Awarded the Nobel Prize in Literature in 1913 "because of his profoundly sensitive, fresh and beautiful verse, by which, with consummate skill, he has made his poetic thought, expressed in his own English words, a part of the literature of the West."
Tagore modernised Bengali art by spurning rigid classical forms and resisting linguistic strictures. His novels, stories, songs, dance-dramas, and essays spoke to topics political and personal. Gitanjali (Song Offerings), Gora (Fair-Faced), and Ghare-Baire (The Home and the World) are his best-known works, and his verse, short stories, and novels were acclaimed—or panned—for their lyricism, colloquialism, naturalism, and unnatural contemplation. His compositions were chosen by two nations as national anthems: India's Jana Gana Mana and Bangladesh's Amar Shonar Bangla.
১৯১৬ সাল, জাহাজের নাম তোসামারু, গন্তব্য জাপান, যাত্রীর নাম রবীন্দ্রনাথ। জাহাজে বসে চিঠি লিখছেন তিনি। সেই চিঠিগুলোই সংকলিত হয়েছে এই বইতে, ভ্রমণসাহিত্যের ছদ্মবেশে। সচেতন গদ্য নয়, আসলে তো চিঠি, তাই ভাবের প্রকাশে রবীন্দ্রনাথ অনেক বেশি সাবলীল এখানে। লৌকিকতামুক্ত। পথে যেতে যেতে কী কী দৃশ্য দেখেছেন তার বর্ণনার চেয়েও বেশি লিখেছেন, কী কী ভাবনা ভেবেছেন। ভেবেছেন অনেকরকম কথা। তোলপাড় করা সামুদ্রিক ঝড়ের কথা। শান্ত বৈকালিক আকাশে সূর্য অস্ত যাওয়ার কথা। প্রকৃতির অনুশাসনকে অগ্রাহ্য করে মানুষের যান্ত্রিক-দানবিক হয়ে উঠবার কথা। জাপানিদের অনুপম সৌন্দর্যবোধের কথা। জাপানিদের সঙ্গে বাঙালিদের মিল ও অমিলের কথা। রাতদুপুরে জাহাজের ডেকে দাঁড়িয়ে অঝোর বৃষ্টিপাতের তালে তাল-মিলিয়ে গেয়ে ওঠা গানের কথা : "শ্রাবণের ধারার মতো পড়ুক ঝরে"।
হঠাৎ মনে হয়, এ একেবারে অসহ্য। কিন্তু, মানুষের মধ্যে শরীর-মন-প্রাণের চেয়েও বড় একটা সত্তা আছে। ঝড়ের আকাশের উপরেও যেমন শান্ত আকাশ, তুফানের সমুদ্রের নীচে যেমন শান্ত সমুদ্র, সেই আকাশ সেই সমুদ্রই যেমন বড়ো, মানুষের অন্তরের গভীরে এবং সমুচ্চে সেইরকম একটি বিরাট শান্ত পুরুষ আছে— বিপদ এবং দুঃখের ভিতর দিয়ে তাকিয়ে দেখলে তাকে পাওয়া যায়— দুঃখ তার পায়ের তলায়, মৃত্যু তাকে স্পর্শ করতে পারে না।
পৃথিবীতে সবচেয়ে বড়ো রহস্য--দেখবার বস্তুটি নয় , যে দেখে সে মানুষটি এককথায় অসাধারণ বই।আমি চায়না গেলেও এখনও জাপান যাওয়া হয়নি।যেকয় জন জাপানীর সাথে আমার এ পর্যন্ত পরিচয় হয়েছে,তাদের আচরনে আমি সবসময়ই মুগ্ধ হয়েছি।জাপানীদের জীবনাচরণ সত্যিই আদর্শ।
আলসেমির জন্যে রিভিউ টাইপ কিছু লিখে রাখছি না। শুধু একটাই কথা বলবো, "বইটি আমার ভালো লাগলো, ভালো বাসলুম। "
কয়েকটি লাইন খুব পছন্দের :-
▪ দেখবার জিনিষ অতিরিক্ত পরিমাণে পাই বলেই দেখবার জিনিষ সম্পূর্ণ করে’ দেখি নে। এই জন্যে মাঝে মাঝে আমাদের পেটুক চোখের পক্ষে এই রকমের উপবাস ভালো।
▪ মানুষ যখন ঘরের মধ্যে জমিয়ে বসে আছে, তখন বিদায়ের আয়োজনটা এই জন্যেই কষ্টকর; কেন না, থাকার সঙ্গে যাওয়ার সন্ধিস্থলটা মনের পক্ষে মুস্কিলের জায়গা,— সেখানে তাকে দুই উল্টো দিক সামলাতে হয়,—সে একরকমের কঠিন ব্যায়াম।
▪ বিদায় মাত্রেরই একটা ব্যথা আছে,― সে ব্যথাটার প্রধান কারণ এই, জীবনে যা কিছুকে সব চেয়ে নির্দ্দিষ্ট করে’ পাওয়া গেছে, তাকে অনির্দ্দিষ্টের আড়ালে সমর্পণ করে’ যাওয়া।
▪ বিদায় মাত্রেরই একটা ব্যথা আছে,― সে ব্যথাটার প্রধান কারণ এই, জীবনে যা কিছুকে সব চেয়ে নির্দ্দিষ্ট করে’ পাওয়া গেছে, তাকে অনির্দ্দিষ্টের আড়ালে সমর্পণ করে’ যাওয়া। তার বদলে হাতে হাতে আর একটা কিছুকে পাওয়া না গেলে এই শূন্যতাটাই মনের মধ্যে বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। সেই পাওনাটা হচ্ছে অনির্দ্দিষ্টকে ক্রমে ক্রমে নির্দ্দিষ্টের ভাণ্ডারের মধ্যে পেয়ে চলতে থাকা। পরিচয়কে ক্রমে ক্রমে পরিচয়ের কোঠার মধ্যে ভুক্ত করে নিতে থাকা। সেই জন্যে যাত্রার মধ্যে যে দুঃখ আছে, চলাটাই হচ্চে তার ওষুধ। কিন্তু যাত্রা করলুম অথচ চল্লুম না— এটা সহ্য করা শক্ত।
▪ বাইরে থেকে মানুষকে বাঁধলে মানুষ আপনাকে আপনি বাঁধবার শক্তি হারায়।
▪ অন্যের পরে মানুষের বড় ঈর্ষা। যাকে আর কেউ পায় নি, মানুষ তাকে পেতে চায়। তাতে যে পাওয়ার পরিমাণ বাড়ে তা নয়, কিন্তু পাওয়ার অভিমান বাড়ে।
▪ এক দৌড়ে দু’ তিন শো বছর হু হু করে পেরিয়ে গেল।
▪ জগতে সূর্য্যোদয় ও সূর্য্যাস্ত সামান্য ব্যাপার নয়, তার অভ্যর্থনার জন্যে স্বর্গ মর্ত্ত্যে রাজকীয় সমারোহ।
▪ জগতে সূর্য্যোদয় ও সূর্য্যাস্ত সামান্য ব্যাপার নয়, তার অভ্যর্থনার জন্যে স্বর্গ মর্ত্ত্যে রাজকীয় সমারোহ। প্রভাতে পৃথিবী তার ঘোম্টা খুলে দাঁড়ায়, তার বাণী নানা সুরে জেগে উঠে; সন্ধ্যায় স্বর্গলোকের যবনিকা উঠে যায়, এবং দ্যুলোক আপন জ্যোতি-রোমাঞ্চিত নিঃশব্দতার দ্বারা পৃথিবীর সম্ভাষণের উত্তর দেয়।
▪ হয় অত্যন্ত ঘনিষ্ঠতা, নয় অত্যন্ত দূরত্ব, এর মাঝখানে যে একটা প্রকাণ্ড জায়গা আছে, সেটা আজো আমাদের ভাল করে’ আয়ত্ত হয় নি।
▪ এই যে আমার এক-আমি, এ বহুর মধ্যে দিয়ে চলে’ চলে’ নিজেকে নিত্য উপলব্ধি করতে থাকে। বহুর
▪ কেবল বাইরে বেরতে পারাই যে মুক্তি তা’ নয়, অবাধে কাজ করতে পাওয়া মানুষের পক্ষে তার চেয়ে বড় মুক্তি। পরাধীনতাই সব চেয়ে বড় বন্ধন নয়, কাজের সঙ্কীর্ণতাই হচ্ছে সব চেয়ে কঠোর খাঁচা।
▪ কাঁকরের উপর দিয়ে চলা, আর জুতার ভিতরে কাঁকর নিয়ে চলার যে তফাৎ, এ যেন তেমনি।
▪ হৃদয়ের মিতব্যয়িতা।
▪ আমার ভাল লাগ্ল, আমি ভাল বাসলুম।
▪ দুঃখ তার পায়ের তলায়, মৃত্যু, তাকে স্পর্শ করে না।
▪ যে-সাধনায় মানুষ আপনাকে আপনি ষোলো-আনা ব্যবহার কর্বার শক্তি পায়, তার কৃপণতা ঘুচে যায়, নিজেকে নিজে কোন অংশে ফাঁকি দেয় না,―সে যে মস্ত সাধনা।
▪ প্রয়োজনের খাতিরে অনেক ক্রুর কর্ম্ম মানুষকে করতে হয়, কিন্তু সেগুলোকে ভুলতে পারাই মনুষ্যত্ব।
“অন্যের পরে মানুষের বড়ো ঈর্ষা। যাকে আর কেউ পায় নি মানুষ তাকে পেতে চায়। তাতে যে পাওয়ার পরিমাণ বাড়ে তা নয়, কিন্তু পাওয়ার অভিমান বাড়ে।” জাপান যাত্রী একটি ভ্রমণ কাহিনীর চেয়ে মূলত কবির অন্তর আলোচনা। নোবেল বিজয়ী লেখক যখন জাহাজে করে জাপান যায় এশিয়ায় সবাই তাকে এক নামে চিনে। লেখক বাঙ্গালি জাতির ভ্রমণ আচার বিচারের তৎকালীন অবস্থার একটা বিশ্লেষণ করেছেন। লেখন মানব মন নিয়েও তার ভাবাবেগ প্রকাশ করেছে এই রচনায়। আমার ভাল লেগেছে লেখকের জীবন দর্শন - “উপনিষদে লিখছে, এক ডালে দুই পাখি আছে,তার মধ্যে এক পাখি খায় আর এক পাখি দেখে। যে-পাখি দেখছে তারই আনন্দ বড়ো আনন্দ। কেননা, তার সে বিশুদ্ধ আনন্দ, মুক্ত আনন্দ। মানুষের নিজের মধ্যেই এই দুই পাখি আছে। এক পাখির প্রয়োজন আছে, আর-এক পাখির প্রয়োজন নেই। এক পাখি ভোগ করে, আর-এক পাখি দেখে। যে-পাখি ভোগ করে সে নির্মাণ করে, যে-পাখি দেখে সে সৃষ্টি করে। নির্মাণ করা মানে মাপে তৈরি করা, অর্থাৎ যেটা তৈরি হচ্ছে সেইটেই চরম নয়, সেইটেকে অন্য কিছুর মাপে তৈরি করা--নিজের প্রয়োজনের মাপে বা অন্যের প্রয়োজনের মাপে। আর, সৃষ্টি করা অন্য কোনো-কিছুর মাপের অপেক্ষা করে না, সে হচ্ছে নিজেকে সর্জন করা, নিজেকেই প্রকাশ করা। এইজন্য ভোগী পাখি যে-সমস্ত উপকরণ নিয়ে কাজ করছে তা প্রধানত বাইরের উপকরণ, আর দ্রষ্টা পাখির উপকরণ হচ্ছে আমি-পদার্থ। এই আমির প্রকাশই সাহিত্য, আর্ট। তার মধ্যে কোনো দায়ই নেই, কর্তব্যের দায়ও না।”
লেখক খুবই আধুনিকমনা। নারীদের স্বাবলম্বী হওয়াকে তিনি ভাল চোখে দেখেছেন। তিনি লিখেছেন- “লোকের কাছে শুনতে পাই, এখানকার পুরুষেরা অলস ও আরামপ্রিয়, অন্য দেশের পুরুষের কাজ প্রায় সমস্তই এখানে মেয়ে���া করে থাকে। হঠাৎ মনে আসে, এটা বুঝি মেয়েদের উপরে জুলুম করা হয়েছে। কিন্তু, ফলে তো তার উলটোই দেখতে পাচ্ছি--এই কাজকর্মের হিল্লোলে মেয়েরা আরো যেন বেশি করে বিকশিত হয়ে উঠেছে। কেবল বাইরে বেরতে পারাই যে মুক্তি তা নয়, অবাধে কাজ করতে পাওয়া মানুষের পক্ষে তার চেয়ে বড়ো মুক্তি। পরাধীনতাই সবচেয়ে বড়ো বন্ধন নয়, কাজের সংকীর্ণতাই হচ্ছে সবচেয়ে কঠোর খাঁচা।”
লেখাটা আপনাকে কবির দৃষ্টিভঙ্গির সাথে পরিচিত করে তুলবে। জাপানীরা যে অনেক অগ্রসর হবে লেখক তা আঁচ করতে পেরেছেন। জাপানীদের পরিষ্কার পরিছন্নতা, ফুল সাজানো বা চা বানানোর আচার আচারন বা নারী পুরুষের সমান ভাবে কাজ করা লেখক মুগ্ধ করেছে। কবি বাঙালিদের আর জাপানীদের মধ্য পার্থক্য খুব সুনিপুনভাবে তুলে ধরেছে।
রবিঠাকুরের জাপানকাহিনি! ১৯১৬ সালের মে মাসে জাপানযাত্রা করেন জাহাজে চেপে, সেখান থেকে সোজা আমেরিকা। এগারো মাসের বিদেশভ্রমণ শেষে আবার পুনরায় কলকাতায় প্রত্যাবর্তন করেন। সেই যাত্রারই গল্প সাজিয়ে এই বইখানি। তবে এটি যাত্রার লগবই টাইপের দিনলিপি নহে। রবীন্দ্রনাথ জাহাজ থেকেই জাপানের স্বাদ পেয়েছেন, জাপানের কৃষ্টি-কালচারের রূপরস আস্বাদন করেছেন, জাপানিদের বুঝতে চেয়েছেন। সেই ব্যপারটিই বিভিন্নভাবে তুলে ধরেছেন। এবং বরাবরের মতোই লেখা পড়ে যা মনে হয় আরকি, আরে এতো আমারই মনের ভাব! লেখক তাঁর কলমে লিখে রেখেছে যে!
বইখানি অতিশয় উপাদেয়। তবে জাপানিদের ব্যপারে গুরুজীর কী মনোভাব তা আর লিখছি নে, পাঠকেরা পড়ে নেবেন।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত জাপান যাত্রী মূলত একটি চিঠির সংকলন । ১৯১৯ সালের রচিত এই বইটি তে তৎকালীন পরিস্থিতিতে জাপানি তোসা মারু জাহাজে করে লেখক এর ভ্রমণ কাহিনী উঠে এসেছে। কলকাতা বন্দর থেকে শুরু করে বর্তমানের মিয়ানমার চীনা বন্দর থেকে শুরু করে জাপানে পৌঁছা পর্যন্ত জাহাজে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা কবি উল্লেখ করেছেন। কবি চেতনায় উঠে আসা মানুষের বিভিন্ন পরিস্থিতি এবং কবি মনের অনুভব কাব্য এখানে ফুটে এসেছে। জাপানি জাহাজ চালকদের বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ, চীনা শ্রমিকের কঠোর পরিশ্রম, রেঙ্গুনে বাঙ্গালীদের ব্যবসা-বাণিজ্য, জাপানিদের জীবন বোধ এবং তাদের মানব চরিত্রের বিষয়বলি কবি নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে উল্লেখ করেছেন ।
'এই-যে সাদা মেঘের ছিটে-দেওয়া নীল আকাশের নীচে শ্যামল-ঐশ্বর্যময়ী ধরণীর আঙিনার সামনে দিয়ে সন্ন্যাসী জলের স্রোত উদাসী হয়ে চলেছে, তার মাঝখানে প্রধানত প্রকাশ পাচ্ছে দ্রষ্টা আমি। ...তেমনি করেই কেবলমাত্র দৃশ্যের মধ্যে নয়, ভাবের মধ্যেও যে ভেসে চলেছে সেও সেই দ্রষ্টা আমি। সেখানে যা বলছে সেটা উপলক্ষ, যে বলছে সেই লক্ষ্য। বাহিরের বিশ্বের রূপধারার দিকেও আমি যেমন তাকাতে তাকাতে চলেছি, আমার অন্তরের চিন্তাধারা ভাবধারার দিকেও আমি তেমনি চিত্তদৃষ্টি দিয়ে তাকাতে তাকাতে চলেছি।'
১৯১৬ সালে উইলিয়াম পিয়ার্সন, সি. এফ. এণ্ড্রুজ এবং মুকুলচন্দ্র দে'কে নিয়ে রবীন্দ্রনাথ জাপানে যাত্রা করেন। তাঁর এই জাপানযাত্রার অভিজ্ঞতা পত্রাকারে প্রথম প্রকাশিত হয় সবুজপত্র পত্রিকায়। পরে ১৯১৯ সালে সেগুলি 'জাপান-যাত্রী' নামে গ্রন্থাকারে মুদ্রিত হয়। পত্রগুলিতে রবীন্দ্রনাথের নন্দনচিন্তা, অধ্যাত্মবোধ এবং সমাজচেতনার ত্রিবেণী সঙ্গম রচিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ দুচোখ ভরে দেখেছেন এবং সেই দেখাকে মননের মধু মিশিয়ে আমাদের দেখিয়েছেন। এখানেই এই গ্রন্থের বিশেষত্ব। বস্তুগত রিপোর্ট বা গতানুগতিক প্রতিবেদন নয়, বরং পত্রগুলি রবীন্দ্রচেতনায় সংশ্লেষিত ভ্রমণ-অভিজ্ঞতার সাহিত্যরূপ। এগুলি পড়লে একই সঙ্গে কবির অন্তর্লোক এবং সমকালীন বিশ্বলোকের পরিচয় পাওয়া যায়। বিশ শতকের দ্বিতীয় দশকে নাগরিক যন্ত্রসভ্যতার সমালোচনা, হিন্দুদের আচারগত বন্ধন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের শ্লেষাত্মক বর্ণনা, অসীম সমুদ্র এবং অনন্ত আকাশের মিলনাভিসারের অপূর্ব রূপচিত্রাঙ্কন, জাপানের শান্ত সংযত সহজাত সৌন্দর্যচেতনা, ইউরোপীয় ও ভারতীয় সভ্যতার সঙ্গে তার সম্পর্ককে রবীন্দ্রনাথ তাঁর অনন্য গদ্যসুষমায় ফুটিয়ে তুলেছেন। এই গ্রন্থের অন্যতম আভরণ টাইক্কান ও শিমোমুরার চারটি ছবির মনোমুগ্ধকর বর্ণনা, যা জাপানি চিত্রশিল্পের সংক্ষিপ্ত-সমাহিত ভাষ্যরূপে পরিগণিত হতে পারে।
রবীন্দ্রনাথের জাপানপ্রীতির কথা সুবিদিত৷ শুনেছিতার সংগ্রহে একটি সামুরাই কাটানা'ও ছিল৷ বইটা বাঙলা ১৩২৩ সালের শুরুর দিকের। অর্থাৎ তাঁর শেষবয়স বলা যায় না৷ তখনও তিনি সংশয়বাদী হয়ে পারেননি৷ সুপাঠ্য হলেও ধর্মচিন্তাগুলো ভালোলাগেনি৷
রবীন্দ্রনাথের অন্তর্দৃষ্টি প্রখর। একটি জাতির সামগ্রিক দর্শন তিনি সহজে বুঝতে পারতেন। তাই বইটিতে চীনের পরাশক্তি হওয়া ও জাপানের আগ্রাসী মনোভাব দুটোর ব্যাপারেরই ভবিষ্যৎবাণী পাওয়া যায়।
আজ থেকে ঠিক একশ বছর আগে কবিগুরু জাপান গিয়েছিলেন, জাহাজে করে। তার জাহাজ কলকাতা থেকে যাত্রা শুরু করে রেঙ্গুন, পিনাং, সিঙ্গাপুর হয়ে জাপান পৌঁছায়। এই পথ চলতে যেয়ে যা দেখেছেন, যা তার মনে হয়েছে সব তিনি বলে গিয়েছেন। এর ভেতর দুটি কথা না বললেই নয়। তিনি তখনই আত্মবিশ্বাসের সাথে বলে গিয়েছিলেন যে, চিনা এবং জাপানিরা অনেক উন্নতি করবে। তিনি যে একজন লেখকই ছিলেন না, আধুনিক একজন মানুষও ছিলেন, তার দূরদর্শিতা যে অনেক বাঙ্গালিকে ছাড়িয়ে গিয়েছে, এটার আরও একটা প্রমাণ হতে পারে, এই বইটা।
দার্শনিক ও পরিব্রাজক রবীন্দ্রনাথের আদর্শ সম্মিলন এই গ্রন্থ। জাপানিদের সাথে বাঙালির মিল খুজে ফিরেছেন। সাথে জাপানি শিল্প সংস্কৃতিতে পরিমিতিবোধ ও অল্পে তুষ্ট হওয়া দেখে হয়েছেন অভিভূত।
যাযাবরের 'দৃষ্টিপাত' পড়ে থাকলে জানবেন, বাংলা রচনায় ব্যবহৃত অনেক উদ্ধৃতি এই এক বই থেকে এসেছে কারণ কথায় কথায় এত গভীর বোধ হুটহাট উঠে আসার নজির সহজ না। 'জাপানযাত্রী' রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভ্রমণকাহিনী, কিন্তু তাঁর যে দেখার চোখের পরিচয় পেয়েছি এখানে, তা আমাকে ভীষণ অবাক করেছে। নিতান্ত রাতের আকাশ, নাবিকের কাজ, জাপানি আসবাব অথবা দিনের চালচলনের মাঝে কবিগুরু কখনো দেখেছেন দর্শন, কখনো বিজ্ঞান, একটা দেশের সংস্কৃতির মৌলিক উপাদান, সাথে জীবনবোধের গভীর আলোড়ন। তাছাড়া, তাঁর যে দৃষ্টিভঙ্গি দেখেছি তা তাঁর সময়ের চেয়ে অনেক অনেকদূর এগিয়ে ছিল। কতটা আধুনিক মনের ছিলেন তিনি, তা আদৌ রবীন্দ্রনাথকে যেমন জানতাম বা সব পাঠকদেরকে যেভাবে জানতে দেখেছি তার সাথে মিলে না।
জাপানযাত্রী আর কিছু না করুক পাঠককে 'শিখতে' শেখাবে। তাঁর মতো গ্রহণ করার উদার মানসিকতা যদি জাতির থাকতো তাহলে বাঙ্গালি বহুদূর আগাতে পারতো। কিন্তু এই রবীন্দ্রনাথকে খুঁজে পেতে আমার যেমন এতদিন লেগে গেছে, কি জানি, হয়তো আমার পূর্বসূরি 'মননশীল' বাঙ্গালিদের কাছে কবির এই রূপ আগ্রহই জাগায়নি!
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এত সুন্দর করে কিভাবে লিখেন?ডাক্তারের চেম্বারে গিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনছিলাম আর সে সময় রবী বাবুর সাথে কাটালাম।যতই পড়েছি ততই মুগ্ধ হয়েছি।