Preface: This lyrical drama is based on the following story from the Mahabharata: In the course of his wanderings, in fulfilment of a vow of penance, Arjuna came to Manipur. There he saw Chitrangada, the beautiful daughter of Chitravahana, the king of the country. Smitten with her charms, he asked the king for the hand of his daughter in marriage. Chitravahana asked him who he was, & learning that he was Arjuna the Pandara, told him that Prabhanjana, one of his ancestors in the kingly line of Manipur, had long been childless. In order to obtain an heir, he performed severe penances. Pleased with these austerities, the god Shiva gave him this boon, that he & his successors should each have one child. It so happened that the promised child had invariably been a son. He, Chitravahana, was the 1st to have only a daughter Chitrangada to perpetuate the race. He had, therefore, always treated her as a son & had made her his heir. Continuing, the king said: "The one son that will be born to her must be the perpetuator of my race. That son will be the price that I shall demand for this marriage. You can take her, if you like, on this condition." Arjuna promised & took Chitrangada to wife, & lived in her father's capital for three years. When a son was born to them, he embraced her with affection, & taking leave of her & her father, set out again on his travels.
Awarded the Nobel Prize in Literature in 1913 "because of his profoundly sensitive, fresh and beautiful verse, by which, with consummate skill, he has made his poetic thought, expressed in his own English words, a part of the literature of the West."
Tagore modernised Bengali art by spurning rigid classical forms and resisting linguistic strictures. His novels, stories, songs, dance-dramas, and essays spoke to topics political and personal. Gitanjali (Song Offerings), Gora (Fair-Faced), and Ghare-Baire (The Home and the World) are his best-known works, and his verse, short stories, and novels were acclaimed—or panned—for their lyricism, colloquialism, naturalism, and unnatural contemplation. His compositions were chosen by two nations as national anthems: India's Jana Gana Mana and Bangladesh's Amar Shonar Bangla.
নৃত্যনাট্য ও গীতিনাট্যের মধ্যে কী পার্থক্য আছে তা ঠিক জানা নেই। তবে মন-প্রাণ দিয়ে যা উপভোগ করলাম তার মুগ্ধতায় এখনও ডুবে আছি। রক্তকরবী পড়ার পর ভাবলাম এই বৈশাখে গীতিনাট্যের স্বাদ নেওয়া যাক। এই ধরনের নাটক পড়ে উপভোগ করার বিষয় না। তাই ইউটিউব থেকে একটা বাছাই করে দেখলাম। চণ্ডালিকার থেকে চিত্রাঙ্গদা বহুগুণে ভালো লাগল। মুহূর্তে-মুহূর্তে সে ভালোলাগা বেড়েই চলল। মহাভারত পড়ার সময় চিত্রাঙ্গদার বিশেষত্ব পাঠকের নজর কাড়ে। পৌরাণিক হয়েও এ কাহিনী অতি আধুনিক। ছোট বড় ৪৮টি চমৎকার গানে রবীন্দ্রনাথ এতে ফুটিয়ে তুলেছেন বীর ও প্রেমকাতর চিত্রাঙ্গদার মনের সূক্ষ ভাবগুলো, অর্জুন ও চিত্রাঙ্গদার উপর নতুন করে আরোপ করেছেন মহত্ত্ব। শোনার পর লিরিক্সগুলো আবার পড়ার জন্য অ্যাপে গিয়ে খোঁজ নিয়ে বুঝলাম যা শুনলাম তা গীতবিতান থেকে নেওয়া। আর নাটক অংশে য চিত্রাঙ্গদা আছে তা ঠিক গান না। কাব্যধর্মী সংলাপ অনেকটাই গানেরই মতো। এরপর নাটকটা অডিও প্লে করে লিরিক্সে চোখ বুলিয়ে গেলাম। এবার ভালোলাগা আরও গভীর হলো। তারপর নাটক অংশেরটা ধীরে-সুস্থে পড়ে শেষ করার মনের ভিতর এর শিকড় আরও ছড়িয়ে গেল। মুগ্ধতায় রেশ কাটছেই না। দেখা-শোনা-পড়া সব উপায়েই উপভোগ করা শেষ। এখন সামনা-সামনি দেখার ইচ্ছা নিয়ে থাকলাম।
দিন চলে যায়, আমি আনমনে তারি আশা চেয়ে থাকি বাতায়নে-- ওগো, প্রাণে মনে আমি যে তাহার পরশ পাবার প্রয়াসী॥ ওগো সুদূর, বিপুল সুদূর, তুমি যে বাজাও ব্যাকুল বাঁশরি-- মোর ডানা নাই, আছি এক ঠাঁই সে কথা যে যাই পাশরি॥ আমি উন্মনা হে, হে সুদূর, আমি উদাসী॥
একটা ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ দিয়ে লেখা শুরু করি, কেমন?
আমার সব সময় মনে হয়েছে যে রবি বাবুর উপন্যাসের চাইতে তাঁর লেখা নাটকের কাব্যগুন অনেক বেশি। রবীন্দ্রনাথের উপন্যাসগুলো তুলনামূলকভাবে প্রাঞ্জল গদ্যে লেখা, যেখানে কাহিনির গতিপথ, চরিত্রের অন্তর্দ্বন্দ্ব, সমাজমনস্তত্ত্বের বিশ্লেষণ বেশি গুরুত্ব পায়। কিন্তু তাঁর নাটকে কাব্যগুণ প্রায় সর্বত্রই প্রধান হয়ে ওঠে।
বিশেষ করে তাঁর নৃত্যনাট্য (যেমন চণ্ডালিকা, শ্যামা, চিত্রাঙ্গদা) কিংবা কাব্যনাট্য (রাজা, ডাকঘর, প্রায়শ্চিত্ত, অচলায়তন)—এগুলোর ভাষা এতটাই ছন্দময় ও প্রতীকময় যে, সেগুলো কবিতার মতোই পাঠ করা যায়। তাঁর নাটকে সংলাপের ভেতরেও পদ্যের ধরণ লক্ষ্য করা যায়, যা নাটকের আবহকে মূর্ত করে তোলে।
একটা মজার দিক হলো, রবীন্দ্রনাথ নাটক এবং কবিতাকে আলাদা করেননি; বরং নাটকেও কাব্যের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে নতুন ধরনের নাট্যরূপ তৈরি করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, ডাকঘর-এ ভাষার ঐন্দ্রজালিক গুণ, রাজা-তে গভীর প্রতীকবাদ এবং অচলায়তন-এ গীতিময় সংলাপ নাটকীয় অভিজ্ঞতাকে আরও গভীর করে তোলে।
অন্যদিকে, উপন্যাসের ক্ষেত্রে তিনি অনেক বেশি সহজবোধ্য ও বাস্তবধর্মী ভাষা ব্যবহার করেছেন, যেখানে কাব্যিকতা কিছুটা পরোক্ষভাবে আসে। তবে কিছু উপন্যাসে (যেমন শেষের কবিতা) ভাষার একটি ব্যতিক্রমী সৌন্দর্য লক্ষ করা যায়, যেখানে চরিত্ররা প্রায় কাব্যিকভাবেই কথা বলে।
তাহলে বলাই যায় যে রবীন্দ্রনাথের নাটকগুলোর ভাষা অনেক বেশি কাব্যময়, কারণ তিনি সেখানে ছন্দ, উপমা, প্রতীক এবং গীতিময়তার মাধ্যমে কাব্যের শক্তিকে পূর্ণভাবে ব্যবহার করেছেন।
The Review:
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নৃত্যনাট্য 'চিত্রাঙ্গদা' (১৮৯২) এক শক্তিমান নারী চরিত্রের আত্মপ্রকাশ। এই নাটকে তিনি মহাভারতের চিত্রাঙ্গদার কাহিনীকে নতুন রূপ দেন, যেখানে নারী-সত্তার বহুমাত্রিকতা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এটি কেবলমাত্র প্রেমের কাহিনী নয়, বরং আত্ম-অনুসন্ধান ও আত্মপ্রতিষ্ঠার নাটক।
“This above all: to thine own self be true.” (Hamlet, Act 1, Scene 3)
এই নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র চিত্রাঙ্গদা, মণিপুরের রাজকন্যা, যিনি ছোটবেলা থেকে পুরুষের মতো যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন। তিনি নারীত্বের প্রচলিত সংজ্ঞার বিপরীতে গিয়ে নিজের শক্তি ও সামর্থ্যের ভিত্তিতে গড়ে ওঠেন। রবীন্দ্রনাথ এই চরিত্রের মধ্যে দিয়ে নারীর আত্মপরিচয়ের সন্ধান এবং সমাজের নির্ধারিত গণ্ডির বাইরে এসে নিজের অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠার প্রয়াস দেখিয়েছেন।
“তুমি কেমন করে গান করো হে গুণী, আমি অবাক হয়ে শুনি।”
চিত্রাঙ্গদা যখন অর্জুনকে ভালোবাসেন, তখন উপলব্ধি করেন, অর্জুন তাকে নারী হিসেবে নয়, বরং এক সহযোদ্ধা হিসেবে দেখেন। এই দ্বন্দ্বের মধ্যে তিনি দেবতাদের আশীর্বাদে নিজের রূপ বদলে এক অপরূপা রমণীতে পরিণত হন। এই পর্যায়ে নাটকের দ্বিতীয় স্তর শুরু হয়, যেখানে প্রেমের ভিন্নতর রূপ এবং নারীর রূপ-গুণের গুরুত্ব নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
“All that glisters is not gold.” (The Merchant of Venice, Act 2, Scene 7)
রূপান্তরিত চিত্রাঙ্গদাকে দেখে অর্জুন মুগ্ধ হলেও, এখানে স্পষ্ট হয়ে ওঠে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের গভীর সত্য—অন্তরের শক্তি নয়, বাহ্যিক রূপই অধিক প্রশংসিত হয়। কিন্তু চিত্রাঙ্গদা দ্রুত উপলব্ধি করেন, এই সৌন্দর্য তার নিজস্ব পরিচয় নয়, বরং সমাজের আরোপিত এক মুখোশ।
“আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।”
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাট্যশৈলী এখানে গভীরভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। সংলাপের মধ্যে কাব্যময়তা, সঙ্গীতের সংযোজন এবং বোধের বহুমাত্রিকতা নাটকটিকে সার্থকতা দিয়েছে। ‘চিত্রাঙ্গদা’ কেবলমাত্র এক নারীর প্রেমের সংগ্রাম নয়, এটি এক নারীর আত্মজাগরণের কাহিনী।
“Love looks not with the eyes, but with the mind.” (A Midsummer Night’s Dream, Act 1, Scene 1)
নাটকের শেষে চিত্রাঙ্গদা অর্জুনের কাছে নিজের প্রকৃত সত্তা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “আমি চিত্রাঙ্গদা, আমি রাজা, আমি যোদ্ধা, আমি নারী।” এই ঘোষণার মাধ্যমে তিনি নিজের আত্মপরিচয় পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন এবং বুঝিয়ে দেন, প্রেম এবং আত্মসম্মান একসঙ্গে থাকতে পারে।
‘চিত্রাঙ্গদা’ নাটক রবীন্দ্রনাথের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নারীচরিত্রের কাহিনী। এখানে নারী কোনো অবলা নয়, বরং তার আত্মশক্তি ও স্বকীয়তা নিয়ে সে সমাজের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকে। প্রেমের মধ্যেও আত্মপরিচয়ের যে সংগ্রাম, তা আজও প্রাসঙ্গিক। নাটকটি সাহিত্য, সংগীত ও দর্শনের এক অপূর্ব মেলবন্ধন, যা বারবার পাঠ করলেও নতুন নতুন ব্যঞ্জনা উন্মোচিত হয়।
বুদ্ধদেবের ' তপস্বী ও তরঙ্গিণী 'র পর আবার বাংলা কাব্যনাট্যের মধুরতা আস্বাদন করার সুযোগ হলো। সত্যি বলতে কি আমার কোন পূর্ব ধারণা ই ছিলো না আমি কি পড়তে যাচ্ছি। হঠাৎ কাব্যদেবী যেন নিজ থেকে কাব্যের পেয়ালা এগিয়ে দিলো আমার মতো অরসিক গদ্যপাঠকের ঠোঁটের কাছে। আহা কি অমৃতময় সময় গেলো পুরোটা সময়!
" আমি চিত্রঙ্গদা দেবী নহি, আমি সামান্যা রমণী। পূজা করি রাখিবে মাথায়, সেও আমি নই; অবহেলা করে পুষিয়া রাখিবে পিছে, সেও আমি নহি, যদি পার্শ্বে রাখ মোরে সংকটের পথে, দূরহ চিন্তার যদি অংশ দাও, যদি অনুমতি কর কঠিন ব্রতের তব সহায় হইতে, যদি সুখে দুঃখে মোরে কর সহচারী, আমার পাইবে তবে পরিচয়"।
বইয়ের সূচনায় রবীঠাকুর লিখেছেন, ".....সেইসঙ্গে কেন জানি হঠাৎ আমার মনে হল সুন্দরী যুবতী যদি অনুভব করে যে সে তার যৌবনের মায়া দিয়ে প্রেমিকের হৃদয় ভুলিয়েছে তা হলে সে তার সুরূপকেই আপন সৌভাগ্যের মুখ্য অংশে ভাগ বসাবার অভিযোগে সতিন বলে ধিক্কার দিতে পারে। এ যে তার বাইরের জিনিস, এ যেন ঋতুরাজ বসন্তের কাছ থেকে পাওয়া বর, ক্ষনিক মোহ-বিস্তারের দ্বারা জৈব ঊদ্দেশ্য সিদ্ধ করবার জন্যে যদি তার অন্তরের মধ্যে যথার্থ চরিত্রশক্তি থাকে তবে সেই মোহমুক্ত শক্তির দানই তার প্রেমিকের পক্ষে মহৎ লাভ, যুগল জীবনের জয়যাত্রার সহায়। সেই দানেই আত্মার স্থায়ী পরিচয়, এর পরিনামে ক্লান্তি নেই, অবসাদ নেই, অভ্যাসের ধূলিপ্রলেপে উজ্জ্বলতার মালিন্য নেই। এই চারিত্রশক্তি জীবনের ধ্রুব সম্বল, নির্মম প্রকৃতির আশু প্রয়োজনের প্রতি তার নির্ভর নয়। অর্থাৎ এর মূল্য মানবিক, এ নয় প্রাকৃতিক।
এই ভাবটাকে নাট্য-আকারে প্রকাশ-ইচ্ছা তখনই মনে এল, সেইসঙ্গেই মনে পড়ল মহাভারতের চিত্রাঙ্গদার কাহিনী। এই কাহিনীটি কিছু রূপান্তর নিয়ে অনেক দিন আমার মনের মধ্যে প্রচ্ছন্ন ছিল। অবশেষে লেখবার আনন্দিত অবকাশ পাওয়া গেল উড়িষ্যায় পান্ডুয়া বলে একটি নিভৃত পল্লীতে গিয়ে।"
মহাভারতের চরিত্র চিত্রাঙ্গদা এই কাব্যনাটকের মূল অবলম্বন। যদিও মহাভারতের চেয়ে কাহিনী এখানে ভিন্নভাবে মোড় নিয়েছে৷ এখানে অর্জুন ও চিত্রাঙ্গদার প্রণয় এত সহজভাবে আগায়নি; অর্জুন চিত্রাঙ্গদার রূপে বিমোহিত হয়নি এখানে, বরং সে ফিরিয়ে দিয়েছে চিত্রাঙ্গদার প্রণয়প্রস্তাব। ফলশ্রুতিতে সে শুরু করে মদন ও বসন্ত নামক দুই দেবতার তপস্যা এবং আশীর্বাদে সে পায় এমন রূপ যা অর্জুনকে তার ব্রত ভাঙতে বাধ্য করবে। হয় ও তেমনটাই। কিন্তু চিত্রাঙ্গদা কি সুখী থাকে এভাবে? না, প্রগাঢ় ব্যক্তিত্বসম্পন্ন চিত্রাঙ্গদা খুশি থাকতে পারেনা তার এই মেকি সৌন্দর্য নিয়ে। জন্ম নেয় তার ভেতর মানসিক দ্বন্দ। চিত্রাঙ্গদার প্রবল মানসিক দ্বন্দই রবীন্দ্রনাথের এই সৃষ্টিকে করে তোলে অতুলনীয়।
The dance drama is about the valour of princess Chitrangada. She is a learned and capable woman who yearns for love. She proclaims, ‘The flower of my desire shall never drop into the dust before it has ripened to fruit.’ So, when the ungainly warrior princess is rejected by Arjun by disguising herself as a bewitching beauty. In time, Arjuna tires of mere beauty and hearing tales about the valour of princess Chitrangada, he seeks her out. The princess then reveals her true self to Arjun. Her words are one of the most beautiful declarations of the angst of a woman, ‘I am not beautifully perfect as the flowers with which I worship. I have many flaws and blemishes. I am a traveler in the great world-path, my garments are dirty, and my feet are bleeding with thorns. Where should I achieve flower-beauty, the unsullied loveliness of a moment’s life? The gift that I proudly bring you is the heart of a woman. Here have all pains and joys gathered, the hopes and fears and shames of a daughter of the dust; here love springs up struggling towards immortal life. Herein lies an imperfection which yet is noble and grand.’ Arjun impressed accepts her hand in marriage.
অসাধারণ। এক কথায়, অসাধারণ। ভাষার প্রখরতা, আর আবেগের তীব্রতা, কোনোটারই কমতি ছিল না। "চিত্রাঙ্গদা" একটা মনে রাখার মত বই, একটা পড়ার মত নাট্যকাব্য। যেখানেই থাকি না কেন, যার চোখেই চোখ রাখি না কেন, বইটার কথা মনে রাখব। আগে পড়ি নি কেন, আফসোস হচ্ছে এখন! শেষ পৃষ্ঠা পড়ে শিহরিত হয়েছি, মুগ্ধ হয়েছি, হতভম্ব হয়েছি। এত সুন্দর! এত শক্তিশালী! মুখের কথা দিয়ে কাউকে ধরাশায়ী করা গেলে অবশ্যই এই অংশটুকুর উদাহরণ টানবো আমি! আজ থেকে মনের মধ্যে ধারণ করে নিলাম, "আমি চিত্রাঙ্গদা। দেবী নহি, নহি আমি সামান্যা রমণী।"
This entire review has been hidden because of spoilers.
মণিপুর রাজকন্যা চিত্রাঙ্গদা, পুরুষের ছদ্মবেশে তিনি রাজ্য পরিচালনার প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।বনে দেখা হয় নির্বাসিত অর্জুনের সাথে। তিনি অর্জুনের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে প্রেম নিবেদন করেন, কিন্তু ব্রহ্মচারী অর্জুন এই প্রেম প্রত্যাখ্যান করেন। তখন চিত্রাঙ্গদা মদন ও বসন্ত দেবতার কাছে বর প্রাপ্ত হয়ে সুন্দরী রমণী রূপে অর্জুনের কাছে আবারও যান। এবার অর্জুন চিত্রাঙ্গদার রূপে আকৃষ্ট হয়ে তার প্রেম স্বীকার করেন। চিত্রাঙ্গদা বুঝতে পারে অর্জুন শুধুমাত্র তার বাহ্যিক রূপকে ভালোবেসেছে ,তার ব্যক্তিত্ব, বীরত্ব ও প্রকৃত রূপকে ভালোবাসেননি। মানসিক দ্বন্দ্বে জর্জরিত চিত্রাঙ্গদা নিজের স্বরূপ তুলে ধরে অর্জুনকে বলেন-- "আমি চিত্রাঙ্গদা, আমি রাজেন্দ্রনন্দিনী। নহি দেবী, নহি সামান্যা নারী। পূজা করি মোরে রাখিবে ঊর্ধ্বে সে নহি নহি, হেলা করি মোরে রাখিবে পিছে সে নহি নহি। যদি পার্শ্বে রাখ মোরে সংকটে সম্পদে, সম্মতি দাও যদি কঠিন ব্রতে সহায় হতে, পাবে তবে তুমি চিনিতে মোরে। আজ শুধু করি নিবেদন-- আমি চিত্রাঙ্গদা রাজেন্দ্রনন্দিনী।"
মহাভারতের একটি উপাখ্যানকে এভাবে একটা পূর্ণাঙ্গ নৃত্যনাট্য বা গীতিনাট্য রূপে উপস্থাপন করা খুব সহজ কাজ নয়।কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই উপাখ্যানকে নৃত্য বা গীতিনাট্য হিসেবে শুধু উপস্থাপনই করেননি,তাতে নিজের সিগনেচার চিন্তা-দর্শন এবং অপূর্ব কাব্যরসে একে করে তুলেছেন এক স্বাতন্ত্র্য সৃষ্টিকর্ম।যে কারনে মহাভারতের চিত্রাঙ্গদা এবং রবীন্দ্রনাথের চিত্রাঙ্গদা হুবহু এক হয়ে যায়নি,বরং মহাভারতের সীমাবদ্ধতা ছাড়িয়ে হয়ে উঠেছে জ্বলন্ত অগ্নিস্বরূপ,অথচ কোমল মানবিকতায় উজ্জীবিত।
হয়তোবা মায়ার ইন্দ্রজালে হোক,কিংবা অর্জুনের প্রতি বিরহ প্রেমে চিত্রাঙ্গদা নিজের পুরুষত্ব এবং সাহসী ব্যক্তিত্বকে বিসর্জন দিয়েছে,কিন্তু পরে সে উপলব্ধি করতে পারে যে,তার এই দৃঢ় চেতনা এবং পৌরুষই তার আসল সত্ত্বা।রমণীয় মায়াবী পুষ্প হয়ে মন ভুলাবার জন্য নয়,তার জন্ম বীরাঙ্গনা হিসেবে নিজেকে উৎসর্গ করার জন্য।
নাট্যটি খুব সুষমামণ্ডিতভাবে সজ্জিত,এক বিলম্ব- দ্রুত লয়ে চলে গেছে একের পর এক দৃশ্য।
তবে এই নাট্যটি পড়ার চেয়ে দেখা বা শোনাই বেশি যুক্তিযত।