Helal Hafiz was a Bangladeshi poet. He is considered a true representative of poets of his generation having certain creative traits in an age when his nation and countries in the neighbourhood witnessed dramatic transitions particularly in the arena of politics. He won Bangla Academy Literary Award (2013).
কি ভীষণ ভালো লাগা, মুগ্ধতা, সুখ-দুখের ভ্রম নিয়ে বইটি শেষ করলাম!! এই বইয়ের কবিতাগুলোর প্রতি আমি কতটা attached হয়েছি বলে বুঝানো যাবে না।। অনেকগুলো কবিতাকেই নিজের সাথে, নিজের চিন্তার সাথে relate করতে পারছিলাম, বুঝলেন!! হয়তো এই বইয়ের অনেক পাঠকরা relate করতে পেরেছে বলেই এই বইটি এতো জনপ্রিয়!!!
ইচ্ছে করে বাচিয়ে রেখে রেখে পড়েছি, কারণ শেষ হলে যে বিষণ খারাপ লাগতো!! ভেবেছিলাম কিছু কবিতার অংশবিশেষ তুলে ধরব। তবে সেটাও সম্ভব হলো না। কারণ ভালো লাগা কবিতার সংখ্যা অনেক!!
হয়তো কখনো মন খারাপের দুপুরে, জ্যামের ভিড়ে, বিকেল-বেলার কোলাহলে একান্ত বসে অথবা পিনপতন নিরবতার রাতে আবার হয়তো কিছু কবিতা পড়ব বইটি থেকে এবং এভাবেই হয়তো চলতে থাকবে বহু বছর বহু দিন। কারণ আমি বুড়ো হলেও এই কবিতাগুলোর বয়স বাড়বে না, চিরযৌবনা কবিতা সব।।
বরাবরই কবিতার প্রতি আমার আগ্রহটা একটু কম।তবে এটা স্বীকার করি যে সাহিত্যের সবথেকে ভার্সেটাইল উপাদান হলো কবিতা।এক এক জনের কাছে এক এক মানে নিয়ে আসে একই কবিতা। ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত এই বইটিতে লেখক প্রেম ও বিপ্লবের মধ্যে সেতুবন্ধন করেছেন।কিছু কবিতায় উঠে এসেছে দেশের প্রতি ভালোবাসা আবার কিছু কবিতায় প্রেয়সীর প্রতি প্রেম।নষ্ট প্রেমের কষ্ট এই বইটির অন্যতম দিক।মাতৃহীনতার বেদনাও লেখককে তাড়া করে বেরিয়েছে বইটি জুড়ে। বোহেমিয়ান লেখকের চিন্তাধারা ও আবেগের স্রোতে আপনি ভেসে যাবেন কয়েক মূহুর্তেই।কিছু কিছু শব্দতো রীতিমতো মাথায় এসে আঘাত করে।যেমন তিনি কবরকে আখ্যায়িত করেছেন জৈবসার হিসেবে।মৃত মানুষ সার ব্যতীত আর কিই বা!! সময় থাকলে একটু পড়ে দেখবেন।নিরাশ হবেন না কথা দিচ্ছি।
মানব জন্মের নামে হবে কলঙ্ক হবে এরকম দুঃসময়ে আমি যদি মিছিলে না যাই, উত্তর পুরুষে ভীরু কাপুরুষের উপমা হবো আমার যৌবন দিয়ে এমন দুর্দিনে আজ শুধু যদি নারীকে সাজাই......
"আমি তো গিয়েছি জেনে প্রণয়ের দারুণ আকালে নীল নীল বনভূমি ভেতরে জন্মালে কেউ কেউ চলে যায়, চলে যেতে হয় অবলীলাক্রমে কেউ বেছে নেয় পৃথক প্লাবন, কেউ কেউ এইভাবে চলে যায় বুকে নিয়ে ব্যাকুল আগুন।"
কবিতা মুলত নিজের সাথে সম্বন্ধস্থাপন করার জিনিস। খুব বেশি কবিতা পড়া হয়নি। পড়ার আগে ভয় হতো পারব তো রিলেট করতে? বুঝব তো ভেতরের অর্থ? যাইহোক সব চিন্তা বাদ দিয়ে পড়ার ইচ্ছা টাকে সামনে রেখে কয়েকটা বই কিনেছিলাম। সেগুলোর ভেতর প্রথম পাঠ এই বই। এর মধ্য দিয়েই ২০২৩ এর বই পড়া শুরু।
সাহিত্যের সবচেয়ে বহুমুখী জিনিস এই কবিতা। সাহিত্যের শুরুই কবিতার মধ্য দিয়ে। কবিতার মাধ্যমে জিবনের সকল কিছু লিপিবদ্ধ করা হতো ভাবা যায়! কল্পনা করতেই তো কেমন লাগে যে কবিতার মাধ্যমে আইনের বই পড়তে হবে! কত জ্ঞানী ছিলো তারা আর কত ধৈর্য্য ছিলো তাদের যে তারা একটা লেখাকে বেছে বেছে ছন্দ সহকারে লিখত।
হেলাল হাফিজের "যে জলে আগুন জ্বলে" বইকে বিপ্লবী বই বললে খুব একটা ভুল হবেনা। তবে শান্ত প্রকৃতির ভাষা আর ভাবের মাধ্যমে বিপ্লবী চিন্তা প্রকাশ করেছেন বেশির ভাগ কবিতাতেই। হোক প্রেমের ক্ষেত্রে বা হোক দেশের ক্ষেত্রে। রাজনীতি, সমাজ, কবিতা, প্রেম সবকিছু নিয়েই লিখেছেন তিনি এই বইয়ে। লেখার প্রেক্ষাপট সমন্ধে ধারণা থাকলে এতো আনন্দ পাওয়া যায় পড়ে আর জানা যায় অনেক কিছু। নিচে সাল উল্লেখ করার কারনে রাজনৈতিক বিষয় গুলো খুব ভালো ভাবে আন্দাজে আসে।
কোনো প্রাপ্তিই পূর্ণ প্রাপ্তি নয় কোনো প্রাপ্তিই দেয় না পূর্ণ তৃপ্তি সব প্রাপ্তি ও তৃপ্তি লালন করে গোপনে গহীনে তৃষ্ণা তৃষ্ণা তৃষ্ণা ।
আমার তো ছিলো কিছু না কিছু যে প্রাপ্য আমার তো ছিলো কাম্য স্বল্প তৃপ্তি অথচ এ পোড়া কপালের ক্যানভাসে আজন্ম শুধু শূন্য শূন্য শূন্য ।
তবু বেঁচে আছি একা নিদারুণ সুখে অনাবিষ্কৃত আকাঙ্ক্ষা নিয়ে বুকে অবর্ণনীয় শুশ্রূষাহীন কষ্টে যায় যায় দিন ক্লান্ত ক্লান্ত ক্লান্ত । ৪.৭.৮২
স্কুলজীবনে বছরের শুরুতে বই হাতে পাওয়ার পর প্রথম কাজ হতো কবিতা ও গল্পগুলো পড়ে ফেলা। আগে কবিতাগুলো পড়ে শেষ করতাম কারণ সময় কম লাগতো। শৈশবেই একটা ধারণা হয়ে গেছিল যে কবিতা মানেই ছন্দে ছন্দে মিলিয়ে লাইন সাজানো। একটু বড় হওয়ার পর দেখলাম কবিতারও বেশ কিছু শাখাপ্রশাখা আছে। কিছু কবিতা তো ছন্দ মিলেই না উল্টো গল্পের মতো লাগে! কিন্তু কবিতার একটা অতিসাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো অল্প কথায় বহুত কিছু বলা। ❝যে জলে আগুন জ্বলে❞ এমনই একটা কবিতার বই। একগুচ্ছ কবিতা যেনো একগুচ্ছ আবেগ ও একগুচ্ছ গল্প বলে।
আগুন আর কতোটুকু পোড়ে ? সীমাবদ্ধ ক্ষয় তার সীমিত বিনাশ, মানুষের মতো আর অতো নয় আগুনের সোনালি সন্ত্রাস।
আগুন পোড়ালে তবু কিছু রাখে কিছু থাকে, হোক না তা শ্যামল রঙ ছাই, মানুষে পোড়ালে আর কিছুই রাখে না কিচ্ছু থাকে না, খাঁ খাঁ বিরান, আমার কিছু নাই।
ছোটবড় ৫৫টা কবিতা আছে বইয়ে। অল্প কথায় গভীর উপলব্ধি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে প্রতিটা কবিতায়। ভবিষ্যতে বইটা আবারও পড়ার ইচ্ছে আছে। নির্জন কোনো দুপুরে বই হাতে আমিও ভাবতে চাই কবির মতো কতোটা লাভ-লোকসান হলো জীবন থেকে...
বই: যে জলে আগুন জ্বলে লেখক: হেলাল হাফিজ জনরা: কবিতা প্রকাশনী: দিব্য প্রকাশ পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৬৪ মুদ্রিত মূল্য: ১৫০/-
এখন তুমি কোথায় আছো কেমন আছো, পত্র দিয়ো৷ এক বিকেলে মেলায় কেনা খামখেয়ালী তাল পাখাটা খুব নিশীথে তোমার হাতে কেমন আছে, পত্র দিয়ো৷ ক্যালেন্ডারের কোন পাতাটা আমার মতো খুব ব্যথিত ডাগর চোখে তাকিয়ে থাকে তোমার দিকে, পত্র দিয়ো৷ কোন কথাটা অষ্টপ্রহর কেবল বাজে মনের কানে কোন স্মৃতিটা উস্কানি দেয় ভাসতে বলে প্রেমের বানে পত্র দিয়ো, পত্র দিয়ো৷ আর না হলে যত্ন করে ভুলেই যেয়ো, আপত্তি নেই৷ গিয়ে থাকলে আমার গেছে, কার কী তাতে? আমি না হয় ভালোবেসেই ভুল করেছি ভুল করেছি, নষ্ট ফুলের পরাগ মেখে পাঁচ দুপুরের নির্জনতা খুন করেছি, কী আসে যায়? এক জীবনে কতোটা আর নষ্ট হবে, এক মানবী কতোটা আর কষ্ট দেবে!
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সেরা কাব্যগ্রন্থ। পঞ্চাশটিরও বেশি অসাধারণ অসাধারণ কবিতা নিয়ে বইটা প্রকাশ পায়। এই একটা বই ই যথেষ্ট কবি হেলাল হাফিজ কে আধুনিক কবিদের মাঝে সেরা দের কাতারে নিয়ে যাবার জন্য। বইটিকে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম বেস্টসেলার বইও বলা যায়। যে বছর বইমেলায় কাব্যগ্রন্থ টি প্রকাশ পায় সে বছর বইমেলার আর সমস্ত কাব্যগ্রন্থ তো দূরে থাক বাঘা বাঘা ঔপিন্যাসিকদের উপন্যাসের থেকেও 'যে জলে আগুন জ্বলে' অনেক বেশি বিক্রি হয়। বইটি এখনো সমানতালেই বিক্রি হচ্ছে।
এ বইয়ের ফেরিওয়ালা, প্রস্থান, যাতায়াত, নিষিদ্ধা সম্পাদকীয় সহ কিছু কবিতা তো চরম জনপ্রিয়। ৯০ এর দশকে আনন্দোলনে তার নিষিদ্ধ সম্পাদকীয় কবিতার ' এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়' লাইনগুলো আন্দোলন কারীদের ব্যানারে,প্ল্যাকার্ডে, মুখে মুখে ফিরতো।
তবে দুঃখের কথা হচ্ছে কবির এটাই একমাত্র কাব্য গ্রন্থ। দীর্ঘ ২০ বছরের অধিক সময়েও কবি আর কোনো কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেন নি। একটা সাক্ষাৎকারে একবার কবি বলেছিলেন, তিনি আরেকটা কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করতে এই ভয় পাচ্ছিলেন যে, নতুন বই যদি প্রথমটাকে ছাড়িয়ে যেতে না পারে? এই ভয়ে তিনি নতুন বই বের করার চিন্তা থেকে পালিয়ে সুদীর্ঘ দুই দশকেরও বেশি সময় লোকচক্ষুর অন্তরালে স্বেচ্ছা নির্বাসিত জীবন যাপন করেছেন, জুয়া খেলেছেন, ভবগুরে জীবন কাটিয়েছেন। তবে সম্প্রতি তিনি ঘোষনা দিয়েছেন নতুন একটা কাব্যগ্রন্থ তিনি সামনে প্রকাশ করবেন। কবিতাগুলিও প্রায় সব সিলেক্ট হয়ে গেছে।
সুতরাং সামনে আরেকটা মাস্টারপিস কাব্যগ্রন্থের আশা আমরা করতেই পারি :-)
কিছুদিন আগ পর্যন্তও আমি ওই শ্রেণির পাবলিকের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম যারা 'সব ধরনের বই পড়ে' ব্র্যাকেটে 'কবিতার বই বাদে'। রবীন্দ্রনাথ আর নজরুলের কল্যাণে এই রোগ কিছুটা দূর হলো, তাও তখন নতুন ঢং যুক্ত হলো - 'আধুনিক কবিতা পড়ি না'। তারপর নিজের অভিজ্ঞতা থেকে এখন বলতে পারি কেউ যদি কোনদিনও বাংলা ১ম পত্রের সিলেবাসের বাইরে অন্য কোন কবিতা নাও পড়ে থাকেন, হেলাল হাফিজ দিয়ে শুরু করতে পারেন।
কবির ১৯৬৯ - '৮৫ পর্যন্ত লেখা ৫৫টি কবিতা নিয়ে এই বই। আরও অনেকেই যেমন উল্লেখ করেছেন, পাঠক হিসেবে আমাদের দুর্ভাগ্য 'যে জলে আগুন জলে'ই হেলাল হাফিজের প্রথম ও শেষ বই৷ ভাষার কী জোরালো ব্যবহার তাঁর! 'এখন যৌবন যার, মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়', 'নিউট্রন বোমা বোঝো, মানুষ বোঝো না' এরকম অনেক বিখ্যাত লাইন এই বই থেকেই এসেছে। এখানে বিদ্রোহের কবিতা, যুদ্ধের কবিতা ছাড়াও কবির প্রথম জীবনের প্রণয়ী হেলেনকে নিয়ে লেখা অসাধারণ কিছু কবিতা আছে(বরাবরের মত ব্যর্থ প্রেমগুলোই সার্থক কাব্যের জন্ম দিয়ে থাকে!)। কবির কাব্যসাধনা, নিঃসঙ্গতাবোধ নিয়ে লেখা আছে। আমার সবচেয়ে ভালো লাগার একটা বই - তাও কবিতার বই!
তুমি ডাক দিলে -হেলাল হাফিজ _________________________________ একবার ডাক দিয়ে দেখো আমি কতোটা কাঙাল, কতো হুলুস্থূল অনটন আজম্ন ভেতরে আমার। তুমি ডাক দিলে নষ্ঠ কষ্ঠ সব নিমিষেই ঝেড়ে মুছে শব্দের অধিক দ্রুত গতিতে পৌছুবো পরিণত প্রণয়ের উৎসমূল ছোঁব পথে এতোটুকু দেরিও করবো না। তুমি ডাক দিলে সীমাহীন খাঁ খাঁ নিয়ে মরোদ্যান হবো, তুমি রাজি হলে যুগল আহলাদে এক মনোরম আশ্রম বানাবো। একবার আমন্রণ পেলে সব কিছু ফেলে তোমার উদ্দেশে দেবো উজাড় উড়াল, অভয়ারণ্য হবে কথা দিলে লোকালয়ে থাকবো না আর আমরণ পাখি হয়ে যাবো, -খাবো মৌনতা তোমার।
কবিতার বই পড়লাম এই প্রথম। মাঝে মাঝে একটা-দুইটা কবিতা যে পড়াই হত না, তা না। তবে পুরো একটা বই পড়বো এরকম উচ্চাশা কোনদিন করি নাই। কয়েকটা কবিতা বেশি ভালো লেগেছে, এবং শুধু ওই কয়েকটা কবিতার জন্য হয়ত ৪ তারকা দিতাম, কিন্তু এটাকে সামগ্রিকভাবে বিবেচনা করেই ৩ তারকায় আটকে গেলাম। আরও কিছু কবিতার বই পড়ার ইচ্ছা আছে।
এমনও কি জল আছে যেখানে আগুন জ্বলে? কিংবা রক্তও কি একপ্রকার জল নয় যেখানে বিদ্রোহ আর প্রেমের আগুন জ্বলে? নাম করণের স্বার্থকতা কি তা না জানলেও " যে জলে আগুন জ্বলে " আগাগোড়াই বিদ্রোহ আর প্রেমের কথা আমাদের জানিয়ে যায়। ১৯৬৯ এর গনঅভ্যুত্থান থেকে শুরু করে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত লিখিত ৫৬ টি কবিতা নিয়ে ১৯৮৬ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় বাংলাদেশের অন্যতম নন্দিত কবি হেল��ল হাফিজের কাব্যগ্রন্থ "যে জলে আগুন জ্বলে "। ইতোমধ্যে এই কাব্যগ্রন্থটি বিখ্যাত তকমা পেয়েছে তা পাঠকমাত্রই স্বীকার করবেন। পাঠকপ্রিয়তা আর জনপ্রিয়তার কারণে গ্রন্থটি বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থগুলোর একটি তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। রবীন্দ্রত্তোর সময়ে নিয়ম ভাঙা আর গড়ার মধ্য দিয়ে কবিতা পেয়েছে এক আধুনিক রূপ। সে কবিতা প্রথাগত নিয়ম মানতে চায় না, কবিতা হলেও তার মধ্যে গদ্যের মতোন একধরনের প্রভাব লক্ষ করা যায়। তাই আমার মতন আনাড়ি পাঠকদের পক্ষে সে কবিতা বুঝা একটু কঠিন ই বটে। তাই তথ্যগত বিভ্রাট কিংবা যেকোনো ভুলবাল বকার জন্যে আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। এই কাব্যগ্রন্থে কবি কখনো শুনিয়েছেন যৌবনের গান, জ্বেলেছেন বিদ্রোহের অগ্নিশিখা। ৬৯ এর গনঅভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে তাই লিখেছেন,
❝ এখন যৌবন যাত, মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময় এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়। ❞
আবার কখনো বা প্রেমের বয়ান এসেছে চরম আকাঙ্ক্ষা আর বেদনার ভেতর দিয়ে,
❝ ইচ্ছে ছিল তোমাকে সম্রাজ্ঞী করে সাম্রাজ্য বাড়াবো ইচ্ছে ছিল তোমাকেই সুখের পতাকা করে শান্তির কপোত করে হৃদয়ে উড়াবো। ❞
কখনো বা আবার প্রেম আর দ্রোহকে একই কবিতায় সমান্তরালে এনেছেন,
❝ ছিল তা এক অগ্নুৎসব, সেদিন আমি সবটুকু বুক রেখেছিলাম স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্রে জীবন বাজি ধরেছিলাম প্রেমের নামে রক্ত ঋণে স্বদেশ হলো, তোমার দিকে চোখ ছিলো না জন্মভূমি সেদিন তোমার সতীন ছিল।❞
কখনো সভ্যতার চরম অনিষ্ট দেখে হয়তো প্রশ্ন করেছেন, ❝ নিউট্রন বোমা বুঝো মানুষ বুঝো না! ❞
এভাবে প্রায় প্রত্যেকটা কবিতায়ই প্রেম, দ্রোহ আর দেশপ্রেমকে এঁকেছেন না পাওয়ার বেদনা আর হারানোর সুর নিয়ে। ইতোমধ্যে "প্রস্থান" কবিতাটিকে জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী তানজির তুহিন গীতিকবিতায় রূপ দিয়েছেন। সব মিলিয়ে "যে জলে আগুন জ্বলে" অনবদ্য এক সৃষ্টি। আরো যদি কিছু বলি তাহলে রয়েছে বইয়ের প্রচ্ছদ, দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। আর তা হবেই বা না কেন, প্রচ্ছদ করেছেন কিংবদন্তিতুল্য প্রচ্ছদকার "ধ্রুব এষ"। পড়ার সময়টা উপভোগ করেছি। হ্যাপি রিডিং💙
এখন তুমি কোথায় আছো কেমন আছো, পত্র দিয়ো৷ এক বিকেলে মেলায় কেনা খামখেয়ালী তাল পাখাটা খুব নিশীথে তোমার হাতে কেমন আছে, পত্র দিয়ো৷ ক্যালেন্ডারের কোন পাতাটা আমার মতো খুব ব্যথিত ডাগর চোখে তাকিয়ে থাকে তোমার দিকে, পত্র দিয়ো৷ কোন কথাটা অষ্টপ্রহর কেবল বাজে মনের কানে কোন স্মৃতিটা উস্কানি দেয় ভাসতে বলে প্রেমের বানে পত্র দিয়ো, পত্র দিয়ো৷ আর না হলে যত্ন করে ভুলেই যেয়ো, আপত্তি নেই৷ গিয়ে থাকলে আমার গেছে, কার কী তাতে? আমি না হয় ভালোবেসেই ভুল করেছি ভুল করেছি, নষ্ট ফুলের পরাগ মেখে পাঁচ দুপুরের নির্জনতা খুন করেছি, কী আসে যায়? এক জীবনে কতোটা আর নষ্ট হবে, এক মানবী কতোটা আর কষ্ট দেবে!
✪পৃথক পাহাড়
আমি আর কতোটুকু পারি ?
কতোটুকু দিলে বলো মনে হবে দিয়েছি তোমায়, আপাতত তাই নাও যতোটুকু তোমাকে মানায়।
ওইটুকু নিয়ে তুমি বড় হও, বড় হতে হতে কিছু নত হও নত হতে হতে হবে পৃথক পাহাড়, মাটি ও মানুষ পাবে, পেয়ে যাবে ধ্রুপদী আকাশ।
"আর না হলে যত্ন করে ভুলেই যেয়ো, আপত্তি নেই। গিয়ে থাকলে আমার গেছে, কার কী তাতে? আমি না হয় ভালোবেসেই ভুল করেছি ভুল করেছি, নষ্ট ফুলের পরাগ মেখে পাঁচ দুপুরে নির্জনতা খুন করেছি, কী আসে যায়?
"এখন যৌবন যার, মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়! এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়!!"
কিছু কিছু বইয়ের রেটিং হয় না, সর্বোচ্চ দিলেও হয় না, এ বই তেমনই এক সৃষ্টি! কবিতার মত গুরুপাচ্য বস্তু আমার হজম হয় না, কিন্তু এটা যে তার চেয়েও বড় কিছু! উপরের পঙক্তিগুলো স্মৃতি ঘেটে লেখা, কিছু শব্দ এদিক ওদিক হতে পারে। তবে মেস লাইফের পুরো পাঁচটা বছর নিচের চরণগুলো দেখে কাটিয়েছি প্রতিটা দিন
"আমি নাহয় ভালোবেসেই ভুল করেছি, নষ্ট ফুলের পরাগ মেখে, পাঁচ দুপুরের নির্জনতা খুন করেছি, কী এসে যায়? এক জীবনে কতটা আর নষ্ট হবে? এক মানবী কতটাই বা কষ্ট দেবে?" বিছানার সামনের দেয়ালে, পার্মানেন্ট মার্কার দিয়ে বড় বড় করে লেখা ছিল!
কবিতার আমি কখনোই ভক্ত ছিলাম না। বিরক্ত লাগত, অর্থহীন কথাবার্তা। ওষুধ যেমন তেতো হলেও জোর করে খাওয়া লাগে, স্কুলে থাকতে ঠিক সেরকমভাবে কবিতা মুখস্ত করতে হত আমাকে। আর এই আমাকে কবিতার পাঁড় ভক্ত বানিয়ে দিয়েছে যে দুজন কবি, তাদের একজন হলেন হেলাল হাফিজ।
এদেশের তরুণদের কাছে হেলাল হাফিজ এক আশ্চার্য্যের নাম, এক বিষ্ময়ের নাম। এখনকার যুগে যেখানে মানুষ চোখের আড়াল হলেই মনের আড়াল হয়, সেখানে সেই আশির দশকে কোন এক নব্য কবি কি একটা কবিতার বই লিখে গিয়েছিল, একটা মাত্র বই লিখেই ডুব দিয়েছিল, জনসম্মুখে আসেনি আর কখনো, পত্রিকার আলোচনায় থাকত না কখনো, তার কবিতা মানুষ খুঁজে খুঁজে পড়বে, এটা তো একটা পুরো অসম্ভব মাত্রার বিষ্ময়ের ব্যাপার! অথচ এটাই ঘটেছে, ঘটছে প্রতিনিয়ত। 'যে জলে আগুন জ্বলে'র মোহ এতটাই প্রবল যে আজীবন তা মানুষকে টানবে।
আর টানবে নাই বা কেন? মাত্র দু'লাইনের একটা কবিতা- অশ্লীল সভ্যতা। 'নিউট্রন বোমা বোঝ, মানুষ বোঝ না।'- এত কম কথায় এত বিশাল ভাব বোঝাতে আর কোন কবি কি পেরেছিলেন? কিংবা নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়ের 'এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়, এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়।'- এক নজরুল ছাড়া আর কেউ কি পেরেছিল এমনভাবে তরুণদের উদ্দীপ্ত করতে?
হেলাল হাফিজের কবিতা থেকে আমার অসম্ভব প্রিয় কিছু লাইন-
আমি আর কতটুকু পারি? এর বেশি পারেনি মানুষ। (পৃথক পাহাড়)
তুমি জানো, পাড়া-প্রতিবেশী জানে পাইনি তোমাকে। অথচ, রয়েছ তুমি এই কবি সন্ন্যাসীর ভোগে আর ত্যাগে। (প্রতিমা)
কষ্ট কেবে কষ্ট হরেক রকম কষ্ট আছে কষ্ট নেবে কষ্ট! ..... ..... ..... ..... .... আর কে দেবে আমি ছাড়া আসল শোভন কষ্ট, ��ার পুড়েছে জন্ম থেকে কপাল এমন আমার মত ক'জনের আর সব হয়েছে নষ্ট, আর কে দেবে আমার মত হৃষ্টপুষ্ট কষ্ট। (ফেরীঅলা)
কিছুই পারিনি দিতে, এই নাও বাম হাত তোমাকে দিলাম। (বাম হাত তোমাকে দিলাম)
আমার কষ্টেরা বেশ ভালোই আছেন, মোটামুটি সুখেই আছেন, প্রিয় দেশবাসী; আপনারা কেমন আছেন? (ইদানীং জীবন যাপন)
ইচ্ছে ছিল রাজা হব, তোমাকে সম্রাজ্ঞী করে সাম্রাজ্য বানাবো, আজ দেখি রাজ্য আছে, রাজা আছে ইচ্ছে আছে শুধু তুমি অন্য ঘরে। (ইচ্ছে ছিল)
ইচ্ছে হলে দেখতে দিও দেখো, হাত বাড়িয়ে হাত চেয়েছি রাখতে দিও, রেখো। (অমীমাংসিত সন্ধি)
আর না হলে যত্ন করে ভুলেই যেও, আপত্তি নেই। গিয়ে থাকলে আমার গেছে, আর কী তাতে? আমি নাহয় ভালবেসেই ভুল করেছি ভুল করেছি, নষ্ট ফুলের পরাগ মেখে পাঁচ দুপুরের নির্জনতা খুন করেছি, কী আসে যায়? এক জীবনে কতোটা আর নষ্ট হবে, এক মানবী কতোটা আর কষ্ট দেবে! (প্রস্থান)
এটা আমার পড়া তৃতীয় কবিতার বই৷ যদিও আগের দুটো কবিতার বই না বলে ফেসবুক স্ট্যাটাস সমগ্র বললেই বেশি মানায়।
যাইহোক ৬৯ থেকে ৮৫ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে লেখা ৫৫ টি কবিতা নিয়ে প্রকাশিত এই বইটিতে নানা ধরনের কবিতার স্বাদ পাবেন৷ অনেকেই বইটি পড়েছেন, বইপড়ুয়া নয় এমন অনেকের বাসাতেও কবিতার বই হিসেবে এই বইটি দেখা যায়। বেশ কিছু কবিতা প্রেমের হলেও অনেকগুলো রাজনৈতিক, সামাজিক, মনস্তাত্ত্বিক কবিতাও রয়েছে বইটিতে।
নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়
এখন যৌবন যার, মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়
এটি লেখকের বহুল পঠিত কবিতার একটি। ৬৯ এর রাজনৈতিক অস্থিরতা, মুক্তির আন্দোলনে যুবক শ্রেণীকে অনুপ্রাণিত করার জন্য রচিত এই কবিতাটি নানা সময়ে যৌক্তিক আন্দোলনে অনুপ্রেরণা জুগিয়ে চলছে।
অস্ত্র সমর্পণ
আবার প্রণয় হবে মারণাস্ত্র তোমার আমার। কবিতার শেষ লাইন হিসেবে পুরো কবিতার বিষয়বস্তু উঠে এসেছে লাইনটিতে। যুদ্ধ শেষে অস্ত্র সমর্পণ এর সময়ে লেখা কবিতাটিতে দেশের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে। দেশের দুর্দিনে আবারো অস্ত্র ধরতে সংকোচ করা হবে না বলেও কবি জানান দেন কবিতাটির মাধ্যমে ।
ইচ্ছে ছিলো
প্রেমের কবিতা হিসেবে আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে এটা। প্রেমিকাকে নিয়ে প্রেমিকের ইচ্ছা, স্বপ্ন আর আর তাকে না পাওয়ার হাহাকার দিয়েই কবিতাটির সমাপ্তি।
ফেরিওয়ালা
কষ্ট নেবে কষ্ট, হরেক রকম কষ্ট আছে, কষ্ট নেবে কষ্ট। কবিতাটি কবির দুঃখের দিনগুলো বহিঃপ্রকাশ। পাওয়া না পাওয়ার জীবনে অনেক অপ্রাপ্তি থেকে প্রাপ্ত দুঃখ নিয়েই লেখা কবিতাটি।
প্রস্থান
এখন তুমি কোথায় আছো কেমন আছো, পত্র দিও।
কবির বহুল পঠিত কবিতার মাঝে এটিও অন্যতম। ভালোবাসার মানুষের সাথে কাটানো সময়ের স্মৃতিচারণ করা হয়েছে কবিতাটি। অভিমানে ভুলে যেতে বলা হয়েছে সেই সময়গুলোকে।
এই কবিতার বাইরেও বেশ কিছু কবিতা বহুল পঠিত আছে লেখকের। তৃষ্ণা, ঘরোয়া রাজনীতি, ডাকাত,হিজলতীর সুখ, নেত্রকোনা, যার যেখানে জায়গা ইত্যাদি কবিতাগুলো পড়লে কবির প্রতিভা উপলব্ধি করতে সহজ হবে।
আজ অনেকদিন পর কি মনে করে একটা কবিতার বই নিয়ে বসলাম। অন্য কিছুই পড়তে ইচ্ছে হচ্ছিলো না। আজকের আবহাওয়া টাও কবিতা পড়ার অনুকূল।
ছোটবেলা থেকেই আমি একটু ওভারম্যাচিউরড পড়ুয়া। আমার কৈশোরে আমি যত জনরার বই পড়তাম, এখন তার সিকিভাগও পড়া হয়না। কৈশোরের সেই রঙিন দিনগুলোতে কবিতা পড়ার নেশা তৈরী হয়ে গিয়েছিল। কবিতা পড়তাম, লিখতাম, টুকটাক আবৃত্তির অপচেষ্টাও করে পরে বাদ দিয়েছি।
ওই সময়টায় বাংলা সাহিত্য, বিশেষত কবিতার একটা স্ফূরণকাল ছিল। ৮০-৯০ এর দশকের কথা বলছি। পত্রিকা গুলোর সপ্তাহান্তের সাহিত্য পাতা ছিল সেইরকম সমৃদ্ধ। এইসব সাহিত্য পাতার লেখা থেকেই পরিচয় রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, হেলাল হাফিজ এবং আরো অনেক লেখকের সাথে। খুব মিস করি সেই স্বর্ণালি দিনগুলো। আজকের প্রজন্ম অনেক কিছু নিয়ে ব্যস্ত। দুনিয়া হাতের মুঠোয়। তবুও কি তারা নিজেদের সাহিত্যকে জানতে, বুঝতে পারছে?? এইসব কালজয়ী দুর্দান্ত কবিতা পড়বার, বুঝবার সময় কি তাদের আছে??
যাই হোক!! সেই ছোট্টবেলার অধীর আগ্রহী মন মরে গেছে। সেই লেখার হাত হারিয়ে গেছে, কবিতা পড়া হয় এখন কালে ভদ্রে। তবুও আজ হেলাল হাফিজ এর "যে জলে আগুন জ্বলে" বইটা হাতে নিয়ে প্রিয় কিছু কবিতা পড়লাম। এইসব কবিতা পড়তে গেলে যেন এক ঘোরলাগা সময়ে চলে যাই। বুকের ভেতর অচেনা অনুভূতিরা ফিরে আসে, দ্রিম দ্রিম মাতাল ব্যাকুলতা আর ভাংচুর তোলপাড় অবশতা। ওইসময়ের, এইসব লেখকের, এইসব কবিতার কোনো রিভিউ হয়না। দেয়া সম্ভব নয়। এটা নিজেকে পড়ে অনুভূতি ধারণ করতে হবে।
কবিতায় ডুবে গিয়ে এই পড়ন্ত বিকেলে মনে হল এই কথাগুলো লিখতেই হবে আমাকে৷ তাই অনুভূতির শব্দপ্রকাশ। এর বেশি কিইবা পারে মানুষ!!!
প্রথমেই বলে নেই আমি কবিতাভক্ত নই। স্কুল-কলেজে ঠেকে কিছু কবিতা পড়েছি। কিন্তু এরপর হাতে গোনা দু-একটা কবিতার বই ছাড়া কবিতা পড়া হয়নি। হেলাল হাফিজের নাম অনেক আগে থেকে শুনতাম সবার মুখে। কেন যেন হঠাৎ আগ্রহ হল তাঁর লেখা কবিতার বই পড়ব। বই খুঁজতে যেয়ে অবাক হলাম যে তাঁর মাত্র দুটো কবিতার বই বের হয়েছে। দুটো বইয়ের মাঝে ব্যবধান ২৬ বছর 😲
আগ্রহ আরো বেড়ে গেল। শুরু করলাম তাঁর প্রথম কবিতার বই "যে জলে আগুন জ্বলে" যা ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত হয়েছিলো। ৫৬ টি কবিতার সংকল বইটি। কবিতাগুলো লেখা হয়েছে ১৯৬৯ থেকে ১৯৮৫ সালের মধ্যে। পড়া শুরু করেই বুঝলাম কেন এত প্রশংসা সবার মুখে। মুক্তিযুদ্ধ, নারী, প্রেম, বিরহ, সভ্যতা - কী নেই কবিতাগুলোয়! মুগ্ধ হয়ে গোগ্রাসে গিলেছি বলা চলে।
আমি কবিতাপ্রেমী নই। জীবনান্দ এবং হেলাল হাফিজের প্রেমে বুঁদ আমার বাবা প্রায় সকালেই চায়ের কাপ হাতে আমাদের সবুজঘেরা ব্যালকনিতে আমাকে ডাক দেন। তারপর অত্যন্ত আগ্রহের সাথে প্রিয় কবিতার প্রিয় লাইনগুলো আমার কানে দেন। আমি শুনি, ভালো লাগে। তবু বইয়ে হাত দেবো ইচ্ছে হলেই ছোট গল্প কিংবা উপন্যাস আমাকে টেনে হিঁচড়ে তাদের কাছে নিয়ে যায়। অদ্ভুত এক মন খারাপের দিনে যেন অভিমান করেই হাতে তুলে নিলাম হেলাল হাফিজ। মনে হলো আমার মতোই দিশেহারা মন নিয়ে কবি কোথায় যাবে বুঝতে পারছেননা। ইচ্ছে হলো তাকে বলি "একটু জিরোন। এতো দুঃখ আপনাকে ক্লান্ত করেনি?" তখনই মনে হলো, কবির উত্তর হবে খুবই সোজা- "আমার দুঃখ আছে কিন্তু আমি দুঃখী নই, দুঃখ তো সুখের মতো নীচ নয়, যে আমাকে দুঃখ দেবে।"
যে জলে আগুন জ্বলের কবিতাগুলো জলে ভেসে যায়নি,হৃদয়ের গহীনে আগুন জ্বেলে রয়েছে। কবির কবিতার বইটি প্রকাশিত হয় ১৯৮৬ তে, কবিই পেরেছেন তুমুল মিছিলের মধ্যেও ধ্রুপদী প্রেমের ঝড় তুলতে,স্লোগানের মধ্য দিয়ে ভালোবাসতে। প্রেম আর সংঘাতের এক অনন্য মিশেলে কবি কখনো কোমল, কখনো বা বিদ্রোহী,কখনো আকুল আহ্বান,কখনো প্রলয়ের ডাক।
কিছু প্রিয় লাইনঃ
"আমি আর কতোটুকু পারি ?
কতোটুকু দিলে বলো মনে হবে দিয়েছি তোমায়, আপাতত তাই নাও যতোটুকু তোমাকে মানায়।
ওইটুকু নিয়ে তুমি বড় হও, বড় হতে হতে কিছু নত হও নত হতে হতে হবে পৃথক পাহাড়, মাটি ও মানুষ পাবে, পেয়ে যাবে ধ্রুপদী আকাশ।
আমি আর কতোটুকু পারি ? এর বেশি পারেনি মানুষ।"
"এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময় এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়।"
"এক জীবনে কতোটা আর নষ্ট হবে, এক মানবী কতোটাই বা কষ্ট দেবে!"