Jump to ratings and reviews
Rate this book

তিন পয়সার জ্যোছনা

Rate this book
১৯৫০-এর দশকের দেশে একদিকে চলছে ভাষার লড়াই, অন্যদিকে ভাষার সাধনা। পাকিস্তানের জন্মের পর দ্রুতই নতুন এক অনুভূতি ও স্বপ্নের কথা বলতে শুরু করেছেন সাহিত্যিকেরা। সবকিছু পাল্টে দেওয়ার আকাঙ্ক্ষায় দারুণ দাপটে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছেন হাসান হাফিজুর রহমান, শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, আলাউদ্দিন আল আজাদ, সাইয়িদ আতীকুল্লাহ, কাইয়ুম চৌধুরী, মুর্তজা বশীরের মতো তরুণেরা।

সৈয়দ শামসুল হকের যৌবনকালের স্মৃতিতে ধরা পড়েছে আমাদের সংস্কৃতির স্বর্ণযুগের এক অসামান্য ছবি।

240 pages, Hardcover

Published February 1, 2014

11 people are currently reading
190 people want to read

About the author

Syed Shamsul Haque

191 books98 followers
Syed Shamsul Haque (Bangla: সৈয়দ শামসুল হক) was a Bangladeshi poet and writer. Haq lived alternately in Dhaka and London. He wrote poetry, fiction, plays - mostly in verse and essays. He, the youngest writer to be honored with Bangla Academy Award, achieved it at the age of 29. He was honored with Ekushey Podok in 1984.

(সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর কুড়িগ্রামে জন্মেছিলেন। বর্ণাঢ্য লেখকজীবনের অধিকারী সৈয়দ হক। কবিতা, ছোটগল্প, উপন্যাস, কাব্যনাট্য, চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য, চলচ্চিত্রের গান – যা লিখেছেন সবকিছুতেই পেয়েছেন জনপ্রিয়তা, সাফল্য।

মাত্র ২৯ বছর বয়সে ১৯৬৪ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান সৈয়দ হক। এখন পর্যন্ত বাংলা একাডেমি পুরস্কার পাওয়া সর্বকনিষ্ঠ লেখক তিনি।

সৈয়দ হকের লেখালেখির শুরু তাঁর শৈশবেই। ম্যাট্রিক পরীক্ষার আগে লিখে ফেলেন দুই শতাধিক কবিতা। ১৯৫১ সালে ফজলে লোহানী সম্পাদিত ‘অগত্যা’ পত্রিকায় ‘উদয়াস্ত’ নামে তাঁর একটি গল্প ছাপা হয়। সেটাই তার প্রথম ছাপা হওয়া লেখা।

সেই বছরই বাড়ি থেকে পালিয়ে বোম্বে (বর্তমানে মুম্বাই) চলে গিয়েছিলেন তিনি। কাজ করেন পরিচালকের সহকারী হিসেবে। কয়েক বছর পর দেশে ফিরে আসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হলেও লেখাপড়া শেষ করেননি। পুরোপুরি মনোযোগ দেন লেখালেখিতে।

১৯৫০-এর দশকেই প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘দেয়ালের দেশ’। এ সময় চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য লেখা শুরু করেন তিনি। তাঁর লেখা চিত্রনাট্যে নির্মিত হয় ‘সুতরাং’, ‘কাগজের নৌকা’, ‘মাটির পাহাড়’, ‘তোমার আমার’। তাঁর উপন্যাস ‘নিষিদ্ধ লোবান’ অবলম্বনে ‘গেরিলা’ চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করা হয়।

সৈয়দ শামসুল হক চিত্রনাট্যের পাশাপাশি চলচ্চিত্রের জন্য প্রচুর গান লিখেছেন। তাঁর লেখা বিখ্যাত গানগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’, ‘তুমি আসবে বলে কাছে ডাকবে বলে’, ‘এই যে আকাশ এই যে বাতাস’।

তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘একদা এক রাজ্যে’, ‘বৈশাখে রচিত পঙক্তিমালা’, ‘পরানের গহীন ভিতর’, ‘অপর পুরুষ’, ‘অগ্নি ও জলের কবিতা’।

বিখ্যাত উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে ‘খেলারাম খেলে যা’, ‘নিষিদ্ধ লোবান’, ‘সীমানা ছাড়িয়ে’, ‘নীল দংশন’, ‘বারো দিনের জীবন’, ‘তুমি সেই তরবারী’, ‘কয়েকটি মানুষের সোনালী যৌবন’, ‘নির্বাসিতা’।

‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’, ‘নুরলদীনের সারা জীবন’ তাঁর বিখ্যাত কাব্যনাট্য। এ ছাড়া অসংখ্য অনুবাদ এবং শিশুসাহিত্যে নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন সৈয়দ হক।)

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
17 (29%)
4 stars
35 (60%)
3 stars
4 (6%)
2 stars
1 (1%)
1 star
1 (1%)
Displaying 1 - 13 of 13 reviews
Profile Image for Harun Ahmed.
1,651 reviews418 followers
December 27, 2023
পঞ্চাশের দশকের কবিদের মধ্যে সৈয়দ শামসুল হক দৃষ্টিগ্রাহ্যভাবেই ব্যতিক্রম। তিনি তার সমসাময়িক কবিদের মতো একেবারেই নেতির চর্চা করেননি। তার কবিতায় ( কথাসাহিত্য ও নাটকেও ) সামষ্টিক চেতনা প্রবল। প্রায়ই সৈয়দ হকের কবিতার "আমি"র মধ্যে মিশে থাকে "আমরা" যা সৃষ্টি করে ঐক্য, ইতিহাসচেতনা ও সংহতির বোধ।
এই লেখকের আত্মজীবনীতেও যে সেই একই ধারা বজায় থাকবে তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। তিনি "আমি"র বদলে গল্প করেছেন "আমাদের।" নিজের শৈশব, কৈশোর আর তারুণ্যের সময়টাকে ধরে রেখেছেন লেখক। এজন্য নিজের গল্পে অনায়াসে প্রবেশাধিকার দিয়েছেন অন্যদের। বাংলাদেশের সাহিত্যের জন্য মাইলফলক এবং অদ্যাবধি অনতিক্রম্য পঞ্চাশের দশকের সাহিত্য আন্দোলন এবং এর প্রধান কুশীলবদের ব্যক্তিগত ও সাহিত্যিক অভিযাত্রা সৈয়দ হক বর্ণনা করেছেন নিপুণভাবে। নিজে চিত্রনাট্যকার হওয়ায় পুরো আত্মজীবনীর মধ্যেও আছে তার ছায়া। গল্পে ফ্ল্যাশব্যাক, ফ্ল্যাশ ফরোয়ার্ড ব্যবহার করে লেখক তৈরি করেছেন এক অদ্ভুত আবেশের। ছেলেবেলার গল্প করতে করতে চলে যাচ্ছেন তার ভারত পলায়নের গল্পে, সেখান থেকে চলে যাচ্ছেন হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত "একুশে ফেব্রুয়ারী" সংকলন হওয়ার ঐতিহাসিক গল্পে, সেখান থেকে যাত্রা করছেন পিতার কাছে যা আবার ফেরত আনছে তার ছেলেবেলা। বিউটি বোর্ডিং, ঢাকা, আড্ডা, দেশভাগ, বাংলা ভাষায় উর্দু প্রবেশ করানোর অপচেষ্টা ও প্রতিরোধ, শহীদ কাদরী, আল মাহমুদ, শামসুর রাহমান - এসব মিলিয়ে "তিন পয়সার জ্যোছনা" ভাস্বর।

(স্মৃতিকথায় সৈয়দ হকের বাবার যে চিঠিটা আছে তা প্রতিবার পড়ে আমি রোমাঞ্চিত হই। চিঠিটা এমন -

"সম্প্রতি তোমাকে লক্ষ করিয়া আমি বিস্ময়াপন্ন হইলাম । তোমাকে ঠিক চিনিয়া উঠিতে পারিলাম না। সন্দেহ হয় আমিই তোমার জন্মদাতা কি না। বোধ করি জগৎও তোমাকে জন্ম দিয়াছে।জগতের ভাগই অধিক বলিয়া দেখিতে পাই । পিতা হিসাবে আমি নিমিত্ত মাত্র ।"
প্রত্যেক বাবা যদি সত্যটা বুঝতো!)
Profile Image for Arupratan.
235 reviews385 followers
January 31, 2025
আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ভরকেন্দ্র দুটো। কলকাতা আর ঢাকা। সাহিত্যসৃষ্টির উৎকর্ষতার দিক দিয়ে দুটি শহরই একে অন্যের পরিপূরক। ভাষা যেহেতু একটাই, তাই দুটো শহরের সৃষ্টিসম্ভার নিয়ে "আমরা-ওরা" দড়িটানাটানি নেহাতই অপ্রয়োজনীয়। তবু রাজনৈতিক কারণে রেষারেষি হয়ে থাকে। শহীদ কাদরীর কবিতা কিংবা শাহাদুজ্জামানের ছোটগল্প আমাকে যতোই মুগ্ধ করুক না ক্যানো, দেশবিচারে এঁরা আমার কাছে বিদেশি। কিন্তু সাহিত্যের চলিষ্ণু উঠানে ভেদাভেদের দাড়িপাল্লা বসানো থাকে না। সাহিত্যের কোনো মানচিত্র হয় না। জোর করে মানচিত্র খাড়া করার চেষ্টা করলেও, পাঠকের টেবিলে কর্পূরের মতো উবে যায় সারি সারি উদ্বায়ী কাঁটাতার।

সৈয়দ শামসুল হকের অনবদ্য এই আত্মকথাটি পড়ে আমার এই বিশ্বাসটি আরো সুদৃঢ় হলো। ইংরেজ-শাসনোত্তর উপমহাদেশে মানুষের যাপিত জীবন আর সৃষ্টির উদ্দীপনাকে বহুলাংশে নিয়ন্ত্রণ করেছে রাজনৈতিক ঘটনাক্রম। পঞ্চাশ/ষাট/সত্তরের দশকের ঢাকা নগরীর একজন বাঙালি যুবকের মনে যদি রেখাপাত করে পাকিস্তান আমলের ভাষাসন্ত্রাস কিংবা আত্মপরিচয়গত দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, কলকাতাতেও একজন বাঙালি যুবকের চেতনাজুড়ে ছড়িয়ে ছিল স্বপ্নভঙ্গের কাচের টুকরো কিংবা রাষ্ট্রবিরোধী রাজনৈতিক ডামাডোলের গনগনে আঁচ। পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি হিসেবে এপারের কথা আমার বেশ খানিকটা জানা ছিল। সৈয়দ হকের বইটি পড়ে সেই সময়ের ঢাকা নগরীর সঙ্গে চেনাজানা হলো!

দেখলাম, একজন উঠতি সাহিত্যিকের মানসিক চড়াই-উৎরাইয়ের গ্রাফ সবজায়গাতেই সমদৃশ। সৈয়দ হকের আত্মজিজ্ঞাসা, সাহিত্যিক হিসেবে তাঁর প্রস্তুতিপর্ব, তাঁর বন্ধু-পরিজনদের সঙ্গবর্ণনা, সমকালীনতার সঙ্গে একজন সংস্কৃতিমনস্ক যুবকের মনোরাসায়নিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া-বিক্রিয়া, এই সবকিছুই আমার পরিচিত। প্রায় একইরকম অস্থিরতা ও আত্মবিশ্লেষন দেখি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কিংবা শঙ্খ ঘোষের স্মৃতিচারণায়। যদিও স্বীকার্য, ঠিক যেমন হারিয়ে গেছে সেদিনের সেই শহর কলকাতা, সৈয়দ হকের সেই ঢাকা শহরেরও কতটুকুই বা অবশিষ্ট রয়েছে এখন?

আজকের এই অস্থির এবং বিচিত্রগামী রাজপথে দাঁড়িয়ে, ওলটপালট মন নিয়ে, দুই শহরের যুবক-যুবতীদের জন্যই শামসুর রাহমান লিখে রেখেছিলেন দৃপ্ত উচ্চারণ :

প্রলয়ে হইনি পলাতক,
নিজস্ব ভূভাগে একরোখা
এখনও দাঁড়িয়ে আছি, এ আমার এক ধরনের অহংকার!


প্রশ্ন হচ্ছে, আজ থেকে পঞ্চাশ/ষাট বছর পরের কোনো যুবক কিংবা যুবতীর জন্য আমরা কি লিখে রাখতে পারছি এমন কিছু অবিনাশী অক্ষরমালা?
Profile Image for Shadin Pranto.
1,470 reviews560 followers
October 3, 2019
বেশিরভাগ মানুষের আত্মাই নেই, তায় আত্মজীবনী! যাঁদের আত্মা আছে, তাঁরা সকলেই যে আত্মের কথা লিখবার জন্যে কলম ধরেছেন তা বলতে পারি নে।

সৈয়দ শামসুল হকের আত্মজীবনীতে অমলিন হয়ে আছে গেল শতকের পঞ্চাশের দশকের ঢাকা। সৈয়দ শামসুল হকের সেই ঢাকার সাথে জড়িয়ে আছে বাংলার সাহিত্য জগতের কত রথী-মহারথী, সৈয়দ হকের লেখাতেই উজ্জ্বল হয়ে আছেন এমন অনেক সম্ভাবনাময় তারকা যাঁদের পতন হয়েছে ভালোভাবে উদিত হওয়ার আগেই।

সমারসেট মম চন্দ্র খরিদ করেছিলেন ছয় পয়সায় ( The Moon and Sixpence), আর সৈয়দ হক তাঁর সুপাঠ্য আত্মজীবনীতে জ্যোছনা কিনলেন তিন পয়সায়!

সৈয়দ হক তাঁর আত্মজীবনীতে আমি আমি করেন নি, বরং আমরা আমরা'র প্রাধান্য ছিল। অন্যের কথা অপকটে লিখলেও, নিজের ক্ষেত্রে সেই অকপটভাবের ভালোই অভাব অনুভব করেছি।

এই আত্মজীবনী পঞ্চাশের দশকের এক উদীয়মান নক্ষত্রের একক কথা নয়, বরং বাংলা সাহিত্যের পঞ্চাশের দশকের এক প্রামাণ্যদলিল এই বই!
Profile Image for Manzila.
166 reviews159 followers
April 13, 2024
৩.৫/৫

স্মৃতিকথা ব্যাপারটাই কেমন যেন কোলাজ করা ছবির মতো – টুকরো টুকরো জুড়ে দিয়ে একটা বড় ছবিকে অর্থ দেয়া হয়। আবার আমাদের যারা প্রিয় লেখক বা কবি, তাদের "হয়ে উঠা"র গল্পটা শুনতেও আমাদের খুব ভালো লাগে। সৈয়দ শামসুল হকের “তিন পয়সার জ্যোছনা”র নির্যাসও অনেকটা সেরকমই।

কেমন ছিলো সেই পঞ্চাশের দশক? খুব বেশিদিন হয়নি আমরা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তি পেয়েছি আর পূর্ব ও পশ্চিম এই দুই খন্ড নিয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে। আর এই পঞ্চাশের দশকের কিছু লেখক-কবি-চিত্রকরই “তিন পয়সার জ্যোছনা”র মূল নায়ক নায়িকা। রংপুর থেকে ঢাকায় আসা কিশোর সৈয়দ শামসুল হকের ইচ্ছে ছিলো “অগত্যা”য় লেখা ছাপাবেন, লিখেও ফেললেন প্রবোধকুমার সান্যালের “ক্ষয়” গল্পের অনুকরনে একটি গল্প “উদায়স্ত”। অগত্যার অফিসে দীর্ঘ অপেক্ষার পরে দেখা হল সম্পাদক ফজলে লোহানীর সঙ্গে । এই সেই ফজলে লোহানী বোম্বে থেকে ফিরে যার সাথে আরও গভীর হবে সৈয়ক হকের বন্ধুত্ব। আবার এই ফজলে লোহানীই ছিলেন কী ভীষণ ছন্নছাড়া ধরনের চিন্তাধারার মানুষ – আজ বলছেন উপন্যাস লেখবেন আবার চুক্তিকরা বইয়ের জন্য কেনা কাগজ বিক্রি করে ফূর্তি করছেন।

কথায় কথায় এসেছে বিউটিবোর্ডিংয়ের আড্ডার গ���্প – একদিন শহীদ কাদরীই নিজের বাড়ির কাছের এই আস্তানার খোঁজ দিয়েছেন সৈয়দ হকদের। সৈয়দ হকের ছাপ্পান্ন থেকে আটান্ন’র লেখাগুলোর বেশিরভাগই এখান থেকে লেখা। এই আড্ডার সূত্র ধরে আসেন শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহসহ আরও অনেকের কথা। কত সদ্য লিখে ফেলা কবিতা শামসুর রাহমান এই বিউটিবোর্ডিংয়েই সবাইকে পড়ে শুনিয়েছেন! ড্রাই হিউমারের জন্য বিখ্যাত শামসুর রাহমানের কাহিনিটাও খুব মজার। উনি কবি হওয়ার আগেই দুই দুইবার দুজন তাঁকে বলেছিল – আপনি কি কবি? আর শামসুর রাহমানের বড় ভাইয়ের ছিলো ছোট ভাইকে নিয়ে খুব গর্ব – তার মতে তাদের বাচ্চু কাজী নজরুল ইসলামের চেয়েও ভালো কবিতা লেখেন।আর কাছেই নওরোজ কিতাবিস্তান – যেখানে একদিন প্যারিস থেকে আসে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ’র “চাঁদের অমাবস্যা”র পান্ডুলিপি, গাঢ় নীল আর কালোতে ওয়ালীউল্লাহ’রই হাতে আঁকা যার প্রচ্ছদ। প্রচ্ছদ প্রসঙ্গে আরও আসবে কামরুল হাসান আর কাইয়ুম চৌধুরীর কথা যাদের তুলির আঁচড়ে সাহিত্যিক বন্ধুদের সদ্য প্রকাশিত বইগুলো রঙ্গিন হয়ে উঠবে।

বিউটিবোর্ডিংয়ের আড্ডা ছাড়াও আমরা পাব “সওগাত” প্রেসের আড্ডার গল্প যেখানে একদিন “তিরিশের কবিতা তিরিশের কবিতা” এই আলাপে তিরিশ সংখ্যাটার সাথে কবিতার সম্পর্ক জিজ্ঞেস করায় তিরষ্কৃত হয়েছিলেন সৈয়দ আতীকুল্লাহ’র কাছে। ঠিক এভাবেই তিনি আরেকদিন তিরষ্কৃত হয়েছিলেন “শেষের কবিতার পরের কবিতা” গল্পটি পাঠ করার পর – খালেদের ভাষায় মানব সভ্যতার ইতিহাসে এতো বাজে গল্প আর হয় না! সেদিনই হতে পারত সৈয়দ হকের সাহিত্য জীবনের শেষদিন যদি না ফজলে লোহানী এসে কাঁধে হাত রেখে বলতেন – “ওই যে ওদের দেখছো, একদিন ওরা কেউ থাকবে না, তুমি থাকবে।” এই বইতে দুইবার উল্লেখ করেছেন সৈয়দ হক বিশিষ্ট ঔপন্যাসিক শওকত ওসমানের একটি কথা – “একেকটি দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের পেছনে নিরানব্বইটি লাশ, তারা পারেনি দাঁড়িয়ে থাকতে – এটা দৈবের করণ নয়, দাঁড়িয়ে থাকার জেদটির অভাবের জন্যই নিশ্চয়”। আর এর পরেই সৈয়দ হক যোগ করেন – তাকে সেই জেদ জুগিয়েছিলেন ফজলে লোহানী।

আরও ভালো লাগে এই বইতে যতবার এসেছে সৈয়দ হকের বাবার প্রসঙ্গ যিনি একদিন জোর করতেন লেখককে ডাক্তার হওয়ার জন্য। এই ভয়ে বাড়ি থেকেই পালিয়ে গিয়েছিলেন সৈয়দ হক। যখন বাড়ি ফিরে এলেন রংপুর শহরেই বাবার সাথে দেখা হল, পালিয়ে যাওয়ার বদলে আরও বুকে জড়িয়ে ধরলেন। একসময় ছেলের জেদের কাছে হাল ছেড়ে দিলেন বাবা, আর বললেন - লেখবেই যদি, দামি কলমে লিখবে আর কাগজটাও হওয়া চাই দামী, কারন বিড়ি বাঁধার শ্রমিককেও অন্তত পাঁচশো টাকার সরঞ্জাম নিয়ে বসতে হয়। এই বাবাই মৃত্যুর সময় জানতে চেয়েছিলেন সৈয়দ হক কী চান তাঁর কাছে। বাবার মন রাখতে একটা বই ছাপানোর টাকা চেয়ে নিয়েছিলেন সৈয়দ হক।

সমারসেট মমের “The Moon and Sixpence”র মতোই তিন পয়সায় জ্যোছনা কিনেছিলেন সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক আর এই বইয়ের মধ্য দিয়ে তার ছিটেফোটা ছড়িয়ে দিয়েছেন পাঠক হৃদয়ে। যদি বইটার একটা খারাপ দিক থাকে তা হলো খুব অগোছালো করে আগের কাহিনি পরে পরের কাহিনি আগে করে লেখা – যেমন ফজলে লোহানীর সাথে বন্ধুত্বের গল্প বইয়ের মাঝখান থেকেই পাব কিন্তু কী করে তাদের দেখা হল সেটা পাওয়া যায় বইয়ের একদম শেষে। একটু গুছিয়ে এলে সৈয়দ হকের পাশাপাশি অন্যান্য কুশীলবদের ধরতেও আরেকটু সুবিধা হত।
Profile Image for Adham Alif.
335 reviews81 followers
January 28, 2024
বাংলাদেশের সাহিত্য জগতে পঞ্চাশের দশকটা বেশ তাৎপর্যবহ। দেশভাগের পর বহু লেখক কলকাতায় চলে যান, কেউ আবার ঢাকায় আসেন। ঢাকায় তখন একদল যুবক নিজেদের এক সাহিত্যিক বলয় তৈরীর চেষ্টায় আছেন। এই বইয়ের মাধ্যমে তাদের কাজকর্ম, রোজকার আলাপ, ভাবনার জগতে ঘুরে আসার সুযোগ মিলে যায়। এই যুবকেরাই একদিন আধুনিক বাংলা সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি হিসেবে আলোচিত হবেন। তাছাড়া ভাষা আন্দোলন, ভিন্ন জাতীয়তাবাদ ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের শুরুও তো এই সময়টা থেকেই। সেই আলোচনাও উঠে এসেছে নানানভাবে। সৈয়দ সামসুল হকের চমৎকার গদ্যে সে সময় ও সোনালী মানুষের সাথে ঘুরে আসা গেল।
Profile Image for Shotabdi.
818 reviews194 followers
October 26, 2021
আত্মকথা এবং স্মৃতিকথার মিশেলে রচিত এই বইটিতে সৈয়দ হক বলেছেন পঞ্চাশের দশকের ঢাকার কথা। যেই ঢাকাতে একগুচ্ছ কবিতা-গল্প-উপন্যাস আর স্বপ্ন নিয়ে একঝাঁক স্বপ্নবাজ তরুণ হাজির হয়েছিলেন বাংলার সাহিত্যজগতে৷
সৈয়দ হকের এই বইটিকে তাঁর গোটা আত্মজীবনী বলা যাবেনা, বরং তাঁর স্মৃতিতে সমুজ্জ্বল কিছু টুকরো টুকরো মানুষ এবং তাঁদের কাছাকাছি কাটানো সময়ই প্রাধান্য পেয়েছে বইটিতে।
সবচেয়ে বেশি আছে অগত্যার কাগজ এবং এর স্বপ্নদ্রষ্টা ফজলে লোহানীর কথা। সৈয়দ হকের লেখক জীবনে ফজলে লোহানীর ছিল অনেক অবদান। পরবর্তীতে সাহিত্যজগৎ থেকে লোহানীর সরে যাওয়া যে কতটা বিমর্ষ করেছিল লেখককে, তা অনেকবারই ব্যক্ত করেছেন তিনি।
একটু বেপরোয়া আর দুর্ধর্ষ কিসিমের ছিলেন এই লোহানী। নূরুন্নাহার নামক এক নারী সাহিত্যিক একবার তাঁকে নিজের রচিত একটি বই দিয়েছিলেন, পড়ে মতামত জানিয়ে কিছু লিখে দেয়ার জন্য। লেখিকাটি সরে যাওয়ার মাত্রই বইটি ছিঁড়ে কুটিকুটি করে ফেলে দেন আবর্জনার স্তুপে! না, সাহিত্য বা মতবাদ কোনভাবেই হয়তো রসোত্তীর্ণ ছিলনা বইখানা। বিপত্তি বাঁধে যখন লেখিকা আবার ফিরে এসে বইয়ে নিজের এবং লোহানীর নাম লিখে দিতে চান!
শামসুর রাহমানের সাথে আড্ডার কথা উঠে এসেছে, উঠে এসেছে কবি হিসেবে অন্যকে মর্যাদা দেয়া রাহমানের উদারতার কথা। একবার দিলারা হাশেম শামসুর রাহমানের উপস্থিতিতে কেবল সৈয়দ হকের সাথেই আগ্রহ নিয়ে কথা বলছিলেন। কীভাবে লেখেন তিনি এত স্বাদু গদ্য, কোন কলমে লেখেন, কোন কালিতে লেখেন, এইসব ছেলেমানুষী আগ্রহ শুনে আর স্থির থাকতে না পেরে রাহমান বলে উঠেছিলেন, আচ্ছা, সৈয়দ হক, আপনি কোন টুথপেস্টে দাঁত মাজেন? চুপসে গিয়েছলেন বেচারা দিলারা হাশেম। এমনই ড্রাই হিউমার করার দক্ষতা ছিল তাঁর।
ব্যক্তিগত জীবনে লেখক তাঁর বাবার কথা বারবার বলেছেন। মৃত্যুশয্যায় সাতশ টাকা হাতে দিয়ে বই ছাপাতে তাঁকে বলে গিয়েছিলেন সেই পিতা, যিনি ছেলেকে ডাক্তার বানাতে চেয়েছিলেন এবং লেখালেখির ব্যাপারে একদমই আগ্রহী ছিলেন না। স্ত্রী আনোয়ারা সৈয়দ হকের কথাও বেশ কয়েকবার ভালোবাসাভরে স্মরণ করেছেন লেখক।
এছাড়াও শহীদ কাদরী, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ, আলাউদ্দিন আল আজাদ, আল মাহমুদ, হাসান হাফিজুর রহমান সকলেই এসেছেন চরিত্র হয়ে। স্মৃতিতে এসেছেন বুদ্ধদেব বসু, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ। বিউটি বোর্ডিং এর আড্ডার কথা এবং সাহিত্যিকদের নানা সুখস্মৃতি এবং উত্তরণের কথায় বইটি হয়ে উঠেছে বাংলা সাহিত্যের মহারথীদের বেড়ে ওঠার এক প্রামাণ্য দলিল।
Profile Image for Debashish Chakrabarty.
108 reviews94 followers
April 27, 2021
পুনর্পাঠ

রক্তে নক্ষত্রের আগুণ নিয়েই ঢাকা চষে বেড়িয়েছেন সৈয়দ হক। আর দিনে দিনে সেই আগুণের তাপ শতগুণে ঠিকরে বেড়িয়েছে তার প্রবল ইচ্ছা শক্তিতে কতো না ধারায়। শুধু এই এক স্মৃতিকথা পড়লে বোঝা যায় ইচ্ছা শক্তি আর তীব্র আকাঙ্ক্ষায় মানুষ কোথায��� না পৌঁছাতে পারে! সেই ১৯৪৮ ঢাকায় ক্লাস নাইনে পড়তে আসলেন, ডেরা করলেন লক্ষ্মীবাজারে-ঠিক যখন ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে মুক্তির আনন্দ দেশ জুড়ে- মানুষের মনে নতুন দেশ আর নতুন ভবিষ্যতের স্বপ্ন। কেমন এক ঘোর লাগা সময়- স্বাধীনতার সময়। কতো কিছু যে তখন প্রথম, আর তাই কত তরুণের কাঁধে তখন প্রৌঢ়ের দায় আর আকাশ ছোঁয়ার প্রেরণা। সৈয়দ হকের স্মৃতির সেলুলয়েডে দেখা যায় পঞ্চাশের পুরো একটি দশকে- ঢাকা আর ঢাকার স্বপ্নচারী কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রকাশক, শিল্পী, বই, বইয়ের দোকান, খানা-পিনা, রেস্টুরেন্ট, দাপিয়ে বেড়ানো ঢাকার অলিগলি এমনকি বোম্বের রুপালী জগ���। কোন রকমের পূর্বনির্ধারিত ছকে না বেঁধে বরং স্মৃতি আর স্মৃতির স্রোতে ভেসে-গুড়িয়ে ঢাকা আর ঢাকার মানুষের টুকরা টুকরা ছবি। হালকা সুরে হলেও আঁচ পাওয়া গেছে পাকিস্তান প্রাপ্তির প্রাথমিক সুখ- যা কিনা ছিল পূর্ব বাংলার মুসলমানের যৌক্তিক দাবী, একটা সফল রাজনৈতিক প্রকল্প এবং শেষমেশ সফলভাবে বাস্তবায়িত একটা প্রকল্প। আবার অল্প দিনেই পাকিস্তান নামক এক কিম্ভূতকিমাকার রাষ্ট্রে বাঙালী মুসলমানসহ সমগ্র বাঙালী জাতির গ্রেফতার হয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত। খেয়াল রাখতে হবে এটা সৈয়দ হকের লেখক হবার বয়ান, শুধুই লেখক হবার প্রবল ইচ্ছার বয়ান। এই বয়ানে অনায়াসে উঠে এসেছে কতশত সম্পর্ক! আবার নিজের চরিত্রের খামতিগুলোও কবুল করেছেন পাঠকের সামনেই। অল্প বয়েসে শুধু লেখক হবার প্রবল ইচ্ছায় যে আরেকজন গল্পকারকে অনুকরণ করেছেন তাও অকপটে স্বীকার করেছেন। কারণ, সবাই দেবদূত হয়ে জন্মায় না। বরং হয়ে উঠতে হয়। ধীরে ধীরে পাখা গজায়। তারপর, সবচেয়ে কাছের অগ্রজসম বন্ধু ফজলে লোহানি, যে বোহেমিয়ান-উদ্দাম লোহানি সৈয়দ হকের প্রেরণা, উপদেষ্টা, খানাপিনা সঙ্গী, যে কিনা হাতে ধরে তাকে শিখিয়েছেন কত কিছু-সেই লোহানির চরিত্রের খামতিগুলোও এড়িয়ে যাননি। তাই এই স্মৃতি লেখন এতটা অন্তরঙ্গ-অকপট। অ-কপট সোজাসুজি উদ্দাম অথচ স্নিদ্ধ তিন পয়সার জ্যোছনা।
Profile Image for Infajul Islam Shawon.
12 reviews1 follower
July 15, 2024
পঞ্চাশের দশকে যখন বড়ো একটা পাঠকশ্রেণী কিছুটা মধ্যযুগীয় গল্পে বুঁদ হয়েছিলো, তখন যে কয়েকজন কবি-সাহিত্যিক এটা ভেঙ্গেছেন, যাঁদের অনেকেই ভাষা আন্দোলনের সময়টাতে করছেন ভাষার সাধনা এবং পরবর্তীতে অনেকেই শিল্প-সাহিত্যে হয়ে উঠেছিলেন প্রধান, তাঁদের মধ্যে শামসুর রাহমান, হাসান হাফিজুর রহমান, আল মাহমুদ, শহীদ কাদরী, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ, কাইয়ুম চৌধুরী, মুর্তজা বশীর অন্যতম। তাঁদের মতো তুরণরা যাঁরা ছিলেন ওই সময়ের এক ঝাঁক উজ্জ্বল নক্ষত্র, তাঁরাই একসময় দেখছিলেন মুক্তির স্বপ্ন। সৈয়দ হক তাঁর "তিন পয়সার জ্যোছনা" বইয়ে দারুণভাবে বর্ণনা করছেন সেই সোনালি সময়ের কথা, আমাদের পরিচিত অপরিচিত সবার গল্প বলে গিয়েছেন অকপটে।

বইটা পড়তে যেয়ে আমরা ভুলে যাবো সৈয়দ হকের জীবনী পড়ছি নাকি তখনকার সময়ে কিছু উজ্জ্বল ও সম্ভাবনাময় তরুণের জীবনী পড়ছি, যাঁদের কেউ কেউ তখনই ঝড়ে পড়েছেন—লেখক ভুগেছেন শূণ্যতায়, আবার কেউ কেউ হয়ে উঠেছেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধান এবং গুরুত্বপূর্ণ মানুষ, যাঁদের আজও আমরা স্মরণ করি শ্রদ্ধাভরে। পাতার পর পাতা তিনি নিজেকে নিয়ে বড়ো বড়ো কথা লিখে যান নি। সরলভাবেই বলেছেন আরেকজনের গল্প, প্রকাশ করছেন কৃতজ্ঞতা আর এভাবে তিনিও বড়ো হয়ে উঠেছেন পাঠকের ভেতর।

স্মৃতিচারণ বইয়ে নস্টালজিক হওয়া আর সেটা পাঠককে অনুভব করাতে পারাটা লেখকের বড়ো একটা সফলতা, এই বইয়েও লেখক তা করতে পেরেছেন।

বইয়ের আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছ প্রথাগত রীতির বাইরে বিরামচিহ্নের ব্যবহার। এখানে অধিকাংশ বাক্যই প্রায় ১ পৃষ্ঠা কিংবা আধা পৃষ্ঠাজুড়ে। প্রথমদিকে পড়তে যেয়ে একটু কঠিন মনে হলেও একবার পড়া শুরু করলে বাক্যের ফ্লো আপনাকে ছাড়বে না।
Profile Image for Rashik Reza Nahiyen.
106 reviews14 followers
September 29, 2016
লেখকদের আত্মজীবনী সবসময়ই আমার ভাল লাগে। যতগুলো পড়েছি এর মাঝে এটি অবশ্যই সামনের সারিতে রাখব। সৈয়দ হকের ঝরঝরে বর্ণনায় পঞ্চাশের দশকের বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে খুব চমৎকার একটা ধারণা পাওয়া যায় এই বইতে।
Profile Image for Protiva  Tasmia .
12 reviews17 followers
November 2, 2020
সৈয়দ হকের আত্মজীবনী। পরিচিত যান্ত্রিক ঢাকার রহস্যময় রূপটাই আমার কাছে মনে রাখার মতো ছিলো। আর আনোয়ারা সৈয়দ হকের সাথে তার সম্পর্কের পুরোটাই ছিলো সুখপাঠ্য। সাথে সৈয়দ হকের ছেলেবেলার অংশ থেকে ঢাকামুখী হওয়াপর্যন্ত ঘটনাপ্রবাহ পুরো বইটা শেষ করার আগ্রহ জুগিয়েছে।
Profile Image for Yasir Arafat.
96 reviews
March 10, 2024
‘অতীতের কথা ভোলা নয় ভালো, কখনোই তুমি ভুলো না...
কিন্তু যে তুমি কোনো একদিন মধু পান করেছিলে—
মনে রেখো সেটি, কী সুখে সেদিন গান গেয়ে উঠেছিলে।
সে কি ভোলা যায়, ভুলো না!’
— হাফিজ।

সৈয়দ শামসুল হকের আত্মজীবনী ‘তিন পয়াসার জ্যোছনা’ শুরু হয়েছে হাফিজের লেখা কবিতার চারটি চরণ দিয়ে। ‘তিন পয়সার জ্যোছনা’ নামে সৈয়দ হকের একটি গল্প আছে, যে গল্পের প্রকাশ তার জীবনের বাঁক অনেকটা বদলে দিয়েছিল।

সৈয়দ হকের হোমিওপ্যাথ বাবা চেয়েছিলেন তিনি ডাক্তার হন। ঢাকায় এসে বাবার স্বপ্নে জলাঞ্জলি দিয়ে উনি ভর্তি হয়েছিলেন মানবিক বিভাগে। তখন থেকেই শুরু করেছিলেন সাহিত্য-সাধনা। সেই সময় তার সাথে পরিচয় হয় ফজলে লোহানী, শামসুর রাহমান, মহিউদ্দিন আহমেদ, কাইয়ুম চৌধুরী, মুর্তজা বশীর প্রমূখ খ্যাতনামা ব্যক্তিত্বদের। যদিও তারাও তখন উঠতি পর্যায়ের। সেই সময়ের বিভিন্ন ঘটনার স্মৃতিচারণা করেছেন লেখক এই বইয়ে।

‘তিন পয়সার জ্যোছনা’ গল্পের প্রথমে নাম ছিল ‘তিন পয়সার গল্প’। সেটি প্রকাশের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্রী আনোয়ারা বেগম চৌধুরী তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং তখন থেকেই তাঁদের প্রেমের সূত্রপাত হয়। পরবর্তীতে এর পরিণতি তো আমাদের সকলেরই জানা।
Profile Image for Ahmed Rigan.
3 reviews
May 1, 2024
জ্যোছনা!

শান্ত-স্নিগ্ধ-কোমল আলো আধাঁরের মায়া।তার কি আর মুল্য হয়?

ব্যাকুল হৃদয় বিনে পয়সায় অমুল্য প্রশান্তি পায় জ্যোছনায়। তবু যেন লেখক সৈয়দ শামসুল হক একটা দাম নির্ধারণ করে দিয়েছেন মুফেতে পাওয়ার আত্মশ্লাঘা থেকে মুক্তি দিতে ও পেতে।

কুশলী নামকরণের মতোই তিন পয়সার জ্যোছনা বইটি অল্প মুল্যের অমুল্য আঁকর। একজন সপ্নবাজ তরুণের লেখক হয়ে উঠার সাবলীল স্মৃতিকথন। কিংবা একঝাঁক বড় মানুষদের সাথে লেখকের স্মৃতির মনোরম বয়ান।

অনেক অজানা ঘটনার প্রাঞ্জল উপস্থাপন। সেসব বিনোদিত করে। মুগ্ধ করে। খুশির খোরাক হয়। বইটির শেষ করার মুনশিয়ানা দেখেও বিমোহিত হতে হয়।

কামাল লোহানী প্রশ্ন করে হঠাৎ একদিন নাজ সিনেমা হলের সামনে দেখতে পাওয়া শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে।
হোয়াট ইজ লাইফ?

"এখনো আমি কানে স্পষ্ট শুনতে পাই-সোহরাওয়ার্দী সাহেব প্রতিধ্বনি করে উঠলেন, লাইফ?

তার পরেই পরিচ্ছন্ন একটু হেসে উঠে বললেন-কী অমোঘ সত্য আমি আজও শুনে উঠি

-লাইফ ইজ লাইক আ সিনেমা শো। ইট স্টার্টস উইথ আ ব্ল‍্যাংক স্ক্রিন, এন্ডস উইথ আ ব্ল‍্যাংক স্ক্রিন।

জীবন? জীবন তো এক চলচ্চিত্র। শুরুতে শাদা পর্দা, শেষেও শাদা পর্দা

মাঝখানে ওই ছবিটাই যা কিছু।

আর সে ছবিটাও থেকে যায়-পর্দায় নয়-আমাদেরই স্মৃতিতে!"
This entire review has been hidden because of spoilers.
Profile Image for Raisul Sohan.
125 reviews20 followers
December 25, 2018
অসাধারণ একটি আত্মজীবনীর কথা। কোনো কোনো জীবন আছে, জীবনের চাইতে বেশি; যে জীবন কথা কয় নদীর মতো, চিরায়ত নারীর মতো, কথা কয় সময়ের সাক্ষী হয়ে খরস্রোতা শব্দের মতো। জ্ঞানে, প্রজ্ঞায়, চিন্তা ও সাধনায় এমন প্রাণই ধারণ করে থাকে মহাজীবন, ধারণ করে এক একটি যুগ ও বটবৃক্ষের ঐতিহ্য। আমাদের দেশে যাঁদের নাম কণ্ঠে উচ্চারিত হলে সমগ্র বাংলাদেশ বেজে উঠে, যাঁদের শব্দগাঁথুনীতে মজবুত হয়ে ওঠে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির সেতু; সৈয়দ শামসুল হক সেইসব বিরলপ্রাণদের একজন।

তাঁর দৃষ্টির গভীরতায়, সৃষ্টির উদ্দামতায়, শব্দের মোহনরূপে মুগ্ধ হননি এমন পাঠক বোধকরি আমাদের দেশে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। সৈয়দ হক তাঁর লেখা ও চর্চা এবং নিজেকে এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছেন, যেখানে কেবলই অনিন্দ সুন্দর আর ভালোবাসার সন্ধান মেলে। কথা নতুন করে বলার কিছু নেই যে, সব্যসাচী লেখক সৈয়দ হক তাঁর লিখনশৈলীর মাধ্যমে পাঠকদের মনের অনেকটা স্থান জুড়ে আছেন। তাই তাঁর সাহিত্যকর্মের পাশাপাশি তাঁর ব্যক্তি, জীবন-যাপন ও উদযাপন সম্পর্কে সাধারণ মানুষ, পাঠক ও বোদ্ধাদের আগ্রহের কোনো কমতি না থাকাই স্বাভাবিক।

বোধকরি, সেই আগ্রহী, তৃষ্ণার্ত শ্রেণির জন্যে সৈয়দ হকের ‘তিন পয়সার জ্যোছনা’ আত্মজৈবনিক গ্রন্থটি মরুভূমির উদ্যানের মতো প্রত্যাশিত ও বহুল কাঙ্ক্ষিত প্রাপ্তি হয়েছে। সৈয়দ হক এ বইটিতে তাঁর সাহিত্যজীবনের বিপুল একটি অংশ তুলে ধরেছেন চমকপ্রদ গদ্যের প্রয়োগে। আত্মজীবনী হলেও উৎকৃষ্ট গদ্যের গুণে পাঠক এই গ্রন্থপাঠে জীবনীর চেয়েও বেশি কিছুর স্বাদ গ্রহণ করতে পারবেন। সব্যসাচী তাঁর এই গ্রন্থে যে গদ্যের প্রয়োগ করেছেন তা পাঠককে ঘোরগ্রস্ত করবে; পথচলার ও কথাবলার আনন্দকে সামনে এনে দাঁড় করিয়ে দেবে।
Displaying 1 - 13 of 13 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.