উদ্দেশ্যটা মহৎ। বিলুপ্তপ্রায় এক সামুদ্রিক প্রাণীর বংশধরদের রক্ষার জন্য প্রশান্ত মহাসাগরের এক দুর্গম দ্বীপে চলেছে অয়ন-জিমি। কিন্তু ওরা জানে না, কত বড় বিপদ অপেক্ষা করছে সেখানে। সাগরের জলে যেমন ওঁৎ পেতে রয়েছে হিংস্র-রাক্ষুসে প্রাণীরা, ঠিক তেমনি ডাঙায় অপেক্ষা করছে নিষ্ঠুর ও কুটিল কিছু মানুষ। আরও বড় বিপদ হয়ে ধেয়ে আসছে প্রলয়ঙ্করী এক ঘূর্ণিঝড়। এতসব বিপদ-আপদ সামলে ওরা কি পারবে লক্ষ্যে পৌঁছুতে? পারবে নিজেদের জীবন বাঁচাতে?
অয়ন-জিমি গেল মহাসাগর, দ্বীপের নাম উভাউ, পলিনেশিয় সেই দ্বীপে বাঁধলো দারুণ হাউকাউ! দুই গোয়েন্দার এবারের মিশন বড় যে কঠিন, বিপন্ন কাছিমছানা বাঁচাও, করে এক 'রাত আর দিন!'
সাগরে আছে স্কুইড-হাঙর-সাপের হিসহিস, জাহাজ আর ডাঙায় মানুষ, মুখে মধু, অন্তরে বিষ। এর মাঝে আবার বজ্র গর্জে ওঠে, ঘূর্ণিঝড় আসে, জীবন-মৃত্যুর খেলা চলে জলে ভেসে ভেসে।
নোহা, কিয়াহি - দুই দ্বীপবাসী সাথি, তাদের সাহস আলো হয়ে দেখায় যে বাতি। এবারের বইয়ে রহস্য কম, রোমাঞ্চ অনেক বেশি, প্রকৃতি আর মানুষ - দুই পরম প্রতিবেশী!
অয়ন-জিমির দূরের দ্বীপ শিহরণ জাগায়, তিন গোয়েন্দার দক্ষিণের দ্বীপের কথা মনে পড়ে যায়!
অন্যান্য অয়ন-জিমি রহস্য থেকে অনেকটা ভিন্নধর্মী, পুরোদস্তুর প্রশান্ত মহাসাগরীয় পলিনেশিয়ান দ্বীপ-অ্যাডভেঞ্চার কাহিনি। প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত সুদূর দক্ষিণ সাগরের এক ছবির মতো প্রবালদ্বীপে বিলুপ্তপ্রায় লেদারব্যাক কাছিমের ডিম ফুটে ছানা বের হলে তাদের শিকারীপাখি-কাঁকড়া-পোচারদের থেকে রক্ষা করা, সাগরে হিংস্র স্কুইড-হাঙরের সঙ্গে লড়াই, সাথে পশুপাখি চোরাচালান ও দ্বীপের সর্দারকে হত্যা করে ক্ষমতা দখল করা দুষ্টলোকদের বিরুদ্ধে সংঘাত, আর ধেয়ে আসা প্রলয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝডের আশঙ্কা।
যদিও এবারে রহস্যসমাধানের সেই টানটান উত্তেজনা-নাটকীয়তা খানিকটা অনুপস্থিত, আর ঘটনাক্রম যে খুব অনানুমেয় তাও নয়, তবে আমার মতো যাদের কিশোরবয়সে তিন গোয়েন্দা'র ক্লাসিক অথৈ সাগর, দক্ষিণের দ্বীপ, তেপান্তর, ভীষণ অরণ্য ইত্যাদি নিখাঁদ অভিযান-কেন্দ্রিক কাহিনিগুলি খুব পছন্দের ছিল, তাদের এতোবছর পর একই ধাঁচের অ্যাডভেঞ্চারটা বেশ ভালই লাগার কথা। সবমিলিয়ে বরাবরের মতো অয়ন-জিমি'র সঙ্গে এযাত্রায় উভাউ দ্বীপে সময়টা মন্দ কাটলো না।
অয়ন-জিমি এবার বহু দূরের এক দ্বীপে। উদ্দেশ্য কাছিমছানা রক্ষা। কিন্তু শুরু থেকেই একের পর এক বিপদ। স্কুইডের মুখে পড়ল অয়ন। হাঙরের মুখে জিমি। উভাউ দ্বীপের নিরাপদ ভ্রমণটা আর নিরাপদ থাকল না। গল্পটা পিওর অ্যাডভেঞ্চার। রহস্য তেমন একটা নেই। তবে এই বইয়ের পরিবেশ সচেতনতা এবং ক্লাইমেট চেঞ্জের বিষয়টি খুব সুন্দরভাবে তুলে এনেছেন লেখক। যেটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ এই সময়ে দাঁড়িয়ে। পলিনেশিয়ান যুবক বলতেই আমাদের মতো পাঁড় তিন গোয়েন্দা প্রেমীদের মনে পড়ে যায় কুমালোর কথা। এখানে কিয়াহি, সেও অয়নের জীবন দাতা। নোহা এবং কিয়াহি এই দুটি চরিত্রকে খুব পছন্দ হয়েছে। দক্ষিণের দ্বীপের সাগরের হাসি আর ঝিনুক এর কথা মনে পড়ছিল নোহা আর নিটার চরিত্রায়নে, তবে মিল এতটাও না। আসলে অয়ন-জিমি পড়লে তিন গোয়েন্দার সোনালি সময়ের কথা খুব মনে পড়ে, যদিও লেখক অয়ন-জিমির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এবং সিরিজের স্বকীয়তা ধরে রাখতে পেরেছেন পুরোপুরি। ইসমাইল আরমান যদি গোস্ট রাইটার হিসেবে আবার তিন গোয়েন্দা লিখতেন সেবাতে, তাহলে হয়তো আমরা সোনালি যুগের কিশোর-মুসা-রবিন-জিনাকে ফিরে পেতাম।