীবন, বিষাদে আচ্ছন্ন  বর্তমান, বিরুদ্ধমত প্রকাশ করায় নেমে আসা নির্যাতন -আপাত এলোমেলো কিছু ঘটনা লেখিকা ধীরে কিন্তু নিশ্চিত পদক্ষেপে একত্রিত করেছেন এবং তৈরি করেছেন বাস্তব ও বাস্তবাতীত এক জগত। গল্পে অতিলৌকিকতা আছে কিন্তু তা সীমিত; অনুভূতি আরো বাঙ্ময় করে তোলার জন্য, অভিঘাত তীব্রতর করার জন্য।কিছু জায়গায় ঘটনা আরোপিত  মনে হয়,গল্পটা ঠিক কোথায় ঘটছে ধরা যায় না কিন্তু এগুলো খুব ছোটখাটো ত্রুটি, রোদেলা ঝকঝকে আকাশে হঠাৎ ভেসে আসা অপসৃয়মান কালো মেঘের মতো। প্রথমদিকের কিছু দুর্বলতা মাহরীন ফেরদৌস দ্রুত কাটিয়ে ওঠেন, জলজ লকার তথা নিজের অতীত ও বর্তমানের সঙ্গে বোঝাপড়ার লড়াইয়ে কথকের সাথে আমরাও যুক্ত হয়ে পড়ি। উপসংহার অর্থবহ ও সুন্দর। এ বইটা পড়ার রেশ বহুদিন থেকে যাবে।
Profile Image for Ashik.
220 reviews40 followers
February 21, 2025
শীতকাল আমার পছন্দ না, শীত পছন্দ না। কিন্তু কুয়াশা আমার ভীষণ পছন্দ। দূর থেকে ঘন জমাট বাঁধা কুয়াশা দেখলে মনে হয় ওর মধ্যে গেলে একেবারে ডুবে যাব, তলিয়ে যাব, বের হওয়ার উপায় থাকবে না। বাস্তবে সেটা আর হয় না। কুয়াশার যত কাছে যাওয়া হয় তার ঘনত্ব তত কমতে থাকে, গুড়ো গুড়ো হাওয়ার মতো চারপাশে ভাসতে থাকে অনেকটা অদৃশ্য হয়েই। দূর থেকে কুয়াশাকে ডুবে যাওয়ার সম্ভাবনাময় খাত মনে হলেও বড়জোর হাত-পা হালকা ভিজিয়ে দেওয়া ছাড়া কুয়াশার আর কিছু করার ক্ষমতা নেই।

জীবনের বিষন্নতা, একাকীত্বও অনেকটা কুয়াশার মতো মনে হয় আমার কাছে। দূর থেকে যাকে জমাটবদ্ধ মরণফাঁদ মনে হয়, যেখানে একবার গিয়ে পড়লে আর রক্ষে নেই, কাছে গেলে দেখা যাবে সে খুবই নিরীহ কিসিমের জিনিস। বিষন্নতা, বিচ্ছিন্নতা, নিঃসঙ্গতাকে ভয় না পেয়ে যদি আস্তে-ধীরে তাদের দিকে এগিয়ে যাওয়া যায়, তাদের আপন করে নেওয়া যায় তাহলে তারাও দিতে পারে শীতের সকালের মতো স্নিগ্ধ স্পর্শ।

কিছু কিছু লেখা পড়লে আমার এমন মনে হয়। মনে হয় আপাতদৃষ্টিতে ভীতিকর নিঃসঙ্গতাকে খুব যত্নে আমাদের চারপাশে পাতলা একটা আবরণের মতো জড়িয়ে দিয়েছেন লেখক/লেখিকা।
মাহরীন ফেরদৌসের "অরিগামির গোলকধাঁধায়" পড়া হলো কিছুদিন আগে, লেখিকার লেখা সম্পর্কে ধারণা নেওয়ার জন্য। তার লেখা আকর্ষণীয়, মানে যেমন ধরনের লেখা আমার ভালো লাগে আর কী!

"জলজ লকার" সহজের মধ্যে জটিল সব সমীকরণের গল্প। সাদা চোখে মনে হয় কী হচ্ছে, কেন হচ্ছে, কীভাবে হচ্ছে? অনেকগুলো এলোমেলো সুতো, তবুও সুন্দরভাবে সাজানো-গোছানো।
বাল্যকালের অনাকাঙ্ক্ষিত ট্রমা মানুষ কীভাবে আজীবন কীভাবে বয়ে বেড়ায়, নিজ পরিবারের সাথে বিচ্ছেদ, একাকীত্বের সাথে হাত ধরে পথ চলা, মাঝেমধ্যে তালিসমানের উঁকি দেওয়া; এসবের মিশ্রণ সাবলীলভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখিকা। গল্পটা আমাদের, গল্পের চরিত্ররাও আমাদের চারপাশের মানুষ, তাও কেন যেন মনে হয় এরা ঠিক আমাদের মতো না, অনেক দূরের। বাস্তব জগতের মাটিতে পা দিয়ে অবাস্তব জগতের দিকে হাত বাড়ানোর মতো।

তীব্র কোনো বিষাদ, আবেগ, ভালোবাসার গল্প বলা হয়নি কাহিনিতে। জোর করে কারো মুখ দিয়ে আবেগী বুলির ঘনঘটাও আসেনি। কারো বিষাদের তীব্র দীর্ঘশ্বাসও নেই বইয়ের পাতায়।
যা আছে তা খুব সাধারণ, চোখ ফেটে পানি আসে না কিন্তু মনকে আর্দ্র করে দেয়।

মাকড়সার জালে ভোরের শিশির পড়লে যেমন চকচক করে, আর সেই মুক্তার মতো চমকাতে থাকা জালের মাঝ দিয়ে রক্তমাখা সূর্যকে দেখতে যেমন লাগে, 'অরিগামির গোলকধাঁধা' থেকে বের হয়ে 'জলজ লকার' হাতড়ে একমুঠো শীতলতা তালুবন্দি করার অনুভূতি একই রকম ছিল।।
Profile Image for Mahmudur Rahman.
Author 13 books356 followers
Read
March 3, 2025
জলজ লকার পড়তে পড়তে মাথায় আসবে, গল্পটা কি তারার? মনে হবে, হ্যাঁ তারারই। তারপর আবার মনে হবে গল্পটা তারার মায়ের। কিন্তু আরেকটু তলিয়ে ভাবলে মনে হবে খুব চেনা প্রতিবেশের গল্প, যাকে আমরা কখনো মাহরীন ফেরদৌসের মতো করে দেখিনি। হতে পারে গল্পটা আমাদেরই। কিংবা আমাদের গল্পটা কোনোদিন এ রকম হওয়া অসম্ভব না।

জনপ্রিয় ঘরানায় বাংলাদেশের লেখকরা যে ধারার উপন্যাস লিখে থাকেন, জলজ লকার সে ধারার না। ইউরোপিয় বা আমেরিকান, কখনো লাতিন আমেরিকান ছাঁচটা স্পষ্ট ধরতে পারা যায়। তবে মাহরীন যেভাবে বলেছেন (ন্যারেট করা) সেটা মিশে গেছে এই গল্পের সঙ্গে। তাই খচখচ করে না। তবে যখন তিনি ছাত্র আন্দোলন, রেস্টুরেন্ট-গার্মেন্টসে আগুন, ভাঙা দালানের নিচ থেকে চাপা পড়া মানুষ উদ্ধারের কথা লিখছেন তখন মনে হয়, আমার শহরের নামটা থাকলে হয়ত আরো ভালো লাগল।

এই সময়ে যারা লিখছেন, তাদের মধ্যে মাহরীন ফেরদৌসের লেখা মনোযোগের দাবী রাখে। জলজ লকার সেখানে আরেকটা ধাপ। উপন্যাসটা হয়ত সবার ভালো লাগবে না, তবে যারা নতুন ধারার কিছু পড়তে চান (দেশীয় লেখকদের থেকে) তাদের এ বইটা ভালো লাগাবে বলেই মনে হয়। এমনকি যারা নতুন লিখছেন, তারাও জলজ লকার থেকে কিছু নিতে পারবেন।
Profile Image for Shuk Pakhi.
512 reviews305 followers
July 29, 2025
তারা নামের মেয়েটির জবানীতে কাহিনী এগিয়ে চলে। সে একলা তবে তাকে একাকিত্বে ভোগা মানুষ মনে হয়নি। সে তার ভেতরের অনুভূতি চারপাশের মানুষের সাথে শেয়ার করতে পারে না বা করতে চায় না। অথচ তার ভেতরে কত কথার সিন্দুক আটকে আছে। তার মনোলগ শুধু জানে পাঠক। সে তার ছোটবেলার কথা বলে, তার চাচার হারিয়ে যাওয়া, বাবার চলে যাওয়া, মায়ের মরে যাওয়া, ক্লাসমেটের আত্মহত্যা, বোনের সাথে দূরত্ব, প্রেমিকের দূরে চলে যাওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি নিয়ে কথা বলে যায়। পাঠক হিসেবে আমার মনে হয়েছে যেন এককাপ কফি নিয়ে আমি তার সামনে চুপচাপ বসে বসে শুনছি এইসব কথা।
বইটা কেন ভালো লেগেছে ভাবতে গিয়ে মনে হলো বইয়ের প্রোটাগনিস্টের লোনলিনেস আমাকে আকৃষ্ট করেছে। তারার একাকিত্ব দেখে হয়তো তার মাঝে আমাকেই দেখেছি। আমরা সবাই ত আসলে শেষকালে নিজের কাছে নিজেই একা।
বইয়ের গদ্য সুন্দর ও সাবলীল হওয়ায় আরামসে পড়ে ফেলা যায় পাতার পর পাতা। আর কাহিনীর আকর্ষণও পাঠক হিসেবে টেনে নিয়ে গিয়েছে।
সব মিলিয়েই চমৎকার লেগেছে বইটা।
সব্যসাচী মিস্ত্রির করা প্রচ্ছদ বরাবরের মতনই সিম্পল-সুন্দর।
আর প্রকাশনীকে আলাদা করে ধন্যবাদ এত চমৎকার বাঁধাইয়ের জন্য।
Profile Image for নাহিদ  ধ্রুব .
143 reviews27 followers
March 12, 2025

উপন‍্যাসটা শুরু করেছিলাম বহুদিন আগে, সঙ্গত কারণেই মাঝে এসেছে লম্বা বিরতি। ফলে, খেই হারিয়ে ফেলা যানে দ্বিতীয়বার উঠতে কিছুটা বেগ পোহানো হয়তো অনুমিত ছিল, কিন্তু, আশ্বর্যজনকভাবে সহজেই গল্পে ঢুকে যেতে পারলাম কোন জবরদস্তি ছাড়াই। উপন‍্যাসের শেষে এসে এই পুরো বিষয়টাকে নিয়ে চিন্তা করে মোটামুটি একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হলাম, ভাষাই মূলত এই উপন‍্যাসের সবচেয়ে বড় শক্তি।

না ঠিক পোয়েটিক কিংবা মার্কেজ ঘরানার দীর্ঘ বাক‍্যের দিকে ঝোঁকেননি মাহরীন বরং তিনি হেঁটেছেন মুরাকামির পথে। ছোট বাক্য কিন্তু, বিঁধে তীক্ষ্ণ ফলার মতো। পাঠক হিসেবে মনোলগধর্মী গদ‍্যের প্রতি আমার বিশেষ স্বজনপ্রীতি আছে। মাহরীন এই উপন‍্যাসে করেছেন দীর্ঘ মনোলগের চমৎকার ব‍্যবহার।

চরিত্র থেকে চরিত্রের যে ভ্রমণ সেখানে ভ্রান্তি কিছুটা আছে। শিমন চাচার চরিত্রে স্থির হতে না হতেই তাই আমাকে নজর দিতে হয়েছে তালিসমানের দিকে। রহস‍্য ঘণীভূত হতে হতেই দৃশ্যে হাজির হয়েছে প্রোটাগনিস্টেস বোনের সাথে তৈরি হওয়া দ্বন্দ্ব। নভো আরেকটু নভোচারীর মতো বিস্তৃতি নিয়ে এলে জমতো বেশ! তবে, মাহরীনের ন‍্যারেটিভ যেহেতু প্রথাগত ন‍্যারেটিভ কিংবা কন্টিনিউটিকে উপেক্ষা করে এগিয়েছে স্ন‍্যাপশট নিতে নিতে সেহেতু চরিত্র নিয়ে আলাদা করে প্রশ্ন তোলা হয়তো সমীচীন নয়।

গল্পের দিকে গেলে, ফিরে আসে শৈশবের ট্রমা, ব‍্যর্থ প্রেম, চিরচেনা বিষাদ কিন্তু এসব পরিচিত প্রেক্ষাপট নয়, ‘জলজ লকার’ উপন‍্যাস আমাকে চমকে দিয়েছে মিথের পরিপূর্ণ রূপ দেখিয়ে। এই মিথ আমাদের পরিচিত সে’ই প্রাচীন মিথ নয়, এখানে বরং আছে ফ‍্যান্টাসির ছোঁয়া। ফলে, গল্পটা পড়তে পড়তে তৈরি হয় আলাদা মহল, দৃশ‍্য থেকে দৃশ‍্য বদলায় এক লহমায়।

তবু, কিছু কথা থাকে। কখনও কখনও মেলোড্রামাটিক ডায়লোগ, তো কখনও অতি বর্ণনা কিছুটা ক্লান্তি এনেছে পাঠে। মনের অজান্তেই মনে হয়েছে গল্পের প্লট হয়তো আরও বহুমাত্রিক হতে পারতো। এমন তো কতো অনভূতি থাকেই!

দ্বৈত সত্তার আলাপনে যখন লেখক আশ্রয় নিয়েছেন দর্শনের, এসেছে অনেক জানা অজানা রেফারেন্স, যখন মনে হয়েছে লেখক জাদুকাঠি দিয়ে মেলানকোলি থেকে আলাদা করতে চাইছেন হলোনেস, যখন গল্পের চেয়েও বড় হয়ে উঠছে রহস‍্য, তখন এই উপন‍্যাস পাঠের আনন্দটুকুই জিতে যায় হয়তো। তবে, সবমিলিয়ে ‘জলজ লকার’ আমার মনে থাকবে, এই উপন‍্যাসের চমৎকার ক্রাফটিংয়ের জন্য।
Profile Image for Shuhan Rizwan.
Author 7 books1,107 followers
Read
October 18, 2025
বাস্তবতার চেয়ে হালকা একটা পরাবাস্তবতার ছায়াই বেশি লম্বা এই উপন্যাসের ওপর। বর্ণনায় এমন এক ধরনের সততা আছে, যেটা লেখকদের প্রথমদিকের উপন্যাসে পাওয়া যায়।

বাস্তবতা আর কল্পনার জগতের প্রতিনিধি হিসেবে দুই বোনের তর্কটা বেশ ভালো লেগেছে। ভালো লেগেছে ছোট ছোট লোকজ গল্পগুলোও।
Profile Image for মোহতাসিম সিফাত.
180 reviews50 followers
August 31, 2025
বইটা এই সময়ের দলিল। এই সময়ে এই দেশের শহুরে মধ্যবিত্তের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ক্রাইসিসগুলো মানুষকে কিভাবে ড্রাইভ করছে আর সেসব ইমোশন পুঁজি করে সমকালীন সমাজ ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যেই অব্যবস্থাপনা হচ্ছে, তারই খন্ডচিত্র সুন্দর করে সাজিয়ে গল্পটা বোনা হয়েছে। এখানের চরিত্রগুলোর প্রত্যেকের জীবনের একেকটা গল্প আছে ।গল্পে সরাসরি উপস্থিত না থেকেও কিছু চরিত্র কাহিনীর মোচড়ে শক্তিশালী হিসেবে উপস্থিত হয়েছে। চাতুর্যের সাথে লেখক আচ্ছন্ন করেছেন, অনেকদূর পড়ার পরেও প্লটে ঢুকতে পারছিলাম না, একই সাথে প্লটে ঢোকার ইচ্ছা প্রবলতর হচ্ছিলো, থ্যাংকস টু দি পোয়েটিক প্রেজেন্টেশন। পড়ার সময় কয়েকবার মনে হলো যে এটা কি থ্রিলার? নাকি পরাবাস্তব কোনো ঘটনা শুরু হবে এখন। যাইহোক, সুন্দর একটা এন্ডিং পেয়েছি, the ending that was necessary।

বইয়ের সবগুলো চরিত্র ভীষণভাবে একাকীত্বে আচ্ছন্ন। এই সময়ের একটা বড়ো সংখ্যক শহরবাসী মানুষ ব্যাপারগুলো রিলেট করতে পারবে। এটাই বইয়ের সবচেয়ে সুন্দর দিক।
Profile Image for S.M. Mowla.
Author 11 books115 followers
March 6, 2025
"জলজ লকার"—শব্দদুটির অক্ষরগুলি যেন জলের তরঙ্গে ভাসমান এক প্রত্নবস্তু, যা হাত বাড়ালেই হারিয়ে যায় ধোঁয়াশার স্তরে। বইয়ের মলাটে লেগে থাকা এই নামটির দিকে তাকিয়ে থাকতেই মনে হচ্ছিল, এ যেন কোনো জলদস্যুর ডায়েরি থেকে ছিটকে পড়া এক গুপ্ত সংকেত। মাহরীন ফেরদৌসের কলমের শব্দচয়নে প্রতিটি বর্ণ হয়ে ওঠে একেকটি জলজীবী প্রাণী, যারা শব্দের স্রোতে ভেসে বেড়ায় অথৈ সমুদ্রের মতো গভীর কোনো অর্থ খুঁজে।

২০১১ সালে "একুয়া রেজিয়া" নামে যে লেখিকাকে চিনেছিলাম, তার কলমে তখনও ছিল নদীজলসিক্ত কিশোরী মনের টান। কিন্তু "জলজ লকার"-এর শিরোনাম দেখেই বুঝতে পারলাম—এ সেই লেখিকা নয়। এ যেন পরিণত বয়সের নদী, যা কিনা সমুদ্রের গভীরতাকে জড়িয়ে ধরে নিজের স্রোতধারায়। শব্দদুটির মাঝে লুকিয়ে আছে এক চিরাচরিত দ্বন্দ্ব: "জলজ" শব্দটি যেখানে প্রবাহিত হয় বাঙালির রক্তে মিশে থাকা নদীমাতৃক সত্তা, "লকার" শব্দটি টেনে আনে আধুনিক নগরসভ্যতার কংক্রিট-লোহার গন্ধ। এই নামকরণেই যেন লেখিকা বলতে চেয়েছেন—আমাদের অস্তিত্ব তো ঠিক এমনই, প্রাচীন ও আধুনিকের সংঘাতে জেগে ওঠা এক জলজ অস্তিত্বের লকার!

বেটা রিডার হিসেবে বইটি পড়ার সময় বইয়ের প্রথম পাতায় ঢোকার আগেই মনে হচ্ছিল, এই শিরোনাম নিজেই একটি উপন্যাস। বিশাল মাছের পিঠে ভাসমান নগরীর রূপক যেন ফুটে উঠেছে শব্দের বিন্যাসে—"জলজ" শব্দের জলে ভেজা ব্যঞ্জনা আর "লকার"-এর ধাতব শীতলতা মিলে তৈরি হয়েছে এক অদ্ভুত সিম্ফনি। মাহরীন এখানে শব্দকে যন্ত্রের মতো বাজিয়েছেন, যেখানে প্রতিটি সুর পাঠককে টেনে নিয়ে যায় অদেখা কোনো দ্বীপের দিকে। শিরোনামের মধ্যেই লুকিয়ে আছে গল্পের হৃদয়—যেখানে "লকার" শব্দটি শুধু ইংরেজি শব্দের প্রতিসর নয়, বরং মানবমনের সেই গুহা যেখানে আমরা আটকে রেখেছি মুখোশাবৃত স্বপ্নগুলোকে। মাহরীন তাঁর পূর্ববর্তী রচনা "অরিগামির গোলকধাঁধায়"-এর মতোই এখানে শিরোনামকে করে তুলেছেন গল্পের প্রথম কবিতা, যার পদ্যে পদ্যে জড়িয়ে আছে সমগ্র কাহিনীর বীজমন্ত্র, যা পাঠককে বলে দেয়: "তুমি প্রবেশ করতে চলেছ এমন এক জগতে, যেখানে প্রতিটি শব্দের অর্থ পাল্টে যাবে জলের স্রোতের মতো।"

শিরোনামটি পাঠকের মনে জাগায় এক গূঢ় ধাঁধার ছায়া – জলজ লকার কি প্রকৃতির কোলে লুকানো কোনো রহস্যভাণ্ডার, নাকি মানবসভ্যতার আয়নায় দেখা নিজেদেরই বিকৃত প্রতিবিম্ব? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই পাঠক ডুবে যায় গল্পের অতলে, যেখানে প্রতিটি পাতা থেকে ঝরে পড়ে সমুদ্রের নোনাজল। শব্দের এই যাদুকরী বুননই প্রমাণ করে,"এখানে জল শুধু জল নয়, এ তো মানবহৃদয়ের অশ্রুসমুদ্র। লকার শুধু লকার নয়, এ তো সময়ের গর্ভে লুকনো সভ্যতার কঙ্কাল!"

ভাসমান নগরীর রূপকথা শুরু হয় এক অতিকায় মাছের পিঠে চড়ে, যার আঁশে আঁশে জমে আছে শতাব্দীর ধুলো। এই শহর নিজেই এক জীবন্ত অক্সিমোরন—পথচেনা গলিগুলোর অচেনা বাসিন্দারা সময়ের খাঁজে লুকিয়ে রেখেছে অদৃশ্য হওয়ার মন্ত্র। রাত নামতেই যেন বাতাসে মিশে যায় মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাস, আর অন্ধকারে মৃত্যুদূতের ছায়া নেচে ওঠে আত্মঘাতী চরিত্রগুলোর মনস্তত্ত্বের সাথে। গল্পের পথ পরিক্রমায় প্রতিটি মোড়ই যেন ভেঙে দেয় পাঠকের প্রত্যাশার বাঁধ, টেনে নিয়ে যায় অজানা গহ্বরে, যেখানে সম্পর্কের জটিলতা পেঁচিয়ে থাকে রহস্যের অদৃশ্য সুতোয়।

মাহরীন ফেরদৌসের কলমে ম্যাজিক রিয়েলিজম রূপ নেয় এক স্বপ্নলোকের��যেখানে বাতাসে মিশে যাওয়া মানুষেরা শেষ মুহূর্তে ফেলে যায় শুধু গলার স্বর, আর বিশাল মাছের পিঠে শহরের নড়াচড়া শোনা যায় হৃদস্পন্দনের মতো। ছায়ার আড়ালে লুকিয়ে থাকা ছলনার গন্ধ মাখানো থাকে বাতাসে, যেন প্রতিটি ফিসফিসানি পাঠককে ঠেলে দেয় এক চোরাবালিময় প্রশ্নের দিকে: এ সবই কি প্রকৃতির খেলা, নাকি মানবমনের বিভ্রমে খচিত এক মহাযজ্ঞ?

উপন্যাসের প্রাণস্পন্দন এটির বহুমুখী চরিত্রদের হা���েই—যেখানে আত্মঘাতী প্রবণতার চরিত্রটি হয়ে ওঠে সমাজের ভাঙন আর মানসিক অস্থিরতার আয়না। পলায়নপর এক ব্যক্তিত্ব বারবার ফিরে আসে অতীতের ভূতের সাথে লড়াই করতে, তার পদচিহ্নে জমে থাকে সময়ের কর্দমাক্ত স্মৃতি। আর সন্দেহের জাল বিস্তারকারী এক মুখ্য চরিত্রের প্রতিটি পদক্ষেপে গল্পে যোগ হয় রহস্যের নতুন স্তর—যেন অ্যাকশন আর সাসপেন্সের মিশেলে তৈরি এক বিষাদময় সিম্ফনি।

আমি যখন "জলজ লকার" পড়া শুরু করেছিলাম, তখন হাতে সময় নিয়ে বসেছিলাম। কারণ, আমি দেখতে চেয়েছিলাম, এই বইটি একটানা পড়া সম্ভব কি না। পাঁচ ঘণ্টার দীর্ঘ এক বসায় পুরো উপন্যাসটি শেষ করার পর মনে হলো, আমি যেন কোনো গভীর সমুদ্রের তলদেশ থেকে উঠে এলাম। প্রতিটি পৃষ্ঠা আমাকে টেনে নিয়ে গেছে এমন এক জগতে, যেখানে বাস্তবতা আর কল্পনার সীমানা মিশে গেছে। আর তখনই বুঝতে পারলাম, এই বইটি মাহরীন ফেরদৌসের আগের কাজগুলো থেকে কতটা ভিন্ন।

লেখিকার পূর্ববর্তী গল্পগ্রন্থ "হয়তো বলে কিছু আছে"-এর কথা মনে পড়ে। সেই বইয়ের প্রতিটি গল্প মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে ভরা ছিল। মানুষের মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা আবেগ আর দ্বন্দ্ব সেখানে এতটাই স্পষ্ট ছিল যে, পাঠক হিসেবে আমি নিজের ভেতরের অন্ধকারকেও চিনতে পেরেছিলাম। কিন্তু "জলজ লকার"-এ মাহরীন শুধু মনের গভীরে প্রবেশ করেননি; তিনি এখানে দার্শনিক হয়ে উঠেছেন। অস্তিত্ববাদ, আত্মার শূন্যতা এবং জীবনের অর্থ নিয়ে তাঁর চিন্তা-চেতনা এতটাই স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে যে মনে হয়, এই বইয়ের প্রতিটি শব্দই যেন একেকটি দর্শনের বীজ।

তুলনা করতে গেলে মাহরীনের আরেকটি কাজ, "অরিগামির গোলকধাঁধায়"-এর কথাও আসে। সেই গল্পগ্রন্থে ছিল রূপকথার আমেজ, যেখানে গল্পগুলো সরলভাবে এগিয়ে যেত। কিন্তু "জলজ লকার"-এ তিনি সরল পথ ছেড়ে জটিল প্রতীকীবাদের দিকে পা বাড়িয়েছেন। এখানে গল্প শুধু গল্প নয়; এটি এক গভীর ভাবনার ভ্রমণ। বিষয়বস্তুর ক্ষেত্রেও লক্ষণীয় পরিবর্তন এসেছে—পূর্বে যেখানে ব্যক্তিগত সম্পর্কের জটিলতা ছিল মূল কেন্দ্রবিন্দু, এখানে তা স্থান করে নিয়েছে সামাজিক ও অস্তিত্ববাদী দ্বন্দ্বে।

উপন্যাসটির মূল চরিত্রগুলো আমাকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছে। তাদের চরিত্রচিত্রণ এতটাই স্বচ্ছ যে মনে হয়েছে, আমি যেন তাদের পানির মতো বুঝতে পারি। এঞ্জেল এম-এর আত্মদ্বন্দ্ব কিংবা রিফার জীবনের শূন্যতা আমাকে ভাবিয়েছে বারবার। তারা কেবল কাগজের চরিত্র নয়; তারা যেন আমাদের আশেপাশের পৃথিবীরই প্রতিচ্ছবি। আমি এখানে এঞ্জেল এম চরিত্রটা নিয়ে আরো কিছু বলতে চাই, কারণ "জলজ লকার" উপন্যাসের চরিত্রগুলোর মধ্যে আমার কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় লেগেছে এই চরিত্রটি, যদিও এটি মূল চরিত্র নয় (কিংবা কে জানে!)। এই চরিত্রটি আমাকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে এবং তার জটিলতা ও বহুমাত্রিকতা আমাকে মুগ্ধ করেছে।

এঞ্জেল এম একটি দ্বন্দ্বময় চরিত্র। সে যেন নিজের অস্তিত্বের সাথে লড়াই করছে প্রতিনিয়ত। তার ভেতরে লুকিয়ে থাকা আত্মঘাতী প্রবণতা তাকে এক অদ্ভুত দ্বৈত সত্তায় পরিণত করেছে - একদিকে সে জীবনকে আঁকড়ে ধরতে চায়, অন্যদিকে মৃত্যুর টানে ছুটে চলে। এই দ্বন্দ্ব তাকে করেছে অসাধারণ মানবিক ও বাস্তব। এঞ্জেল এম-এর চরিত্রে আমি দেখেছি আধুনিক মানুষের প্রতিচ্ছবি। সে যেন আমাদের সমাজের সেই অংশের প্রতিনিধি, যারা নিজেদের অস্তিত্বের অর্থ খুঁজে পায় না, যারা জীবনের শূন্যতায় হাবুডুবু খায়। তার মধ্যে লুকিয়ে থাকা আত্মধ্বংসী প্রবণতা আসলে সমাজের একটা বড় অংশের মানসিক সংকটকেই তুলে ধরে।

এঞ্জেল এম-এর সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো তার পরিবর্তনশীলতা। সে স্থির নয়, প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে, নিজের সাথে লড়াই করছে, পড়ছে উঠছে। এই গতিশীলতা তাকে করেছে জীবন্ত ও বাস্তব। তার প্রতিটি সিদ্ধান্ত, প্রতিটি কাজ পাঠককে ভাবিয়ে তোলে - সে কেন এমন করল? এর পরে কী হবে? উপরন্তু, এঞ্জেল এম-এর মাধ্যমে লেখিকা তুলে ধরেছেন জীবন-মৃত্যু, অস্তিত্ব-শূন্যতার মতো গভীর দার্শনিক প্রশ্ন। এই চরিত্রটি শুধু একটি কাহিনীর অংশ নয়, সে যেন একটি দর্শনের বাহক। তার মাধ্যমে আমরা নিজেদের জীবনের অর্থ খুঁজতে শিখি, নিজেদের অস্তিত্বের গভীরে তাকাতে শিখি। সর্বোপরি, এঞ্জেল এম-এর চরিত্রটি আমাকে স্পর্শ করেছে তার মানবিকতার জন্য। তার দুর্বলতা, তার সংগ্রাম, তার পতন ও উত্থান - সবকিছু মিলিয়ে সে হয়ে উঠেছে একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ, যার সাথে পাঠক নিজেকে সহজেই একাত্ম করতে পারে।

এই বইয়ের সবচেয়ে শক্তিশালী দিক হলো এর গভীরতা। মাহরীন এখানে কেবল গল্প বলেননি; তিনি আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন এক দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি। জীবনের অর্থ খুঁজতে গিয়ে আমরা কতটা পথ হারাই, আবার কতবার নিজেদের খুঁজে পাই—এই প্রশ্নগুলো বারবার উঠে এসেছে উপন্যাসের প্রতিটি স্তরে।

পাঁচ ঘণ্টার সেই পাঠযাত্রা শেষে আমি বুঝতে পেরেছি, "জলজ লকার" কেবল একটি উপন্যাস নয়; এটি একটি অভিজ্ঞতা। এটি এমন একটি আয়না, যেখানে আমরা নিজেদের মুখোমুখি হই—আমাদের শূন্যতা, আমাদের অস্তিত্ব এবং আমাদের জীবনের অর্থ খোঁজার চেষ্টাকে নতুনভাবে দেখি। মাহরীন ফেরদৌস এখানে শুধু একজন লেখক নন; তিনি একজন দার্শনিক, যিনি আমাদের হৃদয় ও মনকে একইসঙ্গে নাড়া দিতে সক্ষম হয়েছেন।

মাহরীন ফেরদৌসের কলমে শব্দের যে নান্দনিক জাল বিস্তৃত হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে কবিতার স্পর্শে ভরা। কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই কাব্যিকতা যেন নদীর স্রোতকে বাধাগ্রস্ত করে—বর্ণনার ফুলঝুরি গল্পের গতিকে কখনো কখনো মন্থর করে দেয়। বিশেষত উপন্যাসের মধ্যাংশে, যখন বিশাল মাছের পিঠে ভাসমান শহরটির প্রতিটি রেখা এঁকেছেন লেখিকা, তখন দীর্ঘ শব্দযাত্রা পাঠককে একটু হাঁপিয়ে তোলে। মনে হয়, জলের নিচে ডুবে থাকা কোনো মুক্তো খুঁজতে গিয়ে হঠাৎই পা আটকে গেছে শেওলাজালে।

চরিত্রগুলি যেন একেকটি জীবন্ত প্রতিমা, কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে তাদের পূর্ণাঙ্গ রূপ ফুটে ওঠেনি। শিমন চাচার চরিত্রটি যেন অর্ধেক আঁকা জলরঙের ছবি—অস্তিত্ব আছে, কিন্তু প্রাণ নেই। এই চরিত্রটির মাধ্যমে গ্রামীণ জীবনের বার্তা আসার কথা ছিল হয়তো, কিন্তু তা রয়ে গেছে ধোঁয়াশায়। তালিসমানের মতো গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের উপস্থিতি কম হওয়ায় মনে হয়েছে, গল্পের জমিতে এক ধরনের শূন্যতা ঝুলে আছে। আর রিফার স্বামীর চরিত্রে যুক্তিসঙ্গততা থাকলেও তার আবেগ-অনুভূতি যেন পানিতে লেখা অক্ষরের মতো মুছে গেছে—পাঠকের হৃদয়ে দাগ কাটতে পারেনি।

উপন্যাসটির রহস্যময়তা নিঃসন্দেহে আকর্ষণীয়, কিন্তু কোনো কোনো অংশে অতিপ্রাকৃত উপাদানের আধিক্য পাঠককে ঠেলে দেয় দ্বিধার অন্ধকারে। যেমন—রাতের অন্ধকারে মানুষের অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার দৃশ্যগুলো প্রথমে মোহনীয় মনে হলেও, বারবার আবর্তিত হওয়ায় এর জাদুকরী আবেদন কিছুটা ম্লান হয়।

মাহরীনের চিন্তার গভীরতা প্রশংসনীয়, কিন্তু জীবনের অর্থ বা অস্তিত্ববাদের মতো বিষয়গুলো কখনো কখনো এতটাই বিমূর্ত হয়ে উঠেছে যে, সাধারণ পাঠকের পক্ষে তা ধরতে কষ্ট হয়। যেমন—এঞ্জেল এম-এর আত্মঘাতী প্রবণতা নিয়ে দার্শনিক আলোচনা যেখানে শেষ হয়, সেখানেই শুরু হয় পাঠকের বিভ্রান্তি। মনে হয়েছে, লেখিকা কখনো কখনো ভুলে গেছেন যে, সাহিত্য শুধু দর্শনের বাহন নয়—এটি জীবনের শ্বাস-প্রশ্বাসও বটে।

তবুও...

এই সমস্ত সমালোচনার পরেও "জলজ লকার" বাংলা সাহিত্যে এক অনন্য সংযোজন। যেমন সমুদ্রের ঢেউ কখনো শান্ত, কখনো উত্তাল—তেমনি এই উপন্যাসের ত্রুটিগুলোও তার মহত্ত্বকে ঢাকতে পারেনি। হয়তো মাহরীন ফেরদৌসের পরবর্তী রচনায় আমরা পাবো আরও পরিণত শৈলী, যেখানে কবিতার ছন্দ ও গল্পের গতি হাত ধরাধরি করে চলবে।

Profile Image for Mahbub Mayukh Rishad.
57 reviews15 followers
February 6, 2025
একটা শান্ত, বিমর্ষ নদীর জলে কেউ কিংবা অনেকেই ঢিল ছুড়ছে তো ছুড়ছেই, শুধু একদিক দিয়ে নয়, চারপাশ থেকে। ঢিলটা অদৃশ্য কিন্তু নদীর জলে যে কাঁপন হচ্ছে সেটা দৃশ্যমান। মাহরীন যখন একটা শহরের একটা মেয়ের গল্প বলে, একটা গল্পের সাথে অনেকগুলো গল্পের সুতো লাগিয়ে একটা উপন্যাস আমাদের সামনে এনে ধরে তখন আমার উপন্যাস পাঠ শেষ করে ঐ নদীটার কথাই মনে হয়।
খালি চোখে দেখলে একটা নদীই কেবল, আর একটু গভীর চোখে তাকিয়ে দেখলে ঢিল আর ঢেউয়ের করুণ আর্তনাদ শোনা যায়। মূল গল্পটা আসলে কী? শৈশবের ট্রমা, প্রিয় মানুষ হারিয়ে যাওয়ার আর্তনাদ নাকি পরিণত জীবনের আক্ষেপ বোধ? গল্পটা আসলে সবকিছু নিয়ে। গল্পটা আসলে জীবনের। জীবনের মতো সত্য, জীবনের মতো একা।
মূল প্রোটাগোনিস্ট তার বোনের সাথে ভেতরগত দ্বন্দের আভাস, একজন রহস্যময় মানুষ, একজন গডফাদার মহিলা, একজন না পাওয়া ভালোবাসার মানুষ। মূল চরিত্রগুলো ঘুরে ফিরে এদের কথা বললেও মাহরীন এত সরলভাবে গল্পটা বলেন না। মাহরীন সাহায্য নেয় মিথের। মিথের পরিণত ব্যবহার গল্পটাকে করে তোলে উপাদেয়। দীর্ঘ মনোলগ, সুমধুর ভাষা আমাকে বাধ্য করে মাত্র দুদিনেই উপন্যাসটি শেষ করে ফেলতে।
আক্ষেপের কিছু জায়গা তো থাকেই। যেমন তালিসমান চরিত্র কিংবা নভোর চরিত্রটা আরও বিস্তৃতি পেতে পারত কিংবা গল্পটা হয়ে উঠতে পারত আরও কমপ্লেক্স। কিন্তু দিনশেষে ঐ আক্ষেপ বড় হয়ে ওঠে না। বড় হয়ে ওঠে মূল প্রোটাগনিস্ট এর জন্য আক্ষেপ। জীবনটা এমন হলো, অথচ আমরা এমন জীবনের গল্পই পড়তে চাই। পুরো উপন্যাসে ছায়া দিয়েছে নস্টালজিয়া। এমন নস্টালজিয়া আমাকেও যেন স্মৃতিকাতর করে তোলে।
Profile Image for Akhi Asma.
230 reviews464 followers
July 2, 2025
"ঠিক কবে থেকে আমি এই গল্পটা বলার জন্য অপেক্ষা করছি, তা নিজেও জানি না। একবার মনে হয়, আমার জন্মেরও আগে হয়তো এই অপেক্ষা শুরু হয়েছিল।"


When I was in the UK, everyone around me was reading this book, hyping it up, posting reviews, saying how amazing it was, and naturally, I got curious. I wanted to get my hands on it right away. I knew I could just ask Mahrin Apu for the softcopy, but I held back for a few months. I don’t usually like asking for digital copies of new books. I prefer buying them, and, I’m not a big fan of reading Bangla books in softcopy if I can get the physical version. But eventually, I couldn’t wait any longer. I asked her directly. Yes, the author herself. Without asking anything, she sent it to me immediately. She’s genuinely the coolest. I’ve known her since the Aqua Rezia days. I don’t clearly remember how I felt about that one book though. Maybe I didn’t love it back then. But I did love Golpogulo Bari Geche. As for her previous novel, I didn’t quite enjoy it at the time. To be fair, I wasn’t a very mature reader then. I’ll admit that. I’m pretty sure my perspective would be different if I read it now.

Anyway, about this book, it really went beyond my expectations. Reading it felt like walking through fog in a city I thought I knew. A bit familiar but distant. The kind of distance that creeps in when life keeps moving, but a part of you stays behind, stuck somewhere quieter. Mahrin Apu didn’t tell a story so much as she let one unfold layer by layer, like memories you try to forget but keep remembering anyway. There’s pain here, but no loud grieving, just a dull ache that never really leaves. I related to that more than I expected. The narrator carries so much: loss, confusion, longing. But she does it with restraint. The trauma, the fractured relationships, the loneliness, they’re all there but never sensationalized. It made the whole thing feel more honest. More dangerous, even. What I appreciated is how the book didn’t try too hard to impress. It’s messy in places. Some characters felt distant. Some threads could’ve gone deeper. But that’s what made it feel real to me. In life, not everything gets a full explanation. The city is everywhere in this story. It’s not literally everywhere but it’s there as a wound. And reading it, I couldn’t help but feel like I was also carrying parts of that wound. My own versions of what the characters were going through. It reminded me how people disappear, how things get buried, and how silence can stretch for years. By the end, I wasn’t left with clarity. I was left with a weight I couldn’t shake. The kind of weight that stays even after you close the book.

Profile Image for আহসানুল করিম.
Author 3 books27 followers
February 3, 2025

মাহরীন ফেরদৌসের ছোটগল্প প্রায় সবই পড়েছি। তাই তাঁর ভাষা ও ভাবনার সাথে কিছুটা পরিচিত মনে করি নিজেকে। অবশ্য ইতোপূর্বে প্রকাশিত তাঁর প্রথম উপন্যাসটি পড়ার সুযোগ হয়নি। এটা ছিল বড় পরিসরে তাঁর লেখার সাথে প্রথম সাক্ষাত। তিনি উপন্যাসটি সম্পর্কে বলেছিলেন, "সমকালীন, অতিপ্রাকৃত, মিথ নাকি ম্যাজিক রিয়েলিজম কোন শিরোনামে ফেলব তাই ভাবছি।" আমার কাছে মনে হয়েছে এটি একটি মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস। তাই বলে এটা মনে করতে চাই না যে আমি উপন্যাসটির উপরে একটি ধরণ আরোপ করে সীমিত করতে চাইছি। মানুষের সাহিত্যিক সৃষ্টিকে কোন জনরার কবুতরের খোপে বসিয়ে দিতে ভালো লাগে না, যদি না সেই সৃষ্টি নিজেকেই নিজে খোপে নিয়ে আটকাতে চায়। 'জলজ লকার' বেশ কিছু জনরার দেয়াল ভেঙেছে বলে আমি মনে করি। একারণে প্রাথমিক পাঠ প্রতিক্রিয়া ছিল "দারুণ, উচ্চাভিলাষী এবং জটিল (কমপ্লেক্স অর্থে)"।

'জলজ লকার' উপন্যাসের সূত্রপাত নানাবিধ সম্ভাবনা নিয়ে। ফ্যান্টাসি আর মিস্ট্রি একসাথে জেকে বসেছে শুরুতেই। উপন্যাসের শুরু থেকে রহস্যের কিছু থ্রেড তৈরি করেছেন লেখক। পাঠক হিসেবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাতা উলটে যেতে হয়। কৌতূহলী হয়ে উঠি। আমার মাঝে প্রোটাগনিস্টকে জানার আগ্রহ তৈরি হয়। সাথে সাথে তার আশেপাশের চরিত্রগুলো সম্পর্কেও কৌতূহল জাগে। লেখক উত্তম পুরুষে গল্প বলে যাওয়ার সময় যেভাবে চারপাশ, পরিস্থিতি এবং প্রধান চরিত্রটির কথা আর অন্যান্য চরিত্রের সাথে তার সম্পর্কের গল্প বলেছেন, তাতে তাঁর নিজস্ব স্টাইলে একটা আবহ তৈরি হয়েছে। অনেকটা যেন স্লো-বার্ন স্ক্যান্ডিনেভিয়ান থ্রিলার সিরিজের মত, বিষাদমাখা আবহে ধীরগতির গল্প বলা এমুলেট করা অনেকটা। কোন স্থির স্পষ্ট রহস্য নয় গতানুগতিক আঁটোসাটো ক্রাইম থ্রিলারের মত। এ যেন ক্যানভাসে ছড়িয়ে পড়া ওয়াটারকালার।

এরকম একটা উপন্যাসের শুরুতে তার টোন সেট করতে লেখক গল্পের পটভূমিতে যে শহর তার জেনেসিস বা হয়ে ওঠার মিথের কথা বলেন। পাঠক ফ্যান্টাসির জগতের পর্দা নড়ে উঠতে দ্যাখে। সেই পর্দার ওপারে উঁকি দ্যায় লেখকের সমসাময়িক সমাজ আর রাষ্ট্র নিয়ে দায়বোধ (ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হ'তে থাকে জুলাই অভ্যুত্থান আর তার আগের ফ্যাসিস্ট শাসন উপন্যাসটির রচনাকালের সমান্তরালে একটা ছায়া রেখে গেছে। কেননা দূর থেকে আপনি এমন একটা সময় এমন এক হত্যাযজ্ঞ দেখেছেন যে ঘটনা থেকে দূরে থাকাটা আপনার মাঝে একরকম অপরাধবোধ তৈরি করে। আপনি এক অদ্ভুত বোঝা বয়ে বেড়ান সব সময়)। দেখি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আর ক্ষমতার কাছে জিম্মি নিরপরাধ মানুষ উপন্যাসের চরিত্র হয়ে আসে।

ভালো লাগার কথা আরো যদি বলি, আমার সবচেয়ে প্রিয় বিষয়টি হলো লেখকের বিচ্ছিন্ন কাব্যিক প্যারাগ্রাফগুলো, যেখানে জীবন, জগত, সম্পর্ক, মানবচরিত্র ইত্যাদি নিয়ে তাঁর অবজারভেশন আর উপলব্ধিগুলো উঠে আসে প্রোটাগোনিস্টের ভাবনার ছদ্মবেশে। লেখকের ঐ চিন্তাগুলোই মনে হয় তাঁর যাপনের সাক্ষ্য দ্যায়।

এবারে কিছু ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশ করি। কিছু কিছু জায়গায় সংলাপ কি একটু মেলোড্রামার দিকে চলে যাচ্ছিল? যদিও শেষমেষ আমি মনে করি তা একেবারে বেমানান লাগেনি। আবার কখনো মনে হয়েছে চরিত্রগুলোকে লেখক কি একটু বেঁধে রেখেছেন। তাদের নীতিবোধগুলো? যেমন শিমন চাচা এবসোলিউট নীতিবান (একটু ক্লিশে?)। তালিসমান চরিত্রটি আরো বেশি বহুমাত্রিক হয়ে উঠতে পারত কি? আরেকটু কি অন্ধকার হ'তে পারত চরিত্রগুলো? কেউ কেউ কি হ'তে পারত আরেকটু ধূসর? ম্যাজিক রিয়েলিজমের কথা যেহেতু এসেছিল, আরেকটু ডিস্টার্বিং কিংবা ভীতিকর (macabre) কি হ'তে পারত কিছু কিছু পরিস্থিতি? প্রেম ভালোবাসা সম্পর্কের অনুভূতিতে কি যুক্ত হ'তে পারত খানিকটা রক্তমাংশ? এরকম কিছু কিছু কিছু বিষয়।

শেষ কথা বলি। বাস্তব আর ফ্যান্টাসি মিলিয়ে আমি বলবো বেশ জটিল মানবিক অভিজ্ঞতার গল্প বলতে চেয়েছেন মাহরীন ফেরদৌস। তারার স্মৃতি, অতীতের সাথে বর্তমানের সম্পর্ক খুঁজে বেড়ানো, নিজের পরিচয় খোঁজা - শুরু থেকে শেষ উপভোগ করেছি। আর ঐ যে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান স্লো-বার্ন ডার্ক থ্রিলারের আমেজ - সেটা আমার প্রিয়। যদিও আমি মনে করি ক্লাইম্যাক্সের জায়গাটা সেভাবে আমার প্রত্যাশা ফলো করেনি একশো ভাগ। তাতে অবশ্য কোন ক্ষতি হয়নি 'জলজ লকার'-এর। কেননা লেখকের কাজ তো পাঠকের মন যোগানো নয়, লেখকের কাজ তাঁর নিজস্ব আর্ট তৈরি করা।

'জলজ লকার' তাতে বয়��� বেড়ানো রহস্য নিয়ে পৌঁছে যাক পাঠকের হাতে হাতে।
Profile Image for Tawheeda Rufah Nilima.
294 reviews58 followers
February 23, 2025
প্রতিবছর বইমেলার জন্য আলাদা করে বইয়ের তালিকা করি। এবারও ব্যতিক্রম নয়। তালিকার একদম শুরুতে থাকা মাহরীন ফেরদৌসের উপন্যাস 'জলজ লকার' একদিন হঠাৎ করেই লেখকের তরফ থেকে কথাপ্রকাশের মাধ্যমে চলে এলো আমার ঠিকানায়। পড়তে বেশ সময় নিলাম। ব্যস্ততা পূর্ণ সব দিন। অসুস্থতা। সেইসাথে প্রচণ্ড দুশ্চিন্তা ও মন খারাপ। মাঝে আরোও বই পড়া হয়েছে। সবমিলিয়ে আজ বইটা পড়া শেষ হলো। সাথে সাথে কিছু না লিখলে আর লেখা হবে না ভেবে এখনই লিখতে শুরু করলাম।

যারা জানেন না, একসময় মাহরীন আপু একুয়া রেজিয়া নামে লিখতেন; তখন 'কিছু বিষাদ হোক পাখি' নামের একটি উপন্যাস তিনি লিখেছিলেন। বিষন্নতায় ভরপুর অদ্ভুত সুন্দর এক বই ছিল 'কিছু বিষাদ হোক পাখি'। 'জলজ লকার' পড়তে পড়তে সেই বইটার কথা খুব করে মনে পড়ে গেলো। কারণ এ উপন্যাসটাও বিষদাচ্ছন্ন।

বইটা পড়তে পড়তে একদম শেষের দিকে কথকের নাম জানি আমি। তারা। এবং তারার বর্ণনায় সবার কথা পড়তে পড়তে আমি আবারও হারিয়ে যাই মাহরীন আপুর তৈরি চিরচেনা সেই বিষন্ন জগতে, তারার মাঝে খুঁজে পাই নিজেকে এবং আবারও আমি মেনে নিই এই কথাটি—''মানুষ শুধু আনন্দের জন্য বাঁচে না, মানুষ বেঁচে থাকে নিবিড় বেদনার জন্যও, এমনকি অপূরণীয় স্বপ্নের জন্যও।''

এক ন্যারেটর আছে এমন বই আমি যেমন পড়েছি, সেরকম একাধিক ন্যারেটর আছে এমন বইও কম পড়া হয়নি। কিন্তু এক ন্যারেটরের মাধ্যমে অনেকের কথা জানতে ভালো লাগে আমার। সেই এক চরিত্রকে আমি যেমন জানতে পাই, ঠিক তেমনি জানতে পাই বাকিদেরও। সে কিভাবে দুনিয়া দেখে, জীবন দেখে, দেখে বাকিদের—তা আমাকে তার সম্পর্কে জানতে সাহায্য করে। অযথা বাড়তি জটিলতা কিংবা বলা যায় অনাবশ্যকতায় ভরপুর কোনো লেখা আমার পছন্দ হয়না, আমার পছন্দ সুন্দর শব্দচয়নে এবং অসাধারণ নিপুণতায় গঠিত বাক্যের সমন্বয়ে লেখা বই যেখানে বাহুল্যতা কম।

'জলজ লকার' ঠিক তেমন একটা বই। বইয়ের ব্যাপারে বলতে গিয়ে লেখক যা বলেন, বই পড়ে তাঁর সন্ধান না পেলে পাঠক হিসেবে আমি বিরক্ত হই। সেজন্য যখন দেখলাম, লেখকের কথার সাথে মিলে গিয়ে এ বই যেন চিরচেনা মানুষের আড়ালে লুকিয়ে থাকা গভীর সব রহস্যের এক ভাণ্ডার, তখন খুব ভালো লাগলো। যখন খুঁজে পেলাম মিথ, জানলাম বিড়াল ও কুকুর এবং চাঁদ, নক্ষত্র ও সূর্য নিয়ে অসাধারণ এক গল্প, খুঁজে পেলাম জাদু বাস্তবতার এক আশ্চর্য জগত তখন মন শান্ত হলো, বিষন্ন হলাম অনেকটাই। অতীত ও বর্তমানকে চলতে দেখলাম পাশাপাশি হাতে হাত রেখে, দেখলাম কিভাবে ২৮৭ পৃষ্ঠার এক বইয়ে উঠে এলো বর্তমান সময়ের চিরচেনা রূপ—মিথ ও জাদু বাস্তবতার রূপে এমন সব সত্য যা মেনে নিয়েছি অনেক আগে তাও মনে জাগে ভয়। ভীষণ নিপুণতায় লেখক বাস্তব জগত ও পরিস্থিতির একটা রূপ এখানে তুলে ধরেছেন, গল্পের ফাঁকে ফাঁকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে সেগুলো আমাদের দেখিয়েছেন। ঘটনাপ্রবাহগুলোও কেমন আশ্চর্যভাবে মিলে যায়। বইয়ের কিছু অনুচ্ছেদ কি যে ভালো লেগেছে তা বলে বোঝানো দায়, সেজন্যই অন্য কোনোদিন শুধু সেই অনুচ্ছেদগুলো নিয়ে লিখবো। বই পড়তে পড়তে জানা যায় নিজেকেও, নিজের শক্তি ও দুর্বলতার কথা; আরোও মনে হয় যে কেন নিজের মধ্যে থাকতে হবে দৃঢ়তা এবং কাটিয়ে উঠতে হবে দুর্বলতা। 'জলজ লকার' পড়তে পড়তে মনে হলো আরোও পড়তে হবে, পড়তে হবে সমর সেনের কবিতা, সমুদ্র ডুবে যাওয়া ঠেকাতে জানতে হবে নিজের দোষ-গুণ, থাকবে ঘরভর্তি বই ও নিজস্ব জলজ লকার যেখানে সযত্নে তুলে রাখবো স্মৃতি ও নিজের সেসব ভাবনা যা রাখতে চাই আদরে ও ভালোবাসায়। 'জলজ লকার' চমৎকার একটা বই। অবশেষে, ''মানুষের প্রতি মানুষের ঘৃণা আমাদের বিষাক্ত করে তোলে, কিন্তু মানুষের সাথে মানুষের বিচ্ছেদ? বিচ্ছেদ কী করে? আমাদের প্রাণের আলো ছিনিয়ে নেয়। আমাদের করে তোলে নগণ্য, কুয়াশায় ঝরে পরা জলকণার মতো।''
Profile Image for Shahriar  Fahmid.
113 reviews15 followers
February 15, 2025
❝ আমার তখন মনে হয় পৃথিবীটা মাঝে মাঝে আশ্চর্য সুন্দর এক জায়গা। যেখানে আম্মার আকা নিখুঁত ছবিগুলোর মতো চাঁদ, তারা ও সূর্য আলো ছড়িয়ে আমাদের উষ্ণ করে রাখে। যেখানে সব মানুষের মাঝে আছে এক ঘন নীল জলধারা, যা গোপনে-নিঃশব্দে আমাদের মাঝে সুগন্ধ ছড়ায়। তারপর কোনো হেমন্তের রাতে আমরা নগরের পিছু ডাক অবহেলা করে পা বাড়াই ঘাসের জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা ছোটো একটা অচেনা ফুলের খোঁজে। যে ফুলের জন্ম নেওয়ার কোনো শুরু নেই, শেষ নেই, তারপরেও আমরা সবাই তাঁকে খুঁজে বেড়াই, অস্তিত্বের সমস্ত হাহাকার পেরিয়ে বেঁচে থাকার গাঢ় গুঞ্জন খুঁজে নিতে।

এই নরম কাদামাটি, আকাশ, নক্ষত্রমালার বিচিত্র শতাব্দীতে... ❞

কি স্নিগ্ধ ও বিষণ্ন সমাপ্তি!

আমার ভাবনা: মাহরিন আপুর বই এই প্রথম হাতে ছুঁয়ে পড়লাম। আগের সবগুলো সফ্ট কপি কিনে পড়েছি। আপুর লেখায় অন্যরকম একটা ব্যাপার আছে, খুবই স্মুদলি পাতার পর পাতা, পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা পড়ে ফেলা যায়। হয়তো এক্টু বিরতি নিয়ে আবার ১৯৮ পৃষ্ঠা থেকে পড়তে শুরু করেছি, কয়েক সেকেন্ডেই ২০৫ পৃষ্ঠায় চোখ চলে যাবে। তবুও দুদিন-দুরাত নিয়ে পড়ে শেষ করলাম বইটা। এটাকে কোন জনরায় ফেলবো, বা চরিত্র গুলো কি এসব থিউরিটিকাল আলাপে যাবো না। মাহরিন আপু পারিপার্শ্বিক অনেক ঘটনাকে একিভূত করে গল্পটা লিখেছেন, সেখানে আছে সাংবাদিক সাগর-রুনির কথা, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, আগুন সন্ত্রাস, ক্ষমতাবানদের আড়িপাতা স্বভাব কিংবা এদেশ, এ সমাজ যে আস্ত এক নরক মধ্যবিত্ত ও গরিবদের জন্য তার বিষণ্ন আখ্যান।

তারা চরিত্রটা হয়তো লেখিকার অটোবায়োগ্রাফিক। বই কেনার আগে শুনেছিও এটা ওয়ান কাইন্ড অফ অটো বায়োগ্রাফি টাইপ। তারা চরিত্রটাকেই মনে হয়েছে মূল প্রোটাগনিস্ট। তাকে ঘিরেই রিফা যেকিনা তারা'র বোন, তালিসমান, ডাক্তার নভো, এঞ্জেল এম, শিমন চাচা আর নমিতা চরিত্রগুলো গল্পটাকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে গেছে। তালিসমান চরিত্রটা নিয়ে একটু বলি। তালিসমানের কার্যকলাপ আমার ভালো লাগে নাই। কারণ সে তারাকে পছন্দ করা সত্বেও আরো দুটো নারীর মাঝে তাকে খুঁজে বেরিয়েছে, যেটার কোনো প্রয়োজনই ছিল না। নাদিয়াকে নিয়ে বর্ণনা করা তার ভাষ্য মোটাদাগে তার মস্তিষ্কের উর্বর চিন্তাভাবনা! সে নাদিয়াকে চেতনেই বিয়ে করেছে, কিন্তু তার চিরাচরিত স্বভাব তারাকে অন্য নারীর মাঝে খুঁজা, শেষমেষ তার কাল হলো। নাদিয়াকে ছুরিকাঘাত করার সময়ও সে নিশ্চল দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছে, এরপরও কে চাইবে তার সাথে সংসার করতে। এটা আমার হাইপোথিসিস। সবার এমনটা মনে হবে সেটার প্রয়োজন নেই।

উপন্যাসটা রহস্যময়। চল্লিশতম অধ্যায়ে গিয়ে রহস্যের কিছু ব্যবচ্ছেদ হলেও আরো অনেক প্রশ্ন থেকে গিয়েছে, যেমনটা আমরা ছোটগল্পে দেখি। তবে পার্থক্য একটাই, ছোটগল্পে সেসব প্রশ্ন জানার একরম কিঞ্চিৎ আশ থাকে, এখানে সেটা উদয় হওয়ার কোনো কারণ নেই।। পুরোপুরি ব্যালেন্সড। মাঝের দিকে ম্যাজিক রিয়েলিজমের আবহটা একটু বিরক্তির ঠেকছিলো তবে সেটা হতে পারে অনেক্ষণ ধরে বইটা পড়তে থাকার ফল। এই যে ভিন্ন জগত, তারার মায়ের উপস্থিতি, স্বপ্নের বর্ণনা এসবই অবাস্তব কিন্তু মাহরিন আপুর বর্ণনায় সেগুলো বাস্তব মনে হচ্ছিলো। বিশেষ করে বললে, মারিয়া আর তারার “কনফেশন-কনফেশন” খেলা শেষ হওয়ার ইমিডিয়েট বর্ণনাটুকু।


উপন্যাসটা এক হিসেবে বলতে গেলে টাইমলেস হয়ে থাকবে কেননা, আমাদের, এই বাংলাদেশে ১৬ বছরে যা যা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি সেসবের অনেক কিছু লেখিকার প্রচ্ছন্নভাবে গল্পের ফ্লো-তে ফ্লো-তে বলে গিয়েছেন। সচেতন পাঠক মাত্রই সেসব ধরতে পারবেন বলে আমি মনে করি। আর আমার ব্যক্তিগত ভাবে এরকম টেল-উইদিনে-টেল বিষয়টা ভালো লাগে। এটা আরো বেশি ফিকশনের সাথে একাত্মতা বাড়িয়ে তোলে।

মাহরিন আপুর লেখায় আমি অনেক কাকতাল খুঁজে পাই। যতগুলা পড়েছ�� ততবারই কোনো না কোনো ভাবে কিছু না কিছুর সাথে উনার সৃষ্টি করা চরিত্রগুলোর সাথে মিলে গিয়েছে। তারপর স্কুল জীবনের বর্ণনা। আমরা সবাই হাসিব কিংবা রাস্তির মতো সহপাঠী দেখেছি। আমার ক্লাসের ফার্স্টবয়ের নামও ছিল হাসিব, তবে তার পরিণতি গল্পের হাসিবের মতো হয়নি। আপু লিখেছেন, তারার ভাষায়, টপাররা অন্যের নোট মুখস্থ করে অন্যের ভাষা লিখে, আর আমি লিখি সম্পূর্ণ আমার নিজের ভাষায়। এটুকুতেই বোঝা যায��� আমাদের সমাজ, আমাদের রাজনীতি, আমার চারিপাশ, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা কতটা ঘুণে ধরা। স্কুলে হয়তো আমরা সবাই মালবিকা ম্যামের মতো নিষ্ঠাবান শিক্ষকদের পেয়েছি, যারা টপার বা প্রথম সারীদের নম নম করতেন না!

আমি খুব গুছিয়ে আয়োজন করে কোনো বইয়ের রিভিউ কখনোই লিখতে পারি না। আমার যখন ইচ্ছে হয় তখন লিখি, যা মনের ভেতর আসে একের পর এক হুবহু তাই লিখে ফেলি। তাই এই লেখা পড়ে কেউ উপকৃত হবেন কিনা জানি না!

শেষ করছি সমর সেনের কবিতার লাইন দিয়ে,

❝ রজনীগন্ধার আড়ালে কী যেন কাঁপে,
কী যেন কাঁপে
পাহাড়ের স্তব্ধ গভীরতায়।

তুমি এখনো এলে না
সন্ধ্যা নেমে এলো: পশ্চিমের করুণ আকাশ,
গন্ধে ভরা হাওয়া,
আর পাতার মর্মর-ধ্বনি। ❞

3:39 PM, Sat, Feb 15
Profile Image for Sabiha Shoshi.
5 reviews4 followers
February 16, 2025
কিছু উপন্যাসের পরিসমাপ্তি "শেষ হইয়াও হইলো না শেষ এর মতো"। ফ্ল্যাপে পড়া মিথ এবং ম্যাজিক রিয়েলিজম খুঁজতে গিয়ে হারিয়ে গেলাম অদ্ভুত লৌকিক এক রহস্যে।

অতীতের বিচ্ছিন্ন দৃশ্যগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে কিংবা কখনো সেলুলয়েডে গড়া ছায়াচিত্রের মতো ঘুরে বেড়িয়েছে গল্পকথকের সামনে।গল্পকথক,তার বোন এবং শিমন চাচার পরিচয় নিয়েই উপন্যাসের শুরু।যে চাচা পরম স্নেহে মাউথ অর্গানে সুর তুলে শিশুর কান্না ভোলাতে চাইত এবং দুইবোন কে রক্ষা করতো জগতের সমস্ত অন্যায় অবিচার থেকে, সে চাচা হঠাৎ হারিয়ে গেল অতল সাগরের গভীরে।হারালো অনেকেই।ধীরে ধীরে অতীত থেকে বেড়িয়ে আসে মালবিকা ম্যাম, দীপেন স্যার, লাইব্রেরির ধুলো জমা বই, হাসিব, রাস্তি, ইমতি, অবন ভাই, তালিসমান, রিফা রা।

উপন্যাসের শেষ দিকে এসে জানতে পারা যায় গল্পকথকের নাম।ফোনকলের নীরবতা ভেঙে কোনো এক চেনাকন্ঠ ডাক দিয়ে উঠে "তারা " বলে।

এক অন্ধকারাচ্ছন্ন উত্তপ্ত সময়ে তারা'র সাথে দেখা হয় লাইব্রেরিতে পার্টটাইম কাজ করা পাশের সেকশনের ছেলেটার, তাসলিমানের।যাকে 'তারা' সমস্ত ইন্দ্রিয় দিয়ে ভোরবেলার স্নিগ্ধ শিশিরের মতো ভালোবেসেছিল।গল্পের আবহে সে ভালোবাসাটুকু টের পাওয়া যায়।শেষ পৃষ্ঠার মতো দূর থেকে আমরাও শুনতে পারি নরম প্রতিধ্বনিত ঘুমপাড়ানি গানের মতো কেউ গেয়ে যায় "তারা-তাসলিমান, তারা- তাসলিমান, তারা- তাসলিমান.....

অন্যদিকে দুইবোনের অমীমাংসিত অজস্র অভিমান বৈদ্যুতিক তারের মতো মিলেমিশে আছে এই গল্পে।নগরজীবনে ফিরে আসার পরেও পাহাড় থেকে ভেসে আসা রহস্যময় সেই ঘ্রাণ, নদীর বাতাসের শীতলতা, তাসলিমানের অসম্পূর্ণতার প্রতিচ্ছবি তারা'র ভেতরে বেদনাতুর কোনো কোলাজ এঁকে দিয়েছে প্রতিনিয়ত।জীবনকে সহজভাবে দেখতে ভালো লাগতো তারা'র।পছন্দ করতো বই নিয়ে আলাপ করতে, ভালোবাসতো নতুন কিংবা পুরনো বইয়ের ঘ্রাণ।কিন্তু সর্বদা অতীত তার পিছনে ঘুরে বেড়াতো।তারা'র মনে হতো পরিত্যক্ত কোনো ট্রেনের বগিতে কেউ তাকে ফেলে রেখেছে অবহেলায়, অযত্নে।

হাইস্কুলে পড়াকালীন মা কে হারানো,মায়ের অতীতে ঘটিত সত্য এবং স্মৃতির অতল থেকে বেড়িয়ে আসা মায়ের আবছা চেহারার উপস্থিতি টের পাওয়া গল্পকে নিয়ে গিয়েছিল অন্য মাত্রায়।

সুধীন্দ্রনাথ দত্ত বলেছিলেন " মানুষের প্রকৃত যুদ্ধ তার স্মৃতির সাথে বিস্মৃতির লড়াই।" তারা'র জীবনে সমস্ত স্মৃতি বিস্মৃতি লেখিকা লিখেছেন রহস্যের আদলে। লেখিকার লেখনী ইফোর্টলেসলি সুন্দর। উপন্যাসের শেষ পাতা পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেলেন বিরক্তি বা দ্বিধা উৎপাদন ছাড়াই। প্রথমবার পড়লাম তাঁর লেখা, সাবলীলতা প্রশংসনীয়। সমকালীন হোক বা ক্লাসিক, উপন্যাস থেকে ইহাই আমার চাওয়া।
Profile Image for Zaima Fariha Ontara.
31 reviews61 followers
February 21, 2025
"বেঁচে থাকা মানে ভাবগম্ভীর কোনো ভবনের তলে হাঁসফাঁস করা না, বেঁচে থাকা মানে জীবনের বর্ণ-গন্ধ- শিল্প ছায়ায় নিবিড়ভাবে নিজেকে জড়িয়ে রাখার আনন্দ।"
-মাহরীন ফেরদৌস

"জলজ লকার" আমার পড়া লেখিকার প্রথম বই। বইটি যতই পড়ছি তত যেন লেখিকার শব্দের বুননে মুগ্ধ হয়েছি। বেশ কিছু শব্দ, কথা, লাইন যেন মনে দাগ কেটে গেছে। একটু একটু করে পড়ে বইটা শেষ করে ফেললাম এবং বেশ কিছু লাইন হাইলাইট না করে পারলাম না।

আমরা যে শহরে বাস করি সেই শহরে বসবাসরত প্রতিটা মানুষের জীবনের গল্প কি এক নাকি অভিন্ন? একটি মেয়ে যে বই ভালোবাসে, যার জগত জুড়ে বই তার জবানিতে আমরা জানতে থাকি একটি শহরকে। যে শহরের মানুষদের টুকরো টুকরো গল্পগুলো এক এক করে উঠে এসেছে বইয়ের পাতায়। কখনো নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, কখনো রানা প্লাজা ট্রাজেডি, গুম হত্যা, অন্যায়-অবিচার এরকমই আমাদের চারপাশে ঘটে যাওয়া ছোট বড় নানা ঘটনা লেখিকা খুব সুন্দর করে তুলে ধরেছেন গল্পে। লেখিকার লেখন শৈলী অত্যন্ত চমৎকার। গল্প কথকের ভাষায় যে গল্পটি ব্যক্ত হয়েছে তার সাথে নিজের অনেক মিল খুঁজে পেয়েছি এবং কোন নাটকীয়তা ছাড়াই নিজের মতো করে গল্পটা বলে গেছেন যার মধ্যে ছিল না কোন বাহুল্যতা।

একটি মৃত শহর সেই শহরে বসবাস করে হাজারো মানুষ। রহস্য, মিথ্যা মায়াজালে যেন এই শহরটা আটকে ফেলেছে কয়েকটা জীবনকে। জীবনের এই বেড়াজালে জড়িয়ে একজন মানুষ সমাজের বাস্তব চিত্রের বর্ণনা যেমন দিয়ে যাচ্ছেন ঠিক তেমনি তার পরিবার তার নিজের জীবনের নানা দিকগুলো গল্পের ছলে জানান দিয়েছেন আমাদের। লেখিকা আমাদের সামনে সমাজের শোষণ, বৈষম্য, খুন, হত্যা ইত্যাদি বিষয় গুলো স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। বইটি পড়তে যেয়ে আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনার এই বিষয়গুলো নিয়ে আরো বিস্তারিত ভাবার বা চিন্তা করার সুযোগ আছে। বিগত বছরগুলোতে ঘটে যাওয়া নানারকম ঘটনা দুর্ঘটনার কথা বইটিতে লেখিকা উল্লেখ করেছেন যা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

এই শহরে ঘটে যাওয়া প্রতিটা ঘটনা বাস্তব নাকি ভ্রম সেই প্রশ্ন আপনার মনে জাগতেই পারে। তবে আমি যেন আমার চিরচেনা ঢাকা শহরের স্পষ্ট চিত্রই চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছিলাম। এছাড়াও ম্যাজিক রিয়ালিজম নিয়ে বই বরাবরই আমি পড়তে আগ্রহী তাই ফ্ল্যাপের লেখা পড়ে বইটি পড়ার আগ্রহ জন্মে। তবে এই সম্পর্কে গল্পে যতটা দেয়া তা যেন নিতান্তই কম মনে হল এবং শেষটা একটু অন্যরকম হবে আশা করছিলাম। তবে বেশ সময় নিয়ে বইটা পড়াতে বইয়ের সাথে বেশ দারুণ সময় কেটেছে। আমার পড়া এটাই এই বছরের বইমেলার প্রথম বই।
Profile Image for Faria Zebin.
31 reviews1 follower
October 12, 2025
জাদু বাস্তবতার ছায়ার আড়ালে গল্পটা পুরোদস্তুর বাস্তবতার, আমাদের চেনা শহরের, জীবনের।

গল্পটা এক নাম না বলা কথকের, অথবা আমাদের খুব পরিচিত কারোরই। এক শহর, যে শহরে মৃত্যু জীবনের চেয়ে বড় সত্য এবং সহজ। সেই শহরের কিছু চরিত্রের জীবনের গল্প। সাধারণ কিন্তু পড়তে একটুও বিরক্ত লাগেনি, তবে বিষন্নতার ছোঁয়া টের পেয়েছি। শেষে কিছু প্রশ্নের মিললো না, তারপরও অতৃপ্তি হ��়নি।
ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, সমাজ-বাস্তবতা, জটিল পারিবারিক সম্পর্ক এবং মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব সবই উঠে এসেছে নিপুণভাবে।
অক্টোবর আমার কাছে বিষন্ন লাগে, বিষন্ন সুন্দর। অক্টোবরের হালকা শীতল রাতে ছাতিম ফুলের গন্ধ আর এককাপ চায়ের সাথে পড়ার জন্য জন্য পারফেক্ট বই ❤️
Profile Image for শাবেকুন  শামস্.
22 reviews4 followers
March 18, 2025
অদ্ভুত এক অনুভূতি'র সৃষ্টি হয়েছে বইটা পড়া শেষে। অন্যরকম আর সুন্দর!
Profile Image for Maisha Mahi.
37 reviews2 followers
April 21, 2025
“ তারপর সেই কবের কোনো একরত্তি ভালো লাগা ডালপালা ছড়িয়ে কোথাও না কোথাও আমাদের সাথে হেঁটে যায় এই রাজ পথে। আমাদের মনে করিয়ে দেয় মানুষ শুধু আনন্দের জন্য বাঁচে না, মানুষ বেঁচে থাকে নিবিড় বেদনার জন্যও, এমনকি অপূরণীয় স্বপ্নের জন্যও”


"জলজ লকার" পড়তে গিয়ে মনে হয়েছে যেন কারও ব্যক্তিগত জার্নালের গোপন পাতা উল্টে দেখছি। প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি বাক্য এক বিষণ্ণ সুরে বাঁধা, যা মনে গভীর ছাপ ফেলে যায়।

বইয়ের শুরুটা ধোঁয়াটে, রহস্যময়, কোথাও যেন পথ হারানোর মতো। কিন্তু সেই অন্ধকারেই এক ধরণের আলোর রেখা ছিল। গল্প যত এগোয়, ততই বোঝা যায়, এটি কেবল একজন মেয়ের গল্প না, বরং একটি শহর, তার মানুষ, সমাজ, প্রথা, নিপীড়ন, সহিংসতা আর কিছু না বলা বাস্তবতার গল্প।

এই বইয়ের সবচেয়ে প্রিয় দিক ছিল লেখকের ভাষার ব্যবহার। এত মসৃণ, এত সাবলীল, অথচ গভীর। কোথাও যেন সিনেমার মতো, কোথাও আবার অনুভূতির খাতায় লেখা চিঠির মতো।


একধরনের ম্যাজিক রিয়ালিজম ও অতিপ্রাকৃত আবহ বইটিকে ঘিরে রেখেছে, কিন্তু তা কখনোই বাড়াবাড়ি মনে হয়নি। বরং নিঃশব্দে ছড়িয়ে পড়েছে একধরনের বিষাদ, নিঃসঙ্গতা আর প্রশ্ন।

বইয়ের টাইমলাইনের সঙ্গে বাস্তব ঘটনার মিল পাওয়া যায়, যা সময়কাল বুঝতে সাহায্য করে। ফলে পুরো কাহিনীটা আরও জীবন্ত ও বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়। এই শহর যেন কোনো কল্পনার শহর নয়, বরং আমাদের চারপাশেরই প্রতিচ্ছবি।


এখানে কোনো নিখুঁত চরিত্র নেই। সবাই কোনো না কোনোভাবে ত্রুটিপূর্ণ, দ্বিধান্বিত কিংবা নিজের ভেতরে আটকে থাকা। তবুও কেউ বিরক্তিকর নয়, বরং খুব বাস্তব আর ছোঁয়াযোগ্য। কারও প্রতি ঘৃণা নয়, বরং একধরনের বোঝাপড়া তৈরি হয়।
Profile Image for Anika.
1 review
February 1, 2025
Always been a silent reader but this book had me talking. Almost Spent 48hrs glued to this book honestly it was worth it. Story is quite captivating, enjoyed the different take on magic realism but NOVO?! Well...he felt like a mystery to be solved and I was kind of rooting for him the entire time. Yet I think such intriguing character should have been more explored but overall a great read.
Profile Image for Mehedi Hasan Bappi.
38 reviews1 follower
June 17, 2025
নক্ষত্রের বেশি তুমি - নক্ষত্রের আকাশের মতো!

আমরা ফুরায়ে যাই,- প্রেম, তুমি হও না আহত!


বই: জলজ লকার

লেখিকা: মাহরীন ফেরদৌস

প্রকাশনী: কথা প্রকাশ

পৃষ্ঠা: ২৮৭

মূল্য: ৬০০ টাকা

জনরা: সমকালীন / জাদুবাস্তবতা



"ঠিক কবে থেকে আমি এই গল্পটা বলার জন্য অপেক্ষা করছি, তা নিজেও জানি না। একবার মনে হয়, আমার জন্মেরও আগে হয়তো এই অপেক্ষা শুরু হয়েছিলো।''

গল্পটা আসলে কার? তারা, রিফা, তালিসমান, শিমন চাচা, ডাক্তার নভো, এঞ্জেল এম কিংবা অন্যকারো? নাকি আমাদের?


গল্পকথক "তারা'' একজন কম্পানিয়ন ফ্রিল্যান্সার। টাকার বিনিময়ে মানুষকে নিজের সঙ্গ দিয়ে থাকেন। কথকের বয়ানে গল্প চলে যায় অতীত আর বর্তমানে। অতীতে স্কুলের দুঃস্বপ্নের মতো একটা কালো স্মৃতি। তার বইপড়ুয়া জীবনে এক লাইব্রেরিতে তালিসমানের আগমণ, জীবন থেকে তাকে হারিয়ে ফেলা। শিমন চাচা অসম্ভব ভালোবাসা কিংবা বোন রিফার সাথে অর্ন্তদ্বন্দ।  একই সাথে তার ন্যারেটিভ উঠে আসে বর্তমান এঞ্জেল এম এবং তার চক্রে আটকে যাওয়া। ডাক্তার নভো নামক এক রহস্যময় চরিত্রে আবির্ভাব। অলমোস্ট সম্পর্ক ছিন্ন হওয়া বোনের দেখা পাওয়া। আর তালিসমানকে জীবনে আবার ফিরে পাওয়া।


মাহরীন ফেরদৌসের পড়া প্রথম বই এটা। বলা চলে বেশ মুগ্ধতা নিয়ে পড়েছি। জনরা কিংবা ফ্ল্যাপ পড়ে ভেবেছিলাম বেশ ভালো রকমের জাদুবস্তবতা কিংবা অতিলৌকিকতার ছোয়া থাকবে, আদতে ছিলো খুবই অল্প বরং বাস্তবতাই বেশি। গল্প বলার ছলে লেখিকা দেশের বেশ কিছু ইস্যু তুলে এনেছেন। শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, আগুন সন্ত্রাস, রানা প্লাজা ট্রাজেডি, সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যা, ফোনে আড়িপাতা সব বেশ কিছু ব্যাপার। বইয়ের ন্যারেশনের সাথে দেশের বাস্তবিক সমসাময়িক ইস্যু টেনে তুলেছেন লেখিকা। আরেকটি ভালো লাগার ব্যাপার হলো জীবন, মানব মনের টানাপোড়েন, সম্পর্ক, কুটিল জগৎ ইত্যাদি নিয়ে গল্পের ঢঙে বলে যাওয়া বিচ্ছিন্ন পর্যবেক্ষণ। এই যেমন শিমন চাচার চরিত্রটা আমার খুব ইন্টারেস্টিং লাগছে। শিমন চাচার বলা একটা সংলাপ এমন – 


" আমরা সাধারণ জনগণ এমনই এক ভাসমান ভেলা, যার একূল ওকূল দূকূলেই ধরা খায়। কোন তীরেই তাদের স্থায়ী শান্তি নেই। জ্যোৎস্নায় বিড়ালকে দেখতে দেখায় চিতা বাঘের মত, আর আমরা ভাবি না জানি কত পরিবর্তন আসবে। কিন্তু আসলেই কি পরিবর্তন আসে? কেন এখনো থেকে থেকে গায়েব হয়ে যায় মানুষ? কেন রাজনৈতিক নেতাদের তোশকের তলে থাকে সোনার বিস্কুট আর বন্যায় সর্বস্ব হারানো গ্রামের জন্য জোগাড় করা ত্রাণের টাকা মেরে খায় কিছু স্বেচ্ছাসেবী। আমরা কি কেউ জানি কোথায় গেলে শান্তি?  সাম্য? আমরা শুধু বারবার ভাবি পরিবর্তন আসবে। মুক্তি আসবে। কিন্তু আটলান্টিক সাগরের চেয়েও সুদূরে সেই মুক্তি, আমরা শুধু অশান্ত সাগরের নাজুক ভেলা, এপাশ থেকে ওপাশে, এ দল থেকে সে দলে ঘুরে বেড়ানো পথ হারানো যাত্রী।''  


এই সংলাপটুকু বর্তমান প্রেক্ষাপটের সাথে দারুণ সামঞ্জস্যপূর্ণ। কোথাও গিয়ে মনে হয়েছে শিমন চাচা, ডাক্তার নভোর চরিত্র আরোও একটু বিস্তৃতি পেলে ভালো লাগতো কিংবা তালিসমানের চরিত্র আরোও একটু বৈচিত্র্যপূর্ণ হতে পারত। 

লেখিকার গদ্যশৈলী বেশ চমৎকার, ঝরঝরে, মাধুর্যময়। মাহরীন ফেরদৌসের পরবর্তী বইয়ের অপেক্ষায় থাকা যায় নিশ্চিন্তে।
Profile Image for Farzana Reefat  Raha.
39 reviews14 followers
May 8, 2025
খুবই অদ্ভূত বিষন্ন সুন্দর নাটকীয় লেখার ধরন!

একইসাথে কিছুই না বলা আবার অনেককিছু বলে দেয়া।

পারিবারিক অভিমান থেকে রাজনীতির নোংরা মারপ্যাচ, অপরাধ জগৎ থেকে শুরু করে সমাজের লো-প্রফাইল মানুষের উপর করা হাই-প্রোফাইলদের বৈষম্য, ঘুনে ধরা বিচারব্যবস্থা - নানা মাত্রিক জটিলতা নিয়ে লেখা। পড়তে পড়তে অনেকসময় সাই-ফাই এর ফিল পেয়েছি, আবার অনেকসময় বিষাদ, অনেকসময় থ্রিলার।

লেখক যদি সমাজের বিভিন্ন বাস্তবতাকে সার্কাস্টিকভাবে চোখে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে পাঠকমনে একটা আনকম্ফোর্টেবল ভাইব তৈরি করার চেষ্টা করে থাকেন, তবে তিনি সার্থক। তবে, কিছু কিছু জায়গায় অতিরিক্ত নাটকীয়তা বা উপমা বা হেঁয়ালিপূর্ণ লেখায় পাঠক হিসেবে একটু বিরক্তবোধ করেছি।

সব মিলিয়ে মেলাদিন বাদে বেশ একটা অন্যরকম লেখনীর বাংলা মৌলিক উপন্যাস পড়লাম। বেশ ভালোই লাগ���! Recommended!

৪.৫ ✨
.
.
.
সিলেট, বাংলাদেশ | মে ৯, ২০২৫।
Profile Image for তান জীম.
Author 4 books279 followers
June 23, 2025
জলজ লকার আমার মোটামুটি লেগেছে, হয়তো আমি অতো বেশি পড়িনি, সাহিত্য সম্পর্কে আমার জ্ঞান কম। জলজ লকারের মাহরীন ফেরদৌসকে আমি চিনি একুয়া রেজিয়া হিসেবে। ২০১৩-২০১৪ সালে ভালোবাসার ডাকপিয়ন পেজে উনি গল্প লিখতেন। ভালোবাসার ডাকপিয়নে অনেকেই ভালো লিখতেন তবে উনিসহ আরো কয়েকজন খুবই চমৎকার রোমান্টিক লিখতেন। জলজ লকারের সাহিত্যগুণ হয়তো ওসব গল্পের চাইতে অনেক বেশি। তবে আমার কাছে জলজ লকারের চাইতে ওনার ওসব লেখাই ভালো লেগেছে (এখনো লাগে)। তাই আমি অপেক্ষায় থাকবো উনি কবে সহজ সরল সেই সুন্দর রোমান্টিক গল্পগুলো লিখবেন, একটা উপন্যাস লিখবেন।
Profile Image for Saima  Taher  Shovon.
521 reviews190 followers
February 25, 2025
"আমার তখন মনে হয় পৃথিবীটা মাঝে মাঝে আশ্চর্য সুন্দর এক জায়গা। যেখানে আম্মার আঁকা নিখুঁত ছবিগুলোর মতো চাঁদ,তারা ও সূর্য  আলো ছড়িয়ে আমাদের উষ্ণ করে রাখে। যেখানে সব মানুষের মাঝে আছে এখনো নীল জলধারা, যা গোপনে- নিঃশব্দে আমাদের মাঝে সুগন্ধ ছড়ায়।তারপর কোনো হেমন্তের রাতে আমরা নগরের পিছু ডাক অবহেলা করে পা বাড়াই ঘাসের জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা ছোট একটা অচেনা ফুলের খোঁজে। যে ফুলের জন্ম নেওয়ার কোনো শুরু নেই, শেষ নেই, তারপরেও আমরা সবাই  তাঁকে খুঁজে বেড়াই, অস্তিত্বের সমস্ত হাহাকার পেরিয়ে  বেঁচে থাকার গাঢ় গুঞ্জন খুঁজে নিতে। " -উপন্যাসের এ শেষ লাইনগুলো আমার পিছু ছাড়ছেনা। তেমনি তারা, মানে উপন্যাস যাকে ঘিরে, তার জীবনটাও যেনো চোখের সামনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। লেখিকা জগতের অনেকগুলো কাহিনী ছড়িয়ে দিয়েছেন জালের মতোন। আপাতদৃষ্টিতে সেই জালের গুলতি ছিঁড়ে যাচ্ছে, এই বোধ চলে আসছিলো আমার মাঝে। কিন্তু জাল গুটানোর কাজটা কতো নিখুঁতভাবে করলেন!জীবন, এর অনিশ্চিয়তা, বহমান সময়,সাময়িক অবস্থা এমনকি, বর্তমানের অনেক অনিয়মের অভিযোগ মুখ্য হয়ে ধরা দেবে লেখাতে।তেমনি করে ক্ষমতা, এক শ্রেণির কাছে যে জীবনের সংজ্ঞাটাই আলাদা, সেটাও যেনো সুক্ষ্মভাবে তুলে এনেছেন।
বইয়ের প্রচ্ছদে আছে-মিথ ও ম্যাজিক রিয়েলিজম। কিন্তু মাছের পিঠের সেই শহরটা যেনো খুব চেনা। এমন শহর কী আমরা চিনি না? যে শহরে মায়া বলতে কিছু অবশিষ্ট নেই?কিংবা ধরো আইনের বৈষম্য। ধুরো!আইন বলছি কেনো! সে শহর কিংবা দেশের গলিগলিতে বৈষম্য। আর লেখিকাও যেনো সেটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন। আরেকটা জায়গায় আছে -এই সমাজে মধ্যবিত্ত ও দরিদ্রদের জন্য নিরাপত্তা নেই। আসলেই তো! নেই! এই যে সম্প্রতি পুকুর চোর,থুক্কু সমুদ্র চোরদের কথাই ধরো। তারা খুন করে ঠিক-ই যেনো মৌলিক থেকে শুরু করে বিলাসিতার সমস্তটাই পাচ্ছে। কিন্তু সাধারণদের দেখো! নুন আনতে পান্তা তো ফুরোচ্ছেই, আবার সেই খুনিদের বিচারের আশা করে বসে আছে। আমাদের সমাজপতিরা ডমিনো এফেক্টে বন্দী,সবাই অপরাধী, সব এক- তাই কান টানলে মাথা আসার মতোন টান দিলে সবখানেই টান পড়ে। তাই যেনো কানটাই টানতে যতো গড়িমাসি।বিগত অনেককালের হত্যা, গুম,অনিয়ম এবং ফাঁকফোকর বেয়ে ক্ষমতার খপ্পরে সিস্টেম চাপা পড়ার বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেছেন৷ তেমনি কথা বলার স্বাধীনতা মানেই যে শুধু গুণগান ছিলো, সেটাও যেনো ভুলে যাননি। আবার সাধারণ জনগণ যে খেলার গুটি মাত্র সেটা কে না জানে!হয়তো আমাদের কলুষিত শহরকে( দেশ) তুলে ধরেছেন লেখিকা মাছের পিঠের শহর হিসেবে। আর ফাঁকফোকর বেয়ে যেন বর্তমান সময়ের কথাও উঠে এসেছে। তবে সেটা নিতান্তই ভালো ফিকশন লেখার খাতিরে নাকি অতীত বর্তমান মিলে বলে, সেটা জানিনা।
Profile Image for Sehemi Akhi.
65 reviews2 followers
March 17, 2025
একটা শহর, সেই শহরের বদলে যাওয়া, শহরের মানুষের পরিবর্তন হওয়া, সবকিছু একজনের পক্ষে ঠিক কতটুকু অবজার্ভ করা যায়?? একজন একা মানুষ কি পারে নিজের অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎকে মিলিয়ে চলতে? পারে না। তবুও আমাদের বর্তমানে থাকে অতীতের দাগ, থাকে ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা।

এই গল্পে অতীত যে কতটা জীবনের সাথে জড়িয়ে থাকে সেটা এত সুন্দর করে লেখা যে পড়তে গেলে মনে হবে এরকম তো ঠিক আমার সাথেও হয়! যখন পড়া শুরু করি তখন ভেবেছিলাম বড় উপন্যাস, এই মাসে পড়ে শেষ করতে পারি কিনা কে জানে! কারণ আমি ঠিক কোন সময় পড়তে পারবো তা আমার বুঝে আসেনা! বেশ কতক মাস বই পড়া-ই হচ্ছিল না। কিন্তু রমজান মাস হবার হেতু আমার বেশ ভালই দিনের বেলাতে একটু আধটু বই পড়া হচ্ছে৷ আবার সেহরির আগ পর্যন্ত জেগে থাকলে সেই সময়েও পড়া হচ্ছে৷ তাই এই বইটা পড়ে শেষ করেছি। আর পড়ার পরে এত ভাল লাগছিল যে বুঝানো সম্ভব না। গল্পের সবকিছুই যেন চিরচেনা। তবুও কোথাও কোথাও অমিল। আমাদের জীবনের কত ঘটনার সাথে মিলে যায়। আবার আমাদের আশেপাশের পরিবেশে কি হচ্ছে লেখিকা সেটাও গল্পে তুলে এনেছেন। বেশ বেশ বেশ লেগেছে।

গল্পটা পড়তে গিয়ে মনে হবে এই বুঝি তারার জীবনের গতি অন্য মোড়ে গেলো। আবার মনে হবে এই বুঝি তারার মায়ের মারা যাওয়ার রহস্য জানা যাবে। আবার মনে হবে রিফা বোধহয় নরম মনের হয়ে যাবে একেবারে। এর মাঝে তালিসমানের তারার জীবনে প্রভাব, শিমন চাচার গায়েব হওয়া, তারার আব্বার অনুশোচনা সবকিছুই যেন একটা জায়গায় এসে স্থির হতে যাচ্ছে বলে মনে হবে। তবুও অস্থিরতা সর্বক্ষণের। বইটা পড়ার সময় প্রচুর কমফোর্টেবল ফিল করছিলাম। প্রতিটা ঘটনার কিছু না কিছুতে জীবনের সাথে অনেক কিছুই মিলে যাবার আভাস আছে এখানে। তাই হয়তো আগ্রহ বেড়েই চলছিল। অবশেষে সমাপ্তি। শুধু সমাপ্তিই নয়, তৃপ্তির সমাপ্তি৷ ❤️
43 reviews
March 31, 2025
থার্মোডাইনামিক্স এর দ্বিতীয় সূত্র বলে - the state of entropy of the entire universe, as an isolated system, will always increase over time - অর্থাৎ কোন একটা সিস্টেমের বিশৃঙ্খলার পরিমাণ সর্বদাই বাড়তে থাকবে, কখনোই কমবে না। ঠিক একইভাবে, পৃথিবী নামক এক গ্রহের মানুষ নামক প্রাণিদের দ্বারা সংগঠিত কৃতকর্মের ফলে সৃষ্ট ক্যাওস, সময়ের সাথে সাথে কখনোই কমবে না বরং বাড়তেই থাকবে। এমন এক অস্থির সময়ের মধ্যে দিয়ে চলতে থাকা আমাদের জীবনের গল্পকে জাদু ও বাস্তবতার এক অদ্ভুত মিশেলে এঁকেছেন লেখক তার 'জলজ লকার'- বইতে।

'জলজ লকার' - এইবারের বইমেলার আমার প্রথম কেনা ও পঠিত বই। প্রচ্ছদ দেখে বায়াসড হয়ে বই কেনার ব্যাপারে বন্ধুমহলে আমার ব্যাপক সুখ্যাতি (!) থাকাকে জাস্টিফাই করতে, বইমেলায় এক সেকেন্ডের জন্যে পদধূলি না দিয়েও, কজেটিভ ভার্বের সাহায্যে হাতে এনেছিলাম বইটি। খুবই সহজপাঠ্য হওয়ার কারণে একদম বুলেট ট্রেনের গতিতে পড়ে ফেলেছি। নতূন লেখকদের বই কিনতে খুব বেশি পরিমাণ এলার্জি থাকার পরেও, হালের বই পড়ুয়াদের রিকমেন্ডেশন ও আকর্ষণীয় প্রচ্ছদ দেখে এই বইটি কিনেই ফেলি একপ্রকার। খুব ভালো লেগেছে লেখক যেভাবে স্বাচ্ছন্দ্যে বর্তমান থেকে অতীতের গল্প বলতে জাম্প করছিলেন - এই ব্যাপারটা। কিছু প্রশ্নের উত্তর অজানা রেখেই হয়তো শেষ হয়েছে গল্প। কম্ফোর্ট জোনের বাইরে গিয়ে অনেকদিন পর নতূন কোন লিখা পড়ে ভালো লাগলো। কোন একটা বই শেষ করে সুখী সুখী অনুভূতি নিয়ে এদিক সেদিক হাঁটাহাঁটি ���রার ব্যাপারটা বেশ লাগে আমার কাছে! কেউ কি পড়েছেন জলজ লকার? পড়লে জানিয়েন কেমন লাগলো।

#happyreading
Profile Image for Rifat Shohan.
34 reviews17 followers
March 27, 2025
"Stories are for joining the past to the future. Stories are for those late hours in the night when you can't remember how you got from where you were to where you are. Stories are for eternity, when memory is erased, when there is nothing to remember except the story."

Melancholy..Solitude..Loneliness..Despair..Regrets.. 4.5/5
Profile Image for Fahad Amin.
149 reviews9 followers
October 24, 2025
পড়তে পড়তে কেমন যেন ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছিলাম।
Profile Image for Arfaz Uddin.
91 reviews7 followers
February 14, 2025
.... কেন এত কিছু ঘটে যাওয়ার পরেও আমাদের না বলা গল্পটা আমরা বলে যেতে চাই কোনো নির্জন ঘরে বসে, তাও জানি। তবু জীবন কেটে যায় স্মৃতি রোমন্থন ও স্বীকারক্তির তীব্র আকাঙ্ক্ষায়।

জলজ লকার, মাহরীন ফেরদৌস।

জীবন মানুষকে মৃত্যুর পরওয়ানার আগে উপহার দিয়ে থাকে, হয়ত দেয় জীবনকে গুছিয়ে একটি সুন্দর সাজানো ড্রয়িং রুমে আসা বসন্তের প্রথম প্রহরের উষ্ণতা। অথবা যাযাবরের স্রোতধারার কোনো গন্তব্যহীন নিরন্তর পথচলাকে পরওয়ানার ফাসের চাপের শেষ অবধি পর্যন্ত অক্লান্ত চালিয়ে যাওয়াকে দু হাতে তুলে দেয়। হয়ত যাযাবরী এই পথচলায় চলতে চলতে গন্তব্যের আশ জাগলেও মরূদ্যানের মরীচীকার মত সব ছাই হয়ে যায়। নির্লিপ্ত একাকিত্বের আড়ালে থাকা অনুভূতির স্রোতধারাকে বারংবার আটকে রেখে এগিয়ে যেতে হয়, কেননা নিষ্ঠুর জীবন কাউকে বিন্দুমাত্র করুণা করে না। তাহলে কেউ যদি জীবনে তার গন্তব্য খুজে পায়, তখন কি জীবন তাকে করুনা করে? হয়ত, কিন্তু তখনও জীবন তার কড়াল থাবাকে গুটিয়ে রাখে না। আর এইভাবেই জীবনের গল্পগুলো জমা পরে একেকজনের লকারে, যে লকার হয়ত সকলের কাছে খুলবে না৷ কিন্তু যে হৃদয়কে ছুয়ে যেতে পারে কিংবা নিজের পেশিজোর প্রয়োগ করতে পারে, তখন সে গল্পসমৃদ্ধ লকার যেনো কোনোভাবে খুলে যায়, আর হুড়মুড়িয়ে বেরিয়ে আসে গল্পের ভান্ডার। তবে আজো আমি ভেবে যাই, জীবনের যাযাবর পথচলা আমাদের কি দেয়? দুমুঠো গল্প? নাকি একঝাক ভগ্ন অনূভূতির জঞ্জাল? এই প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে নেই, তবে খুজে যাবো। ততদিনে হয়ত জীবনের শেষ ঘন্টার কাটা আমায় ছেদ করে যাবে।

এই এক যাযাবরের অস্থির জীবনের পথচলার গল্প জলজ লকার৷ যে তার জীবনের কেন্দ্রবিন্দুর স্থিরতায় থেকে জীবনের গতিময়তায় নিজেকে ধরে রাখতে গিয়েও হারিয়ে ফেলছেন অনবরত৷ মাছের পিঠে টলমলরত এক শহরে থাকা এক মৃয়মাণ নারী, তাকে ঘিরে থাকা সম্পর্কের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বেড়াজালের আবদ্ধতার গল্প। নির্লিপ্ত একাকিত্বে থাকা একজনের গল্প যিনি ক্রমশ সঙ্গ দিয়ে চলেছেন, কিন্তু তবুও তিনি যেনো কোথাও হারিয়ে যেতে থাকেন। যেনো তালিসমানের স্মৃতির টানে, কিংবা তার হারিয়ে যাওয়া মায়ের কন্ঠে। কখনোবা ডক্টর নভোর কোনো আরব্য রজনীর গল্পে। কিন্তু প্রশ্ন একটাই, যাযাবর তারকারাশি কি কখনো তার গন্তব্য খুজে পায়? নাকি সারাজীবন খুজে ফেরে কোনো এক ঠিকানার জন্য? এই গল্প যাযাবর তারকারাশির, এক জাদুকরি তালিসমানের, এক নৃশংস ক্ষুরধার বুদ্ধিসম্পন্ন মারিয়ার, কিংবা পারিবারিক চাপে থাকা হাসিবের, জীবনে স্থির হয়ে যাওয়া ইমতির, গন্তব্য খুজে পাওয়া রিফার। অথবা এটি কলুষতায় নিমজ্জিত এক শহরের গল্প, যেখানে হয়ত কেউ নিজের জীবনকে খুজে বেড়াচ্ছে ক্রুঢ়তার ছুরি হাতে। ম্যাজিক রিয়ালিজমের হালকা স্বাদে মোড়ানো এক নির্লিপ্ত শহরের ক্রূঢ়তা এবং একাকিত্বের গল্প জলজ লকার।

মাহরীন ফেরদৌস এর পড়া প্রথম বই এটি, এবং প্রথম বইয়ের প্রতিটি পাতা উল্টানোর সাথে সাথে হাওয়াই মিঠাই এর মত ফেলে যাওয়া তুলতুলে মিষ্টি আবেশ রেখে গেছে আমার মনে। লেখিকা যেনো গল্প লিখেছেন ছন্দের সুতো বুনতে বুনতে। গল্পের লেখনি দিয়ে লেখিকা আমায় বারংবার মুগ্ধ করেছে। কাব্য বুনতে বুনতে লেখিকা যেনো আমাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন উপন্যাসের চরিত্রের সাথে, কথা বলেছেন ছন্দের আবেশে। যেনো পুরো উপন্যাসের ঝংকার ছন্দের বিন্যাস আর লেখনির বুনিয়াদ কোনো কবিতার থেকে কম নয়। গল্পের শুরুতে লেখিকা অনেক গুলো বিচ্ছিন গল্পের সুতোকে আলগাভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে এগিয়ে গেছেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় চরিত্রের হাত ধরে এই বিচ্ছিন্ন সুতোকে ধীরে ধীরে গুটিয়ে এনেছেন, শেষে এসে যেনো গল্পের আবেশ পাঠকের মাঝে রেখে দিয়ে ইতি করলেন গল্পটিকে। গল্পটি যেনো আমার আপনার জীবনের, কিন্তু এই গল্পের মাঝে থাকা ম্যাজিক রিয়ালিজম যেনো আরেকটু ভিন্ন ছোয়া দিয়েছে, যেটি যেনো প্রয়োজন ছিল। গল্পটি যেনো দাঁড়িয়ে গেলো নিজ এক পারদে, যা পড়তে আরাম, এবং শেষ না করে রাখা দায়। মেলার পড়া প্রথম বইয়ে আমি খুজে পেলাম চমৎকার এক গল্প, যে গল্প এখনো তার রেশ আমার মাঝে রেখে দিয়েছে। জলজ লকার এমন এক গল্প, যে গল্প পড়তে গিয়ে জীবনের দর্শনকে লেখিকার আর প্রধান চরিত্রের চোখ দিয়ে দেখা যাবে, এক অন্যরকম দৃষ্টিতে।
Profile Image for Aprotim  Saha.
13 reviews3 followers
April 2, 2025
দ্রবিভূত হওয়া দুঃখ বাঁটোয়ারা করতে পারলে তা কি কমে? আসলে কি জানেন, সেই দুঃখের সাগরে ডুব দেওয়াই ঢের শ্রেয় সিদ্ধান্ত! দুঃখের দহনে জীবন খাঁটি হয়। জীবন যাত্রার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পথচলার সময়গুলোও আপাত দৃষ্টিতে পক্ষপাতদুষ্ট! এক জীবনে সেইসব না বলা কথা বলে ফেলা তো হুটহাট করে সম্ভব নয়। কবে থেকে আটঘাট বেঁধে বসতে হয়। সময় বড় নিঠুর অমানিশা তাকে টেক্কা দেওয়া সহজ নয়।

আমাদের ব্যক্তিগত দুঃখগুলোর যবনিকাপাত কখনও হয়নি হবেও নাহ। সূদুর নীহারিকা যারা অতিক্রম করে এলেন তাদের দুঃখও কম নয়। তাই মাভৈ বলেন, এমন মনস্তাপ আর দুঃখ বাঁটোয়ারা করতে পারে এমন জীবনের আক্ষেপ নিয়েই গল্পটা এগিয়েছে এবং এটাই সত্যি। দুঃখই চিরন্তন!

জলের উপরে এক কাল্পনিক অস্তিত্বশীল শহরকে নিয়ে উপন্যাসের যাত্রা শুরু হয়েছে। ছোটবেলা থেকে বড়বেলায় আউট বই পড়ার ঝোঁক মাথাচাড়া দিয়ে উঠলে এবং সেই অভ্যাসটি বহুবছর অব্দি চলমান থাকবে এমন একটি ছোটবেলা হয়তো অনেকেরই স্বপ্নের মতো মনেহয়। মানসপটে বির্নির্মিত এমন এক শৈশবই ছিলো উপন্যাসের মূল চরিত্রের প্রথম এবং একমাত্র নেশা যা সে তার জীবনে সত্যি করে তুলেছে। বইয়ের পাতায় পৃথিবী আবিষ্কারের এই নেশাটা কখনও এতোটা সহজে এসে হাতের মুঠোয় ধরা দিবে অনেকেরই সেই ধারণা আদতে সহজে আসে না। এই আবিষ্কারে ডুবে বুঁদ হয়ে গেলে কাউকে তুলে আনা সম্ভবও নয় যদিনা জীবনে কোন প্রবল আঘাত আসে! সেই বাস্তব অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গিয়েছে মেয়েটি।

ঢাকা শহরকে রিলেট করতে গিয়ে কিছু কালক্রমিক ঘটনাপঞ্জীর উল্লেখ থাকলেও একটি বারের জন্যেও শহরটার নাম নেননি লেখিকা। লেখার ধরনে কিছুটা তার প্রবাস জীবনের সংশ্লিষ্টতা চোখে পড়লো। এমন ঢং এ বাংলা উপন্যাস লেখাটা বহু বিদেশি উপন্যাস পড়ার আফটার ইফেক্টও হতে পারে বলে ব্যক্তিগত ভাবে মনে হয়। সময়টাকে সজীব ও প্রাসঙ্গিক রাখার যে প্রচেষ্টা সেটা আমার খারাপ লাগেনি।

সচরাচর উপাদানে লেখা বই এটি নয়৷ ঘটনার ঘনঘটা বেশ ভালোই আছে উপন্যাসের দু'মলাটে। ব্যক্তিগত জীবনের হিসেব নিকেশ করে তার সাথে সমকালীন সময়কে সাথে নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন দৃশ্যেকল্প সাজানো হয়েছে। বইপত্র পড়া নিয়ে খন্ড খন্ড স্মৃতিগুলো একদম মনে গেঁথে থাকবে। পড়ন্ত সূর্যের উত্তাপ নেই যেখানে তেমন কোন স্থানই হয়তো এই গল্পের শেষ হয়েছে। সবগুলো ভুল ও অজ্ঞানতাকে স্বীকৃতি দিয়ে এগিয়েছে গল্প। দুই বোনের সাথে মায়ের বোঝাপড়া সেরে ফেলছি উপন্যাসের ১৭৮ পাতার পর থেকে ঝিরিপথ বেয়ে উঠতে আর একটুও বেগ পেতে হয়নি। অতিদ্রুত ঘটনার গতিশীলতা আঁকড়ে ধরবে যেকোনো পাঠককে।

এক বসায় পড়া হয়নি৷ মোটামুটি নিরিবিলি সময় নিয়ে এই ঈদের ছুটিতে শেষ করা প্রথম উপন্যাস নিয়ে এখনও একটা ঘোরের মধ্যেই আছি।

📔 উপন্যাস: জলজ লকার
✒️ লেখিকা: মাহরীন ফেরদৌস
📜 প্রকাশক: কথাপ্রকাশ
💰মুদ্রিত মূল্য: ৳ ৬০০
🖇️রেটিং-৩.৭/৫
Profile Image for Farjana Rahman.
51 reviews4 followers
September 27, 2025
বইঃ জলজ লকার
লেখকঃ মাহরীন ফেরদৌস
প্রকাশকঃ কথাপ্রকাশ
প্রচ্ছদঃ সব্যসাচী মিস্ত্রী
ধরনঃ উপন্যাস
মূল্য: ৬০০ টাকা।

সেলফ এগজাইলড? নাকি একতরফা এলিয়েনেশন? যদিও মাহরীন ফেরদৌস এর "জলজ লকার" উপন্যাসের মূল চরিত্র "তারা" একজন ফ্রিল্যন্সার হিসাবে আবির্ভূত। সেটা পাঠকের দৃষ্টিগোচর হয় পাঠকালেই। কিন্তু দৃষ্টিগোচর এবং মননগোচর হওয়াতে একটা পার্থক্য থেকে যায়। সেলফ এগজাইলড এবং একতরফা এলিয়েনেশন দুয়ের যোগফলেই ধরা যায় তারাকে। জলক লকারের অন্যতম সুরকে।

"জলজ লকার" উপন্যাসের প্রোটাগনিস্ট তারাকে খুব সহজেই সেই সেলফ এলিয়েনেশনের চরিত্রচিহ্ন দিয়ে নির্দিষ্ট করা যায়। মাহরীন ফেরদৌস তার নাশ/কতা চালায় মনোলগের ডানায় ভেসে। হয়তো মনোলগের সেই সুবিধাটুকুর জন্যেই এই অদ্ভুত এলিয়েনেশন। কোহরার মতোন। চারপাশে ঘীরে ধরে। লেখিকা পরিচিত যাপনের পটভূমিকে ক্যানভাস করে বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিত্বের (তারা বা অন্য আরও চরিত্র কম বেশি) যন্ত্রনাকে স্কেচ এঁকে যান।

সেলফ এগজাইলডও তারা। তবে অন্যদের সাথে লৌকিক সম্পর্কটুকু (বিরতীহীন ভাবে নয়) বজায় রেখেই এই আত্মমগ্নতা। উপন্যাসের এহেন চারিত্রিক বৈশিষ্ঠ্য গল্পের রহস্যের সাথে সাথে পাঠককে আলাদাভাবে সম্মোহিত করে। পৃষ্ঠার পরে পৃষ্ঠা উল্টাতে সাহায্য করে। একটা উপন্যাস পড়তে যেয়ে পাঠক নিজেই সেলফ এগজাইলড হয়ে ওঠে - জলজ লকারের সার্থকতা বোথহয় এখানেই। সাথে লেখিকার লিরিক্যাল গদ্যভাষার ঝোঁক বাড়তি আকর্ষন যোগ করে। ফলাফলে পাঠকের ভালো লাগা এবং তৃপ্তি। যোগফল তবে সবার বেলা এক নাও হতে পারে। সরল কষা তো না - বন্ধনীর পর বন্ধনীর ধাপ পেরিয়ে শেষ ধাপে সবার ফল এক হবে!

লেখিকা মাহরীন ফেরদৌসের যে ধরনের এপিগ্রামে আমার ঘোর, জলজ লকারে সেটা অনুপস্থিত। মনোলগের ডানায় জলছাপের মতো সেই এপিগ্রামগুলো তার ছোটগল্পে যতটা তীক্ষ্ণ, উপন্যাসে ম্লান বা অনেকাংশে অনুপস্থিত। মনোগ্রাহী ভাষা তবুও, কিন্তু নিজস্ব এপিগ্রামটুকু ঠিক যেন দানা বাঁধে নাই।

তথাপি, তার গদ্যের ভাষা অনেকটা যেন পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে গড়িয়ে পড়া ফিল্মের রিলের মতো। সামনে ভেসে আসে তথ্যচিত্র, আর পেঁচিয়ে নামা ফিল্মের রিলে হুটহাট আলোর ঝলকানি বা হুট করে ঝলছে ওঠা। নিয়মিত ভাবে নয়, অনিয়মিত ভাবে - সেটাই ফিল্মের রিলের উপর আলোর প্রতিফলণের বৈশিষ্ট্য। উপরেই যেটা বললাম, দৃষ্টিগোচর হবে তখনই যখন মননগোচরে ধরা দিবে একটু খেয়াল করে তাকালে।

ফিল্মের পেঁচানো রিলে হঠাৎ ঝককানি ব্যাপারটা আরও একটু খোলাসা করতে ২৬ নং অধ্যায়ের কিছু অংশ তুলে দেই -

"বরং এই রাতে শিমন চাচা উপন্যাসের সেই একাকী প্রোটাগনিস্ট যার আসন্ন বিপর্যয় আমরা পাঠক হিসেবে বহু আগে উপলব্ধি করলেও আমাদের বোবায় ধরে যায়। আমাদের মুখ হয়ে যায় সিল দিয়ে বন্ধ। আমরা শুধু দ্রুত পাতা উলটাই। আমরা চাই, ভুল প্রমাণিত হোক আমাদের অন্তর্দৃষ্টি। আমাদের সমস্ত আশঙ্কাকে নড়বড়ে করে দিয়ে, মেঘের আড়াল থেকে নেমে আসুক কোনো দৈববার্তা। কিংবা আমাদের পড়তে থাকা উপন্যাসে যুক্ত হোক নতুন কোনো অধ্যায়, যেখানে চরিত্রগুলো এত ধূসর ধোঁয়ায় তাদের রক্তবর্ণ চোখ মুছবে না। বরং যে অধ্যায়ে আলগোছে, কোনো আবছা সকালের মতো নিছক, সাধারণ কোনোদিন শুরু হবে। গুমোট আবহাওয়া ভরে উঠবে ঝিরিঝিরি বাতাসে। স্নিগ্ধ আর সহনীয় হয়ে উঠবে আমাদের বেঁচে থাকা।"

পুরো বর্ণনা জুড়ে যে ধূসরতা আছে, একতরফা ধূসরতায় হঠাৎ করে "রক্তবর্ন" যেন ফোকাসে চলে আসে ছোট্ট উপস্থিতি নিয়ে। যেন একগাদা বড় বা সমমাপের বৃত্তের মাঝে শুধু একটা খুব ক্ষুদ্র বৃত্ত সবার চোখে ফোকাস হবে স্পষ্টভাবে। এক কথায় বলা যায় - ব্রেকিং দ্য ইউনিফরমিটি। বর্ণনা ছাড়াও উপন্যাসেও উপস্থিত সেই ব্রেকিং দ্য ইউনিফরমিটি - এঞ্জেল এম।

তাহলে হারমনি কোথায় বাকি চরিত্রগুলোয়? মোটাদাগেই বলা যায়, উপন্যাসের বাকি অধিকাংশ চরিত্রই কম-বেশি এগজাইলড। গালভরা একটা নাম আছে এর। লোনার। তবে লুনাটিক না। হাসিব বা ইমতি শুধুমাত্র দুটো নাম হিসাবে উপন্যাসে এসেছে। ব্যপ্তি কম, তাই হিসেবের বাইরে।

অনেকের আলোচনায় বা রিভিউতে আমি "এক বিপুল মাছের পিঠে গড়ে উঠেছে অদ্ভুত এক নগরী/জনপদ" এর উপস্থিতি পাই। কেন ঠিক বোধগম্য না। বইয়ের ইনার ফ্ল্যাপেও সেটার কথা আছে। কিন্তু মূল উপন্যাসে কি সেরকম কিছুর অস্তিত্ব আছে? বরং মূল বিষয় এখানে মাছের পিঠ বা শহর না - বরং "টলমল করা"।

হারমনির যে কথায় ছিলাম, সেখান থেকে আরও একটা প্রসঙ্গ টানা শ্রেয়। মাহরীন ফেরদৌসের সৃষ্ট ডাইজেসিসের পরতে পরতে আমার একটু খেয়াল করলেই টের পাবো - উপন্যাসের সকল চরিত্রগুলোই (উমম এঞ্জল এম কে হয়তো বাদ রাখবো এটা থেকে) খুঁজে ফিরছে এক অমোঘ ডেষ্টিনেশন। স্যানাটোরিয়াম। বিশেষ করে উপন্যাসে মূল চরিত্র তারা-কেই ফোকাস করি। তালিসমান হয়ে ওঠে তারার সেই স্যানাটোরিয়াম। তারার মৃত মা-ও বরং উপন্যাসের প্রটাগনিস্টের স্যানাটোরিয়াম হয়ে উঠছে বলে মনে হতে পারে। আমার মতে কিছুটা সূক্ষ্ণ পার্থক্য আছে। তাই তারার মৃ/ত মা স্যানাটোরিয়াম না বরং তারার "সারডিন" হয়ে ওঠে।

মাহরীন ফেরদৌসের "জলজ লকার" শুরু থেকেই এক রহস্যে বেঁধে রাখবে পাঠককে। পরবর্তীতে কি হলো, বা কেন, এমন প্রশ্নোবোধক চিহ্ন সামনে রেখেই পাঠক তরতর করে এগিয়ে যাবেন। উপন্যাসের অধিকাংশ চরিত্রের মুখের কামরায় ঝুলে আছে সেই রহস্য। তবে "জলজ লকার" যেহেতু কোন থ্রিলার বা রহস্য-উপন্যাস না, লেখিকারও কোন দায় নেই সব সুতো উপন্যাসের শেষে জোড়া লাগানোর। একজন লেখকের মুন্সিয়ানা এখানেই, তিনি জানেন কোথায় কতটুকু টানতে হবে। ডাক্তার নভো বা শিমন চাচার অমিমাংসিত অংশটুকো তাই যতই খচখচ করুক, লেখিকার কলমের উইড্রয়াল বরং পাঠক হিসেবে আমার কাছে পরিতৃপ্তি। ব্যক্তিগত অভিমতে আমার অতৃপ্তি তালিসমানের অংশ-তেও লেখিকা সেই উইড্রয়াল টেকনিকটুকু বজায় রাখতে পারতেন। তারা নিয়ে আমরা আগ্রহী, তালিসমানের গল্পটা ডাক্তার নোভার আরব্য রজনীর কোন গল্পটা প্রিয় সেই উত্তরের মতোই অনুক্ত থেকে যাওয়া ভালো ছিল। তবে খুব বড় ইস্যু না. এবং বলেছি ব্যক্তিগত অভিমত। সার্বজনীন না। বরং এর বিপরীত হবারই সম্ভাবনা বেশি।

উপন্যাসের নাম প্রসঙ্গে কিছু কথা বলে নেই। "জলজ লকার" আসলে কি সেই প্রশ্ন জাগরূক, কিন্তু আপেক্ষিক। কয়েক ভাবেই সেটার রূপ হয়তো ধরা যাবে। এখানে প্রথমেই বলে রাখি, আমি আমার আলোচনা শুরুই করেছি উপন্যাসের একটা গুরুত্বপূর্ন চরিত্রচিহ্ন দিয়ে (আমার পাঠে) - এগজাইলড। এই সেলফ এগজাইলডমেন্ট এবং উপন্যাসের শেষে "তারা-তালিসমান" শব্দযুগল আমাকে মনে করিয়ে দেয় অঙ্কুরোদগমের প্রথম দুটো কুঁড়ির কথা। জ��রমিনেশন। চরিত্রগুলোর নিজস্ব অর্ন্তমূখিতা বা গুটিয়ে নেবার প্রবণতায় যেটা সমানে ভাসে তার নাম ভ্রূণ। আর অ্যামনিওটিক তরল। এই আমার জলজ লকার। লেখকের গল্পের শেষ যেখানে, পাঠকের গল্পের জারমিনেশন সেখান থেকেই শুরু।

উপন্যাসটি শেষ করে বা তারার সাথে অনেকটা সময় অতিবাহিত করে যেটা মাথায় ঘুরতেছিল, এগজাইলে নিজেকে যতটা আলাদা করে রাখার চেষ্টা থাকুক, আদতে শান্তি থাকে না বোধহয়। ঠিক এই ভাবনার সামনে এসে মনে হল, জলজ-লকার উপন্যাসে প্রোটাগনিস্ট যাদ তারা হয়, তাহলে এন্টাগনিষ্ট কে? হাসিবের বাব-মা? এঞ্জেল এম? নাকি নিয়তি? উপন্যাসটি শেষ করে এবং আমার সেই ভাবনাটার সামনে দাঁড়িয়ে আমি টের পাই, উপন্যাসের নায়ক যেমন তারা, তেমনি জলজ লকরের প্রতিনায়কও তারা নিজে। তারা নিজের সামনে নিজেই দাঁড়িয়ে গেছে প্রতিনায়ক হিসেবে।

আলাপ শেষ করি একটা নিছক কৌতুহুল থেকে, উপন্যাসের কাহিনিতে যেটার ইমপ্যাক্ট নেই কোন। Raven and the Box of Daylight এর "ছেলে" এর জায়গায় লেখক কেন শিশু ব্যবহার করলেন? জেন্ডার স্পেসিফিক না থেকে?

নানা যন্ত্রনা এবং অর্ন্তমূখী সংঘাতের ভোকাট্টা পেরিয়ে নতুন এক স্বপ্ন-ঘুড়ির ওড়ার আখ্যান মাহরীন ফেরদৌসের "জলজ লকার"। কাব্যধর্মী ন্যারেশন মাহরীন ফেরদৌাসের নাশ/কতার মূল অ/স্ত্র; এবং ঠিক এই জায়গায় আমি পাঠক হিসেবে তাকে রিলেট করতে পারি। আলাদা ভালোলাগায় আচ্ছন্ন হই। তবে আবারও বলি, মাহরীন ফেরদৌসের নিজস্ব এপিগ্রামের যে কড়া টোন - সেটা জলজ লকারে কিছুটা হালকা। আমার কড়া লিকারের প্রতি আলাদা মোহ কাজ করে। তা স্বত্তেও মাহরীন ফেরদৌসের "জলজ লকার" বিমোহিত করবে - যদি মননদৃষ্টিতে ধরা দেয় পাঠকের পাঠ।

Displaying 1 - 30 of 47 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.