কাজী আনোয়ার হোসেন ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দের ১৯ জুলাই ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পুরো নাম কাজী শামসুদ্দিন আনোয়ার হোসেন। ডাক নাম 'নবাব'। তাঁর পিতা প্রখ্যাত বিজ্ঞানী, গণিতবিদ ও সাহিত্যিক কাজী মোতাহার হোসেন, মাতা সাজেদা খাতুন। কাজী আনোয়ার হোসেন সেবা প্রকাশনীর কর্ণধার হিসাবে ষাটের দশকের মধ্যভাগে মাসুদ রানা নামক গুপ্তচর চরিত্রকে সৃষ্টি করেন। এর কিছু আগে কুয়াশা নামক আরেকটি জনপ্রিয় চরিত্র তার হাতেই জন্ম নিয়েছিলো। কাজী আনোয়ার হোসেন ছদ্মনাম হিসেবে বিদ্যুৎ মিত্র নাম ব্যবহার করে থাকেন।
~~কাহিনী সংক্ষেপ~~ বিসিআই-এর কম্পিউটার এক্সপার্ট রায়হান রশিদ একজন বিশ্বসেরা হ্যাকার, এবং বৈধ বা অবৈধ ভাবে সবধরনের সংরক্ষিত নেটওয়ার্কে নাক গলানো তার স্বভাব। সেকারণেই মাসুদ রানা যখন চরম বিরক্তির সাথে আবিষ্কার করল রায়হান নাসার কম্পিউটারে ঢুঁ মারছে অফিসের কাজকাম বাদ দিয়ে, তখন প্রথমে রায়হানকে কঠিন একটা ঝাড়ি দেবার জন্য মনে মনে প্রস্তুত হলেও দেখা গেল সে ঘটনাচক্রে মহাগুরুত্বপূর্ণ এক জিনিস বের করে ফেলেছে: ভিনগ্রহের প্রাণীদের পাঠানো এক অত্যাশ্চর্য সিগন্যাল! কিন্তু পরীক্ষানিরীক্ষা করতেই বের হয়ে এল যে সিগন্যালটি আসলে "ইউনোকোড" বলে সিঙ্গেল ডিজিটে তৈরি সাইবার জগতের এক কিংবদন্তীর রহস্যময় কোডে রচিত যার রচয়িতা এই পৃথিবীরই দশজন প্রোগ্রামার; শুধু তাই না, আগামী নব্বই ঘন্টা পরে এই কোড ভাইরাস হিসেবে এক্টিভেট হলে পৃথিবীময় সমস্ত কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ও কম্পিউটার সিস্টেম পুরোপুরি ধসে পড়বে, মানবজাতি চলে যাবে একশ বছর আগের সমাজ ব্যবস্থায়! বাংলাদেশের জন্য তাতে তেমন একটা উনিশ-বিশ না হলেও পৃথিবী রক্ষার্থে রানা নেমে পড়ল মিশনে, সাথে জুটল সাগরেদ হিসেবে রায়হান। এদিকে ইউনোকোড রচয়িতারা রহস্যময় খুনীদের হাতে একে একে মারা পড়ছেন, বাকি রয়েছে কেবল দু'জন, রানা-রায়হানের যে করেই হোক তাদের কাছে পৌছুতে হবে ভাইরাসটি প্রতিরোধে ইউনোকোড দিয়ে তৈরি একটি এন্টিভাইরাস হাতে পাওয়ার জন্য... কিন্তু খুনীর দলও পিছিয়ে নেই, সর্বক্ষেত্রে তারা ছায়ার মত পিছে লেগে আছে রানার সবরকমের প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করার জন্য। মড়ার উপরে খাঁড়ার ঘায়ের মত জুটেছে সিআইএ এজেন্ট ডগলাস বুলক ওরফে বুলডগ, যে কোন মূল্যে রানার প্ল্যান বানচাল করে এন্টিভাইরাসটি পেতে চায় নিজের স্বার্থে, সমগ্র পৃথিবীর কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ধ্বংস হয়ে গেলেও যাতে আমেরিকা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকে বাকিদের উপরে ছড়ি ঘুরানোর জন্য (যেন এখন আমেরিকা ছড়ি কিঞ্চিত কম ঘুরাচ্ছে আর বাকি দুনিয়া তাতে খুবই শান্তিতে ও স্বস্তিতে আছে!) প্রতি পদে পদে দ্বিমুখী-ত্রিমুখী আক্রমণ ঠেকিয়ে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে ছুটতে হচ্ছে রানাকে আরো একবার মানবজাতির অবশ্যম্ভাবী মহাবিপদ ঠেকানোর জন্য। -----------------------------------------
~~পাঠপ্রতিক্রিয়া~~ হ্যাকার। গত একযুগের মধ্যে বর্তমান প্রজন্মের রানাপাঠকদের কাছে সবচেয়ে আলোচিত ও প্রশংসিত রানা-কাহিনী। কত অসংখ্যবার যে বিভিন্ন রানাভক্তদের পছন্দের তালিকায় একদম উপরের দিকে এই বইটার নাম দেখেছি তার ইয়াত্তা নাই। স্কুল-কলেজ লাইফে একসময় নিয়মিত মাসুদ রানার বইগুলো গোগ্রাসে নাকেমুখে গুজলেও গত আট-দশ বছরে রানা পড়া প্রায় থেমেই গেছিল, মাঝে মধ্যে দুয়েকটা ছাড়া। হ্যাকার বইটি যখন প্রকাশিত হয়েছে (২০০৮সাল) তখন থেকেই এই বইটির মুহুর্মুহ নাম শুনলেও তাই পড়া হয়ে উঠেনি এতদিন... কিন্তু সম্প্রতি যখন নিশ্চিতভাবে জানতে পারলাম বইটি রানার অন্যান্য কাহিনীগুলোর মত ছায়া অবলম্বন না, সম্পুর্ণ মৌলিক, তখন স্বভাবতই আগ্রহ চরমে ওঠে বইটা পড়ার জন্য। এবং বহু দিন পরে অবশেষে পড়েই ফেললাম হ্যাকার।
বইটার কাহিনী শুরুতে যথেষ্ট কৌতূহলোদ্দীপক: ভিনগ্রহের প্রানীদের পাঠানো সিগনালের আদলে ভয়ঙ্কর একটা ভাইরাস পৃথিবীময় ছড়িয়ে গেছে যেটা আগামী নব্বই ঘন্টা পরে এক্টিভেট হলেই নেমে আসবে গজব; গল্পটাও প্রথম থেকেই তাই তুমুল উত্তেজনা বজায় রেখে প্রায় উড়ে চলল বলতে গেলে, রানা শত্রুদের পেতে রাখা ফাঁদ একের পর এক ছিন্ন করে ছুটে চলেছে অভিষ্ট লক্ষ্যের দিকে, অগণিত বিপদের বিপক্ষে তার মূল অস্ত্র ক্ষুরধার বুদ্ধিমত্তা আর বরফশীতল মস্তিষ্ক, সেই সাথে বিশ্বস্ত সঙ্গি হিসেবে আছে সিরিজের নতুন সংযোজন তরুণ হ্যাকার রায়হান রশীদ। আর এখানেই নিহিত বইটার সবচেয়ে বড় ইতিবাচক দিক: দুইখন্ডের মোটামুটি বিশাল ক্যানভাসে মাল্টিপল পটভূমিতে রচিত কাহিনীটা কখনোই ঝুলে যায়নি বা টান দিয়ে রাখা উত্তেজনা ও থ্রিলের রশিতে ঢিল পড়েনি। প্রথম পাতা থেকে শেষ পর্যন্ত বজায় থেকেছে সাসপেন্স, একের পর এক অভিনব অ্যাকশন-সিকুয়েন্সে যেকোন রানাপাঠকেরই রক্তগরম হয়ে উঠবে, হোক সেটা আর্ক্টিক সাগরের সুউচ্চ আইস শেলফ থেকে স্নো মোবিলে করে রানাদের শূন্যে ঝাঁপ দেয়ার বা প্রাচীন আমলের বম্বার প্লেন দিয়ে অত্যাধুনিক হেলিকপ্টারকে ধাক্কা দিয়ে সেটার ভবলীলা সাঙ্গ করার দৃশ্য! আক্ষরিক অর্থেই জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে রানা-রায়হান জুটিকে প্রতি মুহুর্তে লড়াই করতে হয়েছে নিজেদের থেকে সংখ্যায় ও আগ্নেয়াস্ত্রে অনেক গুণ বেশি শক্তিশালী শত্রুদের সাথে, এবং প্রায় সবক্ষেত্রেই তাদের অবলম্বন বলতে কেবল নিজেদের সার্ভিস পিস্তল ছাড়া আর কিছুই ছিল না। ওহ, আরেকটা জিনিস ছিল, বুদ্ধিমত্তা ও যেকোন পারিপার্শ্বিক অবস্থানকে নিজেদের কাজে লাগানো। এই ব্যাপারটা আমি খুবই উপভোগ করেছি বইটাতে, রানার ভাষায় "ইম্প্রোভাইজেশন", আমার ভাষায় "ম্যাকগাইভারিজম"; কম্পিউটার তার আর শেলফের র্যাক দিয়ে মেকশিফট বর্শা তৈরি বা সার-কয়লা-মোমবাতি দিয়ে বোতলবোমা তৈরি যেগুলো ব্যবহার করে শত্রুদের নিচ্ছিদ্র জাল ছিন্ন করে বের হয়ে আসতে দেখে রানার, সেইসাথে লেখকের বুদ্ধি ও কৌশলের তারিফ না করে পারা যায় না। বিসিআইয়ের আর&ডি ডিপার্টমেন্টের ম্যাজিক্যাল কোন আল্ট্রামডার্ণ গ্যাজেট যে এইসব পরিস্থিতিতে ভোজবাজির মত উদয় হয়নি সেটাই আরো প্রশংসনীয়। সব মিলিয়ে ধুন্ধুমার অ্যাকশন-অ্যাডভেঞ্চারের দিক থেকে আমেরিকা-আর্ক্টিক সাগর-হল্যান্ডের পটভূমিতে রানার এই মিশনটি ভালরকম উপভোগ্য।
কিন্তু শুধু একের পর এক অ্যাকশন-অ্যাডভেঞ্চার সিকুয়েন্স দিয়ে তো আর একটা নিখুঁত থ্রিলার উপন্যাস তৈরি যায় না, সাথে চাই সমান গতিতে এগুনো মাথাচুলকানো রহস্যমোড়া কাহিনী আর সেই কাহিনীকে প্রাণ দেয়া অসাধারণ কিছু চরিত্র। দুঃখের বিষয় এই দু'ক্ষেত্রে "হ্যাকার" তার সাসপেন্স-অ্যাকশনের সাথে পুরোপুরি তাল মেলাতে পারেনি, এবং কিছু কিছু দিকে প্রায় মুখ থুবড়ে পড়ার মতই দশা হয়েছে। প্রথমে আসি প্লট-প্রসঙ্গে: এই লেখাটার গোড়াতেই উল্লেখ করেছিলাম যে বইটার শুরু খুব কৌতূহলোদ্দীপক... সমস্যা হচ্ছে কাহিনী যতই এগিয়েছে প্লট ততই প্রেডিক্টেবল টার্ন নিয়েছে, প্রতিটা সিচুয়েশনে আগে থেকেই বলে দেয়া যাচ্ছিল এরপরে প্লট কোথায় যাবে বা শত্রুদের কি পদক্ষেপ হবে। স্পয়লার না দিয়ে ডিটেইলে আলোচনা করতে না পারলেও বলতে হচ্ছে অ্যাকশনের ডামাডোলে কাহিনীর রহস্যের ধার ক্রমান্বয়ে কমেছে আর শেষের দিকে এসে মূল প্লটের প্রতি আগ্রহ প্রায় অনেকটাই নিভে যেতে বসেছিল। দুই-তৃতীয়াংশ যাবার পরে কাহিনীর সম্ভাব্য সবচেয়ে বড় দুটি টুইস্টই নষ্ট হয়েছে হুট করে রানাদের দৃষ্টিকোণ থেকে প্লটের ডেভেলপমেন্ট হাতবদল করে ভিলেনদের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখানোতে, যাতে করে বোঝা গেল পর্দার আড়ালে কলকাঠি নাড়ছে আসলে কে, ফলে দেখা গেল রানা-রায়হানরা অন্ধকারে থাকলেও আমরা পাঠকরা জেনে বসে আছি কে কি করছে! মিস্ট্রি-থ্রিলার বইয়ের ক্ষেত্রে আমি সবসময়ই একটা ব্যাপার বিশ্বাস করি, কখনো যেন কাহিনীর চরিত্রদের থেকে আমরা পাঠকরা বেশি না জেনে ফেলি কে-কি-কেন এইসব প্রশ্নের উত্তর, এতে করে রহস্যোন্মচনের মজা বহুলাংশে ক্ষুন্ন হয় এবং চরিত্রদের অন্ধের মত ঠোকর খেতে দেখে বিরক্তির সৃষ্টি হয় মনে। "মূল ভিলেন আসলে কে", এটার খুব মাথাঘোরানো কোন উত্তর হ্যাকারে না বের হলেও (প্রসেস অব এলিমিনেশনে আন্দাজ করা খুব কঠিন কিছু না) যদি রানাদের দৃষ্টিকোণ থেকে ওদের সাথেই আমরা জানতে পারতাম তাহলে সেটা পাঠকদের আরেকটু বেশি ধাক্কা দিত বলেই মনে করি... যেই পয়েন্টটা আমাকে নিয়ে আসছে কাহিনীর দ্বিতীয় টুইস্টে। আগের রহস্যের উত্তর জানা না থাকলে যেটা কাহিনীর শ্বাসরুদ্ধকর একটা পরিস্থিতিতে হতে পারত দুর্দান্ত রকম শকিং, সেটা প্রথমটাকে ল্যাজেগোবরে করে ফেলার কারণে শক-ভ্যালু সম্পুর্ণ হারিয়েছিল আর দুয়ে দুয়ে চার মেলানোর মত যেকোন মনোযোগী পাঠকই ততক্ষণে বুঝতে পারবেন আসলে কি হতে যাচ্ছে। এছাড়া, মূল প্লটের আমার আরেকটা ব্যাপার পুরোপুরি হজম করা সম্ভব হয় নাইঃ কাহিনীর কেন্দ্রে থাকা তথাকথিত "ইউনোকোড"-এর কিছু বিষয়। শুধু "এক" ব্যবহার করে এমন একটা ম্যাজিক্যাল কোড তৈরি করে ফেলা হল যেটা পৃথিবীর যেকোন বাইনারি কোডেড সিকিউরিটি সিস্টেম ও নেটওয়ার্ক ধ্বংস করে দিতে পারে সেটা বেশ আজগুবি হলেও আমার গিলতে সমস্যা হয় নাই, কারণ আমি একটা ফূর্তির অ্যাকশন থ্রিলার পড়তে বসেছি কোন মহাজটিল কম্পিউটার প্রোগ্রামিং-এর বই না। স্বয়ং মাস্টার অফ সাসপেন্স আলফ্রেড হিচককই বিষয়টাকে "ম্যাকগাফিন" বলে অভিহিত করেছেন যাকে কেন্দ্র করে গল্পের সমস্ত দৌড়ঝাঁপ-লাফালাফি-মারামারি-ফাটাফাটি ঘটবে কিন্তু জিনিসটা আসলে *কি* সেটা সেভাবে তলিয়ে না জানলেও চলবে, কাহিনীর ডেভেলপমেন্টের জন্য তা তেমন জরুরি না। সমস্যা হয়ে গেল তখন যখন ইউনোকোড আসলে কিভাবে তৈরি হয়েছে আর কে তৈরি করেছে সেটার ব্যাখ্যা কাহিনীর ডেভেলপমেন্টে প্রকৃতপক্ষেই জরুরি হয়ে পড়ল, আর আলাদীনের চেরাগ-মার্কা কোড হজম করতে পারলেও সেই ব্যাখ্যা আমি কোনভাবেই গিলতে পারলাম না, স্পয়লারে না গিয়ে এতটুকুই কেবল বলতে পারি।
যেকোন গল্পের মূলে হচ্ছে গল্পের চরিত্রগুলো, তাদের সঠিক ডেভেলপমেন্টেই একটা কাহিনী প্রাণ পায়, আমাদের সাথে কথা বলে, আর গতানুগতিক প্লটও মুহুর্তে গতিময় হয়ে উঠতে পারে ইন্টারেস্টিং আকর্ষনীয় চরিত্রের কল্যাণে... আফসোস কেবল একটি চরিত্র বাদে অন্যান্য চরিত্র চিত্রায়ণে হ্যাকার মোটামুটি অসফল হয়েছে। কাহিনীর সবচেয়ে বড় আবিষ্কার "রায়হান রশিদ" চরিত্রটি, যাকে লেখক ব্যক্তিত্বের দোষে-গুণে মিলিয়ে বাস্তবতার রঙ্গে মিশিয়ে এমন ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন যে ত্রিমাত্রিক গভীরতাসহ রক্তমাংসের মানুষ বলেই মনে হয়েছে তাকে, সদাচঞ্চল হাস্যমুখি প্রা্ণোচ্ছ্বল সাধারণ এক যুবক যার মূল ক্ষমতা হচ্ছে ওর তুখোড় মস্তিষ্ক। মাসুদ রানাকে আমরা সাধারণত একলা বিভিন্ন প্রানঘাতি মিশনে যেতে দেখেই অভ্যস্ত, এখানে সাথে সাগরেদ হিসেবে রায়হানকে জুটিয়ে দেয়ায় পাঠকের বিরক্তির উৎপাদন তো করেইনি, বরং আমি বলব বইয়ের সবচেয়ে এবং সম্ভবত একমাত্র সফল চরিত্র হল রায়হান। রানার মত সে সাত (নাকি সাতশো?) ঘাটের জল খাওয়া স্পাই না হলেও ফিল্ডে নিজের ওজন ঠিক মতই বহন করতে জানে; বইয়ের মজার একটা অংশ হল রানা-রায়হানের মধ্যকার একটি রানিং জোক: বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বের হয়ে আসে যে রায়হান আসলে চাপা পিটিয়ে বিসিআই-এর বেশ কিছু ফিল্ড ট্রেনিং-এ ফাঁকি দিয়েছে, আর রানা প্রতিবারই তাকে মনে করিয়ে দেয় যে এই মিশনের পরে তাকে সেইসব ফাঁকিবাজির শোধ দিতে হবে কড়ায় গন্ডায়। তবে হুট করে বইয়ের শেষভাগে এসে কথা নাই বার্তা নাই রায়হানের একেবারে লুতুপুতু বাংলা-ছিনেমা মার্কা প্রেম হয়ে যাওয়াটা আমাকে বেশ অবাক ও মেজাজ খারাপের সৃষ্টি করেছে, মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যে এমন গভীর প্রেমে ডুবাডুবি হওয়াটা অনেকটাই অবাস্তব আর কাহিনীর গতিময়তাকে কিছুটা হলেও হ্রাস করেছে আমার মতে। রায়হান একটি নতুন ও চিত্তাকর্ষক চরিত্র হিসেবে ভালমত উতরে গেলেও এমন একজন উতরাতে পারেনি যেটা অনেকটা অবিশ্বাস্যই শোনাবে: স্বয়ং মাসুদ রানা। মাসুদ রানার আমি ভক্ত সেই স্কুল জীবনের নিচের ক্লাস থেকে, যেকোন আদর্শপুরুষ হিসেবে কল্পনা করলে শুরুতেই রানার কথা ভেসে উঠে মনে, এতবছরে রানার চরিত্রের হাজারো চড়াই-উতরাই পেরিয়ে সে আমাদের কাছে বাস্তবজীবনের একজন বাস্তব মানুষেই রূপান্তরিত হয়েছে... কিন্তু এই বইতে সেটা ঘটেনি। পুরো কাহিনীতে রানাকে আমি শুধু হেসে যেতে দেখলাম বিভিন্ন মহাবিপদের সময়ে: মুচকি হাসি, মৃদু হাসি, নিষ্ঠুর হাসি, কৌতুকের হাসি, যেন এইসব ভয়ঙ্কর সিচুয়েশন তার গায়েই লাগছে না! ভিলেনদের সাথে সদা ইয়ার্কি-ফাজলামিতে ব্যস্ত রানা, সম্ভাব্য মৃত্যুর মুহুর্তেও তার মুখে হাসি লেগে থাকে... "মুচকি হেসে ভাবল, তাহলে এরকম মৃত্যুই লেখা ছিল তার কপালে!" (!!!) আমি ব্যাপারটা দেখে হতভম্ব। রানা কখনই খুব রসিক চরিত্র ছিল না, তবে তার রসবোধের যে কমতি নেই সেটা আমরা অতীতের অসংখ্য ঘটনাতেই প্রমাণ পেয়েছি, সমস্যা হচ্ছে সারাক্ষণ হাসি টেনে রাখাটা এক্ষেত্রে রানার রসবোধের প্রমাণ দিচ্ছে না, রানা যে আসলে কী পরিমাণ "টাফ" আর "শক্তপাল্লা" সেটা বোঝানোর চেষ্টাই করা হয়েছে, মহাবিপদও তার জন্য কিছুই না... ইত্যাদি ইত্যাদি। দুঃখের বিষয় এই "সুপারহিরো" রানার প্রতি আমার কোন আগ্রহ নেই। সুপারহিরোয়িজম ব্যক্তি-রানাকে আমাদের মত সাধারণ মানুষদের থেকে এলিয়েনেটই করে ফেলে, পাঠক তার সাথে কানেক্টেড হতে পারে না। রানা অবশ্যই হাজারো বিপদ পাড়ি দিতে পারে, কিন্তু সেটা তখনই আকর্ষনীয় ও রুটেবল হয় যখন সে নিজেও জানে যে সবকিছু তার বিপক্ষে আর পরিত্রাণের কোন উপায় নেই, সে অসহায় ও কোনঠাসা, কিন্তু শুধু মাত্র মাথা নোয়াতে অনিচ্ছুক বলেই দাঁতে দাঁত চেপে সমস্ত মানসিক শক্তিকে একত্রিত করে ধুলিস্মাৎ করে দেয় সকল প্রতিকূলতাতে... এমন হাসতে হাসতে কৌতুক করতে করতে নিজের উপর থেকে একবিন্দু নিয়ন্ত্রণ না হারিয়ে না। তবে বাজে চরিত্রায়ণ ও বিরক্তিকর মনোভাব সৃষ্টিতে রানাকেও পিছনে ফেলে দিয়েছে কাহিনীর অন্যতম ভিলেন ডগলাস বুলক ওরফে বুলডগ। সত্যি কথা, মাসুদ রানা সিরিজ তথা আমার জীবনে পড়া অন্যতম সবচেয়ে বিরক্তিকর চরিত্র হচ্ছে এই বুলডগ। সবাই ভাবতে পারেন, বিরক্তিকর তো হবেই, তাকে তো বিরক্তিকর চরিত্র হিসেবেই তৈরি করা হয়েছে? কিন্তু সমস্যা হচ্ছে চরিত্রটা অতিকিঞ্চিত পরিমাণও ইন্টারেস্টিং না। কেবল মাত্র চিৎকার চেঁচামেচি আর গালাগালি করা ছাড়া এই প্যাথেটিক চরিত্রটার আর কোন বৈশিষ্ট্য নেই, যতবার সে কাহিনীতে এসেছে আমার মন সীমাহীন বিতৃষ্ণায় ভরে গেছে। যেকোন শক্তিশালী ভিলেন চরিত্রের জন্য মূল হচ্ছে খারাপ হলেও তার চরিত্রের এমন কিছু দিক দেখানো যা পাঠককে আগ্রহী করে রাখে, মজা দেয়, রানার সাথে ফাইট হলেও মনে মনে আশা করে ভিলেনটি পরবর্তী কোন বইতে আসুক, আসলে কাহিনীটার প্রতি আকর্ষণ নিমিষেই বেড়ে যায় পাঠকের... বুলডগের ক্ষেত্রে হয়েছে একদম উল্টো; এই চরিত্রটা এমনই ফালতু যে আর কোনো বইতে থাকলে আমার আগ্রহ আপনাআপনি কমে যাবে সেটা পড়ার ("স্নাইপার"-এ আছে যা বুঝেছি, ওটা অলরেডি আমার টু-রীড লিস্টে পিছনের দিকে চলে গেছে)। এবং শুধু এই একটা ভিলেনের ক্ষেত্রে না, রহস্যময় গুপ্তঘাতক দল "আলফা টিম" ও পর্দার আড়ালের "আলফা যিরো", সবগুলো মন্দচরিত্রই যেন "ভিলেন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র" থেকে কঠোর প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছে, কি করলে একজন আদর্শ মন্দ মানুষ হওয়া যাবে যাদের মধ্যে নীচতা-শঠতা-কুটিলতা ছাড়া আর কিছুই থাকবে না সেটা মেইন্টেন করতে তারা খুবই সচেতন। "'তাহলে আসুন, মাসুদ রানা আর রায়হান রশিদের আশু-মৃত্যু উপলক্ষে পান করি।' ক্রুর হাসি হেসে যার যার গ্লাস তুলে ধরল ষড়যন্ত্রকারীরা।" মুয়াহাহাহাহা!!! আরেকটু হলেই ভিলেনরা সবাই তাদের গোঁফ মুচরাতে মুচরাতে ট্রেডমার্ক ভিলেনীয় অট্টহাসি দিয়ে দিয়েছিল আর কি! (অট্টহাসি না দিলেও ক্রুর হাসি ঠিকই দিয়েছে)
যাইহোক, এতক্ষণের মুণ্ডুপাতে সবাই হয়তো ভাবতে পারেন বইটা আমার খুব বাজে লেগেছে, কিন্তু আ���তে তা একেবারেই নয়। ফূর্তির টাইমপাস এন্টারটেইনিং অ্যাকশন-থ্রিলার যা থেকে পাঠক মজা পাওয়া ছাড়া খুব বেশি কিছু আশা করছেন না, এমন একটা বই হিসেবে "হ্যাকার" যথেষ্ট ভাল। গল্পের সাসপেন্স, এনার্জেটিক অ্যাডভেঞ্চার ও ইনোভেটিভ অ্যাকশন সেটপিস চরিত্রায়ণ ও প্লটগত দূর্বলতাকে অগ্রাহ্য করে পাঠককে টেনে নিয়ে যাবে বইয়ের শেষ পৃষ্ঠা পর্যন্ত, এবিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। আমি বহু বহু দিন পরে বলতে গেলে একবসাতেই টা-না পড়ে যে একটা বই শেষ করেছি এটাই প্রমাণ দিচ্ছে কাহিনীর গতিময়তাকে। "হ্যাকার" হয়তো কোয়ালিটির দিক থেকে মাসুদ রানার শ্রেষ্ঠত্বের তালিকা���় আসবে না, আমার ব্যক্তিগত পছন্দের সেরা-৫০/৬০এর মধ্যেও না, কিন্তু অন্য অনেক গড়পড়তার রানা-কাহিনী থেকে এটা বেটার। খন্ড দুটির দৃষ্টিনন্দন ও কাহিনীর সাথে সম্পর্কযুক্ত প্রচ্ছদ উপভোগ্যতাকে অনেকাংশে বৃদ্ধি করেছে। এছাড়া আরেকটা বিষয় এতক্ষণ পুরোপুরি এড়িয়ে গিয়েছি যেটা এড়ানো মানে লেখকের কর্মক্ষমতাকে ছোট করে দেখা, সেটা হল বইটির কাহিনী মৌলিক (!)। হাতে গোনা ২-৪টা রানা বাদে রানার শ্রেষ্ঠতম বইটিও ছায়া অবলম্বন করে রচিত, সেখানে সম্পূর্ণ বিদেশের পটভূমিতে হ্যাকারের পুরো কাহিনী মৌলিক ব্যাপারটা অকল্পনীয় বললেও কম বলা হয়। আর্কটিক সাগরের আইস শেলফ থেকে হল্যান্ডের বিভিন্ন অঞ্চলে বিস্তারিতভাবে বর্ণিত প্রতিটি দৃশ্য ও ঘটনাবলি পড়ার সময় যেন চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছিলাম, মৌলিক হিসেবে একজন বাঙ্গালী লেখক কিভাবে পৃথিবীর আরেকপ্রান্তের সেইসব জায়গায় গল্প সাজিয়েছেন এটা কোনোভাবেই আমার মাথায় আসছে না! আর শুধুই পটভূমি নয়, অস্ত্র-সস্ত্রের বিস্তারিত বর্ণনা, হেলিকপ্টার-জাহাজ-বম্বার প্লেনসহ প্রতিটা যানবাহন, রানার বিভিন্ন ইম্প্রোভাইজেশন, রায়হানের কম্পিউটার রিলেটেড যাবতীয় কচকচানি সহ প্রতিটা ক্ষেত্রে চুলচেরা টেকনিক্যাল ডিটেইলিং-এ বইটা পাশ্চাত্যের যেকোন বিশ্বখ্যাত থ্রিলার বইয়ের সাথে পাল্লা দিতে পারে। রানার অন্যান্য মৌলিক বই যেমন ধ্বংসপাহাড়-ভারতনাট্যম-পিশাচদ্বীপ-এখনো ষড়যন্ত্র ইত্যাদি হয়তো কাহিনী ও চরিত্রায়ণ সহ ওভারঅল কোয়ালিটিতে অনেক এগিয়ে থাকবে, কিন্তু শুধু টেকনিক্যাল ডিটেইলিং ও বিস্তৃত ক্যানভাসের দিক থেকে হ্যাকার নিঃসন্দেহে রানার মৌলিক বইগুলোর মধ্যে সেরা।
এক নজরে "হ্যাকার">>> হ্যাকার (১ম খন্ড): পৃষ্ঠা সংখ্যা - ২৪০ হ্যাকার (২য় খন্ড): পৃষ্ঠা সংখ্যা - ২৭২ সিরিজ: মাসুদ রানা (মাসুদ রানা-৩৮৫ ও ৩৮৬) লেখক: কাজী আনোয়ার হোসেন প্রচ্ছদ: ইসমাইল আরমান প্রকাশকাল: জুন-জুলাই ২০০৮ আমার রেটিং: ৩.৫/৫
মাসুদ রানা সিরিজের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অ্যাডাপ্টেশন। বিশেষ করে ড্যান ব্রাউনের “ডিসেপশন পয়েন্ট” বইটি থেকে হ্যাকারের শেষ ৫০% গ্রহণ করা হয়েছে, একই সাথে সিরিজের “স্নাইপার” বইটির চরিত্র বুলডগ তথা ডগলাস বুলককে ফিরিয়ে নিয়ে এসে বেশ দারুণ মুনশিয়ানার পরিচয় ইসমাইল আরমান দিয়েছেন। যদিও পাঠকসমাজে এই বইটি নিয়ে নানা ভুল ধারণা আছে, যেমন এটি একটি মৌলিক। তবে আসলে তা সত্য নয়। যেহেতু মাসুদ রানা সিরিজের প্রায় সব বই-ই অ্যাডাপ্টেশন, তাই এটি মৌলিক না হলেও সমস্যা আছে বলে মনে করি না। তবে ভুল ধারণা থাকা বাঞ্ছনীয় নয়। যারা আসল বইটি পড়তে চান, তারা ড্যান ব্রাউনের “ডিসেপশন পয়েন্ট” পড়ে নিতে পারেন। যদিও “ডিসেপশন পয়েন্ট” থেকে এই “হ্যাকার” বইটি পড়তে পাঠকের বেশি ভালো লাগবে বলেই মনে করি।
বইটা উপহার পেয়েছিলাম বেশ কিছুদিন আগে। পড়া হয়নি বিভিন্ন কারণে। জানতাম শুরু করলে থামার সুযোগ পাব না খুব একটা। আর হয়েছেও তাই। মোটামুটি ২ বসায় খতম দিলাম মাসুদ রানা সিরিজের বই "হ্যাকার"।
বহুল সমাদৃত একটি বই এটি। সাম্প্রতিককালের অন্যতম সেরা নিউ ফ্লেভার মাসুদ রানা বললেও অত্যুক্তি হবেনা। অনেকের সেরা রানা তালিকায় বইটির নাম দেখা যায়। তাই আকাঙ্ক্ষা ছিল আকাশচুম্বি। এবং মোটামুটিভাবে হতাশ হইনি।
গল্পের শুরুটা হয় বেশকিছু খুনের মধ্যে দিয়ে। ঝটপট এতোগুলো খুন দেখে একটু বাজে লাগেনি তা বলছিনা। তবে খুনের রকম সকম ভিন্ন ছিল বলে সেটা অতটা গায়ে লাগেনি। খুনের পরেই কাহিনী চলে আসে সোজা রানা এজেন্সিতে। পাকচক্রে এজেন্সির বিশিষ্ট মেম্বার এবং প্রাক্তন পেশাদার হ্যাকার খেলাচ্ছলে নাসার সার্ভার হ্যাক করে একটা ডাটা রিকভার করে। এবং সেই ডাটা মুহূর্তে ধ্বংস করে দেয় ওই শাখার সমস্ত কম্পিউটার। নড়ে চড়ে বসে রানা। সদস্য ছেলেটার সৌজন্যে জানতে পারে কিংবদন্তী এক প্রোগ্রামিং লজিকের কথা। ইউনোকোড। যা কিনা এমন লজিকে কাজ করে যে বর্তমান কোনও কম্পিউটারের কোনও প্রোগ্রাম দিয়ে সেটা থামানো সম্ভব না, এমনকি হ্যাক করাও অসম্ভব। ওদিকে ৪ দিন পড়েই সেই কোড হানবে আসল আঘাত। পুরো বিশ্বের উপর। এবং তখন একাধারে ধ্বংস হয়ে যাবে সবকিছু। পৃথিবীর সমস্ত কম্পিউটার নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে অনায়াসেই। ভয়ংকর এই বিপদকে থামাতে তৎপর হল রানা। খুঁজতে শুরু করল এমন একজনকে যে জানে এই কোড। সেই লোক পারে একটা এণ্টি ভাইরাস টাইপ সফটওয়্যার তৈরি করতে। সেটা দিয়েই বাঁচান যাবে সমস্ত পৃথিবী। আর এই যাত্রায় ওর সঙ্গী হল অফিসের সেই হ্যাকার ছেলেটি। এরপর মুহুর্মুহু বিপদের পথ পাড়ি দিলো ওরা জীবনটা হাতে নিয়ে।
এই ছিল মোটামুটি কাহিনী। ক্রমাগত দৌড়ের উপর চলতে হয়েছে ঘটনাতে। দৌড় হয়তো কিছুটা কমতে পারতো যদি রানা কিছু সঠিক সিদ্ধান্ত নিতো। এখানে বিবিধ একশন এবং ইম্প্রোভাইজেশন দুর্দান্ত লাগলেও একটা জিনিশ একটু দৃষ্টি কটু লেগেছে। সেটা হচ্ছে রানার ক্ষমাশীলতা। এবং সেই মহত্ত্বের অনিয়মতান্ত্রিকতা। কিছু যায়গায় রানা ক্ষমাশীল, আবার কিছু যায়গায় সে ক্ষমাশীল নয়। অথচ উভয় জায়গাতেই ক্ষমাশীল হবার কোনও কারণই ছিলনা। প্রতিযোগীকে বাগে পেয়ে থেঁতলে দিলেই চলতো। বেচারা রানা আর ওর সঙ্গীরা এই মহত্ত্বের জন্য অযাচিত বিপদে পড়েছে বহুবার। আহারে!
গল্পে বেশ কিছু টুইস্ট ছিল। সেগুলো ভালোই। আমি একটা আঁচ করেছি সঠিকভাবে। মজা পেয়েছি। বাকিগুলো কানের পাশ দিয়ে গেছে। কিন্তু বলব চমৎকার হয়েছে কাহিনী বিন্যাস। পাঠক বরাবর টানটান উত্তেজনার মধ্যে থাকবে। এবং যেটা শুরুতেই বললাম, গল্প একবার শুরু হলেই দৌড় আর দৌড়! মোটামুটি যদি কোনও ভাবে প্রথম কয়েকটা অধ্যায় পাড়ি দিতে পারেন, তাহলে শেষমেশ গিয়ে থামবেন শেষ সীমায়।
তবে হ্যাঁ। শুরু থেকে সে পর্যন্ত রানাকে একজন নির্ভরযোগ্য চরিত্র বলে মনে হয়েছে। গল্পে নারী চরিত্র ছিল, কিন্তু রানার সাথে তার কোনও সম্পর্ক তৈরি হয়নি! হাহা ... আমার এক ফ্রেন্ড কে বলছিলাম রানার কোনও নায়িকা নেই বইতে!! বেচারা প্রতিবাদী হয়ে উঠল। নাহ! এ হতে পারেনা!! এইটা হয়নাই কিছু। পচা বই ইত্যাদি ইত্যাদি। হাহাহা আসলে নায়িকা জমানোর চান্স ছিলনা রানার। এবং আমি অন্তত তাতে দোষের কিছুই দেখিনা। নায়িকাপ্রিয় পাঠকেরা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আশাকরি।
সত্যি বলতে দারুণ লাগল বইটা পড়ে। বইয়ের ফন্ট আরও কিছুটা বড় হলে ভালো হতো। তবে মেনে নিয়েছি। বইটা আগে দুটো বই ছিল, পড়ে একটা করা হয়েছে সম্ভবত পার্ট ১, ২ জুড়ে। তাই ফন্ট ছোট করা হয়েছে বোধহয়।
মাসুদ রানা সিরিজের ফ্যান হলে এটি সম্ভবত অবশ্যপাঠ্য। টানটান উত্তেজনা, বুদ্ধিদীপ্ত টুইস্ট, আর মুহুর্মুহু একশনের সমারোহ দম ফেলার সময় দেবেনা পাঠককূলকে, একথা হলপ করে বলতে পারি।
বইয়ের নামঃ হ্যাকার বইয়ের ধরণঃ স্পাই থ্রিলার / গুপ্তচরভিত্তিক রোমাঞ্চোপন্যাস। লেখকঃ কাজী আনোয়ার হোসেন প্রকাশনীঃ সেবা প্রকাশনী প্রকাশকালঃ ২০০৮ পৃষ্ঠাঃ ২৯৬ মুল্যঃ ৮৬ টাকা (মুদ্রিত মূল্য); ৭৭ টাকা (রকমারি মূল্য)
লেখক পরিচিতিঃ জুলাই ১৯, ১৯৩৬, ঢাকা) একজন বাংলাদেশী লেখক, অনুবাদক, প্রকাশক, এবং জনপ্রিয় মাসুদ রানা সিরিজের স্রষ্টা। সেবা প্রকাশনীর কর্ণধার হিসাবে তিনি ষাটের দশকের মধ্যভাগে মাসুদ রানা নামক গুপ্তচর চরিত্রকে সৃষ্টি করেন। ডাক নাম 'নবাব'। তাঁর পিতা প্রখ্যাত বিজ্ঞানী, গণিতবিদ ও সাহিত্যিক কাজী মোতাহার হোসেন, মাতা সাজেদা খাতুন। তাঁরা ছিলেন ৪ ভাই, ৭ বোন । তিনি ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে সেন্ট গ্রেগরি স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর জগন্নাথ কলেজ থেকে আইএ ও বিএ পাস করেন। ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে এমএ পাস করেন। ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার ও সংলাপ রচয়িতা হিসেবে বাচসাস পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া পেয়েছেন সিনেমা পত্রিকা ও জহির রায়হান চলচ্চিত্র পুরস্কার।
বইয়ের ফ্ল্যাপে লেখাঃ একটা খবর একই সঙ্গে কীভাবে ভালো আর মন্দ হয়, বলতে পারেন? ঠিক আছে, উদাহরণ দেয়া যাক। নাসার ডিপ স্পেস প্রোব ভয়েজার-টু'তে রিসিভ করা হয়েছে অত্যাশ্চর্য এক সিগন্যাল—ভিনগ্রহে বুদ্ধিমান প্রাণী থাকার অকাট্য প্রমাণ। সুসংবাদ, তাই না? কিন্তু খারাপ খবরটা হচ্ছে, ওটার ভিতর লুকিয়ে আছে এক ভয়ঙ্কর কোড, যা আগামী চারদিন পর সারা পৃথিবীর কম্পিউটার ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেবে। আর এর পিছনে যারা জড়িত, তারা কোনও ভিনগ্রহবাসী নয়, এই গ্রহেরই দু-পেয়ে জানোয়ার। এই মহাবিপর্যয়ের হাত থেকে সভ্যতাকে বাঁচাতে হ্যাকিং, সাইবার-ক্রাইম আর সাইবার-টেররিজমের সম্পূর্ণ অজানা-অচেনা অন্ধকার জগতে ঢুঁ মারতে চলেছে মাসুদ রানা। কিন্তু কাজটা সহজ নয় মোটেই। উদয় হয়েছে ওর পুরনো শত্রু ডগলাস বুলক ওরফে বুলডগ। যে-কোনও মূল্যে রানাকে ঠেকাতে মরিয়া সে। রয়েছে অচেনা শত্রুর লেলিয়ে দেয়া ভয়ঙ্কর খুনীরাও। আগামী ৯০ ঘণ্টা নরক দর্শন করে ফিরবে রানা।
পাঠ-প্রতিক্রিয়াঃ প্রায় ১০ বছরের বেশি সময় ধরে আমি মাসুদ রানা পড়ি। সেই ক্লাস সিক্স-সেভেন থেকে। রানার বইয়ের সব থেকে বেশি ভাল লাগার জায়গাটা হলো এর লেখনী। ঘোস্ট রাইটারদের দ্বারা লিখিত হওয়া সত্ত্বেও কোন বইয়েরই লেখনীশৈলী আলাদা মনে হয় না! যা হোক, এসব কথা মে বি আমার মুখে আপনারা আগেও শুনেছেন। তাই গাজীর পাঠ করে লাভ নেই। টপিকে আসি। আজকের টপিক হলো রানা সিরিজের "হ্যাকার" বইটি। হ্যাকার আমার পড়া প্রথম রানা বই। তাই এই বইটি নিয়ে বেশ মজার একটি স্মৃতি আছে আমার। আপনাদের সাথে তা শেয়ার করবো কিনা ভাবছি... আচ্ছা করেই ফেলি। আগেই বলেছি এটি আমার পড়া প্রথম রানা বই। ক্লাস সিক্সে পড়ি তখন। এক বড় ভাইয়ের বাসা থেকে মেরে দিছিলাম বইটা। তবে সেটা ছিল প্রথম খন্ড। পড়তে বসলাম। কাটখোট্টা ইংরেজী উচ্চারণ। অর্ধেক পড়ি, তার অর্ধেক বুঝি। তাছাড়া এসব বাইনারি-ফাইনারি, কোড-ফোড কোন কিছুই বুঝতাম না। ক্লাস সিক্সের পোলা! অত কিছু কি বুঝি! কিন্তু তার পরও পড়া চালিয়ে গেলাম। আস্তে আস্তে আগ্রহ বাড়তে থাকলো। মনে হলো একি পড়তেছি! এরকম জিনিস বাংলাদেশে লেখা হয়! সারাজীবন তো হলিউড মুভিতে দেখেছি এসব! একটু পর পর বইটা নেড়ে চেড়ে দেখি! অনুবাদ না তো! এরপর একটা সময় বইটা শেষ হলো। গল্পে মাসুদ রানা তখন মহা বিপদে। কিভাবে ছাড়া পাবে যখনই জানতে গেছি, দেখি নিচে লেখা "আগামী খন্ডে সমাপ্য"! বুঝুন অবস্থা??? টানা ২ দিন থাকলাম হ্যাঙ্গোভারে। এরপর কি হলো... এরপর কি হলো... এই ভাবতে ভাবতে দিন চলে গেলো। পাগলের মত খুজতে শুরু করলাম পরের পর্ব। কিন্তু পাই না! বহু খোজাখুজির পর একদিন পেলাম। কিন্তু দোকানদার কাকু বেচতে চাইলেন না। ছোটদের নাকি মাসুদ রানা পড়া নিষেধ! ব্যাস! মনটাই খারাপ হয়ে গেল। বাসাও বলতে পারি না কিনে দিতে। টিফিনের টাকা বাচিয়ে কিনতাম তো বই। বাসার কেউ কিছু জানতো না। লুকিয়ে লুকিয়ে বই পড়তাম। ধরা পড়লে সর্বনাশ! আর সেটা যদি মাসুদ রানা হয় তাইলে তো কথাই নেই! কিন্তু এই ঘটনার এক বছর পরে বইটির ভলিউম বের হয় আর আমারও টেনশান কমে। এবার আসি কিছু তাত্ত্বিক কথায়। হ্যাকার বইটি প্রথম প্রকাশ পায় খন্ড আকারে ২০০৭ বা ২০০৮ সালে। ভলিউম বের হয় তার পরের বছর। রানা সিরিজের ৩৮৫ ও ৩৮৬ নাম্বার বই নিয়ে প্রকাশিত এটি। হ্যাকার বইটি রানা সিরিজের অন্যান্য বইয়ের থেকে অনেকটা আলাদা। কারণ রানা সিরিজের খুব হাতে গোনা ৩/৪টি বই আছে যা মৌলিক কাহিনী নির্ভর। হ্যাকার তার মধ্যে অন্যতম। এছাড়া এটি মাসুদ রানা সিরিজের অন্যতম সেরা বই হিসেবে বিবেচিত হয়! বইয়ের কাহিনীর কথা বলি। উপরক্ত "বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা"র মাধ্যমে আপনারা হয়ত ইতোমধ্যেই কাহিনী সংক্ষেপটা জেনেছেন। আমি কিছু জিনিস শুধু বলতে চাই। বইটি এক কথায় চমৎকার। কম্পিউটার, কোডিং, প্রোগ্রামিং আর হ্যাকিং এর মধ্য দিয়ে চলে গেছে এক গভীর ষড়যন্ত্রের জাল। প্রচন্ড টানটান উত্তেজনা নিয়ে চলে গেছে কাহিনী। এই বইয়ে আছে একশান , টেকনোলজি, সায়েন্স ফিকশন, থ্রীল, এমনকি প্রেমও। তবে হ্যা! এবার প্রেমটা মাসুদ রানা করে নি। করেছে অন্য কেউ! ;) বইয়ের প্রথমেই একটা খুনের ঘটনার উল্লেখ আছে। ওটা পড়েই পাঠক আর বইটি ছাড়তে পারবেন না কথা দিচ্ছি! বইটির চরিত্রগুলোর মধ্যে রায়হান রসিদকে খুব ভালো লেগেছে আমার। এরকম ট্যালেন্ট আসলেই আমাদের দেশে অনেক আছে। যার একটু ভাল ক্যারিয়ারের আশায় দেশের বাইরে চলে যান আর পশ্চিমাদের হাতের পুতুল হয়ে যান। অথচ এরা যদি দেশের উপকারে আসে তাহলে আমাদের দেশের উন্নতি হতে খুব বেশিদিন লাগবে না! বইটির প্রচ্ছদটি বেশ ভাল লেগেছে আমার। বইয়ের প্রিন্ট, বাঁধাই, কাগজের মান বরাবরের মতই। সব শেষে বলতে চাই, সুপ্রিয় পাঠক, বইটি পড়ে দেখুন। এমনকি যদি আপনি রানা ভক্ত নাও হয়ে থাকেন, তাও পড়ুন। কথা দিচ্ছি, ভালো লাগবে! ধন্যবাদ! হ্যাপি রিডিং!
ও হ্যা! আপনারা হয়ত ভাবছেন গোটা রিভিউতে বইটি নিয়ে কোন সমালোচনার কথা উল্লেখ নেই কেন বা কোন নেগেটিভ কথা নেই কেন??? আসলে রানা সিরিজের প্রথম পড়া বই তো। তাই মুগ্ধতার জায়গাটা এতটাই বেশি যে ছোটখাটো খারাপ দিকগুলো চোখেই পড়ে না! :)
দারুণ! এ-বইয়ের যে ব্যাপারটা ভালো লেগেছে তা হলো, এবার বেশিরভাগ জায়গায় স্রেফ উপস্থিত বুদ্ধি খাটিয়ে বিপদ থেকে বেরিয়ে আসতে হয়েছে রানাকে। বেশিরভাগ সময়ই ওর হাতের কাছে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র ছিল না। তাই, নাগালের মধ্যে যা-ই পেয়েছে, তা-ই ব্যবহার করে 'দেশি' অস্ত্র বানিয়ে নিতে হয়েছে ওকে। রায়হান রশীদ দারুণ সংযোজন। মন কেড়ে নিয়েছে এ-ব্যাটা। রানা-রায়হান কেমিস্ট্রি জমেছিলও দারুণ! আরেকটা ব্যাপার ভাল্লেগেছে। বেশিরভাগ জায়গায় সুন্দ্রী মেয়েদের পটিয়ে চুটিয়ে প্রেম করতে পারলেও, এ বইয়ে সে-সৌভাগ্য হয়নি রানা বেচারার। বরং ওকে দেখিয়ে দেখিয়ে প্রেম করেছে...। :P
‘এক হাজার গজ থেকে টার্গেটে লাগানো তো অসম্ভব একটা ব্যাপার!’ ‘নট ফর দিস ম্যান,’ হাতে ধরা ফাইলটা রানাকে দেখতে দিল সোহেল। ‘পিওতর ভসকভ। প্রাক্তন কেজিবি এজেন্ট, অনেকের মতে দুনিয়ার সেরা স্নাইপার। ওকেই ভাড়া করেছিল কর্টেজ। ইন্টেল রিপোর্টটা দুদিনের মধ্যেই জোগাড় করেছি।’ ‘কোথায় ও এখন?’ ‘কেউ জানে না। নামটা জানার পর থেকেই আমরা ওকে হন্যে হয়ে খুঁজছি। কিন্তু স্রেফ বাতাসে মিলিয়ে গেছে লোকটা।’ ‘আমি ওকে খুঁজে বের করব,’ রানা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
এরপর কি আর কিছু লাগে? রুদ্ধশ্বাসে কখন বইটি শেষ হয়ে গেছে বুঝতেই পারি নি। আমার পড়া মাসুদ রানা সিরিজের অন্যতম সেরা বই।
অন্যান্য অনেকের মতই মাসুদ রানার বই একসময় আমার নেশায় পরিণত হয়েছিল।এই বইটিও পড়েছিলাম বেশ কয়েকদিন আগে।আমার মতে মাসুদ রানার শ্রেষ্ঠ বই এটাই।কারন বইটি রানার অন্যান্য কাহিনীগুলোর মত ছায়া অবলম্বন না, সম্পুর্ণ মৌলিক। বইয়ের গল্প ভিনগ্রহের প্রাণীদের পাঠানো একটা অত্যাশ্চর্য সিগন্যাল নিয়ে।সিগন্যালটি আসলে ইউনোকোড বলে সিঙ্গেল ডিজিটে তৈরি সাইবার জগতের এক কিংবদন্তীর রহস্যময় কোড। যার রচয়িতা এই পৃথিবীরই দশজন প্রোগ্রামার।এই কোড ভাইরাস হিসেবে এক্টিভেট হলে পৃথিবীময় সমস্ত কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ও কম্পিউটার সিস্টেম পুরোপুরি ধসে পড়বে।যথারীতি মাসুদ রানার মিশন হল পৃথিবীকে রক্ষা করা।যেহেতু সে কম্পিউটার কোডিং সম্পরকে জানেনা তাই রাইহান নামক এক তরুণ তাকে সাহায্য করে।বইটার ডিটেইল এর প্রশংসা করতেই হবে।সব মিলিয়ে চমৎকার একটি বই।বিদেশি অনেক thriller এর চেয়ে এই বইটি আমার অনেক বেশি ভাল লেগেছে।
বইয়ের ঘোস্ট রাইটার ইসমাইল আরমানের ভাষ্যমতে এটা সম্পূর্ণ মৌলিক বই, মাসুদ রানার অন্য বইগুলোর মত বিদেশি কাহিনী অবলম্বনে না। তাই হয়ে থাকলে এটা বাংলা ভাষার অন্যতম সেরা মৌলিক টেকনো থ্রিলার! বইয়ের একদম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত টানটান উত্তেজনায় ভরা, কাহিনী কখনোই মনে হয়নি যে ঝুলে যাচ্ছে( এটা অবশ্য সেবা প্রকাশনীর প্রায় সব বইয়ের জন্যই প্রযোজ্য, অযথা লিখে পৃষ্ঠা ভরান না সেবার লেখক / অনুবাদকগণ।)
*বইয়ের কিছু কিছু হ্যাকিং/ সিকিউরিটি নিয়ে তথ্যে অসংগতি আছে, তবে গল্পের বইয়ের জন্য মনে হয় এসবে ছাড় দেওয়া যায়, শতভাগ নির্ভুল তথ্যের জন্য তো পাঠ্যবই/ জার্নাল পেপারই আছে।
কাজী আনোয়ার হোসেন কেন (জানি রুটি-রুজির জন্য) মৌলিক না লিখে এডাপ্টেশনে গেলেন- এই আফসোস আরও প্রকট হয়েছে বইটা পড়ে! কী দুর্দান্ত থ্রিল আর টুইস্টে ভরপুর মাসুদ রানার মৌলিক একটা বই। আসলে উনার শুরু থেকেই মৌলিক সিরিজ, আর এডাপ্টেশন সিরিজ আলাদা করে রাখা লাগত। মাঝেমধ্যে শখ করে মৌলিক লিখলে এরকম নখ-কামড়ানো বিশ্বমানের থ্রিলার আরও পেত বাংলা সাহিত্য। আমেরিকায় বাংলাদেশের মত গরীব দেশের এরকম ক্ষমতাসম্পন্ন স্পাই এজেন্সি ঘাঁটি থাকার জন্য আর কম্পিউটার সায়েন্সের একটু বেশিই ভুগিচুগির জন্য ১ মার্ক কেটে রাখলুম। নইলে পুরো ৫ এ ৫ এরই যোগ্য।
আমি সেবার তিন গোয়েন্দা থেকে শুরু করে ওয়েস্টার্ন মোটামুটি সব পড়েছি। তবে এডাপ্টেশনের ক্ষেত্রে মাসুদ রানাকে বেশ এগিয়ে রাখতে হয়। কারণ কাহিনী ও তার গভীরতা সেই সাথে মাসুদ রানার এডভেঞ্চার সবাইকে আকর্ষণ করবেই।
হ্যাকার কে নিয়ে আলাদা ভাবে কিছু বলার নেই। অসাধারণ এডাপ্টেশন বলা যায়। আমি পড়তে পড়তে মুগ্ধ হয়েছি। কারণ প্রতিটি টুইষ্ট একশন সব কিছু দারূণ ছিল। শেষ পর্যন্ত আপনাকে কাহিনীর সাথে ধরে রাখবে।
বইটি শেলফে ছিল। গত ৯ এপ্রিল মাসুদ রানার জম্মদিন ছিল। তখন বইয়ের গ্রুপে এক আপু বইটা পড়তে সাজেস্ট করলে বইটা হাতে তুলে নেওয়া হয়।
_ মাসুদ রানা তেমন পড়া হয় না। কিন্তু বইটা পড়ার পর আরও কয়েকটা মাসুদ রানার বই পড়ার ইচ্ছে হচ্ছিল।
_ বইয়ে একেবারে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সাসপেন্সে ভরপুর ছিল। সেই সাথে কয়েকটি টুইস্টও ছিল। যার কারণে দম ফেলবার সুযোগ পাই নি। খুবই উপভোগ্য এক স্পাই-থৃলার। পাতায় পাতায় সাসপেন্স খোঁজা পাঠকসহ সমস্ত থ্রিলারপ্রেমীদের জন্য হ্যাকার দারুণ একটি বই।
গল্পটি মৌলিক হলেও আন্তর্জাতিক মানের। কাজী আনোয়ার হোসেন কত বড় মাপের একজন থ্রিলার লেখক তা তিনি আবারও প্রমান করেছেন এই বইটি দ্বারা। তবে ভিন্নধারার গল্প হিসেবে (সায়েন্স ফিকশান) অনেকের কাছে এটি ভাল নাও লাগতে পারে। মাই রেটিং ৭/১০