Jump to ratings and reviews
Rate this book

চাপরাশ

Rate this book
চাপরাশ যে বহন করে সে-ই চাপরাশি। পেতলের তকমা বুকে লাগানো অনেক চাপরাশিকে আমাদের চারপাশে দেখতে পাই। রাজ্যপালের, জজসাহেবের অথবা মালিকের চাপরাশি। কিন্তু এই উপন্যাসে বুদ্ধদেব গুহ এযাবৎ অচেনা এমন অনেক চাপরাশির প্রসঙ্গ এনেছেন যাঁরা শুধুমাত্র ঈশ্বরেরই চাপরাশ বহন করছে। কী সে চাপরাশ? এই উপন্যাসের পাতায় পাতায় তারই আলেখ্য।এই উপন্যাস যখন ধারাবাহিক প্রকাশিত হচ্ছিল তখন বহু বুদ্ধিজীবী ও মৌলবাদী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, কোপ মারার হুমকি দিতেও ছাড়েননি। অথচ এই উপন্যাসে ‘ধর্ম’, ‘ঈশ্বর ও অন্যান্য অনেক বিষয় নতুন তাৎপর্যে উদ্ভাসিত। অন্যতর আলোর দিশারী। চাপরাশ-এর বিষয়বস্তু গুরুগম্ভীর, কোথাও কোথাও স্পর্শকাতর এবং তর্কে-বিতর্কে বিপজ্জনক। তবু এক মর্মস্পর্শী, বেগবান গল্পের মাধ্যমে লেখক এই আখ্যানকে কালোত্তীর্ণ করে তুলেছেন। আখ্যানের কল্পিত জগৎ থেকে উঠে এসে চারণ নামের মানুষটি আমাদের প্রচলিত ধ্যানধারণাকে নাড়িয়ে দিয়ে গেছে সে। ঈশ্বরবিশ্বাস যে মূর্খামি নয়, ধর্মবিশ্বাস যে গর্হিত অপরাধ নয় তা সে নিজের জীবন দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে।চারণের গভীর উপলব্ধি এই রকম: ‘জিষ্ণু মহারাজ একদিন চাপরাশ-এর কথা বলেছিলেন। মনে আছে চারণের। একজন চাপরাশিই শুধু জানে চাপরাশ বইবার আনন্দ। সেই চাপরাশ ঈশ্বরেরই হোক কি কোনও নারীর। অথবা কোনও গভীর বিশ্বাসের।’ যাঁরা ধর্ম মানেন না, ঈশ্বর মানেন না কিংবা যাঁরা মানেন অত্যন্ত অন্ধভাবে— এই দুপক্ষের সামনেই স্পষ্টবাক্‌, সাহসী এবং সত্যসন্ধ লেখক মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে জীবনের সত্যকে তুলে ধরেছেন। বুদ্ধদেব গুহকে যাঁরা শুধুই ‘প্রেম’ ও ‘জঙ্গল’-এর চাপরাশি বলে জানেন তাঁদের কাছে চাপরাশ এক পরম বিস্ময়ের বাহক হয়ে থাকবে।এই বিশাল ও গভীর উপন্যাস বাংলা কথাসাহিত্যে এক বিশিষ্ট সংযোজন।

320 pages, Hardcover

First published January 1, 1998

23 people are currently reading
230 people want to read

About the author

Buddhadeb Guha

236 books237 followers
Buddhadeb Guha (Bengali: বুদ্ধদেব গুহ) is a popular Bengali fiction writer. He studied at the well-known St Xavier's College of the University of Calcutta.

His novels and short stories are characterized by their dreamy abstractness and romantic appeal. His essays reveal the soul of a true wanderer providing some of the most beautiful renditions of travel in Bengal. His love for forests and nature provide the background for many of his novels.

A highly successful chartered accountant by profession, and an accomplished musician, Guha is very urbane in his lifestyle. He was one of the first to create characters representing easy-going, upper middle-class modern Bengali families, whom readers could identify with, and that gave him instant popularity.

He is the recipient of many awards including Ananda Puraskar, 1976; Shiromani Puraskar; and Sharat Puraskar.

The Library of Congress has over fifty titles by him. His most famous novel, according to many, is Madhukori. It is considered a milestone in Bengali literature.
He is also the creator of Rijuda, an imaginary character who moves about in jungles with his sidekick Rudra. The jungles that he wrote about were mainly in Eastern India.

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
47 (46%)
4 stars
33 (32%)
3 stars
13 (12%)
2 stars
7 (6%)
1 star
1 (<1%)
Displaying 1 - 20 of 20 reviews
Profile Image for Mahmudur Rahman.
Author 13 books356 followers
May 19, 2017
বুদ্ধদেব গুহর চরিত্রগুলোর নাম একটু 'আনকমোন' হয়ে থাকে। বইয়ের বেলায়ও কিছুকিছু ক্ষেত্রে তাই। 'চাপরাশ' সম্ভবত এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো উদাহরণ। প্রথমে আমি ভেবেছিলাম বইয়ের নাম 'চারপাশ'। খেয়াল করে দেখি, 'চাপরাশ'। বুদ্ধদেব গুহর 'মাধুকরী', বইয়ের নাম দেখেই মনে হয়েছিল ভেতরে 'কিছু আছে'। এবং এই বই পড়ার পর মাথায় চক্কর লাগেনি এমন পাঠক কম। কিন্তু তার অন্যান্য বইয়ের নাম এবং প্রচ্ছদ দেখেই পড়তে ইচ্ছা জাগে না। 'চাপরাশ' এক্ষেত্রে ভিন্ন।

চাপরাশ যে বহন করে তিনি চাপরাশি। অর্থাৎ, চাপরাশি যে তার পরিচয়ের চিহ্ন, তকমা বহন করে, তার নাম চাপরাশ। শব্দের অর্থ তো বোঝা গেলো, কিন্তু বইয়ে কি কোন চাপরাশির জীবনের গল্প বলা হয়েছে? উত্তর, হ্যাঁ, এবং না। লেখকের ভাষায়, 'চাপরাশ বহন করার আনন্দ কেবল চাপরাশি-ই জানে। সে চাপরাশ ঈশ্বরের হোক, কিংবা কোন নারীর'।

অর্থাৎ, চাপরাশ কথাটা এখানে রুপক। আসলে প্রতিটা মানুষের জীবনে বেঁচে থাকার জন্য 'কিছু একটা' দরকার। কারও জন্য সেই 'কিছু একটা' হয় কাজ, কারও জন্য মদ, কারও জন্য নারী, কারও জন্য কর্ম, কারও জন্য ধর্ম। এই উপন্যাসে লেখক নারী এবং ঈশ্বরের চাপরাশ বহন, অর্থাৎ মনের গভীরে লালন করার বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।

উপন্যাসের মুল চরিত্র চারণ চ্যাটার্জি। কলকাতার দুঁদে উকিল। অনেক অর্থপিশাচের অর্থ বিত্তের হিসাব, কালো টাকা সাদা করার উপায় চারণের জানা। প্রভূত সম্পত্তির মালিক চারণের পড়াশোনা 'বিলাতে'। সফল, কিন্তু অকৃতদার এবং অতৃপ্ত চারণ 'কি যেন' খোঁজার উদ্দেশ্যে চলে আসে 'দেবভূমিতে'।

দেবভূমি অর্থাৎ, হিমালয়ের পাদদেশে কুমায়ু-গাড়ওয়াল। যেখানে প্রচুর সাধু সন্ন্যাসীর দেখা মেলে। এখানে এসে চারণ এক রকম লুকিয়ে থাকে। সাধু সন্ন্যাসী তার কাছে ফেরেবাজ। কিন্তু ভিমগিরি নামক এক সন্ন্যাসীর সাথে পরিচয়ের পর থেকে চারণ অবাক হতে শুরু করে। এখানেই হঠাৎ দেখা হয় পাটন-এর সাথে। পাটনের বাবা ছিল চারণের মক্কেল। পাটনের মায়ের সাথে চারণের পরকীয়ার কথা আমরা জানতে পারি অনেক পরে, পাটনের মুখে। এবং এক পর্যায়ে দেখা যায় চারণের জীবনের চালক হয়ে দাঁড়িয়েছে পাটন।

উপন্যাসটির মুল উদ্দেশ্য ঠিক কি ছিল, আমি বুঝতে পেরেও যেন পারিনি। শুরুতে মনে হল লেখক দেখাতে চান যে একটা মানুষ যখন আশা ছাড়িয়ে সব ছেড়ে দিতে চায়, তখন তাকে স্থিরমতি করতে পারে ঈশ্বর-চিন্তা, কিংবা নারী। ঈশ্বর-চিন্তার বিষয় দেখানোর জন্যই উপন্যাসের 'সেটআপ' দেবভূমিতে। আবার নারীকে দেখানোর জন্য পাটনের মা তুলির প্রসঙ্গ। তারচেয়ে জোর চরিত্র, চন্দ্রবদনী।

চন্দ্রবদনী থেকেই উপন্যাসের দিকভ্রান্তি শুরু। কেননা এই নারী এক 'আদর্শ চরিত্র'। সর্বগুণান্বিতা চন্দ্রবদনীর শারিরিক যেমন কোন ত্রুটি নেই, তেমনি তিনি জগতের অন্যান্য নারীর চেয়ে মানসে সম্পূর্ণ আলাদা। অর্থাৎ, মানুষের মাঝেই লেখক এক রকম দেবত্ব আরোপ করেছেন।

বুদ্ধদেব গুহ এই উপন্যাসে কয়েকজন সাধু অর্থাৎ সন্ন্যাসীকে দেখিয়েছেন, যাদের সাথে চারণের পরিচয় হয়। এরা সকলে একাধিক ভাষায় কথা বলতে সক্ষম। তাদের জ্ঞান ভাণ্ডার বিস্ময়ের উদ্রেক করে। তারা অনর্গল ইংরেজিতে পাশ্চাত্য দর্শনের কথা বলতে পারেন। আবার গানও গাইতে পারেন। আগেই বলেছি পাটন একসময় চারণের চালকের দায়িত্ব নেয়। যেন কৃষ্ণ, অর্জুনের সারথ্য করছেন। পাটনের মাধ্যমেই ধিয়ানগিরির পর ভোলানন্দ মহারাজের সাথে চারণের পরিচয়। এবং ধাপে ধাপে তাদের অলৌকিক ক্ষমতা বাড়তে থাকে।

মেনে নেওয়া যায় যে সাধু সন্ন্যাসীরা পূর্ব জীবনে এমন কেউ ছিলেন, যাদের পক্ষে শোপেনহাওয়ার, বারট্রান্ড রাসেল, হেগেল, কান্ট, আইনস্টাইনদের চেনা সম্ভব। কিন্তু বুদ্ধদেব এখানে কেবল এমন সন্ন্যাসীদের কথাই বলেছেন। চারণের সঙ্গে কোন বুজরুক সাধুর দেখা হয়নি। এমনকি শেষতক সে যে সাধুঙ্গ করেছিল, সে সাধু 'ত্রিকালদর্শী'। এমনকি সে মুহূর্তের মাঝে পৃথিবীর যে কোন স্থানে ভ্রমণ করে আসতেও পারেন।

সত্যজিত রায়, তার ফেলুদা-তে কখনও প্ল্যানচেটকে এমনভাবে উপস্থাপন করেছেন, যে মনে হয় এটা সত্যিই সম্ভব। আবার, কোথাও দেখিয়েছেন ব্যপারটা বুজরুকি। কিন্তু 'চাপরাশ' পড়তে গিয়ে মনে হবে ভারতীয় সন্ন্যাসীরা সত্যিই বিজ্ঞান, দর্শন, সবকিছুর ঊর্ধ্বে। লেখক শুরুতে যে চাপরাশের কথা বলেছেন, যে চাপরাশ হতে পারে ঈশ্বরের, সে চাপরাশের খোঁজ পাওয়া যায় না। আর নারীর? তারও খোঁজ পাওয়া যায় না। চন্দ্রবদনীকে স্রেফ মহাকাব্যিক নায়িকা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যার বাস্তব উদাহরণ মেলে না।

তাহলে কি 'চাপরাশ' ব্যর্থ? আসলে, না। কেননা, চারণের দ্বিধা, পাটনের সাথে তার আলাপ, সাধুসঙ্গে উঠে আসা নানা আলোচনা, বিভিন্ন বইয়ের রেফারেন্স, সব মিলে ভাবনার অনেক জায়গা আছে। আছে দেবভূমির অপরূপ সৌন্দর্যের বর্ণনা। কিন্তু সবকিছুর পরেও, বইয়ের আসল উদ্দেশ্য খুঁজে পাওয়া যায় না। এক পর্যায়ে মনে হয়, লেখক কেবল সাধু-সন্ন্যাসীদের অলৌকিকতার ছটা দেখে মুগ্ধ হয়ে তা প্রচার করতে এই বই লিখেছেন।

অনেকে 'চাপরাশ'-কে 'মাধুকরী'-র সমকক্ষ বলতে চাইতে পারে। কিন্তু মাধুকরী, চাপরাশের চেয়ে অনেক ঋদ্ধ। কেননা, আসলে একটা 'মাধুকরী'-র মাঝে কয়েকটা 'চাপরাশ' আছে। যে চাপরাশ, 'চাপরাশ' উপন্যাসে খুঁজে পাওয়া যায়নি, সেই চাপরাশের সন্ধান 'মাধুকরী'-তে মেলে। ঠুঠা বাইগা জানতো সে চাপরাশ বইবার আনন্দ। শেষে সম্ভবত, পৃথুও জেনেছিল।
Profile Image for Shadin Pranto.
1,469 reviews560 followers
October 23, 2022
অনেকেই 'মাধুকরী'কে বুদ্ধদেব গুহর সেরা কাজের স্বীকৃতি দিতে চান। কেউ-বা সবিনয়ে উল্লেখ করেন 'সবিনয় নিবেদন'-এর নাম, সেই ফাঁকে হাজির হয় 'কোজাগর' অথবা 'হলুদ বসন্ত'। তবু সবগুলোকে ছাপিয়ে আমার প্রিয় 'চাপরাশ'। যেখানে খুঁজে পাই আশ্চর্য এক জীবনদর্শন।
Profile Image for Arifur Rahman Nayeem.
205 reviews107 followers
October 11, 2025
৩২০ পৃষ্ঠার রয়্যাল সাইজের বই। শুরু করেছিলাম মার্চ মাসে, শেষ হয়েছিল আগস্টে। পাঁচ মাস সময় এজন্য লাগেনি যে বইটি সাইজে বড়। লেগেছে কারণ উপন্যাসটি একটুও টানেনি। বাচাল লোক আমার অতি অপছন্দের। বুদ্ধদেব গুহ যা করেছেন এই বইয়ে তাকে বাচালতা ছাড়া অন্য কিছু বলতে পারছি না। পাঠকের বোঝার ক্ষমতা ও স্মৃতিশক্তির ওপর উপন্যাসটি লেখার সময় তাঁর একটুও আস্থা ছিল না বোধহয়। নইলে দু-লাইনে যে কথা সাঙ্গ করা যায়, তাকে দুই পৃষ্ঠা পর্যন্ত নিতেন না এবং পাঠক ভুলে যাবে/গেছে ধরে নিয়ে একই কথা কিছুক্ষণ পরপর মনে করিয়ে দিতেন না। আর আছে শেষদিকে এসে পাঠকমনে করুনরস উৎপন্নের এক অকার্যকর চেষ্টা। কুমায়ূন, গাড়োয়াল, দেবপ্রয়াগ, রুদ্রপ্রয়াগ, হৃষীকেশসহ উত্তরাখণ্ডের আরও সব অঞ্চলের প্রাকৃতিক দৃশ্যের বর্ণনা এবং প্রধান চরিত্র চারণ যে নতুন জীবনদর্শনের দেখা পায়, যা দ্বারা সে চালিত হয় তার সবকিছু না হলেও অনেকখানির সঙ্গে একাত্ম হতে পেরেছি—ভালো দিক স্রেফ এ দুটিই।

নিজের ওপর জোর খাটিয়ে বড় বই পড়ে শেষ করা একপ্রকার শাস্তিসম। ‘কোজাগর’ সংগ্রহে আছে। এটাও যদি ‘চাপরাশ’-এর মতো হতাশ করে তাহলে বুদ্ধদেব গুহ পড়ার ইতি টানতে হবে।
Profile Image for Klinton Saha.
357 reviews6 followers
May 23, 2025
"সুখ অথবা দুঃখও কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি বা হস্তান্তর-অযোগ্য অনুভূতি নয়। সুখ যে নেয়, সুখ তারই হয়। দুঃখও যে নেয়, দুঃখও তার ঘরে গিয়েই ওঠে। হয়তো সে কারণেই নিজস্ব কারণে যে সুখি হতে পারেনি জীবনে, সে অতি সহজেই সুখি হয়ে ওঠে পরস্ব কারণে। দুঃখ ধারণ করার মতন আধার বা আত্মা যার নেই সে সেই দুঃখকে অতি সহজেই অন্যের ঘাড়ে চালান করে দেয়। সংসারে এমন মানুষের সংখ্যাই বেশি। যার আত্মা ভাল নয়, তার দুঃখবোধই নেই। যার দুঃখবোধ আছে, পৃথিবীর তাবৎ দুঃখ তাকেই চুম্বকের মতন নিয়ত আকর্ষণ করে। নিজের দুঃখ তো বটেই, পরের দুঃখও।"





শহুরে জীবনে বিপর্যস্ত 'চারণ' নামের এক সংশয়বাদী যুবক আইনজীবী একটু প্রশান্তির খোঁজে, জীবনের উদ্দেশ্য উদ্ধারের খোঁজে পাড়ি জমায় তীর্থস্থান হৃষীকেশে।কোনো কপট সাধুর পাল্লায় পড়বে বলে স্থির করলেও সে অল্পদিনের আলাপে আকৃষ্ট হয় ভীমগিরি সন্ন্যাসীর প্রতি।এই ভীমগিরি তাকে নিয়ে যায় তার গুরু ধিয়ানগিরি মহারাজের কাছে। শহর থেকে দূরে সংযমী জীবনযাপন করা এই সন্ন্যাসী গুরুদের সম্পর্কে চারণের ভুল ধারণা ভেঙে যায়, চারণ অবাক হয় এনাদের উচ্চ জ্ঞান সম্পর্কে।

এখানে সে  পরিচিত হয় বড়লোক বাবার বখাটে সন্তান ও উচ্চশিক্ষিত,বর্তমানে সন্ন্যাসী, পাটনের সাথে।এই পাটন তীর্থযাত্রার শেষ পর্যন্ত চারণের সাথে ছিল।পাটন তার গুরু ভোলানন্দ মহারাজের সাথে পাটনের পরিচয় করিয়ে দেয়। দেবপ্রয়াগে এসে চারণ আরো কত অজানাকে জানতে পারল পাটন ও তার গুরুর কাছ থেকে।

উচ্চ শিক্ষিত এই গুরু কত জ্ঞান ধারণ করেন। এখানে চারণের সাথে নিয়মিত আলোচনা হয় প্রাচীন ভারতের ধর্মীয় সংস্কার-সংস্কতি, সংগীত, সমাজতন্ত্র, রাজনীতি, সাহিত্য, ইতিহাস ইত্যাদি বিষয়ে। গুরুদের গুরুগম্ভীর আলোচনা থেকে উত্তর পাওয়া যায় কেন ভারতবর্ষের আধুনিক হিন্দুরা নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করতে শঙ্কিত থাকে,ধর্ম থেকে সরে তারা যাচ্ছে।

এই তীর্থস্থানে এক রহস্যময়, তীব্র আকর্ষণধর্মী ও চমৎকার ব্যক্তিত্বের অধিকারী নারী 'চন্দ্রবদনী' সাথে তার পরিচয় হয়।চন্দ্রবদনী আধুনিক, শিক্ষিত ও সংস্কারাচন্ন । তার সান্নিধ্যে থেকে চারণ নতুন করে নিজেকে চিনতে শুরু করে। চন্দ্রবদনীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিশে ও তাদের সম্পর্কে জেনে শহুরে চারণের মধ্যে ভাবোদয় হয়।সে দ্বিধায় পড়ে যায় তীর্থযাত্রা শেষ করা নিয়ে।

শেষদিকে তুরতি ও তার গুরু জিষ্ণু মহারাজের সাথে আলাপ হয়। তারা তাকে শেখায় জীবনের উদ্দেশ্য আসলে কি হওয়া উচিত ও কেনইবা ধর্মের আশ্রয় প্রয়োজন। একটা বিষয় চারণ ভালো করে বুঝতে পারে যে শহরের মানুষ ঈশ্বরকে তাদের প্রয়োজনে স্মরণ করে। অথচ এই তীর্থস্থানে অনেক গৃহত্যাগী সন্ন্যাসী শুধুমাত্র নিজেদের আনন্দে বছরের পর ঈশ্বর সান্নিধ্য পাওয়ার আশায় পড়ে আছে। তাদের চাইবার কিছু নেই।

যাত্রা শেষে চারণ কি পেল ? কি পেল না তাই বলুন !

দুহাত ভরে পেল জ্ঞানবান পুর্ণাত্মা সাধুদের মণিমাণিক্য তুল্য জ্ঞান ,আর পেল কোনো এক মানবীর চাপরাশি  হওয়ার সুযোগ যা তাকে আজীবন বয়ে বেড়াতে হবে।



কিছু বই আছে যা পড়তে হয় মনের ভিতরে দ্বন্দ্ব তৈরি করতে ও দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা ধোঁয়াশা দূর করতে।

এটা তেমনই বই । চিন্তার জগতকে আলোড়িত করে, ভাবায় । বারবার তাই ফিরে আসতে হয় এমনই বইয়ের কাছে।


চাপরাশ কেন বইতে হবে,কার বইতে হবে? জানতে বইটি পড়ুন।এই বই ধারাবাহিকভাবে প্রকাশকালে লেখক কিন্তু মৌলবাদের 'কোপের' হুমকিতে পড়েছিলেন।
Profile Image for প্রিয়াক্ষী ঘোষ.
361 reviews34 followers
March 8, 2024
জীবন ও জীবিকার উপর এক প্রকার বিতৃষ্ণা থেকেই চারণ নিরুদ্দেশে পাড়ি দেয়। আত্মগোপনে থাকার চিন্তা করেই সে কলকাতা থেকে চলে আসে হৃষীকেশে। প্রথম দিকে নিজের খোলসটা থেকে সে বাইরে আসতে পারে না। নিজের ভাব গাম্ভীর্য বজায় রেখেই চলে। তবে হঠাৎ করে হৃষীকেষে ত্রিবেণীর ঘাটে এসে জীবন সম্পর্কে তার মনে নানা প্রশ্ন জন্মে। ফেলে আসা স্মৃতিতে থাকা মানুষ গুলোকে হঠাৎ করে ক্ষমা করতে ভালো লাগে। নিজের মধ্যে আলাদা এক স্বস্তি সে অনুভব করে।
জীবন দর্শন ও জীবন বোধের নানা প্রশ্ন নিয়ে ঘুরতে থাকে নানা জায়গায় উত্তরের আশায়।

চন্দ্রবদনীর জন্ম
ফৌজি পরিবারে। তার মা বাঙালী, কিন্তু বাবা গাড়োয়ালি আর্মি জেনারেল,
আবার ঠাকুর্দা তিব্বতী-বৌদ্ধ, এয়ারফোর্সের ফাইটার পাইলট স্বামী, তবে তিনি বেঁচে নাই।
চারণের সঙ্গে তার দেখা হয় দেবপ্রয়াগের ভোলানন্দজির আশ্রমে। পরিচয় এবং সম্পর্কের উন্নতি হতে গিয়েও কোথাও লেখক হঠাৎ ছন্দপতন ঘটালেন।

প্রেম -ভালোবাসা থাকবে কিন্তু প্রকৃতি থাকবে না এটা মনে হয় বুদ্ধদেব বসুর লেখায় অসম্ভব।
চরিত্রের মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ সাথে প্রকৃতির বনর্ণা "চাপরাশ " তার নিজের মতই সুন্দর। লেখকের লেখার বৈশিষ্ট্য একই রকম তবে এটা অসাধারণ।
Profile Image for Nishat Monsur.
191 reviews18 followers
August 20, 2018
চাপরাশি শব্দটার সাথে পরিচিতি ছেলেবেলা থেকেই। তবে এর মানে সম্পর্কে ভেবে দেখিনি কখনো। চাপরাশি মানে যে চাপরাশ বহন করে। একজন চাপরাশির পরিচয়ের যে চিহ্ন, তাকেই আমরা চাপরাশ বলে জানি। বুদ্ধদেব গুহ তাঁর বইগুলোর নাম দিয়েই যে মনোযোগকে অনেকখানি টেনে নেন, সে ব্যাপারে কোন দ্বিমত থাকা উচিত নয় অবশ্যই।

এই বই কি কোন চাপরাশিকে নিয়ে লেখা? হ্যাঁ, রূপক অর্থে ধরতে গেলে চারণ চ্যাটার্জি তো চাপরাশিই। ঈশ্বরের, নারীর, আধ্যাত্মিকতার চাপরাশ বহন করে চারণ এই পুরো উপন্যাসজুড়েই আদতে এক চাপরাশির পরিচয় নিয়ে বাস করে গেছে, সেকথা চারণ নিজেও তো উপন্যাসের শেষদিকে এসেই জেনেছে কেবল!

ব্যারিস্টার চারণ চ্যাটার্জি, সারাজীবন অর্থ বিত্ত নিয়ে খেলা করে আসা মানুষটির মন হঠাত কীজন্যে যে অমন উদ্বেল হয়ে ওঠে, কী জন্যে যে সে কলকাতার চাকচিক্যময় জীবন ছেড়ে হৃষিকেশে আসে সেকথা লেখকও বলেননি খুব একটা স্পষ্ট করে। তবে তার হুট করে কাউকে না জানিয়ে কলকাতা ছাড়া থেকে আমরা অনুমান করতে পারি, আত্মিক কোন কারণই তাকে টেনে নিয়ে আসে হৃষিকেশের ত্রিবেণী ঘাটে।

কুমায়ুঁ-গাড়োয়ান হিমালয়ের ধাপেধাপে রুদ্রপ্রয়াগ, দেবপ্রয়াগ, হৃষিকেশ, হরিদ্বার আর চন্দ্রবদনী শৃঙ্গ- পুরো এলাকা জুড়েই চারণের দেখা হয় বেশ কয়েকজন সাধুর সাথে। এঁরা প্রত্যেকেই একাধিক ভাষায় অনর্গল কথা বলতে সক্ষম, বিশ্বসংসার সম্পর্কে জ্ঞানও রাখেন প্রচুর। এদের মধ্যে যে একজন ভণ্ড সাধুরও দেখা পেল না চারণ- এই ব্যাপারটিই আমাকে ভাবিয়েছে বেশ। তবে বিভিন্ন কারণে লেখকের এই কাহিনীগত ত্রুটি(অথবা উদাসীনতা বললেই হয়ত ভালো শোনাবে)কে আমি অগ্রাহ্য করেছি শেষ পর্যন্ত।

ধর্ম কী, বর্তমান নিরীশ্বরবাদের প্রশ্নে হিন্দুধর্মের অবস্থান কোথায়, পুরাণের সাথে আধুনিকতার কোথায় সংযোগ এর প্রায় অনেকটাই বুদ্ধদেব আলোচনা করার চেষ্টা করেছেন। তবে কিছু বিষয় আদতেই কেবল বুড়ি ছুঁয়ে চলে যাবার মতন, বিস্তারিত পূর্বজ্ঞান না থাকায় আমার মত অধমের পক্ষে পুরোপুরি বোঝাও সম্ভব হয়নি। হৃষিকেশ থেকে অস্ট্রিয়া-জার্মানি-ইউএস, বাংলা ভাষা থেকে হিন্দি-তামিল-মারাঠি, রবীন্দ্রনাথ থেকে হুইট্ম্যান-কার্ল মার্কস-টলস্টয়, স্পিরিচুয়ালিটি থেকে কম্যুনিজম-সেক্যুলারিজম-নিহিলিজম, পুরো বইতে লেখক বাদ দেননি কিছুই। মাত্র ৩২০ পৃষ্ঠার বইতে এ��� কিছুর সমাহার ঘটাতে গিয়ে কিছু তাড়াহুড়ার দোষে অবশ্যই দুষ্ট তিনি।

তবুও খুব দারুণ একটি কথা একেবারে মনে গেঁথে গিয়েছে বইটি পড়ে- "ঈশ্বরবোধ ব্যাপারটা ডিফারেনসিয়াল ক্যালকুলাস নয়, কমপিউটারে ডাটা ফীড করলেই ঈশ্বরের চেহারা ফুটে ওঠে না। এটা বিশ্বাসের ব্যাপার। এই বিশ্বাস জন্মাতেও মানুষ হিসেবে উচ্চকোটীর হতে হয়। যারা তেলাপোকা বা ব্যাঙের জন্মের পরে মনুষ্যজন্ম পায়, ঈশ্বরবোধ তাদের জন্যে নয়। বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর।"

তবে একটি লাভ অবশ্যই হয়েছে এই বইটি পড়ে। পুর্নেন্দু পত্রীর "অতল তোমার সাক্ষাৎ পেয়ে চিনতে পারিনি বলে, হৃদি ভেসে গেল অলকানন্দা জলে"-এই লাইনদুটোকে কিছুটা প্রেমের কবিতা বলে জেনে এসেছি এতকাল। কবিতাটি যে এতখানি স্পিরিচুয়াল, তা এই বই না পড়লে বুঝতাম না। আবার ভেবে বসবেন না যেন, এই বইতে ঐ কবিতাটির ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে! হয়নি। তবে বইটি পড়ে আমি কবিতাটির মর্মার্থ অনুধাবন করতে পারলাম যেন বেশ।

ভারতবর্ষে সাধু-সন্তরা নতুন নন। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ উচ্চমার্গের জ্ঞান রাখেন, একথাও অস্বীকার করছি না। তবু, হয়ত এ পাঠক হিসেবে আমারই খামতি, যে আমি বইটার পূর্ণাঙ্গ মেসেজ বুঝতে পারলাম না। এইটুকু কেবল বুঝলাম, মানুষের বেঁচে থাকতে একটা না একটা কারণ লাগে। সেই কারণ হতে পারে ঈশ্বর, হতে পারে নারী(লেখকের বর্ণনায় এই ব্যাপারটিও এসেছে) কিংবা হতে পারে অন্য কিছু। কিন্তু বেঁচে থাকবার ঐ কারণটি লাগেই, যাকে আমরা নব্য শিক্ষিতরা বলি পারপাজ(purpose), বুদ্ধদেব বলেছেন "চাপরাশ"!

আধ্যাত্মিকতা, দর্শনবাদ, হিন্দুইজম, ধর্মবোধ- সব মিলিয়ে এক পড়ার উপযোগী বই বটে চাপরাশ। তবে অ্যাদ্দিন ধরে পড়েও মনে হল, কী যেন না পড়া রয়ে গেল! কী যেন রয়ে গেল না বোঝা! থাকুক, সব কি আর কেউ বুঝতে পায় কোনদিন?
Profile Image for Hasibul Ahsan.
32 reviews3 followers
March 22, 2020
ফ্রান্সিস বেকন এর একটা উক্তি আছে, "Some books are to be tasted, others to be swallowed and some few to be chewed and digested".
ফিকশন যা পড়ে আসছি অনেকদিন ধরে, তার মোক্ষাংশ ই আসলে গলাধঃকরণ করে আসছি। অনেক বইয়ের ভীড়ে বেশ আলাদা একটা বই পড়লাম মনে হলো। চারণ; কলকাতার নামকরা ব্যারিস্টার, একটা সময় উপলব্ধি করে; এত যশ, মেকি সামাজিকতা আর অর্থের মাঝে, নিজেকে কি ভালো করে চেনা হয়েছে?
চারণ ঘুরে বেড়ায় তীর্থে, এ তীর্থ মন্দিরের না, মনের তীর্থ। সাধু সন্তের মাঝে এসে জীবনকে খুব অন্যভাবে দেখতে শেখে। এই ক্যাপিটালিজম এর ভীড়ে আমরা সবই পাই, শুধু ভালোমত পাওয়া হয়না নিজেকে, মেকির ভীড়ে আসল আমিত্বর অস্তিত্ব আমরা ভুলে যায়। প্রায়ই খুব নামকরা কিছু কবিতার লাইন আর ভাবার মত কিছু উক্তি বইটিকে বেশ অন্য লেভেল নিয়ে গেছে।
আর হ্যা, চন্দ্রবদনী এ উপন্যাসে খুব বেশি একটা সময় না থেকেও যেন খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ একটা ক্যারেক্টার। এমন ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন, কল্পনা থেকেই প্রেমে না পড়ার উপায় নেই; ঠিক যেটাই হয়তো উপন্যাসের শেষের অংশে এসে খারাপ লাগার সৃষ্টি করেছে।
মনঃস্তাত্ত্বিক উপন্যাস এটি, গতানুগতিক উপন্যাস হিসেবে পড়লে তেমন ভালো লাগবে না। ওভাবে বললে, বেশ গতিশীল ও না। ডিপেন্ড করে রিডার কিভাবে ইন্টারপ্রেট করবে।
সুপাঠ্য।
Profile Image for Sayan Raha.
26 reviews44 followers
April 18, 2015
ধর্ম আর জিরাফকে আলাদা তো করতেই হতো।বুদ্ধদেব গুহার লেখা ভিন্ন ধরণের একটি বই।পড়ে দেখো বন্ধুরা যারা পড়োনি।

মাঝে মাঝে কিন্তু মনে হয় গল্পের মতোই যদি চারণ হওয়া যেতো।
Profile Image for Kripasindhu  Joy.
542 reviews
October 11, 2025
৩.৫/৫

এই উপন্যাস আমাদের কেবল সংসারের ওপর বিতৃষ্ণা আসা চারণের কাহিনি জানায় না। বরং, আমাদের সামনে আসতে থাকে নানা দার্শনিক, আধ্যাত্মিক আলাপ। জীবনের অর্থ খোঁজার চেষ্টা যেসব শিল্পমাধ্যমে করা হয়ে আসছে বহুকাল ধরে, এই উপন্যাস সেই শ্রেণির এক নতুন সংযোজন।
Profile Image for Yeasmin Nargis.
177 reviews1 follower
October 3, 2025
ভাল্লাগলো না একটুও। অতিরিক্ত প্যাচাল মনে হয়েছে।
Profile Image for Monisha Mohtarema.
86 reviews2 followers
November 16, 2024
গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র চারণ চট্টোপাধ্যায় পেশায় একজন আইনজীবী।গল্পের শুরুতেই দেখা গেলো চারণ চট্টোপাধ্যায় ঋষিকেশের ত্রিবেনী ঘাটে মস্ত চাতালের ওপরে দু'পা মুড়ে বসে থেকে বোঝার চেষ্টা করছে সেখানে কি হচ্ছিলো!

এখন প্রশ্ন হচ্ছে চারণ চট্টোপাধ্যায় আইনজীবী হয়ে ত্রিবেণী ঘাটে বসে কি করছেন তাই তো!তিনি কি তীর্থদর্শনে এসেছেন? না..তিনি তীর্থদর্শনে আসেন নি ; এসেছিলেন নিজেকে খুঁজতে।শহুরে স্বার্থ-সংঘাত আর নিত্যকার জীবনে হাঁপিয়ে ওঠা; মানুষের স্থূল বৃত্তিতে, মানুষের প্রতি আস্থা এবং বিশ্বাস হারানো জাগতিক নিজেকে,নিজের ভেতরের নিজেকে খুঁজতেই এসেছিলেন। জীবনের এতো দিক আর আয়োজনের অর্থ খুঁজতেই হয়তো একদিন কলকাতা ছেড়ে নিরুদ্দেশের পথে বেরিয়ে পড়েছিল! তার সেই পথ গিয়ে পৌঁছায় ভারতের দক্ষিন-পশ্চিমের উত্তারাখণ্ড রাজ্যের পাহাড়-নদীতে বেষ্টিত হরিদ্বারে।

সুখ কি, জীবন কি, মানুষের কেন এমন নিত্য আসা-যাওয়া? এইসব প্রশ্নের জালে আবদ্ধ চারণ ত্রিবেণী ঘাটে ভীমগিরি নামক এক সাধকের দেখা পায়। পরে ভীমগিরির তাঁকে নিয়ে যায় নিজ গুরু ধিয়নগিরির কাছে। বছরের পর বছর ধর্ম সাধনা করা এইসব সাধক কোনও না কোনভাবে চারণের মতোই জীবন-মরন, ধর্ম-কর্ম নিয়ে নানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন কিনা, কে জানে? ঈশ্বরকে পাবার জন্য তাঁরা ভোগ বিলাস ত্যাগ করে, নিজস্বতা ভুলে ঈশ্বরে বিলীন হবার সাধনা করেন।

এই পুণ্য ভূমিতে যেমন সাধক আছে অনেক, তেমনি ভণ্ডেরও যে অভাব নেই। এই এক রহস্যময় জায়গা, সবাইকে যেমন মহাপুরুষ মনে হয় আবার সবাইকেই মনে হয় ভেকধারী, ভণ্ড! এরই মধ্যে চারণের সাথে পরিচয় হয় পাটনের। কলকাতার মস্ত ব্যবসায়ী বাবার একমাত্র মেধাবী পুত্র পাটন। আমেরিকার মতো ঝাঁ চকচক আরাম-আয়েস আর বিলাসের জীবন ছেড়ে যে কিনা ঠাই নিয়েছে হরিদ্বারে! গল্পের পরতে-পরতে এই পাটন যেন চারণের কাছে মূর্তমান এক ধাঁধাঁ হয়ে ওঠে!

হরিদ্বার, রুদ্রপ্রয়াগ, দেবপ্রয়াগের পথে-পথে, বনে-জঙ্গলে, নদীরধারে, কিংবা সাধু পুরুষদের ডেরায় ঘুরতে থাকা আধুনিক চারণের জীবনে একের পর এক চমক এসে উপস্থিত হয়। একেকজন সাধক যেন একেটি জ্ঞান কেন্দ্র। কি নির্লিপ্ত, নিবিড় চিত্তে পাহাড়ের গুহায়, প্রকৃতির মধ্যে, রোদ-বৃষ্টি-শীত-গরম সয়ে যান। বাহির থেকে ধর্মের তকমা এঁটে দেয়া হলেও তাঁরা তো কেবল ধর্ম চর্চা করেন না! আর সেটা তাদের সাথে কথা বলে কাছাকাছি থেকে বুঝতে পারে চারণ! আর যতো সে বোঝে ততো সে অবাক হয় ততো তার জানবার বুঝবার তৃষ্ণা যেন বেড়ে যায়!

হিন্দু ধর্মের আদি জ্ঞান থেকে শুরু করে বর্তমান মানুষের জীবনদর্শন, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, রাজনীতি, সঙ্গীত কোনও কিছুই বাদ নেই! তুরতি, জিষ্ণু মহারাজ, সরলানন্দ নামক এইসব সাধকের জ্ঞানের রাজ্যে স্বামী বিবেকানন্দ থেকে শুরু করে তলস্তয়, রবি ঠাকুর, হুইটম্যান, কিটস, মীর কি মার্কস কেউই অনাহুত নন! অথচ তথাকথিত আধুনিকতার যুগে শিক্ষিত শ্রেণীর মধ্যে অনেকেই আছেন যারা,আমি ধর্ম মানি কিংবা আমি ঈশ্বর মানি এই কথা বলতে রীতিমতো লজ্জা পান! লেখক এখানে তাদের পক্ষ থেকেও প্রশ্ন করে উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন! অথচ বহুদিন আগেই জ্ঞানী বলে দিয়েছেন, ‘ধর্ম নিরপেক্ষতা আর ধর্মহীনতা, ধর্মবিদ্বেষ আর ঈশ্বরে অবিশ্বাস কোনদিন সমার্থক ছিল না।‘

দেবী চন্দ্রবদনী মন্দিরে অনাগ্রহী চারণের জীবনে মানবী চন্দ্রবদনীর আগমন ঘটলো! আমরা এমন এক নারীর পরিচয় পেলাম, যিনি নারী হয়েও এমন অসীম ব্যক্তিত্বের আধার, যা ঐরকম অঞ্চলে দৈব লোকের আশীর্বাদ স্বরূপ! যার রূপের সাথে গুণের অসাধারন সমন্বয় ঘটেছে। যার শিক্ষার সাথে ভক্তির অপরূপ সংমিশ্রণ বিবাগী চারণকে নতুন জীবনের ভাবনায় এগিয়ে দেয়। পিতামহের আশ্রয়ে থাকা বিধবা তরুণী চন্দ্রবদনী; যেন নতুন এবং পুরানের এক অপূর্ব সেতুবন্ধন! যার প্রেম-ভালোবাসা-উচ্ছ���বাস কিংবা শোক সবই মাধুর্যের ধারক। এই নারী চারণের মধ্যে একই সাথে পূর্ণতা এবং অপার শূন্যতা দিয়ে ভরে দিয়েছে।

সন্ন্যাস আর সন্ন্যাসীর জীবন তার কৌতূহলের কারণ হতে পারে কিন্তু সে নিজে সন্ন্যাসী হবে কি করে! জিষ্ণু মহারাজ একদিন 'চাপরাশ' এর কথা বলেছিলেন। মনে আছে, চারণের। উনি হয়তো ঠিকই বলেছিলেন। একজন চাপরাশিই শুধু জানে চাপরাশ বইবার আনন্দ। সেই চাপরাশ ঈশ্বরেরই হোক, কী কোনও নারীর অথবা কোনও গভীর বিশ্বাসের।

নেওয়ার মধ্যে যে আনন্দ থাকে সে আনন্দ সস্তা আনন্দ। দেওয়ার মধ্যে যে আনন্দ, সবকিছু থেকেও তা ছেড়ে দেওয়ার, ছেড়ে আসার যে কী আনন্দ, তা এই দেবভূমিতে এসে ভীমগিরি মহারাজ, ধিয়ানগিরি মহারাজ, দেবপ্রয়াগের মহারাজেরা এবং সবশেষে এই জিষ্ণু মহারাজ এবং তুরতির মতো অনেককে দেখেই বুঝেছে চারণ। বুঝে, নিজের এবং শহুরে নিজেদের নিজস্বার্থমগ্ন অশেষ সংকীর্ণতা এবং কূপমণ্ডুকতাকে ঘৃণা করতেও শিখেছে। এই ছিলো চারণের চাপরাশ বইবার গল্প।

সবশেষে, আমার কথাটি ফুরোলো,নটে গাছটি মুড়লো!
Profile Image for সৌমিত্র বিশ্বাস.
115 reviews7 followers
June 3, 2025
চাপরাশ
এই উপন্যাস সম্পর্কে লিখতে গিয়ে প্রথমেই আমার যেটা মনে হয়েছে, বইটার নাম চাপরাশ না হয়ে চাপাবাজ কিংবা চাপাবাজি হলে মানত ভালো। কেননা গল্পের শুরু থেকেই হিন্দু সন্ন্যাসীদের এমন সব অলৌকিক কর্মকাণ্ডের বর্ণনা করা হয়েছে যার পুরোটা আমার কাছে স্রেফ চাপাবাজি ছাড়া কিছুই মনে হয়নি। এসব সাধু সন্ন্যাসীরা আবার ভালো মানের ইংরেজিতে কথা বলতে পারেন। সাহিত্য, সঙ্গীত এমনি কি অর্থনীতির জটিল সব টার্ম সম্পর্কেও জ্ঞান রাখেন। করো করো আবার বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী রয়েছে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে এসব সাধুরা আপনার সাথে কথা না বলেও আপনার ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে জানতে পারেন কিংবা আপনার অতীত সম্পর্কে মন্তব্য করেন যা শুনে আপনি বিস্মিত হবেন। মোটকথা লেখক ইনিয়ে বিনিয়ে এটা বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে, আপনি যতই জ্ঞানী হোন না কেন, আপনি যতই সম্পদশালী হন না কেন এইসব সাধুরা আপনার চেয়ে বেশি জ্ঞানী, জীবনের গভীরতম অর্থ তারা উপলব্ধি করে ফেলেছেন। এমনকি তারা শারীরিক কষ্টকেও জয় করে ফেলেছেন। তীব্র শীতে তারা কষ্ট পান না, কোন খাবার গ্রহণ না করে কাটিয়ে দেন দীর্ঘদিন।
এইসব ব্যাপারগুলো আমার একেবারেই ভালো লাগেনি। তাছাড়া আমার মনে হয়েছে গল্পের কাহিনীকে অহেতুক টেনে লম্বা করা হয়েছে। শেষ দিকে আমি পড়ার ধৈর্য্য ধরে রাখতে পারিনি। অবশ্য এটা হয়তো আমার নিজেরই দুর্বলতা। তবে যে কথা দুই লাইনে বলা সম্ভব তা বলার জন্য দশ পৃষ্ঠা ব্যয় করাটা নিছক বাচালতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
উপন্যাসের শুরুতে আমরা দেখতে পাই চরণ চ্যাটার্জি নামে এক যুবক অর্থ, মান যশের অধিকারী হয়েও হতাশ হয়ে, জীবনের মানে খুঁজতে গোপনে চলে যান তীর্থস্থান হৃষীকেশে। এখানে তার সাথে পরিচয় হয় ভীমগিরি নামে এক সন্নাসীর সাথে। এই ভীমগিরি আবার ধিয়ানগিরি নামে এক মহারাজের শিষ্য। প্রথম দিকে এসব সন্নাসীদের সম্পর্কে চরণের একটা অবজ্ঞা ছিল কিন্তু তাদের বিভিন্ন অলৌকিক কর্মকাণ্ডের সাথে পরিচয় হওয়ার সাথে সাথে তাদের সম্পর্কে আগ্রহ বাড়তে থাকে। এরপর যেসব সন্নাসীদের সাথে তার পরিচয় হতে থাকে তারা যে বাইরে থেকে খুব সাধারণ মনে হলেও ভিতরে ভিতরে অসাধারণ তা বোঝানোর জন্য লেখকের প্রচেষ্টার কোন অভাব ছিল না।
চরণের এরপর দেখা হয়ে যায় পাটনের সাথে। পাটন চরণেরই এক ক্লায়েন্টের উচ্চ শিক্ষিত বিদেশ ফেরত ছেলে। আমেরিকার বিলাসী জীবন ছেড়ে পাটন গেরুয়া ধারণ করেছে, এসবের ভেতরেই সে খুজে পেয়েছে জীবনের প্রকৃত মানে। পরবর্তীতে আমরা জানতে পারি পাটনের মায়ের সাথে চরণের অবৈধ সম্পর্ক ছিল। এই পাটনই এক পর্যায়ে চরণের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। পদে পদে চরণ দেখতে পায় পাটন ইংরেজি সাহিত্য, অর্থনীতি, সঙ্গীত প্রভৃতি ক্ষেত্রে গভীর জ্ঞানের অধিকারী। ভারত তথা হিন্দুদের যে এক গৌরবজ্জ্বল ইতিহাস আছে, জ্ঞান-বিজ্ঞান, রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি প্রভৃতি ক্ষেত্রে যে প্রাচীন ভারতের বিশাল অবদান ছিল তা নানাভাবে ব্যখ্যা করার চেষ্টা করা হয় এই পর্যায়ে।
এরপর কাহিনীতে আবির্ভাব ঘটে চন্দ্রবদনী নামে এক নারী চরিত্রের। এক কথায় রূপে, গুণে অনন্যা এই চন্দ্রবদনীর প্রতি তীব্র এবং রহস্যময় এক আকর্ষণ তৈরি হয় চরণের। যেমন হঠাৎ করে আবির্ভাব হয়েছি শেষ দিকে তেমনি আবার হঠাৎ করে হারিয়ে যায় চন্দ্রবদনী। চরণ চ্যাটার্জীও ফিরে যায় তার ইট পাথরের নগরীতে। কিন্তু তীর্থস্থানে কাটানো কয়েকমাস তার জীবনবোধকে পালটে দিয়েছে। আমাদের জীবনে ধর্মের প্রয়োজন কেন? জীবনের উদ্দেশ্য কী ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যায় চরণ। এমনটিই বোঝানো হয়েছে উপন্যাসটিতে।
তবে সবকিছু ছাপিয়ে আমার কাছে যেটা মনে হয়েছে- এই উপন্যাসের কাহিনী অহেতুক টেনে টেনে লম্বা করা হয়েছে। উপন্যাসের উদ্দেশ্য সম্ভবত পাঠককে ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট করা কিন্তু কেন পাঠক ধর্ম চর্চার মাঝে জীবনের স্বার্থকতা খুঁজবে তার সঠিক কোন কারণ ব্যাখ্যা করা হয়নি।
Profile Image for Tahmina Tuly.
25 reviews2 followers
July 26, 2025
"বাইরের শব্দ থেমে গেলে, ভেতরের আওয়াজটা আরও স্পষ্ট শোনা যায়।"

বুদ্ধদেব গুহ'র "চাপরাশ" উপন্যাসটি আদতে কোনও অরণ্য অফিসার বা বনবিভাগ কেন্দ্রিক কোনো কাহিনি নয়। এটি অনেক বেশি ব্যক্তিগত, আত্মানুসন্ধানময় এবং আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতায় ভরপুর এক আত্মভ্রমণের কাহিনি। যেখানে প্রকাশ পেয়েছে, "গভীর আত্মজিজ্ঞাসা ও আধ্যাত্মিক ভাবনা, নিঃশব্দ অনুভূতি আর নিঃসঙ্গতার পরিশুদ্ধ প্রকাশ, ঋষিকেশ, গঙ্গা, প্রাকৃতিক পরিবেশের অপূর্ব বর্ণনা।

কাহিনী সংক্ষেপ:
উপন্যাসের কেন্দ্রে রয়েছে চারণ, একাধারে এক সফল মানুষ, আবার অন্তরে বয়ে বেড়ানো এক গভীর শূন্যতা। শহরের ক্লান্তি আর ভিড় থেকে পালিয়ে তিনি চলে যান ঋষিকেশে-গঙ্গার তীরে, ধ্যান-যোগ-নিঃশব্দতায় ভরা এক পরিবেশে।

ঋষিকেশের এই আশ্রমজীবন, নদীর ধারে হেঁটে বেড়ানো, নিঃশব্দে জীবন উপলব্ধি করা—চারণের কাছে এক আত্মিক পরিশুদ্ধির সময় হয়ে ওঠে। এখানেই তার দেখা হয় আশ্রমের কিছু চরিত্রের সঙ্গে-যারা সবাই জীবনের কোনো না কোনো দুঃখ বা প্রশ্ন নিয়ে এসেছেন এখানে।

চাপরাশ চরিত্রটি এখানে কোন চাকুরিজীবী নয়, বরং প্রতীকী—সে চারনের অন্তর্জগতে চুপ করে থাকা সেই বোধ, যা কোনো নিয়মে বাঁধা যায় না।

ব্যাক্তিগত অভিমত:
“চাপরাশ” হলো এক নিঃসঙ্গ মানুষের আত্মঅন্বেষণের যাত্রা, যেখানে জীবন, সম্পর্ক, আধ্যাত্মিকতা এবং প্রকৃতির প্রতি এক গভীর টান প্রকাশ পেয়েছে। লেখক যেমন কবিত্বময় গদ্যে চরিত্র আঁকেন, তেমনি অদ্ভুত সূক্ষ্মতায় ধরেছেন মানুষের ভেতরের রুক্ষতা আর কোমলতার দ্বন্দ্ব। এই উপন্যাস শুধু গল্প নয়-এ এক ধ্যানমগ্ন উপলব্ধি।

"চাপরাশ – সে কে? সে হয়তো আমার নিজেরই কোনো ছায়া, যা আমি দেখতে চাই না।"
Profile Image for Nafisa Anjum.
226 reviews13 followers
November 10, 2023
আমার পড়া বুদ্ধদেব গুহের সেরা বই এইটা। এই বইয়ের কাহিনী, জীবনাদর্শ, প্রকৃতি, প্লট সবকিছুই আমাকে মুগ্ধ করেছে। মনঃস্তাত্ত্বিক উপন্যাস এটি, গতানুগতিক উপন্যাস হিসেবে পড়লে তেমন ভালো লাগবে না।

বইয়ের মূল চরিত্র চারণ হলেও আমাকে চন্দ্রবদনী বেশি আকৃষ্ট করেছে। খুব অল্প সময়ের জন্যে উপস্থিত হয়েও বিশাল এক দাগ রেখে যায় মনে।
Profile Image for Sourajit.
31 reviews
May 12, 2020
One fine example of travelogue (plus spirituality) of current Uttarakhand.
Profile Image for Trina Sengupta.
56 reviews
September 7, 2022
পুনঃপঠন আর ক্লাস এইটের রোম্যান্টিসিজমকে অতিক্রম করে অন্য বাস্তবকে চেনা৷
60 reviews
July 28, 2023
Ato apurbo darshanik boi ami age pari ni. Budhdhadeb Guha ato sahaj sarol Bhave jiboner bibhinno gurho artho bujhiyechen ta bhabai jay na. Eti akadhikbar porar moto boi
Profile Image for Shahidul Nahid.
Author 5 books141 followers
June 1, 2014
প্রেমের আনন্দ থাকে শুধু স্বল্পক্ষণ,
প্রেমের বেদনা থাকে সমস্ত জীবন।

আমার পড়া প্রেম নিয়ে অনেক প্রিয় ২টা লাইন ...
Displaying 1 - 20 of 20 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.