একটা জেব্রা ক্রসিং মনে করিয়ে দেয় আমাদের জীবনটা আসলে ডোরাকাটা। সে কাটার ভাজে পুলি পিঠায় নারিকেলের মত মুড়িয়ে থাকা সুখ এবং ক্লান্তি পর্যায়ক্রমে জায়গাবদল করে মাত্র। অথচ আমরা চেয়েছিলাম কর্পূরের মত সফেদ একটা গাজেবো। পাখির পালকে গড়া নরম পর্দা সারাক্ষণ উড়ে বেড়াবে সেখানে, ক্লান্তি ওদের ছুঁতে পারবে না। আমরা হাতড়ে বেড়াবো সাদা রঙ এর সমস্ত স্তরে যেখানে থরে থরে সাজানো থাকবে শ্বেতশুভ্র বাগানের গোলাপ। ভ্রমরের গুঞ্জনে বিমোহিত হবে দূর থেকে উড়তে থাকা চিল এবং সাগরের সুর বয়ে আনা আলবাট্রস এর দল। অন্যদিকে বিলাপে তন্ময়রত পাহাড়ের গুহা, ঈর্ষায় পীড়িত সমস্ত শ্বাপদসংকুল। এ যেন এক কঠিন ষড়যন্ত্র । মানুষ হয়ে জন্মাবার সৌকর্য বয়ে বেড়াতে হবে মানুষেরই। অতঃপর নিখাঁদ স্বর্ণের মত উজ্জ্বল আলোর স্পর্শ পেয়ে আদিম কোন ঝর্ণার শব্দে ঘুম ভেঙে যাবে আমাদের। পার হবো একটা জেব্রা ক্রসিং, কেটে যাবে তুলোর মত একটা নরম জীবন। ব্যস...
সরলী শীলনের জন্ম ১৯৯৮ সালের ১২ মে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। ভালবাসেন ছবি তুলতে, গান গাইতে, চিঠি লিখতে। দস্তয়েভস্কির গভীর অন্ধকারে, মার্কেজের জাদুকরী বাস্তবতায়, মুরাকামির অদ্ভুত গল্পে এবং এতগার কেরেটের সংক্ষিপ্ত অথচ গভীর কল্পনা দিয়ে শুরু তার সাহিত্য যাত্রা। তারকোভস্কির আলো-ছায়া, কিয়োরোস্তামির নিঃশব্দ স্বস্তি তাকে শিখিয়েছে জীবনের সূক্ষ্মতম সৌন্দর্য কিভাবে প্রতিফলিত হয় সাহিত্যে।
তন্দ্রাঘোর থেকে ফেরার পথটা মায়াময়। ঘোর লাগা সন্ধ্যার মত বিষন্ন আর পুরোনো স্মৃতির মত বিশ্বাসঘাতক। একটা চক্র অনবরত ঘুরপাক খায়, অনন্তকালের জন্য। সুখ-দুখ-ক্লান্তির এই পর্যায়ক্রমিক আবর্তন ডোরাকাটা। সাদা-কালো কিংবা আলো ছায়া। আলো এসে জানাল দেয় আঁধার আসছে কিন্তু খানিকটা পরে। এবার আধাঁর ও আসে তবে ভয় হয় আলোকে লালন করতে। এই বুঝি দুঃখ জাগানিয়া স্রোত এসে সবটুকু না গ্রাস করে নেয়! একটা জেব্রাক্রসিং সে কথা বারেবারে মনে করিয়ে দেয়।
গল্পের কথায় আসি? 'রেইনট্রি' হতে পারতো আরেকটু যত্নশীল, লেখনীর ধরনের ব্যাপারে। 'কয়েকটা মাছ এবং সব এলোমেলো'ও তাই। তবে কনসেপ্ট এবং মেটাফোর হিসেবে যা বোঝানো হয়েছে তা ঠিকঠাক ধরতে পারলে অসাধারণ! 'একটি গাঁধা ও শোকগাথা' একটু মেলোড্রামাটিক তবে সংলাপগুলো গভীর অর্থবহ। হতে পারতো 'আমার বাবার সাতাশ নম্বর কবুতর' আরো অসাধারণ কিছু যদি আরো বিষদ ভাবে লেখা যেত! তবে এ গল্পটার গাঁথুনি বেশ শক্ত। 'ড্রিম রেডিয়েটিং থ্রু আয়িস' একটু ভাবনায় ফেলে দেয়। 'টেলিফোন রিং ক্রিং ক্রিং ক্রিং অথবা কিছুটা নরওয়েজিয়ান উড ২.০' তে মুরাকামি মুরাকামি একটা ঘ্রাণ। 'জাস্ট আ লিটল থিং' এবং 'দ্য সার্কেল' প্রায় একই ধাঁচের গল্প। সংক্ষিপ্ত তবে গভীর। 'পাখি ও তার গান' নিঃসঙ্গতার সবচেয়ে দারুণ রুপক। 'মধ্যরাত কিংবা ক্যাকোফনি' এই গল্পটার নিঁখুত বর্ণনা পড়ার সময় চোখে ভাসছিল। 'লাইটহাউজ' এবং 'টিভিমানব' গল্পে দু'টোর আবডালের ভাবনা ঠিকঠাক বিশ্লেষণ করতে পারলে বেশ ভালো। মেটাফোরিক সিম্বল - চমৎকার। সবশেষে 'ডোরাকাটা জেব্রাক্রসিং' এ প্রকাশ পায় কেন বইয়ের নাম 'ডোরাকাটা জেব্রাক্রসিং'
গল্পগুলোর মত ছিমছাম এবং জাঁকজমকপূর্ণ নয় বইয়ের প্রচ্ছদ। খুবই ভালো লেগেছে। তবে প্রোডাকশন কোয়ালিটি আরো ভালো হতে পারতো! দু'য়েক জায়গায় বানান ভুল আশা করি শুধরানো হবে পরবর্তী সংস্করণে। লেখিকা বেশ অলস, গল্প পড়লেই বোঝা যায়। কোনরকম শেষ করতে পারলেই বেঁচে যায়। লেখালেখিতে আরেকটু যত্নশীল হতে পারলে দারুণ কিছু সম্ভব। লেখালেখির যাত্রা শুভ হোক।
সরলী শিলনের গদ্য সাবলীল কিন্তু পড়ার পর মনে হয়েছে আরেকটু প্রস্তুতির দরকার ছিলো। গল্পের মধ্যে যেসব সম্ভাবনা উঁকি দেয়,অনেক সময়ই তা স্থির ও ঘনীভূত না হয়ে আবছাভাবে মিলিয়ে যায়। তবু গদ্যের নিজস্বতা ও নিরীক্ষা ভালো লাগে। লেখিকার পরবর্তী বইয়ের জন্য অপেক্ষায় রইলাম।
"এ জগত অন্ধকার,বিষাক্ত সালফার এ ছেয়ে যাওয়া স্যাঁতসেঁতে এক ল্যাব্রিন্থ"।
আমি বরাবর-ই ছোটগল্প পড়তে ভালোবাসি।আর যদি কারো নতুন প্রকাশিত বই হয় সেক্ষেত্রে আমার কাছে ছোটগল্প যাচাই পড়ে যাচাই করে নেয়া টাই আরাম লাগে।মোট তেরোটা ছোটগল্প গ্রন্থিত হয়েছে "ডোরাকাটা জেব্রাক্রসিং" নামক বইটিতে।
ছোটগল্পে শব্দসীমার কারণে লেখাটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায় বলে আমার ধারণা কিন্তু এই সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকে দারুণ কিছু যারা পাঠকের হাতে তুলে দিতে পারে তারা প্রশংসার দাবি রাখে নিঃসন্দেহে।একটি গল্পগ্রন্থে সব গল্পই যে একজন পাঠকের মন মতো হবে এই চিত্র নজিরবিহীন।তবে অধিকাংশ গল্পগুলো যখন ভালো লেগে যায় তাকে দারুণ হিসেবে বলতে কোনো দ্বিধা নেই।তেরো টি গল্পের আমার পছন্দের বেশ কিছু গল্প হচ্ছে,"রেইনট্রি","কয়েকটা মাছ এবং সব এলোমেলো","আমার বাবার সাতাশ নম্বর কবুতর","জাস্ট আ লিটল থিং","দ্য সার্কেল","লাইটহাউজ" এবং টিভি মানব"।
সব এক ধাঁচের গল্প হলে মজাটা আমার ক্ষেত্রে অনেকটা কমে যায়।এখানে প্রতিটা গল্প একটা ভিন্ন অনুভূতি উপস্থাপন করে।এই ধরে দুঃখের নদীতে ফেলে দিচ্ছে তো হঠাৎ আবার চিন্তায় মগ্ন করে দিচ্ছে।কঠিন সত্য বলে অ্যাটাক দিয়ে দিচ্ছে তো আবার মাথায় প্রশ্নের বাণ ছুড়ে মারছে।লেখনীর জন্য এখানে লেখিকা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার।
তবে একটা ব্যাপার না বললেই না।বইয়ের কন্টেন্ট যেমন সুন্দর।কোয়ালিটি তেমন সুন্দর নাহ।প্রত্যাশা থাকবে অবশ্যই বেটার কোয়ালিটি পাঠক দের প্রভাইড করা।এই প্রোডাকশন এর কারণেও অনেকের ইমপ্রেশন নষ্ট হয়।
৭২ পৃষ্ঠার ছোট্ট একটা বই।এক বসায় পড়ার মতো।এই ছোট্ট যাত্রায় এতগুলো গল্প আর অনুভূতির জন্য ডোরাকাটা জেব্রাক্রসিং এবং লেখিকা কে শুভকামনা।
ডোরাকাটা জেব্রাক্রসিং by Shoroli Shilon represents various perspectives and stages of human life through it's thirteen short stories.
The first one, রেইনট্রি, is intriguing—it weaves hints of Lovecraftian horror with the eerie concepts of ‘Glitch in the matrix’ and ‘Dimension jumping’, blending cosmic dread with the fragility of human perception.
কয়েকটা মাছ এবং সব এলোমেলো portrays a man's midlife crisis, grappling with his career and future. The protagonist felt relatable to me, as I too sometimes experience bizarre, meaningless dreams like he does. It also reflects the desi brown people tendency to pull others down when they reach a high position, rather than striving to achieve that success through their own efforts. Overall, a good one.
একটি গাঁধা ও শোকগাথা has glimpse of ‘Baader-Meinhof’ phenomenon aka frequency illusion. It highlights how we are trapped in a robotic routine in today’s society: waking up, going to work, returning home, and sleeping—just a never-ending loop. We're working like donkeys, and this capitalistic mindset has stripped away the joy of our life. Seeking the true essence and meaning of existence is now considered as a trivial pursuit. However, there are still a few who want to break the cycle but have no clue how to do so. Trapped in uncertainty, they simply wait for death to set them free. I absolutely loved this story—definitely one of my favorites. Besides, the story মধ্যরাত কিংবা ক্যাকোফনি carries a similar vibe. The author could have blended these elements together to make it more cohesive.
আমার বাবার সাতাশ নম্বর কবুতর has a quiet melancholy throughout the whole narrative. The writer skillfully uses metaphor in this story, offering a poignant yet subtle portrayal of mothers in our country. They sacrifice their own desires to ensure the happiness of everyone around them, loving selflessly—even caring for a coucal bird, despite its association with misfortune. Eventually, they too fly away, just like a pigeon. In their absence, all we can do is mourn, like a lonely stray cat left behind. It is one of the best stories of this book.
ড্রিম রেডিয়েটিং থ্রু আয়িস is one of the most concise stories. It’s an okayish one. The author could have extended it a bit further. The main character experiences a precognitive dream before an epidemic strikes. The nightmare's description, rich with metaphors, is eerie and unsettling, raising a question in the reader’s mind: has the protagonist already been affected or not?
টেলিফোন রিং ক্রিং ক্রিং ক্রিং অথবা কিছুটা নরওয়েজিয়ান উড ২.০ illustrates how deeply we long for our loved ones, that even after letting them go, we still wish for a call from them, out of the blue. I know expecting an unexpected call sounds contradicting, right? But it is what it is. Charlie Puth captures this essence in one of his songs: "There must be a good reason that you're gone. Every now and then, I think you might want me to show up at your door, but I'm just too afraid I'll be wrong." Anyway, the writing is captivating. I especially loved the part where the writer so beautifully describes the early winter weather.
জাস্ট আ লিটল থিং and দ্য সার্কেল reflect the friendships in our lives, showing the profound impact they have while they last, as well as how fragile they can sometimes become. Both also explore the struggle of surviving after a heartbreak. Overall, they feel deeply relatable to our life experiences. However, the writing needs some enhancement here.
পাখি ও তার গান is filled with profound metaphors. While I'm not entirely sure, it feels as though the writer is depicting human life cycle through the story. At the end of the day, no matter how many people surround us, we are ultimately alone. People may care for a moment after you're gone, but life quickly moves on, and another life is born to take your place.
লাইটহাউজ explores decision-making, regret, and, above all, the existential crisis of human life. Like a lighthouse we seek but can never reach, we are led astray by illusions and wrong choices, guiding us toward the wrong beacon. In the end, all we can do is long for death, hoping for a chance to start the search anew. The plot is engaging—another compelling tale by the author.
Once again, টিভিমানব delves into the consequences of making wrong decisions and the repetitive cycle of life. When we love someone profoundly, they leave a part of themselves within us—something we carry, consciously or unconsciously, for the rest of our lives. Sometimes, that part becomes so significant that we start to mirror that person, and the cycle of events continues, repeating itself in an endless loop.
ডোরাকাটা জেব্রাক্রসিং, the shortest story of the book, tells us about hope. After walking through twelve gloomy black stripes, we finally step onto the white one. The metaphors in this narrative encourage us to dream and depict the heavenly life we all desire. Yet, we must endure the pain to reach the pleasure as they are inseparable. One follows the other, much like the two sides of a coin or the contrasting black and white stripes of a zebra crossing. It is truly a remarkable one.
As a whole, if you're into magical realism or new to the genre, you should definitely give it a try. It’s a short and easy read, unlike other complex books that can be hard to follow. Despite being the author's first book, her writing style is quite impressive, particularly how assiduously she uses metaphors in simple sentences throughout the stories. The only downside is that the stories are quite short—I hope she explores longer formats in the future. The cover is minimal but cool, adding to the book's appeal. Best wishes to the author for her upcoming books!
দর্পণে নিজের চেহারা দেখার সুযোগটা মূলত মানুষকে তার নিজের অবস্থাটা বুঝে ওঠার একটা সুযোগ দেয়। এক্ষেত্রে আপনি কেবল বাহ্যিকভাবে সেখানে নিজের অবস্থাটা বুঝে সেটা ঠিক করতে পারেন। কিন্তু যদি আপনার মানসিক অবস্থা, দৈনন্দিন জীবনযাপন এ সব কিছুকে বুঝে ওঠার জন্য কোন দর্পণ থাকতো, সেটা কেমন হতো? লেখিকার "একটি গাধা ও শোকগাঁথা" ছোটগল্পটা পড়লে আপনি বুঝতে পারবেন, আপনার সেই স্পর্শের বাইরের অবয়বের দর্পণ হতে পারে, আপনারই মতো জীবনযাপন করতে থাকা আরেকটা মানুষ। ঘোলাটে লাগছে ব্যাপারটা? গল্পটা পড়লেই আপনি মূলতত্ত্বটা অনুধাবন করতে পারবেন। যদিও লেখিকা সিসিফাসের মিথ থেকেই সম্ভবত অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন গল্পটা লিখতে, তারপরেও আমার মনে বিস্তর জটিল চিন্তাভাবনা এসেছে। এটা আমার এই বইয়ের সবচেয়ে পছন্দের এবং আকর্ষণীয় গল্প মনে হয়েছে।আমি গল্পটিকে উপন্যাস হিসেবে কল্পনা করেও বেশ মজা পাচ্ছিলাম। যথেষ্ট সুন্দর ভাবে গল্পটা উপন্যাসে পরিণত হতে পারতো ;যেটা আমি "মধ্যরাত কিংবা ক্যাকোফনি" পড়ে মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছি। আরেকটা গল্প যেটাকে আমি নিজে প্রাচীন মিথলজির সাথে খুব বেশি রিলেট করেছি সেটা হচ্ছে "লাইটহাউজ"। এক কথায় মারাত্মক একটা ছোটগল্প। আমি পড়তে পড়তে কেবল মিথলজির চরিত্র " টিথোনাসের" কথা ভাবছিলাম। ওই একটা চরিত্রের মৃত্যু আমি মনে প্রাণে চেয়েছি বরাবর। যেটা এই "লাইটহাউজ" এও আমি চাচ্ছিলাম। গল্পটা ভয়াবহ;মূলত সেসব মানুষের জন্য এটা ভয়াবহ যারা প্রতিনিয়ত নিজের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
মোট ১৩ টি ছোটগল্পের মধ্যে আপনি ভিন্নতার স্বাদ খুব একটা না পেলেও, কিছুটা সার্বজনীন ভঙ্গিতে সবগুলো গল্প এবং চরিত্রকে সাজানো হয়েছে বিধায় অনেক বেশি একাত্মতা বোধ করতে পারবেন। মনে হবে গল্পের চরিত্রগুলো আপনি নিজেই অথবা আপনার আশেপাশেরই কোন একজন। যেমন ধরুন, "যাস্ট আ লিটল থিং", " দ্য সার্কেল","আমার বাবার সাতাশ নম্বর কবুতর","টেলিফোন রিং ক্রিং ক্রিং ক্রিং অতবা কিছুটা নরওয়েজিয়ান উড ২.০" -এই গল্পগুলো পড়লে আপনি বুঝবেন মূল চরিত্রগুলোর মধ্যে একজন হয়তো আপনি অথবা আপনার পাশের বন্ধুটি। এক্ষেত্রে যেটা চোখে পড়েছে সেটা হচ্ছে, গল্পকথকেরা প্রায় সবাই মূলত মধ্যবয়স্ক মানুষ। কোন টিন এজার কিংবা বৃদ্ধ বয়সী চরিত্রের দর্শন লেখিকা এই সংকলনে ছুঁয়ে দেখেন নি।
এরপর লেখিকার তীব্র আকর্ষণের জায়গা যে 'স্বপ্ন' সেটা বার বার প্রমাণ পেয়েছি। প্রথম দুটো গল্প "রেইনট্রি", " কয়েকটা মাছ এবং এলোমেলো " পড়ে আমার একবার মনে হচ্ছিলো উনি বোধহয় সব গল্পেই কোথাও না কোথাও স্বপ্নকে রেখেছেন। আমি নিজেকে ভুল প্রমাণ হতে দেখে অনেক খুশি হয়েছি এক্ষেত্রে৷ তবে একেবারে যে সেই জায়গাটা ছেড়ে তিনি কাজ করেন নি, সেটাও ঠিক।অনেক বার স্বপ্নলোকের জিনিসপত্র নিয়ে কথাবার্তা এসেছে।যেটা বার বার আমার চোখে পড়ছিলো।
একটু ভিন্ন ধাঁচে যে গল্পটা এসেছে সেটা মূলত স্মৃতিকাতরতা নিয়ে। স্মৃতি মানুষের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ;সেই স্মৃতিকে কেন্দ্র করে লেখিকার আরামদায়ক শব্দের বুননে লেখা গল্প হচ্ছে,"আমার বাবার সাতাশ নম্বর কবুতর"। এই গল্পটা পড়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলতে আপনি বাধ্য হবেন।মনে একটা চিনচিনে ব্যাথা অনুভব করবেন। মন্দ লাগবে না।
যে দুটো গল্প নিয়ে আমার মনে হয়েছে তাড়াহুড়ো করা হয়েছে, সেগুলো হলো "রেইনট্রি", " কয়েকটা মাছ এবং সব এলোমেলো"। একটায় দৃশ্যকল্পের অতীব বর্ণনা(হয়তো আবহ তৈরিতে তা জরুরি) গল্পের একশন গুলোকে জায়গা দেয়নি তেমন। খাপছাড়া ছিলো ব্যাপারটা। আরেকটায় অতিরিক্ত একশন এক জায়গায় এসে গিয়ে, মনে হয়েছে শুরু হতে না হতেই গল্পটা শেষ।আর একটা গল্প যেটার মর্মার্থ উদ্ধার করা পাঠকের জন্য বেশ জটিল হবে, সেটা হচ্ছে "ড্রিম রেডিয়েটিং থ্রু আয়িস"। আমি এটা নিয়ে বহু ভেবেও কুলকিনারা পাই নি।
সব মিলিয়ে, লেখিকার প্রথম বই থেকে আপনাদের এক্সপেকটেশন যদি কম থেকে থাকে, তাহলে বলবো বইটা আপনার জন্যই। বর্তমান সময়ের লেখা পড়তে গেলে যেই জিনিসটা বার বার কাঁটার মতো আমার গলায় বিঁধে তা হচ্ছে বাংলা এবং ইংরেজি শব্দের মিশেল। কিন্তু পুরোটা বইতে ওনার এই শব্দচয়নে একটা ভারসাম্য অবশ্যই প্রশংসনীয়। অতিপ্রাকৃত বিষয় কিংবা এমন কিছু বিষয় যেগুলোর বাংলা শব্দ খুঁজে পাওয়াই মুশকিল সেগুলো ব্যতীত পুরোটা সময় তিনি শব্দের বুনন রেখেছেন চমৎকার। কিছুটা বানান ভুল চোখে পড়লেও সেটা প্রডাকশন জনিত সমস্যা। পরবর্তী সংস্করণে আশা করি সেটা কাটিয়ে ওঠা হবে। ছোটগল্পের সেই চিরায়ত সংজ্ঞা, " শেষ হইয়াও হইলো না শেষ"-এই জায়গাটা কয়েকটা গল্প ছুঁতে পারেনি। তার মধ্যে "যাস্ট আ লিটল" থিং এর কথা না বললেই নয়। মনে হয়েছে গল্পটা শেষ! এছাড়া নাম ভূমিকায় থাকা গল্পটা "ডোরাকাটা জেব্রাক্রসিং"এবং " টিভিমানব","পাখি ও তার গান" আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে কেবল দুঃখগাঁথা মনে হয়েছে। যদিও সেই দুঃখগাঁথাও শব্দচয়নের গুণে অন্যান্য অনেক গল্পের তুলনায় নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। লেখিকাকে সাধুবাদ এবং শুভকামনা। পরবর্তী কাজগুলো আরো বেশি আশা নিয়ে পড়বো,এবং আমার বিশ্বাস উনি আরো ভালো ভালো লেখা আমাদের সামনে উপহার দেবেন।
সরলী শীলনের ডোরাকাটা জেব্রাক্রসিং বইটির প্রতি আগ্রহী হই সূচিপত্রে এর ১৩টি গল্পের শিরোনাম দেখে! কেমন বিষন্নতা মেশানো এক একখানা শিরোনাম। গল্পগুলো পড়তে পড়তেও কিছুটা বিষাদ, কিছুটা ভাবনায় হারিয়ে যাচ্ছিলাম। অমন অনুভুতি আমার হয় হারুকি মুরাকামি, হুমায়ূন আহমেদ, সুচিত্রা ভট্টাচার্য কিংবা হালের লেখিকা তানজিনা হোসেনের লেখা পড়ে।
লেখিকার লেখার শব্দ বুনন সুন্দর এবং সাবলীল। তবে লেখায় আরেকটু যত্নশীল হতে পারতো। লেখায় কিছুটা বানান ভুল কিঞ্চিৎ বিরক্তিরও উদ্রেক করছিল। তবে সব মিলিয়ে সুন্দর একখানা বই। বইয়ের জাস্ট আ লিটল থিং, দ্য সার্কেল, লাইটহাউজ, টিভি মানব গল্পগুলো বেশি ভালো লেগেছে।
ঘুম ভাঙ্গা চোখ কচলাতে কচলাতে জানালার গ্রিলের ফাঁক গলে খানিকটা সোনালী আর বাকি পুরোটাই কমলা আভায় রাঙানো আকাশের দিকে তাকাই। পূব আকাশের আড়াল থেকে রৌদ্রের কিরণ উঁকি দিয়ে ঊষার দুয়ার উন্মোচন করে। একটি নতুন দিনের সূচনা হয়। ঘড়ির প্রতিটা কাঁটার সাথে তাল মিলিয়ে শুরু হয় নিত্য নৈমিত্তিক ছুটোছুটি, কোলাহল। গোধূলি লগ্নে ম্লান হয়ে পশ্চিম আকাশে হারিয়ে যেতে থাকে দিনের উজ্জ্বলতা। ধীরে ধীরে সেই উজ্জ্বলতা দিগন্তে বিলীন হয়ে ধূসর থেকে গাঢ় হয় আঁধার। দিবারাত্রির এই কাব্য চক্রাকারে আবর্তিত হয় নিত্যদিন। যেখানে সুখ এবং ক্লান্তি পর্যায়ক্রমে জায়গা বদল করে মাত্র। যেন একটা ডোরাকাটা জেব্রাক্রসিং! “অতঃপর নিখাঁদ স্বর্ণের মতো উজ্জ্বল আলোর স্পর্শ পেয়ে আদিম কোনো ঝরনার শব্দে ঘুম ভেঙে যাবে আমাদের। পার হব একটা জেব্রাক্রসিং, কেটে যাবে তুলোর মতো একটা নরম জীবন। ব্যস...”
সংক্ষিপ্ত আর একটু দীর্ঘ পরিসরের তেরোটি লেখা আবদ্ধ হয়েছে বাহাত্তর পৃষ্ঠার ছোট্ট বইটিতে। একটু মনোযোগ দিলেই দেখা যাবে, বাস্তবতা আর ভাবনার সুসঙ্গত উৎস থেকে শব্দের সঙ্গে ম্যাজিক রিয়ালিজম কিংবা মেটাফোরের উপরিপাতন করে গল্পগুলো লিখিত হয়েছে। বর্ণনাশৈলী এখানে বাড়তি নজর কাড়ে। দু এক লাইনের সাজানো নীরব শব্দেরা ভাবনায় আলোড়ন তোলে। কিছু সামান্য বিস্তৃত আর কিছু অণু পরমাণু লেভেলের লেখায় গুরুগম্ভীর আর নিগূঢ় কিছু টার্ম হাজির করা হয়েছে নবরূপে। সংক্ষিপ্ত অথচ গভীর উপস্থাপন! স্রেফ গল্প বললে লেখাগুলোর ক্রিয়েটিভিটি প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এ যেন বাস্তবতার নিখাত অল্টারনেটিভ! একটু গভীরে ঢুব দিলে নিজের মতো করে ভাবনার স্কোপ থেকে যায়।
প্রোডাকশনে অবহেলা চোখে পড়ার মতো। অনেক জায়গায় বানান ভুল আর শেষের দুটো গল্পের শিরোনামই উলোটপালোট করে ছাপা হয়েছে। এদিকটায় যত্নশীল হওয়ার আহ্বান থাকবে প্রকাশনীর প্রতি।
লেখিকা আপার লেখার পথচলা আরও দীর্ঘ ও সাফল্যমণ্ডিত হোক এবং বহু পাঠক শব্দের জাদুতে মোহিত হোক এই শুভকামনা করছি। পরবর্তী বইয়ের অপেক্ষায় রইলাম...
একটি ছোটগল্পের বই যা পাঠকের মন ছুয়ে ফেলতে সক্ষম। ভিন্ন ভিন্ন ভাবে প্রতিটি গল্প উপস্থাপিত হয়েছে বইটিতে। এককাপ চা খেতে খেতে বইটা শেষ করে ফেলা সম্ভব।
সাধারনত ছোটগল্পের বইগুলো পড়তে বেশ আরাম লাগে, মজা করে পড়া যায়। এই বইটিও সেম, বেশ আরাম নিয়ে পড়ে ফেলা যায়। মোটমাট ১৩ টি গল্প আছে বইটিতে। যে গল্পগুলোর মধ্যে কোনো কোনো গল্প আবার নিজের সাথে মিলে যাওয়ার মতো। মানে ঐযে হয়না মনে হয় নিজেই সেই গল্পের চরিত্র, ওমন টাইপের। ডোরাকাটা জেব্রাক্রসিং পাঠককে নানাবিধ চিন্তায় মগ্ন করাতে বাধ্য। একটু থ্রিল, একটু দুঃখ, একটু উত্তেজনা, একটু ভাবনা নিয়ে বইটা জর্জরিত।
যাইহোক বইটা উন্নত হলেও বইটার প্রোডাকশন সুন্দর নয়। বইটা পড়তে গিয়ে সেই ছোটবেলায় পড়া নিউজপ্রিন্ট টাইপের বইগুলার মতোন লাগলো।
সরলী শীলন আপুর জন্য রইলো অনেক অনেক ভালোবাসা ও শুভকামনা।
Don't judge a book by its cover (but in a reverse)
আমি এত উচু মানের পাঠক হয়তো হয়ে উঠতে পারিনাই যে এই গল্পগুলা বুঝবো। শিরোনামগুলা সুন্দর, কিন্তু সবগুলা পড়ে ওঠার সামর্থ্য হয়ে উঠেনাই আমার। বছরের প্রথম DNF.
রেইনট্রি, আমার বাবার সাতাশ নম্বর কবুতর এই দুইটাই শুধু ভালো লেগেছে। বাকিগুলা অখাদ্য মনে হয়েছে নয়তো বুঝিইনাই।
সব জায়গায় মুরাকামির ছাপ, আর লেখিকার অসময়ের ঘুমের প্রতি অতিরিক্ত ভালবাসা বিরক্তির কারণ হয়ে দাড়িয়েছে।
প্রত্যেক গল্পের এত সুন্দর নামকরন কিন্ত গল্পের বইয়ে গল্প কম, ভাবনা বেশি। প্রথম গল্প 'রেইনট্রি' টা পছন্দ হয়েছে কিন্ত অন্যসব গল্পের হদিস মেলা ভার। তাছাড়া বুঝা যায় লেখিকা মুরাকামির বেশ ভক্ত, গল্পে এত বেশি মেটাফর ব্যবহার করা হয়েছে যে সেটা অতিরঞ্জিত মনে হলো। আর সব মেটাফর সবার মাথায় খেলানোও কষ্ট। তবে থটস বেশ পরিষ্কার ব্যস সঠিক এক্সিকিউশন এর দেরি।
শীতের সকালে ঘুম থেকে উঠার পর চোখ ডলতে ডলতে উঠানের শেষ প্রান্তে রান্নাঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়ালে দেখা যেত দাদু মাটির চুলায় তরকারি রান্না করছে। টিনের চালের তৈরি সেই রান্নাঘরের একদিকে স্তুপ করা থাকতো হাড়ি-পাতিল, কাঠ, কয়লা, শুকনো ডাল-পাতাসহ আরো কত কি! দাদুর পাশে পিড়িতে বসে পড়তেই দাদু বলতো-"হাত দুটো আগুনের পাশে ধরো। আগুনের আচঁ লাগবে, আরাম পাবা।" আমিও দেখতাম আমার সেই বরফ শীতল হাত মুহুর্তের মধ্যেই উষ্ণ হয়ে উঠতো! সময় কত তাড়াতাড়ি পাল্টায়, কত জলদি শেষ হয়। আজও যখন দাদু বাসায় যাই আমি সেই ছোট্ট আমি কে কল্পনা করি। অনেক ইচ্ছা করে কোন কারণ ছাড়াই দাদুকে একটাবার জড়িয়ে ধরে তার উষ্ণতাটুকু অনুভব করতে। পারিনা, পারিনা বলেই এক নিদারুণ শূন্যতা নিয়ে দাদু বাসা থেকে চলে আসি।
আমার ছোটকালটা ছিল বেশ মজার। দুপুরে ভাত ঘুমের পর দাদুর পাশে শুয়ে কিংবা পড়ন্ত বিকালে চা খেতে খেতে দাদু আমাকে রূপকথার কাহিনী শুনাতো। রাজকুমার, ডালিমকুমার, টুনটুনির গল্প, ব্যঙ্গমা-ব্যাঙ্গমি, রাক্ষসসহ আরো যে কত বৈচিত্র্যময় গল্প ছিল তা বলে শেষ করা যাবেনা। এসব গল্প কিন্তু কখনোই পুরনো হয় না। মনে হয় ছোটবেলার মতো যদি এই গল্পগুলো কেউ আদুরে গলায় আবারও শুনাতো!
"ডোরাকাটা জেব্রাক্রসিং" ১৩ টি ছোটগল্পের একটি গল্পসংকলন। প্রত্যেকটি গল্পই আমি খুব আগ্রহ নিয়ে পড়লাম। এর মধ্যে সবগুলো গল্প যে আমার ভালো লেগেছে তেমনটা না। তবে কিছু গল্প যেন ভেতরটাকে নাড়িয়ে দিয়ে গেল। উল্লেখ্য যে 'আমার বাবার ২৭ নম্বর কবুতর' এই গল্পটার কথা আমার অনেক দিন মনে থাকবে। এত সুন্দর এই গল্পটা যে পড়ার পর আমি অনেকক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে ছিলাম।এই গল্পের অনেক কিছুর সাথে আমি রিলেট করতে পেরেছি।
পুরো বই জুড়ে এক ধরনের বিষন্নতা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে যেন। কখনো প্রেম, কখনো মায়া, কখনো বা কাউকে হারানোর কষ্ট প্রতিটি বিষয়ই লেখিকার বর্ণনায় এতটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে মনে হচ্ছিল এই কথাগুলো আমার নিজের। যেগুলো হয়তো বলতে চেয়েও বলতে পারিনি কিংবা বলা হয়ে ওঠেনি। কিছু লাইন পড়ার পরে মনে হচ্ছিল এরচেয়ে সুন্দর ভাবে হয়তো এই কথাগুলো বলা যেত না। পছন্দের গল্পের মধ্যে "একটি গাধা ও শোক গাথা", "আমার বাবার ২৭ নম্বর কবুতর", "যাস্ট আ লিটল থিং", "দ্য সার্কেল", "ডোরাকাটা জেব্রাক্রসিং" এই গল্পগুলো আপনার ভাবনার খোরাক জাগাতে বাধ্য। ছোট্ট ছোট্ট গল্প সাথে বেশ মজার নাম "টেলিফোন রিং ক্রিং ক্রিং ক্রিং অথবা কিছুটা নরওয়েজিয়ান উড ২.০" এবং একসাথে অনেকরকম অনুভূতির সাথে পরিচিত হতে পারবেন এই বইয়ের গল্পগুলোর মাধ্যমে।
ছোট্ট এই গল্পসংকলনটি পড়তে যেয়ে আপনি যেমন আনন্দ পাবেন তেমনি বিষাদে আপনার মন ভারী হয়ে উঠবে। বাস্তবতা আপনাকে তীব্রভাবে আঘাত করবে। লেখিকার প্রথম বই হিসেবে নিঃসন্দেহে এই বইটি চমৎকার তবুও কিছু কথা না বললেই নয় - কয়েকটা গল্প আরো ভালো হতে পারতো, একই বাক্যে একই শব্দ দুইবার করে এসেছে কয়েক জায়গায় লক্ষ করলা���। প্রুফ রিডিং এর সময় এ বিষয়টা সংশোধন করা উচিত ছিল। এছাড়া আফসার ব্রাদার্সের পেইজ কোয়ালিটি দেখে এবার সত্যিই হতাশ হয়েছি।
আর হ্যাঁ, শুরুতেই আমার দাদুকে নিয়ে গল্পটা কেন বললাম তা বইটা পড়লেই বুঝতে পারবেন। না বুঝলে অন্তত বইয়ের উৎসর্গে চোখ রাখলেই দেখতে পাবেন -" এবং যে দাদী শোলক বলতেন থেকে থেকে–"
সরলী শীলনের প্রথম গল্পগ্রন্থ "ডোরাকাটা জেব্রাক্রসিং"। মোট ১৩টি ছোটগল্প বন্দি হয়েছে দুই মলাটে।
আলাদা করে যে ব্যাপারটা না বললেই নয় তা হল শব্দের অসাধারণ মায়াময় বুনন। আমি বরাবরই শব্দের মায়ায় পড়ে যেতে ভালোবাসি। ছোট্ট বইটা জীবনবোধের গুরুগম্ভীর রেখা স্পর্শ করতে করতে শব্দের জাদুতে ফেলে দিচ্ছিল। যত্ন সহকারে আত্মার বেড়ে ওঠার কথা বলতে বলতে একটা আধ খাওয়া বিকেল আর কৌতূহলের ওপর মুগ্ধতা নামক পরগাছার জন্মের শুরু। কিংবা পেটের ভেতর দলা পাকানো প্রজাপতির দল বলে যাবে স্মৃতির চেয়ে ধারালো, হিংস্র কিছু নেই।
কিছু গল্পের মেটাফোরিক সুন্দর বর্ণনা এবং গভীর অর্থবহ উপস্থাপনা আমাকে মুগ্ধ করেছে। বিশেষ করে "আমার বাবার সাতাশ নম্বর কবুতর" আর "টিভি মানব" গল্প দুটির জীবনের গল্প হয়ে ওঠার মেটাফোরিক রূপ এ দুটি গল্পকে পছন্দের তালিকায় এনেছে। নিজেদের জীবন, ভাবনা আর পারিপার্শ্বিকতার সাথে চাইলেই মিলিয়ে নেয়া যাবে সেই সাতাশ নম্বর কবুতর আর ট্রেনে হঠাৎ দেখা টিভি মানবকে। অস্তিত্বের সংশয় আর স্বপ্নের জালে জড়িয়ে "রেইনট্রি" আর "কয়েকটি মাছ এবং সব এলোমেলো" আদতেই চিন্তার জগতকে কিছুটা এলোমেলো করে দেবে। ধাক্কা দেবে আপনার চেনা জগতকে। "টেলিফোন রিং, ক্রিং ক্রিং ক্রিং অথবা কিছুটা নরওয়েজিয়ান উড ২.০" আর "জাস্ট আ লিটল থিং" বাস্তব জীবনে আকুল আকাঙ্ক্ষা আর বিষাদের ছায়া নিয়ে আসার কথা বলেছে। এই গল্পগুলো প্রিয় কারণ এদের নিয়ে ভাবনারা ভীড় জমিয়েছে মাথায়, মন হয়েছে আর্দ্র আর শূণ্য। অনারেবল মেনশনে বলব "ড্রিম রেডিয়েটিং থ্রু আইস" এর কথা। শেষটা নিয়ে চিন্তায় ফেলে দেয়ায় এবং নিজের মত বুঝে নেয়ার জায়গা দেয়ায়। আমাকে বেশ কয়েকবার মুরাকামির কথা মনে করিয়েছেন লেখিকা। তাও বেশ সাবলীলভাবে। বিশেষ করে "লাইটহাউজ" গল্পে। ব্যাপারটি উপভোগ করেছি খুব।
দুয়েকটা গল্প আমার কিছুটা উদ্দেশ্যহীন মনে হচ্ছিল। যেন দুর্বোধ্য এক রহস্য কিন্তু উদঘাটন করতে পারছিনা। আমার বোঝার সীমাবদ্ধতা। কিন্তু একটা ব্যাপার হল গল্পগুলো আপনাকে নিজের মত করে ব্যাখ্যা করার অবকাশ দেবে। আপনি আপনার জীবন আর পারিপার্শ্বিকতা থেকে গল্পে প্রাণ সঞ্চার করতে পারবেন। যেমনটা আমরা গানের কথার সাথে করি; মিলিয়ে নেই নিজের জীবনের সাথে। ছোট্ট সুন্দর বইটি পড়ে ফেলতে পারবেন এক বসাতেই। লেখিকার জন্য শুভকামনা থাকবে। আরও অনেক লিখবেন আশা করি।
বইটি নিয়ে আমার অনেক উচ্চাকাঙ্খা ছিলো বলাই বাহুল্য। যতোটুকু আশা নিয়ে বইটি কিনেছিলাম এবং পড়তে বসে ছিলাম, পড়ার পরে ততোটা আশা পূর্ণ হয়নি। বইয়ের নাম, প্রচ্ছদ, গল্প সবমিলিয়ে হিসেব-নিকেশ করতে বসলে নাম আর প্রচ্ছদই আগায় থাকবে নিঃসন্দেহে। এবার আসি গল্পের মধ্যে। মোট ১৩টি ছোট গল্প নিয়ে এই বই। গল্পগুলোর নামগুলো বেশ আকর্ষনীয় এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নাই। একটা গল্পের নামের চেয়ে আরেকটা গল্পের নাম কোনো অংশে কম নয় বরং এমন রহস্যময় নাম যে পড়ার জন্য চুম্বকের মতো আকর্ষন করে। একেক গল্প একেক কনসেপ্ট। গল্পগুলো ছোট তাই অনায়াসে পড়া যায়। খুব সাবলীল ভাষায় বিধায় পড়ে আরামও পাওয়া যায়। কিন্তু কথা হচ্ছে গল্পগুলো পড়তে গিয়ে মনে হলো লিখায় আরো দক্ষতা আসা বাকি। কিছু কিছু ভালো লেগেছে আবার কিছু গল্প মনে হলো যখনই গল্পের মধ্যে কিছু উঁকি দিচ্ছে পরপরই সেটা কোথাও মিলিয়ে যাচ্ছে। নতুন লেখক লিখা সুন্দর আশা করি সামনে আরো পাকাপোক্ত লিখায় লেখককে দেখতে পাবো।
আমার তিনটা গল্প সত্যিই ভালো লেগেছে — আমার বাবার সাতাশ নম্বর কবুতর, টিভি মানব, এবং নামগল্প ডোরাকাটা জেব্রাক্রসিং।
লেখকের মধ্যে ভবিষ্যতে ভালো কিছু করার সম্ভাবনা স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। তার শব্দের বুনন আমার বেশ ভালো লেগেছে। সরলীকে আমি ব্যক্তিগতভাবে কিছুটা চিনি, তার রিভিউ পড়ে আমি বেশ মুগ্ধ হই এবং তার কাছ থেকে ভালো বইয়ের খোঁজ পাওয়া যায়। যেহেতু আমি নতুন লেখকদের বই পড়তে ভালোবাসি, সেই আগ্রহ থেকেই মূলত এই বইটা পড়া, এবং আমি তাকে উৎসাহ দিচ্ছি যাতে গল্প শুরু করা থেকে শেষ পর্যন্ত ভালোভাবে এগোতে পারে, যেন ভালো কিছু শুরু করেও মাঝপথে আগ্রহ হারিয়ে না ফেলে।
The story titles were truly remarkable; coming up with such captivating names is actually an incredible job in itself, and I genuinely admire that.🍃
I know it's her first work and I felt her sincerity. But I really hope that she takes her time before bringing out her next work—takes time to read more, learn more, and grow as a storyteller. Because the thoughts were actually there… but the stories didn’t quite live up to them. I wish her all the best.🍁
খুবই সুন্দর ভাষার ব্যাবহার। ছোট ছোট গল্প। লেখার মধ্যে লেখকের বয়সের ছাপ স্পষ্ট। কিন্তু জিনিসটা ভালো। সে নিজের point of view থেকে লিখেছে সব কিছু এবং আমাদেরকে তার দৃষ্টি থেকে দেখতে সাহায্য করেছে। গল্পগুলো আর কিছুটা বড় হলে ভালো হত। তবে সব মিলিয়ে ভালো।
গল্পের চেয়ে ভাবনার পরিমাণই বেশি লাগলো। কিছু জায়গায় এক ঘেয়ে লাগলো আবার বাহুলতাও দেখা গেছে। মেটাফর এর পরিমাণ অত্যধিক। কিছু গল্পের বেশিরভাগ অংশ ভালো লেগেছে কিছু আবার একদম মাথার উপর দিয়ে গেছে আবার কিছু গল্পের কয়েকটি লাইন মাত্র বুঝেছি। যাই হোক সব গল্পের নামগুলো বেশ ভালো ছিলো।