মাধবগঞ্জের নবীনের ভাগ্য হঠাৎ খুলে গেলো। তার চেহারাখানা হুবহু পল্টুর মতো দেখতে। নগেন পাকড়াশির ছেলে পল্টু রাগের মাথায় খুন করে ফেলেছে। নগেন চায় পল্টুর বদলে নবীন জেল খাটুক, বেশিদিন না, দেখতে দেখতেই পার হয়ে যাবে। বিনিময়ে পাবে অনেক টাকা, অত টাকা নবীন কোনোদিন একসাথে দেখেওনি। কিন্তু পুলিশের কাছে ধরা দেয়ার পর নবীন বুঝতে পারল, কাজটা ভুল হয়ে গেছে।
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় একজন ভারতীয় বাঙালি সাহিত্যিক।
তিনি ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত ময়মনসিংহে (বর্তমানে বাংলাদেশের অংশ) জন্মগ্রহণ করেন—যেখানে তাঁর জীবনের প্রথম এগারো বছর কাটে। ভারত বিভাজনের সময় তাঁর পরিবার কলকাতা চলে আসে। এই সময় রেলওয়েতে চাকুরিরত পিতার সঙ্গে তিনি অসম, পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারের বিভিন্ন স্থানে তাঁর জীবন অতিবাহিত করেন। তিনি কোচবিহারের ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। শীর্ষেন্দু একজন বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। বর্তমানে তিনি আনন্দবাজার পত্রিকা ও দেশ পত্রিকার সঙ্গে জড়িত।
তাঁর প্রথম গল্প জলতরঙ্গ শিরোনামে ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। সাত বছর পরে সেই একই পত্রিকার পূজাবার্ষিকীতে তাঁর প্রথম উপন্যাস ঘুণ পোকা প্রকাশিত হয়। ছোটদের জন্য লেখা তাঁর প্রথম উপন্যাসের নাম মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি।
নবীন বেচারা টাকার লোভে পড়ে বেকুবের মত ভয়ঙ্কর খুনি পল্টু পাকড়াশির বদলে হাজত খাটতে রাজি হয়ে গেল। কারণ দুজনের চেহারার সাদৃশ্যতা। জেলে ঢুকে শোনে সে হাজতবাসের আসামি না একেবারে ফাঁসির আসামি! কোনওভাবে ভাগ্যক্রমে জেল থেকে পালাতে পারল ঠিকই। কিন্তু পুলিশ তাকে ধরতে আসছে ফাঁসির আসামি হিসেবে, পল্টুর বাবা নগেন পাকড়াশির গুন্ডারা এবং স্বয়ং পল্টু আসছে আসামি অদলবদলের ঘটনা চেপে রাখতে নবীনকে খুন করতে, পল্টু যাদের খুন করেছিল তাদের পরমাত্মীয় ভুবন মণ্ডল ও বিশু গায়েন খুনের বদলা নিতে আসছে পল্টুরূপী নবীনকে ধরতে। রাতের আঁধারে ছুটতে ছুটতে নবীন এসে পড়ল অষ্টপুরে... আর সবকিছুর হিসেবনিকেশ হবে এখানেই। এদিকে অষ্টপুরে আবার চোর-বাটপার-পাগল-অশৈলী কাণ্ড-ভূত-ভূতুড়ে বাড়ি-ভূতুড়ে গির্জা-দর্শনশাস্ত্রের চর্চাকারী পাগলাটে দারোগাবাবু'র কোন অভাব নেই!
সবকিছু মিলিয়ে নিঃসন্দেহে বরাবরের মতো দুর্দান্ত জমজমাট টানটান উত্তেজনার সশব্দে বারবার হা-হা করে হেসে ওঠার হাস্যরসাত্মক রোমাঞ্চকর আরেকটা অদ্ভুতুড়ে অ্যাডভেঞ্চার উপন্যাস। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের কলমে কিশোর উপন্যাসগুলির ভান্ডারে ভূত-রহস্য-চোর-পুলিশ-পাগল সবকিছুর মিশেলে তৈরি করা চিরন্তন বাংলার গ্রামগঞ্জের পটভূমিতে এই অপূর্ব স্বাদের অতুলনীয় ধাঁচের সরেস মজাদার অদ্ভুতুড়ে জগতের গণ্ডী বোধকরি সীমাহীন, একে একে প্রায় সব পড়ে ফেললাম তবুও এখনো বিন্দাস মজা পাই যেন সেই ছোটবেলায় প্রথম পড়ার মতোই!
নগেন পাকড়াশি নবীনকে গাদা গাদা টাকা দিচ্ছে, বাঁধা জমি,বাড়ি ছাড়িয়ে দিচ্ছে। বিনিময়ে তাকে নগেন পাকড়াশির ছেলে পল্টুর হয়ে জেল খাটতে হবে। গরিব নবীন তার জেল পরবর্তী সুখের কথা চিন্তা করে রাজি হয়ে গেল।
নগেন পাকড়াশি বলেছিল,নবীনের জেল হবে মেরে কেটে সাত/আট বছর। কিন্তু নবীন জেলে এসে শুনছে,পল্টু্ ফাঁসির আসামি,কিছুদিন পর তার ফাঁসির আদেশ আসবে। সব শুনে নবীনের অবস্থা লেজেবেগুনে,সে মনে মনে নগেন পাকড়াশিকে গালি দিচ্ছে, তাকে ঠকিয়েছে বলে।
নবীনের চাইতে ও বেশি মেজাজ খারাপ জেলের বড় বাবুর,কারণ তার জেলে আসামি বদলে গেছে। কে জানি পল্টুর জায়গায়,নবীনকে রেখে গেছে। একথা বাইরে জানজানি হলে বড়বাবুর চাকরি যাবে। তাই সিদ্ধান্ত হলো নবীনকে ছেড়ে দেয়া হবে।
গভীর রাতে পুলিশরা নবীনকে একটা জঙ্গলে ছেড়ে দিল।সারা রাত দৌড় ঝাপ করে,নবীন একটা ভাঙা মন্দিরে ঘুমিয়ে গেল। সকালে উঠে দেখল এটা একটা নতুন জায়গা। কিন্তু নতুন জায়গায় সে খাবে কি,পরবে কি! হাতে একটা ফুটো পয়সা ও নেই! তাই গেল পকেট মারতে,কিন্তু সেখানে পড়ে গেল ধরা!
এরপর থেকে নবীনের একে একে ঘটতে থাকল হরেক রকম বিপদ.....
আমার কথা: এই প্রথম আনন্দমেলা পূজাবার্ষিকী থেকে অদ্ভুতুরে সিরিজের গল্প পড়লাম, প্রকাশের সাল ১৪১৮। অন্য সময় পড়তাম বই থেকে, এবার পূজাবার্ষিকী থেকে, মজায় আলাদা। এই সিরিজ এত্তো প্রিয় আমার তার কারণ একটা,মুখুজ্জে বাবুর লেখা। আহা,কি দারুণ।
পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে পল্টুর দুই খুনের মামলার আসামী হয়ে যাবজ্জীবন জেল খাটতে রাজী হয়ে গেলো নবীন। জেলে যাবার পর সে জানতে পারলো যাবজ্জীবন নয়, তার জন্য অপেক্ষায় আছে ফাঁসীর দড়ি।